যিলহজ্ব মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ১১৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ

          হিজরী সনের দ্বাদশতম বা সর্বশেষ মাস যিলহজ্ব। এ মাসে হজ্ব পালন করা হয় বলেই এ মাসের নাম যিলহজ্ব বা হজ্বের মাস। এ মাসের বুযূর্গী ও সম্মান বর্ণনার অপেক্ষা রাখেনা।      যে পাঁচটি স্তম্ভের উপর দ্বীন ইসলামের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত তারমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ‘হজ্ব’ আদায়ের ফরযটি আল্লাহ্ পাক এ মাসেই নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। আল্লাহ্ পাক যে চারটি মাসকে হারাম বা সম্মানিত মাস বলে তাঁর কালাম পাকে উল্লেখ করেছেন সে চারটি সম্মানিত মাসের অন্যতম মাসটি হচ্ছে ‘যিলহজ্ব’। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে, “আল্লাহ্ পাক দিনসমূহের মধ্য হতে চারটি, মাসসমূহের মধ্য হতে চারটি, নারীদের মধ্য হতে চারজন, সর্বপ্রথম যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন তাঁদের মধ্য হতে চারজন এবং স্বয়ং জান্নাত যে সকল নেক বান্দাদের প্রত্যাশী তাঁদের মধ্য হতে চারজনকে মনোনীত করেছেন এবং বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন।  যে চারটি দিনকে মনোনীত ও মর্যাদামণ্ডিত করা হয়েছে তা হচ্ছে- (১) জুমুয়ার দিন, (২) আরাফার দিন অর্থাৎ যে দিনটিতে পবিত্র হজ্ব অনুষ্ঠিত হয়, (৩) ঈদুল আযহা অর্থাৎ কুরবানীর দিন, (৪) ঈদুল ফিতরের দিন।   যে চারটি মাসকে মনোনীত ও মর্যাদাসম্পন্ন করা হয়েছে তা হচ্ছে- (১) মুর্হরম, (২) রজব, (৩) যিলক্বদ, (৪) যিলহজ্ব।   যে চারজন মহিলাকে বিশেষভাবে মনোনীত ও মর্যাদাবান করা হয়েছে তাঁরা হচ্ছেন- (১) উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, (২) সাইয়্যিদাতুন্ নিসা আহ্লিল জান্নাহ্ হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, (৩) হযরত মরিয়ম বিনতে ইমরান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, (৪) হযরত আছিয়া বিনতে মুযাহিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা।  যে চারজন সকলের পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবেন তাঁরা হলেন- (১) আরবদের মধ্য হতে সাইয়্যিদুনা হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, (২) পারস্যদের মধ্য হতে হযরত সালমান ফারেসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, (৩) রোমীয়দের মধ্য হতে হযরত সুহাইব রোমী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, (৪) হাবশাবাসীদের মধ্য হতে হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।”   যে চারজন ব্যক্তির জন্য জান্নাত উদগ্রীব তাঁরা হচ্ছেন- (১) হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, (২) হযরত সালমান ফারেসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, (৩) হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, (৪) হযরত মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। (মিশকাত, মুকাশাফাতুল কুলুব)

যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিনের ফযীলত সম্পর্কে হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে, “পৃথিবীর দিনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশী ফযীলতপূর্ণ দিন হচ্ছে যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশদিন। এ দিনগুলোতে রোযা রাখা সুন্নত। এর প্রত্যেক দিনের রোযা এক বছরের রোযার সমান এবং প্রত্যেক রাত্রির ইবাদত শবে ক্বদরের ইবাদতের সমতুল্য। (সুবহানাল্লাহ্)

হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “ইবাদত-বন্দিগীর জন্য যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশদিন অপেক্ষা আল্লাহ্ পাক-এর নিকট প্রিয়তর দিন আর নেই। হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ জিজ্ঞাসা করলেন, “এ দিনগুলোতে ইবাদত করা কি জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ্ অপেক্ষাও অধিক প্রিয়?” তিনি বললেন, “জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ্ অপেক্ষাও অধিক প্রিয়। তবে যদি কেউ আপন জান-মাল নিয়ে জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয় এবং সবকিছু আল্লাহ্ পাক-এর রাস্তায় বিসর্জন দেয়।”

বিশেষ করে ৯ই যিলহজ্ব আরাফার দিন যখন উপস্থিত হয়, আল্লাহ্ পাক ফেরেশ্তাদের নিকট ফখর করে বলেন, “হে ফেরেশ্তারা! তোমরা দেখ, আমার বান্দারা আরাফার ময়দানে উপস্থিত হয়েছে, ধুলি-মলিন তাদের চেহারা, চুলগুলো অগুছালো, আমার জন্য তারা ধন-সম্পদ খরচ করেছে এবং শারীরিকভাবে তারা ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত হয়েছে। তোমরা সাক্ষী থাক, আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম।” (সুবহানাল্লাহ্) আর ঈদুল আযহা তথা কুরবানীর দিনে আল্লাহ্ পাক বান্দার কুরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই তার সমস্ত গুনাহ্ ক্ষমা করে দেন।

অতএব, যাদের প্রতি হজ্ব ফরয হয়েছে তারা যথারীতি হজ্ব আদায় করে এবং যাদের প্রতি হজ্ব ফরয হয়নি তাদের উক্ত দিনসমূহে যথারীতি ইবাদত-বন্দিগী করে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি হাছিলের কোশেশ করা উচিত। আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন। (আমীন)

শাওয়াল মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

যিলক্বদ মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মুহররম মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা -হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ

ছফর মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবিউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা -হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