সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১১৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

মাওলানা মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান

মাওলানা মুহম্মদ মাছূম বিল্লাহ্

মুহম্মদ আসাদুর রহমান,

মুহম্মদ মাইজুর রহমান

ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

 

সুওয়ালঃ  আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম এই তিনটি সংখ্যায় ৩৫৩টি অকাট্য দলীলের ভিত্তিতে প্রদত্ত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ, মুহাক্কিক-মুদাক্কিক ও হক্কানী উলামা-ই-কিরামগণের ফতওয়া মুতাবিক জানতে পারলাম যে, “প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা করানো, ঘরে রাখা সর্বাবস্থায় হারাম।”    অথচ রেযাখানী মুখপত্র নভেম্বর/২০০১ ঈসায়ী সংখ্যায় ছবি সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ফতওয়া প্রকাশ করেছে। যা কিনা মানুষের ঈমান-আমল বিনষ্ট হওয়ার কারণ। রেযাখানীদের ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যের যে বিষয়গুলো আপত্তিকর সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

(ক) রেযাখানীরা ছবি তোলাকে বৈধ বলেছে; কিন্তু দলীল হিসেবে পেশ করেছে ঘরে ছবি রাখা সম্পর্কিত হাদীসসমূহকে।

(খ) .. কতেক উলামা যেসব ছবির শরীর ও ছায়া নেই সেসব ছবিকে বৈধ বলেছেন।

(গ) হুজুর আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুরুর দিকে ছবি তৈরী করা ও সংরক্ষণ করাকে নিষেধ করেছিলেন; কিন্তু পরবর্তীতে অনুমতি দেন।

(ঘ) পূর্ববর্তীদের কেউ কেউ এবং হাম্বলী, শাফেয়ী, মালেকী এমনকি হানাফীদেরও কেউ কেউ নাকি (গায়রে মুজাস্সাম) শরীরবিহীন ছবিকে বৈধ বলেছেন।      (ঙ) সামাজিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে বিশেষ প্রয়োজনে ছবি তোলা বৈধ যা যুগের চাহিদাও।         (চ) প্রত্যেক যুগের ফক্বীহ্, মুফতী, কাজী ও আলিমগণ যুগের চাহিদা অনুযায়ী ফতওয়া দিয়েছেন এবং দেয়া উচিত।          (ছ) ছবি হারাম হওয়ার মূলে হলো গায়রুল্লাহ্র সম্মান ও ইবাদত।   (জ) প্রয়োজনীয় রেকর্ডের জন্য ফাইল বন্দি ছবিসমূহ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের নিকট জ্ঞান ও ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য জানার নিমিত্তে সরকারী-বেসরকারী যাদুঘর বা বিশেষ প্রতিষ্ঠানসমূহে পূর্বের নানা মনীষীগণের ছবি সংরক্ষণ/ধারণ করে রাখা বিশেষ প্রয়োজনে মাকরূহ্ হবেনা। এছাড়াও আরো বহু আপত্তিকর বিষয় তাদের উক্ত ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যে স্থান পেয়েছে।       কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে তাদের উল্লিখিত আপত্তিকর বক্তব্যগুলোর শরয়ী ফায়সালা কামনা করি। জাওয়াবঃ  হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি, সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম)                        উল্লিখিত হাদীস শরীফের পূর্ণ মিছদাক বা নমুনা হচ্ছে রেযাখানীরা। তারা ছবির ব্যাপারে এমন সব বক্তব্য প্রদান করেছে যা কিতাবে দেখা তো দূরের কথা কেউ কোনদিন শুনেওনি। মূলতঃ রেযাখানীরা নিজেদেরকৃত বদ আমলকে ধামা-চাপা দেয়ার উদ্দেশ্যেই মনগড়াভাবে ছবিকে জায়িয করার অপচেষ্টা করেছে।

(ধারাবাহিক)

প্রাণীর ছবি সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত রেযাখানীদের আপত্তিকর ও প্রতারণামূলক বক্তব্য সমূহের খণ্ডন মূলক জবাব- (১)

রেযাখানীদের জালিয়াতী, প্রতারণা ও ঠগবাজীর আর একটি উজ্বল দৃষ্টান্ত

রেযাখানীরা তাদের আমদানীকৃত পীরদের ও নিজেদের ছবি তোলার ন্যায় হারাম কাজটিকে হালাল করার উদ্দেশ্যে মাত্র দুই পৃষ্ঠার একটি বিভ্রান্তিকর রচনায় কত যে মিথ্যাচারিতা, প্রতারণা, জালিয়াতী ও ঠগবাজীর আশ্রয় নিয়েছে তার বহু প্রমাণ আপনারা ইতোমধ্যেই পেয়ে গেছেন।

তাদের ঠগবাজী, জালিয়াতী ও প্রতারণার আরেকটি উজ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে নিম্নোক্ত ইবারতটি যা তারা “বুখারী শরীফের” ব্যাখ্যাগ্রন্থ “ফতহুল বারী” থেকে তাদের স্বপক্ষীয় দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছে।

وقال القرطبى ظاهر الحديث زيد بن خالد عن ابى طلحة الماضى قيل ان الملئكة لا تمتنع من دخول البيت الذى فيه صورة ان كانت رقما فى الثوب وظاهر حديث عائشة المنع ويجمع بينهما بان يحمل حديث عائشة على الكراهة وحديث ابى طلحة على مطلق الجواز وهو لاينافى الكراهة.

রেযাখানীরা উক্ত ইবারতের অর্থ করেছে এভাবে- অর্থাৎ আল্লামা কুরতুবী বলেন, হযরত যায়েদ ইবনে খালেদের হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, ফেরেশতাগণ ঐসব ঘরে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকেন, যাতে পর্দায় অঙ্কিত ছবি থাকে। আর হযরত, আয়িশা ছিদ্দীকা (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা) এর বর্ণনা দ্বারা ফেরেশ্তা না আসাটা বোধগম্য হয়। এ উভয় হাদীসের মধ্যে সমাধান হলো এই যে, হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা) এর হাদীস দ্বারা মাকরূহ হওয়া বুঝায় আর হযরত আবূ তালহা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর হাদীস দ্বারা সাধারণ ভাবে বৈধ হওয়াকে বুঝায়। বৈধ হওয়াটা মাকরূহ হওয়াকে নিষেধ করে না।” (ইবনে হাজর আসকালানী, ফতহুল বারী, ১০ খণ্ড ৩৯২ পৃষ্ঠা)

উল্লেখ্য, রেযাখানীদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে গত সংখ্যায় প্রমাণ করা হয়েছে যে, রেযাখানীরা তাদের বাতিল মতটিকে ছাবিত করার লক্ষ্যে এবং হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে প্রথমতঃ তাদের প্রদত্ত “ফতহুল বারী’ এর উক্ত ইবারতের স্থান বিশেষে ভুল ও মনগড়া অর্থ করেছে।

দ্বিতীয়তঃ তাদের উল্লিখিত ইবারত দ্বারাই প্রাণীর ছবি হারাম প্রমাণিত হয়।

স্মর্তব্য যে, রেযাখানীরা প্রাণীর ছবি তোলাকে জায়িয করার কু’উদ্দেশ্যে বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ “ফতহুল বারী” থেকে যে ইবারতটি উল্লেখ করেছে মূলতঃ তাদের উল্লিখিত ইবারতের দ্বারাও প্রাণীর ছবি হারাম প্রমাণিত হয়। কেননা উক্ত ইবারতে সুস্পষ্টভাবেই একথা উল্লেখ আছে যে,

ان الملئكة لاتمتنع من دخول البيت الذى فيه صورة ان كانت رقما فى الثوب.

অর্থাৎ “মহান আল্লাহ্ পাক-এর রহমতের ফেরেশ্তাগণ ঐ ঘরে প্রবেশ করেন যে ঘরে কাপড় বা ইত্যাদিতে প্রাণহীন বস্তুর ছবি থাকে।”

মূলতঃ উক্ত ইবারত এটাই প্রমাণ করে যে, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশ্তা প্রবেশ করেনা। তাই প্রাণীর ছবি ঘরে রাখা মাকরূহ বা হারাম।

এখন প্রশ্ন হলো, ‘যেখানে প্রাণীর ছবি ঘরে থাকলে ফের্শেতা প্রবেশ করেনা সেখানে সকলের মতেই প্রাণীর ছবি তোলা বৈধ বা জায়িয হয় কি করে?’ রেযাখানীরা কি প্রমাণ করতে পারবে যে, তাদের উল্লিখিত ইবারতের কোথাও প্রাণীর ছবি তোলাকে বৈধ বলা হয়েছে?    বস্তুতঃ উল্লিখিত ইবারতের কোথাও প্রাণীর ছবিকে বৈধ বলা হয়নি বরং সূক্ষ্মভাবে ফিকির করলে উক্ত ইবারতের দ্বারা প্রাণীর ছবি তোলা হারাম হওয়াই প্রমাণিত হয়। রেযাখানীরা তাদের জিহালতীর কারণেই উক্ত ইবারতের সঠিক মর্ম অনুধাবনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

তৃতীয়তঃ রেযাখানীরা প্রাণীর ছবি তোলা জায়িয প্রমাণ করার ক্ষেত্রে উক্ত ইবারত উল্লেখ করে চরম জালিয়াতী ও প্রতারণার পরিচয় দিয়েছে।

স্মর্তব্য যে, রেযাখানীরা “প্রাণীর ছবি তোলা জায়িয” একথা প্রমাণ করার উদ্দেশ্যেই মূলতঃ উক্ত ইবারত উল্লেখ করেছে। অথচ উক্ত ইবারত দ্বারা কস্মিনকালেও প্রাণীর ছবি তোলা জায়িয প্রমাণিত হয় না। বরং উক্ত ইবারতে মূলতঃ ঘরে ছবি রাখার বিষয়টিই ব্যক্ত হয়েছে।

অর্থাৎ ‘কোন্ ধরণের ছবি থাকলে ঘরে ফেরেশ্তা প্রবেশ করে আর কোন্ ধরণের ছবি থাকলে ফেরেশ্তা প্রবেশ করেনা।’ সে বিষয়টিই এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এ বিষয়ে সকলেই একমত যে, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে সে ঘরে ফেরেশ্তা প্রবেশ করেনা। আর যে ঘরে প্রাণহীন বস্তুর ছবি থাকে সে ঘরে ফেরেশ্তা প্রবেশ করে।

মূলতঃ রেযাখানীদের সাথে যে ইখতিলাফ তা ফেরেশ্তা প্রবেশ করা বা না করা নিয়ে নয়। বরং প্রাণীর ছবি তোলা জায়িয বা নাজায়িয নিয়ে। অথচ তাদের উল্লিখিত ইবারতের দ্বারা এ বিষয়টি মোটেও প্রমাণিত হয়না।

মূলকথা হলো, রেযাখানীরা প্রাণীর ছবিকে জায়িয করার উদ্দেশ্যে ‘ফতহুল বারী’ থেকে যে ইবারতটি দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছে তা এক্ষেত্রে মোটেও দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা ইবারতের কোথাও বলা হয়নি যে, “প্রাণীর ছবি তোলা জায়িয। বরং উক্ত ইবারত দ্বারা এর বিপরীতটাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।” (চলবে)

সাইয়্যিদ মুহম্মদ মোক্তাদুল ইসলাম (মিলন)

রঈসুল মজলিশ- ছাত্র আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত সুবহানীঘাট, সিলেট।

সুওয়ালঃ  রেযাখানী মুখপত্র ডিসেম্বর/২০০০ ঈসায়ী সংখ্যায় “তাফসীরে রুহুল বয়ান, বুখারী, গুনিয়াতুত তালেবীন, রেজভীয়া” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “সহীহ্ মুসলিম শরীফসহ” অনেক নির্ভরযোগ্য কিতাবে নফল নামায বিশেষতঃ ক্বদর ও বরাতের নফল নামায জামাত সহকারে আদায় করা বৈধ….।”   আর আপনারা “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” লিখেছেন, “তারাবীহ, ছলাতুল কুছুফ (সূর্য গ্রহণের নামায), ছলাতুল ইস্তিস্কা (বৃষ্টির নামায) এই তিন প্রকার নামায ব্যতীত যেমন লাইলাতুল ক্বদর, লাইলাতুল বরাত, তাহাজ্জুদ, চাশ্ত, আওয়াবীন ইত্যাদি নফল নামাযসমূহ ইমামের সাথে চারজন মুক্তাদীসহ জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্।”  কোনটি সঠিক?  আর “বুখারী, মুসলিম শরীফে” কি “ক্বদর” ও বরাতের” নফল নামায জামায়াতের সাথে আদায় করার কথা উল্লেখ আছে? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াবঃ  রেযাখানীরা তাদের মুখপত্রে “তাফসীরে রুহুল বয়ান, বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, গুনিয়াতুত্ তালেবীন এবং রেজভীয়া” কিতাবের বরাত দিয়ে নফল নামায বিশেষতঃ “শবে বরাত”, “শবে ক্বদরের” নফল নামায আযান-ইক্বামত ছাড়া জামায়াত সহকারে আদায় করা যে বৈধ বলেছে, তা আমরা আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এর বিগত সংখ্যাগুলোতে বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে প্রমাণ করেছি যে, “তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, জিহালতপূর্ণ, জালিয়াতী ও প্রতারণামূলক।”         কেননা, রেযাখানীরা কিতাবের নাম দিয়ে যে বক্তব্য প্রদান করেছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। বরং তার সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ, তারা কিতাবের ইবারত, সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে মনগড়া বক্তব্য প্রদান করেছে এবং ক্ষেত্র বিশেষ নিজের ভ্রান্ত মতকে টিকিয়ে রাখতে কিতাবের ইবারত কারচুপি করেছে।

