عن عبد الرحمن بن عائش رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم رأيت ربى عزوجل فى احسن صورة قال فيم يختصم الملأ الاعلى قلت انت اعلم قال فوضع كفه بين كتفى فوجدت بردها بين ثدى فعلمت ما فى السموت والارض.
অর্থ: “হযরত আব্দুর রহমান বিন আইশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি মহান পরাক্রমশালী মহান আল্লাহ পাক উনাকে উত্তম ছূরত মুবারক উনার মধ্যে দেখেছি। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন। “শীর্ষ স্থানীয় ফেরেশতাগণ কি নিয়ে আলোচনা করছেন? “আমি বললাম আপনিই ভাল জানেন” হে মহান আল্লাহ পাক! হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, তখন মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতী হাত মুবারক আমার ছিনা মুবারক উনার উপরে রাখলেন। তখনই আমি মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতী হাত মুবারক উনার শীতলতা আমার বক্ষ মুবারক উনার মধ্যে অনুভব করলাম। সে কারণেই তখন আমি আসমান ও যমীনের মধ্যস্থিত সমস্ত কিছুই জানতে পারলাম।” (দারিমী, তিরমিযী, মিশকাত)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে মেছালী ছূরতে দেখেছেন, তখন মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতী হাত মুবারক উনার ছীনা মুবারক উনার উপরে রাখলেন যার কারণে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বীয় ছীনা মুবারক উনার মধ্যে ঠা-া বা শীতলতা অনুভব করলেন।
মূলত: এটাকেই ইলমে মা’রিফত বা তাসাউফের পরিভাষায় ফয়েয বলা হয়। এ হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে,
فعلمت اى بسبب وصول ذالك الفيض قوله ما فى السموات والارض يعنى ما اعلمه الله مما فيها من الملائكة والاشجار وعندهما وهو عبارة عن سعة علمه الذى فتح الله عليه.
অর্থ: “অত:পর আমি সমস্ত কিছুই জেনে ফেলেছি, অর্থাৎ এই যে, (মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে আমাকে) ফয়েয দেয়া হয়েছে, সে কারণে সবকিছুই আমার জানা হয়েছে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি ফেরেশতা এবং বৃক্ষরাজী ইত্যাদিকে যা কিছু জানাননি তাও আমি জানতে পেরেছি।”
মূলত: এটা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি সে সমস্ত বিষয়ের জ্ঞান দান করেছেন এটা তারই বিশদ বর্ণনা।” (মিরকাত, হাশিয়ায়ে মিশকাত)
হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় আরো বলা হয়েছে,
وهو كناية عن تخصيصه اياه بمزيد الفضل عليه وايصال الفيض اليه.
অর্থ: “এটা দ্বারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খুছূছিয়ত ও উনার সর্বাধিক ফযীলত বর্ণনা ও উনার প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে ফয়েয পৌছানো হয়েছে।” (মিরকাত)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার থেকে সরাসরি মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতী ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করেছেন। যারা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম তারা সরাসরি মহান আল্লাহ পাক উনাকে না পাওয়ার কারণে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক ছোহবত অর্জনের মাধ্যমে ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করেছেন। কিন্তু যারা সরাসরি মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব উনাকে পায়নি অর্থাৎ পরবর্তী উম্মত তাদেরকে আল্লাহওয়ালা বা হাক্বীক্বী ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া, নায়িবে নবীগণ উনাদের কাছ থেকে ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করতে হবে। কারণ ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করা ব্যতীত হাক্বীক্বী ঈমানদার হওয়া সম্ভব নয়। অর্থাৎ এ ফয়েয না পাওয়া পর্যন্ত কোন মানুষই মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য লাভ করতে পারবেনা বা পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবেনা।
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূ পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন,
لايؤمن احدكم حتى اكون احب اليه من والده وولده والناس اجمعين.
