সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ৩০২তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ রায়হানুদ্দীন,

ঢাকা, মুহম্মদ নিযামুদ্দীন, চট্টগ্রাম,

মুহম্মদ কুতুবুদ্দীন, সিলেট,

মুহম্মদ আব্দুর রহমান, বগুড়া,

মুহম্মদ আশরাফ, রাজশাহী,

মুহম্মদ মুনীর হুসাইন, রংপুর।

সুওয়াল: চেয়ার বা টুলে নামায পড়ার ব্যাপারে শরঈ ফায়ছালা জানতে ইচ্ছুক।

জাওয়াব: সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মসজিদের ভিতরে হোক বা অন্য যে কোনো স্থানেই হোক, কোন অবস্থাতেই চেয়ারে বা টুলে বসে নামায পড়া জায়িয নেই। বরং তা বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ বা হারাম এবং নামায বাতিল হওয়ার কারণ। কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা, হযরত তাবিয়ীনে কিরাম, তাবে-তাবিয়ীনে কিরাম, ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কেউই কখনো চেয়ারে বসে নামায আদায় করেননি।

সবোর্পরি মহান আল্লাহ পাক উনার যিনি মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই উম্মতকে নামাযসহ প্রতিটি ইবাদত আদায়ের ব্যাপারে উত্তম আদর্শ মুবারক শিক্ষা দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ

অর্থ: অবশ্যই তোমাদের জন্য মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ মুবারক। সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ২১)

যার কারণে মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরুল ইস্তাওয়া মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (সুস্থতাবস্থায়) কিভাবে নামায আদায় করেছেন তা যেরূপ সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে তদ্রƒপ নূরুল ইহছান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থতাবস্থায়) কিভাবে নামায আদায় করেছেন তাও স্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে। যদি তাই হয়ে থাকে তবে চেয়ারে বা টুলে বসে নামায পড়ার বিষয়ে মতভেদের কি কারণ থাকতে পারে?

 পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

صَلُّوْا كَمَا رَأَيْـتُمُوْنِىْ أُصَلِّىْ

অর্থ: তোমরা ঐভাবে নামায পড়ো, যেভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখেছো। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

তাই আমরা এখন দেখব যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরুল ইহছান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে নামায আদায় করেছেন। এ প্রসঙ্গে “বুখারী শরীফ” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৯৫ পৃষ্ঠায় এ সম্পর্কিত একটি অধ্যায় রয়েছে। তাতে উল্লেখ আছে যে-

صَلَّى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيْ مَرَضِهِ الَّذِيْ تُـوُفِّيَ فِيْهِ بِالنَّاسِ وَهُوَ جَالِسٌ

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে নূরুল ইহছান (অসুস্থতা) শান মুবারক প্রকাশ করার পর বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন, উক্ত নূরুল ইহছান মুবারকে তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে যমীনে বসেই নামায আদায় করেছেন।”

অনুরূপভাবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও অসুস্থ অবস্থায় যমীনে বসে নামায আদায় করেছেন। সে বর্ণনাও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে।

তাছাড়া অক্ষম বা অসুস্থ ব্যক্তি কিভাবে নামায আদায় করবে তা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ও ফিক্বাহ্র কিতাবসমূহের মধ্যে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ رَضِيَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ، قَالَ كَانَتْ بِيْ بَـوَاسِيْـرُ فَسَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الصَّلاَةِ فَـقَالَ صَلِّ قَائِمًا فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَـقَاعِدًا فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَـعَلٰى جَنْبٍ

অর্থ : হযরত ইমরান ইবনে হুছাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি অশ্ব রোগে আক্রান্ত ছিলাম। এজন্য আমি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নামায আদায় করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, “আপনি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবেন, যদি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে না পারেন তাহলে বসে আদায় করবেন। যদি তাও না পারেন, তাহলে শুয়ে আদায় করবেন।” (বুখারী শরীফ)

 পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরও বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ عَادَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرِيْضًا فَـرَاٰهُ يُصَلِّيْ عَلَى وِسَادَةٍ فَـرَمَى بِهَا وَقَالَ:صَلِّ عَلَى الْأَرْضِ إِنْ اِسْتَطَعْتَ وَإِلَّا فَأَوْمِ إِيمَاءً وَاجْعَلْ سُجُوْدَكَ أَخْفَضَ مِنْ رُكُوْعِكَ

অর্থ : হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক অসুস্থ ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দেখতে যান। তখন ওই ছাহাবী তিনি অসুস্থতার কারণে নামাযের মধ্যে একটি বালিশের উপর সিজদা করছিলেন। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বালিশটি সরিয়ে ফেলেন এবং বলেন, “আপনি যদি সক্ষম হন তাহলে যমীনের উপর নামায আদায় করবেন অর্থাৎ সিজদা করবেন। তাতে সক্ষম না হলে ইশারায় নামায আদায় করবেন। আপনার সিজদাকে রুকুর চেয়ে একটু বেশি নিচু করবেন।” (বাযযার, বায়হাক্বী)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরও বর্ণিত হয়েছে-

إِنَّمَا سُنَّةُ الصَّلاَةِ أَنْ تَـنْصِبَ رِجْلَكَ الْيُمْنَى وَتَـثْنِيَ الْيُسْرَى

অর্থ : “নিশ্চয়ই নামাযের সুন্নত হলো যে, তোমার ডান পা খাড়া রাখবে এবং বাম পা বিছিয়ে রাখবে।” (বুখারী শরীফ)

উপরে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ সমূহের দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, সাধারণভাবে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে হবে। দাঁড়াতে না পারলে বসে নামায আদায় করতে হবে। বসে আদায় করতে না পারলে শুয়ে নামায আদায় করতে হবে।

স্মরণীয় যে, নামাযে দাঁড়ানো বলতে কোন কিছুর মধ্যে ঠেস বা হেলান না দিয়ে স্বাভাবিকভাবে দাঁড়ানোকে বুঝানো হয়েছে। বসা বলতে নামাযে যেভাবে বসার নিয়ম; যমীনে বসা, অপরাগবশতঃ চার জানু হয়েও বসতে পারে। একইভাবে শোয়া বলতে সাধারণভাবে পার্শ্বদেশে শোয়াকে বুঝনো হয়েছে।

নামাযে দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া এ তিন অবস্থা দ্বারা সরাসরি যমীনের উপর দাঁড়িয়ে যমীনের উপর বসে এবং যমীনের উপর শুয়ে নামায আদায় করতে হবে। আর যমীন বলতে সরাসরি যমীন অথবা ঘরের মেঝে অথবা বিছানা হতে পারে। যেখানে স্বাভাবিকভাবে দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে নামায আদায় করা যায়।

উল্লেখ্য, মসজিদে জামায়াতে নামায আদায় করার হুকুম ওই ব্যক্তির জন্য যে সুস্থ। আর যে অসুস্থ তার জন্য মসজিদ ও জামায়াত কোনটিরই হুকুম নেই। যেমন মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায আদায় করার হুকুম নেই মুসাফির, মহিলা ও বালকের জন্য। তারা তাদের সুবিধা মতো নিজ ঘরে বা অবস্থানস্থলেই নামায আদায় করে নিবে। একইভাবে অসুস্থ ব্যক্তি তার সুবিধা অনুযায়ী নিজ ঘরে বা অবস্থানস্থলেই নামায আদায় করে নিবে।

স্মরণীয় যে, পবিত্র হাদীছ শরীফ এবং ফিক্বাহ্র কিতাবসমূহে নামাযে বসার যে তরতীব বা নিয়ম বর্ণনা করা হয়েছে, সে নিয়মে চেয়ার বা টুলে বসা অসম্ভব। কাজেই চেয়ার বা টুলে বসে নামায আদায় করলে নামাযে বসার যে তরতীব বা সুন্নত রয়েছে তা বাদ হয়ে বিদয়াতের প্রচলন হয়।

 পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

إِنَّ خَيْـرَ الْحَدِيْثِ كِتَابُ اللهِ وَخَيْـرُ الْهُدَى هُدَى مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الأُمُوْرِ مُحْدَثَاتُـهَا وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ وَكُلُّ ضَلَالَةٍ فِـى النَّارِ

অর্থ: নিশ্চয়ই সর্বশ্রেষ্ঠ ইরশাদ মুবারক হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব মুবারক এবং সর্বোত্তম হিদায়েত বা তর্জ-তরীক্বা মুবারক হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তর্জ-তরীক্বা মুবারক। আর সর্বনিকৃষ্ট কাজ বা আমল হচ্ছে, যা দ্বীন সম্পর্কে (মনগড়াভাবে) নতুন সৃষ্টি করা হয়েছে এবং (এরূপ) প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই গোমরাহী আর গোমরাহীর অনুসারী প্রত্যেকেই জাহান্নামী । (মুসলিম শরীফ, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী)

অতএব প্রমাণিত হলো যে, চেয়ার-টেবিল বা চেয়ার বা টুলে বসে নামায আদায় করার অর্থ হচ্ছে বিদয়াতের প্রচলন করা। আর পবিত্র পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিরোধী প্রত্যেকটি কাজই হচ্ছে বিদয়াতের অন্তর্ভুক্ত। প্রত্যেক বিদয়াতই গুমরাহী এবং এর অনুসরণকারীরা বিদয়াতী বা পথভ্রষ্ট ও জাহান্নামী। নাউযুবিল্লাহ!

