চান্দ্র বর্ষের ষষ্ঠ মাস জুমাদাল উখ্রা। এ মাসের ১৫ তারিখ হিজরী ৩৭ মতান্তরে ৪৬ সনে আলে রসূল, আওলাদে রসূল হযরত ইমাম আলী আছগর উরফে যয়নুল আবিদীন রহমতুল্লাহি আলাইহি যমীনে তাশরীফ আনেন। তাঁর পিতা বেহেশ্তের যুবকদের সর্দার সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং মাতা ছিলেন পারস্য সম্রাট ইয়াজদগেরদ্-এর কনিষ্ঠা কণ্যা হযরত শাহারবানু উরফে গাযালা রহমতুল্লাহি আলাইহা হযরত ইমাম ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি কথা বলার বয়স হতেই পরিবারের অন্যান্য শিশুগণের সাথে মসজিদে নববী শরীফে যাতায়াত শুরু করেন এবং অতি অল্প বয়সেই কুরআন শরীফ হিফয্ করেন। তখনকার যুগে মসজিদে নববী শরীফ ছিল দুনিয়ার সেরা শিক্ষাকেন্দ্র। বিজ্ঞ ছাহাবীগণ মসজিদে বসে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, তাফসীর, ফিক্বাহ্, ক্বিরায়াত প্রভৃতি দ্বীনি ইলমের বিভিন্ন শাখার উপর শিক্ষা দান করতেন। শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীগণ অনেক সময় দল বেঁধে উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণের খিদমতে গিয়ে হাযির হতেন এবং তাঁদের যবান মুবারকে বিভিন্ন ঘটনা শ্রবণ করে প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভ করতেন। হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেমন ছিলেন, তাঁর আদত-অভ্যাস কেমন ছিল, তাঁর দিন-রাত কিভাবে কাটতো এসমস্ত বর্ণনা শ্রবণ করে তরুণ তাবিয়ীগণ নিজ নিজ জীবনে সেই আদর্শ বাস্তবায়িত করার সাধনা করতেন। এ সমস্ত শিক্ষার্থীর মধ্যে অতি অল্প বয়সেই হযরত ইমাম ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি সকলের স্বপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অস্বাভাবিক মেধা ও সূতীক্ষ্ম ধীশক্তিবলে মাত্র আট/নয় বছর বয়সেই তিনি বড় বড় জ্ঞানী-গুণীগণের মজলিসে সমাদর পেতে লাগলেন। তাঁরা শিশু হযরত ইমাম ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সাথে সূক্ষ্মসূক্ষ্ম বিষয়ে পর্যন্ত খোলাখুলি আলোচনা করে মুগ্ধ হতেন। ইলমের যে উত্তরাধিকার হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মাধ্যমে ইমাম খান্দানে প্রবেশ লাভ করেছিল হযরত ইমাম যয়নুল আবিদীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তা রক্ষা করার জন্য কঠোর সাধনা করে গেছেন। ইল্মের সন্ধান তিনি যেখানেই পেতেন বিনা দ্বিধায় সেখানে হাযির হওয়াই ছিল তাঁর সাধারণ অভ্যাস। ফলে সমগ্র মুসলিম জাহানে ইলমের ক্ষেত্রে তিনি অনন্য মর্যাদা এবং উম্মতের ইমাম হওয়ার দুর্লভ সম্মান লাভ করেছিলেন। সমকালীন মুসলিম জাহানে ইলমে হাদীছ এবং ইলমে ফিক্বাহ্র ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন সকলের ইমাম, সর্বাপেক্ষা বিচক্ষণ আলিম। ইল্মে তরীক্বতে তিনি ছিলেন সাধককূলের মাথার মুকুট। ইলমে তরীক্বতের যত শাজরা আছে তার প্রায় প্রত্যেকটির শীর্ষদেশের ইমাম হিসেবে হযরত ইমাম যয়নুল আবিদীন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নাম চোখে পড়ে। তাছাড়া হযরত ইমাম ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ত্যাগ, অপূর্ব ধৈর্য্য ও রূহানিয়তের মহিমার দ্বারাই ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা কঠিন বিপর্যয়ের হাত হতে উদ্ধারপ্রাপ্ত হয়ে মুসলিম সমাজ কুরআন-সুন্নাহ্ ভিত্তিক খিলাফতে রাশেদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছিলেন। বাইজেন্টাইনীয় ভোগ-বিলাসের ক্রোড়ে লালিত উমাইয়া খান্দানের সর্বাপেক্ষা সৌখিন যুবক হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইমাম যয়নুল আবিদীন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর শিক্ষা, ছোহবত ও নীরব সাধনার গুণেই আদর্শ খলীফা দ্বিতীয় উমরে পরিণত হয়েছিলেন।
কারবালার বিভীষিকাময় সন্ধিক্ষণে হযরত ইমাম ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি অসুস্থ ছিলেন। আল্লাহ্ পাক তাঁকে কুদরতী হিফাযত করতঃ তাঁর মাধ্যমেই দুনিয়ার সর্বাপেক্ষা পবিত্র বংশধারা হযরত রসূলে মকবুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আহলে বাইতের ধারাবাহিকতা জারী করেছেন। ইল্ম ও আধ্যাত্মিকতার সাধনা ছিল আহলে বাইতের প্রধান উত্তরাধিকার। জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে অকল্পনীয় প্রতিকূলতা অতিক্রম করেও এই মহান নেয়ামতের উত্তরাধিকারীগণ দুনিয়ার বুকে আদর্শের গৌরবময় নূরটি সবসময় নূরান্বিত করে রেখেছেন। যুগ পরম্পরায় তাঁদের সাধনার ধারাবাহিকতা সমগ্র জগত প্লাবিত করেছে। গাউছূল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড় পীর শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শায়খ সাইয়্যিদ আহমদ কবীর রিফায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সুলতানুল হিন্দ, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং বর্তমান যামানার মুজাদ্দিদ হযরত ইমাম সাইয়্যিদ মুহম্মদ দিল্লুর রহমান মুদ্দা জিল্লুহুল আলী; তাঁদের ন্যায় দুনিয়ার শীর্ষস্থানীয় ওলী-আউলিয়াগণ আহলে বাইতেরই পবিত্র বংশধারার উত্তরাধিকারী। এ পবিত্র বংশধারায় এত মহান ওলীআল্লাহ্র আবির্ভাব হয়েছে যে, সাধারণভাবে তার বর্ণনা দেয়া সম্ভব নয়।
মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
সম্মানিত মুহররমুল হারাম শরীফ এবং সম্মানিত ছফর শরীফ মাস উনাদের প্রাসঙ্গিক আলোচনা