লা-শরীক আল্লাহ্ পাক, সকল নিয়ামত, হামদ ও বাদশাহীর মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্যই সকল ছালাত ও সালাম। আরবী বারো মাসের শেষ মাস হিসেবেই নয়, হারাম এবং হজ্বের প্রত্যক্ষ মাস হিসেবেও জিলহজ্ব আলাদা মর্যাদার অধিকারী।
উম্মতে মুহম্মদির জন্য হজ্ব ফরয হিসেবে গণ্য। কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “মানুষের উপর বায়তুল্লাহ্র হজ্ব ফরয করা হয়েছে, যারা সে পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ রাখে।” (আলে ইমরান) আর হাদীস শরীফে হজ্বকে ইসলামের পাঁচ রোকনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
মূলতঃ বদনী (শারীরীক) ও মালী (আর্থিক) ইবাদতের সমন্বয়ে জামিউল ইবাদত, হজ্বের তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য অনেক বেশী গভীর ও সুদূর প্রসারী।
উল্লেখ্য, হজ্বের বিধিবিধান আমাদেরকে বিশেষভাবে নসীহত করে যে, ইসলামী শরীয়তের আহকামের কারণ ও ফায়দা সাধারণ মানবীয় বুুুুদ্ধি বৃত্তির নিরিখে বিচার্য নয়। হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম শয়তানকে দেখে কংকর নিক্ষেপ করেছিলেন, সাধারণ মানুষ শয়তানকে দেখেনা।
সুতরাং তারা কংকর নিক্ষেপ কেন করবে? হযরত হাজেরা আলাইহাস্ সালাম পানির সন্ধানে সাফা মারওয়া দৌঁড়াদৌঁড়ি করেছিলেন, বর্তমানে পানির অভাব শুন্য সাফা-মারওয়া অতিক্রম কেন করা হবে? জোহ্র ও আসর নামায আলাদাভাবে দু’টি নামায হওয়ার পরও আরাফার দিনে কেন তা একই সাথে পড়া হবে? প্রশ্নের উর্ধ্বে হজ্বের আহকামের ক্ষেত্রে এসব প্রশ্ন যেমন গর্হীত, নিন্দনীয় ও বর্জনীয়; তেমনি শরীয়তের সবক্ষেত্রেই এ মূল্যবোধের প্রতিফলন অনিবার্য। আর এরূপ প্রশ্নাতীতভাবে ইসলামী শরীয়ত পরিপূর্ণভাবে পালনের পথেই সম্ভব ইসলামী শরীয়তের প্রতিষ্ঠা তথা খিলাফত কায়িম।
প্রসঙ্গতঃ আজকের গণতান্ত্রিক বিশ্বে তথা স্বদেশে ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, নারী-নেতৃত্ব সমর্থন করা, মৌলবাদ সমর্থন করা, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া, হরতাল করা, লংমার্চ করা, গণতন্ত্র করা, ইসলামের নামে নির্বাচন করা ইত্যাদি চলমান কর্মসূচী ছাড়া কিভাবে ইসলামী আন্দোলন করা সম্ভব? ইত্যকার প্রশ্ন যেসব নামাধারী ইসলামী ব্যক্তিত্বরা উত্থাপন করে, আমরা মনে করি তারা মূলতঃ হজ্বের তাৎপর্য ও মূল্যবোধ তথা ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শ হতেও দারুণভাবে বঞ্চিত এবং গোমরাহীর পথে পরিচালিত।
হজ্বের পাশাপাশি ইসলামী আদর্শের স্বাতন্ত্রবোধের কথা কুরবানীর ক্ষেত্রেও উল্লেখ্য।