সুতরাং, যেসব মসজিদে মুছল্লীরা চেয়ার বা টুলে নামায আদায় করে তাদের উচিত মসজিদ থেকে চেয়ার বা টুল সরিয়ে অন্যসব মুছল্লীদের মতো নামাযে বসার তরতীব অনুযায়ী বসে নামায আদায় করা। এরপরও মাসায়ালা না জানার কারণে কোন মুছল্লী যদি চেয়ার বা টুল সরাতে না চায় সেক্ষেত্রে মসজিদের ইমাম, খতীব ও কমিটির দায়িত্ব হবে মসজিদ থেকে চেয়ার, টুল সরানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কেননা চেয়ার বা টুলে বসে নামায পড়া ইসলামী শরীয়ত উনার বিরোধী কাজ। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَـلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذٰلِكَ أَضْعَفُ الْإِيْمَانِ وَفِىْ رِوَايَةٍ لَيْسَ وَرَاءَ ذٰلِكَ مِنَ الْإِيمَانِ مِثْـقَالُ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ

অর্থ : “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন অন্যায় কাজ সংঘটিত হতে দেখে সে যেন তা হাত দ্বারা বাধা দেয়। যদি সে তা হাত দ্বারা বাধা দিতে না পারে তাহলে সে যেন যবান দ্বারা বাধা দেয়। যদি যবানের দ্বারাও বাধা দিতে না পারে তাহলে যেন অন্তরে তা ঘৃণা করে উক্ত অন্যায় কাজ থেকে দূরে সরে থাকে। আর এটা সবচেয়ে দুর্বল ঈমানের পরিচয়।” অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে, “এরপর ঈমানের আর সরিষা পরিমাণ অংশও অবশিষ্ট থাকে না।”

এ হাদীছ শরীফ থেকে প্রতিভাত হলো যে, যারা ক্ষমতা থাকা সত্ত্বে অন্যায় কাজে বাধা দিবেনা তাদের সরিষা পরিমাণও ঈমান নেই।

প্রকাশ থাকে যে, নামায পড়ার ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া যে তিন প্রকার হালত বা অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে সেভাবে দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে নামায আদায় করতে হবে। যেমন এ প্রসঙ্গে তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, “মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নিসা শরীফ ১০৩ নং সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

فَاذْكُرُوا اللهَ قِيَامًا وَّقُـعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُـوْبِكُمْ

উক্ত আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে হযরত দ্বহ্হাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বর্ণনা করেন: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন যে, কিছু সংখ্যক লোক ঈশার নামাযের পর দাঁড়িয়ে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ডাকছেন অর্থাৎ যিকির করছেন। অতঃপর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনাদের কাছে এসে বললেন, আপনারা ইহা কি করছেন? উনারা বললেন, আমরা শুনেছি, “মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন:

فَاذْكُرُوا اللهَ قِيَامًا وَّقُـعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُـوْبِكُمْ

“তোমরা যিকির করো মহান মহান আল্লাহ পাক উনার দাঁড়ানো অবস্থায়, বসা অবস্থায় ও শোয়া অবস্থায়।” উত্তরে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তিনি বলেন, নিশ্চয়ই এই পবিত্র আয়াত শরীফ নামায সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, প্রথমত: মানুষ দাঁড়িয়ে নামায পড়বে। যদি দাঁড়িয়ে নামায পড়তে সক্ষম না হয়, তাহলে বসে নামায আদায় করবে। আর যদি বসেও নামায পড়তে সক্ষম না হয়; তাহলে শুয়ে নামায পড়বে। অতঃপর তিনি উনাদেরকে উক্ত কাজ করা থেকে নিষেধ করলেন।” (তাফসীরে ইবনে আবী হাতিম- ইমাম হাফিয আবূ মুহম্মদ আব্দুর রহমান ইবনে আবী হাতিম রাযী- ৪র্থ খণ্ড ১০৫৬ পৃষ্ঠা প্রকাশনা: দারুন নাশর মাকতাবাতুল আছরিয়া, তাফসীরে কুরতুবী, আল-জামিয়ু লি আহকামিল কুরআন, মুছান্নিফ আবূ আবদিল্লাহ্ মুহম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে আবী বকর ইবনে ফারহুল আনছারী আল খাযরাজী শামসুদ্দিন আল-কুরতুবী, ৫ম খণ্ড ৩৭৪ পৃষ্ঠা, প্রকাশনা দারু আলামিল কুতুব, রিয়াদ)

সুতরাং পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত নামায পড়ার তিনটি হালত বা অবস্থার মধ্যে চেয়ারে বা টুলে বসে নামায পড়ার অবস্থাটি উল্লেখ নেই। তাই চেয়ারে বা টুলে বসে নামায পড়া শরীয়ত সম্মত নয় বা জায়িয নয়।

উল্লেখ্য, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার হুকুম-আহকামসমূহ মনগড়াভাবে পালন করার কোন সুযোগ নেই। তাই মহান আল্লাহ পাক উনার দেয়া সহজ হুকুম বা বিধান উপেক্ষা করে যে বা যারা মনগড়াভাবে চেয়ারে বা টুলে নামায পড়বে তাদের নামায কস্মিনকালেও আদায় ও কবুল হবে না। উপরন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ব বিধান লঙ্ঘণ করার কারণে তারা জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। নাঊযুবিল্লাহ!

আরো উল্লেখ্য, ওজর বা মা’জুরতার অজুহাতে যারা মসজিদে যেয়ে চেয়ারে নামায পড়ে থাকে, তাদের উক্ত অজুহাত মহাসম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার আলোকে কস্মিনকালেও গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা তারা দিব্বি বাড়ী-ঘর, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজারে চলা-ফেরা করে আর নামাযের সময় মসজিদে গিয়ে আর দাঁড়াতে পারে না! তখন তারা চেয়ারে বসে নামায পড়ে। নাউযুবিল্লাহ! অথচ মহাসম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার মাসয়ালা বা ফতওয়া হচ্ছে, দাঁড়াতে সক্ষম ব্যক্তি বসে নামায পড়লে তার নামায হবে না। কারণ নামায উনার মধ্যে ক্বিয়াম বা দাঁড়ানো হচ্ছে আলাদা একটি ফরয।

‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবাআহ্’ কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৫১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-

اِتَّـفَقَتِ الْمَذَاهِبُ عَلٰى اَنَّ الْقِيَامَ فَـرْضٌ عَلَى الْمُصَلِّـىْ فِـىْ جَـمِيْعِ رَكَعَاتِ الْفَرْضِ بِشَرْطِ اَنْ يَّكُوْنَ قَادِرًا عَلَى الْقِيَامِ

অর্থ: “চার মাযহাব তথা সমস্ত ফক্বীহগণ ইজমা করেছেন যে, দাঁড়াতে সক্ষম এরূপ মুছল্লী বা নামাযীর জন্য প্রত্যেক রাকায়াতে দাঁড়ানো ফরয।”

‘আল মুহীতুল বুরহানী’ কিতাবের ২য় খণ্ডের ১৪১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-

وَاِنْ عَجَزَ عَنِ الْقِيَامِ وَقَدَرَ عَلَى الْقُعُوْدِ فَاِنَّهٗ يُصَلِّـى الْمَكْـتُـوْبَةَ قَاعِدًا بِرُكُوْعٍ وَّسُجُوْدٍ وَّلَا يَـجْزِئُهٗ غَيْـرُ ذٰلِكَ

অর্থ: “যে ব্যক্তি দাঁড়াতে অক্ষম কিন্তু বসতে সক্ষম, এরূপ ব্যক্তি বসে রুকূ সিজদাহ্ সহকারে ফরয নামায আদায় করবে। এর বিপরীত নিয়মে নামায আদায় করা তার জন্য জায়িয নয়।”