 

(ধারাবাহিক)

বর্তমান সংখ্যায় রেযাখানীদের দলীলবিহীন  ও মনগড়া বক্তব্য খণ্ডন করা হলো

উল্লেখ্য, রেযাখানীরা বলেছে, “শব-এ ক্বদর ও শব-এ বরাত ইত্যাদি সম্মানিত মহিমান্বিত রাত সমূহে নফল নামায জামাতের সাথে পড়াকে মাকরূহে তাহ্রীমি ও বিদআতে সাইয়্যিআহ্ বলে ফতোয়া দেয়া মূলতঃ সীমালঙ্ঘন, ভণ্ডামী ও মূর্খতার পরিচায়ক।”

এর জবাবে বলতে হয় যে,  বিগত সংখ্যায় আমরা  আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাতে দলীলের ভিত্তিতে প্রমাণ করে দিয়েছি যে, রেযাখানীদের উক্ত বক্তব্য মুতাবিক প্রথম দরজার সীমালঙ্ঘনকারী, প্রথম দরজার ভণ্ড এবং প্রথম দরজার মূর্খ হলো তাদের গুরু রেযা খাঁ। আর দ্বিতীয় দরজার সীমালঙ্ঘনকারী, দ্বিতীয় দরজার ভণ্ড ও দ্বিতীয় দরজার মূর্খ হলো মৌলভী আমজাদ আলী।        দলীল- তাদের গুরু রেযা খাঁর “ফতওয়ায়ে রেজভীয়া” এবং মৌলভী আমজাদ আলীর “বাহারে শরীয়ত।”

উল্লেখ্য, “বাহরুর রায়িক, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, খুলাছাতুল ফতওয়া, আদদুররুল মুখতার, গায়াতুল আওতার, রদ্দুল মুহতার, শামী, আল কুহেস্তানী, শরহুল মুনিয়া, শরহুন নিক্বায়া, শরহে ইলিয়াস, মিনহাতুল খালিক্ব, ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া, হাশিয়ায়ে তাহতাবী আলা মারাকিউল ফালাহ্, আইনী শরহে হিদায়া, হাশিয়ায়ে শরহে বিকায়া লি চলপী, ফতওয়ায়ে সা’দিয়াহ, জাওহারাতুন্ নাইয়ারাহ্, মাবসূত লিস সারাখসী, মাছাবাতা বিস্ সুন্নাহ্, কিতাবুল আছল, বাদায়েউছ ছানায়ে ফি তারতীবিশ্ শারায়ে, ফতহুল ক্বাদীর, কিতাবুল ফিক্বাহ্, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, হিলইয়া, হাবিল কুদসী, ইলাউস্ সুনান, আহ্সানুল মাসায়িল, কিফায়া,  নিহায়া, মাকতুবাতে ইমামে রব্বানী, ফতওয়ায়ে সিরাজিয়া, গিয়াছিয়া, শাফিয়াহ্, কিতাবুজ্ জিয়া, শরহে শামায়িল, গুনিয়াতুল মুছল্লী, ইমদাদুল আহ্কাম, ইলমুল ফিক্বাহ ইত্যাদি সকল কিতাবের ভাষ্য হলো, তারাবীহ, ছলাতুল কুসূফ (সূর্য গ্রহণের নামায) ছলাতুল ইস্তিস্কা (বৃষ্টির নামায) এই তিন প্রকার নামায ব্যতীত অন্য যে কোন নফল নামায ইমামের সাথে চারজন মুক্তাদীসহ জামায়াতে আদায় করা সকল ইমাম, মুজতাহিদ ও ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম-এর ঐক্যমতে মাকরূহ্ তাহ্রীমী।

এছাড়া “আশবাহ্ ওয়ান্ নাজায়ের” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২১৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

واعلم ان النفل بالجماعة على سبيل التداعى مكروه ماعدا التراويح وصلوة الكسوف والاستسقاء فعلم ان كلا من الرغائب ليلة اول جمعة من رجب وصلوة البرأة وصلاة القدر ليلة السبع العشرين من رمضان بالجماعة بدعة مكروهة.

অর্থঃ- “জেনে রাখ! নিশ্চয় নফল নামায ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী। তবে তারাবীহ্, ছলাতুল কুসূফ (সূর্যগ্রহণ) ও ইস্তেস্কার (বৃষ্টির) নামায ব্যতীত। সুতরাং ছলাতুর রাগায়িব (অর্থাৎ রজব মাসের প্রথম জুমুয়ার রাত্রির নামায), শবে বরাতের রাত্রির নফল নামায এবং শবে ক্বদরের রাত্রির নফল নামায (অর্থাৎ রমাদ্বান মাসের ২৭ তারিখ রাত্রির নামায) জামায়াতে পড়াও মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্। “বাহরুর রায়িক” কিতাবের ২য় খণ্ডের ৫২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ليلة القدر وليلة النصف من شعبان …… وغيرها تصلى فرادى.

অর্থঃ-“শবে ক্বদর, শবে বরাত ….. ইত্যাদি নফল নামায গুলো একাকী ভাবে আদায় করবে।”

এ ফতওয়া দেয়ার কারণেই যদি তা সীমালঙ্ঘন, ভণ্ডামী ও মূর্খতার পরিচায়ক হিসেবে সাব্যস্ত হয় তাহলে উপরোক্ত সর্বজনমান্য, সর্বজন স্বীকৃত, বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ্ ও ফওতয়ার কিতাবের মুছান্নিফ বা লিখক, ইমাম-মুজতাহিদ, ছলফে-ছলিহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণও কি রেযাখানীদের বক্তব্য মুতাবিক সীমালঙ্ঘন ও ভণ্ডামী করে মুর্খতার পরিচয় দিয়েছেন? (নাউযুবিল্লাহ)

আরো উল্লেখ্য যে, শবে বরাত, শবে ক্বদর, রাগায়িব ইত্যাদি নফল নামায শুধু জামায়াতে আদায় করাই মাকরূহ্ তাহ্রীমী নয়; বরং ইত্যাদি নফল নামায জামায়াতে আদায় করার জন্য ইক্তিদা করাও মাকরূহ তাহরীমী।

যেমন, “ফতওয়ায়ে বাযযাযিয়াহ” কিতাবে উল্লেখ আছে,

كره الاقتداء فى صلاة الرغائب وصلاة البراءة وليلة القدر.

অর্থাৎ- “লাইলাতুল ক্বদর নামাযে, বরাতের নামাযে এবং রাগায়িবের নামাযে ইক্তিদা করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী।”

“আদ দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে,

يكره الاقتداء فى صلاة رغائب وبراءة وقدر.

অর্থাৎ- “ক্বদরের নামাযে, বরাতের নামাযে এবং রাগায়িবের নামাযে ইক্তিদা করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী।”

 “গায়াতুল আওতার” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

مكروه هى اقتداء كرنا صلوة رغائب ميى اور صلوة براءت اور صلوة قدر ميى.

অর্থাৎ- “শবে ক্বদরের নামাযে, শবে বরাতের নামাযে এবং রাগায়িবের নামাযে ইক্তিদা করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী।”      সুতরাং রেযাখানীদের বক্তব্য মুতাবিক উপরোক্ত কিতাবের মুছান্নিফ বা লিখকগণও কি সীমালঙ্ঘন ও ভণ্ডামী করে মুর্খতার পরিচয় দিয়েছেন? (নাউযুবিল্লাহ) (চলবে)

(উল্লেখ্য, রেযাখানীদের উপরোক্ত ভুলের সংশোধনীমূলক জাওয়াব মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৮৬তম সংখ্যাতে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৮৯তম সংখ্যা হতে ধারাবাহিক ভাবে দেয়া হচ্ছে।)

মুহম্মদ মুহিউদ্দীন কাওছার

চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম।

সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলাম অক্টোবর/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে আখিরী যোহ্র পড়া সম্পর্কে নিম্নোক্ত ৩৮০৪নং জিজ্ঞাসার-সমাধান ছাপা হয়-

 জিজ্ঞাসাঃ আখেরী যোহর পড়তেই হবে। না পড়লে গুনাহ্গার হতে হবে। আর তা পড়তে হবে ফরয নিয়্যাতে। কথাটা শরীয়ত সম্মত কি?

সমাধানঃ কোন কোন কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, যেসব স্থানে জুম্আ সহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ হবে সেসব স্থানে জুম্আ পড়ার পর চার রাকাআত ‘ইহ্তিয়াতুয্ যোহর’ (যা আমাদের দেশে আখেরী যোহর নামে পরিচিত) পড়ে নিতে হবে। এই বক্তব্যটি বর্ণনা সূত্রে ভিত্তিহীন প্রমাণিত হওয়ার কারণে আমল উপযোগী নয়। মূলতঃ সন্দিহান অবস্থায় যখন এ নামায পড়ার অনুমতি শরীয়ত প্রদান করে না। বরং স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে যোহর অথবা জুম্আ পড়ার কথা বলা হয়। তখন যেখানে জুম্আ সহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই, সেখানে বাধ্যতামূলকভাবে আখেরী যোহর পড়তেই হবে মনে করা নিছক অজ্ঞতা ছাড়া কিছু নয়। সুতরাং প্রশ্নোল্লিখিত আখেরী যোহর পড়তেই হবে, না পড়লে গুনাহ্গার হতে হবে এবং তা পড়তে হবে ফরযের নিয়্যাতে- একথাগুলো সম্পর্ণ মনগড়া ও শরীয়ত পরিপন্থী।- (বাহ্রুর রায়েক্ব- ২/১৩৯, ইমদাদুল ফাত্ওয়া- ১/৬৩৬, ৬৩৭, রদ্দুল মুহ্তার- ২/১৪৬, ফাত্ওয়ায়ে রশীদিয়্যাহ্- ৪২৭)

এখন আমার সুওয়াল হলো- আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়া সম্পর্কে হাটহাজারীর মুখপত্র মাসিক মুঈনুল ইসলাম পত্রিকার উক্ত জিজ্ঞাসার সমাধান সঠিক হয়েছে কি? নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লাহ্সহ সঠিক জাওয়াব দিবেন।

জাওয়াবঃ আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়া সম্পর্কে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত পত্রিকার উক্ত জিজ্ঞাসার সমাধান সম্পূর্ণই ভুল, মনগড়া, বানোয়াট, দলীলবিহীন এবং মূর্খতাসূচক হয়েছে।

প্রথমতঃ ‘কোন্ কোন্ কিতাবের বর্ণনা সূত্রে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়া ভিত্তিহীন প্রমাণিত হওয়ার কারণে আমল উপযোগী নয়’ তা হাটহাজারীর মৌলভীরা কিতাবের নাম ও ইবারতসহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেনি।

দ্বিতীয়তঃ আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের নির্দেশ শুধুমাত্র জুমুয়ার নামায ছহীহ্ হওয়ার সন্দেহের কারণে দেয়নি। বরং   ইমাম, মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ প্রধানতঃ দুটি কারণেই জুমুয়ার দিন জুমুয়ার নামায আদায় করার পর চার রাকায়াত “আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র” পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রথম কারণ

 

মিছর বা শহরের ব্যাখ্যায় ইমাম, মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মধ্যে ইখতিলাফ বা মতভেদ হওয়ায়।

যেমন, ১. ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে স্থানে অনেক গুলো বাজার, গলি ও পল্লী রয়েছে, একজন বিচারক (কাজী) রয়েছেন, যিনি অধিবাসীদের খোঁজ-খবর নেন। এবং একজন আলিম বা মুফতী রয়েছেন, যিনি শরীয়তের দৃষ্টিতে ফতওয়া প্রদান করেন। সে স্থানকেই মিছর বা শহর বলে। ২. ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর একটি মত হলো-

كل موضع له امير وقاضا ينفذ الاحكام ويقيم الحدود فهو مصر جامع.

অর্থাৎ- “যে স্থানে একজন আমীর ও একজন ক্বাজী বা বিচারক রয়েছেন, যাদের হুকুমে সেখানে হদ-কেছাছ বা শরয়ী আইন জারী হয় সে স্থানকেই মিছর বা শহর বলে।” ৩. ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর আরেকটি মত হলো-

لو اجتمعوا اكبر مساجدهم لم يسعهم ذالك فهو مصر جامع.

