সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১০২তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা পালনকর্তা আল্লাহ্ পাক-এর জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি বেশুমার দরূদ ও সালাম।  মানুষ আল্লাহ্ পাক-এর পছন্দনীয় সৃষ্টি। আল্লাহ্ পাক তাই মানুষকে তাদের চরম শত্রু- শয়তান সম্পর্কে সম্যক অবহিত করেছেন। পবিত্র কুরআন শরীফে বিষয়টি বিভিন্নভাবে ব্যক্ত হয়েছে। বলা হয়েছে, “শয়তান তোমাদের শত্রু; অতএব তাকে শত্রুরূপেই গ্রহণ করো। সে তার দলবলকে আহবান করে যেন তারা জাহান্নামী হয়।” (সূরা ফাতির/৬) আরো সতর্কবাণী যুক্ত করে আল্লাহ্ পাক বলেন, “হে বণী আদম! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে, শয়তানের ইবাদত করোনা, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (সূরা ইয়াসীন/৬০)

পবিত্র কুরআন শরীফে উচ্চকিতভাবে ঘোষিত এই প্রকাশ্য শত্রু সম্পর্কে মানুষ বড়ই বে-খবর। উল্লেখ্য, শয়তানের কুটচাল সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর। শয়তান যে শুধু গুণাহ্র কাজের দিকেই মানুষকে প্ররোচিত করে বিষয়টি তাই নয়, বরং নেকীর ছূরতেও ওয়াস্ওয়াসা দিতে শয়তান বড়ই পারঙ্গম। নেকীর ছূরতে ওয়াস্ওয়াসা দেয়া কথাটি মূলতঃ আপেক্ষিক। এক্ষেত্রে শয়তান ব্যক্তি বা গোষ্ঠীভেদে রকমফের ফাঁদ পেতে থাকে। ইসলামের নামেই বাতিল ৭২ ফিরক্বার উৎপত্তি শয়তানের এ ধারারই ওয়াস্ওয়াসা। ফরয-ওয়াজিব-নফল সব ইবাদতের ক্ষেত্রেই শয়তান নেকীর ছূরতে ওয়াস্ওয়াসা দিয়ে থাকে। মহিলাদের নামাযের জন্য মসজিদ ও ঈদগাহে জামায়াতের ব্যবস্থা- এ ধরণেরই শয়তানী ওয়াস্ওয়াসা- যা আমভাবে মাকরূহ্ তার্হরীমী, খাছভাবে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের  বিরোধীতা হওয়ায় কুফরীর কারণ। রোযার ক্ষেত্রে রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নিয়ে রোযা রাখার ফতওয়া বস্তুতঃ নেকীর ছূরতে শয়তানী ওয়াস্ওয়াসা, যা সরাসরি কুরআন শরীফের আয়াত শরীফের বিরোধীতা। যাকাতের ক্ষেত্রে যাকাতবোর্ডের তরফ থেকে বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষার জন্য যাকাতের অর্থ বরাদ্দ এ ধরণের ওয়াস্ওয়াসার একটি উদাহরণ। পাশাপাশি বর্তমান যিলহজ্ব মাসের প্রাণ হজ্ব ও কুরবানীর ক্ষেত্রেও ইবলিসের নেকীর ছূরতে ওয়াস্ওয়াসা দেয়ার নজীরের কোনই স্বল্পতা নেই।  উল্লেখ্য, হজ্ব সম্পূর্ণই আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশিত আহ্কাম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। মনগড়া কোন কিছু অনুপ্রবেশের অবকাশ নেই। যদিও অন্যকিছু আপাতভাবে ভালো ও প্রয়োজনীয় মনে হোক না কেন? তাই তথাকথিত ইসলামী রাজনীতিবিদদের এই অভিমত সম্পূর্ণ ভ্রান্ত যে, আরাফার ময়দানে উম্মাহ্র রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক সব সমস্যা তুলে ধরতে হবে, পর্যালোচনা করতে হবে, সমাধানের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আসলে এ আহবানও নেকীর ছূরতে শয়তানী ওয়াস্ওয়াসা ভিন্ন অন্য কিছু নয়।  সম্প্রতি মালয়শিয়ায় হজ্ব যাত্রীদের প্রশিক্ষণের নামে পবিত্র কা’বা ঘরের অনুরূপ একটি ঘর বানিয়ে তাতে হজ্ব যাত্রীদের তাওয়াফের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। মূলতঃ এটিও নেকীর ছূরতে শয়তানী ওয়াস্ওয়াসা, যা সরাসরি বায়তুল্লাহ্ শরীফের সম্মানের প্রতি আঘাতস্বরূপ। যেমনটি ছবি তোলার জন্য কঠিন শাস্তি প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ছবি তোলার দ্বারা বান্দাও একটি সৃষ্টির দাবীদার হয়ে যায়। আর আল্লাহ্ পাক-এর সাথে এ ধরণের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক কাজ তথা শিরকী কাজ কখনই আল্লাহ্ পাক বরদাশ্ত করবেন না। সুতরাং নিরাপত্তার নামে, সুব্যবস্থাপনার খাতিরে হজ্বের ক্ষেত্রে ছবিযুক্ত পাসপোর্ট প্রচলন বস্তুত নেকীর ছূরতে শয়তানী ওয়াস্ওয়াসাই বটে।  প্রসঙ্গতঃ লিবিয়ার নেতা গাদ্দাফী বিবৃত,  “একটি ঘরের প্রতি মুসলমানদের এতটা সম্মান প্রদর্শন অযৌক্তিক” এই বক্তব্যের সাথে আমাদের দেশের ছয় উছূলধারী তাবলীগওয়ালাদের কথিত “ইস্তিমাকে গরীবের হজ্ব” বলে আখ্যা দেয়া, “মক্কা শরীফের হজ্বের পরেই বাংলাদেশের ইস্তিমার স্থান” ইত্যকার ধারণা প্রচার করা সত্যিকার অর্থে নেকীর সূরতে শয়তানী ওয়াস্ওয়াসারই বাস্তবায়ন। হজ্বের পাশাপাশি কুরবানীর ক্ষেত্রে শয়তানের নেকীর ছূরতে ওয়াস্ওয়াসা বিস্তারে স্থবিরতা নেই। এক ধরণের তথাকথিত পশু প্রেমিকরা এই ক্ষেত্রেও শয়তানের কক্তস্বররূপে কাজ করে। তারা আওয়াজ তুলে এত জীব এভাবে নিধন না করে সে পরিমাণ ব্যয়িত টাকা দুঃস্থ-অসহায়দের দান করলে তারাও উপকৃত হয় আর পশুরাও বেঁচে যায়। ভাবখানা এই যে, তারাই যেন সেসব জীবের সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিপালক। অথচ আল্লাহ্ পাক ইরশাদ ফরমান, “প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি যবেহ্র বিধান দিয়েছিলাম, যা তারা অনুসরণ করে। সুতরাং আপনার সাথে এ ব্যাপারে বিতর্কে প্রবৃত্ত হওয়া তাদের উচিৎ নয়।” (সূরা হজ্ব)

