সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১১৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

সকল ছানা-ছিফত মহান আল্লাহ্ পাক-এর জন্য। এমন ছানা ছিফত যাতে তিনি সন্তুষ্ট হন। অপরিসীম, অকৃত্রিম অগণিত দরূদ ও সালাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। এমন দরূদ ও সালাম যা তিনি পছন্দ করেন।  হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “উত্তম কথা তা, যা সংক্ষিপ্ত অথচ ব্যাপক ও গভীর অর্থবোধক।”(কানযুল উম্মাল)  আল্লাহ্ পাক-এর শুকরিয়া যে, বর্তমান যামানার মুজাদ্দিদ, ইমামুল আইম্মা, কুতুবুল আলম, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, আওলার্দু রসূল, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী এই হাদীস শরীফের পূর্ণ মিসদাক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মর্যাদা-মর্তবা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মূলতঃ খালিক-মালিক, রব্বুল আলামীন, আল্লাহ্ পাক-এর পর  যার স্থান তিনিই ফখরে আওয়ালীন ওয়াল আখিরীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”       আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন, “তোমাদেরকে যে নিয়ামত দেয়া হয়েছে তা তোমরা আলোচনা কর, প্রকাশ কর।” (সূরা দোহা/১১) এ আয়াত শরীফ সম্পর্কে উল্লেখ্য যে, সবচাইতে বড় নিয়ামত হচ্ছেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। কারণ কায়িনাত যদি তাঁকে না পেত তাহলে আল্লাহ্ পাককেও পেতনা।  প্রসঙ্গতঃ আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব বলেছেন, “আল্লাহ্ পাক দেন আর আমি বন্টন করে থাকি।”(মিশকাত)  কিন্তু আল্লাহ্ পাক দিলে বান্দা পাবে কোথা থেকে? আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাধ্যম ব্যতীত। কাজেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বর্ণনা দিয়েই আল্লাহ্ পাক-এর প্রশংসা করতে হবে।    স্মর্তব্য, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রশংসা যে করতে পারবেনা, সে আল্লাহ্ পাক-এরও প্রশংসা করতে পারবে না। আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুহব্বতের হক্ব যে আদায় করতে পারবেনা, সে আল্লাহ্ পাক-এর মুহব্বতের হক্বও আদায় করতে পারবেনা।  তাই উল্লেখ্য যে, ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই যে সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ যা ঈদুল আকবর বা ঈদুল আ’যম; তা উদ্যাপনের ঘনঘটা, ব্যাপকতা, প্রাচুর্যতা অথবা দায়সারা মানসিকতা, উম্মত হিসেবে আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি আমাদের মুহব্বতের মাপকাঠির সূচক নির্দেশ করে।  পাশাপাশি উল্লেখ্য, আমাদের সমাজে দীর্ঘদিন ধরে দু’টি মহলের বিপরীতে দুটি বিশেষ অভিযোগ ব্যাপকভাবে শিকড় গেঁড়েছে।  একটি মহল রয়েছে যারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমাদের মত মানুষ মূল্যায়ন করতেই বিশেষ আগ্রহী। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাক্বীকী মর্যাদা-মর্তবা প্রকাশ এদের গাত্রদাহের কারণ হয় এবং মীলাদ ও ক্বিয়াম এদের অন্তঃকরণে জ্বালা-পোড়ার উদ্রেক করে। অপরদিকে এর বিপরীত মহলটি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মর্যাদা প্রকাশে আল্লাহ্ পাক-এর জাতের সাথে সম্পৃক্ত করে ফেলে।  প্রথম ক্ষেত্রে স্মর্তব্য যে, আল্লাহ্ পাক তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শান সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন, “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনার যিকিরকে বুলন্দ করেছি।” (সূরা ইনশিরাহ্/২)    যা এমন যে, ক্বিয়ামত পর্যন্ত কোন ব্যক্তি যদি শুধু লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ সাক্ষ্য দেয় তথাপিও ঈমানদার হতে পারবেনা, যতক্ষণ না সে ব্যক্তি মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্বীকৃতি না দিবে।       অতএব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শান-মান প্রকাশে যাদের মর্মজ্বালা তৈরী হয় তারা মূলতঃ আল্লাহ্ পাক-এর বিরোধিতায় কুফরী করে। অপরদিকে আল্লাহ্ পাককে আল্লাহ্ পাক এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রসূল হিসেবে মূল্যায়নের সীমারেখা অতিক্রমকারীরাও গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। আর তাদের আপাত মুহব্বত প্রকাশও কোন ফায়দার দাবীদার হতে পারেনা।  প্রকৃত অর্থে ঈদে আকবর বা ঈদে আ’যম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মূল্যবোধে উজ্জীবিত হতে হলে ত্রুটিপূর্ণ এ দু’টি দল থেকেই পৃথক হয়ে ছহীহ আক্বীদা পোষণ করতে হবে।   আক্বীদার ক্ষেত্রে আরো উল্লেখ্য যে, শুধুমাত্র ক্বাদিয়ানীরাই  যে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শেষ নবী অস্বীকারকারী কাফির গোষ্ঠী বিষয়টি তা নয়; বরং বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি দিন দিন পরিষ্কারভাবে প্রকাশ পাচ্ছে যে, আপাতভাবে কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করলেও নামধারী উলামারাও তাদের নিজস্ব পোষণ ও প্রচারকৃত মনগড়া মত বা ফতওয়া দ্বারা কার্যতঃ খতমে নুবুওওয়াত অস্বীকারকারী তথা নব্য কাদিয়ানী হিসেবে পর্যবসিত হচ্ছে। কুরআন-সুন্নাহর স্পষ্ট বিধি নিষেধ তারা দ্বিধাহীন ভাবে একের পর এক খিলাফ করে চলছে, আর ‘বর্তমান সময়ের প্রয়োজনে’ তা জায়িয বলে ফতওয়া দিচ্ছে।