অর্থাৎ- “যে স্থানের সমস্ত লোক তাদের স্থানীয় বড় মসজিদে একত্রিত হলে স্থান সঙ্কুলান হয়না সে স্থানকেই মিছর বা শহর বলে।”

দ্বিতীয় কারণ

ইমাম আবূ ই্উসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মধ্যে “এক শহরে একাধিক মসজিদে জুমুয়া জায়িয হওয়ার ব্যাপারে ইখতিলাফ বা মতভেদ হওয়ায়।” অর্থাৎ হযরত ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ফতওয়া হলো,

لايجوز فى مسجدين فى مصر الا ان يكون بينهما نهر كبير وايضا …….. يجوز فى موضعين اذا كان مصرا عظيما لا فى ثلاثة.

অর্থাৎ- “এক শহরে দুই মসজিদে জুমুয়া জায়িয হবেনা, যদি দুই মসজিদের মাঝখানে বড় নদী না থাকে। তিনি আরো বলেন, ….. “শহর যদি অত্যাধিক বড় হয় তবে সেখানে দুই মসজিদে জুমুয়া জায়িয হবে, তবে ততোধিক মসজিদ হলে জুমুয়া জায়িয হবেনা।”

আর হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ফতওয়া হলো-

يجوز تعددها مطلقا ورواه عن ابى حنيفة ولهذا قال السرخسى الصحيح فى مذهب ابى حنيفة جواز …… فى مصر واحد فى مسجدين فاكثروا به تاخذ.

অর্থাৎ- “বিনা শর্তে এক শহরে একাধিক স্থানে জুমুয়া জায়িয। এটা ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন। এজন্যে ইমাম সারাখসী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট ছহীহ্ মত হলো, এক শহরে দুই বা ততোধিক মসজিদে জুমুয়া পড়া জায়িয। তিনি বলেন, আমরা এ মতটিকেই গ্রহণ করেছি।”

উপরোক্ত ইখতিলাফ বা মতভেদের কারণে পরবর্তী ইমাম-মুজতাহিদ বা ফক্বীহ্গণ ইজতিহাদ করতঃ ফতওয়া দেন যে, ইহ্তিয়াত বা সাবধানতার জন্যে জুমুয়ার নামায আদায় করার পর চার রাকায়াত ইহ্তিয়াতুয্ যোহর বা আখিরী যোহরের নিয়তে পড়া “মুস্তাহ্সান” বা উত্তম।

যেমন বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাব “রদ্দুল মুহ্তার” কিতাবের ২য় খণ্ডের ১৪৫ ও ১৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,

لما ابتلى أهل مرو بإقامة الجمعتين فيها مع اختلاف العلماء فى جوازهما أمر أئمتهم بالأربع بعدها حتما احتياطا لايمنع الشريعة الاحتياط للتقوى.

অর্থঃ- “একই শহরে একাধিক মসজিদে জুমুয়া জায়িয হওয়ার ব্যাপারে উলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ইখতিলাফ থাকা সত্ত্বেও যখন শহরবাসীগণ একই শহরে একাধিক মসজিদে জুমুয়া পড়তে লাগলেন তখন ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ তাদেরকে ইহ্তিয়াত বা সাবধানতার জন্য জুমুয়ার পর চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র নামায ওয়াজিব হিসেবে আদায় করার জন্য নির্দেশ দেন। কেননা তাক্বওয়ার জন্য ইহ্তিয়াত্ বা সাবধানতা অবলম্বন করতে শরীয়ত নিষেধ করেনি।”

“বাহরুর রায়িক্ব” কিতাবের ২য় খণ্ডের ১৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ولما ابتلى أهل مرو باقامة الجمعتين بها مع اختلاف العلماء فى جوازهما …… أمر أئمتهم باداء الاربع بعد الجمعة حتما احتياطا.

অর্থঃ- “একই শহরে একাধিক মসজিদে জুমুয়া জায়িয হওয়ার ব্যাপারে উলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ইখতিলাফ থাকা সত্ত্বেও যখন শহরবাসীগণ একই শহরে একাধিক মসজিদে জুমুয়া পড়তে লাগলেন তখন ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ তাদেরকে ইহ্তিয়াত বা সাবধানতার জন্য জুমুয়ার পর চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র নামায ওয়াজিব হিসেবে আদায় করার জন্য নির্দেশ দেন।”

 অতএব, প্রমাণিত হলো যে, “জুমুয়া ছহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহে … ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়তে হবে।” হাটহাজারীর অখ্যাত পত্রিকার এ বক্তব্য সম্পূর্ণ সত্য নয়।

তৃতীয়তঃ সন্দেহ থেকে বাঁচার জন্য ইহ্তিয়াত বা সাবধানতা অবলম্বন করে চার রাকায়াত ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র বা আখিরী যোহরের নামায পড়ার অনুমতি শরীয়তই প্রদান করেছে।

যেমন, “আন্ নাহরুল ফায়িক্ব” কিতাবে উল্লেখ আছে,

أنه لاينبغى التردد فى ندبها على القول بجواز التعدد خروجا عن الخلاف اه وفى شرح الباقانى هو الصحيح وبالجملة فقد ثبت أنه ينبغى الاتيان بهذه الاربع بعد الجمعة، لكن بقى الكلام فى تحقيق أنه واجب أومندوب؟ قال المقدسى؛ ذكر ابن الشحنة عن جده التصريح بالندب، وبحث فيه بأنه ينبغى أن يكون عندمجرد التوهم، أما عند قيام الشك والاشتباه فى صحة الجمعة فالظاهر الوجوب، ونقل عن شيخه ابن الهمام مايفيده.

অর্থঃ- “একই শহরে একাধিক জুমুয়া জায়িয একথা স্বীকার করলেও ইখতিলাফী মাসয়ালায় সন্দেহ দূর করার জন্য আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়া যে মুস্তাহাব হবে, এতে সন্দেহ করা উচিৎ নয়। “শরহুল বাক্বানী’তে লিখিত আছে, এটা ছহীহ্ মত। মূলকথা, উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়াই উচিৎ। কিন্তু এখন বিবেচনার বিষয় হচ্ছে যে, আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র ওয়াজিব না মুস্তাহাব? (সমস্যার সমাধানে) মুকাদ্দাসী বলেছেন, ইবনে শিহনা রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর দাদা হতে এটা (আখিরী যোহ্র) মুস্তাহাব হওয়ার কথা ব্যক্ত করেছেন। অতঃপর তিনি বলেছেন যে, মনের সংশয়-দুশ্চিন্তা নিবারণের জন্য (আখিরী যোহ্র) পড়া মুস্তাহাব হবে। তবে জুমুয়া ছহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে অধিক সন্দেহ হলে (অর্থাৎ শহর বা অন্যান্য শর্তের প্রতি সন্দেহ হলে) ফতওয়া গ্রাহ্য মতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়া ওয়াজিব হবে। অতঃপর তিনি তাঁর শাইখ আল্লামা ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে আখিরী যোহ্র ওয়াজিব হওয়ার মত প্রকাশ করেন।” (রদ্দুল মুহতার, শামী ২য় জিঃ ১৪৬ পৃষ্ঠা, শরহুল বাকানী,  আখিরী যোহ্র তত্ত্ব  ২২ পৃষ্ঠা)

“ফাতাওয়ায়ে ফাইদুর রসূল” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৪১৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

یہ چار رکعتیں عدم صحت کے توھم کی صورت میں مستحب ھیں اور شک واشتباہ کی حالت میں ظاھر وجوب.

অর্থঃ- “(একই শহরে একাধিক মসজিদে) জুমুয়া ছহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ থাকার কারণে সে স্থানে চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র পড়া মুস্তাহাব। কিন্তু কোন স্থান শহর হওয়ার ব্যাপারে অধিক সন্দেহ হলে, সে অবস্থায় সেখানে আখিরী যোহ্র পড়া ওয়াজিব।”

  উল্লেখ্য, তাক্বওয়ার জন্য ইহ্তিয়াত বা সাবধানতা অবলম্বন করতঃ চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র পড়াকে শরীয়ত নিষেধ করেনি।

“শরহুল মুনিয়া” কিতাবে উল্লেখ আছে,

الاولى هو الاحتياط لان الخلاف فى جواز التعدد وعدمه قوى وكون الصحيح الجواز للضرورة للفتوى لايمنع شرعية الاحتياط للتقوى.

অর্থঃ- “ইহ্তিয়াতের জন্য ‘চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র’ পড়া আওলা বা উত্তম। কেননা, একই শহরে একাধিক স্থানে জুমুয়ার নামায জায়িয হওয়ার ব্যাপারে অনেক মতভেদ রয়েছে। তবে ওজর বশতঃ ঐরূপ একই শহরে ফতওয়া মুতাবিক একাধিক জুমুয়া জায়িয বলা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও তাক্বওয়ার জন্য ইহ্তিয়াত্ বা সাবধানতা অবলম্বন করতঃ চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়াকে শরীয়ত নিষেধ করেনি।” (রদ্দুল মুহতার, শামী ২য় জিঃ ১৪৫ পৃষ্ঠা)

তাছাড়া সন্দেহ হতে বাঁচার জন্য ইহ্তিয়াত বা তাকওয়া অবলম্বন করাকে হাদীস শরীফও সমর্থন করে।

যেমন, হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

فمن اتقى الشبهات استبرأ لدينه وعرضه.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি সন্দেহ হতে বাঁচলো সে তার দ্বীন ও সম্মানকে হিফাযত করলো।” (বুখারী, মুসলিম)

এ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় ফিক্বাহ্র কিতাবসমূহে উল্লেখ আছে, لايمنع شرعية الاحتياط للتقوى.

অর্থঃ- “শরীয়তে তাক্বওয়ার জন্য ইহ্তিয়াত বা সাবধানতা অবলম্বন করতে নিষেধ নেই।” (কবীরী, ছগীরী, শামী)

“শামী” কিতাবে উল্লেখ আছে, الاولى هو الاحتياط.

 অর্থঃ- “ইহ্তিয়াত বা সাবধানতা অবলম্বন করাই হচ্ছে অধিক উত্তম।”

“ফতওয়া আলমগীরী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, والاحتياط واجب فى العبادات.

অর্থঃ- “ইবাদতে ইহ্তিয়াত বা সাবধানতা অবলম্বন করা ওয়াজিব।”

সুতরাং প্রমাণিত হলো, সন্দিহান অবস্থায় সন্দেহ থেকে বাঁচার জন্য আখিরী যোহ্র পড়া ক্ষেত্রবিশেষে ওয়াজিব হবে এবং ক্ষেত্রবিশেষে উত্তম হবে।

চতুর্থতঃ আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি, ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম প্রধানত দু’টি কারণেই আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

(১) মিছর বা শহরের ব্যাখ্যায় ইখতিলাফ বা মতভেদ থাকায়।  (২) একই শহরে একাধিক মসজিদে জুমুয়া জায়িয হওয়া-না হওয়ার ব্যাপারে ইখতিলাফ থাকায়। অর্থাৎ হয় মিছর বা শহরের ব্যাপারে ইখতিলাফ থাকবে নতুবা একই শহরে একাধিক জুমুয়ার ব্যাপারে ইখতিলাফ থাকবে।

অতএব, উপরোক্ত দু’টি বিষয়ে ইখতিলাফ থাকায় অবশ্যই সন্দেহ থেকে যায়। সুতরাং কোন স্থান মিছর বা শহর হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ থাকায় জুমুয়ার পর চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়া ওয়াজিব। আর যদি শহর হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ না থাকে কিন্তু একই শহরে একাধিক মসজিদে জুমুয়া জায়িয হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ থাকায় সেখানে জুমুয়ার পর চার রাকায়াত ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র বা আখিরী যোহ্র পড়া মুস্তাহ্সান, মুস্তাহাব, আওলা বা উত্তম। আর সেটাই ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে ইহ্তিয়াত্ বা সাবধানতা বশতঃ চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

যেমন, ফতওয়ার কিতাবে উল্লেখ আছে,

لان الموضع وان مصرا بلا شبهة ولكن بقى الشبهة جواز التعدد وعدمه وان كان الصحيح والمعتمد جواز التعدد للضرورة للفتوى هو لايمنع الشريعة الاحتياط للتقوى.

