সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১০৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

সাইয়্যিদ মুহম্মদ মোক্তাদুল ইসলাম (মিলন)

রঈসুল মজলিশ-ছাত্র আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত

সুবহানীঘাট, সিলেট।

সুওয়াল ঃ রেযাখানী মুখপত্র ডিসেম্বর/২০০০ ঈসায়ী সংখ্যায় “তাফসীরে রুহুল বয়ান, বুখারী, গুনিয়াতুত তালেবীন, রেজভীয়া” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “সহীহ মুসলিম শরীফসহ” অনেক নির্ভরযোগ্য কিতাবে নফল নামায বিশেষতঃ ক্বদর ও বরাতের নফল নামায জামাত সহকারে আদাঃয় করা বৈধ…….।”

আর আপনারা “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” লিখেছেন, “তারাবীহ, ছলাতুল কুছুফ (সূর্য গ্রহণের নামায), ছলাতুল ইস্তিস্কা (বৃষ্টির নামায) এই তিন প্রকার নামায ব্যতীত যেমন লাইলাতুল ক্বদর, লাইলাতুল বরাত, তাহাজ্জুদ, চাশত, আওয়াবীন ইত্যাদি নফল নামাযসমূহ ইমামের সাথে চারজন মুক্তাদীসহ জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ।” কোনটি সঠিক?

আর “বুখারী, মুসলিম শরীফ উনার মধ্যে” কি “ক্বদর” ও বরাতের” নফল নামায জামায়াতের সাথে আদায় করার কথা উল্লেখ আছে? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব ঃ রেযাখানীরা তাদের মুখপত্রে “তাফসীরে রুহুল বয়ান, বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, গুনিয়াতুত তালেবীন এবং রেজভীয়া” কিতাবের বরাত দিয়ে নফল নামায বিশেষতঃ “শবে বরাত”, “শবে ক্বদরের” নফল নামায আযান-ইক্বামত ছাড়া জামায়াত সহকারে আদায় করা যে বৈধ বলেছে, তা আমরা আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এর বিগত সংখ্যাগুলোতে বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে প্রমাণ করেছি যে, “তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, জিহালতপূর্ণ, জালিয়াতী ও প্রতারণামূলক।”

কেননা, রেযাখানীরা কিতাবের নাম দিয়ে যে বক্তব্য প্রদান করেছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। বরং তার সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ, তারা কিতাবের ইবারত, সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে মনগড়া বক্তব্য প্রদান করেছে এবং ক্ষেত্র বিশেষ নিজের ভ্রান্ত মতকে টিকিয়ে রাখতে কিতাবের ইবারত কারচুপি করেছে।

(ধারাবাহিক)

বর্তমান সংখ্যায় রেযাখানীদের দলীলবিহীন ও মনগড়া বক্তব্য খ-ন করা হলো

উল্লেখ্য, রেযাখানীরা বলেছে, ঢালাওভাবে মাকরূহে তাহরীমার … ফতওয়া দিয়ে পীরানে পীর দস্তগীর আব্দুল কাদের জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সহ অনেক মাশায়েখে কিরাম উনাদের উপর মাকরূহ তাহরীমার অপবাদ দিয়ে নিজের খ্যাতি চমকানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে।”

এর জবাবে বলতে হয় যে, বিগত সংখ্যায় আমরা আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাতে দলীলের ভিত্তিতে প্রমাণ করে দিয়েছি যে, রেযাখানীরাই প্রকৃতপক্ষে মিথ্যাবাদী, ভ-, প্রতারক, মূর্খ ও জাহিল। তারা এমনই আশাদ্দুস দরজার জাহিল যে নিজেরাই নিজেদের দাবিকৃত ইমামের বিরুদ্ধ মত পোষণ করে অথচ আবার তারই ভক্ত বলে দাবী করে। কিন্তু সে কি লিখে গেছে সে সম্পর্কে তারা নিতান্তই বে-খবর ও আনপড়া।

দ্বিতীয়তঃ “শবে বরাত, শবে ক্বদর, লাইলাতুর রাগায়িব, তাহাজ্জুদ” ইত্যাদি নফল নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী। এ ফতওয়া দেয়ার কারণেই যদি তা পীরানে পীর দস্তগীর হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি অপবাদ হয়, তাহলে বলতে হয় যে, রেযাখানীদের বক্তব্য মুতাবিক তাদের গুরু রেযা খা-ই পীরানে পীর দস্তগীর হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি অপবাদ দিয়েছে।

কারণ, তাদের গুরু স্বয়ং রেযা খা-ই তার “রেজভীয়া” কিতাবে শবে বরাত, শবে ক্বদর, রাগায়িব ইত্যাদি নফল নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী বলে ফতওয়া দিয়েছে।

যেমন, “রেজভীয়া” কিতাবের ৩য় খ-ের ৪৫৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

نماز شب برات اگر چہ مشائخ کرام قدست اسرارھم  نے بجماعت بھی پڑھی … مگر ھمارے ائمہ رضی اللہ تعالی عنھم کا مذھب وھی ھے کہ جما عت بتدا عی ھو تومکروہ ھے.

অর্থাৎ “শবে বরাতের নামায যদিও কোন কোন মাশায়েখগণ জামায়াতে পড়েছেন তবে আমাদের আইম্মায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের মাযহাব ওটাই যে জাামায়াত تداعى এর সাথে হলে অর্থাৎ জামায়াতে চারজন মুক্তাদী হলে মাকরূহ তাহরীমী হবে।

“রেজভীয়া” কিতাবের ৩য় খ-ের ৪৬৫ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

ذلک کلہ بدعۃ …. ولم ینقل عن النبی صلی اللہ علیہ وسلم ولا عن اصحابہ …. دوسرا قول یہ کہ مساجد میں اس کی جماعت مکروہ ھے.

অর্থাৎ “ওগুলো প্রত্যেকটি বিদয়াত অর্থাৎ ছলাতুর রাগায়িব, শবে বরাত, শবে ক্বদরের নফল নামায জামায়াতে আদায় করা ইত্যাদি প্রত্যেকটি কাজই বিদয়াত।” …… কেননা, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনার থেকে ওগুলোর কোন বর্ণনা নেই। বিধায় ওগুলো প্রত্যেকটাই বিদয়াত। ……… দ্বিতীয় মতে, মসজিদে এর জামায়াত করা মাকরূহ তাহরীমী।”

“রেজভীয়া” কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে, “তারাবীহ, ছলাতুল কুছুফ (সূর্যগ্রহণের নামায), ছলাতুল ইস্তিস্কা (বৃষ্টির নামায) এই তিন প্রকার নামায ব্যতীত অন্যান্য নফল নামাযসমূহ জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী।”

যেমন, “রেজভীয়া”-এর ৩য় খ-ে আরো উল্লেখ আছে,

ھمارے ائمہ کرام رضی اللہ تعالی عنھم کے نزدیک نوافل کی جماعت بتدا عی مکرو÷ ھے اسی حکممیں نماز  خسوف بھی د اخل کہ وہ بھی تنھا پڑھی  جائے اگرچہ امام جمعہ حاضر ھو کما فی الشامی عن اسمعیل عن البر جندی …..  صرف تراویح وصلاۃ الکسوف وصلاۃ الاسیسقاء مسشنی ھیں …. تداعی مذھب اصح میں اس وقت متحقق ھوگی جب چار یا زیادہ مقتدی ھوں.

অর্থ: “আমাদের আইম্মায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের নিকট নফল নামাযসমূহ تداعى এর সাথে জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী। এই হুকুমের মধ্যে ছলাতুল খুছুফও (চন্দ্রগ্রহণের নামায) অন্তর্ভুক্ত। এই নামাযও একাকী পড়তে হবে। যদিও জুমুয়ার ইমাম উপস্থিত থাকে।”

যেমন, শামী কিতাবে, ইসমাঈল এবং বরজুন্দী থেকে বর্ণিত আছে, …….. আর তারাবীহ, ছলাতুল কুছুফ (সূর্য গ্রহণের নামায), ছলাতুল ইস্তিস্কা (বৃষ্টির নামায), এই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত নয়। অর্থাৎ এই তিন প্রকার নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ নয়। ….. অধিক ছহীহ মতে চারজন অথবা চারের অধিক মুক্তাদী হওয়াই (تداعى) তাদায়ী অর্থাৎ মাকরূহ তাহরীমী।

যেমন, “রেজভীয়া” কিতাবের উক্ত খ-ের ৪৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

تراویح وکسوف واستسقاء کے سوا جما عت نوافل  میں…..  اور چار مقتدی ھو تو بالاتفاق مکروہ.

অর্থাৎ “তারাবীহ, কুছুফ, (সূর্যগ্রহণের নামায) ইস্তিস্কার (বৃষ্টির) নামায ব্যতীত অন্যান্য নফল নামায সমুহ …. ইমামের সাথে চারজন মুক্তাদীসহ জামায়াতে আদায় করা সকল ইমাম মুজতাহিদ ও ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের সর্বসম্মত মতে মাকরূহ তাহরীমী।”

আরো উল্লেখ যে, “রেজভীয়া” কিতাবে পরিশেষে এটাও উল্লেখ আছে যে, নফল নামায পড়তে হলে পৃথক পৃথক পড়তে হবে। জামায়াতের সাথে নফল নামায আদায় করা যাবে না। কেননা নফল নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী। আর চারজন মুক্তাদী হলে সকল ইমাম মুজতাহিদ ও ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের সর্বসম্মত মতে নফল নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী।

শুধু তাই নয়, রেযা খা তার ‘রেজভীয়া’ কিতাবে সুন্নত নামাযও জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী বলে ফতওয়া দিয়েছে।

যেমন, ‘রেজভীয়া’ কিতাবের ৩য় খ-ের ৪৬৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

استسقاء کے سوا ہر نماز نفل وتراویح وکسوف کے سوا ہرنماز سنت میں  ایسی جماعت جس میں  چار یا زیادہ شخص مقتدی بنیں مکروہ بے.

অর্থ: “ইস্তিস্কার নামায ব্যতীত যে কোন নফল নামাযে এবং তারাবীহ ও কুছুফ নামায ব্যতীত যে কোন সুন্নত নামাযে যদি এরূপ জামায়াত হয় যাতে চারজন অথবা চারের অধিক মুক্তাদি উপস্থিত হয় তাহলে মাকরূহ তাহরীমী হবে।”

সুতরাং যেখানে সুন্নত নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী সেখানে নফল নামায জামায়াতে পড়া কি করে বৈধ হতে পারে?

যেমন, “রেজভীয়া” কিতাবের ১০ম খ-ে উল্লেখ আছে,

نفل پڑھیں تو الگ الگ ورنہ نفل جماعت کثیرہ کے ساتھ مکروہ ھے چار مقتدی ھوں تو بالاتفاق.

অর্থঃ “নফল নামায পড়তে হলে পৃথক পৃথক পড়বে, কেননা নফল নামায বড় জামায়াতের সাথে পড়া অর্থাৎ যদি জামায়াতে চারজন মুক্তাদী হয় তাহলে সকল ইমাম, মুজতাহিদ ও ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের ঐক্যমতে জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী।”

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, রেযা খা তার ‘রেজাভীয়া’ কিতাবে, শবে বরাত, শবে ক্বদর, রাগায়িব ইত্যাদি নফল নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী ফতওয়া দিয়েছে।

সুতরাং “শবে বরাত, শবে ক্বদর, লাইলাতুর রাগায়িব, তাহাজ্জুদ” ইত্যাদি নফল নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী। এ ফতওয়া দেয়ার কারণেই যদি তা পীরানে পীর দস্তগীর হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি অপবাদ হয়, তাহলে বলতে হয় যে, রেযাখানীদের উক্ত বক্তব্য মুতাবিক রেযা খাই পীরানে পীর দস্তগীর হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি অপবাদ দিয়ে নিজের খ্যাতি চমকানোর অপচেষ্টা চালিয়েছিলো। (চলবে)

মাওলানা মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান

মাওলানা মুহম্মদ মাছূম বিল্লাহ, মুহম্মদ আসাদুর রহমান, মুহম্মদ মাইজুর রহমান

ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

সুওয়াল ঃ আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম এই তিনটি সংখ্যায় ৩৫৩টি অকাট্য দলীলের ভিত্তিতে প্রদত্ত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ, মুহাক্কিক-মুদাক্কিক ও হক্কানী উলামায়ে কিরামগণ উনাদের ফতওয়া মুতাবিক জানতে পারলাম যে, “প্রাণীর ছবি তৈরি করা বা করানো, ঘরে রাখা সর্বাবস্থায় হারাম।”

অথচ রেযাখানী মুখপত্র নভেম্বর/২০০১ ঈসায়ী সংখ্যায় ছবি সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ফতওয়া প্রকাশ করেছে। যা কিনা মানুষের ঈমান-আমল বিনষ্ট হওয়ার কারণ। রেযাখানীদের ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যের যে বিষয়গুলো আপত্তিকর সেগুলো নি¤েœ উল্লেখ করা হলো-

(ক) রেযাখানীরা ছবি তোলাকে বৈধ বলেছে; কিন্তু দলীল হিসেবে পেশ করেছে ঘরে ছবি রাখা সম্পর্কিত হাদীছসমূহকে।

(খ) …. কতেক উলামা যেসব ছবির শরীর ও ছায়া নেই সেসব ছবিকে বৈধ বলেছেন।

(গ) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুরুর দিকে ছবি তৈরি করা ও সংরক্ষণ করাকে নিষেধ করেছিলেন; কিন্তু পরবর্তীতে অনুমতি দেন।

(ঘ) পূর্ববর্তীদের কেউ কেউ এবং হাম্বলী, শাফেয়ী, মালেকী এমনকি হনাফীদেরও কেউ কেউ নাকি (গায়রে মুজাসসাম) শরীরবিহীন ছবিকে বৈধ বলেছেন।

(ঙ) সামাজিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে বিশেষ প্রয়োজনে ছবি তোলা বৈধ যা যুগের চাহিদাও।

(চ) প্রত্যেক যুগের ফক্বীহ, মুফতী, কাজী ও আলিমগণ যুগের চাহিদা অনুযায়ী ফতওয়া দিয়েছেন এবং দেয়া উচিত।

(ছ) ছবি হারাম হওয়ার মূলে হলো গায়রুল্লাহর সম্মান ও ইবাদত।

(জ) প্রয়োজনীয় রেকর্ডের জন্য ফাইল বন্দি ছবিসমূহ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের নিকট জ্ঞান ও ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য জানার নিমিত্তে সরকারি-বেসরকারী যাদুঘর বা বিশেষ প্রতিষ্ঠানসমূহে পূর্বের নানা মনীষীগণ উনাদের ছবি সংরক্ষণ/ধারণ করে রাখা বিশেষ প্রয়োজনে মাকরূহ হবেনা।

এছাড়াও আরো বহু আপত্তিকর বিষয় তাদের উক্ত ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যে স্থান পেয়েছে। কুরআন শরীফ সুন্নাহ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে তাদের উল্লিখিত আপত্তিকর বক্তব্যগুলোর শরয়ী ফায়সালা কামনা করি।

জাওয়াব ঃ হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم.

অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি, সাবধান! তোমরা তাদের কাছ থেকে দূরে থাকবে, তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ)

উল্লিখিত হাদীছ শরীফ উনার পূর্ণ মেছদাক বা নমুনা হচ্ছে রেযাখানীরা। তারা ছবির ব্যাপারে এমন সব বক্তব্য প্রদান করেছে যা কিতাবে দেখা তো দূরের কথা কেউ কোন দিন শুনেও নাই। মূলতঃ রেযাখানীরা নিজেদের কৃত বদ আমলকে ধামা-চাপা দেয়ার উদ্দেশ্যেই মনগড়াভাবে ছবিকে জায়িয করার অপচেষ্টা করেছে।

(ধারাবাহিক)

প্রাণীর ছবি সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত রেযাখানীদের আপত্তিকর ও প্রতারণামূলক বক্তব্য সমূহের খ-ন মূলক জবাব- (১)

যুগে যুগে দাজ্জালে কাজ্জাব বা দুনিয়াদার মৌলভীরা নিজে স্বার্থ হাছিলের লক্ষ্যে হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল ফতওয়া দিবে এটাই তো স্বাভাবিক। কেননা, দুনিয়া লোভী মৌলভীদের শায়খ বা মুর্শিদ হচ্ছে শয়তান। আর শয়তানের কাজই হচ্ছে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম বানানো।

আর যামানার মুজাদ্দিদ এবং হক্কানী উলামায়ে কিরামগণ উনাদের কাজ হচ্ছে শয়তানের অনুসারী দুনিয়া লোভী মৌলভীদের ধোকা থেকে মুসলমানের ঈমান-আমল হিফাযতের লক্ষ্যে কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ, ইজমা এবং ক্বিয়াস উনার ভিত্তিতে হারামকে হারাম ও হালালকে হালাল সাব্যস্ত করে দেয়া। যেমন দিয়েছিলেন হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি, গাউছূল আ’যম হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, সুলতানুল হিন্দ খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, কাইয়ি্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, শহীদে আ’যম হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও গত শতকের মুজাদ্দিদ হযরত আবু বকর ছিদ্দীকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনারা প্রত্যেকেই উনাদের নিজ নিজ যামানায় উলামায়ে “সূ”দের উদ্ভাবিত বদ আক্বীদা ও আমলসমূহের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়ে মুসলমানদের ঈমান-আমল হিফাযত করেছেন।

অনুরূপ বর্তমান যামানার উলামায়ে ‘সূ’রা যখন সমস্ত হারামগুলোকে হালাল বানানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত যেমন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, হরতাল, লংমার্চ, ব্লাসফেমী আইন, মৌলবাদ, কুশপুত্তলিকা দাহ, ভোট-নির্বাচন, নারী নেতৃত্ব, বেপর্দা হওয়া, ছবি, টেলিভিশন, ভি.সি.আর, ভিডিও, খেলা ইত্যাদি হারাম ও নাজায়িয কাজ সেগুলোকে তারা হালাল ও জায়িয বানানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

আবার তার বিপরীতে হালাল ও জায়িয কাজগুলোকে হারাম-নাজায়িয ও বিদয়াত বলে ফতওয়া দিচ্ছে। যেমন, মীলাদ শরীপ পাঠ করা, আযানের সময় অঙ্গুলী চুম্বন করা, কদমবুছী করা, ফরয নামায, জানাযা, আযানের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা, উজরত গ্রহণ করা ইত্যাদি হালাল কাজ গুলোকে উলামায়ে ‘সূ’রা নাজায়িয ও বিদয়াত বলছে।

তখন বর্তমান যামানার মুজাদ্দিদ, আওলাদে রসূল রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি মুসলমানদের ঈমান-আমল হিফাযতের লক্ষ্যে তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাতে কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা এবং ক্বিয়াসের ভিত্তিতে হারামকে হারাম, হালালকে হালাল, নাজায়িযকে নাজায়িয, জায়িযকে জায়িয, বিদয়াতকে বিদয়াত এবং সুন্নতকে সুন্নত প্রমাণ করে দিয়েছেন ও দিচ্ছেন।

রেযাখানীদের ছবি সম্পর্কিত সুওয়াল-জাওয়াবটি তারই একটি বাস্তব প্রমাণ। অর্থাৎ রেযাখানীরা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে যখন হারাম ছবিকে হালাল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হলো তখনই মুসলমানদের ঈমান-আমল হিফাযত করতে আল বাইয়্যিনাতে তার জবাব আসতে শুরু করলো। এবার রেযাখানীদের ছবি সম্পর্কিত মনগড়া, বিভ্রান্তিকর ও বানোয়াট বক্তব্যের খ-নমূলক জবাবে আসা যাক।

মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর গত সংখ্যার অর্থাৎ ১০৭তম সংখ্যার আলোচনা দ্বারা দিবালেকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, রেযাখানীরা প্রাণীর ছবিকে জায়িয করার উদ্দেশ্যে সর্ব প্রথম যে হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করেছে তা দ্বারা কখনই প্রাণীর ছবি জায়িয প্রমাণিত হয়না। বরং প্রমাণিত হয়েছে যে, উক্ত হাদীছ শরীফখানা প্রাণীর ছবি নাজায়িয ও হারাম হওয়ার পক্ষে দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য। সুতরাং রেযাখানীরা ছবি জায়িয করার ক্ষেত্রে উক্ত হাদীছ শরীফ উনাকে দলীল হিসেবে পেশ করে চরমে জিহালতী ও জালিয়াতির পরিচয় দিয়েছে।

শুধু তাই নয়, রেযাখানীরা প্রাণীর ছবিকে জায়িয করার উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় যে দলীল পেশ করেছে তা দ্বারাও ছবি জায়িয প্রমাণিত হয়না বরং তা দ্বারা প্রাণীর ছবি নাজায়িয ও হারামই প্রমাণিত হয়।

যেমন, রেযাখানীরা দ্বিতীয় দলীল হিসেবে নি¤েœাক্ত হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করেছে,

عن زيد بن خالد عن ابى طلحة صاحب رسول الله صلى الله عليه وسلم انه قال ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال المكلائكة لاتدخل بيتا فيه صورة قال بسر ثم اشتكى زيد فعدناه فاذا على بابه ستر فيه صورة قال فقت لعبيد اله الخوانى ربيب مسمونة زوج النبى صلى الله عليه وسلم الم يحبرنا زيد عن الصور يوم ااول فقال عبيد الله الم تشمعه حين قال الا رقما فى ثوب.

আর রেযাখানীরা উক্ত হাদীছ শরীফ উনার অর্থ করেছে এরূপভাবে, “অর্থাৎ যায়েদ ইবনে খালেদ বর্ণনা করেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবী হযরত আবু তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেছেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন যে, যে ঘরে ছবি থাকে তাতে ফিরিশতা প্রবেশ করেনা। (বর্ণনাকারী বলেন) রসূল বলেছেন- হযরত যায়েদ অসুস্থ হলে আমরা উনাকে দেখতে গেলাম, তখন উনার ঘরের দরজায় ছবিওয়ালা পর্দা দেখতে পাই। আমি উবায়দুল্লাহ খাওলানী (যিনি উম্মুল মু’মিনীন হযরত মায়মুনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলাম, যায়েদ আমাদেরকে কি পূর্বে ছবি থেকে নিষেদ করতেন না? হযরত উবায়দুল্লাহ বললো, তুমি কি শুননি যে, তিনি কাপড়ের উপর অঙ্কিত ছবিকে পূর্বের হুকুম থেকে পৃথক করে থাকেন।”

মূলত: রেযাখানীরা উক্ত হাদীছ শরীফ উনার ভুল অর্থ ও অশুদ্ধ ব্যাখ্যা করে প্রমাণ করতে চেয়েছে যে, কাপড়ের উপর অঙ্কিত ছবি জায়িয।

আমরা রেযাখানীদের ভুল অর্থ ও ব্যাখ্যা খ-ন করার এবং কাপড়ের উপর কোন ধরণের ছবি অঙ্কন করা জায়িয তা প্রমাণ করার পূর্বে এটাই প্রমাণ করবো যে, হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্টভাবেই প্রাণীর ছবিযুক্ত পর্দা ঘরে ঝুলানোর প্রতি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

যেমন, হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ হয়েছে,

عن عائشة قالت قدم رسول الله صلى اله عيه وسلم من سفر وسترت بقرام لى على سهوة لى فيها تما ثيل فلما رأه رسول الله صلى الله عليه وسلم هتكه وقال اشد الناس عذابا يوم القيامة الذين يضاهون بخلق الله.

অর্থ: “হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোন এক সফর থেকে ঘরে আসলেন, আর আমি আমার ঘরের আঙ্গিনায় প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা পর্দা ঝুলিয়েছিলাম। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওটা দেখে ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেন, মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তির ক্বিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি হবে, যে মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছূরত তৈরি করে।” (নাসাঈ ৮ম জিঃ ২১৪ পৃষ্ঠা, মু’য়জামুল মুফহারিস ৩য় জিঃ ৪৪০ পৃষ্ঠা, নাসাঈ ২য় জিঃ ৩০০ পৃষ্ঠা, ইবনে মাযাহ ২৬৮ পৃষ্ঠা, মুসলিম ২য় জিঃ ২০১ পৃষ্ঠা ইত্যাদি।)

عن عائشة رضى الله عنها قالت دخل عى رسول الله صلى الله عليه وسلم وانا مسترة بقرام فيه صورة فتلون وجهه ثم تنا ول الستر فهتكه ثم قال ان من اشد الناس عذابا يوم القيامة الذين يشبهون بخلق الله.

অর্থ: “হযরত আশিয়া ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার নিকট আসলেন, আর আমি (প্রাণীর ছবিযুক্ত) একটি চাদর গায়ে দেয়া ছিলাম। (ওটা দেখে) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেহারা মুবারক রঙ্গীন হয়ে গেল। অতঃপর তিনি ওটা টেনে নিয়ে ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেন, নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে ক্বিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তির কঠিন শাস্তি হবে, যে মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছূরত তৈরি করবে।” (মুসনদে আহমদ ২য় জিঃ ২১৭ পৃষ্ঠা, তাহারী ২য় জিঃ ৩৬৩ পৃষ্ঠা)

عن عائشة قالت كان لنا ستر فيه تمثال طائر وكان الداخل اذا دخل استقبله فقال لى رسول الله صلى الله عليه وسلم حولى مذا فانى كلما دخلت فرأيته ذكرت الدنيا.

অর্থ: “হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের পাখির ছবিযুক্ত একখানা পর্দা ছিলো। প্রত্যেক লোক প্রবেশ করতেই সেটা তাদের নজরে পড়তো। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে বললেন, পর্দাটি সরিয়ে ফেল। কেননা, আমি যতবার ঘরে প্রবেশ করি ততবারই ওটা দেখে আমার দুনিয়ার স্মরণ হয়।” (মুসলিম ২য় জিঃ, ২০০ পৃষ্ঠা)

উল্লিখিত তিনখানা হাদীছ শরীফ দ্বারা স্পষ্টতঃ প্রমাণিত হলো যে, পর্দা, চাদর ইত্যাদি কাপড়ে অঙ্কিত প্রাণীর ছবিও হারাম। অর্থাৎ কাপড়ে প্রাণীর ছবি তৈরি করা এবং তা ঘরে প্রকাশ্যে রাখাও হারাম। কেননা, স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পর্দা, চাদর ইত্যাদি কাপড়ে অঙ্কিত প্রাণীর ছবিকে অপছন্দ করতেন। তাই তিনি তা ছিঁড়ে ফেলেছেন এবং সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন।

অতএব, কাপড়ে প্রাণীর ছবি অঙ্কন করার নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত স্পষ্ট হাদীছ শরীফসমূহ বাদ দিয়ে একখানা অস্পষ্ট হাদীছ শরীফ উনার মনগড়া অর্থ ও ব্যাখ্যা করে তা দ্বারা কাপড়ে প্রাণীর ছবি জায়িয প্রমাণ করার অপচেষ্টা করা সুস্পষ্ট গোমরাহী ও জালিয়াতী নয় কি? এটা শুধু গোমরাহী ও জালিয়াতিই নয় বরং সুস্পষ্ট কুফরীও বটে। (চলবে)

 মুহম্মদ মুস্তাফির্জু রহমান (ফারুক) ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম।

 সুওয়ালঃ  মাসিক রাহমানী পয়গাম জুন/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় নিম্নবর্ণিত জিজ্ঞাসা ও তার জবাব ছাপা হয়- জিজ্ঞাসাঃ ফুটবল খেলা শরীয়তে বৈধ কিনা? জবাবঃ সতর না খুলে অর্থাৎ নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত পূর্ণ ঢেকে হারজিত ছাড়া, ইবাদতসমূহ যেমন জামাআতে নামায পড়া ইত্যাদির প্রতি খেয়াল রেখে শরীর চর্চার নিয়তে ফুটবল-ক্রিকেট বা এ জাতীয় খেলা জায়িয আছে।             হারজিতের সাথে বা সতর খুলে বা খেলতে গিয়ে অন্যান্য ইবাদতে অমনোযোগী হয়ে যাবার আশংকা থাকলে কোন খেলাই জায়িয নয়।        এখন আমার সুওয়াল হলো- ১. উপরোক্ত জিজ্ঞাসার জবাব শরীয়ত সম্মত হয়েছে কিনা? ২. খেলা কাকে বলে? ও কত প্রকার? ৩. শরীয়তে কোন হারামকে শর্ত দিয়ে হালাল করা জায়িয আছে কিনা?

দয়া করে দলীল-আদিল্লাহ্র মাধ্যমে জানিয়ে বাধিত করবেন।  জাওয়াবঃ  ফুটবল, ক্রিকেট বা এ জাতীয় খেলা সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ শরীয়তে খেলা সম্পর্কে যে সুস্পষ্ট বিধান বর্ণিত রয়েছে সে বিধান মতে ফুটবল, ক্রিকেট বা এ জাতীয় খেলা সম্পূর্ণরূপে নাজায়িয ও হারাম।

হাদীস শরীফের বিখ্যাত কিতাব, “মুস্তাদরিকে হাকিম”-এর মধ্যে হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “সর্ব প্রকার খেলা বাতিল তিনটি ব্যতীত- (১) তীর ধনুক চালনা করা, (২) অশ্বকে (ঘোড়া) প্রশিক্ষণ দান করা, (৩) নিজ স্ত্রীর সাথে শরীয়তসম্মত হাসি-খুশী করা।”     আরো উল্লেখ্য যে, আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাসাঈ শরীফ, ইবনে মাযাহ্ শরীফ ইত্যাদি হাদীস শরীফের কিতাবে হযরত ওকবা ইবনে আমের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে অনুরূপ হাদীস শরীফ বর্ণিত রয়েছে। তবে শব্দের কিছু তারতম্য রয়েছে।

হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে রিওয়ায়েত আছে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মু’মিন পুরুষের শ্রেষ্ঠ খেলা সাঁতার কাটা আর নারীর শ্রেষ্ঠ খেলা সুতা কাটা।”

ছহীহ্ মুসলিম শরীফ ও মুসনদে আহ্মদ শরীফে হযরত সালমান ইবনে আকওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দৌঁড় অনুশীলনে ইজাযত দিয়েছেন।     আর আবূ দাউদ শরীফে বর্ণিত আছে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোকনা পাহ্লোয়ানকে কুস্তিতে ধরাশায়ী করেছিলেন।

প্রকৃতপক্ষে হাদীস শরীফে তথা শরীয়তে যেসব খেলার অনুমোদন রয়েছে, তা ব্যতীত যত প্রকার খেলা রয়েছে, তার প্রত্যেকটির মধ্যেই, না কোন দ্বীনী ফায়দা রয়েছে এবং না কোন দুনিয়াবী ফায়দা রয়েছে। বরং প্রতিটি খেলা তিনটি অবস্থার কোন এক অবস্থা থেকে খালি নয়। হয় তা কুফরী হবে অথবা হারাম হবে, আর না হয় তা মাকরূহ্ হবে।

যে খেলা বিধর্মীদের সাথে তাশাব্বুহ্ বা সাদৃশ্য রাখে অথবা দ্বীন ইসলাম থেকে সরিয়ে দেয়, তা সম্পূর্ণ কুফরী।

হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে,

      من تشبه بقوم فهو منهم.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।”  (আহ্মদ, আবূ দাউদ, মিশকাত)  যে খেলা ইসলামী আক্বীদা থেকে সরিয়ে নেয়না কিন্তু হারাম ও গুণাহ্র কাজে লিপ্ত করে দেয়, তা কুফরী নয়, তবে কবীরা গুণাহ্র কারণ। আল্লাহ্ পাক তাঁর কালামে পাকে ইরশাদ করেন,

نعاونوا على البر والتقوى ولا تعاونوا على الاثم والعدوان.

অর্থঃ- “তোমরা পরস্পর পরস্পরকে নেক কাজ ও পরহেযগারীর মধ্যে সাহায্য কর, পাপ ও শত্রুতার মধ্যে সাহায্য করনা।” (সূরা মায়িদা/২)

আর যে সমস্ত খেলা কুফরী ও হারাম কোনটিই নয় কিন্তু প্রকাশ্যে তা পাপ বলেও মনে হয়না, মানুষ সাধারণভাবে সে সমস্ত খেলাকে জায়িয মনে করে থাকে, প্রকৃতপক্ষে তাও পাপেরই অন্তর্ভুক্ত। এতে যেমন ইবাদত-বন্দিগীর ব্যাঘাত ঘটে এবং স্বাস্থ্য, সময় ও টাকা-পয়সার অপচয় হয়, তদ্রুপ পরস্পরের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষও পয়দা হয়।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,

ان المبذرين كانوا اخوان الشيطين.

অর্থঃ-“নিশ্চয়ই (সর্বপ্রকার) অপচয়কারী শয়তানের ভাই।” (সূরা বণী ইসরাঈল/২৭)

আর হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে,

من حسن اسلام المرء تركه مالايعنيه.

অর্থঃ- “কোন ব্যক্তির জন্য দ্বীনের সৌন্দর্য হলো অহেতুক বা অপ্রয়োজনীয় কাজ-কর্ম থেকে বিরত থাকা।”

উল্লেখ্য যে, শরীয়তের ফতওয়া হচ্ছে- যে কাজ হারাম ও কুফরী, তাকে হালাল মনে করা কুফরী। অর্থাৎ যে হালাল মনে করবে, সে কাফির হয়ে যাবে।

আর যে কাজ হারাম ও কুফরী নয় কিন্তু পাপের কারণ, আর সে পাপকে হালকা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য মনে করে অর্থাৎ এ ধরণের পাপ করলে কিছু হয়না ইত্যাদি মনে করে করাটাও কুফরী।  হাদীস শরীফ বা শরীয়তে যে সমস্ত খেলাকে জায়িয বলা হয়েছে বা অনুমোদন করা হয়েছে, সে সমস্ত খেলায় যেমন দ্বীনী ফায়দা রয়েছে, তেমনি দুনিয়াবী ফায়দাও নিহিত রয়েছে। যেমন- তীর চালনা করা, অশ্বকে প্রশিক্ষণ দেয়া, সাঁতার কাঁটা, দৌঁড় অনুশীলন ইত্যাদি জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণের অন্তর্ভুক্ত এবং স্বাস্থ্যকে সুঠাম ও বলিষ্ঠ রাখার কারণ।     হাদীস শরীফে উল্লেখ রয়েছে,

العلم علمان علم الاديان وعلم الابدان.