কাজেই, কেউ যদি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে অক্ষম হয়, তাহলে তাকে যমীনে বসে নামায আদায় করতে হবে। আর স্বাভাবিক তরতীবে যমীনে বসে নামায আদায় করতে অক্ষম হলে চারজানু হয়ে যমীনে বসে নামায আদায় করতে পারে। তারপরও চেয়ার-টেবিলের সাহায্যে বা টুলে বসে নামায আদায় করা যাবে না। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময়ে বর্তমান যামানার ন্যায় সর্বপ্রকার আসনই ছিল। কিন্তু তিনি তাতে বসে নামায আদায় না করে যমীনে বসে নামায আদায় করেছেন। আর উনার অনুসরণে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও যমীনে বসে নামায আদায় করেছেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নামায পড়ার উদ্দেশ্যে মসজিদের মধ্যে চেয়ার প্রবেশ করালে তা খৃষ্টানদের গির্জা এবং ইহুদীদের উপাসনালয়ের সাদৃশ্য হয়ে যায়। তারা গির্জায় ও উপাসনালয়ে চেয়ারে ও বেঞ্চে বসে পা নিচুতে রেখে উপাসনা করে। আর ইহুদী-খৃষ্টানসহ তাবৎ বিধর্মীদের অনুসরণ করা মুসলমানদের জন্য জায়িয নেই। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَالْمُنَافِقِيْنَ

অর্থ: “তোমরা কাফির এবং মুনাফিক্বদেরকে অনুসরণ করো না।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৮)

আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا

অর্থ: ঐ ব্যক্তি আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি বিজাতীয়দের সাথে সাদৃশ্য রাখে।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

 পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَـهُوَ مِنْـهُمْ

 অর্থ: “যে ব্যক্তি যেই সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য বা মিল রাখবে, অনুসরণ-অনুকরণ করবে, সে তাদেরই দলভুক্ত হবে। অর্থাৎ তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” নাঊযুবিল্লাহ! (আবূ দাঊদ শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ, মুসনাদে বাযযার, আল মু’জামুল আওসাত্ব, মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, মিশকাত শরীফ ইত্যাদি)

অতএব, কোন অবস্থাতেই নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে চেয়ার-টেবিল, টুল ইত্যাদি প্রবেশ করোনো যাবে না। করালে সেটা বিধর্মীদের সাথে তাশাব্বুহ বা সাদৃশ্য হওয়ার কারণে কুফরী হবে। নাঊযুবিল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি সবাইকে ছহীহ সমঝ দান করুন এবং সর্বদা সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত অর্থাৎ পবিত্র পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র সুন্নাহ শরীফ অনুযায়ী আমল করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।

মুহম্মদ আব্দুল হান্নান

টাঙ্গাইল

সুওয়াল: কিছুদিন পূর্বে কুখ্যাত এক মাসিক পত্রিকায় হজ্জের অজুহাতে ছবি তোলাকে বৈধ বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে দলীল হিসেবে পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ ১৭৩, পবিত্র সূরা আনআম শরীফ ১১৯ ও ১৪৫ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, তীব্র প্রয়োজন হারাম বস্তুকে সাময়িক হালাল করে দেয়। তাই হজ্জের ফরয আদায় করতে হারাম ছবি তোলা সাময়িক বৈধতা পাবে। নাউযুবিল্লাহ! এ বিষয়ে সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন?

জাওয়াব: উক্ত পত্রিকার বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের খিলাফ বা বিরোধী ও কুফরী হয়েছে। কারণ হারাম বা ফাসিকী কাজ করে তথা ছবি তুলে, বেপর্দা হয়ে হজ্জ করা যাবেনা। এটা সরাসরি পবিত্র পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فَمَنْ فَـرَضَ فِيْهِنَّ الْـحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوْقَ وَلَا جِدَالَ فِى الْـحَجِّ ۗ وَمَا تَـفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ يَّـعْلَمْهُ اللّٰـهُ ۗ وَتَـزَوَّدُوْا فَاِنَّ خَيْـرَ الزَّادِ التَّـقْوٰى ۚ وَاتَّـقُوْنِ يَا اُولِى الْاَلْبَابِ

অর্থ: “যার প্রতি হজ্জ ফরয সে যেন হজ্জ পালনকালে অশ্লীল-অশালীন কাজ না করে এবং কোন প্রকার ফাসিকী কাজ না করে এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। আর তোমরা যে নেক কাজ করো তা মহান আল্লাহ পাক তিনি জানেন। তোমরা পাথেয় সংগ্রহ করো। নিশ্চয়ই উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯৭)

বলার অপেক্ষা রাখে না, ছবি তোলা ও বেপর্দা হওয়া প্রকাশ্য ফাসিকী ও অশ্লীল-অশালীন কাজ। উক্ত হারাম কাজ আমভাবে সকলের জন্য নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও হজ্জ পালনকারীদের জন্য খাছভাবে নিষেধ করা হয়েছে।

কাজেই, হজ্জ করার জন্য ছবি তোলা ও বেপর্দা হওয়া ইত্যাদি হারাম কাজ করা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের হুকুম মোতাবেক হারাম। তাছাড়া হজ্জে মাবরূর অর্থাৎ হজ্জ কবুল হওয়ার জন্য শর্তই হচ্ছে সমস্ত প্রকার হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকা।

শুধু তাই নয়, হজ্জ ফরয হওয়ার জন্য শুধু পাথেয় বা অর্থ-সম্পদ থাকাই শর্ত নয়। বরং আরো অনেক শর্ত রয়েছে। তন্মধ্যে হারাম থেকে বেঁচে থাকাও একটি অন্যতম শর্ত। হজ্জ ফরয হওয়ার জন্য সমস্ত শর্ত পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কারো প্রতি হজ্জ ফরয হবে না।

মোটকথা, হজ্জ পালনকালে যেখানে সমস্ত হারাম থেকে বেঁচে থাকা শর্ত করা হয়েছে, সেই হারাম কাজ আবার হজ্জের জন্য বৈধ বা হালাল হয় কি করে? কখনই বৈধ হতে পারে না।

এরা এমন গণ্ডমূর্খ যে, মাসয়ালা হচ্ছে এক বিষয়ে আর দলীল দিয়েছে অন্য বিষয়ে। তা হচ্ছে, যখন কেউ হালাল খাদ্যের ব্যবস্থা করতে চরমভাবে নিরুপায় হয়ে যায় অথবা কেউ ৩ দিন অভুক্ত বা না খেয়ে থাকে তখন জীবন বাঁচানোর তাগিদে তার জন্য আবশ্যিক পরিমাণ হারাম খাদ্য গ্রহণ করাটা মুবাহ হয়। কিন্তু তা বৈধ বা হালাল হয়ে যায়না। সেটাই সুওয়ালে উল্লেখিত পবিত্র আয়াত শরীফ সমূহ উনাদের মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে।

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবাক করেন-

اِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْـتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنْزِيْرِ وَمَا اُهِلَّ بِهٖ لِغَيْرِ اللّٰـهِ ۖ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْـرَ بَاغٍ وَّلَا عَادٍ فَلَا اِثْمَ عَلَيْهِ ۚ اِنَّ اللّٰـهَ غَفُوْرٌ رَحِيْمٌ

অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি মৃত প্রাণী, রক্ত, শূকরের গোশত এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত অন্যের নামে যবাইকৃত পশুকে খাদ্যবস্তু রূপে হারাম ঘোষণা করেছেন। কিন্তু যে অনন্যোপায় অথচ অন্যায়কারী অথবা সীমালঙ্ঘণকারী নয় তার জন্য কোন গুনাহ হবে না। মহান আল্লাহ পাক তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭৩)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় সুপ্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে মাযহারীতে” উল্লেখ রয়েছে যে, যারা ক্ষুধার কারণে অনন্যোপায় (সীমালঙ্ঘন না করে) হারাম বস্তু ভক্ষণ করে তাদের জন্য কোনো গুনাহ হবে না। কেননা তারা অন্যায়কারী নয়, আর এমতাবস্থায় খাদ্য আস্বাদনও তাদের উদ্দেশ্য থাকে না। উদ্দেশ্য থাকে শুধুমাত্র জীবন বাঁচানো। এ রকম নিরুপায় অবস্থায় যতটুকু খাদ্য গ্রহণ করলে মৃত্যুর আশঙ্কা রোধ হয়, ততোটুকুই গ্রহণ করা মুবাহ। এর অতিরিক্ত নয়। এক্ষেত্রে হারাম বস্তুগুলো হালাল বলা কুফরী হবে বরং মুবাহ বলতে হবে মাজুর হিসেবে।

অনুরূপ সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আনআম শরীফ উনার ১১৯ নং সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَمَا لَكُمْ اَلَّا تَأْكُلُوْا مِمَّا ذُكِرَ اسْمُ اللّٰهِ عَلَيْهِ وَقَدْ فَصَّلَ لَكُمْ مَا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ اِلَّا مَا اضْطُرِرْتُمْ اِلَيْهِ

অর্থ: যে পশুর উপর (যবেহ কালে) মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক উচ্চারিত হয়েছে তা হতে না খাওয়ার ব্যাপারে তোমাদের কি কারণ থাকতে পারে? অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন যেগুলো তোমাদের জন্য হারাম করেছেন। কিন্তু যখন তোমরা নিরুপায় হয়ে যাও তখন হারাম বস্তুগুলোর মাধ্যমে জীবন রক্ষা করতে পারো।”

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় “তাফসীরে মাযহারীতে” উল্লেখ রয়েছে, যখন জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে তখন জীবন রক্ষার জন্য হারাম বস্তু ভক্ষণ করা যেতে পারে। হারাম তখনও হারামই থাকে। কিন্তু জীবন রক্ষার অত্যাবশ্যক তাগিদে তখন হারাম ভক্ষণ করলে গুনাহ হবে না মুবাহ হিসেবে।

একইভাবে সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আনআম শরীফ উনার ১৪৫ নং সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

قُلْ لَّا أَجِدُ فِيْ مَاۤ اُوحِيَ اِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلٰى طَاعِمٍ يَطْعَمُهٗ إِلَّاۤ اَنْ يَّكُوْنَ مَيْـتَةً اَوْ دَمًا مَّسْفُوْحًا اَوْ لَحْمَ خِنْزِيْرٍ فَاِنَّهٗ رِجْسٌ أَوْ فِسْقًا اُهِلَّ لِغَيْرِ اللّٰـهِ بِهِ ۚ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْـرَ بَاغٍ وَّلَاعَادٍ فَإِنَّ رَبَّكَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ

অর্থ: বলে দিন, আমার প্রতি যে পবিত্র ওহী মুবারক নাযিল হয়েছে, উনার মধ্যে লোকেরা যা খায় তারমধ্যে হারাম কিছুই আমি পাই না মৃত, প্রবাহমান রক্ত, শূকরের গোশত ব্যতীত। কেননা এসব অপবিত্র অথবা অবৈধ বা নাফরমানী মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত অন্যের নাম নেয়ার কারণে। তবে কেউ অবাধ্য না হয়ে এবং সীমালঙ্ঘণ না করে তা গ্রহণে বাধ্য হলে আপনার প্রতিপালক তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

উক্ত সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে-

فَمَنِ اضْطُرَّ

অর্থ: হারাম ভক্ষণে বাধ্য বা নিরুপায় হলে

غَيْـرَ بَاغٍ

অর্থ: অবাধ্য না হয়ে

وَّلَاعَادٍ

অর্থ: সীমালঙ্ঘন না করে।

অর্থাৎ জীবন রক্ষার জন্য প্রবৃত্তির অনুসরণ না করে অবাধ্যতার উদ্দেশ্য না নিয়ে হারামকে হালাল মনে না করে এবং সীমালঙ্ঘন না করে ও প্রয়োজন অনুযায়ী হারাম বস্তু গ্রহণ করতে পারে মুবাহ হিসেবে।

উল্লেখ্য, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল সমূহ ও হারাম সমূহ স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে। তাই কোন হারাম কখনো হালাল হবে না তদ্রুপ কোন হালালও কখনো হারাম হবে না। আর হজ্জের বিষয়টি জীবন বাঁচানোর মতো কোনো বিষয় নয়। তাই হজ্জের ক্ষেত্রে তাদের সেই অজুহাত মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়, বরং সম্পূর্ণরূপেই পরিত্যাজ্য।

যার প্রমাণ তাদের মুরুব্বী তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আজিজুল হক নিজেও। যেমন সে তার লিখিত ‘আল কুরআনের দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা’ নামক বইয়ের ৫৬ পৃষ্ঠায় কি লিখেছে দেখুন- “বর্তমানে হজ্জ করতে মহিলাদের যেহেতু পর্দার ক্ষতি হয়, তাই মহিলাদের উপর হজ্জ ফরয হলে, বদলী হজ্জ করানো চাই। কারণ এই হজ্জের ন্যায় বরকতময় ছফরে অনেক মহিলা দেখা যায় মাহরাম পুরুষ ব্যতীত রওয়ানা হয়ে যায়, যা কবীরা গুনাহ ও নাজায়িয। অনেক সময় দেখা যায় মাহরাম সাথে থাকা সত্ত্বেও মহিলারা হজ্জের ছফরে পর্দাহীন চলে ও অনেক অবৈধ কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে। তাই বদলী হজ্জ করানোই মহিলাদের জন্য উত্তম। এ সম্পর্কে আল্লামা কিরমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

لَا يَلِيْقُ بِالْـحِكْمَةِ اِيْـجَابٌ فَـرْضٌ عَلٰى وَجْهٍ يَـفُوْتُهٗ فَـرْضٌ اٰخَرُ

অর্থ: এমন হিকমত বা কৌশল অবলম্বন করা উচিত হবে না, যা দ্বারা একটি ফরয আদায় করতে গিয়ে অন্য একটি ফরয ছুটে যায়।” (রাহনুমায়ে হুজ্জাজ)

তাদের উক্ত মুরুব্বীর মতে একজন মহিলার যদি টাকা থাকার পরও বেপর্দা হওয়ার আশঙ্কায় হজ্জে যাওয়া না যায় তবে পুরুষের টাকা থাকার পরও হারাম কাজ অর্থাৎ ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়ার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বে তার উপর হজ্জ ফরয হবে কি করে বা সে হজ্জে যাবে কিভাবে?

আওয়ামুন্নাছ অর্থাৎ সাধারণ জনগণ হোক অথবা খাছ লোক হোক কাহারো জন্যই ছবি তুলে বেপর্দা হয়ে হজ্জ করা জায়িয নেই। আর আখাছ্ছুল খাছ যারা অর্থাৎ আলিম-উলামা, পীর-মাশায়েখ বা হাদীদের জন্য তো কখনোই ছবি তুলে বেপর্দা হয়ে হজ্জ করা জায়িয নেই।

অতএব, পবিত্র পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে যেটা হারাম সেটা পবিত্র মক্কা শরীফ- পবিত্র মদীনা শরীফসহ সমগ্র বিশ্বের মৌলবীরা একমত হয়ে জায়িয বললেও তা কখনই জায়িয হবে না, হতে পারে না।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: ছবি তুলে ও বেপর্দা হয়ে হজ্জ করা যাবে না, এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২১৭ ও ২৫৪তম সংখ্যার সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ পাঠ করুন।

মুহম্মদ জাহিদুল ইসলাম

মাদারীপুর

সুওয়াল : কোন মাস ও দিনকে অশুভ ও কুলক্ষণে মনে করা এবং কোন রোগ-ব্যাধিকে ছেঁায়াচে বা সংক্রামক মনে করার ব্যাপারে সম্মানিত শরীয়তে কোন বিধি-নিষেধ আছে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব : কোন মাস ও দিনকে অশুভ ও কুলক্ষণে মনে করা কুফরী এবং একইভাবে কোন রোগ-ব্যাধিকে সংক্রামক বা ছেঁায়াচে মনে করাটাও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

বর্ণিত রয়েছে, আইয়্যামে জাহিলিয়াতে ছফর মাসকে অশুভ ও কুলক্ষণে মনে করা হতো। মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, মাহবূব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের সে ভ্রান্ত আক্বীদা-বিশ্বাসের মূলোৎপাটন করেন।

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْـرَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏ لَا عَدْوٰى وَلَا هَامَةَ وَلَا نَـوْءَ وَلَا صَفَرَ

অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “সংক্রামক রোগ বলতে কিছু নেই। পেঁচার মধ্যে কুলক্ষণের কিছুই নেই। তারকার (উদয় বা অস্ত যাওয়ার) কারণে বৃষ্টি হওয়াটাও ভিত্তিহীন এবং ছফর মাসে অশুভ বলতে কিছু নেই।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ-৩৯১, শরহুস্ সুন্নাহ্-৬/২৭১)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ عَنْ رَّسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اَلطِّيَـرَةُ شِرْكٌ قَالَهٗ ثَلَاثًا

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, মাহবূব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,“যে কোন বিষয়কেই অশুভ ও  কুলক্ষণে মনে করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। তিনি এ বাক্যটি তিনবার উল্লেখ করেছেন।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী শরীফ, মাওয়ারিদ, মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল-১/৪৩৮, শরহুস্ সুন্নাহ্-৬/২৭৪, মিশকাত শরীফ-৩৯২, শরহুত্  ত্বীবী-৮/৩২)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْـرَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا عَدْوٰى وَلَا صَفَرَ وَلَا هَامَةَ ‏فَـقَالَ أَعْرَابِيٌّ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَا بَالُ الْإِبِلِ تَكُوْنُ فِي الرَّمْلِ كَأَنَّـهَا الظِّبَاءُ فَـيُخَالِطُهَا الْبَعِيْـرُ الْأَجْرَبُ فَـيُجْرِبُـهَا‏ فَـقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ‏ فَمَنْ أَعْدَى الْأَوَّلَ‏‏.‏

অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “কোন রোগই সংক্রামক নয়। পেঁচার মধ্যে কুলক্ষণের কিছুই নেই এবং ছফর মাসের মধ্যেও অশুভ কিছু নেই। তখন এক ব্যক্তি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তাহলে উটের এ অবস্থা হলো কেন, যে উটগুলো ছিল জংলী হরিণের মত তরু-তাজা, যেগুলো ময়দানে স্বাধীনভাবে বিচরণ করতো। এমতাবস্থায় কোথা হতে এক চর্মরোগাক্রান্ত উট এসে সে উটের পালে মিলিত হলো এবং উটগুলোকে চর্মরোগী বানিয়ে দিলো। ফলে এ উটগুলোও খুজলীযুক্ত হয়ে গেলো। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তাহলে প্রথম উটটির চর্মরোগ কোথা থেকে আসলো? অর্থাৎ প্রথম উটটি যেভাবে খুজলীযুক্ত হয়েছিল ঠিক পরবর্তী উটগুলোও সেভাবে খুজলীযুক্ত হয়েছে।” (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ/৩৯১, শরহুস্ সুন্নাহ্-৬/২৬৫)

স্মরণীয় যে, চিকিৎসা শাস্ত্রের পাঠ্যসূচিতে ইসলামী আক্বায়িদ সংক্রান্ত ইলিম না থাকার কারণে কোন কোন চিকিৎসক কিছু কিছু রোগ সম্পর্কে যেমন- চর্মরোগ, খুজলী-পাঁচড়া, কুষ্ঠ, কলেরা-বসন্ত ইত্যাদিকে সংক্রামক বা ছেঁায়াচে বলে অভিমত ব্যক্ত করে থাকে। যা সম্মানিত ইসলামী শরীয়তে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কাজেই, এরূপ ভ্রান্ত ও কুফরী আক্বীদা হতে বিরত থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরয-ওয়াজিবের অন্তভুর্ক্ত।

তবে ভাল লক্ষণ সম্পর্কে ধারণা করার অবকাশ আছে। অর্থাৎ তা মুস্তাহাব-সুন্নত মুবারক। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْـرَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَـقُوْلُ لَا طِيَـرَةَ وَخَيْـرُهَا الْفَأْلُ ‏‏قَالُوْا وَمَا الْفَأْلُ قَالَ ‏الْكَلِمَةُ الصَّالِحَةُ يَسْمَعُهَا أَحَدُكُمْ

অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি শুনেছি যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “কোন বিষয়কে অশুভ কুলক্ষণে মনে করোনা, তবে শুভ লক্ষণ আছে। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! শুভ লক্ষণ কি? তখন তিনি বললেন, উত্তম কথা, যা তোমাদের মধ্য হতে কেউ শুনতে পায়।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, শরহুত্ ত্বীবী-৮/৩১৩, শরহুস্ সুন্নাহ্-৬/২৭২)

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বর্তমানে সমাজে আরো যেসব কুফরীমূলক ভ্রান্ত আক্বীদা ও কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে তা হচ্ছে: (১) রাস্তা চলার সময় কোন প্রাণী যদি ডান দিক থেকে রাস্তা অতিক্রম করে বাম দিকে যায় তাহলে গমন শুভ, কল্যাণকর হবে। আর যদি বিপরীত দিকে যায় তাহলে কুলক্ষণে বা অকল্যাণ হবে, এরূপ বিশ্বাস করা। (২) শান্তির প্রতীক বা শান্তি লাভের আশায় পাখি উড়িয়ে দেয়া।

(৩) ঘুম থেকে উঠে পেঁচা দেখা কিংবা রাতে পেঁচার ডাক শুনলে কুলক্ষণের পূর্বাভাস মনে করা।

(৪) অনেকে সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি কোন বন্ধ্যা ব্যক্তিকে দেখতে পায়, কিংবা খালি কলস দেখতে পায় তাহলে সারাদিন অকল্যাণভাবে অতিবাহিত হবে বা কোন কল্যাণ অর্জিত হবেনা বলে ধারণা করা।

(৫) সাবত বা শনিবার এবং ছুলাছা বা মঙ্গলবার ইন্তিকাল করাকে কুলক্ষণ এবং জাহান্নামী হওয়ার আলামত বলে মনে করে। যা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা বা কুসংস্কারের অন্তর্ভুক্ত।

কেননা হযরত নবী আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের পরে শ্রেষ্ঠ মানুষ ছিদ্দীক্বে আকবর হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি ছুলাছা বা মঙ্গলবার দিন পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। আর দ্বিতীয় ও চতুর্থ খলীফা, খলীফাতুল মুসলিমীন, যথাক্রমে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনারা সাবত বা শনিবার দিন পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।

(৬) পরীক্ষার পূর্বক্ষণে ডিম বা কলা খাওয়াকে পরীক্ষা পাশের প্রতিবন্ধক মনে করা। (৭) সময়কে গালি দেয়া, জোরে বাতাস প্রবাহিত হতে দেখলে বাতাসকে গালি দেয়া, আকাশে দীর্ঘ সময় মেঘ থাকতে দেখলে মেঘকে গালি দেয়া ইত্যাদি।

অতএব, প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীকে নিজেদের ঈমানকে হিফাযত করতে হলে যাবতীয় কুফরী আক্বীদা থেকে বেঁচে থাকাটা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।

সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল আহাদ মুস্তাবীন

দক্ষিণ গোড়ান, ঢাকা- ১২১৯

সুওয়ালঃ নারী ও পুরুষের নামাযে পদ্ধতিগত কোন পার্থক্য আছে কি না? কেউ কেউ বলে, নারী ও পুরুষের নামাযে কোন পার্থক্য নেই। পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফের আলোকে জওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জওয়াবঃ পুরুষ ও নারীর নামায আদায়ে যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে তা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নাহ শরীফ, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও তাবেয়ীনে কিরামগণের ফতওয়া ও আছার শরীফ দ্বারাই ছাবিত বা প্রমাণিত। যা ইমাম মুজতাহিদগণ উনাদের স্ব স্ব কিতাবে বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন।

 কিল্লতে ইলিম ও কিল্লতে ফাহাম অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝই ফিতনার মূল। পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের পরিপক্ষ জ্ঞান যাদের নেই তারাই বলে নারী ও পুরুষের নামাযে কোন পার্থক্য নেই। নারী ও পুরুষের নামাযে পদ্ধতিগত পার্থক্যগুলি সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনা করা হলো। প্রয়োজনে বিস্তারিত ফতওয়া দেয়া হবে ইনশায়াল্লাহ!

নারীদের আযান ও ইক্বামত নেই:

পুরুষরা আযান ও ইক্বামত দ্বারা নামায আদায় করবেন। আর নারীদেরকে আযান ও ইক্বামত ব্যতীতই নামায আদায় করতে হবে। কেননা হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা আযান ও ইক্বামত ছাড়াই নামায আদায় করেছেন। পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে। হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

كُنَّا نُصَلِّيْ بِغَيْرِ إِقَامَةٍ

অর্থ: আমরা ইক্বামত ছাড়াই নামায আদায় করতাম।’ (সুনানে বায়হাকী ২/১১৭)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন-

لَيْسَ عَلَى النِّسَاءِ أَذَانٌ وَّلَا إِقَامَةٌ

অর্থ: মহিলাদের জন্য আযান ও ইক্বামত নেই। (সুনানে বায়হাকী ১/৪০৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৭৬; ফতওয়ায়ে খানিয়া ১/৭৮; ফতহুল কাদীর ১/২১৯; ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/৫৩; ফতওয়ায়ে শামী)

দাঁড়ানো অবস্থায় পার্থক্য:

পুরুষেরা উভয় পায়ের মধ্যে কমপক্ষে চার আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁকা রাখবে। আর মহিলারা উভয় পা সম্পূর্ণ মিলিয়ে দাঁড়াবে।

হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নারীদের নামাযের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, নারীরা (নামাযের সকল রুকন আদায়ে) খুব জড়সড় হয়ে স্বীয় শরীরকে গুটিয়ে রাখবে। (মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীছ শরীফ: ২৭৯৩)

তাকবীরে তাহরীমায় পার্থক্য:

পুরুষরা তাকবীরে তাহরিমার সময় উভয় হাত চাদর থেকে বের করবে। নারীরা চাদর বা ওড়নার ভেতর থেকে হাত বের করবে না।

হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার সূত্রে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘সাবালক নারীর ওড়নাবিহীন নামায মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে কবুল হবে না।’ (সুনানে আবী দাউদ শরীফ, হাদীছ শরীফ: ৬৪১)

হযরত আবু কাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সূত্রে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি ওই নারীর নামায কবুল করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার পূর্ণ শরীর ঢেকে নেয়।’ (আল-মুজামুল আওসাত: হাদীছ শরীফ ৭৬০৬)

তাকবীরে তাহরীমায় হাত উঠানোর সীমা:

পুরুষরা তাকবীরে তাহরীমার সময় উভয় হাত কানের লতি পর্যন্ত উঠাবে, আর নারীরা উঠাবে কাঁধ পর্যন্ত।

পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ رَضِيَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ جِئْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ৃ. فَـقَالَ لِيْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:يَا وَائِلُ بْنُ حُجْرٍ، إِذَا صَلَّيْتَ فَاجْعَلْ يَدَيْكَ حِذَاءَ أُذُنَـيْكَ، وَالْمَرْأَةُ تَجْعَلُ يَدَيْـهَا حِذَاءَ ثَدْيَـيْـهَا

অর্থ: হযরত ওয়াইল বিন হুজর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র দরবার শরীফে হাজির হলাম।… তখন তিনি আমাকে এক পর্যায়ে বলেছিলেন যে, হে ওয়াইল বিন হুজর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! যখন আপনি নামায শুরু করবেন তখন কান বরাবর হাত উঠাবেন। আর মহিলারা হাত উঠাবে বুক বরাবর। (আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ শরীফ নং-২৮)

বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত শিহাব যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ‘নারীরা উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাবেন।’ (মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীছ শরীফ: ২৪৭২)

হাত বাঁধায় পার্থক্য:

পুরুষরা তাকবীরে তাহরীমার পর নাভীর নীচে হাত বাঁধবে, আর নারীরা বুকের উপর হাত বাঁধবে।

হযরত আসিম আহওয়াল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ‘আমি হাফছাহ বিনতে সিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহা উনাকে নামাযের তাকবীর দিতে দেখেছি। এবং তিনি বুকের উপর হাত রাখার প্রতি ইঙ্গিত করলেন।’ (মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীছ শরীফ: ২৪৭৫)

হযরত ইবনে জুরাইজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ‘আমি হযরত আতা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, “নারীরা তাকবীরের সময় পুরুষদের মতো হাত কি উঠাবেন?”

উত্তরে তিনি বলেন, নারীরা পুরুষদের মতো হাত উঠাবেন না, এবং তিনি ইশারায় দেখালেন, তাতে উনার হস্তদ্বয় অনেক নিচু করলেন এবং শরীরের সঙ্গে হাতকে একেবারে মিলিয়ে নিলেন এবং বললেন, নারীদের শরীরের গঠন পুরুষদের মতো নয়।’ (মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীছ শরীফ: ২৪৭৪)

উক্ত বর্ণনা থেকে স্পষ্ট হয় যে, নারীদের শারীরিক গঠনের দিকে লক্ষ্য করে নারী ও পুরুষের হাত ওঠানো ও বাঁধার স্থান ভিন্ন ভিন্ন হওয়াটাই সমীচীন। বিভিন্ন হাদীছ শরীফ থেকেও এটা প্রতিভাত হয় যে, নারীদের বেলায় সর্বাধিক সতর আবৃত হওয়ার দিকটি বিবেচ্য ও প্রণিধানযোগ্য। এতে বোঝা যায়, নামাযের সব রুকনে নারীদের শরীর যে পদ্ধতিতে বেশি ঢাকা যায় সেই পদ্ধতি গ্রহণের নির্দেশ। যেহেতু নারীরা বুকে হাত বাঁধলে তাদের স্পর্শকাতর অঙ্গগুলো বেশি ঢাকে, তাই নারীরা বুকে হাত বাঁধবে। পক্ষান্তরে পুরুষরা হাত বাঁধবে নাভীর নিচে। এটাই ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত।

হযরত ওয়াইল বিন হুজর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, ‘আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে নাভী মুবারকের নিচে রাখতে দেখেছি। (মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীছ শরীফ: ৩৯৫৯)

কোনো কোনো বর্ণনায় পুরুষের বেলায় বুকে হাত বাঁধার কথা পাওয়া গেলেও হাদীছ শরীফ বিশারদগণ সেসব বর্ণনাকে অতি দুর্বল ও অগ্রহণযোগ্য হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।

রুকু অবস্থায় পার্থক্য:

১. পুরুষরা রুকু অবস্থায় এই পরিমাণ ঝুঁকবে, যেন কোমরের নিম্নাংশ সোজা হয়ে যায় এবং মাথা ও নিতম্ব বরাবর হয়ে যায়। আর নারীরা এই পরিমাণ ঝুঁকবে, যেন উভয় হাত শুধু হাঁটু পর্যন্ত পেঁৗছে।

হযরত আয়েশা বিনতে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার সূত্রে বর্ণিত- তিনি রুকুতে খুব বেশি ঝুঁকতেন, যা দৃষ্টিকটু। তাই হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনাকে বলেন, ‘আপনার দুই হাত হাঁটুতে রাখলেই আপনার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।’ (মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীছ শরীফ: ২৫৭৭)

২. পুরুষরা রুকুতে হাতের আঙ্গুল খোলা রেখে হাঁটু শক্ত করে ধরবে। আর নারীরা শুধু আঙুল মিলিয়ে হাঁটুর উপর রাখবে। (মারাকিউল ফালাহ: ১৪১ পৃষ্ঠা)

৩. পুরুষরা রুকুতে বাহু বগল থেকে পৃথক রাখবে। আর নারীরা বাহু বগলের সঙ্গে মিলিয়ে রাখবে।

তাবেয়ী হযরত আতা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, নারীরা রুকু অবস্থায় যথাসম্ভব শরীর গুটিয়ে রাখবে।

মহিলাদের সিজদা:

পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ يَزِيْدَ بْنِ أَبِىْ حَبِيْبٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ: أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ عَلٰى اِمْرَأَتَـيْنِ تُصَلِّيَانِ فَـقَالَ: إِذَا سَجَدْتُمَا فَضُمَّا بَعْضَ اللَّحْمِ إِلَى الأَرْضِ، فَإِنَّ الْمَرْأَةَ لَيْسَتْ فِى ذٰلِكَ كَالرَّجُلِ

অর্থ: বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইয়াযীদ বিন আবী হাবীব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুইজন মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন উনাদেরকে (সংশোধনের উদ্দেশ্যে) বললেন, “আপনারা যখন সিজদা করবেন তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবেন। কেননা মহিলারা এক্ষেত্রে পুরুষদের মত নয়। (সুনানুল বায়হাকী, হাদীছ শরীফ নং-৩০১৬, কিতাবুল মারাসিল লি ইমাম আবু দাউদ-৫৫, হাদীছ শরীফ নং- ৮০)

বিশিষ্ট মুহাদ্দিছ মুহম্মদ ইবনে ইসমাঈল আমীর ইয়ামানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “সুবুলুস সালাম” শরহু বুলুগিল মারাম” গ্রন্থে (১/৩৫১-৩৫২) এই হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে পুরুষ ও মহিলার সিজদার পার্থক্য নির্ণয় করেছেন।

মহিলাদের বসায় পার্থক্য:

পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا جَلَسَتِ الْمَرْأَةُ فِى الصَّلَاةِ وَضَعَتْ فَخِذَهَا عَلَى فَخِذِهَا الأُخْرَى، وَإِذَا سَجَدَتْ أَلْصَقَتْ بَطْنَـهَا فِى فَخِذَيْـهَا كَأَسْتَرِ مَا يَكُوْنُ لَهَا، وَإِنَّ اللهَ تَـعَالَى يَنْظُرُ إِلَيْـهَا وَيَـقُولُ: يَا مَلَائِكَتِى أُشْهِدُكُمْ أَنِّى قَدْ غَفَرْتُ لَهَا

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহিলারা যেন নামায আদায়কালে (ডান) উরু অপর উরুর উপর রাখে। আর সিজদার সময় পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। যা তার সতরের জন্য অধিক উপযোগী। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে দেখে বলেন, হে ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম! আপনারা সাক্ষী থাকুন। আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। সুবহানাল্লাহ! (সুনানে বায়হাকী-২/২২৩, হাদীছ শরীফ নং-৩৩২৪)

হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের হাদীছ শরীফ:

عَنْ حَضْرَتْ عَلِيٍّ عَلَيْهِ السَّلَاُم قَالَ: إِذَا سَجَدَتِ الْمَرْأَةُ فَـلْتَحْتَفِزْ، وَلْتُـلْصِقْ فَخِذَيْـهَا بِبَطْنِهَا

অর্থ: হযরত ইমামুল আউওয়াল আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মহিলারা যখন সিজদা করে তখন যেন খুব জড়সড় হয়ে সিজদা করে এবং উভয় উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে। (মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৮, হাদীছ শরীফ নং-৫০৭২, মুছান্নাফে ইবনে শাইবা-২/৩০৮, হাদীছ শরীফ নং-২৭৯৩, সুনানে কুবরা বায়হাকী-২/২২২)

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ أَنَّهُ سُئِلَ عَنْ صَلَاةِ الْمَرْأَةِ ؟ فَـقَالَ: تَجْتَمِعُ وَتَحْتَفِزُ

অর্থ: রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞেস করা হলো- মহিলারা কিভাবে নামায আদায় করবে? তিনি বললেন, “খুব জড়সড় হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামায আদায় করবে।” (মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০২, হাদীছ শরীফ নং-২৭৯৪)

প্রসিদ্ধ কয়েকজন তাবেয়ীনে কিরাম

উনাদের ফতওয়া:

سَمِعْتُ عَطَاءً رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ سُئِلَ عَنِ الْمَرْأَةِ كَيْفَ تَـرْفَعُ يَدَيْـهَا فِي الصَّلَاةِ ؟ قَالَ: حَذْوَ ثَدْيَـيْـهَا

অর্থ: হযরত আতা বিন আবী রাবাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে একদিন জিজ্ঞেস করা হলো, “নামাযে মহিলারা কতটুকু হাত উঠাবে?” তিনি বললেন- “বুক বরাবর”। (মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/২৭০, হাদীছ শরীফ নং-২৪৮৬)

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ جُرَيْجٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، قَالَ: قُـلْتُ لِعَطَاءٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ: تُشِيْـرُ الْمَرْأَةُ بِيَدَيْـهَا بِالتَّكْبِيْرِ كَالرَّجُلِ ؟ قَالَ: لَا تَـرْفَعُ بِذَلِكَ يَدَيْـهَا كَالرَّجُلِ، وَأَشَارَ فَخَفَضَ يَدَيْهِ جِدًّا، وَجَمَعَهُمَا إلَيْهِ جِدًّا، وَقَالَ إنَّ لِلْمَرْأَةِ هَيْـئَةً لَيْسَتْ لِلرَّجُلِ

অর্থ: হযরত ইবনে জুরাইজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “আমি হযরত আতা বিন আবী রাবাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, “মহিলারা তাকবীরের সময় পুরুষের সমান হাত তুলবেন?” তিনি বললেন, “মহিলারা পুরুষের ন্যায় হাত তুলবেন না। এরপর তিনি উনার উভয় হাত মুবারক (পুরুষ অপেক্ষা) অনেক নিচুতে রেখে শরীরের সাথে খুব মিলিয়ে রাখলেন এবং বললেন, মহিলাদের পদ্ধতি পুরুষ থেকে ভিন্ন। (মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/২৭০, হাদীছ শরীফ নং-২৪৮৯, মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীছ শরীফ নং-৫০৬৬, ৬২৫১)

عَنْ حَضْرَتْ مُجَاهِدٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ أَنَّهُ كَانَ يَكْرَهُ أَنْ يَّضَعَ الرَّجُلُ بَطْنَهُ عَلَى فَخِذَيْهِ إذَا سَجَدَ كَمَا تَصْنَعُ الْمَرْأَةُ

অর্থ: হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি পুরুষের জন্য মহিলার মত উরুর সাথে পেট লাগিয়ে সিজদা করাকে অপছন্দ করতেন। (মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০২, হাদীছ শরীফ নং-২৮৯৬)

عَنْ حَضْرَتِ الزُّهْرِيِّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، قَالَ: تَـرْفَعُ يَدَيْـهَا حَذْوَ مَنْكِبَـيْـهَا

অর্থ: হযরত শিহাব যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “মহিলারা কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাবেন। (মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/২৭০, হাদীছ শরীফ নং-২৪৮৭)

عَنْ حَضْرَتِ الْحَسَنِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، وَقَـتَادَةَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، قَالَا: إِذَا سَجَدَتِ الْمَرْأَةُ فَإِنَّـهَا تَـنْضَمُّ مَا اسْتَطَاعَتْ، وَلَا تَـتَجَافَى لِكَيْ لَا تَـرْفَعْ عَجِيْـزَتَـهَا

অর্থ: হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত কাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বলেন, “মহিলারা যখন সিজদা করবেন তখন যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে থাকবেন। অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রেখে সিজদা দিবেন না। যাতে কোমর উঁচু হয়ে না থাকে”। (মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৭, হাদীছ শরীফ নং-৫০৬৮, মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০৩)

عَنْ حَضْرَتْ إبْـرَاهِيْمَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ إذَا سَجَدَتِ الْمَرْأَةُ فَـلْتَضُمَّ فَخِذَيْـهَا، وَلْتَضَعْ بَطْنَـهَا عَلَيْهِمَا

অর্থ: হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মহিলারা যখন সিজদা করবেন তখন যেন উভয় উরু মিলিয়ে রাখেন এবং পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখেন। (মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০২, হাদীছ শরীফ নং-২৭৯৫)

عَنْ حَضْرَتْ إِبْـرَاهِيْمَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ: كَانَتْ تُـؤْمَرُ الْمَرْأَةُ أَنْ تَضَعَ ذِرَاعَهَا وَبَطْنَـهَا عَلَى فَخِذَيْـهَا إِذَا سَجَدَتْ، وَلَا تَـتَجَافَى كَمَا يَـتَجَافَى الرَّجُلُ، لِكَيْ لَا تَـرْفَعْ عَجِيْـزَتَـهَا

অর্থ: হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, “মহিলাদের আদেশ করা হয়েছে, উনারা যেন সিজদা অবস্থায় হাত ও পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখেন। পুরুষের মত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা না রাখেন। যাতে কোমর উঁচু হয়ে না থাকে। (মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৭, হাদীছ শরীফ নং-৫০৭১)

عَنْ حَضْرَتْ خَالِدِ بْنِ اللَّجَّاجِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ: كُنَّا النِّسَاءُ يُـؤْمَرْنَ أَنْ يَـتَـرَبَّـعْنَ إذَا جَلَسْنَ فِي الصَّلَاةِ، وَلَا يَجْلِسْنَ جُلُوْسَ الرِّجَالِ عَلٰى أَوْرَاكِهِنَّ، يُـتَّـقَي ذٰلِكَ عَلَى الْمَرْأَةِ، مَخَافَةَ أَنْ يَّكُوْنَ مِنْـهَا الشَّيْءُ

অর্থ: হযরত খালেদ বিন লাজ্জাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “মহিলাদেরকে আদেশ করা হয়েছে, তারা যেন নামাযে বসার সময় দুই পা ডান দিক দিয়ে বের করে নিতম্বের উপর বসে। পুরুষদের মত না বসে। আবরণযোগ্য কোন কিছু প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় মহিলাদেরকে এমনি করতে হয়। (মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০৩, হাদীছ শরীফ নং-২৭৯৯)

উল্লেখিত বর্ণনাগুলি ছাড়াও আইম্মায়ে তাবেয়ীনের আরো অনেক বর্ণনা এমন আছে যা নারী-পুরুষের নামাযের পার্থক্য নির্দেশ করে। পক্ষান্তরে একজন তাবেয়ী থেকেও এর বিপরীত কোন বক্তব্য প্রমাণিত নয়।