অর্থঃ- “ধরা যাক, কোন স্থান নিঃসন্দেহে শরয়ী শহর কিন্তু তি’দাদে মসজিদ অর্থাৎ একই স্থানে বা একই শহরে একাধিক মসজিদে জুমুয়ার নামায জায়িয হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ অবশ্যই রয়ে যায়। ওজর বশতঃ ঐরূপ একই স্থানে বা একই শহরে একাধিক মসজিদে ফতওয়া মতে জুমুয়া জায়িয থাকলেও তাক্বওয়ার জন্য ইহ্তিয়াত করতঃ চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র পড়ে নিতে শরীয়ত নিষেধ করেনি। (বরং আখিরী যোহ্র পড়াই আওলা, উত্তম বা মুস্তাহ্সান।) (ছগীরী)

পঞ্চমতঃ শরীয়তের দলীল হচ্ছে- কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস। এদের জন্য আফসুস! এরা শরীয়তের দলীল সম্পর্কেও অবগত নয়। আর ইজমা ও ক্বিয়াসের বাস্তবরূপ হচ্ছে ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবগুলো। তাই আমরা ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবের অনেক দলীল-আদিল্লাহ্ দ্বারা প্রমাণ করেছিঃ  ১। যদি কোন শহরে (স্থানে) জুমুয়া জায়িয হওয়ার ক্ষেত্রে সন্দেহ হয় অথবা কোন স্থান শরয়ী শহর কিনা? এবিষয়ে প্রবল সন্দেহ হয়, আর এ অবস্থায় এমন স্থানে জুমুয়ার নামায পড়া হলে, জুমুয়ার ফরয আদায়ের পর ইহ্তিয়াতের জন্য চার রাকয়াত আখিরী যোহ্র পড়া ওয়াজিব। ২। আর কোন স্থান নিঃসন্দেহে শরয়ী শহর, কিন্তু তাতে একাধিক মসজিদে জুমুয়ার নামায ছহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মধ্যে ইখতিলাফ থাকায় ইহ্তিয়াতের জন্য জুমুয়ার নামাযের পর চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র পড়া মুস্তাহসান, মুস্তাহাব, আওলা বা উত্তম।

আরো উল্লেখ্য যে, আখিরী যোহ্র ফরযের নিয়তেই পড়তে হবে। কেননা, আখিরী যোহর বা ইহতিয়াতুয্ যোহর ও সাবধানতার জন্য এক প্রকার নামায। যা ক্ষেত্র বিশেষে আদায় করা ওয়াজিব, আবার কখনো মুস্তাহাব, মুস্তাহসান। কিন্তু এর নিয়ত ফরয এর নিয়তে করতে হবে। যেহেতু এটা অন্য একটি ফরয নামাযের উপর ইহ্তিয়াত করার জন্যই আদায় করা হয়।

“বাহরুর রায়িক” কিতাবের ২য় খণ্ডের ১৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

, وينوى بها اخر فرض ادركت وقته ولم اؤد بعد.

অর্থঃ  এটার (আখিরী যোহ্রের) নিয়ত করবে اخر فرض ‘আখিরু ফরয’ হিসেবে যে, আমি  উহার ওয়াক্ত পেয়েছি কিন্তু এরপর এখনো আদায় করি নাই।”

  ষষ্ঠতঃ হাটহাজারীর মৌলভীদের বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায় যে, যে সকল কিতাবে আখিরী যোহ্র জায়িয বলা হয়েছে সে সকল কিতাব নির্ভরযোগ্য নয়।

যেমন, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, তাতারখানিয়া, ফাতহুল ক্বাদীর, বাহরুর রায়িক্ব, মুহীত, মারাকিউল ফালাহ, শরহে বিক্বায়া, শরহে নিক্বায়া, কবীরী, রদ্দুল মুহতার, গায়াতুল আওতার ইত্যাদি কিতাবসমূহ তাদের নিকট নির্ভরযোগ্য নয়, যেহেতু এ সকল কিতাব সমূহে আখেরী যোহ্র পড়াকে জায়িয বলা হয়েছে।

তাদের মতে নির্ভরযোগ্য কিতাব হলো, ইমদাদুল ফতওয়া, ফতওয়ায়ে রশীদিয়াহ। মূলতঃ তারা বিশ্বখ্যাত নির্ভরযোগ্য ও সর্বজনমান্য অনুসরণীয় কিতাবসমূহকে অনির্ভরযোগ্য সাব্যস্ত করে এবং ভুল ও দলীলবিহীন মাসয়ালা সমৃদ্ধ বিতর্কিত, অপ্রসিদ্ধ ও অনির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহকে নির্ভরযোগ্য বলে চরম জিহালত ও গোমরাহীর পরিচয় দিয়েছে।

পরিশেষে বলতে হয় যে, হাটহাজারী মৌলভীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে যে কিতাবগুলোর নাম উল্লেখ করেছে তন্মধ্যে বাহরুর রায়িক্ব ও রদ্দুল মুহতারের কথাও উল্লেখ আছে। অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হলো, “বাহরুর রায়িক্ব ও রদ্দুল মুহতারে আখেরী যোহ্র পড়াকে নাজায়িয বলা হয়েছে।”

অথচ এটাও চরম পর্যায়ের মিথ্যা ও ধোকাবাজী, কারণ উল্লিখিত কিতাবদ্বয়ে আখিরী যোহ্র পড়াকে নাজায়িয তো বলা হয়নি বরং জায়িয বলা হয়েছে। নিম্নে তার প্রমাণ তুলে ধরা হলো-

যেমন, “বাহরুর রায়িক্ব ও রদ্দুল মুহতার” কিতাবে উল্লেখ আছে,

كل موضع وقع الشك فى كونه مصرا او تعددت الجمعة ينبغى لهم ان يصلوا بعد الجمعة اربعا بنية الظهر احتياطا حتى انه لو لم تقع الجمعة موقعها- يخرجون عن عهدة فرض الوقت باداء الظهر- لما ابتلى اهل مرو باقامة الجمعتين فيها مع اختلاف العلماء فى جوازهما امر ائمتهم بالاربع بعدها احتياطا لا يمنع الشريعة الاحتياط للتقوى.

অর্থঃ- “যে স্থান মিছর বা শহর হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহযুক্ত অথবা একের অধিক স্থানে জুমুয়া জায়িয হওয়ার ব্যাপারে মতবিরোধের কারণ ঐ স্থানে জুমুয়ার নামাজের পর আখিরী যোহ্রের নিয়তে চার রাকায়াত ইহ্তিয়াতুয যোহ্র পড়ে নেয়া উচিৎ। তাহলে জুমুয়া আদায় না হলে যোহ্র আদায় করার কারণে ঐ সময়কার ফরয নিশ্চিতভাবে আদায় হয়ে যাবে। যখন ইমামগণ একের অধিক স্থানে জুমুয়া জায়িয হওয়ার ব্যাপারে মতবিরোধ জানতে পারলেন তখন ইমামগণ জুমুয়ার পর চার রাকায়াত ইহ্তিয়াতুয যোহ্র পড়ার হুকুম দেন। কেননা শরীয়তে তাক্বওয়ার জন্য সাবধানতা অবলম্বন করতে নিষেধ করা হয়নি।”

শুধু তাই নয় “বাহরুর রায়িক” কিতাবে আখিরী যোহ্রের নিয়ত কিভাবে করবে, তাও উল্লেখ করা হয়েছে।

যেমন “বাহরুর রায়িক্ব” কিতাবের ২য় খণ্ডের  ১৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

توبت اخر ظهر ادركت وقته ولم اصله بعد.

অর্থঃ- “আমি আখিরী যোহ্রের নিয়ত করছি, যার ওয়াক্ত পেয়েছি কিন্তু এখনও আদায় করিনি।”  অতএব প্রমাণিত হলো যে, হাটহাজারীর মৌলভীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে মিথ্যা দলীল পেশ করে মানুষদেরকে ধোকা দিয়েছে।  অথচ হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

نويت اخر ظهر ادركت وقته ولم اصله بعد.

অর্থঃ- “যে ধোকা দেয় সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।”

  মূলতঃ তারা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে দেওবন্দী মাওলানাদের কিতাব ব্যতীত নির্ভরযোগ্য কোন কিতাবের দলীলই পেশ করতে পারবেনা।

 মূলকথা হলো, আখিরী যোহর সম্পর্কিত হাটহাজারীর মৌলভীদের উপরোক্ত বক্তব্য অশুদ্ধ তো বটেই বরং তা দলীলবিহীন, প্রতারণামূলক ও সাথে সাথে ইমাম, মুজতাহিদগণের নির্ভরযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ।         ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য ফত্ওয়া হলো, জুমুয়ার নামাযের পর চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র পড়া ক্ষেত্র বিশেষে ওয়াজিব আর ক্ষেত্র বিশেষে মুস্তাহ্সান বা উত্তম, জায়িয তো বটেই, যা নির্ভরযোগ্য ও অনুসরণীয় ফিক্বাহের কিতাবের বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত।

[বিঃ দ্রঃ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ১০, ২৮, ৩২, ৪৫, ৫৯, ৯৭, ৯৮, ৯৯, ১০০তম সংখ্যাগুলো পাঠ করুন। সেখানে মাসিক মুঈনুল ইসলামের আখিরী যোহ্র সম্পর্কে ভুল বক্তব্য খণ্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে।     এবার তৃতীয়বারের মত মাসিক মুঈনুল ইসলামের ভুল বক্তব্য খণ্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হলো।] {দলীলসমূহঃ (১) ফতওয়ায়ে আলমগীরী, (২) বাহরুর রায়িক, (৩) শামী, (৪) দুররুল মুখতার, (৫) রদ্দুল মুহতার, (৬) মুহীত্ব, (৭) ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া, (৮) কাফী, (৯) আইনী, (১০) গায়াতুল আওতার, (১১) কবীরী, (১২) ছগীরী, (১৩) কিতাবুল ফিক্বাহ্ আলা মাযাহিবিল আরবায়া, (১৪) শরহুন নিক্বায়া, (১৫) ফতহুল ক্বাদীর, (১৬) ফতওয়ায়ে আযীযী, (১৭) বাহারে শরীয়ত, (১৮) ইলমুল ফিক্বাহ্, (১৯) রুকুনুদ্দীন, (২০) ফতওয়ায়ে আমিনিয়া, (২১) কিন্ইয়াহ্, (২২) মারাকিউল ফালাহ্, (২৩) শরহে বিক্বায়া ইত্যাদি।

 মীর মুহম্মদ আমজাদ হুসাইন

মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, ঢাকা

সুওয়ালঃ  মাসিক রাহমানী পয়গাম অক্টোবর/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে ১১১১নং জিজ্ঞাসার-জবাবে বলা হয়েছে, ….. “বর্তমানে যে মেহেদী ব্যবহার করা হচ্ছে তা তো নবীজীর দাড়িতে ব্যবহৃত করা সেই মেহেদীই …..। এখন আমার সুওয়াল হলো- মেহেদী ব্যবহার করা সম্পর্কে উক্ত পত্রিকার বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর দাড়ি মুবারকে মেহেদী ব্যবহার করেছেন? দয়া করে দলীল-আদিল্লাহ্সহ সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ  আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মেহেদী বা মেন্দী ব্যবহার সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার বক্তব্য ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে। যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

নির্ভরযোগ্য ও ছহীহ্ বর্ণনা হলো, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র হায়াত মুবারকে কখনও দাড়ি মুবারকে মেহেদী বা মেন্দী ব্যবহার করেননি।

আর তা করার প্রশ্নই উঠতে পারেনা।

কারণ, মেহেদী বা মেন্দী ব্যবহার করা হয় সাদা চুলকে রঙ্গীন করার জন্য। অথচ বিভিন্ন রেওয়ায়েত অনুযায়ী প্রতীয়মান হয় যে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাদা চুল ও দাড়ি মুবারকের সংখ্যা ছিল মতান্তরে তের, চৌদ্দ, সতের, আঠার, বিশ, তেইশ ও চব্বিশটি। যে ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম যেভাবে দেখেছেন তিনি সেভাবে বর্ণনা করেছেন। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن عبد الله بن عمر رضى الله عنهما قال انما كان شيب رسول الله صلى الله عليه وسلم نحوا من عشرين شعرة بيضاء.

অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চুল মুবারক বিশটির মত সাদা হয়েছিল।” (শামায়িলে তিরমিযী)

আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن انس قال ما عددت فى راس رسول الله صلى الله عليه وسلم ولحيته الا اربع عشرة شعرة بيضاء.

অর্থঃ- “হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্পূর্ণ মাথা ও দাড়ি মুবারকে মাত্র ১৪টি সাদা চুল মুবারক গণনা করে পেয়েছি।” (শামায়েলে তিরমিযী)

“মিশকাত শরীফের” ৩৮৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وعن ثابت قال سئل انس عن خضاب النبى صلى الله عليه وسلم فقال لو شئت ان اعد شمطات كن فى راسه فعلت قال ولم يختضب.

অর্থঃ- “হযরত ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত আনাছ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খেযাব ব্যবহার করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেযাব ব্যবহার করেছেন কি করেননি? জবাবে হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খেযাব ব্যবহারের প্রয়োজন ছিলনা। কারণ, আমি যদি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাথা মুবারকের সাদা চুল মুবারক গণনা করার ইচ্ছা পোষণ করতাম তাহলে অবশ্যই আমি সাদা চুল মুবারক গণনা করতে পারতাম। অর্থাৎ মাত্র কয়েকটি সাদা চুল মুবারকের জন্য হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেযাব ব্যবহার করেছেন একথা কি করে বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে? এরপর হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সুস্পষ্টভাবে বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো খেযাব ব্যবহার করেননি।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)

উপরোল্লিখিত বর্ণনা থেকে যদি ধরে নেয়া হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাদা চুল মুবারক ছিল চব্বিশটি। কিন্তু উক্ত চব্বিশটি চুল মুবারক মাথা ও দাড়ি মুবারকে একই স্থানে ছিলনা। বরং মাথা ও দাড়ি মুবারকের বিভিন্ন স্থান মিলিয়ে।

যেমন, হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن قتادة قال قلت لانس بن مالك هل خضب رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لم يبلغ ذلك انما كان شيبا فى صدغيه.

