সরওয়ারে কাওনাইন, ছাহিবে মীছাক্ব, ছাহিবে খুলুক্বে আযীম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনন্য বৈশিষ্ট্য এবং অনুপম গুণাবলী

সংখ্যা: ১০৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা, মুফতী মুহম্মদ আব্দুল হালীম তাহেরী

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى اله عليه وسلم قال فضلت على الانبياء بست اعطيت بجوامع الكلم ونصرت بالرعب واحلت لى الغنائم وجعلت لى الارض مسجدا وطهورا وأرسلت الى الخلق كافة وختم بى النبيون.

অর্থঃ- “হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমাকে অন্যান্য নবীগণের চেয়ে অনন্য ছয়টি বৈশিষ্ট্য বা মর্যাদা দান করা হয়েছে। (১) আমি ‘জাওয়ামিউল কালিম’ প্রাপ্ত হয়েছি। অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক আমাকে সৃষ্টির শুরু হতে শেষ পর্যন্ত ইল্ম দান করেছেন। (২) আল্লাহ্ পাক আমাকে রো’ব দান করেছেন। (৩) আমার জন্য গণিমতের মাল হালাল করা হয়েছে। (৪) আল্লাহ্ পাক আমার জন্য সমস্ত যমীনকে মসজিদ ও পবিত্র করেছেন। (৫) আল্লাহ্ পাক আমাকে সমস্ত মাখলুকের জন্য নবী হিসেবে প্রেরণ করেছেন। (৬) আমার দ্বারা নুবুওওয়াতের দ্বার বন্ধ করা হয়েছে।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ) এ ছয়টি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ব্যতীত আরো অসংখ্য বৈশিষ্ট্য ও অনুপম গুণাবলী দ্বারা মহান আল্লাহ্ পাক তাঁর পেয়ারা হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিভূষিত করেছেন।       প্রেমিকের মন পড়ে থাকে সর্বদা প্রেমাস্পদকে খুশি করতে। জীবনের সর্বস্ব কুরবান করেও মনে করে কিছু দেয়া হয়নি, কিছুই করা হয়নি। প্রেমাস্পদকে বিভিন্ন ছিফত বা বিশেষণ দ্বারা বিশেষিত করে প্রেমিক অন্তরে এতমিনান লাভ করে।           আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিনি হচ্ছেন সৃষ্টির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ্ পাক-এর পরেই তাঁর স্থান, যাঁর প্রেমে স্বয়ং আহ্কামুল হাকিমীন মাতোয়ারা। যার কুদরতী হাতে রয়েছে সবকিছু। তিনি তাঁর প্রেমাস্পদ সাইয়্যিদুল কাওনাইন, হাবীবে আযম, শাফিউল উমাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কত সীমাহীন মর্যাদা-মর্তবা অনন্য বৈশিষ্ট্য ও অনুপম গুণাবলী দান করেছেন তা কারো পক্ষে নিরূপণ করা সম্ভব নয়। তবে আউলিয়া-ই-কিরামগণ আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে নিবিড় সম্পর্ক, বন্ধুত্ব, মুহব্বত ও নৈকট্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে যে অংশটুকু পেয়েছেন তাঁদের মাধ্যমে যা উম্মতের মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে তারই কিয়দংশ বিবৃত হলো-       রঈসুল মুহাদ্দিসীন, ফক্বীহুল উম্মত, রসূলে নোমা, আশিকে রসূল হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সবচেয়ে উন্নত ও পরিপূর্ণ মর্যাদা এবং একক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে,    (৭) আল্লাহ্ পাক তাঁর রূহ মুবারককে সমস্ত মাখলুকাতের রূহ সৃষ্টি করার পূর্বে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তাঁর রূহ মুবারক থেকে সমস্ত রূহ সৃষ্টি করেছেন।         (৮) সাইয়্যিদুল বাশার, ফখরে আলম  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোজে আযলে ‘আলাস্তু বি রব্বিকুম’ প্রশ্নের জবাবে সর্বপ্রথম ‘বালা’ বা ‘হ্যাঁ’ বলে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছিলেন।       (৯) হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম, আলম, আলমের সৃষ্টি এবং সবকিছুর মূল কারণ হচ্ছেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।      (১০) সমস্ত নবীগণের নিকট থেকে এ ব্যাপারে অঙ্গীকার নেয়া হয়েছে যে, তাঁরা যখনই আবির্ভূত হবেন তখনই আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ঈমান আনবেন।    (১১) আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাতৃগর্ভ থেকে খতনাকৃত, নাভীকাটা এবং পাক-সাফ অবস্থায় যমিনে তাশরীফ এনেছেন।

