সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১১৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

মাওলানা মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান

মাওলানা মুহম্মদ মাছূম বিল্লাহ্

মুহম্মদ আসাদুর রহমান,

মুহম্মদ মাইজুর রহমান

ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

সুওয়ালঃ আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম এই তিনটি সংখ্যায় ৩৫৩টি অকাট্য দলীলের ভিত্তিতে প্রদত্ত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ, মুহাক্কিক-মুদাক্কিক ও হক্কানী উলামা-ই-কিরামগণের ফতওয়া মুতাবিক জানতে পারলাম যে, “প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা করানো, ঘরে রাখা সর্বাবস্থায় হারাম।”

অথচ রেযাখানী মুখপত্র নভেম্বর/২০০১ ঈসায়ী সংখ্যায় ছবি সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ফতওয়া প্রকাশ করেছে। যা কিনা মানুষের ঈমান-আমল বিনষ্ট হওয়ার কারণ। রেযাখানীদের ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যের যে বিষয়গুলো আপত্তিকর সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো-         (ক) রেযাখানীরা ছবি তোলাকে বৈধ বলেছে; কিন্তু দলীল হিসেবে পেশ করেছে ঘরে ছবি রাখা সম্পর্কিত হাদীসসমূহকে।     (খ) .. কতেক উলামা যেসব ছবির শরীর ও ছায়া নেই সেসব ছবিকে বৈধ বলেছেন। (গ) পূর্ববর্তীদের কেউ কেউ এবং হাম্বলী, শাফেয়ী, মালেকী এমনকি হানাফীদেরও কেউ কেউ নাকি (গায়রে মুজাস্সাম) শরীরবিহীন ছবিকে বৈধ বলেছেন। (ঘ) হুজুর আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুরুর দিকে ছবি তৈরী করা ও সংরক্ষণ করাকে নিষেধ করেছিলেন; কিন্তু পরবর্তীতে অনুমতি দেন। (ঙ) সামাজিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে বিশেষ প্রয়োজনে ছবি তোলা বৈধ যা যুগের চাহিদাও। (চ) ছবি হারাম হওয়ার মূলে হলো গায়রুল্লাহ্র সম্মান ও ইবাদত। (ছ) প্রত্যেক যুগের ফক্বীহ্, মুফতী, কাজী ও আলিমগণ যুগের চাহিদা অনুযায়ী ফতওয়া দিয়েছেন এবং দেয়া উচিত। (জ) প্রয়োজনীয় রেকর্ডের জন্য ফাইলবন্দি ছবিসমূহ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের নিকট জ্ঞান ও ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য জানার নিমিত্তে সরকারী-বেসরকারী যাদুঘর বা বিশেষ প্রতিষ্ঠানসমূহে পূর্বের নানা মনীষীগণের ছবি সংরক্ষণ/ধারণ করে রাখা বিশেষ প্রয়োজনে মাকরূহ্ হবেনা। এছাড়াও আরো বহু আপত্তিকর বিষয় তাদের উক্ত ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যে স্থান পেয়েছে। কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে তাদের উল্লিখিত আপত্তিকর বক্তব্যগুলোর শরয়ী ফায়সালা কামনা করি।

জাওয়াবঃ হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম)      উল্লিখিত হাদীস শরীফের পূর্ণ মিছদাক বা নমুনা হচ্ছে রেযাখানীরা। তারা ছবির ব্যাপারে এমন সব বক্তব্য প্রদান করেছে যা কিতাবে দেখা তো দূরের কথা কেউ কোনদিন শুনেওনি। মূলতঃ রেযাখানীরা নিজেদেরকৃত বদ আমলকে ধামা-চাপা দেয়ার উদ্দেশ্যেই মনগড়াভাবে ছবিকে জায়িয করার অপচেষ্টা করেছে।

(ধারাবাহিক)

প্রাণীর ছবি সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত রেযাখানীদের আপত্তিকর ও প্রতারণামূলক বক্তব্য সমূহের খণ্ডন মূলক জবাব- (খ)

রেযাখানীরা তাদের আমদানীকৃত পীরদের ও নিজেদের ছবি তোলার ন্যায় হারাম কাজটিকে হালাল করার উদ্দেশ্যে মাত্র দু’পৃষ্ঠার একটি বিভ্রান্তিকর রচনায় কত যে মিথ্যাচারিতা, প্রতারণা, জালিয়াতী ও ঠগবাজীর আশ্রয় নিয়েছে তার বহু প্রমাণ আপনারা ইতোমধ্যেই পেয়ে গেছেন।

রেযাখানীদের জালিয়াতী, প্রতারণা ও ইবারত কারচুপির আরো একটি উজ্বল দৃষ্টান্ত

তাদের ঠগবাজী, জালিয়াতী প্রতারণা আর ইবারত কারচুপির আরেকটি উজ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে নিম্নোক্ত ইবারতটি, যা তারা চতুর্থ দলীল হিসেবে বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘ফাতহুল বারী” থেকে উল্লেখ করেছে।

নিম্নে তাদের উল্লিখিত ইবারত খানা হুবহু অর্থসহ তুলে ধরা হলো-

ان مذهب الحنابلة جواز الصورة فى الثواب ولو كان معلقا على ما فى خبر ابى طلحة لكن ان لستربه الجدار منع عندهم فقال النووى وذهب بعض السلف الى ان المنوع ما كان له ظل له وما ما لاظل له فلا بأس باتحاذه مطلقا.

অর্থাৎ- হাম্বলী মাযহাব মতে সাধারণভাবে কাপড়ের উপর অঙ্কিত ছবি বৈধ। যা আবু তালহার হাদীস দ্বারা বুঝা যায়। অবশ্যই যদি ঐ ছবি দিয়ে দেয়ালে পর্দা দেয়া হয় তবে তা তাঁরা নিষেধ করেন। আল্লামা নববী বলেন- পূর্ববর্তী কতেকের মাযহাব এ ছিল যে, যে সব ছবির ছায়া নেই তা বানানো সাধারণভাবে বৈধ। আর যেসব ছবির ছায়া আছে তা নিষিদ্ধ।”          রেযাখানীদের উল্লিখিত দলীলের খন্ডনমূলক জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, তারা এতটাই গোমরাহ ও জাহিল যে, হানাফী মাযহাবের দাবিদার হয়েও হানাফীদের মতকে উপেক্ষা করে নিজের বাতিল মতকে ছাবিত করার লক্ষ্যে হাম্বলী মাযহাবের মতকে দলীল হিসেবে পেশ করেছে। কাজেই “ফাতহুল বারীর” উক্ত ইবারত হানাফীদের নিকট দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।

দ্বিতীয়তঃ “ফাতহুল বারীর” উল্লিখিত ইবারত মূলতঃ প্রাণীর ছবি তোলা বা আঁকা সম্পর্কিত নয়, বরং উল্লিখিত ইবারতে “ঘরে ছবি রাখার” বিষয়টিই উল্লেখ রয়েছে। কাজেই রেযাখানীরা “ছবি তোলা বা আঁকার” ক্ষেত্রে “ঘরে ছবি রাখা” সংক্রান্ত ইবারত দলীল হিসেবে উল্লেখ করে চরম জালিয়াতী ও প্রতারণার পরিচয় দিয়েছে।           তাছাড়া “ঘরে ছবি রাখা” সংক্রান্ত বিষয়ে উক্ত ইবারতে যা উল্লেখ করা হয়েছে তাও শুদ্ধ ও গ্রহণ যোগ্য নয়। বরং “ঘরে ছবি রাখা” সংক্রান্ত বিষয়ের সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফায়সালা সম্পর্কে উক্ত ফাতহুল বারীর ১০ম জিঃ ৩৯১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وقال ابن العربى – حاصل مافى التخاذ الصور انها ان كانت ذات اجسام حرم بالاجماع وان كانت رقما فاربعة اقوال- الاول يجوز مطلقا على ظاهر قوله فى حديت الباب الا رقما فى ثوب الثانى المنع مطلقا حتى الرقم الثالث ان كانت الصورة باقية الهيئة قائمة الشكل حرم وان قطعت الرأس او تفرقت الاجزاء جاز قال وهذا هو الاصح الرابع ان كان يما يمتهن جاز وان كان معلقا لم يجز.

অর্থঃ- “ইবনুল আরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “ঘরে ছবি রাখা” সংক্রান্ত বিষয়ে মূল কথা হলো, যদি তা শরীর বিশিষ্ট অর্থাৎ মূর্তি হয় তবে তা ঘরে রাখা সকলের মতেই হারাম। আর যদি (কাগজ বা কাপড়ের উপর) অঙ্কিত ছবি হয়, তবে এ ব্যাপারে চারটি মত রয়েছে- প্রথমতঃ হাদীস শরীফে বর্ণিত الا رقما فى ثوب. এর ভিত্তিতে সাধারণভাবে তা জায়িয। দ্বিতীয়তঃ সাধারণভাবে না জায়িয এমনকি নকশা। তৃতীয়তঃ যদি প্রাণীর ছবির ছূরত বা আকার- আকৃতি অবশিষ্ট থাকে তবে তা ঘরে রাখা হারাম। আর যদি মাথা কাটা বা অঙ্গ সমূহ ছিন্ন ভিন্ন হয়। অর্থাৎ ছবি বুঝা না যায় তবে জায়িয। তিনি বলেন, এ মতটিই অধিক ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য। চতুর্থতঃ যদি তা অসম্মানের সাথে রাখা হয় তবে জায়িয, আর যদি ঝুলিয়ে রাখে তবে নাজায়িয।” (অনুরূপ ইরশাদুস্ সারী-এর ৮ম জিঃ ৪৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে)

এ প্রসঙ্গে মুসলিম শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ “শরহে নববী”-এর ৭ম জিঃ ৮১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

واما اتخاذ المصور فيه صورة حيوان فان كان معلقا على حائط او ثوبا ملبوسا او عمامة ونحو ذالك مما لايعدم متهنا فهو حرام.

অর্থঃ- “আর ঘরে প্রাণীর ছবি রাখার বিধান হলো, যদি তা দেয়ালে ঝুলন্ত থাকে অথবা পরিধেয় বস্ত্রে থাকে অথবা পাগড়ী ও অনুরূপ সম্মানিত কোন কিছুতে প্রাণীর ছবি থাকে তবে তা হারাম।”

অনুরূপ শরহুল উবাই-এর ৭ম জিঃ ২৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।

উল্লিখিত নির্ভরযোগ্য কিতাব সমূহের ইবারতে বর্ণিত বক্তব্য দ্বারা মূলতঃ এটাই প্রমাণিত হলো যে, প্রাণীর ছবি প্রকাশ্যে ঘরে রাখা নাজায়িয, এখন তা দেয়ালেই হোক অথবা কাপড় বা অন্য কোথাও হোক।

কাজেই রেযা খানীরা প্রাণীর ছবিকে প্রতারণামূলকভাবে জায়িয করার লক্ষ্যে ফতহুল বারী থেকে যে ইবারত খানা উল্লেখ করেছে তা দ্বারা যেরূপ প্রাণীর ছবি তোলা বা আঁকা জায়িয প্রমাণিত হয় না তদ্রুপ তা প্রাণীর ছবি ঘরে রাখার ক্ষেত্রেও দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। (চলবে)

সাইয়্যিদ মুহম্মদ মোক্তাদুল ইসলাম (মিলন)

রঈসুল মজলিশ- ছাত্র আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত সুবহানীঘাট, সিলেট।

সুওয়ালঃ রেযাখানী মুখপত্র ডিসেম্বর/২০০০ ঈসায়ী সংখ্যায় “তাফসীরে রুহুল বয়ান, বুখারী, গুনিয়াতুত তালেবীন, রেজভীয়া” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “সহীহ্ মুসলিম শরীফসহ” অনেক নির্ভরযোগ্য কিতাবে নফল নামায বিশেষতঃ ক্বদর ও বরাতের নফল নামায জামাত সহকারে আদায় করা বৈধ….।”           আর আপনারা “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” লিখেছেন, “তারাবীহ, ছলাতুল কুছুফ (সূর্য গ্রহণের নামায), ছলাতুল ইস্তিস্কা (বৃষ্টির নামায) এই তিন প্রকার নামায ব্যতীত যেমন লাইলাতুল ক্বদর, লাইলাতুল বরাত, তাহাজ্জুদ, চাশ্ত, আওয়াবীন ইত্যাদি নফল নামাযসমূহ ইমামের সাথে চারজন মুক্তাদীসহ জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্।”

কোনটি সঠিক? আর “বুখারী, মুসলিম শরীফে” কি “ক্বদর” ও বরাতের” নফল নামায জামায়াতের সাথে আদায় করার কথা উল্লেখ আছে? দয়া করে জানাবেন।

 জাওয়াবঃ রেযাখানীরা তাদের মুখপত্রে “তাফসীরে রুহুল বয়ান, বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, গুনিয়াতুত্ তালেবীন এবং রেজভীয়া” কিতাবের বরাত দিয়ে নফল নামায বিশেষতঃ “শবে বরাত”, “শবে ক্বদরের” নফল নামায আযান-ইক্বামত ছাড়া জামায়াত সহকারে আদায় করা যে বৈধ বলেছে, তা আমরা আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এর বিগত সংখ্যাগুলোতে বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে প্রমাণ করেছি যে, “তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, জিহালতপূর্ণ, জালিয়াতী ও প্রতারণামূলক।”

কেননা, রেযাখানীরা কিতাবের নাম দিয়ে যে বক্তব্য প্রদান করেছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। বরং তার সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ, তারা কিতাবের ইবারত, সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে মনগড়া বক্তব্য প্রদান করেছে এবং ক্ষেত্র বিশেষ নিজের ভ্রান্ত মতকে টিকিয়ে রাখতে কিতাবের ইবারত কারচুপি করেছে।

(ধারাবাহিক)

বর্তমান সংখ্যায় রেযাখানীদের দলীলবিহীন

ও মনগড়া বক্তব্য খন্ডন করা হলো

উল্লেখ্য, রেযাখানীরা বলেছে, “….শব-এ বরাত ও শব-এ ক্বদর ইত্যাদির মতো বরকতময় রাতের অশেষ ফযীলত ও সম্মানের প্রতি লক্ষ্য রেখে আযান ও ইক্বামত ছাড়া উক্ত রাত সমূহে নফল নামায … যারা জামাত সহকারে পড়তে চায় তাদেরকে নিষেধ করা, মন্দ বলা, হারামের অপবাদ দেয়া ছোট মুখে বড় কথা বলার নামান্তর। ….” এর জবাবে বলতে হয় যে, রেযাখানীদের বক্তব্য মুতাবিক তাদের গুরু রেযা খাঁ-ই ছোট মুখে বড় কথা বলেছে।

কারণ, তাদের গুরু স্বয়ং রেযা খাঁ-ই তার “রেজভীয়া” কিতাবে শবে বরাত, শবে ক্বদর, রাগায়িব ইত্যাদি নফল নামায যারা জামায়াতের সাথে পড়তে চায় তাদেরকে নিষেধ করে, মন্দ বলে অর্থাৎ তাদের বিরুদ্ধে মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্-এর ফতওয়া দিয়েছে।

যেমন, “রেজভীয়া” কিতাবের ৩য় খন্ডের ৪৫৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

نماز شب برات اگر چہ مشائخ کرام قدست اسرارھم  نے بجما عت بھی پڑھی …. مگر ھمارے ائمہ رضی اللہ تعالی عنھم کا مذھب وھی ھے کہ جماعت بتداعی ھو تز مکروہ ھے.