অর্থঃ- “হযরত ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আমি হযরত আনাছ বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেযাব ব্যবহার করেছেন কি? হযরত আনাছ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চুল বা দাড়ী মুবারক খেযাব ব্যবহার করার অবস্থায় পৌঁছেনি, তাঁর কান মুবারকদ্বয়ের পাশে মাত্র কয়েকখানা চুল মুবারক সাদা হয়েছিল।” (তিরমিযী শরীফ)

অতএব হাদীস শরীফ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাথা ও দাড়ি মুবারকে বিভিন্ন স্থান থেকে মাত্র চৌদ্দটি থেকে চব্বিশটি চুল মুবারক সাদা হয়েছিল। যার কারণে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চুল মুবারক কালোই দেখা যেত। খেয়াল না করলে সাদা চুল ও দাড়ি মুবারক দেখা যেতনা।           আর মাথা ও দাড়ি মুবারকের বিভিন্ন স্থান থেকে মাত্র চৌদ্দটি থেকে চব্বিশট সাদা চুলের জন্য হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেহেদী বা মেন্দী ব্যবহার করেছেন, একথা বলা মোটেই গ্রহণযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য নয়। বরং তা বাতিল ও অশুদ্ধ বলে প্রমাণিত। তবে যারা বলেছেন যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেহেন্দী বা মেন্দী পাতার তৈরী খেযাব ব্যবহার করেছেন, তাদের এরূপ বলার কারণ হলো, চুল বা দাড়ী সাদা হওয়ার পূর্বে কিছুটা লালচে রং ধারণ করে থাকে। সম্ভবতঃ যারা মেহেন্দী বা মেন্দী পাতার তৈরি খেযাবের পক্ষে বলেছেন, তারা উক্ত লালচে রং দেখেই বলেছেন।

মূলকথা হল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হায়াত মুবারকে কখনও মেহেদী বা মেন্দী পাতার তৈরী খেযাব ব্যবহার করেননি। এটাই সর্বাপেক্ষা নির্ভরযোগ্য ও বিশুদ্ধ মত।

যেমন, এ প্রসঙ্গে “মিশকাত শরীফের” ৩৮৪ পৃষ্ঠায় ২নং হাশিয়ায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, অর্থঃ- “হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর উপরোক্ত হাদীস শরীফ বর্ণনা করার উদ্দেশ্য এই যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেযাব ব্যবহার করেননি কেননা তিনি খেযাব ব্যবহারের পর্যায়ে পৌঁছেননি। আর এর উপরই সমস্ত মুহাদ্দিসীন-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ একমত।” (লুময়াত)

[বিঃ দ্রঃ- আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাড়ি মুবারকে মেহেদী বা মেন্দী ব্যবহাব করেননি। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১৯, ২৪, ৩২, ৩৫, ৬০ ও ৬৫তম সংখ্যাগুলো পাঠ করুন।]     {দলীলসমূহঃ- (১) বুখারী, (২) মুসলিম, (৩) তিরমিযী, (৪) মিশকাত, (৫) ফতহুল বারী, (৬) উমদাতুল ক্বারী, (৭) তাইসীরুল ক্বারী, (৮) ইরশাদুস্ সারী, (৯) আইনী, (১০) শরহে নববী, (১১) মাআ’রেফুস সুনান, (১২) তুহ্ফাতুল আহ্ওয়াজী, (১৩) মিরকাত, (১৪) আশয়াতুল লুময়াত, (১৫) লুময়াত, (১৬) মুযাহিরে হক্ব, (১৭) শরহে ত্বীবি, (১৮) তালীকুছ্ ছবীহ্, (১৯) মিরআতুল মানাযীহ্ ইত্যাদি।

মুহম্মদ আবু বকর ছিদ্দীক (হাসান)

চামিলীবাগ, ঢাকা।

সুওয়ালঃ মাসিক মদীনা অক্টোবর/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত ৫৮নং প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-

প্রশ্নঃ জুমার খুতবার আগ মুহূর্তে মোয়াজ্জেন ইমাম সাহেবের সামনে দাঁড়িয়ে যে আযান দেন, তার জবাব দেওয়া এবং আযান শেষে দোয়া পড়া কতটুকু জরুরী?

উত্তরঃ জুমার সময় ইমাম যখন খুতবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে মিম্বরে আরোহন করেন, তখন থেকে শুরু হয়ে নামায শেষ না হওয়া পর্যন্ত যে কোন প্রকার বাক্যালাপ এমন কি নামায পড়াও হাদীস অনুযায়ী নিষিদ্ধ। এই হাদীসের আলোকে খুতবার প্রাক্কালে প্রদত্ত আযানের জবাব দেওয়া এবং আযান শেষের দোয়া পাঠ করা বৈধ নয়। এটাই নির্ভরযোগ্য আলেমগণের সর্বসম্মত অভিমত। অবশ্য কেউ কেউ হাদীসখানার ব্যাখ্যা এভাবেও করে থাকেন যে, ইমাম সাহেব খুতবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে হাজির হওয়ার পর বাক্যালাপ নিষিদ্ধ হওয়ার অর্থ জাগতিক বিষয়াদি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা নিষিদ্ধ। মনে মনে দোয়া দরুদ পড়া বা আযানের জবাব দেওয়া বা মোনাজাত করা এই নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত নয়। কিন্তু অধিকাংশ নির্ভরযোগ্য ফেকাহ্শাস্ত্রবিদগণই এই অভিমত গ্রহণ করেন নাই। তাঁদের মতে এ সময়টাতে দোয়া মুনাজাতও নিষিদ্ধ।

এখন আমার সুওয়াল হলো- জুমুয়ার খুৎবার পূর্বে মুয়ায্যিন যে আযান দেন সে আযানের জবাব দেয়া অর্থাৎ জুমুয়ার দ্বিতীয় আযানের জবাব দেয়া এবং আযান শেষে দোয়া পড়া সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত প্রশ্নের উত্তর সঠিক হয়েছে কি? দলীলসহ সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য, ডাহা মিথ্যা, দলীলবিহীন ও জিহালতপূর্ণ। কারণ মাসিক মদীনা এবং তাদের সমজাতীয়রা “তিবরানী শরীফের” উক্ত হাদীস শরীফখানার মাফহুম ও ব্যাখ্যা না বুঝার কারণে বা হাদীস শরীফখানার ভাষ্য বুঝতে ভুল করার কারণে তাদের পত্রিকা ও কিতাবাদীতে, “জুমুয়ার দ্বিতীয় আযানের জাওয়াব দেয়া এবং আযান শেষে দোয়া-মুনাজাত করা মাকরূহ্, নাজায়িয, নিষিদ্ধ ও বৈধ নয়” বলে থাকে। যা মোটেও শুদ্ধ নয়। তাই আমরা “তিবরানী শরীফের” মূল হাদীস শরীফখানা ও তার সঠিক অর্থ এবং ব্যাখ্যা দলীলের মাধ্যমে নিম্নে পেশ করলাম। আর এতেই প্রমাণিত হবে যে, মাসিক মদীনার বক্তব্য ভুল।

যেমন, হাদীস শরীফখানা হলো, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

اذا خرج الامام فلا صلوة ولا كلام.

অর্থঃ- “ইমাম যখন (খুৎবার জন্য) বের হয়, তখন নামায পড়া ও কথা বলা নিষেধ।”

এ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় বলা হয়,

اذا خرج الامام لخطبته فلا صلوة واذا صعد المنبر اى قام المنبر لخطبته فلا كلام.

অর্থঃ- “ইমাম যখন খুৎবা দেয়ার জন্য হুজরা থেকে বের হন, তখন কোন নামায নেই। আর ইমাম যখন খুৎবা দেয়ার জন্য মিম্বরে দাঁড়িয়ে যান, তখন কোন কথা নেই।”

এ প্রসঙ্গে ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “মুয়াত্তা শরীফে” উল্লেখ করেন, ইবনে শিহাব জুহুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

خروج الامام يقطع الصلوة وخطبته يقطع الكلام.

অর্থঃ- “ইমামের  আগমন  নামাযকে বন্ধ করে দেয়, আর তাঁর খুৎবা কথাবার্তাকে বন্ধ করে দেয়।”

অর্থাৎ ইমাম ছাহেব যখন খুৎবা দেয়ার জন্য হুজরা থেকে বের হন, তখন কেউ যদি নামায শুরু করে, তবে তার পক্ষে এ অল্প সময়ের মধ্যে অর্থাৎ খুৎবা শুরু করার পূর্বে নামায শেষ করা সম্ভব নয়। তাই ইমাম ছাহেব যখন খুৎবা দেয়ার জন্য হুজরা থেকে বের হবেন তখন নামায পড়া যাবেনা। আর ইমাম ছাহেব যখন খুৎবা দেয়ার জন্য মিম্বরে দাঁড়াবেন, অর্থাৎ খুৎবা শুরু করবেন, তখন কোন কথাবার্তা বলা নিষেধ।     সুতরাং উক্ত হাদীস শরীফে এবং তার ব্যাখ্যায় আলোচনা সাপেক্ষে এটাই প্রমাণিত হলো, ইমাম ছাহেব যখন মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুৎবা শুরু করবেন তখন যে কথাবার্তা নিষেধ এর দ্বারা মূলতঃ দুনিয়াবী বা পার্থিব কথাবার্তা বলা নিষেধ কিন্তু দ্বীনি কথাবার্তা যেমন, তাছবীহ্-তাহ্লীল, দোয়া-দরূদ, জুমুয়ার দ্বিতীয় আযানের জাওয়াব দেয়া এবং আযান শেষে দোয়া-মুনাজাত করা ইত্যাদি নিষেধ নয়। এটাই ফতওয়াগ্রাহ্য ও অধিক বিশুদ্ধ মত এবং এটার উপরেই ফতওয়া।

 কেননা, জুমুয়ার দ্বিতীয় আযানের জাওয়াব দেয়া ও আযান শেষে দোয়া পড়া দুনিয়াবী কথাবার্তা নয়। বরং জুমুয়ার দ্বিতীয় আযানের জাওয়াব দেয়া ও দোয়া পড়া দ্বীনি কথা-বার্তা।

সুতরাং ফতওয়ার কিতাবসমূহে জুমুয়ার দ্বিতীয় আযানের জাওয়াব দেয়া ও দোয়া পড়া মাকরূহ্ নয় বরং জায়িয লিখা হয়েছে।

নিম্নে সর্বজনমান্য, বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাব থেকে দলীল পেশ করা হলো-

যেমন, এ প্রসঙ্গে ফতওয়ার বিখ্যাত কিতাব “হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৭১ পৃষ্ঠার ৬নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

واما قبل الشروع بعد صعوده على المنبر فيكره الكلام الدنيوى اتفاقا واما الكلام الدينى كالتسبيح والتهليل فلا يكره عندهما وروى بعض المشائخ عنه انه يكره والاصح انه لا يكره عنده ايضا صرح به فى النهاية وغيرها فعلى هذا لايكره اجابة الاذان الثانى ودعاء الوسيلة بعده مالم يشرع الامام فى الخطبة.

অর্থঃ- “ইমাম ছাহেব মিম্বরে উঠে খুৎবা পাঠ শুরু করার পূর্বে দুনিয়াবী কথাবার্তা বলা সর্ব সম্মতিক্রমে মাকরূহ্।

আর ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি  ও ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে দ্বীনী কথাবার্তা যেমন, তাসবীহ্-তাহ্লীল, দোয়া-দরূদ পাঠ করা মাকরূহ্ নয়। তবে কোন কোন মাশায়িখগণ ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন যে, খুৎবা শুরু করার পূর্বে দোয়া-দরূদ, তাসবীহ্-তাহ্লীল পাঠ করা মাকরূহ্। কিন্তু الاصح বা অধিক ছহীহ্ মত হলো, খুৎবা শুরু করার পূর্বে হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকটও দোয়া-দরূদ, তাসবীহ্-তাহ্লীল দ্বিতীয় আযানের জাওয়াব দেয়া মাকরূহ্ নয়।” এ ব্যাপারে ‘নিহায়া’ ও অন্যান্য কিতাবে স্পষ্ট বর্ণনা করা হয়েছে।

সুতরাং এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, “দ্বিতীয় আযানের জাওয়াব দেয়া ও দ্বিতীয় আযানের পর ইমামের খুৎবা শুরু করার পূর্বে আযানের দোয়া পড়া মাকরূহ্ নয়; (বরং জায়িয)।”

“মারাকিউল ফালাহ্” কিতাবে উল্লেখ আছে,

وقال أبو يوسف ومحمد لا باس بالكلام اذا خرج قبل ان يخطب.

