সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১০৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

          সব প্রশংসা মহান আল্লাহ্ পাক-এর জন্য। যিনি অনাদি ও অনন্ত। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি অফুরন্ত দরূদ ও সালাম।  সময়ের কছম করে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ ফরমান, “নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ। কেবল তারা ব্যতীত, যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে।” সময়ের গতি ও প্রবাহ্ অধিকাংশ মানুষকে প্রভাবিত করে। কালের ধারাবাহিকতায় আজকে যে যুগে আমরা বাস করছি ইসলামের পরিভাষায় তা ‘আখিরী যুগ’ বলে অভিহিত।  আফজালুল আউলিয়া, হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় “মকতুবাত শরীফে” এক হাজার হিজরী উর্ধ্বকাল বা সময়কে ‘আখিরী যামানা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।   ‘আখিরী যামানা’ ক্বিয়ামতের নিকটবর্তী যুগ। এ যামানার মানুষের ইসলাম বিমূখতা সম্পর্কে হাদীস শরীফে অনেক ভবিষ্যদ্বানী ব্যক্ত হয়েছে।    এ সময়ের লোকেরা ইসলামকে তাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে মানতে অপ্রস্তুত। ইসলামী চেতনা এখন বিরাজ করছে একটা ক্ষয়িষ্ণু ধারার মত। “গান-শোনা পাপ” সে অনুভূতি এ প্রজন্মকে আলোড়িত করেনা। নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যতিরেকে বিপরীত লিঙ্গের অন্য কারো দিকে তাকানো পাপ, শক্ত গুণাহ্, জিনা সমতুল্য সে বোধ এ যুগের লোকদের পীড়াগ্রস্থ করেনা। সুদ-ঘুষ, দুর্নীতির কামাই এ যুগের লোকদের যন্ত্রণাদগ্ধ করেনা।  এ সময়ে মন্ত্রী থেকে আরম্ভ করে প্রশাসনের সর্বত্রই এমনকি মাদ্রাসা-মসজিদের মত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতেও অর্থ আত্মসাত করার মত ঘটনা এতই বেশী হচ্ছে যে, অতি নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য হলেও এটাই যেন এখন সকলের কাছে সহনীয় হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ সর্বত্রই হারামের অবাধ সয়লাব। পাশাপাশি তথাকথিত সংস্কৃতিবাদী তথা বুদ্ধিজীবী মহল প্রগতিশীলতা আর আনন্দ-উচ্ছাসের নামে ক্রমাগতভাবে যেসব নাজায়িয উৎসবের অনুশীলন করছেন তাতে করে সাধারণ মানুষের নফস আরো প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে। ইবলিস শয়তান তাতে ওস্ওয়াসা দিয়ে সাধারণের দিল ক্রমাগতই মুর্দা করে দিচ্ছে।  আর এই মুর্দা দিল, দুনিয়া ও আখিরাত- কোথাও শান্তি, স্বস্তি ও সফলতা কিছুই দেয়না। ইরশাদ হয়েছে, “ক্বিয়ামতের দিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোনই উপকারে আসবেনা, কিন্তু যে সুস্থ দিল নিয়ে আল্লাহ্ পাক-এর কাছে আসবে।” (সূরা শোয়ারা/৮৮-৮৯)    মুহাক্কিক মহল মনে করেন যে, বর্তমানে সেক্যুলার শিক্ষা, সমাজ, দর্শন, ব্যাপক গান-বাজনা, টিভি, ভি.সি.আর, সিনেমা, ডিশ-এন্টিনা, সি.ডি, কনসার্ট, লেজার লাইট শো, র‌্যাগ ডে পার্টি, পহেলা বৈশাখ, থার্টি ফাষ্ট নাইট কালচার, বসন্তবরণ, ভ্যালেন্টাইন ডে, ইত্যাদি অনৈসলামিক সংস্কৃতি ও অনুষঙ্গের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষের অন্তর যেভাবে মুর্দা হয়ে পড়ছে, ইসলামের নূর, ঈমানের নূর, নেক আমলের স্বাদ, বদ আমলের অন্তঃজ্বালা যেভাবে তাদের অন্তর থেকে তিরোহিত হচ্ছে তাতে করে এ মুর্দা দিল বিশিষ্ট লোকদের অন্তরে যদি ফের ঈমানের চেতনা, আমলের জজবা, ইসলামের মুহব্বত জাগাতে হয় তাহলে অনিবার্যভাবে দরকার রূহানী শক্তি। ইল্মে তাছাউফের পরিভাষায় একে বলা হয় ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ্। বলাবাহুল্য, অমিত রূহানী শক্তিধর ব্যক্তির মুবারক সান্নিধ্য ও তদীয় অনুশীলনের মাধ্যমেই এ শক্তি অর্জন সম্ভব। বলা আবশ্যক, বর্তমান সময়ে এদেশ তথা সারা-বিশ্বব্যাপী যেরূপ ইসলামের বিপরীত বৈরী আবহ্ বিদ্যমান, সে প্রেক্ষিতে কি ব্যক্তি, কি পারিবারিক, কি সামাজিক জীবন, সবক্ষেত্রেই যদি বর্তমান ইসলাম বিমূখ মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হয়, ইসলামী মূল্যবোধ ও জজবার জাগরণ ঘটাতে হয় তাহলে প্রয়োজন ততোধিক ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ্র ঘনঘটা। জামানার প্রেক্ষাপটে এ ধরণের ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ্ বিতরণকারী অমিত শক্তিধর রূহানী ব্যক্তিত্বের অস্তিত্বের কথা হাদীস শরীফে স্বীকার করা হয়েছে। তাঁকে মুজাদ্দিদুয্ যামান আখ্যায়িত করে প্রতি হিজরী শতকে তাঁর আবির্ভাবের কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। এমনকি অপর হাদীস শরীফে যে “জামানার ইমাম (মুজাদ্দিদুয্ যামানকে) চিনলোনা সে জাহিলিয়াতের মধ্যে মারা যাবে” বলে সাবধান করা হয়েছে।    কাজেই বর্তমান সময়ে সামগ্রিকভাবে সাধারণের মাঝে ইসলামী জজবার বিস্তার ঘটাতে হলে ইহুদী-নাছারার অনুকরণে- ছবি তোলা, লংমার্চ, হরতাল, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী আইন, গণতান্ত্রিক নির্বাচন ইত্যাদি হারাম আমল নয় চাই একান্ত শক্তিধর ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ্।  বলার অপেক্ষা রাখেনা যে,  বর্তমান জামানার মুজাদ্দিদের ছোহ্বতের মাধ্যমেই সে ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ্ প্রাপ্তি সম্ভব।

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়