কুরবানীর দিন হাঁস-মুরগী জবাই করা মাকরূহ। মাকরূহ হওয়ার পেছনে, মজুসী তথা বিধর্মীদের সাথে মিল হয়ে যাওয়ার কারণটি এতই মশহুর স্বীকার্য যে, কোন মহল থেকেই তাতে বিরোধ ব্যক্ত হয়না। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে একই কারণে যে মাওসেতুং এর লংমার্চ, গান্ধীর হরতাল, খ্রীষ্টানদের মৌলবাদ, ইহুদী-খ্রীষ্টানদের গণতন্ত্র, নির্বাচন ইত্যাদি হারাম তাও বলার অপেক্ষা রাখেনা। বলাবাহুল্য কেবল স্বার্থপ্রবণতার কারণেই সেসব বিষয়ে উলামায়ে ‘ছূ’দের বিরোধ উচ্চারিত হয় না।
ইরাকের উপর ফের মার্কিন হামলা এখন সকলের জন্য শ্বাসরুদ্ধকর বিষয়। উল্লেখ্য, ইরাকের উপর ইঙ্গ-মার্কিন হামলা যেমন তীব্র ক্ষোভের, জোর প্রতিবাদের; তেমনি ইতোপূর্বে ইরান ও কুয়েতের উপরও ইরাকের হামলার ঘটনার পাশাপাশি ইরাকে হামলা চালাতে সৌদী আরব, মিশর, তুরস্ক ইত্যাদি মুসলিম রাষ্ট্রের সমর্থন ও সহযোগিতার বিষয়ও বিশেষ সমালোচনার, চরম আত্মশ্লাঘার। আর এরূপটি হবার ফলেই লিবিয়া, সুদান, ইরান, ইরাক, ইথিওপিয়া, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, চেচনিয়া, কাশ্মীর এমনকি পকিস্তান সহ খোদ বাংলাদেশে তথা সারাবিশ্বে মুসলমানরা আজ বিধর্মী ও বিজাতীয়দের দ্বারা নিষ্পেষিত। অথচ এর থেকে উত্তরণের পথ মুসলমানদের কাছে অজানা নয়। বিদায় হজ্বের মশহুর, “তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত লাঞ্ছিত হবেনা, পদদলিত হবেনা যতক্ষণ তোমরা কুরআন-সুন্নাহ মুতাবিক থাকবে। আর যখন তা থেকে বিচ্যূত হবে তখনই তোমরা বিজাতীয় ও বিধর্মীদের দ্বারা নিষ্পেষিত হবে, লাঞ্ছিত হবে, পদদলিত হবে।” এ হাদীস শরীফ দ্বারা চেতনা জাগরিত করতে মুসলমানরা যতই গাফলতি করবে, নিষ্ক্রিয় থাকবে ততই তাদের উপর বিজাতীয় চাবুকের কশাঘাত তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।
কিন্তু আফসোস! মুসলমানের নফস্ আজ এতই স্ফীত যে, পড়ে পড়ে মার খেলেও নফ্সের গোলামীর জিঞ্জিরেই তারা বোধহীনভাবে আবদ্ধ থাকছে।
অথচ হজ্ব এবং কুরবানীর উদ্দেশ্য হচ্ছে আক্বলকে সাধারণ যৌক্তিকতার পথ থেকে এবং নফ্সকে সহজাত প্রবণতার পথ থেকে ফিরিয়ে, শরীয়তের লাগাম লাগিয়ে, নির্ভেজাল আনুগত্যের পথে পরিচালিত করে ঈমানী জজবা জাগ্রত করা। আর এ দুরূহ কিন্তু অনিবার্য পথে চলতে হলে উলামায়ে ‘ছূ’দের পরিত্যাগ করে, মুযাদ্দিদে যামানের সংস্পর্শে আসা অত্যাবশ্যক।
মহান আল্লাহ্ পাক সে মহান উছীলায় আমাদের হজ্ব ও কুরবানীর প্রকৃত নসীহত তথা নফ্সের শুদ্ধি ও রূহানী শক্তির সমৃদ্ধিতে খিলাফত আলা মিনহাজুন নুবুওওয়া নসীব করুন। (আমীন)