অর্থঃ- “ইমাম আবূ ইউছূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ইমাম ছাহেব হুজরা থেকে বের হওয়ার পর খুতবা শুরু করার পূর্ব পর্যন্ত কথাবার্তা বললে কোন অসুবিধা হবে না।”

 “শরহে ইলিয়াস্” কিতাবে উল্লেখ আছে,

فقال بعضهم يكره كلام الناس دون التسبيح وقيل يكره الكل والاول اصح.

অর্থঃ- “কেউ কেউ বলেন, মানুষের কথাবার্তা অর্থাৎ দুনিয়াবী কথাবার্তা বলা মাকরূহ্। তাসবীহ্-তাহ্লীল পড়া মাকরূহ্ নয়। কেউ কেউ বলেন, সবই মাকরূহ্। তবে প্রথমটি الاصح বা অধিক ছহীহ্ মত। (অর্থাৎ অধিক ছহীহ্ মতে তাসবীহ্-তাহলীল, দোয়া-দরূদ পড়া, দ্বিতীয় আযানের জাওয়াব দেয়া, দোয়া পড়া মাকরূহ্ নয়।)”

“শরহে নিকায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৯৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

قال ابو يوسف ومحمد لابأس بالكلام اذا خرج الامام قبل ان يخطب.

অর্থঃ- “ইমাম আবূ ইউছুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ইমাম ছাহেব হুজরা থেকে বের হওয়ার পর খুতবা শুরু করার পূর্ব পর্যন্ত কথাবার্তা বললে কোন অসুবিধা হবে না।”

 “হাশিয়াতুত্ তাহতাবী আলাদ্ দুরলিল মুখতার” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩৪৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

أما التسبيح ونحوه فلا يكره وهو الاصح.

অর্থঃ- “ইমাম ছাহেবের খুৎবা শুরু করার পূর্বে তাসবীহ্-তাহ্লীল এবং অনুরূপ দোয়া-দরূদ পড়া মাকরূহ্ নয়। আর এটাই وهو الاصح বা  অধিক ছহীহ্ মত।”

“মিনহাতুল খালিক্ব” কিতাবে উল্লেখ আছে,

وقالا لابأس به اذا جرج قبل يخطب.

অর্থঃ- “ইমাম আবূ ইউছূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ইমাম ছাহেব হুজরা থেকে বের হওয়ার পর খুতবা শুরু করার পূর্ব পর্যন্ত কথাবার্তা, তাসবীহ্-তাহ্লীল, দোয়া-দরূদ ইত্যাদি বললে কোন অসুবিধা হবে না।”

“হাশিয়াতুত্ তাহ্ত্বাবী আলা মারাকিউল ফালাহ্” কিতাবের ৩৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

انما يكره ما كان من جنس كلام الناس اما التسبيح ونحو فلا (يكره) وقيل ذلك مكروه والاول اصح.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই মানুষের কথাবার্তা বলা মাকরূহ্। আর তাসবীহ্-তাহ্লীল এবং অনুরূপ দোয়া-দরূদ পড়া মাকরূহ্ নয়। কেউ কেউ বলেন, এগুলো মাকরূহ্। তবে প্রথমটি الاصح বা অধিক ছহীহ্ মত। (অর্থাৎ অধিক ছহীহ্ মতে তাসবীহ্-তাহলীল অনুরূপ খুৎবার আযানের জাওয়াব দেয়া, দোয়া পড়া মাকরূহ্ নয়।)”

  “দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে,

وقالا لابأس بالكلام قبل الخطبة.

অর্থঃ- “ইমাম আবূ ইউছূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে খুৎবার পূর্বে কথাবার্তা বললে কোন অসুবিধা নেই।”

“ফতহুল ক্বাদীর” কিতাবের ২য় খণ্ডের ৩৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

قال بعضهم انما يكره الكلام الذى هو من كلام الناس أما التسبيح وأشباهه فلا (يكره) وقال بعضهم كل ذلك يكره والاول أصح كذا فى مبسوط.

অর্থঃ- “কেউ কেউ বলেন, ইমাম ছাহেব যখন হুজরা থেকে বের হবেন তখন যে কথাবার্তা বলা মাকরূহ্। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মানুষের (অর্থাৎ দুনিয়াবী) কথাবার্তা বলা মাকরূহ্। আর তাসবীহ্-তাহলীল এবং অনুরূপ দোয়া-দরূপদ পড়া মাকরূহ্ নয়। আর কেউ কেউ বলেন সবই মাকরূহ্। তবে প্রথমটি الاصح বা অধিক ছহীহ্ মত। অর্থাৎ ছহীহ মতে তাসবীহ্, তাহলীল, যিকির, আযকার, দোয়া, দরূদ, খুৎবার আযানের জাওয়াব দেয়া, দোয়া করা ইত্যাদি মাকরূহ্ নয়। অনুরূপ মাবসুত কিতাবে উল্লেখ আছে।”

 “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ২য় খণ্ডের ১৫৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, أما التسبيح ونحوه فلا يكره وهو الاصح.

অর্থঃ- “ইমাম ছাহেবের খুৎবা শুরু করার পূর্বে তাসবীহ্-তাহ্লীল এবং অনুরূপ দোয়া-দরূদ পড়া মাকরূহ্ নয়। আর এটাই وهو الاصح বা  অধিক ছহীহ্ মত।”

হযরত ইবনে নজীম মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত কিতাব “বাহ্রুর রায়িক” কিতাবের ২য় খণ্ডের ১৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,

قال بعضهم انما كان يكره ما كان من كلام الناس واما التسبيح ونحوه فلا (يكره) وقال بعضهم كل ذلك مكروه والاول اصح.

অর্থঃ- “কেউ কেউ বলেন, মানুষের কথাবার্তা অর্থাৎ দুনিয়াবী কথাবার্তা মাকরূহ্। আর তাছবীহ্-তাহ্লীল এবং অনুরূপ দোয়া-দরূদ পড়া মাকরূহ্ নয়। আর কেউ কেউ বলেন, সবই মাকরূহ্। তবে প্রথমটিই الاصح বা অধিক ছহীহ্ (বিশুদ্ধ) মত।” (অর্থাৎ অধিক ছহীহ্ মতে তাসবীহ্-তাহলীল পড়া দ্বিতীয় আযানের জবাব দেয়া ও দোয়া পড়া মাকরূহ্ নয়)।

“শরহে বিক্বায়া” কিতাবের ২০২ পৃষ্ঠায় ১০নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

اما الكلام فانما يكره منه قبل شروع الخطبة الدنيوى لا لدينى كالاذكار والتسبيح … هذا هو الاصح كما فى النهاية وغيره فلاتكره اجابة الاذان الذى يؤذن بين يدى الخطيب وقدثبت ذلك من فعل معاوية فى الصحيح البخارى لا دعاء الوسيلة الماثور بعد ذلك الاذان هذا عند ابى حنيفة وعندهما لابأس بالكلام.

অর্থঃ- “ইমাম ছাহেবের খুৎবা শুরু করার পূর্বে দুনিয়াবী কথাবার্তা বলা মাকরূহ্। তবে দ্বীনি কথাবার্তা যেমন, যিকির-আযকার, তাসবীহ্-তাহলীল, দোয়া-দরূদ ইত্যাদি পড়া মাকরূহ্ নয়। …. আর এটাই هو الاصح বা অধিক ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া। যেমন, নিহায়া এবং অন্যান্য কিতাবে উল্লেখ আছে। অতঃপর মুয়ায্যিন খতীবের সামনে যে আযান দেন সে আযানের জাওয়াব দেয়া (অর্থাৎ খুৎবার আযানের জাওয়াব দেয়া) মাকরূহ্ নয়।

কেননা, এটা অর্থাৎ খতীবের সামনে যে আযান দেয়া হয় সে আযানের জাওয়াব দেয়ার ব্যাপারে ছহীহ্ বুখারী শরীফে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর আমল দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে। আর খতীবের সামনে যে আযান দেয়া হয় সে আযানের পর হাদীস শরীফে বর্ণিত দোয়ায়ে উছীলা পড়াও মাকরূহ্ নয়। এটাই ইমামে আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মত। আর ইমাম আবূ ইউছূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে জুমুয়ার খুৎবা শুরু করার পূর্বে কথাবার্তা বললে কোন অসুবিধা নেই।”

দ্বিতীয় আযানের জবাব দেয়া প্রসঙ্গে “উমদাতুর রিয়ায়া” কিতাবের ১ম জিঃ ২৪৪ পৃষ্ঠায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে,

علامة لكهنوى فرماتى هين فلاتكره اجابة الاذان الذى يؤذن بين يدى الخطيب وقد ثبت ذالك من فعل معاوية فى صحيح البخارى.

অর্থঃ- “আল্লামা লখ্নবী বলেন, জুমুয়ার দ্বিতীয় আযান যা খতীবের সম্মুখে দেয়া হয়, তার জাওয়াব দেয়া মাকরূহ্ নয়। কেননা নিশ্চয় এটা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর আমল দ্বারা ছহীহ্ বুখারী শরীফে প্রমাণিত রয়েছে।”

এ প্রসঙ্গে “নাফ্উল মুফতী ওয়াস সায়িল” কিতাবের ১০৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,

قدثبت اجابة الثانى عن النبى صلى الله عليه وسلم ومعاوية رضى الله عنه ما اخرجه البخارى فاين الكراهة.

অর্থঃ- “নিশ্চয় জুমুয়ার দ্বিতীয় আযানের জাওয়াব দেয়া হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে প্রমাণিত রয়েছে। যেটা ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন। সুতরাং মাকরূহ্ কোথায়?”

  উল্লেখ্য যে, জুমুয়ার দ্বিতীয় আযান যা খতীব ছাহেবের সামনে দেয়া হয়, সে আযানের জাওয়াব দেয়া সম্পর্কে “দুররুল মুখতার” কিতাবের ইবারতের ব্যাখ্যায় ফতওয়ার বিখ্যাত কিতাব “হাশিয়ায়ে তাহ্তাবী” কিতাবে উল্লেখ আছে যে, “বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে জুমুয়ার দ্বিতীয় আযান যা খতীব ছাহেবের সামনে দেয়া হয়, সে আযানের জাওয়াব দেয়া নিষিদ্ধ নয়।”

যেমন, ফতওয়ার বিখ্যাত কিতাব “হাশিয়ায়ে তাহ্তাবী আলা দুররিল মুখতার” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৮৮-১৮৯ পৃষ্ঠায় লিখা হয়েছে,

(قوله فى الاذان بين يدى الخطيب) ….. ان الاصح جواز الاذكار عنده قبل شروعه فى الخطبة فلا مانع من الاجابة.

অর্থাৎ- “জুমুয়ার দ্বিতীয় আযান যা খতীব ছাহেবের সামনে দেয়া হয়, সে আযানের জাওয়াব দেয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, … নিশ্চয়ই الاصح বা অধিক ছহীহ্ মত হলো, হযরত ইমাম আবূ হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট খতীব ছাহেবের খুৎবা শুরু করার পূর্বে যিক্র-আযকার করা জায়িয। সুতরাং জুমুয়ার দ্বিতীয় আযান যা খতীব ছাহেবের সামনে দেয়া হয় সে আযানের জাওয়াব দেয়া নিষেধ নয়। অর্থাৎ জুমুয়ার দ্বিতীয় আযানের জাওয়াব দেয়া নিষেধ নয়।”

আরো উল্লেখ্য যে, জুমুয়ার দ্বিতীয় আযান ইমাম ছাহেবের সামনে দেয়া হয় সে আযানের জাওয়াব দেয়া ও দোয়া পড়া যে জায়িয, তা উলামায়ে দেওবন্দের কিতাবেও রয়েছে।

যেমন, এ প্রসঙ্গে “ইমদাদুল আহ্কাম”-এর ১ম জিঃ ৩২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,

جمعہ کی اذان ثانی کا جواب دینا مختلف فیہ ھے، صاحبین کے نذدیک جائز ھے اور امام صاحب کے قول میں مختلف روایت ھیں ایک روایت سے جواز معلوم ھوتا ھے اور ایک روایت سےکراھت معلوم ھوتی ھے اور طحطاوی نے اس کا اصح ھونا نقل کیا ھے.

اور امام صاحب سے جو یہ قول مشھور ھے کہ خروج امام قاطع صلوۃوکلام ھے اسکا مطلب یہ ھے کہ خروج امام قاطع کلام الناس ھے اور  قاطع سائر الکلام خطبۃ شروع ھو جانا ھے. پس ابتداء خطبہ سے پھلے کلام دینی یعنی تسبیح وجواب اذان جائز ھے.

অর্থঃ- “জুমুয়ার দ্বিতীয় আযানের জাওয়াব দেয়ার মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ছাহিবাইন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ-এর নিকট জায়িয এবং ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ক্বওলের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। এক বর্ণনা মতে জায়িয প্রমাণিত হয়, আরেক বর্ণনা মতে মাকরূহ্ বুঝা যায় এবং তাহ্তাবী এটাকে অধিক ছহীহ্ বলে বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রসিদ্ধ যে ক্বওল রয়েছে, “ইমাম ছাহেবের আগমন নামায ও কথাবার্তাকে নিষেধ করে” এ কথার মূল অর্থ হলো, ইমাম ছাহেবের আগমন মানুষের কথাবার্তাকে বন্ধ করে দেয় এবং তিনি খুৎবা শুরু করার সাথে সাথে সর্ব প্রকার কথাবার্তা নিষিদ্ধ। সুতরাং খুৎবা শুরু করার পূর্বে দ্বীনী কথাবার্তা অর্থাৎ তাসবীহ্, তাহ্লীল ও আযানের জাওয়াব দেয়া জায়িয।”

আর কিফায়াতুল মুফ্তীর” ৩য় জিঃ ২১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,

امام محمد رحمۃ اللہ کے نزدیک اذان خطبہ کا جواب دینا جائز ھے. امام ابو یوسف وامام محمد رحمۃ اللہ علیھما خطبہ شروع ھونے سے پھلے  غیر خطیب کی لئے کلام دینی کو جائز فرماتے ھیں تو اجابت اذان اور دعاء وسیلہ ان کے نزدیک جائزھے.

অর্থঃ- “ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট দ্বিতীয় আযানের জাওয়াব দেয়া জায়িয। ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি খুৎবা শুরু করার পূর্ব পর্যন্ত মুক্তাদীগণের জন্য দ্বীনী কথাবার্তা বলা জায়িয বলেছেন। তাই দ্বিতীয় আযানের জবাব দেয়া এবং দোয়ায়ে উছীলা করা তাঁদের নিকট জায়িয।”           উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বর্ণনা থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, জুমুয়ার দ্বিতীয় আযানের জাওয়াব দেয়া এবং আযানের পর মুনাজাত বা দোয়া পড়া ফতওয়ার কিতাবে নিষেধ করা হয়নি। বিশুদ্ধ মতে জায়িয তো বটেই বরং সুন্নত।       কেননা স্বয়ং আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ খুৎবার আযানের মৌখিকভাবে জাওয়াব দিয়েছেন।

যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে,

عن ابى امامة قال سمعت معاوية بن ابى سفيان رضى الله عنه وهو جالس على المنبر اذن المؤذن فقال الله اكبر الله اكبر … الخ. فلما ان قضى التأذين قال ايها الناس انى سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم على هذا المجلس حين اذن المؤذن يقول ماسمعتم منى من مقالتى.

অর্থঃ- “হযরত আবূ উমামা রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুনেছি হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জুমুয়ার দিন মিম্বরের উপর বসে মুয়াজ্জিনের আযানের সঙ্গে সঙ্গে নিজেও আযানের শব্দ সমূহকে উচ্চারণ করেন এবং আযান শেষে বলেন, হে লোক সকল! আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জুমুয়ার দিন মিম্বরে বসা অবস্থায় মুয়াজ্জিনের আযান শ্রবণে এরূপ বলতে শুনেছি, যেরূপ তোমরা আমার থেকে শুনতে পেলে।” (বুখারী, নাসাঈ)

এ প্রসঙ্গে মুয়াত্তায়ে মুহম্মদ-এর শরাহ্ “আত্ তা’লীকুল মুমাজ্জাদ”-এর ১০৭ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে যে,

وقد ثبت فى صحيح البخارى ان معاوية رضى الله عنه اجاب الاذان وهو على المنبر وقال يا ايها الناس انى سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم على هذا المجلس حين اذان المؤذن يقول مثل ما سمعتم منى مقالتى. فاذا ثبت الاجابة عن صاحب الشرع وصاحبه فما معنى الكراهة.

অর্থঃ- “ছহীহ্ বুখারী শরীফে উল্লেখ রয়েছে, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মিম্বরে বসে দ্বিতীয় আযানের জবাব দিয়েছেন এবং বলেছেন, হে মানুষেরা আমি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মিম্বরে বসে এরূপে জুমুয়ার আযানের জবাব দিতে শুনেছি, যেরূপ আমাকে তোমরা জবাব দিতে শুনলে। সুতরাং যখন জুমুয়ার আযানের জবাব দেয়া হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম হতে প্রমাণিত, তখন এটাকে মাকরূহ্ বলার অর্থ কি? (মূলতঃ এটা মাকরূহ্ নয়, বরং সুন্নত)।”

অতএব, উপরোক্ত বিস্তারিত ও নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লাহ্র ভিত্তিতে এটাই প্রমাণিত হলো যে, الاصح বা অধিক ছহীহ্ ও ফতওয়াগ্রাহ্য মতে জুমুয়ার খুৎবার পূর্বে মুয়ায্যিন যে আযান দেন সে আযানের জাওয়াব দেয়া এবং আযান শেষে দোয়া-মুনাজাত করা নিষিদ্ধ বা মাকরূহ্ নয় বরং জায়িয ও সুন্নত মুস্তাহাবের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং মাসিক মদীনার দলীলবিহীন বক্তব্য ভুল বলেই প্রমাণিত হলো।

[বিঃ দ্রঃ- এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ১৮, ৩২, ৪৮, ৫৪ ও ১০১তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে মাসিক মুঈনুল ইসলাম এবং মাসিক মদীনার ভুল বক্তব্য খণ্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে।

  এবার তৃতীয়বারের মত মাসিক মদীনার ভুল বক্তব্য খণ্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হলো।]

{দলীলসমূহ ঃ (১) বুখারী, (২) নাসাঈ, (৩) তিবরানী, (৪) মুয়াত্তা ইমাম মালিক, (৫) আত তা’লীকুল মুমাজ্জাদ আ’লা মুয়াত্তায়ে মুহম্মদ, (৬) মিরকাত, (৭) আইনী,  (৮) নিহায়া,  (৯) ইনায়া, (১০) শরহে ইনায়া, (১১) কাফী, (১২) মুহিত,  (১৩) সিরাজুল ওয়াহ্হাজ,  (১৪) বাহরুর রায়িক, (১৫) মিনহাতুল খালিক্ব, (১৬) মাবসূত, (১৭) আলমগীরী, (১৮) নূরুল হিদায়া, (১৯) নুরুদ্ দিরায়া, (২০) হাশিয়ায়ে হিদায়া, (২১) হাশিয়ায়ে শরহে বিকায়া, (২২) শরহে মাজমায়া, (২৩) শরহে ইলিয়াস, (২৪) শরহে নিকায়া, (২৫) বিদায়া, (২৬) ফতহুল ক্বাদীর,  (২৭) হাশিয়ায়ে তাহ্তাবী, (২৮) দুররুল মুখতার, (২৯) গায়াতুল আওতার, (৩০) হাশিয়ায়ে মারাফীউল ফালাহ্, (৩১) উমদাতুর রিয়ায়া, (৩২) ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, (৩৩) মজমুয়ায়ে ফতওয়ায়ে আমিনীয়া,  (৩৪) মায়ারিফে মাদানীয়াহ্, (৩৫) জরুরী মাসায়িল,  (৩৬) নাফ্উল মুফতী ওয়াস্ সায়িল, (৩৭) ফতওয়ায়ে শামী, (৩৮) ইমদাদুল আহ্কাম, (৩৯) ইমদাদুল মুফতীন, (৪০) ক্বিফায়াতুল মুফতী ইত্যাদি।}

সাইয়্যিদ মুহম্মদ শাহীনূর রহমান

সভাপতি- ছাত্র আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত

রামপুরা, ঢাকা।

সুওয়ালঃ ‘রসূলুল্লাহ্র নামায।’ এ নামে একটি বই বাজারে বের হয়েছে। বইটির লেখক নাসীরুদ্দীন আলবানী। বইটির কিছু কিছু লেখা আমার মনে বেশ সংশয় সৃষ্টি করেছে। তাই এ বইটি ও তার লেখক সম্পর্কে জানার জন্য এর এক কপি বই আপনাদের নিকট পাঠালাম।

আশা করি এ সম্পর্কে সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ নাসীরুদ্দীন আলবানী একটা কট্টর ওহাবী ও সালাফী। তার কাজই হচ্ছে ওহাবী মত-পথ প্রচার করা। তার আক্বীদা, আমল (বক্তব্য, লিখা) সবকিছু আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের খিলাফ।

হাদীস শরীফের ছহীহ্ কিতাব “মুসলিম শরীফে” বর্ণিত রয়েছে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

فانظروا عمن تأخذون دينكم.

অর্থঃ- “তোমরা কার নিকট থেকে দ্বীন গ্রহণ করছো তাকে দেখে নাও।”

অর্থাৎ কারো নিকট থেকে দ্বীন ইসলামের তথা শরীয়তের মাসয়ালা-মাসায়িল শিক্ষা করতে হলে তার আক্বীদা ও আমল আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত মুতাবিক কি না তা সর্বপ্রথম যাচাই-বাছাই করতে হবে। যদি আক্বীদা-আমল আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত মুতাবিক হয় তবে তাকে অনুসরণ করা যাবে এবং তার কিতাবাদী পড়া যাবে। আর যদি আক্বীদা-আমল আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের খিলাফ হয় তবে তাকে অনুসরণও করা যাবে না এবং তার কিতাবাদীও পড়া যাবেনা।  কারণ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত ব্যতীত বাকী যত ফিরক্বা বা দল রয়েছে সবই বাতিল ও গোমরাহ্।

এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

ستفترق امتى على ثلاث وسبعين ملة كلهم فى النار الا ملة واحدة قالوا من هى يا رسول الله قال ما انا عليه واصحابى رواه الترمذى وفى رواية احمد وابى داود عن معاوية ثنتان وسبعون فى النار وواحدة فى الجنة وهى الجماعة.

অর্থঃ- “অতি শীঘ্রই আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত বাহাত্তরটি দলই জাহান্নামে যাবে। তখন হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যে একটি দল নাযাত প্রাপ্ত, সে দলটি কোন দল?’ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি এবং আমার ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মত ও পথের উপর যারা কায়িম থাকবে, (তারাই নাযাত প্রাপ্ত দল)।”  (তিরমিযী)

আর মুসনদে আহ্মদ ও হযরত আবূ দাউদ-এর বর্ণনায় হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, “৭২টি দল জাহান্নামে যাবে, আর একটি দল জান্নাতে যাবে। আর সে দলটিই হচ্ছে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত।”

উপরোক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুহাদ্দিস, রঈসুল মুহাদ্দিসীন, ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত কিতাব মিশকাত শরীফের শরাহ্ “মিরকাত শরীফ”-এর ১ম খণ্ডের ২৪৮নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন যে,

ونقل الابهرى ان المراد بالامة امة الاجابة عند الاكثر (كلهم فى النار) …. (الا ملة) بالنصب اى الا اهل ملة (واحدة قالوا من هى) اى تلك الملة اى اهلها الناجية ……… (قال ما انا عليه واصحابى) … فكذا هنا المرادهم المهتدون المتمسكون بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين من بعدى فلاشك ولا ريب انهم هم اهل السنة والجماعة وقيل التقدير اهلها من كان على ما انا عليه واصحابى من الاعتقاد والقول والفعل فان ذالك يعرف بالاجماع فما اجمع عليه علماء الاسلام فهو حق وما عداه باطل.

অর্থঃ- “আবহুরী বর্ণনা করেন, নিশ্চয় (হাদীস শরীফে বর্ণিত) উম্মত শব্দ দ্বারা উম্মতে ইজাবতকে বুঝানো হয়েছে। অধিকাংশ আলিমগণের এটাই অভিমত। (উম্মতে ইজাবতের) প্রত্যেক দল জাহান্নামী … এক দল ব্যতীত। হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বললেন, “সে দল কোনটি অর্থাৎ নাযাত প্রাপ্ত দল কোনটি?” … হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি ও আমার ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মত ও পথে যারা ক্বায়িম থাকবে (তারাই নাযাতপ্রাপ্ত দল) …।

মূলতঃ এর দ্বারা এটাই বুঝিয়েছেন যে, তারা হিদায়েতপ্রাপ্ত। আমার এবং আমার পর খুলাফা-ই-রাশিদীনগণের সুন্নত ধারণকারী। অতএব, এতে কোন প্রকার সন্দেহ নেই যে, তারাই আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত। আর বলা হয়েছে যে, আক্বীদা, ক্বওল ও ফে’লের দিক থেকে তারা আমি ও ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের অনুসারী হবে। এটা মূলতঃ ইজ্মা দ্বারা প্রমাণিত, উলামায়ে ইসলাম যার উপর ইজ্মা করেছেন, সেটাই হক্ব। এছাড়া (অর্থাৎ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত ছাড়া) যা রয়েছে, সবই বাতিল।”

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, উম্মতে ইজাবত বা কলেমা পাঠকারীদের মধ্যেই আক্বীদা, ক্বওল ও ফে’লের ভিত্তিতে ৭৩টি দল হবে, তন্মধ্যে একটি মাত্র দল নাযাতপ্রাপ্ত, জান্নাতী ও হক্ব। আর ৭২টি দল জাহান্নামী, গোমরাহ্ ও বাতিল। এ ব্যাপারে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুসরণীয় সকল ইমাম, মুজ্তাহিদ, মুহাক্কিক, মুদাক্কিক, মুহাদ্দিস, মুফাস্সির, ফক্বীহ্ ও আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ একমত।

উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় “মিরকাত শরীফের” উক্ত স্থানে আরো উল্লেখ আছে যে,

واعلم اصول البدع كما نقل فى “المواقف” ثماينة :

(1) المعتزلة … وهم عشرون فرقة.

