হিজরী সনের দশম মাস “শাওয়াল।” ‘শাওয়াল’ শব্দটি ‘শাওল’ শব্দমূল হতে এসেছে। এটি ইসমে মুশতাক্ব তথা ইসমে ফায়িল মুবালাগা-এর এক বচনের রূপ। এর অর্থ হচ্ছে অধিক পরিমাণে বরদাশ্তকারী বা ধৈর্য্যধারণকারী। আরবগণ এ মাসে ছফর করতেন ও শিকার করতেন এ দু’য়ের কারণে তাদেরকে কষ্ট-ক্লেশ বরদাশ্ত করতে হতো এবং ধৈর্য্যও ধারণ করতে হতো। এ অর্থের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এ মাসটির নামকরণ করা হয় শাওয়াল।
এ মাসের প্রথম তারিখ পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন। রমাদ্বান শরীফের এক মাস রোযা রাখার পর মুসলমানগণ ঈদুল ফিতরের মাধ্যমে আনন্দ উদ্যাপন করেন। ঈদের দিনগুলোতে আল্লাহ্ পাক অগণিত নিয়ামত বর্ষণ করেন। এ কারণে মুসলমানগণ এ দিনগুলোর জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান থাকেন। আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বপ্রথম দ্বিতীয় হিজরীতে ঈদুল ফিতরের নামায আদায় করেন এবং পরবর্তীতে কখনও তিনি এ নামায ছাড়েননি। তাই এ নামায ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়েছে।
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “ঈদের দিনগুলোতে ইবলিস চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। এ অবস্থা দেখে অন্যান্য শয়তান তার আশপাশে উপস্থিত হয় এবং জিজ্ঞেস করে, হে আমাদের সর্দার! আপনার রোষ ও অসন্তুষ্টির কারণ কি?” তখন ইবলিস বলে, “আজকের (ঈদের) এ দিনে আল্লাহ্ পাক উম্মতে মুহম্মদীকে মাফ করে দিয়েছেন। এখন তোমাদের কর্তব্য হচ্ছে তাদেরকে দুনিয়ার মোহ্ ও প্রবৃত্তির সাধ-অভিলাষে উন্মত্ত রেখে আখিরাতের বিষয়ে গাফিল ও অন্যমনস্ক করে দাও।”
হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, “আল্লাহ্ পাক ঈদুল ফিতরের দিনে বেহেশ্ত সৃষ্টি করেছেন এবং এ দিনেই বেহেশতে তূবা (আনন্দ) বৃক্ষ রোপন করেছেন এবং এ দিনেই ফিরআউনের যাদুকরদের তওবা কবুল হয়েছে।”
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
من قام ليلة العيد محتسبا لم يمت قلبه يوم تموت القلوب
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতরের রাতে ঈমান ও ইখলাছের সাথে ইবাদত-বন্দিগী করবে তার অন্তর সেদিন (ক্বিয়ামতের দিন) যিন্দা থাকবে যেদিন অন্যান্য সকলের অন্তর মরে যাবে।”
জনৈক আরবী কবি বলেছেন, “লোকেরা আমাকে জিজ্ঞেস করে কাল ঈদের দিন তুমি কি পোশাক পরিধান করবে? বলি, যে পোশাক পরিধান করলে কয়েক ঢোক পান করা যায়, দারিদ্র ও ছবর এ দুই পোশাকের মাঝখানে এমন একটি অন্তর অবস্থান করছে যে অন্তরটি প্রতি ঈদ ও জুমুয়াতে আল্লাহ্ পাক-এর দীদার লাভ করে থাকে।
العيد لى ماتم ان غبت يا املى + والعيد وان كنت مراى ومستمعا.
“হে প্রেমাস্পদ! আপনি ব্যতীত আমার ঈদ আনন্দ নয় বরং তা শোক-বিলাপ। প্রকৃত ঈদ আমার হবে যদি হে মাহবুব! আপনার দর্শন লাভ করতে পারি এবং আপনাকে কিছু শোনাতে পারি।”
ঈদুল ফিতরের পর এ মাসে ছয়টি রোযা রাখা হয় এবং এ মাসেই হজ্ব ও যিয়ারতের প্রস্তুতি নেয়া হয়।
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
من صام رمضان ثم اتبعه ستا من شوال كان كصيام الدهر.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি রমাদ্বানের রোযা রাখার পর শাওয়াল মাসের ছয়টি রোযা রাখলো সে পূর্ণ বছরই রোযা রাখলো।” (মুসলিম শরীফ)
হজ্বের ফযীলত সম্পর্কে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
ان الحج يهدم ما كان قبله.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই হজ্ব বান্দার অতীত জীবনের সমস্ত গুনাহ্ ধ্বংস করে দেয়। অর্থাৎ হজ্ব আদায়কারী মা’ছূম (নিষ্পাপ) হয়ে যায়।” (মুসলিম শরীফ)
যিয়ারতের ফযীলত সম্পর্কে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
من زار قبرى وجبت له شفاعتى.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আমার রওজা শরীফ যিয়ারত করলো তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।”
অতএব, প্রত্যেকের উচিত এ মাসের বর্ণিত ইবাদত-বন্দিগী যথাযথভাবে পালন করে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি-রেযামন্দী হাছিল করা। আল্লাহ্ পাক! আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। (আমীন)
যিলক্বদ মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা
যিলহজ্ব মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মুহররম মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা -হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ
মাহে রবিউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা -হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