-সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুনিস মুর্শেদ
হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী এ চার মাযহাবই হচ্ছে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত। এর বাইরে যা রয়েছে তা পথভ্রষ্টতা ব্যতীত কিছু নয়। এখানে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বুঝতে হবে তা হলো, তাঁরা কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ থেকে যে (اصول) উছূল বা সাধারণ নিয়ম-নীতি বের করেছেন, তার মাধ্যমে ভবিষ্যতের উলামা-ই-কিরামগণ তাঁদের নিজ নিজ যুগের নতুন নতুন সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হবেন। মুজতাহিদ-ই-মতলক্বগণই কুরআন শরীফের সকল তথ্য বুঝেছেন, উছূল নির্ধারণ করেছেন এবং পরবর্তীদের কাছে তা ব্যাখ্যা করেছেন। পরবর্তী মুজতাহিদ আলিমগণ বুঝেছেন কি করে এ সকল উছূল, সিদ্ধান্ত এবং তথ্য নতুন পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করা যাবে। এবং তাঁরা তাফসীর ও ফিক্বাহের কিতাবে সেগুলো লিপিবদ্ধ করেছেন। এরূপ যোগ্যতা সম্পন্ন মহান আলিমকে মুজতাহিদ বলা হয়। ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাঁদের আগমন অব্যাহত থাকবে। তাঁরা ইসলামের কোন পরিবর্তন, পরিবর্ধন সাধন করবেন না। বরং ইসলামকে বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা করবেন। একথা সহজেই অনুধাবন যোগ্য- যারা এ ধরণের কথা বলে যে, “বৈজ্ঞানিক মাধ্যম পরিবর্তন হয়ে গেছে, নতুন-নতুন বিষয় আমাদের সামনে এসেছে। সুতরাং দ্বীনের মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে। কুরআন শরীফ এবং হাদীস শরীফের (النص) নছ বা সুস্পষ্ট অর্থগুলোর নতুন ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে হবে, নতুন নতুন ইজতিহাদ করতে হবে”- এ সকল ওহাবী, লা-মাযহাবী, খারিজী নব্য মুজতাহিদবৃন্দ ইসলামের দুশমন। এরাই অবিশ্বাসী-যিন্দিক।
যখন কেউ এ সত্যিকার আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অর্থাৎ চার মাযহাবের যে কোন একটির অনুসরণ করবে, তখন তার সমস্ত আমল-ইবাদত, সে মাযহাব ব্যতীত অন্য কোন মাযহাব অনুসারে করবে না। তবে কেউ যদি এমন কোন কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েন যে, তার নিজের মাযহাব অনুসারে আমল করতে পারেন না, তবে মাজুর হিসেবে নির্দিষ্ট শর্ত-সাপেক্ষে অন্য মাযহাবের উপর আমল করতে পারবেন। কিন্তু অন্য মাযহাবের কোন মাসয়ালা অপেক্ষাকৃত সহজতর হলেই সেটার উপর আমল করাকে তালফীক বলে। এ ধরণের তালফীক হারাম। তাই কুরআন শরীফ বুঝতে হলে এবং ইল্ম অর্জন করতে হলে একজন নির্দিষ্ট মাযহাবের নির্ভরযোগ্য ফিক্বাহের কিতাব থেকেই অর্জন করবে। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আলিমদের দ্বারা নির্ভরযোগ্য হিসেবে সাব্যস্ত নয় এমন সব কিতাব থেকে ধর্মীয় জ্ঞান আহরণ করা বিষপান তুল্য। বাজারের অনির্ভরযোগ্য কিতাবাদি অনুসারে ইবাদত-বন্দিগী করা হারাম।
হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়ার কিতাবের উদাহরণ হিসেবে বলা যায় মাবসূত, জামে ছগীর, জামে কবীর, সিয়ারে ছগীর, সিয়ারে কবীর, যিয়াদাত, কাজীখান, বাহরুর রায়িক, খুলাসা, বায্যাজিয়া, রদ্দুল মুহতার, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ইত্যাদি। এছাড়া মুখতাসারুল খালিল কিতাবটি মালিকী মাযহাব অনুসারে লিখিত। আল আনোয়ার লি-আমালি আবরার শাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব। এ সমস্ত কিতাবই সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য।
ইবাদত এবং আহ্কামের জ্ঞান শুধুমাত্র হাদীস শরীফের কিতাবসমূহ থেকে বের করা এক কঠিন দূরূহ কাজ। আহকাম বলা হয়, কোন জিনিসকে হালাল অথবা হারাম সাব্যস্ত করা। হাদীস শরীফের সবচাইতে নির্ভরযোগ্য কিতাবগুলো হলো, ছহীহ্ আল বুখারী, ছহীহ্ আল মুসলিম, মুয়াত্তা মালিক, কিতাবুল উম্ম, মুসনদে আহমাদ এবং কুতুব আস সিত্তার অন্য চারটি কিতাব সহ অন্যান্য ৫০টিরও অধিক ছহীহ হাদীস শরীফের কিতাবসমূহ।
ছূফীয়া-ই-কিরামের তরীক্বার ব্যাখ্যা দানকারী মূল্যবান কিতাবসমূহের উদাহরণ হলো হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গায্যালী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ইহ্ইয়াউ উলুমিদ্দীন, ক্বিমিয়ায়ে সায়াদাত, গাউসুল আ’যম হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ফতহুল গয়ব, ফতহুর রব্বানী, ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফেছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মাকতুবাত-ই-ইমামে রব্বানী, শাহ্ সূফী হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মসনবী শরীফ প্রভৃতি এ সকল অমূল্য কিতাব শরীয়ত ও তরীক্বত উভয়টিরই ব্যাখ্যা প্রদানকারী। যে কোন আলিম, ছূফী, দরবেশ ইত্যাদি দাবীদার লোকের জন্য কুরআন শরীফের অনুবাদ, তাফসীর ও অন্যান্য কিতাবাদি অনুসারে আমল করা জায়িয নয়। বরং আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ইলমুল হালের (আকাঈদ, ফিক্বহ ও তাছাউফ) ইত্যাদি কিতাবাদি যেগুলো ইসলামের মৌলিক বিষয়ের শিক্ষা দিয়ে থাকে তার মধ্যে উপরে বর্ণিত নির্ভরযোগ্য কিতাব সমূহের ন্যায় কিতাব যা হক্কানী-রব্বানী ওলামায়ে কিরামের কাছে গ্রহণযোগ্য তা থেকে ঈমানী আমালী দিকসমূহ শিক্ষা করতে হবে। (অসমাপ্ত)
ফিক্বহুস্ সুনান: নামাযের মাকরূহ্ সমূহের বয়ান
ফিক্বহুস্ সুনান পুরুষ ও মহিলার নামাযের পার্থক্যের বয়ান
ফিক্বহুস্ সুনান- মুসাফিরের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়ার বয়ান
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১২৩)