সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১১৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

ছূফী মুহম্মদ তছলিমুদ্দীন বসুনীয়া

সভাপতি- যুব আঞ্জুমানে  আল বাইয়্যিনাত

কদমতলা শাখা, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম।

সুওয়ালঃ মাসিক মদীনা জানুয়ারী/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়।

প্রশ্নঃ মনে করুন, একজন লোক মৃত্যুবরণ করেছেন। তার মৃত্যু সংবাদ এভাবে প্রচার করা হলো যে, অমুক গ্রামের মুহম্মদ বেলাল ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহে ……। এক্ষেত্রে কিছু লোক বলছে যে, এভাবে বলা ঠিক না। মৃতব্যক্তির নামের আগে মুহম্মদ ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ, মৃত্যুবরণ করার পর তার নামের সাথে মুহম্মদ থাকে না। এটা কতটুকু সত্য বা নির্ভরযোগ্য কথা?

উত্তরঃ অধিকাংশ লোকের ধারণা যে, নামের আগে মুহম্মদ লেখাটা মুসলিম নামের সঙ্গে একটা অতিরিক্ত অলঙ্কার বিশেষ। এটা ঠিক নয়। আর মৃত্যুবরণ করার সাথে সাথে নামের অনুষঙ্গ মুহম্মদ লুপ্ত হয়ে যায় এরূপ ধারণাও ঠিক নয়।

উল্লেখ্য, এর আগেও মাসিক মদীনা মার্চ/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়।

প্রশ্নঃ একখানি বাংলা দীনিয়াত কিতাবে উল্লেখিত হয়েছে যে, ‘মুহাম্মদ’ নাম রাখলে সে লোককে দোযখের আগুনে জ্বালানো হবে না। কিন্তু কোন হাদীসের কিতাবের বরাত দেওয়া হয় নাই। ছহীহ হাদীসের কিতাবে এ মর্মে হাদীস আছে কিনা জানালে কৃতজ্ঞতা বোধ করব।

উত্তরঃ আমি কোথাও এ মর্মে কোন বর্ণনা বা তথ্য এ পর্যন্ত পাই নাই।      এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে, মাসিক মদীনায় বলা হয়েছে, ‘নামের আগে ‘মুহম্মদ’ লেখাটা মুসলিম নামের সঙ্গে একটা অতিরিক্ত অলংকার বিশেষ, এটা ঠিক নয়।’ … নামের অনুষঙ্গ …। ‘মুহম্মদ,’ ‘আহমদ’ সম্পর্কে মদীনা সম্পাদকের উপরোক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কিনা? দয়া করে দলীল সহকারে জানাবেন।

জাওয়াবঃ মাসিক মদীনা পত্রিকার সম্পাদকের এ বক্তব্য সঠিক তো হয়ইনি বরং সম্পূর্ণ ভুল হয়েছে। কারণ, প্রত্যেক মুসলমানের নামের আগে বা পরে ‘মুহম্মদ’ কিংবা ‘আহমদ’ থাকা আবশ্যক। শুধু তাই নয় বরং প্রত্যেক মুসলমানের নাম ‘মুহম্মদ’ ও ‘আহমদ’ই হওয়া দরকার। কারণ মুহম্মদ ও আহমদ নাম মুবারক দু’টি মানুষের জন্য নাযাতের জরিয়া হবে। অর্থাৎ যাদের নাম ‘মুহম্মদ’ ও ‘আহমদ’ হবে আল্লাহ্ পাক তাদেরকে নাযাত দান করবেন।

এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে,

عن جابر رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال سموا باسمى.

অর্থঃ- “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা আমার নামে নাম রাখ।” (মুত্তাফাকুন আলাইহি, মিশকাত, মিরকাত)

আর এ নাম রাখার কি ফযীলত, মর্তবা, মর্যাদা সে সম্পর্কে হাদীস শরীফ বর্ণিত রয়েছে।

যেমন, হাদীস শরীফের বিখ্যাত কিতাব “আল ফিরদাউস লিদ দায়লামী শরীফের” ৫ম খন্ডের, ৫৩৫ ও ৪৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

عن انس بن مالك رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يوقف عبدان بين يدى  الله عز وجل يوم القيامة فيأمر بهما الى الجنة فيقولان يا ربنا بما استاهلنا منك الجنة ولم نعمل عملا يجازينا الجنة فيقول الله عز وجل لهما عبداى ادخلا الجنة فانى اليت على نفسى ان لايدخل النار من اسمه احمد ومحمد.

অর্থঃ- “হযরত আনাছ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ্ পাক-এর সামনে দু’বান্দাকে দাঁড় করানো হবে। (অর্থাৎ যাদের একজনের নাম ‘মুহম্মদ’ এবং অপর জনের নাম ‘আহমদ’) আল্লাহ্ পাক তাদেরকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য আদেশ করবেন। তাঁরা উভয়ে বলবেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! আমরা কি কারণে জান্নাত লাভ করলাম, আমরা তো জান্নাত লাভের উপযুক্ত কোন আমল করিনি।”

অতঃপর মহান আল্লাহ্ পাক বান্দাদ্বয়কে বলবেন, “হে আমার বান্দা! তোমরা দু’জনই জান্নাতে প্রবেশ কর। কারণ নিশ্চয়ই আমি আমার জাত পাকের কসম করে বলছি, যে ব্যক্তির নাম ‘মুহম্মদ’ ও ‘আহমদ’ হবে সে কখনো দোযখে প্রবেশ করবে না।” (সুবহানাল্লাহ) (যাহরুল ফিরদাউস ৪র্থ খন্ড, ৪২৭ পৃষ্ঠা)

عن جعفر بن محمد ينادى يوم القيامة يا محمد فيرفع راسه فى الموقف من اسمه محمد فيقول الله جل جلاله اشهدكم انى قدغفرت لكل من اسمه على اسم محمد نبى.

অর্থঃ- “হযরত জা’ফর ইবনে মুহম্মদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে, ক্বিয়ামতের দিন “ইয়া মুহম্মদ” বলে অর্থাৎ ‘মুহম্মদ’ নাম ধরে ডাকা হবে। যে সকল ব্যক্তির নাম ‘মুহম্মদ’ তাঁরা সকলেই তাদের মাথা উত্তোলন করবেন।

অতঃপর মহান আল্লাহ্ পাক বলবেন, “তোমরা সাক্ষী থাক, যারা আমার নবী মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামে নাম রেখেছে তাদের প্রত্যেককে আমি ক্ষমা করলাম।” (সুবহানাল্লাহ)

হাদীস শরীফে আরো উল্লেখ আছে,

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم قال الله عز وجل وعزتى وجلالى لاعذبت احدا يسمى باسمك فى النار.

অর্থঃ- “আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ্ পাক বলেন, আমার ইজ্জত ও জালালের কছম করে বলছি যে, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার নামে যাদের নাম রাখা হবে তাদের কাউকেই দোযখে শাস্তি দান করবনা।” (মুসনাদুল ফিরদাউস)

উল্লেখ্য, যাদের নাম ‘মুহম্মদ’ বা ‘আহমদ’ শুধু যে তারাই নাযাত পাবে তা নয় বরং যারা তাদের সন্তানের নাম ‘মুহম্মদ’ বা ‘আহমদ’ রাখবে তারাও নাযাত পাবে।

এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে,

عن ابى امامة الباهلى رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من ولد له مولود فسماه محمدا حبالى وتبركا باسمى كان هو ومولوده فى الجنة.

অর্থঃ- “হযরত আবূ উমামা আল বাহিলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তির ছেলে সন্তান হয় অতঃপর সে ব্যক্তি যদি আমার মুহব্বতে এবং আমার নামের বরকতের জন্য তার ছেলে সন্তানের নাম ‘মুহম্মদ’ রাখে তাহলে সে ব্যক্তি এবং তার ছেলে উভয়েই জান্নাতে যাবে।”

উপরোক্ত হাদীস শরীফসমূহের আলোকে দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণিত হলো যে, যে ব্যক্তির নাম ‘মুহম্মদ’ বা ‘আহমদ’ হবে সে ব্যক্তিকে কখনোই দোযখের আগুনে জ্বালানো হবে না। অর্থাৎ সে ব্যক্তি জান্নাতী হবে। শুধু তাই নয় বরং যে ব্যক্তি তার সন্তানের নাম ‘মুহম্মদ’ বা ‘আহমদ’ রাখবে সে ব্যক্তিও জান্নাতী হবে।

আরো উল্লেখ্য, যে ব্যক্তির নাম ‘মুহম্মদ’ বা ‘আহমদ’ নয় বা সে কারো নাম ‘মুহম্মদ’ বা ‘আহমদ’ রাখেনি কিন্তু উক্ত নামকে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক হওয়ার কারণে সম্মান করেছে সেও জান্নাতী হবে। যদিও তার আমলে কিছু ত্রুটি থাকুক না কেন।          এ প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে, হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম-এর একজন উম্মত দু’শ বছর হায়াৎ পেয়েছিলেন। এই সূদীর্ঘ জীবনে তিনি তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ইবাদত করেননি। একদিন তিনি পবিত্র তাওরাত কিতাব পড়ছিলেন। কিতাবের একস্থানে আল্লাহ্ রাব্বুল ইজ্জত-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক লিপিবদ্ধ ছিল। অর্থাৎ “মুহম্মর্দু রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” লিখিত ছিলো। সে তা দেখে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুহব্বতে উক্ত নাম মুবারক চুম্বন করে। অতঃপর তিনি যখন মারা গেলেন তখন পাড়া-প্রতিবেশী, মহল্লাবাসীগণ তাকে দাফন-কাফন না করে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে তার লাশ ফেলে রেখেছিলো।

এমতাবস্থায় আল্লাহ্ পাক হযরত মুসা আলাইহিস্ সালামকে নির্দেশ দিলেন উক্ত ব্যক্তিকে গোসল, কাফন-দাফন করার জন্য। হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম তাঁর কতিপয় অনুসারীগণসহ মৃত ব্যক্তির মহল্লায় গিয়ে মহল্লাবাসীদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমাদের এখানে কোন লোক ইন্তিকাল করেছে কি?’ তারা বললো, “হ্যাঁ, একজন লোক ইন্তিকাল করেছে।’ তখন হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম বললেন, ‘তোমরা কি তার গোসল, কাফন-দাফনের ব্যবস্থা নিয়েছ?’ তারা জবাব দিলো, ‘না, আমরা তার গোসল, কাফন-দাফনের কোন ব্যবস্থা নেইনি।’

সেটা শুনে হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম বললেন, ‘তোমরা বল কি? আমি হচ্ছি এ যামানার জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম। আল্লাহ্ পাক আমাকে পাঠিয়েছেন তার গোসল, কাফন-দাফনের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অথচ তোমরা এলাকাবাসী তার কোন ব্যবস্থা নিলেনা?’ এটা জেনে মহল্লাবাসী বললো, ‘হে আল্লাহ্ পাক-এর নবী! আপনি বলেন কি? আপনি নবী হয়ে এসেছেন তার গোসল, কাফন-দাফনের জন্য আর আমরা এলাকাবাসী হয়ে তার গোসল, কাফন-দাফনের ব্যবস্থা নেইনি। প্রকৃতপক্ষে এর কারণ হচ্ছে, সে দু’শ বছর হায়াত পেয়েছিলো এবং তার কিছু গুনাহ্খতাও ছিলো। যার জন্য আমরা তাকে পছন্দ করিনা, তাই তার গোসল, কাফন-দাফনের ব্যবস্থা নেইনি।’ এটা শুনে হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম আশ্চর্য হয়ে আল্লাহ্ পাক-এর নিকট আরজ করলেন, ‘আয় বারে ইলাহী! এলাকাবাসী বলছে, সে ব্যক্তি নাকি দু’শ বছর হায়াত পেয়েছিলো এবং তার কিছু গুনাহ্খতাও ছিলো যার জন্য এলাকাবাসী তাকে পছন্দ করেনা তাই তারা তার গোসল, কাফন-দাফনের ব্যবস্থা নেয়নি। অথচ আমি আপনার জলীলুল্ ক্বদর রসূল, আপনি আমাকে পাঠিয়েছেন তার গোসল, কাফন-দাফনের জন্য এটা কেমন কথা?’

তখন আল্লাহ্ পাক জানালেন, ‘হে আমার রসূল হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম! এলাকাবাসী সত্যিই বলেছে। লোকটি দু’শ বছর হায়াত পেয়েছিলো এবং তার কিছু গুনাহ্খতাও ছিলো।

তবে মানুষ মাত্রই কিছু গুনাহ্খতা থাকাটা স্বাভাবিক।

ان الانسان مركب من الخطاء والنسيان.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই মানুষ মাত্রই দোষ-ত্রুটিযুক্ত।”

তবে সে এমন একটা আমল করেছে সে আমলের কারণে আমি তার দু’শ বছরের গুনাহ্খতা ক্ষমা করে জাহান্নাম হারাম করে জান্নাত ওয়াজিব করে দিয়েছি। শুধু তাই নয়, আপনার মত একজন জলীলুল ক্বদর রসূলকে আদেশ করেছি তার গোসল, কাফন-দাফনের জন্য।’ এটা শুনে আল্লাহ্ পাক-এর নবী হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম বললেন, ‘আয় বারে ইলাহী! এমন কোন আমল রয়েছে, যে আমল করলে দু’শ বছরের গুনাহ্খতা মাফ হয়ে যায়, জাহান্নাম হারাম হয়ে জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায় এবং একজন জলীলুল ক্বদর রসূল জানাযা, কাফন-দাফনের জন্য আদেশপ্রাপ্ত হন। এমন আমলই আমার দরকার রয়েছে যা আমি করব ও আমার উম্মতগণ করবে। যাতে নাযাত পাওয়া সহজ হয়। তখন আল্লাহ্ পাক বললেন, ‘হে হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম! আমি আপনার প্রতি যে তাওরাত কিতাব নাযিল করেছি সে কিতাবে আমার আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক “মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” লিপিবদ্ধ রয়েছে।

এ মৃত ব্যক্তি যে দু’শ বছর হায়াত পেয়েছিলো এবং যার গুনাহ্খতা ছিলো সে তাওরাত কিতাব পাঠ করতে গিয়ে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক পেয়ে আমার হাবীবের মুহব্বতে উক্ত নাম মুবারক চুম্বন করে। যেহেতু উক্ত ব্যক্তি আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুহব্বতে তাঁর নাম মুবারক চুম্বন করেছে সেহেতু আমি তাকে মুহব্বত করে, পছন্দ করে তার দু’শ বছরের গুনাহ্খতা মাফ করে জান্নাত ওয়াজিব করে দিয়েছি এবং আপনার মত একজন জলীলুল ক্বদর রসূলকে তার গোসল, কাফন-দাফনের জন্য নির্দেশ দিয়েছি। (সুবহানাল্লাহ্)

হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে,

عن ابى درداء رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تدعون يوم القيامة باسمائكم واسعاء ابائكم فاحسنوا اسمائكم.

অর্থঃ- “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ক্বিয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের নাম এবং তোমাদের পিতার নাম ধরে সম্বোধন করা হবে। অতএব, তোমরা সুন্দর নাম রাখ।” (আহমদ, আবূ দাউদ)

এ হাদীস শরীফে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেককে সুন্দর নাম রাখতে বলেছেন। আল্লাহ্ পাক-এর কায়েনাতের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর নাম হচ্ছে ‘মুহম্মদ’ ও ‘আহমদ’। কাজেই প্রত্যেকের নাম ‘মুহম্মদ’ ও ‘আহমদ’ রাখা উচিত। এ নাম সমূহের ফযীলত সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই ইরশাদ করেন,

عن على رضى الله تعالى عنه مرفوعا اذاسميتم الولد محمدا فاكرموه واوسعواله فى المجلس ولاتقبحواله وجها.

অর্থঃ- “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে মারফু সূত্রে বর্ণিত রয়েছে যে, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন তোমরা তোমাদের সন্তানদের নাম ‘মুহম্মদ’ রাখবে তখন তাকে তোমরা সম্মান করবে, তার জন্য মজলিসে জায়গা করে দিবে এবং তাকে গালী-গালাজ ও মানহানী করবেনা।” (আল খতীব, মিরকাত/১০৬)

হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن ابى رافع مرفوعا اذا سميتم محمدا فلا تضربوه وتحرموه.

অর্থঃ- “হযরত আবূ রাফে রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে মারফূ সূত্রে বর্ণিত রয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন তোমরা তোমাদের নাম ‘মুহম্মদ’ রাখবে তখন তাকে প্রহার করবেনা এবং তাকে কোন ব্যাপারে মাহরূম করবে না।” (বাজ্জার, মিরকাত/১০৬)

কাজেই উপরোক্ত হাদীস শরীফ দ্বারা ছাবিত হলো, প্রত্যেকের নাম ‘মুহম্মদ’ অথবা ‘আহমদ’ রাখা কর্তব্য।

এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারে, সকলের নামই যদি মুহম্মদ বা আমহদ হয় তাহলে পরস্পর পরস্পরকে কিভাবে চিনবে বা একজন আরেকজনের পরিচয় কিভাবে লাভ করবে?

এর জবাবে বলতে হয়, ‘মুহম্মদ’ বা ‘আহমদ’ নামের পূর্বে অথবা পরে কিছু শব্দ সংযোজন করবে যার মাধ্যমে পরস্পর পরস্পরের পরিচয় লাভ করবে।

যেমন, এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

يايها الناس انا خلقنكم من ذكر وانثى.

অর্থঃ- “হে মানুষেরা! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা থেকে সৃষ্টি করেছি।” (সূরা হুজুরাত/১৩)

অর্থাৎ প্রত্যেককেই একজন পুরুষ ও একজন মহিলা থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষ হিসেবে। এরপরে প্রত্যেক মানুষই যেন একজন আরেকজনের পরিচয় লাভ করতে পারে সে প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,

وجعلنكم شعوبا وقبائل لتعارفوا.

অর্থঃ- “আমি তোমাদেরকে গোত্রে গোত্রে এবং সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে বিভক্ত করেছি যাতে তোমরা একজন আরেকজনকে চিনতে পার।” (সূরা হুজুরাত/ ১৩)

অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক প্রত্যেককেই মানুষ হিসেবে সৃষ্টি করে গোত্রে গোত্রে ও সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে বিভক্ত করে দিয়েছেন যেন পরস্পর পরস্পরের পরিচয় লাভ করতে পারে। যেমন সাইয়্যিদ, ছিদ্দীকী, ফারুকী, উছমানী, আলবী, ফাতিমী ইত্যাদি।

ঠিক একইভাবে প্রত্যেকের নাম ‘মুহম্মদ’ বা ‘আহমদ’ হবে। আর তাদের পরিচয় বা নামের পার্থক্য করার জন্য ‘মুহম্মদ’ বা ‘আহমদ’ নামের পূর্বে বা পরে কিছু সংযোজন করতে হবে। যেমন মুহম্মদ আব্দুল্লাহ, আব্দুল্লাহ মুহম্মদ, মুহম্মদ আব্দুর রহমান, আব্দুর রহমান মুহম্মদ, আহমদ আব্দুল্লাহ, আব্দুল্লাহ আহমদ ইত্যাদি।

অতএব, ‘মুহম্মদ’ বা ‘আহমদ’ নাম দু’টি শুধু নামের অলংকারই নয় বরং মূল নাম। আর নামের অনুষঙ্গও নয় বরং এটাই প্রত্যেক মুসলমানের প্রকৃত বা হাক্বীক্বী নাম।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রতিভাত হয় যে, প্রত্যেক মুসলমানের নাম ‘মুহম্মদ’ ও ‘আহমদ’ হওয়াই বাঞ্ছনীয়। কারণ (১) যে বা যাদের নাম ‘মুহম্মদ’ বা ‘আহমদ’ (২) যে বা যিনি অপর কারো নাম ‘মুহম্মদ’ বা ‘আহমদ’ রেখেছেন অথবা (৩) যে বা যারা ‘মুহম্মদ’ বা ‘আহমদ’ নামকে সম্মান করেছেন তারা সবাই জান্নাতী হবেন। (সুবহানাল্লাহ)

{দলীলসমূহ ঃ (১) আহকামুল কুরআন জাস্সাস, (২) কুরতুবী, (৩) মাযহারী, (৪) তাবারী, (৫) রুহুল বয়ান, (৬) রুহুল মায়ানী, (৭) বুখারী, (৮) মুসলিম, (৯) আহমদ, (১০) আবূ দাউদ, (১১) মিশকাত, (১২) মিরকাত, (১৩) বাজ্জার, (১৪) আল খতীব, (১৫) ফিরদাউস্ লিদ্ দায়লামী, (১৬) যাহ্রুল ফিরদাউস, (১৭) মুসনাদুল ফিরদাউস, (১৮) হাক্বীক্বতে মুহাম্মদী ও মীলাদে আহ্মদী, (১৯) কাছীদায়ে বুরদা, (২০) হিলইয়াতুল্ আউলিয়া, (২১) সীরাতে হালবিয়া, (২২)  হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলাম ইত্যাদি}

মুহম্মদ শহীদুল ইসলাম (শামীম)

রাঙ্গাদিয়া, চট্টগ্রাম

সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদ্রাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জানুয়ারী/২০০৩ঈঃ সংখ্যায় এক জিজ্ঞাসার সমাধানে বলা হয়েছে যে, “মীলাদের দ্বারা মুসলমানের আমলের পরিবেশ তৈরী হয় এটা ভিত্তিহীন কথা। ইসলামে মীলাদের কোন অস্তিত্ব নেই। রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ছাহাবা, তাবিয়ীন, তাবে তাবিয়ীন আইম্মায়ে মুজতাহিদীন কারো যুগেই এর অস্তিত্ব ছিলনা বরং পরবর্তীতে বিদয়াত রূপে ৬০৪ হিজরীতে এই মীলাদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। মীলাদের মধ্যে মিষ্টান্ন ভোজের শোরগোল হয়। প্রচলিত মীলাদ যে বিদয়াত তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। যার পরিণাম ভ্রষ্টতা সবশেষে জাহান্নাম।”

এছাড়া একইভাবে মাসিক মদীনা ফেব্রুয়ারী/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় নিম্নলিখিত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-

প্রশ্নঃ মিলাদ শরীফ পড়া যে বেদাত তার কিছু প্রমাণ জানতে চাই।

উত্তরঃ বেদাত বলা হয় ঐ সমস্ত আমলকে, যা এবাদত মনে করে সওয়াব পাওয়ার আশায় করা হয় কিন্তু কোরআনে হাদীসে সমর্থন পাওয়া যায় না। প্রচলিত মৌলুদ মানুষ এবাদত মনে করে সওয়াব পাওয়ার আশায় পড়ে থাকে। অথচ এই আমলের কোন উল্লেখ কোরআন হাদীসে বা পরবর্তী অনুসরণীয় যুগে, কোন অনুসরণযোগ্য ব্যক্তির আমলের মধ্যে পাওয়া যায় না। এ কারণেই প্রচলিত মীলাদ বেদাতের পর্যায়ভুক্ত।

এখন আমার সুওয়াল হচ্ছে, মীলাদ সম্পর্কে উপরোক্ত পত্রিকাব্দয়ে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধ হয়েছে কিনা?  দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াবঃ মীলাদ সম্পর্কে হাটহাজারী মাদ্রাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ও মাসিক মদীনা পত্রিকার জিজ্ঞাসার সমাধানে যা বলা  হয়েছে তা শুদ্ধতো হয়ইনি বরং সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভুল, গোমরাহীমূলক ও কুফরী হয়েছে। প্রত্যেক মুসলমানের এ ধরণের আক্বীদা ও বক্তব্য থেকে ইস্তিগ্ফার-তওবা করতে হবে। অন্যথায় কাট্টা কাফির হয়ে চির জাহান্নামী হতে হবে।

তাদের বক্তব্যে তারা বলেছে, (১) আমলের পরিবেশ তৈরী হয়না। শুধু মিষ্টান্ন ভোজই হয়। (২) ইসলামে মীলাদের কোন অস্তিত্ব নেই এবং খাইরুল কুরুনেও ছিলোনা। (৩) পরবর্তীতে বিদ্য়াতরূপে প্রকাশ পায়। কাজেই এটা বিদ্য়াত। (৪) বিদ্য়াতীরা ভ্রষ্ট ও জাহান্নামী।

তাদের উত্থাপিত বক্তব্যের প্রথম বক্তব্যে তারা বলেছে, “মীলাদ মাহ্ফিলের দ্বারা আমলের পরিবেশ তৈরী হয়না। শুধু মিষ্টান্নভোজই হয়।” তাদের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা ও কুফরী হয়েছে।

কারণ, মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয়ে থাকে একমাত্র আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুহব্বত ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে।

তাদের প্রথম বক্তব্যের প্রথম অংশে তারা বলেছে, “মীলাদ মাহ্ফিলের দ্বারা আমলের পরিবেশ তৈরী হয়না।”  এর জবাবে বলতে হয় যে, মীলাদ শরীফ-এর তিনটি শব্দ রয়েছে। যেমন, ميلاد (মীলাদ) অর্থাৎ জন্মের সময়, مولد (মাওলিদ) অর্থাৎ জন্মের স্থান এবং مولود (মাওলূদ) অর্থাৎ সদ্য প্রসূত সন্তান। এক কথায়  মীলাদ শরীফ বলতে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত ও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছানা-ছিফত, তা’রীফ, প্রশংসা, তাঁর মু’জিযা বর্ণনা, জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা, না’ত, শে’র, কাছিদা পাঠ ও তাঁর প্রতি ছলাত ও সালাম প্রেরণ করা ইত্যাদি পাঠ করা হয়।

উল্লেখ্য, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

انما المؤمنون الذين اذا ذكر الله وجلت قلوبهم واذا تليت عليهم ايته زادتهم ايمانا وعلى ربهم يتوكلون.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই মু’মিনগণের বৈশিষ্ট হচ্ছে, যখন তাদের নিকট আল্লাহ্ পাক-এর যিক্র বা আলোচনা করা হয় তখন তাদের অন্তরগুলো বিগলিত হয় (আল্লাহ্ভীতি পয়দা হয়।) অর্থাৎ আল্লাহ্ভীতি পয়দা হয় এবং তাদের নিকট যখন আয়াত সমূহ তিলাওয়াত করা হয় তখন তাদের ঈমান (ঈমানী কুওওয়াত) বৃদ্ধি হয় এবং তারা একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর প্রতি তাওয়াক্কুল করে থাকে।” (সূরা আনফাল/২)

واذا قرئ القران فاستمعوا له وانصتوا.

অর্থঃ- “যখন কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা হয় তখন তোমরা চুপ থেকে তা মনোযোগের সাথে শ্রবণ কর। অবশ্যই তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হবে।” (সূরা আ’রাফ/২০৪)

আর হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

وعليك بتلوات القران فانه نور لك فى الارض وزخرلك فى السماء.

অর্থঃ- “কুরআন শরীফ তিলাওয়াত কর। নিশ্চয়ই সেটা ইহকালে তোমার জন্য নূর (হিদায়েত) হবে এবং পরকালে তোমার জন্য পুঁজি বা নাজাতের জরিয়া হবে।

হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن ابن مسعود رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من قرء حرفامن كتاب الله فله به حسنة والحسنة بعشر امثالها ولااقول الم حرف بل الف حرف لام حرف ميم حرف.

অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কালামুল্লাহ শরীফের একটি অক্ষর তিলাওয়াত করবে তার জন্য নেকী রয়েছে। আর সে নেকীটা হচ্ছে (কমপক্ষে) দশগুণ। আমি বলিনা, আলিফ-লাম-মীম একটি অক্ষর। বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর, মীম একটি অক্ষর।” (তিরমিযী, দারিমী, মিশকাত)

আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন,

افضل عبادة امتى قرائة القران.

অর্থঃ- “আমার উম্মতের ইবাদতসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত হলো কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা।” (দাইলামী, বাইহাক্বী, কানযুল উম্মাল)

মহান আল্লাহ্ তাঁর যিকির সম্পর্কে ইরশাদ করেন,

واذكروا الله كثيرا لعلكم تفلحون.

অর্থঃ- “তোমরা বেশী বেশী আল্লাহ্ পাক-এর যিকির কর। তাহলে অবশ্যই তোমরা কামিয়াবী লাভ করবে।” (সূরা জুমুয়া/১০)

فاذكرونى اذكركم.

অর্থঃ- “তোমরা আমার যিকির কর আমিও তোমাদের স্মরণ করব।” (সূরা বাক্বারা/১৫২)

আল্লাহ্ পাক হাদীসে কুদূসী শরীফে ইরশাদ করেন,

وانا معه اذا ذكرنى.

অর্থঃ- “বান্দা যখন আমার যিকির করে তখন আমি তার সাথে থাকি।” (বুখারী, মিশকাত)

হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

اذا مررتم برياض الجنة فارتعوا قالوا وما رياض الجنة قال حلق الذكر.

অর্থঃ- “যখন তোমরা কোথাও বেহেশতের বাগান দেখতে পাবে তখন সেখান থেকে ফায়দা হাছিল কর। হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ জিজ্ঞাসা করলেন, বেহেশতের বাগান কি? তিনি বললেন, যিকির মজলিস।” (বুখারী, মিশকাত)

ছলাত-সালাম পাঠ সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

ان الله وملئكته يصلون على النبى يايها الذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক এবং তাঁর ফেরেশ্তারা নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ছলাত (দরূদ শরীফ) পাঠ করেন। (হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি ছলাত পাঠ কর এবং সালাম দেয়ার মত সালাম দাও অর্থাৎ আদবের সাথে সালাম দাও।” (সূরা আহ্যাব/৫৬)

হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

من صلى على صلوة واحدة صلى الله عليه عشر صلوات وحطت عنه عشر خطيئات ورفعت له عشر درجات.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার ছলাত (দরূদ শরীফ পাঠক করবে আল্লাহ্ পাক তার প্রতি দশটি রহমত নাযিল করবেন, তার দশটি গুণাহ্ ক্ষমা করবেন এবং তার দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন।” (নাসাঈ, মিশকাত)

হাদীস শরীফে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন,

من صلى على مائة كتب الله بين عينيه براءة من النفاق وبراءة من النار.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আমার প্রতি একশবার দরূদ শরীফ পাঠ করবে আল্লাহ্ পাক তাঁর দু’চোখের মাঝখানে কুদরতিভাবে লিখে দিবেন, তাকে মুনাফিকী ও জাহান্নামী থেকে মুক্তি দেয়া হলো।” (তবারানী, ছগীর)

ذكر الانبياء من العبادة.

অর্থঃ- “নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম-এর আলোচনা ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।” (দাইলামী)

ما جلس قوم مجلسا لم يذكروا الله تعالى فيه ولم يصلوا على نبيه صلى الله عليه وسلم الا كان عليهم من الله ترة يوم اليامة فان شاء عذبهم وان شاء غفرلهم.

অর্থঃ- “কোথাও যদি লোকজন কোন মজলিসে একত্রিত হয় বা বসে অথচ তারা সেখানে আল্লাহ্ পাক-এর যিকিরও করেনা এবং রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি দরূদ শরীফও পাঠ করেনা। তাহলে ঐ সকল লোকের জন্য আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে ক্বিয়ামত দিবসে অনুতাপের কারণ হবে এবং আল্লাহ্ পাক ইচ্ছা করলে তাদেরকে শাস্তি দিবেন এবং ইচ্ছা করলে তাদেরকে ক্ষমা করবেন।”

ما اجتمع قوم فى بيت من بيوت الله يتلون كتاب الله ويتدارسونه بينهم الا نزلت عليهم السكينة وغشيتهم الرحمة وحفتهم الملئكة وذكرهم الله فيمن عنده.

অর্থঃ- “যখন কোন এলাকার লোক আল্লাহ্ পাক-এর ঘরে অথবা কোন স্থানে একত্রিত হয়ে আল্লাহ্ পাক-এর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং পরস্পর দ্বীনি আলোচনা করে তখন আল্লাহ্ পাক-এর রহমতের ফেরেশতারা তাদের বেষ্টন করে নেন, আল্লাহ্ পাক-এর রহমত তাদের উপর ছেঁয়ে যায় এবং তাদের উপর আল্লাহ্ পাক-এর নিকট হতে শান্তি বর্ষিত হয় এবং স্বয়ং আল্লাহ্ পাক রব্বুল আলামীন তাঁর নিকটবর্তী ফেরেশ্তাদের সাথে সেই মাহ্ফিলের লোকদের সম্পর্কে আলোচনা করেন।” (মিশকাত)

তাদের প্রথম বক্তব্যের দ্বিতীয় অংশে তারা বলেছে, “… শুধু মিষ্টান্নভোজই হয়।”

এর জবাবে বলতে হয়, মীলাদ শরীফ পাঠ করলেই মিষ্টি খেতে হবে এমন শর্ত কোথাও আরোপ করা হয়নি। যেহেতু ছহেবে মীলাদ তার বাড়ীতে অথবা দোকান-পাটে অথবা নির্দিষ্ট কোন স্থানে কিছু লোককে দাওয়াত করে এনে সমবেত করে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ফাযায়িল-ফযীলত, ছানা-ছিফত, ছলাত-সালাম ইত্যাদি পাঠ ও আলোচনার ব্যবস্থা করে। আর যারা দাওয়াতে আসে তারা প্রত্যেকেই তার মেহ্মান হিসেবে গণ্য হয়। তাই ছহেবে দাওয়াত মাহ্ফিল ও মেহ্মানদের সম্মানার্থে মেহমানদারীর ব্যবস্থা করে।

হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে,

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول االله صلى الله عليه وسلم من كان يؤمن بالله واليوم الاخرة فليكرم ضيفه.

অর্থঃ- “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন। হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর প্রতি এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে সে যেন মেহ্মানকে সম্মান করে।” (বুখারী, মুসলিম)

এই মেহ্মানদারী কেউ মিষ্টি দিয়ে, কেউ বিরানী দিয়ে অথবা কেউ তেহারী অথবা অন্য কোন খাদ্যদ্রব্য দ্বারা করে থাকে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ “আন্ নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,

قال ابو بكرن الصديق رضى الله تعالى عنه من أنفق درهما على قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم كان رفيقى فى الجنة.

অর্থঃ- “হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফ পাঠ (মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপলক্ষে এক দিরহাম ব্যয় করবে সে জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে।” (সুবহানাল্লাহ্)

وقال عثمان رضى الله تعالى عنه من أنفق درهما على قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم فكانما شهد غزوة بدر وحنين.

অর্থঃ- “হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে এক দিরহাম খরচ করল সে যেন বদর ও হুনাইন যুদ্ধে শরীক থাকলো।” (সুবহানাল্লাহ্)

وقال حسن البصرى رضى الله عنه وددت لو كان لى مثل جبل أحد ذهبا فانفقته على قرائة مولد النبى صلى الله عليه وسلم.

অর্থঃ- “(বিশিষ্ট তাবিয়ী) হযরত হাসান বছরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমার একান্ত ইচ্ছা হয় যে, আমার যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকত তাহলে তা মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ব্যয় করতাম।” (সুবহানাল্লাহ্)

وقال الامام الشافعى رحمة الله عليه من جمع لمولد النبى صلى الله عليه وسلم إخوانا وهيأ طعاما واخلى مكانا وعمل إحسانا وصار سببا لقرائته بعثه الله يوم القيامة مع الصديقين والشهداء والصالحين ويكون فى جنات النعيم.

অর্থঃ- “হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদ শরীফ পাঠ বা মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্যাপন উপলক্ষে লোকজন একত্রিত করলো এবং খাদ্য তৈরী করলো ও জায়গা নির্দিষ্ট করলো এবং মীলাদ পাঠের জন্য উত্তম ভাবে (তথা সুন্নাহ ভিত্তিক) আমল করলো তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক হাশরের দিন ছিদ্দীক, শহীদ, ছালিহীনগণের সাথে উঠাবেন এবং তাঁর ঠিকানা হবে জান্নাতে নাঈমে।” (সুবহানাল্লাহ্)

وقال سلطان العارفين الامام جلال الدين السيوطى قدس الله سره ونور ضريحه فى كتابه المسمى بالوسائل فى شرح الشمائل ما من بيت أومسجد أومحلة قرئ فيه مولد النبى صلى الله عليه وسلم إلا حفت الملائكة ذلك البيت أوالمسجد أو المحلة وصلت الملائكة على أهل ذلك المكان وعمهم الله تعالى بالرحمة والرضوان وأما المطوقون بالنور يعنى جبرائيل وميكائيل وإسرافيل وعزرائيل عليهم السلام فإنهم يصلون على من كان سببأ لقرائة مولد النبى صلى الله عليه وسلم.

অর্থঃ- “সুলতানুল আরিফীন হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “ওসায়িল ফী শরহি শামায়িল” নামক কিতাবে বলেন, যে কোন ঘরে অথবা মসজিদে অথবা মহল্লায় মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয় বা মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্যাপন করা হয় সেখানে অবশ্যই আল্লাহ পাক-এর ফেরেশ্তাগণ বেষ্টন করে নেন। আর তাঁরা সে স্থানের অধিবাসীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করতে থাকেন। আর আল্লাহ পাক তাদেরকে স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টির আওতাভুক্ত করে নেন। আর নূর দ্বারা সজ্জিত প্রধান চার ফেরেশ্তা, অর্থাৎ হযরত জিব্রাঈল, মীকাঈল, ইসরাফিল ও আজরাঈল আলাইহিমুস্ সালাম মীলাদ শরীফ পাঠকারীর উপর বা মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্যাপনকারীর উপর ছলাত-সালাম পাঠ করেন।” (সুবহানাল্লাহ্)

মীলাদ শরীফের মকছূদ খাদ্যদ্রব্য থাকেনা। থাকে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি হাছিল করা। মীলাদ শরীফে খাওয়ানো হয় আল্লাহ্ পাক-এর প্রতি শুকরিয়া স্বরূপ আল্লাহ্ পাক যে দয়া করে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছানা-ছিফত করার তাওফীক দিয়েছেন তাই।

আল্লাহ্ পাকই ইরশাদ করেন, لئن شكرتم لازيدنكم.

অর্থঃ- “যদি তোমরা শুকরিয়া কর তাহলে অবশ্যই আমি তোমার জন্য নিয়ামত বৃদ্ধি করে দিব।” (সূরা ইব্রাহীম/৭)

অর্থাৎ কোন কাজ করে তার শুকরিয়া আদায় করলে আল্লাহ্ পাক কাজটা আরো বেশী করার তাওফীক দান করেন।          এছাড়া আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

افشوا السلام واطعموا الطعام وصلوا الارحام وصلوا بالليل والناس نيام تدخلوا الجنة بسلام.

অর্থঃ- “তোমরা পরস্পরকে সালাম দাও, খাদ্য খাওয়াও, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ এবং রাত্রিতে নামায পড় যখন লোকজন ঘুমিয়ে থাকে। তাহলে শান্তিদায়ক জান্নাতে প্রবেশ করবে ইত্মিনানের সাথে।।” (তিরমিযী, ইবনে মাযাহ্, দারিমী, মিশকাত)

মূলতঃ মীলাদ শরীফ পাঠের দ্বারা মুসলমান মাত্রই সকলের মধ্যে কম-বেশী কিছু জজ্বা পয়দা হয়। যার উছীলায় ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দিকে রুজু হয়। যার ফলে সে নামায-কালাম, যিকির-ফিকির, ছলাত-সালাম ইত্যাদি আদায়ের প্রতি যতœবান হয়।   উপরোক্ত জবাব থেকে একথা প্রমাণিত হচ্ছে যে, আল্লাহ্ পাক কালামুল্লাহ্ শরীফে আর আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীস শরীফে পর্যায়ক্রমে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, যিকরুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করা ও ফাযায়িল-ফযীলত বর্ণনা করা এবং মেহ্মানদের মেহমানদারী ইত্যাদি সম্পর্কে আদেশ দিয়েছেন, নির্দেশ করেছেন ও গুরুত্বারোপ করেছেন।

এক কথায় মীলাদ মাহ্ফিলে তাই করা হয়। তাহলে এত দলীল-আদিল্লাহ্ থাকার পরও কি করে একথা বলা যেতে পারে, “মীলাদ মাহ্ফিলের দ্বারা আমলের পরিবেশ তৈরী হয়না, শুধু মিষ্টান্ন ভোজই হয়।”

প্রকৃতপক্ষে তাদের এ বক্তব্য আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নির্দেশের সম্পূর্ণ খিলাফ হওয়ার কারণে কাট্টা কুফরী হয়েছে। কোন মুসলমান নামধারী ব্যক্তি কুফরী করলে সে মুরতাদ হয়ে যায়। আর মুরতাদের শরয়ী ফায়ছালা হলো তাকে তিনদিন সময় দেয়া হবে তওবা করার জন্য অন্যথায় মুরতাদের একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড।        (চলবে)

{দলীলসমূহঃ (১) আহ্কামুল কুরআন জাস্সাস, (২) কুরতুবী, (৩) মাযহারী, (৪) রুহুল মায়ানী, (৫) রুহুল বয়ান, (৬) কবীর, (৭) খাযিন, (৮) বাগবী, (৯) ইবনে আব্বাছ, (১০) মাদারিক, (১১) বুখারী, (১২) মুসলিম, (১৩) নাসাঈ, (১৪) তিরমিযী, (১৫) ইবনে মাজাহ্, (১৬) দারিমী, (১৭) বাইহাক্বী, (১৮) কানযুল উম্মাল, (১৯) তাবারানী, (২০) ছগীর, (২১) দাইলামী, (২২) আন্ নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম, (২৩) ওয়াসিল ফী শরহিশ্ শামায়িল, (২৪) মিশকাত, (২৫) মিরকাত, (২৬) মাওয়াহিবুল্লাদুন্ নিয়া, (২৭) শরহে মাওয়াহিবুল্লাদুন্ নিয়া, (২৮) মাদারেজুন্ নুবুওওয়াত ইত্যাদি}

সাইয়্যিদ মুহম্মদ মোক্তাদুল ইসলাম (মিলন)

রঈসুল মজলিশ- ছাত্র আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত সুবহানীঘাট, সিলেট

সুওয়ালঃ রেযাখানী মুখপত্র ডিসেম্বর/২০০০ ঈসায়ী সংখ্যায় “তাফসীরে রুহুল বয়ান, বুখারী, গুনিয়াতুত তালেবীন, রেজভীয়া” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “সহীহ্ মুসলিম শরীফসহ” অনেক নির্ভরযোগ্য কিতাবে নফল নামায বিশেষতঃ ক্বদর ও বরাতের নফল নামায জামাত সহকারে আদায় করা বৈধ….।”

আর আপনারা “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” লিখেছেন, “তারাবীহ, ছলাতুল কুছুফ (সূর্য গ্রহণের নামায), ছলাতুল ইস্তিস্কা (বৃষ্টির নামায) এই তিন প্রকার নামায ব্যতীত যেমন লাইলাতুল ক্বদর, লাইলাতুল বরাত, তাহাজ্জুদ, চাশ্ত, আওয়াবীন ইত্যাদি নফল নামাযসমূহ ইমামের সাথে চারজন মুক্তাদীসহ জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্।”  কোনটি সঠিক?           আর “বুখারী, মুসলিম শরীফে” কি “ক্বদর” ও বরাতের” নফল নামায জামায়াতের সাথে আদায় করার কথা উল্লেখ আছে? দয়া করে জানাবেন।

 জাওয়াবঃ রেযাখানীরা তাদের মুখপত্রে “তাফসীরে রুহুল বয়ান, বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, গুনিয়াতুত্ তালেবীন এবং রেজভীয়া” কিতাবের বরাত দিয়ে নফল নামায বিশেষতঃ “শবে বরাত”, “শবে ক্বদরের” নফল নামায আযান-ইক্বামত ছাড়া জামায়াত সহকারে আদায় করা যে বৈধ বলেছে, তা আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এর বিগত ৮৬তম সংখ্যাতে দেয়া হয়েছে।

এছাড়া ৮৯তম সংখ্যা হতে বর্তমান ১১৫তম মোট ২৭ সংখ্যাব্যাপী বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে প্রমাণ করা হয়েছে যে, “তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, জিহালতপূর্ণ, জালিয়াতী ও প্রতারণামূলক।”

কেননা, রেযাখানীরা কিতাবের নাম দিয়ে যে বক্তব্য প্রদান করেছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। বরং তার সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ, তারা কিতাবের ইবারত, সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে মনগড়া বক্তব্য প্রদান করেছে এবং ক্ষেত্র বিশেষ নিজের ভ্রান্ত মতকে টিকিয়ে রাখতে কিতাবের ইবারত কারচুপি করেছে।      আর “বুখারী ও মুসলিম শরীফের” ১ম খন্ডের বরাত দিয়ে যে হাদীস শরীফ দু’খানা উল্লেখ করেছে উক্ত হাদীস শরীফদ্বয়ে “শবে বরাত ও শবে ক্বদরের” নামায জামায়াত সহকারে আদায় করার কোন বর্ণনাই নেই।

উল্লেখ্য, “তাফসীরে রুহুল বয়ান, বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, গুনিয়াতুত্ তালেবীন এবং রেজভীয়া” কিতাব ছাড়াও শরহে নিকায়া, মুহীত, হিলিয়া এবং মৌলভী আমজাদ আলীর বাহরে শরীয়তের বক্তব্যও বিশ্লেষণ এবং পর্যালোচনা করে প্রমাণ করা হয়েছে যে, রেযাখানীদের নফল নামায বিশেষতঃ শবে বরাত, শবে ক্বদরের নামায আযান ইক্বামত ছাড়া পড়া সংক্রান্ত ফতওয়া ও বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল। বরং সঠিক ফতওয়া যা ৭৬টি নির্ভরযোগ্য কিতাবের দলীল দিয়ে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় প্রদান করা হয়েছে, তাহলো- “তারাবীহ্, ছলাতুল কুছূফ (সূর্য গ্রহণের নামায), ছলাতুল ইস্তিস্কা (বৃষ্টির নামায) এই তিনপ্রকার নামায ব্যতীত অন্যান্য নফল নামায যেমন, তাহাজ্জুদ, চাশ্ত, আওয়াবীন ইত্যাদি নফল নামাযসহ শবে বরাত, শবে ক্বদরের নফল নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী, নাজায়িয ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্।”

স্মরণীয় যে, উল্লিখিত ৭৬টি দলীল ব্যতীত আরো অনেক দলীল রয়েছে যা প্রয়োজনে উল্লেখ করা হবে ইনশাআল্লাহ্।

নিম্নে প্রমাণ স্বরূপ আবারো কিছু ইবারত কিতাবের খণ্ড ও পৃষ্ঠা নম্বরসহ উল্লেখ করা হলো-       যেমন, “আশবাহ্ ওয়ান্ নাজায়ের” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২১৯ পৃষ্ঠায় ও শরহুল মুনীয়া কিতাবে উল্লেখ আছে,

واعلم ان النفل بالجماعة على سبيل التداعى مكروه ماعدا التراويح وصلوة الكسوف والاستسقاء فعلم ان كلا من الرغائب ليلة اول جمعة من رجب وصلوة البرأة وصلاة القدر ليلة السبع العشرين من رمضان بالجماعة بدعة مكروهة.

অর্থঃ- “জেনে রাখ! নিশ্চয় নফল নামায ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী। তবে তারাবীহ্, ছলাতুল কুছূফ (সূর্যগ্রহণ) ও ইস্তিস্কার (বৃষ্টির) নামায ব্যতীত। সুতরাং ছলাতুর রাগায়িব (অর্থাৎ রজব মাসের প্রথম জুমুয়ার রাত্রির নামায), শবে বরাতের রাত্রির নফল নামায এবং শবে ক্বদরের রাত্রির নফল নামায (অর্থাৎ রমাদ্বান মাসের ২৭ তারিখ রাত্রির নফল নামায) জামায়াতে পড়াও মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্।

“বাহরুর রায়িক” কিতাবের ২য় খণ্ডের ৫২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ليلة القدر وليلة النصف من شعبان ……. وغيرها تصلى فرادى.

অর্থঃ-“শবে ক্বদর, শবে বরাত ….. ইত্যাদি নফল নামায গুলো একাকী ভাবে আদায় করবে।”

“বাহারে শরীয়ত” কিতাবের ৪র্থ খণ্ডের ২৫ ও ২৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,

صلوۃ الر غائب کہ رجب کی پھلی شب جمعہ اور شعبان کی پندر ھویں شب اور شب قدر میں جماعت کے ساتھ نفل نماز بعض لوگ ادا کرتے ھیں  فقھاء اسے ناجائز ومکروہ بدعت کھتے ھیں …

অর্থঃ- “রাগায়িবের নামায যা রজবের প্রথম জুমুয়ার রাত্রি ও শা’বানের ১৫ই রাত্রি অর্থাৎ শবে বরাত এবং শবে ক্বদরে জামায়াতের সাথে কিছু লোক নফল নামায আদায় করে থাকে। ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উক্ত নফল নামাযগুলো জামায়াতের সাথে আদায় করাকে নাজায়িয, মাকরূহ তাহরীমী এবং বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ বলেছেন। ….”  “রেজভীয়া” কিতাবের ৩য় খন্ডের ৪৫৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

نماز شب برات اگر چہ مشائخ کرام قدست اسر ارھم  نے بجما عت  بھی پڑھی… مگر ھما رے ائمہ رضی اللہ تعالی عنهم کا مذھب وھی ھے کہ جماعت  بتداعی ھو تو مکروہ ھے.

অর্থাৎ- “শবে বরাতের নামায যদিও কোন কোন মাশায়িখগণ জামায়াতে পড়েছেন …… তবে আমাদের আইম্মা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মাযহাব ওটাই যে জামায়াত تداعى এর সাথে হলে অর্থাৎ জামায়াতে চারজন মুক্তাদী হলে মাকরূহ তাহ্রীমী হবে। “রেজভীয়া” কিতাবের ৩য় খন্ডের ৪৬৫ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

ذلک کلہ بدعۃ ….. ولم ینقل عن النبی صلی اللہ علیہ وسلم ولا عن اصحابہ … دوسرا قول یہ کہ مساجد میں اس کی جماعت مکروہ ھے.

অর্থাৎ- “এগুলো প্রত্যেকটি বিদ্য়াত অর্থাৎ ছলার্তু রাগায়িব, শবে বরাত, শবে ক্বদরের নফল নামায জামায়াতে আদায় করা ইত্যাদি প্রত্যেকটি কাজই বিদ্য়াত।” ….. কেননা, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম থেকে ওগুলোর কোন বর্ণনা নেই। বিধায় ওগুলো প্রত্যেকটিই বিদ্য়াত। ……. দ্বিতীয় মতে, মসজিদে এর জামায়াত করা মাকরূহ তাহ্রীমী।”        শুধু তাই নয়, রেযা খাঁ তার ‘রেজভীয়া’ কিতাবে সুন্নত নামাযও জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী বলে ফতওয়া  দিয়েছে। যেমন, ‘রেজভীয়া’ কিতাবের ৩য় খন্ডের ৪৬৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

استسقاء کے سوا ہر نماز نفل وتراو    یح وکسوف  کے سوا ہر نماز سنت میں ایسی جما عت جس میں چاریا زیادہ شخص مقتدی بنیں مکروہ ہے.

অর্থঃ- “ইস্তিস্কার নামায ব্যতীত যে কোন নফল নামাযে এবং তারাবীহ্ ও কুছূফ নামায ব্যতীত যে কোন সুন্নত নামাযে যদি এরূপ জামায়াত হয় যাতে চারজন অথবা চারের অধিক মুক্তাদি উপস্থিত হয় তাহলে মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে।”

সুতরাং যেখানে সুন্নত নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সেখানে নফল নামায জামায়াতে পড়া কি করে বৈধ হতে পারে?       যেমন, “রেজভীয়া” কিতাবের ১০ম খণ্ডে উল্লেখ আছে,

نفل پڑھیں تو الگ الگ ورن÷ نفل جما عت کثیرہ کے ساتھ مکروہ ھےچار مقتدی ھوں تو بالاتفاق.

অর্থঃ- “নফল নামায পড়তে হলে পৃথক পৃথক পড়বে, কেননা নফল নামায বড় জামায়াতের সাথে পড়া অর্থাৎ যদি জামায়াতে চারজন মুক্তাদী হয় তাহলে সকল ইমাম, মুজতাহিদ ও ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ঐক্যমতে জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহ্রীমী।”

আরো উল্লেখ্য যে, শবে বরাত, শবে ক্বদর, রাগায়িব ইত্যাদি নফল নামায শুধু জামায়াতে আদায় করাই মাকরূহ্ তাহ্রীমী নয়; বরং ইত্যাদি নফল নামায জামায়াতে আদায় করার জন্য ইক্তিদা করাও মাকরূহ তাহরীমী।

যেমন, “ফতওয়ায়ে বাযযাযিয়াহ” কিতাবে উল্লেখ আছে,

كره الاقتداء فى صلاة الرغائب وصلاة البراءة وليلة القدر.

অর্থাৎ- “লাইলাতুল ক্বদর নামাযে, বরাতের নামাযে এবং রাগায়িবের নামাযে ইক্তিদা করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী।”

“আদ দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে,

يكره الاقتداء فى صلاة رغائب وبراءة وقدر.

অর্থাৎ- “ক্বদরের নামাযে, বরাতের নামাযে এবং রাগায়িবের নামাযে ইক্তিদা করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী।”

“গায়াতুল আওতার” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

مکروہ ھے اقتداء کر نا صلوۃ رغائب میں اور صلوۃ براعت اور صلوۃ قدر میں.

অর্থাৎ- “শবে ক্বদরের নামাযে, শবে বরাতের নামাযে এবং রাগায়িবের নামাযে ইক্তিদা করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী।”

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, শবে বরাত, শবে ক্বদরের নফল নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী, নাজায়িয ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্। সাথে সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যে, রেযাখানিদের মুখপত্রে প্রদত্ত ফতওয়া সম্পূর্ণ ভুল ও বিভ্রান্তিকর। আর মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ফতওয়াই সঠিক ও গ্রহণযোগ্য।

মাওলানা মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান

মাওলানা মুহম্মদ মাছূম বিল্লাহ্

মুহম্মদ আসাদুর রহমান, মুহম্মদ মাইজুর রহমান

ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

সুওয়ালঃ আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম এই তিনটি সংখ্যায় ৩৫৩টি অকাট্য দলীলের ভিত্তিতে প্রদত্ত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ, মুহাক্কিক-মুদাক্কিক ও হক্কানী উলামা-ই-কিরামগণের ফতওয়া মুতাবিক জানতে পারলাম যে, “প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা করানো, ঘরে রাখা সর্বাবস্থায় হারাম।”

অথচ রেযাখানী মুখপত্র নভেম্বর/২০০১ ঈসায়ী সংখ্যায় ছবি সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ফতওয়া প্রকাশ করেছে। যা কিনা মানুষের ঈমান-আমল বিনষ্ট হওয়ার কারণ। রেযাখানীদের ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যের যে বিষয়গুলো আপত্তিকর সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

(ক) রেযাখানীরা ছবি তোলাকে বৈধ বলেছে; কিন্তু দলীল হিসেবে পেশ করেছে ঘরে ছবি রাখা সম্পর্কিত হাদীসসমূহকে।

(খ) .. কতেক উলামা যেসব ছবির শরীর ও ছায়া নেই সেসব ছবিকে বৈধ বলেছেন।

(গ) পূর্ববর্তীদের কেউ কেউ এবং হাম্বলী, শাফেয়ী, মালেকী এমনকি হানাফীদেরও কেউ কেউ নাকি (গায়রে মুজাস্সাম) শরীরবিহীন ছবিকে বৈধ বলেছেন। (ঘ) হুজুর আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুরুর দিকে ছবি তৈরী করা ও সংরক্ষণ করাকে নিষেধ করেছিলেন; কিন্তু পরবর্তীতে অনুমতি দেন।

(ঙ) সামাজিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে বিশেষ প্রয়োজনে ছবি তোলা বৈধ যা যুগের চাহিদাও।

(চ) ছবি হারাম হওয়ার মূলে হলো গায়রুল্লাহ্র সম্মান ও ইবাদত।

(ছ) প্রত্যেক যুগের ফক্বীহ্, মুফতী, কাজী ও আলিমগণ যুগের চাহিদা অনুযায়ী ফতওয়া দিয়েছেন এবং দেয়া উচিত।

(জ) প্রয়োজনীয় রেকর্ডের জন্য ফাইলবন্দি ছবিসমূহ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের নিকট জ্ঞান ও ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য জানার নিমিত্তে সরকারী-বেসরকারী যাদুঘর বা বিশেষ প্রতিষ্ঠানসমূহে পূর্বের নানা মনীষীগণের ছবি সংরক্ষণ/ধারণ করে রাখা বিশেষ প্রয়োজনে মাকরূহ্ হবেনা। এছাড়াও আরো বহু আপত্তিকর বিষয় তাদের উক্ত ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যে স্থান পেয়েছে।

কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে তাদের উল্লিখিত আপত্তিকর বক্তব্যগুলোর শরয়ী ফায়সালা কামনা করি।

জাওয়াবঃ হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম)   উল্লিখিত হাদীস শরীফের পূর্ণ মিছদাক বা নমুনা হচ্ছে রেযাখানীরা। তারা ছবির ব্যাপারে এমন সব বক্তব্য প্রদান করেছে যা কিতাবে দেখা তো দূরের কথা কেউ কোনদিন শুনেওনি।

মূলতঃ রেযাখানীরা নিজেদেরকৃত বদ আমলকে ধামা-চাপা দেয়ার উদ্দেশ্যেই মনগড়াভাবে ছবিকে জায়িয করার অপচেষ্টা করেছে।

(ধারাবাহিক)

প্রাণীর ছবি সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত রেযাখানীদের আপত্তিকর ও প্রতারণামূলক বক্তব্য সমূহের খণ্ডন মূলক জবাব- (খ)

রেযাখানীরা তাদের আমদানীকৃত পীরদের ও নিজেদের ছবি তোলার ন্যায় হারাম কাজটিকে হালাল করার উদ্দেশ্যে মাত্র দু’পৃষ্ঠার একটি বিভ্রান্তিকর রচনায় কত যে মিথ্যাচারিতা, প্রতারণা, জালিয়াতী ও ঠগবাজীর আশ্রয় নিয়েছে তার বহু প্রমাণ আপনারা ইতোমধ্যেই পেয়ে গেছেন।

রেযাখানীদের জালিয়াতী, প্রতারণা ও ইবারত কারচুপির আরো একটি উজ্বল দৃষ্টান্ত

তাদের ঠগবাজী, জালিয়াতী প্রতারণা আর ইবারত কারচুপির আরেকটি উজ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে নিম্নোক্ত ইবারতটি, যা তারা চতুর্থ দলীল হিসেবে বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘ফাতহুল বারী” থেকে উল্লেখ করেছে। নিম্নে তাদের উল্লিখিত ইবারত খানা হুবহু অর্থসহ তুলে ধরা হলো-

ان مذهب الحنابلة جواز الصورة فى الثواب ولو كان معلقا على ما فى فبر ابى طلحة لكن ان لستربه الجدار منع عندهم فقال النووى وذهب بعض السلف الى ان المنوع ما كان له ظل له وما ما لاظل له فلا بأس باتحاذه مطلقا.

অর্থাৎ- হাম্বলী মাযহাব মতে সাধারণভাবে কাপড়ের উপর অঙ্কিত ছবি বৈধ। যা আবু তালহার হাদীস দ্বারা বুঝা যায়। অবশ্যই যদি ঐ ছবি দিয়ে দেয়ালে পর্দা দেয়া হয় তবে তা তাঁরা নিষেধ করেন। আল্লামা নববী বলেন- পূর্ববর্তী কতেকের মাযহাব এ ছিল যে, যেসব ছবির ছায়া নেই তা বানানো সাধারণভাবে বৈধ। আর যেসব ছবির ছায়া আছে তা নিষিদ্ধ।”

রেযাখানীদের উল্লিখিত দলীলের খণ্ডনমূলক জবাবে তৃতীয়তঃ বলতে হয় যে, রেযাখানীদের উল্লিখিত ইবারতে ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বরাতে যে বিষয়টা উল্লেখ রয়েছে তাও সম্পূর্ণ অশুদ্ধ, বাতিল ও পরিত্যাজ্য। যেমন, উক্ত ইবারতে উল্লেখ আছে,

… فقال النووى وذهب بعض السلف الى ان الممنوع ماكان له  ظل له وما مالا ظل له فلا بأس باتخاذه مطلقا.

রেযাখানীরা উক্ত ইবারতাংশের অর্থ করেছে এভাবে- “আল্লামা নববী বলেন, পূর্ববর্তী কতেকের মাযহাব এ ছিল যে, যেসব ছবির ছায়া নেই তা বানানো সাধারণভাবে বৈধ। আর যেসব ছবির ছায়া আছে তা নিষিদ্ধ।”

এখানে প্রথমেই যে বিষয়টা উল্লেখযোগ্য সেটা হলো, রেযাখানীরা প্রতারণামূলকভাবে নিজেদের মতকে ছাবিত করার লক্ষ্যে উক্ত ইবারতের “মনগড়া ও ভুল অর্থ” করেছে।

মূলতঃ উক্ত ইবারতের সঠিক অর্থ হলো, “আল্লামা ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, পূর্ববর্তী কারো কারো অভিমত এই যে, যেসব ছবির ছায়া রয়েছে তা ঘরে রাখা নিষেধ। আর যেসব ছবির ছায়া নেই সাধারণভাবে সেসব ছবি ঘরে রাখাতে কোন দোষ নেই।

রেযাখানীরা এখানেও ঘরে ছবি রাখার বিষয়টিকে ছবি বানানো বা তৈরী করার ক্ষেত্রে দলীল হিসেবে উল্লেখ করার অপচেষ্টা করেছে। যার ফলে ইবারতে “বানানোর” কথা উল্লেখ না থাকা সত্ত্বেও প্রতারণামূলকভাবে নিজ থেকেই অর্থের ভিতর “বানানো” শব্দটি প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে। এরপর যে বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ্য, তাহলো “ফাতহুল বারীর” উক্ত ইবারতে হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বরাতে “ছায়াযুক্ত বা ছায়াহীন ছবি” সংক্রান্ত যে মতটি উল্লেখ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণই বাতিল মত। রেযাখানীরা উক্ত বাতিল মতটিকে দলীল হিসেবে পেশ করে চরম জালিয়াতি, প্রতারণা ও ঠগবাজীর পরিচয় দিয়েছে। সাথে সাথে উক্ত ইবারতের শেষ অংশ – “وهو مذهب باطل” অর্থাৎ “উক্ত মতটি বাতিল” কেটে ফেলে দিয়ে নিজেদেরকে পুনরায় দক্ষ ইবারত চোর ও রেযা খাঁর যোগ্য মুকাল্লিদ হিসেবে প্রমাণ করলো।

মূলতঃ “ফতহুল বারীর” উক্ত ইবারতখানা নিম্নরূপ-

… فقال النووى وذهب بعض السلف الى ان الممنوع ماكان له ظل له وما مالا ظل له فلا بأس باتخاذه مطلقا وهو مذهب باطل.

রেযাখানীরা উক্ত ইবারতের “وهو مذهب باطل” এ   অংশটি কারচুপি করেছে।         ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া হলো, “ছায়াযুক্ত” হোক অথবা “ছায়াহীন” হোক উভয় প্রকার ছবির একই হুকুম। অর্থাৎ উক্ত উভয় প্রকার ছবিই তৈরী যেরূপ হারাম তদ্রুপ ঘরে রাখাও নিষিদ্ধ।

যেমন, এ প্রসঙ্গে উক্ত “ফাতহুল বারী” কিতাবের ১০ খণ্ডের ৩৮৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,

ولافرق فى ذالك بين ماله ظل ومالا ظل له فان كان معلقا على حائط او ملبوس اوعمامة او نحو ذالك ممالا يعد ممتهنا فهو حرام.

অর্থঃ- “ছায়াযুক্ত ও ছায়াহীন ছবির’ মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই। যদি (উক্ত উভয় প্রকার ছবিই) দেয়ালে টাঙ্গানো থাকে অথবা পরিধেয় বস্ত্রে থাকে অথবা পাগড়ীতে থাকে অথবা অনুরূপ সম্মানিত কোন স্থানে বা বস্তুতে থাকে তবে তা হারাম।”

উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,

فان استر النى انكره النبى صلى الله عليه وسلم كانت الصورة فيه بلا ظل بغير شك ومع ذالك فامر بنزعه.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছবিযুক্ত যে পর্দাটি অপছন্দ করেছেন নিঃসন্দেহে তার ছবিটিও ছায়াহীন ছিলো তা সত্ত্বেও তিনি তা সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন।”

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, ছায়াযুক্ত হোক বা ছায়াহীন হোক কোন প্রকার ছবিই যেরূপ তৈরী করা জায়িয নেই তদ্রুপ ঘরে রাখাও জায়িয নেই। এ সম্পর্কিত আরো কিছু দলীল-আদিল্লাহ্ পরবর্তী সংখ্যায় উল্লেখ করা হবে। (ইনশাআল্লাহ্) (চলবে)

মুহম্মদ  শফির্উ রহমান নীপু

সভাপতি- ছাত্র আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, ঢাকা

সুওয়ালঃ মাসিক রাহমানী পয়গাম সেপ্টেম্বর/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় এক জিজ্ঞাসা ও তার জবাবে বলা হয়েছে, “অন্যান্য নফল নামাযের মত বিতরের পরের দু’রাকাআত নফল নামাযও দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম। “বসে আদায় করা উত্তম” কথাটি ভুল ও ভিত্তিহীন। বসে নামায পড়া কখনো দাঁড়িয়ে নামায পড়া হতে উত্তম নয়। হাদীস শরীফের সুস্পষ্ট ভাষ্য নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেন, “বসে নামায আদায়কারী ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামায আদায়কারীর অর্ধেক ছাওয়াব পাবে।”  তবে নবী করীম (সাঃ) কখনো কখনো বিতরের নামাযের পরে নফল নামায বসে পড়েছেন তা জায়িয ও বৈধ বুঝানোর উদ্দেশ্যে। কেউ নবী করীম (সাঃ) এর অনুসরণ ও বরকতের নিয়তে উক্ত দু’রাকাআত নফল নামায বসে আদায় করলে তার মুহাব্বত ও অনুসরনের জন্য আলাদা ছাওয়াব পাবে, তা ভিন্ন কথা।

এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে- তারা যে বলেছে,  অন্যান্য নফল নামাযের মত বিতরের পরের দু’রাকায়াত নফল নামাযও দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম। ‘বসে আদায় করা উত্তম’ কথাটি ভুল ও ভিত্তিহীন। এ জবাবটি কতটুকু সঠিক হয়েছে? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াবঃ তাদের এ জবাব কুফরী হয়েছে। কারণ, তাদের জবাবের প্রথমে তারা বলেছে, ‘বিতরের পর বসে দু’রাকায়াত নফল নামায পড়া উত্তম বলাটা ভুল ও ভিত্তিহীন।’ অথচ তারাই আবার জবাবের পরবর্তী অংশে হাদীস শরীফ থেকে দলীল দিয়েছে যে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কখনো এ নামায বসে আদায় করেছেন।

এখন আমাদের প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, “আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কাজ করেছেন সেটা কি উত্তম না অনুত্তম?”   প্রথম প্রশ্নের শরীয়তের জবাব হচ্ছে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোন কাজকে কেউ যদি অনুত্তম বলে তাহলে সে কাট্টা কাফির হবে। কারণ, আল্লাহ্ পাক নিজেই বলেছেন, انا اعطينك الكوثر. অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে হাউজে কাওছার ও সমস্ত ভালাই দান করেছি।” (সূরা কাওছার/১)

অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক নিজেই বলতেছেন যে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যা কিছু দেয়া হয়েছে তা উত্তম হতে উত্তমতর।

এককথায় আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে যা কিছু সংশ্লিষ্ট হয়েছে তা উত্তম থেকে উত্তমতর।

দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, “আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা করেছেন তাই দলীল? না, দলীল নয়? অর্থাৎ ভিত্তিহীন।”

দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাব হচ্ছে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই দলীল।

এ প্রসঙ্গে শরীয়তের উছূল হচ্ছে,

اصول الشرع ثلاثة القران والحديث والاجماع ورابعها القياس.

অর্থঃ- “শরীয়তের উছূল বা দলীল হচ্ছে প্রথমতঃ তিনটি- কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা এবং চতুর্থটি হচ্ছে ক্বিয়াস।”

কাজেই যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীস শরীফকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করবে না এবং তা ভিত্তিহীন বলবে শরীয়তের দৃষ্টিতে সেও কাট্টা কাফিরের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

لوتركتم سنة نبيكم لكفرتم.

অর্থঃ- “যদি তোমরা তোমাদের নবী করীম ছল্লারৗাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতকে অস্বীকার কর তাহলে তোমরা অবশ্যই কুফরী করলে বা কাফির হবে।” (আবু দাউদ শরীফ)

হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كل امتى يدخلون الجنة الا من ابى قيل ومن ابى يا رسول الله صلى الله عليه وسلم قال من الطاعنى دخل الجنة ومن عصانى فقد ابى.

অর্থঃ- “হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার সমস্ত  উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে ঐ ব্যক্তি ব্যতীত যে আমাকে অস্বীকার করেছে। জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কোন্ ব্যক্তি আপনাকে অস্বীকার করলো?’ তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ইত্য়াত (অনুসরণ) করলো সে জান্নাতে প্রবেশ করবে আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানি করলো অর্থাৎ আমার ইত্য়াত করলোনা সেই আমাকে অস্বীকার করলো অর্থাৎ সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (বুখারী শরীফ)

তারা তাদের জবাবে একটি হাদীস শরীফ উল্লেখ করেছে যে, “নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, বসে নামায আদায়কারী ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামায আদায়কারীর অর্ধেক ছওয়াব পাবে।”

এরপর তারা আরো উল্লেখ করেছে যে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথা বলার পরও তিনি নিজেই বিতরের পর দু’রাকায়াত হালক্বী নফল বসে আদায় করেছেন।

উপরোক্ত হাদীস শরীফ ও তার অনুরূপ হাদীস শরীফসমূহের পরিপ্রেক্ষিতেই ইমাম-মুজতাহিদগণ ফতওয়া দিয়েছেন, হালক্বী নফলের হুকুম অন্যান্য নফল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অর্থাৎ অন্যান্য নফল দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব পাবে।     আর হালক্বী নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব আর বসে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব। কারণ কোন প্রকার ইবাদত-বন্দিগীতে কোন প্রকার নেকী নেই বা সন্তুষ্টি নেই; বরং সন্তুষ্টি ও নেকী রয়েছে একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর মতে মত হওয়ার মধ্যে এবং আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পথে পথ হওয়ার মধ্যে।

এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে,

عن انس رضى الله عنه قال جاء ثلثة رهط الى ازواج النبى صلى الله عليه وسلم يسألون عن عبادة النبى صلى الله عليه وسلم فلما اخبروا بها كانهم تقالوها فقالوا اين نحن من النبى صلى الله عليه وسلم وقدغفر الله ماتقدم من ذنبه وما تأخر فقال احدهم اماانا فاصلى الليل ابدا وقال الاخر انا اصوم النهار ابدا ولا افطر وقال الاخر انا اعتزل النساء فلا اتزوج ابدا فجاء النبى صلى الله عليه وسلم اليهم فقال انتم الذين قلتم كذا وكذا اما والله انى لاخشاكم لله واتقاكم له لكنى اصوم وافطر واصلى وارقد واتزوج النساء فمن رغب عن سنتى فليس منى.

অর্থঃ- “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা তিনজন ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর একটি দল হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন  রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণের নিকট এসে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। যখন তাঁদেরকে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আমল সম্পর্কে জানানো হলো, তখন তাঁরা উক্ত আমলকে অত্যন্ত কম মনে করলেন এবং বলতে লাগলেন যে, আমরা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তুলনায় কোথায়? তাঁর পূর্বাপর সমস্ত গুণাহ্খতা ক্ষমা করা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক তাঁকে মা’ছূম করে তাঁর মর্যাদাকে আরো বৃদ্ধি করেছেন।

তখন তাঁদের মধ্য হতে একজন বললেন, আমি দায়িমীভাবে সারারাত নামায আদায় করবো। আর একজন বললেন, আমি সারা বছর রোযা রাখবো, কখনো ভঙ্গ করবোনা এবং অপরজন বললেন, আমি কখনো বিয়ে করবোনা, আজীবন স্ত্রী-সন্তান থেকে দূরে থাকবো।

অতঃপর আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের নিকট আসলেন এবং বললেন, “তোমরা কি ঐ সমস্ত লোক, যারা এরূপ কথা  বলেছো? তোমরা এ ব্যাপারে সাবধান হও। আল্লাহ্ পাক-এর কছম! আমি তোমাদের থেকে আল্লাহ্ পাককে বেশী ভয় করি এবং সবচেয়ে বেশী পরহিযগার বা মুত্তাকী। অথচ আমি রোযা রাখি আবার তা ভঙ্গ করি, নামায পড়ি এবং ঘুমিয়ে থাকি এবং স্ত্রীর হক্ব পুরোপুরি আদায় করি। জেনে রাখ! যে ব্যক্তি আমার সুন্নতের খিলাফ আমল করে, সে আমার উম্মত হতে খারিজ।” (মিশকাত শরীফ ২৭ পৃষ্ঠা, বুখারী, মুসলিম শরীফ)

এ হাদীস শরীফ এবং অনুরূপ আরো অন্যান্য হাদীস শরীফ থেকে এটাই ছাবিত হয় যে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইত্য়াত বা অনুসরণই সন্তুষ্টির কারণ ও ইবাদত এবং এর মধ্যেই নেকী বা ছওয়াব রয়েছে। আর আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আমলের খিলাফ যত প্রকার আমল রয়েছে তা প্রত্যেকটিই পরিত্যাজ্য, গোমরাহী এবং আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে খারিজ হওয়ার কারণ।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ পড়লে আর অনুবাদ করলেই যদি মুসলমান হতে পারতো এবং ওলী আল্লাহ্ হতে পারতো তাহলে গিরিশ চন্দ্র মুসলমান হতো এবং বড় ওলী আল্লাহ্ হয়ে যেত। কিন্তু  গিরিশ চন্দ্র ওলী আল্লাহ্ হওয়া তো দূরের কথা মুসলমানই হতে পারেনি এবং কাট্টা কাফির হয়ে চির জাহান্নামী হয়ে গেছে।

আর আমল বা ইবাদত বন্দিগী করলেই যদি  ঈমানদার হওয়া যেত এবং ওলী আল্লাহ হওয়া যেত তাহলে ক্বদরিয়া সম্প্রদায় যাদের আমল ও ইবাদত সম্পর্কে স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এদের আমল ও ইবাদত বন্দেগী হবে দেখতে নবীদের মত কিন্তু তাদের ঈমান কক্তনালীর নীচে নামবেনা অর্থাৎ এরা মুসলমান দাবী করা সত্বেও কাট্টা কাফিরই থাকবে।

কাজেই নেকী বা ছওয়াব ও সন্তুষ্টি রয়েছে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইত্য়াত বা অনুসরণের মধ্যে।

হালক্বী নফল সম্পর্কে শরীয়তের ফায়ছালা

এখন প্রথমে আমরা বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত হালকী নফল সম্পর্কিত হাদীস শরীফ সমূহ বিভিন্ন হাদীস শরীফের কিতাব থেকে উল্লেখ করে তার ব্যাখ্যা বর্ণনা করবো।

“ইবনে মাযাহ্” শরীফে বর্ণিত আছে,

عن ام سلمة رضى الله تعالى عنها ان النبى صلى الله عليه وسلم كان يصلى بعد الوتر ركعتين خفيفتين وهو جالس.

অর্থঃ- “উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত আছে যে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্র নামাযের পর সংক্ষিপ্তাকারে দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করতেন।”

ইবনে মাযাহ শরীফের ৮৫ পৃষ্ঠার ২নং হাশিয়ায় আরো বর্ণিত আছে-

عن عائشة رضى الله عنها كان يصلى ثلث عشرة ركعة يصلى ثمان ركعات ثم يوتر ثم يصلى ركعتين وهو جالس.

অর্থঃ- “হযরত আয়শা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (রাতে) তের রাকায়াত নামায আদায় করতেন। আট রাকায়াত (তাহাজ্জুদ) পড়ে তিন রাকায়াত বিত্র পড়তেন।

অতঃপর বসে বসে দু’রাকায়াত (নফল) পড়তেন।”  অনুরূপভাবে হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত আছে যে,

عن ابى امامة رضى الله عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم كان يصليها بعد الوتر وهو جالس يقرأ فيهما اذا زلزلت وقل ياايها الكفرون. (احمد)

অর্থঃ- “হযরত আবু উমামা  রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্র নামায আদায়ের পর বসে বসে দু’রাকায়াত (নফল) আদায় করেছেন। আর ঐ রাকায়াতদ্বয়ে যথাক্রমে اذا زلزلت এবং قل يا ايها الكفرون অর্থাৎ সূরা যিলযাল এবং সূরা কাফিরুন পাঠ করতেন।” (মসনদে আহ্মদ)

ইবনে মাযাহ্ শরীফে বর্ণিত আছে,

عن عائشة رضى الله عنها قالت كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر بواحدة ثم يركع ركعتين يقرأ فيهما وهو جالس فاذا اراد ان يركع قام فركع.

অর্থঃ-“হযরত আয়শা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক রাকায়াত বিত্র  নামায আদায় করলেন। অতঃপর তিনি দু’রাকায়াত নামায আদায় করলেন, তাতে তিনি ক্বিরয়াত পাঠ করলেন বসা অবস্থায়। অতঃপর যখন রুকু করতে ইচ্ছা করলেন, তিনি দাঁড়ালেন অতঃপর রুকু করলেন।”

উল্লিখিত হাদীস শরীফসমূহ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল আদায় করতেন এবং উক্ত দু’রাকায়াত নফল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কয় ছূরতে আদায় করেছেন তা উল্লেখ করা হয়েছে। আর প্রকৃতপক্ষে বিত্রের পর উক্ত দু’রাকায়াত হালকী নফল দু’ছূরতে আদায় করেছেন। (১) বসে  নামায শুরু করেছেন এবং সম্পূর্ণ  নামায বসেই শেষ করেছেন। (২) নামায বসেই শুরু করেছেন এবং বসেই শেষ করেছেন। তবে শুধুমাত্র রুকু করার সময়ই দাঁড়িয়ে রুকু করে বাকী নামায বসেই আদায় করেছেন।

হালকী নফল কেন বলা হয়?

“ইবনে মাযাহ্” শরীফে বর্ণিত আছে,

عن ام سلمة رضى الله تعالى عنها ان النبى صلى الله عليه وسلم كان يصلى بعد الوتر ركعتين خفيفتين وهو جالس.

অর্থঃ- “উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত আছে যে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্র নামাযের পর সংক্ষিপ্তাকারে দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করতেন।”

আর উক্ত দু’রাকায়াত নফল নামাযে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছোট ছোট সূরাসমূহ পাঠ করেছেন।

যেমন প্রথম রাকায়াতে তিনি “সূরা যিল্যাল” আর দ্বিতীয় রাকায়াতে “সূরা কাফিরুন” পাঠ করতেন।

স্মর্তব্য, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত দু’রাকায়াত  নামায যেহেতু বসে বসে ছোট ছোট সূরাসমূহ দ্বারা সংক্ষিপ্তভাবে আদায় করেছেন বিধায় উক্ত দু’রাকায়াতকে হালকী নফল নামে অভিহিত করা হয়।

উল্লেখ্য, কেউই একটি হাদীস শরীফও পেশ করতে পারবেনা যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্র বাদ দু’রাকায়াত হালকী নফল দাঁড়িয়ে আদায় করেছেন।

অতএব একথা বলা কখনই শুদ্ধ হবেনা যে, উক্ত দু’রাকায়াত নফল  নামায দাঁড়িয়ে পড়া সুন্নত ও বেশী ফযীলতের কারণ। প্রকৃতপক্ষে কিছু লোক শরয়ী জ্ঞানের অভাবে এবং ছহীহ্ সমঝ ও তাহক্বীক্বের অভাবে আর সুন্নত সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে উপরোক্ত কথা বলে থাকে। যারা উক্ত দু’রাকায়াত নফল  নামায বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব, আর দাঁড়িয়ে পড়লে পূর্ণ ছওয়াবের কথা বলে থাকে, তারা মূলতঃ অন্যান্য নফল নামাযের সাথে কিয়াছ করে একথা বলে থাকে, যা সম্পূর্ণ অশুদ্ধ, ভুল ও বিভ্রান্তিকর এবং কোরআন-সুন্নাহ্র সম্পূর্ণ বিপরীত।

হালকী নফল বসে পড়াতেই সর্বাধিক ফযীলত

জানা আবশ্যক, ফযীলত হচ্ছে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা করেছেন তার মধ্যে। অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতের ইত্তিবার মধ্যেই যে আল্লাহ্ পাক-এর রেজামন্দী, সন্তুষ্টি ও মুহব্বত নিহিত রয়েছে এবং বান্দার জন্য ইহ্কাল ও পরকালের কামিয়াবী রয়েছে, সে প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,

قل ان كنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله ويغفرلكم ذنوبكم والله غفور رحيم.

অর্থঃ- “আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহ্ পাক-এর মুহব্বতের দাবীদার হয়ে থাক বা মুহব্বত করে থাক, তাহলে আমাকে (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর) ইত্তিবা কর, তাহলে আল্লাহ্ পাক তোমাদেরকে মুহব্বত করবেন এবং তোমাদের গুণাহ্খতা ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ্ পাক ক্ষমাশীল, দয়ালু হবেন।” (সূরা আলে ইমরান/৩১)

উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক বলেন যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ইত্তিবা বা অনুসরণ করলেই আল্লাহ্ পাক মুহব্বত করবেন, গুণাহ্খতা মাফ করবেন এবং দয়ালু ও ক্ষমাশীল হবেন। অন্যথায় কস্মিনকালেও আল্লাহ্ পাক-এর মুহব্বত হাছিল করা যাবেনা, গুণাহ্খতা ক্ষমা পাওয়া যাবেনা আর আল্লাহ্ পাককে ক্ষমাশীল ও দয়ালু হিসেবে পাওয়া যাবেনা। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كل امتى يدخلون الجنة الا من ابى قيل ومن ابى قال من اطاعنى دخل الجنة ومن عصانى فقد ابى.

অর্থঃ- “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার সমস্ত উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে ঐ ব্যক্তি ব্যতীত, যে আমাকে অস্বীকার করেছে। জিজ্ঞাসিত হলেন- কে আপনাকে অস্বীকার করেছে? তিনি বললেন, যে আমাকে ইতায়াত করেছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার ইতায়াত করেনি বা নাফরমানী করেছে, সেই আমাকে অস্বীকার করেছে। অর্থাৎ সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (বুখারী, মুসলিম)

আল্লাহ্ পাক আরো বলেন,

من يطع الله ورسوله فقد فاز فوزا عظيما.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইতায়াত করল, সে বিরাট সফলতা লাভ করল।” (সূরা আহ্যাব/৭১)

এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে,

من تمسك بسنتى عند فساد امتى فله اجر مأة شهيد.

অর্থঃ- “যে আমার উম্মতের ফিৎনা-ফাছাদের যুগে (একটি) সুন্নতকে আঁকড়িয়ে থাকবে, সে (প্রতিটি সুন্নতের বিনিময়) একশত শহীদের ছওয়াব লাভ করবে।”

কাজেই উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীস শরীফ সমূহের বর্ণনা দ্বারা এটাই ছাবিত হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু দু’রাকায়াত হালক্বী নফল নামায বসে আদায় করেছেন, সেহেতু তা বসে আদায় করাই খাছ সুন্নত এবং অধিক ফযীলত ও বুযুর্গীর কারণ।

হালকী নফল বসে পড়ায় অধিক ফযীলত বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য ও বিশ্ববিখ্যাত

কিতাবের অভিমত

          এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, হাদীস শরীফের সহীহ্ কিতাব সুনানে ইবনে মাযাহ্-এর সম্মানিত লেখক উক্ত দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়া যে মুস্তাহাব- সুন্নত, তা সুস্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য আলাদা বাব রচনা করেছেন। যার নাম দিয়েছেন,

باب ما جاء فى الركعتين بعد الوتر جالسا.

অর্থঃ -“এ অধ্যায়টি বিত্রের পর দু’রাকায়াত (নামায) বসে আদায় করা সম্পর্কে।”

শুধু তাই নয়, বিশিষ্ট মুজতাহিদ, বিশিষ্ট ফক্বীহ্ ও ছূফী, সর্বজনস্বীকৃত বিশ্বখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ- তাফসীরে মাযহারীর সম্মানিত মুফাস্সীরে আ’যম, আল্লামা কাজী ছানাউল্লাহ্ পানিপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “মালাবুদ্দা মিনহু” কিতাবের ৭৪ পৃষ্ঠায় উক্ত দু’রাকায়াত নফল নামাযকে অন্যান্য নফল নামায থেকে আলাদা করে বসে পাঠ করা মুস্তাহাব হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যেমন তিনি তাঁর কিতাবে বর্ণনা করেছেন-

بعد وتر دوركعت نشسته خواندن مستحب است در ركعت اولى اذازلزلت الارض ودر ركعت ثانيه قل ياايها الكفرون خواند.

অর্থঃ- “বিত্রের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়াই মুস্তাহাব বা সুন্নতে যায়েদা। এ দু’রাকায়াতের প্রথম রাকায়াতে সূরা যিলযাল এবং দ্বিতীয় রাকায়াতে সূরা কাফিরুন পড়াও মুস্তাহাব।”

হাদীয়ে বাঙ্গাল আল্লামা হযরত কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর উর্দু ভাষায় লিখিত “মেফতাহুল জান্নাত” কিতাবে উল্লেখ করেছেন হালকী নফল  নামায বসে পড়া সুন্নত।

ফক্বীহুল আছার, মুফতীউল আ’যম, আল্লামা হযরত সাইয়্যিদ আমীমুল ইহ্সান মুজাদ্দেদী বরকতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর উর্দু ভাষায় লিখিত “হাদিয়াতুল মুছল্লীন” কিতাবে বর্ণনা করেছেন, হালকী নফল নামায বসে পড়া মুস্তাহাব- সুন্নত। এছাড়া ফিক্বাহ্র বিশিষ্ট কিতাব বাজ্জারেও অনুরূপ ফতওয়া বর্ণিত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ্য, দেওবন্দীদের দ্বারা লিখিত “আকাবের কা রমাজান” নামক কিতাবে লিখিত হয়েছে-“হযরত শায়খুল হিন্দঃ তিনি দু’রাকায়াত নফল বরাবর বসেই পড়তেন। কেউ একবার হযরতের খিদমতে আরজ করল এতে (বসে পড়াতে) অর্ধেক ছওয়াব হয় মাত্র। তখন হযরত উত্তরে বলেছিলেনঃ হ্যাঁ ভাই, ছওয়াব বেশী না হলেও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণের মধ্যেই মন লাগে বেশী। আমার ধারণা, রীতি অনুসারে এতে ছওয়াব অর্ধেকই হবে বটে তবে সুন্নতের প্রতি এই যে অপার অনুরাগ এর ছওয়াব হয়ত পুরা ছওয়াবকে ছাড়িয়ে যাবে।” হ্যাঁ, মাহ্মুদুল হাসান সাহেবের উক্ত আমল অর্থাৎ হালকী নফল  নামায বসে আদায় করা যথার্থই ছিল। তবে তিনি বসে পড়াতে ছওয়াবের ব্যাপারে যে ধারণা করেছেন তা আদৌ শুদ্ধ হয়নি। কারণ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্র রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ তথা সুন্নতের ইত্তিবার মধ্যেই ছওয়াব বেশী রয়েছে। কাজেই অন্যান্য নফল বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব এবং দাঁড়িয়ে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব। আর হালকী নফল বসে পড়লেই বেশী ছওয়াব, যেহেতু এটা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।         উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, বিত্রের পর দু’রাকায়াত নফল  নামায বসে পড়াই খাছ সুন্নত এবং পূর্ণ ফযীলতের কারণ, দাঁড়িয়ে পড়ার কোন বর্ণনা নেই, যদিও শুধুমাত্র রুকুতে কোন কোন সময় দাঁড়ানোর কথা বর্ণিত রয়েছে।       কাজেই যারা বিত্রের পর দু’রাকায়াত নফল  নামায দাঁড়িয়ে পড়ার পক্ষে বলে থাকে, তাদের বক্তব্য দলীল বিহীন, মনগড়া, বিভ্রান্তিকর ও কুরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ।         {দলীলসমূহঃ (১)  মুসলিম, (২) তিরমিযী, (৩) ইবনে মাজাহ্, (৪) আহমদ, (৫) মিশকাত, (৬) মিরকাত, (৭) আশয়াতুল লুময়াত, (৮) লুময়াত, (৯) মালাবুদ্দা মিনহু, (১০) মিফতাহুল জান্নাত, (১১) হাদিয়াতুল মুছল্লীন, (১২) আকাবের কা রমাযান ইত্যাদি}

খন্দকার মুহম্মদ আব্দুল হান্নান

কর পরিদর্শন পরিদপ্তর, সেগুনবাগিচা, ঢাকা

সুওয়ালঃ কোন এক ব্যক্তি ঢাকার অফিসে চাকরী করেন এবং ঢাকা হতে তার বাড়ী (স্থায়ী আবাস স্থান) ৪৮ মাইলের বেশী হবে। ঐ ব্যক্তি ঢাকাতে মেসে থাকেন এবং প্রায় প্রতি সপ্তাহেই বাড়ী যান। তিনি মাঝে মধ্যে অফিসে যোহর ও আছর নামাযের সময় ইমামের দায়িত্ব পালন করেন। আর তিনি চার রাকায়াত নামাযই পড়ে থাকেন। এখন আমার সুওয়াল হলো- উক্ত ব্যক্তি নামাযে ইমামের দায়িত্ব পালন করলে তার নিজের নামায ও অন্যান্য মুছুল্লিগণের নামায ছহীহ্ হবে কিনা তা জানতে বাসনা রাখি। জাওয়াবঃ প্রশ্নে বর্ণিত ব্যক্তিকে উপরোক্ত অবস্থায় কছর পড়তে হবে। চাই সে একা পড়ুক অথবা কোথাও ইমামতি করুক কসর নামায পড়তে হবে। কারণ মুকীম হওয়ার জন্য যে শর্ত রয়েছে, তা তার মধ্যে পাওয়া যায়না। গায়াতুল আওতার কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, নিয়ত ব্যতীত মানুষ তিন স্থানে মুকীম হয়ে যাবে। যথা- ১। জন্মভূমি, যে স্থানে হিজরত করা হয়নি। (২) নতুন বাড়ী, যেখানে আহ্ল বা পরিবার নিয়ে বসবাস করে এবং (৩) যে স্থানে বিবাহ্ করে বসবাস করে। অন্যান্য ফিক্বাহের কিতাবে মুকীম হওয়ার জন্য আরো দু’টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। তাহলো- (১) ৪৮ মাইল পথ অতিক্রম না করলে। (২) ১৫ দিনের বেশী থাকার নিয়ত করলে। আরো উল্লেখ্য যে, নিয়ত ব্যতীত কোন ব্যক্তি মুসাফির হবে না।

অতএব, চাকুরী যদিও স্থায়ী, তথাপিও উপরোক্ত শর্তের কোনটিই তার মধ্যে পাওয়া যায়না। কাজেই সে নিয়ত ব্যতীত মুকীম হবে না। সুতরাং তার উচিত হবে, ১৫ দিনের কমে বাড়ীতে যাওয়ার নিয়ত না করে একই সাথে ১৫ দিনের বেশী থাকার নিয়ত করা।

মুসাফিরদের জন্য যোহর, আছর ও ইশার নামায কছর করা অর্থাৎ চার রাকায়াত বিশিষ্ট ফরয নামাযের স্থলে দু’রাকায়াত পড়া ফরয। আর নামাযে ভুলে ওয়াজিব তরক হলে সিজ্দায়ে সাহু ওয়াজিব হয়।     যেমন বিশ্ব বিখ্যাত ও সর্বজনমান্য ফিক্বাহের কিতাব “জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ” কিতাবের ১ম খন্ডের ১০৯ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

فرض المسافر عند نا فى كل صلاة رباعية ……. ركعتان لايجوز له الزيادة عليهما ……… ويجب سجود السهو ان كان سهوا.

অর্থঃ- “আমাদের হানাফী মাযহাব মতে মুসাফির প্রত্যেক চার রাকায়াত বিশিষ্ট (যোহর, আছর ও ইশা) ফরয নামায দু’রাকায়াত পড়বে। মুসাফিরের জন্য দু’রাকায়াতের বেশী পড়া জায়িয হবে না। …… তবে মুসাফির যদি ভুলবশতঃ  চার রাকায়াত পড়েই ফেলে তাহলে মুসাফিরের উপর সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।”

সুতরাং কোন মুসাফির ব্যক্তি যদি ফরয নামায কছর না করে পূর্ণ নামায পড়ে, তাহলে সেক্ষেত্রে তিনটি অবস্থা পরিলক্ষিত হয়-

প্রথমতঃ যদি মুসাফির ব্যক্তি কছর নামায সংক্রান্ত শরয়ী হুকুমের প্রতি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা অবজ্ঞা করে, তাহলে সে ব্যক্তির নামায তো হবেই না বরং তা হবে সম্পুর্ণ কুফরী।

দ্বিতীয়তঃ যদি শরয়ী হুকুমের প্রতি অবজ্ঞা না করে, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে গাফলতির সহিত কছরের পরিবর্তে পূর্ণ নামায পড়ে, সেক্ষেত্রেও নামায ছহীহ্ হবেনা। বরং নামাযী ব্যক্তি কবীরা গুণাহে গুণাহ্গার হবে। আর সে ব্যক্তিকে উক্ত নামায পুনরায় পড়ে নিতে হবে।       তৃতীয়তঃ যদি সে ব্যক্তি কছরের নিয়তে নামায শুরু করে এবং ভুলবশতঃ যথানিয়মে চার রাকায়াত পূর্ণ করে, তবে তার প্রতি ওয়াজিব তরকের জন্য সিজ্দায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। যদি সে সিজ্দায়ে সাহু আদায় না করে, তাহলে তার নামায ছহীহ্ হবেনা।

অর্থাৎ তাকে পুনরায় উক্ত নামায আদায় করতে হবে। কেননা কোন নামাযে যদি ওয়াজিব ছুটে যায়, তাহলে সিজ্দায়ে সাহু ব্যতীত নামায শুদ্ধ হয়না।

{দলীলসমূহঃ (১) হিদায়া, (২) আইনুল হিদায়া, (৩) ফাতহুল ক্বাদীর, (৪) আলমগীরী, (৫) বাহরুর রায়িক, (৬) দুররুল মুখতার, (৭) রদ্দুল মোহতার, (৮) শামী, (৯) খোলাছা, (১০) তাতারখানিয়া,  (১১) শরহে বিকায়া, (১২) কাহেস্তানী, (১৩) ফতওয়ায়ে দেওবন্দ, (১৪) বেহেস্তি জেওর ইত্যাদি।}

হাফিয মুহম্মদ আলী আসগর

শিক্ষক- ডাসমারী হাফিযিয়া মাদ্রাসা

বিনোদপুর, রাজশাহী

সুওয়ালঃ মৃত পীর ছাহেবের কোন খলীফা বা গদীনশীন তার নিজের নামে অথবা তার মৃত পীর ছাহেবের নামে তরীক্বা দিতে পারে কিনা?

জাওয়াবঃ না, কোন মৃত বা যিন্দা পীর ছাহেবের খলীফা বা গদীনশীন তার নিজের নামে বা পীর ছাহেবের নামে তরীক্বা দিতে পারেনা। কারণ ইলমে তাছাউফের যে সমস্ত তরীক্বা রয়েছে সে সমস্ত তরীক্বাগুলো কারো নিজস্ব বানানো নয় অথবা কেউ কাউকে বানিয়েও দেয়নি। অথবা কেউ বানিয়ে কারো নামে সংযুক্তও করেনি।

এ সমস্ত তরীক্বাগুলো হলো খোদায়ী দান। অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে দানকৃত। কারণ আউলিয়া-ই-কিরামগণ হচ্ছেন হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণের ক্বায়িম-মক্বাম বা ওয়ারিছ।

এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে,

العلماء ورثة الانبياء.

অর্থাৎ- “হক্কানী-রব্বানী আলিম বা ওলীগণ হচ্ছেন নবীগণের ওয়ারিছ।” (মিশকাত)

নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ নিজ থেকে কোন কাজ করেননি বা কোন কথা বলেননি।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,

وما ينطق عن الهوى ان هو الا وحى يوحى.

অর্থঃ- “তিনি (নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওহী ব্যতীত নিজ থেকে কোন কথা বলেননি বা কোন কাজ করেননি।” (সূরা নজম্/৩, ৪)

যেহেতু আউলিয়া-ই-কিরাম নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওয়ারিছ সেহেতু তাঁরাও এ আয়াত শরীফের মিছদাক। অর্থাৎ তাঁরাও খোদায়ী ইল্হাম-ইল্কার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কারণ আউলিয়া-ই-কিরামের প্রতি ওহী নাযিল হবেনা তবে ইল্হাম-ইল্কা হবে।

আর ইল্মে তাছাউফের তরীক্বাগুলো বানিয়ে দেয়ার বা বানিয়ে নেয়ার বিষয় নয়। বরং এগুলো হচ্ছে খোদায়ী দান। মহান আল্লাহ্ পাক তাঁর কালাম পাকে বলেন, وعلمنه من لدنا علما. অর্থঃ- “আর আমি তাঁকে আমার তরফ থেকে ইল্ম দিলাম বা দান করলাম।” (সূরা কাহাফ্/৬৫)

যেমন, ‘ক্বাদিরীয়া তরীক্বা’ গাউসুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহিকে দান করা হয়েছে। যা উনার নাম মুবারকের সাথে সংযুক্ত হয়েছে।

‘চিশ্তীয়া তরীক্বা’ সুলতানুল হিন্দ, হাবীবুল্লাহ্ হযরত  মুঈনুদ্দীন চিশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে দান করা হয়েছে যা উনার নাম মুবারকের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে।         ইল্মে তাছাউফের তরীক্বাগুলো আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে পেতে হলে ইমামতের তবকায় পৌঁছতে হবে। অর্থাৎ ইমাম হতে হলে যে মাক্বাম ত্বয় বা হাছিল করা দরকার সেই মাক্বাম ত্বয় বা হাছিল করতে হবে।

যেমন, ‘নক্শবন্দীয়া তরীক্বা’ হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নক্শবন্দ বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে দান করা হয়েছে এবং যা উনার নাম মুবারকের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে।

পরবর্তীতে আল্লাহ্ পাক হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে আরো অনেক মাক্বামাত দান করেন যা তিনি আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশে নক্শবন্দীয়া তরীক্বাতে সংযুক্ত করে দেন। পরবর্তীতে তা উনার নাম মুবারকের সাথে সংযুক্ত হয়ে “নক্শবন্দীয়া-ই-মুজাদ্দিদীয়া তরীক্বা” নামে মশহুর হয়।

কাজেই কোন ব্যক্তি সে কোন পীর ছাহেবের খলীফাই হোক অথবা গদীনশীনই হোক সে নিজ থেকে তার নিজের নামে কোন তরীক্বা সংযুক্ত করতে পারবে না ইমামতের মাক্বাম ত্বয় বা হাছিল না করে। যদি করে তাহলে কঠিন গুণাহে গুণাহ্গার হবে। একইভাবে পীর ছাহেবের কোন খলীফা বা গদীনশীন তার মৃত বা যিন্দা পীর ছাহেবের নামে তরীক্বা দিতে পারবে না। দিলে কঠিন গুণাহ্ েগুণাহ্গার হবে।

কারো নামে কোন তরীক্বা সংযুক্ত করে প্রকাশ করা বা জারী করা ইল্মে তাছাউফের শর্তের অন্তর্ভুক্ত নয়। কারণ অনেক বড় বড় আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম অতীত হয়েছেন যারা পূর্বের ইমামের তরীক্বা মুতাবিক সবক আদায় করেছেন এবং তা’লীমও দিয়েছেন।

যেমন, হযরত শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ্ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শাহ নূর মুহম্মদ নিযামপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত কারামত আলী জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমূখ।

অতএব, কোন খলীফা বা গদীনশীন তার নিজের নামে এবং তার জীবিত বা মৃত পীর ছাহেবের নামে কোন তরীক্বা দিতে পারে না।

তবে যদি আল্লাহ্ পাক কাউকে কোন মাক্বাম দান করেন যার মাধ্যম দিয়ে কোন তরীক্বার প্রকাশ ঘটে সেটা আল্লাহ্ পাক-এর খাছ দান হিসেবে গণ্য হবে।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,

والله يختص برحمته من يشاء.

অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক যাকে ইচ্ছা তাকে তাঁর রহমতের দ্বারা খাছ করবেন।” (সূরা বাক্বারা/১০৫) অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক যাকে ইচ্ছা তাঁকে রহমতে খাছ দান করেন।

আরো ইরশাদ করেন,

ذلك فضل الله يؤتيه من يشاء.

অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক-এর ফযল-করম, দয়া-দান যাকে ইচ্ছা দান করেন।” (সূরা জুমুয়া/৪)

আর আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

انما انا قاسم والله يعطى.

অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক দানকারী আর আমি হলাম বন্টনকারী।” ইলমে তাছাউফের তরীক্বা বা কোন মাক্বাম যেমন নিজে দাবী করার বিষয় নয় তদ্রুপ তা অন্য কাউকে দেয়ারও বিষয় নয়। এটা সম্পূর্ণ আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তরফ থেকে প্রদত্ত্ব খাছ নিয়ামতের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক এবং আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাকে ইচ্ছা তাঁকে তা দান করেন, আর তখনই তিনি তা দাবী বা প্রকাশ করতে পারেন। এর আগে কিংবা পরে নয়।       অতএব, কোন খলীফা বা গদীনশীন তার নিজের নামে এবং তার জীবিত বা মৃত পীর ছাহেবের নামে কোন তরীক্বা দিতে পারে না।

{দলীলসমূহঃ (১) তাফসীরে মাযহারী, (২) মাবদা মাআদ, (৩) মাকতুবাত শরীফ, (৪) ফতহুল গায়ব, (৫) ইরশাদুত তালিবীন, (৬) মুকাশাফাতে আইনিয়া, (৭) রওযাতুল ক্বাইয়্যুমিয়াত, (৮) আওয়ারিফুল মায়ারিফ ইত্যাদি} (অসমাপ্ত)

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