(১২) আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যমিনে আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই সেজদা করেছিলেন। যমীনে তাশরীফ আনার সময় শাহাদৎ অঙ্গুলী মুবারক উর্ধ্বমুখী ছিলো। সে সময় মা জননী সাইয়্যিদানা হযরত আমিনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা দেখতে পেয়েছিলেন একটি নূর মুবারক উদ্ভাসিত হয়ে শাম দেশের বালাখানা ও মহলসমূহকে আলোকিত করে দিচ্ছে। তাঁর দোলনা মুবারকে ফেরেশ্তারা দোলা দিয়েছিলেন।                 (১৩) শাফিউল মুজনিবীন, রহমতুল্লিল আলামীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছিনা মুবারক চারবার  চাক করা হয়েছে। যা কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম-এর করা হয়নি।     (১৪) মহান আল্লাহ্ পাক স্বীয় নাম ‘মাহ্মুদ’ থেকে তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম ‘আহমদ’ ও ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এ নাম মুবারক দু’টি নির্গত করেছেন। (১৫) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সামনের দিকে যেমন দেখতে পেতেন ঠিক তেমনি পিছনের দিকেও দেখতে পেতেন। দিনের আলোতে যেরূপ দেখতে পেতেন, রাতের অন্ধকারেও তদ্রুপ দেখতে পেতেন। তিনি পাথরের উপর দিয়ে হাঁটার সময় তাঁর কদম মুবারকের ছাপ পাথরের উপর অংকিত হতো।       (১৬) আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর লালা মুবারক লোনা পানিকে মিঠা পানিতে পরিণত করে দিত এবং দুগ্ধ পোষ্য শিশুর বেলায় দুধের প্রয়োজন মিটাতো। তাঁর বগল মুবারকে কোন প্রকার দুর্গন্ধ ছিলোনা। বরং তা মিশ্ক আম্বর হতে অধিক সুবাসিত ছিলো।        (১৭) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কক্তস্বর এতো দূর-দুরান্ত পর্যন্ত পৌঁছত যেখানে অন্য কারো আওয়াজ পৌঁছত না।    (১৮) আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চোখ মুবারক নিদ্র্রিত হতো কিন্তু অন্তর মুবারক জেগে থাকতো। নিদ্রাবস্থায় কেউ কথা বললে তিনি শুনতে পেতেন।        (১৯) নিদ্রার কারণে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওজু ভঙ্গ হতনা। (২০) সাইয়্যিদু উইলদে আদম, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনও শরীর মুবারকে আড়মোড়া দিতেন না। তিনি কখনও হাই তোলেন নি।    (২১) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শরীর মুবারকে কখনও মশা-মাছি বসত না এবং তাঁর পোশাক পরিচ্ছদে কখনও উকুন হত না।          (২২) আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কখনও এহতেলাম হয়নি।     (২৩) আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছায়া মুবারক ছিলনা।        (২৪) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বচক্ষে আল্লাহ্ পাক-এর দীদার লাভ করেছেন। যা কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম, ফেরেশ্তা এবং আউলিয়া-ই-কিরামগণের হয়নি।        (২৫) আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর অবতীর্ণ কিতাবকে বিকৃতি ও পরিবর্তন করা হতে হিফাযত করা হয়েছে।          (২৬) আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসী, আমার্না রসূল অর্থাৎ সূরা বাক্বারার সর্বশেষ আয়াতগুলোকে বিশেষভাবে দান করেছেন। যা অন্য কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামকে এ জাতীয় আয়াত প্রদান করা হয়নি।       (২৭) আল্লাহ্ পাক সমস্ত রিযিক রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুবারকময় হাতে সোপর্দ করে দিয়েছেন এবং জাহির-বাতিনের যাবতীয় তরবিয়ত ও শক্তি দান করেছেন।   (২৮) বিভিন্ন যুদ্ধ ক্ষেত্রে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সরাসরি ফেরেশ্তা দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে। অন্য নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম-এর বেলায় এরূপ হয়নি। (২৯) মহান আল্লাহ্ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ‘রহমতুল্লিল আলামীন’ করে প্রেরণ করেছেন।          (৩০) আল্লাহ্ পাক কখনও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নাম ধরে সম্বোধন করেননি। বরং বলেছেন,

يايها الرسول. يا يها النبى

يايها المدثر. يا يها المزمل.

 ইত্যাদি।

          (৩১) উম্মতের জন্য হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক ধরে ডাকা হারাম। বরং বলতে হবে,

يا حبيب الله. يا نبى الله. يا رسول اله صلى الله عليه وسلم.        (৩২) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট হযরত ইস্রাফিল আলাইহিস্ সালাম এসেছিলেন। অথচ ইতোপূর্বে অন্য কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম-এর কাছে আসেননি। (৩৩) মৃতব্যক্তিকে কবরে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। (৩৪) আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পুত-পবিত্রা স্ত্রীগণকে উম্মতের জন্য বিবাহ্ করা হারাম করে দেয়া হয়েছে।         (৩৫) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আকৃতি মুবারক শয়তান ধারণ করতে পারেনা।        (৩৬) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দেহ মুবারকে যা ছিল সব কিছুই পবিত্র থেকে পবিত্রতম। যারা তা পান করেছেন সকলেই জান্নাত লাভ করেছেন।          (৩৭) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ক্বিয়ামতের দিন প্রশংসার পতাকা দান করা হবে। হযরত আদম আলাইহিস্ সালামসহ সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ সে পতাকার নীচে অবস্থান করবেন। (সুবহানাল্লাহ্)

সাইয়্যিদুল জিননি ওয়াল ইনস, ইমামুল আউয়ালীন ওয়াল আখিরীন, খতীবুল আম্বিয়া হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হায়াতুন নবী

ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, খাতামুন নাবিয়্যীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মযদা-মতবা, শান-মান সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের চেয়ে অনেক উর্দ্ধে

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ছাহিবু মাক্বামি মাহমূদ, শাফউল উমাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম উনার শ্রেষ্ঠত্ব

সাইয়্যিদুল কাওনাইন, শাফিউল মুজনিবীন, ইমামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলে বাইতগণের ফযীলত

সাইয়্যিদুল বাররি ওয়াল বাহর, ইমামুস সাক্বালাইন, তাজেদারে মদীনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আওলাদগণের ফযীলত