অর্থঃ- “ইল্ম হচ্ছে- দু’প্রকার। একটি হচ্ছে- দ্বীন সংক্রান্ত আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে- স্বাস্থ্য সংক্রান্ত।” অর্থাৎ দ্বীনী ইল্ম জরুরত আন্দাজ অর্জন করা যেরূপ ফরযের অন্তর্ভুক্ত। তদ্রুপ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ইল্ম জরুরত আন্দাজ শিক্ষা করাও ফরয।         হাদীস শরীফে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

اغتنم خمسا شيابك قبل هر مك فراغك قبل شغلك غنا ئك قبل فقرك صحتك قبل سقمك حياتك قبل موتك.

অর্থঃ- “পাঁচটি জিনিসকে গণীমত মনে করো- (১) বৃদ্ধ হওয়ার পূর্বে যৌবনকালকে, (২) ব্যস্ততার পূর্বে অবসর সময়কে, (৩) অভাবের পূর্বে স্বচ্ছলতাকে, (৪) অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতাকে এবং (৫) মৃত্যুর পূর্বে হায়াতকে।

উল্লেখ্য, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যই তার স্বাস্থ্য ও সুস্থতা নিয়ামত ও গণিমত স্বরূপ যা রক্ষা করা প্রত্যেকেরই দায়িত্ব ও কর্তব্য। অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যই তার যৌবন, অবসর সময়, স্বচ্ছলতা, সুস্থতা ও হায়াত এক বিশেষ নিয়ামত ও গণিমতস্বরূপ, যা শরীয়ত সম্মত পদ্ধতিতে যথাযথভাবে ব্যবহার করা ও রক্ষা করা প্রত্যেকেরই দায়িত্ব ও কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত।         তীর-ধনুক চালনা করা এবং অশ্বকে  প্রশিক্ষণ দান করার মাধ্যমে মু’মিন বা মুসলমান নিজেকে নিজে জিহাদের জন্য যোগ্য বা উপযুক্ত করে গড়ে তোলে। কারণ প্রত্যেক মুসলমানই ইসলামী খিলাফতের একজন শক্তিশালী সৈনিক বা মুজাহিদ।   আর সুতা কাটা মেয়েদের সাংসারিক কাজের অন্তর্ভুক্ত যা দ্বারা তাদের সংসারের আর্থিক স্বচ্ছলতাও আসে।হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে,

طلب كسب الحلال فريضة بعد الفريضة.

অর্থঃ- “হালাল কামাই করা অন্যান্য ফরযের পরে ফরয।” আবার স্ত্রীর সাথে শরীয়ত সম্মত হাসি-খুশী করা, বংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যকে পূর্ণতা দান করে ও উভয়ের দ্বীন ও ঈমান হিফাযতের ও সুস্থতার কারণ হয়।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,

هن لباس لكم وانتم لباس لهن.

অর্থঃ- “তারা (স্ত্রীরা) তোমাদের আবরণ এবং তোমরাও তাদের আবরণ।” (সূরা বাক্বারা/১৮৭)

অর্থাৎ তোমরা পরস্পর পরস্পরের ইজ্জত-আবরু তথা দ্বীন, ঈমান হিফাযতের কারণ।

খেলা কাকে বলে ও কত প্রকার?        

খেলা কাকে বলে- এর জবাবে বলতে হয়, কুরআন শরীফ ও হাদীস  শরীফে বর্ণিত لعب (লায়িব) শব্দটি যদিও আম বা সাধারণ অর্থে খেলা হিসেবে ব্যবহৃত হয় কিন্তু হাক্বীক্বী বা প্রকৃত অর্থে তা হলো- (১) খুশী করা, স্বাদ গ্রহণ করা তথা এমন আনন্দ করা যা শরীয়তে অনুমোদিত। (২) ক্রীড়া করা, তামাশা করা, কৌতুক ইত্যাদি করা যা শরীয়তে অনুমোদিত নয়। অর্থাৎ উপরোক্ত অর্থগত দিক থেকে খেলা দু’প্রকার।

উল্লেখ্য, আরবী ‘লায়িব’ ও বাংলায় খেলা শব্দটি যখন শরীয়ত সম্মত বা শরীয়ত অনুমোদিত বিষয় সম্পর্কে ব্যবহৃত হবে তখন তার অর্থ খুশী করা, স্বাদ গ্রহণ করা, নির্দোষ আনন্দ করা ইত্যাদি অর্থে আসবে।

আর উক্ত শব্দদ্বয় যখন শরীয়তের খিলাফ কোন বিষয় সম্পর্কে ব্যবহৃত হবে তখন তা ক্রীড়া করা, তামাশা করা, কৌতুক করা, হাসি-ঠাট্টা করা ইত্যাদি অর্থে আসবে।

শরীয়তে কোন হারামকে র্শত দিয়ে  হালাল করা জায়িয আছে কিনা?   

এর জবাবে বলতে হয়, শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন হারামকে শর্ত দিয়ে হালাল করার অর্থ হচ্ছে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নিষেধের বিরোধীতা করে নিজস্ব মতকে প্রতিষ্ঠিত করা। যা সুস্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।    যারা কোন ওজর ব্যতীত হারাম কাজ করে তারা দু’শ্রেণীতে বিভক্ত। প্রথম শ্রেণী হচ্ছে, ‘যারা হারামকে হারাম জেনে করে তারা চরম ফাসিকের অন্তর্ভুক্ত।’ দ্বিতীয় শ্রেণী হচ্ছে, ‘যারা হারামকে হালাল জেনে করে তারা কাট্টা কাফিরের অন্তর্ভুক্ত।’

এখন কেউ বলতে পারে যে, শরীয়তে মৃত গরু, ছাগল, বকরী, ভেড়া ইত্যাদি খাওয়া নাজায়িয। কিন্ত যদি কেউ তিনদিন না খেয়ে থাকে তাহলে তার জন্য জরুরত আন্দাজ উল্লিখিত মৃত প্রাণীর গোশ্ত খাওয়া মুবাহ্। তাহলে কি এখানে এ ফতওয়ার দ্বারা হারামকে হালাল বলে সাব্যস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে? কেননা এখানেও শর্ত দিয়ে মৃত প্রাণীর গোশ্ত খাওয়াকে মুবাহ্ বলা হয়েছে।   এর জবাবে বলতে হয় যে, প্রাণ বা জান রক্ষা করা হচ্ছে ফরয। আর প্রাণ রক্ষা করার জন্য খাদ্য গ্রহণ করা বা খাওয়াও ফরয। সুতরাং প্রাণ রক্ষা করার জন্য যদি কেউ হালাল খাদ্যের ব্যবস্থা করতে না পারে এমতাবস্থায় তিনদিন অতীত হয়ে যায় অর্থাৎ তিনদিন অনাহারে কেটে যায় অথচ ফরয পরিমাণ খাদ্য সে সংগ্রহ করতে পারলনা, তখন সে মাজুর হয়ে যায় এবং তখনই তার জন্য অর্থাৎ এই মাজুরের জন্য হারাম মুবাহ্ হয়ে যায়। শরীয়তের দৃষ্টিতে মাজুর ঐ ব্যক্তি যাকে কোন ফরয-ওয়াজিব পালন করার পূর্ব শর্ত হিসেবে শরীয়তের খিলাফ কোন কাজ অনিচ্ছাসত্ত্বেও করতে হয়।

            আর ফুটবল-ক্রিকেট এ সমস্ত খেলাধুলা কারো জন্য ফরয-ওয়াজিব নয় এবং এ সমস্ত খেলাধুলার জন্য কোন ব্যক্তি কখনই মাজুরও হয় না।

কাজেই কোন ব্যক্তি যদি কোন বিষয় মাজুর না হয় তাহলে তার জন্য শর্ত-শারায়েতের কি প্রয়োজন থাকতে পারে? যেহেতু হাদীস শরীফে এ সমস্ত খেলাধুলাকে সরাসরি হারাম বলে ফতওয়া দেয়া হয়েছে। তবে অবশ্যই যারা ফক্বীহ্ তারা এ সমস্ত হাদীস শরীফ-এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে খেলাধুলা কেন হারাম বলা হয়েছে তার কিছু কারণ প্রত্যেকেই তার আক্বল অনুযায়ী উল্লেখ করেছেন। সেজন্য এর অর্থ এটা নয় যে, এ সমস্ত কারণগুলো দূরীভূত হলেই উক্ত খেলাধুলা জায়িয হয়ে যাবে।         কারণ ইমাম-মুজতাহিদ বা ফক্বীহগণ যে সমস্ত কারণ উল্লেখ করেছেন,  সে সমস্ত কারণ ছাড়াও আরো শত-সহস্র কারণ রয়েছে খেলা হারাম হওয়ার পিছনে।

যেমন আল্লাহ্ পাক বলেন,

وما اوتيتم من العلم الاقليلا.

অর্থঃ-“তোমাদেরকে অল্প জ্ঞান ব্যতীত দেয়া হয়নি।” (সূরা বণী ইসরাঈল/৮৫)

অর্থাৎ মানুষকে যেহেতু অল্প ইল্ম দেয়া হয়েছে সেহেতু মানুষ যে কারণ বর্ণনা করবে তা অবশ্যই অল্প হবে।

আর আল্লাহ্ পাক-এর ইল্ম যেহেতু অসীম সেহেতু আল্লাহ্ পাক-এর সমস্ত কারণ জানা রয়েছে। তাই আল্লাহ্ পাক এবং তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেলা হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এরপর আর কারো সাধ্য নেই, খেলাকে হালাল কিংবা জায়িয বলে ঘোষণা দেয়।

যেহেতু উক্ত খেলাধুলা হাদীস শরীফে হারাম ফতওয়া দেয়া হয়েছে তাই তা বিনা শর্ত শারায়েতেই হারাম। কারণ হাদীস শরীফে মুবাহ্ হওয়ার জন্য কোন শর্ত-শারায়েত উল্লেখ করা হয়নি।  অতএব, হাদীস শরীফে যে সকল খেলাকে জায়িয বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তা ব্যতীত অন্য কোন খেলা কস্মিনকালেও জায়িয, মুবাহ্ অথবা পছন্দনীয় হতে পারেনা।          কারণ উপরোল্লিখিত সমস্ত প্রকার খেলাই বিধর্মী, বিজাতী ও বেদ্বীনদের দ্বারা প্রবর্তিত। এছাড়া বর্তমানে সমস্ত প্রকার খেলাই আন্তর্জাতিক বা জাতীয় অথবা সামাজিক বা ব্যক্তিগত পর্যায় বা উদ্যোগেই হোক না কেন তা অবশ্যই বিধর্মীদের নির্ধারিত নিয়মাবলীর মাধ্যমেই হয়ে থাকে। যদিও স্থান ও ক্ষেত্রবিশেষে কিছু নিয়ম পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হয়ে থাকে।

যারা উল্লিখিত খেলাসমূহকে ব্যায়াম হিসেবে উল্লেখ করতে চায়, তাদের সম্পর্কে হাফিজে হাদীস, বাহ্রুল উলুম, ফখরুল ফুক্বাহা, রঈসুল মুহাদ্দিসীন, তাজুল মুফাস্সিরীন, মুফ্তীয়ে আ’যম, মুবাহিছে আ’যম, পীরে কামিলে মুকাম্মিল, শাহ্ ছূফী, হযরত মাওলানা মুহম্মদ রুহুল আমীন বশীরহাটি রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “জায়িয কাজ দ্বারা যখন ব্যায়াম করার উপায় আছে, তখন নাজায়িয কাজের দ্বারা কিরূপে জায়িয হবে? খেলার প্রতিযোগিতা করলে কি ফল হবে? কিন্তু লাঠি, তীর ছোড়া, তরবারী ভাঁজা, ঘোড়-দৌঁড় ইত্যাদিতে শত্রুদের হস্ত হতে কতকটা নিষ্কৃতি লাভের উপায় হতে পারে। পক্ষান্তরে খেলাতে এই প্রকার কোন লাভ হতে পারে না। বরং ওটা খাঁটি খেলবাজি ভিন্ন আর কিছুই নয়। কাজেই ওটা কিছুতেই জায়িয হতে পারে না। কেবল দুনিয়াদার স্বার্থপর আলিম দু’একজন ওটা জায়িয হওয়ার ফতওয়া দিয়েছেন। তাদের ফতওয়া কিছুতেই গ্রহণীয় হতে পারে না।” (ফতওয়ায়ে আমীনিয়া)              অতএব, ফুটবল, ক্রিকেট ইত্যাদি প্রত্যেক প্রকার খেলাই নাজায়িয ও হারাম। আর হারামকে শর্ত দিয়ে হালাল করার অর্থই হচ্ছে কুফরী করা।  যারা কুফরী করে তারা কাফির হয়ে যায়। আর হারামকে হালাল এবং হালালকে হারাম করা এটা মূলতঃ কাফিরদের স্বভাব।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,

فيحلوا ما حرم الله.

অর্থঃ- “তারা (কাফিররা) হালাল করে আল্লাহ্ পাক যা হারাম করেছেন।” (সূরা তওবা/৩৭)         আল্লাহ্ পাক আরো ইরশাদ করেন,

لاتحرموا طيبت ما احل الله لكم.

অর্থঃ- “তোমরা সে সমস্ত পবিত্র জিনিসসমূহকে হারাম করোনা যা আল্লাহ্ পাক তোমাদের জন্য হালাল করে দিয়েছেন।”  (সূরা মায়িদা/৮৭)

হাদীস শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

ان الحلال بين وان الحرام بين وبينهما امور مشتبهات لايعلمهن كثير من الناس فمن اتقى الشبهات فقد استيرأ لدينه وعرضه ومن وقع فى الشبهات وقح فى الحرام.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই হালাল স্পষ্ট  এবং নিশ্চয়ই হারামও স্পষ্ট এবং এতদুভয়ের মাঝে সন্দেহযুক্ত অনেক বিষয় রয়েছে সে সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষের ইল্ম নেই। অতএব, যে ব্যক্তি সন্দেহপূর্ণ বিষয়গুলো পরহিয করলো সে তার দ্বীন ও সম্মান হিফাযত করলো। আর যে ব্যক্তি সন্দেহপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে জড়িয়ে পড়লো সে হারামের মধ্যেই পতিত হলো।” (বুখারী)

            হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত হয়েছে,

ان محرم الحلال كمحلل الحرام.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই হালালকে হারামকারী, হারামকে হালালকারীর মত।” (শিহাব)

অতএব, কুরআন-সুন্নাহ্র দলীলভিত্তিক উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা খেলা সম্পর্কিত রাহমানী পয়গামের উল্লিখিত জিজ্ঞাসার জবাব কুরআন-সুন্নাহ্র সম্পূর্ণ খিলাফ ও কুফরী বলে প্রমাণিত হলো। (এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৪৫, ৭১ ও ১০২তম সংখ্যা পাঠ করুন।)           {দলীলসমূহঃ (১) তাফসীরে আহ্কামুল কুরআন, (২) কুরতুবী, (৩)  মাযহারী, (৪) তাবারী, (৫) দুররে মানসুর, (৬) কবিরী, (৭) মাআরিফুল কুরআন, (৮) মুসতাদরিকে হাকিম, (৯) আবু দাউদ, (১০) তিরমিযী, (১১) নাসাঈ, (১২) ইবনে মাযাহ, (১৩) মুসলিম, (১৪) মুসনাদে আহমদ, (১৫) কানযুল উম্মাল, (১৬) বাইহাক্বী, (১৭) নছবুর রায়াহ্, (১৮) ফতওয়ায়ে আমিনিয়া, (১৯) শরহে ফিক্বহ্ েআকবর, (২০) শরহে আক্বায়িদে নছফী, (২১) আক্বায়িদে হাক্কা, (২২) তাকমিলুল ঈমান, (২৩) দুররুল মুখতার, (২৪) খানিয়াহ্, (২৫) কাজী খান, (২৬) বাহরুর রায়িক, (২৭) আলমগীরী, (২৮) জামিউল ফুছুলিন, (২৯) আল বায্যাযিয়া, (৩০) হিদায়া, (৩১) বেনায়া, (৩২) আন কারোবিয়া, (৩৩) আল ফিক্বহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, (৩৪) কামূছ আল মুহীত, (৩৫) ওয়াসীত, (৩৬) জাদীদ, (৩৭) লিসানুল আরব, (৩৮) মুনজিদ আরবী, (৩৯) মুনজিদ উর্দূ, (৪০) মিছবাহুল লুগাত, (৪১) লুগাতে হীরা, (৪২) গিয়াছুল লুগাত, (৪৩) লুগাতে সাঈদী, (৪৪) বয়ানুল লিসান, (৪৫) আল কামূসুদ্ দরসী, (৪৬) মিছবাহুল  মুনীর, (৪৭) নিহায়া, (৪৮) আল মু’জামুল ওয়াজীয, (৪৯) মু’জামু মাক্বায়ীসুল লুগাত, (৫০) মাগরিব, (৫১) আল মু’জামুল বুলদান, (৫২) আল মুহীত ফিল লুগাত, (৫৩) আল মানার, (৫৪) লুগাতে কিশওয়ারী, (৫৫) তাজুল আরুস, (৫৬) ইফরাতুল মাওয়ারীদ, (৫৭) ফরহাঙ্গে রব্বানী, (৫৮) করীমুল লুগাত, (৫৯) আরবী ও বাংলা অভিধান, (৬০) আর রইদ, (৬১) ক্বামুসুল কুরআন, (৬২) ফিরুজুল লুগাত, (৬৩) ফরহাঙ্গে আমেরা, (৬৪) আল ক্বামুসুল জাদীদ, (৬৫) বাংলা একাডেমী সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান, (৬৬) সরল বাঙ্গালা অভিধান, (৬৭) আধুনিক বাংলা অভিধান, (৬৮) সংসদ বাঙ্গালা অভিধান, (৬৯) বাংলা ভাষার অভিধান ইত্যাদি। }

 মাওলানা মুহম্মদ আবূ সাঈদ সরদার নাগরগোলা, নওগাঁ

সুওয়ালঃ মাসিক মদীনা জানুয়ারী/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত ৩৭নং প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-

প্রশ্নঃ আমার ঘরে পড়ার অনেক বই রয়েছে। সেগুলোতে ছবি রয়েছে। এমতাবস্থায় সে ঘরে নামায পড়া যাবে কিনা?

উত্তরঃ বই-পুস্তক, খবরের কাগজ এমন কি টাকা-পয়সার নোটেও এখন ছবির ছড়াছড়ি। ইচ্ছা করলেও এ যুগে ছবির কবল থেকে বেঁচে থাকা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয়না। নামাযের সময় সামনে বা এমন জায়গায় যা সরাসরি চোখে পড়ে, ছবি থাকলে নামায হবে না। তবে নামাযীর চোখে পড়ে না এমন স্থানে ঘরের ভিতরেও ছবি থাকলে নামাযের কোন ক্ষতি হবেনা। এবং মাসিক মদীনা জুন/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত ১৯নং প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-   প্রশ্নঃ একটি কোম্পানীতে কর্মরত লোকদের নামায পড়ার জন্য যে স্থান রাখা হয়েছে, উক্ত জায়গায় কোম্পানী কিছু মালও রাখে। ঐ মালের প্যাকেটে হাঁস এর ছবি আছে। এমতাবস্থায় ঐ জায়গায় জামাতের সাথে নামায পড়া ঠিক হবে কিনা?

উত্তরঃ জীবের ছবি যদি স্পষ্ট এবং বড় হয় আর সেটা নামাযী ব্যক্তির একেবারে মুখ বরাবর স্থাপিত হয় তবে নামায হবে না। যদি নামাযীর দৃষ্টির আঁড়ালে থাকে, নামাযরত অবস্থায় নামাযীর চোখে পড়ার সম্ভাবনা না থাকে তাহলে নামাযের ক্ষতি হবে না।             এখন আমার সুওয়াল হলো- ছবি সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি ঘরের ভিতরে নামাযীর চোখে পড়ে না এমন স্থানে ছবি থাকলে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না। দলীলসহ সঠিক জাওয়াব জানিয়ে বাধিত করবেন। জাওয়াবঃ ঘরের ভিতরে নামাযরত অবস্থায় নামাযীর চোখে পড়ে না এমন স্থানে ছবি থাকা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি, বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে।     কারণ ছবিযুক্ত স্থানে নামায পড়লে নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে। চাই উক্ত ছবি নামাযীর সামনে-পিছনে, ডানে-বামে, উপরে-নিচে, দৃষ্টির সামনে, দৃষ্টির আঁড়ালে অথবা চোখে পড়ুক বা না পড়ুক সকল অবস্থাতেই নামায মাকরূহ্ তাহরীমী হবে।

যেমন, “হিদায়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৪২/১৪৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ويكره ان يكون فوق رأسه فى السقف او بين يديه او بحذائه تصاوير او صورة معلقة …….. واشدها كراهة أن تكون امام المصلى ثم من فوق رأسه ثم على يميته ثم على شماله ثم خلفه.

অর্থঃ- “নামায মাকরূহ তাহ্রীমী হবে যদি নামাযীর মাথার উপর, ছাদের মধ্যে অথবা সামনে অথবা জুতার মধ্যে অথবা ঝুলন্ত অবস্থায় প্রাণীর ছবি অথবা মূর্তি থাকে। … এবং নামায শক্ত মাকরূহ তাহ্রীমী হবে যদি প্রাণীর ছবি নামাযীর সামনে বা মাথার উপরে বা ডানে বা বাঁয়ে বা নামাযীর পিছনে থাকে।” “বাহরুর রায়িক” কিতাবের ২য় খন্ডের ২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

واشدها كراهة مايكون عى القبلة امام المصلى …. فوق رأسه .. عن يمينه ويساره و ……… خلفه.

অর্থঃ-  “এবং নামায শক্ত মাকরূহ্ তাহরীমী হবে যদি প্রাণীর ছবি ক্বিবলার দিকে, নামাযীর সামনে …. মাথার উপরে ….. ডানে-বামে এবং নামাযীর পিছনে থাকে।”    “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খন্ডের ১০৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وأشد هاكراهة أن تكون أمام المصلى ثم فوق رأسه ثم يميته ثم يسار ثم خلفه.

অর্থঃ- “এবং নামায শক্ত মাকরূহ্ তাহরীমী হবে যদি প্রাণীর ছবি নামাযীর সামনে বা মাথার উপরে বা ডানে বা বাঁয়ে বা নামাযীর পিছনে থাকে।”   “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ২য় খন্ডের ৬৪৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

واشد هاكراهة مايكون على القيلة أمام المصلى ثم ما يكون فغوق رأسه ثم ما يكون عن يمينه ويساره على الحائط ثم ما يكون خلفه عى الحائط او الستر

অর্থঃ- “এবং নামায শক্ত মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে যদি প্রাণীর ছবি ক্বিবলার দিকে নামাযীর সামনে বা মাথার উপর বা নামাযীর ডানে-বামে, দেয়ালের উপর অথবা নামাযীর পিছনে পর্দা বা দেয়ালের উপর থাকে।”  “কিতাবুল ফিক্বহ্ েআলাল মাযাহিবিল আরবায়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ২৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

واشدها كراهة ما كانت امامه ثم فوقه ثم يمينه ثم يساره ثم خلفه.

অর্থঃ- “এবং নামায শক্ত মাকরূহ্ তাহরীমী হবে প্রাণীর ছবি নামাযীর সামনে বা উপরে বা ডানে বা বায়ে বা নামাযীর পিছনে থাকলে।”           “ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৭১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اور سب سے زیادہ مکرہ یہ ہی کہ وہ تصویریں نمازی کے سامںے ہوں پھر اسکے بعد یہ کہ اسکے سرپر ہوں پھر اسکے بعد یہ  کہ داہنی  طرف ہوں پھر اسکے بعد  ہہ کہ بأ~یں طرف ہوں پھر اسکے بعد یہ کہ اسکے پیچھے ہوں.

অর্থঃ- “এবং সবচেয়ে বেশী মাকরূহ্ হবে যদি প্রাণীর ছবি নামাযীর সামনে বা মাথার উপর বা নামাযীর ডানে-বামে বা নামাযীর পিছনে থাকে।”

“খুলাছাতুল ফতওয়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ৫৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ويكره ان يصلى وفوق راسه فى السقف اوبحذائه تصاوير اوبين يديه معلقة او فى البيت ……… فالكراهة اشد وان كانت عن يمينه او عن يساره دون ذلك وكذا فى السقف وفى موخر القبلة.

অর্থঃ- “নামায মাকরূহ্ হবে যদি নামাযীর মাথার উপর ছাদে অথবা জুতার মধ্যে, সামনে ঝুলন্ত অবস্থায় অথবা ঘরের ভিতরে প্রাণীর ছবি থাকে …. অতঃপর নামায শক্ত মাকরূহ্ তাহরীমী হবে যদি প্রাণীর ছবি নামাযীর ডানে-বামে, নিচে-উপরে, ছাদে, ক্বিবলার পিছনে থাকে।”

কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,

جس کپرے پر جاندار کی تصویر ھو اسے پھن کر  نماز پرھنا مکڑوہ تحریمی ھے نماز کے علاوہ بھی  ایسا کپرا پھننا ناجائز ھے. اور تصویر مصلی کے سر پر یعنی چھت میں ھو یا معلق ھو  یا محل سجود میں ھو تو نماز مکروہ تحریمی ھو گی اور مصلی کے اگے یا داھنے یا بائیں تصویرکا  ھونا مکروہ تحریمی ھے اور پس پشت ھونا بھی  مکروہ ھے.

অর্থঃ- “প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড় পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী। নামাযের বাইরেও উক্ত কাপড় পরিধান করা নাজায়িয। এবং প্রাণীর ছবি নামাযীর মাথার উপর ছাদের মধ্যে অথবা ঝুলন্ত অবস্থায় অথবা সিজদার স্থানে থাকলে নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে। এবং নামাযীর সামনে, ডানে, বাঁয়ে এবং পিছনে প্রাণীর ছবি থাকলেও নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে।”  (ফতওয়ায়ে আব্দুল হাই, নূরুল হিদায়া, সুন্নী বেহেস্তী জেওর, আহ্সানুল মাসায়িল, রুকনুদ্দীন, আইনুল হিদায়া, ইলমুল ফিক্বাহ্, বাহারে শরীয়ত, ফতওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ, আশ্রাফী বেহেস্তী জেওর, তরীকুল ইসলাম, নুরুল ইজাহ্, গায়াতুল আওতার ইত্যাদি।)  উপরোক্ত বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হলো, নামাযীর পিছনে দৃষ্টির আঁড়ালে ঘরের ভিতরেও ছবি থাকলে নামায মাকরূহ তাহ্রীমী হবে। শুধু তাই নয় ছবিযুক্তস্থানে নামায পড়লে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে এবং উক্ত নামায দোহ্রানো ওয়াজিব।

যেমন, “আহসানুল ফতওয়ার” ৩য় খন্ডের ৪২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

تصویر والے مقام میں تمازپڑھنا مکروہ تحر  یمی ھے اور اسکا اعادہ واجب ھے.

 অর্থঃ- “প্রাণীর ছবিযুক্ত স্থানে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী এবং উক্ত নামায দোহ্রানো ওয়াজিব। কেননা নামাযের মধ্যে মাকরূহ্ তাহ্রীমী হলে নামায দোহ্রানো ওয়াজিব, আর মাকরূহ তান্যীহ্ হলে নামায দোহ্রানো মুস্তাহাব।”   যেমন, “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খন্ডের ১০৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

فان كانت تلك الكراهة كراهة تحريم تجب الاعادة او تنزيه تستحب.

অর্থঃ- “যদি নামায মাকরূহ্ তাহরীমী হয় তাহলে নামায পুনরায় আদায় করা ওয়াজিব। আর যদি নামায মাকরূহ্ তানযীহ্ হয়, তাহলে নামায পুনরায় আদায় করা মুস্তাহাব।   অতএব, উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণিত হলো, নামাযীর  ডানে, বামে, সামনে, পিছনে, উপরে, নিচে, দৃষ্টির আঁড়ালে, ঘরের ভিতরেও ছবি থাকলে নামায মাকরূহ তাহ্রীমী হবে এবং উক্ত নামায দোহ্রিয়ে পড়া ওয়াজিব হবে।

সুতরাং ‘নামাযীর চোখে পড়েনা এমন স্থানে ঘরের ভিতরেও ছবি থাকলে নামাযের কোন ক্ষতি হবেনা।’ মাসিক মদীনার এ বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে ভুল, বিভ্রান্তিকর  শরীয়তের খিলাফ বলে প্রমাণিত হলো।

{বিঃ দ্রঃ- “নামাযীর দৃষ্টির আঁড়ালে অথবা ডানে-বায়ে, সামনে-পিছনে, উপরে-নিচে ছবি থাকলে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে” এ সম্পর্কে আরো জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ২, ৭, ১০৫তম সংখ্যা এবং বিশেষ করে ১৫ ও ৯৯তম সংখ্যা পাঠ করুন সেখানে মাসিক রাহমানী পয়গাম এবং মাসিক মদীনার বক্তব্য খন্ডন করা হয়েছে। এবার দ্বিতীয়বারের মত মাসিক মদীনার ভুল বক্তব্য খন্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হলো।}

{দলীলসমূহ ঃ (১) হিদায়া, (২) বাহরুর রায়িক্ব, (৩) আলমগীরী, (৪) কাফী, (৫) মাবছূত লিস সুরুখ্সী, (৬) ফতহুল ক্বাদীর, (৭) কিতাবুল ফিক্বাহ্ আলাল মাযাহিবিল আরবায়া, (৮)  আইনী শরহে হিদায়া, (৯) শরহে বিকায়া, (১০) শরহুন্ নিকায়া, (১১) মারাক্বিউল ফালাহ্ (১২) আল্ জামিউছ্ ছগীর, (১৩) নূরুল হিদায়া, (১৪) ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, (১৫) গায়াতুল আওতার, (১৬) হাশিয়ায়ে তাহতাবী, (১৭) নুরুল ইজাহ্, (১৮)  মালাবুদ্দা মিনহু, (১৯)  ফতওয়ায়ে আব্দুল হাই, (২০) আইনুল হিদায়া, (২১) তরীক্বুল ইসলাম,  (২২) সুন্নী বেহেশ্তী জেওর, (২৩) ইল্মুল ফিক্বাহ্, (২৪) বাহ্রে শরীয়ত, (২৫) আহ্সানুল মাসায়িল, (২৬) রুকনুদ্দীন, (২৭) ফতওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ, (২৮) আশ্রাফী বেহেশ্তী জেওর, (২৯) আহ্সানুল ফতওয়া ইত্যাদি।}

 মুহম্মদ মেজবাহ্ উদ্দীন (সুমন) সভাপতি- ছাত্র আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত,

চট্টগ্রাম মহানগরী শাখা।

সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত পত্রিকা মাসিক মুঈনুল ইসলাম জুন/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা সমাধান বিভাগে উমরী ক্বাযা নামায সম্পর্কে নিম্নোক্ত জিজ্ঞাসা সমাধান ছাপা হয়।   জিজ্ঞাসাঃ  উমরী ক্বাযা নামাযে ইক্বামত দিতে হয় কি-না এবং মসজিদে পড়লে তবুও কি ইক্বামত দিতে হবে? উমরী ক্বাযা নামাযের বাংলা নিয়্যাত জানালে উপকৃত হব।  সমাধানঃ মূলতঃ শরীয়তে উমরী ক্বাযা নামে কোন নামায নেই। তবে ক্বাযা নামে নামায হতে পারে। এই ক্বাযা নামাযের জন্য ইক্বামত দেওয়া ওয়াজিব নয়, বরং ইক্বামত দেওয়া সুন্নাত। সুতরাং কয়েক ওয়াক্তের ক্বাযা নামায যদি একত্রে পড়া হয়, তাহলে একবার ইক্বামত দিয়ে দিলে সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। অতীত জীবনের অনির্দিষ্ট ক্বাযা নামাযের বাংলা নিয়্যাত- আমার জীবনে ফজরের যত নামায ক্বাযা আছে তন্মধ্যে সর্বপ্রথমটি আদায় করছি অথবা সর্বশেষটি আদায় করছি। এভাবে যোহর, আসর, মাগরিব, ঈশা’র নামাযের নিয়্যাত করবে।(ফাত্ওয়ায়ে শামী-২/৭৬, ফাত্ওয়ায়ে মাহ্মূদিয়্যাহ্-২/১৬৬-৬৭, নাফউল মুফতী ওয়াস্ সায়েল ২৬৫-৬৬)।

এখন আমার সুওয়াল হলো- আপনারা মাসিক আল বাইয়্যিনাতে লিখেছেন উমরী ক্বাযা নামায শরীয়তে আছে। অথচ হাট হাজারীরা বলেছে “শরীয়তে উমরী ক্বাযা নামে কোন নামায নেই।” কোনটি গ্রহণ যোগ্য? আর সত্যিই কি শরীয়তে উমরী ক্বাযা নামে কোন নামায নেই? দলীলসহ বিস্তারিত জানিয়ে সন্দেহ দূর করবেন।

জাওয়াবঃ  “উমরী ক্বাযা” নামায শরীয়তে আছে এ সম্পর্কে মাসিক আল বাইয়্যিনাতে যা লিখা হয়েছে তাই সঠিক, গ্রহণযোগ্য ও দলীলভিত্তিক।     হাটহাজারী মৌলভীদের উমরী ক্বাযা সম্পর্কিত বক্তব্য ইতোপূর্বে বহুবার খন্ডন করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের উক্ত খন্ডনের জবাবে তারা কিছুই লিখতে পারেনি। এরপরও তারা বার বার উক্ত ভুলেরই পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে। যা তাদের জিহালত ও গোমরাহীর উপর দৃঢ় থাকারই প্রমাণ।     হাটহাজারী মৌলভীরা দাবী করে তারা নাকি ফিক্বাহ্ বিশেষজ্ঞ বা ফক্বীহ্। অথচ বিশ্ব বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য সকল ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবে উমরী ক্বাযার সংজ্ঞা,  তরীক্বা, নিয়ম-কানুন, হুকুম-আহ্কাম ইত্যাদি বর্ণিত থাকার পরও এবং মাসিক আল বাইয়্যিনাতে সে সকল কিতাবসমূহের পৃষ্ঠা ও খন্ড নাম্বারসহ ইবারতসমূহ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করার পরেও হাটহাজারীর উক্ত জাহিল মৌলভীরা “উমরী ক্বাযার” ইল্ম হাছিল থেকে নিজেদের মুখ পথভ্রষ্টদের ন্যায় ফিরিয়ে নিলো।

মূলতঃ সত্যিকার ফক্বীহ্ ব্যতীত কারো পক্ষেই ইল্মে ফিক্বাহ্র হাকীক্বত উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। আর সত্যিকার ফক্বীহ্ তো তিনিই, যিনি ইল্মে ফিক্বাহ্র সাথে সাথে ইল্মে তাছাউফেও পারদর্শী। অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ইমাম-মুজতাহিদগণের সাথে যাঁদের রূহানী সম্পর্ক রয়েছে। এ ধরণের ফক্বীহ্গণের সম্পর্কেই হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

فقيه واحد اشد على الشيطان من الف عابد.

অর্থাৎ- “একজন সত্যিকার ফক্বীহ্, শয়তানের নিকট এক হাজার আবেদ (জাহিরী মাওলানা)-এর চেয়েও ভয়ংকর।”          এ ধরণের ফক্বীহ্ সবার পক্ষেই হওয়া সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ্ পাক যাকে কবুল করেন তাকেই খাছ ফিক্বাহ্র ইল্ম দান করেন। তাই হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

من يرد الله به خيرا يفقهه فى الدين.

অর্থাৎ- “মহান আল্লাহ্ পাক যে ব্যক্তির ভালাই চান তাকেই শুধু দ্বীনের বুঝ তথা ফিক্বাহ্র জ্ঞান দান করেন।”

হাটহাজারীর জাহিল মুফতী, মৌলভীরা যেহেতু এ স্তরের ফক্বীহ্ নয় তাই তারা আজও পর্যন্ত “উমরী ক্বাযা” কি তা বুঝতে সক্ষম হয়নি।   যেমন, হাটহাজারীর জাহিল মৌলভীরা বলেছে, “শরীয়তে উমরী ক্বাযা নামে কোন নামায নেই।”   এর জবাবে বলতে হয় যে, হাটহাজারীর জাহিল মৌলভীদের এ বক্তব্যও ডাহা মিথ্যা, মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর, দলীলবিহীনতো অবশ্যই। আসলে শরীয়ত কাকে বলে এ জ্ঞানই তাদের নেই। কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের সমষ্টিই হচ্ছে শরীয়ত। উল্লিখিত চারটির যে কোন একটির মধ্যে থাকার অর্থই হলো, শরীয়তের মধ্যে থাকা। উমরী ক্বাযার কথা কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকলেও ইজমা-ক্বিয়াস তথা ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবে ঠিকই  উল্লেখ আছে। আর যেটা ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবে উল্লেখ আছে সেটা শরীয়তে উল্লেখ নেই বলা শরীয়ত সম্পর্কে চরম জিহালতির পরিচয় নয় কি?

ফিক্বাহ্র কিতাবসমূহে ক্বাযা  নামাযকে দু’ভাগ করা হয়েছে

প্রথমতঃ “ক্বাযায়ে আদা।” যে নামায ক্বাযা হওয়ার ব্যাপারে মুছল্লী সম্পূর্ণ নিশ্চিত। অর্থাৎ তার কত ওয়াক্ত নামায ক্বাযা হয়েছে তা তার নিশ্চিতরূপে জানা রয়েছে। এই প্রকার ক্বাযা আদায় করা অপরিহার্য।        দ্বিতীয়তঃ “ক্বাযায়ে উমরী বা অজ্ঞাত ক্বাযা।” যে নামায ক্বাযা হওয়ার ব্যাপারে মুছল্লীর সন্দেহ রয়েছে। অর্থাৎ ক্বাযা থাকতেও পারে নাও থাকতে পারে। এ সন্দেহের কারণে যে ক্বাযা নামায পড়া হয় তাকে উমরী ক্বাযা বলে। এ প্রকার ক্বাযা আদায় করা যদিও অপরিহার্য নয়। কিন্তু তাকওয়া বা সাবধানতার জন্যে ক্বাযায়ে উমরী আদায় করে নেয়াকে ফক্বীহ্গণ মুস্তাহ্সান বা উত্তম বলেছেন।       উল্লেখ্য, সন্দেহ হতে বাঁচার জন্য ইহ্তিয়াত বা তাকওয়া অবলম্বন করাকে হাদীস শরীফও সমর্থন করে।  যেমন, হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

فمن اتقى الشبهات استبرأ لدينه وعرضه.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি সন্দেহ হতে বাঁচলো সে তার দ্বীন ও সম্মানকে হিফাযত করলো।” (বুখারী, মুসলিম)      এ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় ফিক্বাহ্র কিতাবসমূহে উল্লেখ আছে,

لايمتع شرعية الاحتياط للتقوى.

অর্থঃ- “শরীয়তে তাক্বওয়ার জন্য ইহ্তিয়াত বা সাবধানতা অবলম্বন করতে নিষেধ নেই।” (কবীরী, ছগীরী, শামী)             “শামী” কিতাবে উল্লেখ আছে,

الاولى مو الاحتياط.

অর্থঃ- “ইহ্তিয়াত বা সাবধানতা অবলম্বন করাই হচ্ছে অধিক উত্তম।”    “ফতওয়া আলমগীরী” কিতাবের ১ম খন্ডের ১২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

والاحتياط واجب فى العبادات.

অর্থঃ- “ইবাদতে ইহ্তিয়াত বা সাবধানতা অবলম্বন করা ওয়াজিব।” আর এ কারণেই “উমরী ক্বাযা” সম্পর্কে আল্লামা শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “ফতওয়ায়ে শামী”-কিতাবের ৩য় খন্ডের ১৭ পৃষ্ঠায় চুড়ান্ত রায় পেশ করে বলেন,

ولذا قال بعضهم فيمن يقضى صلوات عمره مع انه لم يفته منها شيئ لا يكره لانه اخذ بالاحتياط.

অর্থঃ- “হাদীস শরীফের উপরোক্ত মর্ম অনুধাবন করে কোন কোন মুজতাহিদ ফতওয়া দেন যে, কারো নামায ক্বাযা না থাকার পরও সে যদি ইহ্তিয়াত বা সাবধানতাবশতঃ উমরী ক্বাযা আদায় করে তবে তা মাকরূহ হবে না। কেননা সে উমরী ক্বাযা ইহ্তিয়াত বা সাবধানতার জন্যে আদায় করেছে।”          স্মর্তব্য যে, ফক্বীহ্গণ ইহ্তিয়াত বা সাবধানতাবশতঃ “উমরী ক্বাযা” আদায় করা মাকরূহ বলেননি বরং জায়িয, মুস্তাহসান বা উত্তম বলে ফতওয়া দিয়েছেন।     নিম্নে উমরী ক্বাযা নামায সম্পর্কে বিখ্যাত ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাব থেকে দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করা হলো-             যেমন, হানাফী ফিক্বাহ্র বিখ্যাত কিতাব “বাহরুর রায়িক” কিতাবের ২য় খন্ডের ১৪৩ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

وفى الحديث المتفق عليه فمن اتقى الشبهات استبرا لدينه وعرصه ولذا قال بعضهم فيمن يقضى صلاة عمره مع انه لم يفته شيئ منها لايكره لانه اخذ بالاحتياط وذكر فى القنية انه أحسن اذا كان فيه اختلاف المجتهدين.

অর্থঃ- “মুত্তাফাকুন আলাইহি-এর হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, ‘যে ব্যক্তি সন্দেহ হতে বাঁচলো সে তার দ্বীন ও সম্মানকে হিফাযত করলো।’ বর্ণিত এ হাদীস শরীফের কারণে কোন কোন মুজতাহিদ ফতওয়া দেন যে, কারো নামায ক্বাযা না থাকার পরও সে যদি ইহ্তিয়াত বা সাবধানতাবশতঃ উমরী ক্বাযা আদায় করে তা মাকরূহ্ হবে না। কেননা, সে ইহ্তিয়াত বা সাবধানতার জন্যেই উমরী ক্বাযা আদায় করেছে।” আর কুনিয়া কিতাবে উল্লেখ আছে, উমরী ক্বাযা আদায় করাই মুস্তাহ্সান বা অতি উত্তম। যদিও মুজতাহিদগণ এ ব্যাপারে ইখতিলাফ করেছেন।”             “মিনহাতুল খালিক” কিতাবে উল্লেখ আছে,

وفى الديث المتفق عليه فمن اتقى الشبهات استيرا لدينه وعرضه ولذا قال بعضهم فيمن يقضى صلاة عمره مع انه لم يفته شيئ منها لايكره لانه اخذ بالا حتياط وذكر فى القنية انه أحسن اذا كان فيه اختلاف المجتهدين.

অর্থঃ- “মুত্তাফাকুন আলাইহি-এর হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি সন্দেহ হতে বাঁচলো সে তার দ্বীন ও সম্মানকে হিফাযত করলো। বর্ণিত এ হাদীস শরীফের কারণে কোন কোন মুজতাহিদ ফতওয়া দেন যে, কারো নামায ক্বাযা না থাকার পরও সে যদি ইহ্তিয়াত বা সাবধানতাবশতঃ উমরী ক্বাযা আদায় করে তা মাকরূহ্ হবে না। কেননা, সে ইহ্তিয়াত বা সাবধানতার জন্যেই উমরী ক্বাযা আদায় করেছে।” আর কুনিয়া কিতাবে উল্লেখ আছে, “উমরী ক্বাযা আদায় করাই মুস্তাহ্সান বা অতি উত্তম। যদিও মুজতাহিদগণ এ ব্যাপারে ইখতিলাফ করেছেন।”     “শামী” কিতাবে আরো বলা হয়েছে,

انه احسن ان كان فى صلاته خلاف المجتهدين.

অর্থ- “নিশ্চয়ই উমরী ক্বাযার নামায আদায় করা মুস্তাহাসান বা অতি উত্তম। যদিও মুজতাহিদগণের ইখতিলাফ রয়েছে।”              “বাহরুর রায়িক” কিতাবের ২য় খন্ডের ৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

رجل يقضى صلوات عمره مع انه لم يفته شيئ منها احتياطا قال بعضهم يكره وقال بعضهم لايكره انه أخذ بالاحتياط لكنه لايقضى بعد صلاة الفجر ولابعد صلاة العصر ويقرأ فى الركعات كلها الفاتحة مع السورة . انه يصلى المغرب أربعا بثلاث قعدات وكذا الوتر وذكر فى القنية قولين فيها وان الاعادة احسن اذا كان فيها اختلاف المجتهدين.

অর্থঃ- “কোন ব্যক্তি যদি ইহ্তিয়াত বা সাবধানতাবশতঃ তার উমরী ক্বাযার নামায আদায় করে অথচ তার জীবনে কোন নামায ক্বাযা হয়নি। এক্ষেত্রে কেউ কেউ বলেছেন, মাকরূহ্। আর কেউ কেউ বলেছেন, মাকরূহ্ হবেনা। কেননা, সে ইহ্তিয়াত বা সাবধানতার জন্যেই উমরী ক্বাযার নামায পড়েছে। তবে ফযর নামাযের পর এবং আছরের নামাযের পর উমরী ক্বাযার নামায আদায় করবে না; এবং উমরী ক্বাযার প্রতি রাকায়াতেই সূরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে। … আর উমরী ক্বাযার মাগরীব নামায তিন বৈঠকের সহিত চার রাকায়াত পড়তে হবে। অনুরূপ বিত্র নামাযও তিন বৈঠকে চার রাকায়াত পড়তে হবে। ‘কুনিয়া’ কিতাবে উমরী ক্বাযা সম্পর্কে দু’টি মত উল্লেখ আছে, একটি মতে নিশ্চয়ই উমরী ক্বাযার নামায পুনরায় পড়া মুস্তাহসান বা অতি উত্তম যদিও এ ব্যাপারে মুজতাহিদগণের ইখতিলাফ রয়েছে।”         “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খন্ডের ১২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

فيمن يقضى صلوات عمره من غير ان فاته شيئ يريد الاحتياط فان كان لاجل النقصان والكراهة قحسن وان لم يكن لذلك لايفعل والصحيح انه يجوز الا بعد صلاة الفجر والعصر وقد فعل ذلك كثير من السلف لشبهة الفساد ويقرأ فى الركعات كلها الفاتحة مع السورة.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তির নামায ক্বাযা হয়নি, এমন ব্যক্তিও যদি ইহ্তিয়াত বা সাবধানতার জন্য উমরী ক্বাযার নামায আদায় করে এই মনে করে যে, তার পূর্বের নামাযের কারাহাত এবং নুক্বছান (ক্ষতি) পূরণ হবে, তাহলে তার উমরী ক্বাযা আদায় করা মুস্তাহসান বা উত্তম হবে। আর যদি পূর্বের নামাযের কারাহাত এবং নুক্বছান (ক্ষতি) পূরণের জন্য আদায় না করে তাহলে সে আদায় করবেনা। বিশুদ্ধ কথা এই যে, উমরী ক্বাযা জায়িয, তবে আছর এবং ফযর নামাযের পর উমরী ক্বাযা আদায় করবেনা। আর সল্ফে ছলেহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনেকেই ফাসাদের সন্দেহে এই উমরী ক্বাযা আদায় করেছেন। উমরী ক্বাযা নামাযের প্রতি রাকায়াতে সূরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে।” “খুলাছাতুল ফতওয়ার” ১ম খন্ডের ১৯২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

رجل يقضى صلوات عمره مع انه لم يفته شئى اختلف المشائخ (رحمة الله عليهم) واجمعوا انه لايقضى بعد العصر وبعد طلوع الفجر.

অর্থঃ- “কোন ব্যক্তি যদি তার উমরী ক্বাযার নামায আদায় করে; অথচ তার কোন নামায ক্বাযা হয়নি; মাশায়িখগণ ইখতিলাফ করেছেন। তবে সে ব্যক্তি কোন্ কোন্ সময় উমরী ক্বাযার নামায আদায় করবে, এক্ষেত্রে সকল উলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম ইজমা বা ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, সে ব্যক্তি আছর এবং ফযর নামাযের পর  উমরী ক্বাযার নামায আদায় করবেনা।”         “তাতারখানিয়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ৭৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

فيمن يقضى صلوات عمره من غير ان فاته شيى يريد الاحتياط فان كان لاجل النقضان او الكرامية فحسن.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তির নামায ক্বাযা হয়নি সে ব্যক্তি যদি ইহ্তিয়াত বা সাবধানতাবশতঃ ক্বারাহাত বা নুক্বছানের জন্য উমরী ক্বাযা আদায় করে তাহলে তার জন্য উমরী ক্বাযা আদায় করা মুস্তাহসান বা উত্তম।”  “তাতারখানিয়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ৭৭০ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

والصحيح انه يجوز الا بعد صلاة الفجر والعصر وقد فعل ذلك كثير من السلف لشبهة الفساد …… ويقرأفى الر كعات كلها الفاتحة مع السورة.

অর্থঃ- “ছহীহ্ বা বিশুদ্ধ মতে আছর এবং ফযর নামাযের পর ব্যতীত উমরী ক্বাযা আদায় করা জায়িয। সলফে ছলেহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনেকেই ফাসাদের সন্দেহে উমরী ক্বাযা আদায় করেছেন। আর উমরী ক্বাযা নামাযের প্রতি রাক্বায়াতে সূরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে।”         “ফতওয়ায়ে কাজীখান” কিতাবে উল্লেখ আছে,

رجل يقضى صلوات عمره مع انه لم يفته شيئ منها قال يعضهم بانه يكره وبعضهم بانه لايكره لانه أخذ باحتياط والصحيح انه يجوز لكن لا يقضى بعد صلاة العصر ولا بعد صلاة الفجر لانها نفل ظاهرا وقد فعل كثير من السلف رحمهم الله تعالى لشبهة.

অর্থঃ- “কোন এক ব্যক্তি যদি ইহ্তিয়াত বা সাবধানতাবশতঃ উমরী ক্বাযার নামায আদায় করে অথচ তার জীবনে কোন নামায ক্বাযা হয়নি এক্ষেত্রে কেউ কেউ বলেছেন মাকরূহ্ এবং কেউ কেউ বলেছেন উমরী ক্বাযার নামায মাকরূহ নয়। কেননা, সে ইহ্তিয়াত বা সাবধানতার জন্যই উমরী ক্বাযার নামায পড়েছে। তবে ছহীহ্ বা বিশুদ্ধ মতে তার উমরী ক্বাযার নামায আদায় করা জায়িয। কিন্তু সে ব্যক্তি আছর এবং ফযর নামাযের ওয়াক্তের পর উমরী ক্বাযার নামায আদায় করবেনা। কেননা এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, উমরী ক্বাযার নামায নফল। আর সলফে ছলেহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনেকেই সন্দেহের কারণে উমরী ক্বাযার নামায আদায় করেছেন।” “হাশিয়ায়ে মারাকিউল ফালাহ্” কিতাবের ২৯০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ومن قضى صلاة عمره مع انه لم يفته شيئ منها احتياطا قيل يكره وقيل لا لان كشيرا من السلف قد فعل ذلك لكن لايقضى فى وقت تكره فيه النافله والافضل ان يقرأفى الاخير تين السورة مع الفاتحة لانها نوافل.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ইহ্তিয়াত্ বা সাবধানতাবশতঃ উমরী ক্বাযার নামায আদায় করবে অথচ তার জীবনে কোন নামায ক্বাযা হয়নি; কেউ কেউ বলেছেন মাকরূহ্। কেউ কেউ বলেছেন উমরী ক্বাযা মাকরূহ্ নয়। কেননা, সলফে ছলেহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনেকেই ইহ্তিয়াত্ বা সাবধানতার জন্য উমরী ক্বাযা আদায় করেছেন। তবে যে সকল ওয়াক্তে নফল নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সে সকল মাকরূহ্ তাহ্রীমী ওয়াক্তে উমরী ক্বাযার নামায আদায় করবেনা, আর উত্তম হলো উমরী ক্বাযা নামাযের শেষের দু’রাকায়াতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়া। কেননা উমরী ক্বাযার নামায নফল।”   “রদ্দুল মুহ্তার” কিতাবে উল্লেখ আছে,

ان الصحيح جواز هذا القضاء الا بعد صلاة الفجر والعصر وقد فعله كشير من السلف لشبهة الفساد.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই ছহীহ্ বা বিশুদ্ধ মত এই যে, এই উমরী ক্বাযার নামায আদায় করা জায়িয, তবে আছর এবং ফযর নামাযের পর উমরী ক্বাযার নামায আদায় করা যাবে না।  আর সলফে ছলেহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনেকেই ফাসাদের সন্দেহে উমরী ক্বাযার নামায আদায় করেছেন।” “ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৯৯-২০০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اگر کسی شخص سے کوئی نماز قضا نھیں ھوئی اور وہ بطور احتیا ط کے اپنی عمر کی نما زبں قضا کرتا ھی تو وہ اگر اپنی پچھلی نمازوں میں نقصان یا کراھت کی وجہ سے قضا کرتا ھی تو بھتر ھے اور اگر اس واسطے نھیں کرتا تو قضا نہ کرے اورصحبح یہ ھے کہ جانز ھی مگر فجر اور عصر کی نماز کے بعد نہ پڑھے اور سلف میں سے بھت لوگوں نے شبھہ قسباد کی یوجہ سے ایسا کیا ھی یہ مضمرات میں لکھا مے اور وہ شخص سب رکعتون  میں الحمد سورہ کے ساتہ پڑھے.

অর্থঃ- “যদি কোন ব্যক্তির নামায ক্বাযা না হয়ে থাকে এবং সে ব্যক্তিও যদি ইহতিয়াত বা সাবধানতাবশতঃ উমরী ক্বাযার নামায আদায় করে এই মনে করে যে, তার পূর্বের নামাযের কারাহাত বা নুক্বছান (ক্ষতি) পূরণ হবে তাহলে তার উমরী ক্বাযা আদায় করা উত্তম হবে। আর যদি পূর্বে নামাযের কারাহাত এবং নুক্বছান (ক্ষতি) পুরণের জন্য আদায় না করে তাহলে সে আদায় করবে না। বিশুদ্ধ কথা এই যে, উমরী ক্বাযা জায়িয, তবে আছর ও ফযর নামাযের পর উমরী ক্বাযা নামায আদায় করবে না। আর সল্ফে ছলেহীনগণের অনেকেই ফাসাদের সন্দেহে উমরী ক্বাযার নামায আদায় করেছেন। এটা ‘মুজমারাতে’ লিখা আছে। আর উমরী ক্বাযা আদায়কারী ব্যক্তি প্রতি রাকায়াতে সূরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়বে।” “আইনুল হিদায়া” কিতাবের নিছ্ফে আউয়াল খন্ডের ৭৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ایک شخص اپنی عمر کی نمازیں قضا کرتا ھے بدون اس کے کہ اس کی کوئی نماز قضاء ہوئی ھو پس اگر بگمان نقصان وکراھت ھو تو بھتر ھے ورنہ نھیں. اور صحیح یہ کہ جائز ھے سوائے بعد فجر وبعد عصر کے اور بھت سے سلف نے شبھہ فساد کی جھت سے ابسا کیا ھے. اور جملہ رکعلت میں وہ فاتحہ مع سورہ پڑھے.

অর্থঃ- “এমন এক ব্যক্তি  উমরী ক্বাযার নামায আদায় করলো যার কোন নামায ক্বাযা হয়নি। সুতরাং সে যদি নামায ক্বাযা ও ত্রুটিযুক্ত হওয়ার সন্দেহে উমরী ক্বাযা আদায় করে তবে তা উত্তম হবে; নতুবা না। তবে বিশুদ্ধ মত এই যে, ফযর এবং আছর বাদ ব্যতীত তা আদায় করা জায়িয। কেননা, সলফে ছলেহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনেকে সন্দেহের কারণেই উমরী ক্বাযা আদায় করেছেন। আর উমরী ক্বাযার প্রত্যেক রাকায়াতে সূরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়বে।      আরো উল্লেখ্য যে, আমাদের হানাফি মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বয়ং নিজেই উমরী ক্বাযার নামায পড়েছেন। যেমন, এ প্রসঙ্গে “দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে,

ان الامام قضى صلاة عمره.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই ইমাম আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বয়ং নিজেই উমরী ক্বাযার নামায আদায় করেছেন।”             “গায়াতুল আওতার” কিতাবের ১ম খন্ডের ৩২২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

امام اعظم رح  نے اپنی عمر کی نماز قضا کی

অর্থঃ- “ইমাম আযম রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বয়ং নিজেই উমরী ক্বাযার নামায আদায় করেছেন।”             উপরোক্ত বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবের অকাট্য দলীলের মাধ্যমে যা প্রমাণিত হলো-        (১) উমরী ক্বাযার নামায শরীয়তে আছে। সেহেতু ফক্বীহ্, ইমাম, মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ তাদের নিজ নিজ ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবে উমরী ক্বাযা আদায় করার নিয়ম-কানুন, তর্জ-তরীক্বা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।             (২) উমরী ক্বাযার নামায ইহ্তিয়াত্ বা সাবধানতার জন্য আদায় করা হয়। আর ইবাদতে ইহ্তিয়াত্ বা সাবধানতা অবলম্বন করা ওয়াজিব।             (৩) উমরী ক্বাযার নামায আদায় করা মুস্তাহসান বা উত্তম। (৪) উমরী ক্বাযা নামায ফজর এবং আছর নামাযের পর আদায় করা যাবেনা। কেননা, উমরী ক্বাযার নামায নফল।     (৫) উমরী ক্বাযার নামাযের প্রতি রাকায়াতেই সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে।             (৬) উমরী ক্বাযার মাগরীব ও বিত্রের নামায তিন বৈঠকের সাথে চার রাকায়াত পড়তে হয়।        (৭) সলফে ছলেহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনেকেই সন্দেহের কারণে উমরী ক্বাযা আদায় করেছেন।             (৮) স্বয়ং ইমামে আযম, হযরত ইমাম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজেই উমরী ক্বাযার নামায পড়েছেন।          দ্বিতীয়তঃ হাটহাজারীর জাহিল মৌলভীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে তিনটি দলীল পেশ করেছে। প্রথম দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছে, ফতওয়ায়ে শামী।       অথচ ফতওয়ায়ে শামী কিতাবে উল্লেখ আছে, “উমরী ক্বাযা আদায় করা মুস্তাহাসান বা উত্তম। যেমন, “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ২য় খন্ডের ১৪৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

فيمن يقضى صلاة عمره مع انه لم يفته منها شيئ لايكره لأنه اخذ بالاحتياط وذكر فى القنية انه احسن.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ইহ্তিয়াত্ বা সাবধানতাবশতঃ তার উমরী ক্বাযার নামায আদায় করে অথচ তার জীবনে কোন নামায ক্বাযা হয়নি তাহলে মাকরূহ্ হবেনা। কেননা, সে ইহ্তিয়াত্ বা সাবধানতার জন্যই উমরী ক্বাযা আদায় করেছে। আর কুনিয়া কিতাবে উল্লেখ আছে উমরী ক্বাযা আদায় করাই মুস্তাহসান বা উত্তম।”          দ্বিতীয় দলীল দিয়েছে, ফতওয়া মাহ্মুদিয়া।             অথচ ফতওয়ায়ে মাহ্মুদিয়া কিতাবেও উমরী ক্বাযা সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে, যেমন, “ফতওয়ায়ে মাহ্মুদিয়া” কিতাবের ২য় খন্ডের ১৬৬-৬৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

“قضاء عمری کی نیت”

سوال: قضاء عمری میں نماز کی نیت کس طرح کی جائے جب کہ دن، تاریخ، مھینہ، سال، معلوم نھیں.

الجواب: اس طرح نیت کرے کہ میرے تمہ فجر کی جوسب سے پھلی  نماز باقی بے وہ پڑھتا ہوں ی ا اس طرح نیت کرے کہ میرے  ذمہ فجر کی جو سب سے اخر کی نماز باقی ھے وہ پڑھتا ہوں یھی حال دوسری نمازوں کاہے

অর্থঃ- “উমরী ক্বাযার নিয়ত। প্রশ্নঃ যখন দিন, তারিখ, মাস, বৎসর জানা না থাকবে তখন উমরী ক্বাযা নামাযের নিয়ত কিভাবে করবে? উত্তরঃ এভাবে নিয়ত করবে যে, আমার জিম্মায় ফজরের সর্বপ্রথম যে নামায বাকী রয়েছে তা আদায় করছি। অথবা এভাবে নিয়ত করবে যে, আমার জিম্মায় ফজরের সর্বশেষ যে নামায বাকী রয়েছে তা আদায় করছি। অন্যান্য নামাযের ক্ষেত্রেও ঐ একই নিয়ম।”             তৃতীয় দলীল দিয়েছে, নাফ্উল মুফতী ওয়াস্ সায়িল।          অথচ নাফউল মুফতী ওয়াস্ সায়িল কিতাবেও উমরী ক্বাযার বর্ণনা রয়েছে। যেমন, “নাফউল মুফতী ওয়াস্ সায়িল” কিতাবের ২৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

سوال: ایک شخص اختلافات کے شبھ کی وجہ سے احتیا طا قضا عمری ادا کر تا ہے وہ مغرب اور وتر کی نماز کسح پڑہے؟

جواب: مفرب اور وتر کو چار رکعات تین قعدوں  کے ساتہ پڑہے کیونکہ تین رکعات نفل مکروہ ہیں.

অর্থঃ- “প্রশ্নঃ এক ব্যক্তি সন্দেহের কারণে ইহ্তিয়াত বা সাবধানতাবশতঃ উমরী ক্বাযা আদায় করলো সে মাগরীব এবং বিত্র নামায কি নিয়মে আদায় করবে? উত্তরঃ মাগরীব এবং বিত্র নামায তিন বৈঠকে চার রাকায়াত আদায় করবে। কেননা তিন রাকায়াত নফল আদায় করা মাকরূহ্।”

সুতরাং হাটহাজারীর জাহিল মৌলভীরা যে তিনটি কিতাবের দলীল দিয়েছে উক্ত তিনটি কিতাবেই উমরী ক্বাযার বর্ণনা রয়েছে বলেই দলীলের মাধ্যমে তা প্রমাণিত হলো। অতএব উপরোক্ত অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে এটাই সুস্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, শরীয়তে উমরী ক্বাযার নামায আছে। কাজেই হাটহাজারীর জাহিল মৌলভীদের উমরী ক্বাযা সম্পর্কিত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, বিভ্রান্তিকর, দলীলবিহীন ও অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ তথা ফক্বীহ্গণের মতের সম্পূর্ণই খিলাফ।

হাটহাজারীর জাহিল মৌলভীরা উমরী কাযা সম্পর্কে কাট্টা মিথ্যা কথা বলেছে ও মিথ্যা দলীল পেশ করেছে। আর শরীয়তে মিথ্যাবাদীর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। তাই তাদের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।

{বিঃ দ্রঃ- উমরী ক্বাযা সম্পর্কে আরো জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৫৫, ৬৪, ৭৯, ৮২ ও ৮৬তম সংখ্যাগুলো পাঠ করুন। সেখানে মাসিক মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, মাসিক রাহমানী পয়গাম এবং মাসিক মদীনা পত্রিকাগুলোর উমরী ক্বাযা সম্পর্কিত ভুল বক্তব্য খন্ডন করা হয়েছে। এছাড়াও মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১৮, ২৩, ২৮, ৪৩, ৫২তম ইত্যাদি সংখ্যাগুলোতেও উমরী ক্বাযা সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে। এবার তৃতীয়বারের মত মাসিক মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর ভুল বক্তব্য খন্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হলো।}     {দলীলসমূহঃ  (১) ছগীরী, (২) কবীরী, (৩) কুনিয়া, (৪) খানিয়া, (৫) ইতাবিয়া, (৬) মুজমিরাত, (৭) হুজ্জাত, (৮) জহিরীয়া, (৯) নিহায়া, (১০) কিফায়া, (১১) মালুল ফতওয়া, (১২) শরহুল মুনিয়া, (১৩) খুলাছাতুল ফতওয়া, (১৪) হিদায়া, (১৫) বাহরুর রায়িক, (১৬) আলমগীরী, (১৭) ফতওয়ায়ে কাজীখান, (১৮) দুররুল মুখতার, (১৯) রদ্দুল মুহতার, (২০) ফতহুল ক্বাদীর, (২১) তাতারখানিয়া, (২২) গায়াতুল আওতার, (২৩) হাশিয়ায়ে তাহ্তাবী আদ দুররীল মুখতার, (২৪) আইনুল হিদায়া, (২৫) হাশিয়ায়ে মারাকিউল ফালাহ্, (২৬) ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, (২৭) শামী, (২৮) নাফউল মুফতী ওয়াস্ সায়িল, (২৯) ফতওয়ায়ে দেওবন্দ, (৩০) ফতওয়ায়ে মাহমুদিয়া ইত্যাদি}

মুছাম্মত মমতাজ বেগম সভানেত্রী- মহিলা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত সন্দীপ থানা শাখা, চট্টগ্রাম।

  সুওয়ালঃ   শরীয়তে পর্দা করা কি? আজকাল মানুষ যাদেরকে দেশ বরেণ্য বা শীর্ষস্থানীয় আলিম-উলামা মনে করে, তাদেরকেও পর্দার খিলাফ করতে দেখা যায়। যেমন, তারা বেগানা মহিলার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে, এক সাথে বসে বৈঠক করে, আলোচনা করে,  মিটিং-মিছিল করে, পানাহার  করে, ইফতার করে এবং এগুলো দৈনিক খবরের কাগজে ছবিসহ প্রকাশিত হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের এখন ধারণা হচ্ছে, পর্দা না করলেও হয়ত কোন অসুবিধা নেই।   প্রকৃতপক্ষে শরীয়তে পর্দার গুরুত্ব আছে কি-না? আর যে সমস্ত আলিম-উলামা পর্দা উপেক্ষা করে বেগানা মহিলার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ, মেলা-মেশা করছে তাদের ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কি?

দয়া করে বিস্তারিত জানিয়ে আমাদের ঈমান-আমলের হিফাযতের ব্যাপারে সহায়তা করুন। জাওয়াবঃ পর্দা করা ফরযে আইন। পুরুষ-মহিলা উভয়ের জন্যই পর্দা রক্ষা করা ফরয। পর্দা না করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।             আল্লাহ্ পাক তাঁর কালাম পাকে একাধিক আয়াত শরীফে পর্দা করার ব্যাপারে কঠোর তাগিদ দিয়েছেন। এ সম্পর্কে তিনি ইরশাদ করেন,

قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم و يحفظوا فروجهم ذلك ازكى لهم ان الله خبير بما يصنعون وقل للمؤمنت يغضضن من ابصارهن ويحفظن فروجهن ولا يبدين زينتهن.

অর্থঃ- “হে রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি মু’মিন পুরুষদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতার কারণ, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তারা যা করে সে সম্পর্কে  খবর রাখেন। এবং আপনি মু’মিন নারীদেরকে বলুন, তারাও যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে এবং তাদের সৌন্দর্যকে প্রকাশ না করে।” (সূরা নূর/৩০,৩১)

আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় হাদীস শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  ইরশাদ করেন,

لعن الله الناظر والمنظور اليه.

অর্থঃ- “যে (পুরুষ) দেখে এবং যে (মহিলা) দেখায় উভয়ের প্রতি আল্লাহ্ পাক লা’নত বর্ষণ করেন।” (বায়হাক্বী ফী শুয়াবিল ঈমান, মিশকাত, মিরকাত) হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

لايخلون رجل بامرأة الا كان ثالثهما الشيطن.

