عن ابى العجفاء رضى الله تعالى عنه قال قال النبى صلى الله عليه وسلم رأت امى حين وضعتنى يسطع منها نور أضائت له قصور الشام.
অর্থঃ- হযরত আবুল আজফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন আমি ভূমিষ্ঠ হই, তখন আমার মাতা দেখলেন যে, একখন্ড নূর তাঁর শরীর মুবারক থেকে বের হয়ে শাম দেশের রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত সমস্ত কিছুকেই আলোকিত করে ফেললেন। (কানযুল উম্মাল, ইবনে সা’দ)
অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টির শুরু থেকে এমন কি হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম থেকে শুরু করে হযরত আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পর্যন্ত সরাসরি নূর আকারেই স্থানান্তরিত হয়েছেন। এমনকি যমীনে তাশরীফ আনার সময়ও নূর আকারে তাশরীফ এনেছেন।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুনিয়াতে তাশরীফ আনার পদ্ধতিও সাধারণ মানুষের মত নয়। বরং তিনি নূরে মুজাস্সাম ও রহ্মাতুল্লিল আলামীন হওয়ার কারণে হযরত আমিনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর বাম পাঁজরের নীচ থেকে কুদরতীভাবে ভূমিষ্ঠ হয়েছেন। অর্থাৎ নূর বা রহ্মত একস্থান হতে অন্যস্থানে স্থানান্তরিত হওয়ার জন্য যেমন কোন রাস্তা, পথের দরকার নেই, তেমন তিনি সরাসরি নূর ও রহ্মত হওয়ার কারণে স্বাভাবিক স্থান ব্যতীত কোন রাস্তা ছাড়াই সম্পূর্ণ কুদরতীভাবে যমীনে তাশরীফ এনেছেন।
উল্লেখ্য যে, অনেকে বলে থাকে, “সমস্ত মানুষ মায়ের রেহেম শরীফ হতে যেভাবে জন্মগ্রহণ করে থাকে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও সেভাবে আগমন করেছেন।” তাদের একথা সম্পূর্ণ ভুল। তাদের বক্তব্য ভুল হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো তারা একটি হাদীছ শরীফে বর্ণিত “فرج” শব্দের একাধিক শাব্দিক অর্থ থেকে একটি অর্থের উপর ভিত্তি করেই বক্তব্য পেশ করেছে। অর্থটি হচ্ছে স্বাভাবিক স্থান।
اخرج ابو نعيم وكذا ابن سعد عن بريدة عن مرضعته صلى الله عليه وسلم فى بنى سعد ان أمنة قالت رأيت كانه خرج من فرجى شهاب اضائت له الارض حتى رأيت قصور الشام.
অর্থঃ- “আবূ নঈম এবং অনুরূপ ইবনে সা’দ বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন। তিনি বণী সা’দ গোত্রীয় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুধ মা (হযরত হালিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা) থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই হযরত আমিনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, আমি দেখেছি যে, আমার র্ফজ থেকে একটি আলোকবর্তিকা বের হলো। তার দ্বারা সমস্ত যমীন আলোকিত হলো। এমনকি আমি সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ দেখতে পেলাম।” (আল বাইয়্যিনাত ৯৪/৬৮)
وعن همام بن يحيى عن اسحاق بن عبد الله ان ام رسول الله صلى الله عليه وسلم قالت لما ولدته خرج من فرجى نور اضاء له قصور الشام فولدته نظيفا مابه قذر.
অর্থঃ- “হুমাম ইবনে ইয়াহইয়া তিনি ইসহাক ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আম্মা বলেন, যখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যমীনে আগমন করলেন তখন আমার র্ফজ থেকে একটি নূর বের হলো। যার দ্বারা সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকিত হলো। তিনি আগমন করেছেন পাক-সাফ অবস্থায়। তাঁর মধ্যে কোন নাপাকী ও ময়লা ছিলনা।” (আল বাইয়্যিনাত ৯৪/৬৮)
অথচ “فرج” শব্দটির এ অর্থ ব্যতীত আরো অর্থের বর্ণনা পাওয়া যায় বিভিন্ন লুগাত বা অভিধানে। তাহলো- ফাঁক, ফাটল, প্রবেশ পথ, সুড়ঙ্গ, দু’হাত কিংবা দু’পায়ের মধ্যবর্তী স্থান, দু’জিনিসের মাঝে ব্যবধান সৃষ্টিকারী বস্তু, পুরুষ-মহিলা, যুবক প্রত্যেকের শরমগাহ্ এবং তার চতুর্দিকের স্থান ও সন্তান মায়ের রেহেম শরীফ হতে যে স্থান দিয়ে ভুমিষ্ঠ হয় ইত্যাদি। অর্থাৎ এক কথায় فرج শব্দের অর্থ হলো ঐ রাস্তা যে রাস্তা দিয়ে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়, তা প্রত্যেক মায়ের শরীরের যেকোন স্থান দিয়েই হোক। فرج শব্দটি সকলের ক্ষেত্রে এক অর্থ প্রদান করবেনা। যেমন সাধারণ মানুষের শানে যখন فرج শব্দটি ব্যবহার হবে, তখন এর অর্থ হবে সাধারণ ও স্বাভাবিক স্থান।
আর অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের শানে যখন এ শব্দ ব্যবহার হবে, তখন এর অর্থ হবে নাভী ও স্বাভাবিক স্থানের মধ্যবর্তী স্থান।
আর যখন আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শানে এ শব্দ ব্যবহার হবে, তখন এর অর্থ হবে বাম পাঁজরের নীচের স্থান। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভূমিষ্ঠ হওয়া সম্পর্কে কিতাবে চারটি মত বর্ণিত হয়েছে।
যেমন- এ প্রসঙ্গে কিতাবে বর্ণিত হয়েছে,
اعلم ان فى موضع ولادة النبى صلى الله عليه وسلم اربعة اقوال. الاول انه ولد من الخاصرة اليسرى والثانى انه ولد من نقبة بين الفرج والسرة والثالث انه ولد من فم امه والرابع انه ولد من المخرج المعتاد.
