সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১২০তম সংখ্যা | বিভাগ:

 মাওলানা মুহম্মদ হারুনূর রশীদ, সেনপাড়া, রংপুর।

মাওলানা মুহম্মদ আবু জাফর, পাইকগাছা, খুলনা।

মুহম্মদ শফির্কু রহমান, পটিয়া, চট্টগ্রাম।

  সুওয়ালঃ আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর মাধ্যমে আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফের দিন তথা ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে মহান ঈদ হিসেবে জানতে পেরেছি। তাই আমরা সেই দিনকে ঈদের দিন বা খুশীর দিন হিসেবে পালন করে থাকি।   অথচ এক শ্রেণীর লোক বলে যে, ঈদুল ফিত্র ও ঈদুল আযহা এ দু’ঈদ ব্যতীত শরীয়তে আর কোন ঈদ নেই। প্রকৃতপক্ষে ঈদুল ফিত্র ও ঈদুল আযহা ব্যতীত শরীয়তে আর কোন ঈদ আছে কি না? আর মাসিক আল বাইয়্যিনাতে যে ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে মহান ঈদ বলা হয়েছে এর স্বপক্ষে কুরআন-সুন্নাহ্র দলীল বিস্তারিতভাবে জানালে আমরা উপকৃত হবো। জাওয়াবঃ উল্লিখিত সুওয়ালে মূল দু’টি বিষয় ফুটে উঠেছে। (১) ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ঈদ তা শরীয়তে প্রমাণিত আছে কিনা? (২) ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ঈদে আ’যম ও ঈদে আকবর তার দলীল-আদিল্লাহ্ শরীয়তে আছে কিনা? আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাতে যা বলা হয়েছে তা সঠিকই বলা হয়েছে অর্থাৎ আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফের দিন ঈদের দিন বা খুশীর দিনের অন্তর্ভুক্ত। যারা বলে থাকে, “শরীয়তে দু’ঈদ ব্যতীত অন্য কোন ঈদ নেই” তারা প্রকৃতপক্ষে কিল্লতে ইল্ম, কিল্লতে ফাহ্ম (কম জ্ঞান, কম বুঝ) অর্থাৎ কুরআন-সুন্নাহ্ সম্পর্কে নেহায়েত অজ্ঞ হওয়ার কারণেই এ কথা বলে থাকে। কুরআন-সুন্নাহ্ দ্বারা যেভাবে দু’ঈদ ছাবিত হয়েছে বা রয়েছে ঠিক একইভাবে অন্যান্য ঈদ এবং ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম ও ঈদে আকবর হিসেবে ছাবিত বা প্রমাণিত হয়েছে। (ধারাবাহিক)         দ্বিতীয়তঃ “ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ঈদে আ’যম ও ঈদে আকবর” সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-        এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক নিজেই বলেন, انا اعطينك الكوثر.  অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাওছার দান করেছি।” (সূরা কাওছার/১)   “কাওছার”-এর ব্যাখ্যায় একাধিক অর্থ উল্লেখ করা হয়- প্রথমতঃ কাওছার বলা হয়েছে, হাউজে কাওছারকে। যা খাছ করে আল্লাহ্ পাক তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দান করেছেন। যা পান করলে জান্নাতে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত পানির পিপাসা লাগবে না।    দ্বিতীয়তঃ কাওছার-এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, খইরে কাছীর। অর্থ যা অতি উত্তম, অনেক ভাল।  অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যা দিয়েছেন তাও সর্বকালের জন্য, সবদিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ ও উত্তম।  শুধু তাই নয়, এমনকি যা কিছু আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সংস্পর্শে এসেছে সেটাও সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে মহান হয়ে গেছে। যেমন, সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়া-ই-কিরাম একমত হয়েছেন অর্থাৎ ইজমা হয়েছে যে, আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে রওযা শরীফে শায়িত রয়েছেন সে রওযা শরীফের যে মাটি মুবারক তাঁর পা মুবারকে বা শরীর মুবারকে স্পর্শ করে আছে; তার মর্যাদা আরশে আযীমের চেয়েও লক্ষ-কোটি গুণ বেশী। (সুবহানাল্লাহ্) অথচ প্রকৃতপক্ষে মাটির কোন কদর বা মূল্য ছিলনা। কিন্তু শুধুমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্পর্শের কারণে আরশে আযীমের চেয়ে মূল্যবান, ফযীলতপ্রাপ্ত ও সম্মানিত হয়েছে। ঠিক একইভাবে বাজারে অনেক তরিতরকারী রয়েছে দেশে-বিদেশে। কোন তরিতরকারীর সাথে ঈমানের কোন সম্পর্ক নেই।

তবে কদু একটি তরকারী হওয়া সত্ত্বেও তার সাথে ঈমানের সম্পর্ক রয়েছে। তার কারণ হলো এই যে, স্বয়ং আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কদুকে পছন্দ করেছেন ও খেয়েছেন। সেজন্য কুরআন-সুন্নাহ্ মুতাবিক ইমাম-মুজতাহিদগণ ফতওয়া দিয়েছেন, কেউ যদি বলে, ‘আমি কদুকে পছন্দ করিনা, তাহলে সে কাট্টা কাফির হয়ে যাবে।’  প্রকৃতপক্ষে কদুর কোন মর্যাদা ছিলনা। একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে কদুর সম্পর্কের কারণে কদু যেহেতু মর্যাদাবান, ফযীলতপূর্ণ হয়েছে সেহেতু কদুকে পছন্দ করা, মুহব্বত করা ঈমানের শর্ত হিসেবে আরোপ করা হয়েছে।  উল্লেখ্য যে, হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর জন্যই শুক্রবার সম্মানিত ও ফযীলতপ্রাপ্ত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

 عن ابى ليلة بن عبد المنذر قال قال النبى صلى الله عليه وسلم ان يوم الجمعة سيد الايام واعظمها عند الله وهو اعظم عند الله من يوم الاضحى ويوم الفطر فيه خمس خلال خلق الله فيه ادم واهبط الله فيه ادم الى الارض وفيه توفى الله ادم وفيه ساعة لايسألا العبد فيها شيئا الا اعطاه ما لايسأل حراما وفيه تقوم الساعة ما من ملك مقرب ولا سماء ولا ارض ولا رياح ولا جبال ولا بحر الا هو مشفق من يوم الجمعة.

অর্থঃ- “হযরত আবূ লায়লা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন যে, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, জুমুয়ার দিন সকল দিনের সর্দার এবং সকল দিন অপেক্ষা আল্লাহ্ পাক-এর নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এটি ঈদুল আযহার দিন ও ঈদুল ফিত্রের দিন অপেক্ষাও আল্লাহ্ পাক-এর নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এ দিনটিতে পাঁচটি (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয় রয়েছে, (১) এ দিনে আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে সৃষ্টি করেছেন, (২) এ দিনে তাঁকে যমীনে প্রেরণ করেছেন, (৩) এ দিনে তাঁকে ওফাত দান করেছেন, (৪) এ দিনটিতে এমন একটি সময় রয়েছে যে সময়টিতে বান্দা আল্লাহ্ পাক-এর নিকট কিছু চাইলে তিনি অবশ্যই তাকে তা দান করেন যে পর্যন্ত না সে হারাম কিছু চায় এবং (৫) এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। এমন কোন ফেরেশ্তা নেই, আসমান নেই, যমীন নেই, বাতাস নেই, পাহাড় নেই, সমুদ্র নেই, যে জুমুয়ার দিন সম্পর্কে ভীত নয়।” (ইবনে মাজাহ্, মিশকাত) আরো উল্লেখ্য যে, স্বয়ং হযরত আদম আলাইহিস্ সালামও আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কারণে সম্মানিত ও ফযীলতপ্রাপ্ত হয়েছেন।   এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফের ছহীহ্ কিতাব “মুস্তাদরিকে হাকিমে” বর্ণিত হয়েছে, “হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম যখন যমীনে আসলেন, মুখতালিফ রেওয়ায়েত, তিনি যমীনে এসে দু’শ থেকে তিনশ বছর পর্যন্ত আল্লাহ্ পাক-এর নিকট কান্নাকাটি, দোয়া, ইস্তিগফার করলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি এই বলে দোয়া করলেন যে,

 اغفرلى بحق محمد صلى الله عليه وسلم قال الله تعالى كيف عرفت محمدا صلى الله عليه وسلم قال ادم عليه السلام لما خلقتنى بيدك ونفخت فى من روحك فرفعت رأسى فرأيت على قوام العرش مكتوبا لا اله الا الله محمد رسول الله فعلمت انك لم تضف الى اسمك الا احب الخلق اليك قال الله صدقت يا ادم لولاه ما خلقتك وفى رواية اخرى ماخلقت سماء ولا ارضا ولاجنا ولا انسا. الخ

অর্থঃ- “আয় আল্লাহ্ পাক! আপনি হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উছীলায় আমার দোয়া কবুল করুন।” আল্লাহ্ পাক বললেন, “হে আদম আলাইহিস্ সালাম! আপনি হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কিভাবে চিনলেন?” হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম বললেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! যখন আপনি আপনার কুদরতী হাতে আমাকে সৃষ্টি করলেন এবং আমার মধ্যে রূহ ফুঁকে দিলেন, তখন আমি আমার মাথা উপরের দিকে উত্তোলন করি এবং আরশের স্তম্ভের মধ্যে লেখা দেখি, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ্’ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন আমি বুঝলাম যে, যাঁর নাম মুবারক আপনার মুবারক নামের সাথে সংযুক্ত করেছেন তিনি আপনার খুব প্রিয়, আপনার হাবীব হবেন।” আল্লাহ্ পাক বললেন, “আপনি সত্য কথাই বলেছেন। কারণ তিনি যদি না হতেন অর্থাৎ আমি যদি তাঁকে সৃষ্টি না করতাম তবে আপনাকেও সৃষ্টি করতাম না।” অন্য বর্ণনায় এসেছে, “বেহেশ্ত-দোযখ, আসমান-যমীন, লৌহ-কলম, জ্বীন-ইনসান ইত্যাদি কিছুই সৃষ্টি করতাম না।”   কাজেই যেখানে স্বয়ং হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কারণে সম্মানিত ও ফযীলতপ্রাপ্ত হয়েছেন। আর হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর সাথে সম্পর্কযুক্ত হওয়ার কারণে জুমুয়ার দিন শুধু সম্মানিতই হয়নি বরং উম্মতে মুহম্মদীর জন্য ঈদের দিন হিসেবেও সাব্যস্ত করা হয়েছে। জুমুয়ার দিনকে শুধু ঈদের দিন হিসেবেই সাব্যস্ত করা হয়নি বরং ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের চেয়েও বেশী সম্মানিত ও মর্যাদাবান বলে ঈদে আ’যম হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে বা ঘোষণা করা হয়েছে। তাও আবার আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যবান মুবারকের দ্বারা। অর্থাৎ হাদীছ শরীফের দ্বারা।      তাহলে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে সোমবার ও ১২ই রবিউল আউয়ালের মর্যাদা, ফযীলত ও সম্মান কত বেশী হবে তা সহজেই অনুমেয়।       অর্থাৎ সোমবার ও ১২ই রবিউল আউয়ালের সম্পর্ক আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে হওয়ার কারণে অন্যান্য বার ও দিন থেকে সম্মান, ফযীলত, মহত্ত্ব ও মর্যাদার দিক দিয়ে লক্ষ-কোটি গুণ বেশী লাভ করেছে। তাই সোমবার ও বারই রবিউল আউয়াল ঈদে আ’যম তথা শুক্রবারসহ সমস্ত দিন ও বারের সাইয়্যিদ। যা সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম ও ঈদে আকবরের অন্তর্ভুক্ত। যা এক কথায় সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ হিসেবে প্রমাণিত।     মূলতঃ আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে যা কিছু সংশ্লিষ্ট ও সম্পর্কযুক্ত সমস্ত কিছুই সর্বকালের জন্য, সর্বদিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই তাঁর বিলাদত শরীফের দিন ও বিছাল শরীফের দিন সর্বকালের জন্য সবচেয়ে সম্মানিত ও সর্বশেষ্ঠ খুশির দিন বা ঈদের দিন। যা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ বা সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম ও ঈদে আকবর হিসেবেই প্রমাণিত। অতএব, কুরআন-সুন্নাহ্র দ্বারাই প্রমাণিত যে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফের দিন তথা ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছে ‘সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ’ বা সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে মহান ঈদ। অর্থাৎ উম্মাহ্র জন্য যত ঈদের দিন বা খুশীর দিন রয়েছে সমস্ত ঈদের দিন বা খুশীর দিনের সাইয়্যিদ হচ্ছে- ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

{দলীলসমূহঃ (১) রুহুল মায়ানী, (২) রুহুল বয়ান, (৩) মাযহারী, (৪) ইবনে কাছীর, (৫) ইবনে আব্বাস, (৬) খাযিন, (৭) বাগবী, (৮) কুরতুবী, (৯) কবীর, (১০) তাবারী, (১১) দুররে মনছুর, (১২) ছফওয়াতুত্ তাফাসীর, (১৩) বুখারী,(১৪) মুসলিম, (১৫) তিরমিযী, (১৬) ইবনে মাজাহ্, (১৭) মুয়াত্তা মালিক,(১৮) দারিমী, (১৯) মুস্তাদরিকে হাকিম, (২০) মিশকাত, (২১) ফতহুল বারী, (২২) উমদাতুল কারী, (২৩) ইরশাদুস্ সারী, (২৪) তাইসীরুল বারী, (২৫) তুহ্ফাতুল আহওয়াজী, (২৬) উরফুশ্ শাজী, (২৭) আরিদাতুল আহ্ওয়াজী, (২৮) ফতহুল মুলহিম, (২৮) মুফহিম, (২৯) শরহে নববী, (৩০) মিরকাত, (৩১) মুযাহিরে হক্ব, (৩২) আশয়াতুল লুময়াত, (৩৩) লুময়াত, (৩৪) শরহুত্ ত্বীবী, (৩৫) তালীকুছ ছবীহ্ (৩৬) হাশিয়ায়ে হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া, (৩৭) ফতহুল ক্বাদীর মা’য়াল কিফায়া ইত্যাদি।

মুহম্মদ শফির্কু রহমান ছাতক, সুনামগঞ্জ।

সুওয়ালঃ মাসিক মদীনা জানুয়ারী/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় ‘আযানে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক শুনে দু’হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুমু খেয়ে চোখে বুছা দেয়া’ সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, “এরূপ করা বিদাত। কারণ হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর ছাহাবীগণের সময়কালে এই আমল করা হতো বলে কোন প্রমাণ নাই।” আর হাটহাজারী মাদ্রাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার মে/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে নিম্নোক্ত জিজ্ঞাসার সমাধান ছাপা হয়- জিজ্ঞাসাঃ আযানে ‘আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্’ বলার সময় দুই বৃদ্ধাঙ্গুলীতে চুমু খেয়ে চোখে বোলানো এবং আযান শেষে মুনাজাত করা কি? সমাধানঃ উল্লিখিত দু’টি বিষয়ের পক্ষে শরীয়তের গ্রহণযোগ্য কোন প্রমাণ নেই। কাজেই এগুলোকে সুন্নাত বা মুস্তাহাব হিসেবে পালন করা নাজায়েয। বলা বাহুল্য, আযানের পর হাত না উঠিয়ে মুখে বলার দোয়া হাদীসে উল্লেখ রয়েছে, যার অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে।  এখন আমার সুওয়াল হলো- “আযানে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ্” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলার সময় দুই বৃদ্ধাঙ্গুলীতে চুমু খেয়ে চোখে লাগানো এবং আযান শেষে মুনাজাত করা সম্পর্কে মাসিক মদীনা এবং অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? দলীলসহ সঠিক জাওয়াব জানিয়ে বাধিত করবেন। জাও আযানে “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ্” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলার সময় দু’বৃদ্ধাঙ্গুলীতে চুমু খেয়ে চোখে লাগানো এবং আযান শেষে মুনাজাত করা সম্পর্কে মাসিক মদীনা ও হাটহাজারী মাদ্রাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার উক্ত বক্তব্য কুফরীমূলক হয়েছে।   উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তরে ও জিজ্ঞাসার সমাধানে তারা দু’টি বিষয় উল্লেখ করেছে। (১) আযানে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ্’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলার সময় চোখে বুছা দেয়া সম্পর্কে। (২) আযান শেষে মুনাজাত করা সম্পর্কে। আমরা পর্যায়ক্রমে উভয়টিরই সংক্ষিপ্ত অথচ দলীলভিত্তিক আলোচনা করব (ইনশাআল্লাহ্)। (১) আযানে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ্’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলার সময় চোখে বুছা দেয়া সম্পর্কে তারা বলেছে,  (ক) এরূপ করা বিদাত। কারণ হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর ছাহাবীগণের সময়কালে এই আমল করা হতো বলে কোন প্রমাণ নাই। (খ) শরীয়তে গ্রহণযোগ্য কোন প্রমাণ নেই।  (গ) সুন্নত-মুস্তাহাব হিসেবে পালন করা নাজায়িয।   “(ক) এরূপ করা বিদাত। কারণ হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর ছাহাবীগণের সময়কালে এই আমল করা হতো বলে কোন প্রমাণ নাই।”      এর জবাবে বলতে হয় যে, আযানে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ তথা আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র নাম মুবারক শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করে চোখে লাগানো বিদ্য়াত নয়। বরং সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। কারণ, তা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর ছাহাবীগণের সময়কালে এই আমল করা হতো।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফের “সূরা আহ্যাবের ৫৬নং” আয়াত শরীফে বলেন,

ان الله وملئكته يصلون على النبى يايها الذين امنوا صلىوا عليه وسلموا تسليما.

 অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক ও তাঁর ফেরেশ্তাগণ হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ছলাত পাঠ করেন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি যথাযথভাবে ছলাত ও সালাম পাঠ কর।”   এ আয়াত শরীফের তাফসীরে, “তাফসীরে রুহুল বয়ানের” ৭ম খণ্ডের ২২৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,  উর্দূ কম্পোজ করতে হবে  অর্থঃ- “মুহীত কিতাবে উল্লেখ আছে যে, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে তাশ্রীফ এনে একটি স্তম্ভের নিকট বসেছিলেন, তাঁর পাশে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুও বসেছিলেন। এর মধ্যে হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আযান শুরু করেছিলেন, যখন- اشهد ان محمدا رسول الله. (আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ্) উচ্চারণ করলেন তখন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আপন বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখ চুম্বন করে আপন দু’চোখের উপর রেখে বললেন, قرة عينى بك يا رسول الله.  (কুররাতু আইনী বিকা ইয়া রসূলাল্লাহ্) অর্থঃ- “হে রসূল আল্লাহ্ পাক-এর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আমার চোখের মণি।”    হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর আযান শেষ হওয়ার পর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “হে আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি যা করেছেন, যে ব্যক্তি তদ্রুপ করবে, আল্লাহ্ পাক তার সমূদয় গুণাহ্ মাফ করে দিবেন।” (সুবহানাল্লাহ্)   অনুরূপ উক্ত আয়াত শরীফের তাফসীরে “তাফসীরে জালালাইন শরীফের” ৩৫৭ পৃষ্ঠার ১৩ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

اعلم انه يستحب ان يقال عند سماع الاولى من الشهادة الثانية صلى الله عليك يا رسول الله وعند سماع الثانية قرة عينى بك يا رسول الله ثم يقال اللهم متعنى بالسمع والبصر بعد وضع ظفر الابهامين على العينين فانه صلى الله عليه وسلم قائدله الى الجنة.

অর্থঃ- “জেনে রাখ! আযানের সময় শাহাদাতে ছানিয়া অর্থাৎ আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ্ প্র্রথমবার শুনে “ছল্লাল্লাহু আলাইকা ইয়া রসূলাল্লাহ্” বলা এবং উক্ত শাহাদতের বাক্য দ্বিতীয়বার শুনে “র্কুরাতু আইনী বিকা ইয়া রসূলাল্লাহ্” বলা মুস্তাহাব। অতঃপর বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখ চুম্বন করে চোখের উপর রেখে “আল্লাহুমা মাত্তি’নী বিস্সাময়ী ওয়াল বাছার” বলা মুস্তাহাব। এরূপ আমলকারীকে হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে বেহেশ্তে নিয়ে যাবেন।” (সুবহানাল্লাহ্)   “(খ) শরীয়তে গ্রহণযোগ্য কোন প্রমাণ নেই।”  এর জবাবে বলতে হয়, শরীয়ত হচ্ছে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের সমন্বয়। কাজেই এ চারটির কোন একটির মধ্যে যদি পাওয়া যায় তাহলে সেটাই শরীয়তে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ হিসেবে সাব্যস্ত হবে।          স্মর্তব্য, যে সমস্ত বিষয় শরয়ী দলীলের দ্বারা প্রমাণিত তা অস্বীকার করা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কেননা এতে প্রকৃতপক্ষে শরীয়ত তথা ইসলামকেই অস্বীকার করা হয়। বিশেষ করে আযানে চোখে বুছা দেয়ার মাসয়ালাটি হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। যা ছহীহ্ মওকুফ ও ছহীহ্ মরফু হিসেবে ছাবিত।           তাছাড়া “বাহরুর রায়িক, মারাকিউল ফালাহ্, মুনীরুল আইন ফী তাকবীলুল ইবহামাইন, ফতওয়ায়ে শামী, কানযুল ইবাদ, কাহিস্তানী, ফতওয়ায়ে ছূফিয়া, মাকাসিদুল হাসানাহ্, শরহে ইলিয়াস, জামিউর রুমুয, শরহে কবীর, মজমুয়ায়ে ফতওয়া, শরহে নিকায়া, মাজমাউল বিহার, সিরাতে হালবিয়া, হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, ফতওয়ায়ে দেওবন্দ, আহসানুল ফতওয়া ইত্যাদি কিতাবে উক্ত আমলের কথা বর্ণিত আছে।”  অনুরূপ শাফী মাযহাবের বিখ্যাত কিতাব “ইয়ানাতুত্ ত্বালিবীন আলা হাল্লি আলফাযি ফাত্হিল মুবীন” কিতাবে এবং মালিকী মাযহাবের বিখ্যাত কিতাব “কিফায়াতুত্ ত্বালিবির রব্বানী লি রিসালাতি আবি যায়িদিল কায়রুয়ানী” কিতাবে আযানে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র নাম মুবারক শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখ চুম্বন করে চোখে লাগানোর প্রমাণ রয়েছে।   “(গ) সুন্নত-মুস্তাহাব হিসেবে পালন করা নাজায়িয।”  এর জবাবে বলতে হয় যে, কেউ যদি সুন্নতকে ইহানত করে, অবজ্ঞা করে বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে তাহলে সেটা কুফরী হবে। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, لو تركتم سنة نبيكم لكفرتم.  অর্থঃ- “যদি তোমরা তোমাদের নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতকে তরক (অস্বীকার) কর তাহলে অবশ্যই তোমরা কাফির হবে।” (আবূ দাউদ) আরো ইরশাদ হয়েছে, لو تركتم سنة نبيكم لضللتم.   অর্থঃ- “যদি তোমরা তোমাদের নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতকে তরক (অস্বীকার) কর  তাহলে অবশ্যই তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।” (দারিমী, আহমদ) আকাঈদের কিতাবে উল্লেখ আছে, اهانة السنة كفر.  অর্থঃ- “সুন্নতকে ইহানত বা অবজ্ঞা করা কুফরী।” যদি তাই হয়, তাহলে সুন্নতকে নাজায়িয বলার অর্থ হলো হালালকে হারাম বলা। আর হালালকে হারাম বলা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। আর আযানে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র নাম মুবারক শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করে চোখে লাগানোর ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে,

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من سمع اسمى فى الاذان و وضع ابهاميه على عينيه فانا طالبه فى صفوف القيامة و قائده الى الجنة.

অর্থঃ- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি  আযানের সময় আমার নাম শুনলো এবং তার উভয় অঙ্গুলী দু’চোখের উপর রাখলো, আমি তাকে ক্বিয়ামতের দিন কাতারের মধ্যে তালাশ করবো এবং তাকে বেহেশ্তে প্রবেশ করাবো।” (সুবহানাল্লাহ্) (ছলাতে নখশী)  আযানে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ তথা আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র নাম মুবারক শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করে চোখে লাগানো শরীয়তের দৃষ্টিতেই সুন্নত। যা সুন্নতে ছাহাবা এবং খাছ করে সুন্নতে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যিনি নবীদের পরে আল্লাহ্ পাক-এর যমীনে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ তাঁর সুন্নত। কাজেই এটা শুধু আমলযোগ্য ও জায়িযই নয় বরং মুস্তাহাব ও সুন্নতে ছাহাবা। যা ফযীলত, বুযুর্গী ও মর্যাদা লাভের কারণ। এ জন্যই বহু অনুসরণীয় ও বিশ্বখ্যাত ইমাম, মুজতাহিদ ও আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম তাঁদের স্ব স্ব কিতাবে “আযানের মধ্যে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করে চোখে বুছা দেয়ার আমলকে সুন্নত-মুস্তাহাব বলে ফতওয়া দিয়েছেন। কেননা, তা হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত।  আর খাছ করে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের আমল, কাজ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। যেমন, ফিক্বাহ্র বিখ্যাত কিতাব “তাহ্তাবীতে” উল্লেখ আছে,

والسنة ما فعل النبى صلى الله عليه وسلم او واحد من اصحابه.

অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অথবা তাঁর ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মধ্য হতে কোন একজন যে কাজ করেছেন তাই সুন্নত।”   আর হাদীছ শরীফে স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

عليكم بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين المهديين تمسكوابها وعضوا عليها بالنواجد.

অর্থঃ- “আমার সুন্নত এবং হিদায়েতপ্রাপ্ত হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন (হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম)-এর সুন্নত পালন করা তোমাদের প্রতি ওয়াজিব। তোমরা তা মজবুতভাবে মাড়ীর দাঁত দিয়ে আঁকড়ে ধর।” (আবূ দাউদ, ইবনে মাজাহ্, দারিমী, আহমদ, তিরমিযী, মিশকাত)     কাজেই হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহুমগণের সুন্নতও অবশ্যই পালনীয়।  তাই আযানের সময় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র নাম মুবারক শুনে চোখে বুছা দেয়া সুন্নত।     এছাড়াও নিম্নোক্ত সকল কিতাবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করে চোখে বুছা দেয়াকে জায়িয, ফযীলতের কারণ ও মুস্তাহাব বলে উল্লেখ করা হয়েছে।  যথা, তাফসীরে জালালাইন, তাফসীরে রুহুল বয়ান, শরহে নিকায়া, মাজমাউল বিহার, ফতওয়ায়ে শামী, মজমুয়ায়ে ফতওয়া, ফতওয়ায়ে খযানাতুর রিওয়ায়িত, ফতওয়ায়ে সিরাজুম্ মুনীর, ফতওয়ায়ে মিফতাহুল যিনান, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া, ফতওয়ায়ে বরকতীয়া, মাকাসিদুল হাসানাহ্, ইয়ানাতুত্ ত্বালিবীন আলা হাল্লি আলফাযি ফাত্হিল মুবীন, কিফায়াতুত্ ত্বালিবির রব্বানী লি রিসালাতি আবি যায়িদিল কায়রুয়ানী, মুনীরুল আইন ফী তাকবীলুল ইব্হামাইন, নাহ্জুস্ সালামাহ্ ফী তাকবীলিল ইবহামাইনে ফিল ইক্বামাহ্, ছলাতে নখ্শী, হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, কুওয়াতুল কুলূব, কিতাবুন্ নিয়ামুল ইনতিবাহ্, তরীকুল ইসলাম ইত্যাদি।   এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় বিষয় এই যে, শরীয়ত যে বিষয়ে স্পষ্টভাবে কোন আদেশ বা নিষেধ প্রদান করেনি, তা মুবাহ্ হওয়ার ব্যাপারে সকলেই একমত।     তবে “আযানের সময় বৃদ্ধাঙ্গুুলী চুম্বন করার আমল” যেখানে মরফু ও মওকুফ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত, শুধু তাই নয় বরং হাদীছ শরীফ খানা ছহীহও। সুতরাং তা কি করে নাজায়িয হতে পারে?    এরপরও যদি উক্ত হাদীছ শরীফকে জয়ীফও ধরে নেই, তথাপিও তা নাজায়িয হতে পারেনা। কারণ সকল মুহাদ্দিছগণের মতেই জয়ীফ হাদীছ শরীফ ফযীলত অর্জনের জন্য আমল করা জায়িয। আর জয়ীফ হাদীছ শরীফ দ্বারাও মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়। যেমন, এ প্রসঙ্গে ফিক্বাহ্র বিশ্ব বিখ্যাত কিতাব “ফতহুল ক্বাদীর” কিতাবে উল্লেখ আছে,

الاستحباب يثبت بالضعيف.

অর্থঃ- “জয়ীফ হাদীছ শরীফ দ্বারা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়।”  “তাফসীরে জালালাইন শরীফের” ৩৫৭ পৃষ্ঠার ১৩ নং হাশিয়ার পরিশেষে বলা হয়েছে,

قد صح من العلماء تجويز الخذ بالحديث الضعيف فى العمليات.

অর্থাৎ- “আমলের ক্ষেত্রে জয়ীফ হাদীছ শরীফকে গ্রহণ করা জায়িয। এ মতটিকে অধিকাংশ উলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ছহীহ্ বা বিশুদ্ধ বলেছেন।”

কাজেই শরয়ী দলীল-প্রমাণ ব্যতীত কোন বিষয়কে নাজায়িয বলা জিহালত, গোমরাহী ও কুফরী বৈ অন্য কিছুই নয়।        উল্লেখ্য যে, মাসিক মদীনা ও হাটহাজারীর বক্বদরে নেছাব মৌলভী ছাহেব ও তাদের সমজাতীয়রা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং মাযহাবের চার ইমামের থেকে একখানা দলীলও পেশ করতে পারবে না যে, আযানে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র নাম মুবারক শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখ চুম্বন করে চোখে লাগানো নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং শরীয়তে যেটাকে নিষেধ করা হয়নি সেটা নাজায়িয হয় কি করে? হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপস্থিতিতে এবং তাঁরই সামনে অঙ্গুলী চুম্বন করে চোখে বুছা দিয়েছেন এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা সমর্থন করেছেন এবং বলেছেন, হে আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! “তুমি যা করেছ, যে ব্যক্তি অনুরূপ করবে, আল্লাহ্ পাক তার সমস্ত গুণাহ্ মাফ করবেন।  প্রকৃতপক্ষে এটা আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। আর সুন্নত আমলকে সুন্নত মনে করেই আমল করতে হবে। কেননা প্রকৃত জ্ঞানীতো সেই যে ফরযকে ফরয, ওয়াজিবকে ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদাকে মুয়াক্কাদা, যায়িদাকে যায়িদা ও মুস্তাহাবকে মুস্তাহাব হিসেবে মেনে নেয়। সুতরাং সুন্নত বা মুস্তাহাব আমলকে নাজায়িয বলার অর্থই হচ্ছে হাদীছ শরীফকে অস্বীকার করা যা সম্পূর্ণই কূফরী।          অতএব, উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বর্ণনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো, মাসিক মদীনা ও হাটহাজারীর বক্বদরে নেছাব মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা এবং সুন্নত আমলকে বিদ্য়াত ও নাজায়িয বলার কারণে কুফরী হয়েছে।    আর যে কুফরী করে সে মুরতাদ হয়। মুরতাদের হুকুম হলো-  তার স্ত্রী তালাক হয় যদি সে বিবাহিত হয়ে থাকে, হজ্ব বাতিল হয় যদি সে হজ্ব করে থাকে; এবং সে কাফির হয়। অর্থাৎ তার সমস্ত নেক আমল বিনষ্ট হয়ে যায়। তওবা না করা পর্যন্ত সে ঈমানদার হবেনা। বিবাহ না দোহ্রালে স্ত্রীর সাথে সংসার করা যাবেনা। যদি সংসার করে তবে যিনাকারীর গুনাহ্ হবে। সন্তান হলে তা হালাল হবেনা। যদি হজ্বের সামর্থ্য থাকে তবে পুনরায় তাকে হজ্ব করতে হবে, যদিও সে পূর্বে হজ্ব করে থাকে। তা না করলে কবীরা গুনাহ্ হবে। তার ওয়ারিশ সত্ত্ব বাতিল হয়ে যাবে। তাকে তিন দিন সময় দেয়া হবে তওবা করার জন্য। যদি তওবা করে, তবে ক্ষমা করা হবে; অন্যথায় তার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

কেননা হাদীছ শরীফে রয়েছে, “তিন কারণে মৃত্যুদণ্ড দেয়া জায়িয। যথা- (ক) ঈমান আনার পর কুফরী করলে অর্থাৎ মুরতাদ হলে। (খ) ঐ ব্যভিচারি বা ব্যভিচারিনী, যারা বিবাহিত বা বিবাহিতা। (গ) যে অন্যায়ভাবে কাউকে কতল করে।” (তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ্, মুসনদে শাফিয়ী, মুসনদে বাজ্জার, মুস্তাদরিকে হাকিম)  আর এরা মারা যাবার পর যারা এদের জানাযার নামায পড়ে বা পড়ায় বা জানাযার নামাযে সাহায্য-সহযোগিতা করে, তাদের সকলের উপরই মুরতাদের হুকুম বর্তাবে এবং এ সকল মুরতাদ মরলে বা নিহত হলে তাকে মুসলমানগণের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না। এমনকি মুসলমানের ন্যায়ও দাফন করা যাবে না। বরং তাকে কুকুরের ন্যায় গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখতে হবে।  কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

ان الذين كفروا وماتوا وهم كفار فلن يقبل من احدهم ملء الارض ذهبا ولو افتدى به اولئك لهم عذاب اليم وما لهم من نصرين.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই যারা কাফির এবং কুফরী অবস্থায় মারা গেছে, তারা যদি (কুফরীর পরিবর্তে) যমীন পরিপূর্ণ স্বর্ণ তার ফিদিয়া বা কাফ্ফারা বাবদ দেয় (আমার থেকে বাঁচার জন্য), তা কখনো গ্রহণ করা হবেনা। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি বা আযাব এবং তাদের জন্য কোন ধরণের সাহায্যকারী নেই। (সূরা  আলে ইমরান/৯১)

[বিঃ দ্রঃ- আযানে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ্’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলার সময় দু’বৃদ্ধাঙ্গুলীতে চুমু খেয়ে চোখে লাগানো সুন্নত বা মুস্তাহাব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১ম বর্ষ ৩য় সংখ্যার “অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পাঠ করুন। এবং বিশেষ করে ১১, ১৪, ৩৭, ৪৭, ৫৩, ৭৬, ৮৩, ৯৯তম সংখ্যাগুলো পাঠ করুন। সেখানে মাসিক মদীনা, রাহমানী পয়গাম ও মুঈনুল ইসলামের ভুল বক্তব্য খণ্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে।  এবার চতুর্থবারের মত মাসিক মদীনা ও হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবেদের ভুল বক্তব্য খণ্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হলো।] {দলীলসমূহঃ- (১) তাফসীরে জালালাইন, (২) তাফসীরে রুহুল বয়ান, (৩) দাইলামী শরীফ, (৪) মাজমাউল বিহার, (৫) মজমুয়ায়ে ফতওয়া, (৬) মুহীত, (৭) ইয়ানাতুত্ তালিবীন আলা হাল্লি আলফাযি ফাত্হিল মুবীন, (৮) কিফায়াতুত্ তালিবির রব্বানী লি রিসালাতি আবি যায়িদিল কায়রুয়ানী, (৯) মুনিরুল আইন ফী তাকবীলুল ইব্হামাইন, (১০) নাহ্জুস্ সালামাহ্ ফী তাক্ববীলিল ইবহামাইনে ফিল ইক্বামাহ্, (১১)  ছলাতে নখ্শী, (১২) হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, (১৩) কুওয়াতুল কুলুব, (১৪) কিতাবুন নিয়ামুল ইনতিবাহ্, (১৫) ফতওয়ায়ে খজানাতুর রিওয়ায়িত, (১৬) ফতওয়ায়ে সিরাজুম মুনীর,(১৭) ফতওয়ায়ে মিফতাহুল যিনান, (১৮) জামিউর রুমুয, (১৯) কানযুল ইবাদ, (২০) কাহেস্তানী, (২১) বাহরুর রায়িক, (২২) শরহে নিকায়া, (২৩) ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া, (২৪) ফতওয়ায়ে বরকতিয়া, (২৫) মারাকিউল ফালাহ্, (২৬) হাওয়াশিউল বাহার র্লি রমলী, (২৭) ফতওয়ায়ে সুফীয়া, (২৮) মাকাসিদুল হাসানা,(২৯) শরহে কবীর, (৩০) শরহে ইলিয়াছ (৩১) ফতওয়ায়ে শামী,  (৩২) তরীকুল ইসলাম, (৩৩) ফতওয়ায়ে দেওবন্দ, (৩৪) আহসানুল ফতওয়া ইত্যাদি।}(চলবে)

মুছাম্মত সানজিদা আক্তার সভানেত্রী-

ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত মুহম্মদপুর, ঢাকা।

সুওয়ালঃ অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়- জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী (রাঃ) বলেন যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না।  তাদের সকল আমল হবে খুবই নিখূঁত ও সুন্দর। তাদের নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে, তাদের রোযা দেখে তোমাদের রোযাকে তোমরা তুচ্ছ ও নগণ্য মনে করবে। তাদের আমল দেখে তোমরা তোমাদের আমলকে হেয় মনে করবে, তারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের গলার নিচে যাবেনা। তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন-প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। এদলের আমল যতই তোমাদেরকে আকৃষ্ট করুক না কেন, কখনই তাদের দলে যাবেনা। কারণ প্রকৃতপক্ষে এরা হবে ইসলাম হতে খারিজ, দ্বীন হতে বহির্ভূত। তীর যেমন ধনুক হতে বের হয়ে যায় সে আর কখনও ধনুকের নিকট ফিরে আসেনা। তেমনিই এরা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে, আর কখনও দ্বীনের পথে, কুরআন ও সুন্নাহ্র পথে ফিরে আসবেনা।

আমার প্রশ্ন হল, উপরোক্ত হাদীস সহীহ্ কি-না। সহীহ্ হলে এ দ্বারা উদ্দেশ্য কারা। উক্ত হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতের কোন সম্পর্ক আছে কি-না? অনেকে এই হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতকে জড়াতে চান। উক্ত হাদীসের সঙ্গে তাবলীগ জামাতকে জড়ানো সঠিক কি-না? জবাবঃ প্রশ্নে বর্ণিত হাদীস সহীহ্। মুহাদ্দিছীনে কেরাম উক্ত হাদীসসহ এ জাতীয় হাদীসসমূহের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, এ সব হাদীস দ্বারা একটি নির্ধারিত জামাত বা খারিজী ফেরক্বা নামে পরিচিত তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। হযরত আলী (রাঃ) এর খেলাফত আমলে এই হাদীসসমূহের বাস্তবতা এবং খাওয়ারেজদের অবস্থার সমন্বয় ঘটেছিল। যার দ্বারা একথা সুস্পষ্টভাবে বলা চলে যে, এ হাদীসসমূহ দ্বারা একমাত্র খাওয়ারেজদেরকেই বুঝানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণাদি ছাড়া অন্য কোন জামাতকে এই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করা যাবেনা।

কোন প্রকার প্রমাণ ছাড়া তাবলীগ জামাতকে এই হাদীসসমূহের মেসদাক বা উদ্দেশ্য বানানো, তাদেরকে খাওয়ারেজ বলা শরীয়তের দৃষ্টিতে মারাত্মক অন্যায় ও অপরাধ। তাবলীগের নিয়মনীতি ও কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়তসম্মত। ইসলাম পরিপন্থী কোন কিছু এতে নেই। বর্তমান বিশ্বে আল্লাহ্ তা’আলা তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে পথহারা, ঈমানহারা, হেদায়েত থেকে বঞ্চিত অসংখ্য মানুষকে হেদায়েত করেছেন, ঈমান আনার তাওফিক দান করেছেন। এছাড়া এ জামাতের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে অসংখ্য জগদ্বিখ্যাত আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদ।

অতএব, তাবলীগ জামাতকে খারেজী জামাত বলা, মিথ্যা অপবাদ বৈ কিছুই নয়। (ফতহুল বারী ১২ঃ৩৫০, আল মিরকাত ৭:১০৭)        উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-  (১) উল্লিখিত হাদীছ শরীফে বর্ণিত গুণাবলী প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে আছে কি?

(২) উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা কি শুধু খারিজী ফিরক্বার লোকদেরকেই বুঝানো হয়েছে? নাকি খারিজীদের ন্যায় আক্বীদা পোষণকারীদের ক্ষেত্রেও এ হাদীছ শরীফ প্রযোজ্য?

(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য? (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি? (৫) কুরআন-সুন্নাহ্র কোথাও প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করার নির্দেশ আছে কি? প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করা কুরআন-সুন্নাহ্ মতে জায়িয কিনা?       কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী। জাওয়াবঃ  প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ  জামায়াত সম্পর্কিত উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।

শুধু তাই নয়, তারা প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের সাফাই গাইতে গিয়ে বর্ণিত হাদীছ শরীফের অপব্যাখ্যা করেছে। সাথে সাথে “ছয় উছূলীদের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী কোন আক্বীদা-আমল নেই” বলে তাদের নির্লজ্জ দালালী করে নিজেদেরকে অপব্যাখ্যাকারী ও মিথ্যাবাদীরূপে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবাহিক দলীলভিত্তিক আলোচনা করলেই তা আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে।

তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো- ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও  মিথ্যাচারীতার খণ্ডনমূলক জবাব- (২)    প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার দ্বিতীয় সুওয়াল হলো- “উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা কি শুধু খারিজী ফিরক্বার লোকদেরকেই বুঝানো হয়েছে? নাকি খারিজীদের ন্যায় আক্বীদা পোষণকারীদের ক্ষেত্রেও এ হাদীছ শরীফ প্রযোজ্য?”

  আপনার উক্ত সুওয়ালের জবাবে বলতে হয় যে, উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা ‘শুধুমাত্র খারিজীদেরকেই বুঝানো হয়েছে অন্য কাউকে বুঝানো হয়নি।’ একথা চরম জিহালত ও গোমরাহী বৈ কিছুই নয়। কেননা, তাদের উল্লিখিত উক্ত হাদীছ শরীফে ‘খারিজীদের’ কথা মোটেও উল্লেখ নেই। বরং আমভাবেই উক্ত হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করা হয়েছে।

অতএব, উল্লিখিত হাদীছ শরীফে বর্ণিত গুণাবলী ও আলামতসমূহ যাদের মধ্যে পাওয়া যাবে তারাই উক্ত হাদীছ শরীফের ‘মেছদাক’ বলে গণ্য হবে। তারা খারিজীই হোক অথবা ওহাবীই হোক অথবা অন্য যে কোন ফিরক্বার লোকই হোক না কেন? তবে হ্যাঁ, খারিজী ফিরক্বার লোকদের সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছ শরীফের সাথে যেহেতু তাদের উল্লিখিত হাদীছ শরীফের অনেক ক্ষেত্রেই মিল রয়েছে। তাই উল্লিখিত হাদীছ শরীফে বর্ণিত গুণাবলী ও আলামতসম্পন্ন লোকেরাও যে খারিজী ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।  কেননা, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, من تشبه بقوم فهو منهم.  অর্থঃ- “যে ব্যক্তি (আক্বীদা ও আমলে) যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখবে সে ব্যক্তি তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।” প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের সাথে খারিজী ফিরক্বার আক্বীদা ও আমলের যে অনেক ক্ষেত্রেই মিল রয়েছে তা খারিজীদের সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছ শরীফসমূহ উল্লেখ করলেই এবং খারিজীদের আক্বীদা ও আমলগুলো তুলে ধরলেই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ে যাবে। যেমন, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن شريك بن شهاب قال كنت اتمنى ان القى رجلا من اصحاب النبى صلى الله عليه وسلم اسئله عن الخوارج فلقيت ابا برزة فى يوم عيد فى نفر من اصحابه فقلت له هل سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يذكر الخوارج قال نعم سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم باذنى ورايته بعينى اتى رسول الله صلى الله عليه وسلم بمال فقسمه فاعطى من عن يمينه ومن عن شماله ولم يعط من ورائه شيا فقال رجل من ورائه فقال يا محمد ما عدلت فى القسمة رجل اسود مطموم الشعر عليه ثوبان ابيضان فغضب رسول الله صلى الله عليه وسلم غضبا شديدا وقال والله لاتجدون بعدى رجلا هو اعدل منى ثم قال يخرج فى اخر الزمان قوم كان هذا منهم يقرعون القران لايجاوز تراقيهم يمرقون من الاسلام كما بمرق السهم من الرمية سيماهم التحلق.

অর্থঃ- “হযরত শারীক ইবনে শিহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমার প্রবল ইচ্ছে ছিল যে, যদি আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জনৈক ছাহাবীর সাক্ষাৎ পাই তবে তাঁকে ‘খারিজীদের’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করব। সৌভাগ্যবশতঃ এক ঈদের দিন হযরত আবু রারযাতুল আসলামী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সাথে তাঁর কতেক বন্ধু সমেত আমার সাক্ষাৎ হলো। তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কখনো হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ‘খারিজীদের’ সম্পর্কে আলোচনা করতে শুনেছেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি আমার দু’কানে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি এবং নিজ চোখে তাকে দেখেছি যে, একদা রসূলুল্লাহ্ ছল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিদমতে কিছু মাল-সম্পদ এসেছিল। তিনি তা বন্টন করে দিলেন। যে তাঁর ডানে ছিল তাকেও দিলেন এবং যে তাঁর বামে ছিলেন তাকেও দিলেন। কিন্তু যে তাঁর পিছনে ছিল তাকে কিছুই দিলেন না। তখন এক ব্যক্তি পিছন থেকে দাঁড়িয়ে বললো, ‘হে মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মাল বন্টনে আপনি ইনছাফ করছেননা। “লোকটি ছিল কালো বর্ণের নেড়ে মাথা, গায়ে ছিল সাদা রংয়ের দু’খানা কাপড়।” তার কথা শুনে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভীষণ রাগান্বিত হলেন এবং বললেন, আল্লাহ্ পাক-এর কসম! তোমরা আমার পরে আর কোন ব্যক্তিকেই আমার চেয়ে অধিক ইনছাফকারী পাবেনা। অতঃপর বললেন, ‘শেষ যামানায় এমন একদল লোকের আবির্ভাব ঘটবে এ লোকটিও তাদেরই একজন। তারা কুরআন শরীফ পড়বে ঠিকই কিন্তু কুরআন শরীফ তাদের কণ্ঠনালীর নীচে নামবেনা।’ অর্থাৎ অন্তরে বসবে না। তারা ইসলাম থেকে এরূপভাবে বের হয়ে যাবে যেরূপ নিক্ষিপ্ত তীর শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায়। তাদের পরিচয় হলো তারা হবে ন্যাড়া মাথা। অর্থাৎ তারা সর্বদা মাথা মুণ্ডন করবে।” (নাসাঈ, মিশকাত) এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে যে,

عن ابى سعيدن الخدرى وانس بن مالك عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال سبكون فى امتى اختلاف وفرقة قوم يحسنون القيل ويسيئون الفعل يقرئون القران لايحاوز تراقيهم … قالوا يا رسول الله ما سيماهم قال التحليق.

অর্থঃ- “হযরত আবু সাঈদ খুদরী ও হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা হতে বর্ণিত। হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, অতি শীঘ্রই আমার উম্মতের মতবিরোধ ও দলাদলি দেখা দেবে। তাদের মধ্যে একদল এরূপ বের হবে যে, তাদের বক্তব্য বা বয়ান হবে খুব সুন্দর বা চমকপ্রদ। কিন্তু আমল হবে খারাপ। তারা কুরআন শরীফ পাঠ করবে ঠিকই তবে তা তাদের কণ্ঠনালীর নীচে প্রবেশ করবে না। (অর্থাৎ তাদের ঈমান থাকবেনা) …. হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তাদের পরিচয় বা আলামত কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাদের আলামত হলো মাথা মুণ্ডন করা। অর্থাৎ তারা সর্বদা মাথা মুণ্ডন করে থাকবে।” (আবু দাউদ, মিশকাত) হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে যে,

عن على رضى الله عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول سيخرج قوم فى اخر الزمان حداث الاسنان سفهاء الاحلام يقولون من خير قول البرية.

অর্থঃ- “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, শেষ যামানায় এমন একদলের আবির্ভাব হবে (যে দলের সদস্যরা) বয়সে যুবক ও নির্বোধ ও মূর্খ হবে। তারা বয়ানে শ্রেষ্ঠতম কথাগুলোই বলবে।” (বুখারী)    গাউছুল আযম, মাহবুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, হযরত বড় পীর শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত কিতাব ‘গুনিয়াতুত্ তালেবীন’-এর ৮৮নং পৃষ্ঠায় লিখেন, “খারিজীদের আরেকটি নাম ‘হারুরিয়া’। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর দল ছেড়ে কুফা হতে বের হয়ে হারুরা নামক একটি স্থানে অবস্থান নিয়েছিলো। তাই এদেরকে ‘হারুরিয়া’ বলা হয়। হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এদের সম্পর্কেই ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন যে, এরা দ্বীন হতে এমনভাবে বের হয়ে যাবে যেমন ধনুক হতে তীর বের হয়ে যায়। এরা কখনোই দ্বীনে ফিরে আসবেনা। সত্যিই এরা দ্বীন ইসলাম হতে বের হয়ে গেছে। সত্য পথ পরিহার করেছে। ইসলামী খিলাফতের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে এবং মুসলমানদের রক্ত ও জান-মাল হালাল মনে করেছে। এরা তাদের দলভুক্ত নয় এরূপ লোকদের কাফির মনে করে থাকে। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রিয় ছাহাবীগণের উপর জুলুম ও নির্যাতন করেছে এবং ছাহাবীগণের হত্যা বা সমালোচনা করাকে বৈধ মনে করে।”    উপরোক্ত হাদীছ শরীফসমূহের বর্ণনা দ্বারা খারিজীদের আক্বীদা, আমল ও আলামতের যে সকল প্রমাণ পাওয়া যায় তা হলো- ১। নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের প্রতি বদ্ ধারণা। অর্থাৎ খারিজীরা নবী-রসূলগণ ভুল বা গুণাহ্ করেছেন বলে মনে করে। ২। হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি বদ্ ধারণা। অর্থাৎ খারিজীরা ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের সমালোচনা করাকে ছওয়াব মনে করে থাকে। ৩। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত বাবরী চুলের বিরোধিতা করে সর্বদা মাথা মুণ্ডন করা। অর্থাৎ খারিজীরা সর্বদাই মাথা মুণ্ডন করাকে পছন্দ করে থাকে। ৪। অধিকাংশ সদস্য নির্বোধ বা জাহিল হওয়া। অর্থাৎ খারিজীরা হবে নির্বোধ ও নিরেট মূর্খ। ৫। তাদের বয়ান বা বক্তৃতা হবে খুবই সুন্দর ও চমকপ্রদ। ৬। তারা ও তাদের দলভুক্তরা ব্যতীত সকলেই কাফির।

এবার দেখা যাক উল্লিখিত আক্বীদা, আমল ও আলামতসমূহ প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে আছে কিনা। প্রথমতঃ খারিজীদের ন্যায় প্রচলিত ছয় উছূলীরাও নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের প্রতি সু-ধারণা পোষণ করেনা। বরং অনেক ক্ষেত্রেই বদ আক্বীদা পোষণ করে থাকে। নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ ভুল বা গুণাহ্ করেছেন বলে প্রচলিত ছয় উছূলীরাও মনে করে থাকে। এর বহু প্রমাণ তাদের কিতাবাদী ও বক্তব্যে পাওয়া যায়। নিম্নে কতিপয় প্রমাণ উল্লেখ করা হলো- প্রচলিত ছয় উছূলীদের মুরুব্বী দ্বারা লিখিত “মলফুযাতে শাইখুল হাদীছ” নামক কিতাবের ২৩১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম গন্দম খেয়ে ভুল করেছিলেন।” (নাউযুবিল্লাহ্)

ছয় উছূলীদের আরেক মুরুব্বী ইসমাঈল হোসেন দেওবন্দী তার “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবের ৬২ ও ৮৯ পৃষ্ঠায় লিখেছে, “দাওয়াত বন্ধ করার কারণে আল্লাহ্ হযরত ইউনুছ আলাইহিস্ সালামকে অবশ্য গযবে ফেললেন। …. হযরত ইউনুছ আলাইহিস্ সালাম মাছের পেটে চল্লিশ দিন আবদ্ধ থেকে নিজ ত্রুটি স্বীকার করে তওবা করার কারণে বিপদ হতে উদ্ধার পেলেন।” (নাউযুবিল্লাহ্) “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবের ৮৯ পৃষ্ঠায় ইসমাঈল হোসেন দেওবন্দী আরো লিখেছে, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চল্লিশ দিন পর্যন্ত ‘গারে হেরা’ পর্বতে থেকে আল্লাহ্ পাক-এর ধ্যান ও যিকিরে চিল্লা দিলেন, যার ফলে তিনিও  কুরআন ও নুবুওওয়াত প্রাপ্ত হলেন।” (নাউযুবিল্লাহ্)

অর্থাৎ প্রচলিত ছয় উছূলীদের মতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চিল্লা না দিলে নুবুওওয়াত পেতেন না এবং তাবলীগ না করলে তাঁর ঈমান পাকাপোক্ত হতনা। সাথে সাথে এটাও বুঝা যায় যে, দ্বীন প্রচার শুরু করার পূর্বে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঈমান ‘মজবুত’ ছিলনা বরং দুর্বল ছিল। (নাউযুবিল্লাহ্)  এছাড়াও নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ সম্পর্কে প্রচলিত ছয় উছূলীদের আরো বহু বদ্ ধারণা বা বদ্ আক্বীদা রয়েছে। যা তাদেরই লিখিত কিতাবাদীতে উল্লেখ আছে।

অতএব, দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই  প্রমাণিত হলো যে, খারিজীদের ন্যায় প্রচলিত ছয় উছূলীরাও ‘নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের’ প্রতি সুধারণা পোষণ করেনা বরং বদ্ ধারণা পোষণ করে থাকে। সুতরাং এক্ষেত্রে প্রচলিত ছয় উছূলীরা খারিজীদেরই মেছদাক। দ্বিতীয়তঃ খারিজীদের ন্যায় প্রচলিত ছয় উছূলীরাও হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি বদ্ ধারণা পোষণ করে থাকে। অর্থাৎ হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রকাশ্যে সমালোচনা করে থাকে এবং তাদের সমালোচনা করাকে জায়িয মনে করে থাকে। এরও বহু প্রমাণ তাদের মুরুব্বীদের দ্বারা লিখিত কিতাবাদীতে পাওয়া যা। নিম্নে এর কতিপয় প্রমাণ তুলে ধরা হলো-       ছয় উছূলী মুরুব্বী ইসমাঈল হোসেন দেওবন্দী লিখিত “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবের ৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “লক্ষাধিক ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মধ্যে অধিকাংশই মূর্খ ছিলেন।”(নাউযুবিল্লাহ্) অনুরূপ ‘শরীয়তের দৃষ্টিতে তাবলীগী নেছাব ও তাবলীগী জামায়াতের প্রধানের তর্ক  ও ইচ্ছা’ নামক কিতাবেও উল্লেখ আছে।

প্রচলিত ছয় উছূলীদের বিশ্ব আমীরের বয়ান সম্বলিত ‘হযরতজীর কয়েকটি স্মরণীয় বয়ান’ নামক কিতাবের ৫৩-৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “কিছু ছাহাবী উহুদ যুদ্ধে ভুলের স্বীকার হয়ে চীজ-আসবাব (গণীমতের মাল)-এর দিকে দৃষ্টি দিয়ে গিরিপথ থেকে সরে এসে রসূলে পাক(ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশ অমান্য করায় উহুদ যুদ্ধে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে।” (নাউযুবিল্লাহ্)

“তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবের ৭০ পৃষ্ঠায় আরো বর্ণিত আছে যে, “হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের ঈমান দীর্ঘকাল তাবলীগ করার কারণেই পরিপোক্ত বা মজবুত হয়েছে।” (নাউযুবিল্লাহ্)

প্রচলিত ছয় উছূলীদের উপরোক্ত বক্তব্যসমূহের দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রায় সকলেই মূর্খ ছিলেন, তাঁরা ভুল করেছেন, তাঁরা দুনিয়ালোভী ছিলেন, তাঁরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশ অমান্য করেছেন। তাবলীগ করার পূর্বে তাঁদের ঈমান পরিপোক্ত বা মজবুত ছিলনা এবং দীর্ঘকাল তাবলীগ করার পূর্বে যে সকল ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ইন্তিকাল করেছেন তারা দূর্বল ঈমান নিয়ে ইন্তিকাল করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ্)      হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি প্রচলিত ছয় উছূলীদের উল্লিখিত বদ্ ধারণা ছাড়াও আরো বহু বদ্ ধারণা রয়েছে। যা এ অল্প পরিসরে বর্ণনা করা সম্ভব নয়।

অতএব, বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, প্রচলিত ছয় উছূলীরা যেহেতু খারিজীদের ন্যায় হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি বদ্ ধারণা পোষণ করে থাকে তাই নিঃসন্দেহে প্রচলিত ছয় উছূলীরা খারিজীদেরই ‘মেছদাক।” তৃতীয়তঃ খারিজীদের ন্যায় প্রচলিত ছয় উছূলীরাও দায়িমীভাবে মাথা মুণ্ডন করে থাকে। শুধু তাই নয়, কোন দলীল না থাকা সত্ত্বেও মাথা মুণ্ডন করাকেই তারা সুন্নত বলে ফতওয়া দেয়। এর প্রমাণ তথাকথিত শাইখুল হাদীছের অখ্যাত পত্রিকার বহু সংখ্যাতেই রয়েছে। এমনকি ছয় উছূলীদের কিতাবাদীতেও রয়েছে। তাই প্রচলিত ছয় উছূলীদের অধিকাংশ সদস্যকেই মাথা মুণ্ডিত অবস্থায় দেখা যায়।

অতএব, এক্ষেত্রেও ছয় উছূলীরা খারিজীদের মেছদাক হয়ে যায়। অর্থাৎ ছহীহ্ হাদীছ শরীফসমূহে খারিজীদের বিশেষ যে আলামতটির কথা উল্লেখ আছে, তা ছয় উছূলীদের মধ্যে ভালভাবেই পাওয়া যায়। যা তারা কস্মিনকালেও অস্বীকার করতে পারবে না। চতুর্থতঃ খারিজীদের ন্যায় প্রচলিত ছয় উছূলীদের অধিকাংশ সদস্যই নির্বোধ, জাহিল বা মূর্খ। আর তাই ছয় উছূলীদের মধ্যে মূর্খদেরকে আলিমের চেয়েও বেশী প্রাধান্য দেয়া হয়ে থাকে। এ সম্পর্কিত দলীলপ্রমাণ গত সংখ্যার জবাবে উল্লেখ করা হয়েছিলো। সুতরাং এক্ষেত্রেও প্রচলিত ছয় উছূলীরা খারিজীদের ‘মেছদাক’ হয়ে যায়। পঞ্চমতঃ খারিজীদের ন্যায় প্রচলিত ছয় উছূলীদের বক্তব্য ও বয়ানও বহু বহু গুণের ফযীলতের যা খুবই ‘চমকপ্রদ’। প্রচলিত ছয় উছূলীরাই যে শুধুমাত্র ‘ফযীলতের চমকপ্রদ’ বক্তব্য পেশ করে থাকে তার কতিপয় প্রমাণ গত সংখ্যার জবাবে তাদেরই লিখনী ও বক্তব্য থেকে পেশ করা হয়েছে। যার দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয় যে, ছয় উছূলীরা এক্ষেত্রেও খারিজীদের ‘মেছদাক।’ ষষ্ঠতঃ খারিজীদের ন্যায় প্রচলিত ছয় উছূলীরাও মনে করে এবং বলে থাকে যে, যারা তাদের দলভুক্ত শুধুমাত্র তারাই মুসলমান। অর্থাৎ যারা প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করে এবং ছয় উছূলীদেরকে সাহায্য করে শুধুমাত্র এরাই মুসলমান। এছাড়া সকলেই কাফির। (নাউযুবিল্লাহ্) এর প্রমাণ তাদের লিখিত কিতাবাদিতেও রয়েছে। যেমন, ছয় উছূলী তাবলীগের প্রতিষ্ঠাতা মৌঃ ইলিয়াছ ছাহেবের ‘মলফুযাতের’ ৪৩ নং পৃষ্ঠার ৪২ নং মলফুজে উল্লেখ আছে, “মুসলমান দু’প্রকার। একদল তাবলীগের জন্য হিজরত করবে। দ্বিতীয় দল নুছরত বা সাহায্য করবে। এ দু’দলই মুসলমান।”   অর্থাৎ যারা প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগও করবে না আর ছয় উছূলীদেরকে সাহায্যও করবেনা তারা মুসলমান নয় বরং কাফির। (নাউযুবিল্লাহ্) অতএব, এক্ষেত্রেও প্রচলিত ছয় উছূলীদের আক্বীদা ও বক্তব্য খারিজীদের ‘অনুরূপ’ প্রমাণিত হলো। মূলকথা হলো, অখ্যাত পত্রিকায় বর্ণিত হাদীছ শরীফ ও অন্যান্য হাদীছ শরীফে যে সকল গুণাবলী, আক্বীদা, আমল ও আলামতের কথা উল্লেখ আছে সেগুলো যেহেতু খারিজীদের ন্যায় প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যেও বিদ্যমান রয়েছে তাই আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, প্রচলিত ছয় উছূলীরাও উল্লিখিত হাদীছ শরীফসমূহের পূর্ণ ‘মেছদাক।’কাজেই অখ্যাত পত্রিকায় যে লিখেছে, “উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা শুধুমাত্র খারিজীদেরকে বুঝানো হয়েছে, প্রচলিত ছয় উছূলীদেরকে বুঝানো হয়নি”

তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন প্রমাণিত হলো। সাথে সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যে, উল্লিখিত হাদীছ শরীফসমূহে বর্ণিত গুণাবলী, আক্বীদা, আমল ও আলামতসমূহ যে বা যাদের মধ্যে পাওয়া যাবে সে বা তারাই উল্লিখিত হাদীছ শরীফের ‘মেছদাক’ বলে গণ্য হবে।  (চলবে)

 মাওলানা মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান মাওলানা মুহম্মদ মাছূম বিল্লাহ্ মুহম্মদ আসাদুর রহমান,

মুহম্মদ মাইজুর রহমান ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

 সুওয়ালঃ  আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম এই তিনটি সংখ্যায় ৩৫৩টি অকাট্য দলীলের ভিত্তিতে প্রদত্ত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ, মুহাক্কিক-মুদাক্কিক ও হক্কানী উলামায়ে কিরামগণের ফতওয়া মুতাবিক জানতে পারলাম যে, “প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা করানো, ঘরে রাখা সর্বাবস্থায় হারাম।” অথচ রেযাখানী মুখপত্র নভেম্বর/২০০১ ঈসায়ী সংখ্যায় ছবি সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ফতওয়া প্রকাশ করেছে। যা কিনা মানুষের ঈমান-আমল বিনষ্ট হওয়ার কারণ। রেযাখানীদের ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যের যে বিষয়গুলো আপত্তিকর সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো-   (ক) রেযাখানীরা ছবি তোলাকে বৈধ বলেছে; কিন্তু দলীল হিসেবে পেশ করেছে ঘরে ছবি রাখা সম্পর্কিত হাদীসসমূহকে।  (খ) .. কতেক উলামা যেসব ছবির শরীর ও ছায়া নেই সেসব ছবিকে বৈধ বলেছেন।  (গ) পূর্ববর্তীদের কেউ কেউ এবং হাম্বলী, শাফেয়ী, মালেকী এমনকি হানাফীদেরও কেউ কেউ নাকি (গায়রে মুজাস্সাম) শরীরবিহীন ছবিকে বৈধ বলেছেন। (ঘ) হুজুর আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুরুর দিকে ছবি তৈরী করা ও সংরক্ষণ করাকে নিষেধ করেছিলেন; কিন্তু পরবর্তীতে অনুমতি দেন। (ঙ) ছবি হারাম হওয়ার মূলে হলো গায়রুল্লাহ্র সম্মান ও ইবাদত। (চ) প্রত্যেক যুগের ফক্বীহ্, মুফতী, কাজী ও আলিমগণ যুগের চাহিদা অনুযায়ী ফতওয়া দিয়েছেন এবং দেয়া উচিত। (ছ) সামাজিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে বিশেষ প্রয়োজনে ছবি তোলা বৈধ যা যুগের চাহিদাও। (জ) প্রয়োজনীয় রেকর্ডের জন্য ফাইলবন্দি ছবিসমূহ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের নিকট জ্ঞান ও ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য জানার নিমিত্তে সরকারী-বেসরকারী যাদুঘর বা বিশেষ প্রতিষ্ঠানসমূহে পূর্বের নানা মনীষীগণের ছবি সংরক্ষণ/ধারণ করে রাখা বিশেষ প্রয়োজনে মাকরূহ্ হবেনা। এছাড়াও আরো বহু আপত্তিকর বিষয় তাদের উক্ত ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যে স্থান পেয়েছে।  কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে তাদের উল্লিখিত আপত্তিকর বক্তব্যগুলোর শরয়ী ফায়সালা কামনা করি। জাওয়াবঃ  হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম)

উল্লিখিত হাদীছ শরীফের পূর্ণ মিছদাক বা নমুনা হচ্ছে রেযাখানীরা। তারা ছবির ব্যাপারে এমন সব বক্তব্য প্রদান করেছে যা কিতাবে দেখা তো দূরের কথা কেউ কোনদিন শুনেওনি। মূলতঃ রেযাখানীরা নিজেদেরকৃত বদ আমলকে ধামা-চাপা দেয়ার উদ্দেশ্যেই মনগড়াভাবে ছবিকে জায়িয করার অপচেষ্টা করেছে। (ধারাবাহিক)    প্রাণীর ছবি সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত রেযাখানীদের আপত্তিকর ও প্রতারণামূলক বক্তব্য সমূহের খণ্ডন মূলক জবাব- (চ)      রেযাখানীরা অতঃপর তাদের গোমরাহীমূলক ও কুফরীতে ভরপুর কলঙ্কিত রচনায় লিখেছে, “….. প্রত্যেক যুগের ফক্বীহ, মুফতী, ক্বাজী ও আলিমগণ যুগের চাহিদা অনুযায়ী ফতওয়া দিয়েছেন এবং দেয়া উচিত।” রেযাখানীরা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে “রাসাইলে ইবনে আবেদীন” থেকে নিম্নোক্ত ইবারত উল্লেখ করেছে,

فلا بد للمفتى والقاضى بل والمجتهدين معرفة احوال الناس وفى قالوا ومن جهل باحوال رمانه فهو جاهل.

রেযাখানীরা উক্ত ইবারতের অর্থ করেছে এভাবে- অর্থঃ- “মুফতী কাজী এবং মুজতাহিদগণের জন্য স্বীয় যুগের হাল অবস্থা জানা জরুরী। কারণ ফক্বীহ্গণ বলেছেন যে, যে স্বীয় যুগের চাহিদা ও অবস্থা জানা থেকে  অজ্ঞ সে নিরেট মূর্খ।”   রেযাখানীদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, “রাসাইলে ইবনে আবেদীন”-এর উক্ত ইবারত দ্বারা রেযাখানীদের প্রদত্ত বক্তব্য কখনোই ছাবেত হয়না। কারণ উক্ত ইবারতের কোথাও একথা উল্লেখ নেই যে, ….. যুগের চাহিদা অনুযায়ী ফতওয়া দিতে হবে।” বরং উক্ত ইবারতে এটাই বলা হয়েছে যে, “যিনি মুফতী হবেন বা ফতওয়া দিবেন, তাকে অবশ্যই সমসাময়িক বিষয়াবলীর ইল্ম বা জ্ঞান থাকতে হবে। যার সমসাময়িক বিষয়াবলী সম্পর্কে জ্ঞান নেই সে জাহিল তার ফতওয়া দেয়ার কোনই অধিকার নেই। কারণ সে ফতওয়া দিলে ভুল ফতওয়া দিবে।  বস্তুতঃ ‘রাসাইলে ইবনে আবেদীনের’ বক্তব্য ঠিকই রয়েছে, বরং রেযাখানীরা তা বুঝতে ভুল করেছে এবং উক্ত ইবারত দ্বারা তাদের কুফরী মতটি ছাবিত করার লক্ষ্যে ইবারতে “চাহিদা” কথাটি না থাকা সত্বেও অর্থের মধ্যে তা নিজ থেকে সংযোজন করে দিয়েছে। এটা তাদের আরেকটি প্রতারণা ও ঠগবাজীর পরিচয়।      অতএব প্রমাণিত হলো যে, “যুগের চাহিদা অনুযায়ী ফতওয়া দিতে হবে” রেযাখানীদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই  দলীলবিহীন এবং তাদের বানানো মনগড়া বক্তব্য।           দ্বিতীয়তঃ  বলতে হয় যে, “…. যুগের চাহিদা  অনুযায়ী ফতওয়া দিতে হবে।” রেযাখানীদের এ বক্তব্য  কাট্টা কুফরীর  অন্তর্ভুক্ত।       কেননা, যদি যুগের চাহিদা অনুযায়ীই ফতওয়া দিতে হয়, তবে তো গান-বাজনা, সুদ-ঘুষ, জুয়া-মদ, বেপর্দা-বেহায়াপনা ইত্যাদিকেও জায়িয বা বৈধ বলে ফতওয়া দিতে হবে। কেননা এগুলোও তো যুগের চাহিদা। (নাউযুবিল্লাহ)   পক্ষান্তরে নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত, পর্দা হালাল কামাই, সুন্নতের আমল ইত্যাদিকে হারাম বলে ফতওয়া দিতে হবে। কেননা এটাও যুগের চাহিদা। (নাউযুবিল্লাহ্)    মূলতঃ ফতওয়া দিতে হবে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস অনুযায়ী, যুগের চাহিদা অনুযায়ী নয়। কারণ ইসলাম কোন যুগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় থেকে কিয়ামত পর্যন্তই ইসলামের যুগ। হ্যাঁ, এসময়ে যদি কোন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়, যে বিষয়ে ইসলামে সুস্পষ্ট ফায়সালা নেই সে বিষয়ে কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াস অনুযায়ী সমাধান দিতে হবে। আর তাই মহান আল্লাহ্ পাক ইজতিহাদের দরজা কিয়ামত পর্যন্ত খোলা রেখেছেন। আর এজন্যই যিনি মুফতী বা মুজতাহিদ হবেন তাঁর সমসাময়িক সকল বিষয়ের ইল্ম থাকতে হবে। আর তখনই সম্ভব মুজতাহিদের পক্ষে নতুন উদ্ভাবিত সমস্যার সমাধান দেয়া। যেমন উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বর্তমানে প্রচলিত গণতন্ত্র, হরতাল, লংমার্চ, ব্লাসফেমী আইন, মৌলবাদ, কুশপুত্তলিকা দাহ, রজত জয়ন্তি অনুষ্ঠান ইত্যাদি নতুন উদ্ভাবিত বিষয়গুলো ইসলাম সম্মত কিনা? এটার ফায়সালা দিতে হলে যিনি ফায়সালা দিবেন, তাকে অবশ্যই উল্লিখিত বিষয়গুলোর সঠিক ইতিহাস ও অন্যান্য তথ্য বিস্তারিতভাবে জানতে হবে। আর তখনই সম্ভব হবে কুরআন, সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে সঠিক ফায়সালা প্রদান করা।     কাজেই রেযাখানীরা যে বলেছে, “ …. যুগের চাহিদা অনুযায়ী ফতওয়া দিতে হবে।” তাদের এ বক্তব্য যে শুধু অশুদ্ধ দলীলবিহীন ও মনগড়া হয়েছে তা নয় বরং কাট্টা কুফরীও হয়েছে। (চলবে)

মুহম্মদ নাজিরুল ইসলাম, কালকিনী, মাদারীপুর।

মুহম্মদ ফারুক হুসাইন বিশ্বাস, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম।

মুহম্মদ মুনিরুজ্জামান, ঝালকাঠি।

 সুওয়ালঃ   “হিজরী পঞ্চদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম, আওলাদে রসূল রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা (মুদ্দা জিল্লুহুল আলী)-এর লক্বব মুবারক সম্পর্কিত অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব।” এ শিরোনামে আপনারা যে হ্যান্ডবিল বা লিফলেট বের করেছেন তা আপনাদের তাজদীদী মুখপত্র ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফে’ প্রকাশ করলে আশা করি লক্ববের সঠিক ব্যাখ্যা এবং লক্বব ব্যবহার ও প্রকাশের সঠিক মাসয়ালা জেনে সকলেই উপকৃত হতো। জাওয়াবঃ  হ্যাঁ, হিজরী পঞ্চদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম, আওলাদে রসূল রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর লক্বব মুবারক সম্পর্কিত অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব সম্পর্কিত হ্যান্ডবিলটি আপনাদের সুওয়ালের প্রেক্ষিতে তা জাওয়াব হিসেবে পেশ করা হলো-    আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “নিশ্চয়ই (আমার উম্মতের মধ্যে) সর্বোৎকৃষ্ট হলো হক্কানী আলিমগণ ও সর্বনিকৃষ্ট হলো দুনিয়াদার আলিমরা।”  এ সকল দুনিয়াদার আলিমদেরকেই অন্য হাদীছ শরীফে দাজ্জালের চেলা বলা হয়েছে। যারা হক্বকে নাহক্ব, হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল, সুন্নতকে বিদ্য়াত  এবং বিদ্য়াতকে সুন্নত বলে প্রচার করে থাকে, তারা হক্কানী-রব্বানী ওলী আল্লাহ্গণকেও ভণ্ড, বিদ্য়াতী, এমনকি কাফির বলে আখ্যা দিতেও দ্বিধাবোধ করেনা। ইসলামের শুরু থেকে এ পর্যন্ত যত ইমাম-মুজ্তাহিদ ও আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ অতীত হয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেককেই দুনিয়াদার, নামধারী আলিমরা কাফির বলে আখ্যা দিয়েছে। তাঁদের সাথে করেছে পশুসুলভ আচরণ ও অমানুষিক নির্যাতন। বর্তমান যামানায় নামধারী, দুনিয়াদার আলিমরাও রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ক্ষেত্রে উক্ত ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। যার কারণে তারা আক্রোশবশতঃ বিরোধিতা করে লক্ববের মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। সাধারণভাবে লক্বব ব্যবহার করা সুন্নতুল্লাহ্, সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সুন্নতে ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও সুন্নতে আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম। স্বয়ং আল্লাহ্ পাক নিজেই অসংখ্য লক্বব মুবারক প্রকাশ ও ব্যবহার করেছেন। (তাফসীরে মাযহারী ৩/৪২৮, ইবনে কাছীর, তাফসীরে হামাবী শরীফ, খুলাছাতুত্ তাফসীর,  দাইলামী, তানযীম ২/৬০, আশয়াতুল লুময়াত, তা’লীক্ব, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া ইত্যাদি )  অনুরূপভাবে স্বয়ং আল্লাহ্ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অসংখ্য অগণিত লক্বব মুবারক দান করেছেন এবং তিনি তা প্রকাশ বা ব্যবহার করেছেন।   এ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, মহান আল্লাহ্ পাক-এর এক হাজার লক্বব মুবারক রয়েছে। অনুরূপ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এরও এক হাজার লক্বব মুবারক রয়েছে। (মিরকাত ১১/৭০, কিতাবুল আহ্ওয়াযী,শরহে নববী, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুচ্ছবী, মিরআতুল মানাজীহ্ ৮/৪১, খাছায়িছুল কুবরা ১/১৮৭, আল কালামুল আওদাহ্ ফি তাফসীরে  আলাম নাশ্রাহ্) লক্বব ব্যবহারের এই মহান সুন্নত আদায়ের জন্যেই অতীতের সকল ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমও স্বীয় নাম মুবারকের সাথে লক্বব ব্যবহার বা প্রকাশ করেছেন।     নিম্নে কয়েকজন মশহুর এবং কিতাবে  তাঁদের বর্ণিত ও প্রকাশিত লক্ববসমূহের  সংখ্যা বর্ণনা করা হলো- (১) হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রকাশিত লক্ববের সংখ্যা ২৪টি,  (২) হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর  প্রকাশিত লক্ববের সংখ্যা ৪১টি, (৩) হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর  প্রকাশিত লক্ববের সংখ্যা  ৩৭টি, (৪) হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রকাশিত লক্ববের সংখ্যা  ৪৮টি, (৫) হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রকাশিত লক্ববের সংখ্যা  ২৮টি, (৬) হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রকাশিত লক্ববের সংখ্যা  ৫১টি, (৭) হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চীশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রকাশিত লক্ববের সংখ্যা  ৮২টি, (৮) হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রকাশিত লক্ববের সংখ্যা  ২৪টি, (৯) হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রকাশিত লক্ববের সংখ্যা ৪৫টি, (১০) গত হিজরী চৌদ্দ শতকের মুজাদ্দিদ হযরত আবূ বকর ছিদ্দিকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রকাশিত লক্ববের সংখ্যা  ৪১টি, (১১) হাফিযে হাদীছ হযরত মাওলানা রুহুল আমীন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রকাশিত লক্ববের সংখ্যা  ২৮টি, (১২) কুতুবুল আলম হযরত নেছারুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি (ছারছীনা)-এর প্রকাশিত লক্ববের সংখ্যা  ৩০টি, (১৩) হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ আমীমুল ইহ্সান রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রকাশিত লক্ববের সংখ্যা ২৯টি। (ইলাউস্ সুনান, মানাকিবে আবূ হানীফা, তহাবী শরীফ, আত্ তারগীব, মায়ারিফুস্ সুনান, আহকামুল কুরআন শাফিয়ী, মুয়াত্তা মালিক ৯, আওজাযুল মাসালিক, কিতাবুল হুজ্জাহ্, শরহে যুরকানী, বুখারী ১/৩, উমদাতুল ক্বারী ১/২, শরহে কিরমানী, তানযীম, আশয়াতুল লুময়াত, হাফতে মাসায়িল, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, আখবারুল আখইয়ার, মুঈনুল হিন্দ /১৮, আনীসুল আরওয়াহ্, দলীলুল আরিফীন, রাহাতুল মুহিব্বীন, মাকতুবাত শরীফ, সীরাতে মুজাদ্দিদে আল্ফে সানী, তাফসীরে হাসান বছরী, দালায়িলুন্ নুবুওয়াহ্, তরীক্বত দর্পন, তাহক্বীকুল মাসায়িল, সুন্নত ওয়াল জামায়াত, নামায শিক্ষা, ফতওয়ায়ে আমিনিয়া, ফতয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া , আদাবুল মুফতী, তরীক্বায়ে হজ্ব ইত্যাদি।)

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বর্ণনায় এটাই প্রমাণিত হয় যে, অতীতের সর্বজনমান্য সকল ইমাম-মুজতাহিদগণই লক্বব মুবারক ব্যবহার  ও প্রকাশ করেছেন। এতদ্সত্ত্বেও বর্তমানে দুনিয়াদার আলিমরা রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর লক্বব মুবারকের মনগড়াভাবে শাব্দিক অর্থ  গ্রহণ করে অপব্যাখ্যা করে থাকে।

অথচ লক্ববের ক্ষেত্রে সব লক্ববের শাব্দিক অর্থ  গ্রহণযোগ্য নয়। যদি শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করা হয়, তবে দেওবন্দীদের মুরুব্বী আশরাফ আলী থানভী ছাহেব কাফির সাব্যস্ত হয়।

কারণ, তার একটি লক্বব হলো- “হাকীমুল উম্মাতিল মুহম্মদিয়া।” আর “হাকীম” মহান আল্লাহ্ পাক-এর একটি মুবারক নাম। যা কুরআন শরীফের ৮১ স্থানে বর্ণনা করা হয়েছে। তাহলে “হাকীমুল উম্মত” অর্থ হয়- “উম্মতের আল্লাহ্।”

তাহলে কি আশরাফ আলী থানভী ছাহেব উম্মতের আল্লাহ্? যদি কেউ এটা বিশ্বাস করে তাহলে যে বিশ্বাস করলো সে এবং যার সম্পর্কে বিশ্বাস করা হবে আর সে যদি তাতে সম্মতি প্রকাশ করে উভয়ই কাট্টা কাফির হবে। আর “হাকীমুল উম্মাতিল মুহম্মদিয়া”-এর শাব্দিক অর্থ হলো- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মতের হাকীম। সাধারণ অর্থে আল্লাহ্ পাক ব্যতীত সমস্ত কায়িনাতই আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মত।  অর্থাৎ সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণই আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মত। তাহলে আশরাফ আলী থানভী ছাহেব কি নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণেরও হাকীম? এই আক্বীদাও যদি কেউ পোষণ করে তাহলে যে পোষণ করবে সে এবং যার সম্পর্কে পোষণ করবে আর সে যদি তাতে সম্মতি জ্ঞাপন করে উভয়েই কাট্টা কাফির সাব্যস্ত হবে।

এরপর রয়েছেন হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং শেষ যামানায় আসবেন হযরত ইমাম মাহ্দী আলাইহিস্ সালাম এবং তাঁর সাথে হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম। তাহলে কি আশরাফ আলী থানভী ছাহেব হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণেরও হাকীম? এ আক্বীদাও যে পোষণ করবে সে এবং যার সম্পর্কে পোষণ করা হবে আর সে যদি তাতে সম্মতি প্রকাশ করে তবে উভয়ই কাট্টা কাফির সাব্যস্ত হবে। এমনকি কেউ যদি আশরাফ আলী থানভী ছাহেবকে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম থেকে শ্রেষ্ঠ মনে করে সেও কাট্টা কাফির হয়ে যাবে। আর হাদীছ শরীফে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

لكل امة حكيم وحكيم هذه الامة هريرة رضى الله تعالى عنه.

অর্থঃ- “প্রত্যেক উম্মতের জন্যে একজন হাকীম রয়েছেন। আর এই (আমার) উম্মতের হাকীম হচ্ছেন হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।” (দাইলামী শরীফ) তাহলে আশরাফ আলী থানভী ছাহেব কি করে হাকীমুল উম্মত দাবী করতে পারে? তার এ দাবী করাটা হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর সমকক্ষতা দাবী করার শামীল যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। অতএব, সব লক্ববের শাব্দিক অর্থ সরাসরি গ্রহণযোগ্য নয়। ক্ষেত্র বিশেষে ও ব্যক্তি বিশেষে লক্ববের অর্থ হবে বা হয়ে থাকে। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে তার অসংখ্য প্রমাণাদি রয়েছে। যদিও জাহিলরা তা অবগত নয়।  যেমন, আল্লাহ্ পাক “সূরা বাক্বারার” ২৮৬ নম্বর আয়াত শরীফে নিজেকে ‘মাওলানা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন; এবং হাদীছ শরীফে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শানে এবং হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর শানে ‘মাওলানা’ শব্দের উল্লেখ রয়েছে। আমরা দরূদ শরীফেও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ‘মাওলানা’ বলে সম্বোধন করে থাকি। আবার এই ‘মাওলানা’ শব্দ দেশ-বিদেশের সকল পীর-মাশায়িখ, আলিম-উলামা, খতীব-ইমাম ছাহেবদের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয় এবং আমাদের দেশে যারা কামিল ও দাওরা পাশ করে তাদেরকেও ‘মাওলানা’ বলা হয়।  তাহলে বান্দা ও উম্মতের জন্য কি ‘মাওলানা’ শব্দ ব্যবহার করা জায়িয? অথবা নাজায়িয? যদি জায়িয হয় তাহলে রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর শানে ব্যবহৃত লক্ববসমূহ নাজায়িয হবে কেন?

প্রকৃতপক্ষে তাঁর শানে ব্যবহৃত লক্ববসমূহ কেবল জায়িযই নয় বরং তা সুন্নতুল্লাহ, সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সুন্নতে ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর অন্তর্ভুক্ত। আওলাদে রসূল, রাজারবাগ শরীফের  হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল  আলী-এর কতিপয় লক্বব মুবারকের দলীলভিত্তিক সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা  বর্ণনা করা হলো- ইমামুল আইম্মা এর অর্থ হলো- ইমামদের ইমাম। এ সম্পর্কে অনেকে বলে থাকে যে, ইমামুল আইম্মা বলতে চার মায্হাবের ইমামগণেরও ইমাম। মূলতঃ এ কথা আদৌ শুদ্ধ নয়। বরং “ইমামুল আইম্মাসহ” ওলী আল্লাহ্গণের সকল লক্ববই আমভাবে যার যার যামানার জন্য খাছ। আর খাছভাবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। কাজেই যিনি “ইমামুল আইম্মা” হবেন তিনি আমভাবে তাঁর যামানায় যারা ইলমে তাছাউফের ইমাম রয়েছেন তাঁদের ইমাম হতে পারেন। অথবা যারা ইলমে ফিক্বাহ্র ইমাম রয়েছেন তাঁদেরও ইমাম হতে পারেন। অথবা উভয় শাস্ত্রের ইমামগণেরই ইমাম হতে পারেন। আর খাছভাবে এর ব্যতিক্রমও হতে পারে।আর “ইমামুল আইম্মা” কোন নতুন লক্বব নয়, বরং পূর্ব থেকেই এর ব্যবহার হয়ে আসছে। যেমন- হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শো’বা ইবনুল হাজ্জাজ আসেতী রহমতুল্লাহি আলাইহি, শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে আনাস আল ইসবাহী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আতিয়্যাতুছ্ সালামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চীশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ফরিদুদ্দীন মাসউদ গন্জে শোকর রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম খোজায়মা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, আল্লামা ইমাম কুস্তালানী শাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম শাওকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইবনে তাইমিয়া, আল্লামা আবূ মুহম্মদ হুসাইন বিন মাসউদ  রহমতুল্লাহি আলাইহি, আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি, আল্লামা সুলায়মান ইবনে হরব রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি, আল্লামা আবূল হাশেম রহমতুল্লাহি আলাইহি, মুহিউদ্দীন আবূ জাকারিয়া ইয়াহিয়া  রহমতুল্লাহি আলাইহি, হুসাইন বিন মাসউদ  রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমুখ ইমামগণকে নিম্নোক্ত কিতাবে “ইমামুল আইম্মা” বলা হয়েছে। (মুকাদ্দামায়ে ইলাউস্ সুনান, মানাকিবে আবূ হানীফা, ফতহুল বারী, আত্ তাকদীরুল মাদানী, ইরশাদুস্ সারী শরহে বুখারী, মিরকাত শরহে মিশকাত, শরহে যুরকানী, মুঈনুল হিন্দ, আল মুগনী, মাকতুবাত শরীফ, মাওয়াহিবুল্ লাদুন্নিয়া শরহে সীরাতে মুহম্মদিয়া, তাফসীরে ফতহুল ক্বাদীর, মজমুয়ায়ে ফতওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া, আত্ তাফসীর ওয়াল মুফাস্সিরুন, মিশকাত শরীফের আসমায়ে রিজাল, আত্ তারগীব ইত্যাদি। ক্বাইউমুয্ যামান অনেকে এ লক্ববের সরাসরি শাব্দিক অর্থ  গ্রহণ করে বলে যে, এর অর্থ হলো- যামানার রক্ষক, যা আল্লাহ্ পাক-এর শান। কাজেই তা ব্যবহার করা নাজায়িয।  মূলতঃ ইসলামে তথা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসে এরূপ শত-সহস্র শব্দ রয়েছে, যার সরাসরি শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করা হয়না। বরং অবস্থা বিশেষে ঘুরিয়ে অর্থ করতে হয়। যেমন- “ছলাত” শব্দের অর্থ- নামায, দরূদ, রহ্মত, ক্ষমা ও তাসবীহ্ ইত্যাদি। অনুরূপ ক্বাইয়ূমুয্ যামান-এর অর্থও ঘুরিয়ে করতে হবে। এর হাক্বীক্বী অর্থ হবে- যাঁদের উছীলায়  আল্লাহ্ পাক যামানাকে রক্ষা করেন। মহান আল্লাহ্ পাক সর্বপ্রথম “ক্বাইয়ূমুয্ যামান” লক্বব দান করেন আফযালুল আউলিয়া, হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে। অতঃপর উনার ছেলে হযরত ইমাম মা’ছূম রহমতুল্লাহি আলাইহিকে “ক্বাইউমে সানী”, উনার ছেলে হযরতুল আল্লামা হুজ্জাতুল্লাহ্ নক্শবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহিকে “ক্বাইয়ূমে ছালিছ”, তাঁর ছেলে হযরত আবুল উলা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও তাঁর ছেলে হযরত যুবায়ির রহমতুল্লাহি আলাইহিকে “ক্বাইয়ূমে রাবে বা চতুর্থ ক্বাইয়ূম” লক্বব দান করেন। আর হযরত শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ্ মুহাদ্দিছে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবূ বকর ছিদ্দিকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল হাই ছিদ্দিকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহিও ছিলেন ক্বাইয়ূমুয্ যামান। (মাকতুবাত শরীফ, হালাতে মাশায়িখে নকশবন্দিয়া, রওজাতুল ক্বাইয়ূমিয়াত ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ খন্ড, শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ্র সমকালীন রাজনীতি। গাউছুল আ’যম ‘গাউছ’ শব্দের অর্থ- ফরিয়াদ শ্রবণকারী, আশ্রয় দাতা ইত্যাদি। আর আ’যম শব্দের অর্থ- বড়, মহান ইত্যাদি। শাব্দিক অর্থেই এ লক্বব ব্যবহার নাজায়িয নয়। কারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবেই একে অপরের ফরিয়াদ শ্রবণ করে ও আশ্রয় দিয়ে থাকে। কাজেই এটা আদৌ নাজায়িয নয় বরং ফযীলতের কারণ। এছাড়া আল্লাহ্ পাক সর্ব প্রথম এ লক্বব মুবারক হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহিকে দান করেন। উনার পরে আরো অনেককেই আল্লাহ্ পাক গাউছুল আ’যম লক্বব দান করেছেন। এমন কোন বর্ণনা নেই  বা এমন কোন দলীল কেউ দেখাতে পারবে না যে, একমাত্র হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি ছাড়া অন্য কেউ গাউছুল আ’যম নন বা উক্ত লক্বব অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। মূলতঃ ওলী আল্লাহ্গণের একটি লক্বব হচ্ছে-‘গাউছ’। গাউছগণের মধ্যে যিনি প্রধান হন, তিনিই ‘গাউছুল আ’যম’। (মাকতুবাত শরীফ) হাবীবুল্লাহ্ এর অর্থ হলো- “আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব বা বন্ধু।” এটা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একটি খাছ লক্বব মুবারক। আর আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামে নাম রাখার জন্য অসংখ্য হাদীছ শরীফে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ জন্যই মানুষ বরকত লাভের উদ্দেশ্যে স্বীয় সন্তানদেরকে মুহম্মদ, আহ্মদ, হাবীবুল্লাহ্ ইত্যাদি নাম রেখে থাকে। অতীতের ওলী আল্লাহ্গণের মধ্যে খাছ করে দু’জনকে আল্লাহ্ পাক সরাসরি হাবীবুল্লাহ্ লক্বব দান করেছেন। তাঁরা হচ্ছেন হযরত যুন্নুন মিছ্রী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি। যাঁদের ইন্তিকালের পর তাঁদের কপাল মুবারকে সোনালী অক্ষরে লেখা উঠেছিল, “হাযা হাবীবুল্লাহ্ মাতা ফী হুব্বিল্লাহ্” (ইনি আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, আল্লাহ্ পাক-এর মুহব্বতে ইন্তিকাল করেছেন।) কাজেই হক্কানী ওলীআল্লাহ্গণকে স্বয়ং আল্লাহ্ পাকই হাবীবুল্লাহ্সহ অন্যান্য সকল লক্বব মুবারক দান করেন। (মুঈনুল হিন্দ,তাযকিরাতুল আউলিয়া।) রসূলে নোমা এটা ফার্সী শব্দ। এর অর্থ হলো- রসূলকে দেখানেওয়ালা। অর্থাৎ যিনি নিজে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখতে পারেন ও অন্যকে দেখাতে পারেন বা যাঁর ছোহবতে গেলে মানুষ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেন তিনিই “রসূলে নোমা।” যেমন, আল্লামা ছূফী ফতেহ আলী বর্ধমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন ‘রসূলে নোমা’। এমন অনেক ওলীআল্লাহ্ অতীত হয়েছেন যাঁরা “রসূলে নোমা” লক্ববের অধিকারী ছিলেন। (তাবাকাত ২য় খণ্ড, হাক্বীক্বতে মোহাম্মদী, হায়াতে বর্ধমানী)।   উল্লেখ্য, যারা লক্ববের বিরোধিতা করে তাদের মুরুব্বীদেরও অনেক লক্বব কিতাবে উল্লেখ আছে। যেমন- (১) আহমদ রেযা খান বেরেলভীর ৩১টি, (২) ইবনে তাইমিয়ার ৩৮টি, (৩) হাজী ইমদাদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ৩৩টি, (৪) রশীদ আহমদ গাঙ্গুহীর ৩২টি, (৫) আশ্রাফ আলী থানভীর ৬১টি। (ফতওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া, বযলুল মাযহুদ, ইমদাদুল ফতওয়া,ফতওয়ায়ে দেওবন্দ ইত্যাদি)    {ইনশাআল্লাহ্ অচিরেই বের হচ্ছে- কিতাবুল আলক্বাব  (পাঁচ খণ্ডে)। লক্বব সর্ম্পকে বিস্তারিত জানার জন্য সংগ্রহ করুন। } [ বিঃ দ্রঃ- উপরোক্ত বিষয় সম্পর্কে কেউ বাহাছ করতে চাইলে আমরা তার সাথে শর্ত সাপেক্ষে বাহাছ করতে প্রস্তুত আছি ইনশাআল্লাহ। ]

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব