মুহম্মদ মিজানুর রহমান খান লুটন,ইউ,কে।
সুওয়ালঃ “নবীজির ইন্তিকাল দিবসে বেদ্বীন, ইবলিস খুশী।” জনৈক ব্যক্তির এ বক্তব্য কতটুকু সঠিক?
জাওয়াবঃ জনৈক ব্যক্তির উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া, কুরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ ও কুফরী।
আল্লাহ্ পাক নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণকে যে দায়িত্ব দিয়ে যমীনে পাঠান তাঁরা সে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন বা পৌঁছে দেন। অতঃপর তাঁদের দায়িত্ব শেষ হওয়ার পর আল্লাহ্ পাক তাঁদেরকে যমীন থেকে নিয়ে যান। নবীগণের দায়িত্ব কি? সে ব্যাপারে কালামুল্লাহ্ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
يا يها ارسو بلغ ما انزل ايك من ربك.
অর্থঃ- “হে রসুল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনার রবের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তা পৌঁছে দিন।” (সূরা মায়িদা/৬৭) আরো ইরশাদ হয়েছে,
وما عينا الا البغ المبين.
অর্থঃ- “(নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ বলেন), আমাদের প্রতি দায়িত্ব হচ্ছে কেবল সুস্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়া।” (সূরা ইয়াসীন/১৭)
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম-এর প্রতি নাযিলকৃত ওহী তথা অর্পিত নুবুওওয়াত-রিসালতের দায়িত্ব তিনি পরিপূর্ণরূপে উম্মতের নিকট পৌঁছে দিয়েছেন। যার বর্ণনা কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
اليوم اكملت كم دينكم واتممت عليكم نعمتى ورضيت لكم الاسلام دينا.
অর্থঃ- “আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে (দ্বীন ইসলামকে) কামিল বা পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত তা’মাম বা পূর্ণ করে দিলাম এবং আমি তোমাদের দ্বীন ইসলামের প্রতি সন্তুষ্ট হলাম।” (সূরা মায়িদা/৩) আর বিদায় হজ্জের খুৎবায় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায় সোয়া লক্ষ ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের উপস্থিতিতে আল্লাহ্ পাককে সাক্ষী রেখে ছাহাবীগণকে সম্বোধন করে বলেন, “আমি কি আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব তোমাদের নিকট সঠিকভাবে পৌঁছে দিয়েছি? উপস্থিত সকলেই সমস্বরে বলে উঠলেন, হ্যাঁ, আপনি আপনার দায়িত্ব যথাযথভাবে আমাদের নিকট পৌঁছে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
قالوا نشهد انك قد بلغت واديت ونصحت فقال باصبعه السبابة يرفعها اى السماء وينكتها اى الناس اللهم اشهد اللهم اشهد ثلث مرات.
অর্থঃ- “তাঁরা (ছাহাবীগণ) বললেন, আমরা সাক্ষ্য দিব যে, নিশ্চয়ই আপনি আমাদেরকে আল্লাহ্ পাক-এর বার্তা পৌঁছিয়েছেন, আপন কর্তব্য সম্পাদন করেছেন এবং আমাদের জন্য কল্যাণ কামনা করেছেন। তখন তিনি আপন শাহাদত অঙ্গুলী আকাশের দিকে উঠিয়ে এবং তা দ্বারা মানুষের দিকে ইঙ্গিত করে তিনবার বললেন, আল্লাহ্ পাক! আপনি সাক্ষী থাকুন, আল্লাহ্ পাক! আপনি সাক্ষী থাকুন।” (মুসলিম, আবূ দাউদ, মিশকাত) মূলতঃ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি অর্পিত নুবুওওয়াত ও রিসালতের দায়িত্বভার তথা হিদায়েতের দায়িত্বভার পরবর্তীতে তাঁর ছাহাবীগণের প্রতি অতঃপর যারা নায়েব বা উত্তরাধিকারী হবেন পর্যায়ক্রমে তাঁদের প্রতি অর্পিত হয়েছে এবং ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত তা হতেই থাকবে। এতদ্ব্যতীত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হায়াতুন্ নবী। তিনি রওজা শরীফ থেকে তাঁর ওয়ারিছগণকে আদেশ, নির্দেশ ও পরমর্শ দিয়ে থাকেন। যেমন, এ প্রসঙ্গে সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্তী আজমীরী সানজিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মুবারক জীবনীতে উল্লেখ রয়েছে যে, তিনি যখন স্বীয় পীর ছাহেব হযরত খাজা উসমান হারুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সাথে মক্কা শরীফে হজ্বের কার্যাবলী শেষ করে মদীনা শরীফে উপস্থিত হলেন। তাঁর পীর ছাহেব তাঁেক নিয়ে রওজা শরীফে উপস্থিত হয়ে বললেন, “হে মুঈনুদ্দীন! রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সালাম কর। তিনি আস্সালামু আলাইকুম ইয়া রসূলাল্লাহ্” বলে সালাম পেশ করলে সাথে সাথে জাওয়াব আসলো, ওয়া আলাইকুমুস্ সালাম ইয়া কুতুবুল মাশায়িখ।” হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর পীর ছাহেব উভয়ে সুস্পষ্টভাবে সালামের জাওয়াব শুনতে পেলেন। তিনি পরবর্তীকালে যিয়ারতে আসলে আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে সুলত্বানুল হিন্দ ও ইমামুল হিন্দ বলে সম্বোধন করেন। পরবর্তীতে তিনি যখন আবার যিয়ারতে আসলেন তখন মদীনা শরীফে অবস্থানকালেই একদা আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রওজা শরীফের খাদেমকে আদেশ করলেন, “মুঈনুদ্দীনকে ডাকো।” রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ মুতাবেক রওজা শরীফের খাদেম মুঈনুদ্দীন নামে অনেক লোককে ডেকে নিয়ে রওজা শরীফের নিকট উপস্থিত করলে রওজা শরীফ হতে আদেশ হলো, খাজা মুঈনুদ্দীন সানজিরী চিশ্তীকে ডাকো। খাদেম খুবই ব্যতিব্যস্ত হয়ে অনেক অনুসন্ধানের পর হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্তী সানজিরী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে পেয়ে তাঁকে রওজা শরীফে হাযির করলেন। তখন রওজা শরীফ হতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদেশ করলেন, “হে মুঈনুদ্দীন! তুমি আমার পিয়ারা উম্মত। তোমার প্রতি আমি অত্যন্ত সন্তুষ্ট। আমি তোমাকে হিন্দুস্থানের বেলায়েত প্রদান করলাম। তুমি অবিলম্বে তথায় গিয়ে তথাকার কাফির ও মুশরিকদের সত্য পথ প্রদর্শন কর।” রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এই আদেশ শুনে হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি অত্যন্ত আনন্দিত হলেন এবং তখনই হিন্দুস্থানে রওয়ানা হওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন। কিন্তু মদীনা শরীফ হতে হিন্দুস্থান কোন্ দিকে ও কত দূরে অবস্থিত এ সব কিছুই তাঁর জানা ছিলনা। তাই তিনি খুব চিন্তিত হয়ে পড়লেন। রওজা শরীফ হতে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “হে মুঈনুদ্দীন! তুমি কোন চিন্তা করোনা। তুমি কাশ্ফের দ্বারা হিন্দুস্থানের রাস্তা দেখে নিয়ে তথায় রওয়ানা হয়ে যাও। আল্লাহ্ তায়ালা তোমার সাথে আছেন। হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্তী আজমিরী সানজিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তৎক্ষনাত রওজা শরীফের নিকটে মুরাক্বাবায় বসে মদীনা শরীফ হতে আরম্ভ করে ভারতের আজমীর পর্যন্ত সমগ্র ভূ-ভাগের একখানা বিরাট মানচিত্র স্বীয় চোখের সামনে দেখতে পেলেন। তিনি সেই মানচিত্র অনুযায়ী মদীনা শরীফ হতে হিন্দুস্থানের আজমীর শরীফে খুব সহজেই পৌঁছলেন। (সুবহানাল্লাহ্) (সুলতানুল হিন্দু, গরীবে নেওয়াজ, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সীরতগ্রন্থসমূহ) আরো বণিত রয়েছে যে, শাইখুল মাশায়িখ হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি পাক ভারত উপমহাদেশে হাদীস শাস্ত্রের প্রচার-প্রসার ঘটিয়েছেন। তিনি যখন পড়া-শুনা শেষ করে রওজা শরীফের পাশেই অবস্থান করতঃ তা’লীম ও দর্স-তাদরীস দিতে লাগলেন তখন একদা আখিরী রসুল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে ডেকে বললেন, “হে আব্দুল হক্ব! তোমার হেদায়েতের স্থান এখানে নয়। তুমি হিন্দুস্থানে চলে যাও। সেখানে গিয়ে তুমি মানুষদেরকে দ্বীনের পথে আহবান কর। হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরয করলেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি হিন্দুস্থানে চলে যাব সত্যিই কিন্তু সেখানে এক মূহুর্তের জন্য আপনার যিয়ারত না পেলে নির্ঘাত আমার ইন্তেকাল হবে। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “চিন্তা করোনা, প্রতিদিন তুমি আমার সাক্ষাৎ লাভ করবে। (সুবহানাল্লাহ্) (আখবারুল আখইয়ার, তাযকিরায়ে গাউছিয়া, ইনশিরাহুছ ছুদূর, বালাগুল মুবীন, সীরাতুন নবী বা’দ আজ বিসালুন নবী) এ ব্যতীত আরো শত-সহস্য ঘটনা রয়েছে যাতে প্রমাণিত হয়, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হায়াতুন্ নবী। তিনি রওজা শরীফ থেকেই তাঁর ওয়ারিছ তথা নায়েবদেরকে আদেশ-নির্দেশ, উপদেশ ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। উল্লেখ্য, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তিকাল ইবলিসের খুশীর কারণ এ কথা বলা কুফরী। কারণ আল্লহ্ পাক ইরশাদ করেন,
كل نفس ذائقة الموت.
অর্থঃ- “প্রত্যেক নফস্কে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।” (সূরা আনকাবুত/৫৭) আল্লাহ্ পাক আরো বলেন,
انك ميت وانهم ميتون.
অর্থঃ- “ইন্তিকাল করবেন এবং অন্যান্য সকলেই ইন্তিকাল করবে।” (সূরা যুমার/৩০)
অর্থাৎ আল্লাহ্ পাকই তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ইন্তিকাল দান করেছেন। আর স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা কবুল করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তিকাল গ্রহণ ও বরণ করেন। যেমন, এর ব্যাখায় হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে,
اذ جاءه ملك الموت فدخل ووقف بين يديه وقال السلام عليك يا رسول الله انى جئتك زائرا وقابضا وأذن ى ربى وربك ان لا اقبض روحك الا باذنك فقال اصبر حتى يأتينى اخى جبرأئل فبينما هم فى الحديث جاءه جبرائيل وقال السلام عليك يا رسول اله الوداع الوداع ثم قال انك ميت وانهم ميتون وكل نفس ذائقة الموت وان ربك لمشتاق اليك ويسلم عليك قال النبى صلى الله عليه وسلم يا اخى جبرائي من لا متى من بعدى قال يا محمد ربك يقرءك اسلام ويقول انا الكفيل بهم وعزتى وجلالى لاقرن عينيه فى امته وان الجنة محرمة على جميع الامم حتى يد خله حبيبى محمد وامته اويس انزل فى كتابه العزيز ولسوف يعطيك ربك فتر ضى فقال الان تمت امنيتى وطابت نفسى للموت فانى لاارضى ان واحدا من امتى يدخل النار وسجد شكرا لله على ما اعطاه وارضاه وتوادع مع جبرائيل وداع الفراق ثم اغمى عليه حتى توفاه الله يوم الاثنين لاثنى عشر يوما من الربيع الاول.
অর্থঃ- “যখন মালাকুল মউত হযরত আযরাঈল আলাইহিস্ সালাম মউতের পয়গাম নিয়ে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট আসলেন, এসে তাঁর হুজরা শরীফে প্রবেশ করতঃ তাঁর মুখোমুখি দাঁড়ালেন এবং বললেন, “হে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রতি ‘সালাম’ শান্তি বর্ষিত হোক। আমি আপনার সাক্ষাৎ লাভ এবং আপনাকে নিতে এসেছি। এ ব্যাপারে আপনার ও আমার রব নির্দেশ দিয়েছেন যে, আপনার অনুমতি ব্যতীত যেন আমি আপনাকে না নেই।” এটা শুনে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “হযরত জিবরাঈল আলাইহিস্ সাল্লাম আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।” উভয়ের মধ্যে কথা-বার্তা চলছিল, এমনি সময় হযরত জিবরাঈল আলাইহিস্ সালাম এসে পৌঁছলেন এবং বললেন, “হে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। মহান বিদায়, মহান বিদায়! তৎপর হযরত জিবরাঈল আলাইহিস্ সালাম বললেন, আপনিও বিদায় নিবেন এবং সকলেই বিদায় নিবে। প্রত্যেক নফস্ই মউতের স্বাদ গ্রহণ করবে। আর নিশ্চয়ই আপনার রব আপনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন এবং তিনি আপনার প্রতি সালাম পাঠিয়েছেন।” আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হে জিবরাঈল আলাইহিস্ সালাম, আমার অবর্তমানে আমার উম্মতের জন্য কে থাকবে?” তিনি বললেন, “আপনার রব আপনাকে সালাম জানিয়েছেন এবং বলেছেন, আমি নিজেই তাদের জিম্মাদার। আমার ইজ্জত ও জালালিয়াতের শপথ, আমি অবশ্যই তাঁর উম্মতকে সুখে রেখে তাঁর চক্ষুদ্বয় শীতল করব। তাছাড়া আমার হাবীবও তাঁর উম্মত জান্নাতে প্রবেশের পূর্বে সকল মানুষের জন্য জান্নাতে প্রবেশ থাকবে নিষিদ্ধ। তিনি তো তাঁর মহান কিতাবে নাযিল করেছেন, “অতিসত্বর আপনার রব আপনাকে এমনি দান করবেন, যাতে আপনি হবেন সন্তুষ্ট।” এ কথা শুনে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, এখন আমার মনের আশা পূর্ণ হলো এবং আমি ইন্তিকাল বরণে পরিতৃপ্ত হলাম। কেননা আমার একটি উম্মতও দোযখে প্রবেশ করলে আমি খুশি থাকব না।” তৎপর তিনি আল্লাহ্ পাক-এর উদ্দেশ্যে শুকরানা স্বরূপ সিজদা করলেন তাঁর প্রদত্ব দান ও রেজামন্দীর বিনিময়ে আর অন্তিম বিদায় জানালেন একে অপরকে। অতঃপর আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লেন আর এ অবস্থাতেই আল্লাহ্ পাক তাঁকে ওফাত দান করলেন।” আর সে দিনটি ছিল ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার। এ বিষয়টি বর্ণনার তারতম্যে বায়হাক্বী, দালায়িলুন্ নুবুওওয়াহ, মিশকাত ইত্যাদি হাদীস শরীফের কিতাব সমূহেও রয়েছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, যারা বলে নবীজির ইন্তিকালে বেদ্বীন, ইবলিস খুশী হয়েছে। এর দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, স্বয়ং আল্লাহ্ পাক ও আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই ইবলিসকে খুশী করেছেন। অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবলিসকে খুশী করার জন্যই ইন্তিকাল দান করেছেন ও গ্রহণ করেছেন। উল্লেখ্য এ আক্বীদা কোন মুসলমান পোষণ করতে পারেনা। একমাত্র কাফিরদের পক্ষেই এ আক্বীদা পোষণ করা সম্ভব।
আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তিকালে ইবলিসের সন্তুষ্ট হওয়ার পরিবর্তে অসন্তুষ্ট হওয়ারই কথা। কারণ ইবলিস বাধা দিয়ে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোন কাজই অসম্পূর্ণ রাখতে পারেনি।
একজন নবীর ইন্তিকাল এটাই প্রমাণ করে যে, তিনি তাঁর প্রতি আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে আল্লাহ্ পাক-এর সন্তুষ্টি অর্জন করে আল্লাহ্ পাক-এর সান্নিধ্যে তাশরীফ নিয়েছেন। আর আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন হায়াতুন্ নবী। তিনি পর্দার আড়ালে রওজা শরীফে অবস্থান করে সেখান থেকে তাঁর নায়েব বা ওয়ারিছদেরকে আদেশ-নির্দেশ ও উপদেশ দিয়ে সমস্ত কাজ সমাধা করিয়ে থাকেন।
সুতরাং নবীজির ইন্তিকাল দিবসে বেদ্বীন কিংবা ইবলিসের খুশী হওয়ার মত কোন বিষয়ই ছিলনা।
অতএব, “নবীজির ইন্তিকাল দিবসে বেদ্বীন, ইবলিস খুশি” জনৈক ব্যক্তির এ বক্তব্য সম্পূর্ণই অশুদ্ধ, কুরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ ও কুফরী বলে প্রমাণিত হলো। {দলীলসমূহ ঃ (১) রহুল মায়ানী, (২) রুহুল বয়ান, (৩) মাযহারী, (৪) ইবনে কাছীর, (৫) ইবনে আব্বাস, (৬) খাযেন, (৭) বাগবী, (৮) কুরতুবী, (৯) কবীর, (১০) তাবারী, (১১) মুসলিম, (১২) আবূ দাউদ, (১৩) মিশকাত, (১৪) মিরকাত, (১৫) সীরাত-ই-সুলত্বনুল হিন্দ, (১৬) আখবারুল আখইয়ার, (১৭) তাযকিরায়ে গাউছিয়া, (১৮) ইনশিরাহুছ ছুদূর, (১৯) বালাগুল মুবীন, (২০) সীরাতুন নবী বা’দ আজ বিসালুন নবী ইত্যাদি}
মুহম্মদ তাজুল ইসলাম সভাপতি- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত কাউনিয়া শাখা, রংপুর। সুওয়ালঃ গত ৩১ জানুয়ারী ২০০২ ঈঃ দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় বলা হয়েছে, “যে সব খরগোশের পায়ের খুরা গরু-ছাগলের মতো শুধুমাত্র ঐ খরগোশের গোশ্ত খাওয়া জায়িয।” আরো বলা হয়েছে যে, “ঢাকায় বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ইসলামী চিন্তাবিদ জানান, যে সব খরগোশের পায়ের ক্ষুরা ছাগল কিংবা গরুর ক্ষুরার মতো শুধুমাত্র সে সব খরগোশের গোস্ত খাওয়া যাবে। বিড়াল বা কুকুরের ক্ষুরার মতো যে সব খরগোশের খরা হবে সে সব খরগোশের গোস্ত নাজায়িয।”
এ বক্তব্য শরীয়তসম্মত কিনা? দলীলসহ জাওয়াব দানে বাধিত করবেন। জাওয়াবঃ খরগোশের গোশ্ত খাওয়া সম্পর্কে দৈনিক ইনকিলাব যে অভিমত ব্যক্ত করেছে এবং তাদের কথিত শীর্ষস্থানীয় ইসলামী চিন্তাবিদরা যে রায় দিয়েছে তা শরীয়তসম্মত নয়। বরং তা সম্পূর্ণই ধারণাপ্রসূত, দলীল-আদিল্লাবিহীন, ভুল ও শরীয়ত তথা কুরআন-সুন্নাহ্র সম্পূর্ণ খিলাফ।
হাদীস শরীফের ছহীহ্ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে যে, “হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খরগোশের গোশ্ত হাদিয়া দিলে তিনি তা গ্রহণ করেছেন, খেয়েছেন এবং খেতেও বলেছেন।”
এ বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, খরগোশের গোশ্ত খাওয়া কেবল হালালই নয় বরং সুন্নতেরও অন্তর্ভুক্ত।
উল্লেখ্য, খরগোশের পা হরিণ বা গরু-ছাগলের মতো হোক কিংবা বিড়ালের মত হোক উভয় প্রকার পা বিশিষ্ট খরগোশই খাওয়া সম্পূর্ণ হালাল বলে ফতওয়া দেয়া হয়েছে। আরো উল্লেখ্য যে, শরীয়তে খরগোশের গোশ্ত খাওয়া হালাল। এটাকে যদি কেউ নাজায়িয বা হারাম বলে তাহলে শরীয়তে বর্ণিত হালালকে হারাম বলে সাব্যস্ত করা হয়। আর আক্বাইদের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, “কেউ যদি শরীয়তের কোন হালালকে হারাম বলে তাহলে তা সম্পূর্ণ কুফরী হবে।” অতএব, ফতওয়া দিতে হলে তাহক্বীক করে ফতওয়া দিতে হবে। অন্যথায় নিজের ঈমানও নষ্ট হবে এবং এতে যারা সংশ্লিষ্ট হবে তাদের ঈমানও নষ্ট হবে। আর এটা শুধু হানাফী মাযহাবেই নয় বরং হানাফী, শাফেয়ী, হাম্বলী, মালেকী প্রত্যেক মাযহাবেই হালাল বলে ফতওয়া দেয়া হয়েছে। {দলীলসমূহঃ (১) তিরমিযী, (২) আবূ দাউদ, (৩) নাসাঈ, (৪) ইবনে মাযাহ্, (৫) আহমদ, (৬) হাকিম, (৭) দারু কুতনী, (৮) ফতহুল বারী, (৯) মুনতাক্বা, (১০) নাইলুল আওতার, (১১) তালখীছ, (১২) শরহে মুসলিম লিন্ নববী, (১৩) তুহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী, (১৪) বযলুল মাজহুদ, (১৫) হেদায়া, (১৬) শামী, (১৭) তানবীরুল আবছার, (১৮) দুররুল মুখতার, (১৯) রদ্দুল মুহতার, (২০) আল কামিল ফিত্ তারীখ, (২১) হায়াতুল হায়ওয়ান, (২২) ফতওয়ায়ে আমীনিয়া ইত্যাদি} মুহম্মদ জাহাঙ্গীর আলম কোম্পানীগঞ্জ, কুমিল্লা সুওয়ালঃ ঢাকা মুহম্মদপুর জামিয়া রাহমানিয়া থেকে প্রকাশিত অখ্যাত পত্রিকা নভেম্বর/২০০১ ঈসায়ী সংখ্যায় এক জিজ্ঞাসার-জবাবে বলা হয়েছে, “আমাদের দেশে মীলাদ ও ক্বিয়াম সাধারণতঃ যে নিয়মে করা হয়ে থাকে …… তা বিভিন্ন দিক দিয়ে আপত্তিকর এবং কুরআন, হাদীস, ইজ্মা ও কিয়াসের নীতি বহির্ভূত। এর অস্তিত্ব ইসলামী শরীয়তে নেই।” এখন আমার সুওয়াল হলো- অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন। জাওয়াবঃ “মীলাদ ও ক্বিয়াম” সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং সম্পূর্ণ মিথ্যা, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে। মূলতঃ আমাদের দেশে মীলাদ ও ক্বিয়াম সাধারণত যে নিয়মে করা হয় তা কোন দিক দিয়েই আপত্তিকরও নয় এবং কুরআন, হাদীস, ইজমা ও ক্বিয়াসের নীতি বহির্ভূতও নয় । বরং আমাদের দেশে মীলাদ ও ক্বিয়াম সাধারণত যে নিয়মে করা হয় তার প্রত্যেকটিই আপত্তিহীন ও কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াস সম্মত। তাই ফতওয়া দেয়া হয়েছে, বর্তমান মীলাদ ও ক্বিয়াম সুন্নতে উম্মত বা মুস্তাহাসান।
বর্তমানে আমাদের দেশে যে মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয় তার বর্ণনা নিম্নে উল্লেখ করা হলো- প্রথমেই পবিত্র কালামে পাক হতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ফযীলত সম্বলিত আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করা হয়। যেমন, ইরশাদ হয়েছে,
لقد جاءكم رسول من انفسكم الخ.
অর্থঃ- “অবশ্যই তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য থেকে একজন রসূল আগমন করছেন. …।” (সূরা তওবা/১২৮)
ماكان محمد ابا احد من رجالكم ولكن رسول الله وخاتم النبين وكان الله بكل شئ عيما.
অর্থঃ- “ মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের কোন পুরুষের পিতা নন। বরং তিনি হলেন আল্লাহ্ পাক-এর রসূল এবং শেষ নবী। আর আল্লাহ্ পাক সব বিষয় সম্পর্কে অবগত আছেন।” (সূরা আহযাব/৪০)
ইত্যাদি আয়াত শরীফ পাঠ করা হয়। যাতে স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এরই মীলাদ বা ছানা-ছিফত বর্ণনা করা হয়েছে। অতঃপর মহান আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশ صلوا عليه (তোমরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর দরূদ শরীফ পাঠ কর) এ আয়াত শরীফের নির্দেশ পালনার্থে দরূদ শরীফ পাঠ করা হয়। তারপর বরকত লাভের উদ্দেশ্যে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর “তাওয়াল্লুদ শরীফ” অর্থাৎ পবিত্র বিলাদত শরীফের বর্ণনা আরবী ভাষায় সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করা হয়। অতঃপর দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করা হয় কারণ ছালাম দাঁড়িয়ে দেয়া সুন্নত, যা শরাফত ও ভদ্রতা। তাই সেহেতু সম্মানার্থে ও আদব রক্ষার্থে ক্বিয়াম করে বা দাঁড়িয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি সালাম পাঠ করা হয় যেহেতু আল্লাহ্ পাক বলেছেন,
وسموا تسليما.
অর্থঃ- “তোমরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর সালাম পাঠ কর।” (সূরা আহ্যাব/৫৬)
অতঃপর দোয়া করার জন্য বসে আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশ
ادعونى استجب لكم.
অর্থঃ- “তোমরা আমার নিকট দোয়া করো আমি তা কবুল করবো।” (সূরা আল মু’মিন/৬০) এ আদেশ পালনার্থে বসে ছওয়াব রেসানী করে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উছীলা দিয়ে মুনাজাত করা হয়। যাতে বান্দা আল্লাহ্ পাক-এর সন্তুষ্টি ও আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি হাছিল করতে পারে। অতএব, উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, বর্তমানে আমাদের দেশে যে তরতীবে মীলাদ ক্বিয়াম পাঠ করা হয় তা যেমন শরীয়াতের দৃষ্টিতে আপত্তিকর নয় তেমনি তা কুরআন, হাদীস, ইজমা ও ক্বিয়াসের নীতি বহির্ভূতও নয়। আরো উল্লেখ্য, যা শরীয়তে আপত্তিকর নয় এবং কুরআন, হাদীস, ইজমা ও ক্বিয়াসের নীতি বহির্ভূত ও নয় তার অস্তিত্ব অবশ্যই ইসলামী শরীয়তে রয়েছে। কাজেই যে সমস্ত আমলের অস্তিত্ব ইসলামী শরীয়তে রয়েছে সে সমস্ত আমলকে কেউ যদি শরীয়তের খেলাফ বলে তাহলে তা অবশ্যই কাট্টা কুফরী হবে। উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ্ পাক ঈমানদারদেরকে তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ছলাত ও ছালাম পাঠ করার আদেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,
يايها اذين امنوا صلوا عليه وسموا تسليما.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার হাবীব (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি সালাত ও সালাম পাঠ কর।” (সূরা আহ্্্্্যাব/৫৬) উক্ত আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ্ পাক ঈমানদার বান্দাদেরকে তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর আমভাবে صلوة (ছলাত বা দরূদ শরীফ) ও سلام (সালাম) পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন। যার মধ্যে কোন প্রকার দরূদ ও ছালামকে নির্দিষ্ট করা হয়নি। তাই উপরোক্ত আয়াত শরীফের গুরুত্ব ও মাহাত্মের দিকে লক্ষ্য করে ইমাম-মুজ্তাহিদ, ফক্বীহ ও আলিমগণ মীলাদ-ক্বিয়ামের এরূপ নিয়ম নির্ধারণ করেছেন। যেন সকলেই অল্প সময়ের মধ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছানা-ছিফত করতে ও তাঁর প্রতি দরূদ ও ছালাম পাঠ করতে পারে। ঢাকা মুহম্মদপুর জামেয়া রহমানিয়া থেকে প্রকাশিত অখ্যাত পত্রিকার বক্তব্য সমূহ সম্পূর্ণরূপে ভুল, মনগড়া অজ্ঞতা প্রসূত ও মূর্খতা সূচক- যা কাট্টা কুফরী। কারণ ইসলামী শরীয়তে তথা কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসে মীলাদ ও ক্বিয়ামের অস্তিত্ব বা দলীলের অভাব নেই। যা আমরা আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ২৮, ৩৬, ৪০, ৪৭, ৬৮, ৮৮, ৯৩তম সংখ্যায় কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, তাফসীর ও ফিক্বাহ্র অসংখ্য কিতাবের দলীল-আদিল্লাহ্ দ্বারা বিস্তারিতভাবে প্রমাণ করেছি যে, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম সুন্নতে উম্মত মুস্তাহ্সান।” {বিঃ দ্রঃ মীলাদ ক্বিয়াম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর উপরোক্ত সংখ্যাগুলো ভালভাবে পাঠ করুন।} হাফিয মুহম্মদ জহিরুদ্দীন সভাপতি আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত রাজপাড়া, রাজশাহী। সুওয়ালঃ মাসিক মদীনা ফেব্রুয়ারী/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে “মহিলাদের জন্য মসজিদে ও ঈদগাহে গিয়ে জামায়াতের সহিত নামায আদায় করা সম্পর্কে নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়। যেমন, ২৫ নং প্রশ্নোত্তরে বলা হয়েছে, প্রশ্নঃ কোরআন ও হাদীসের আলোকে মহিলাদের জামাতে নামায আদায় করার কোন আদেশ বা নিষেধাজ্ঞা আছে কিনা? হযরত মুহম্মদের (সাঃ) জীবদ্দশায় মহিলাদের জামাতে নামায আদায়ের কোন ব্যবস্থা ছিল কিনা? উত্তরঃ হযরত মুহম্মদ মোস্তফা (সাঃ) এর জমানায় মহিলারা মসজিদের জামাতে, জুমায় এবং ঈদের জামাতে শরীক হতেন। হযরত নবী করীম (সাঃ) এ মর্মে একখানা হাদীসও রয়েছে যে, “আল্লাহ্র বান্দীদেরকে আল্লাহ্র ঘরে(মসজিদ) আসতে বারণ করোনা।” পরবর্তীতে অবশ্য উম্মতজননী হযরত আয়েশা (রাঃ) মেয়েদের বিশেষতঃ যুবতীদেরকে মসজিদে যেতে নিরুৎসাহিত করতেন। বলতেন, পরিবর্তিত অবস্থায় মেয়েদের আচরণে যে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, তা যদি হযরত নবী করীম (সাঃ) এর সময়ে দেখা দিত তবে তিনি অবশ্যই মেয়েদেরকে মসজিদে আসতে বারণ করতেন। ২৬নং প্রশ্নোত্তরে বলা হয়েছে, প্রশ্নঃ গত রমযান মাসে একটি মসজিদে তারাবীর নামাযে মহিলাদের অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। কিন্তু রোযা শেষ হওয়ার পর আর কোন মহিলা মসজিদে যায় না। প্রশ্ন হলো, মহিলাদের কি পুরুষের পার্শ্বে কালো পর্দা করে নামায পড়া জায়েয আছে? উত্তরঃ পর্দা রক্ষার নিশ্চয়তা থাকলে মহিলাদের পক্ষে মসজিদে গিয়ে নামায পড়া জায়েয আছে। হযরত নবী করীমের (সাঃ) যুগে মহিলাগণ মসজিদে নামায পড়তেন। ঈদ-জুমাতেও শরীক হতেন। সুতরাং তারাবীর জামাতে মহিলাদের শামিল হওয়াতে দোষের কিছু নাই। ২৯নং প্রশ্নোত্তরে বলা হয়েছে, প্রশ্নঃ মেয়েদের জন্য ঈদের নামায পড়া জায়েয কিনা? উত্তরঃ মেয়েদের জন্য ঈদের নামাযে অংশগ্রহণ করা ওয়াজেব নয়। না পড়লে তাঁরা গোনাহর ভাগী হবেন না। পর্দা রক্ষা করে পড়তে পারলে নাজায়েয হবে না বরং ছওয়াবের ভাগী হবেন। ্রএবং ৮৯নং প্রশ্নোত্তরে বলা হয়েছে, প্রশ্নঃ মেয়েরা পর্দা রক্ষা করে ঈদের নামায পড়তে পারবে কি? মেয়েদের জামাতে মেয়েরা ইমামতি করতে পারবে কি? কয়েকটি বাড়ীর মেয়েরা এক বাড়ীতে সমবেত হয়। পুরুষেরা ঈদগাহে যাওয়ার পর একজন মহিলার ইমামতিতে ঈদের নামায আদায় করে। একজন হাফেজ সাহেব ফতুয়া দিয়েছেন, যে মহিলা উক্ত ঈদের জামাতে ইমামতি করেছে তার বিবাহ্ বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। উক্ত ফতোয়াটি কতটুকু সঠিক তা বিস্তারিত জানাবেন। উত্তরঃ মেয়েরা ইচ্ছা করলে পূর্ণ পর্দার সাথে জুমুয়া ও ঈদের জামাতে শরীক হয়ে নামায আদায় করতে পারেন। জুমুয়া এবং ঈদের জামাতে শরীক হওয়ার ব্যাপারে যদিও তাদের উপর কোন তাগিদ নাই, তবুও যদি তারা জামাতে শরীফ হয়ে ঈদ ও জুমা আদায় করতে পারেন তবে নিঃসন্দেহে ছওয়াবের ভাগী হবেন। শুধু মেয়েরা মেয়ে লোকের ইমামতিতে জামাত কায়েম করা দুরস্ত নয়। কেউ এরূপ জামাত কায়েম করলে তা মকরূহ্ হবে। তবে যে মহিলা মেয়েদের জামাতে ইমামতি করেছেন তার বিবাহ্ বিচ্ছেদ হয়ে যাবে একথা মোটেও সঠিক নয়। এখন আমার সুওয়াল হলো- মহিলাদের জন্য মসজিদে ও ঈদগাহে গিয়ে অথবা পুরুষের জামায়াতে শরীক হয়ে ঈদ, জুমুয়া, তারাবীহ্ ও পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা এবং ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে সঠিক জাওয়াব জানিয়ে বাধিত করবেন। জাওয়াবঃ মহিলাদের জন্য মসজিদে ও ঈদগাহে গিয়ে অথবা পুরুষের জামায়াতে শরীক হয়ে ঈদ, জুমুয়া, তারাবীহ্ ও পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সমূহ সঠিক হয়নি। বরং কুফরী মূলক হয়েছে। কারণ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আম ফতওয়া হলো, মহিলাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামায, জুমুয়া, তারাবীহ্ ও ঈদের নামাযসহ যে কোন নামায জামায়াতের সাথে আদায় করার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়ে পুরুষের জামায়াতে শরীক হওয়া বা মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া মাকরূহে তাহ্রীমী। আর খাছ ফতওয়া হলো কুফরী। মাহিউদ্দীন তার মাসিক পত্রিকায় মহিলা জামায়াত জায়েয সাব্যস্ত করতে গিয়ে যে সমস্ত বিষয় উল্লেখ করেছে তা হচ্ছে, (১) আল্লাহ্র বান্দীদেরকে আল্লাহ্র ঘরে মসজিদে আসতে বারণ করোনা। (২) জামায়াতে মহিলাদের শামীল হওয়াতে দোষের কিছু নাই। (৩) পর্দা রক্ষার নিশ্চয়তা থাকলে জায়েয, না জায়েয হবেনা। (৪) মহিলারা জামায়াতে শরীক হয় তবে নিঃসন্দেহে ছওয়াবের ভাগী হবে।
উল্লিখিত বিষয়গুলোর জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, মহিলারা আখিরী নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জামানায় মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায আদায় করতেন। এ প্রসঙ্গে অনেক হাদীস শরীফ রয়েছে। উল্লেখ, কুরআন-সুন্নাহ্ তথা শরীয়ত সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরে সবচেয়ে বেশী বুঝেছেন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অতঃপর হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ইল্ম সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে যে, তিনি ইন্তিকাল করার পর তাঁর ছেলে অন্যতম ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আজকে ইলমের দশ ভাগের নয় ভাগ বিদায় নিলো। আর এটা উম্মতের ইজমা যে, সমস্ত উম্মতের মধ্যে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম সবচাইতে বেশী জ্ঞানী ও গুণী যা বর্ণনা করেছেন ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। আরো উল্লেখ্য, হযরত আবূ বরক ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে খলীফা মনোনীত করলেন তখন লোকেরা এসে জিজ্ঞাসা করলেন, হে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি ইন্তিকালের পর আল্লাহ্ পাক-এর নিকট এ সম্পর্কে কি জবাব দিবেন? তখন তিনি বললেন, আমি আল্লাহ্ পাক-এর নিকট বলবো যে, হে বারে ইলাহী! আপনার যমীনে সবচাইতে উত্তম যে ব্যক্তিকে পেয়েছি তাঁকেই আমি খিলাফত দিয়ে এসেছি। তিনি হচ্ছেন, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
আর খাছ ভাবে “বুখারী শরীফে” হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে,
حب ابى بكر وعمر ايمان وبغضهما كفر.
অর্থঃ- “হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর প্রতি মুহব্বত পোষণ করা হচ্ছে ঈমান আর তাঁদের প্রতি বিরোধীতা বা বিদ্বেষ পোষণ করা হচ্ছে কুফরী।” হাদীস শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
لو كان بعدى نبى لكان عمر بن اخطاب رضى الله تعاى عنه.
অর্থঃ- “আমার পর কেউ যদি নবী হতেন তাহলে অবশ্যই সে ব্যক্তি হতেন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।” আর তাফসীরে বর্ণিত রয়েছে, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বাইশটিরও বেশী বিষয় সম্পর্কে মত পেশ করার পর আল্লাহ্ পাক সে মতকে কবুল করে আয়াত শরীফ নাযিল করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
الحق ينطق عى سان عمر رضى اله تعالى عنه.
অর্থঃ- “স্বয়ং আল্লাহ্ পাক হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর যবানে কথা বলেন।” আরো ইরশাদ করেন,
ان الله تعالى وضع الحق على لسان عمر رضى الله تعالى عنه.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তায়ালা হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর যবানে হক্ব রেখেছেন। অর্থাৎ তিনি সর্বদা হক্বের মধ্যে দায়েম-কায়েম ছিলেন।” (আবূ দাউদ) হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়,
عليكم بسنتى وسنة اخفاء اراشدين امهدين.
অর্থঃ- “তোমাদের জন্য আমার সুন্নত ও আমার খুলাফা-ই রাশেদীনের সুন্নত অবশ্যই পালনীয়।” (আহমদ, আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাযাহ্, মিশকাত) এই হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুই পর্দার গুরুত্ব ও মহিলাদের ঘরে নামায আদায় করার উৎসাহ ও ফযীলতপূর্ণ হাদীস শরীফের দিকে লক্ষ্য রেখে ইজতিহাদ করতঃ মহিলাদেরকে মসজিদে এসে জামায়াতে নামায আদায় করাকে নিষেধ করে দেন। যেমন কিতাবে উল্লেখ আছে,
ولقد نهى عمر رضى الله عنه النساء عن الخروج الى المساجد.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মহিলাদেরকে জামায়াতের জন্য মসজিদে যেতে নিষেধ করেন।” তখন মহিলারা হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর নিকট গিয়ে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেন, তখন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন,
لو ان رسول اله صلى اله عليه وسلم رأى ما احدثت انساء لمنعهن.
অর্থঃ- “যদি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলাদের বর্তমান অবস্থা দেখতেন, তবে অবশ্যই নিষেধ করতেন।” (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ) অর্থাৎ আমি এটাকে পূর্ণ সমর্থন করি। আর এটাকে সমর্থন করার অর্থই হলো, “মহিলাদের মসজিদে যেতে নিষেধ করা।” হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা সম্পর্কে হাদীস শরীফে উল্লেখ রয়েছে,
خذوا نصف دينكم من هذه الحميرة.
অর্থঃ- “তোমরা অর্ধেক দ্বীন গ্রহণ করবে হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর কাছ থেকে।”
উপরোক্ত দলীলের ভিত্তিতে প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানায়, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর যামানায় এবং হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খিলাফতের প্রথম যামানায় মহিলাদের জামায়াত জারী ছিল। এতদ্বসত্বেও হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মেয়েদের সকল প্রকার নামাযের জামায়াত নিষিদ্ধ ও বন্ধ করে দেন। এ বিষয়টি মহিলারা হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে অবগত করলে তিনিও মেয়েদের সর্ব প্রকার নামাযের জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ার পক্ষে মত দেন এবং হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা অনহুমগণও তা সমর্থন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে সকল ইমাম-মুজতাহিদগণ ফতওয়া দেন যে, মহিলাদের জন্য সকল নামাযের জন্য মসজিদে, ঈদগাহ্ েও যে কোন স্থানে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী। সুতরাং প্রথম যুগের দোহাই দিয়ে মহিলাদের জামায়াত জারী করার অর্থই হলো, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লহু তায়ালা আনহুমগণের বিরোধীতা করা। আর হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের বিরোধীতা করার কারণে খাছ ফতওয়া হচ্ছে কুফরী। কারণ আল্লাহ পাক বলেন,
ليغيظ بهم الكفار.
অর্থঃ- “কাফিররাই তাঁদের (হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের) প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে।” (সূরা ফাত্হ্/২৯) এর ব্যাখ্যায় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
من غاظه اصحاب محمد صلى الله عيه وسلم فهو كافر.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে সে কাফির।” হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত হয়েছে,
حب الصحابة ايمان وبغضهم كفر.
অর্থঃ- “হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মুহব্বত হচ্ছে ঈমান। আর তাদের বিরোধীতা বা বিদ্বেষ পোষণ করা হচ্ছে কুফরী।” (কানযুল উম্মাল) যার পরিপ্রেক্ষিতে আকাঈদের কিতাবে বর্ণনা করা হয়েছে, “হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মুহব্বত হচ্ছে ঈমানের কারণ। আর বিরোধীতা হচ্ছে কুফরীর কারণ।” অতএব, উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ফতওয়া, হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর সমর্থন এবং ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের ইজ্মাকে উপেক্ষা করে যারা মহিলাদের জামায়াত জারী করার কোশেশ করবে তারা মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারবেনা। তারা কাট্টা কাফির হয়ে যাবে। কাজেই মাহিউদ্দীন হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের বিরোধীতা করে মহিলাদের জামায়াত জারী করতে কোশেশ করে কুফরী করেছে। দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, যেহেতু হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম মেয়েদের জামায়াত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন এরই পরিপ্রেক্ষিতে সকল ইমাম-মুজতাহিদগণও বিনা শর্ত-শারায়েতে মহিলাদের জামায়াতে যাওয়া আমভাবে মাকরূহ্ বলে ফতওয়া দিয়েছেন যা ইজমায়ে উম্মত হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। যেমন, “ইমদাদুল আহকাম কিতাবের” ১ম খন্ডের ৪২৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وقد اجمعت الامة على كراهة خروج انساء الى مسجد اجماعة.
অর্থঃ- “মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতের সাথে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী হওয়ার ব্যাপারে উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।” ইজমায়ে উম্মতের বিরোধীতা করা অবশ্যই দোষের কারণ। ক্ষেত্র বিশেষে কুফরী। তৃতীয়তঃ বলতে হয় যে, যা উম্মতের ইজমা হয়ে আমভাবে মাকরূহ্ তাহরীমী আর খাছভাবে কুফরী হিসেবে ফতওয়া দেয়া হয়েছে সে আমলে হাজারও পর্দা করলেও তা কস্মিনকালে জায়েয হবেন। বরং সেটাকে জায়েয বলা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। চতুর্থতঃ বলতে হয় যে, যে আমল ইজমা উম্মতের দ্বারা আমভাবে মাকরূহ্ তাহরীমী এবং খাছ ভাবে কুফরী বলে ফতওয়া দেয়া হয়েছে সে আমলের দ্বারা ছওয়াবের ভাগী হওয়া তো দূরের কথা গুণাহ্ তো হবে বরং তা কুফরী হবে। কারণ শরীয়তের মাসয়ালা হচ্ছে, কোন গুণাহ্র কাজকে ছওয়াবের কাজ মনে করে করা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। হাদীস শরীফে ইরশাদ করা হয়,
عن ام سمة قات قال رسول اله صلى الله عليه وسلم خير مساجد انساء قعر بيوتهن.
অর্থঃ- “হযরত উম্মে সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মহিলাদের জন্য উত্তম মসজিদ হলো, তার ঘরের গোপন প্রকোষ্ঠ।” (সুনানুল কুবরা, আহমদ, মুয়াত্তা ইমাম মালিক) অন্য হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়,
عن عبد اله عن النبى صلى الله عليه وسلم ما صلت امرأة صلاة احب الى الله من صلاتها فى اشد بيتها ظلمة.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মহিলাদের অন্ধকার কুঠরীর নামায আল্লাহ্ পাকের নিকট অধিক প্রিয়।” (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী) আর মহিলাদের ছওয়াবের ভাগী হওয়ার জন্য ঘরের গোপন প্রকোষ্ঠেই একাকী নামায পড়তে হবে। কেননা মহিলারা ঘরের গোপন প্রকোষ্ঠে একাকী নামায পড়লে পঁিচশ গুণ বেশী ছওয়াবের ভাগী হবেন। যেমন, হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়,
عن ابن عمر عن انبى صلى الله عليه وسم صلاة المراة تفضل عى صلاتها فى الجمع خمسا وعشرين درجة.
অর্থঃ- “মহিলাদের মসজিদে জামায়াতে নামায আদায় করার চেয়ে ঘরে একা নামায পড়া পঁিচশ গুণ বেশী ফযীলত পাওয়া যায়।” (দায়লামী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ৩৮৯) কাজেই মহিলাদের জন্য ঘরে একাকী নামায আদায় করায় পঁিচশ গুণ ছওয়াব বেশী। সুতরাং প্রথম যুগের ও পর্দার দোহাই দিয়ে, ছওয়াবের প্রলোভন দেখিয়ে মহিলাদেরকে মসজিদে, ঈদগাহে এবং পুরুষের জামায়াতে শরীক হয়ে নামায পড়া জায়িয বলে ফতওয়া দেয়ার অর্থই হলো, প্রথমতঃ হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের বিরোধীতা করা। আর হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের বিরোধীতা করা হচ্ছে কুফরী। দ্বিতীয়তঃ ইজমায়ে উম্মতকে অস্বীকার করা। আর ইজমায়ে উম্মতকে অস্বীকার করাও কুফরী। অতএব, মহিলারা যে কোন নামাযের জন্য মসজিদে ও ঈদগাহে যেতে পারবে না এবং পুরুষের জামায়াতেও শরীক হতে পারবে না। এটাই সর্বসম্মত ও সর্বসিদ্ধ ফতওয়া। এর খিলাফ আক্বীদা পোষণ করা কাট্টা কুফরী। সুতরাং মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য কুফরী মুলক হয়েছে। {বিঃ দ্রঃ বিস্তারিত জানতে হলে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১১, ৪৮, ১০১, ১০২তম সংখ্যাগুলো পাঠ করুন। যেখানে অসংখ্য কিতাবের বরাতে বিস্তারিত ফতওয়া, সুওয়াল-জাওয়াব ও মতামত পত্রস্থ হয়েছে।}
মুহম্মদ আমিনুজ্জামান সভাপতি- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত, চট্টগ্রাম। সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত পত্রিকার জানুয়ারী/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে নিম্নোক্ত জিজ্ঞাসা- সমাধান ছাপা হয়। জিজ্ঞাসাঃ অধিকাংশ মাদ্রাসার ছাত্র এবং আলেমদেরকে লাল রুমাল ব্যবহার করতে দেখা যায়। এই রুমাল ব্যবহার করা কি খেলাফে সুন্নত, নাকি মাকরূহ্? মাকরূহ্ হলে তাহ্রীমা কি-না? সমাধানঃ বিশুদ্ধ মতানুসারে ‘আসফার’ (লাল বর্ণের পুষ্প বিশেষ) দ্বারা রঞ্জিত কাপড় ব্যতীত লাল পোশাক পরিধান করা বৈধ। তাছাড়া উলামায়ে কিরামের মতপার্থক্য নিরেট লাল রঙের কাপড়ের ব্যাপারে। আমাদের আলোচ্য রুমাল তেমন নয়, বরং লাল-সাদা মিশ্রিত। কাজেই মাকরূহ্ বা অবৈধ হওয়ার কারণ নেই। এখন আমার সুওয়াল হলো- লাল রুমাল ব্যবহার করা সম্পর্কে হাট হাজারীর অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? দলীল সহ সঠিক জাওয়াব জানাবেন। জাওয়াবঃ আফসার ও আহমার সব ধরণের লাল রং-এর কাপড়ই হাদীস শরীফ ও ফিক্বাহ্র দৃষ্টিতে তথা শরীয়তে নাজায়িয ও হারাম “লাল রুমাল” ব্যবহার করা সম্পর্কে হাটহাজারী মৌলভীদের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে। কারণ লাল রংয়ের কাপড় পুরুষের জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, এ ব্যাপারে হাদীস শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাবে বহু দলীল-প্রমাণ রয়েছে। অথচ হাটহাজারীর মৌলভীরা বলেছে “বিশুদ্ধ মতানুসারে ‘আসফার’ (লাল বর্ণের পুষ্প বিশেষ) দ্বারা রঞ্জিত কাপড় ব্যতীত লাল পোশাক পরিধান করা বৈধ।” (নাউযুবিল্লাহ) তাদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, বিশুদ্ধ মতানুসারে “আসফার” দ্বারা রঞ্জিত কাপড় যেমন বৈধ নয় তদ্রুপ আহ্মার (احمر ) বা লাল পোশাক পরিধান করাও বৈধ নয়। যেমন, হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে,
عن عبد الله بن عمرو قال مر على النبى صلى الله عليه وسلم رجل عيه ثوبان احمران فسم عيه فم يرد عليه النبى صلى اله عيه وسلم.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি দুটি লাল কাপড় পরিহিত অবস্থায় নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় তাঁকে সালাম দিল। কিন্তু নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সালামের জওয়াব দেননি।” (তিরমিযী শরীফ, আবু দাউদ শরীফ ২য় জিঃ ২০৮ পৃষ্ঠা, বযলুল মাজহুদ ৬ষ্ঠ জিঃ ৪৯ পৃষ্ঠা, মিশকাত, আউনুল মা’বূদ ৪র্থ জিঃ ৯২ পৃষ্ঠা, শরহু আবী দাউদ লি বদরিদ্দীন আইনী) হাদীস শরীফে আরো উল্লেখ আছে যে, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উটের হাওদার উপর লাল রংয়ের কাপড় বিছিয়ে দেয়া হয়েছিল বসার জন্য; কিন্তু তিনি সে লাল কাপড়ের উপর বসেননি, বরং সেটা তুলে তারপর বসেছিলেন।” (সীরাতুন্ নবী) উপরোক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় মিশকাত শরীফের বিখ্যাত শরাহ্ “মিরকাত শরীফের” ৮ম খন্ডের ২৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
فهذا دليل صريح عى تحريم ليس الثوب الاحمر للرجال.
অর্থঃ- “উপরোক্ত হাদীস শরীফের আলোকে সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণিত হলো যে, পুরুষের জন্য “লাল কাপড়” পরিধান করা হারাম।” “জামউল ওসায়েল” কিতাবে উল্লেখ আছে,
فالاحمر ابحت منهى عنه ومكروه لبسه لحديث.
অর্থঃ- “তবে পুরো লাল পোশাক নিষিদ্ধ এবং তা পরিধান করা মাকরূহ্ তাহরীমী যা হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত।” উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় “আউনুল মা’বুদ” কিতাবের ৪র্থ খন্ডের, ৯২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
احتج بهدا الحديث القائلون بكراهة ليس الاحمر.
অর্থঃ- “এই হাদীস থেকে দলীল নেয়া হয় যে, লাল পোশাক পরিধান করা মাকরূহ্ তাহরীমী।” “হাশিয়ায়ে আবু দাউদ” ২য় খন্ডের, ২০৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وامختار من امذهب ان اكراهة. انما هى لاج اللون …… وقال على القارى فى المرقاة فهذا اى قوله صلى الله عليه وسلم فم يرد عليه ديل صريح عى تحريم لبس الثوب ااحمر لرجال.
অর্থঃ- “হানাফী মাযহাব মতে গ্রহণযোগ্য মত হল নিশ্চয়ই লাল পোশাক মাকরূহ তাহরীমী। কেননা রং এর কারণে লাল পোশাক পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী। …. আর হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি “মিরকাত শরীফে” লিখেছেন যে, হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, فلم يرد عليه অর্থাৎ নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সালামের জাওয়াব দেননি। এই হাদীস শরীফ-এর আলোকে পরিস্কারভাবে এটাই প্রমাণিত হয় যে, “পুরুষের জন্য লাল কাপড় পরিধান করা হারাম।” “احمر” আহ্মার শব্দের তাহ্ক্বীক এখন কেউ কেউ বলতে পারেন, উক্ত হাদীস শরীফে বর্ণিত احمر শব্দের অর্থ যদি ‘লাল’ হয় তবে ‘বুখারী শরীফে’ বর্ণিত حلة حمراءশব্দের অর্থ কি হবে? বোখারী শরীফে উক্ত বর্ণনা দ্বারা কি প্রমাণিত হয় না যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেই লাল বর্ণের কাপড় পরিধান করেছেন, তবে উক্ত হাদীস শরীফ দ্বয়ের মধ্যে সমাধান কি? এর জবাবে বলতে হয়, “তিরমিযী শরীফে” যে ব্জম্নহৃ॥ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে তার অর্থ হলো ‘লাল রং’ এর কাপড় আর ‘বুখারী শরীফে’ বর্ণিত حلة حمراء এর অর্থ হলো এক জোড়া গন্ধম বা সোনালী রং এর পোশাক। কেননা লোগাত বা অভিধানে احمر শব্দের অর্থ যেরূপ ‘লাল রং’ বলে উল্লেখ আছে, তদ্রুপ গন্দম বা সোনালী রং বলেও উল্লেখ আছে। যেমন, “লিসানুল আরবের” দ্বিতীয় খন্ডের ৯৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, الحمرة ও الاحمر শব্দটি বিভিন্ন রংয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন
لون الاحمر يكون فى الحيوان والثياب ……. فى الماء. الاحمر এর রং প্রাণীর ক্ষেত্রে, কাপড়ের ক্ষেত্রে ….. এবং পানির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এবং কখনো الاحمر দ্বারা মানুষের শরীরকে বুঝানো হয়। الاحمر من الابدان অর্থাৎ الاحمر দ্বারা মানুষের শরীরকে বুঝায়। আর মানুষের শরীরকে তখনই الحمرة বা الاحمر বলা হবে যখন লোকটিকে তার সুন্দর ও উজ্জ্বল চেহারার কারণে তাকে গন্দম বা সোনালী রংয়ের মত দেখাবে। যেমন, ماكان ونه الحمرة অর্থাৎ তার শরীরের রং যদি গন্দম বা সোনালী রংয়ের হয় তখন তাকে الاحمر বলা হয়। যেমন, হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে حميرة (হুমাইরা) বলে ডাকতেন। কেননা হযরত আয়িশা সিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর শরীর মুবারকের রং ছিল গন্দম বা সোনালী বর্ণের। কখনও الاحمر দ্বারা স্বর্ণ ও জাফরানকে বুঝায়। যেমন বলা হয়,
اهلك النساء الاحمران يعنون الذهب والزعفران اى اهلكهن حب الحلى والطيب.
অর্থাৎ মহিলাদেরকে দুটি الاحمر ধ্বংস করে দিয়েছে। সেই দু’টি الاحمر এর একটি হলো, স্বর্ণ ও অপরটি হলো জাফরান। অর্থাৎ স্বর্ণের তৈরী অলংকার এবং জাফরানের সুগন্ধীর মুহব্বত মহিলাদেরকে হালাক্ব বা (ধ্বংস) করে দিয়েছে। কখন الاحمر দ্বারা শুধুমাত্র স্বর্ণকে বুঝায় যেমন হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে,
اعطيت اخزنين الاحمر والابيض …. والاحمر الذهب والابيض الفضة.
অর্থাৎ- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমাকে দু’টি গুপ্তধন দেয়া হয়েছে একটি হলো, الاحمر অপরটি হলো,الابيض ….. এবং الاحمر দ্বারা স্বর্ণকে ও الابيض….. দ্বারা রূপাকে বুঝানো হয়েছে। এছাড়াও আরো অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে যাতে الاحمر দ্বারা শুধু স্বর্ণকে বুঝানো হয়েছে। উল্লেখ্য, উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই সাব্যস্ত হলো যে, الاحمر এবং حمراء দ্বারা সোনালী রং কে বুঝায়। সুতরাং উক্ত হাদীসের এবং ফতওয়ার ক্ষেত্রে যদি الاحمر এবং حمراء দ্বারা গন্দম বা সোনালী রং গ্রহণ করা হয় তাহলে হাদীস শরীফের ক্ষেত্রে ও ফিক্বাহের কিতাবের বর্ণনার সাথে মুখালিফ বা মতবিরোধ হয়না। অতএব, সে সকল হাদীস শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাবের ইবারতে احمر কে নাজায়িয বলা হয়েছে সেখানে احمر শব্দের অর্থ ‘লাল রং’ গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক পরিধান করা নিষেধ। এর প্রমাণ হলো, বর্ণিত “তিরমিযী শরীফের” হাদীস। আর যে সকল স্থানে احمر কে জায়িয বা বৈধ বলা হয়েছে সে স্থানে احمر শব্দের অর্থ “গন্দম বা সোনালী রং” বলে গ্রহন করতে হবে। উল্লেখ্য, শুধু হাদীস শরীফেই নয় বরং ফিক্বাহের কিতাব সমূহেও বর্ণিত ইবারত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পুরুষের জন্য লাল রং এর পোশাক পরিধান করা বৈধ নয়। যেমন, হানাফী মায্হাবের বিখ্যাত ফিক্বাহ্র কিতাব “তানবীরুল আবছারে” উল্লেখ আছে যে,
وكره لبس المعصفر وامزعفر الاحمر والاصفر للرجال.
অর্থঃ- “পুরুষের জন্য কুসুম রং, জাফরানী লাল ও হুলুদ রংয়ের পোশাক পরিধান করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী।” আর “খোলাছাতুল ফতওয়ার” ৪র্থ খন্ডের লেবাছ অধ্যায়ের ৩৬৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
وفى العيون ابو حنيفة (رح) …………… ويكره ان يلبس الثياب المصبوغة بالعصفر او الزعفران او الورس.
অর্থাৎ- উয়ুন কিতাবে উল্লেখ আছে যে, হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে … কুসুম রং অথবা জাফরানী রং অথবা লাল রং দ্বারা রঞ্জিত কাপড় পরিধান করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী।” উল্লেখ্য, الورس শব্দের অর্থ কোন কোন লোগাতে হলুদ রং উল্লেখ করেছে। আর কোন কোন লোগাতে الورس শব্দের অর্থ লাল এবং হলুদ উভয়টি উল্লেখ করেছে। যেমন “মুহিত ফিল লোগাত” কিতাবে উল্লেখ আছে, الورس صبغ احمر واصفرء অর্থাৎ লাল এবং হলুদ উভয় রংকে الورس বলা হয়।” আর কোন লোগাতে الورس শব্দের অর্থ লাল রং উল্লেখ করেছে। যেমন, “আল মুনজিদে” উল্লেখ আছে যে,
والورس من الثياب سرخ.
অর্থাৎ- কাপড়ের ক্ষেত্রে الورس বলা হয় লাল কাপড়কে।” সুতরাং লাল কাপড় পুরুষের জন্য পরিধান করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী যা ফতওয়ার শুরুতেই বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। “ফতওয়ায়ে কাজীখানে” উল্লেখ আছে,
ويكره للرجل ان يلبس الثوب امصبوغ بالعصفر والزعفران والورس.
অর্থাৎ- “কুসুম রং, জাফরানী রং ও লাল রং দ্বারা রঞ্জিত কাপড় পরিধান করা পুরুষের জন্য মাকরূহ তাহরীমী।” “ফতওয়ায়ে বাজ্জাজিয়ায় ” উল্লেখ আছে,
ويكره الثياب المصبوغة بالز عفران والعصفر والورس
অর্থাৎ জাফরানী রং, কুসূম রং এবং লাল রংয়ের রঞ্জিত কাপড় মাকরূহ্ তাহ্রীমী।” উল্লেখ্য, উলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ “লাল কাপড়” পরিধান করার ব্যাপারে তাহ্ক্বীক্ব করে যে চুড়ান্ত ফায়সালা দিয়েছেন সেটা হলো, “পুরুষের জন্য লাল (আহ্মার) কাপড় পরিধান করা নিষিদ্ধ বা হারাম।” যেমন, “জামউল ওসায়িল” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৪৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
والتحقيق فى هذا المقام ان النهى عن لبس الثوب الاحمر.
অর্থাৎ- “এই স্থলে সঠিক ফায়সালা এই যে, লাল কাপড় পরিধান করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।” আর “ফতওয়ায়ে মাহ্মুদিয়া” ৬ষ্ঠ খন্ড ৩৪৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
اگر وہ سرخ رنگ سے رنگی ھوئی ھو تو اسکا استعمال ناجائز ھے کیونکہ مرد کو خالص سرخ رنگ کا استعمال منع ھے.
অর্থঃ- “যদি লাল রংয়ের হয় তবে তা ব্যবহার করা নাজায়িয। কেননা পুরুষের জন্য খালিছ লাল রংয়ের কাপড় ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।” উক্ত “ফতওয়ায়ে মাহ্মুদিয়ার” ১০ম খন্ড ২৬৮ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে যে,
خالص سرخ کپرا مرد کیلئے ممنوع ھے پس ایسا کپرا پھن کر نماز بھی مکروہ ھوگی.
অর্থঃ-“লাল রংয়ের কাপড় পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ। সুতরাং লাল রংয়ের কাপড় পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী।” উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণিত হলো যে, পুরুষের জন্য লাল পোশাক পরিধান করা হারাম, নাজায়িয, নিষিদ্ধ ও অবৈধ। আর লাল পোশাক পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী। সুতরাং পুরুষের জন্য লাল কাপড় পরিধান করা জায়িয নেই।” প্রচলিত লাল-সাদা মিশ্রিত রুমাল, লাল রুমালেরই হুকুম রাখে দ্বিতীয়তঃ তারা বলেছে, “… তাছাড়া উলামায়ে কিরামের মতপার্থক্য নিরেট লাল রঙের কাপড়ের ব্যাপারে। আমাদের আলোচ্য রুমাল তেমন নয়, বরং লাল-সাদা মিশ্রিত। কাজেই মাকরূহ্ বা অবৈধ হওয়ার কারণ নেই।” এর জবাবে বলতে হয় যে,হাটহাজারীর জাহিল মৌলভীদের উক্ত বক্তব্যও সম্পূর্ণ-ই মনগড়া ও জিহালতসূচক। কারণ লাল-সাদা মিশ্রিত রুমাল ব্যবহার করা যে জায়েয এ ব্যাপারে তারা কোন দলীল পেশ করতে পারেনি। আর ফতওয়া কখনো মনগড়া ও দলীলবিহীন হতে পারেনা। উল্লেখ্য, লাল-সাদা মিশ্রিত রুমালকে কখনো সাদা রুমাল বলা হয়না। কারণ এর অধিকাংশই হচ্ছে, লাল। আর উছূল রয়েছে, অধিকাংশ সম্পূর্ণর হুকুম রাখে। যেমন, বর্ণিত হয়েছে,
الاكثر حكم الكل.
অর্থঃ- “অধিকাংশ সম্পূর্ণর হুকুম রাখে।” কিন্তু হাটহাজারীর জাহিল মৌলভীরা তাদের জিহালতীর কারণে সেটাকে অস্বীকার করলেও সাধারণ মানুষও লাল-সাদা মিশ্রিত রুমালকে লাল রুমাল-ই বলে। কারণ, এই রুমালে লাল ভাগই অনেক বেশী। যার বাস্তব প্রমাণ হলো, তাদেরই অখ্যাত পত্রিকায় উল্লিখিত ‘জিজ্ঞাসাটি’ যেমন জিজ্ঞাসাকারী তাদের অখ্যাত পত্রিকায় জিজ্ঞাসা করেছে এভাবে যে, “অধিকাংশ মাদ্রাসার ছাত্র এবং আলেমদেরকে লাল রুমাল ব্যবহার করতে দেখা যায়। … ” সুতরাং তাদের অখ্যাত পত্রিকায় উল্লিখিত জিজ্ঞাসাটির মাধ্যমেও প্রমাণিত হলো যে, লাল-সাদা মিশ্রিত রুমালকে লাল রুমাল বলা হয়। ইখতিলাফী বিষয়ে নিষেধের উপর আমল করতে হয় আর উছূল হলো, যখন কোন বিষয়ে মত বিরোধ দেখা দিবে তখন নিষেধের উপর আমল করতে হবে। যেমন, “হিদায়া মা’আদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ১২১পৃষ্ঠায় ১৫নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
اذا تعارض يعمل بالمحرم،
অর্থঃ- “যখন কোন বিষয়ে মত বিরোধ দেখা দিবে তখন নিষেধের উপর আমল করতে হবে।” অনুরূপ লাল-সাদা মিশ্রিত রুমালকে লাল রুমাল হিসেবে ফতওয়া দিতে হবে। আর আমরা দলীলের মাধ্যমে লাল রুমাল বা লাল পোশাক সম্পর্কে এ ফতওয়াই দিয়েছি যে, পুরুষের জন্য লাল পোশাক পরিধান করা হারাম নাজায়িয ও অবৈধ। এবং লাল পোশাক পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী। সুতরাং পুরুষের জন্য লাল রুমাল ব্যবহার করা হারাম, নাজায়িয, অবৈধ ও মাকরূহ্ তাহরীমী। লাল রুমাল মূলতঃ মহিলাদের জন্য- যা পরিধান করা মেয়েদের পোশাকের শামিল এ ছাড়াও লাল রুমাল বা লাল কাপড় মূলতঃ মহিলাদের ব্যবহারের জন্যই তৈরী করা হয়। কারণ মেয়েদের জন্য লাল রংয়ের কাপড় পরিধান করা নিষিদ্ধ নয়। লাল কাপড় মেয়েদেরই পোশাক। তাই পুরুষের জন্য লাল রুমাল পরিধান করা, মেয়েদের সাথে সাদৃশ্য হওয়ার কারণে হারাম। কেননা পুরুষের জন্য মেয়েদের আকৃতি ধারণ করার ব্যাপারে হাদীস শরীফে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। তাই সমস্ত ফিক্বাহ্র কিতাবেও এটাকে হারাম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
যেমন, এ প্রসঙ্গে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
عن ابن عباس رضى الله عنه قال لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم المتشبهين من الرجال بالنساء وامتشبهات من النساء بالرجال.
অর্থঃ- “হযরত ইব্নে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ সকল পুরুষের প্রতি অভিসম্পাত (লা’নত) করেছেন, যারা মেয়ে লোকের আকৃতি ধারণ করে। অনুরূপ যে সকল মেয়ে লোক পুরুষের আকৃতি ধারণ করে, তাদের প্রতিও অভিসম্পাত বা লা’নত করেছেন।” (বুখারী শরীফ)
উপরোক্ত হাদীস শরীফ দ্বারা এটাই ছাবেত হলো যে, পুরুষের জন্য লাল রংয়ের রুমাল, কাপড় ইত্যাদি ব্যবহার করা মেয়ে লোকের আকৃতি ধারণ করার নামান্তর। যা স্পষ্ট হারাম। উল্লেখ্য, লাল রুমাল বা কাপড় পরিধান করে নামায পড়াও মাকরূহ্ তাহ্রীমী।
আলিম দাবীদারদের জন্য লাল রুমাল পরিধান করা অপেক্ষাকৃত বেশী গোমরাহী ও গুণাহ্র কাজ লাল রুমাল ত্যাগ করা ফরয -ওয়াজিব এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, সাধারণ লোকের জন্যেই যেখানে লাল রংয়ের কাপড় পরিধান করা নাজায়িয, সেখানে আলিমদের জন্যে তা পরিধান করা কি করে জায়িয বা শরীয়ত সম্মত হতে পারে? মূলতঃ তা আলিমদের জন্য ব্যবহার করা সম্পূর্ণই হারাম। কারণ যারা হাদী হবেন, তাদের আমল-আখলাক্ব, সাধারণ লোকদের চেয়ে অনেক নিখুঁত, বিশুদ্ধ ও শরীয়ত সম্মত হতে হবে। কেননা কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
حسنات الابرار سيئة المعربين.
অর্থঃ- “সাধারণ লোকদের জন্য যা নেকীর কারণ, নৈকট্য প্রাপ্তদের জন্যে তা গুণাহের কারণ।”
অর্থাৎ এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যা সাধারণ লোকদের জন্য আমল করার নির্দেশ থাকলেও খাছ নৈকট্যপ্রাপ্ত বা হাদীগণের জন্য তা আমল করা থেকে বিরত থাকাই নেকী বা আল্লাহ্ পাক-এর সন্তুষ্টি লাভের কারণ। যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
خذوا نصف دينكم من هذه الحميرة.
অর্থঃ- “আমার পর তোমরা অর্ধেক দ্বীন শিক্ষা লাভ করবে, হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর কাছ থেকে।” আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর যেহেতু হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হাদী হবেন, তাই হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেন, “হে আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা! মহিলাদের জন্য কয়েকটি জিনিস ব্যবহার করা জায়িয হলেও তোমার জন্য সেগুলো ব্যবহার করা জায়িয নয়। (১) রেশমী কাপড় পরিধান করা। (২) লাল রং-এর কাপড় পরিধান করা। (৩) স্বর্ণের অলংকার ব্যবহার করা। কারণ তুমি আমার পরে হাদী হবে।” তখন হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, “ইয়া রসুলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি রেশমী ও লাল রং-এর কাপড় পরিধান না-ই বা করলাম, কিন্তু আমি যেহেতু মহিলা আমার তো অলংকার ব্যবহার করতে হবে।”
তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “যদি অলংকার ব্যবহার করতেই হয়, তবে রূপার অলংকার ব্যবহার করবে।” হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, “আমি কি সে রূপার অলংকারগুলো স্বর্ণের পানিতে রং করে নিব?”
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “যদি রং করতেই হয়, তবে জাফরানের পানিতে রং করে নিবে।”
উল্লিখিত ঘটনা দ্বারা বুঝা গেল যে, যারা হাদী, আলিম, মুহাদ্দিস, মুফতী, ইমাম, খতীব ও আমীর হন বা হবেন, তাঁদেরকে হারাম ও নাজায়িয কাজ থেকে তো বেঁচে থাকতে হবেই বরং স্থান বিশেষে মোবাহ্ কাজও তরক করতে হবে। যেমন, হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর জন্য রেশমী ও লাল রং-এর কাপড় পরিধান করা এবং স্বর্ণের অলংকার ব্যবহার করা জায়িয থাকা সত্ত্বেও, হাদী হওয়ার কারণে তা পরিধান ও ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, উক্ত ঘটনা দ্বারা দু’টি বিষয় সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়। (১) লাল রংয়ের কাপড় মেয়েদের জন্য খাছ। যা পুরুষের জন্য সম্পূর্ণই নিষিদ্ধ। (২) যারা হাদী বা আলিম তারা হারাম কাজ করা তো দূরের কথা বরং ক্ষেত্র বিশেষে তাদেরকে মোবাহ্ কাজও তরক করতে হবে। কাজেই আলিমদের জন্য যেখানে ক্ষেত্র বিশেষে মোবাহ্ কাজও তরক করার নির্দেশ রয়েছে সেখানে তাদের জন্য মহিলাদের পোশাক অর্থাৎ লাল রুমাল যা পুরুষের জন্য ব্যবহার করা হারাম, তা পরিহার করা যে কতটুকু জরুরী তা বলার অপেক্ষাই রাখেনা। মূলতঃ আলিমদের জন্য লাল রুমাল পরিহার করা ফরজ/ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।
কাজেই যে সকল আলিমরা লাল রুমাল ব্যবহার করে তাদের জন্য ফরয লাল রুমাল পরিত্যাগ করে সাদা রুমাল ব্যবহার করা। যাতে সাধারণ লোক সে সকল আলিমদেরকে অনুসরণ করে বিভ্রান্ত না হয়। লাল রুমাল পড়ার দ্বারা আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে বিরোধীতা করা হয়, যা সম্পূর্ণই সুন্নতের খিলাফ ও গোমরাহী।
তাছাড়া যেখানে সাদা রং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট অধিক পছন্দনীয় বলে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে এবং সাদা রংয়ের পোশাক পরিধান করতেই আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন। আর আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হায়াত মুবারকে কখনো লাল রংয়ের পোশাক ব্যবহার করেননি এমনকি লাল রং-এর বিছানা বা হাওদায় বসেননি এবং যারা লাল কাপড় ব্যবহার করেছে, তাদের প্রতি সন্তুষ্টি তো প্রকাশ করেননি বরং অসন্তুষ্টিই প্রকাশ করেছেন বলে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে। সাথে সাথে ফিক্বাহের কিতাব সমূহেও পুরুষের জন্য লাল রংয়ের কাপড় ব্যবহারকে নিষিদ্ধ বা মাকরূহ্ তাহ্রীমী বলা হয়েছে। সেখানে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পছন্দনীয় রং সাদা রংয়ের রুমাল পরিহার করে তাঁর অপছন্দনীয় রং লাল রংয়ের রুমাল পরিধান করা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ নয় কি? এতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইত্তিবা করা হলো, না বিরোধীতা করা হলো? আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরোধীতা করা সুস্পষ্ট গোমরাহী নয় কি? এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, হাটহাজারী গং-এর পত্রিকার জিজ্ঞাসাকারী লাল রুমাল সুন্নত কিনা জিজ্ঞাসা করলেও তারা তার কোন উত্তর দেয়া হতে বিরত হয়েছে। এর মূল কারণ হলো যে, এর স্বপক্ষে আদৌ কোন দলীল নেই। কারণ, এ কথা স্বতঃসিদ্ধ যে, “পুরুষের জন্য সাদা রুমাল ব্যবহার করা খাছ সুন্নত।”
যেহেতু হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে যে,
احب اثياب الى رسول اله صلى الله عليه وسلم الابيض.
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট সাদা রং অধিক পছন্দনীয়।” আর লাল রংয়ের রুমাল বা কাপড় পরিধান করা পুরুষের জন্য ক্ষেত্র বিশেষে হারাম, মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও মাকরূহ্ তানযীহী। অর্থাৎ পুরো লাল হারাম, অধিক লাল মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও কম লাল মাকরূহ্ তানযীহী। তবে আলিমদের জন্য উক্ত সর্বপ্রকার লাল রং অবশ্যই পরিহার যোগ্য বা পরিত্যাজ্য।
কাজেই লাল রুমাল সম্পর্কিত হাটহাজারী মৌলভীদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, দলীল বিহীন, মনগড়া ও প্রতারণমূলক। {দলীলসমূহঃ- (১) বুখারী, (২) তিরমিযী, (৩) আবু দাউদ, (৪) ফতহুল বারী, (৫) উমদাতুল ক্বারী, (৬) ইরশাদুস্ সারী, (৭) তাইসীরুল ক্বারী, (৮) মা’য়ারিফুস্ সুনান, (৯) মা’য়ারিফে মাদানিয়া, (১০) উরফুশ্ শাজী, (১১) শামায়িলে তিরমিযী, (১২) জামউল ওসায়িল, (১৩) মিশকাত, (১৪) মিরকাত, (১৫) আউনুল মা’বুদ, (১৬) বজলুল মাযহুদ, (১৭) কাজীখান, (১৮) বাজ্জাজিয়া, (১৯) মুলত্বাক্বাত, (২০) খোলাছাতুল ফতওয়া, (২১) উয়ুন, (২২) তানবীরুল আবছার, (২৩) সিরাজুল ওয়াহ্হাজ, (২৪) এখতিয়ার, (২৫) শরম্বলালী, (২৬) মুলতাকিউল আবহুর, (২৭) জখীরা, (২৮) তোহ্ফা, (২৯) মোজতবা, (৩০) কাহেস্তানী, (৩১) শবহুন্ নেকায়া, (৩২) হাবিল জাহিদী, (৩৩) মাজমাউল ফতওয়া, (৩৪) মুনতাক্বী, (৩৫) মুহীত, (৩৬) ফতওয়ায়ে শামী (৩৭) ইমদাদুল ফতওয়া, (৩৮) ফতওয়ায়ে রশীদিয়া, (৩৯) ফতওয়ায়ে মাহ্মুদিয়াহ্, (৪০) সীরাতুন্নবী ইত্যাদি}
সাইয়্যিদ মুহম্মদ মোক্তাদুল ইসলাম (মিলন)
রঈসুল মজলিশ- ছাত্র আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত সুবহানীঘাট, সিলেট।
সুওয়ালঃ রেযাখানী মুখপত্র ডিসেম্বর/২০০০ ঈঃ সংখ্যায় “তাফসীরে রুহুল বয়ান, বুখারী, গুনিয়াতুত তালেবীন, রেজভীয়া” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “সহীহ্ মুসলিম শরীফসহ” অনেক নির্ভরযোগ্য কিতাবে নফল নামায বিশেষতঃ ক্বদর ও বরাতের নফল নামায জামাত সহকারে আদায় করা বৈধ….।” আর আপনারা “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” লিখেছেন, “তারাবীহ, ছলাতুল কুছুফ (সূর্য গ্রহণের নামায), ছলাতুল ইস্তিস্কা (বৃষ্টির নামায) এই তিন প্রকার নামায ব্যতীত যেমন লাইলাতুল ক্বদর, লাইলাতুল বরাত, তাহাজ্জুদ, চাশ্ত, আওয়াবীন ইত্যাদি নফল নামাযসমূহ ইমামের সাথে চারজন মুক্তাদীসহ জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্।” কোনটি সঠিক? আর “বুখারী, মুসলিম শরীফে” কি “ক্বদর” ও বরাতের” নফল নামায জামায়াতের সাথে আদায় করার কথা উল্লেখ আছে? দয়া করে জানাবেন। জাওয়াবঃ রেযাখানীরা তাদের মুখপত্রে “তাফসীরে রুহুল বয়ান, বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, গুনিয়াতুত্ তালেবীন এবং রেজভীয়া” কিতাবের বরাত দিয়ে নফল নামায বিশেষতঃ “শবে বরাত”, “শবে ক্বদরের” নফল নামায আযান-ইক্বামত ছাড়া জামায়াত সহকারে আদায় করা যে বৈধ বলেছে, তা আমরা আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এর বিগত সংখ্যাগুলোতে বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে প্রমাণ করেছি যে, “তাদের বক্তব্য সম্পূণই ভুল, জিহালতপূর্ণ, জালিয়াতী ও প্রতারণামূলক।” কেননা, রেযাখানীরা কিতাবের নাম দিয়ে যে বক্তব্য প্রদান করেছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। বরং তার সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ, তারা কিতাবের ইবারত, সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে মনগড়া বক্তব্য প্রদান করেছে এবং ক্ষেত্র বিশেষ নিজের ভ্রান্ত মতকে টিকিয়ে রাখতে কিতাবের ইবারত কারচুপি করেছে। (ধারাবাহিক) বর্তমান সংখ্যায় রেযাখানীদের দলীলবিহীন ও মনগড়া বক্তব্য খন্ডন করা হলো উল্লেখ্য, রেযাখানীরা বলেছে, “কোন কোন ভন্ড ও প্রতারক…..কোন কোন ফক্বীহ’র মতামতকে পুঁজি করে ঢালাওভাবে মাকরূহে তাহরীমার গরম গরম ফতোয়া দিয়ে……নিজের খ্যাতি চমকানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ….” এর জবাবে বলতে হয় যে, বিগত সংখ্যায় আমরা আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাতে দলীলের ভিত্তিতে প্রমাণ করে দিয়েছি যে, “শবে বরাত, শবে ক্বদর, রাগায়িব, তাহাজ্জুদ” ইত্যাদি নফল নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী ফতওয়া দেয়ার কারণেই কেউ যদি ভন্ড ও প্রতারক হয়, তাহলে রেযাখানীদের বক্তব্য মুতাবিক প্রথম দরজার ভন্ড ও প্রতারক হলো, তাদের গুরু রেযা খাঁ আর দ্বিতীয় দরজার ভন্ড ও প্রতারক হলো মৌলভী আমজাদ আলী। কেননা স্বয়ং রেজা খাঁ তার “রেজভীয়া” কিতাবে এবং মৌলভী আমজাদ আলী তার “বাহারে শরীয়ত” কিতাবে “শবে বরাত, শবে ক্বদর, রাগায়িব” ইত্যাদি নফল নামায জামায়াতের সহিত আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী, বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ ও নাজায়েয বলে ফতওয়া দিয়েছে। তাছাড়া “বাহরুর রায়েক, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, খুলাছাতুল ফতওয়া, আদদুররুল মুখতার, গায়াতুল আওতার, রদ্দুল মুহতার, শামী, আল কুহেস্তানী, শরহুল মুনিয়া, শরহুন নিক্বায়া, শরহে ইলিয়াস, মিনহাতুল খালিক্ব, ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া, হাশিয়ায়ে তাহতাবী আলা মারাকিউল ফালাহ্, আইনী শরহে হিদায়া, হাশিয়ায়ে শরহে বেকায়া লি চলপী, ফতওয়ায়ে সা’দিয়াহ, জাওহারাতুন্ নাইয়ারাহ্, মাবসূত লিস সারাখসী, মাছাবাতা বিস্ সুন্নাহ্, কিতাবুল আছল, বাদায়েউছ ছানায়ে ফি তারতীবিশ্ শারায়ে, ফতহুল ক্বাদীর, কিতাবুল ফিক্বাহ্, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, হিলইয়া, হাবিল কুদসী, ইলাউস্ সুনান, আহ্সানুল মাসায়েল, কেফায়া, নেহায়া, মাকতুবাতে ইমামে রব্বানী, ফতওয়ায়ে সিরাজীয়া, গিয়াছিয়া, শাফিয়াহ্, কিতাবুজ্ জিয়া, শরহে শামায়েল, গুণিয়াতুল মুছল্লী, ইমদাদুল আহ্কাম, ইলমুল ফিক্বাহ ইত্যাদি কিতাবের ভাষ্য হলো, তারাবীহ, ছলাতুল কুসূফ (সূর্য গ্রহণের নামায) ছলাতুল ইস্তেস্কা (বৃষ্টির নামায) এই তিন প্রকার নামায ব্যতীত অন্য যে কোন নফল নামায ইমামের সহিত চারজন মুক্তাদীসহ জামায়াতে আদায় করা সকল ইমাম, মুজতাহিদ ও ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ঐক্যমতে মাকরূহ তাহরীমী। যেমন,
وان اقتدى اربعة بواحد كره اتفاقا.
অর্থাৎ- “যদি ইমামের সাথে চারজন মুক্তাদী ইক্তিদা করে নফল নামায জামায়াতের সাথে পড়ে তাহলে সকল ইমাম, মুজতাহিদ ও ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের সর্বসম্মত মতে মাকরূহ তাহরীমী।” কাজেই শবে বরাত, শবে ক্বদর, রাগায়িব, তাহাজ্জুদ ইত্যাদি নফল নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী ফতওয়া দেয়ার কারণেই কেউ যদি ভন্ড ও প্রতারক হয় তাহলে উপরোক্ত সর্বজনমান্য, সর্বজন স্বীকৃত, বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ্ ও ফওতয়ার কিতাবের মুছান্নিফ বা লিখক, ইমাম-মুজতাহিদ, সলফে-সালেহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে কি রেযাখানীদের বক্তব্য মুতাবিক ভন্ডও প্রতারকরূপে গণ্য হচ্ছেনা।(নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক) মূলতঃ রেযাখানীরা রেযা খাঁ বাদে সকল বুর্যুগাণে দ্বীনের প্রতি এরূপই ধারণা করে থাকে। উল্লেখ্য, “আশবাহ্ ওয়ান্ নাজায়ের” কিতাবের ১ম খন্ডের ২১৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
واعلم ان انفل بالجماعة على سبيل التداعى مكروه ماعدا الترويح وسلوة الكسوف وااستسقاء فعلم ان كلا من الرغائب ليلة اول جمعة من رجب وصلوة البرأة وصلاة القدر ليلة السبع العشرين من رمضان بالجماعة بدعة مكروهة.
অর্থঃ- “জেনে রাখ! নিশ্চয় নফল নামায ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী। তবে তারাবীহ্, ছলাতুল কুসূফ (সূর্যগ্রহণ) ও ইস্তেস্কার (বৃষ্টির) নামায ব্যতীত। সুতরাং ছলাতুর রাগায়িব (অর্থাৎ রজব মাসের প্রথম জুময়ার রাত্রির নামায), শবে বরাতের রাত্রির নফল নামায এবং শবে ক্বদরের রাত্রির নফল নামায (অর্থাৎ রমাদ্বান মাসের ২৭ তারিখ রাত্রির নামায) জামায়াতে পড়াও মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্। “বাহরুর রায়েক” কিতাবের ২য় খন্ডের ৫২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ليلة القدر ويلة النصف من شعبان …….. وغيرها تصلى فرادى.
অর্থঃ-“শবে ক্বদর, শবে বরাত ….. ইত্যাদি নফল নামায গুলো একাকী ভাবে আদায় করবে।”
শুধু তাই নয়, শবে বরাত, শবে ক্বদরের নামাযে ইক্তিদা করাও মাকরূহ তাহরীমী যেমন, “ফতওয়ায়ে বাযযাযিয়াহ” কিতাবে উল্লেখ আছে,
كره الاقتداء فى صلاة الرغائب وصلاة البراءة ويلة القدر.
অর্থাৎ- “লাইলাতুল ক্বদর নামাযে, বরাতের নামাযে এবং রাগায়িবের নামাযে ইক্তিদা করা মাকরূহ তাহরীমী।” আদ দুররুল মুখতার কিতাবে উল্লেখ আছে,
يكره الاقتداء فى صلاة رغائب وبراءة وقدر.
অর্থাৎ- “ক্বদরের নামাযে, বরাতের নামাযে এবং রাগায়িবের নামাযে ইক্তিদা করা মাকরূহ তাহরীমী।”
“গায়াতুল আওতার” কিতাবের ১ম খন্ডের ৩২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
مكروة هى اقتداء كرنا صلوة رغائب مين اور صلوة براعت اور صلوة قدر ميى.
অর্থাৎ- “শবে ক্বদরের নামাযে, শবে বরাতের নামাযে এবং রাগায়িবের নামাযে ইক্তিদা করা মাকরূহ তাহরীমী।” সুতরাং যেখানে “শবে বরাত, শবে ক্বদরের নামাযে” ইক্তিদা করাই মাকরূহ তাহরীমী সেখানে “শবে বরাত, শবে ক্বদরের নামায” জামায়াতের সহিত আদায় করার প্রশ্নই আসে না। দ্বিতীয়তঃ রেযাখানীরা বলেছে, “….কোন কোন ফক্বীহ’র মতামতকে পুঁজি করে ঢালাও ভাবে মাকরূহে তাহরীমার গরম গরম ফতোয়া ….।” এর জবাবে বলতে হয় যে, কোন কোন ফক্বীহ্-এর মতামতকে পুঁজি করে নয় বরং সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ ও ফুক্বাহ্া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের সর্বসম্মত মতে নফল নামায জামায়াতের সহিত আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী। যা রেযাখানীদের “ফতওয়ায়ে রেজভীয়াতেও” উল্লেখ আছে,
تراویح وکسوف واستسقاء کے سوا جماعت نوافل میں…. اور چار مقتدی ھو تو بالاتفاق مکروہ.
অর্থাৎ- “তারাবীহ, কুসূফ, (সূর্যগ্রহণের নামায) ইস্তিস্কার (বৃষ্টির) নামায ব্যতীত অন্যান্য নফল নামায সমূহ … ইমামের সহিত চারজন মুক্তাদীসহ জামায়াতে আদায় করা সকল ইমাম মুজতাহিদ ও ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের সর্বসম্মত মতে মাকরূহ তাহরীমী।” উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, শবে বরাত, শবে ক্বদরের নফল নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী, বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও নাজায়েয এবং একই সঙ্গে এটাও প্রমাণিত হলো যে, শবে বরাত, শবে ক্বদরের নফল নামাযে ইক্তিদা করাও মাকরূহ তাহরীমী। অতএব, প্রমাণিত হলো রেযাখানীরাই প্রকৃতপক্ষে মিথ্যাবাদী, ভন্ড, প্রতারক ও মূর্খ ও জাহিল এবং এমনই আশাদ্দোদরজার জাহিল তারা যে নিজেরাই নিজেদের ইমামের বিরুদ্ধ মত পোষণ ও প্রচার করে অথচ তারই ভক্ত বলে দাবী করে। কিন্তু সে কি লিখে গেছে সে সম্পর্কেই তারা বেখবর ও আনপড়াহ। (চলবে) মাওলানা মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান মাওলানা মুহম্মদ মাছূম বিল্লাহ্ মুহম্মদ আসাদুর রহমান, মুহম্মদ মাইজুর রহমান ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সুওয়ালঃ আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম এই তিনটি সংখ্যায় প্রদত্ত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ, মুহাক্কিক-মুদাক্কিক ও হক্কানী উলামা-ই-কিরামগণের ফতওয়া মুতাবিক জানতে পারলাম যে, “প্রাণীর ছবি তৈরী করা, ঘরে রাখা সর্বাবস্থায় হারাম।” অথচ রেযাখানী মুখপত্র নভেম্বর/২০০১ ঈসায়ী সংখ্যায় ছবি সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ফতওয়া প্রকাশ করেছে। যা কিনা মানুষের ঈমান-আমল বিনষ্ট করবে নিশ্চিতরূপে। রেযাখানীদের ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যের যে বিষয়গুলো আপত্তিকর সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো- (ক) রেযাখানীরা ছবি তোলাকে বৈধ বলেছে; কিন্তু দলীল হিসেবে পেশ করেছে ঘরে ছবি রাখা সম্পর্কিত হাদীসসমূহকে। (খ) .. কতেক উলামা যেসব ছবির শরীর ও ছায়া নেই সেসব ছবিকে বৈধ বলেছেন। (গ) হুজুর আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুরুর দিকে ছবি তৈরী করা ও সংরক্ষণ করাকে নিষেধ করেছিলেন; কিন্তু পরবর্তীতে অনুমতি দেন। (ঘ) পূর্ববর্তীদের কেউ কেউ এবং হাম্বলী, শাফেয়ী, মালেকী এমনকি হানাফীদেরও কেউ কেউ নাকি (গায়রে মুজাস্সাম) শরীরবিহীন ছবিকে বৈধ বলেছেন। (ঙ) সামাজিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে বিশেষ প্রয়োজনে ছবি তোলা বৈধ যা যুগের চাহিদাও। (চ) প্রত্যেক যুগের ফক্বীহ্, মুফতী, কাজী ও আলিমগণ যুগের চাহিদা অনুযায়ী ফতওয়া দিয়েছেন এবং দেয়া উচিত। (ছ) ছবি হারাম হওয়ার মূলে হলো গায়রুল্লাহ্র সম্মান ও ইবাদত। (জ) প্রয়োজনীয় রেকর্ডের জন্য ফাইল বন্দি ছবিসমূহ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের নিকট জ্ঞান ও ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য জানার নিমিত্তে সরকারী-বেসরকারী যাদুঘর বা বিশেষ প্রতিষ্ঠানসমূহে পূর্বের নানা মনীষীগণের ছবি সংরক্ষণ/ধারণ করে রাখা বিশেষ প্রয়োজনে মাকরূহ্ হবেনা। এছাড়াও আরো বহু আপত্তিকর বিষয় তাদের উক্ত ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যে স্থান পেয়েছে। কুরআন-সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে তাদের উল্লিখিত আপত্তিকর বক্তব্যগুলোর শরয়ী ফায়সালা কামনা করি। জাওয়াবঃ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রেযাখানীদের ন্যায় এরূপ লোকদের সম্পর্কেই ইরশাদ করেন,
عن ابى هريرة قال قال رسول اله صلى اله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من ااحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا ابائكم فاياكم واياهم ا يضلونكم وا يفتنونكم.
অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমনসব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি, সাবধান! তোমরা তাদের কাছ থেকে দূরে থাকবে, তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ) উল্লিখিত হাদীস শরীফের পূর্ণ মেছদাক বা নমুনা হচ্ছে রেযাখানীরা। তারা ছবির ব্যাপারে এমন সব বক্তব্য প্রদান করেছে যা কিতাবে দেখা তো দূরের কথা কেউ কোন দিন শুনেও নাই। মূলতঃ রেযাখানীরা নিজেদেরকৃত বদ আমলকে ধামা-চাপা দেয়ার উদ্দেশ্যেই মনগড়াভাবে ছবিকে জায়িয করার অপচেষ্টা করেছে। যেমনটি করেছিলো, “ছানী আযান, তাহাজ্জুদের জামায়াত, বাইয়াত হওয়া, দুই সিজদার মাঝখানে পূর্ণ দোয়া পড়া, ধুমপান” ইত্যাদি বিষয়গুলোকে নিয়ে। কিন্তু মাসিক আল বাইয়্যিনাত তাদের সমস্ত ষড়যন্ত্র আর অপতৎপরতাকে নির্ভরযোগ্য দলীলের দ্বারা ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। ইনশাআল্লাহ্ তাদের ছবিকে জায়িয করার সকল ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতাকেও ছিন্নভিন্ন করে দেয়া হবে। রেযাখানীরা ছবি জায়িয করার উদ্দেশ্যে যে সকল মনগড়া, বানোয়াট, জালিয়াতিপূর্ণ ও আপত্তিকর বক্তব্য প্রদান করেছে তা ধারাবাহিকভাবে পর্যায়ক্রমে খন্ডন করার পূর্বে ছবি হারাম হওয়ার দলীলগুলো সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করা হলো- (ধারাবাহিক) শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রাণীর ছবির সঠিক ফায়ছালা এ পর্যন্ত উল্লিখিত হাদীস শরীফ ও তার ব্যাখ্যা গ্রন্থসমূহের ভিত্তিতে যা প্রমাণিত হলো তা হচ্ছে (১) যে ব্যক্তি কোন প্রাণীর ছবি তুলবে বা তোলাবে সে ব্যক্তি ক্বিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি ভোগ করবে! (২) যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশ্তা প্রবেশ করেনা, (৩) ঘরে ঝুলানো পর্দা সমূহেও প্রাণীর ছবি রাখা নিষেধ, (৪) প্রাণীর ছবি তোলা বা আঁকার ব্যবস্থা করাও নিষেধ ইত্যাদি। অতএব, হাদীস শরীফ ও তার ব্যাখ্যা গ্রন্থসমূহের বর্ণনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রাণীর ছবি তোলা বা আঁকা এবং তোলানো বা আঁকানো, প্রাণীর ছবি বা ছবিযুক্ত পর্দা ঘরে রাখা ও প্রাণীর ছবি তোলা বা আঁকার ব্যবসা করা সম্পূর্ণই হারাম ও নাজায়িয। এখন আমরা দেখবো উল্লিখিত হাদীস শরীফ ও তার ব্যাখ্যাসমূহের প্রেক্ষিতে বিশ্বখ্যাত ও অনুসরণীয় ফক্বীহ্গণ তাঁদের ফিক্বাহ্রে কিতাবসমূহে কি লিখেছেন?
নিম্নে বিশ্বখ্যাত ও অনুসরণীয় ফক্বীহ্গণের ফতওয়া উল্লেখ করা হলো-
واما تصوير الحيوان ان كانت كامة الاعضاء فانها لا تحل (يعنى حرام(
অর্থঃ- “প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম, যদি তা পূর্ণ দেহ বিশিষ্ট হয়।” (কিতাবুল ফিক্হ আলা মাযাহিবিল আরবাআ্, ২য় জিঃ, পৃঃ৪১)
جاءت ااحاديث الصحيحة اصريحت بالنهى عن صنا عة اتماثي وعن تصوير ما فيه روح سواء أكان انسانا ام حيوانا ام طيرا.
অর্থঃ- “ছহীহ্ হাদীস শরীফসমূহে প্রাণীর ছবি বা মূর্তি তৈরী করা সম্বন্ধে প্রকাশ্যেই নিষেধ করা হয়েছে। এটা মানুষের হোক বা জানোয়ারের কি পাখীর হোক সমান কথা অর্থাৎ হারাম।” (ফিকহুস সুন্নাহ ৩য় জিঃ, পৃঃ ৪৯৮)
الصور يحرم صنعها ويحرم استعمال الثوب.
অর্থঃ- “প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম এবং (প্রাণীর ছবি) কাপড়ে ব্যবহার করাও হারাম।” (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ, ২য় জিঃ পৃঃ১৩০)
جاندار کی صورت بنانا حرام ھے اور ھر ایک تصویر بنانے والا دوذخ میں جائیگا.
অর্থঃ- “প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম। এবং প্রত্যেক প্রাণীর ছবি তৈরীকারীই জাহান্নামে যাবে।” (মাশারিফুল আন্ওয়ার পৃঃ৪৪৪)
رسول كريم صلى الله عليه وسلم على رضى الله عنه رافرستاد كه هرجاكه، تصوير بينند او را محو كنند.
অর্থঃ- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে (এই বলে) পাঠালেন যে, যেখানেই প্রাণীর ছবি দেখতে পাবে ওটা ধ্বংস করে ফেলবে।” (ইরশাদুত তালিবীন পৃঃ২০, ইখতিলাফে উম্মত আওর সিরাতে মুস্তাক্বীম পৃঃ ৬৯)
جاندار کی تصویر شرعا حرام ھے. الاجماع علی تحریم التصویر الحیوان. فصنعہ حرام بکل حال.
অর্থঃ- “প্রাণীর ছবি তৈরী করা শরীয়তে হারাম। (কেননা) প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার ব্যাপারে সকলেই একমত, সুতরাং এটা তৈরী করা সর্বাবস্থায় হারাম।” (ফতওয়ায়ে নঈমিয়াহ্ পৃঃ ১০)
جاندار کی تصویر کھینچنا یا کھچوانا مطلقا ناجائز اور حرام ھے. خواہ قلم سے کھینچی جائے یا فوطوسے لی جائے سب کا ایک حکم ھے. اور احادیث وعبارات فقیہ سے معلوم ھوا کھ جاندار کی تصویر بنانا مطلقا نا جائز ھے.
অর্থঃ- “প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা করানো সাধারণতঃ হারাম। কলম দ্বারা হোক অথবা ক্যামেরার মাধ্যমে অর্থাৎ যে পদ্ধতিতেই হোক না কেন সকলের একই হুকুম অর্থাৎ হারাম। (কেননা) ছহীহ্ হাদীস শরীফ সমূহ এবং ফিক্বহি ইবারত সমূহের দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, প্রাণীর ছবি তৈরী করা নাজায়িয ও হারাম।” (ফতওয়ায়ে নঈমিয়াহ্ পৃঃ ৪৮)
جاندار کی تصویر کسی حالت میں بھی رکھ نھیں سکتے کہ جاند ار کی تصویر شرعا حرام ھے پھر چاھے وہ براق کی ھویا پیر پیفمبر کی ھو.
অর্থঃ- “প্রাণীর ছবি কোন অবস্থায়ই ঘরে রাখা জায়িয নেই। কেননা প্রাণীর ছবি (তৈরী করা, রাখা শরীয়তে হারাম। চাই এটা বোরাকের হোক আর পীর-মাশাইখগণের হোক।” (ফতওয়ায়ে রহীমিয়াহ, ২য় জিঃ, পৃঃ২২৭)
واما فعل التصوير فهو غير جائز مطلقا لان فيه مضا هاة خق اله تعالى- وسواء كان فى ثوب او بساط اودرهم او اناء او حائط وغيرها.
অর্থঃ- “প্রাণীর ছবি তৈরী করা নাজায়িয-হারাম। কেননা এটাতে আল্লাহ্ পাক-এর সৃষ্টির অনুকরণ করা হয়। প্রাণীর ছবি বস্ত্রে, বিছানায়, মুদ্রায়, পাত্রে এবং প্রাচীর গাত্রে কিংবা অন্য কোন স্থানে থাকা একই কথা অর্থাৎ হারাম।” (কিফায়াতুল মুফ্তী, ৯ম জিঃ, পৃঃ ২২২)
ان حدیثوں سے تصویر بنانا تصویر رکھنا سب کا حرام ھونا معلوم ھوتا ھے.
অর্থঃ- “পূর্বে বর্ণিত হাদীস শরীফসমূহ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, প্রাণীর ছবি তৈরী করা এবং এটা ঘরে রাখা সব হারাম।” (আক্সি আশরাফী বেহেস্তি জিওর ৬ষ্ঠ জিঃ পৃঃ৫)
بعض لوگ سمجھتے ھیں کہ حدیث میں جس تصویر کشی کی مما نعت ھے وہ ھاتھو سے تصویر بنانے کے متعلق ھے اور کیمرہ سے جو تصویر اتاری جاتی ھے وہ چونکہ ھا تہ سے نھیں بنایء جاتی اسلئے وہ جائز ھے یہ خیال غلط اور فاسد ھے. اصل مقصد تصویر بنانے کی حرمب ھے خواہ کسی بھی الہ سے بنایء جائے.
অর্থঃ- “কিছু লোকের ধারণা, হাদীস শরীফে হাত দ্বারা প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম করা হয়েছে, ক্যামেরার দ্বারা নয়। এটা তাদের ভুল এবং ভ্রান্ত ধারণা। মূলতঃ হাদীস শরীফ দ্বারা প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার মূল উদ্দেশ্য- এটা যে পদ্ধতিতেই তৈরী করা হোক না কেন।” (তুহ্ফায়ে খাওয়াতীন পৃঃ ৯১২) (চলবে)
মুহম্মদ শফিকুল ইসলাম সান্তাহার, নওগাঁ
সুওয়ালঃ আমাদের এলাকায় একাধিকবার জানাযার নামায পড়া নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। “আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত” নামক সংগঠনের লোকেরা বলছে, মৃতের ওলী যদি জানাযা নামায পড়ে ফেলে তবে এরপর আর কারো জন্য উক্ত মাইয়্যিতের জানাযা পড়া জায়িয নেই। অপরপক্ষে জামায়াতী ও খারিজীরা বলছে জায়িয। এখন আমাদের সুওয়াল হলো- একাধিকবার জানাযার নামায পড়ার ব্যাপারে “আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত”-এর লোকদের বক্তব্য সঠিক? না, জামায়াতী-খারিজীদের বক্তব্য সঠিক? নির্ভরযোগ্য ফিক্বাহ্রে কিতাবসমুহের দলীলের ভিত্তিতে বিস্তারিত জানিয়ে এলাকায় সৃষ্ট বিতর্ক দূর করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ একাধিকবার জানাযা পড়ার ব্যাপারে “আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত” এর বক্তব্যই শুদ্ধ এবং দলীল-আদিল্লা সম্মত হয়েছে। অপরপক্ষে জামায়াতী ও খারিজীদের বক্তব্য অশুদ্ধ, মনগড়া ও হানাফী মাযহাবের রায়ের খিলাফ হয়েছে। কেননা, নির্ভরযোগ্য সমস্ত হানাফী ফিক্বাহ্রে কিতাব গুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, যদি ওলী নামায আদায় করে ফেলে অথবা নামায পড়ার এযাযত দেয় তবে এরপর আর কারো জন্য উক্ত মাইয়্যিতের নামাযে জানাযা আদায় করা জায়িয নেই। আর যদি ওলী নামায পড়ার বা ইযাযত দেয়ার পূর্বে একাধিকবার জানাযা আদায় করা হয়, তবে জায়িয রয়েছে। যেমন, বিশ্ব বিখ্যাত ও বিশ্ব সমাদৃত ফিক্বাহের কিতাব “আল ফাতাওয়াল্ আলমগীরিয়াহ্”-এর ১ম জিঃ ১৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে
وان صلى عيه الوى م يجز احد ان يصلى بعده ….. فان صلى غير الولى او السلطان اعاد اولى ان شاء كذا فى الهداسة-
رجل صلى صلاة الجنازة والولى خلفه وم يرضى به ان تابعه فصلى معه جاز ولايعيد الولى.
অর্থঃ- “যদি ওলী নামায আদায় করে ফেলে, তবে এরপর কারো জন্য জানাযা নামায আদায় করা ও পড়ানো জায়িয নেই। … যদি গাইরে ওলী (ওলী নয় এমন ব্যক্তি) অথবা বাদশা নামায আদায় করে তবে ইচ্ছা করলে ওলী নামায আদায় করতে পারবে। অনুরূপ ‘আল হিদায়াহ’ নামক কিতাবে আছে, “কোন ব্যক্তি জানাযা নামায আদায় করলো, ওলী তার পিছনে আছে, কিন্তু ওলী এতে তার অনুসরণ করতে নারায। এরপরও তার সঙ্গে নামায আদায় করলো, তবে জায়িয হবে। পুনঃ ওলী পড়াতে পারবে না।” “কানযুদ্ দাক্বাইক” কিতাবের ২য় জিঃ ১৮১পৃষ্ঠায় আছে
فان صلى عليه غير اولى والسلطان اعاد الولى ولم يصل غير بعده.
অর্থঃ “যদি গাইরে ওলী ও বাদশা নামায পড়ায় তবে ওলী (এরপর) নামায পড়াতে পারবে। ওলী নামায পড়ার পরে অন্য কেউ নামায পড়বে না।” “আল্ বাহর্রু রাইক” কিতাবের ২য় জিঃ ১৮২ পৃষ্ঠায় আছে
فان صلى الولى عليه لم يجز ان يصلى احد بعده يعنى سلطانا او غيره.
অর্থঃ- “যদি ওলী জানাযা নামায আদায় করে তবে এরপর কারো জন্য জানাযা পড়ানো জায়িয নেই। অর্থাৎ বাদশা হোক অথবা অন্য যে কোন ব্যক্তিই হোক।” “রদ্দুল মুহতার, শামী কিতাব”-এর ২য় জিঃ ২২৩ পৃষ্ঠায় আছে,
فان صى غير الولى او السلطان اعاد الولى ان الحق للأولياء وان صلى الولى لم يجز لاحد ان يصلى بعده.
অর্থঃ- “যদি গাইরে ওলী অথবা বাদশা জানাযা আদায় করে, তবে ওলী এরপর পড়তে পারবে। কেননা নিশ্চয়ই এটা ওলীগণেরই হক্ব। যদি ওলী নামায আদায় করে ফেলে, তবে এরপর কারো জন্য (উক্ত মৃতের) নামাযে জানাযা পড়া জায়িয নেই।” উল্লিখিত বিশ্ববিখ্যাত ও সর্বজনমান্য হানাফী মাযহাবের ফিকাহ্রে কিতাবগুলোর বক্তব্য দ্বারা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, আমাদের হানাফী মাযহাব মতে, “ওলী নামায পড়ার বা নামায পড়ানোর ইযাযত দেয়ার পূর্বে একাধিকবার জানাযা পড়া জায়িয রয়েছে। তবে ওলী নামাযে জানাযা আদায় করলে বা পড়ার ইযাযত দিলে পরবর্তীতে হানাফী মাযহাবের ফতওয়া মুতাবিক উক্ত মাইয়্যিতের জানাযা পড়া আর কারো জন্য জায়িয হবে না। অর্থাৎ ওলী জানাযার নামায আদায় করার বা পড়ার পূর্ব পর্যন্ত একাধিক বার জানাযা পড়া জায়িয কিন্তু ওলী জানাযার নামায আদায় করার পর অন্য কারো জন্য একবারও পড়া জায়িয নেই।” অতএব, স্পষ্ট হয়ে গেল যে, খারিজী ও জামায়াতীদের বক্তব্য অশুদ্ধ ও শরীয়তের খিলাফ হয়েছে। আর “আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত” এর বক্তব্যই শুদ্ধ, শরীয়ত সম্মত ও দলীল ভিত্তিক হয়েছে। {দলীলসমুহঃ (১) কানযুদ্ দাক্বাইক, (২) আল্ বাহর্রু রাইক্ব, (৩) কাশফুল্ হাক্বাইক (৪) আল্ ফাতাওয়াল্ আলমগীরিয়াহ, (৫) তানবীরুল্ আবছার (৬) আদ্ দুররুল্ মুখতার, (৭) রদ্দুল মুহতার, (৮) শামী, (৯) আল্ জাউহারাতুন্ নাইয়্যারাহ, (১০) হিদায়াহ (১১) আল্ বিনায়াহ, (১২) আশরাফুল্ হিদায়া, (১৩) আইনুল হিদায়াহ (১৪) নূরুদ্ দিরায়াহ (১৫) ফতহুল্ ক্বদীর, (১৬) আল্ কিফায়াহ, (১৭) শরহুল্ ইনায়াহ, (১৮) মারাকিউল ফালাহ, (১৯) হাশিয়াতুত্ ত্বাহত্বাবী, (২০) গাইয়াতুল আউতার, (২১) ফতওয়ায়ে দেওবন্দ ইত্যাদি} মাওলানা মুহম্মদ হারুনূর রশীদ ইমাম ও খতীব, সেনপাড়া জামে মসজিদ সেনপাড়া, রংপুর সুওয়ালঃ মসজিদের টিন, মাটি, ইট ইত্যাদি কোন অমুসলিমের নিকট বিক্রি করা জায়েয আছে কিনা? জাওয়াবঃ হ্যাঁ, জায়েয আছে। তবে ঐ সমস্ত জিনিস মসজিদে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে হুরমতের (সম্মান) উপযুক্ত। কাজেই মুসলমানগণের নিকট বিক্রি করাই উত্তম। যদি মুসলমান ক্রেতা পাওয়া না যায় তবে অমুসলিমদের নিকটও বিক্রি করা যেতে পারে। {দলীলসমূহঃ আহ্কামে মসজিদ, নাওয়াদিরুল ফতওয়া ইত্যাদি} মুছাম্মত সাহের বানু বেগম সভানেত্রী- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত রাজারহাট শাখা, কুড়িগ্রাম সুওয়ালঃ ইহ্রাম অবস্থায় নাকি মেয়েদের চেহারা বা মুখমন্ডলে কাপড় লাগানো যায়না। কাপড় লাগলে বা স্পর্শ করলে দম ওয়াজিব হয়। তাহলে কি মেয়েরা চেহারা না ঢেকে খুলে রাখবে? অর্থাৎ ইহ্রাম অবস্থায় কি মেয়েদের জন্য পর্দা করার দরকার নেই।? জাওয়াবঃ ‘ইহ্রাম অবস্থায় মেয়েদের চেহারা বা মুখমন্ডলে কাপড় স্পর্শ করা বা লাগানো যাবেনা, এ কথা সত্য।’ তবে এক্ষেত্রে মাসয়ালা হলো, যদি একদিন বা এক রাত্রি মুখমন্ডলে কাপড় স্পর্শ করে তাহলে তাদের উপর দম অর্থাৎ একটি কুরবানী ওয়াজিব হবে। আর যদি এক দিন বা এক রাত্রির কম সময় কাপড় স্পর্শ করে তাহলে এক ফিৎরা পরিমাণ ছদকা করা ওয়াজিব হবে। এর অর্থ এটা নয় যে মেয়েরা ইহ্রাম অবস্থায় মুখমন্ডল খোলা রেখে বে-পর্দা হবে। মেয়েদের সর্বাবস্থায় বেগানা পুরুষদের সামনে মুখমন্ডল খোলা রাখা হারাম যা কবীরা গুণাহ্রে অন্তর্ভূক্ত। অতএব, ইহ্রাম অবস্থায় মেয়েদের করণীয় হচ্ছে তারা মুখমন্ডলের উপর এমনভাবে কাপড় ঝুলিয়ে রাখবে যাতে কাপড় মুখমন্ডলে স্পর্শ না করে। অর্থাৎ নেকাব মুখমন্ডল থেকে কিছুটা দূরে নেট(জালি) জাতীয় কোন কিছুর সাহায্যে ঝুলিয়ে রাখবে। স্মরণ রাখতে হবে যে, কোন অবস্থাতেই পর্দার খেলাফ করা যাবেনা। কারণ মেয়েদের জন্য পর্দা রক্ষা করা করা হচ্ছে স্বতন্ত্র একটি ফরয। যা ফরযে আইন; এবং তা দায়েমী ফরযের অন্তর্ভূক্ত। যেমনিভাবে পুরুষের জন্য স্বতন্ত্র ও দায়েমী ফরয হচ্ছে হালাল কামাই করা। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
طلب كسب احلال فريضة بعد الفريضة.
অর্থঃ- “পুরুষের জন্য অন্যান্য ফরযের পর ফরয হচ্ছে হালাল কামাই করা।”
وللنساء الحجاب.
“আর মেয়েদের জন্য ফরয হচ্ছে পর্দা করা।” অর্থাৎ কলেমা, নামায, রোযা, হজ্ব ও যাকাতের পর পুরুষের জন্য ফরয হলো হালাল কামাই করা আর মেয়েদের জন্য ফরয পর্দা করা। নামায, রোযা, হজ্ব ও যাকাতের ন্যায় এ দু’টি ফরয পালনের ক্ষেত্রেও কুরআন-সুন্নাহ্র কঠোর নির্দেশ আরোপিত হয়েছে। যেমন, হালাল রুজীর ব্যাপারে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, এক দিরহাম বা এক পয়সা-টাকা হারাম খেলে চল্লিশ দিন ইবাদত কবুল হয়না এবং আরো বর্ণিত হয়েছে,
كل لحم نبت من السحت كانت النار اولىبه.
অর্থঃ- “শরীয়তের যে গোশতের টুকরোটি হারাম খাদ্যের দ্বারা তৈরী হয়েছে তার জন্য জাহান্নামের আগুনই যথেষ্ট। অর্থাৎ যে ব্যক্তি হারাম রুজী ভক্ষণ করে সে জাহান্নামী।” আর পর্দার ব্যাপারে হাদীস শরীফে বর্নিত হয়েছে,
لعن الله الناظر والمنظور اليه.
অর্থঃ- “যে দেখে এবং দেখায় তার প্রতি আল্লাহ্ পাক-এর লা’নত।”
আরো বর্ণিত হয়েছে যে,
لاتتبع النظرة فان لك ااوى وليست لك الاخرة.
অর্থঃ- “দৃষ্টিকে অনুসরণ করোনা। প্রথম দৃষ্টি যা অনিচ্ছা সত্ত্বে পতিত হয় তা ক্ষমা করা হবে; কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না।” অর্থাৎ প্রতি দৃষ্টিতে একটি কবীরা গুণাহ্ লেখা হয়ে থাকে। পর্দা সম্পর্কে কুরআন শরীফের নির্দেশ আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,
وقرن فى بيوتكن ولا تبرجن تبرج الجاهلية الاولى.
অর্থঃ- “হে মহিলাগণ! তোমরা তোমাদের ঘরে আবদ্ধ থাক এবং জাহিলিয়াতের যুগে যেভাবে মেয়েরা সৌন্দর্য্য প্রদর্শণ করে বেড়াত সেভাবে তোমরা সৌন্দর্য্য প্রদর্শণ করে বের হয়োনা।” আল্লাহ্ পাক অন্যত্র ইরশাদ করেন,
وقل لمؤمنت يغضضن من ابصارهن.
অর্থঃ- “হে হাবীব (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! ঈমানদার মেয়েদেরকে বলুন, তারা তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখবে।” উপরোক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
المرأة عورة فاذا خرخت استشر فها اشيطن.
অর্থঃ- “মেয়েরা পর্দায় থাকবে। কেননা তারা যখণ কোথাও বের হয় তখন শয়তান উঁকি-ঝুঁকি দিতে থাকে পাপ কাজ সংঘটিত করানো জন্য।” মূলতঃ একজন মেয়ে যখন উপুক্ত বা বালেগ হয় তখন হতে তার উপর ব্যক্তিগতভাবে পর্দা করা ফরয। এ ফরয পালনের যাতে কোন প্রকার গাফলতী কিংবা ত্রুটি না হয় এজন্য মেয়ের অভিভাবকগণকেও শরীয়ত কঠোর নির্দেশবাণী আরোপ করেছে। বলা হয়েছে,
الديوث ا يدخ الجنة.
অর্থঃ- “দাইয়্যূস’ বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবেনা। ‘দাইয়্যূস’ ঐ ব্যক্তি যে তার অধীনস্থ মেয়েদের পর্দা করায়না।” উল্লেখ্য, মেয়েদের জন্য পর্দা এমন গুরুত্বপূর্ণ ফরয যে, তা কেবল জীবতাবস্থায়ই করতে হবে তা নয় বরং তাদের ইন্তিকালের পরও পর্দা করা ফরয। অর্থাৎ মৃত্যুর পরও যেন কোন বেগানা পুরুষ না দেখে। স্মরণযোগ্য যে, অন্যান্য ফরযের মত পর্দাও একটি ফরয এবং তার হুকুম-আহ্কামও আলাদাভাবে বর্ণিত রয়েছে।
কাজেই শরীয়ত এ বিধান আরোপ করেনি যে, একটি ফরয পালন করার জন্য অন্য একটি ফরয পরিত্যাগ করতে হবে। বরং শরীয়তের নির্দেশ হচ্ছে এটাই যে, প্রতিটি ফরয-ওয়াজিব যথাযথভাবে আদায় করা। একটার জন্য আরেকটা ছেড়ে দেয়া জায়েয নেই। অতএব, পর্দা শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত একটি ফরয। কোন মেয়ে ইহ্রাম অবস্থায় হোক আর ইহ্রাম ব্যতীত অন্য অবস্থায়ই হোক পর্দা তরক্ব করা হারাম ও কবীরাহ্ গুণাহ্। যে মেয়ে ইহ্রাম অবস্থায় মুখমন্ডল খোলা রাখবে সে ফরয তরক্ব করার কারণে ফাসিক হিসেবে সাব্যস্ত হবে। অথচ আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে অশ্লীল-অশালীন ও ফিস্ক ফজুরী ইত্যাদি কাজ করতে নিষেধ করেছেন। আর যারা ইত্যাদি নিষেধ কাজ করে তাদের প্রকৃতপক্ষে হজ্বে মাবরুর নছীব হবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,
فمن فرض فيهن الحج فلا رفث ولا فسوق ولاجدال فى الحج وما تفعلوا من خير يعلمه الله وتزودوا فان خير الزاد التقوى واتقون ياولى الالباب.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি হজ্বে মাসসমূহে হজ্ব করার নিয়ত করে সে যেন হজ্বের মধ্যে স্ত্রী ব্যবহার ও তার সংশ্লিষ্ট কোন কাজ না করে এবং কোন প্রকার ফিস্ক-ফুজুরী কাজ এবং ঝগড়া-ঝাটি না করে। আর তোমরা যে উত্তম কাজ করো আল্লাহ্ পাক তা জানেন এবং তোমরা পাথেয় সংগ্রহ করো। নিশ্চয়ই উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া বা খোদাভীতি। আর একমাত্র আমাকেই ভয় করো হে জ্ঞানীগণ।” (সূরা বাক্বারা/১৯৭) উল্লেখ্য, ‘হজ্বে মাবরুর’ অর্থ কবুল হজ্ব। এর ব্যাখায় বলা হয়েছে,
هو ما ا يخاطه ااثم ولا سمعة ولارياء.
অর্থঃ- “যে হজ্বের মধ্যে কোন প্রকার পাপের সংমিশ্রণ ঘটবেনা, (বেপর্দা, বেহায়া-বেশরা কাজ করবেনা। অর্থাৎ কুফরী, শিরকী, বিদ্য়াতী হারাম, ফাসেকী, ফুজুরী, অশ্লীল-অশালীন কথা-বার্তা, আচার-আচরণ, ঝগড়া-ঝাটি, মারামারি, কাটাকাটি হেরেম শরীফে নিষিদ্ধ কার্যসমূহ করবেনা। এক কথায় ফরয-ওয়াজিব সুন্নতে মুয়াক্কাদা তরক্ব করবেনা।) লোককে শোনানোর উদ্দেশ্যে থাকবেনা এবং রিয়া বা লোক প্রদর্শণের জন্য করা হবেনা।” এ সমস্ত প্রকার দোষত্রুটি হতে মুক্ত হজ্বকেই হজ্বে মাবরুর বলা হয়। আর বে-পর্দা হওয়া সাধারন বা ছগীরা গুণাহ্ নয়। বরং প্রকাশ্য হারাম ও কবীরা গুণাহ্র অন্তর্ভূক্ত। আর হারাম ও কবীরা গুণাহ্ করে হজ্ব সম্পাদন করা হলে তা কস্মিন কালেও হজ্বে মাবরুর হবেনা। অতএব, এ ব্যাপারে সকল পুরুষ ও মেয়েদের সাবধান ও সর্তক থাকতে হবে। {দলীলসমূহ ঃ (১) আহকামুল কুরআন জাস্সাস, (২) কুরতুবী, (৩) রুহুল মায়ানী, (৪) রুহুল বয়ান, (৫) খাযেন, (৬) বাগবী, (৭) তাবারী, (৮) কবীর, (৯) মাযহারী, (১০) দুররে মনছুর, (১১) বুখারী, (১২) মুসলিম, (১৩) আবূ দাউদ, (১৪) কানযুল উম্মাল, (১৫) মিশকাত, (১৬) মিরকাত, (১৭) আশয়াতুল লুময়াত, (১৮) লুময়াত, (১৯) ত্বীবী, (২০) তা’লিকুছ ছবীহ, (২১) মুযাহিরে হক্ব, (২২) আলমগীরী, (২৩) শামী, (২৪) দুররুল মুখতার, (২৫) রদ্দুল মুহতার, (২৬) আইনুল হিদায়া, (২৭) ফতহুল ক্বাদীর, (২৮) শরহে বিক্বায়া, (২৯) ফাযায়েলে হজ্ব, (৩০) আহ্কামে হজ্ব ও যিয়ারত, (৩১) হজ্ব ও যিয়ারত, (৩২) আহকামে হজ্ব, (৩৩) মক্কা ও মদীনার পথে ইত্যাদি।}