কুরআন শরীফে স্পষ্টভাবে পর্দার কথা থাকলেও ‘বর্তমান সময়ের প্রয়োজন’ বলে তারা তাও অস্বীকার করছে। এভাবে ছবি তোলা, লংমার্চ করা, হরতাল করা, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া, মৌলবাদ দাবী করা, গণতন্ত্র করা ইত্যাদি স্পষ্টভাবে কুরআন-সুন্নাহর নিষেধ থাকার পরেও তারা ‘বর্তমান সময়ের প্রয়োজনে’ দরকার বলে তা জায়িয করছে। তাদের কথা দ্বারা এই প্রতিভাত হয় যে, বর্তমান সময় সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক ও আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানতেন না। অথবা বর্তমান সময়ে ইসলামী আদর্শ অচল বা তারাই বর্তমান সময়ের নবী। মূলতঃ তারা ইসলামের নামে দাবীকরলেও তাদের কর্মসূচী পালন দ্বারা মূলতঃ ইসলামই থাকেনা এবং আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শেষ নবী মানা হয়না।

আল্লাহ্ পাক ইরশাদ ফরমান, “আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করার কোন ইখতিয়ার নেই। যে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্যে পথ ভ্রষ্টতায় পতিত হয়।” (সূরা আহযাব/৩৬)

বলাবাহুল্য, এই আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ মু’মিনে কামিল হতে পারবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের বাবা-মা, সন্তান-সন্ততি এমনকি নিজ নফ্স থেকে আমাকে বেশী মুহব্বত না করবে।” (তিরমিযী শরীফ) মূলতঃ এই আয়াত শরীফ ও হাদীস শরীফের আমলে অনিবার্যভাবে চাই ইল্মে তাছাউফ। ইল্মে তাছাউফের ভাষায় রিয়াজত-মুশাক্কাতের মাধ্যমে নফ্সানিয়াত মিটিয়ে পূর্ণ ইছলাহ্র মাধ্যমেই সে রূহানি কুয়ত হাছিল করা সম্ভব। যার ফলশ্রুতিতে নফ্স মুৎমাইন্নায় পরিণত হয় এবং তখনি সে মুবারক নফ্সের পক্ষে, আল্লাহ্ পাক-এর মতে মত, আল্লাহ্ পাক-এর রসূলের পথে পথ হওয়া সম্ভব হয়।  বলাবাহুল্য, বর্তমান যামানায় এর জ্বলন্ত নিদর্শন হচ্ছেন মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক, ইমামুল আইম্মা, কুতুবুল আলম, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, আওলার্দু রসূল, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী।   তিনি সেই বেমেছাল মুৎমাইন্না নফসের অধিকারী যে প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ ফরমান, “হে প্রশান্ত নফস! আপনার রবের দিকে সন্তুষ্টচিত্তে প্রত্যাবর্তন করুন।” (সূরা ফজর/২৯) মূলতঃ এরূপ যোগ্যতাসম্পন্ন হওয়ার কারণেই কেবলমাত্র তার পক্ষেই  সম্ভব হাক্বীক্বী আল্লাহ্ পাক-এর মতে মত হওয়া। তাই তিনি ঐসব নামধারী আলিমদের থেকে আলাদা, যাদের প্রসঙ্গে হাদীস শরীফের ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের পন্থাগুলো অনুসরণ-অনুকরণ করবে। এমনকি তারা যদি গুইসাপের গর্তেও ঢুকে থাকে তাহলে তোমরাও তাতে ঢুকবে। আমরা আরজ করলাম, হে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, ইহুদী ও নাসারাদের? তিনি বললেন, তবে আর কারা হবে। (বুখারী শরীফ)

