যিলক্বদ মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ১১৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ

হিজরী সনের একাদশতম মাস যিলক্বদ। যিলক্বদ শব্দটি আরবী। আরবী ভাষায় শব্দটির ছহীহ্ উচ্চারণ ‘যুলক্বা’দাহ্’ বা ‘যিলক্বা’দাহ্।’ ‘যু’ বা ‘যি’ অর্থ মালিক, অধিকারী এবং ‘ক্বা’দাহ্’ অর্থ বসা, উপবেশন করা। একত্রে ‘যুলক্বা’দাহ্’ বা ‘যিলক্বা’দাহ্’ শব্দদ্বয়ের অর্থ হচ্ছে উপবেশনকারী।       এ মাসটিকে যেহেতু হারাম বা সম্মানিত মাস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তাই এ মাসের হুরতম-ইজ্জত রক্ষার্থে আরবগণ ঘরে বসে থাকতো এবং যুদ্ধ বিগ্রহ হতে বিরত থাকতো। মূলতঃ শরীয়ত বিরোধী সকল প্রকার কার্যকলাপ হতে বিরত থেকে এ মাসটির ইজ্জত-হুরমত রক্ষা করা প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

এ মাসটি যিলহজ্বের পূর্ববর্তী মাস। এটি উমরাহ্ পালনের খাছ মাস। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হায়াত মুবারকে চার বার উমরাহ্ করেছেন। তার মধ্যে তিনবারই করেছেন যিলক্বদ মাসে। আর একবার করেছেন যিলহজ্ব মাসে। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,“হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চারবার উমরাহ্ করেছেন। প্রত্যেকটি করেছেন যিলক্বদ মাসে। তবে হজ্বের সাথে যেটি করেছেন তা ব্যতীত।” (বুখারী, মুসলিম)

অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উমরাহ্ আদায় করেছেন চার বার আর হজ্ব আদায় করেছেন এক বার। তিনটি উমরাহ্ আদায় করেছেন যথাক্রমে, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম হিজরীতে এবং শেষোক্ত উমরাহ্টি আদায় করেছেন দশম হিজরীতে হজ্বের সাথে। এখানে একটি মাসয়ালা মনে রাখা আবশ্যক যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্ব ও উমরাহ্ আদায়ের সময়ই কেবল নিজ মাথা মুবারক মুন্ডন করেছেন। এছাড়া তাঁর হায়াত মুবারকে আর কোন সময় মাথা মুন্ডন করেননি বা চুল ছোট ছোট করে রাখেননি বরং সর্বদা তিনি বাবরী চুল রাখতেন।  এজন্য শুধু হজ্ব ও উমরাহ্ পালনের সময়ই চুল মুন্ডন করা সুন্নত। যারা হজ্ব ও উমরাহ্ পালনের সময় চুল মুণ্ডন করবে তিনি তাদের জন্য তিনবার দোয়া করেছেন। আর যারা চুল ছোট করবে তাদের জন্য একবার দোয়া করেছেন।

উল্লেখ্য, বছরের যে কোন সময়ে উমরাহ্ আদায় করা যায়। তবে ৯ই যিলহজ্ব হতে ১৩ই যিলহজ্ব পর্যন্ত ওমরাহ্ করা মাকরূহ্ তাহরীমী। কেননা, এই কয়দিন হজ্বের জন্য নির্দিষ্ট।

শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখ হতেই হজ্বের প্রস্তুতি নিতে হয়। যিলহজ্বের দশম তারিখ হজ্ব শেষ হয়। আর এ দিনগুলোই হচ্ছে হজ্বের দিন।

এ সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

الحج اشهر معلومت.

অর্থঃ- “হজ্বের মাসসমূহ সুবিদিত।” (সূরা বাক্বারা/১৯৭)    হজ্বের মাসে বা দিনসমূহে যাদের উপর হজ্ব করার সামর্থ রয়েছে তাদের উপর হজ্ব করা ফরযে আইন।

আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

لله على الناس حج البيت من استطاع اليه سبيلا.

অর্থঃ- “হজ্বের রাস্তা অতিক্রমে সামর্থবান ব্যক্তির জন্য আল্লাহ্ পাক-এর উদ্দেশ্যে হজ্ব করা ফরয।” (সূরা আলে ইমরান/৯৭)

এ মাসের শেষের দিকে অধিকাংশ হাজী ছাহেবগণ মক্কা শরীফে গিয়ে পৌঁছেন। তাঁরা ইহ্রাম বাঁধেন, উমরাহ্ করেন, বাইতুল্লাহ্ শরীফ তাওয়াফ করেন, মাক্বামে ইব্রাহীমে নামায আদায় করেন, যমযমের পানি পান করেন। অতঃপর মদীনা শরীফে গিয়ে রওযা শরীফ যিয়ারত করেন। তাঁরা অশেষ ছওয়াবের ভাগী হন।           হাদীস শরীফ মারফত জানা যায়, আরাফার ময়দান ক্বিয়ামতের ময়দান সাদৃশ্য, মুজদালিফা পুলছিরাতের ন্যায়, মীনা বেহেশ্ত, কা’বা শরীফ আরশ এবং ছাফা ও মারওয়া মীযানের ন্যায়। কোন লোককে নাজাত লাভ করে জান্নাতে যেতে হলে পরকালে এসব স্থান অতিক্রম করেই যেতে হবে। অতএব, যার উপর হজ্ব ফরয হয়েছে সে জান্নাতে যেতে হলে হজ্ব ব্যতীত তার জান্নাতে যাওয়ার চিন্তা করা বৃথা।               আয় আল্লাহ্ পাক! আমাদের সকলকে আপনার ও আপনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হজ্ব, উমরাহ্ ও যিয়ারত করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)

শাওয়াল মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

যিলহজ্ব মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মুহররম মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা -হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ

ছফর মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবিউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা -হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