পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল আল্লাহ্ পাক-এর জন্যই সব ছানা-ছিফত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি সব ছালাত ও ছালাম। কালামুল্লাহ্ শরীফে সর্বশেষ নাযিলকৃত পূর্ণাঙ্গ সূরায় ইরশাদ হয়েছে, “যখন আসবে আল্লাহ্ পাক-এর সাহায্য ও বিজয়; এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহ্ পাক-এর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন।” (সূরা নছর) হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের পরে হযরত ছুফিয়া-ই-কিরাম বা আউলিয়া-ই-কিরামগণের মুবারক ভূমিকায় প্রদত্ত আয়াত শরীফের প্রতিফলন আমরা সার্থকভাবে দেখতে পাই। রূহানিয়তে সমৃদ্ধ ও গায়েবী মদদে সংযুক্ত হয়েই ছূফীরা বিভিন্ন দেশে দ্বীন প্রচারের জন্য বেরিয়ে পড়েন। ভারতেও অনেক ছূফী এসেছেন। লাহোরে শেখ ইসমাঈল ও দাতা গঞ্জে বক্স রহমতুল্লাহি আলাইহিমা। আজমীরে সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্তী আজমিরী, সানজিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, পাক পত্তনে হযরত শেখ ফরীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, দিল্লীতে হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি, বীরভূমে আব্দুল্লাহ্ কিরমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, বর্ধমানে মখদুম শাহ্ গজনবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, পান্ডুরায় দরবেশ শাহ্ সফিউদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি, চব্বিশ পরগণায় সৈয়দ আব্বাস আলী মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি, গৌঁড়ে আখি সিরাজুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নাম সমগ্র ভারতব্যাপী অগণিত আউলিয়া-ই-কিরামগণের মাঝে একটি উদাহরণ মাত্র। এ ধারাবাহিকতায় হাবীবী, তুয়ফুরী, ফরখী, মকতী, জুনয়দী, কায়রুনী, তুর্সী, ফেরদৌসী, সোহ্রাওয়ার্দী, যায়দী, ইয়াজী, আহমদী, হুবয়বী, কাদিরীয়া, চিশ্তীয়া, নক্শবন্দীয়া ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের ছূফীয়ানা সিলসিলার নাম জানা যায়। শত শত বছর ধরে রুহানী ক্ষমতাধর ছূফীদের ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ্র বিতরণে ভারতে দলে দলে লোক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। উল্লেখ্য, শুধু নিম্নবর্ণের হিন্দুরাই নয়, উচ্চ বর্ণের হিন্দুরাও বর্ণাশ্রিত প্রথার কারণে সমাজ পতিত হতো। স্পর্শ দোষ, খাদ্য দোষ, দৃষ্টি দোষ, ঘ্রাণ দোষ এমনিক ছায়া মাড়ানোর কারণেও উচ্চ বর্ণের হিন্দুরা কলুষিত হয়ে যেত। তাদের প্রায়শ্চিত্য করতে হতো। তাই নিম্নবর্ণের হিন্দুরাই যে, ছূফী ছাহেবদের স্পর্শ ধন্যে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করতো, কথাটি কেবল তাই নয়; উচ্চ বর্ণের হিন্দুরাও এক্ষেত্রে যথেষ্ট সাড়া দিত। মূলতঃ ভারতের হিন্দুদের এ জাতিভেদ প্রথা যে কি পৈশাচিকতা ও উন্মাসিক সহিংসতার জন্ম দেয় গত ২৭ শে ফেব্রুয়ারীর আহমদবাদ সমরমতি এক্সপ্রেসে গোধরার হিন্দুদের দ্বারা কর সেবকদের বগীতে আগুন লাগিয়ে পুঁড়িয়ে মারার কাহিনী তার নগদ প্রমাণ দেয়। উল্লেখ্য, উগ্র হিন্দুরা “ঘোলা পানিতে মাছ শিকার” করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে গোধরায় ট্রেনে হামলা চালিয়েছে। আর এটাকে উছীলা বানিয়ে এরপরে গুজরাটের মুসলমানের উপর জঘন্য, বর্বর, পৈশাচিক সাঁড়াশী আক্রমন চালিয়েছে। এতে আবারও প্রতিভাত হয়েছে যে, তথাকথিত ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদী ও গণতান্ত্রিক ভারতে সত্যিকার অর্থে মুসলমানদের জান-মাল, সম্ভ্রম মুহূর্তের জন্যও নিরাপদ নয়। সময়ে সময়ে কেবল তার বিরতি পর্ব চলে। এক সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে, ১৯৪৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ভারতে ছোট-বড় প্রায় ১৮০০০ দাঙ্গা বেঁধেছে এবং তাতে দশ লক্ষাধিক মুসলমানকে শহীদ করা হয়েছে। অসংখ্য কবরস্থানকে বানানো হয়েছে খেলার মাঠ কিংবা গরুর বাথান। মসজিদকে করা হয়েছে ক্লাব বা নাট্যশালা। বলাবাহুল্য, বিষয়টি এখন আর রাখ-ঢাকের ভিতরে নেই। সম্প্রতি নিউইয়র্কের কুইন্স এ অবস্থিত সত্য নারায়ণ মন্দিরে এক আলোচনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মুসলমানরা হিন্দু ছিলো, বাংলাদেশের মুসলমানদের আবার হিন্দু ধর্মে ফিরে যাবার সময় এসেছে। মুসলমানরা পশুর চেয়েও অধম, ইসলাম একটি বর্বর ধর্ম ইত্যাদি। এদিকে গত ২২ শে ফেব্রুয়ারী সিঙ্গাপুর থেকে প্রকাশিত ‘নিউজ উইকে’ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছবি ছাপানো হয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরও নির্বিকার, নিস্ক্রিয়, হতোদ্যম এদেশের দাবীদার মৌসুমী আন্দোলনকারী আলিম সমাজ। ভারতে মুসলিম নিধনে এদেশীয় এক শ্রেণীর সংবাদ-পত্র মুসলিম নিধন না বলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলেছে, এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবি মুখে কুলুপ এঁটেছে- ইত্যকার অভিযোগের চেয়ে অনেক বড় গুরুতর অভিযোগ আরোপিত হয় নামধারী আলিম সমাজের প্রতি। হালে তাদের কূপমন্ডুকতা, জিহালতি, অর্থলোলুপতা ও ক্ষমতা লিস্পা এতই প্রবল হয়েছে যে, তাদেরকে মৌলবাদী গাল দেয়ার প্রেক্ষিতে তারা সেটাকে প্রতিবাদ করার পরিবর্তে কেবল হজমই করে ফেলেনা বরং উল্টো সেটা গ্রহণ করে উল্লাস প্রকাশ করে। ধিক! তাদের এই অবিমৃষ্যকারীতার প্রতি। একইভাবে যে গণতন্ত্রের ঝান্ডাবাহী বলে ভারত এভাবে মুসলিম নিধন ও হিন্দু তোষণ করছে তারাও সেই একই গণতন্ত্রের, নির্বাচনের কথা বলছে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিন্দুরা যেরূপ হরতাল করেছে, তারাও সেরূপ হরতাল করছে। নাস্তিকদের মত লংমার্চ করছে। ইহুদী-নাছারাদের ব্লাসফেমী আইন চাইছে এবং হারাম ছবি তুলছে।
উল্লেখ করার মত বিষয় হচ্ছে যে, এদেশের ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক দল আর ওদেশের ধর্ম ফেরীকারী রাজনৈতিক ক্ষমতা লিঞ্ঝুরা মূলতঃ একে অপরের সহচর। ইসলামের নামে এসব ফায়দাধারীরাই মূলতঃ ওদেশের হিন্দুতান্ত্রিকদের দাঙ্গার সুযোগ করে দেয়।
ইতিহাসে এর প্রমাণ রয়েছে। ইসলামের নামে একটি জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা এক বিবৃতিতে বলেছিলো, “ভারতের মুসলমানেরা যদি হিন্দু সরকারে ম্লেচ্ছ ও শুদ্র হিসেবেও বিবেচিত হয় ও সেখানে মনুর আইন জারি হয় এবং তারা সরকারে অংশগ্রহণের ও নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় তাহলেও আমি তাতে কোন আপত্তি করবনা। (”ৗণযমর্র মতর্ দণ উমলর্র মত ঋভ্যলধরহ ডমর্ভ্রর্ধলণঢ লভঢণর টেভনটঠ ইর্ড অঅ মত ১৯৫৪র্ ম ণভ্যলধরণ ধভর্ দণ টেভনটঠ ঢর্ধ্রণরঠটভডণ্র’ মত ১৯৫৩. .ে২২৮”)
সঙ্গতকারণেই তাই বলতে হয় যে, গণতন্ত্র আর ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ নয়, বুদ্ধিজীবি আর মানবতাবাদী নয়, নামধারী আলিম সমাজ আর ইসলামের নামে মৌসূমী আন্দোলনকারী নয় মূলতঃ ছূফীয়া-ই-কিরাম যাঁরা রূহানী শক্তির প্রতিভু, যাঁরা ইসলামী আদর্শের সত্যিকার বিকশিত রূপ, তাঁদের ছায়া তলেই মুসলমানদের জান-মাল ও সম্ভ্রমের হিফাযত এবং ইসলামের বিস্তৃতি সম্ভব। আর সেক্ষেত্রে জামানার মুজাদ্দিদ, ইমামুল আইম্মা, মুহ্ইস্ সুন্নাহ্, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, গাউসুল আযম, হাবীবুল্লাহ্, গরীবে নেওয়াজ রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলীই সবার পুরোধা।