অর্থাৎ- “শবে বরাতের নামায যদিও কোন কোন মাশায়িখগণ জামায়াতে পড়েছেন …. তবে আমাদের আইম্মা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মাযহাব ওটাই যে জামায়াত تداعى এর সাথে হলে অর্থাৎ জামায়াতে চারজন মুক্তাদী হলে মাকরূহ তাহ্রীমী হবে। “রেজভীয়া” কিতাবের ৩য় খন্ডের ৪৬৫ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

ذلک کلہ بدعۃ …. ولم ینقل عن النبی صلی اللہ علیہ وسلم ولا عن اصحابہ … دوسرا قول یہ کہ مساجد میں اس کی جماعت مکروہ ھے.

অর্থাৎ- “ওগুলো প্রত্যেকটি বিদ্য়াত অর্থাৎ ছলার্তু রাগায়িব, শবে বরাত, শবে ক্বদরের নফল নামায জামায়াতে আদায় করা ইত্যাদি প্রত্যেকটি কাজই বিদ্য়াত।” ….. কেননা, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম থেকে ওগুলোর কোন বর্ণনা নেই। বিধায় ওগুলো প্রত্যেকটিই বিদ্য়াত। … দ্বিতীয় মতে, মসজিদে এর জামায়াত করা মাকরূহ তাহ্রীমী।”

“রেজভীয়া” কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে, “তারাবীহ্, ছলাতুল কুছুফ (সূর্যগ্রহণের নামায), ছলাতুল ইস্তিস্কা (বৃষ্টির নামায) এই তিন প্রকার নামায ব্যতীত অন্যান্য নফল নামাযসমূহ জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহ্রীমী।”

যেমন, “রেজভীয়া”-এর ৩য় খন্ডে আরো উল্লেখ আছে,

ھمارے ائمہ کر ام رضی اللہ تعالی عنھم کے نزدیک  نوافل کی جماعت بتداعی مکروہ ھے اسی حکم میں نماز خسوف بھی داخل کہ وہ بھی تنھا پڑھی جائے اگرچہ امام جمعہ ضر مو کما فی الشامی عن اسمعیل عن البرجندی ………

صرف تراویح وصلاۃ الکسوف وصلاۃ الاستسقاء مستثنی ھیں …. تداعی مذھب اسح میں اس  وقت متحقق ھوگی جب چار یا زیادہ مقتدی ھوں.

অর্থঃ- “আমাদের আইম্মা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের নিকট নফল নামাযসমূহ تداعى -এর সাথে জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহ্রীমী। এই হুকুমের মধ্যে ছলাতুল খুছুফও (চন্দ্রগ্রহণের নামায) অন্তর্ভুক্ত। এ নামাযও একাকী পড়তে হবে। যদিও জুমুয়ার ইমাম উপস্থিত থাকে।”      যেমন, শামী কিতাবে, ইসমাঈল এবং বরজুন্দী থেকে বর্ণিত আছে, ….. আর তারাবীহ্, ছলাতুল কুছুফ (সূর্য গ্রহণের নামায), ছলাতুল ইস্তিস্কা (বৃষ্টির নামায), এ হুকুমের অন্তর্ভুক্ত নয়। অর্থাৎ এ তিন প্রকার নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ নয়। …… অধিক ছহীহ মতে  চারজন অথবা চারের অধিক মুক্তাদী হওয়াই (تداعى)  তাদায়ী অর্থাৎ মাকরূহ তাহ্রীমী।

“রেজভীয়া” কিতাবের উক্ত খন্ডের ৪৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

تراویح وکسوف واستسقاء کے سوا جماعت نوافل میں….. اور چار مقتدی ھو تو بالاتفاق مکروہ.

অর্থাৎ- “তারাবীহ, কুছুফ, (সূর্যগ্রহণের নামায) ইস্তিস্কার (বৃষ্টির) নামায ব্যতীত অন্যান্য নফল নামায সমূহ … ইমামের সাথে চারজন মুক্তাদীসহ জামায়াতে আদায় করা সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের সর্বসম্মত মতে মাকরূহ তাহ্রীমী।”

শুধু তাই নয়, রেযা খাঁ তার ‘রেজভীয়া’ কিতাবে সুন্নত নামাযও জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী বলে ফতওয়া  দিয়েছে। যেমন, ‘রেজভীয়া’ কিতাবের ৩য় খন্ডের ৪৬৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

استسقاء کے سوا ہر نماز نفل وتراویح وکسوف کے سوا ہر نماز سنت میں ایسی جماعت جس میں  چار یا زیادہ شخص مقتدی بنیں مکروہ ہے.

অর্থঃ- “ইস্তিস্কার নামায ব্যতীত যে কোন নফল নামাযে এবং তারাবীহ্ ও কুছুফ নামায ব্যতীত যে কোন সুন্নত নামাযে যদি এরূপ জামায়াত হয় যাতে চারজন অথবা চারের অধিক মুক্তাদি উপস্থিত হয় তাহলে মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে।”

সুতরাং যেখানে সুন্নত নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সেখানে নফল নামায জামায়াতে পড়া কি করে বৈধ হতে পারে?       “রেজভীয়া” কিতাবের ১০ম খন্ডে উল্লেখ আছে,

نفل پڑ ھیں تو الگ الگ ورنہ نفل جماعت کثیرہ کے ساتھ مکروہ ھے چار مقتدی ھوں تو بالاتفاق.

অর্থঃ- “নফল নামায পড়তে হলে পৃথক পৃথক পড়বে, কেননা নফল নামায বড় জামায়াতের সাথে পড়া অর্থাৎ যদি জামায়াতে চারজন মুক্তাদী হয় তাহলে সকল ইমাম, মুজতাহিদ ও ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ঐক্যমতে জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহ্রীমী।”

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, রেযা খাঁ তার ‘রেজভীয়া’ কিতাবে, শবে বরাত, শবে ক্বদর, লাইলার্তু রাগায়িব ইত্যাদি নফল নামায যারা জামায়াতে পড়তে চায় তাদেরকে নিষেধ করে, মন্দ বলে অর্থাৎ তাদের বিরুদ্ধে মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্-এর ফতওয়া দিয়েছে।

আর ফতওয়া দিয়ে তাদের গুরু রেযা খাঁই ছোট মুখে বড় কথা বলেছে। (চলবে)

(উল্লেখ্য, রেযাখানীদের উপরোক্ত ভুলের সংশোধনীমূলক জাওয়াব মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৮৬ তম সংখ্যাতে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৮৯ তম সংখ্যা হতে ধারাবাহিক ভাবে দেয়া হচ্ছে।)

মুহম্মদ জহিরুদ্দীন নীপু

সাধারণ সম্পাদক- যুব আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত বাড্ডা, ঢাকা।

সুওয়ালঃ মাসিক মদীনা নভেম্বর/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত ২৭নং প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-

প্রশ্নঃ জানাযার নামায পানি থাকা সত্ত্বেও বিনা অযুতে বা তয়ম্মুম করে পড়া যাবে কিনা?          উত্তরঃ পানি থাকা অবস্থায় জানাযার নামায বিনা অযুতে বা তয়ম্মুম করে পড়া জায়েজ হবে না।

এখন আমার সুওয়াল হলো- পানি থাকা অবস্থায় তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয হবে না? দয়া করে দলীলসহ সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ পানি থাকা অবস্থায় তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত মনগড়া বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে। কারণ, সর্বজনমান্য, বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে সুস্পষ্টভাবে এটাই উল্লেখ আছে যে, “পানি থাকা সত্ত্বেও তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয রয়েছে।”       নিম্নে সর্বজনমান্য বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাব থেকে দলীল পেশ করা হলো-

যেমন, “রুদ্দুল মুহ্তার” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৪১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وجاز لخوف فوت صلاة جنازة أى ولى كان الماء قريبا.

অর্থঃ- “পানি নিকটে থাকা সত্ত্বেও ওযূ করতে গেলে যদি জানাযার নামায ফউত হওয়ার আশংকা হয় তাহলে তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয।”

 “বাহর্রু রায়িক্ব” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, يجوز التيمم لخوف فوت صلاة الجنازة.

অর্থঃ- “জানাযার নামায ফউত হওয়ার আশংকা হলে তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয আছে।”

 “ফতহুল ক্বাদীর” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১২২ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

ان كل مايفوت لا الى بدل جاز أداؤه بالتيمم مع وجود الماء وصلاة الجنازة عندنا كذلك لانها لاتعاد عندنا وكذلك صلاة العيد تفوت لا الى بدل.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই ঐ সকল ইবাদত যা ফউত হয়ে গেলে পরে ক্বাযা করতে হয়না। (অর্থাৎ যে সকল ইবাদত ফউত হয়ে গেলে যার বিকল্প নেই) সে সকল ইবাদত পানি থাকা সত্ত্বেও তায়াম্মুম করে আদায় করা জায়িয আছে। আর অনুরূপভাবে আমাদের হানাফী মাযহাবে জানাযার নামায পানি থাকা সত্ত্বেও তায়াম্মুম করে আদায় করা জায়িয আছে। কেননা, আমাদের হানাফী মাযহাবে কোন ব্যক্তির জানাযার নামায ফউত হয়ে গেলে পুনরায় আদায় করতে হয়না। অনুরূপভাবে আমাদের হানাফী মাযহাবে ঈদের নামায পানি থাকা সত্বেও তায়াম্মুম করে আদায় করা জায়িয আছে, যদি ফউত হওয়ার আশংকা করে। কেননা, কোন ব্যক্তির ঈদের নামায ফউত হয়ে গেলে পুনরায় পড়তে হয়না।”

“ক্বিতাবুল ফিক্বহে আ’লাল মাযাহিবিল আরবায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وأما الجنازة والعيد، فانه يتيمم لهما ان خاف فواتهما مع وجود الماء.

অর্থঃ- “পানি থাকা সত্ত্বেও যদি ঈদ ও জানাযার নামায ফউত হয়ে যাওয়ার (না পাওয়ার) আশংকা করে তাহলে ঈদ ও জানাযার নামাযের জন্য তায়াম্মুম করবে। অর্থাৎ পানি থাকা সত্ত্বেও তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয।”

“উমদাতুল ক্বারী” কিতাবের ৮ম খণ্ডের ১২৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

قال ابو حنيفة يجوز التيمم للجنازة مع وجود الماء اذا خاف فوتها بالوضوء.

অর্থঃ- “ইমামে আ’যম, হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, পানি থাকা সত্ত্বেও তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয। যদি ওযূর কারণে (অর্থাৎ যদি ওযূ করতে গেলে জানাযার) নামায ফউত হওয়ার আশংকা থাকে।”

“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ويجوز التيمم للولى اذا كان من هو مقدم عليه حاضرا اتفاقا لانه يخاف الفوت وكذا يجوز له التيمم اذا أذن لغيره بالصلاة.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ওলীর চাইতে হক্বদার সে ব্যক্তি যখন উপস্থিত থাকবে তখন সকলের ঐক্যমতে ওলীর জন্যও তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয রয়েছে। কেননা, ওলীর পক্ষেও জানাযার নামায ফউত হয়ে যাওয়ার বা না পাওয়ার আশংকা রয়েছে।

 অনুরূপভাবে ওলীর জন্যও তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয আছে যদি ওলী অন্য কোন ব্যক্তিকে জানাযার নামায পড়ার জন্য অনুমতি দেয়। (অনুরূপ বাহর্রু রায়িক্ব ১ম খণ্ড ১৫৭ পৃষ্ঠা, জাওহারাতুন্ নাইয়্যিরাহ্ ১ম খণ্ড ৩১ পৃষ্ঠা, হাশিয়াতুত্ তাহ্তাবী আলা মারাকিউল ফালাহ্ ৭৬)

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, পানি থাকা অবস্থায়ও তায়াম্মুম করে শুধু জানাযার নামায পড়াই জায়িয নয় বরং ঈদের নামাযও পড়া জায়িয রয়েছে। যদি পানি থাকা অবস্থায় ওযূ করতে গেলে জানাযা ও ঈদের নামায ফউত হওয়ার আশংকা থাকে।

সুতরাং মাসিক মদীনা যে বলেছে, “পানি থাকা অবস্থায় জানাযার নামায …… তয়ম্মুম করে পড়া জায়েজ হবে না।” তার এ বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন বলেই প্রমাণিত হলো।

{দলীলসমূহঃ (১) নাসাঈ, (২) বাইহাক্বী, (৩) ত্বহাবী, (৪) দারে কুতনী, (৫) ইবনে আবি শাইবা, (৬) উমদাতুল ক্বারী, (৭) আওজাযুল মাসালিক, (৮) শরহে ত্বহাবী, (৯) ফতওয়ায়ে নাওয়াযিল, (১০) আল মুখতাছারুল কুদুরী, (১১)  হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া, (১২) নিহায়া, (১৩) ইনায়া, (১৪) বিনায়া, (১৫) কুনিয়া, (১৬) মাবসূত, (১৭) মুজমিরাত, (১৮) জহিরীয়া, (১৯) খানিয়া, (২০) শরহে বিক্বায়া, (২১) মুসতাছফা, (২২) খুলাছাতুল ফতওয়া, (২৩) ফতওয়ায়ে কাযীখান, (২৪) ফতহুল ক্বাদীর, (২৫) সারাখ্সী, (২৬) ওয়ালওয়ালিজিয়া, (২৭) মাজমাউল আনহুর, (২৮) শরহে মুনিয়া, (২৯) কিফায়া, (৩০) শরহে ইনায়া, (৩১) বিদায়া, (৩২) বাহরুর রায়িক্ব, (৩৩) মিনহাতুল খালিক্ব, (৩৪) জাওহারাতুন্ নাইয়্যারাহ্, (৩৫) আলমগীরী, (৩৬) দুররুল মুখতার, (৩৭) রদ্দুল মুহতার, (৩৮) শামী, (৩৯) হাশিয়াতুত্ তাহতাবী আলা মারাকিউল ফালাহ্, (৪০) কানযুদ্ দাক্বায়িক্ব, (৪১) কাশফুল হাক্বায়িক্ব, (৪২) আন নিছাব, (৪৩) ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া, (৪৪) হিন্দিয়া, (৪৫) শরহে নিক্বায়া, (৪৬) আত্ তানকীহুদ দুরূরী, (৪৭) আল লুবাব লিল মায়দানী, (৪৮) মি’রাজুদ্ দিরায়া, (৪৯) নূরুল হিদায়া, (৫০) আইনুল হিদায়া, (৫১) তুহফাতুল ফুক্বাহা, (৫২) কিতাবুল ফিক্বহে আলাল মাযাহিবিল আরবায়া, (৫৩) শরহে ইলিয়াস, (৫৪) নূরুল ইজাহ্, (৫৫) নূরুদ্ দিরায়া, (৫৬) উমদার্তু রিয়াআ, (৫৭) গায়াতুল আওতার, (৫৮) আল ফিক্বহুল হানাফী ফী ছাওবিহীল জাদিদ, (৫৯) আশরাফুল হিদায়া, (৬০) ইলমুল ফিক্বাহ্ ইত্যাদি।}

মুছাম্মত সানজিদা খাতুন

মুহম্মদপুর, ঢাকা।

সুওয়ালঃ মাসিক রাহমানী পয়গাম ডিসেম্বর/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১১৫১ নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়।

জিজ্ঞাসাঃ বর্তমান মুসলিম বিশ্বের বহু রাষ্ট্রে মুসলমানগণ ইয়াহুদী, নাসারা, কাফির মুশরিকদের হাতে মার খাচ্ছে। তাদের আগ্রাসনে বিপদগ্রস্থ। এমতাবস্থায় কুনূতে নাযেলা পড়ার হুকুম কি? কিভাবে পড়তে হবে? একটু বিস্তারিতভাবে লিখে ছাপালে খুশি হবো?

জবাবঃ চতুর্থ হিজরীতে প্রতারণা করে ৭০ জন হাফেযে কুরআন সাহাবীকে যখন রি’ল ও যাকওয়ান নামক দুটি অমুসলিম গোত্র মিলে হত্যা করে, তখন নবী কারীম (সাঃ) ইসলাম ও মুসলমানদের এহেন বিপর্যয়ে দীর্ঘ এক মাস কুনূতে নাযেলা পড়েছেন।

তাই যখনই ইসলাম ও মুসলমানদের উপর কোন বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসে যথা, মহামারী, প্লেগ বা অমুসলিমদের আক্রমণ ইত্যাদি। তখন উক্ত বিপর্যয় দুরীভূত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কুনুতে নাযেলা পড়তে পারলে ভাল।

বর্তমান বিশ্বে মুসলিম জাতি, ইয়াহুদী খৃষ্টান তথা কাফির মুশরিকদের হাতে যেভাবে আক্রান্ত ও বিপদগ্রস্থ হচ্ছে এহেন পরিস্থিতিতে কুনুতে নাযেলা পড়ার অনুমতি শরীয়তে রয়েছে।

কুনুতে নাযেলা পড়ার নিয়ম হলো, ফজর নামাযের দ্বিতীয় রাকাআতে রুকুর পরে দাঁড়িয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য দু’আ, কাফির মুশরিকদের ধ্বংসের জন্যে বদ দু’আ এবং বর্তমান পরিস্থিতির নিরসনের দু’আ সম্বলিত একটি বিশদ ইমাম উচ্চস্বরে পড়বে এবং মুক্তাদীগণ আস্তে-আস্তে আমীন বলবে। এবং দু’আ শেষে স্বাভাবিক নিয়মে নামায শেষ করে সালাম ফিরাবে। এখন আমার সুওয়াল হলো- কুনূতে নাযেলা পড়া সম্পর্কে মাসিক রাহমানী পয়গামের উক্ত জিজ্ঞাসার জবাব সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি বর্তমান পরিস্থিতিতে কুনূতে নাযেলা পড়ার অনুমতি শরীয়তে রয়েছে? দয়া করে দলীল-আদিল্লাহ্সহ সঠিক জাওয়াব জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ কুনূতে নাযেলা পড়া সম্পর্কে মাসিক রাহমানী পয়গামের উক্ত জিজ্ঞাসার-জবাব সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে। কারণ, বর্তমানে কুনূতে নাযেলা পড়ার অনুমতি ইসলামী শরীয়তে নেই।

উল্লেখ্য, বর্তমানে যে কুনূতে নাযেলা পড়ার অনুমতি ইসলামী শরীয়তে নেই; এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আগে ইসলামী শরীয়ত সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান থাকতে হবে। সেহেতু নিম্নে ইসলামী শরীয়ত সম্পর্কে কিঞ্চিৎ আলোচনা করা হলো-

স্মর্তব্য যে, আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের দলীল হলো- কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস। এ চারটিকে শরীয়তের উছূলও বলা হয়। ইসলাম অনুযায়ী চলতে হলে মুসলমান হিসেবে শরীয়তের চারটি উছূলকেই স্বীকার করার পাশাপাশি সে মুতাবিক আমলও করতে হবে।

উক্ত চারটি উছূলের একটি উছূলও যদি কেউ অস্বীকার করে বা না মানে তাহলে তার পক্ষে শরীয়তের উপর চলা সম্ভব হবেনা। এ কারণে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ইমামগণ ফতওয়া দিয়েছেন, শরীয়তের কোন উছূল অস্বীকার  করা কুফরী ও গোমরাহী।

যেমন, কেউ যদি শুধুমাত্র কুরআন শরীফ মানে কিন্তু হাদীস শরীফ না মানে তাহলে সে কুফরী করলো। শরীয়তের মাসয়ালায় তাকে কাফির বলা হয়েছে।  আবার কেউ কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ মানে কিন্তু ইজ্মা মানে না সেও কুফরী করলো আর যে ক্বিয়াস মানেনা তাকে শরীয়তের মাসয়ালায় গোমরাহ্ বা পথভ্রষ্ট বলা হয়েছে।

মোটকথা, শরীয়তের উছূলগুলো একটি অপরটির ব্যাখ্যা। সবগুলো মিলেই পূর্ণাঙ্গ শরীয়ত। কুরআন শরীফের ব্যাখ্যা হাদীস শরীফ আর কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ উভয়টির ব্যাখ্যা ইজমা ও ক্বিয়াস।

 অতএব, ফতওয়া দেয়া ও গ্রহণ করার ক্ষেত্রে শরীয়তের চারটি উছূলই দেখতে হবে। কেবল একটি আয়াত শরীফ কিংবা একটি হাদীস শরীফ দেখেই ফতওয়া দেয়া ও আমল করা শরীয়তসম্মত নয়।  কারণ, নামায, রোযা, শরাব, সুদ ইত্যাদি আদেশ-নিষেধ সংক্রান্ত প্রায় প্রতিটি আমল বা বিষয় একবারেই পূর্ণতায় পৌঁছেনি বা তার হুকুমটি চূড়ান্তভাবে সাব্যস্ত হয়নি বরং ওহী নাযিলের পূর্ণ তেইশ বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে পূর্ণতায় পৌঁছেছে বা চূড়ান্তভাবে সাব্যস্ত হয়েছে।

যেমন, ইসলামের শুরুর দিকে নামাযের মধ্যে কথা বলা জায়িয ছিলো কিন্তু পরবর্তীতে তা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। রোযা রাখার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও রোযা না রেখে তার ফিদিয়া দিলেই চলতো। কিন্তু পরবর্তীতে এ হুকুম রহিত হয়ে যায়। এমনভিাবে শরাব পান ও সুদ দেয়া ও নেয়ার ফায়সালা জারি করা হয়। এছাড়া আরো অনেক আমল বা বিষয়ের শুরু ও শেষের হুকুম ছিলো সম্পূর্ণরূপে বিপরীত।

এখন কেউ যদি প্রথম যুগে নাযিলকৃত আয়াত শরীফ উল্লেখ করে নামাযে কথা বলা জায়িয, রোযা রাখতে সক্ষম এমন ব্যক্তির রোযা রাখার পরিবর্তে ফিদিয়া দেয়ার কথা বলে, শরাব পান করা হালাল ও সুদ দেয়া ও নেয়া জায়িয ফতওয়া দেয় তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। কারণ উক্ত হুকুম পরবর্তীতে নাযিলকৃত আয়াত শরীফ এবং বর্ণিত হাদীস শরীফের হুকুম দ্বারা মনসূখ বা রহিত হয়েগেছে।

অনুরূপ “কুনূতে নাযেলা”-এর বিষয়টিও হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে, আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন এক কাফির সম্প্রদায়ের প্রতি বদ্ দোয়ার জন্য এক মাস ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন।

অতঃপর তা তিনি পরিত্যাগ করেছিলেন। তার পূর্বে কিংবা পরে তিনি তা কখনো পড়েননি।

যেমন, হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

روى ابن مسعود رضى الله تعالى عنه انه عليه السلام قنت فى صلوة الفجر شهرا ثم تركه.

অর্থঃ- “ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক মাস ফজরের নামাযে কুনূত পাঠ করেছেন। অতঃপর তিনি তা পরিত্যাগ করেছেন।” (হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া ১ম খণ্ড, ১৪৫ পৃষ্ঠা)

আরো ইরশাদ হয়েছে,

انه قنت شهرا يدهو على قبائل من الكفار ثم ترك اخرجه مسلم وغيره.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফিরদের একটি গোত্রের প্রতি বদ্দোয়ার জন্য একমাস ফজরের নামাযে কুনূত পাঠ করেন। অতঃপর তিনি তা পরিত্যাগ করেন। এটা মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন এবং অন্যান্য হাদীস শরীফেও বর্ণিত আছে। (শরহে বিকায়া ১ম খণ্ড ১৭০ পৃষ্ঠার ১০নং হাশিয়া)

আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن عبد الله رضى الله تعالى عنه قال لم يقنت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الصبح الا شهرا ثم تركه لم يقنت قبله ولا بعده.

অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাস ব্যতীত আর কখনো ফজরের নামাযে কুনূত পাঠ করেননি। অতঃপর তিনি তা পরিত্যাগ করেছিলেন। নির্দিষ্ট এক মাসের পূর্বেও তিনি কখনো কুনূত পড়েননি এবং ঐ নির্দিষ্ট একমাসের পরেও তিনি আর  কখনো কুনূত পড়েননি।” (শরহুন্ নিকায়া ১ম খণ্ড ২২৮ পৃষ্ঠা, ইবনে আবী শাইবা, বায্যার, তবারানী, ত্বহাবী)

 উপরোক্ত হাদীস শরীফের দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন এক কাফির সম্প্রদায়ের প্রতি বদ্দোয়ার জন্যে এক মাস ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। অতঃপর তা তিনি পরিত্যাগ করেছিলেন। তার পূর্বে কিংবা পরে তিনি তা কখনো পড়েননি।

তবে একটি বর্ণনায় এসেছে, তিনি সারাজীবন ফজরের নামাযে কুনূত পাঠ করতেন এবং খাজিমীর এক ক্বওল মতে চার খলীফা ফজরের নামাযে কুনূত পাঠ করার কথা উল্লেখ আছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি ফজরের নামাযে কুনূত পাঠের পক্ষে বলেছেন।

কিন্ত আমাদের হানাফী মাযহাবের ফতওয়া হলো, একমাত্র বিত্র নামায ব্যতীত অন্য কোন নামাযে কুনূত পড়া জায়িয নেই। জমহুর উলামা-ই-কিরামও এ মতেরই প্রবক্তা।

যেমন, “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১১১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ولايقنت فى غير الوتر كذا فى المتون.

অর্থঃ- “বিতর নামায ব্যতীত অন্য কোন নামাযে কুনূত পড়বে না। অনুরূপ মতুন কিতাবে উল্লেখ আছে।” (শরহে বিকায়া ১ম খন্ড ১৭০ পৃষ্ঠার বাইনাস সুতুরে, শরহুন নিকায়া ১ম খন্ড ২২৭ পৃষ্ঠা, শরহে ইলইয়াছ, নুরুল ইজাহ ৯৪ পৃষ্ঠা)

“আল মুখতাছারুল কুদূরী” ২৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ولايقنت فى صلوة غيرها.

অর্থঃ- “বিতর নামায ব্যতীত অন্য কোন নামাযে কুনূত পড়বে না।” (জাওহারাতুন নাইয়ারাহ ১ম খন্ড ৭৪ পৃষ্ঠা, হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া ১ম খন্ড ১৪৫ পৃষ্ঠা, ফতহুল কাদীর ১ম খন্ড ৩৭৮ পৃষ্ঠার হাশিয়া, শরহে ইনায়া)           “আশরাফুল হিদায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৯৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

علماء احناف کے نزدیک سوائے وتر کے  کسی نماز میں قنوت نھیں ہے.

অর্থঃ- “হানাফী উলামাগণের নিকট বিতর ব্যতীত আর কোন নামাযে কুনূত নেই।

“নুরুল হিদায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১১৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

سوا وتر کے اور کسی نماز میںں دعائے قنوت پڑھنا درست نھیں.

অর্থঃ- “বিতর নামায ব্যতীত অন্য কোন নামাযে কুনূত পড়া শুদ্ধ নয়।

শাফিয়ীগণের দলীলের জাওয়াবে হানাফীগণ নিম্নোক্ত দলীল পেশ করেন-

হযরত কায়িছ বিন রবী হযরত আছেম বিন সুলাইমান হতে রিওয়ায়েত করেছেন, তিনি বলেন, আমি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, কিছু সংখ্যক লোক এরূপ ধারণা পোষণ করে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদা ফজরের নামাযে কুনূত পাঠ করতেন, হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক মাস ব্যতীত কখনো ফজরে কুনূত পাঠ করেননি। সেই সময় তিনি কোন এক কাফির সম্প্রদায়ের প্রতি বদ্দোয়া করতেন।

অপর এক রিওয়ায়েতে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দীর্ঘ সময় দাঁড়ানো অর্থে কুনূত বলেছেন।

যেমন, হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

افضل الصلوة طول القنوت.

