রমাদ্বান শরীফ ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ১১১তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ

 

يايها الذين امنوا كتب عليكم الصيام كما كتب على الذين من قبلكم لعلكم تتقون.

“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর যাতে তোমরা তাক্বওয়া হাছিল করতে পার।” (সূরা বাক্বারা/১৮৩)    স্মরণীয়, ‘তাক্বওয়া’ হচ্ছে সমস্ত আমলের মূল। তাই আল্লাহ্ পাক তাক্বওয়া হাছিল করার জন্য বান্দাদেরকে আদেশ করেছেন,

تزودوا فان خير الزاد التقوى.

অর্থঃ- “তোমরা পাথেয় সংগ্রহ কর। নিশ্চয়ই উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া।” (সূরা বাক্বারা/ ১৯৭)  ‘তাক্বওয়া’ শব্দের অর্থ হলো আল্লাহ্ভীতি। অর্থাৎ আল্লাহ্ পাককে ভয় করে তাঁর নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ হতে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকার নাম তাক্বওয়া। আর রমাদ্বান মাসের রোযার দ্বারা সেই তাক্বওয়া হাছিল হয়ে থাকে।  এ মর্মে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “আদম সন্তানের প্রত্যেক নেক আমল দশ গুণ হতে সাতশত গুন পর্যন্ত বাঁড়ানো হয়ে থাকে। আল্লাহ্ পাক বলেন, রোযা ব্যতীত। কেননা, রোযা একমাত্র আমারই জন্য রাখা হয় এবং তার প্রতিফল আমি  নিজেই (যত ইচ্ছা) দান করব। সে (বান্দা) আমারই জন্য আপন প্রবৃত্তি ও খাদ্য-পানীয় হতে বিরত থাকে।” (বুখারী, মুসলিম)        অর্থাৎ নামায, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি কেউ লোক দেখানোর জন্য করতে পারে। কিন্তু রোযা কেউ লোক দেখানোর জন্য করতে পারেনা। কেননা, গোপনে পানাহারের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও একমাত্র আল্লাহ্ পাককে ভয় করে সে পানাহার থেকে বিরত থাকে। রমাদ্বানের রোযার ফযীলত সম্পর্কে বহু হাদীস শরীফ বর্ণিত রয়েছে। হাদীস শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি ঈমান ও ইয়াক্বীনের সাথে রমাদ্বান শরীফের রোযা রাখবে তার পূর্বের গুণাহ্সমূহ ক্ষমা করা হবে এবং যে ব্যক্তি ঈমান ও ইয়াক্বীনের সাথে রমাদ্বান শরীফের রাত্রি ইবাদতে কাটাবে তারও পূর্বের গুণাহ্সমূহ ক্ষমা করা হবে এবং যে ব্যক্তি ঈমান ও ইয়াক্বীনের সাথে ক্বদরের রাত্রি ইবাদতে কাটাবে তারও পূর্বকৃত গুণাহ্সমূহ ক্ষমা করা হবে।” (বুখারী, মুসলিম) এ হাদীস শরীফে রমাদ্বান শরীফের রাত্রির ইবাদত বলতে বিশেষ করে তারাবীহ্র নামাযকে বুঝানো হয়েছে এবং ক্বদরের রাত্রি বলতে রমাদ্বান শরীফের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাত্রিগুলোকে বুঝানো হয়েছে। এ রাত্রিটি যেহেতু অনির্দিষ্ট তাই এ রাত্রিটি পেতে হলে ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ সকল বেজোড়  রাত্রিতে জাগ্রত থেকে ইবাদত-বন্দিগী করতে হবে।   হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি রমাদ্বান শরীফের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত রোযা রাখবে সে ঐ দিনের মত নিস্পাপ হবে যেদিন তার মা তাকে (নিস্পাপরূপে) জন্মদান করেছেন।” (মুসলিম)     অপর এক হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “রমাদ্বান শরীফের প্রত্যেক রাত্রির শেষভাগে প্রত্যেক রোযাদার উম্মতে মুহম্মদীকে ক্ষমা করা হবে।” (আহমদ)

হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, “রমাদ্বান মাসের প্রত্যেক রাত্রিতে আল্লাহ্ পাক অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্তিদান করেন এবং এ মাসের প্রত্যেক দিনে ও রাত্রিতে রোযাদার মুসলমানের কমপক্ষে একটি নেক দোয়া আল্লাহ্ পাক কবুল করেন।” (তারগীব) হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, রোযাদারের ঘুম ইবাদতের শামিল, রোযাদারের নিশ্চুপ থাকা তাছবীহ্ পাঠের মধ্যে পরিগণিত, রোযাদারের দোয়া নির্ঘাত কবুলযোগ্য এবং রোযাদারের আমলের ছওয়াব দ্বিগুণ-বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়া হয়।” (কানযুল উম্মাল) অতএব, রহমত, মাগফিরাত ও নাযাত লাভের মহিমান্বিত রমাদ্বান শরীফে দিনের বেলা রোযা রেখে আর রাতের বেলা তারাবীহ্ ও তাহাজ্জুদ নামায পড়ে এবং কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে হক্ব আদায় করা উচিত।   যে ব্যক্তি এ মাসের হক্ব আদায় করবে সে আল্লাহ্ পাক-এর রহমত, মাগফিরাত ও নাযাত লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি হক্ব আদায় করবেনা সে কোনটিই লাভ করতে পারবে না। উপরন্ত তার জন্য কঠিন পরিণতি রয়েছে। যে সম্পর্কে হাদীস শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “হালাকী ঐ ব্যক্তির জন্য, যে রমাদ্বান মাস পেল অথচ সে তার গুণাহ্খতা ক্ষমা করাতে পারলো না।” (আহমদ)       আয় আল্লাহ্ পাক! আমাদের সকলকে মাহে রমাদ্বান শরীফের যথাযথ হক্ব আদায় করতঃ তার রহমত, বরকত, সাকীনা, মাগফিরাত, নাযাতের পরিপূর্ণ হিস্সা দান করুন। (আমীন)

শাওয়াল মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

যিলক্বদ মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

যিলহজ্ব মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মুহররম মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা -হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ

ছফর মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা