সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১১৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

সময়ের নিয়ন্তা মহান আল্লাহ্ পাক-এর জন্যই সব প্রশংসা। আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্যই সব ছলাত ও সালাম।           মুহ্ররমুল হারামের পর মাহে ছফর উপস্থিত। বিবিধ কারণে এ মাসটি বেশ ফযীলতপূর্ণ ও তাৎপর্যমন্ডিত। জীবনের শেষ বর্ষে, এগার হিজরী সালে ‘ছফর’ পূর্ব মুহ্ররম মাসে সাইয়্যিদুল আউয়ালীন ওয়াল আখিরীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়েন। ছফর মাসেও তা অব্যাহত থাকে। কিন্তু এ মাসের শেষ বুধবার সকালে তিনি খানিকটা সুস্থতা লাভ করেন। এ সুস্থতার খবর হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে বিশেষ উৎফুল্ল করে তোলে। শোকরিয়া স্বরূপ তাঁরা অকাতরে দান-খয়রাত করেন। ছফর মাসের শেষ বুধবারের এই ঘটনা ফার্সী ভাষায় “আখিরী চাহার শোম্বা” বলে আমাদের মাঝে পরিচিত। সঙ্গত কারণেই এই দিনটির ফযীলত হাছিলে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের অনুকরণে আমাদেরও যথাযোগ্য কোশেশ করা কর্তব্য।   কুরআনে কারীমায় আল্লাহ্ পাক ইরশাদ ফরমান, “সত্য এসেছে, মিথ্যা দূরীভূত হয়েছে। নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই মিথ্যা দূরীভূত হওয়ার যোগ্য।” এ আয়াত শরীফ যুগে যুগে যেসব মহান ওলীআল্লাহ্র জীবদ্দশায় বাস্তবরূপে প্রতিফলিত হয়েছে, তাদের মাঝে আবুল বরকত, হযরত শায়খ আহমদ ফারুকী সিরহিন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একদিকে প্রবল প্রতাপশালী আকবরী রাজশক্তির “দ্বীনে ইলাহী” কুফরী ফিৎনা, অপরদিকে নামধারী তথাকথিত মশহুর উলামা তথা উলামায়ে ‘ছূ’ গোষ্ঠীর কুতৎপরতা; সবকিছুই তিনি নির্মূল করেছিলেন। বাতিল ও বিদ্য়াতকে মিটিয়ে দিয়েছিলেন। ইসলামের জাগরণ ঘটিয়েছিলেন, সুন্নতের পূনঃপ্রচলন করেছিলেন। তাই রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে লক্বব দিয়েছিলেন, ‘মুযাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি।’ (মকতুবাত শরীফ)

স্মর্তব্য, গতানুগতিক রাজ ক্ষমতার অভীষ্ট লক্ষ্য নিয়ে তাঁর হিদায়েতের কাজ চালিত হয়নি। এতদুদ্দেশ্যে তিনি করেননি কোন জনসভা, মিছিল-মিটিং অথবা জ্বালাও-পোড়াওয়ের সংগ্রাম। যদিও কথিত সে সংগ্রামে সফল হবার যথেষ্ট জনশক্তি তাঁর ছিল; তবে এ শক্তিকে তিনি গায়রুল্লাহ্ জনিত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত করেননি। করেছেন খুলুছিয়তের পথে, ইছলাহের পথে, ইসলামের রাহবার বাদশাহর দরবারে এদের সংখ্যা ছিল এক নিয়ামক শক্তি। যাঁদের তাছীরে বাদশাহ্ জাহাঙ্গীর হন অনুপ্রাণিত এবং সেই সাথে হযরত মুযাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর অনুরক্ত। আর স্বভাবতঃই এই আবহর প্রেক্ষাপটে ইসলামী প্রথাসমূহ হয় পুনরুজ্জীবিত।  মূলতঃ হযরত মুযাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর পবিত্র আলোচনা আমাদেরকে একজন মুযাদ্দিদের আগমন কাল, তাঁর কাজের প্রেক্ষাপট ও নীতি বা কৌশল সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা দান করে। হিজরী শতকের প্রারম্ভ, যামানার উলামায়ে ‘ছূ’ তথা নিকৃষ্ট বিদয়াতীদের উন্মত্ত তাণ্ডব আর তাদের বিপরীতে মুযাদ্দিদুয্ যামানের বিদ্য়াত নিমূলীকরণ, সুন্নতের পূঙ্খানুপূঙ্খ অনুসরণ তথা পুনঃ প্রচলন বা জিন্দাকরণ এর অবকাশ এই দিক নির্দেশনার মূল কথা। যার প্রতিচ্ছবি আমাদের আজকের সমাজে অত্যন্ত স্পষ্ট।                   ক্ষমতা প্রাপ্তির মোহে শ্বাশত ইসলামের স্পষ্ট বিধি নিষেধ ভঙ্গ করে বর্তমান যামানার উলামায়ে ‘ছূ’রা ইসলামের নামে যা করছে, তা হলো- হারাম ছবি, লংমার্চ, কুশপুত্তলিকা দাহ, মৌলবাদ সমর্থন, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া, হরতাল করা, ইসলামের নারী নেতৃত্ব সমর্থন, গণতন্ত্র ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ ইত্যাদি। ইসলামের ফায়সালায় এসব কিছুই নিকৃষ্ট বিদ্য়াত এবং সেই নিকৃষ্ট বিদ্য়াতেই আজকের সকল উলামায়ে ‘ছূ’ গভীরভাবে নিমজ্জিত।   ফলতঃ মুসলিম সমাজের এই ক্রান্তিলগ্নে তাদের কাছ থেকে অথর্ব ভূমিকা ছাড়া আর কিছুই আশা করা যায়না। ইরাকে আমেরিকার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তারা যা করছে তাকে কেবল আধুনিক বিশ্বের তথাকথিত মানবতাবাদীদের কর্মসূচীর সাথেই তুলনা করা চলে। কিন্তু মুসলমান হিসেবে ইসলামী মূল্যবোধের প্রেক্ষিতে ঈমানী জজ্বা ও তওবার অনুভূতি নিয়ে শানিত হওয়ার কথা তারা কেউ বলেনি।           উল্লেখ্য, মুসলমান যখন আল্লাহ্ পাক-এর সাথে কৃত ওয়াদার কথা ভুলে গাইরুল্লাহ্র দিকে ধাবিত হয়, হারাম-নাজায়িয কাজে সম্পৃক্ত হয় তখন আল্লাহ্ পাক বিজাতীয়-বিধর্মীয় শাসককে মুসলিম দেশের উপর চাপিয়ে দেন। যেমন দিয়েছেন বর্তমান মুসলিম বিশ্বের উপর।       এতদ্বপ্রেক্ষিতে কাঙ্খিত ও বাঞ্ছিত ছিল যে, কথিত আলিম সমাজ মুসলমানদেরকে তওবার পথে আহবান করে তাদের ঈমানের নবায়ন ঘটাবেন। নতুন করে ইসলামী জিন্দেগীর আবহে উজ্জীবিত করবেন। কিন্তু চরম আক্ষেপজনক হলেও সত্য যে, সে পথটি রুদ্ধ করে তারা নিজেরাই গোমরাহীতে লিপ্ত আছেন। নামধারী মাওলানারা কুরআন শরীফে বিবৃত সূরা রূমের ৪১ নং আয়াত শরীফকে উচ্চকিতভাবে তুলে ধরেনি, “যমীনে এবং পানিতে যে সমস্ত ফিৎনা-ফাসাদ ছড়িয়ে পড়ে তা মানুষের হাতের কামাই।”

মনগড়া, যেনোতেনো ছূতো দিয়ে তারা আজ ইসলামের প্রকাশ্য বিধান থেকে বিচ্যূত হয়েছেন। অথচ আল্লাহ্ পাক ইরশাদ ফরমান, “তোমরা সত্যের সাথে বাতিলকে মিশ্রিত করোনা।”(সূরা বাক্বারা/৪২)

“তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশ মানবে আর কিছূ অস্বীকার করবে?” (সূরা বাক্বারা/৮০)

মূলতঃ যেসব নামধারী ব্যবসায়ী মাওলানা, মুফতী, শাইখুল হাদীস, খতীব, পীর ছাহেবরা এই আয়াত শরীফের মিছদাক; আমরা মনে করি, প্রদত্ত আয়াত শরীফ ও হাদীস শরীফ থেকে নছীহত হাছিল করলেই উম্মাহ্র এই নিপীড়িত দশা ঘুচে যাবে, বিজয়ের সোনালী সূর্য উদিত হবে। যা বিদায় হজ্বের মশহুর হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “আমি তোমাদের জন্য দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি (১) কুরআন শরীফ, (২) সুন্নাহ্। যতক্ষণ তোমরা তা আঁকড়ে ধরে থাকবে ততক্ষণ কামিয়াব থাকবে। যখনই তা থেকে বিচ্যূত হবে তখনই লাঞ্ছিত ও পদদলিত হবে।”

মূলতঃ এই হাদীস শরীফের কথক অনেক। কিন্তু তার নূর ক্বলবে সূচীত করার মত ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ্ কেবলমাত্র যামানার মুযাদ্দিদের নেক ছোহবতের দ্বারাই সম্ভব।

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়