অর্থাৎ- “দীর্ঘ ক্বিয়ামের নামাযই উত্তম নামায।”

 “ফতহুল কাদীর” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩৭৮ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

ما روى عن عمر رضى الله تعالى عنه أن المراد بالقنوت طول القراءة فى الصلاة.

অর্থঃ- “হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই কুনূত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নামাযে দীর্ঘ ক্বিরয়াত পাঠ করা।”

উক্ত কিতাবের ৩৮৩ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

وعن ابن عمر رضى الله تعالى عنهما قال لااعرف القنوت الا طول القيام.

অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেছেন, আমি কুনূত দ্বারা নামাযে দীর্ঘ ক্বিয়ামকেই জানি।”

 “নুরুল হিদায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اور کبھی قنوت بمعنی طول القیام کے بھی اتا ہے

অর্থঃ- “কখনো কখনো কুনূত নামাযে দীর্ঘ ক্বিয়ামের অর্থে আসে।” অনুরূপ ‘আল মা-উনা আলা মাযহাবে আলিমিল মদীনা’ ১ম খণ্ডের ১১৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।

এ কারণে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নিজেও ফজরের নামাযে কুনূত পড়তেন না। যেমন, এ প্রসঙ্গে “তবারানী” শরীফে বর্ণিত হয়েছে,

من حديث غالب بن فرقد الطحان قال كنت عند انس بن مالك رضى الله تعالى عنه شهرين فلم يقنت فى صلوة الغدوة.

অর্থঃ- “হযরত গালিব বিন ফারকাদ ত্বহ্হান রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর হাদীস থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেছেন যে, আমি হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সাথে দু’মাস অবস্থান করেছিলাম। তিনি ফজর নামাযে কখনো কুনূত পড়েননি।” (শরহুন নিকায়া ১ম খণ্ড ২২৯ পৃষ্ঠা) অতএব, যে সকল হাদীস শরীফে আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামাযে কুনূত পড়েছেন বলে বর্ণনা করা হয়েছে তার অর্থ হচ্ছে দীর্ঘ ক্বিয়াম। মুহাদ্দিসগণের এক জামায়াত এ মতই প্রকাশ করেছেন।

হানাফীগণ কুনুত নাজায়িয হওয়ার স্বপক্ষে নিম্নোক্ত দলীল পেশ করেন।

যেমন, “শরহুন নিকায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২২৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

عن ابى مالك الاشجعى سعد بن طارق بن الاشيم عن ابيه قال صليت خلف النبى صلى الله عليه وسلم فلم يقنت وصليت خلف ابى بكر فلم يقنت وصليت خلف عمر فلم يقنت وصليت خلف عثمان فلم يقنت وصليت خلف على فلم يقنت ثم قال يا بنى انها بدعة.

অর্থঃ- “হযরত আবূ মালিক সা’দ বিন তারেক আশজায়ী হতে তিনি তাঁর পিতা হতে রিওয়ায়েত করেছেন। তিনি বলেন যে, আমি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিছনে নামায পড়েছি, তিনি কুনূত পড়েননি। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে নামায পড়েছি, তিনিও কুনূত পড়েননি। হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে নামায পড়েছি, তিনিও কুনূত পড়েননি। হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে নামায পড়েছি তিনিও কুনূত পড়েননি এবং হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে নামায পড়েছি তিনিও কুনূত পড়েননি। অতঃপর তিনি বললেন, হে বৎস! এটা বিদ্য়াত।”

এ হাদীস শরীফ ইমাম নাসাঈ, ইবনে মাযাহ্ এবং তিরমিযী রিওয়ায়েত করেছেন এবং বলেছেন যে, এ হাদীস শরীফ হাসান, ছহীহ্। ইবনে আবী শায়বা হতেও অনুরূপ হাদীস শরীফ বর্ণিত রয়েছে।

সুতরাং এ বর্ণনা দ্বারা খাজিমীর ক্বওল অর্থাৎ চার খলীফা হতে ফজরে কুনূত পড়ার রিওয়ায়েত আছে এ দাবী বাতিল বলে প্রমাণিত হলো। জমহুর উলামাগণ এ মতেরই স্বপক্ষে।

ইবনে আবী শায়বা ছহীহ্ সনদে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে রিওয়ায়েত করেছেন যে, তাঁরা ফজরের নামাযে কুনূত পাঠ করতেননা।

হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে রিওয়ায়েত করেছেন যে,

وما رواه ابن ابى شيبة عن على انه لماقنت فى الصبح انكر الناس ذلك عليه.

অর্থঃ- “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন ফজরের নামাযে দুশমনের বিরূদ্ধে আল্লাহ্ তায়ালার সাহায্য প্রার্থনায় কুনূত পাঠ করেছিলেন তখন উপস্থিত অন্যান্য ছাহাবী ও তাবিয়ীগণ তাঁর বিরোধীতা করেন।”  (শরহুন নিকায়া ১ম খণ্ড ২৩০ পৃষ্ঠা)

এছাড়াও হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত জুবায়ের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে তিনি আরো রিওয়ায়েত করেন যে, “তাঁরা ফজরের নামাযে কুনূত পাঠ করতেন না।”

তিনি হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে আরো রিওয়ায়েত করেছেন যে, তিনি বলেছেন, আমি কুনুত দেখিওনি এবং জানিওনা।”

“গায়ত” কিতাবে উল্লেখ আছে, হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ফজরের কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়েছিলেন।

তিনি বলেন, আল্লাহ্ পাক-এর কছম! আমি এ বিষয়ে কিছুই জানিনা।”

হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن ابن عمر رضى الله تعالى عنه انه ذكر القنوت فقال والله انه لبدعة.

অর্থঃ- “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই তাঁকে কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো, অতঃপর তিনি জবাবে বললেন, আল্লাহ্ পাক-এর কছম! নিশ্চয়ই এটা বিদয়াত।” (শরহুন নিকায়া ১ম খণ্ড ২২৯ পৃষ্ঠা)

হযরত সাঈদ বিন জুবায়ের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট শুনেছি যে, ফজরের নামাযে কুনূত পাঠ করা বিদ্য়াত।           হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن انس رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قنت شهرا ثم تركه فقوله ثم تركه يدل على ان القنوت فى الفرائض كان ثم نسخ.

অর্থঃ- “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাস কুনূতে নাযেলা পড়েছেন। অতঃপর তিনি তা পরিত্যাগ করেছেন।

 অতঃপর হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর (ثم تركه) (অতঃপর তিনি তা পরিত্যাগ করেছেন) এ কথার দ্বারা এটাই দালালত করে যে, ফরয নামাযে কুনূতে নাযেলা ছিল। অতঃপর তা মানসুখ বা রহিত হয়ে গেছে।” (আবূ দাউদ শরীফ, বুখারী শরীফ ১ম খণ্ড ১৩৬ পৃষ্ঠার ৬নং হাশিয়া)

উপরোক্ত হাদীস শরীফের সমষ্টিগত বর্ণনা থেকে ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা সম্পর্কিত বর্ণনা মনসূখ বা রহিত হয়ে গেছে। তাই বর্তমানে তা পাঠ করা জায়িয নেই। হানাফী মাযহাবের এটাই ফতওয়া।

যেমন, “ফতওয়ায়ে নাওয়াযিল” কিতাবের ৬০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

والقنوت فى صلوة الفجر منسوخ عندنا.

অর্থঃ- “আমাদের হানাফী মাযহাবের ফতওয়া হলো ফজরের নামাযে কুনুতে নাযেলা পাঠ করা সম্পর্কিত বর্ণনা মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে।”

“ফতওয়ায়ে কাযীখান” কিতাবে উল্লেখ আছে,

لايفنت لان القنوت فى صلاة الفجر منسوخ.

অর্থঃ- “ফজরের নামাযে কুনূতে নাযিলা পড়বে না। কেননা ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পড়া সম্পর্কিত বর্ণনা মানসুখ বা রহিত হয়ে গেছে।”

 “শরহুন নিকায়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ২২৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, واعلم ان قنوت الفجر منسوخ عندنا.

অর্থঃ- “জেনে রাখ আমাদের হানাফী মাযহাবের ফতওয়া হলো, নিশ্চয়ই ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পড়া মানসুখ বা রহিত হয়ে গেছে।”

“হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৪৫ পৃষ্ঠার ৮নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

انه منسوخ لما روينا ان النبى صلى الله عليه وعلى اله وسلم قنت شهرا ثم ترك.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই এটা অর্থাৎ ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পড়া সম্পর্কিত বর্ণনা মানসুখ বা রহিত হয়ে গেছে। কেননা আমাদের দলীল যেটা আমরা বর্ণনা করেছি সেটা হলো, নিশ্চয়ই নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাস কুনূতে নাযেলা পড়েছিলেন। অতঃপর তিনি তা পরিত্যাগ করেছেন।” (অনুরূপ ইনায়া কিতাবে উল্লেখ আছে)

“গায়াতুল আওতার” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩১১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

نہ قنوت پڑھے نماز فجر میں اسلے کہ فجر میں قنوت کا پڑ ھنا منسوخ.

অর্থঃ- “ফজর নামাযে কুনূত পড়বে না। এজন্য যে, ফজর নামাযে কুনূত পড়া মানসূখ হয়েছে।”

 “আশরাফুল হিদায়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৯৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

طزفین کی دلیل یہ ہے کہ فجر کی نماز میں قنوت پڑھنا منسوخ ہو چکا کیونکہ حضور صلی اللہ علیہ وسلم نے فجر میں ایک ماہ قنوت پڑھا اور پھر اس کوچھوڑ دیا.

অর্থঃ- “তরফাইন এর দলীল অর্থাৎ ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দলীল হলো এই যে, ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পড়া মানসুখ বা রহিত হয়ে গেছে। কেননা আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে এক মাস কুনূতে নাযেলা পড়েছেন। অতঃপর তা ছেড়ে দিয়েছেন।

“আইনুল হিদায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৬৮২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اور ہمارے نزدیک وہ قنوت النازلۃ تھا جو منسوخ ہو گیا.

অর্থঃ- “আমাদের হানাফীদের নিকট ফতওয়া হলো ফজর নামাযে যে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা হতো তা মানসুখ বা রহিত হয়েছে।”

উল্লেখ্য, অখ্যাত পত্রিকার মৌলভীরা কুনূতে নাযেলা সম্পর্কিত হাদীস শরীফখানার শেষের দিকে হাদীস শরীফের কিছু ইবারত কারচুপি করেছে। যেমন, তারা বলেছে, …. “তখন নবী কারীম (সাঃ) ইসলাম ও মুসলমানদের এহেন বিপর্যয়ে দীর্ঘ এক মাস কুনূতে নাযেলা পড়েছেন।”

অথচ হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن انس رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قنت شهرا ثم تركه فقوله ثم تركه يدل على ان القنوت فى الفرائض كان “ثم” نسخ.

অর্থঃ- “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাস কুনূতে নাযেলা পড়েছেন। অতঃপর তিনি তা পরিত্যাগ করেছেন।

 অতঃপর হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর (ثم تركه) (অতঃপর তিনি তা পরিত্যাগ করেছেন) এ কথার দ্বারা এটাই দালালত করে যে, ফরয নামাযে কুনূতে নাযেলা ছিল। অতঃপর তা মানসুখ বা রহিত হয়ে গেছে।” (আবূ দাউদ শরীফ, বুখারী শরীফ ১ম খণ্ড ১৩৬ পৃষ্ঠার ৬নং হাশিয়া)

উক্ত হাদীস শরীফের আলোকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, অখ্যাত পত্রিকার মৌলভীরা হাদীস শরীফের এই (ثم تركه) (অতঃপর তিনি তা পরিত্যাগ করেছেন) ইবারতটুকু কারচুপি করেছে।

যেমন, এ প্রসঙ্গে “হাশিয়াতুত্ তাহ্তাবী আলাদ্ দুররিল মুখতার” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৮১ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

(قوله لانه منسوخ) قال انس رضى الله تعالى عنه قنت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الصبح بعد الركوع يدعو على أحياء من العرب رعل وذكوان وعصية حين قتلوا القراء وهم سبعون او ثمانون رجلا ثم تركه لما ظهر عليهم فدل على نسخه.

অর্থঃ- (ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা সম্পর্কিত বর্ণনা মানসুখ হয়েছে) হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামাযের রুকুর পর আরবের কতিপয় গোত্র, ‘রা’ল’ ‘যাকওয়ান’ ও ‘আছিয়া’-এর প্রতি বদ্দোয়ার জন্য এক মাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেন। যথন তারা সত্তর অথবা আশি জন হাফিযে কুরআন ছাহাবীকে শহীদ করেছিলো, অতঃপর রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পড়া বন্ধ করেন।”

উক্ত হাদীস শরীফ এটাই দালালত করে যে, ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা সম্পর্কিত বর্ণনা মানসুখ বা রহিত হয়ে গেছে।

সুতরাং উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনার দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হানাফী মাযহাবের অনুসারী কোন ইমাম ও মুক্তাদির জন্য নামাযের মধ্যে কুনুতে নাযেলা পাঠ করা সম্পূর্ণই নিষিদ্ধ। এরপরও কেউ যদি তা ভুলে হোক, জেনে হোক অথবা না জেনে হোক পাঠ করে তাহলে তার নামায ফাসেদ(ভঙ্গ) হয়ে যাবে। তাকে পুনরায় নামায দোহ্রিয়ে আদায় করতে হবে। অন্যথায় সে নামায তরকের গুণায় গুণাহ্গার হবে।

  আর যাদের ফতওয়ার কারণে মুছল্লীগণের নামায বাতিল হবে তার সমূদয় গুণাহ্র দায়-দায়িত্ব সেসব জাহিল ও গোমরাহ্ ফতওয়াদাতার উপরই বর্তাবে।

 অতএব, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে ভুল বলেই প্রমাণিত হলো।

{দলীলসমূহ ঃ (১) বুখারী, (২) মুসলিম, (৩) আবূ দাউদ, (৪) তিরমিযী, (৫) ইবনে মাজাহ্, (৬) নাসাঈ, (৭) ইবনে আবি শাইবা, (৮) বায্যার, (৯) তাবারানী, (১০) ফতহুল বারী, (১১) উমদাতুল ক্বারী, (১২) হিদায়া, (১৩) আল মুখতাছারুল কুদুরী, (১৪) জাওহারাতুন্ নাইয়্যারাহ্, (১৫) তানবীরুল আবছার, (১৬) দুররুল মুখতার, (১৭) ফতওয়ায়ে নাওয়াযিল, (১৮) ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া, (১৯) ফতওয়ায়ে কাজিখান, (২০) ফতহুল ক্বাদীর, (২১) ইনায়া, (২২) শরহে ইনায়া, (২৩) কিফায়া, (২৪) শরহুন্ নিকায়া, (২৫) শরহে ইলিয়াস, (২৬) আল লুবাব লিল মায়দানী, (২৭) বাহর্রু রায়িক, (২৮) মিনহাতুল খালিক্ব, (২৯) আলমগীরী, (৩০) আল মাতুন, (৩১) হাশিয়াতুত্ তাহ্তাবী আলা দুররিল মুখতার, (৩২) শরহে বিকায়া, (৩৩) নূরুল ইজাহ্, (৩৪) নূরুল হিদায়া, (৩৫) নূরুদ্ দিরায়া, (৩৬) মারাকিউল ফালাহ্, (৩৭) আইনুল হিদায়া, (৩৮) গায়াতুল আওতার, (৩৯) আল মাউনা আলা মাযহাবে আলিমিল মদীনা, (৪০) আশরাফুল হিদায়া ইত্যাদি)

 [বিঃ দ্রঃ এ সম্পর্কে আরো জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১০২তম সংখ্যা পড়ণ্ডন। জরুরতে “কুনূতে নাযেলা”-এর উপর বিস্তারিত ফতওয়া দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ্]

মুহম্মদ রেজাউল করীম (বাবু)

পোর্ট কলোনী, চট্টগ্রাম

সুওয়ালঃ  হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলাম আগস্ট/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে নিম্নোক্ত জিজ্ঞাসা-সমাধান ছাপা হয়-

জিজ্ঞাসাঃ আমাদের দেশে ব্যবহৃত বাইতুল্লাহ্ ও মসজিদে নববীর ছবি বিশিষ্ট জায়নামায ব্যবহারে বিধিনিষেধ আছে কি? এসব ছবির উপর পা রাখলে গুনাহ্ হবে কি?

সমাধানঃ বাইতুল্লাহ্ ও মসজিদে নববীর চিত্র অঙ্কিত জায়নামাযে নামায পড়ায় কোন অসুবিধা নেই। তাতে পা লাগলেও গুনাহ্ হবে না। এতে এগুলোর মানহানী হয় না। কারণ, এগুলো বাইতুল্লাহ্ বা মসজিদে নববীর প্রতিকৃত মাত্র। অথচ প্রকৃত বাইতুল্লাহ্ ও মসজিদে নববীর ভিতরে দাঁড়িয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ নামায পড়ছেন। কেউ তো কোন দিন মানহানীর কথা ভাবেনি। তবে এ ধরণের জায়নামাযের উপর নামায পড়লে যদি সেসব চিত্রের দিকে খেয়াল চলে যায় তাতে নামায পড়া মাকরূহ্ হবে। নইলে কোন অসুবিধা নেই।

বলাবাহুল্য, কেউ যদি বাইতুল্লাহ্ ও মসজিদে নববীকে বিদ্বেষ বশতঃ অপমান করার লক্ষ্যে এ ধরনের জায়নামাযে লাথি মারে বা পা দিয়ে মাড়ায়, তাহলে অবশ্যই সে গুনাহ্গার হবে।

এখন আমার সুওয়াল হলো- বাইতুল্লাহ্ শরীফ ও মসজিদে নববী শরীফের ছবি বিশিষ্ট বা চিত্র অঙ্কিত জায়নামাযে নামায পড়া এবং তাতে পা রাখা সম্পর্কে হাটহাজারীর মুখপত্র মাসিক মুঈনুল ইসলাম পত্রিকার উক্ত জিজ্ঞাসার-সমাধান সঠিক হয়েছে কি? দলীলসহ সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ বাইতুল্লাহ্ শরীফ ও মসজিদে নববী শরীফের ছবি বিশিষ্ট বা চিত্র অঙ্কিত জায়নামাযে নামায পড়া এবং তাতে পা রাখা সম্পর্কে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত পত্রিকার উক্ত জিজ্ঞাসার সমাধান সঠিক হয়নি; বরং বেয়াদবীমূলক ও জিহালতপূর্ণ হয়েছে।

কারণ, “পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ ও মসজিদে নববী শরীফ মহান আল্লাহ্ পাক-এর নিদর্শন সমূহের অন্তর্ভুক্ত। তাই উক্ত নিদর্শন সমূহকে পায়ের নিচে রাখা বা সেগুলোকে পদদলিত করা আল্লাহ্ পাক-এর নিদর্শন সমূহকে অবমাননা করারই শামিল। যা শুধু আদবের খিলাফই নয় বরং স্থান ও ক্ষেত্র বিশেষে নাজায়িয, হারাম ও কুফরী।

সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

يايها الذين امنوا لاتحلوا شعائر الله.

অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্ পাক-এর নিদর্শন সমূহের অবমাননা করোনা।” (সূরা মায়িদা/২)

 উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে। ছবি তোলা হারাম। এরপরেও যদি  কোন ব্যক্তি তার পিতার ছবি তোলে, সেই ছবি যদি তৃতীয় কোন ব্যক্তি পা দিয়ে মাড়ায় তাহলে যার পিতার ছবি মাড়ানো হলো সে ব্যক্তি কি সেটা সম্মানজনক হিসেবে মেনে নিবে? কখনই সেটা সম্মানজনক হিসেবে গ্রহণ করবে না। বরং যার পিতার ছবি, সে ঐ ব্যক্তির উপর গোস্বা করবে, যে তার পিতার ছবিকে মাড়িয়েছে। কারণ তার পিতার ছবিকে পা দিয়ে মাড়ানোর কারণে তার পিতাকে এহানতই করা হয়েছে। ইজ্জত, সম্মান করা হয়নি।  উল্লেখ্য, কারো পিতার ছবি যদি পা দিয়ে মাড়ানোর কারণে এহানত হয় তাহলে পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ ও মসজিদে নববী শরীফ যা আল্লাহ্ পাক-এর শেয়ার, তার ছবিকে পা দিয়ে মাড়ালে কি পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ ও মসজিদে নববী শরীফের এহানত হবে না? অবশ্যই হবে।

উল্লেখ্য, আল্লাহ্ পাক শুধু ইহানত করতে নিষেধ করেননি; সাথে সাথে তা’যিম-তাকরীম করতেও আদেশ করেছেন।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,

ومن يعظم حرمت الله فهو خيرله عند ربه.

অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক যে সকল বস্তুকে সম্মানিত করেছেন, তাকে যে ব্যক্তি সম্মান করলো, এটা তার জন্য কল্যাণ বা ভালাইয়ের কারণ।” (সূরা হজ্ব/৩০)

 আল্লাহ্ পাক অন্যত্র আরো বলেন,

ومن يعظم شعائر الله فانها من تقوى القلوب.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে, নিশ্চয় তা তার জন্য অন্তরের তাক্বওয়া বা পবিত্রতার কারণ।” (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ: ৩২)

অতএব, উপরোক্ত আয়াত শরীফসমূহ দ্বারা এটাই ছাবিত হলো যে, মহান আল্লাহ্ পাক-এর নিদর্শন সমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা সকলের জন্যই ফরয। আর সেগুলোর অবমাননা করা সম্পূর্ণই হারাম ও নাজায়িয।

আরো উল্লেখ্য যে, আমভাবে একথা বলা কখনো শুদ্ধ হবেনা যে, এগুলো বাইতুল্লাহ বা মসজিদে নববীর প্রতিকৃত মাত্র। কারণ এরূপ অনেক বস্তু বা বিষয়ের ছবি রয়েছে যেগুলোকে তা’যীম-তাকরীম করা ফরয-ওয়াজিব। যেমন- পবিত্র কুরআন শরীফের ছবি, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ব্যবহৃত দ্রব্য-সামগ্রী- যথা- পাগড়ী, জুব্বা, লাঠি, না’লাইন শরীফ ইত্যাদি। এখন প্রশ্ন হলো, হাটহাজারীর মৌলভীরা “এগুলো প্রতিকৃত মাত্র” একথা বলে উল্লিখিত বস্তুসমূহের ছবি বা ফটো পা দিয়ে মাড়ানো জায়িয ফতওয়া দিবে কি?      তাদের বক্তব্য মুতাবিক যদি বাইতুল্লাহ শরীফ ও মসজিদে নববী শরীফের ছবি পা দিয়ে মাড়ানো জায়িয হয়, তবে কুরআন শরীফ ও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ব্যবহৃত দ্রব্য-সাম্রগ্রীর ছবি বা ফটোও পা দিয়ে মাড়ানো জায়িয হবে। (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)। অথচ তা সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী।

উপরোক্ত আলোচনা সাপেক্ষে সাব্যস্ত হলো যে, সাধারণভাবে পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফের ছবিযুক্ত জায়নামাযে নামায পড়া মাকরূহ্ তান্যীহী ও আদবের খিলাফ আর খাছভাবে মাকরূহ তাহ্রীমী। আর মসজিদে নববীর ছবি যদি রওজা শরীফসহ হয়, তবে তাতে নামায পড়া সম্পূর্ণই হারাম। এগুলো আল্লাহ্ পাক-এর শেয়ার বা নিদর্শন সমূহের অন্তর্ভুক্ত। এগুলোকে তা’যীম-তাকরীম করা সকলের উপরই অপরিহার্য কর্তব্য।

তাছাড়া আমভাবে সকলের মতেই নক্শা খচিত জায়নামাযে নামায পড়া সুন্নতের খিলাফ বা মাকরূহ্। কেননা, তা হুজুরী বিনষ্ট হওয়ার কারণ।

হাটহাজারীর মৌলভীদের ক্বিয়াস খন্ডন

দ্বিতীয়তঃ হাটহাজারীর মৌলভীরা বলেছে, “… অথচ প্রকৃত বাইতুল্লাহ্ ও মসজিদে নববীর ভিতরে দাঁড়িয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ নামায পড়েছেন। কেউ তো কোন দিন মানহানীর কথা ভাবেনি।…”

এর জবাবে বলতে হয় যে, হাটহাজারী মৌলভীদের দেয়া উদাহরণ অনুযায়ী কেবল মসজিদের ভিতরের অর্থাৎ মেঝের ছবি বিশিষ্ট জায়নামাযের উপর নামায পড়া জায়িয হতে পারত কিন্তু মসজিদের মেঝে আর পুরো মসজিদ কখনই এক কথা নয়।

অর্থাৎ পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ ও মসজিদে নববী শরীফের মসজিদের ভিতরে নামায পড়া আর উল্লিখিত মসজিদসমূহের ছবিযুক্ত জায়নামাযের উপর নামায পড়া, বসা, পা রাখা সমান নয়।

কারণ পবিত্র বাইতুল্লাহ বা কা’বা শরীফের ভিতরে নামায পড়তে নিষেধ করা হয়নি। কিন্তু পবিত্র বাইতুল্লাহ বা কা’বা শরীফের ছাদে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী বলা হয়েছে।

কেননা, পবিত্র বাইতুল্লাহ বা কা’বা শরীফের ছাদে নামায পড়লে পবিত্র বাইতুল্লাহ বা কা’বা শরীফের তা’যীম বা সম্মান রক্ষা করা হয়না। বরং পবিত্র বাইতুল্লাহ বা কা’বা ঘরের ইহানতই করা হয়।

এ প্রসঙ্গে “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খন্ডের ১০৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وتكره الصلاة على سطح الكعبة لما فيه من ترك التعظيم.

অর্থঃ- “কা’বা ঘরের ছাদের উপর নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী। কেননা কা’বা ঘরের ছাদে নামায পড়লে কা’বা ঘরের এহানত করা হয়।”

আর বেয়াদব আল্লাহ্ পাক-এর রহমত থেকে বঞ্চিত।” যেমন, কিতাবে আছে,

بےادب محروم گشت از لطف رب.

অর্থঃ- “বেয়াদব আল্লাহ্ পাক-এর রহমত থেকে বঞ্চিত। আর বেয়াদব আল্লাহ্ পাক-এর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে আল্লাহ্ পাক-এর আযাব-গযবে পতিত হবে।” কিতাবে আরো উল্লেখ আছে, বিনা জরুরতে সাধারণ মসজিদের ছাদে উঠাও মাকরূহ। আর ছবিযুক্ত হওয়ার কারণেই উক্ত মসজিদসমূহের দেয়ালে বা ছাদে পা রাখা হয়।

সুতরাং হাটহাজারী মৌলভীদের ক্বিয়াসও ভুল এবং বাতিল বলে প্রমাণিত হলো। কেননা, ভিতরে নামায পড়া আর দেয়ালে বা ছাদে পা রাখা সমান নয়।  অতএব, বাইতুল্লাহ শরীফ ও মসজিদে নববী শরীফের ছবি বিশিষ্ট বা চিত্র অঙ্কিত জায়নামাযে নামায পড়া, বসা, পা রাখা ক্ষেত্রবিশেষে মাকরূহ তাহরীমী, হারাম, নাজায়িয ও কুফরী।

এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ২০, ৪৭, ৫৭, ৮১ ও ৮৯তম সংখ্যা পড়ৃন। সেখানে মাসিক মদীনা ও মাসিক মঈনুল ইসলাম পত্রিকার জিহালতপূর্ণ ও বেয়াদবী মূলক বক্তব্যকে খন্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। এবার দ্বিতীয়বারের মত মাসিক মুঈনুল ইসলামের বেয়াদবী মূলক বক্তব্যকে খন্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হলো।

{দলীলসমূহঃ (১) বুখারী, (২) মুসলিম, (৩) নাসাঈ, (৪) মিশকাত, (৫) ফতহুল বারী, (৬) উমদাতুল ক্বারী, (৭) ইরশাদুস্ সারী, (৮) তাইসীরুল ক্বারী, (৯) শরহে নববী, (১০) মিরকাত, (১১) লুময়াত, (১২) আশয়াতুল লুময়াত, (১৩) শরহুত্ ত্বীবী, (১৪) তা’লীকুছ ছবীহ্, (১৫) মুযাহিরে হক্ব, (১৬) মিরআতুল মানাযীহ্, (১৭) তাফসীরে খাযিন, (১৮) বাগবী, (১৯) আহ্কামুল কুরআন, (২০) কবীর, (২১) দুররে মান্ছূর, (২২) যাদুল মাসীর, (২৩) ফতহুল ক্বাদীর, (২৪) আবী সাউদ, (২৫) তাবারী, (২৬) ইবনে কাছীর, (২৭) মা’আরেফুল কুরআন, (২৮) ফতওয়ায়ে আলমগীরী, (২৯) তাতারখানিয়া, (৩০) বাজ্জাজিয়া, (৩১) কাজীখান (৩২) খুলাছাতুল ফতওয়া, (৩৩) মাবছুত, (৩৪) হিদায়া, (৩৫) নিহায়া, (৩৬) ইনায়া, (৩৭) বিক্বায়া, (৩৮) সিক্বায়া, (৩৯) বাহ্রুর রায়িক, (৪০) মারাকিউল ফালাহ্, (৪১) তাহ্তাবী, (৪২) কিতাবুশ্ শিফা, (৪৩) উছূলুশ শাশী, (৪৪) নূরুল আনোয়ার, (৪৫) আক্বাঈদে নস্ফী, (৪৬) ফিক্বহুল আকবার, (৪৭) তাকমীলুল ঈমান, (৪৮) ইমদাদুল আহ্কাম, (৪৯) দুররুল মুখতার ইত্যাদি}