অর্থঃ- “যখন কোন পুরুষ কোন (বেগানা) মহিলার সাথে একাকী বা নিরিবিলিতে মিলিত হয় তখন তাদের তৃতীয় সঙ্গী হয় শয়তান।  অর্থাৎ তখন শয়তান  তাদেরকে পাপ কাজে উদ্বুদ্ধ করে, এমনকি পাপ কাজে লিপ্তও করে দেয়।”  এ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় বর্ণিত রয়েছে যে, একদা খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, ফারুকে আ’যম, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফে উপস্থিত হলেন এমন অবস্থায় যে, তাঁর কপাল মুবারক থেকে রক্ত মুবারক নির্গত হচ্ছিল। তা দেখে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, “হে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু!  আপনার কপালে কে আঘাত করল?” জবাবে তিনি বললেন, “ইয়া রসূল্লাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আরবের যমীনে এমন কোন সন্তান জন্মলাভ করেনি, যে হযরত উমর ইবনুল খত্তাবের  কপালে আঘাত করতে পারে।” হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, “তাহলে আপনার কপাল ফাঁটল কিভাবে”? তিনি বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার একটি হাদীস শরীফ আমার কপালে আঘাত করেছে।” এটা শুনে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশ্চর্যান্বিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,  “আমার হাদীস শরীফ আপনার কপালে আঘাত করেছে? কিভাবে আঘাত করলো? আর কোন সে হাদীস শরীফ?” তিনি  বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আমার মেয়ে যিনি উম্মুল মু’মিনীন, হযরত হাফসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তাঁর সাথে ঘরে বসে একাকী কথা বলছিলাম, হঠাৎ আপনার হাদীস শরীফখানা স্মরণ হয়। স্মরণ হওয়া মাত্র আমি ঘর থেকে খুব দ্রুত বের হই। বের হওয়ার সময় চৌকাঠে মাথা লেগে আমার কপাল ফেটে যায়। হাদীস শরীফখানা হচ্ছে,

لايخلون رجل بامرأة الا كان ثالهما الشيطن.

অর্থঃ- “যখন কোন পুরুষ কোন (বেগানা) মহিলার সাথে একাকী বা নিরিবিলিতে মিলিত হয় তখন তাদের তৃতীয় সঙ্গী হয় শয়তান।”             এখানে উল্লেখ্য, মেয়ের সাথে পর্দা করার হুকুম শরীয়তে নেই। তারপরও হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ পর্দা রক্ষার ব্যাপারে কতটুকু সতর্কতা অবলম্বন করেছেন তা সত্যিই  চিন্তা ও ফিকিরের বিষয়।           উল্লেখ্য, হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সাধারণ লোক থেকে প্রায় এক হাত লম্বা ছিলেন। যার কারণে তাঁর মাথা মুবারক চৌকাঠে লেগে যায়।   অন্য এক হাদীস শরীফে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে সম্বোধন করে বলেন,

لا تتبع النظرة فان لك الاولى وليست لك الاخرة.

অর্থঃ- “তুমি দৃষ্টিকে অনুসরণ করনা। অর্থাৎ কোন বেগানা মহিলার প্রতি দৃষ্টি দিওনা, কারণ, তোমার প্রথম দৃষ্টি (যা অনিচ্ছা সত্ত্বে পতিত হয়) তা ক্ষমা করা হবে, কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না। অর্থাৎ পরবর্তী প্রতি দৃষ্টিতে একটি করে কবীরা গুনাহ লিখা হবে।” (আহমদ, তিরমিযী, আবূ দাউদ, দারিমী, মিশকাত, মিরকাত)

স্মরণযোগ্য, যামানার মুজাদ্দিদ ও ইমাম, ইমামুল আইম্মা, বাহরুল উলূম রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর তাজদীদী ও গবেষণাধর্মী মুবারক ক্বওল হচ্ছে যে, “প্রত্যেক মানুষ পুরুষ কিংবা মহিলা হোক. সে প্রতি দু’সেকেন্ডে পাঁচটি করে চোখের পলক বা দৃষ্টি ফেলে থাকে। সে হিসেবে প্রতি মিনিটে ১৫০টি পলক বা দৃষ্টি করে থাকে। আর ঘন্টা হিসেবে প্রতি ঘন্টায় ৯০০০ (নয় হাজার) পলক বা দৃষ্টি করে থাকে। সে হিসেবে বেগানা পুরুষ ও মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার কারণে তাদের উভয়ের প্রতি এক মিনিটে তিনশ’টি এবং এক ঘন্টায় আঠার হাজার কবীরাহ্ গুণাহ্ লিখা হয়। তাহলে দৈনিক তারা যে কত হাজার হাজার কবীরাহ গুণাহ্ করে থাকে তা আল্লাহ্ পাকই বেহ্তর জানেন।”           এটা তো শুধু চোখের যিনার গুণাহ্র কথা বলা হলো। এমনিভাবে প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা যিনা হয়ে থাকে।             এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

العينان زناهما النظر والاذنان زناهما الاستماع واللسان زناه الكلام واليد زناها البطش والرجل زناها الخطى والقلب يهوى ويسنى ويصدق ذلك الفرج او يكذبه.

অর্থঃ- “চোখের যিনা হলো দৃষ্টি করা, কানের যিনা হলো শ্রবণ করা, মুখের যিনা হলো কথা বলা, হাতের যিনা হলো স্পর্শ করা, পায়ের যিনা হলো ধাবিত হওয়া, অন্তর চায় ও আকাঙ্খা করে এবং লজ্জাস্থান সেটাকে সত্য অথবা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে।” (বুখারী, কানযুল উম্মাল)

            হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

الديوث لايدخل الجنة.

অর্থঃ- “দাইয়্যূস বেহেশ্তে প্রবেশ করতে পারবেনা।” দাইয়্যূস ঐ ব্যক্তি যে নিজে পর্দা করেনা এবং তার অধীনস্ত মহিলাদেরও পর্দা করায়না।           কুরআন ও সুন্নাহর উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দ্বারাই পর্দার গুরুত্ব, অপরিহার্যতা যে অবশ্যই রয়েছে  তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।

হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

ان شر الشر شرار العلماء وان خير الخير خيار العلماء.

অর্থঃ- “ নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে সর্বাধিক নিকৃষ্ট হচ্ছে আলিমগণ অর্থাৎ উলামায়ে ‘ছূ’ আর মানুষের মধ্যে সর্বাধিক উত্তম হলেন আলিমগণ অর্থাৎ হক্কানী-রব্বানী আলিম।” (মিশকাত, মিরকাত)

অতএব, যে সমস্ত আলিম-উলামা পর্দা উপেক্ষা করে বেগানা মহিলার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে, মেলা-মেশা করে, তারা হাদীস শরীফে বর্ণিত উলামায়ে ‘ছূ’ তথা নিকৃষ্ট, ক্ষমতা লোভী, দুনিয়াদার, নাহক্ব শ্রেণীর আলিম। যাদের সম্পর্কে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

نعم الامير على باب الفقير وبئس الفقير على باب الامير.

অর্থঃ- “উত্তম আমীর বা শাসক হলো তারা যারা হক্কানী-রব্বানী, পীর-মাশায়িখ ও আলিমগণের দরবারে যাতায়াত করেন। আর নিকৃষ্ট আলিম-উলামা, পীর-মাশায়িখ হলো তারা, যারা আমীর বা শাসকদের দরবারে দরবারে ঘুরাফেরা করে।”    এ সমস্ত উলামায়ে ছূদের ব্যাপারে  শরীয়তে বিধান দুধরনের

(১) ফাসিকঃ যারা স্বীকার করে যে, পর্দা করা ফরয, পর্দা করা উচিত, পর্দার খিলাফ করলে কবীরা গুনাহ্ হয় কিন্তু তারা তাদের ইল্ম, আক্বল ও আমলের ঘাটতির কারণে পর্দার খিলাফ করে থাকে।

(২) মুরতাদঃ যারা পর্দার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে না বা ফরয মনে করে না অথবা পর্দা রক্ষার ব্যাপারে উদাসীন হয়ে গেছে, পর্দার খিলাফ করলে কোন রূপ অসুবিধা মনে করেনা অথবা যাদের আমল-আখলাকে ফুটে উঠে যে, বর্তমানে পর্দা দরকার নেই বা বর্তমানে পর্দা না করলেও চলে ইত্যাদি।    এ উভয় শ্রেণীর নামধারী আলিম-উলামারা উলামায়ে ‘ছূ’র অন্তর্ভুক্ত। তাই এদের অর্থাৎ উলামায়ে ‘ছূ’দের ছোহবত গ্রহণ করা থেকে সকলকে দূরে থাকতে হবে। কারণ তারা বেপর্দা, বেগানা মহিলার প্রতি দৃষ্টি দেয়ার কারণে তাদের উপর আল্লাহ্ পাক-এর লা’নত বর্ষিত হচ্ছে। অতএব, যারা তাদের ছোহবত গ্রহণ করবে তারাও সে লা’নতের ভাগী হবে।     উলামায়ে ‘ছূ’র ছোহ্বত হক্কানী উলামা-ই-কিরামের ছোহ্বতের বিপরীত। হক্কানী উলামা-ই-কিরামের প্রতি আল্লাহ্ পাক-এর রহমত বর্ষিত হয়। এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে যে, “একদা এক ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর এক ওলীর নিকট গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “হুযূর! অনেক লোক মারা যাবার সময় তাঁর আল-আওলাদ, আত্মীয়-স্বজনকে ওছীয়ত করে যায় যে, আমি মারা গেলে আমাকে ওমুক আল্লাহ্র ওলীর মাযার শরীফের পাশে দাফন করবে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লাহ্র ওলীর মাযার শরীফের পাশে ঐ ব্যক্তিকে দাফন করলে তার কি লাভ?” সেদিন ছিলো গরমের দিন। গরমের কারণে আল্লাহ্র ওলীকে তার এক খাদিম পাখা দিয়ে বাতাস করছিলো আর সে বাতাস, সামনে বসা প্রশ্নকারী ব্যক্তির শরীরেও লাগছিলো। আল্লাহ্র ওলী প্রশ্নকারী ব্যক্তিকে বললেন, “হে ব্যক্তি! আমার খাদিম কাকে বাতাস করছে?” সে ব্যক্তি বললো, “হুযূর! আপনাকে বাতাস করছে।” ‘বাতাস কি তোমার শরীরে লাগছে?’ ‘জ্বি হুযূর! আমার শরীরেও লাগছে।’ ‘কেন লাগছে? তোমাকে তো বাতাস করা হচ্ছেনা?’ সে বললো, “হুযূর! আমি যে আপনার নিকটে বসে আছি।” আল্লাহ্র ওলী বললেন যে দেখ, আল্লাহ্ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেছেন,

ان رحمت الله قريب من المحسنين.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক-এর রহমত মুহ্সিন অর্থাৎ হক্কানী আলিম বা আল্লাহ্ওয়ালাগণের নিকটবর্তী।” (সূরা আ’রাফ/৫৬)             কাজেই তুমি যেমন আমার নিকটবর্তী হওয়ার কারণে তোমাকে বাতাস না করা সত্ত্বেও বাতাসের ভাগী হচ্ছো, তোমার শরীরে বাতাস লাগছে। তদ্রুপ যারা হক্কানী আলিম বা আল্লাহ্র ওলী তাঁদের হায়াত-মউত সব অবস্থায় তাঁদের প্রতি আল্লাহ্ পাক-এর রহমত নাযিল হয়। যার কারণে আল্লাহ্ পাক-এর ওলীর মাযার শরীফের পাশে কাউকে দাফন করা হলে আল্লাহ্র ওলীর প্রতি যে রহমত নাযিল হয় সে রহমতের উছীলায় ঐ ব্যক্তির কবরের আযাব মাফ হয়ে যায়। কারণ যেখানে রহমত নাযিল হয় সেখানে আযাব-গযব থাকেনা। সেটা দূর হয়ে যায়। কিন্তু যারা হক্কানী আলিম বা আল্লাহ্র ওলী নয়, উলামায়ে ‘ছূ’র অন্তর্ভুক্ত। তাদের প্রতি রহমতের পরিবর্তে লা’নত ও যহমত বর্ষিত হয়। তাদের ছোহ্বতে যারা যাবে তারাও সেই লা’নত ও যহমতের হিস্সা লাভ করবে।             সুওয়ালে উল্লিখিত দেশবরেণ্য ও শীর্ষস্থানীয় আলিম-উলামা যারা উলামায়ে ‘ছূ’র অন্তর্ভুক্ত।  তাদের মধ্যে যারা ফাসিক তাদের ফায়সালা বা হুকুম হচ্ছে, “শরীয়ত ফাসিক ব্যক্তিকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ করাকে মাকরূহ্ বলে ফতওয়া দিয়েছে। ফাসিকের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ। অর্থাৎ মুছল্লীগণ বা মুক্তাদীগণ ফাসিক ইমামের পিছনে নামায আদায় করলে নামাযের পরিপূর্ণ ফায়দা হাছিল করতে পারবে না। কাজেই উক্ত ইমাম সাহেব যদি হারাম ও কবীরাহ্ গুণাহ্ থেকে তওবা-ইস্তিগফার না করে তাহলে মুছল্লীদের ফায়দার জন্য উক্ত ইমাম ছাহেবকে অব্যহতি দিয়ে অন্য কোন নেক্কার, পরহেযগার ও আল্লাহ্ওয়ালা ইমাম নিয়োগ করা কমিটি ও মুছল্লীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। অন্যথায় সকলেই ফাসিকী গুণাহ্ েগুণাহ্গার হবে। আর ফাসিকের দোষত্রুটি বর্ণনা করা জায়িয ও ছওয়াবের কারণ।

আর যারা মুরতাদ তাদের ফায়সালা হচ্ছে, “মুরতাদের স্ত্রী তালাক হয় যদি সে বিবাহিত হয়ে থাকে, হজ্ব বাতিল হয় যদি সে হজ্ব করে থাকে; এবং সে কাফির হয়। অর্থাৎ তার সকল নেক আমল বিনষ্ট হয়ে যায়, তওবা না করা পর্যন্ত সে ঈমানদার হবেনা। বিবাহ না দোহ্রালে স্ত্রীর সাথে সংসার করা যাবেনা। যদি সংসার করে তবে যিনাকারীর গুনাহ্ হবে। সন্তান হলে তা হালাল হবেনা। যদি হজ্বের সামর্থ থাকে তবে পুনরায় তাকে হজ্ব করতে হবে, যদিও সে পূর্বে হজ্ব করে থাকে। তা না করলে কবীরা গুনাহ্ হবে। তার ওয়ারিশ সত্ত্ব বাতিল হয়ে যাবে। তাকে তিন দিন সময় দেয়া হবে তওবা করার জন্য। যদি তওবা করে, তবে ক্ষমা করা হবে। অন্যথায় তার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড।       কেননা হাদীস শরীফে রয়েছে, “তিন কারণে মৃত্যুদন্ড দেয়া জায়িয। যথা- (ক) ঈমান আনার পর কুফরী করলে অর্থাৎ মুরতাদ হলে। (খ) ঐ যিনাকার বা যিনাকারিনী, যারা বিবাহিত বা বিবাহিতা। (গ) যে অন্যায়ভাবে কাউকে কতল করে।” (তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ্, মুসনদে শাফিয়ী, মুসনদে বাজ্জার, মুস্তাদরিকে হাকিম)    উল্লেখ্য, মুরতাদ মারা যাবার পর যারা এদের জানাযার নামায পড়ে বা পড়ায় বা জানাযার নামাযে সাহায্য-সহযোগিতা করে, তাদের সকলের উপরই মুরতাদের হুকুম বর্তাবে এবং এ সকল মুরতাদ মরলে বা নিহত হলে তাকে মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না। এমনকি মুসলমানের ন্যায়ও দাফন করা যাবে না। বরং তাকে কুকুরের ন্যায় একটি গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখতে হবে।              স্মরণীয় যে, কেউ হাফিয, ক্বারী, মুফ্তী, মুহাদ্দিছ, মুফাস্সির, মুহতামিম, মুদাররিস, ইমাম, খতীব, আমীর, ওয়ায়িয,  পীর, হাদী ইত্যাদি হয়ে গেলেই যে তিনি হক্কানী আলিম হবেন তা নয়, হক্কানী আলিম হওয়ার জন্য কোন দ্বীনী কিংবা দুনিয়াবী প্রতিষ্ঠান থেকে ফারেগ হতে হবে সে শর্তও কোথাও উল্লেখ নেই। বরং হক্কানী আলিম হওয়ার জন্য শরীয়ত তথা কুরআন-সুন্নাহ যে শর্ত আরোপ করেছে তা হলো-            আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেছেন,

انما يخشى الله من عباده اعلماء.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই বান্দাদের মধ্যে কেবল আলিমগণই আল্লাহ্ পাককে ভয় করেন।” (সূরা ফাতির/২৮)        এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন,

ليس العلم عن كثرة الحديث وان العلم عن خشية الله.

অর্থঃ- “ঐ ব্যক্তি আলিম নয় যে অনেক হাদীস জানে, বরং আলিম হচ্ছেন ঐ ব্যক্তি যিনি আল্লাহ্ পাককে ভয় করেন।” এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যা হাম্বলী মাযহাবের ইমাম, ইমামুল আইম্মা হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “যার ভিতরে যতবেশী আল্লাহ্ ভীতি রয়েছে তিনি তত বড় আলিম।” অর্থাৎ যিনি আল্লাহ্ পাককে ভয় করে সর্ব প্রকার  হারাম-নাজায়িয, কুফরী-শিরকী, বিদয়াত-বেশরা কাজ থেকে বিরত থাকেন তিনিই আলিম।

আর হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

ومن ارباب العلم قال الذين يعملون بما يعلمون وما اخرج العلم من قلوب العلماء قال الطمع.

অর্থঃ- “আলিম কে? তিনি বললেন, যারা ইলম অনুযায়ী আমল করেন, জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন জিনিস আলিমের অন্তর থেকে ইলমকে  বের করে দেয়? তিনি বললেন, দুনিয়ার মোহ বা  লোভ।” (মিশকাত)            ইল্ম কত প্রকার তার ব্যাখ্যায় হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

اعلم علمان علم فى القلب فذاك العلم النافع علم على اللسان فذالك حجة الله عزوج على ابن ادم.

অর্থঃ- “ইল্ম দু’প্রকার- (১) ক্বালবী ইল্ম, যা উপকারী ইল্ম অর্থাৎ ইল্মে তাছাউফ। (২) জবানী ইল্ম, যা আল্লাহ্ পাক-এর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য দলীল। অর্থাৎ ইল্মে ফিক্বাহ্।” (মিশকাত)

যারা উল্লিখিত দু’প্রকার ইল্ম অর্জন করবে এবং তদানুযায়ী আমল করবে শুধুমাত্র তারাই হক্কানী আলিম। আর যারা দু’প্রকারের এক প্রকার ইল্ম অর্জন করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে তারা হক্কানী আলিম হওয়া তো দূরের কথা সাধারণ আলিমেরও অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেনা।

মিশকাত শরীফের বিখ্যাত ও মশহুর ব্যাখ্যা গ্রন্থ “মিরকাত শরীফে” বর্ণিত রয়েছে, মালিকী মায্হাবের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম, ইমামুল আইম্মা, রঈসুল মুহাদ্দিসীন, ফখরুল ফুক্বাহা, শাইখুল উলামা হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

من تفقه ولم يتصوف فقد تفسق ومن تصوف ولم يتفقه فقد تزندق ومن جمع بينهما فقد تحقق.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ইল্মে ফিক্বাহ্ (জবানী ইল্ম) অর্জন করলো, কিন্তু ইল্মে তাছাউফ (ক্বাল্বী ইল্ম) অর্জন করলোনা সে ব্যক্তি ফাসিক। আর যে ব্যক্তি তাছাউফের দাবী করে কিন্তু শরীয়ত স্বীকার করেনা, সে ব্যক্তি  যিন্দিক। আর যে ব্যক্তি উভয়টি অর্জন করলো, সে ব্যক্তিই মুহাক্কিক। অর্থাৎ হক্কানী আলিম এবং মু’মিনে কামিল।”         অর্থাৎ ইল্মে তাছাউফ ব্যতীত ইল্মে ফিক্বাহ অর্জনকারী ফাসিক (গুণাহ্গার) ইখলাছবিহীন। আর ইখলাছবিহীন আলিম, ক্বারী জাহান্নামে প্রবেশ করবে।  হাদীস শরীফের ছহীহ্ কিতাব “মুসলিম শরীফে” বর্ণিত রয়েছে, “আল্লাহ্ পাক ক্বিয়ামতের দিন সর্ব প্রথম তিন ব্যক্তিকে বিচারের জন্য উপস্থিত করবেন। তার মধ্যে একজন হলো, আলিম-ক্বারী। যে সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে,

ورج تعم العلم وعلمه وقرأ القران فاتى به فعرفه نعمه فعرفها قال فما عملت فيها؟ قال تعلمت العلم وعلمته وقرأت فيك القران قال كذبت ولكنك تعلمت العلم ليقال انك عام وقرأت القران ليقال هو قارئ فقد قيل ثم امربه فسحب على وجهه حتى القى فى النار.

অর্থাৎ- এবং ঐ ব্যক্তি যাকে ইল্ম দান করা হয়েছে এবং সে তা অন্যকে শিক্ষা দিয়েছে এবং কুরআন শরীফ ছহীহ্-শুদ্ধভাবে পড়তে শিখেছে। আল্লাহ্ পাক তাকে বলবেন, হে আলিম, ক্বারী ছাহেব! তোমাকে এত ইল্ম দেয়া হয়েছিল, শুদ্ধ করে কুরআন শরীফ পাঠ করতে শিক্ষা দেয়া হয়েছিল, তুমি কি করলে? সে ব্যক্তি বলবে, আল্লাহ্ পাক! আমি আপনার জন্য ইল্ম শিক্ষা করেছি এবং তা অন্যকে শিক্ষা দিয়েছি, আর আপনার জন্যই আমি কুরআন শরীফ শুদ্ধ করে পাঠ করেছি। আল্লাহ্ পাক বলবেন, মিথ্যা কথা। বরং মানুষ তোমাকে বড় আলিম, বড় ক্বারী ছাহেব বলবে, সে জন্যেই তুমি ইল্ম অর্জন করেছ, কুরআন শরীফ শুদ্ধ করে তিলাওয়াত করতে শিখেছ। কাজেই মানুষ তোমাকে বড় আলিম, বড় ক্বারী ছাহেব বলেছে (তোমার বদলা তুমি পেয়েছ)। তখন আল্লাহ্ পাক ফেরেশ্তাদেরকে বলবেন, ‘হে ফেরেশ্তারা, তোমরা এ লোকটাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর। তখন তার চুল ধরে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।”         কাজেই সবাইকে হক্বানী আলিম মনে করা যাবেনা। হক্কানী আলিমের পাশাপাশি নাহক্ব, দুনিয়াদার, উলামায়ে ‘ছূ’ও  থাকবে। যাদের ইল্ম হাছিলের উদ্দেশ্যই হচ্ছে গাইরুল্লাহ্ তথা দুনিয়াবী ক্ষমতা লাভ, নামধাম কামানো, অর্থ-সম্পদ উপার্জন করা। যে কারণে তারা হালাল-হারাম, জায়িয-নাজায়িয একাকার করে থাকে।

অতএব, ঈমান-আক্বীদা ও আমল হিফাযতের উদ্দেশ্যে উলামায়ে ‘ছূ’দের থেকে দূরে থেকে উলামা-ই-হক্কানী-রব্বানীর ছোহবত ইখতিয়ার করা প্রত্যেকের জন্য ফরয। {দলীলসমূহ ঃ (১)  আহকামুল কুরআন, (২) রুহুল বয়ান, (৩) রুহুল মায়ানী, (৪) খাযিন, (৫) বাগবী, (৬) ইবনে কাছীর, (৭) তাবারী, (৮) কুরতুবী, (৯) কবীর, (১০) তাফসীরে মাযহারী, (১১) বুখারী, (১২) মুসলিম, (১৩) আবূ দাউদ, (১৪) আহমদ, (১৫) তিরমিযী, (১৬) ইবনে মাযাহ, (১৭) দাইলামী, (১৮) ত্ববারানী, (১৯) বাইহাক্বী, (২০) ইবনে হাব্বান, (২১) মুয়াত্তা মালিক, (২২) কানযুল উম্মাল, (২৩) মিশকাত, (২৪) মিরকাত, (২৫) লুময়াত, (২৬) আশয়াতুল লুময়াত, (২৭) ত্বীবী, (২৮) মুযাহিরে হক্ব, (২৯) ফতহুল ক্বাদির, (৩০) গায়াতুল আওতার, (৩১) তাহ্তাবী, (৩২) শামী, (৩৩) দুররুল মুখতার, (৩৪) রদ্দুল মুহতার, (৩৫) ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, (৩৬) হিদায়া, (৩৭) আইনুল হিদায়া, (৩৮) নিহায়া, (৩৯) আলমগীরী, (৪০) বাহরুর রায়িক, (৪১) কানযুদ্ দাকায়িক, (৪২) নূরুল হিদায়া, (৪৩) কিফায়া, (৪৪) নূরুল আনওয়ার, (৪৫) ইমদাদুল আহকাম, (৪৬) ফতওয়ায়ে আমীনিয়া, (৪৭) ফতওয়ায়ে দেওবন্দ ইত্যাদি)

 আলহাজ্ব  মুহম্মদ হুসাইন, (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) শাহ্ আমানত ফ্লাওয়ার মিল্স, খাতুনগঞ্জ, চট্টগ্রাম মুহম্মদ আলী হুসাইন, খাতুনগঞ্জ, চট্টগ্রাম

সুওয়ালঃ  কোন ব্যক্তি তার সৎ বোনের মেয়ের মেয়ে অর্থাৎ সৎ ভাগ্নীর মেয়ে তথা নাতনীকে বিবাহ্ করতে পারবে কিনা? কুরআন-সুন্নাহ্র দলীল সহকারে বহুল প্রশংসিত মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর মাধ্যমে জাওয়াব জানতে ইচ্ছুক। জাওয়াবঃ  কুরআন ও সুন্নাহ্তে হালাল ও হারাম উভয় প্রকার বিষয়গুলো স্পষ্টরূপে বর্ণিত হয়েছে। হাদীস শরীফের ছহীহ্ কিতাব ‘বুখারী শরীফে’ ইরশাদ হয়েছে,

الحلال بين والحرام بين.

অর্থঃ- “হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট।”

            অতএব, কোন্ কোন্ মহিলাকে বিবাহ্ করা হালাল বা জায়িয  এবং কোন্ কোন্ মহিলাকে বিবাহ্ করা হারাম বা নাজায়িয তা খোদ কালাম পাকেই আল্লাহ্ পাক বলে দিয়েছেন।

 যে সকল মহিলাকে বিবাহ্ করা হারাম তার বর্ণনা দান প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

ولا تنكحوا ما نكح اباؤكم من النساء اا ما قدسلف انه كان فاحشة ومقتا وساء سبيلا حرمت عليكم امهتكم وبنتكم واخوتكم وعمتكم وخلتكم وبنت الاخ وبنت ااخت وامهتكم التى ارضعنكم واخوتكم من الرضاعة وأمهت نسائكم وربائبكم التى فى حجور كم  من نسائكم التى دخلتم بهن فان لم تكونوا دخلتم بهن فلاجناح عليكم وحائل ابنائكم الذين من اصلابكم وان تجمعوا بين الاختين الا ما قدسلف ان الله كان غفورا رحيما وامحصنت من النساء الا ما ملكت ايما نكم كتب الله عليكم.

অর্থঃ- “আর নারীদের মধ্যে তোমাদের পিতৃপুরুষ (পিতা, পিতামহ ইত্যাদি) যাদেরকে বিবাহ্ করেছেন তোমরা তাদেরকে বিবাহ্ করবে না। কিন্তু যা অতীত (জাহিলীযুগে) হয়ে গেছে তা আলাদা। এটা অশ্লীল, অতিশয় ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট আচরণ। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতাগণ, তোমাদের কন্যাগণ, তোমাদের ভগ্নীগণ, তোমাদের ফুফুগণ, তোমাদের খালাগণ, ভাইয়ের কন্যাগণ, বোনের কন্যাগণ, তোমাদের সেই সব মাতাগণ- যারা তোমাদেরকে দুধ পান করিয়েছেন, তোমাদের দুধ বোনগণ, তোমাদের স্ত্রীদের মাতাগণ, তোমরা যাদের সাথে সহবাস করেছ সে স্ত্রীদের কন্যা- যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে। যদি তাদের সাথে সহবাস না করে থাক তবে তাদের মেয়েকে বিবাহ্ করাতে তোমাদের কোন গুণাহ্ নেই। তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রী এবং দু’বোনকে একত্রে বিবাহ্ করা কিন্তু যা অতীত (জাহিলীযুগে) হয়ে গেছে তা আলাদা। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক ক্ষমাশীল, দয়ালু। এবং নারীদের মধ্যে যারা বিবাহিতা তারাও, তবে যারা তোমাদের দখলে (বান্দী) এসেছে তাদের কথা আলাদা। এ হলো আল্লাহ্ পাক-এর বিধান তোমাদের জন্য।” (সূরা নিসা/ ২২-২৪)         আলোচ্য আয়াতে কারীমায় যে সকল মহিলাদেরকে বিবাহ্ করা হারাম বলা হয়েছে তারা তিন প্রকার। (১) বংশগত কারণে হারাম, (২) দুধ পানের কারণে হারাম, (৩) বিবাহ্ সম্পর্কের কারণে হারাম।

উল্লেখ্য, আয়াতে কারীমার শব্দগুলো বহুবচন ব্যবহার করতঃ তার আম বা ব্যাপক অর্থ বুঝানো হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ امهات দ্বারা  কেবল মাকেই বিবাহ করা হারাম তা নয় বরং দাদী, দাদীর মা, নানী, নানীর মা এভাবে যতই উপরে যাক সকলকে বিবাহ্ করা হারাম। একইভাবে  بنات দ্বারা কেবল মেয়েকেই বিবাহ করা হারাম তা নয় বরং নাতনী, নাতনীর মেয়ে, পুতনী, পুতনীর মেয়ে যত নিচে যাক সকলকে বিবাহ্ করা হারাম।    আর  اخوت (ভগ্নীগণকে) এবং

بنت الاخ وبنت الاخت.

 (ভাই ও বোনের কন্যাগণকে) বিবাহ্ করা হরাম।

            এ আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে মাযহারীতে” উল্লেখ করা হয়েছে,

واخوتكم: تعم ما كانت منها لاب او لام او لهما.

অর্থঃ- اخوت” শব্দটি আম বা ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যার দ্বারা বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় বোনকেও বিবাহ্ করা হারাম।”

وبنت الاخ وبنت الاخت: يعنى قروع الاخ والاخت بناتها وبنات ابنائها وبنات بناتهما وان سفلن سواء كان الاخ والاخت لابوين او لاحدهما ذكر الله سبحانه المحرمات من النسب سبعا ويؤل امرهن الى اربعة اصناف اصله وفرعه وفرع اصله القريب وان بعد والفرع القريب للاصل البعيد واخصر من ذلك ان يقال يحرم النكاح بين الشحصين ان يكون بينهما واد اويكون احدهما فرعا احد ابوى الاخر.

অর্থঃ- “(ভাতৃকন্যা ও ভাগিনীকন্যাগণ) অর্থাৎ ভাই ও বোনের সকল শাখা-প্রশাখা কন্যা, পৌত্রী, দৌহিত্রী যত নীচের দিকে হোক। ভাই  ও বোন শব্দটি আম ও ব্যাপক। সহোদর, সহোদরা হোক বা বৈমাত্রেয়, বৈপিত্রেয় হোক। আল্লাহ্ পাক বংশগত মুহাররামাতের সংখ্যা সাত উল্লেখ করেছেন। যার সারকথা হচ্ছে, চার শ্রেণীর মেয়ে হারাম। বিবাহ্কারীর মূল ও বিবাহ্কারীর শাখা, নিকটবর্তী মূলের শাখা, নিকটবর্তী হোক কিংবা দূরবর্তী।  দূরবর্তী মূলের নিকটবর্তী শাখা। এর চেয়েও সংক্ষিপ্ত ভাষায় এরূপ বলা যায়, এমন দুই পুরুষ ও মহিলার পারস্পরিক বিবাহ্ হারাম, যাদের পরস্পরের মধ্যে জন্মগত সম্পর্ক রয়েছে কিংবা একে অপরের পিতা ও মাতার শাখা।”    অর্থাৎ সহোদরা বোন, বৈমাত্রেয় বোন, বৈপিত্রেয় বোন এবং তাদের মেয়ে অর্থাৎ ভাগ্নী, ভাগ্নীর মেয়ে তথা নাতনী, নাতনীর মেয়ে এভাবে যত নিচে যাক সকল প্রকার মেয়েকে বিবাহ্ করা হারাম।           অতএব, বৈমাত্রেয় বোন হোক অথবা বৈপিত্রেয় বোন হোক অর্থাৎ যাকে সৎ বোন বলা হয় তার মেয়ে তথা ভাগ্নী এবং তার মেয়ে অর্থাৎ নাতনীকে বিবাহ্ করা হারাম।             {দলীলসমূহ্ঃ (১) আহকামুল কুরআন, (২) জালালাইন, (৩) কুরতুবী, (৪) মাযহারী, (৫) রুহুল মায়ানী, (৬) রুহুল বয়ান, (৭) খাযিন, (৮) বাগবী, (৯) ইবনে কাছীর, (১০) তাবারী, (১১) কবীর, (১২) দুররে মুনছুর, (১৩) ফতহুল ক্বাদীর, (১৪) আইনী, (১৫) আলমগীরী, (১৬) বাহরুর রায়িক, (১৭) ক্বাযীখান, (১৮) শামী, (১৯) দুররুল মুখতার, (২০) রদ্দুল মুহতার, (২১) ফতওয়ায়ে আমীনিয়া,  (২২) তাতারখানিয়া, (২৩) আইনুল হিদায়া ইত্যাদি।}

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সাইয়্যিদ মুহম্মদ মোক্তাদুল ইসলাম (মিলন)

রঈসুল মজলিশ-ছাত্র আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত

সুবহানীঘাট, সিলেট।

সুওয়াল ঃ রেযাখানী মুখপত্র ডিসেম্বর/২০০০ ঈসায়ী সংখ্যায় “তাফসীরে রুহুল বয়ান, বুখারী, গুনিয়াতুত তালেবীন, রেজভীয়া” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “সহীহ মুসলিম শরীফসহ” অনেক নির্ভরযোগ্য কিতাবে নফল নামায বিশেষতঃ ক্বদর ও বরাতের নফল নামায জামাত সহকারে আদাঃয় করা বৈধ…….।”

আর আপনারা “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” লিখেছেন, “তারাবীহ, ছলাতুল কুছুফ (সূর্য গ্রহণের নামায), ছলাতুল ইস্তিস্কা (বৃষ্টির নামায) এই তিন প্রকার নামায ব্যতীত যেমন লাইলাতুল ক্বদর, লাইলাতুল বরাত, তাহাজ্জুদ, চাশত, আওয়াবীন ইত্যাদি নফল নামাযসমূহ ইমামের সাথে চারজন মুক্তাদীসহ জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ।” কোনটি সঠিক?

