সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক উনার যিনি হায়াত এবং মউতকে সৃষ্টি করেছেন, কার আমল ভাল এবং খারাপ তা প্রমাণিত হওয়ার জন্য। ভাল-মন্দ পার্থক্য নিরূপণকারী সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি বেশুমার ছলাত ও সালাম।
আল্লাহ পাক কুরআনে কারীমায় বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছার উদ্রেক না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের ইচ্ছার উদ্রেক হয়না।’ আল্লাহ তা’য়ালার ইলম ও ইচ্ছার যোগসাধনই তাক্বদীর। তাক্বদীর খুব স্পর্শকাতর বিষয়। তাক্বদীর সম্পর্কিত বিভ্রান্তিকর আলোচনা অতীতের অনেক জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে। তবে তাক্বদীর দোয়া দ্বারা পরিবর্তিত হয় তাও হাদীস শরীফেরই কথা। সুতরাং শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রিতে যখন মানুষের জন্ম-মৃত্যু, রিযিক বন্টন সহ খাছ রহমত নাযিল করা হয় তখন সে রাত্রিতে ইবাদত-বন্দিগীতে মশগুল থেকে স্বীয় তাক্বদীরকে মুবারক করাই বুদ্ধিমানের কাজ। যদিও কোন কোন মহল মনে করেন যে, কুরআন শরীফে শবে-বরাত পালনের কোন নির্দেশনা নেই। কিন্তু আসলে তা সত্য নয়। আল্লাহ পাক বলেন, “এ বরকতময় রজনীতে আমার নিকট হতে প্রত্যেক হিক্বমতপূর্ণ কাজের ফায়সালা করা হয়।“ (সূরা দুখান)
পাশাপাশি ‘সারা বছর আমল না করে শুধু বিশেষ দিনে আমল করে কি লাভ?’ সংশয়বাদীদের এ মন্তব্যও সম্পূর্ণই নিস্ফল। বরং এক্ষেত্রে স্মর্তব্য যে, বিশেষ দিনে উৎসাহিত হয়ে আমল করার প্রেক্ষিতে রহমত পাবার সুবাদে বান্দার আগামী জীবনটাও বিশেষভাবে পরিবর্তীত হয়ে যেতে পারে। অভিজ্ঞমহল বর্ণনা করেন, বিশেষ বিশেষ আউলিয়া-ই-কিরামগণ, বিশেষ দিনের, বিশেষ সময়ের দোয়া ও ইবাদতের মাধ্যমে মর্যাদাবান হয়েছিলেন।
মূলতঃ আলিম নামধারী একটা মহল রয়েছে অধিকতর আমলের প্রতি যাদের সবসময় বীতশ্রদ্ধভাব। অথচ সমগ্র কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ পড়লে যে মূল কথাটি উদ্ভাসিত হয় তাহলো আমল করা। আর আমলের ক্ষেত্রে সুন্নতের হুবহু অনুসরণই বিশেষভাবে কাম্য।
তাই উলামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণ স্বভাবতঃই সুন্নতের পাবন্দ হয়ে থাকেন, সুন্নতের ওয়াজ করে থাকেন এবং সুন্নত পূনঃ প্রচলনে নিবেদিত হয়ে থাকেন। পক্ষান্তরে উলামায়ে ছূরা, সুন্নত থেকে দূরে সরে থাকে, বিদয়াতী আমল দ্বারা কলুষিত হতে থাকে এবং বিদয়াতী মত-পথ প্রচলনের দ্বারা গোমরাহী ও বিভ্রান্তি বিস্তারের প্রক্রিয়ায় ইসলামের জঘন্য শত্রুর ভূমিকা পালন করে থাকে। এজন্য হাদীস শরীফে ব্যক্ত হয়েছে, উলামায়ে ‘ছূ’র কার্যকলাপ তথা বিদয়াতী আমলই ইসলাম-এর ক্ষতি করে। আল্লাহ পাক ইরশাদ ফরমান, “যারা ধর্মের মধ্যে বিভিন্ন পথ আবিষ্কার করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা অবগত। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাদের কাছে তাদের কৃতকর্ম বিবৃত করবেন।”(সূরা আনআম/১৫৯)
এ আয়াত শরীফের তাফসীরে বলা হয়েছে, বিদয়াতীরা নতুন, ভিত্তিহীন এবং বিজাতীয় ও বিধর্মীয় রীতিনীতি ও কর্মসূচীকে ধর্মের অন্তর্ভুক্ত করে থাকে। ইমাম আহমদ, আবূ দাউদ, তিরমিযী প্রমূখ ইরবায ইবনে সারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণনা করেন যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমাদের মধ্যে যারা আমার পর জীবিত থাকবে তারা বিস্তর মতানৈক্য দেখতে পাবে। তাই (আমি তোমাদের নছীহত করছি যে,) তোমরা আমার ও খুলাফা-ই-রাশিদীনের সুন্নতকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধর এবং তদনুযায়ী কাজ করে যেও। নতুন মত-পথ থেকে সযতেœ বেঁচে চলো। কেননা ধর্মে নতুন সৃষ্ট প্রত্যেক বিষয়ই বিদয়াত এবং প্রত্যেক বিদয়াতই (সাইয়্যিয়াহ) গোমরাহী।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, ছবি তোলা, লংমার্চ করা, কুশ পুত্তলিকা দাহ করা, মৌলবাদ সমর্থন করা, ব্লাসফেমী আইন দাবী করা, হরতাল করা, গণতন্ত্র করা তথা ইসলামের নামে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা ইত্যাদি কর্মসূচী মূলতঃ বিজাতীয়, বিধর্মীয় তথা বিদয়াতী আমলের অন্তর্ভুক্ত। এবং এসব বিদয়াতী আমলের সাথে সংশ্লিষ্ট আলিম নামধারীরা তাই সূরা আনআমে বিবৃত, ধর্মের মধ্যে দ্বিধা-বিভক্তি সৃষ্টিকারী, নতুন পথ আবিষ্কারকারী তথা বিদয়াতী বলেই বিবেচ্য।
পাশাপাশি উল্লেখ্য যে, এসব বিদয়াতী আমলকে উলামায়ে ‘ছু’রা কেবল জায়িযই নয় বরং বর্তমান ‘সময়ের প্রয়োজন’ এর দোহাই দিয়ে ইসলামী আন্দোলন বলে আখ্যা দিচ্ছে। মূলতঃ তাদের এ উক্তি দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, তারা খাতামুন্নাবিয়্যীন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শেষ নবী মানেনা বরং কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফের খিলাফ ঐসব আমল প্রচলনের দ্বারা কাদিয়ানীদের ন্যায় কার্যতঃ নিজেদেরকে বর্তমান সময়ের নবী বলে দাবী করছে। (নাউযুবিল্লাহি)
সুতরাং উম্মাহর স্বার্থেই আজ আমাদের এসব বিদয়াতী আলিমদের প্রতিহত করার উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি হক্কানী-রব্বানী ওলী আল্লাহগণ যারা আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেমেছাল তায়াল্লুক সমৃদ্ধ উনাদের ছোহবতে গিয়ে সুন্নতী আমল দ্বারা নিজ জীবনকে সুশোভিত করতে হবে। আমলের মাস শা’বানে এই পবিত্র ইচ্ছাই হোক আমাদের আগামী দিনের চলার অনুপ্রেরণা। (আমীন)