উল্লেখ্য, এদের বিপরীতে তিনি মিসদাক ঐ হাদীস শরীফের যাতে বলা হয়েছে, “সর্বাবস্থায় আমার উম্মতের মধ্যে একদল লোক থাকবে যারা ক্বিয়ামতের চূড়ান্ত ফায়সালা আসা পর্যন্ত লোকদের বিরুদ্ধে বিজয়ী থাকবে।” (বুখারী শরীফ) মূলতঃ তাঁর প্রতিষ্ঠিত মাসিক আল বাইয়্যিনাতই এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ প্রমাণ।

মহান আল্লাহ্ পাক-এর গায়িবী মদদে মাসিক আল বাইয়্যিনাতে শুরু থেকেই বাতিলের বিরুদ্ধে ক্ষুরধার লেখনী চলছে। বর্তমান আখিরী যামানায় নামধারী আলিমরা ইসলামী জ্ঞান বিতরণের নামে তথাকথিত ইসলামী পত্রিকাগুলোতে এমন বিভ্রান্তিকর, মনগড়া ও জিহালতপূর্ণ লেখনী প্রকাশ করছে যা রীতিমত উদ্ভটই কেবল নয় বরং মহা উদ্বেগজনক। এসব কথা সম্পর্কেই হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “যা তোমরা শোননি, তোমাদের বাপ-দাদা চৌদ্দ পুরুষ শুনেনি।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

বলাবাহুল্য, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর প্রতিটি সংখ্যায়ই অন্যান্য পত্রিকার মনগড়া, ভুল উত্তরগুলো দলীল দ্বারা খণ্ডিয়ে হক্ব মত পেশ করা হয়। বিগত বারো বছরের খতিয়ানে দেখা যায় মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগে পত্রস্থ হয়েছে কেবল মাত্র মাসিক মদীনার ক্ষেত্রে ১৪৩টি ভুল এর ছহীহ জাওয়াব, হাটহাজারী পত্রিকার ৭৭টি, হদস পয়গামের ৬৬টি এবং অন্যান্য পত্রিকার ভুলসহ মোট ৩৬৬টি ভুলের সহীহ জাওয়াব। বলাবাহুল্য এসব ভুল খণ্ডিয়ে দেয়ার ব্যাপারে মসিক আল বাইয়্যিনাত ব্যাপক দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দিয়েছে।         এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ১১৬তম সংখ্যার অবকাশে মাসিক আল বাইয়্যিনাতে ফতওয়া দেয়া হয়েছে ২২টি এবং তাতে দলীল দেয়া হয়েছে প্রায় ১০ হাজার, সুওয়াল দেয়া হয়েছে প্রায় ১৬’শর মত, আর তাতে দলীল দেয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার। অর্থাৎ দালীলিক উপস্থাপনার ব্যাপারে মাসিক আল বাইয়্যিনাত যুগান্তকারী ইতিহাস তৈরী করেছে। উল্লেখ্য, এটিই হক্ব ও সত্য হওয়ার প্রমাণ। আল্লাহ্ পাক ইরশাদ ফরমান, “তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাক তবে দলীল সমূহ পেশ কর।” (সূরা বাক্বারা/১১১)        বলাবাহুল্য, পবিত্র ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তথা ঈদুল আকবর বা ঈদুল আযম-এর এই মুবারক মুহূর্তে তাজদীদী লেখনীর ধারাবাহিকতায় এক যুগ পার হয়ে নতুন মুবারক সূচনায় মহান আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে আমরা জানাই অব্যক্ত শুকরিয়া।

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়