আর “বুখারী, মুসলিম শরীফ উনার মধ্যে” কি “ক্বদর” ও বরাতের” নফল নামায জামায়াতের সাথে আদায় করার কথা উল্লেখ আছে? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব ঃ রেযাখানীরা তাদের মুখপত্রে “তাফসীরে রুহুল বয়ান, বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, গুনিয়াতুত তালেবীন এবং রেজভীয়া” কিতাবের বরাত দিয়ে নফল নামায বিশেষতঃ “শবে বরাত”, “শবে ক্বদরের” নফল নামায আযান-ইক্বামত ছাড়া জামায়াত সহকারে আদায় করা যে বৈধ বলেছে, তা আমরা আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এর বিগত সংখ্যাগুলোতে বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে প্রমাণ করেছি যে, “তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, জিহালতপূর্ণ, জালিয়াতী ও প্রতারণামূলক।”

কেননা, রেযাখানীরা কিতাবের নাম দিয়ে যে বক্তব্য প্রদান করেছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। বরং তার সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ, তারা কিতাবের ইবারত, সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে মনগড়া বক্তব্য প্রদান করেছে এবং ক্ষেত্র বিশেষ নিজের ভ্রান্ত মতকে টিকিয়ে রাখতে কিতাবের ইবারত কারচুপি করেছে।

(ধারাবাহিক)

বর্তমান সংখ্যায় রেযাখানীদের দলীলবিহীন ও মনগড়া বক্তব্য খ-ন করা হলো

উল্লেখ্য, রেযাখানীরা বলেছে, ঢালাওভাবে মাকরূহে তাহরীমার … ফতওয়া দিয়ে পীরানে পীর দস্তগীর আব্দুল কাদের জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সহ অনেক মাশায়েখে কিরাম উনাদের উপর মাকরূহ তাহরীমার অপবাদ দিয়ে নিজের খ্যাতি চমকানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে।”

এর জবাবে বলতে হয় যে, বিগত সংখ্যায় আমরা আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাতে দলীলের ভিত্তিতে প্রমাণ করে দিয়েছি যে, রেযাখানীরাই প্রকৃতপক্ষে মিথ্যাবাদী, ভ-, প্রতারক, মূর্খ ও জাহিল। তারা এমনই আশাদ্দুস দরজার জাহিল যে নিজেরাই নিজেদের দাবিকৃত ইমামের বিরুদ্ধ মত পোষণ করে অথচ আবার তারই ভক্ত বলে দাবী করে। কিন্তু সে কি লিখে গেছে সে সম্পর্কে তারা নিতান্তই বে-খবর ও আনপড়া।

দ্বিতীয়তঃ “শবে বরাত, শবে ক্বদর, লাইলাতুর রাগায়িব, তাহাজ্জুদ” ইত্যাদি নফল নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী। এ ফতওয়া দেয়ার কারণেই যদি তা পীরানে পীর দস্তগীর হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি অপবাদ হয়, তাহলে বলতে হয় যে, রেযাখানীদের বক্তব্য মুতাবিক তাদের গুরু রেযা খা-ই পীরানে পীর দস্তগীর হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি অপবাদ দিয়েছে।

কারণ, তাদের গুরু স্বয়ং রেযা খা-ই তার “রেজভীয়া” কিতাবে শবে বরাত, শবে ক্বদর, রাগায়িব ইত্যাদি নফল নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী বলে ফতওয়া দিয়েছে।

যেমন, “রেজভীয়া” কিতাবের ৩য় খ-ের ৪৫৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

نماز شب برات اگر چہ مشائخ کرام قدست اسرارھم  نے بجماعت بھی پڑھی … مگر ھمارے ائمہ رضی اللہ تعالی عنھم کا مذھب وھی ھے کہ جما عت بتدا عی ھو تومکروہ ھے.

অর্থাৎ “শবে বরাতের নামায যদিও কোন কোন মাশায়েখগণ জামায়াতে পড়েছেন তবে আমাদের আইম্মায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের মাযহাব ওটাই যে জাামায়াত تداعى এর সাথে হলে অর্থাৎ জামায়াতে চারজন মুক্তাদী হলে মাকরূহ তাহরীমী হবে।

“রেজভীয়া” কিতাবের ৩য় খ-ের ৪৬৫ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

ذلک کلہ بدعۃ …. ولم ینقل عن النبی صلی اللہ علیہ وسلم ولا عن اصحابہ …. دوسرا قول یہ کہ مساجد میں اس کی جماعت مکروہ ھے.

অর্থাৎ “ওগুলো প্রত্যেকটি বিদয়াত অর্থাৎ ছলাতুর রাগায়িব, শবে বরাত, শবে ক্বদরের নফল নামায জামায়াতে আদায় করা ইত্যাদি প্রত্যেকটি কাজই বিদয়াত।” …… কেননা, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনার থেকে ওগুলোর কোন বর্ণনা নেই। বিধায় ওগুলো প্রত্যেকটাই বিদয়াত। ……… দ্বিতীয় মতে, মসজিদে এর জামায়াত করা মাকরূহ তাহরীমী।”

“রেজভীয়া” কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে, “তারাবীহ, ছলাতুল কুছুফ (সূর্যগ্রহণের নামায), ছলাতুল ইস্তিস্কা (বৃষ্টির নামায) এই তিন প্রকার নামায ব্যতীত অন্যান্য নফল নামাযসমূহ জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী।”

যেমন, “রেজভীয়া”-এর ৩য় খ-ে আরো উল্লেখ আছে,

ھمارے ائمہ کرام رضی اللہ تعالی عنھم کے نزدیک نوافل کی جماعت بتدا عی مکرو÷ ھے اسی حکممیں نماز  خسوف بھی د اخل کہ وہ بھی تنھا پڑھی  جائے اگرچہ امام جمعہ حاضر ھو کما فی الشامی عن اسمعیل عن البر جندی …..  صرف تراویح وصلاۃ الکسوف وصلاۃ الاسیسقاء مسشنی ھیں …. تداعی مذھب اصح میں اس وقت متحقق ھوگی جب چار یا زیادہ مقتدی ھوں.

অর্থ: “আমাদের আইম্মায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের নিকট নফল নামাযসমূহ تداعى এর সাথে জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী। এই হুকুমের মধ্যে ছলাতুল খুছুফও (চন্দ্রগ্রহণের নামায) অন্তর্ভুক্ত। এই নামাযও একাকী পড়তে হবে। যদিও জুমুয়ার ইমাম উপস্থিত থাকে।”

যেমন, শামী কিতাবে, ইসমাঈল এবং বরজুন্দী থেকে বর্ণিত আছে, …….. আর তারাবীহ, ছলাতুল কুছুফ (সূর্য গ্রহণের নামায), ছলাতুল ইস্তিস্কা (বৃষ্টির নামায), এই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত নয়। অর্থাৎ এই তিন প্রকার নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ নয়। ….. অধিক ছহীহ মতে চারজন অথবা চারের অধিক মুক্তাদী হওয়াই (تداعى) তাদায়ী অর্থাৎ মাকরূহ তাহরীমী।

যেমন, “রেজভীয়া” কিতাবের উক্ত খ-ের ৪৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

تراویح وکسوف واستسقاء کے سوا جما عت نوافل  میں…..  اور چار مقتدی ھو تو بالاتفاق مکروہ.

অর্থাৎ “তারাবীহ, কুছুফ, (সূর্যগ্রহণের নামায) ইস্তিস্কার (বৃষ্টির) নামায ব্যতীত অন্যান্য নফল নামায সমুহ …. ইমামের সাথে চারজন মুক্তাদীসহ জামায়াতে আদায় করা সকল ইমাম মুজতাহিদ ও ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের সর্বসম্মত মতে মাকরূহ তাহরীমী।”

আরো উল্লেখ যে, “রেজভীয়া” কিতাবে পরিশেষে এটাও উল্লেখ আছে যে, নফল নামায পড়তে হলে পৃথক পৃথক পড়তে হবে। জামায়াতের সাথে নফল নামায আদায় করা যাবে না। কেননা নফল নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী। আর চারজন মুক্তাদী হলে সকল ইমাম মুজতাহিদ ও ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের সর্বসম্মত মতে নফল নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী।

শুধু তাই নয়, রেযা খা তার ‘রেজভীয়া’ কিতাবে সুন্নত নামাযও জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী বলে ফতওয়া দিয়েছে।

যেমন, ‘রেজভীয়া’ কিতাবের ৩য় খ-ের ৪৬৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

استسقاء کے سوا ہر نماز نفل وتراویح وکسوف کے سوا ہرنماز سنت میں  ایسی جماعت جس میں  چار یا زیادہ شخص مقتدی بنیں مکروہ بے.

অর্থ: “ইস্তিস্কার নামায ব্যতীত যে কোন নফল নামাযে এবং তারাবীহ ও কুছুফ নামায ব্যতীত যে কোন সুন্নত নামাযে যদি এরূপ জামায়াত হয় যাতে চারজন অথবা চারের অধিক মুক্তাদি উপস্থিত হয় তাহলে মাকরূহ তাহরীমী হবে।”

সুতরাং যেখানে সুন্নত নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী সেখানে নফল নামায জামায়াতে পড়া কি করে বৈধ হতে পারে?

যেমন, “রেজভীয়া” কিতাবের ১০ম খ-ে উল্লেখ আছে,

نفل پڑھیں تو الگ الگ ورنہ نفل جماعت کثیرہ کے ساتھ مکروہ ھے چار مقتدی ھوں تو بالاتفاق.

অর্থঃ “নফল নামায পড়তে হলে পৃথক পৃথক পড়বে, কেননা নফল নামায বড় জামায়াতের সাথে পড়া অর্থাৎ যদি জামায়াতে চারজন মুক্তাদী হয় তাহলে সকল ইমাম, মুজতাহিদ ও ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের ঐক্যমতে জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী।”

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, রেযা খা তার ‘রেজাভীয়া’ কিতাবে, শবে বরাত, শবে ক্বদর, রাগায়িব ইত্যাদি নফল নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী ফতওয়া দিয়েছে।

সুতরাং “শবে বরাত, শবে ক্বদর, লাইলাতুর রাগায়িব, তাহাজ্জুদ” ইত্যাদি নফল নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী। এ ফতওয়া দেয়ার কারণেই যদি তা পীরানে পীর দস্তগীর হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি অপবাদ হয়, তাহলে বলতে হয় যে, রেযাখানীদের উক্ত বক্তব্য মুতাবিক রেযা খাই পীরানে পীর দস্তগীর হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি অপবাদ দিয়ে নিজের খ্যাতি চমকানোর অপচেষ্টা চালিয়েছিলো। (চলবে)

মাওলানা মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান

মাওলানা মুহম্মদ মাছূম বিল্লাহ, মুহম্মদ আসাদুর রহমান, মুহম্মদ মাইজুর রহমান

ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

সুওয়াল ঃ আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম এই তিনটি সংখ্যায় ৩৫৩টি অকাট্য দলীলের ভিত্তিতে প্রদত্ত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ, মুহাক্কিক-মুদাক্কিক ও হক্কানী উলামায়ে কিরামগণ উনাদের ফতওয়া মুতাবিক জানতে পারলাম যে, “প্রাণীর ছবি তৈরি করা বা করানো, ঘরে রাখা সর্বাবস্থায় হারাম।”

অথচ রেযাখানী মুখপত্র নভেম্বর/২০০১ ঈসায়ী সংখ্যায় ছবি সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ফতওয়া প্রকাশ করেছে। যা কিনা মানুষের ঈমান-আমল বিনষ্ট হওয়ার কারণ। রেযাখানীদের ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যের যে বিষয়গুলো আপত্তিকর সেগুলো নি¤েœ উল্লেখ করা হলো-

(ক) রেযাখানীরা ছবি তোলাকে বৈধ বলেছে; কিন্তু দলীল হিসেবে পেশ করেছে ঘরে ছবি রাখা সম্পর্কিত হাদীছসমূহকে।

(খ) …. কতেক উলামা যেসব ছবির শরীর ও ছায়া নেই সেসব ছবিকে বৈধ বলেছেন।

(গ) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুরুর দিকে ছবি তৈরি করা ও সংরক্ষণ করাকে নিষেধ করেছিলেন; কিন্তু পরবর্তীতে অনুমতি দেন।

(ঘ) পূর্ববর্তীদের কেউ কেউ এবং হাম্বলী, শাফেয়ী, মালেকী এমনকি হনাফীদেরও কেউ কেউ নাকি (গায়রে মুজাসসাম) শরীরবিহীন ছবিকে বৈধ বলেছেন।

(ঙ) সামাজিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে বিশেষ প্রয়োজনে ছবি তোলা বৈধ যা যুগের চাহিদাও।

(চ) প্রত্যেক যুগের ফক্বীহ, মুফতী, কাজী ও আলিমগণ যুগের চাহিদা অনুযায়ী ফতওয়া দিয়েছেন এবং দেয়া উচিত।

(ছ) ছবি হারাম হওয়ার মূলে হলো গায়রুল্লাহর সম্মান ও ইবাদত।

(জ) প্রয়োজনীয় রেকর্ডের জন্য ফাইল বন্দি ছবিসমূহ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের নিকট জ্ঞান ও ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য জানার নিমিত্তে সরকারি-বেসরকারী যাদুঘর বা বিশেষ প্রতিষ্ঠানসমূহে পূর্বের নানা মনীষীগণ উনাদের ছবি সংরক্ষণ/ধারণ করে রাখা বিশেষ প্রয়োজনে মাকরূহ হবেনা।

এছাড়াও আরো বহু আপত্তিকর বিষয় তাদের উক্ত ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যে স্থান পেয়েছে। কুরআন শরীফ সুন্নাহ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে তাদের উল্লিখিত আপত্তিকর বক্তব্যগুলোর শরয়ী ফায়সালা কামনা করি।

জাওয়াব ঃ হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم.

অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি, সাবধান! তোমরা তাদের কাছ থেকে দূরে থাকবে, তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ)

উল্লিখিত হাদীছ শরীফ উনার পূর্ণ মেছদাক বা নমুনা হচ্ছে রেযাখানীরা। তারা ছবির ব্যাপারে এমন সব বক্তব্য প্রদান করেছে যা কিতাবে দেখা তো দূরের কথা কেউ কোন দিন শুনেও নাই। মূলতঃ রেযাখানীরা নিজেদের কৃত বদ আমলকে ধামা-চাপা দেয়ার উদ্দেশ্যেই মনগড়াভাবে ছবিকে জায়িয করার অপচেষ্টা করেছে।

(ধারাবাহিক)

প্রাণীর ছবি সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত রেযাখানীদের আপত্তিকর ও প্রতারণামূলক বক্তব্য সমূহের খ-ন মূলক জবাব- (১)

যুগে যুগে দাজ্জালে কাজ্জাব বা দুনিয়াদার মৌলভীরা নিজে স্বার্থ হাছিলের লক্ষ্যে হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল ফতওয়া দিবে এটাই তো স্বাভাবিক। কেননা, দুনিয়া লোভী মৌলভীদের শায়খ বা মুর্শিদ হচ্ছে শয়তান। আর শয়তানের কাজই হচ্ছে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম বানানো।

আর যামানার মুজাদ্দিদ এবং হক্কানী উলামায়ে কিরামগণ উনাদের কাজ হচ্ছে শয়তানের অনুসারী দুনিয়া লোভী মৌলভীদের ধোকা থেকে মুসলমানের ঈমান-আমল হিফাযতের লক্ষ্যে কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ, ইজমা এবং ক্বিয়াস উনার ভিত্তিতে হারামকে হারাম ও হালালকে হালাল সাব্যস্ত করে দেয়া। যেমন দিয়েছিলেন হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি, গাউছূল আ’যম হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, সুলতানুল হিন্দ খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, কাইয়ি্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, শহীদে আ’যম হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও গত শতকের মুজাদ্দিদ হযরত আবু বকর ছিদ্দীকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনারা প্রত্যেকেই উনাদের নিজ নিজ যামানায় উলামায়ে “সূ”দের উদ্ভাবিত বদ আক্বীদা ও আমলসমূহের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়ে মুসলমানদের ঈমান-আমল হিফাযত করেছেন।

অনুরূপ বর্তমান যামানার উলামায়ে ‘সূ’রা যখন সমস্ত হারামগুলোকে হালাল বানানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত যেমন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, হরতাল, লংমার্চ, ব্লাসফেমী আইন, মৌলবাদ, কুশপুত্তলিকা দাহ, ভোট-নির্বাচন, নারী নেতৃত্ব, বেপর্দা হওয়া, ছবি, টেলিভিশন, ভি.সি.আর, ভিডিও, খেলা ইত্যাদি হারাম ও নাজায়িয কাজ সেগুলোকে তারা হালাল ও জায়িয বানানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

আবার তার বিপরীতে হালাল ও জায়িয কাজগুলোকে হারাম-নাজায়িয ও বিদয়াত বলে ফতওয়া দিচ্ছে। যেমন, মীলাদ শরীপ পাঠ করা, আযানের সময় অঙ্গুলী চুম্বন করা, কদমবুছী করা, ফরয নামায, জানাযা, আযানের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা, উজরত গ্রহণ করা ইত্যাদি হালাল কাজ গুলোকে উলামায়ে ‘সূ’রা নাজায়িয ও বিদয়াত বলছে।

তখন বর্তমান যামানার মুজাদ্দিদ, আওলাদে রসূল রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি মুসলমানদের ঈমান-আমল হিফাযতের লক্ষ্যে তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাতে কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা এবং ক্বিয়াসের ভিত্তিতে হারামকে হারাম, হালালকে হালাল, নাজায়িযকে নাজায়িয, জায়িযকে জায়িয, বিদয়াতকে বিদয়াত এবং সুন্নতকে সুন্নত প্রমাণ করে দিয়েছেন ও দিচ্ছেন।

রেযাখানীদের ছবি সম্পর্কিত সুওয়াল-জাওয়াবটি তারই একটি বাস্তব প্রমাণ। অর্থাৎ রেযাখানীরা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে যখন হারাম ছবিকে হালাল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হলো তখনই মুসলমানদের ঈমান-আমল হিফাযত করতে আল বাইয়্যিনাতে তার জবাব আসতে শুরু করলো। এবার রেযাখানীদের ছবি সম্পর্কিত মনগড়া, বিভ্রান্তিকর ও বানোয়াট বক্তব্যের খ-নমূলক জবাবে আসা যাক।

মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর গত সংখ্যার অর্থাৎ ১০৭তম সংখ্যার আলোচনা দ্বারা দিবালেকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, রেযাখানীরা প্রাণীর ছবিকে জায়িয করার উদ্দেশ্যে সর্ব প্রথম যে হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করেছে তা দ্বারা কখনই প্রাণীর ছবি জায়িয প্রমাণিত হয়না। বরং প্রমাণিত হয়েছে যে, উক্ত হাদীছ শরীফখানা প্রাণীর ছবি নাজায়িয ও হারাম হওয়ার পক্ষে দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য। সুতরাং রেযাখানীরা ছবি জায়িয করার ক্ষেত্রে উক্ত হাদীছ শরীফ উনাকে দলীল হিসেবে পেশ করে চরমে জিহালতী ও জালিয়াতির পরিচয় দিয়েছে।

শুধু তাই নয়, রেযাখানীরা প্রাণীর ছবিকে জায়িয করার উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় যে দলীল পেশ করেছে তা দ্বারাও ছবি জায়িয প্রমাণিত হয়না বরং তা দ্বারা প্রাণীর ছবি নাজায়িয ও হারামই প্রমাণিত হয়।

যেমন, রেযাখানীরা দ্বিতীয় দলীল হিসেবে নি¤েœাক্ত হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করেছে,

عن زيد بن خالد عن ابى طلحة صاحب رسول الله صلى الله عليه وسلم انه قال ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال المكلائكة لاتدخل بيتا فيه صورة قال بسر ثم اشتكى زيد فعدناه فاذا على بابه ستر فيه صورة قال فقت لعبيد اله الخوانى ربيب مسمونة زوج النبى صلى الله عليه وسلم الم يحبرنا زيد عن الصور يوم ااول فقال عبيد الله الم تشمعه حين قال الا رقما فى ثوب.

আর রেযাখানীরা উক্ত হাদীছ শরীফ উনার অর্থ করেছে এরূপভাবে, “অর্থাৎ যায়েদ ইবনে খালেদ বর্ণনা করেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবী হযরত আবু তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেছেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন যে, যে ঘরে ছবি থাকে তাতে ফিরিশতা প্রবেশ করেনা। (বর্ণনাকারী বলেন) রসূল বলেছেন- হযরত যায়েদ অসুস্থ হলে আমরা উনাকে দেখতে গেলাম, তখন উনার ঘরের দরজায় ছবিওয়ালা পর্দা দেখতে পাই। আমি উবায়দুল্লাহ খাওলানী (যিনি উম্মুল মু’মিনীন হযরত মায়মুনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলাম, যায়েদ আমাদেরকে কি পূর্বে ছবি থেকে নিষেদ করতেন না? হযরত উবায়দুল্লাহ বললো, তুমি কি শুননি যে, তিনি কাপড়ের উপর অঙ্কিত ছবিকে পূর্বের হুকুম থেকে পৃথক করে থাকেন।”

মূলত: রেযাখানীরা উক্ত হাদীছ শরীফ উনার ভুল অর্থ ও অশুদ্ধ ব্যাখ্যা করে প্রমাণ করতে চেয়েছে যে, কাপড়ের উপর অঙ্কিত ছবি জায়িয।

আমরা রেযাখানীদের ভুল অর্থ ও ব্যাখ্যা খ-ন করার এবং কাপড়ের উপর কোন ধরণের ছবি অঙ্কন করা জায়িয তা প্রমাণ করার পূর্বে এটাই প্রমাণ করবো যে, হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্টভাবেই প্রাণীর ছবিযুক্ত পর্দা ঘরে ঝুলানোর প্রতি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

যেমন, হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ হয়েছে,

عن عائشة قالت قدم رسول الله صلى اله عيه وسلم من سفر وسترت بقرام لى على سهوة لى فيها تما ثيل فلما رأه رسول الله صلى الله عليه وسلم هتكه وقال اشد الناس عذابا يوم القيامة الذين يضاهون بخلق الله.

অর্থ: “হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোন এক সফর থেকে ঘরে আসলেন, আর আমি আমার ঘরের আঙ্গিনায় প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা পর্দা ঝুলিয়েছিলাম। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওটা দেখে ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেন, মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তির ক্বিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি হবে, যে মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছূরত তৈরি করে।” (নাসাঈ ৮ম জিঃ ২১৪ পৃষ্ঠা, মু’য়জামুল মুফহারিস ৩য় জিঃ ৪৪০ পৃষ্ঠা, নাসাঈ ২য় জিঃ ৩০০ পৃষ্ঠা, ইবনে মাযাহ ২৬৮ পৃষ্ঠা, মুসলিম ২য় জিঃ ২০১ পৃষ্ঠা ইত্যাদি।)

عن عائشة رضى الله عنها قالت دخل عى رسول الله صلى الله عليه وسلم وانا مسترة بقرام فيه صورة فتلون وجهه ثم تنا ول الستر فهتكه ثم قال ان من اشد الناس عذابا يوم القيامة الذين يشبهون بخلق الله.

অর্থ: “হযরত আশিয়া ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার নিকট আসলেন, আর আমি (প্রাণীর ছবিযুক্ত) একটি চাদর গায়ে দেয়া ছিলাম। (ওটা দেখে) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেহারা মুবারক রঙ্গীন হয়ে গেল। অতঃপর তিনি ওটা টেনে নিয়ে ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেন, নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে ক্বিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তির কঠিন শাস্তি হবে, যে মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছূরত তৈরি করবে।” (মুসনদে আহমদ ২য় জিঃ ২১৭ পৃষ্ঠা, তাহারী ২য় জিঃ ৩৬৩ পৃষ্ঠা)

عن عائشة قالت كان لنا ستر فيه تمثال طائر وكان الداخل اذا دخل استقبله فقال لى رسول الله صلى الله عليه وسلم حولى مذا فانى كلما دخلت فرأيته ذكرت الدنيا.

অর্থ: “হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের পাখির ছবিযুক্ত একখানা পর্দা ছিলো। প্রত্যেক লোক প্রবেশ করতেই সেটা তাদের নজরে পড়তো। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে বললেন, পর্দাটি সরিয়ে ফেল। কেননা, আমি যতবার ঘরে প্রবেশ করি ততবারই ওটা দেখে আমার দুনিয়ার স্মরণ হয়।” (মুসলিম ২য় জিঃ, ২০০ পৃষ্ঠা)

উল্লিখিত তিনখানা হাদীছ শরীফ দ্বারা স্পষ্টতঃ প্রমাণিত হলো যে, পর্দা, চাদর ইত্যাদি কাপড়ে অঙ্কিত প্রাণীর ছবিও হারাম। অর্থাৎ কাপড়ে প্রাণীর ছবি তৈরি করা এবং তা ঘরে প্রকাশ্যে রাখাও হারাম। কেননা, স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পর্দা, চাদর ইত্যাদি কাপড়ে অঙ্কিত প্রাণীর ছবিকে অপছন্দ করতেন। তাই তিনি তা ছিঁড়ে ফেলেছেন এবং সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন।

অতএব, কাপড়ে প্রাণীর ছবি অঙ্কন করার নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত স্পষ্ট হাদীছ শরীফসমূহ বাদ দিয়ে একখানা অস্পষ্ট হাদীছ শরীফ উনার মনগড়া অর্থ ও ব্যাখ্যা করে তা দ্বারা কাপড়ে প্রাণীর ছবি জায়িয প্রমাণ করার অপচেষ্টা করা সুস্পষ্ট গোমরাহী ও জালিয়াতী নয় কি? এটা শুধু গোমরাহী ও জালিয়াতিই নয় বরং সুস্পষ্ট কুফরীও বটে। (চলবে)

 মুহম্মদ মুস্তাফির্জু রহমান (ফারুক) ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম।

 সুওয়ালঃ  মাসিক রাহমানী পয়গাম জুন/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় নিম্নবর্ণিত জিজ্ঞাসা ও তার জবাব ছাপা হয়- জিজ্ঞাসাঃ ফুটবল খেলা শরীয়তে বৈধ কিনা? জবাবঃ সতর না খুলে অর্থাৎ নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত পূর্ণ ঢেকে হারজিত ছাড়া, ইবাদতসমূহ যেমন জামাআতে নামায পড়া ইত্যাদির প্রতি খেয়াল রেখে শরীর চর্চার নিয়তে ফুটবল-ক্রিকেট বা এ জাতীয় খেলা জায়িয আছে।             হারজিতের সাথে বা সতর খুলে বা খেলতে গিয়ে অন্যান্য ইবাদতে অমনোযোগী হয়ে যাবার আশংকা থাকলে কোন খেলাই জায়িয নয়।        এখন আমার সুওয়াল হলো- ১. উপরোক্ত জিজ্ঞাসার জবাব শরীয়ত সম্মত হয়েছে কিনা? ২. খেলা কাকে বলে? ও কত প্রকার? ৩. শরীয়তে কোন হারামকে শর্ত দিয়ে হালাল করা জায়িয আছে কিনা?

দয়া করে দলীল-আদিল্লাহ্র মাধ্যমে জানিয়ে বাধিত করবেন।  জাওয়াবঃ  ফুটবল, ক্রিকেট বা এ জাতীয় খেলা সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ শরীয়তে খেলা সম্পর্কে যে সুস্পষ্ট বিধান বর্ণিত রয়েছে সে বিধান মতে ফুটবল, ক্রিকেট বা এ জাতীয় খেলা সম্পূর্ণরূপে নাজায়িয ও হারাম।

হাদীস শরীফের বিখ্যাত কিতাব, “মুস্তাদরিকে হাকিম”-এর মধ্যে হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “সর্ব প্রকার খেলা বাতিল তিনটি ব্যতীত- (১) তীর ধনুক চালনা করা, (২) অশ্বকে (ঘোড়া) প্রশিক্ষণ দান করা, (৩) নিজ স্ত্রীর সাথে শরীয়তসম্মত হাসি-খুশী করা।”     আরো উল্লেখ্য যে, আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাসাঈ শরীফ, ইবনে মাযাহ্ শরীফ ইত্যাদি হাদীস শরীফের কিতাবে হযরত ওকবা ইবনে আমের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে অনুরূপ হাদীস শরীফ বর্ণিত রয়েছে। তবে শব্দের কিছু তারতম্য রয়েছে।

হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে রিওয়ায়েত আছে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মু’মিন পুরুষের শ্রেষ্ঠ খেলা সাঁতার কাটা আর নারীর শ্রেষ্ঠ খেলা সুতা কাটা।”

ছহীহ্ মুসলিম শরীফ ও মুসনদে আহ্মদ শরীফে হযরত সালমান ইবনে আকওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দৌঁড় অনুশীলনে ইজাযত দিয়েছেন।     আর আবূ দাউদ শরীফে বর্ণিত আছে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোকনা পাহ্লোয়ানকে কুস্তিতে ধরাশায়ী করেছিলেন।

প্রকৃতপক্ষে হাদীস শরীফে তথা শরীয়তে যেসব খেলার অনুমোদন রয়েছে, তা ব্যতীত যত প্রকার খেলা রয়েছে, তার প্রত্যেকটির মধ্যেই, না কোন দ্বীনী ফায়দা রয়েছে এবং না কোন দুনিয়াবী ফায়দা রয়েছে। বরং প্রতিটি খেলা তিনটি অবস্থার কোন এক অবস্থা থেকে খালি নয়। হয় তা কুফরী হবে অথবা হারাম হবে, আর না হয় তা মাকরূহ্ হবে।

যে খেলা বিধর্মীদের সাথে তাশাব্বুহ্ বা সাদৃশ্য রাখে অথবা দ্বীন ইসলাম থেকে সরিয়ে দেয়, তা সম্পূর্ণ কুফরী।

হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে,

من تشبه بقوم فهو منهم.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।”  (আহ্মদ, আবূ দাউদ, মিশকাত)           যে খেলা ইসলামী আক্বীদা থেকে সরিয়ে নেয়না কিন্তু হারাম ও গুণাহ্র কাজে লিপ্ত করে দেয়, তা কুফরী নয়, তবে কবীরা গুণাহ্র কারণ।              আল্লাহ্ পাক তাঁর কালামে পাকে ইরশাদ করেন,

نعاونوا على البر والتقوى ولا تعاونوا على الاثم والعدوان.

অর্থঃ- “তোমরা পরস্পর পরস্পরকে নেক কাজ ও পরহেযগারীর মধ্যে সাহায্য কর, পাপ ও শত্রুতার মধ্যে সাহায্য করনা।” (সূরা মায়িদা/২)

আর যে সমস্ত খেলা কুফরী ও হারাম কোনটিই নয় কিন্তু প্রকাশ্যে তা পাপ বলেও মনে হয়না, মানুষ সাধারণভাবে সে সমস্ত খেলাকে জায়িয মনে করে থাকে, প্রকৃতপক্ষে তাও পাপেরই অন্তর্ভুক্ত। এতে যেমন ইবাদত-বন্দিগীর ব্যাঘাত ঘটে এবং স্বাস্থ্য, সময় ও টাকা-পয়সার অপচয় হয়, তদ্রুপ পরস্পরের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষও পয়দা হয়।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,

ان المبذرين كانوا اخوان الشيطين.

অর্থঃ-“নিশ্চয়ই (সর্বপ্রকার) অপচয়কারী শয়তানের ভাই।” (সূরা বণী ইসরাঈল/২৭)

আর হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে,

من حسن اسلام المرء تركه مالايعنيه.

অর্থঃ- “কোন ব্যক্তির জন্য দ্বীনের সৌন্দর্য হলো অহেতুক বা অপ্রয়োজনীয় কাজ-কর্ম থেকে বিরত থাকা।”

উল্লেখ্য যে, শরীয়তের ফতওয়া হচ্ছে- যে কাজ হারাম ও কুফরী, তাকে হালাল মনে করা কুফরী। অর্থাৎ যে হালাল মনে করবে, সে কাফির হয়ে যাবে।

আর যে কাজ হারাম ও কুফরী নয় কিন্তু পাপের কারণ, আর সে পাপকে হালকা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য মনে করে অর্থাৎ এ ধরণের পাপ করলে কিছু হয়না ইত্যাদি মনে করে করাটাও কুফরী।          হাদীস শরীফ বা শরীয়তে যে সমস্ত খেলাকে জায়িয বলা হয়েছে বা অনুমোদন করা হয়েছে, সে সমস্ত খেলায় যেমন দ্বীনী ফায়দা রয়েছে, তেমনি দুনিয়াবী ফায়দাও নিহিত রয়েছে। যেমন- তীর চালনা করা, অশ্বকে প্রশিক্ষণ দেয়া, সাঁতার কাঁটা, দৌঁড় অনুশীলন ইত্যাদি জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণের অন্তর্ভুক্ত এবং স্বাস্থ্যকে সুঠাম ও বলিষ্ঠ রাখার কারণ।     হাদীস শরীফে উল্লেখ রয়েছে,

العلم علمان علم الاديان وعلم الابدان.