মুহম্মদ শহীদুল ইসলাম (শামীম)

সদর, খুলনা

সুওয়ালঃ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ পত্রিকায় ফতওয়া দেয়া হয়েছে যে, “লম্বা টুপি পরিধান করা হারাম।”            কিন্তু এক অখ্যাত পত্রিকায় জনৈক খতীব ছাহেবের উদ্বৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যে, “তা হারাম নয়। কারণ, দেওবন্দ মাদ্রাসার অনেক উলামা লম্বা টুপি ব্যবহার করতেন এবং এখনো ব্যবহার করে আসছেন। আর আবূ দাউদ শরীফের এক হাদীস শরীফ দ্বারা হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের লম্বা টুপি পড়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। তাই এ টুপিও সুন্নত।”          এখন আমার সুওয়াল হলো- লম্বা টুপি পরিধান করা যদি সুন্নত হয় তাহলে মাসিক আল বাইয়্যিনাতে তা হারাম ফতওয়া দেয়া হলো কিসের ভিত্তিতে? দয়া করে সঠিক জাওয়াব জানালে খুশী হবো।

জাওয়াবঃ  মাসিক আল বাইয়্যিনাত ২য় এবং ৫৩-৫৯তম সংখ্যাগুলোতে কুরআন ও সুন্নাহ্র শতাধিক দলীল-আদিল্লাহ্র ভিত্তিতে টুপির উপর বিস্তারিত ফতওয়া দেয়া হয়েছে।

উক্ত ফতওয়াতে কোন্ টুপি সুন্নত, কোন্ টুপি বিদ্য়াত, কোন্ টুপি জায়িয এবং কোন্ টুপি নাজায়িয, হারাম ও কুফরী তা দলীল সহকারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।        কাজেই মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় লম্বা টুপি সম্পর্কে যে ফতওয়া দেয়া হয়েছে সে ফতওয়াই কুরআন-সুন্নাহ্র দলীল সম্মত ও সঠিক ফতওয়া।

সুতরাং এ ফতওয়ার বিপরীত কারো কোন মনগড়া বক্তব্য কিংবা আমল দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।

 উল্লেখ্য, লম্বা টুপি দু’ধরণের।

(১) মাথার সামনে ও পিছনের দিক থেকে লম্বা যাকে দোপাট্টা বা কিস্তি বা নৌকা টুপি বলা হয়।

(২) মাথার উপরের দিক থেকে লম্বা যাকে বুরনুস্ টুপি বলা হয়।

প্রথম প্রকার লম্বা টুপি যাকে দোপাট্টা, কিস্তি বা নৌকা টুপি বলা হয়।

এ টুপি সম্পর্কে বিখ্যাত মুফাস্সির তাজুল মুফাস্সিরীন, ইমাম কাজী বায়জাভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর প্রসিদ্ধ তাফসীর “তাফসীরে বায়জাবী”-এর ১ম খন্ডের ২৩ পৃষ্ঠায় “সূরা বাকারার” ৬নং আয়াত শরীফ ان الذين كفروا -এর তাফসীরে  উল্লেখ করেন, ليس الغيار وشد الزنار ونحوهما كفرا.

অর্থঃ-“গিয়ার (লম্বা টুপি) পরিধান করা ও পৈতা বাঁধা এবং এতদুভয়ের অনুরূপ (কাফিরদের সাথে তাশবীহ্ হয়) এমন পোশাক পরিধান করা কুফরী।”

আর الغيار (গিয়ার) শব্দের ব্যাখ্যায় তাফসীরে বায়জাভীর বিখ্যাত শরাহ্ “হাশিয়ায়ে মুহিউদ্দীন শায়খ যাদাহ্” ১ম খন্ডের ১০৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে,

الغيار …….. هو قلنسوة طويلة كانت تلبس فى ابتداء الاسلام وهى الان من شعار اهل الكفر مختصة بهم.

অর্থঃ- “গিয়ার হলো লম্বা টুপি যা ইসলামের প্র্রাথমিক যুগে পরিধান করা হতো। আর বর্তমানে কাফিরদের শেয়ার বা জাতীয় বৈশিষ্ট্য ও চিহ্ন যা তাদের খাছ টুপি।”

অতএব, “গিয়ার” শব্দের অর্থ- কিস্তি বা দোপাট্টা লম্বা টুপি যা কাফিরদের খাছ টুপি বা “শেয়ার।” অর্থাৎ কাফিরদের জাতীয় বৈশিষ্ট্য ও চিহ্ন বিশেষ। আর উক্ত তাফসীরে মূলতঃ কাফিরদের খাছ শেয়ার বা আমল অর্থাৎ কাফিরদের জাতীয় বৈশিষ্ট্য ও চিহ্ন বিশেষ অনুসরণ করাকেই কুফরী বলা হয়েছে। সুতরাং কাফির তথা হিন্দুদের শেয়ার বা খাছ কিস্তি টুপি বা নৌকা টুপি বা দোপাট্টা লম্বা টুপি ব্যবহার করা নাজায়িয, আর তা সুন্নত মনে করে পরিধান করা কুফরী।

 উল্লেখ্য, কিস্তি বা নৌকা টুপি যে কাফির তথা বিধর্মীদের শেয়ার বা খাছ টুপি সে প্রসঙ্গে বাহ্রুল উলূম, ফখরুল ফুক্বাহা, রঈসুল মুহাদ্দিসীন, তাজুল মুফাস্সিরীন, হাফিজুল হাদীস, মুফতিয়্যুল আ’যম, শায়খুল মিল্লাত ওয়াদ্ দ্বীন, মুবাহিছুল আ’যম, হযরতুল আল্লামা শাহ্ ছূফী শায়খ মুহম্মদ রুহুল আমীন বশীরহাটি রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক প্রণীত বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য দলীল সমৃদ্ধ ফতওয়ার কিতাব “ফতওয়ায়ে আমীনিয়াতে” উল্লেখ করেন, “কিস্তি, নৌকা (লম্বা) টুপি খাছ মারওয়ারীদের (হিন্দুদের) ব্যবহৃত টুপি ….।”

কিস্তি, নৌকা বা দোপাট্টা টুপি সম্পর্কে হুজ্জাতুল ইসলাম, হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ইবলিস শয়তান একবার জলীলুল ক্বদর রসূল, হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম-এর মজলিসে একটি লম্বা টুপি পরিধান করে উপস্থিত হয়েছিল। (আল মুর্শিদুল আমীন)

যেহেতু কিস্তি, নৌকা বা লম্বা দোপাট্টা টুপি বিধর্মীদের টুপি সেহেতু এটা পরিধান করা নাজায়িয ও হারাম।

  দ্বিতীয় প্রকার লম্বা টুপি যাকে বুরনুস টুপি বলা হয়। ‘বুরনুস’ শব্দটি একাধিক অর্থ বিশিষ্ট একটি শব্দ। ‘বুরনুস’ শব্দের অর্থ- উঁচু টুপি, টুপি সংযুক্ত জুব্বা, রেইন কোর্ট, পশমী চাদর, ইত্যাদি। উঁচু টুপি নামক বুরনুস ইসলামের শুরু যুগে পরিধান করা হতো। কিন্তু বর্তমানে তা বিধর্মী বা খ্রীষ্টানদের টুপি।

এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,

برنس، ایک قسم کی ٹوپی جو أتش پرست استعمال کر تے ھیں.

অর্থঃ- “বুরনুস এক প্রকার টুপি, যা অগ্নি উপাসকরা ব্যবহার করে।” (লুগাতে সাঈদী)

برنس، لمبی ٹوپی جو راھب پھنتے ھیں.

অর্থঃ- “বুরনুস হলো- লম্বা টুপি, যা খ্রীষ্টান রাহিব বা পাদ্রীরা পরিধান করে।” (লুগাতে হীরা ও কিশ্ওয়ারী)

البرنس، … بععنی کلاہ دراز کہ کشیشاں می پوشند.

অর্থঃ- “বুরনুস ….. অর্থ লম্বা টুপি, যা খৃষ্টান পাদ্রী বা মূর্তি পুজকরা পরিধান করে থাকে।” (গিয়াছুল লুগাত ৭৪পৃষ্ঠা)

“برنس” ….. یعضوں ںے کھا لمبی ٹوپی جس کو لوگ شروع زمانہ  اسلام میں پھنا کرتے تھے-…. مجمع  البحرین میں ھے برنس نصاری کی ٹوپی جو وہ سرپر رکھتے ھیں.-

অর্থঃ- “…. কেউ কেউ বলেন, বুরনুস হচ্ছে- লম্বা টুপি, যা লোকেরা ইসলামের শুরু যুগে পরিধান করতো। …. “মাজ্মাউল বাহ্রাইন” নামক কিতাবে উল্লেখ আছে, ‘বুরনুস’ নাছারাদের টুপি, যা তারা মাথায় দিয়ে থাকে।” (লুগাতুল হাদীস ১ম জিঃ পৃষ্ঠা-৫৪)

তাই “ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ইতাবিয়া ও তাতারখানিয়াতে” ফতওয়া দেয়া হয়েছে,

تكره الصلوة مع البرنس.

অর্থঃ- ‘বুরনুস’ পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী” আর যারা “আবূ দাউদ শরীফের” বর্ণিত হাদীস শরীফ দ্বারা লম্বা টুপি সুন্নত প্রমাণ করতে চায় তাদের সম্পর্কে বলতে হয় যে, তারা হাদীস শরীফের মর্ম ও ব্যাখ্যা অনুধাবনে নেহায়েতই অজ্ঞ। কারণ, আবূ দাউদ শরীফের হাদীস শরীফে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ যে, ‘বুরনুস’ পরিধান করে নামায পড়েছেন তা দ্বারা মূলতঃ টুপি সংযুক্ত জুব্বাকে বুঝানো হয়েছে।

এছাড়া বুখারী শরীফ, নাসাঈ শরীফ ও অন্যান্য যে সকল হাদীস শরীফে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ‘বুরনুস’ পরিধান করে নামায আদায় করেছেন বলে উল্লেখ রয়েছে তা মূলতঃ টুপি সংযুক্ত জুব্বা।

কারণ টুপি সংযুক্ত জুব্বাকেও ‘বুরনুস’ বলে।

নিম্নে ব্যাখ্যাসহ তার দলীল পেশ করা হলো-

হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ابن عمر رضى الله تعالى عنه ان رجلا قال يا رسول الله مايلبس المحرم من الثياب فقال النبى صلى الله عليه وسلم لايلبس المحرم القميص ولا السراويل ولا البرنس ولا الخفين الا ان لايجد النعلين فليلبس ما اسفل من الكعبين.

অর্থঃ- “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মুহ্রিম (হজ্বের সময়) কোন্ কোন্ পোশাক পরিধান করবে? সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মুহ্রিম ব্যক্তি ক্বামীছ, সালোয়ার, ‘বুরনুস’ ও মোজা পরিধান করবেনা। তবে কারো যদি জুতা-সেন্ডেল না থাকে, সে মোজা পরিধান করতে পারবে, তবে মোজা টাখনুর নীচে থাকতে হবে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ ৮৬২ পৃষ্ঠা, অনুরূপ ফাত্হুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল ক্বারীতে উল্লেখ আছে)

  উক্ত হাদীস শরীফের ‘বুরনুস’ শব্দের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে,

وله ولا البرنس- بضم موحده ونون- هو كل ثوب راسه منه ملتذق به من دراعة او جبة او غيره قال الجوهرى هو قلنسوة طويلة كان النساك يلبسونها فى صدر الاسلام.

অর্থঃ- “বা এবং নুনের উপর পেশ দিয়ে “বুরনুস” শব্দের অর্থ হচ্ছে- প্রত্যেক ঐ পোশাক, যার মাথার দিক তার সাথে সংযুক্ত বা লাগানো। তা কোট হোক অথবা জুব্বা। অর্থাৎ টুপি সংযুক্ত জুব্বা বা কোট। জাওহারী বলেন, “বুরনুস” হলো- লম্বা টুপি, যা আবিদ-যাহিদ লোকেরা ইসলামের প্রাথমিক যুগে পরিধান করতেন।” (হাশিয়ায়ে বুখারী শরীফ ২য় জিঃ ৬৮২ পৃষ্ঠা, অনুরূপ নাসাঈ, আবু দাউদ, আবূ ওমদাতুল ক্বারী, লিসানুল আরব, ক্বামুসুল মুহীত, আল মুগরিব, আর-রাইদ, আল মুন্জিদ, লুগাতুল হাদীস ইত্যাদি কিতাব সমূহেও উল্লেখ আছে।

বুখারী শরীফ ও অন্যান্য কিতাব সমূহে বর্ণিত ‘বুরনুস’ শব্দের ব্যাখ্যা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, উক্ত হাদীস শরীফে যে বুরনুস-এর কথা বলা হয়েছে, তাহলো- টুপি সংযুক্ত জুব্বা ইত্যাদি। লম্বা টুপির কথা মোটেও বলা হয়নি। তাছাড়া জাওহারীর বক্তব্য দ্বারা ব্যাপারটি আরো স্পষ্ট হয়ে যায়, কেননা জাওহারী বলেছেন, লম্বা টুপি ইসলামের প্রাথমিক যুগে ব্যবহার করা হতো। তাই এক্ষেত্রে ‘বুরনুস’ অর্থ লম্বা টুপি গ্রহণ করার কোন প্রশ্নই উঠেনা।

এছাড়াও উক্ত হাদীস শরীফে “বুরনুস” শব্দ দ্বারা টুপিকে বুঝানো হয়নি, কারণ যদি টুপিই উদ্দেশ্য হতো, তবে আমভাবে “কলানসুওয়াহ্” শব্দই উল্লেখ করা হতো, কেননা ইহ্রাম অবস্থায় যে কোন ধরণের টুপিই মাথায় দেয়া নিষিদ্ধ। সুতরাং এক্ষেত্রে “বুরনুস” শব্দের অর্থ- লম্বা টুপি গ্রহণ করা হলে, ইহ্রাম অবস্থায় অন্যান্য টুপি পরিধান করা বৈধ প্রমাণিত হয়। অর্থাৎ এটাই প্রমাণিত হয় যে, ইহ্রাম অবস্থায় ‘বুরনুস’ টুপি ব্যতীত সব টুপিই পরিধান করতে পারবে।       অতএব, এক্ষেত্রে ‘বুরনুস’ শব্দের অর্থ টুপিসহ জুব্বা ইত্যাদি গ্রহণ করাই যুক্তিযুক্ত ও সঠিক। কারণ ইহ্রাম অবস্থায় যেরূপ টুপি মাথায় দেয়া বৈধ নয় তদ্রুপ জুব্বা পরিধান করাও বৈধ নয়। অর্থাৎ সেলাই যুক্ত সব ধরণের পোশাকই ইহ্রাম অবস্থায় পরিধান করা নিষেধ।

তাছাড়া “আবু দাউদ শরীফের” একটি বর্ণনা দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, “বুখারী শরীফে” ইহ্রাম অবস্থায় যে বুরনুস পরিধান করতে নিষেধ করা হয়েছে তাহলো টুপি সংযুক্ত জুব্বা বা পশমী চাদর ইত্যাদি।

যেমন, হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ابن عمر- انه وجد الفر فقال الف على ثوبا يا نافع فالقيت عليه برنسا فقال تلقى على هذا وقد نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم ان يلبسه المحرم.

অর্থঃ- “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত তিনি শীতে আক্রান্ত হয়ে বললেন, হে নাফে! আমার উপর কোন কাপড় ঢেলে দাও। আমি তাঁর উপর একটি বুরনুস দিয়ে দিলাম। তিনি বলেন, তুমি আমার উপর ‘বুরনুস’ ঢেলে দিলে অথচ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুহ্রিমদের জন্য তা নিষেধ করেছেন।” (আবূ দাউদ শরীফ ১ম জিঃ ২৭০ পৃষ্ঠা, বজলুল মাযহুদ)

উক্ত হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শীতে আক্রান্ত হয়ে শীত নিবারণের জন্য কিছু গায়ে দেয়ার নির্দেশ দিলে ইমাম নাফে রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁকে বুরনুস পরিধান করিয়ে দেন। এখন প্রশ্ন হলো- লম্বা টুপি পরিধান করলে শীত নিবারণ হবে কি? কখনো নয়। বরং টুপি সংযুক্ত জুব্বা বা চাদর পরিধান করলেই শীত নিবারণ হয়।

অতএব “বুখারী শরীফের” বর্ণনা দ্বারা ‘বুরনুস’ পরিধান করা বৈধ প্রমাণিত হয়, এটা সত্য কথাই তবে লম্বা টুপি নয়, বরং টুপি সংযুক্ত জুব্বা ইত্যাদি।

আর “আবু দাউদ শরীফে” যে উল্লেখ আছে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম বুরনুস পরিধান করে নামায পড়েছেন; তা মূলতঃ টুপি সংযুক্ত জুব্বাকেই বুঝানো হয়েছে,

عن وائل بن حجر قال- اتيت رسول الله صلى الله عليه وسلم فرأيته يرفع يديه اذا افتح الصلوة …….. ثم اتيتهم من قابله فرايتهم يرفعون ايديهم فى البرانس

অর্থঃ- “হযরত ওয়াইল ইব্নে হাজ্র রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে দেখলাম- তিনি নামায শুরু করার সময় উভয় হাত মুবারক উত্তোলন করেছেন।…. অতঃপর পরবর্তী দিনে এসে দেখলাম হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ তাঁদের উভয় হাত বুরনুসের মধ্য হতে উঠিয়েছেন।” (নাসাঈ শরীফ ১ম জিঃ ১৭৩ পৃষ্ঠা)

উক্ত হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, “হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বুরনুসের ভিতর থেকে হাত উঠালেন” এর দ্বারা কি এটাই প্রমাণিত হয়না যে, উক্ত বুরনুসটি ছিল টুপি সংযুক্ত জুব্বা। কারণ টুপির ভিতর থেকে তো আর হাত উঠানো সম্ভব নয়, কেননা নামাযের সময় হাত কখনো টুপির ভিতর থাকেনা।

সুতরাং অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ যে বুরনুস পরিধান করেছেন বলে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে, তা কস্মিনকালেও লম্বা টুপি নয়; বরং টুপি সংযুক্ত জুব্বা ইত্যাদি। কারণ এগুলোকেও বুরনুস বলা হয়।       অতএব, লম্বা টুপি সম্পর্কে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় যে ফতওয়া দেয়া হয়েছে সে ফতওয়াই সঠিক ও নির্ভুল। এ ফতওয়ার বিপরীত কারো কোন বক্তব্য, আমল গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, কারো বক্তব্য হোক, আমল হোক সঠিক প্রমাণ করতে হলে তার অনুকূলে সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য ও ছহীহ্ দলীল পেশ করতে হবে। অন্যথায় তা গ্রহণযোগ্য হবে না।

{দলীলসমূহঃ ১১৪টি।

বিঃ দ্রঃ এ সম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়া জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত ২য় তম এবং ৫৩ থেকে ৫৯তম সংখ্যাগুলো পাঠ করুন, যাতে ১১৪টি দলীল পেশ করে প্রমাণ করা হয়েছে যে, “চার টুকরা বিশিষ্ট গোল, সাদা ও সুতি কাপড়ের টুপি যা মাথার সাথে লেগে থাকে তা খাছ সুন্নত।”

মুহম্মদ নুরুন্ নবী (সাধারণ সম্পাদক)

সদরঘাট মসজিদ, দারোগাহাট, চট্টগ্রাম।

সুওয়ালঃ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’-এর ৮৯তম সংখ্যায় দেখতে পেলাম, “মসজিদের ভিতর জানাযা পড়া মাকরূহ তাহরীমী।” অথচ বাংলা একটি ‘বুখারী শরীফে’ ৬৫৫নং হাদীস শরীফের বরাতে মসজিদের ভিতর জানাযা পড়াকে জায়িয লিখেছে। সেখানে আরো লিখেছে যে, ‘হানাফীদের অনেকে মসজিদের ভিতর জানাযা পড়াকে মাকরূহ্ মনে করেন না, যদি লাশ মসজিদের বাইরে রাখা হয়। তাছাড়া আরব দেশেও জানাযার নামায মসজিদে পড়তে দেখা যায়।

এখন আমার জানার বিষয় হলো- মসজিদের ভিতর জানাযা পড়ার ব্যাপারে ফতওয়াগ্রাহ্য ও ছহীহ্ মত কোনটি? মসজিদে জানাযা পড়া জায়িয হওয়ার পক্ষে বুখারী শরীফে কোন হাদীস শরীফ উল্লেখ আছে কি? আর সত্যিই কি হানাফীদের নিকট মসজিদে জানাযা মাকরূহ নয়? আর মসজিদে জানাযা পড়া যদি মাকরূহই হয়ে থাকে তবে আরব দেশের লোকেরা পড়ে কোন্ দলীলের ভিত্তিতে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ প্রথমতঃ বলতে হয় যে, হানাফী ও মালিকী মাযহাব মতে বিনা ওজরে মসজিদের ভিতর জানাযা পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী। চাই লাশ মসজিদের ভিতরে থাকুক অথবা বাইরে। অধিকাংশ মুতাআখখিরীন আলিমগণের এটাই অভিমত এবং এ মতটিই ফতওয়াগ্রাহ্য বা মুখতার মত।

কেউ কেউ মাকরূহ্ তানযীহী বলেছেন তবে সেটা ফতওয়াগ্রাহ্য বা গ্রহণযোগ্য মত নয়। আবার কেউ কেউ লাশ বাইরে রাখলে মাকরূহ্ হবেনা বলে যে মত পেশ করেছেন সেটাও গ্রহণযোগ্য নয়।

বরং গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত হলো, চাই লাশ ভিতরে থাকুক অথবা বাইরে থাকুক উভয় অবস্থাতেই জানাযা নামায আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী।

এ প্রসঙ্গে হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফিক্বাহ্র কিতাব “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” ১ম খন্ড ১৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وصلاة الجنازة فى المسجد الذى تقام فيه الجماعة مكوهة سواء كان الميت والقوم فى المسجد او كان الميت خارج المسجد والقوم فى المسجد ……. هو المختار.

অর্থঃ- “যে মসজিদে জামায়াত হয় সেই মসজিদে জানাযার নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। চাই লাশ ও মুক্তাদী মসজিদের ভিতরে হোক অথবা লাশ মসজিদের বাইরে ও মুক্তাদী মসজিদের ভিতরে হোক। উভয়ের একই হুকুম। ….. এটাই ফতওয়াগ্রাহ্য অভিমত।”

অনুরূপ ফিক্বাহ্র বিখ্যাত কিতাব, “খোলাছা, রদ্দুল মুহতার, দুররুল মুখতার, শামী, বাহরুর রায়িক, ফতহুল ক্বাদির, মারাকিউল ফালাহ্, বাহারে শরীয়ত ইত্যাদিতেও” উল্লেখ আছে। তবে শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাবের মত এর সম্পূর্ণ বিপরীত। অর্থাৎ তাদের মতে সর্বাবস্থায়ই মসজিদের ভিতর জানাযা পড়া জায়িয।

যেমন, এ প্রসঙ্গে হিদায়ার বিখ্যাত শরাহ্ “আইনুল হিদায়া” ১ম জিঃ ৭১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اور نماز نہ پڑھی جاوے کسی میت پر مسجدجما عت میں مگر بارش وغیرہ کے عذر سے جائز  ھے (الکافی) اور یھی قول امام مالک کا ھے اور  امام شافعی واحمد کے نزدیک بغیر عذر جائز ھے بدلیل اسکے کہ جب حضرت سعد بن ابی وقاص  نے وفات پائی تو ام المؤمنین عائشۃ نے فرمایا کہ اسکا جنازہ مسجد میں داخل کردو تاکہ ازواج مطھر ات پیغمبر صلی اللہ علیہ وسلم اسپڑ نماز  پڑ ھیں اور لوگوں کے انکار پر فرمایا کہ حضرت صلی اللہ علیہ وسلم نے بیضاء کے دو بیٹوں سہیل اور اسکے بھائی پر مسجد میں نماز پڑھی تھی (رواہ مسلم)… اور ہمارے نزدیک میت نما جنازہ مکروہ ھے لقول النبی صلی اللہ علیہ وسلم من صلی علی جنازۃ فی المسجد فلا اجزلہ.

অর্থঃ- “জামে মসজিদে মৃত ব্যক্তির উপর জানাযা পড়া যাবেনা। তবে বৃষ্টি বা ইত্যাদি ওজরে পড়া যাবে। (কাফী) হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতও এটি। আর হযরত ইমাম শাফিয়ী ও হযরত আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট বিনা ওজরেও মসজিদে জানাযা পড়া জায়িয।  তাদের দলীল হলো, যখন হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইন্তিকাল করেন তখন উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, তাঁর লাশ মসজিদের ভিতর প্রবেশ করানো হোক যেন উম্মুল মু’মিনীনগণও তাঁর জানাযা পড়তে পারেন। মসজিদে লাশ প্রবেশ করানো সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়ে তিনি বলেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘বাইদা’-এর দুই ছেলে সুহাইল ও তার ভাইয়ের জানাযা মসজিদে আদায় করেছেন।” (মুসলিম শরীফ)

 মুছান্নিফ বলেন, আমাদের (হানাফীদের) নিকট মসজিদে জানাযা পড়া মাকরূহ্ আর হানাফীদের দলীল হলো নিম্নোক্ত হাদীস শরীফ। কেননা, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মসজিদে জানাযা পড়বে সে কোন ছওয়াব পাবেনা। অনুরূপ শরহুন্ নিকায়া, উমদার্তু রিয়ায়াতেও উল্লেখ আছে।”

দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, আপনার উল্লিখিত বাংলা বুখারীর মধ্যে যে ‘বুখারী শরীফের’ ৬৫৫ নং হাদীস শরীফের বরাতে মসজিদের ভিতর জানাযা পড়তে জায়িয বলা হয়েছে তা সম্পূর্ণই ভুল, মনগড়া ও অশুদ্ধ বক্তব্য।

কেননা, ‘বুখারী শরীফের’ ৬৫৫ নং হাদীস শরীফের কোথাও মসজিদে জানাযা পড়ার কোন প্রমাণ নেই। বরং উক্ত হাদীস শরীফে মসজিদের বাইরেই জানাযা পাড়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়।

যেমন, উক্ত হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে,

ان النبى صلى الله عليه وسلم صف بهم بالمصلى.

অর্থঃ- “আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাজ্জাশীর জানাযা পড়ার জন্য হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণসহ ঈদগাহ্ েকাতার করলেন।”

উক্ত হাদীস শরীফে স্পষ্টই “مصلى” ‘মুছাল্লা’ শব্দ উল্লেখ আছে। “مسجد” ‘মসজিদ’ শব্দ উল্লেখ নেই। আর মুহাদ্দিসগণ ‘মুছাল্লা’ দ্বারা ঈদগাহ্ বা জানাযার জন্য নির্ধারিত স্থানকেই বুঝিয়েছেন।

আরো উল্লেখ আছে যে,

فرجما قريبا من موضع الجنائز عند المسجد.

অর্থঃ- “…. তাদের উভয়কে রজম করা হলো, মসজিদের নিকটবর্তী জানাযার জন্য নির্ধারিত স্থানের কাছে।”           ‘বুখারী শরীফে’ বর্ণিত এ হাদীস শরীফ দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, মসজিদের ভিতরে নয় বরং মসজিদের বাইরে, মসজিদের নিকটবর্তী স্থানেই জানাযার জন্য স্থান নির্ধারিত ছিলো। কাজেই ‘বুখারী শরীফের’ বর্ণনা দ্বারা মসজিদের বাইরের কথাই প্রমাণিত হয়।

এ প্রসঙ্গে ‘বুখারী শরীফের’ বিখ্যাত শরাহ্ “উমদাতুল ক্বারী”-এর ৮ম জিঃ, ১৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ولعل غرض البخارى النفى بان لايصلى عليها فى المسجد بدليل تعيين رسول الله صلى الله عليه وسلم موضع الجنازة عند المسجد.

অর্থঃ- “… সম্ভবতঃ হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি মসজিদে জানাযা নিষেধ প্রমাণ করার উদ্দেশ্যেই বুখারী শরীফে উক্ত ‘বাব বা পরিচ্ছদ’ এনেছেন। অর্থাৎ তিনি এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে জানাযা পড়েননি। আর এক্ষেত্রে তার দলীল হলো রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক মসজিদের নিকটে জানাযার জন্যে (পৃথক) স্থান নির্ধারণ করেন।”

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, বুখারী শরীফের ৬৫৫নং হাদীস শরীফের কোথাও মসজিদের ভিতরে জানাযা পড়ার প্রমাণ নেই। বরং উক্ত হাদীস শরীফ ও তার ব্যাখ্যা দ্বারা মসজিদের বাইরে জানাযা পড়া ও মসজিদের ভিতরে জানাযা নিষেধ হওয়াই প্রমাণিত হয়।

তৃতীয়তঃ বলতে হয় যে, হ্যাঁ, হানাফীদের কেউ কেউ বলেছেন যে, যদি লাশ বাইরে থাকে তবে মাকরূহ্ হবেনা। কিন্তু তাদের এ মতটি ফতওয়াগ্রাহ্য বা ছহীহ্ মত নয়।

বরং ফতওয়াগ্রাহ্য বা ছহীহ্ মত হলো, লাশ বাইরে থাকুক অথবা ভিতরে থাকুক উভয় অবস্থাতেই মসজিদের ভিতর জানাযা পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী। যা ফতওয়ায়ে আলমগীরী কিতাবের ইবারত থেকে পূর্বেই স্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

চতুর্থতঃ বলতে হয় যে, আরব দেশগুলোর কোথাও কোথাও জানাযা মসজিদের ভিতর আদায় করে থাকে। তা মূলতঃ শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাব মুতাবিক আদায় করে থাকে।

কেননা, সেখানে শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাবের অনুসারীই বেশী।

আর পূর্বেই বলা হয়েছে যে, হানাফী ও মালিকী মাযহাব মতে মসজিদের ভিতরে জানাযা পড়া মাকরূহ কিন্তু শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাব মতে বিনা ওজরেও মসজিদে জানাযা পড়া জায়িয।

কাজেই তারা যদি শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাব অনুসারী হিসেবে তা করে থাকে তাহলে তাদের জন্য জায়িয রয়েছে।

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, আমাদের হানাফী মাযহাব মতে ছহীহ্ ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত হলো, “মসজিদের ভিতরে জানাযা পড়া চাই লাশ বাইরে থাকুক অথবা ভিতরে থাকুক তা মাকরূহ তাহরীমীর অন্তর্ভূক্ত।

তবে শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাব মুতাবিক মসজিদের ভিতরে জানাযা পড়া জায়িয। এটাই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া। এর বিপরীত মত পোষণকারী ও আমলকারী বিদয়াতী ও গোমরাহ।

{দলীলসমূহঃ (১) বুখারী, (২) মুসলিম, (৩) আবূ দাউদ, (৪) ইবনে মাযাহ্, (৫) নাসাঈ, (৬) ইবনে আবী শায়বা, (৭) বাইহাক্বী, (৮) ফতহুল বারী, (৯) উমদাতুল ক্বারী, (১০) ইরশাদুস্ সারী, (১১) শরহে নববী, (১২) বযলুল মাযহুদ, (১৩) আলমগীরী, (১৪) খুলাছা, (১৫) ফতহুল ক্বদীর, (১৬) বাহরুর রায়িক, (১৭) ফিকায়া, (১৮) ইনায়া, (১৯) হিদায়া, (২০) শরহে বিকায়া, (২১) শরহুন্ নিকায়া, (২২) দুররুল মুখতার, (২৩) কাফী, (২৪) উমদাতুর রিয়ায়া, (২৫) মারাকিউল ফালাহ্, (২৬) বাহরে শরীয়ত ইত্যাদি}

কুরবানীর জরুরী মাসয়ালা

মুহম্মদ সোলায়মান আলী সরকার

নাজিমখান, কুড়িগ্রাম

সুওয়ালঃ কুরবানী করার সুন্নতী পদ্ধতি এবং নিয়ত জানালে খুশি হবো।

জাওয়াবঃ  কুরবানীর পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পা পশ্চিম দিকে রেখে অর্থাৎ ক্বিবলামুখী করে শোয়ায়ে পূর্ব দিক থেকে চেপে ধরতে হবে, তারপর কুরবানী করতে হবে। আর  কুরবানী করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, সীনার উপরিভাগ এবং কক্তনালীর মাঝামাঝি স্থানে যেন জবেহ করা হয়। আরো উল্লেখ্য যে, গলাতে চারটি রগ রয়েছে, তন্মধ্যে গলার সম্মূখভাগে দু’টি- খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী এবং দু’পার্শ্বে দু’টি রক্তনালী। এ চারটির মধ্যে খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং দু’টি রক্তনালীর মধ্যে একটি অবশ্যই কাটতে হবে। অর্থাৎ চারটি রগ বা নালীর মধ্যে তিনটি অবশ্যই কাটতে হবে, অন্যথায় কুরবানী হবেনা। যদি সম্ভব হয়, তবে ছুরি চালানোর সময় বেজোড় সংখ্যার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

কুরবানীর নিয়ত ঃ- (জবেহ্ করার পূর্বে)

انى وجهت وجهى للذى فطر السموت والارض حنيفا وما انا من المشركين. ان صلاتى ونسكى ومحياى ومماتى لله رب العلمين لاشريك له و بذلك امرت وانا من المسلمين اللهم منك ولك.

উচ্চারণঃ- “ইন্নী ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাত্বারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না ছলাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহ্ইয়া ইয়া ওয়া মামাতী লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। লা শারীকাল্লাহু ওয়া বি যালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা।”

এ  দোয়া  পড়ে “বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবর” বলে জবেহ করতে হবে। জবেহ করার পর এ দোয়া পড়বে-

اللهم تقبله منى كما تقبلت من حبيبك سيدنا محمد صلى الله عليه وسلم وخليلك ابراهيم عليه السلام.

উচ্চারণঃ- “আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বালহু মিন্নী কামা তাক্বাব্বালতা মিন হাবীবিকা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও খালীলিকা ইব্রাহীমা আলাইহিস সালাম।”

যদি নিজের কুরবানী হয়, তবে منى (মিন্নী) বলতে  হবে। আর যদি অন্যের কুরবানী হয়, তবে من (মিন) শব্দের পর যার বা যাদের কুরবানী, তার বা তাদের নাম উল্লেখ করতে হবে। আর যদি অন্যের সাথে শরীক হয়, তাহলে منى (মিন্নী)ও বলবে, অতঃপর من (মিন) বলে অন্যদের নাম বলতে হবে। কেউ যদি উপরোক্ত নিয়ত না জানে, তাহলে জবেহ করার সময় শুধু বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবর বলে কুরবানী করলেও শুদ্ধ হয়ে যাবে।

কারণ নিয়ত অন্তরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তবে অবশ্যই প্রত্যেক জবেহকারীর উচিৎ উপরোক্ত নিয়ত শিক্ষা করা। কেননা উপরোক্ত নিয়ত পাঠ করে কুরবানী করা সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত।

{দলীলসমূহঃ- (১) আহমদ, (২) আবূ দাউদ, (৩) তিরমিযী, (৪) দারেমী ইবনে মাযাহ্, (৫) বজলূল মযহুদ, (৬) মিশকাত, (৭) মিরকাত, (৮) মুজাহেরে হক্ব, (৯) লুময়াত, (১০) ত্বীবী, (১১) তালিক্ছ্ছুবী, (১২) আশয়াতুল লুময়াত, (১৩) আলমগীরী, (১৪) শামী, (১৫) দুররুল মুখতার, (১৬) আইনুল হিদায়া, (১৭) বাহর ইত্যাদি।}

ক্বারী মুহম্মদ ছিদ্দীকুল আলম বাদশা

চান্দিনা, কুমিল্লা

সুওয়ালঃ হালাল পশুর কোন কোন অংশ খাওয়া নিষিদ্ধ?

জাওয়াবঃ কুরবানী বা হালাল পশুর ৮টি জিনিস খাওয়া যাবেনা। (১) দমে মাছফুহা বা প্রবাহিত রক্ত হারাম, (২) অন্ডকোষ, (৩) মুত্রনালী, (৪) পিত্ত, (৫) লিঙ্গ, (৬) যোনি, (৭) গদুদ বা গুটলী মাকরূহ্ তাহ্রীমী, (৮) শিরদাড়ার ভিতরের মগজ, এটা কেউ মাকরূহ্ তাহ্রীমী, আবার কেউ মাকরূহ্ তান্যিহী বলেছেন।   {দলীলসমূহঃ (১) শামী, (২) ফতওয়ায়ে আমিনিয়া, (৩) উমদাতুল কালাম, (৪) কিতাব শাইখুল ইসলাম, (৫) মাতালিবুল মু’মিনীন ইত্যাদি।

মুহম্মদ সিরাজুল ইসলাম (সাহীন)

ডোমার, নীলফামারী

সুওয়ালঃ কুরবানীর কিছুদিন আগে নাকি হাত ও পায়ের নখ কাটা, মোছ ছাটা এবং মাথার চুল ইত্যাদি কাটা যায় না? কুরবানী করার পর কাটতে হয়! কথাটা কতটুকু সত্য? বিস্তারিত জানাবেন।

জাওয়াবঃ  হ্যাঁ, যারা কুরবানী দেয়ার নিয়ত রাখেন, তাদের পক্ষে যিলহজ্বের চাঁদ ওঠার পর থেকে এই চাঁদের দশ তারিখ কুরবানী করা পর্যন্ত মাথার চুল হাতের ও পায়ের নখ ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব।

 যেমন, হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ام سلمة قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من راى هلال ذى الحجة واراد ان يضحى فلا ياخذ من شعره ولا من اظفاره.

অর্থঃ- হযরত উম্মে সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি যিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখলো এবং কুরবানী করার নিয়ত করলো, সে যেন (কুরবানী না করা পর্যন্ত) তার শরীরের চুল, নখ ইত্যাদি না কাটে।” (মুসলিম শরীফ)

মূলতঃ ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য মত হলো এই যে, যারা কুরবানী করবে এবং যারা কুরবানী করবেনা, তাদের উভয়ের জন্যই উক্ত আমল মুস্তাহাব ও ফযীলতের কারণ।

আর এ ব্যাপারে দলীল হলো এ হাদীস শরীফ। যেমন, হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে,

عن عبد الله بن عمر وقال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم امرت بيوم الاضحى عيدا جعله الله لهذه الامة قال له رجل يارسول الله ارايت ان لم اجد الا منيحة انثى افاضحى بها قال لا ولكن خذ من شعرك واظفارك وتقص شاربك وتحلق عانتك فذلك تمام اضحيتك عند الله.

অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমি কুরবানীর দিনকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। আল্লাহ্ পাক উক্ত দিনটিকে এই উম্মতের জন্য ঈদ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এক ব্যক্তি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলো, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি যদি একটি মাদী মানীহা (উটনী) ব্যতীত অন্য কোন পশু কুরবানীর জন্য না পাই, তাহলে আপনি কি (আমাকে) অনুমতি দিবেন যে, আমি উক্ত মাদী মানীহাকেই কুরবানী করবো।’ জবাবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- “না, তুমি উক্ত পশুটিকে কুরবানী করবেনা। বরং তুমি কুরবানীর দিনে তোমার (মাথার) চুল ও হাত-পায়ের নখ কাটবে। তোমার গোঁফ খাট করবে এবং তোমার নাভীর নীচের চুল কাটবে, এটাই আল্লাহ্ পাক-এর নিকট তোমার পূর্ণ কুরবানী অর্থাৎ এর দ্বারা তুমি আল্লাহ্ পাক-এর নিকট কুরবানীর পূর্ণ সওয়াব পাবে।” (আবু দাউদ শরীফ)

উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে যে, যারা কুরবানী করবেনা, তাদের জন্যও জ্বিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানী করার আগ পর্যন্ত নিজ শরীরের চুল, নখ ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব। আর যে ব্যক্তি তা কাটা থেকে বিরত থাকবে, সে একটি কুরবানীর সওয়াব পাবে।

{দলীলসমূহঃ নাসাঈ, মিশকাত, শরহে নববী, বজলুল মাযহুদ, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মুযাহেরে হক্ব ইত্যাদি।}

মুহম্মদ নূরুল ইসলাম

লাখাই, হবিগঞ্জ

সুওয়ালঃ  বর্তমান সময়ে কোন ব্যক্তি যদি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামে ছাগল, বকরী, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি কুরবানী দেয় অথবা গরু, মহিষ, উটের সাত নামের মধ্যে যদি এক নাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারকে দেয়, তবে উক্ত নামের গোশ্তের হুকুম কি? এটা কি সকলে খেতে পারবে? অথবা এ গোশ্ত অছিয়তকৃত গোশ্তের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে কি না?

জাওয়াবঃ হ্যাঁ, উক্ত কুবানীকৃত গোশ্ত সকলে খেতে পারবে। আর এটা অছিয়তকৃত গোশ্তের হুকুমের অন্তর্ভূক্ত হবে না।

কেননা হাদীস শরীফে আছে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বিশেষভাবে কুরবানী করার জন্যে যে নির্দেশ দিয়েছেন এটা তাঁর জন্যই খাছ।

বর্তমান সময়ে কোন ব্যক্তি যদি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তরফ থেকে কুরবানী দেয়, তবে এটা তার ফযীলত, তথা বারাকাত, ফুয়ুজাত, নিয়ামত, রহ্মত, মাগফিরাত, নাজাত সর্বোপরি আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি লাভ করা ও তার কুরবানী কবুল হওয়ার একটি উছীলা।

কাজেই আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তরফ থেকে যদি কেউ কুরবানী দেয়, তবে উক্ত কুরবানীকৃত গোশ্ত সকলেই খেতে পারবে।

{দলীলসমূহঃ (১) আবূ দাউদ, (২) তিরমিযী, (৩) বজলুল মাযহুদ, (৪) শরহে তিরমিযী, (৫) মিশকাত, (৬) মিরকাত, (৭) লুময়াত, (৮) আশয়াতুল লুময়াত, (৯) ত্বীবী, (১০) তালিক, (১১) মুযাহির ইত্যাদি।}

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