উল্লেখ্য, যে বস্তু বেশী ব্যয়িত হয়, আল্লাহ্ তায়ালা তার উৎপাদনও বাড়িয়ে দেন। গরু-ছাগল কুরবানী দেয়া হয়, আল্লাহ্ পাক সে অনুপাতে এগুলোর উৎপাদন বাড়িয়ে দেন। সব সময় ছূরির নীচে থাকা সত্ত্বেও দুনিয়াতে ছাগলের সংখ্যাই কুকুর-বিড়ালের সংখ্যা থেকে অনেক বেশী। অথচ কুকুর-বিড়াল একই সাথে পাঁচ-সাতটি পর্যন্ত হয়ে থাকে। গবেষণায় প্রকাশ, প্রতিবেশী দেশ ভারতে যখনই গো-হত্যা নিষিদ্ধ হয়েছে তখনই সেখানে গরুর উৎপাদনও অপেক্ষাকৃত হ্রাস পেয়েছে।

তথ্যে প্রকাশ, ১৯৯৬ সালে ইংল্যান্ডে গরুর ইড়ারহব Bovine spongi form cephalopathy নামে যে রোগ দেখা দেয় তাতে বিবিসি, তাদের এক কোটি দশ লাখ গবাদি পশু মেরে ফেলার কথা জানায়। এতে ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করা হয় পনের’শ কোটি ডলার। এর আগেও ১৯৮৫ সালে দেড় লক্ষাধিক গরু মারা যায়। অতএব, তথাকথিত পশু প্রেমিকদের এসব আপ্তবাক্য মূলতঃ নিখাঁদ নেকীর ছূরতে শয়তানী ওয়াস্ওয়াসা। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সমাজের সর্বস্তরে “নেকীর ছূরতে শয়তানী ওয়াস্ওয়াসা” সম্পর্কে সচেতনতা বোধের বড়ই অভাব। আলিম নামধারীদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। এ কারণেই তাদের দ্বারা হচ্ছে, ছবি তোলা, মেয়ে লোকের নেতৃত্বে চলা, হরতাল, লংমার্চ, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী, কুশপুত্তলিকা দাহ্,ইসলামের নামে গণতন্ত্র অনুশীলন ও নির্বাচন ইত্যাদি যাবতীয় হারাম কাজ। আর নেকীর ছূরতে শয়তানের ওয়াস্ওয়াসা অনুধাবনে অক্ষমতাই তাদের এরূপ গোমরাহীর মূল কারণ। উল্লেখ্য, নেকীর ছূরতে শয়তানের ওয়াস্ওয়াসা উপলব্ধির জন্য চাই রূহানী কুয়ত তথা তায়াল্লুক মায়াল্লা। কেবলমাত্র হক্ব ওলী আল্লাহ্ তথা মুজাদ্দিদে যামান-এর ছোহ্বতের মাধ্যমেই তা প্রাপ্তি সম্ভব।

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়