মুহররম মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা -হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ

সংখ্যা: ১১৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

আরবী বছরের প্রথম মাস মুর্হরম। আরবী বার মাসের মধ্যে যে চারটি মাসকে হারাম বা সম্মানিত বলে কালামুল্লাহ্ শরীফে ঘোষণা করা হয়েছে, মুর্হরম মাস তন্মধ্যে অন্যতম। আসমান-যমীন সৃষ্টিকাল হতেই এ মাসটি বিশেষভাবে সম্মানিত হয়ে আসছে।

বর্ণিত আছে যে, এ মাসেরই দশ তারিখ দশই-মুর্হরম “আশুরা” দিনটি বিশ্বব্যাপী এক আলোচিত দিন। সৃষ্টির সূচনা হয় এই দিনে এবং সৃষ্টির সমাপ্তিও ঘটবে এ দিনেই। বিশেষ বিশেষ সৃষ্টি এ দিনেই করা হয় এবং বিশেষ বিশেষ ঘটনা এ দিনেই সংঘটিত হয়।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুুরসালীন, খাতামুন্নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুরু করে হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম পর্যন্ত প্রায় সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম-এর কোন না কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা এ দিনে সংঘটিত হয়েছে।

বিশেষতঃ আশুরার দিনে হযরত হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর উপর যা ঘটেছে মূলত তা ছিল তাঁর মুবারক শাহাদত; যার ফলে আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে তাঁর মর্যাদা বুলন্দ হয়েছে।

স্মরণ রাখা উচিত যে, হযরত হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়রালা আনহু-এর শাহাদতকে কেন্দ্র করে শিয়ারা যেসব অসঙ্গত বিষয়াদির প্রচলন ঘটিয়েছে যেমন মৃত ব্যক্তির গুণ-কীর্তন করে বিলাপ করা, শোক পালন করা ইত্যাদি এসব বিষয়াদি থেকে সম্পূর্ণরূপে বেঁচে থাকতে হবে কারণ তা ঈমানদার ব্যক্তির কাজ নয়।

আবার অনেকে ইয়াযীদকে দোষারোপ করতে গিয়ে জলীলুল কদর ছাহাবী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে দোষারোপ করে থাকে। অথচ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের প্রতি দোষারোপ করা যেমন কুফরী তদ্রুপ যারা ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁদেরকেও দোষারোপ করা কুফরী।

আল্লাহ্ পাক সূরা ফাতহ্ -এর ২৯ নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন, ليغيظبهم الكفار. অর্থাৎ- “কাফিররাই হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর প্রতি বিদ্বেষ পোষন করে থাকে।”

হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

من غاظه اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم فهو كافر.

অর্থ- “যে ব্যক্তি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে সে কাফির।”

অতএব, মুহররম মাস বা আশুরার দিন হতে আমাদেরকে যে নছীহত গ্রহণ করতে হবে তা হচ্ছে হযরত হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ সকল আহলে বাইতগণের প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদা ও মুহব্বতের পাশাপাশি সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম এবং সকল ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদা ও মুহব্বত রাখা।

আর আশুরা উপলক্ষে যে আমলের বর্ণনা হাদীস শরীফে এসেছে তাহলো- (ক) ১০ই মুর্হরম উপলক্ষ্যে দু’টি রোযা রাখা। অর্থাৎ ৯, ১০ অথবা ১০, ১১ তারিখ। শুধু ১০ তারিখ রোযা রাখা মাকরূহ। সম্ভব হলে উক্ত দিনে যারা রোযা রাখবে তাদের এক বা একাধিকজনকে ইফতার করানো। (খ) সাধ্যমত পরিবারবর্গকে ভাল খাওয়ানো। (গ) গোসল করা। (ঘ) চোখে সুরমা দেয়া। (ঙ) গরীবদেরকে পানা-হার করানো। (চ) ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলানো। বর্ণিত এসব আমল প্রত্যেকটিই সুন্নত।

অতএব, প্রত্যেকের উচিত এ মাসে সৃষ্ট যাবতীয় বদ আক্বীদা ও বদ আমল হতে বিরত থেকে কুরআন-সুন্নাহ মুতাবিক আক্বীদা পোষণ করে মাসটির হাক্বীক্বী সম্মান বজায় রাখা।

হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

اكرموا المحرم من اكرم المحرم اكرمه الله بالجنة ونجاه من النار.

অর্থঃ- “তোমরা মুর্হরম মাসকে সম্মান কর। যে ব্যক্তি মুর্হরম মাসকে সম্মান করবে, আল্লাহ্ পাক তাকে জান্নাত দ্বারা সম্মানিত করবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন।” আয় আল্লাহ্ পাক! আমাদেরকে আপনার সম্মানিত মুহররম মাসের যথাযথ সম্মান ও হক্ব আদায় করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)

শাওয়াল মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

যিলক্বদ মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

যিলহজ্ব মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

ছফর মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবিউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা -হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