অর্থঃ- “ইল্ম হচ্ছে- দু’প্রকার। একটি হচ্ছে- দ্বীন সংক্রান্ত আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে- স্বাস্থ্য সংক্রান্ত।” অর্থাৎ দ্বীনী ইল্ম জরুরত আন্দাজ অর্জন করা যেরূপ ফরযের অন্তর্ভুক্ত। তদ্রুপ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ইল্ম জরুরত আন্দাজ শিক্ষা করাও ফরয।         হাদীস শরীফে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

اغتنم خمسا شيابك قبل هر مك فراغك قبل شغلك غنا ئك قبل فقرك صحتك قبل سقمك حياتك قبل موتك.

অর্থঃ- “পাঁচটি জিনিসকে গণীমত মনে করো- (১) বৃদ্ধ হওয়ার পূর্বে যৌবনকালকে, (২) ব্যস্ততার পূর্বে অবসর সময়কে, (৩) অভাবের পূর্বে স্বচ্ছলতাকে, (৪) অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতাকে এবং (৫) মৃত্যুর পূর্বে হায়াতকে।

উল্লেখ্য, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যই তার স্বাস্থ্য ও সুস্থতা নিয়ামত ও গণিমত স্বরূপ যা রক্ষা করা প্রত্যেকেরই দায়িত্ব ও কর্তব্য। অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যই তার যৌবন, অবসর সময়, স্বচ্ছলতা, সুস্থতা ও হায়াত এক বিশেষ নিয়ামত ও গণিমতস্বরূপ, যা শরীয়ত সম্মত পদ্ধতিতে যথাযথভাবে ব্যবহার করা ও রক্ষা করা প্রত্যেকেরই দায়িত্ব ও কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত।         তীর-ধনুক চালনা করা এবং অশ্বকে  প্রশিক্ষণ দান করার মাধ্যমে মু’মিন বা মুসলমান নিজেকে নিজে জিহাদের জন্য যোগ্য বা উপযুক্ত করে গড়ে তোলে। কারণ প্রত্যেক মুসলমানই ইসলামী খিলাফতের একজন শক্তিশালী সৈনিক বা মুজাহিদ।            আর সুতা কাটা মেয়েদের সাংসারিক কাজের অন্তর্ভুক্ত যা দ্বারা তাদের সংসারের আর্থিক স্বচ্ছলতাও আসে।          হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে,

طلب كسب الحلال فريضة بعد الفريضة.

অর্থঃ- “হালাল কামাই করা অন্যান্য ফরযের পরে ফরয।”      আবার স্ত্রীর সাথে শরীয়ত সম্মত হাসি-খুশী করা, বংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যকে পূর্ণতা দান করে ও উভয়ের দ্বীন ও ঈমান হিফাযতের ও সুস্থতার কারণ হয়।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,

هن لباس لكم وانتم لباس لهن.

অর্থঃ- “তারা (স্ত্রীরা) তোমাদের আবরণ এবং তোমরাও তাদের আবরণ।” (সূরা বাক্বারা/১৮৭)

অর্থাৎ তোমরা পরস্পর পরস্পরের ইজ্জত-আবরু তথা দ্বীন, ঈমান হিফাযতের কারণ।

খেলা কাকে বলে ও কত প্রকার?        

খেলা কাকে বলে- এর জবাবে বলতে হয়, কুরআন শরীফ ও হাদীস  শরীফে বর্ণিত لعب (লায়িব) শব্দটি যদিও আম বা সাধারণ অর্থে খেলা হিসেবে ব্যবহৃত হয় কিন্তু হাক্বীক্বী বা প্রকৃত অর্থে তা হলো- (১) খুশী করা, স্বাদ গ্রহণ করা তথা এমন আনন্দ করা যা শরীয়তে অনুমোদিত। (২) ক্রীড়া করা, তামাশা করা, কৌতুক ইত্যাদি করা যা শরীয়তে অনুমোদিত নয়। অর্থাৎ উপরোক্ত অর্থগত দিক থেকে খেলা দু’প্রকার।

উল্লেখ্য, আরবী ‘লায়িব’ ও বাংলায় খেলা শব্দটি যখন শরীয়ত সম্মত বা শরীয়ত অনুমোদিত বিষয় সম্পর্কে ব্যবহৃত হবে তখন তার অর্থ খুশী করা, স্বাদ গ্রহণ করা, নির্দোষ আনন্দ করা ইত্যাদি অর্থে আসবে।

আর উক্ত শব্দদ্বয় যখন শরীয়তের খিলাফ কোন বিষয় সম্পর্কে ব্যবহৃত হবে তখন তা ক্রীড়া করা, তামাশা করা, কৌতুক করা, হাসি-ঠাট্টা করা ইত্যাদি অর্থে আসবে।

শরীয়তে কোন হারামকে র্শত দিয়ে  হালাল করা জায়িয আছে কিনা?   

এর জবাবে বলতে হয়, শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন হারামকে শর্ত দিয়ে হালাল করার অর্থ হচ্ছে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নিষেধের বিরোধীতা করে নিজস্ব মতকে প্রতিষ্ঠিত করা। যা সুস্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।    যারা কোন ওজর ব্যতীত হারাম কাজ করে তারা দু’শ্রেণীতে বিভক্ত। প্রথম শ্রেণী হচ্ছে, ‘যারা হারামকে হারাম জেনে করে তারা চরম ফাসিকের অন্তর্ভুক্ত।’ দ্বিতীয় শ্রেণী হচ্ছে, ‘যারা হারামকে হালাল জেনে করে তারা কাট্টা কাফিরের অন্তর্ভুক্ত।’

এখন কেউ বলতে পারে যে, শরীয়তে মৃত গরু, ছাগল, বকরী, ভেড়া ইত্যাদি খাওয়া নাজায়িয। কিন্ত যদি কেউ তিনদিন না খেয়ে থাকে তাহলে তার জন্য জরুরত আন্দাজ উল্লিখিত মৃত প্রাণীর গোশ্ত খাওয়া মুবাহ্। তাহলে কি এখানে এ ফতওয়ার দ্বারা হারামকে হালাল বলে সাব্যস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে? কেননা এখানেও শর্ত দিয়ে মৃত প্রাণীর গোশ্ত খাওয়াকে মুবাহ্ বলা হয়েছে।   এর জবাবে বলতে হয় যে, প্রাণ বা জান রক্ষা করা হচ্ছে ফরয। আর প্রাণ রক্ষা করার জন্য খাদ্য গ্রহণ করা বা খাওয়াও ফরয। সুতরাং প্রাণ রক্ষা করার জন্য যদি কেউ হালাল খাদ্যের ব্যবস্থা করতে না পারে এমতাবস্থায় তিনদিন অতীত হয়ে যায় অর্থাৎ তিনদিন অনাহারে কেটে যায় অথচ ফরয পরিমাণ খাদ্য সে সংগ্রহ করতে পারলনা, তখন সে মাজুর হয়ে যায় এবং তখনই তার জন্য অর্থাৎ এই মাজুরের জন্য হারাম মুবাহ্ হয়ে যায়। শরীয়তের দৃষ্টিতে মাজুর ঐ ব্যক্তি যাকে কোন ফরয-ওয়াজিব পালন করার পূর্ব শর্ত হিসেবে শরীয়তের খিলাফ কোন কাজ অনিচ্ছাসত্ত্বেও করতে হয়।

            আর ফুটবল-ক্রিকেট এ সমস্ত খেলাধুলা কারো জন্য ফরয-ওয়াজিব নয় এবং এ সমস্ত খেলাধুলার জন্য কোন ব্যক্তি কখনই মাজুরও হয় না।

কাজেই কোন ব্যক্তি যদি কোন বিষয় মাজুর না হয় তাহলে তার জন্য শর্ত-শারায়েতের কি প্রয়োজন থাকতে পারে? যেহেতু হাদীস শরীফে এ সমস্ত খেলাধুলাকে সরাসরি হারাম বলে ফতওয়া দেয়া হয়েছে। তবে অবশ্যই যারা ফক্বীহ্ তারা এ সমস্ত হাদীস শরীফ-এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে খেলাধুলা কেন হারাম বলা হয়েছে তার কিছু কারণ প্রত্যেকেই তার আক্বল অনুযায়ী উল্লেখ করেছেন। সেজন্য এর অর্থ এটা নয় যে, এ সমস্ত কারণগুলো দূরীভূত হলেই উক্ত খেলাধুলা জায়িয হয়ে যাবে।         কারণ ইমাম-মুজতাহিদ বা ফক্বীহগণ যে সমস্ত কারণ উল্লেখ করেছেন,  সে সমস্ত কারণ ছাড়াও আরো শত-সহস্র কারণ রয়েছে খেলা হারাম হওয়ার পিছনে।

যেমন আল্লাহ্ পাক বলেন,

وما اوتيتم من العلم الاقليلا.

অর্থঃ-“তোমাদেরকে অল্প জ্ঞান ব্যতীত দেয়া হয়নি।” (সূরা বণী ইসরাঈল/৮৫)

অর্থাৎ মানুষকে যেহেতু অল্প ইল্ম দেয়া হয়েছে সেহেতু মানুষ যে কারণ বর্ণনা করবে তা অবশ্যই অল্প হবে।

আর আল্লাহ্ পাক-এর ইল্ম যেহেতু অসীম সেহেতু আল্লাহ্ পাক-এর সমস্ত কারণ জানা রয়েছে। তাই আল্লাহ্ পাক এবং তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেলা হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এরপর আর কারো সাধ্য নেই, খেলাকে হালাল কিংবা জায়িয বলে ঘোষণা দেয়।

যেহেতু উক্ত খেলাধুলা হাদীস শরীফে হারাম ফতওয়া দেয়া হয়েছে তাই তা বিনা শর্ত শারায়েতেই হারাম। কারণ হাদীস শরীফে মুবাহ্ হওয়ার জন্য কোন শর্ত-শারায়েত উল্লেখ করা হয়নি।  অতএব, হাদীস শরীফে যে সকল খেলাকে জায়িয বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তা ব্যতীত অন্য কোন খেলা কস্মিনকালেও জায়িয, মুবাহ্ অথবা পছন্দনীয় হতে পারেনা।          কারণ উপরোল্লিখিত সমস্ত প্রকার খেলাই বিধর্মী, বিজাতী ও বেদ্বীনদের দ্বারা প্রবর্তিত। এছাড়া বর্তমানে সমস্ত প্রকার খেলাই আন্তর্জাতিক বা জাতীয় অথবা সামাজিক বা ব্যক্তিগত পর্যায় বা উদ্যোগেই হোক না কেন তা অবশ্যই বিধর্মীদের নির্ধারিত নিয়মাবলীর মাধ্যমেই হয়ে থাকে। যদিও স্থান ও ক্ষেত্রবিশেষে কিছু নিয়ম পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হয়ে থাকে।

যারা উল্লিখিত খেলাসমূহকে ব্যায়াম হিসেবে উল্লেখ করতে চায়, তাদের সম্পর্কে হাফিজে হাদীস, বাহ্রুল উলুম, ফখরুল ফুক্বাহা, রঈসুল মুহাদ্দিসীন, তাজুল মুফাস্সিরীন, মুফ্তীয়ে আ’যম, মুবাহিছে আ’যম, পীরে কামিলে মুকাম্মিল, শাহ্ ছূফী, হযরত মাওলানা মুহম্মদ রুহুল আমীন বশীরহাটি রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “জায়িয কাজ দ্বারা যখন ব্যায়াম করার উপায় আছে, তখন নাজায়িয কাজের দ্বারা কিরূপে জায়িয হবে? খেলার প্রতিযোগিতা করলে কি ফল হবে? কিন্তু লাঠি, তীর ছোড়া, তরবারী ভাঁজা, ঘোড়-দৌঁড় ইত্যাদিতে শত্রুদের হস্ত হতে কতকটা নিষ্কৃতি লাভের উপায় হতে পারে। পক্ষান্তরে খেলাতে এই প্রকার কোন লাভ হতে পারে না। বরং ওটা খাঁটি খেলবাজি ভিন্ন আর কিছুই নয়। কাজেই ওটা কিছুতেই জায়িয হতে পারে না। কেবল দুনিয়াদার স্বার্থপর আলিম দু’একজন ওটা জায়িয হওয়ার ফতওয়া দিয়েছেন। তাদের ফতওয়া কিছুতেই গ্রহণীয় হতে পারে না।” (ফতওয়ায়ে আমীনিয়া)              অতএব, ফুটবল, ক্রিকেট ইত্যাদি প্রত্যেক প্রকার খেলাই নাজায়িয ও হারাম। আর হারামকে শর্ত দিয়ে হালাল করার অর্থই হচ্ছে কুফরী করা।  যারা কুফরী করে তারা কাফির হয়ে যায়। আর হারামকে হালাল এবং হালালকে হারাম করা এটা মূলতঃ কাফিরদের স্বভাব।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,

فيحلوا ما حرم الله.

অর্থঃ- “তারা (কাফিররা) হালাল করে আল্লাহ্ পাক যা হারাম করেছেন।” (সূরা তওবা/৩৭)         আল্লাহ্ পাক আরো ইরশাদ করেন,

لاتحرموا طيبت ما احل الله لكم.

অর্থঃ- “তোমরা সে সমস্ত পবিত্র জিনিসসমূহকে হারাম করোনা যা আল্লাহ্ পাক তোমাদের জন্য হালাল করে দিয়েছেন।”  (সূরা মায়িদা/৮৭)

হাদীস শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

ان الحلال بين وان الحرام بين وبينهما امور مشتبهات لايعلمهن كثير من الناس فمن اتقى الشبهات فقد استيرأ لدينه وعرضه ومن وقع فى الشبهات وقح فى الحرام.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই হালাল স্পষ্ট  এবং নিশ্চয়ই হারামও স্পষ্ট এবং এতদুভয়ের মাঝে সন্দেহযুক্ত অনেক বিষয় রয়েছে সে সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষের ইল্ম নেই। অতএব, যে ব্যক্তি সন্দেহপূর্ণ বিষয়গুলো পরহিয করলো সে তার দ্বীন ও সম্মান হিফাযত করলো। আর যে ব্যক্তি সন্দেহপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে জড়িয়ে পড়লো সে হারামের মধ্যেই পতিত হলো।” (বুখারী)

            হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত হয়েছে,

ان محرم الحلال كمحلل الحرام.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই হালালকে হারামকারী, হারামকে হালালকারীর মত।” (শিহাব)

অতএব, কুরআন-সুন্নাহ্র দলীলভিত্তিক উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা খেলা সম্পর্কিত রাহমানী পয়গামের উল্লিখিত জিজ্ঞাসার জবাব কুরআন-সুন্নাহ্র সম্পূর্ণ খিলাফ ও কুফরী বলে প্রমাণিত হলো। (এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৪৫, ৭১ ও ১০২তম সংখ্যা পাঠ করুন।)           {দলীলসমূহঃ (১) তাফসীরে আহ্কামুল কুরআন, (২) কুরতুবী, (৩)  মাযহারী, (৪) তাবারী, (৫) দুররে মানসুর, (৬) কবিরী, (৭) মাআরিফুল কুরআন, (৮) মুসতাদরিকে হাকিম, (৯) আবু দাউদ, (১০) তিরমিযী, (১১) নাসাঈ, (১২) ইবনে মাযাহ, (১৩) মুসলিম, (১৪) মুসনাদে আহমদ, (১৫) কানযুল উম্মাল, (১৬) বাইহাক্বী, (১৭) নছবুর রায়াহ্, (১৮) ফতওয়ায়ে আমিনিয়া, (১৯) শরহে ফিক্বহ্ েআকবর, (২০) শরহে আক্বায়িদে নছফী, (২১) আক্বায়িদে হাক্কা, (২২) তাকমিলুল ঈমান, (২৩) দুররুল মুখতার, (২৪) খানিয়াহ্, (২৫) কাজী খান, (২৬) বাহরুর রায়িক, (২৭) আলমগীরী, (২৮) জামিউল ফুছুলিন, (২৯) আল বায্যাযিয়া, (৩০) হিদায়া, (৩১) বেনায়া, (৩২) আন কারোবিয়া, (৩৩) আল ফিক্বহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, (৩৪) কামূছ আল মুহীত, (৩৫) ওয়াসীত, (৩৬) জাদীদ, (৩৭) লিসানুল আরব, (৩৮) মুনজিদ আরবী, (৩৯) মুনজিদ উর্দূ, (৪০) মিছবাহুল লুগাত, (৪১) লুগাতে হীরা, (৪২) গিয়াছুল লুগাত, (৪৩) লুগাতে সাঈদী, (৪৪) বয়ানুল লিসান, (৪৫) আল কামূসুদ্ দরসী, (৪৬) মিছবাহুল  মুনীর, (৪৭) নিহায়া, (৪৮) আল মু’জামুল ওয়াজীয, (৪৯) মু’জামু মাক্বায়ীসুল লুগাত, (৫০) মাগরিব, (৫১) আল মু’জামুল বুলদান, (৫২) আল মুহীত ফিল লুগাত, (৫৩) আল মানার, (৫৪) লুগাতে কিশওয়ারী, (৫৫) তাজুল আরুস, (৫৬) ইফরাতুল মাওয়ারীদ, (৫৭) ফরহাঙ্গে রব্বানী, (৫৮) করীমুল লুগাত, (৫৯) আরবী ও বাংলা অভিধান, (৬০) আর রইদ, (৬১) ক্বামুসুল কুরআন, (৬২) ফিরুজুল লুগাত, (৬৩) ফরহাঙ্গে আমেরা, (৬৪) আল ক্বামুসুল জাদীদ, (৬৫) বাংলা একাডেমী সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান, (৬৬) সরল বাঙ্গালা অভিধান, (৬৭) আধুনিক বাংলা অভিধান, (৬৮) সংসদ বাঙ্গালা অভিধান, (৬৯) বাংলা ভাষার অভিধান ইত্যাদি। }

 মাওলানা মুহম্মদ আবূ সাঈদ সরদার নাগরগোলা, নওগাঁ  সুওয়ালঃ মাসিক মদীনা জানুয়ারী/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত ৩৭নং প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-            প্রশ্নঃ আমার ঘরে পড়ার অনেক বই রয়েছে। সেগুলোতে ছবি রয়েছে। এমতাবস্থায় সে ঘরে নামায পড়া যাবে কিনা?

উত্তরঃ বই-পুস্তক, খবরের কাগজ এমন কি টাকা-পয়সার নোটেও এখন ছবির ছড়াছড়ি। ইচ্ছা করলেও এ যুগে ছবির কবল থেকে বেঁচে থাকা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয়না। নামাযের সময় সামনে বা এমন জায়গায় যা সরাসরি চোখে পড়ে, ছবি থাকলে নামায হবে না। তবে নামাযীর চোখে পড়ে না এমন স্থানে ঘরের ভিতরেও ছবি থাকলে নামাযের কোন ক্ষতি হবেনা।      এবং মাসিক মদীনা জুন/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত ১৯নং প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-            প্রশ্নঃ একটি কোম্পানীতে কর্মরত লোকদের নামায পড়ার জন্য যে স্থান রাখা হয়েছে, উক্ত জায়গায় কোম্পানী কিছু মালও রাখে। ঐ মালের প্যাকেটে হাঁস এর ছবি আছে। এমতাবস্থায় ঐ জায়গায় জামাতের সাথে নামায পড়া ঠিক হবে কিনা?

উত্তরঃ জীবের ছবি যদি স্পষ্ট এবং বড় হয় আর সেটা নামাযী ব্যক্তির একেবারে মুখ বরাবর স্থাপিত হয় তবে নামায হবে না। যদি নামাযীর দৃষ্টির আঁড়ালে থাকে, নামাযরত অবস্থায় নামাযীর চোখে পড়ার সম্ভাবনা না থাকে তাহলে নামাযের ক্ষতি হবে না।             এখন আমার সুওয়াল হলো- ছবি সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি ঘরের ভিতরে নামাযীর চোখে পড়ে না এমন স্থানে ছবি থাকলে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না। দলীলসহ সঠিক জাওয়াব জানিয়ে বাধিত করবেন। জাওয়াবঃ ঘরের ভিতরে নামাযরত অবস্থায় নামাযীর চোখে পড়ে না এমন স্থানে ছবি থাকা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি, বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে।     কারণ ছবিযুক্ত স্থানে নামায পড়লে নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে। চাই উক্ত ছবি নামাযীর সামনে-পিছনে, ডানে-বামে, উপরে-নিচে, দৃষ্টির সামনে, দৃষ্টির আঁড়ালে অথবা চোখে পড়ুক বা না পড়ুক সকল অবস্থাতেই নামায মাকরূহ্ তাহরীমী হবে।

যেমন, “হিদায়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৪২/১৪৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ويكره ان يكون فوق رأسه فى السقف او بين يديه او بحذائه تصاوير او صورة معلقة …….. واشدها كراهة أن تكون امام المصلى ثم من فوق رأسه ثم على يميته ثم على شماله ثم خلفه.

অর্থঃ- “নামায মাকরূহ তাহ্রীমী হবে যদি নামাযীর মাথার উপর, ছাদের মধ্যে অথবা সামনে অথবা জুতার মধ্যে অথবা ঝুলন্ত অবস্থায় প্রাণীর ছবি অথবা মূর্তি থাকে। … এবং নামায শক্ত মাকরূহ তাহ্রীমী হবে যদি প্রাণীর ছবি নামাযীর সামনে বা মাথার উপরে বা ডানে বা বাঁয়ে বা নামাযীর পিছনে থাকে।” “বাহরুর রায়িক” কিতাবের ২য় খন্ডের ২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

واشدها كراهة مايكون عى القبلة امام المصلى …. فوق رأسه .. عن يمينه ويساره و ……… خلفه.

অর্থঃ-  “এবং নামায শক্ত মাকরূহ্ তাহরীমী হবে যদি প্রাণীর ছবি ক্বিবলার দিকে, নামাযীর সামনে …. মাথার উপরে ….. ডানে-বামে এবং নামাযীর পিছনে থাকে।”          “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খন্ডের ১০৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وأشد هاكراهة أن تكون أمام المصلى ثم فوق رأسه ثم يميته ثم يسار ثم خلفه.

অর্থঃ- “এবং নামায শক্ত মাকরূহ্ তাহরীমী হবে যদি প্রাণীর ছবি নামাযীর সামনে বা মাথার উপরে বা ডানে বা বাঁয়ে বা নামাযীর পিছনে থাকে।”   “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ২য় খন্ডের ৬৪৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

واشد هاكراهة مايكون على القيلة أمام المصلى ثم ما يكون فغوق رأسه ثم ما يكون عن يمينه ويساره على الحائط ثم ما يكون خلفه عى الحائط او الستر

অর্থঃ- “এবং নামায শক্ত মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে যদি প্রাণীর ছবি ক্বিবলার দিকে নামাযীর সামনে বা মাথার উপর বা নামাযীর ডানে-বামে, দেয়ালের উপর অথবা নামাযীর পিছনে পর্দা বা দেয়ালের উপর থাকে।”             “কিতাবুল ফিক্বহ্ েআলাল মাযাহিবিল আরবায়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ২৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

واشدها كراهة ما كانت امامه ثم فوقه ثم يمينه ثم يساره ثم خلفه.

অর্থঃ- “এবং নামায শক্ত মাকরূহ্ তাহরীমী হবে প্রাণীর ছবি নামাযীর সামনে বা উপরে বা ডানে বা বায়ে বা নামাযীর পিছনে থাকলে।”           “ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৭১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اور سب سے زیادہ مکرہ یہ ہی کہ وہ تصویریں نمازی کے سامںے ہوں پھر اسکے بعد یہ کہ اسکے سرپر ہوں پھر اسکے بعد یہ  کہ داہنی  طرف ہوں پھر اسکے بعد  ہہ کہ بأ~یں طرف ہوں پھر اسکے بعد یہ کہ اسکے پیچھے ہوں.

অর্থঃ- “এবং সবচেয়ে বেশী মাকরূহ্ হবে যদি প্রাণীর ছবি নামাযীর সামনে বা মাথার উপর বা নামাযীর ডানে-বামে বা নামাযীর পিছনে থাকে।”

“খুলাছাতুল ফতওয়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ৫৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ويكره ان يصلى وفوق راسه فى السقف اوبحذائه تصاوير اوبين يديه معلقة او فى البيت ……… فالكراهة اشد وان كانت عن يمينه او عن يساره دون ذلك وكذا فى السقف وفى موخر القبلة.

অর্থঃ- “নামায মাকরূহ্ হবে যদি নামাযীর মাথার উপর ছাদে অথবা জুতার মধ্যে, সামনে ঝুলন্ত অবস্থায় অথবা ঘরের ভিতরে প্রাণীর ছবি থাকে …. অতঃপর নামায শক্ত মাকরূহ্ তাহরীমী হবে যদি প্রাণীর ছবি নামাযীর ডানে-বামে, নিচে-উপরে, ছাদে, ক্বিবলার পিছনে থাকে।”

কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,

جس کپرے پر جاندار کی تصویر ھو اسے پھن کر  نماز پرھنا مکڑوہ تحریمی ھے نماز کے علاوہ بھی  ایسا کپرا پھننا ناجائز ھے. اور تصویر مصلی کے سر پر یعنی چھت میں ھو یا معلق ھو  یا محل سجود میں ھو تو نماز مکروہ تحریمی ھو گی اور مصلی کے اگے یا داھنے یا بائیں تصویرکا  ھونا مکروہ تحریمی ھے اور پس پشت ھونا بھی  مکروہ ھے.

অর্থঃ- “প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড় পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী। নামাযের বাইরেও উক্ত কাপড় পরিধান করা নাজায়িয। এবং প্রাণীর ছবি নামাযীর মাথার উপর ছাদের মধ্যে অথবা ঝুলন্ত অবস্থায় অথবা সিজদার স্থানে থাকলে নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে। এবং নামাযীর সামনে, ডানে, বাঁয়ে এবং পিছনে প্রাণীর ছবি থাকলেও নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে।”         (ফতওয়ায়ে আব্দুল হাই, নূরুল হিদায়া, সুন্নী বেহেস্তী জেওর, আহ্সানুল মাসায়িল, রুকনুদ্দীন, আইনুল হিদায়া, ইলমুল ফিক্বাহ্, বাহারে শরীয়ত, ফতওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ, আশ্রাফী বেহেস্তী জেওর, তরীকুল ইসলাম, নুরুল ইজাহ্, গায়াতুল আওতার ইত্যাদি।)             উপরোক্ত বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হলো, নামাযীর পিছনে দৃষ্টির আঁড়ালে ঘরের ভিতরেও ছবি থাকলে নামায মাকরূহ তাহ্রীমী হবে। শুধু তাই নয় ছবিযুক্তস্থানে নামায পড়লে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে এবং উক্ত নামায দোহ্রানো ওয়াজিব।

যেমন, “আহসানুল ফতওয়ার” ৩য় খন্ডের ৪২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

تصویر والے مقام میں تمازپڑھنا مکروہ تحر  یمی ھے اور اسکا اعادہ واجب ھے.

 অর্থঃ- “প্রাণীর ছবিযুক্ত স্থানে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী এবং উক্ত নামায দোহ্রানো ওয়াজিব। কেননা নামাযের মধ্যে মাকরূহ্ তাহ্রীমী হলে নামায দোহ্রানো ওয়াজিব, আর মাকরূহ তান্যীহ্ হলে নামায দোহ্রানো মুস্তাহাব।”   যেমন, “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খন্ডের ১০৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

فان كانت تلك الكراهة كراهة تحريم تجب الاعادة او تنزيه تستحب.

অর্থঃ- “যদি নামায মাকরূহ্ তাহরীমী হয় তাহলে নামায পুনরায় আদায় করা ওয়াজিব। আর যদি নামায মাকরূহ্ তানযীহ্ হয়, তাহলে নামায পুনরায় আদায় করা মুস্তাহাব।           অতএব, উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণিত হলো, নামাযীর  ডানে, বামে, সামনে, পিছনে, উপরে, নিচে, দৃষ্টির আঁড়ালে, ঘরের ভিতরেও ছবি থাকলে নামায মাকরূহ তাহ্রীমী হবে এবং উক্ত নামায দোহ্রিয়ে পড়া ওয়াজিব হবে।

সুতরাং ‘নামাযীর চোখে পড়েনা এমন স্থানে ঘরের ভিতরেও ছবি থাকলে নামাযের কোন ক্ষতি হবেনা।’ মাসিক মদীনার এ বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে ভুল, বিভ্রান্তিকর  শরীয়তের খিলাফ বলে প্রমাণিত হলো।

{বিঃ দ্রঃ- “নামাযীর দৃষ্টির আঁড়ালে অথবা ডানে-বায়ে, সামনে-পিছনে, উপরে-নিচে ছবি থাকলে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে” এ সম্পর্কে আরো জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ২, ৭, ১০৫তম সংখ্যা এবং বিশেষ করে ১৫ ও ৯৯তম সংখ্যা পাঠ করুন সেখানে মাসিক রাহমানী পয়গাম এবং মাসিক মদীনার বক্তব্য খন্ডন করা হয়েছে। এবার দ্বিতীয়বারের মত মাসিক মদীনার ভুল বক্তব্য খন্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হলো।}

{দলীলসমূহ ঃ (১) হিদায়া, (২) বাহরুর রায়িক্ব, (৩) আলমগীরী, (৪) কাফী, (৫) মাবছূত লিস সুরুখ্সী, (৬) ফতহুল ক্বাদীর, (৭) কিতাবুল ফিক্বাহ্ আলাল মাযাহিবিল আরবায়া, (৮)  আইনী শরহে হিদায়া, (৯) শরহে বিকায়া, (১০) শরহুন্ নিকায়া, (১১) মারাক্বিউল ফালাহ্ (১২) আল্ জামিউছ্ ছগীর, (১৩) নূরুল হিদায়া, (১৪) ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, (১৫) গায়াতুল আওতার, (১৬) হাশিয়ায়ে তাহতাবী, (১৭) নুরুল ইজাহ্, (১৮)  মালাবুদ্দা মিনহু, (১৯)  ফতওয়ায়ে আব্দুল হাই, (২০) আইনুল হিদায়া, (২১) তরীক্বুল ইসলাম,  (২২) সুন্নী বেহেশ্তী জেওর, (২৩) ইল্মুল ফিক্বাহ্, (২৪) বাহ্রে শরীয়ত, (২৫) আহ্সানুল মাসায়িল, (২৬) রুকনুদ্দীন, (২৭) ফতওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ, (২৮) আশ্রাফী বেহেশ্তী জেওর, (২৯) আহ্সানুল ফতওয়া ইত্যাদি।}

 মুহম্মদ মেজবাহ্ উদ্দীন (সুমন) সভাপতি- ছাত্র আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত,  চট্টগ্রাম মহানগরী শাখা।

সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত পত্রিকা মাসিক মুঈনুল ইসলাম জুন/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা সমাধান বিভাগে উমরী ক্বাযা নামায সম্পর্কে নিম্নোক্ত জিজ্ঞাসা সমাধান ছাপা হয়।

জিজ্ঞাসাঃ  উমরী ক্বাযা নামাযে ইক্বামত দিতে হয় কি-না এবং মসজিদে পড়লে তবুও কি ইক্বামত দিতে হবে? উমরী ক্বাযা নামাযের বাংলা নিয়্যাত জানালে উপকৃত হব।             সমাধানঃ মূলতঃ শরীয়তে উমরী ক্বাযা নামে কোন নামায নেই। তবে ক্বাযা নামে নামায হতে পারে। এই ক্বাযা নামাযের জন্য ইক্বামত দেওয়া ওয়াজিব নয়, বরং ইক্বামত দেওয়া সুন্নাত। সুতরাং কয়েক ওয়াক্তের ক্বাযা নামায যদি একত্রে পড়া হয়, তাহলে একবার ইক্বামত দিয়ে দিলে সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। অতীত জীবনের অনির্দিষ্ট ক্বাযা নামাযের বাংলা নিয়্যাত- আমার জীবনে ফজরের যত নামায ক্বাযা আছে তন্মধ্যে সর্বপ্রথমটি আদায় করছি অথবা সর্বশেষটি আদায় করছি। এভাবে যোহর, আসর, মাগরিব, ঈশা’র নামাযের নিয়্যাত করবে। (ফাত্ওয়ায়ে শামী-২/৭৬, ফাত্ওয়ায়ে মাহ্মূদিয়্যাহ্-২/১৬৬-৬৭, নাফউল মুফতী ওয়াস্ সায়েল ২৬৫-৬৬)।          এখন আমার সুওয়াল হলো- আপনারা মাসিক আল বাইয়্যিনাতে লিখেছেন উমরী ক্বাযা নামায শরীয়তে আছে। অথচ হাট হাজারীরা বলেছে “শরীয়তে উমরী ক্বাযা নামে কোন নামায নেই।” কোনটি গ্রহণ যোগ্য? আর সত্যিই কি শরীয়তে উমরী ক্বাযা নামে কোন নামায নেই? দলীলসহ বিস্তারিত জানিয়ে সন্দেহ দূর করবেন।

জাওয়াবঃ  “উমরী ক্বাযা” নামায শরীয়তে আছে এ সম্পর্কে মাসিক আল বাইয়্যিনাতে যা লিখা হয়েছে তাই সঠিক, গ্রহণযোগ্য ও দলীলভিত্তিক।     হাটহাজারী মৌলভীদের উমরী ক্বাযা সম্পর্কিত বক্তব্য ইতোপূর্বে বহুবার খন্ডন করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের উক্ত খন্ডনের জবাবে তারা কিছুই লিখতে পারেনি। এরপরও তারা বার বার উক্ত ভুলেরই পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে। যা তাদের জিহালত ও গোমরাহীর উপর দৃঢ় থাকারই প্রমাণ।             হাটহাজারী মৌলভীরা দাবী করে তারা নাকি ফিক্বাহ্ বিশেষজ্ঞ বা ফক্বীহ্। অথচ বিশ্ব বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য সকল ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবে উমরী ক্বাযার সংজ্ঞা,  তরীক্বা, নিয়ম-কানুন, হুকুম-আহ্কাম ইত্যাদি বর্ণিত থাকার পরও এবং মাসিক আল বাইয়্যিনাতে সে সকল কিতাবসমূহের পৃষ্ঠা ও খন্ড নাম্বারসহ ইবারতসমূহ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করার পরেও হাটহাজারীর উক্ত জাহিল মৌলভীরা “উমরী ক্বাযার” ইল্ম হাছিল থেকে নিজেদের মুখ পথভ্রষ্টদের ন্যায় ফিরিয়ে নিলো।

মূলতঃ সত্যিকার ফক্বীহ্ ব্যতীত কারো পক্ষেই ইল্মে ফিক্বাহ্র হাকীক্বত উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। আর সত্যিকার ফক্বীহ্ তো তিনিই, যিনি ইল্মে ফিক্বাহ্র সাথে সাথে ইল্মে তাছাউফেও পারদর্শী। অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ইমাম-মুজতাহিদগণের সাথে যাঁদের রূহানী সম্পর্ক রয়েছে। এ ধরণের ফক্বীহ্গণের সম্পর্কেই হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

فقيه واحد اشد على الشيطان من الف عابد.

অর্থাৎ- “একজন সত্যিকার ফক্বীহ্, শয়তানের নিকট এক হাজার আবেদ (জাহিরী মাওলানা)-এর চেয়েও ভয়ংকর।”          এ ধরণের ফক্বীহ্ সবার পক্ষেই হওয়া সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ্ পাক যাকে কবুল করেন তাকেই খাছ ফিক্বাহ্র ইল্ম দান করেন। তাই হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

من يرد الله به خيرا يفقهه فى الدين.

অর্থাৎ- “মহান আল্লাহ্ পাক যে ব্যক্তির ভালাই চান তাকেই শুধু দ্বীনের বুঝ তথা ফিক্বাহ্র জ্ঞান দান করেন।”          হাটহাজারীর জাহিল মুফতী, মৌলভীরা যেহেতু এ স্তরের ফক্বীহ্ নয় তাই তারা আজও পর্যন্ত “উমরী ক্বাযা” কি তা বুঝতে সক্ষম হয়নি।   যেমন, হাটহাজারীর জাহিল মৌলভীরা বলেছে, “শরীয়তে উমরী ক্বাযা নামে কোন নামায নেই।”           এর জবাবে বলতে হয় যে, হাটহাজারীর জাহিল মৌলভীদের এ বক্তব্যও ডাহা মিথ্যা, মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর, দলীলবিহীনতো অবশ্যই। আসলে শরীয়ত কাকে বলে এ জ্ঞানই তাদের নেই। কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের সমষ্টিই হচ্ছে শরীয়ত। উল্লিখিত চারটির যে কোন একটির মধ্যে থাকার অর্থই হলো, শরীয়তের মধ্যে থাকা। উমরী ক্বাযার কথা কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকলেও ইজমা-ক্বিয়াস তথা ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবে ঠিকই  উল্লেখ আছে। আর যেটা ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবে উল্লেখ আছে সেটা শরীয়তে উল্লেখ নেই বলা শরীয়ত সম্পর্কে চরম জিহালতির পরিচয় নয় কি?

ফিক্বাহ্র কিতাবসমূহে ক্বাযা  নামাযকে দু’ভাগ করা হয়েছে

প্রথমতঃ “ক্বাযায়ে আদা।” যে নামায ক্বাযা হওয়ার ব্যাপারে মুছল্লী সম্পূর্ণ নিশ্চিত। অর্থাৎ তার কত ওয়াক্ত নামায ক্বাযা হয়েছে তা তার নিশ্চিতরূপে জানা রয়েছে। এই প্রকার ক্বাযা আদায় করা অপরিহার্য।        দ্বিতীয়তঃ “ক্বাযায়ে উমরী বা অজ্ঞাত ক্বাযা।” যে নামায ক্বাযা হওয়ার ব্যাপারে মুছল্লীর সন্দেহ রয়েছে। অর্থাৎ ক্বাযা থাকতেও পারে নাও থাকতে পারে। এ সন্দেহের কারণে যে ক্বাযা নামায পড়া হয় তাকে উমরী ক্বাযা বলে। এ প্রকার ক্বাযা আদায় করা যদিও অপরিহার্য নয়। কিন্তু তাকওয়া বা সাবধানতার জন্যে ক্বাযায়ে উমরী আদায় করে নেয়াকে ফক্বীহ্গণ মুস্তাহ্সান বা উত্তম বলেছেন।       উল্লেখ্য, সন্দেহ হতে বাঁচার জন্য ইহ্তিয়াত বা তাকওয়া অবলম্বন করাকে হাদীস শরীফও সমর্থন করে।   যেমন, হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

فمن اتقى الشبهات استبرأ لدينه وعرضه.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি সন্দেহ হতে বাঁচলো সে তার দ্বীন ও সম্মানকে হিফাযত করলো।” (বুখারী, মুসলিম)      এ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় ফিক্বাহ্র কিতাবসমূহে উল্লেখ আছে,

لايمتع شرعية الاحتياط للتقوى.

অর্থঃ- “শরীয়তে তাক্বওয়ার জন্য ইহ্তিয়াত বা সাবধানতা অবলম্বন করতে নিষেধ নেই।” (কবীরী, ছগীরী, শামী)             “শামী” কিতাবে উল্লেখ আছে,

الاولى مو الاحتياط.

অর্থঃ- “ইহ্তিয়াত বা সাবধানতা অবলম্বন করাই হচ্ছে অধিক উত্তম।”   “ফতওয়া আলমগীরী” কিতাবের ১ম খন্ডের ১২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

والاحتياط واجب فى العبادات.

অর্থঃ- “ইবাদতে ইহ্তিয়াত বা সাবধানতা অবলম্বন করা ওয়াজিব।” আর এ কারণেই “উমরী ক্বাযা” সম্পর্কে আল্লামা শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “ফতওয়ায়ে শামী”-কিতাবের ৩য় খন্ডের ১৭ পৃষ্ঠায় চুড়ান্ত রায় পেশ করে বলেন,

ولذا قال بعضهم فيمن يقضى صلوات عمره مع انه لم يفته منها شيئ لا يكره لانه اخذ بالاحتياط.

অর্থঃ- “হাদীস শরীফের উপরোক্ত মর্ম অনুধাবন করে কোন কোন মুজতাহিদ ফতওয়া দেন যে, কারো নামায ক্বাযা না থাকার পরও সে যদি ইহ্তিয়াত বা সাবধানতাবশতঃ উমরী ক্বাযা আদায় করে তবে তা মাকরূহ হবে না। কেননা সে উমরী ক্বাযা ইহ্তিয়াত বা সাবধানতার জন্যে আদায় করেছে।”          স্মর্তব্য যে, ফক্বীহ্গণ ইহ্তিয়াত বা সাবধানতাবশতঃ “উমরী ক্বাযা” আদায় করা মাকরূহ বলেননি বরং জায়িয, মুস্তাহসান বা উত্তম বলে ফতওয়া দিয়েছেন।     নিম্নে উমরী ক্বাযা নামায সম্পর্কে বিখ্যাত ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাব থেকে দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করা হলো-             যেমন, হানাফী ফিক্বাহ্র বিখ্যাত কিতাব “বাহরুর রায়িক” কিতাবের ২য় খন্ডের ১৪৩ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

وفى الحديث المتفق عليه فمن اتقى الشبهات استبرا لدينه وعرصه ولذا قال بعضهم فيمن يقضى صلاة عمره مع انه لم يفته شيئ منها لايكره لانه اخذ بالاحتياط وذكر فى القنية انه أحسن اذا كان فيه اختلاف المجتهدين.

অর্থঃ- “মুত্তাফাকুন আলাইহি-এর হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, ‘যে ব্যক্তি সন্দেহ হতে বাঁচলো সে তার দ্বীন ও সম্মানকে হিফাযত করলো।’ বর্ণিত এ হাদীস শরীফের কারণে কোন কোন মুজতাহিদ ফতওয়া দেন যে, কারো নামায ক্বাযা না থাকার পরও সে যদি ইহ্তিয়াত বা সাবধানতাবশতঃ উমরী ক্বাযা আদায় করে তা মাকরূহ্ হবে না। কেননা, সে ইহ্তিয়াত বা সাবধানতার জন্যেই উমরী ক্বাযা আদায় করেছে।” আর কুনিয়া কিতাবে উল্লেখ আছে, উমরী ক্বাযা আদায় করাই মুস্তাহ্সান বা অতি উত্তম। যদিও মুজতাহিদগণ এ ব্যাপারে ইখতিলাফ করেছেন।”             “মিনহাতুল খালিক” কিতাবে উল্লেখ আছে,

وفى الديث المتفق عليه فمن اتقى الشبهات استيرا لدينه وعرضه ولذا قال بعضهم فيمن يقضى صلاة عمره مع انه لم يفته شيئ منها لايكره لانه اخذ بالا حتياط وذكر فى القنية انه أحسن اذا كان فيه اختلاف المجتهدين.

অর্থঃ- “মুত্তাফাকুন আলাইহি-এর হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি সন্দেহ হতে বাঁচলো সে তার দ্বীন ও সম্মানকে হিফাযত করলো। বর্ণিত এ হাদীস শরীফের কারণে কোন কোন মুজতাহিদ ফতওয়া দেন যে, কারো নামায ক্বাযা না থাকার পরও সে যদি ইহ্তিয়াত বা সাবধানতাবশতঃ উমরী ক্বাযা আদায় করে তা মাকরূহ্ হবে না। কেননা, সে ইহ্তিয়াত বা সাবধানতার জন্যেই উমরী ক্বাযা আদায় করেছে।” আর কুনিয়া কিতাবে উল্লেখ আছে, “উমরী ক্বাযা আদায় করাই মুস্তাহ্সান বা অতি উত্তম। যদিও মুজতাহিদগণ এ ব্যাপারে ইখতিলাফ করেছেন।”     “শামী” কিতাবে আরো বলা হয়েছে,

انه احسن ان كان فى صلاته خلاف المجتهدين.

অর্থ- “নিশ্চয়ই উমরী ক্বাযার নামায আদায় করা মুস্তাহাসান বা অতি উত্তম। যদিও মুজতাহিদগণের ইখতিলাফ রয়েছে।”              “বাহরুর রায়িক” কিতাবের ২য় খন্ডের ৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

رجل يقضى صلوات عمره مع انه لم يفته شيئ منها احتياطا قال بعضهم يكره وقال بعضهم لايكره انه أخذ بالاحتياط لكنه لايقضى بعد صلاة الفجر ولابعد صلاة العصر ويقرأ فى الركعات كلها الفاتحة مع السورة . انه يصلى المغرب أربعا بثلاث قعدات وكذا الوتر وذكر فى القنية قولين فيها وان الاعادة احسن اذا كان فيها اختلاف المجتهدين.

অর্থঃ- “কোন ব্যক্তি যদি ইহ্তিয়াত বা সাবধানতাবশতঃ তার উমরী ক্বাযার নামায আদায় করে অথচ তার জীবনে কোন নামায ক্বাযা হয়নি। এক্ষেত্রে কেউ কেউ বলেছেন, মাকরূহ্। আর কেউ কেউ বলেছেন, মাকরূহ্ হবেনা। কেননা, সে ইহ্তিয়াত বা সাবধানতার জন্যেই উমরী ক্বাযার নামায পড়েছে। তবে ফযর নামাযের পর এবং আছরের নামাযের পর উমরী ক্বাযার নামায আদায় করবে না; এবং উমরী ক্বাযার প্রতি রাকায়াতেই সূরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে। … আর উমরী ক্বাযার মাগরীব নামায তিন বৈঠকের সহিত চার রাকায়াত পড়তে হবে। অনুরূপ বিত্র নামাযও তিন বৈঠকে চার রাকায়াত পড়তে হবে। ‘কুনিয়া’ কিতাবে উমরী ক্বাযা সম্পর্কে দু’টি মত উল্লেখ আছে, একটি মতে নিশ্চয়ই উমরী ক্বাযার নামায পুনরায় পড়া মুস্তাহসান বা অতি উত্তম যদিও এ ব্যাপারে মুজতাহিদগণের ইখতিলাফ রয়েছে।”         “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খন্ডের ১২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

فيمن يقضى صلوات عمره من غير ان فاته شيئ يريد الاحتياط فان كان لاجل النقصان والكراهة قحسن وان لم يكن لذلك لايفعل والصحيح انه يجوز الا بعد صلاة الفجر والعصر وقد فعل ذلك كثير من السلف لشبهة الفساد ويقرأ فى الركعات كلها الفاتحة مع السورة.

যা হয়নি, এমন ব্যক্তিও যদি ইহ্তিয়াত বা সাবধানতার জন্য উমরী ক্বাযার নামায আদায় করে এই মনে করে যে, তার পূর্বের নামাযের কারাহাত এবং নুক্বছান (ক্ষতি) পূরণ হবে, তাহলে তার উমরী ক্বাযা আদায় করা মুস্তাহসান বা উত্তম হবে। আর যদি পূর্বের নামাযের কারাহাত এবং নুক্বছান (ক্ষতি) পূরণের জন্য আদায় না করে তাহলে সে আদায় করবেনা। বিশুদ্ধ কথা এই যে, উমরী ক্বাযা জায়িয, তবে আছর এবং ফযর নামাযের পর উমরী ক্বাযা আদায় করবেনা। আর সল্ফে ছলেহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনেকেই ফাসাদের সন্দেহে এই উমরী ক্বাযা আদায় করেছেন। উমরী ক্বাযা নামাযের প্রতি রাকায়াতে সূরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে।” “খুলাছাতুল ফতওয়ার” ১ম খন্ডের ১৯২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

رجل يقضى صلوات عمره مع انه لم يفته شئى اختلف المشائخ (رحمة الله عليهم) واجمعوا انه لايقضى بعد العصر وبعد طلوع الفجر.

অর্থঃ- “কোন ব্যক্তি যদি তার উমরী ক্বাযার নামায আদায় করে; অথচ তার কোন নামায ক্বাযা হয়নি; মাশায়িখগণ ইখতিলাফ করেছেন। তবে সে ব্যক্তি কোন্ কোন্ সময় উমরী ক্বাযার নামায আদায় করবে, এক্ষেত্রে সকল উলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম ইজমা বা ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, সে ব্যক্তি আছর এবং ফযর নামাযের পর  উমরী ক্বাযার নামায আদায় করবেনা।”         “তাতারখানিয়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ৭৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

فيمن يقضى صلوات عمره من غير ا فاته شيى يريد الاحتياط فان كان لاجل النقضان او الكرامية فحسن.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তির নামায ক্বাযা হয়নি সে ব্যক্তি যদি ইহ্তিয়াত বা সাবধানতাবশতঃ ক্বারাহাত বা নুক্বছানের জন্য উমরী ক্বাযা আদায় করে তাহলে তার জন্য উমরী ক্বাযা আদায় করা মুস্তাহসান বা উত্তম।”  “তাতারখানিয়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ৭৭০ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

والصحيح انه يجوز الا بعد صلاة الفجر والعصر وقد فعل ذلك كثير من السلف لشبهة الفساد …… ويقرأفى الر كعات كلها الفاتحة مع السورة.

অর্থঃ- “ছহীহ্ বা বিশুদ্ধ মতে আছর এবং ফযর নামাযের পর ব্যতীত উমরী ক্বাযা আদায় করা জায়িয। সলফে ছলেহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনেকেই ফাসাদের সন্দেহে উমরী ক্বাযা আদায় করেছেন। আর উমরী ক্বাযা নামাযের প্রতি রাক্বায়াতে সূরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে।”         “ফতওয়ায়ে কাজীখান” কিতাবে উল্লেখ আছে,

رجل يقضى صلوات عمره مع انه لم يفته شيئ منها قال يعضهم بانه يكره وبعضهم بانه لايكره لانه أخذ باحتياط والصحيح انه يجوز لكن لا يقضى بعد صلاة العصر ولا بعد صلاة الفجر لانها نفل ظاهرا وقد فعل كثير من السلف رحمهم الله تعالى لشبهة.

অর্থঃ- “কোন এক ব্যক্তি যদি ইহ্তিয়াত বা সাবধানতাবশতঃ উমরী ক্বাযার নামায আদায় করে অথচ তার জীবনে কোন নামায ক্বাযা হয়নি এক্ষেত্রে কেউ কেউ বলেছেন মাকরূহ্ এবং কেউ কেউ বলেছেন উমরী ক্বাযার নামায মাকরূহ নয়। কেননা, সে ইহ্তিয়াত বা সাবধানতার জন্যই উমরী ক্বাযার নামায পড়েছে। তবে ছহীহ্ বা বিশুদ্ধ মতে তার উমরী ক্বাযার নামায আদায় করা জায়িয। কিন্তু সে ব্যক্তি আছর এবং ফযর নামাযের ওয়াক্তের পর উমরী ক্বাযার নামায আদায় করবেনা। কেননা এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, উমরী ক্বাযার নামায নফল। আর সলফে ছলেহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনেকেই সন্দেহের কারণে উমরী ক্বাযার নামায আদায় করেছেন।” “হাশিয়ায়ে মারাকিউল ফালাহ্” কিতাবের ২৯০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ومن قضى صلاة عمره مع انه لم يفته شيئ منها احتياطا قيل يكره وقيل لا لان كشيرا من السلف قد فعل ذلك لكن لايقضى فى وقت تكره فيه النافله والافضل ان يقرأفى الاخير تين السورة مع الفاتحة لانها نوافل.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ইহ্তিয়াত্ বা সাবধানতাবশতঃ উমরী ক্বাযার নামায আদায় করবে অথচ তার জীবনে কোন নামায ক্বাযা হয়নি; কেউ কেউ বলেছেন মাকরূহ্। কেউ কেউ বলেছেন উমরী ক্বাযা মাকরূহ্ নয়। কেননা, সলফে ছলেহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনেকেই ইহ্তিয়াত্ বা সাবধানতার জন্য উমরী ক্বাযা আদায় করেছেন। তবে যে সকল ওয়াক্তে নফল নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সে সকল মাকরূহ্ তাহ্রীমী ওয়াক্তে উমরী ক্বাযার নামায আদায় করবেনা, আর উত্তম হলো উমরী ক্বাযা নামাযের শেষের দু’রাকায়াতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়া। কেননা উমরী ক্বাযার নামায নফল।”   “রদ্দুল মুহ্তার” কিতাবে উল্লেখ আছে,

ان الصحيح جواز هذا القضاء الا بعد صلاة الفجر والعصر وقد فعله كشير من السلف لشبهة الفساد.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই ছহীহ্ বা বিশুদ্ধ মত এই যে, এই উমরী ক্বাযার নামায আদায় করা জায়িয, তবে আছর এবং ফযর নামাযের পর উমরী ক্বাযার নামায আদায় করা যাবে না।  আর সলফে ছলেহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনেকেই ফাসাদের সন্দেহে উমরী ক্বাযার নামায আদায় করেছেন।” “ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৯৯-২০০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اگر کسی شخص سے کوئی نماز قضا نھیں ھوئی اور وہ بطور احتیا ط کے اپنی عمر کی نما زبں قضا کرتا ھی تو وہ اگر اپنی پچھلی نمازوں میں نقصان یا کراھ کی وجہ سے قضا کرتا ھی تو بھتر ھے اور اگر اس واسطے نھیں کرتا تو قضا نہ کرے اورصحبح یہ ھے کہ جانز ھی مگر فجر اور عصر کی نماز کے بعد نہ پڑھے اور سلف میں سے بھت لوگوں نے شبھہ قسباد کی یوجہ سے ایسا کیا ھی یہ مضمرات میں لکھا مے اور وہ شخص سب رکعتون  میں الحمد سورہ کے ساتہ پڑھے.

অর্থঃ- “যদি কোন ব্যক্তির নামায ক্বাযা না হয়ে থাকে এবং সে ব্যক্তিও যদি ইহতিয়াত বা সাবধানতাবশতঃ উমরী ক্বাযার নামায আদায় করে এই মনে করে যে, তার পূর্বের নামাযের কারাহাত বা নুক্বছান (ক্ষতি) পূরণ হবে তাহলে তার উমরী ক্বাযা আদায় করা উত্তম হবে। আর যদি পূর্বে নামাযের কারাহাত এবং নুক্বছান (ক্ষতি) পুরণের জন্য আদায় না করে তাহলে সে আদায় করবে না। বিশুদ্ধ কথা এই যে, উমরী ক্বাযা জায়িয, তবে আছর ও ফযর নামাযের পর উমরী ক্বাযা নামায আদায় করবে না। আর সল্ফে ছলেহীনগণের অনেকেই ফাসাদের সন্দেহে উমরী ক্বাযার নামায আদায় করেছেন। এটা ‘মুজমারাতে’ লিখা আছে। আর উমরী ক্বাযা আদায়কারী ব্যক্তি প্রতি রাকায়াতে সূরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়বে।” “আইনুল হিদায়া” কিতাবের নিছ্ফে আউয়াল খন্ডের ৭৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ایک شخص اپنی عمر کی نمازیں قضا کرتا ھے بدون اس کے کہ اس کی کوئی نماز قضاء ہوئی ھو پس اگر بگمان نقصان وکراھت ھو تو بھتر ھے ورنہ نھیں. اور صحیح یہ کہ جائز ھے سوائے بعد فجر وبعد عصر کے اور بھت سے سلف نے شبھہ فساد کی جھت سے ابسا کیا ھے. اور جملہ رکعلت میں وہ فاتحہ مع سورہ پڑھے.

অর্থঃ- “এমন এক ব্যক্তি  উমরী ক্বাযার নামায আদায় করলো যার কোন নামায ক্বাযা হয়নি। সুতরাং সে যদি নামায ক্বাযা ও ত্রুটিযুক্ত হওয়ার সন্দেহে উমরী ক্বাযা আদায় করে তবে তা উত্তম হবে; নতুবা না। তবে বিশুদ্ধ মত এই যে, ফযর এবং আছর বাদ ব্যতীত তা আদায় করা জায়িয। কেননা, সলফে ছলেহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনেকে সন্দেহের কারণেই উমরী ক্বাযা আদায় করেছেন। আর উমরী ক্বাযার প্রত্যেক রাকায়াতে সূরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়বে।      আরো উল্লেখ্য যে, আমাদের হানাফি মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বয়ং নিজেই উমরী ক্বাযার নামায পড়েছেন। যেমন, এ প্রসঙ্গে “দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে,

ان الامام قضى صلاة عمره.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই ইমাম আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বয়ং নিজেই উমরী ক্বাযার নামায আদায় করেছেন।”             “গায়াতুল আওতার” কিতাবের ১ম খন্ডের ৩২২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

امام اعظم رح  نے اپنی عمر کی نماز قضا کی

অর্থঃ- “ইমাম আযম রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বয়ং নিজেই উমরী ক্বাযার নামায আদায় করেছেন।”             উপরোক্ত বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবের অকাট্য দলীলের মাধ্যমে যা প্রমাণিত হলো-        (১) উমরী ক্বাযার নামায শরীয়তে আছে। সেহেতু ফক্বীহ্, ইমাম, মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ তাদের নিজ নিজ ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবে উমরী ক্বাযা আদায় করার নিয়ম-কানুন, তর্জ-তরীক্বা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।             (২) উমরী ক্বাযার নামায ইহ্তিয়াত্ বা সাবধানতার জন্য আদায় করা হয়। আর ইবাদতে ইহ্তিয়াত্ বা সাবধানতা অবলম্বন করা ওয়াজিব।             (৩) উমরী ক্বাযার নামায আদায় করা মুস্তাহসান বা উত্তম। (৪) উমরী ক্বাযা নামায ফজর এবং আছর নামাযের পর আদায় করা যাবেনা। কেননা, উমরী ক্বাযার নামায নফল।     (৫) উমরী ক্বাযার নামাযের প্রতি রাকায়াতেই সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে।             (৬) উমরী ক্বাযার মাগরীব ও বিত্রের নামায তিন বৈঠকের সাথে চার রাকায়াত পড়তে হয়।        (৭) সলফে ছলেহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনেকেই সন্দেহের কারণে উমরী ক্বাযা আদায় করেছেন।             (৮) স্বয়ং ইমামে আযম, হযরত ইমাম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজেই উমরী ক্বাযার নামায পড়েছেন।          দ্বিতীয়তঃ হাটহাজারীর জাহিল মৌলভীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে তিনটি দলীল পেশ করেছে। প্রথম দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছে, ফতওয়ায়ে শামী।       অথচ ফতওয়ায়ে শামী কিতাবে উল্লেখ আছে, “উমরী ক্বাযা আদায় করা মুস্তাহাসান বা উত্তম। যেমন, “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ২য় খন্ডের ১৪৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

فيمن يقضى صلاة عمره مع انه لم يفته منها شيئ لايكره لأناخذ بالاحتياط وذكر فى القنية انه احسن.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ইহ্তিয়াত্ বা সাবধানতাবশতঃ তার উমরী ক্বাযার নামায আদায় করে অথচ তার জীবনে কোন নামায ক্বাযা হয়নি তাহলে মাকরূহ্ হবেনা। কেননা, সে ইহ্তিয়াত্ বা সাবধানতার জন্যই উমরী ক্বাযা আদায় করেছে। আর কুনিয়া কিতাবে উল্লেখ আছে উমরী ক্বাযা আদায় করাই মুস্তাহসান বা উত্তম।”          দ্বিতীয় দলীল দিয়েছে, ফতওয়া মাহ্মুদিয়া।             অথচ ফতওয়ায়ে মাহ্মুদিয়া কিতাবেও উমরী ক্বাযা সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে, যেমন, “ফতওয়ায়ে মাহ্মুদিয়া” কিতাবের ২য় খন্ডের ১৬৬-৬৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

“قضاء عمری کی نیت”

سوال: قضاء عمری میں نماز کی نیت کس طرح کی جائے جب کہ دن، تاریخ، مھینہ، سال، معلوم نھیں.

الجواب: اس طرح نیت کرے کہ میرے تمہ فجر کی جوسب سے پھلی  نماز باقی بے وہ پڑھتا ہوں ی ا اس طرح نیت کرے کہ میرے  ذمہ فجر کی جو سب سے اخر کی نماز باقی ھے وہ پڑھتا ہوں یھی حال دوسری نمازوں کاہے

অর্থঃ- “উমরী ক্বাযার নিয়ত। প্রশ্নঃ যখন দিন, তারিখ, মাস, বৎসর জানা না থাকবে তখন উমরী ক্বাযা নামাযের নিয়ত কিভাবে করবে? উত্তরঃ এভাবে নিয়ত করবে যে, আমার জিম্মায় ফজরের সর্বপ্রথম যে নামায বাকী রয়েছে তা আদায় করছি। অথবা এভাবে নিয়ত করবে যে, আমার জিম্মায় ফজরের সর্বশেষ যে নামায বাকী রয়েছে তা আদায় করছি। অন্যান্য নামাযের ক্ষেত্রেও ঐ একই নিয়ম।”             তৃতীয় দলীল দিয়েছে, নাফ্উল মুফতী ওয়াস্ সায়িল।    অথচ নাফউল মুফতী ওয়াস্ সায়িল কিতাবেও উমরী ক্বাযার বর্ণনা রয়েছে। যেমন, “নাফউল মুফতী ওয়াস্ সায়িল” কিতাবের ২৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

سوال: ایک شخص اختلافات کے شبھ کی وجہ سے احتیا طا قضا عمری ادا کر تا ہے وہ مغرب اور وتر کی نماز کسح پڑہے؟

جواب: مفرب اور وتر کو چار رکعات تین قعدوں  کے ساتہ پڑہے کیونکہ تین رکعات نفل مکروہ ہیں.

অর্থঃ- “প্রশ্নঃ এক ব্যক্তি সন্দেহের কারণে ইহ্তিয়াত বা সাবধানতাবশতঃ উমরী ক্বাযা আদায় করলো সে মাগরীব এবং বিত্র নামায কি নিয়মে আদায় করবে? উত্তরঃ মাগরীব এবং বিত্র নামায তিন বৈঠকে চার রাকায়াত আদায় করবে। কেননা তিন রাকায়াত নফল আদায় করা মাকরূহ্।”        সুতরাং হাটহাজারীর জাহিল মৌলভীরা যে তিনটি কিতাবের দলীল দিয়েছে উক্ত তিনটি কিতাবেই উমরী ক্বাযার বর্ণনা রয়েছে বলেই দলীলের মাধ্যমে তা প্রমাণিত হলো। অতএব উপরোক্ত অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে এটাই সুস্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, শরীয়তে উমরী ক্বাযার নামায আছে। কাজেই হাটহাজারীর জাহিল মৌলভীদের উমরী ক্বাযা সম্পর্কিত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, বিভ্রান্তিকর, দলীলবিহীন ও অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ তথা ফক্বীহ্গণের মতের সম্পূর্ণই খিলাফ।

হাটহাজারীর জাহিল মৌলভীরা উমরী কাযা সম্পর্কে কাট্টা মিথ্যা কথা বলেছে ও মিথ্যা দলীল পেশ করেছে। আর শরীয়তে মিথ্যাবাদীর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। তাই তাদের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।

{বিঃ দ্রঃ- উমরী ক্বাযা সম্পর্কে আরো জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৫৫, ৬৪, ৭৯, ৮২ ও ৮৬তম সংখ্যাগুলো পাঠ করুন। সেখানে মাসিক মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, মাসিক রাহমানী পয়গাম এবং মাসিক মদীনা পত্রিকাগুলোর উমরী ক্বাযা সম্পর্কিত ভুল বক্তব্য খন্ডন করা হয়েছে। এছাড়াও মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১৮, ২৩, ২৮, ৪৩, ৫২তম ইত্যাদি সংখ্যাগুলোতেও উমরী ক্বাযা সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে। এবার তৃতীয়বারের মত মাসিক মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর ভুল বক্তব্য খন্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হলো।}     {দলীলসমূহঃ  (১) ছগীরী, (২) কবীরী, (৩) কুনিয়া, (৪) খানিয়া, (৫) ইতাবিয়া, (৬) মুজমিরাত, (৭) হুজ্জাত, (৮) জহিরীয়া, (৯) নিহায়া, (১০) কিফায়া, (১১) মালুল ফতওয়া, (১২) শরহুল মুনিয়া, (১৩) খুলাছাতুল ফতওয়া, (১৪) হিদায়া, (১৫) বাহরুর রায়িক, (১৬) আলমগীরী, (১৭) ফতওয়ায়ে কাজীখান, (১৮) দুররুল মুখতার, (১৯) রদ্দুল মুহতার, (২০) ফতহুল ক্বাদীর, (২১) তাতারখানিয়া, (২২) গায়াতুল আওতার, (২৩) হাশিয়ায়ে তাহ্তাবী আদ দুররীল মুখতার, (২৪) আইনুল হিদায়া, (২৫) হাশিয়ায়ে মারাকিউল ফালাহ্, (২৬) ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, (২৭) শামী, (২৮) নাফউল মুফতী ওয়াস্ সায়িল, (২৯) ফতওয়ায়ে দেওবন্দ, (৩০) ফতওয়ায়ে মাহমুদিয়া ইত্যাদি}

মুছাম্মত মমতাজ বেগম সভানেত্রী- মহিলা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত

সন্দীপ থানা শাখা, চট্টগ্রাম।

  সুওয়ালঃ   শরীয়তে পর্দা করা কি? আজকাল মানুষ যাদেরকে দেশ বরেণ্য বা শীর্ষস্থানীয় আলিম-উলামা মনে করে, তাদেরকেও পর্দার খিলাফ করতে দেখা যায়। যেমন, তারা বেগানা মহিলার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে, এক সাথে বসে বৈঠক করে, আলোচনা করে,  মিটিং-মিছিল করে, পানাহার  করে, ইফতার করে এবং এগুলো দৈনিক খবরের কাগজে ছবিসহ প্রকাশিত হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের এখন ধারণা হচ্ছে, পর্দা না করলেও হয়ত কোন অসুবিধা নেই।   প্রকৃতপক্ষে শরীয়তে পর্দার গুরুত্ব আছে কি-না? আর যে সমস্ত আলিম-উলামা পর্দা উপেক্ষা করে বেগানা মহিলার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ, মেলা-মেশা করছে তাদের ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কি?

দয়া করে বিস্তারিত জানিয়ে আমাদের ঈমান-আমলের হিফাযতের ব্যাপারে সহায়তা করুন। জাওয়াবঃ পর্দা করা ফরযে আইন। পুরুষ-মহিলা উভয়ের জন্যই পর্দা রক্ষা করা ফরয। পর্দা না করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

আল্লাহ্ পাক তাঁর কালাম পাকে একাধিক আয়াত শরীফে পর্দা করার ব্যাপারে কঠোর তাগিদ দিয়েছেন। এ সম্পর্কে তিনি ইরশাদ করেন,

  قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم و يحفظوا فروجهم ذلك ازكى لهم ان الله خبير بما يصنعون وقل للمؤمنت يغضضن من ابصارهن ويحفظن فروجهن ولا يبدين زينتهن.

অর্থঃ- “হে রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি মু’মিন পুরুষদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতার কারণ, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তারা যা করে সে সম্পর্কে  খবর রাখেন। এবং আপনি মু’মিন নারীদেরকে বলুন, তারাও যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে এবং তাদের সৌন্দর্যকে প্রকাশ না করে।” (সূরা নূর/৩০,৩১)

আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় হাদীস শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  ইরশাদ করেন,

لعن الله الناظر والمنظور اليه.

অর্থঃ- “যে (পুরুষ) দেখে এবং যে (মহিলা) দেখায় উভয়ের প্রতি আল্লাহ্ পাক লা’নত বর্ষণ করেন।” (বায়হাক্বী ফী শুয়াবিল ঈমান, মিশকাত, মিরকাত) হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

لايخلون رجل بامرأة الا كان ثالثهما الشيطن.

