-মুহম্মদ রাশেদুল ইসলাম
لايؤمن احدكم حتى اكون احب اليه من والده وولده والناء احمعين.
“তোমাদের মাঝে কেউ প্রকৃত মু’মিন হতে পারবেনা যতক্ষন না আমি তাঁর নিকট তাঁর মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে সবার চাইতে বেশী প্রিয় হব।” (বুখারী, মুসলিম) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে, মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে এমনকি নিজের জীবন থেকেও বেশী মুহব্বত করা প্রতিটি ঈমানদার ব্যক্তির দায়িত্ব-কর্তব্য যা প্রকৃত মু’মিন হওয়ার পূর্ব শর্ত। যে ব্যক্তি নিজের জীবন থেকে সাইয়্যিদুল কাওনাইন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বেশী মুহব্বত করতে পারেনি সে প্রকৃত মু’মিন নয়। ফখরে মওজুদাত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজের জীবন থেকে বেশী মুহব্বত করার প্রকৃত নজির দেখিয়েছেন হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, ছিদ্দীকে আকবর হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার করার অনুমতি প্রার্থনা করেন। প্রথমে ছহিবুল খাতাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুমতি দিতে অস্বীকার করেন, পরে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বারংবার অনুরোধের প্রেক্ষিতে সম্মত হন। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কাবা গৃহে হাজির হয়ে খুৎবা আরম্ভ করেন। খুৎবা শুরু হতেই চতুর্দিক থেকে কাফিররা তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কাফিররা তাঁকে এমন বেদম মারধর করে যে, তাঁর চেহারা এবং নাক, কান মুবারক সবকিছু রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়। অমানুষিক নির্যাতনে তিনি বেহুঁশ হয়ে যান। এই খবর শুনে বণী তাঈমের লোক এসে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে নিয়ে যান। অনেকেই ধারণা-ছিলনা যে, তিনি আর বাঁচবেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অচেতন অবস্থায় ছিলেন। সন্ধ্যার সময় তাঁর হুঁশ-হওয়ার পর সর্ব প্রথম কথা এই ছিল “আমার প্রিয় নবী কি অবস্থায় আছেন?” উপস্থিত লোকজন বলল, যাঁর জন্যে এই অবস্থা, জ্ঞান শক্তি আসার পর সেই নবীর নাম! এটা শুনে সকলেই চলে গেল। তাঁর মাতা উম্মুল খায়ের কিছু খানা তৈরী করে খেতে বললেন, কিন্তু নবী প্রেমিক হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ঐ একই কথা। “আমার প্রিয় নবীর অবস্থা কি? তিনি কেমন আছেন?” তিনি কি ভাল আছেন?” তাঁর মা বললেন, “বাবা আমি জানি না তিনি কি অবস্থায় আছেন?” তিনি বললেন, “ওমরের ভগ্নী উম্মে জামীলের নিকট গিয়ে জেনে আসুন।” মা ছেলের দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে না পেরে উম্মে জামীলের নিকট গিয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হালত জিজ্ঞাসা করলেন। উম্মে জামীল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা নিজে গিয়ে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বলবেন বিধায় উম্মুল খায়ের, তাঁকে নিয়ে আসলেন। তিনি হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। উম্মে জামীল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, “হায়াতুন্ নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাল আছেন এবং দ্বারে আরকামে আছেন।” হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, “কসম খোদার! আমি ঐ পর্যন্ত কিছুই খাবনা, পানও করবনা, যে পর্যন্ত খাইরুল বাশার, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাক্ষাৎ না হয়।” কসম শুনে তাঁর মা বাধ্য হয়ে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে দ্বারে আরকামে নিয়ে আসেন। প্রিয় নবীজীকে দেখে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন এবং সকল ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণও কাঁদতে লাগলেন। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, “হুযূর! ইনি আমার মা, আমার মাকে ঈমানের দাওয়াত দিন এবং হিদায়েতের জন্যে দোয়া করুন,” ছহিবুল বারাকাত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাওয়াত দিলেন ও দোয়া করলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ঈমান কবুল করে মুসলমান হয়ে গেল। (সুবহানাল্লাহ্)
বস্তুত এই ছিল প্রকৃত নবী প্রেমিক ও প্রকৃত মু’মিনের নিদর্শন। যারা ধন-সম্পদ, পিতা-মাতা, স্ত্রী-পুত্র, ভাই-বোন এমনকি নিজের জীবনের চাইতেও ছিরাতুল্লাহ, ছহিবুর রিদ্বা, খলীলুল্লাহ, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বেশী মুহব্বত করতেন।
আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে ছহিবু উসওয়াতুন্ হাসানাহ, ছহিবুল ইহসান, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের ন্যায় হাক্বীক্বী মুহব্বত করে খালিছ মু’মিন হওয়ার তৌফিক দান করুন। (আমীন)