(2) والشيعة … وهم اثنان وعشرون فرقة

(3) والخوارج … وهم عشرون فرقة

(4) والمرجئة … وهى خمس فرقا

(5) والنجارية … وهم ثلاث فرق

(6) والجبرية … فرقة واحدة

(7) والمشبهة … فرقة ايضا فتلك اثنان وسبعون فرقة كلهم فى النار

(8) والفرقة الناجية هم اهل السنة البيضاء المحمدية والطريقة النقية الاحمدية.

অর্থঃ- “জেনে রাখ! (উক্ত ৭৩টি দল) প্রধাণতঃ ৮টি দলে বিভক্ত, যা “মাওয়াক্বিফ” কিতাবে বর্ণিত রয়েছে –  ১। মু’তাজিলাহ্ … এরা বিশ দলে বিভক্ত, ২। শিয়া  … এরা বাইশ দলে বিভক্ত, ৩। খারিজী … এরা বিশ দলে বিভক্ত, ৪। মরজিয়্যাহ্ … এরা পাঁচ দলে বিভক্ত, ৫। নাজ্জারিয়্যাহ্ … এরা তিন দলে বিভক্ত, ৬। জাবারিয়্যাহ্ … এরা এক দলেই রয়েছে, ৭। মুশাব্বিহা … এরাও  এক দলেই রয়েছে,    সুতরাং উল্লেখিত ৭২টি দল, তারা প্রত্যেকেই জাহান্নামী।

৮। আর (ناجية) নাজিয়াহ্ বা নাযাতপ্রাপ্ত দল, তারা হলো, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্পষ্ট সুন্নত ও উজ্জ্বল তরীক্বতের অনুসারী। অর্থাৎ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত।”    আর আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত বলতে যারা হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাবভুক্ত তারা। এর বাইরে যারা রয়েছে তারা উল্লিখিত ৭২টি বাতিল ফিরক্বার কোন না কোন একটির অন্তর্ভুক্ত।

মাযহাব মানা ফরয-ওয়াজিব

এ প্রসঙ্গে “মুছাল্লাম” কিতাবে আছে, “যে ব্যক্তি মুজ্তাহিদে (মতলক্ব নয়) যদিও সে আলিম, তথাপী তার জন্য তাক্লীদ অর্থাৎ কোন এক মায্হাবের অনুসরণ করা ফরয।”

হযরত মুল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “সাধারণের জন্য আলিমগণকে এবং আলিমদের জন্য মুজতাহিদগণকে অনুসরণ করা ওয়াজিব।” তিনি আরো বলেন, “চার মায্হাবের কোন একটাকে অনুসরণ করা ওয়াজিব।” (তাফসীরে আহ্মদিয়াত)

 হযরত আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “যারা ইজতিহাদে (মতলক্ব)-এর ক্ষমতা রাখে না, তাদের জন্য কোন একজন ইমামের মায্হাবকে অনুসরণ করা ওয়াজিব।” (জামিউল জাওয়ামে)

হযরত ইমাম গায্যালী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “কোন এক মায্হাবের অনুসরণ করা ওয়াজিব।” (ইহ্ইয়াউ উলুমিদ্দীন)

এছাড়াও হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি “আল মালুমা” কিতাবে, হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি “যাজিযুল মাযাহেব” কিতাবে, হযরত আল্লামা বাহরুল উলূম রহমতুল্লাহি আলাইহি “তাহ্রির” কিতাবে, হযরত আল্লামা ইবনে আব্দুন্ নূর রহমতুল্লাহি আলাইহি “হারী” কিতাবে, হযরত শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ্ মুহাদ্দিস দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি “ইকদুল জিদ” ও “ইন্ছাফ” কিতাবে, “তাফসীরে আযীযী”, “ছফরুছ ছায়াদাত” কিতাবে, “ফয়জুল হারামাইন” কিতাবে কোন এক মায্হাব অনুসারে চলা ওয়াজিব বলা হয়েছে, অন্যথায় গুণাহ্ হবে। ইমাম গায্যালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “কিমিয়ায়ে সাআদাত” কিতাবে বলেন, কোন এক মাযহাব মান্য না করলে মহাপাপী হবে।

অতএব, ফতওয়া হচ্ছে প্রত্যেকের জন্য মাযহাব চতুষ্ঠয়ের যে কোন এক মাযহাবের অনুসরণ করা ফরয-ওয়াজিব। অন্যথায় সে ফাসিক ও গোমরাহ্ হবে। এ ফতওয়ার উপর ইমাম-মুজতাহিদগণ ইজমা করেছেন। নাসিরুদ্দীন আলবানী কোন মাযহাবের অনুসরণকারী নয়; বরং সে মাযহাব বিরোধী একজন লোক। সে সালাফী নামেও পরিচিত।

বর্তমান মিডিলিষ্ট তথা মধ্যপ্রাচ্যের অনেক এলাকায় বিশেষ করে সৌদি আরবে যারা সালাফী নামে পরিচিত তারাও মাযহাব স্বীকার করেনা। বরং মাযহাবের বিরোধিতা করে থাকে। যারা মাযহাব মানেনা বা মাযহাবের বিরোধিতা করে তারা বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন, ওহাবী, সালাফী, মুহম্মদী, লা-মাযহাবী, আহলে হাদীস, রফে ইত্যাদি। তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের বিপরীত মত-পথ পোষণ ও প্রচার করে। তারা নিজেরাই নিজেদের মধ্য থেকে ইমাম বানিয়ে তার অনুসরণ-অনুকরণ করে। তাদের ইমামের আক্বীদা-আমল কুরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ হলেও সেটাকেই তারা অনুসরণ করে থাকে। এ ধরণের তথাকথিত একজন ইমাম হচ্ছে নাসিরুদ্দীন আলবানী।

 মূলতঃ এরূপ নব উদ্ভাবিত ইমামদের সম্পর্কেই হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

يكون بعدى ائمة لايهتدون بهداى ولايستنون بسنتى وسيقوم فيهم رجال قلوبهم قلوب الشياطين وجسمان انس.

অর্থঃ- “আমার পরে অনেক ইমাম বের হবে। তারা আমার হিদায়েতের উপর চলবেনা এবং আমার সুন্নত আমল করবেনা। তাদের মধ্যে এমন সকল লোক দাঁড়াবে বা পয়দা হবে যাদের দিল শয়তানের মত অথচ আকৃতিতে তারা মানুষ।” (মিশকাত)

হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا ابائكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم.

অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি, সাবধান! তোমরা তাদের কাছ থেকে দূরে থাকবে এবং তাদেরকেও তোমাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম )                           উল্লেখ্য, যারা মাযহাব মানেনা অর্থাৎ যারা লা-মাযহাবী তারা কয়েক শ্রেণীর-     (১) প্রথম শ্রেণী যারা মুশাব্বিহা ফিরক্বার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করে। তারা বিশ্বাস করে, আমাদের মত আল্লাহ্ পাক-এর হাত, পা, চোখ, কান, যবান ইত্যাদি রয়েছে।

(২) দ্বিতীয় শ্রেণী যারা বলে, মাযহাব মানা বা গ্রহণ করা র্শিক।  (৩) তৃতীয় শ্রেণী যারা বলে, মাযহাব মানা বিদ্য়াত। (৪) চতুর্থ শ্রেণী যারা মাযহাবকে হক্ব বা সঠিক বলে জানে। তারা যদিও প্রকাশ্যে নিজেদেরকে মাযহাবের অনুসরণকারী বলে দাবী করেনা প্রকৃতপক্ষে তারা চার মাযহাবের কোন একটি মাযহাব অনুযায়ী আমল করে বা তার অনুসারী।

এ চার শ্রেণীর মধ্যে শুধুমাত্র শেষ শ্রেণী ব্যতীত বাকি তিন শ্রেণীই না হক্ব। তাদের সম্পর্কে ইমাম-মুজতাহিদগণের ফতওয়া হলো, প্রথমতঃ যারা বলে ও বিশ্বাস করে যে, মানুষের মত আল্লাহ্ পাক-এর হাত, পা, কান, নাক, চোখ, মুখ ইত্যাদি রয়েছে তারা মুশাব্বিহা ফিরক্বা তথা কাফিরের অন্তর্ভুক্ত। তাই তাদের সাথে বিবাহ্-শাদী, নামায-কালাম, লেন-দেন কোনটিই জায়িয নেই। সম্পূর্ণরূপে হারাম।         দ্বিতীয়তঃ যারা বলে, মাযহাব মানা বা গ্রহণ করা র্শিক। মূলতঃ তারাই মুশরিক। তাদের সাথেও কোন প্রকার সম্পর্ক রাখা জায়িয নেই।

তৃতীয়তঃ যারা বলে, মাযহাব মানা বিদ্য়াত। মাযহাবকে বিদ্য়াত বলার কারণে তারাই বিদ্য়াতী হিসেবে সাব্যস্ত হবে। তাই তাদের সাথে বিবাহ্-শাদী, লেন-দেন, নামায-কালাম ইত্যাদি সবই মাকরূহ্।

আর চতুর্থ যারা মাযহাবকে হক্ব বলে জানে, তারা হক্ব এবং তাদের সাথে সবকিছু জায়িয।

উপরোক্ত দলীলসমূহের ভিত্তিতে আমভাবে ফতওয়া দেয়া হয়েছে যে, যারা মাযহাব মানে না তারা চরম ফাসিক ও গোমরাহ্।

কাজেই মাযহাবপন্থীদের জন্য নাসীরুদ্দীন আলবানী ও তার সম আক্বীদা-আমল সম্পন্ন কোন লোকের কিতাবাদী পড়া, ওয়াজ-নছীহত শোনা, অনুসরণ-অনুকরণ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে নাজায়িয, হারাম ও কুফরী।

অতএব, ভুল মাসয়ালা সম্বলিত ‘রসূলুল্লাহ্র নামায’ বইটি এবং অনরূপ যত বই বাজারে বের হয়েছে তা পড়া জায়িয নেই।

{দলীলসমূহঃ আহকামুল কুরআন লিল্ কুরতুবী, (২) আহকামুল কুরআন লি ইবনিল আরাবী, (৩) আহকামুল কুরআন লিল্ জাস্সাস, (৪) ত্ববারী, (৫) কবীর, (৬) খাযিন, (৭) বাগবী, (৮) মাদারিকুত্ তানযীল, (৯) রুহুল মায়ানী, (১০) রুহুল বয়ান, (১১) মাযহারী, (১২) ইবনে কাছীর, (১৩) ফতহুল ক্বাদীর, (১৪) বুখারী, (১৫) মুসলিম, (১৬) শরহুন্ নববী, (১৭) ফতহুল মুলহিম লিশ্ শিব্বীর আহমদ উসমানী, (১৮) ফতহুল বারী লি তক্বী উসমানী, (১৯) উমদাতুল্ ক্বারী,(২০) আবু দাউদ, (২১) বযলুল মাজহুদ, (২২) আউনুল মা’বুদ, (২৩) মিশকাত, (২৪) মিরকাত, (২৫) শরহুত্ ত্বীবী, (২৬) আশয়াতুল লুময়াত, (২৭) লুময়াত, (২৮) তানযীমুল আশতাত, (২৯) মুযাহিরে হক্ব, (৩০), জামে কবীর লিস্ সুয়ূতী, (৩১) তাফসীরে আযীযী, (৩২) তাফসীরে আহমদী, (৩৩) তাম্বিহ্, (৩৪) ইক্বদুল জীদ, (৩৫) তাহতাবী, (৩৬) দুররুল মুখতার, (৩৭) রদ্দুল মুহতার, (৩৮) শামী, (৩৯) হাশিয়াতুত্ তাহতাবী আলাদ্ দুররিল মুখতার, (৪০) ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া, (৪১) ফতওয়ায়ে আলমগীরী, (৪২) জামিউর রুমূজ, (৪৩) আল আশবাহ্ ওয়াল নাযাইর, (৪৪) আল বাহরুর রায়িক্ব, (৪৫) সায়েকাতুল মুসলিমীন, (৪৬) আনওয়ারুল মুকাল্লিদীন, (৪৭) আনওয়ারুল মাযাহিব, (৪৮) সাইফুল মাযাহিব, (৪৯) সাইফুল মুকাল্লিদীন, (৫০) ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ইত্যাদি}

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