অর্থ: “তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে তোমাদের ছেলে-মেয়ে, পিতা-মাতা তথা সমস্ত মানুষ এমনকি নিজের প্রাণের চেয়েও বেশি মুহব্বত না করবে।” (মিশকাত শরীফ)
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের মধ্যে বিশেষ করে হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, হে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব! আমি আপনাকে আমার ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী-পুত্র, পিতা-মাতা ইত্যাদি সমস্ত মানুষের চেয়ে বেশি মুহব্বত করি, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমি আপনাকে নিজের জানের চেয়ে বেশি মুহব্বত করতে পারিনি। তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! তুমি এখনো পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারনি।”
অত:পর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে কাছে ডেকে উনার ছিনা মুবারক উনার উপরে স্বীয় হাত মুবারক রেখে ফয়েযে উত্তেহাদী দিলেন। তখন হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, হে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এখন আমার এই অবস্থা হলো যে, শুধু আমি একাই নয় বরং আমার মত শত সহ¯্র উমর আপনার জন্য জান কুরবান করতে প্রস্তুত। তখন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! এখন আপনি পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পেরেছেন।
অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণনা করা হয়েছে, “একবার হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আরজ করলেন যে, হে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি অনেক হাদীছ শরীফ শ্রবণ করি কিন্তু মনে রাখতে পারিনা। তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে একখানা চাদর মুবারক বিছাতে নির্দেশ দিলেন। হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনে স্বীয় চাদর মুবারক বিছিয়ে দিলেন।
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন কিছু হাদীছ শরীফ বর্ণনা করলেন। অত:পর চাদর মুবারক তুলে নিতে নির্দেশ দিলেন। হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি স্বীয় চাদর মুবারক তুলে রাখলেন। এরপর থেকে তিনি আর কখনো কোন হাদীছ শরীফ ভুলতেন না।” সুবহানাল্লাহ!
অর্থাৎ তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার লক্ষ থেকে ফয়েয প্রাপ্ত হওয়ার কারণে উনার স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।
উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ পাক উনার কালামে পাক উনার মধ্যে বলেন, كونوا ربانين.
অর্থ: “তোমরা সকলেই আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও।” (আল ইমরান/৭৯)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি সমগ্র মানব জাতিকে আল্লাহওয়ালা হতে নির্দেশ দিয়েছেন। বান্দা একা একা কস্মিনকালেও আল্লাহওয়ালা হতে পারবে না, তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্য আয়াত শরীফ উনার মধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন,
وكونوا مع الصدقين.
অর্থ: “তোমরা সত্যবাদী (ওলীআল্লাহ) গণ উনাদের ছোহবত লাভ কর।” (সূরা তাওবা/১১৯)
অর্থাৎ বান্দার আল্লাহওয়ালা হতে হলে সত্যবাদী ওলীআল্লাহগণ উনাদের ছোহবত অর্জন করে ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ হাছিলের মাধ্যমেই আল্লাহওয়ালা হতে হবে। বিশেষ করে যারা ওলীআল্লাহ হয়েছেন তারা মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক, নিসবত ও রূহানী দীদার বা সাক্ষাৎ উনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করেন।
এছাড়া সমস্ত নবী রসূল আলাইহিমুস সালামগণ এবং সমস্ত কায়েনাতই হায়াতুন নবী সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করেছেন।
এ সম্পর্কে কিতাবে এসেছে-
انه عليه السلام مفيض وهم مستفاضون لانه تعالى خلق ابتداء روحه عليه السلام ووضع فيه علوم الانبياء وعلم ماكان وما يكون ثم خلقهم فاخذوا علومهم منه عليه السلام.
অর্থ: “নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হলেন ফয়েযদাতা। আর অন্য সমস্ত নবী রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনারা হলেন ফয়েয গ্রহীতা। মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রূহ মুবারক সৃষ্টি করে তাতে সকল নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনার পূর্বাপর সমস্ত বিষয়ের জ্ঞান সঞ্চিত রাখেন। অত:পর অন্যান্য নবী রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদেরকে সৃষ্টি করেন। সুতরাং উনারা সকলেই নিজ নিজ জ্ঞান সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ উনার মাধ্যমে হাছিল করেছেন। (কাসিদায়ে বুরদা)
অতীতের যত গাউছ, কুতুব, আবদাল, মুজাদ্দিদ, ইমাম মুজতাহিদ ও আউওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য হাছিল করেছেন সকলেই সরাসরি স্বীয় শায়খ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার মাধ্যমে এবং রুহানীভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং অতীতের আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের মাধ্যমে ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করেছেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে যামনার মুজাদ্দিদ ও মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুবারক ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ হাছিলের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার হাক্বীক্বী সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভ করার তাওফিক দান করুন। (আমিন)
-মাওলানা মুহম্মদ মনিরুল ইসলাম (মনির)।