চার মাযহাবের ইমাম রহমতুল্লাহি

আলাইহিম উনাদের ফিক্বাহ্ শাস্ত্রের আলোকে নারীদের  নামাযের পার্থক্য:

ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অন্যতম ছাত্র, হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,

أَحَبُّ إِلَيْـنَا أَنْ تَجْمَعَ رِجْلَيْـهَا فِيْ جَانِبٍ، وَلَا تَـنْـتَصِبَ انْتِصَابَ الرَّجُلِ

অর্থ: “আমাদের নিকট পছন্দনীয় হলো, মহিলারা নামাযে বসার সময় উভয় পা একপাশে মিলিয়ে রাখবেন। পুরুষের মত এক পা দাঁড় করিয়ে রাখবেন না। (কিতাবুল আসার, ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-১/৬০৯)

অন্যত্র আরো বর্ণিত আছে-

رَوَى اِمَامُنَا الْأَعْظَمُ عَنْ نَافِعٍ عَنْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْـهُمَا أَنَّهُ سُئِلَ كَيْفَ كَانَ النِّسَاءُ يُصَلِّينَ عَلٰى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ كُنَّ يَـتَـرَبَّـعْنَ ثُمَّ أُمِرْنَ أَنْ يَّحْتَفِزْنَ

অর্থ: আমাদের ইমামে আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইমাম নাফে’ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো; নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যুগে নারীরা কিভাবে নামায পড়তেন?”

তিনি বললেন, “আগে উনারা চারজানু হয়ে বসতেন, পরে উনাদেরকে জড়সড় হয়ে বসতে বলা হয়েছে”। (জামেউল মাসানিদ-১/৪০০, কিতাবুল আসার এর টিকা-১/৬০, বাদায়িউস সানায়ে-১/৪৬৬, হিদায়া-১/১০০-১১০, আল মাবসূত লিস সারাখসী-১/৪৬৬, ফতওয়ায়ে শামী-১/৫০৪, ফতওয়ায়ে আলমগীরী-১/৭৩-৭৫)

শাফিয়ী মাজহাবের সম্মানিত ইমাম, ইমাম শাফিয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,

وَقَدْ أَدَّبَ اللهُ تَـعَالَى النِّسَاءَ بِالْاِسْتِتَارِ وَأَدَّبَـهُنَّ بِذٰلِكَ رَسُولُهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأُحِبُّ لِلْمَرْأَةِ فِيْ السُّجُوْدِ أَنْ تَضُمَّ بَعْضَهَا إلٰى بَعْضٍ وَتُـلْصِقَ بَطْنَـهَا بِفَخِذَيْـهَا وَتَسْجُدَ كَأَسْتَرِ ما يَكُونُ لَـهَا وَهَكَذَا أُحِبُّ لَـهَا فِيْ الرُّكُوْعِ وَالْجُلُوسِ وَجَمِيْعِ الصَّلَاةِ أَنْ تَكُونَ فِيْها كَأَسْتَرِ مَا يَكُوْنُ لَهَا

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি মহিলাদেরকে পুরোপুরি আবৃত থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। একইভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত হাবীব ও মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও অনুরূপ শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আমার নিকট পছন্দনীয় হলো, সিজদা অবস্থায় নারীরা এক অঙ্গের সাথে অপর অঙ্গ মিলিয়ে রাখবেন। পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবেন। আর সিজদা এমনভাবে করবেন যাতে সতরের চূড়ান্ত হিফাযত হয়। অনুরূপ রুকু, বৈঠক ও গোটা নামাযে এমনভাবে থাকবেন যাতে সতরের পুরোপুরি হিফাযত হয়। (কিতাবুল উম্ম-১/১৩৮)

মালেকী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফক্বীহ ইমাম আবুল আব্বাস আল কারাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মত উল্লেখ করেন-

وَأَمَّا مُسَاوَاةُ النِّسَاءِ لِلرِّجَالِ فَفِي النَّـوَادِرِ عَنْ مَالِكٍ تَضَعُ فَخِذَهَا الْيُمْنٰى عَلَى الْيُسْرَى وَتَـنْضَمُّ قَدْرَ طَاقَتِهَا وَلَا تُـفَرِّجُ فِي رُكُوعٍ وَلَا سُجُودٍ وَلَا جُلُوسٍ بِخِلَافِ الرَّجُلِ

অর্থ: নামাযে নারীরা পুরুষের মত কি-না? এ বিষয়ে ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। নারীরা ডান উরু বাম উরুর উপর রাখবেন এবং যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে বসবেন। রুকু, সিজদা ও বৈঠকে কোন সময়ই ফাঁক ফাঁক হয়ে বসবেন না। পক্ষান্তরে পুরুষের পদ্ধতি হলো ভিন্ন। (আয যাখীরা-২/১৯৩)

হাম্বলী মাজহাবের সম্মানিত ইমাম, হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফতওয়ায় উল্লেখ আছে। হযরত ইমাম ইবনে কুদামা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আল মুগীনী কিতাবে উল্লেখ করেছেন-

فَأَمَّا الْمَرْأَةُ فَذَكَرَ الْقَاضِي فِيْـهَا رِوَايَـتَـيْنِ عَنْ أَحْمَدَ إحْدَاهُمَا، تَـرْفَعُ؛ لِمَا رَوَى الْخَلَّالُ، بِإِسْنَادِهِ عَنْ أُمِّ الدَّرْدَاءِ، وَحَفْصَةَ بِنْتِ سِيْرِيْنَ أَنَّـهُمَا كَانَـتَا تَـرْفَـعَانِ أَيْدِيَـهُمَا. وَهُوَ قَـوْلُ طَاوُسٍ، وَلِأَنَّ مَنْ شُرِعَ فِي حَقِّهِ التَّكْبِيرُ شُرِعَ فِي حَقِّهِ الرَّفْعُ كَالرَّجُلِ، فَـعَلٰى هَذَا تَـرْفَعُ قَلِيْلًا. قَالَ أَحْمَدُ: رَفْعٌ دُوْنَ الرَّفْعِ. وَالثَّانِيَةُ: لَا يُشْرَعُ؛ لِأَنَّهُ فِي مَعْنَى التَّجَافِي، وَلَا يُشْرَعُ ذٰلِكَ لَهَا، بَلْ تَجْمَعُ نَـفْسَهَا فِي الرُّكُوعِ وَالسُّجُوْدِ وَسَائِرِ صَلَاتِهَا

অর্থ: তাকবীরের সময় মহিলারা হাত উঠাবে, কি উঠাবে না? এ বিষয়ে কাজী (আবু ইয়ায) ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে দু’টি মত উল্লেখ করেছেন। প্রথম মত হলো, হাত উঠাবে। কেননা খল্লাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি হযরত উম্মে দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এবং হযরত হাফছাহ বিনতে সীরীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে সনদসহ বর্ণনা করেন যে, উনারা হাত উঠাতেন। ইমাম তাউস রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বক্তব্যও তাই। উপরন্তু যার ব্যাপারে তাকবীর বলার নির্দেশ রয়েছে তার ব্যাপারে হাত উঠানোরও নির্দেশ রয়েছে। যেমন পুরুষ করে থাকে। এ হিসেবে নারীরাও হাত উঠাবেন। তবে সামান্য।

হযরত আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “তুলনামূলক কম উঠাবেন”।

দ্বিতীয় মত হলো, “নারীদের জন্য হাত উঠানোরই হুকুম নাই। কেননা, হাত উঠালে কোন অঙ্গকে ফাঁক করতেই হয়, অথচ নারীদের জন্য এর হুকুম দেয়া হয়নি। বরং তাদের জন্য নিয়ম হলো, রুকু-সিজদাসহ পুরো নামাযে নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখবে। (আল মুগনী-২/১৩৯)

পবিত্র সুন্নাহ শরীফ, আছারে ছাহাবা কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীনে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম এবং চার মাযহাবের সম্মানিত ইমামগণের ইজমা বা ঐক্যমত দ্বারা দিবালোকের ন্যায় ছাবিত বা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, নামাযের মধ্যে নারী ও পুরুষের পদ্ধতিগত পার্থক্য রয়েছে। আর যারা বলে নামাযে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই তারা গন্ডমুর্খ। সম্মানিত শরীয়ত উনার হুকুম আহকাম সম্পর্কে নিতান্ত অজ্ঞ। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে দ্বীনি সহীহ সমঝ দান করুন। আমীন।

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