অর্থঃ- “যখন কোন পুরুষ কোন (বেগানা) মহিলার সাথে একাকী বা নিরিবিলিতে মিলিত হয় তখন তাদের তৃতীয় সঙ্গী হয় শয়তান।  অর্থাৎ তখন শয়তান  তাদেরকে পাপ কাজে উদ্বুদ্ধ করে, এমনকি পাপ কাজে লিপ্তও করে দেয়।”  এ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় বর্ণিত রয়েছে যে, একদা খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, ফারুকে আ’যম, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফে উপস্থিত হলেন এমন অবস্থায় যে, তাঁর কপাল মুবারক থেকে রক্ত মুবারক নির্গত হচ্ছিল। তা দেখে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, “হে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু!  আপনার কপালে কে আঘাত করল?” জবাবে তিনি বললেন, “ইয়া রসূল্লাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আরবের যমীনে এমন কোন সন্তান জন্মলাভ করেনি, যে হযরত উমর ইবনুল খত্তাবের  কপালে আঘাত করতে পারে।” হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, “তাহলে আপনার কপাল ফাঁটল কিভাবে”? তিনি বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার একটি হাদীস শরীফ আমার কপালে আঘাত করেছে।” এটা শুনে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশ্চর্যান্বিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,  “আমার হাদীস শরীফ আপনার কপালে আঘাত করেছে? কিভাবে আঘাত করলো? আর কোন সে হাদীস শরীফ?” তিনি  বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আমার মেয়ে যিনি উম্মুল মু’মিনীন, হযরত হাফসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তাঁর সাথে ঘরে বসে একাকী কথা বলছিলাম, হঠাৎ আপনার হাদীস শরীফখানা স্মরণ হয়। স্মরণ হওয়া মাত্র আমি ঘর থেকে খুব দ্রুত বের হই। বের হওয়ার সময় চৌকাঠে মাথা লেগে আমার কপাল ফেটে যায়। হাদীস শরীফখানা হচ্ছে,

لايخلون رجل بامرأة الا كان ثالهما الشيطن.

অর্থঃ- “যখন কোন পুরুষ কোন (বেগানা) মহিলার সাথে একাকী বা নিরিবিলিতে মিলিত হয় তখন তাদের তৃতীয় সঙ্গী হয় শয়তান।”             এখানে উল্লেখ্য, মেয়ের সাথে পর্দা করার হুকুম শরীয়তে নেই। তারপরও হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ পর্দা রক্ষার ব্যাপারে কতটুকু সতর্কতা অবলম্বন করেছেন তা সত্যিই  চিন্তা ও ফিকিরের বিষয়।           উল্লেখ্য, হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সাধারণ লোক থেকে প্রায় এক হাত লম্বা ছিলেন। যার কারণে তাঁর মাথা মুবারক চৌকাঠে লেগে যায়।   অন্য এক হাদীস শরীফে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে সম্বোধন করে বলেন,

لا تتبع النظرة فان لك الاولى وليست لك الاخرة.

অর্থঃ- “তুমি দৃষ্টিকে অনুসরণ করনা। অর্থাৎ কোন বেগানা মহিলার প্রতি দৃষ্টি দিওনা, কারণ, তোমার প্রথম দৃষ্টি (যা অনিচ্ছা সত্ত্বে পতিত হয়) তা ক্ষমা করা হবে, কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না। অর্থাৎ পরবর্তী প্রতি দৃষ্টিতে একটি করে কবীরা গুনাহ লিখা হবে।” (আহমদ, তিরমিযী, আবূ দাউদ, দারিমী, মিশকাত, মিরকাত)

স্মরণযোগ্য, যামানার মুজাদ্দিদ ও ইমাম, ইমামুল আইম্মা, বাহরুল উলূম রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর তাজদীদী ও গবেষণাধর্মী মুবারক ক্বওল হচ্ছে যে, “প্রত্যেক মানুষ পুরুষ কিংবা মহিলা হোক. সে প্রতি দু’সেকেন্ডে পাঁচটি করে চোখের পলক বা দৃষ্টি ফেলে থাকে। সে হিসেবে প্রতি মিনিটে ১৫০টি পলক বা দৃষ্টি করে থাকে। আর ঘন্টা হিসেবে প্রতি ঘন্টায় ৯০০০ (নয় হাজার) পলক বা দৃষ্টি করে থাকে। সে হিসেবে বেগানা পুরুষ ও মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার কারণে তাদের উভয়ের প্রতি এক মিনিটে তিনশ’টি এবং এক ঘন্টায় আঠার হাজার কবীরাহ্ গুণাহ্ লিখা হয়। তাহলে দৈনিক তারা যে কত হাজার হাজার কবীরাহ গুণাহ্ করে থাকে তা আল্লাহ্ পাকই বেহ্তর জানেন।”    এটা তো শুধু চোখের যিনার গুণাহ্র কথা বলা হলো। এমনিভাবে প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা যিনা হয়ে থাকে।             এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

العينان زناهما النظر والاذنان زناهما الاستماع واللسان زناه الكلام واليد زناها البطش والرجل زناها الخطى والقلب يهوى ويسنى ويصدق ذلك الفرج او يكذبه.

অর্থঃ- “চোখের যিনা হলো দৃষ্টি করা, কানের যিনা হলো শ্রবণ করা, মুখের যিনা হলো কথা বলা, হাতের যিনা হলো স্পর্শ করা, পায়ের যিনা হলো ধাবিত হওয়া, অন্তর চায় ও আকাঙ্খা করে এবং লজ্জাস্থান সেটাকে সত্য অথবা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে।” (বুখারী, কানযুল উম্মাল)

            হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

الديوث لايدخل الجنة.

অর্থঃ- “দাইয়্যূস বেহেশ্তে প্রবেশ করতে পারবেনা।” দাইয়্যূস ঐ ব্যক্তি যে নিজে পর্দা করেনা এবং তার অধীনস্ত মহিলাদেরও পর্দা করায়না।           কুরআন ও সুন্নাহর উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দ্বারাই পর্দার গুরুত্ব, অপরিহার্যতা যে অবশ্যই রয়েছে  তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।

হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

ان شر الشر شرار العلماء وان خير الخير خيار العلماء.

অর্থঃ- “ নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে সর্বাধিক নিকৃষ্ট হচ্ছে আলিমগণ অর্থাৎ উলামায়ে ‘ছূ’ আর মানুষের মধ্যে সর্বাধিক উত্তম হলেন আলিমগণ অর্থাৎ হক্কানী-রব্বানী আলিম।” (মিশকাত, মিরকাত)

অতএব, যে সমস্ত আলিম-উলামা পর্দা উপেক্ষা করে বেগানা মহিলার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে, মেলা-মেশা করে, তারা হাদীস শরীফে বর্ণিত উলামায়ে ‘ছূ’ তথা নিকৃষ্ট, ক্ষমতা লোভী, দুনিয়াদার, নাহক্ব শ্রেণীর আলিম। যাদের সম্পর্কে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

نعم الامير على باب الفقير وبئس الفقير على باب الامير.

অর্থঃ- “উত্তম আমীর বা শাসক হলো তারা যারা হক্কানী-রব্বানী, পীর-মাশায়িখ ও আলিমগণের দরবারে যাতায়াত করেন। আর নিকৃষ্ট আলিম-উলামা, পীর-মাশায়িখ হলো তারা, যারা আমীর বা শাসকদের দরবারে দরবারে ঘুরাফেরা করে।”    এ সমস্ত উলামায়ে ছূদের ব্যাপারে  শরীয়তে বিধান দুধরনের

(১) ফাসিকঃ যারা স্বীকার করে যে, পর্দা করা ফরয, পর্দা করা উচিত, পর্দার খিলাফ করলে কবীরা গুনাহ্ হয় কিন্তু তারা তাদের ইল্ম, আক্বল ও আমলের ঘাটতির কারণে পর্দার খিলাফ করে থাকে।

(২) মুরতাদঃ যারা পর্দার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে না বা ফরয মনে করে না অথবা পর্দা রক্ষার ব্যাপারে উদাসীন হয়ে গেছে, পর্দার খিলাফ করলে কোন রূপ অসুবিধা মনে করেনা অথবা যাদের আমল-আখলাকে ফুটে উঠে যে, বর্তমানে পর্দা দরকার নেই বা বর্তমানে পর্দা না করলেও চলে ইত্যাদি।    এ উভয় শ্রেণীর নামধারী আলিম-উলামারা উলামায়ে ‘ছূ’র অন্তর্ভুক্ত। তাই এদের অর্থাৎ উলামায়ে ‘ছূ’দের ছোহবত গ্রহণ করা থেকে সকলকে দূরে থাকতে হবে। কারণ তারা বেপর্দা, বেগানা মহিলার প্রতি দৃষ্টি দেয়ার কারণে তাদের উপর আল্লাহ্ পাক-এর লা’নত বর্ষিত হচ্ছে। অতএব, যারা তাদের ছোহবত গ্রহণ করবে তারাও সে লা’নতের ভাগী হবে।     উলামায়ে ‘ছূ’র ছোহ্বত হক্কানী উলামা-ই-কিরামের ছোহ্বতের বিপরীত। হক্কানী উলামা-ই-কিরামের প্রতি আল্লাহ্ পাক-এর রহমত বর্ষিত হয়। এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে যে, “একদা এক ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর এক ওলীর নিকট গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “হুযূর! অনেক লোক মারা যাবার সময় তাঁর আল-আওলাদ, আত্মীয়-স্বজনকে ওছীয়ত করে যায় যে, আমি মারা গেলে আমাকে ওমুক আল্লাহ্র ওলীর মাযার শরীফের পাশে দাফন করবে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লাহ্র ওলীর মাযার শরীফের পাশে ঐ ব্যক্তিকে দাফন করলে তার কি লাভ?” সেদিন ছিলো গরমের দিন। গরমের কারণে আল্লাহ্র ওলীকে তার এক খাদিম পাখা দিয়ে বাতাস করছিলো আর সে বাতাস, সামনে বসা প্রশ্নকারী ব্যক্তির শরীরেও লাগছিলো। আল্লাহ্র ওলী প্রশ্নকারী ব্যক্তিকে বললেন, “হে ব্যক্তি! আমার খাদিম কাকে বাতাস করছে?” সে ব্যক্তি বললো, “হুযূর! আপনাকে বাতাস করছে।” ‘বাতাস কি তোমার শরীরে লাগছে?’ ‘জ্বি হুযূর! আমার শরীরেও লাগছে।’ ‘কেন লাগছে? তোমাকে তো বাতাস করা হচ্ছেনা?’ সে বললো, “হুযূর! আমি যে আপনার নিকটে বসে আছি।” আল্লাহ্র ওলী বললেন যে দেখ, আল্লাহ্ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেছেন,

ان رحمت الله قريب من المحسنين.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক-এর রহমত মুহ্সিন অর্থাৎ হক্কানী আলিম বা আল্লাহ্ওয়ালাগণের নিকটবর্তী।” (সূরা আ’রাফ/৫৬)             কাজেই তুমি যেমন আমার নিকটবর্তী হওয়ার কারণে তোমাকে বাতাস না করা সত্ত্বেও বাতাসের ভাগী হচ্ছো, তোমার শরীরে বাতাস লাগছে। তদ্রুপ যারা হক্কানী আলিম বা আল্লাহ্র ওলী তাঁদের হায়াত-মউত সব অবস্থায় তাঁদের প্রতি আল্লাহ্ পাক-এর রহমত নাযিল হয়। যার কারণে আল্লাহ্ পাক-এর ওলীর মাযার শরীফের পাশে কাউকে দাফন করা হলে আল্লাহ্র ওলীর প্রতি যে রহমত নাযিল হয় সে রহমতের উছীলায় ঐ ব্যক্তির কবরের আযাব মাফ হয়ে যায়। কারণ যেখানে রহমত নাযিল হয় সেখানে আযাব-গযব থাকেনা। সেটা দূর হয়ে যায়। কিন্তু যারা হক্কানী আলিম বা আল্লাহ্র ওলী নয়, উলামায়ে ‘ছূ’র অন্তর্ভুক্ত। তাদের প্রতি রহমতের পরিবর্তে লা’নত ও যহমত বর্ষিত হয়। তাদের ছোহ্বতে যারা যাবে তারাও সেই লা’নত ও যহমতের হিস্সা লাভ করবে।             সুওয়ালে উল্লিখিত দেশবরেণ্য ও শীর্ষস্থানীয় আলিম-উলামা যারা উলামায়ে ‘ছূ’র অন্তর্ভুক্ত।  তাদের মধ্যে যারা ফাসিক তাদের ফায়সালা বা হুকুম হচ্ছে, “শরীয়ত ফাসিক ব্যক্তিকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ করাকে মাকরূহ্ বলে ফতওয়া দিয়েছে। ফাসিকের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ। অর্থাৎ মুছল্লীগণ বা মুক্তাদীগণ ফাসিক ইমামের পিছনে নামায আদায় করলে নামাযের পরিপূর্ণ ফায়দা হাছিল করতে পারবে না। কাজেই উক্ত ইমাম সাহেব যদি হারাম ও কবীরাহ্ গুণাহ্ থেকে তওবা-ইস্তিগফার না করে তাহলে মুছল্লীদের ফায়দার জন্য উক্ত ইমাম ছাহেবকে অব্যহতি দিয়ে অন্য কোন নেক্কার, পরহেযগার ও আল্লাহ্ওয়ালা ইমাম নিয়োগ করা কমিটি ও মুছল্লীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। অন্যথায় সকলেই ফাসিকী গুণাহ্ েগুণাহ্গার হবে। আর ফাসিকের দোষত্রুটি বর্ণনা করা জায়িয ও ছওয়াবের কারণ।

আর যারা মুরতাদ তাদের ফায়সালা হচ্ছে, “মুরতাদের স্ত্রী তালাক হয় যদি সে বিবাহিত হয়ে থাকে, হজ্ব বাতিল হয় যদি সে হজ্ব করে থাকে; এবং সে কাফির হয়। অর্থাৎ তার সকল নেক আমল বিনষ্ট হয়ে যায়, তওবা না করা পর্যন্ত সে ঈমানদার হবেনা। বিবাহ না দোহ্রালে স্ত্রীর সাথে সংসার করা যাবেনা। যদি সংসার করে তবে যিনাকারীর গুনাহ্ হবে। সন্তান হলে তা হালাল হবেনা। যদি হজ্বের সামর্থ থাকে তবে পুনরায় তাকে হজ্ব করতে হবে, যদিও সে পূর্বে হজ্ব করে থাকে। তা না করলে কবীরা গুনাহ্ হবে। তার ওয়ারিশ সত্ত্ব বাতিল হয়ে যাবে। তাকে তিন দিন সময় দেয়া হবে তওবা করার জন্য। যদি তওবা করে, তবে ক্ষমা করা হবে। অন্যথায় তার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড।       কেননা হাদীস শরীফে রয়েছে, “তিন কারণে মৃত্যুদন্ড দেয়া জায়িয। যথা- (ক) ঈমান আনার পর কুফরী করলে অর্থাৎ মুরতাদ হলে। (খ) ঐ যিনাকার বা যিনাকারিনী, যারা বিবাহিত বা বিবাহিতা। (গ) যে অন্যায়ভাবে কাউকে কতল করে।” (তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ্, মুসনদে শাফিয়ী, মুসনদে বাজ্জার, মুস্তাদরিকে হাকিম)    উল্লেখ্য, মুরতাদ মারা যাবার পর যারা এদের জানাযার নামায পড়ে বা পড়ায় বা জানাযার নামাযে সাহায্য-সহযোগিতা করে, তাদের সকলের উপরই মুরতাদের হুকুম বর্তাবে এবং এ সকল মুরতাদ মরলে বা নিহত হলে তাকে মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না। এমনকি মুসলমানের ন্যায়ও দাফন করা যাবে না। বরং তাকে কুকুরের ন্যায় একটি গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখতে হবে।    স্মরণীয় যে, কেউ হাফিয, ক্বারী, মুফ্তী, মুহাদ্দিছ, মুফাস্সির, মুহতামিম, মুদাররিস, ইমাম, খতীব, আমীর, ওয়ায়িয,  পীর, হাদী ইত্যাদি হয়ে গেলেই যে তিনি হক্কানী আলিম হবেন তা নয়, হক্কানী আলিম হওয়ার জন্য কোন দ্বীনী কিংবা দুনিয়াবী প্রতিষ্ঠান থেকে ফারেগ হতে হবে সে শর্তও কোথাও উল্লেখ নেই। বরং হক্কানী আলিম হওয়ার জন্য শরীয়ত তথা কুরআন-সুন্নাহ যে শর্ত আরোপ করেছে তা হলো-

আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেছেন,

انما يخشى الله من عباده اعلماء.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই বান্দাদের মধ্যে কেবল আলিমগণই আল্লাহ্ পাককে ভয় করেন।” (সূরা ফাতির/২৮)   এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন,

ليس العلم عن كثرة الحديث وان العلم عن خشية الله.

অর্থঃ- “ঐ ব্যক্তি আলিম নয় যে অনেক হাদীস জানে, বরং আলিম হচ্ছেন ঐ ব্যক্তি যিনি আল্লাহ্ পাককে ভয় করেন।” এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যা হাম্বলী মাযহাবের ইমাম, ইমামুল আইম্মা হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “যার ভিতরে যতবেশী আল্লাহ্ ভীতি রয়েছে তিনি তত বড় আলিম।” অর্থাৎ যিনি আল্লাহ্ পাককে ভয় করে সর্ব প্রকার  হারাম-নাজায়িয, কুফরী-শিরকী, বিদয়াত-বেশরা কাজ থেকে বিরত থাকেন তিনিই আলিম।

আর হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

ومن ارباب العلم قال الذين يعملون بما يعلمون وما اخرج العلم من قلوب العلماء قال الطمع.

অর্থঃ- “আলিম কে? তিনি বললেন, যারা ইলম অনুযায়ী আমল করেন, জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন জিনিস আলিমের অন্তর থেকে ইলমকে  বের করে দেয়? তিনি বললেন, দুনিয়ার মোহ বা  লোভ।” (মিশকাত)  ইল্ম কত প্রকার তার ব্যাখ্যায় হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

اعلم علمان علم فى القلب فذاك العلم النافع علم على اللسان فذالك حجة الله عزوج على ابن ادم.

অর্থঃ- “ইল্ম দু’প্রকার- (১) ক্বালবী ইল্ম, যা উপকারী ইল্ম অর্থাৎ ইল্মে তাছাউফ। (২) জবানী ইল্ম, যা আল্লাহ্ পাক-এর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য দলীল। অর্থাৎ ইল্মে ফিক্বাহ্।” (মিশকাত)

যারা উল্লিখিত দু’প্রকার ইল্ম অর্জন করবে এবং তদানুযায়ী আমল করবে শুধুমাত্র তারাই হক্কানী আলিম। আর যারা দু’প্রকারের এক প্রকার ইল্ম অর্জন করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে তারা হক্কানী আলিম হওয়া তো দূরের কথা সাধারণ আলিমেরও অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেনা।

মিশকাত শরীফের বিখ্যাত ও মশহুর ব্যাখ্যা গ্রন্থ “মিরকাত শরীফে” বর্ণিত রয়েছে, মালিকী মায্হাবের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম, ইমামুল আইম্মা, রঈসুল মুহাদ্দিসীন, ফখরুল ফুক্বাহা, শাইখুল উলামা হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

من تفقه ولم يتصوف فقد تفسق ومن تصوف ولم يتفقه فقد تزندق ومن جمع بينهما فقد تحقق.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ইল্মে ফিক্বাহ্ (জবানী ইল্ম) অর্জন করলো, কিন্তু ইল্মে তাছাউফ (ক্বাল্বী ইল্ম) অর্জন করলোনা সে ব্যক্তি ফাসিক। আর যে ব্যক্তি তাছাউফের দাবী করে কিন্তু শরীয়ত স্বীকার করেনা, সে ব্যক্তি  যিন্দিক। আর যে ব্যক্তি উভয়টি অর্জন করলো, সে ব্যক্তিই মুহাক্কিক। অর্থাৎ হক্কানী আলিম এবং মু’মিনে কামিল।”         অর্থাৎ ইল্মে তাছাউফ ব্যতীত ইল্মে ফিক্বাহ অর্জনকারী ফাসিক (গুণাহ্গার) ইখলাছবিহীন। আর ইখলাছবিহীন আলিম, ক্বারী জাহান্নামে প্রবেশ করবে।  হাদীস শরীফের ছহীহ্ কিতাব “মুসলিম শরীফে” বর্ণিত রয়েছে, “আল্লাহ্ পাক ক্বিয়ামতের দিন সর্ব প্রথম তিন ব্যক্তিকে বিচারের জন্য উপস্থিত করবেন। তার মধ্যে একজন হলো, আলিম-ক্বারী। যে সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে,

ورج تعم العلم وعلمه وقرأ القران فاتى به فعرفه نعمه فعرفها قال فما عملت فيها؟ قال تعلمت العلم وعلمته وقرأت فيك القران قال كذبت ولكنك تعلمت العلم ليقال انك عام وقرأت القران ليقال هو قارئ فقد قيل ثم امربه فسحب على وجهه حتى القى فى النار.

অর্থাৎ- এবং ঐ ব্যক্তি যাকে ইল্ম দান করা হয়েছে এবং সে তা অন্যকে শিক্ষা দিয়েছে এবং কুরআন শরীফ ছহীহ্-শুদ্ধভাবে পড়তে শিখেছে। আল্লাহ্ পাক তাকে বলবেন, হে আলিম, ক্বারী ছাহেব! তোমাকে এত ইল্ম দেয়া হয়েছিল, শুদ্ধ করে কুরআন শরীফ পাঠ করতে শিক্ষা দেয়া হয়েছিল, তুমি কি করলে? সে ব্যক্তি বলবে, আল্লাহ্ পাক! আমি আপনার জন্য ইল্ম শিক্ষা করেছি এবং তা অন্যকে শিক্ষা দিয়েছি, আর আপনার জন্যই আমি কুরআন শরীফ শুদ্ধ করে পাঠ করেছি। আল্লাহ্ পাক বলবেন, মিথ্যা কথা। বরং মানুষ তোমাকে বড় আলিম, বড় ক্বারী ছাহেব বলবে, সে জন্যেই তুমি ইল্ম অর্জন করেছ, কুরআন শরীফ শুদ্ধ করে তিলাওয়াত করতে শিখেছ। কাজেই মানুষ তোমাকে বড় আলিম, বড় ক্বারী ছাহেব বলেছে (তোমার বদলা তুমি পেয়েছ)। তখন আল্লাহ্ পাক ফেরেশ্তাদেরকে বলবেন, ‘হে ফেরেশ্তারা, তোমরা এ লোকটাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর। তখন তার চুল ধরে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।”         কাজেই সবাইকে হক্বানী আলিম মনে করা যাবেনা। হক্কানী আলিমের পাশাপাশি নাহক্ব, দুনিয়াদার, উলামায়ে ‘ছূ’ও  থাকবে। যাদের ইল্ম হাছিলের উদ্দেশ্যই হচ্ছে গাইরুল্লাহ্ তথা দুনিয়াবী ক্ষমতা লাভ, নামধাম কামানো, অর্থ-সম্পদ উপার্জন করা। যে কারণে তারা হালাল-হারাম, জায়িয-নাজায়িয একাকার করে থাকে।

অতএব, ঈমান-আক্বীদা ও আমল হিফাযতের উদ্দেশ্যে উলামায়ে ‘ছূ’দের থেকে দূরে থেকে উলামা-ই-হক্কানী-রব্বানীর ছোহবত ইখতিয়ার করা প্রত্যেকের জন্য ফরয। {দলীলসমূহ ঃ (১)  আহকামুল কুরআন, (২) রুহুল বয়ান, (৩) রুহুল মায়ানী, (৪) খাযিন, (৫) বাগবী, (৬) ইবনে কাছীর, (৭) তাবারী, (৮) কুরতুবী, (৯) কবীর, (১০) তাফসীরে মাযহারী, (১১) বুখারী, (১২) মুসলিম, (১৩) আবূ দাউদ, (১৪) আহমদ, (১৫) তিরমিযী, (১৬) ইবনে মাযাহ, (১৭) দাইলামী, (১৮) ত্ববারানী, (১৯) বাইহাক্বী, (২০) ইবনে হাব্বান, (২১) মুয়াত্তা মালিক, (২২) কানযুল উম্মাল, (২৩) মিশকাত, (২৪) মিরকাত, (২৫) লুময়াত, (২৬) আশয়াতুল লুময়াত, (২৭) ত্বীবী, (২৮) মুযাহিরে হক্ব, (২৯) ফতহুল ক্বাদির, (৩০) গায়াতুল আওতার, (৩১) তাহ্তাবী, (৩২) শামী, (৩৩) দুররুল মুখতার, (৩৪) রদ্দুল মুহতার, (৩৫) ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, (৩৬) হিদায়া, (৩৭) আইনুল হিদায়া, (৩৮) নিহায়া, (৩৯) আলমগীরী, (৪০) বাহরুর রায়িক, (৪১) কানযুদ্ দাকায়িক, (৪২) নূরুল হিদায়া, (৪৩) কিফায়া, (৪৪) নূরুল আনওয়ার, (৪৫) ইমদাদুল আহকাম, (৪৬) ফতওয়ায়ে আমীনিয়া, (৪৭) ফতওয়ায়ে দেওবন্দ ইত্যাদি)

 আলহাজ্ব  মুহম্মদ হুসাইন, (ব্যবস্থাপনা পরিচালক)

শাহ্ আমানত ফ্লাওয়ার মিল্স, খাতুনগঞ্জ, চট্টগ্রাম

মুহম্মদ আলী হুসাইন, খাতুনগঞ্জ, চট্টগ্রাম

সুওয়ালঃ  কোন ব্যক্তি তার সৎ বোনের মেয়ের মেয়ে অর্থাৎ সৎ ভাগ্নীর মেয়ে তথা নাতনীকে বিবাহ্ করতে পারবে কিনা? কুরআন-সুন্নাহ্র দলীল সহকারে বহুল প্রশংসিত মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর মাধ্যমে জাওয়াব জানতে ইচ্ছুক। জাওয়াবঃ  কুরআন ও সুন্নাহ্তে হালাল ও হারাম উভয় প্রকার বিষয়গুলো স্পষ্টরূপে বর্ণিত হয়েছে। হাদীস শরীফের ছহীহ্ কিতাব ‘বুখারী শরীফে’ ইরশাদ হয়েছে,

الحلال بين والحرام بين.

অর্থঃ- “হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট।”

            অতএব, কোন্ কোন্ মহিলাকে বিবাহ্ করা হালাল বা জায়িয  এবং কোন্ কোন্ মহিলাকে বিবাহ্ করা হারাম বা নাজায়িয তা খোদ কালাম পাকেই আল্লাহ্ পাক বলে দিয়েছেন।

 যে সকল মহিলাকে বিবাহ্ করা হারাম তার বর্ণনা দান প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

ولا تنكحوا ما نكح اباؤكم من النساء اا ما قدسلف انه كان فاحشة ومقتا وساء سبيلا حرمت عليكم امهتكم وبنتكم واخوتكم وعمتكم وخلتكم وبنت الاخ وبنت ااخت وامهتكم التى ارضعنكم واخوتكم من الرضاعة وأمهت نسائكم وربائبكم التى فى حجور كم  من نسائكم التى دخلتم بهن فان لم تكونوا دخلتم بهن فلاجناح عليكم وحائل ابنائكم الذين من اصلابكم وان تجمعوا بين الاختين الا ما قدسلف ان الله كان غفورا رحيما وامحصنت من النساء الا ما ملكت ايما نكم كتب الله عليكم.

অর্থঃ- “আর নারীদের মধ্যে তোমাদের পিতৃপুরুষ (পিতা, পিতামহ ইত্যাদি) যাদেরকে বিবাহ্ করেছেন তোমরা তাদেরকে বিবাহ্ করবে না। কিন্তু যা অতীত (জাহিলীযুগে) হয়ে গেছে তা আলাদা। এটা অশ্লীল, অতিশয় ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট আচরণ। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতাগণ, তোমাদের কন্যাগণ, তোমাদের ভগ্নীগণ, তোমাদের ফুফুগণ, তোমাদের খালাগণ, ভাইয়ের কন্যাগণ, বোনের কন্যাগণ, তোমাদের সেই সব মাতাগণ- যারা তোমাদেরকে দুধ পান করিয়েছেন, তোমাদের দুধ বোনগণ, তোমাদের স্ত্রীদের মাতাগণ, তোমরা যাদের সাথে সহবাস করেছ সে স্ত্রীদের কন্যা- যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে। যদি তাদের সাথে সহবাস না করে থাক তবে তাদের মেয়েকে বিবাহ্ করাতে তোমাদের কোন গুণাহ্ নেই। তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রী এবং দু’বোনকে একত্রে বিবাহ্ করা কিন্তু যা অতীত (জাহিলীযুগে) হয়ে গেছে তা আলাদা। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক ক্ষমাশীল, দয়ালু। এবং নারীদের মধ্যে যারা বিবাহিতা তারাও, তবে যারা তোমাদের দখলে (বান্দী) এসেছে তাদের কথা আলাদা। এ হলো আল্লাহ্ পাক-এর বিধান তোমাদের জন্য।” (সূরা নিসা/ ২২-২৪)         আলোচ্য আয়াতে কারীমায় যে সকল মহিলাদেরকে বিবাহ্ করা হারাম বলা হয়েছে তারা তিন প্রকার। (১) বংশগত কারণে হারাম, (২) দুধ পানের কারণে হারাম, (৩) বিবাহ্ সম্পর্কের কারণে হারাম।

উল্লেখ্য, আয়াতে কারীমার শব্দগুলো বহুবচন ব্যবহার করতঃ তার আম বা ব্যাপক অর্থ বুঝানো হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ امهات দ্বারা  কেবল মাকেই বিবাহ করা হারাম তা নয় বরং দাদী, দাদীর মা, নানী, নানীর মা এভাবে যতই উপরে যাক সকলকে বিবাহ্ করা হারাম। একইভাবে  بنات দ্বারা কেবল মেয়েকেই বিবাহ করা হারাম তা নয় বরং নাতনী, নাতনীর মেয়ে, পুতনী, পুতনীর মেয়ে যত নিচে যাক সকলকে বিবাহ্ করা হারাম।    আর  اخوت (ভগ্নীগণকে) এবং

بنت الاخ وبنت الاخت.

 (ভাই ও বোনের কন্যাগণকে) বিবাহ্ করা হরাম।

            এ আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে মাযহারীতে” উল্লেখ করা হয়েছে,

واخوتكم: تعم ما كانت منها لاب او لام او لهما.

অর্থঃ- اخوت” শব্দটি আম বা ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যার দ্বারা বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় বোনকেও বিবাহ্ করা হারাম।”

وبنت الاخ وبنت الاخت: يعنى قروع الاخ والاخت بناتها وبنات ابنائها وبنات بناتهما وان سفلن سواء كان الاخ والاخت لابوين او لاحدهما ذكر الله سبحانه المحرمات من النسب سبعا ويؤل امرهن الى اربعة اصناف اصله وفرعه وفرع اصله القريب وان بعد والفرع القريب للاصل البعيد واخصر من ذلك ان يقال يحرم النكاح بين الشحصين ان يكون بينهما واد اويكون احدهما فرعا احد ابوى الاخر.

অর্থঃ- “(ভাতৃকন্যা ও ভাগিনীকন্যাগণ) অর্থাৎ ভাই ও বোনের সকল শাখা-প্রশাখা কন্যা, পৌত্রী, দৌহিত্রী যত নীচের দিকে হোক। ভাই  ও বোন শব্দটি আম ও ব্যাপক। সহোদর, সহোদরা হোক বা বৈমাত্রেয়, বৈপিত্রেয় হোক। আল্লাহ্ পাক বংশগত মুহাররামাতের সংখ্যা সাত উল্লেখ করেছেন। যার সারকথা হচ্ছে, চার শ্রেণীর মেয়ে হারাম। বিবাহ্কারীর মূল ও বিবাহ্কারীর শাখা, নিকটবর্তী মূলের শাখা, নিকটবর্তী হোক কিংবা দূরবর্তী।  দূরবর্তী মূলের নিকটবর্তী শাখা। এর চেয়েও সংক্ষিপ্ত ভাষায় এরূপ বলা যায়, এমন দুই পুরুষ ও মহিলার পারস্পরিক বিবাহ্ হারাম, যাদের পরস্পরের মধ্যে জন্মগত সম্পর্ক রয়েছে কিংবা একে অপরের পিতা ও মাতার শাখা।”    অর্থাৎ সহোদরা বোন, বৈমাত্রেয় বোন, বৈপিত্রেয় বোন এবং তাদের মেয়ে অর্থাৎ ভাগ্নী, ভাগ্নীর মেয়ে তথা নাতনী, নাতনীর মেয়ে এভাবে যত নিচে যাক সকল প্রকার মেয়েকে বিবাহ্ করা হারাম।           অতএব, বৈমাত্রেয় বোন হোক অথবা বৈপিত্রেয় বোন হোক অর্থাৎ যাকে সৎ বোন বলা হয় তার মেয়ে তথা ভাগ্নী এবং তার মেয়ে অর্থাৎ নাতনীকে বিবাহ্ করা হারাম।    {দলীলসমূহ্ঃ (১) আহকামুল কুরআন, (২) জালালাইন, (৩) কুরতুবী, (৪) মাযহারী, (৫) রুহুল মায়ানী, (৬) রুহুল বয়ান, (৭) খাযিন, (৮) বাগবী, (৯) ইবনে কাছীর, (১০) তাবারী, (১১) কবীর, (১২) দুররে মুনছুর, (১৩) ফতহুল ক্বাদীর, (১৪) আইনী, (১৫) আলমগীরী, (১৬) বাহরুর রায়িক, (১৭) ক্বাযীখান, (১৮) শামী, (১৯) দুররুল মুখতার, (২০) রদ্দুল মুহতার, (২১) ফতওয়ায়ে আমীনিয়া,  (২২) তাতারখানিয়া, (২৩) আইনুল হিদায়া ইত্যাদি।}

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব