সাইয়্যিদুল বাররি ওয়াল বাহর, ইমামুস সাক্বালাইন, তাজেদারে মদীনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশধর বা আওলাদগণ উনাদের ফযীলত

সংখ্যা: ১১৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

قل لااسئلكم عليه اجرا الا المودة فى القربى.

অর্থঃ- “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, (হে বিশ্ববাসী) আমি তোমাদের নিকট প্রতিদান চাইনা। তবে আমার আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সদাচরণ করবে।” (সূরা শূরা/২৩)

অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ্ পাক প্রদত্ত নুবুওওয়াতের দায়িত্ব পালনের কোন বিনিময় উম্মতের কাছে চাননি। তবে তাঁর সম্মানিত বংশধর বা আওলাদগণের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার, তাঁদের তাযীম-তাকরীম করার তাঁদের অনুসরণ-অনুকরণ করার তাকীদ দিয়েছেন।

উপরোক্ত আয়াত শরীফের তাফসীরে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, যখন এ আয়াত শরীফ নাযিল হয় তখন হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইয়া রসুলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! “তাঁরা কারা? যাদের প্রতি আল্লাহ্ পাক সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন।” হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তাঁরা হলেন, ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ও তাঁর আওলাদগণ।” (তাফসীরে ইবনে আবি হাতিম, ইবনে কাসীর-৭/১৭৯, মাযহারী-৭/৩১৮)

এ প্রসঙ্গে “আনোয়ারুল আরেফীন” নামক কিতাবে হযরত রবী বিন সোলায়মান রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন যে, আমি একদা হজ্ব যাত্রীদের সাথে হজ্বের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। যখন আমরা কুফা নামক স্থানে পৌঁছলাম, তখন প্রত্যেকেই প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ক্রয় করার জন্য বাজারে গেলাম। হঠাৎ বাজারের পাশে একটি জঙ্গল আমার দৃষ্টিগোচর হলো। সেখানে মৃত একটি খচ্চর বা গাধা পড়ে আছে, আর জীর্ণ-শীর্ণ, টুটা-ফাটা কাপড় পরিহিতা এক মহিলা (যাকে দেখে মনে হলো অত্যন্ত শরীফ) ছুরি দিয়ে খচ্চর বা গাধার গোশ্ত কেটে কেটে তার থলিতে রাখছেন। তখন আমার সন্দেহ হলো যে, এ মহিলাটি মৃত জন্তুর গোশ্ত নিয়ে বাজারে বিক্রি করে কিনা? তা দেখার জন্য আমি অতি সংগোপনে তাঁর পিছে পিছে যেতে লাগলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর মহিলাটি একটি বাড়ির দরজার কড়া নাড়ল, তখন জীর্ণ-শীর্ণ, টুটা-ফাটা কাপড় পরিহিতা ফুটফুটে চারটি মেয়ে দরজা খুলে দিল। তাদেরকে দেখেও মনে হলো তাঁরা অত্যন্ত শরীফ বংশের লোক। মহিলাটি ঘরে প্রবেশ করে ক্রন্দনরত অবস্থায় তাঁদেরকে বললেন, এ গোশ্তগুলো পাক কর এবং আল্লাহ্ পাক-এর শুকরিয়া আদায় কর।

আমি এই হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখে অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে সেই মহিলাকে ডাক দিয়ে বললাম, “হে আল্লাহ্ পাক-এর বান্দীগণ! আপনাদের এ মৃত গাধার হারাম গোশ্ত খাওয়ার পিছনে কি কারণ রয়েছে? আপনারা কি মজুসী? আমার জানা মতে মজুসীদের মধ্যে একদল আছে যারা মৃত গাধার গোশ্ত খাওয়া জায়িয মনে করে।” এর জবাবে মহিলাটি পর্দার আঁড়াল থেকে বললেন, “হে অপরিচিত ব্যক্তি! আপনার হয়তো জানা নেই, আমরা হলাম নুবুওওয়াতী খান্দানের লোক অর্থাৎ আওলাদে রসূল তথা সাইয়্যিদ। আমাদেরকে যিনি দেখাশুনা করতেন এই মেয়েদের পিতা, তিনি গত তিন বৎসর পূর্বে ইন্তিকাল করেছেন। তখন হতে আমাদের কোন সাহায্যকারী নেই। পরিত্যক্ত সম্পদ যা ছিল, তা শেষ হয়ে গেছে। আমাদের জানা আছে যে, মৃত জন্তুর গোশ্ত খাওয়া জায়িয নেই। আমাদের জন্যে মৃত প্রাণীর গোশ্ত খাওয়া মুবাহ্হ যেহেতু আমরা মাজুর, বেশ কিছু দিন ধরে উপোশ।”          হযরত রবী বিন সোলায়মান রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, “আমি সম্মানীতা আওলাদে রসূলগণের হৃদয় বিদারক ও দুঃখজনক ঘটনা শুনে অনেকক্ষণ কাঁদলাম।      অতঃপর বললাম, “আপনারা এ সমস্ত খাদ্য দয়া করে খাবেন না। আমি খাদ্যের ব্যবস্থা করছি। একথা বলে আমি বাজারে গিয়ে তাঁদের জন্য কাপড়-চোপড় এবং খাবার কিনে নিয়ে এলাম। আর ছয়শত দিরহাম তাঁদেরকে হাদিয়া স্বরূপ দিলাম। যদিও এর কারণে আমার হজ্বে যাওয়ার টাকা-পয়সা শেষ হয়ে গেল।     আর এগুলো পেয়ে তাঁরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। মহিলাটি দোয়া করলেন, “আয় আল্লাহ্ পাক, হযরত রবী বিন সোলায়মান রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর আগের এবং পরের সমস্ত গুণাহ্ মাফ করুন এবং তাঁকে জান্নাত নছীব করুন।”           বড় মেয়েটি দোয়া করলেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! তাঁর গুণাহ ্মাফ করে দ্বিগুণ ছওয়াব দান করুন।” দ্বিতীয় মেয়েটি দোয়া করলেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! তিনি যা হাদীয়া দিয়েছেন, তাঁকে তার চেয়ে বেশী দান করুন।” তৃতীয় মেয়েটি দোয়া করলেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! তাঁকে আমাদের নানা রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে একত্রিত হওয়ার তৌফিক দান করুন” এবং সবশেষে ছোট মেয়েটি বললেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! যে আমাদের প্রতি ইহ্সান করেছে, তাঁকে অচিরেই উত্তম জাযা দান করুন।”       অতঃপর আমি কুফাতে এসে দেখলাম হাজীদের কাফেলা হজ্বের উদ্দেশ্যে চলে গিয়েছে। তখন আমি সেখানেই রয়ে গেলাম। আর হজ্বে যাওয়ার সমস্ত টাকা আওলাদে রসূল-এর মুহব্বতে হাদিয়া দিয়ে দিলাম, এটা উত্তম হলো নাকি হজ্ব করলে উত্তম হতো সে ব্যাপারে আমি দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে লাগলাম। যথাসময়ে হাজীদের প্রত্যাবর্তনের সময় হয়ে আসল। তাদের অভ্যর্থনা জানিয়ে দোয়া নেয়ার জন্য আমি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম। হাজীদের কাফেলা পর্যায়ক্রমে আমার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমি তাদেরকে মুবারকবাদ জানাচ্ছিলাম। আর তারা প্রত্যেকেই আমাকে দেখে অবাক হয়ে বলছিলেন, আশ্চর্য! আপনি এত দ্রুত এখানে এলেন কিরূপে? অথচ আমরা আপনাকে তো আরাফাতের ময়দানে, মুযদালিফায়, মিনাতে, মদীনা শরীফে, হজ্বের প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখেছি। বিশেষ করে একজন হাজী বললেন, “আপনি রওজা শরীফে যিয়ারত করার পর বাবে জিব্রাঈল থেকে বের হওয়ার সময় হাজীদের ভীড়ের কারণে আমার কাছে আমানত স্বরূপ এ থলেটি রেখেছিলেন। এখন আপনার থলেটি আপনি গ্রহণ করুন।” উক্ত হাজী ছাহেব এমনভাবে বললেন যে, থলেটি আমাকে গ্রহণ করতেই হলো। আর আমি গ্রহণ করে মনে মনে চিন্তা করলাম এটি আল্লাহ্ পাক-এর দান ব্যতীত আর কিছুই নয়। কারণ ইতোপূর্বে এ থলেটি আমি আর কখনো দেখিনি। অতঃপর আমি বাড়ীতে এসে রাত্রে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুমিয়ে স্বপ¦যোগে রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দর্শন লাভ করলে সালাম দিয়ে তাঁর হস্ত মুবারক চুম্বন করলাম। হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুচকি হেসে বললেন, “হে রবী!  তুমি যে হজ্ব করেছ, তা মেনে নিতে আশ্চর্যবোধ করছ? এজন্য আমি আর কতজন সাক্ষী পেশ করব যে, তুমি হজ্ব করেছ” জবাবে আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহু ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমিতো এ বৎসর হজ্ব করিনি। বরং হজ্বে যাওয়ার পথে আপনার আওলাদের অন্তর্ভুক্ত এক অসহায় সাইয়্যিদ পরিবারকে আমার ছয়শত দিরহাম হাদিয়া দিয়ে এসেছি।”       হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “যখন তুমি তাঁদেরকে হজ্বের সমস্ত সামানা দিয়ে হজ্বে যাওয়া মুলতবী রাখলে, আর তাঁরা তোমার জন্য দোয়া করলেন, তখন আমি আল্লাহ্ পাক-এর নিকট দোয়া করলাম, যেন আল্লাহ্ পাক তোমাকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করেন। আমার দোয়ার কারণে আল্লাহ্ পাক তোমার আকৃতিতে একজন ফেরেশ্তা সৃষ্টি করলেন, যেন সে ফেরেশ্তা তোমার পক্ষ হয়ে তোমার আকৃতিতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত প্রতি বছর হজ্ব করেন, আর তার ছওয়াব তোমার আমলনামায় পৌঁছতে থাকে। আর উক্ত থলিতে তোমাকে তোমার ছয়শত (৬০০) রৌপ্যমুদ্রার পরিবর্তে ছয়শত (৬০০) স্বর্ণমুদ্রা দেয়া হয়েছে। যেন তোমার মনে শান্তি থাকে।”     অতঃপর রউফুর রহীম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ বাক্যটি উচ্চারণ করলেন যে, “আমাদের সাথে যে ব্যবসা করে, সে লাভবান হয়।”           উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে এটাই প্রমাণিত হলো যে, আওলাদে রসূলগণ বংশগতভাবে আল্লাহ্ পাক-এর রসূলের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে তাঁদেরকে মুহববত করা, তাঁদের তা’যীম-তাকরীম করা ও তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা জুয-ই-ঈমান বা ঈমানের অঙ্গ।  আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে আওলাদে রসূলগণকে যথাযথ মুহব্বত এবং তা’যীম-তাকরীম করার পাশাপাশি তাদের যথার্থ হক্ব আদায় করার তাওফিক দান করুন এবং এর মাধ্যম দিয়ে আল্লাহ্ জাল্লা জালালুহু ও তাঁর প্রিয়তম হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি ও রেযামন্দি নছীব করুন। (আমীন)

-মুহম্মদ আলাউদ্দীন আল আজাদ

সাইয়্যিদুল জিননি ওয়াল ইনস, ইমামুল আউয়ালীন ওয়াল আখিরীন, খতীবুল আম্বিয়া হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হায়াতুন নবী

ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, খাতামুন নাবিয়্যীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মযদা-মতবা, শান-মান সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের চেয়ে অনেক উর্দ্ধে

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ছাহিবু মাক্বামি মাহমূদ, শাফউল উমাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম উনার শ্রেষ্ঠত্ব

সাইয়্যিদুল কাওনাইন, শাফিউল মুজনিবীন, ইমামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলে বাইতগণের ফযীলত

সাইয়্যিদুল বাররি ওয়াল বাহর, ইমামুস সাক্বালাইন, তাজেদারে মদীনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আওলাদগণের ফযীলত