অর্থঃ-“জেনে রাখ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ভূমিষ্ঠ হওয়ার স্থান সম্পর্কে চারটি ক্বওল রয়েছে। (১) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (স্বীয় মাতার) বাম পার্শ্বের পাঁজরের নীচ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছেন। (২) স্বাভাবিক স্থান ও নাভীর মধ্যবর্তী স্থান হতে। (৩) তাঁর মাতা হযরত আমিনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর মুখ থেকে। (৪) স্বাভাবিকভাবে।”
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ভূমিষ্ঠ হওয়া সম্পর্কে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের সকল ইমাম-মুজ্তাহিদ ও আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অভিমত হলো,
كل مولود غير الانبياء يولد من الفرج وكل الانبياء غير نبينا مولودون من فوق الفرج وتحت السرة واما نبينا صلى الله عليه وسلم فمولود من الخاصرة اليسرى تحت الضلوع.
অর্থঃ- “আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণ ব্যতীত সমস্ত মানুষই (স্বীয় মায়ের) স্বাভাবিক স্থান থেকে জন্ম গ্রহণ করে। আর সমস্ত আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণ স্বাভাবিক স্থানের উপর ও নাভীর নীচ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছেন। আর আমাদের নবী সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (হযরত আমিনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর বাম পার্শ্বের পাঁজরের নীচ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছেন।” (উমদাতুন্ নুকুল ফি কাইফিয়াতে বিলাদাতির রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাসিক আল বাইয়্যিনাত/৯৪)
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ সাধারণ মানুষের মতো ভূমিষ্ঠ হননি। বরং আল্লাহ্ পাক তাঁদেরকে খাছ কুদরতীভাবে স্বাভাবিক স্থান ব্যতীত অন্যস্থান দিয়ে ভূমিষ্ঠ করিয়েছেন।
এ সম্পর্কে আরো বর্ণিত আছে যে,
ولم يصح نقل ان نبيا من الانبياء ولد من الفرج ولهذا افتى المالكية بقتل من قال ان النبى صلى الله عليه وسلم ولد من مجرى البول.
অর্থঃ- “আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণ স্বীয় মাতার স্বাভাবিক স্থান থেকে জন্মগ্রহণ করেছেন একথা সম্পূর্ণরূপেই অশুদ্ধ। আর এজন্যই মালিকী মায্হাবের ইমামগণ ঐ ব্যক্তিকে ক্বতল করার ফতওয়া দিয়েছেন, যে ব্যক্তি বলবে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (তাঁর মাতার) স্বাভাবিক স্থান দিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়েছেন।” (উমদাতুন্ নুকুল ফি কাইফিয়াতি বিলাদাতির রসূল)
উল্লেখ্য, বর্তমানে আমরা দেখতে পাই যে, সন্তান যখন স্বাভাবিক রীতি অনুযায়ী ভূমিষ্ঠ হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে, তখন সে সন্তানকে অপারেশন করে মায়ের রেহেম শরীফ থেকে বের করে আনতে হয়। এ অবস্থায় নাভীর নীচে ও স্বাভাবিক স্থানের উপর অপারেশন করতে হয়। অর্থাৎ এ অবস্থায়ও সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক পথে ভূমিষ্ঠ হয়না।
অতএব, এ বিষয়ে সকলকেই আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা মুতাবিক আক্বীদা পোষণ করতে হবে। আর তাহলো “আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণ ব্যতীত সমস্ত মানুষই (স্বীয় মায়ের) স্বাভাবিক স্থানের থেকে জন্মগ্রহণ করে। আর সমস্ত আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণ স্বাভাবিক স্থান উপর ও নাভীর নীচ থেকে ভুমিষ্ঠ হয়েছেন। আর আমাদের নবী সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর আম্মা (হযরত আমিনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা)-এর বাম পার্শ্বের পাঁজরের নীচ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছেন। সুতরাং এর খিলাফ আক্বীদা পোষণ করার অর্থ হলো আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ইহানত করা যা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। আগমন পদ্ধতির বিভিন্নতার কারণে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুনিয়াতে তাশরীফ আনার সময় দুনিয়ার কোন মহিলা সেখানে উপস্থিত ছিলনা। বরং তখন হযরত আমিনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর খিদমত করার জন্য মহান আল্লাহ্ পাক হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালাম, হযরত হাজেরা আলাইহাস্ সালাম, হযরত মরিয়ম আলাইহাস্ সালাম ও হযরত আছিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে প্রেরণ করেন, যাঁরা প্রত্যেকেই নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের আগমনের বিভিন্নতা সম্পর্কে অভিজ্ঞ ছিলেন।
-আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুনিস মুর্শেদ।