–হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ
হিজরী সনের চতুর্থ মাসের নাম রবিউস্ সানী। এ মাসের এগার তারিখ মুবারক সোমবার দিনটিতে একানব্বই বছর বয়স মুবারকে গাউসুল আযম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি ওফাত লাভ করেন। তিনি এমন এক মহান ওলী যার কামালত, বুযূর্গী, সম্মান বলার অপেক্ষা রাখেনা। “বাহ্জাতুল আসরার, আযকারুল আবরার, আসরারুল মায়ানী” ইত্যাদি কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, “একদা শাইখুল মাশায়িখ হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি কাশ্ফ ও মুরাকাবার হালতে বলে উঠলেন,
قدمه على رقبتى- قدمه على رقبتى.
“তাঁর কদম আমার ঘাড়ের উপর, তাঁর কদম আমার ঘাড়ের উপর।” একথা বলে তিনি নিজের মাথা মুবারক অবনত করে দিলেন এবং অনেকক্ষণ পর্যন্ত এ অবস্থার মধ্যে নিমগ্ন রইলেন, এ ধ্যানমগ্ন অবস্থা হতে নিষ্ক্রান্ত হলে লোকজন তাঁকে জিজ্ঞাসা করলো, হুযূর! আপনি মুরাকাবার অবস্থায় যা কিছু বললেন, তার অর্থ কি? তিনি জবাবে বললেন, “হিজরী পঞ্চম শতাব্দীর শেষভাগে আব্দুল ক্বাদির নামে একজন বুযূর্গ ব্যক্তি যমীনে তাশরীফ আনবেন যার লক্বব বা উপাধী হবে “মুহিউদ্দীন।” তাঁর জন্মস্থান হবে জিলান শহরে। তিনি বসবাস করবেন বাগদাদে। তিনি আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশে ঘোষণা করবেন,
قدمى هذه على رقبة كل اولياء الله.
“আমার কদম সমস্ত ওলীআল্লাহ্গণের ঘাড়ের উপর।” কাশ্ফের অবস্থায় আমি এটা জানতে পেরে আমার খেয়াল হলো, তাঁর কদম মুবারক আমার ঘাড়ের উপর কেন হবে না? এ খেয়াল মনে উদয় হওয়া মাত্র আপসে আপ আমার যবান হতে উক্ত শব্দগুলো বের হলো।” বর্ণিত আছে যে, হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “হে লোক সকল! আমার মধ্যে এবং অন্যান্য মানুষের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। আমাকে অন্যান্য লোকের উপর এবং অন্যান্য লোককে আমার উপর ক্বিয়াস করোনা। আমার সৃষ্টি অন্যান্য সকল সৃষ্টির উর্ধ্বে এবং অন্যান্য লোকের জ্ঞানেরও উর্ধ্বে। তোমরা আমার সম্বন্ধে কিছুই জাননা। দিবা ও রাত্রির মধ্যে আমাকে আল্লাহ্ পাক-এর পক্ষ হতে সম্বোধন করে বলা হয়,
انا اخترتك وتصنع عينى.
“আমি আপনাকে মনোনীত করেছি। আপনি আমার(কুদরতি) চোখের স্নিগ্ধতা।” আমাকে আরো বলা হয়, “হে আব্দুল ক্বাদির! আমার দরবার হতে খান, পান করুন ও পরিধান করুন, আমি অপরের প্রতিবাদ ও বিরুদ্ধাচরণ হতে আপনাকে হিফাযত করবো।”
হযরত গাউছুল আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন, “হে লোক সকল! আমি যখন তোমাদের নিকট কোন কথা বলি, তখন তোমরা তা সত্য বলে মেনে নাও। কেননা আমার কথা সম্পূর্ণরূপে সত্য। তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। আমাকে যা আদেশ করা হয় তাই আমি আমার যবান দ্বারা বলি, আমাকে যা কিছু প্রদান করা হয়, তাই আমি মানুষকে দান করি। আমাকে যা আদেশ করা হয়, তাই আমি পালন করে থাকি।
প্রত্যেকে একথা বিশ্বাস করুক যে, আমি আল্লাহ্ পাক-এর তরফ হতে আদিষ্ট ও নিযুক্ত। আমাকে বিশ্বাস করা তোমাদের জন্য অপরিহার্য। আমাকে অবিশ্বাস করলে তোমাদের দ্বীন, দুনিয়া এবং আখিরাত সব কিছুই খারাপ ও বরবাদ হয়ে যাবে। যদি শরীয়ত আমার মুখে লাগাম লাগিয়ে না দিত, তবে আমি নিশ্চিত ও নির্ভুলরূপে বলে দিতাম যে, তোমরা তোমাদের ঘরে কি কি খাও এবং কি কি জিনিস সঞ্চয় কর।” মূলতঃ আল্লাহ্ পাক যাকে ইচ্ছা তাঁকেই এ মহান মর্যাদা দান করেন। কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
ذلك فضل اله يؤتيه من يشاء.
“এটা হচ্ছে আল্লাহ্ পাক-এর ফযল-করম। তিনি যাকে চান তাঁকেই তা দান করে থাকেন।” (সূরা জুমুয়া/৪) উল্লেখ্য, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের অবর্তমানে লোকদের হিদায়েতের জন্য আউলিয়া-ই-কিরামকে যমীনে পাঠানো হয়। মানুষ যদি আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায় তাহলে অবশ্যই তাকে আউলিয়া-ই-কিরামগণের ছোহ্বত লাভ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে গাউসুল আযম, মাহবুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “আমি আল্লাহ্ পাক-এর মুহব্বত, মারিফতের জাল যমীনে বিছিয়ে রেখেছি। মানুষ ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় যখন সেখানে পা রাখে তখন আমি জালের রশি ধরে টান দেই তারা আমার নিকট হাযির হয় এবং আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুহব্বত লাভে ধন্য হয়।” (সুবহানাল্লাহ্) কাজেই প্রত্যেকের উচিত খালিছ ওলী আল্লাহ্ গণের ছোহ্বত লাভ করতঃ নিজের ঈমান-আক্বীদা ও আমল শুদ্ধ করে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি হাছিল করা।
রবীউল আউয়াল মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা
জুমাদাল উলা মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা