সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১২০তম সংখ্যা | বিভাগ:

মহান বারে ইলাহীর জন্যই সব প্রশংসা। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্যই সব ছলাত ও সালাম।   কালাম পাকে মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ ফরমান, “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।” (সূরা মায়িদা/৩)  উল্লেখ্য, ‘দ্বীন ইসলাম’ পরিপূর্ণ হয়েছে শুধু এটাই এ আয়াত শরীফের প্রতিভাত বিষয় নয় বরং এ আয়াত শরীফ অবতীর্ণ হওয়ার পর ইসলামের দাওয়াত দিতে হলে, ইসলামের কথা বলতে হলে, ইসলামের জন্য কাজ করতে চাইলে এখন থেকে পরিপূর্ণ ইসলামের কথাই বলতে হবে অংশত বলা গ্রহণযোগ্য হবে না; এটাই এ আয়াত শরীফের প্রধান বিবেচ্য বিষয়। যা মূলতঃ নুবুওওয়াতের পরিসমাপ্তির শান। ফলতঃ উম্মতে মুহম্মদীর মাঝে যারা আলিম সম্প্রদায় তাদের উপরও এই একই দায়িত্ব বর্তায়।

বলাবাহুল্য, এ কাজটি আজ তারা কতটুকু করছেন সেটাই বিচার্য বিষয়। তাফসীরে বর্ণিত রয়েছে, ‘ইহুদীদের মাশায়িখ ও আলিমরা জানত যে, তারা নিষেধ করলে মানুষ শুনবে এবং বিরত থাকবে; কিন্তু তা সত্ত্বেও উপঢৌকন তথা স্বার্থ হাছিলের লোভে কিংবা কতক ক্ষমতাধর মানুষের বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে তাদের মাশায়িখ ও আলিমরা হক্ব কথা প্রকাশ করতনা।”   বলাবাহুল্য, ইহুদী অসৎ আলিমদের ন্যায় বর্তমান যামানার উলামায়ে ‘ছূ’রাও মনে করছে যে, “প্রচলিত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সাথে যদি তারা আপোষ না করে তাহলে ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদার হওয়া অথবা সুবিধাভোগী হওয়া সম্ভব হবে না।

 ছবি তোলা হাদীছ শরীফে নিষেধ থাকলেও ছবি না তুললে কিভাবে পরিচিতির প্রসার ঘটবে? বেপর্দা হওয়া কুরআন শরীফে নিষিদ্ধ হলেও, বেপর্দা না হলে কিভাবে নেত্রীর পাশে বসা যাবে? নারী নেতৃত্ব হাদীছ শরীফে নিষিদ্ধ হলেও নারী নেতৃত্ব সমর্থন না করলে কিভাবে ক্ষমতাসীন রাজশক্তির অংশীদারিত্ব পাওয়া যাবে? হরতাল, লংমার্চ, মৌলবাদ, কুশপুত্তলিকা ইত্যাদি হারাম হলেও, এসব কর্মসূচী ছাড়া কি করে রাজনৈতিক অঙ্গনে  প্রতিষ্ঠা পাওয়া যাবে? এই লিঞ্ঝা তাদের বোধহীন করে ইসলামের খোলসে ইসলাম বিরোধী কাজে প্ররোচিত করছে।

মূলতঃ এ অবস্থা নামধারী আলিমদের চোর, ডাকাত তথা অন্য সব দুস্কৃতিকারী ও দুর্নীতিবাজদের চেয়ে বড় অপরাধী বলে সাব্যস্ত করে। মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ ফরমান, “আর আপনি তাদের অনেককে দেখবেন যে, দৌঁড়ে দৌঁড়ে পাপে, সীমালঙ্ঘনে এবং হারাম ভক্ষণে পতিত হয়। তারা অত্যন্ত মন্দ কাজ করছে। দরবেশ ও আলিমরা (নামধারী) কেন তাদের পাপ কথা বলতে এবং হারাম ভক্ষণ করতে নিষেধ করেনা। তারা খুবই মন্দ কাজ করছে।” (সূরা মায়িদা/৬২)

 হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “নামধারী মাশায়িখ ও আলিমদের জন্য সমগ্র কুরআন শরীফে এ আয়াতের চেয়ে কঠোর হুশিয়ারী আর কোথাও নেই।” ‘ইবনে জারীর’ ও ‘ইবনে কাছিরে’ মন্তব্য করা হয়েছে, “নামধারী আলিম ও মাশায়িখের জন্য এ আয়াত শরীফ সর্বাধিক ভয়াবহ।”

মূলতঃ এসব ভয়াবহ পরিণতির পর্যায়ভুক্ত নামধারী আলিম সম্পর্কেই হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয়ই নামধারী আলিমরাই নিকৃষ্ট জীব।” (দারিমী শরীফ, কানযুল উম্মাল)

পক্ষান্তরে যারা হক্কানী-রব্বানী আলিম তাদের সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয়ই আলিমরা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। তারাই নবীগণের ওয়ারিছ।”  বলাবাহুল্য, যামানার মুজাদ্দিদ তাদেরই পুরোধা ও ইমাম।

উল্লেখ্য, নামধারী আলিমরা যখন “তোমরা অল্প মূল্যের বিনিময়ে আমার আয়াত শরীফকে বিক্রি করোনা” (সূরা বাক্বারা/৪১) অথবা “তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশ মানবে আর কিছু অংশ অস্বীকার করবে। (সূরা বাক্বারা/৮৫) উদ্ধৃত আয়াত শরীফের মিসদাক হয়ে নিজেদের জন্য সুবিধাজনক ইসলামের কথা বলছে আর স্বার্থের খিলাফ ছবি তোলা, নারী নেতৃত্ব গ্রহণ, বেপর্দা হওয়া ইত্যাদি হারাম কাজের কথা চুপিয়ে রাখছে তখন কেবলমাত্র বর্তমান যামানার মহান মুজাদ্দিদই উলামায়ে ‘ছূ’দের চুপিয়ে রাখা হারামকে প্রকাশ্যে হারাম বলে ঘোষণা দিচ্ছেন। একমাত্র তিনিই শাশ্বত ইসলামের রূপরেখা পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করে দিয়ে মিছদাক হচ্ছেন ঐ আয়াত শরীফের- “তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর।” (সূরা বাক্বারা) মূলতঃ ইসলামের দাওয়াত দিতে হলে পরিপূর্ণ দাওয়াতই দিতে হবে। এখন দু’জনেই নারী, কাজেই নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বলা যাবেনা, বর্তমান যুগে ছবির বিরুদ্ধে বলা যাবেনা, পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এখন বেপর্দা হয়েই ইসলামের কাজ করতে হবে’ এসব বক্তব্য মূলতঃ মুনাফিকী। এরূপ মন্তব্যের দ্বারা ইসলামের পরিপূর্ণতা অস্বীকার করা হয়, দ্বীন ইসলামকে পূর্ণভাবে,খতমে নুবুওওয়াতকে সম্পূর্ণভাবে স্বীকার, প্রচার ও প্রকাশ করা হতে চুপিয়ে রাখা হয়।   অথচ মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাযিলকৃত দ্বীন ইসলামকে, পরিপূর্ণ ইসলামকে তথা হক্ব কথাকে তো কাউকে না কাউকে বলতেই হবে। মূলতঃ বর্তমান যামানার মহান মুজাদ্দিদকেই রহমানূর রহীম আল্লাহ্ পাক তজ্জন্য বেমেছালভাবে মনোনীত করেছেন। তিনিই খোদায়ী যবানে ইসলামের পূর্ণ রূপরেখা তুলে ধরছেন। তার উছীলায়ই বর্তমান যামানায় শাশ্বত ইসলাম পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ পাচ্ছে ও টিকে আছে।

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়