সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ১১২তম সংখ্যা | বিভাগ:

ইঞ্জিনিয়ার মুহম্মদ হাবিবুল হক, গুলশান, ঢাকা

মুহম্মদ সাজেদুল ইসলাম (বাবু)

পাইকপাড়া, বি-বাড়িয়া

সুওয়ালঃ আমি মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর নিয়মিত একজন পাঠক। এ পত্রিকা পাঠের মাধ্যমে আমার এই প্রত্যয় দৃঢ় হয়েছে যে, কেবল এ পত্রিকার লিখাই হুবহু কুরআন-সুন্নাহ্র আদর্শ প্রতিষ্ঠার বাস্তব নমুনা। সত্যিই পত্রিকাটি একটি তাজদীদী পত্রিকা। এর প্রতিটি ফতওয়া প্রতিটি মাসয়ালার জাওয়াব এবং প্রতিটি লিখাই দলীলভিত্তিক যা প্রতিটি মুসলমানের আক্বীদা ও আমলের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরী। তাই এ মহান পত্রিকায় প্রকাশের জন্য আমি একটি সুওয়াল প্রেরণ করলাম।

          আমরা অনেক বছর যাবৎ দেখে আসছি যে, রাজনৈতিক মহলে শাইখুল হাদীস, মুফাস্সিরে কুরআন, মুফতী, মাওলানা, দলের আমীর যাদেরকে সাধারণ মানুষ বড় আলিম, হাদী মনে করে। অথচ তারা বিভিন্ন হারাম, নাজায়িয এবং কুফরী কাজ পর্যন্ত করে যাচ্ছে। তারা বেগানা মহিলার সাথে অবাধে দেখা-সাক্ষাৎ করছে, বেপর্দা হচ্ছে, অহরহ ছবি তুলছে, ভিডিও করছে, তাদের সে ছবিগুলো পেপার-পত্রিকাতেও আসছে এবং তারা ইসলামের নামে গণতন্ত্র, হরতাল, লংমার্চ, কুশপুত্তলিকা দাহ্, ব্লাসফেমী আইন তলব করছে ইত্যাদি। তাদের এসব কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে যে, তারা যা কিছু করছে সবই শরীয়তের খিলাফ। তারা নতুন কিছু করলেই সন্দেহ হয় তা মনগড়া অথবা বিধর্মীদের অনুসরণ কি-না?

          যেমন, শাইখুল হাদীস ছাহেবের দরসে বুখারীর ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আগামী ১৪ই মার্চ/২০০৩ শুক্রবার এক গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠান পালিত হতে যাচ্ছে।

          প্রকৃতপক্ষে বছরপূর্তি উপলক্ষে এ ধরণের গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠান সাধারণতঃ দুনিয়াবী কবি সাহিত্যিক ও স্কুল-কলেজ অর্থাৎ সাধারণ ক্ষেত্রে বা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পালিত হয়ে থাকে। কিন্তু দরসে বুখারীর মত ইসলামী মজলিস পঞ্চাশ বছর পূর্তি পালন শরীয়তসম্মত কিনা?

          দয়া করে কুরআন-সুন্নাহ্র দলীল আদিল্লাহ্ দ্বারা জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশেষ করে ২৫ বছর, ৫০ বছর, ৬০ বছর, ৭০ বছর, ৭৫ বছর, ১০০ বছর ও ১০০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গণসংবর্ধণা অনুষ্ঠান করা হিন্দু, ইহুদী, নাছারা ও শিয়াদের ধর্মীয় উৎসব ও অনুষ্ঠানের অন্তর্ভুক্ত। যা প্রকৃতপক্ষে জুবিলী বা জয়ন্তী অনুষ্ঠান নামে মশহুর। যদিও কেউ অন্য নামেও পালন করে তথাপিও তা বিধর্মী ও বিজাতীয়দের সাথে মুশাব্বা হওয়ার কারণে মুসলমানদের জন্য পালন করা সম্পূর্ণরূপে হারাম, নাজায়িয ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

          স্মরণীয়, মুসলমান মাত্রই প্রত্যেককেই যে কোন কাজ করতে হলে কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের ভিত্তিতেই করতে হবে। কারণ দ্বীন ইসলাম তথা শরীয়তের উসূলই হচ্ছে কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস।

          বছর পূর্তি উপলক্ষে এ ধরণের গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠান পালন করা যে শরীয়তসম্মত নয় তা বুঝতে হলে প্রথমে এর উৎপত্তি ও ইতিহাস সম্বন্ধে জানতে হবে।

          বছর পূর্তি সম্পর্কীয় অনুষ্ঠানাদির উৎপত্তি ও ইতিহাস নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

          উল্লেখ্য,  ২৫ বছর, ৫০ বছর, ৬০ বছর, ৭০ বছর, ৭৫ বছর ও ১০০ বছর এবং ১০০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠান বা গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠান পালন করা হয়ে থাকে। এ ধরণের অনুষ্ঠানের উদ্ভাবক হচ্ছে হিন্দু, ইহুদী, নাছারা ও শিয়া। আর এ অনুষ্ঠান পালন করে আসছে হিন্দু ইহুদী ও নাছারাসহ শিয়া এবং অন্যান্য গোমরাহ্ ফিরক্বার লোকেরা।

          এ ধরণের অনুষ্ঠানকে জয়ন্তী বা জুবিলী অনুষ্ঠান বলা হয়। যদিও অনেকে নাম উল্লেখ করেনা। অর্থাৎ নাম জুবিলী ও জয়ন্তী উল্লেখ না করে উল্লিখিত বছর পূর্তিকে উপলক্ষ্য করে অনুষ্ঠান করে প্রকৃতপক্ষে তারা জয়ন্তী বা জুবিলী অনুষ্ঠানের অনুসরণেই তা করে থাকে।

          জয়ন্তী বা জুবিলী অনুষ্ঠান আবার কয়েক প্রকার রয়েছে। যেমন, রজত জয়ন্তী, সূবর্ণ জয়ন্তী, হিরক জয়ন্তী, প্লাটিনাম জয়ন্তী, হলি ইয়ার জয়ন্তী, মিলেনিয়াম জয়ন্তী।

জয়ন্তী ও জুবিলী কাকে বলে ?

          জয়ন্তী অর্থ ইন্দ্রকন্যা, দুর্গা; শ্রী কৃষ্ণের জন্ম তিথি বা জন্ম রাত্রি; পতাকা। জয়ন্তী অনুষ্ঠানের উৎস হচ্ছে শ্রী কৃষ্ণের জন্ম তিথি থেকে। এ ধারাবাহিকতার ঐতিহ্য রক্ষা করে হিন্দু সম্প্রদায় জয়ন্তী পালন করে। আর শরীয়তে নাজায়িয হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানদের মধ্যেও কেউ কেউ তাদের সাথে মিল রেখে রবীন্দ্র জয়ন্তী ও নজরুল জয়ন্তী উৎসব অনুষ্ঠান করে থাকে। ইন্দ্রকন্যা, দুর্গা ও শ্রী কৃষ্ণের জন্মের স্মৃতিবাহী জন্ম জয়ন্তী উৎসব অনুষ্ঠান হিন্দু শাস্ত্র দ্বারাই প্রমাণিত।

          উল্লেখ্য, জয়ন্তী আর জুবিলী এখন সমার্থক। মূলতঃ জুবিলীর ধারণাটিই এখন জয়ন্তীর সাথে যোগ হয়ে নতুন মাত্রা লাভ করেছে। ইহুদী খ্রীষ্টানদের Diamond, Golden, Silver Jubilee -র ধারণা জয়ন্তীর সাথে যোগ হয়ে হীরক, স্বর্ণ ও রজত জয়ন্তী পালিত হয়ে থাকে। এছাড়াও বর্তমানে প্লাটিনাম জয়ন্তী, হলি ইয়ার জয়ন্তী এবং মিলেনিয়াম জয়ন্তী-এর ইংরেজী নামগুলো যথাক্রমে- Platinum jubilee, Holy year jubilee and Millennium jubilee.

jubilee শব্দের উদ্ভব ঘটেছে ফরাসী ভাষার jubile, ল্যাটিন ভাষার jubilaeus এবং হিব্রু ভাষার Yobel এই তিন শব্দ থেকে। আর এই তিনের অর্থ যা, ইংরেজী jubilee অর্থও তাই। প্রামাণ্য ইংরেজী অভিধানে জুবিলী অর্থ করা হয়েছে The blast of a trumpet. Blast অর্থ প্রবল বাত্যা, ঝঞ্ঝা, বিস্ফোরণ আর Trumpet অর্থ ভেঁপু, ভেরীধ্বনি ইত্যাদি। আভিধানিক অর্থকে সামনে রেখে জুবিলী অর্থ হয় মহোৎসব, মহাআনন্দ উৎসব ইত্যাদি।

রজত, সুবর্ণ, হীরক, প্লাটিনাম, হলি ইয়ার ও মিলেনিয়াম জয়ন্তীর ইতিহাস হচ্ছে এই-

          (১) সিলভার জুবিলীঃ রোমান ক্যাথলিকগুলো প্রতি পঁচিশ বছর পর জাঁকজমকের সাথে ধর্মীয় অনুষ্ঠান উৎসব পালন করে থাকে। এ উৎসবের নাম তারা করেছে সিলভার জুবিলী। (Roman catholic church celebration of a twenty fifth anniversary).

          (২) গোল্ডেন জুবিলীঃ পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হওয়া উপলক্ষে ইহুদীদের কর্তৃক পালণীয় উৎসব বিশেষ। এ সময়ে তারা ক্রীতদাসদের এবং ঋণগ্রহীতাদের ঋণ মুক্ত করে পূণ্য লাভ করে। দীন-দুঃখীদেরও দান করে। (The jewish celebration of a fiftieth anniversary). ইহুদীরা এই অনুষ্ঠানকে মনে করে পাপ মুক্তির অনুষ্ঠান এতে তারা আনন্দ অনুষ্ঠানও করে।

          (৩) ডায়মন্ড জুবিলীঃ ষাট বছর পূর্ণ হওয়া উপলক্ষে আনন্দানুষ্ঠান। প্রথমে এক শ্রেণীর খ্রীষ্টান (সম্ভবত প্রোটেস্টান্ট) যাদের বয়স ষাট বছর পূর্ণ হতো, তারা হীরক জয়ন্তী পালন করতো। পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠানের বয়স ষাট বছর হলে সাড়ম্বরে অনুষ্ঠান পালন করতে থাকে। এ প্রথা এখনও প্রচলিত।

অবশ্য কেউ কেউ ৭৫ বছর পূর্ণ হলে ডায়মন্ড জুবিলী বা হীরক জয়ন্তী পালন করে থাকে।

          (৪) প্লাটিনাম জুবিলী বা জয়ন্তীঃ ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে শিয়া সম্প্রদায়ের এক বিশেষ শাখা যারা ইসমাঈলী বা খোজা শিয়া নামে মশহুর। আর বর্তমানে আগাখানী নামে মশহুর। এরা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের মতে মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত নয়। এরাই সর্বপ্রথম ৩রা ফেব্রুয়ারী ১৯৫৪ সালে প্লাটিনাম জুবিলী বা জয়ন্তী অনুষ্ঠান পালন করে।

          (৫) হলি ইয়ার জুবিলী বা জয়ন্তীঃ রোমান ক্যাথলিক পোপ অষ্টম বোনিফেস ১৩০০ সালে ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে যে অনুষ্ঠান পালন করে তাকে তারা হলি ইয়ার নামে নাম করণ করে। যা হলি ইয়ার জুবিলী বা জয়ন্তী নামে মশহুর।

(৬) মিলেনিয়াম জুবিলী বা জয়ন্তীঃ  ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা হাজার বছর পূর্তি উপলক্ষে যে মহা উৎসব পালন করে তা মিলেনিয়াম জুবিলী বা জয়ন্তী নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে।

          লক্ষ্যণীয়, এই ছয়টি অর্থাৎ সব কয়টি জুবিলী বা জয়ন্তী অনুষ্ঠানের সাথেই মুসলমানদের কোনই সম্পর্ক নেই। মূল জয়ন্তী অনুষ্ঠানটি হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসবের অন্তর্ভুক্ত। আর মূল জুবিলী অনুষ্ঠানটি ইহুদী ও নাছারাদের ধর্মীয় উৎসবের অন্তর্ভুক্ত।

          এর মধ্যে প্রথমটি রোমান ক্যাথলিকদের অনুষ্ঠান, দ্বিতীয়টি ইহুদীদের অনুষ্ঠান, তৃতীয়টি খ্রীষ্টান চতুর্থটি শিয়াদের অনুষ্ঠান। ষষ্ঠটি ইহুদী ও নাছারাদের অনুষ্ঠান। সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে উপরোক্ত সবক’টি অনুষ্ঠানেরই উদ্ভব ঘটেছে ধর্মীয় উৎস থেকে। মুসলমানদের মধ্যে যারা রজতজয়ন্তী, সুবর্ণ জয়ন্তী, হীরক জয়ন্তী, প্লাটিনাম জয়ন্তী, হলি ইয়ার জয়ন্তী ও মিলেনিয়াম জয়ন্তী পালন করেন বা করতে চান তারা যদি বলেন যে, ‘আমরা তো জুবিলী পালন করিনা জয়ন্তী পালন করি’ তাহলে তাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, জয়ন্তী ও জুবিলী কোনটাই মুসলমানদের নয়। জয়ন্তীর সাথে দুর্গা ও শ্রী কৃষ্ণের সম্পর্ক আর জুবিলীর সাথে খ্রীষ্টান, ইহুদী ও শিয়াদের সম্পর্ক।

এ প্রসঙ্গে Encyclopaedla Britannica তে উল্লেখ আছে, “Jubilee, Year of, also called HOLY YEAR, in the Roman Catholic church, a celebration that is observed on certain special occasions and for I year every 25 years, ……… It resembles the Old Testament Jubilee- in which, every 50 years, the Hebrews celebrated a year of perfect rest, emancipated siaves, and restored hereditary property …”

অর্থাৎ- “জুবিলী একে পবিত্র বর্ষ নামেও অভিহিত করা হয়। রোমান ক্যথিলিক চার্চে নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে নির্দিষ্ট বিশেষ উপলক্ষকে কেন্দ্র করে প্রত্যেক ২৫ বছরে উদযাপিত এক বছরব্যাপী অনুষ্ঠান। …….এটা “ওল্ড টেষ্টামেন্ট জুবিলী” -এর সদৃশ। যেখানে প্রত্যেক ৫০ বছরে ১ বছর হিব্রুরা নির্ভেজাল বিশ্রাম, দাসমুক্তি আর বংশানুক্রমে প্রাপ্ত সম্পত্তির পুনর্বিণ্যাসের বছর হিসেবে উদযাপন করত ….।”

এ প্রসঙ্গে Encyclopedla Americana তে উল্লেখ আছে, JUBILEE, a celebration of a period of time, anniversary or other special occasion. The word is from the Hebrew yobel, meaning ram’s horn, In the Old Testament the Jews celebrated a jubilee every 50th year, at the end of seven sabbatical Church an ordinary jubilee, or Holy Year, occurs every 25th year and carries a plenary indulgence for those who repent and make a pilgrimage to Rome.

অর্থাৎ- “জুবিলী একটি নির্দিষ্ট সময়কাল, বার্ষিকী বা অন্যান্য বিশেষ উপলক্ষে সম্মান প্রদর্শন বা উদযাপন। জুবিলী শব্দ এসেছে হিব্রু ‘ইয়োবেল’ শব্দ থেকে যার অর্থ হচ্ছে ‘ভেড়ার শিং।’ বাইবেলের পুরাতন সংস্করণ ‘দি ওল্ড টেস্টামেন্ট’-এ ইহুদীরা প্রত্যেক ৫০ বছরে সাতটি বিশ্রামবর্ষ শেষে একটি জুবিলী উদযাপন করত। …       রোমান ক্যাথলিক চার্চে প্রতি ২৫ বছরে একটি সাধারণ জুবিলী তথা পবিত্র বর্ষ উদযাপিত হত যা রোমে গমণকারী অনুতপ্ত তীর্থ যাত্রীদের জন্য ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে অবাধ পাপ মোচনের  বার্তা বহন করত।”

          এ প্রসঙ্গে The New Illustrated Everyman’s Encyclopedla তে উল্লেখ আছে, “Jubilee, The Year of, Biblical law according to which, every 50th year all land was restored to those original owners who had lost it within that period …..”

অর্র্থাৎ- “বাইবেলের আইন, যে আইন অনুযায়ী প্রত্যেক ৫০তম বর্ষে সমস্ত ভূমি ঐসব প্রকৃত মালিকদের নিকট প্রত্যর্পণ করা হত যারা ঐ সময়ে তা হারিয়েছেন। ….. ”

          এ প্রসঙ্গে The Every man Dictionary of Religion & Philosophy তে উল্লেখ আছে, “Jubilee. Every 50 years Jewish slaves (according to Leviticus 25) could be emancipated. The practice is echoed in the modern practice of the Roman Catholic Church by which a special “plenary” Indulgence is granted to pilgrims who visit Rome.”

অর্থাৎ- “প্রত্যেক ৫০ বছর পরপর ইহুদী ত্রুীতদাসদের মুক্ত করা যেত। (লেভিটিকাস ২৫ অনুসারে)। এই রীতিই প্রতিধ্বনিত হয়েছে রোমান ক্যাথলিক চার্চের আধুনিক রীতিতে; যাতে রোমে গমণকারী তীর্থ যাত্রীদের জন্য বিশেষ অবাধ সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়।”

এ প্রসঙ্গে Funk & Wagnalls New Encyclopedia তে উল্লেখ আছে, “…. The Christian Church adopted the concept of a year of remission and the term Jubilee from the Jews ….”

অর্থাৎ- “খ্রীষ্টান, চার্চ, মার্জনা/মুক্তি বর্ষের ধারণা এবং জুবিলী শব্দ ইহুদীদের থেকেই গ্রহণ করেছিলো।”

উপরোক্ত উৎপত্তি ও ইতিহাসের আলোচনা থেকে যা বুঝা গেল তা হলো ২৫, ৫০, ৬০, ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এ ধরণের জুবিলী ও জয়ন্তী অনুষ্ঠান সমূহের সাথে মুসলমানদের কোনই সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ এগুলো ইসলামী বা মুসলমানী অনুষ্ঠান নয়। বরং বিধর্মী ও বিজাতি তথা হিন্দু, ইহুদী, খ্রীষ্টানদের ধর্মীয় উৎসবের অন্তর্ভুক্ত।

আর বিশেষ করে উল্লেখ্য যে, পঞ্চাশ বছর পূর্তি পালন হল খ্রীষ্টান পাদ্রীদের সম্মান দেয়ার মত অনুষ্ঠান। খ্রীষ্টান পাদ্রীদের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সম্মান দেয়া হয় বা জুবিলী পালন করা হয়।

এ প্রসঙ্গে Encyclopedia Britannica তে আরো উল্লেখ আছে,  “Special jubilees have heen declared for a pope’s 50th anniversary in the priesihood (pope pius XI. 1929), at the close of the second Vatican Council (1965) to promote the knowledge and application of the council’s achievements and on many other occasions.”

          অর্থাৎ “দ্বিতীয় ভ্যাটিকান কাউন্সিল শেষে (১৯৬৫) পুরোহিত মন্ডলীতে একজন পোপের ৫০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিশেষ জুবিলীসমূহ ঘোষিত হয়। (পোপ পাইয়াস একাদশ ১৯২৯) কাউন্সিলের জ্ঞানগত ও প্রয়োগগত অর্জনের উন্নতি সাধন কল্পে এবং আরো নানা কারণ উপলক্ষে উক্ত বিশেষ জুবিলীসমূহ ঘোষিত হয়।”

          উল্লেখ্য, উপরোক্ত ২৫ বছর, ৫০ বছর ইত্যাদি বছর পূর্তি বা জুবিলী পালন সম্পর্কে শরীয়তের ফায়সালা হলো, কোন মুসলমানের জন্যই বিধর্মী ও বিজাতিয়দের কোন অনুষ্ঠানকে অনুসরণ ও অনুকরণ করা জায়িয নেই। তা শুধুমাত্র নাজায়িযই নয় বরং হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। তা স্বনামে হোক অথবা বেনামে হোক উভয়ের একই হুকুম।

          বিধর্মী ও বিজাতিদের অনুসরণ ও অনুকরণ করা যে নাজায়িয ও হারাম সে প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক সূরা ফাতিহাতে বলেন, তোমরা দোয়া করো-

اهدنا الصراط المستقيم.

অর্থঃ- “(আল্লাহ্ পাক) আমাদেরকে সরলপথ প্রদর্শন করুন।”

সরলপথ কোনটি? এবং কাদের পথটা সরল পথ হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত? সে সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক পরবর্তী আয়াত শরীফে বলেন, صراط الذين انعمت عليهم.

অর্থঃ- “যাদেরকে নিয়ামত দেয়া হয়েছে তাঁদের পথ।” অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক যাদেরকে নিয়ামত দিয়েছেন তাঁদের পথকে সরলপথ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আল্লাহ্ পাক কাদেরকে নিয়ামত দিয়েছেন?

আল্লাহ্ পাক বলেন,

انعم الله عليهم من النبين والصديقين والشهداء والصلحين وحسن اولئك رفيقا.

অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক নিয়ামত দিয়েছেন যাঁরা নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও ছলেহ্ তাঁদেরকে এবং তাঁরাই উত্তম বন্ধু বা সঙ্গী।” (সূরা নিসা/৬৯)

অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক যাদেরকে নিয়ামত দিয়েছেন তাঁরা হচ্ছেন দু’শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। প্রথম শ্রেণী হচ্ছেন নবী বা রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ। আর দ্বিতীয় শ্রেণী হচ্ছেন ছিদ্দীক, শহীদ, ছলেহ্ অর্থাৎ যারা বিলায়েতের হক্বদার অর্থাৎ আউলিয়া-ই-কিরামের অন্তর্ভুক্ত।

তাই আল্লাহ্ পাক অন্য আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,

يايها الذين امنوا التقوا الله وكونوا مع الصدقين.

অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ্ পাককে ভয় করো এবং সত্যবাদী আল্লাহ্ওয়ালাগণের ছোহ্বত ইখ্তিয়ার করো।” (সূরা তওবা/১১৯)

          কারণ নবী আলাইহিমুস্ সালাম ও আউলিয়া-ই-কিরামগণ হচ্ছেন উত্তম সঙ্গী। যাদের ছোহ্বত ইখতিয়ার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে পরবর্তীতে নবী আসবেন না। আউলিয়া-ই-কিরামগণ আসবেন আর তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে উঁচু মাকামের হলেন ছিদ্দীকগণ। তাই ছিদ্দীকগণের ছোহ্বত গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।

এক কথায় আল্লাহ্ পাক নিজেই বলে দিলেন, আমি নবী এবং আউলিয়া-ই-কিরামগণকে যে পথ দিয়েছি সেটাই সরল পথ এবং সে পথই তোমরা তলব কর। এর খিলাফ পথে চলতেও পারবেনা এবং তলবও করতে পারবে না।

মহান আল্লাহ্ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,

يايها الذين امنوا لاتتخذوا الذين اتخذوا دينكم هزوا ولعبا من الذين اوتوا الكتب من قبلكم والكفار اولياء واتقوا الله ان كنتم مؤمنين.

অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আহলে কিতাব (ইহুদী-নাছারা) এবং কাফিরদের মধ্যে যারা তোমাদের দ্বীনকে খেল-তামাশার বস্তু হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করোনা। এ ব্যাপারে আল্লাহ্ পাককে ভয় কর যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাক।” (সূরা মায়িদা/৫৭)

          তাই আল্লাহ্ পাক সূরা ফাতিহার পরবর্তী আয়াত শরীফে সেটা উল্লেখ করেছেন, তোমরা এ দোয়াও করবে,

غير المغضوب عليهم ولا الضالين.

অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক আমাদের তাদের পথ দিবেন না, যারা গযবপ্রাপ্ত ও পথহারা, (ইহুদী-নাছারা)।” (সূরা ফাতিহা/৭)

          কুরআন শরীফ নাযিলের উছূল হচ্ছে, নুযূল খাছ হুকুম আম। অর্থাৎ আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে কোন উপলক্ষ্য নিয়ে কিন্তু তার হুকুম বলবৎ থাকবে ব্যাপকভাবে, ক্বিয়ামত পর্যন্ত। অর্থাৎ সূরা ফাতিহাতে যদিও ইহুদী-নাছারাদের পথ থেকে পানাহ্ চাইতে বলা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে তা হচ্ছে সমস্ত বিধর্মী ও বিজাতীয়দের পথ থেকে। অর্থাৎ যদি আহলে কিতাবদের পথ থেকে পানাহ্ চাইতে হয় তাহলে যারা আহলে কিতাব নয় তাদের পথ থেকে তো অবশ্যই পানাহ্ চাইতে হবে। তারা হচ্ছে হিন্দু, বৌদ্ধ, মজূসী, মুশরিক, কাফির, বেদ্বীন, বদ্দ্বীন, বিদ্য়াত, বেশরা, গোমরাহ্ ইত্যাদি।

          এখন প্রশ্ন হচ্ছে- যদি সত্যিই আমরা সূরা ফাতিহা মানি, স্বীকার করি এবং নামাযে প্রত্যেক রাক্য়াতে তিলাওয়াত করে দোয়া করি তাহলে আমরা কি করে হিন্দু, ইহুদী, নাছারাদের দ্বারা প্রবর্তিত বছর পূর্তি উপলক্ষে জয়ন্তী ও জুবিলী অনুষ্ঠান তা স্বনামে বা বেনামে দরসে বুখারীর অনুষ্ঠান নাম দিয়ে করতে পারি? এবং করা জায়িয বলে ফতওয়া দিতে পারি?

          প্রকৃতপক্ষে বছর পূর্তি উপলক্ষে জয়ন্তী ও জুবিলী অনুষ্ঠান করা জায়িয ও জরুরী বলে ফতওয়া দেয়া কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

          তাই কোন মুসলমানের জন্যই কোন অবস্থাতেই বিজাতীয় ও বিধর্মীদের  নিয়ম-নীতি ও তর্জ-তরীক্বা অনুসরণ-অনুকরণ করা জায়িয নেই। যারা জায়িয বলবে তাদের উপর কুফরীর ফতওয়া বর্তাবে।

কারণ এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক “সূরা আল ইমরানের” ৮৫নং আয়াত শরীফে আরো বলেন,

ومن يبتغ غير الاسلام دينا فلن يقبل منه وهو فى الاخرة من الخسرين.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম (বিধর্মী ও বিজাতীয়দের নিয়ম-নীতি ও তর্জ-তরীক্বা) তলব বা অনুসরণ ও অনুকরণ করে, তার থেকে তা কখনই গ্রহণ করা হবেনা এবং সে পরকালে (অবশ্যই) ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সূরা আলে ইমরান/৮৫)

যার ব্যাখ্যায় হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,

عن جابر عن النبى صلى الله عليه وسلم حين اتاه عمر فقال انا نسمع احاديث من يهود تعجبنا افترى ان نكتب بعضها فقال امتهوكون انتم كما تهوكت اليهود والنصارى لقد جئتكم بها بيضاء نقية ولو كان موسى حيا ماوسعة الا اتباعى.

অর্থঃ- “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, একদিন হযরত ওমর ইবনে খত্তাব রদি¦য়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা ইহুদীদের থেকে তাদের কিছু ধর্মীয় কথা শুনে থাকি, যাতে আমরা আশ্চর্যবোধ করি, এর কিছু আমরা লিখে রাখবো কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরাও কি দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছো? যে রকম ইহুদী-নাছারারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে? অবশ্যই আমি তোমাদের নিকট পরিপূর্ণ, উজ্জ্বল ও পরিস্কার দ্বীন নিয়ে এসেছি। হযরত মুসা আলাহিস্ সালামও যদি দুনিয়ায় থাকতেন, তাহলে তাঁকেও আমার অনুসরণ করতে হতো।” (মুসনাদে আহ্মদ, বাইহাক্বী, মিশকাত, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ্ ইত্যাদি)

          তাই আমরা দেখতে পাই, ইহুদী-খ্রীষ্টান তথা বিধর্মীরা যে সকল আমল করত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও তা করতেন না এবং উম্মতদেরকেও বিধর্মীদের আমল অনুসরণ ও অনুকরণ না করার জন্য কঠোরভাবে তাকিদ দিয়েছেন।

          উল্লেখ্য, এ নিষেধ শুধু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রেই করা হয়নি বরং প্রতি ক্ষেত্রেই করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

يايها النبى اتق الله ولا تطع الكفرين والمنفقين ان الله كان عليما حكيما واتبع ما يوحى اليك من ربك ان الله كان بما تعملون خبيرا.

অর্থঃ- “হে নবী! (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্ পাককে ভয় করুন। আর কাফিরদের ও মুনাফিকদের অনুসরণ করবেননা। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক মহাজ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময়। আর আপনার রবের তরফ হতে যা আপনার প্রতি ওহীরূপে প্রেরীত হয় তার অনুসরণ করুন। (হে মানুষেরা) নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তোমাদের আমল সম্পর্কে পূর্ণ খবর রাখেন।” (সূরা আহযাব/১, ২)

এর ব্যাখ্যায় হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن عمرو بن شعيب عن ابيه عن جده ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ليس منا من تشبه بغيرنا لاتشبهوا اليهود ولا بالنصارى.

অর্থঃ- “হযরত আমর বিন শুয়াইব রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের ব্যতীত অন্য সম্প্রদায়ের সাথে (আক্বীদা-আমলে) তাশাব্বুহ্ বা মিল রাখে সে আমাদের দলভুক্ত নয়। অতএব, তোমরা ইহুদী ও নাছারাদের সাথে সাদৃশ্য রেখনা।” (তিরমিযী, মিশকাত)

যেমন, ইহুদী-নাছারারা আশুরার একদিন রোযা রাখত, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতে মুহম্মদীকে দু’দিন রোযা রাখতে বললেন। ইহুদী-নাছারারা দেরী করে ইফতার করত, এর পরিপ্রেক্ষিতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমদের তাড়াতাড়ি ইফতার করতে বলেন। আবার ইহুদীরা শুধুমাত্র পাগড়ী ব্যবহার করত, এর পরিপ্রেক্ষিতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম টুপি ছাড়া পাগড়ী পরতে নিষেধ করেছেন এবং টুপিসহ পাগড়ী ব্যবহার করতে বলেছেন। দাড়ী ও মোছের ব্যাপারে মজূসী (অগ্নি উপাসক) ও মুশরিকদের বিরোধীতা করতে বলেছেন।

যেমন, তারা দাড়ী কাটত ও মোছ বড় করত। তাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা দাড়ী বড় কর ও মোছ ছোট কর।’ ইত্যাদি প্রত্যেক বিষয়ে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদের আস্তিক-নাস্তিক, ইহুদী-নাছারা, মজুসী-মুশরিক তথা বিজাতি, বিধর্মীদের অনুসরণ না করে খিলাফ করতে বলেছেন।

এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ابن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم خالفوا المشركين.

অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা মুশরিকদের অর্থাৎ মূর্তিপূজক বা হিন্দুদের বিপরীত আমল কর।” (বুখারী, মুসলিম)

এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم خالفوا المجوس.

অর্থঃ-  “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হযরত রসূলে করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা মজূসী তথা অগ্নি উপাসকদের বিপরীত আমল কর।” (মুসলিম, আহমদ)

যদি তাই হয় তাহলে বছর পূর্তি উপলক্ষে দরসে বুখারীর এ ধরণের গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠান পালন করা কি করে জায়িয হতে পারে? যা হিন্দু, ইহুদী, নাছারা ও শিয়া ইত্যাদি বাতিল, গোমরাহ্ ফিরক্বার তর্জ-তরীক্বার অন্তর্ভুক্ত।

          অর্থাৎ কস্মিনকালেও তা পালন করা জায়িয নেই। বরং সর্বক্ষেত্রে ইসলামের উপর ক্বায়িম থাকতে হবে। আর ইসলামের উপর সর্বক্ষেত্রে ক্বায়িম থাকতে হলে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ ও অনুকরণ করতে হবে।

সে প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন, তিনিই একমাত্র সর্বোত্তম আদর্শ, যা কুরআন শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,

لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة.

অর্থঃ- “তোমাদের জন্য হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মধ্যে (চরিত্র মুবারকে) সর্বোত্তম আদর্শ রয়েছে।” (সূরা আহ্যাব/২১)

আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই একমাত্র আদর্শ এবং এ আদর্শের খিলাফ কোন কাজ করা যাবেনা।

তাই আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে অন্যত্র বলেন,

ما اتكم الرسول فخذوه وما نهكم عنه فانتهوا واتقوا الله ان الله شديد العقاب.

অর্থঃ- “তোমাদের রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা এনেছেন তা আঁকড়ে ধর এবং যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাক। এ বিষয়ে আল্লাহ্ পাককে ভয় কর। আল্লাহ্ পাক কঠিন শাস্তিদাতা।” (সূরা হার্শ/৭)

যার ব্যাখ্যায় হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن مالك بن انس رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تركت فيكم امرين لن تضلوا ماتمسكتم بهما كتاب الله وسنتى.

অর্থঃ- “হযরত মালিক ইবনে আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমি তোমাদের মধ্যে দু’টো জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতদিন পর্যন্ত তোমরা সে দু’টো জিনিস আঁকড়ে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত গোমরাহ্ হবে না। একটি হলো, আল্লাহ্ পাক-এর কিতাব ও অপরটি হলো, আমার সুন্নাহ্।” (বুখারী)

কাজেই কেউ যদি ইসলাম ব্যতীত অর্থাৎ কুরআন-সুন্নাহ্ ব্যতীত বিধর্মী বা বিজাতীয়দের অনুসরণ ও অনুকরণ করে তবে তাদের যে কঠোর পরিণতি হবে সে সম্পর্কে  হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن عبد الله بن عمر رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو منهم.

অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (মুসনাদে আহমদ, সুনানে আবূ দাউদ)

এ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় নিম্নলিখিত ঘটনা উল্লেখ করা যায়, হিন্দুস্থানে একজন জবরদস্ত আল্লাহ্ পাক-এর ওলী ছিলেন। যিনি ইন্তিকালের পর অন্য একজন বুযূর্গ ব্যক্তি তাকে স্বপে¦ দেখে জিজ্ঞেস করেন, “হে আল্লাহ্ পাক-এর ওলী! আপনি কেমন আছেন?” তখন সেই আল্লাহ্ পাক-এর ওলী জাওয়াবে বলেন, “আপাততঃ আমি ভালই আছি, কিন্তু আমার উপর দিয়ে এক কঠিন সময় অতিবাহিত হয়েছে যা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমার ইন্তিকালের পর আমাকে ফেরেশ্তারা সরাসরি আল্লাহ্ পাক-এর সম্মুখে পেশ করেন। আল্লাহ্ পাক তখন  ফেরেশতাদেরকে বলেন, “হে ফেরেশ্তাগণ! তোমরা তাকে কেন এখানে এনেছ?” ফেরেশ্তাগণ বলেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! আমরা তাকে খাছ বান্দা হিসেবে আপনার সাথে সাক্ষাৎ করানোর জন্য নিয়ে এসেছি।” এটা শ্রবণ করে আল্লাহ্ পাক বললেন, “তাকে এখান থেকে নিয়ে যাও, তার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে। কেননা সে পূজা করেছে।” আল্লাহ্ পাক-এর ওলী বলেন, এটা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম এবং ভয়ে আমার সমস্ত শরীর কাঁপতে লাগল। তখন আমি আল্লাহ্ পাক-এর নিকট আরজু পেশ করলাম, “আয় আল্লাহ্ পাক! আমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে কেন? আমি তো সব সময় আপনার এবং আপনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ফরমাবরদার ছিলাম। কখনও ইচ্ছাকৃত নাফরমানি করিনি আর পূজা করার তো প্রশ্নই উঠেনা। কারণ আমি কখনও মন্দিরের আশ-পাশ দিয়েও হাঁটিনি।” তখন আল্লাহ্ পাক বললেন, “তুমি পূজা করেছ। তুমি সেই দিনের কথা স্মরণ কর, যেদিন হিন্দুস্থানে হোলি পূজা হচ্ছিল। তোমার সামনে-পিছনে, ডানে-বামে, উপরে-নীচে সমস্ত গাছ-পালা, তরু-লতা, পশু-পাখী, কীট-পতঙ্গ সবকিছুকে রং দেয়া হয়েছিল। এমতাবস্থায় তোমার সামনে দিয়ে একটি গর্দভ যাচ্ছিল যাকে রং দেয়া হয়নি। তখন তুমি পান চিবাচ্ছিলে বা পান খাচ্ছিলে। তুমি সেই গর্দভের গায়ে এক চিপটি পানের রঙীন রস নিক্ষেপ করে বলেছিলে, “হে গর্দভ! আজ হোলী পূজার দিন। তোমাকে তো কেউ রং দেয়নি তাই আমি তোমাকে রং দিয়ে দিলাম। এটা কি তোমার পূজা করা হয়নি? তুমি কি জান না, আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

من تشبه بقوم فهو منهم.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথে হবে। সুতরাং এখন তোমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হওয়া উচিৎ।”

যখন আল্লাহ্ পাক এ কথা বললেন, তখন আমি লা-জাওয়াব হয়ে গেলাম এবং ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে, কাকুতি-মিনতি করে, রোনাজারী করে বললাম, “আয় আল্লাহ্ পাক! আমি এটা বুঝতে পারিনি আর আমাকে কেউ এটা বুঝিয়েও দেয়নি। এছাড়া আমার অন্তরও সাড়া দেয়নি। কাজেই আমাকে দয়া করে ক্ষমা করে দিন।” কিছুক্ষণ পর আল্লাহ্ পাক বললেন, “ঠিক আছে, তোমাকে অন্যান্য আমলের কারণে ক্ষমা করা হলো।”

আল্লাহ্ পাক-এর ওলী তখন স্বপ্নদ্রষ্টাকে বললেন, “তোমরা এ ধরণের মুশাবা থেকে সাবধান থেকো অন্যথায় নাজাত পাওয়া অত্যন্ত কঠিন হবে।”

          হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে, বণী ইসরাঈল আমলে আল্লাহ্ পাক হযরত ইউশা বিন নুন আলাইহিস্ সালাম-এর উপর ওহী নাযিল করলেন, “হে আমার নবী! আপনার উম্মতের মধ্যে এক লক্ষ লোককে ধ্বংস করে দেয়া হবে, যার মধ্যে ষাট হাজার লোক সরাসরি গুনাহে লিপ্ত (গোমরাহ্)।” তখন হযরত ইউশা বিন নুন আলাইহিস্ সালাম বললেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! ষাট হাজার লোক সরাসরি গুনাহে লিপ্ত তাই তাদের ধ্বংস করে দেয়া হবে; কিন্তু বাকী চল্লিশ হাজার লোককে ধ্বংস করা হবে কেন?” তখন আল্লাহ্ পাক বললেন, “যেহেতু তারা তাদের সাথে মিলা-মিশা ও ওঠা-বসা করে এবং সম্পর্ক রাখে আর গুনাহের কাজে বাধা দেয় না, তাই তাদেরকেসহ ধ্বংস করে দেয়া হবে” এবং তাই  দেয়া হয়েছিল।

          উপরোক্ত আয়াত শরীফ, হাদীস শরীফ এবং তার ব্যাখ্যার দ্বারা এটাই ছাবিত হলো যে, বিজাতি ও বিধর্মীদের কোন নিয়ম-নীতি, আমল-আখলাক ও সীরত-ছূরত কস্মিনকালেও অনুসরণ-অনুকরণ করা যাবে না। যদি কেউ করে, তবে তার থেকে সেটা আল্লাহ্ পাক গ্রহণ করবেন না বরং তার ফলে সে ইহ্কাল ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। শুধু এতটুকুই নয় বরং পরকালে তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে এবং তার অবস্থানও তাদের সাথে হবে যাদেরকে সে অনুসরণ করত।

আল্লাহ্ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,

يوم تقلب وجوههم فى النار يقولون يليتنا اطعنا الله واطعنا الرسولا وقالوا ربنا انا اطعنا سادتنا وكبراءنا فاضلونا السبيلا ربنا اتهم ضعفين من العذاب والعنهم لعنا كبيرا.

অর্থঃ- “ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামের আযাবের কারণে জাহান্নামীদের চেহারা বিকৃত হয়ে যাবে। তারা বলবে, হায়! আমরা যদি আল্লাহ্ পাক এবং রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ করতাম। তারা আরো বলবে, আয় আল্লাহ্ পাক! নিশ্চয়ই আমরা আমাদের নেতা ও মুরুব্বীদের অনুসরণ করেছি অতঃপর তারাই আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে। অতএব, আল্লাহ্ পাক! আপনি তাদেরকে দ্বিগুণ আযাব দান করুন এবং তাদেরকে সবচেয়ে বড় লা’নতগ্রস্থ করুন।” (সূরা আহ্যাব/৬৬, ৬৭, ৬৮)

কাজেই যারা হিন্দু, ইহুদী, নাছারা ও শিয়াদের অনুসরণ করে বছর পূর্তি উপলক্ষে দরসে বুখারীর অনুষ্ঠান করে অর্থাৎ স্বনামে বা বেনামে জুবিলী বা জয়ন্তী অনুষ্ঠান করে তাদের হাশর-নশর কাদের সাথে হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

কারণ কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

وقد فصل لكم ما حرم عليكم.

অর্থঃ- “তোমাদের প্রতি যা হারাম করা হয়েছে, আল্লাহ্ পাক তা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন।” (সূরা আনয়াম/১১৯)

আর আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আয়াত শরীফের তাফসীরে বলেন,

الحلال بين والحرام بين دع ما يريبك الى ما لا يريبك.

অর্থঃ- “হালাল স্পষ্ট এবং হারাম স্পষ্ট। যা সন্দেহজনক তা ছেড়ে দাও। যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই, সেদিকে ধাবিত হও।” (বুখারী শরীফ)

কারণ হারাম থেকে শুধু হারামই বের হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,

والذى خبث لايخرج الا نكدا.

অর্থঃ- “যা নাপাক, তা থেকে খারাপ ব্যতীত কিছুই বের হয়না।” (সূরা আরাফ/৫৮)

          উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- প্রস্রাব দ্বারা কাপড় ধুলে কাপড় পরিস্কার হবে ঠিকই, কারণ তাতে এসিড রয়েছে কিন্তু পবিত্র হবেনা। কাজেই বাহ্যিকভাবে কোন জিনিসের মধ্যে যদিও ফায়দা দেখা যায় কিন্তু তা যদি শরীয়তের খিলাফ হয়, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবেনা।

          আয়াত শরীফ ও হাদীস শরীফের দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, যা হারাম তাতো অবশ্যই ছেড়ে দিতে হবে। আর যা সন্দেহজনক, তা থেকেও বেঁচে থাকতে হবে। যদি তাই হয় তাহলে হিন্দু, ইহুদী, নাছারা ও শিয়াদের অনুসরণে বছর পূর্তি উপলক্ষে দরসে বুখারীর গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠান করার সুযোগ কোথায়?

এ পরিপ্রেক্ষিতে শরীয়তের উছূল হলো,

ما ادى الى الحرام فهو حرام.

অর্থঃ- “যা হারামের দিকে নিয়ে যায়, তাও হারাম।”

কাজেই যে সমস্ত কাজ মানুষকে হারামের দিকে নিয়ে যায়, তা পরিহার করা অবশ্য কর্তব্য।

তাই ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা, লংমার্চ, কুশপুত্তলিকা দাহ, হরতাল, জুবিলী ও জয়ন্তী অনুষ্ঠান ইত্যাদি সবই বিধর্মীদের রীতি-নীতি যা স্পষ্ট হারাম। তা অবশ্যই ছেড়ে দিতে হবে।

শুধু তাই নয় বরং যারা শরীয়তের খিলাফ কাজ করে, তাদেরকেও অনুসরণ করতে আল্লাহ্ পাক নিষেধ করেছেন।

মহান আল্লাহ্ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,

ولا تطع من اغفلنا قلبه عن ذكرنا واتبع هوه وكان امره فرطا.

অর্থঃ- “ঐ ব্যক্তিকে অনুসরণ করোনা, যার অন্তর আমার যিকির থেকে গাফিল ও যে প্রবৃত্তির (নফ্সের) অনুসরণ করে এবং যার কাজসমূহ শরীয়তের খিলাফ।” (সূরা কাহ্ফ/২৮)

শুধু তাই নয় এমনকি শরীয়তের খিলাফ কোন কাজে সাহায্য সহযোগিতা করাও নিষেধ।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,

ولا تعاونوا على الاثم والعدوان والتقوا الله ان الله شديد العقاب.

অর্থঃ- “তোমরা পাপ ও শত্রুতায় পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য বা সহযোগিতা করনা।” (কুরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ কোন আমলে কাউকে কোন সহযোগিতা করনা) আল্লাহ্ পাককে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক কঠিন শাস্তিদাতা। (সূরা মায়িদা/২)

পাপ কাজে সাহায্য সহযোগিতা করাই শুধু গুণাহ্র কারণ নয় বরং শুধুমাত্র সমর্থন করাও গুণাহ্র কারণ। তা উপস্থিত থেকেই হোক অথবা অনুপস্থিত থেকেই হোক।

আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

اذا عملت الخطيئة فى الارض من شهدها فكرهها كان كمن غاب عنها ومن غاب فرضيها كان كمن شهدها.

অর্থঃ- “যমীনে যখন কোন পাপ বা অন্যায় অর্থাৎ খিলাফে শরা কাজ সংঘঠিত হয় কোন ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও সেটাকে অপছন্দ করে তাহলে সে যেন সেখানে উপস্থিত ছিলনা। (উল্লিখিত পাপে সে দোষী সাব্যস্ত হবেনা) আর যদি কোন ব্যক্তি উপস্থিত না থাকা সত্ত্বেও উক্ত খিলাফে শরা কাজের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে তাহলে সে যেন সেখানে উপস্থিত ছিল। অর্থাৎ সে উল্লিখিত পাপে পাপী বলে সাব্যস্ত হবে।” (আবূ দাউদ)

এখন অনেকে বলতে পারেন, “দরসে বুখারীর অনুষ্ঠান হলে সাধারণ মানুষ হাদীস শরীফের গুরুত্ব বুঝবে ও তার ইল্ম হাছিলে উৎসাহিত হবে।”

এর জবাবে বলতে হয়, এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক নিজেই বলেন,

يسئلونك عن الخمر والميسر قل فيهما اثم كبير ومنافع للناس واثمهما اكبر من نفعهما.

অর্থঃ- “হে হাবীব (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনাকে প্রশ্ন করা হয়, মদ ও জুয়া সম্পর্কে। আপনি বলে দিন, মদ ও জুয়ার মধ্যে মানুষের জন্য ফায়দা রয়েছে। তবে ফায়দার চেয়ে গুণাহ্ই বড়, কাজেই এগুলো হারাম।” (আল বাক্বারা/২১৯)

এখানে লক্ষ্যণীয় যে, আল্লাহ্ পাক নিজেই বলেছেন যে, মদ ও জুয়ার মধ্যে ফায়দা রয়েছে। মদ পান করলে স্বাস্থ্য ভাল হয়, জুয়া খেললে রাতারাতি অনেক টাকা পাওয়া যায়। তথাপি এগুলোর মধ্যে ফায়দার চেয়ে গুণাহ্ বেশী বলে এগুলোকে হারাম করা হয়েছে।

          অনুরূপভাবে হরতাল, লংমার্চ, ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, গণতন্ত্র করা ও হারাম পন্থায় ইসলাম ক্বায়িমের চেষ্টা করা এবং দরসে বুখারীর (হাদীসের) নামে ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে জুবিলী বা জয়ন্তী অনুষ্ঠান করা তা স্বনামে হোক বা বেনামে হোক তাতে আপাতদৃষ্টিতে যদিও ফায়দা দেখা যায় কিন্তু তা মদ ও জুয়ার মত আল্লাহ্ পাক-এর হুকুমের খিলাফ হওয়ার কারণে হারাম। তাই তা করা যাবে না।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,

ولاتقولوا لما تصف السنتكم الكذب هذا حلال وهذا حرام لتفتروا على الله الكذب ان الذين يفترون على الله الكذب لايفلحون.

অর্থঃ- “তোমাদের নিকট যা আছে, তাকে তোমরা মিছামিছি এটা হালাল, এটা হারাম বলে অভিহিত করোনা। এতে আল্লাহ্ তায়ালার প্রতি তোমাদের মিথ্যা অপবাদ দেয়া হবে। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ্ পাক-এর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে, তারা কখনই সফলকাম হয়না।” (সূরা নহল/১১৬)

          অতএব, দরসে বুখারীর নামে ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে জুবিলী ও জয়ন্তী অনুষ্ঠান পালন হালাল ও জায়িয বলা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্ পাক-এর প্রতি মিথ্যারোপের শামিল। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,

ولا تلبسوا الحق بالباطل.

অর্থঃ- “হক্বকে না হক্বের সাথে মিশ্রিত করনা।(দ্বীনের সাথে বেদ্বীনের এবং ঈমানের সাথে কুফরীকে মিশ্রিত করনা)।” (সূরা বাক্বারা/৪২)

অর্থাৎ ইসলামের নামে ইসলামের মধ্যে মনগড়া কিছু প্রবেশ করালে আল্লাহ্ পাক কবুল করবেন না। সেই প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,

يايها الذين امنوا ادخلوا فى السلم كافة ولا تتبعوا خطوت الشيطان انه لكم عدو مبين.

অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না; নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (সূরা বাক্বারা/২০৮)

          কোন কোন তাফসীরকারক, এ আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার ক্ষেত্রে একটা ঘটনার উল্লেখ করেন। একদা হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবারে বসা ছিলেন। এমন সময় উটের গোশ্তসহ কিছু খাদ্য হাজির করা হলো। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন যে, তিনি পূর্বে ইহুদী পন্ডিত ছিলেন এবং সেই ধর্মে উটের গোশ্ত খাওয়া নিষিদ্ধ বিধায় তিনি তা গ্রহণ করতেন না। কাজেই এখনো তিনি উটের গোশ্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে চান। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ করে থাকলেন এবং আল্লাহ্ পাক-এর বিধানের অপেক্ষায় রইলেন। কেননা,

وما ينطق عن الهوى ان هو الا وحى يوحى.

অর্থঃ- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহী ব্যতীত নিজের থেকে কোন কথা বলেন না।” তখন আল্লাহ্ পাক এ আয়াত শরীফ নাযিল করলেন। (সূরা নজম্/৩, ৪)

এখানে লক্ষ্যণীয় যে, হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উটের গোশ্ত খাওয়াকে হারাম মনে করতেন না বরং হালালই জানতেন, শুধু পূর্ব অনভ্যাস হেতু খাওয়া হতে বিরত থাকার আবদার জানালেন, তাতেই আল্লাহ্ পাক আয়াত শরীফ নাযিল করে দিলেন, (তোমরা যখন ইসলামে দাখিল হয়েছই) তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে দাখিল হও।”

কাজেই আজকাল যারা হারাম কাজে তথা ছবি তোলা, লংমার্চ করা, অনৈসলামিক পন্থায় গণতন্ত্র করা, কুশপুত্তলিকা দাহ্, বেপর্দা হওয়া, মেয়েদের মিছিল, হরতাল এবং বছর পূর্তি উপলক্ষে দরসে বুখারীর নামে অনুষ্ঠান করা যা জুবিলী বা জয়ন্তী নামে মশহুর তা স্বনামে বা বেনামে করার মত জঘণ্য হারাম কাজে লিপ্ত রয়েছে তারা ইসলামের ভিতরে কতটুকু রয়েছে, আর কতটুকু ইসলাম থেকে দূরে সরে গেছে, তা ভাববার বিষয়?

অথচ অন্যান্য প্রত্যেক জাতি তার স্বাতন্ত্রবোধ ও কৃষ্টি-কালচার এবং ধর্ম বজায় রাখার জন্য সচেষ্ট। আর মুসলমান নামধারী ব্যক্তিগুলো তার বিপরীত। তাদের জন্য আফসুস!

কারণ আক্বাঈদের কিতাবে উল্লেখ আছে, “হারাম কাজে ও হারাম পদ্ধতিতে শুকরিয়া আদায় করা সম্পূর্ণ হারাম এবং কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।”

অনুসরণীয় কে?

          এখন কেউ বলতে পারেন যে, বর্তমানে আলিম-উলামা, ছূফী-দরবেশ, পীর-মাশায়িখ, শায়খুত্ তাফসীর, শাইখুল হাদীস, মুফাস্সিরে কুরআন, মুফতী, মুহাদ্দিস ইত্যাদি নামধারী অনেক ব্যক্তিবর্গই ইসলামের নামে অনেক কিছুই করছে, এটার ফায়সালা কি?

          এটার জবাব হচ্ছে, ইসলামী শরীয়ার মূল ভিত্তি হলো- কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস। কাজেই কোন ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র বা অধিকাংশ লোককে ততক্ষণ পর্যন্ত দলীল হিসেবে গ্রহণ করা ও অনুসরণ করা যাবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত সে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ও অধিকাংশ লোক উল্লিখিত শরীয়তের ভিত্তির উপর ক্বায়িম না থাকবে।

মহান আল্লাহ্ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,

وان تطع اكثر من فى الارض يضلوك عن سبيل الله.

অর্থঃ- “যদি তুমি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের অনুসরণ কর তবে তারা তোমাকে আল্লাহ্ পাক-এর পথ থেকে বিচ্যূত বা গোমরাহ্ করে ফেলবে।” (সূরা আনয়াম/১১৬)

          আর যারা মূলতঃ বছর পূর্তি উপলক্ষে দরসে বুখারীর অনুষ্ঠান পালন করে তারা জুবিলী বা জয়ন্তী করে প্রকৃতপক্ষে হিন্দু, ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরই অনুসরণ করে।

অথচ আল্লাহ্ পাক বলেন,

قل ان هدى الله هو الهدى ولئن اتبعت اهواءهم بعد الذى جاءك من العلم مالك من الله من ولى ولا نصير.

অর্থঃ- “বলুন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক-এর হিদায়েতই প্রকৃত হিদায়েত। আপনার নিকট ইল্ম (ইসলাম) আসার পর যদি তাদের নফ্সের (মতবাদের) অনুসরণ করেন তাহলে আপনি আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে ওলী (অভিভাবক) এবং সাহায্যকারী পাবেন না।” (সূরা বাক্বারা/১২০)

সুতরাং যারা ইসলামের নামে হারাম কাজ করছে, তাদেরকে অনুসরণ করা সম্পূর্ণভাবে হারাম। যিনি বা যারা শরীয়তের উপর ক্বায়িম রয়েছেন অর্থাৎ কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের উপর ইস্তিকামত রয়েছেন একমাত্র তিনিই বা তাঁরাই অনুসরণীয়।”

হারামকে হালাল বলা কুফরী

উপরোক্ত অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লার ভিত্তিতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, ইসলামের নামে যারা হারাম কাজ করে অর্থাৎ যারা হারামকে জায়িয বা হালাল মনে করবে শরীয়তের উছূল মুতাবিক তারা মুরতাদ(কাফির) হবে। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে হারামকে হালাল আর হালালকে হারাম বলা কুফরী।

আল্লাহ্ পাক বলেন,

ومن يعص الله ورسوله ويتعد حدوده يدخله نارا خالدا فيها وله عذاب مهين.

অর্থঃ- “যে কোন ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাফরমানি এবং তাঁর সীমা অতিক্রম করে, তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সে সেখানে চিরকাল থাকবে এবং তার জন্য সেখানে রয়েছে লাঞ্ছিত শাস্তি।” (সূরা নিসা/১৪)

অতএব, এ সমস্ত হারামসমূহকে যারা শরীয়তসম্মত মনে করে, তারা আলিম-উলামা, ছূফী-দরবেশ, পীর-মাশায়িখ, শায়খুত্ তাফসীর, শাইখুল হাদীস, মুফাস্সিরে কুরআন, মুফতী, মুহাদ্দিস ইত্যাদি হওয়া তো দূরের কথা, সাধারণ মুসলমান হিসেবেও বিবেচিত নয়। বরং তারা শরীয়তের দৃষ্টিতে মুরতাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

কারণ ইসলামী আক্বাইদ হচ্ছে, “কোন হারাম বিষয়কে হালাল বলা সম্পূর্ণ কুফরী এবং কোন অনৈসলামিক কার্যকলাপকে ইসলামিক কার্যকলাপ হিসেবে শামীল করা সেটাও কাট্টা কুফরী।”

শরীয়তের মাসয়ালা হচ্ছে- “যে কুফরী করে, সে মুরতাদ হয়ে যায়। আর মুরতাদের ফায়সালা হচ্ছে- তার স্ত্রী তালাক হবে (যদি বিয়ে করে থাকে) এবং এক্ষেত্রে পুনরায় তওবা না করে, বিয়ে না দোহরানো ব্যতীত তার স্ত্রীর সাথে বসবাস করা বৈধ হবেনা। আর এ অবৈধ অবস্থায় সন্তান হলে সে সন্তানও অবৈধ হবে। হজ্ব বাতিল হয়ে যাবে (যদি হজ্ব করে থাকে), সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে, তার ওয়ারিশত্ব বাতিল হবে। তাকে তিন দিন সময় দেয়া হবে তওবা করার জন্য এবং যদি তওবা করে, তবে ক্ষমা করা হবে। অন্যথায় একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড। কেননা হাদীস শরীফে রয়েছে, তিন কারণে মৃত্যুদন্ড দেয়া জায়িয। যথা- (ক) ঈমান আনার পর কুফরী করলে অর্থাৎ মুরতাদ হলে। (খ) ঐ জিনাকার বা জিনাকারিনী, যারা বিবাহিত বা বিবাহিতা। (গ) যে অন্যায়ভাবে কাউকে ক্বতল করে, তাকে। (তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ্, মুসনদে শাফিয়ী, মুসনদে বাজ্জার, মুস্তাদরিকে হাকিম)

আর মুরতাদ মারা যাবার পর যারা জানাযার নামায পড়ে বা পড়ায় বা জানাযার নামাযে সাহায্য-সহযোগিতা করে, তাদের সকলের উপরই মুরতাদের হুকুম বর্তাবে এবং এ সকল মুরতাদ মরলে বা নিহত হলে তাকে মুসলমানগণের কবরস্থানে দাফন করা যাবেনা। এমনকি মুসলমানের ন্যায়ও দাফন করা যাবেনা। বরং তাকে কুকুরের ন্যায় একটি গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখতে হবে।

কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

ان الذين كفروا وماتوا وهم كفار فلن يقبل من احدهم ملء الارض ذهبا ولو افتدى به اولئك لهم عذاب اليم وما لهم من نصرين.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই যারা কাফির এবং কুফরী অবস্থায় মারা গিয়েছে, তারা যদি পরিপূর্ণ স্বর্ণ তার ফিদিয়া বা যমীন (কুফরীর পরিবর্তে) কাফ্ফারা বাবদ দেয় (আমার থেকে বাঁচার জন্য), তা কখনো গ্রহণ করা হবেনা। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি বা আযাব এবং তাদের জন্য কস্মিনকালেও সাহায্যকারী নেই।” (সূরা আলে ইমরান/৯১)

          এ সকল উলামা-মাশায়িখ নামধারী মূলতঃ আবুল ফজল, ফৈজী ও মোল্লা মোবারক নাগরীর যোগ্য উত্তরসূরী। যারা দ্বীন ইসলামের পরিবর্তে এক নতুন দ্বীন “দ্বীনে ইলাহী”-এর প্রবর্তনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল। যারা দুনিয়ার বিনিময়ে ঈমানকে বিক্রি করে জাহান্নামের পথকে সুগম করেছিল।

ঠিক বর্তমানে একই কায়দায় হারাম-হালাল মিশ্রিত করে ঈমান-আক্বীদা বিনষ্ট করার পায়তারা করছে তথাকথিত নামধারী উলামা-মাশায়েখ।

এদের সম্পর্কে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا ابائكم فايأكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم.

অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তাদেরকেও তোমাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ)

          সূতরাং আওয়ামুন্ নাছ বা সাধারণ মুসলমানগণের তাদেরকে চিহ্নিত করে প্রতিহত করতে হবে এবং তাদের থেকে সাবধান ও সতর্ক থেকে ঈমান হিফাযত করতে হবে।

          {দলীলসমূহঃ (১) আহকামুল কুরআন, (২) কবীর, (৩) মায়ালিম, (৪) খাযিন, (৫) বাগবী, (৬) কুরতুবী, (৭) মাযহারী, (৮) ইবনে জারীর, (৯) নিশাপুরী, (১০) ওয়াহিদী, (১১) আযীযী, (১২) হাক্কানী, (১৩) খুলাছাতুত্ তাফসীর, (১৪) রুহুল মায়ানী, (১৫) সিরাজুম্ মুনীর, (১৬) দুররে মানছুর, (১৭) হাশিয়ায়ে শায়খ যাদাহ, (১৮) রহুল বয়ান, (১৯) ইবনে কাছীর, (২০) বায়যাবী, (২১) কাশ্শাফ, (২২) তাবারী,  (২৩) বুখারী, (২৪) মুসলিম, (২৫) আবু দাউদ,  (২৬) তিরমিযী, (২৭) নাসাঈ, (২৮) ইবনে মাজাহ্, (২৯) মুসনদে শাফিয়ী, (৩০) মুসনদে বায্যার, (৩১) মুসনদে আহমদ, (৩২) বাইহাক্বী, (৩৩) মুস্তাদরিকে হাকিম, (৩৪) মিশকাত, (৩৫) ফতহুল বারী, (৩৬) উমদাতুল ক্বারী, (৩৭) ইরশাদুস্ সারী, (৩৮) ফয়জুল বারী, (৩৯) তাইসীরুল বারী, (৪০) শরহে নববী, (৪১) ফতহুল মুলহিম, (৪২) মুফহিম, (৪৩) বজলুল মাজহুদ, (৪৪) মিরকাত, (৪৫) আশয়াতুল লুময়াত, (৪৬) লুময়াত, (৪৭) শরহুত ত্বীবী, (৪৮) তালীকুছ্ ছবীহ, (৪৯) মুযাহিরে হক্ব, (৫০) আল্ ফিকহুল আক্বার, (৫১) শরহে আক্বাঈদে নছফি, (৫২) আক্বাঈদে হাক্কা, (৫৩) তাক্মিলুল ঈমান, (৫৪) নূরুল আনোয়ার, (৫৫) Encyclopedia Britannica. (৫৬) Encyclopedia Americana. (৫৭) Funk & wagnalls new Encyclopedia. (৫৮) The new Illustrated Everyman’s Encyclopedia. (৫৯) The Readers Digest Oxford Word finder. (৬০)  Encyclopedia of World’s Religions. (৬১) The Old Testament. (৬২) The Everyman Dictionary of Religion & Philosophy. (৬৩) Fowler’s Conclse English Dictionary. (৬৪) The Penguin Concise English Dictionary. (৬৫) Webster’s New World Dictionary. (৬৬) Readers Oxford Eng.-Arabic Dictionary. (৬৭) Wortabet’s p.Dictionary. (৬৮) Samsad Bengal English Dictionary. (৬৯) Bangla Academy Bengali English Dictionary (৭০) Bangla Academy English-Bengali Dictionary. (৭১) J.P (Bengali-English) Dictionary. (৭২)  সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ, (৭৩)  শব্দ-সংষ্কৃতির ছোবল, (৭৪) বাংলা একাডেমী সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান, (৭৫) বাঙ্গালা ভাষার অভিধান, (৭৬) আধুনিক বাংলা অভিধান, (৭৭)  চলন্তিকা আধুনিক বঙ্গভাষার অভিধান, (৭৮)  আল-কাওছার ইত্যাদি}

মাওলানা মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান

মাওলানা মুহম্মদ মাছূম বিল্লাহ্

মুহম্মদ আসাদুর রহমান, মুহম্মদ মাইজুর রহমান

ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

সুওয়ালঃ আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম এই তিনটি সংখ্যায় ৩৫৩টি অকাট্য দলীলের ভিত্তিতে প্রদত্ত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ, মুহাক্কিক-মুদাক্কিক ও হক্কানী উলামা-ই-কিরামগণের ফতওয়া মুতাবিক জানতে পারলাম যে, “প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা করানো, ঘরে রাখা সর্বাবস্থায় হারাম।”

          অথচ রেযাখানী মুখপত্র নভেম্বর/২০০১ ঈসায়ী সংখ্যায় ছবি সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ফতওয়া প্রকাশ করেছে। যা কিনা মানুষের ঈমান-আমল বিনষ্ট হওয়ার কারণ। রেযাখানীদের ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যের যে বিষয়গুলো আপত্তিকর সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

          (ক) রেযাখানীরা ছবি তোলাকে বৈধ বলেছে; কিন্তু দলীল হিসেবে পেশ করেছে ঘরে ছবি রাখা সম্পর্কিত হাদীসসমূহকে।

          (খ) .. কতেক উলামা যেসব ছবির শরীর ও ছায়া নেই সেসব ছবিকে বৈধ বলেছেন।

          (গ) হুজুর আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুরুর দিকে ছবি তৈরী করা ও সংরক্ষণ করাকে নিষেধ করেছিলেন; কিন্তু পরবর্তীতে অনুমতি দেন।

          (ঘ) পূর্ববর্তীদের কেউ কেউ এবং হাম্বলী, শাফেয়ী, মালেকী এমনকি হানাফীদেরও কেউ কেউ নাকি (গায়রে মুজাস্সাম) শরীরবিহীন ছবিকে বৈধ বলেছেন।

          (ঙ) সামাজিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে বিশেষ প্রয়োজনে ছবি তোলা বৈধ যা যুগের চাহিদাও।

          (চ) প্রত্যেক যুগের ফক্বীহ্, মুফতী, কাজী ও আলিমগণ যুগের চাহিদা অনুযায়ী ফতওয়া দিয়েছেন এবং দেয়া উচিত।

          (ছ) ছবি হারাম হওয়ার মূলে হলো গায়রুল্লাহ্র সম্মান ও ইবাদত।

          (জ) প্রয়োজনীয় রেকর্ডের জন্য ফাইল বন্দি ছবিসমূহ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের নিকট জ্ঞান ও ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য জানার নিমিত্তে সরকারী-বেসরকারী যাদুঘর বা বিশেষ প্রতিষ্ঠানসমূহে পূর্বের নানা মনীষীগণের ছবি সংরক্ষণ/ধারণ করে রাখা বিশেষ প্রয়োজনে মাকরূহ্ হবেনা।

এছাড়াও আরো বহু আপত্তিকর বিষয় তাদের উক্ত ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যে স্থান পেয়েছে।

          কুরআন-সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে তাদের উল্লিখিত আপত্তিকর বক্তব্যগুলোর শরয়ী ফায়সালা কামনা করি।

জাওয়াবঃ হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি, সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম)

উল্লিখিত হাদীস শরীফের পূর্ণ মিছদাক বা নমুনা হচ্ছে রেযাখানীরা। তারা ছবির ব্যাপারে এমন সব বক্তব্য প্রদান করেছে যা কিতাবে দেখা তো দূরের কথা কেউ কোনদিন শুনেওনি। মূলতঃ রেযাখানীরা নিজেদেরকৃত বদ আমলকে ধামা-চাপা দেয়ার উদ্দেশ্যেই মনগড়াভাবে ছবিকে জায়িয করার অপচেষ্টা করেছে।

(ধারাবাহিক)

প্রাণীর ছবি সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত রেযাখানীদের আপত্তিকর ও প্রতারণামূলক বক্তব্য সমূহের খন্ডন মূলক জবাব- (১)

রেযাখানীদের জালিয়াতী, প্রতারণা ও

ঠগবাজীর আর একটি উজ্বল দৃষ্টান্ত

রেযাখানীরা তাদের আমদানীকৃত পীরদের ও নিজেদের ছবি তোলার ন্যায় হারাম কাজটিকে হালাল করার উদ্দেশ্যে মাত্র দুই পৃষ্ঠার একটি বিভ্রান্তিকর রচনায় কত যে মিথ্যাচারিতা, প্রতারণা, জালিয়াতী ও ঠগবাজীর আশ্রয় নিয়েছে তার বহু প্রমাণ আপনারা ইতোমধ্যেই পেয়ে গেছেন। তাদের ঠগবাজী, জালিয়াতী ও প্রতারণার আরেকটি উজ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে নিম্নোক্ত ইবারত খানা। যা তারা “বুখারী শরীফের” ব্যাখ্যাগ্রন্থ “ফতহুল বারী” থেকে তাদের স্বপক্ষীয় দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছে।

وقال القرطبى ظاهر الحديث زيدبن خالد عن ابى طلحة الماضى قيل ان الملئكة لا تمتنع من دخول البيت الذى فيه صورة ان كانت رقما فى الثوب وظاهر حديث عائشة المنع ويجمع بينهما بان يحمل حديث عائشة على الكراهة وحديث ابى طلحة على مطلق الجواز وهو لاينافى انكراهة.

রেযাখানীরা উক্ত ইবারতের অর্থ করেছে এভাবে- অর্থাৎ আল্লামা কুরতুবী বলেন, হযরত যায়েদ ইবনে খালেদের হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, ফেরেশতাগণ ঐসব ঘরে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকেন, যাতে পর্দায় অঙ্কিত ছবি থাকে। আর হযরত, আয়েশা ছিদ্দীকা (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা) এর বর্ণনা দ্বারা ফিরিশতা না আসাটা বোধগম্য হয়। এ উভয় হাদীসের মধ্যে সমাধান হলো এইযে, হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা) এর হাদীস দ্বারা মাকরূহ হওয়া বুঝায় আর হযরত আবূ তালহা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর হাদীস দ্বারা সাধারণ ভাবে বৈধ হওয়াকে বুঝায়। বৈধ হওয়াটা মাকরূহ হওয়াকে নিষেধ করে না।” (ইবনে হাজর আসকালানী, ফতহুল বারী, ১০ খন্ড ৩৯২ পৃষ্ঠা)

          উল্লেখ্য, এবার রেযাখানীদের প্রদত্ত উল্লিখিত জালিয়াত ও প্রতারণামূলক বক্তব্যের খণ্ডনমূলক আলোচনায় আসা যাক।

রেযাখানীরা প্রথমতঃ

উক্ত ইবারতের ভুল অর্থ করেছে

রেযাখানীরা “ফাতহুল বারী” থেকে যে ইবারত উল্লেখ করেছে, তার দুটি অংশের অর্থ ভুল করেছে, তম্মধ্যে একটি হলো- … ان الملائكة لاتمتنع من دخول البيت

রেযাখানীরা এর অর্থ করেছে- ……. ফিরিশতাগণ ঐ ঘরে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকে, …..”

অথচ উক্ত বাক্যের সঠিক ও ছহীহ্ অর্থ হলো- “ফিরিশতাগণ ঐসব ঘরে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকেন না।” অর্থাৎ ঐ সব ঘরে প্রবেশ করেন।

দ্বিতীয়টি হলো-….. ان كانت رقما فى الثوب

রেযাখানীরা এর অর্থ করেছে ……. যাতে পর্দায় অঙ্কিত ছবি থাকে।

অথচ উক্ত বাক্যের সঠিক ও গ্রহণযোগ্য অর্থ হলো- “যদি পর্দায় বা কাপড়ে গাছ-পালা, তরু-লতা, পাহাড় পর্বত ইত্যাদি প্রাণহীন বস্তুর ছবি থাকে।”

কেননা অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও মুহাদ্দিসীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ رقما শব্দের অনুরূপ অর্থই করেছেন।

যেমন, বিখ্যাত মুহাদ্দিস, হাফিযে হাদীস, ইমাম আহমদ ইবনে আলী ইবনে হাজ্র আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মশহুর ও নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যাগ্রন্থ “ফাতহুল বারী শরহে বুখারী”-এর ১০ জিঃ ৩৯০ পৃষ্ঠার “رقما” এর অর্থ করেন এভাবে-

“الا رقما فى ثوب” ….. المراد باستثناء الرقم فى الثوب ما كنت الصورة فيه من غير ذوات الارواح كصورة الشجر ونحوها.

অর্থঃ- “(“কাপড়ের ছবি ব্যতীত) …. উক্ত হাদীস শরীফে যে কাপড়ের উপর অঙ্কিত ছবিকে বাদ দেয়া হয়েছে অর্থাৎ জায়িয বলা হয়েছে তা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, প্রাণহীন বস্তুর ছবি যেমন, গাছপালা, তরুলতা ইত্যাদি।”

          শাইখুল ইসলাম, তাজুল মুহাদ্দিসীন, ইমাম আল্লামা বদরুদ্দীন আবূ মুহম্মদ মাহমূদ ইবনে আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর জগতখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ “উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী”-এর ২২ জিঃ ৭৪ পৃষ্ঠায় “رقما” এর অর্থ করেন এভাবে-

“الا رقما” بفتح الراء وسكون القاف وفتحها النقش والكتابة وقال الخطابى المصور هو الذى يصور اشكال الحيوان والنقاش الذى ينقش اشكال الشجر ونحوها.

অর্থঃ- “ “الا رفما” ‘রা’-এর উপর যবর, ‘ক্বাফ’-এর সাকিন বা যবর দ্বারা “رقما” শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘নকশা’ বা লিখা। ইমাম খাত্তাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর আকৃতি তৈরী করে তাকে বলে “مصور” মুছাব্বির। আর যে  ব্যক্তি গাছপালা ইত্যাদির আকৃতি বানায় তাকে বলে “نقاس” নাক্কাশ। অর্থাৎ “رقم” শদ্বের অর্থ হচ্ছে গাছপালা বা প্রাণহীন বস্তুর আকৃতি। অনুরূপ “শরহে কিরমানী”তে উল্লেখ আছে।”

          ইমামুল মুহাদ্দিসীন, আল্লামা  আবুল আব্বাস শিহাবুদ্দীন আহমদ ইবনে মুহম্মদ কুস্তলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর সুপ্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাগ্রন্থ “ইরশাদুস্ সারী শরহে বুখারী”-এর ৮ম জিঃ ৪৮৩ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(الا رقما) اى نقشا (فى ثوب) …. المراد استثناء الرقم فى الثوب ما كانت الصوره فيه من غير ذوات الارواح كصورة الشجر ونحوها.

অর্থঃ- “(কাপড়ের অঙ্কিত ছবি অর্থাৎ কাপড়ে অঙ্কিত (গাছপালার) নক্শা ব্যতীত) …এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, প্রাণহীন বস্তুর ছবি। যেমন, গাছপালা ইত্যাদি।”

ছহীহ্ ‘মুসলিম শরীফের’ ব্যাখ্যাগ্রন্থ “শরহুল উবাই ওয়া সিনূসী”-এর ৭ম জিঃ ২৫৬ পৃষ্ঠায় “الا رقما فى ثوب”-এর অর্থে উল্লেখ আছে,

انه محمول على رقم مالا روح فيه.

অর্থঃ- “উক্ত হাদীস শরীফে বর্ণিত رقم শব্দ দ্বারা মূলতঃ প্রাণহীন বস্তুর ছবিকেই বুঝানো হয়েছে।”

রঈসুল মুহাদ্দিসীন, আল্লামা ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি “শরহে মুসলিম”-এর ১৪ জিঃ ৮৫ পৃষ্ঠায় লিখেন,

انه محمول على رقم على صورة الشجر وغيره ماليس بحيوان.

অর্থঃ- “হাদীস শরীফে বর্ণিত رقم দ্বারা গাছপালার অনুরূপ প্রাণহীন বস্তুর আকৃতিকেই বুঝানো হয়েছে।”

মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ “ফাতহুল মুলহিম”-এর ৪র্থ জিঃ ১৫০ পৃষ্ঠায় “الا رقما فى ثوب” এর অর্থে উল্লেখ আছে,

المراد من “الرقم فى الثوب” هو ما كان فيه من نقش الشجر ونحوه مما لا روح له.

অর্থঃ- “হাদীস শরীফে বর্ণিতرقم  শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো গাছপালার নকশা, অনুরূপ প্রাণহীন বস্তুর আকৃতি।”

          অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও ব্যাখ্যাগ্রন্থ সমূহের বক্তব্য দ্বারা এটাই সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, হাদীস শরীফে বর্ণিত رقما এর অর্থ  হলো, “কাপড়ে গাছপালা, তরুলতা ইত্যাদি প্রাণহীন বস্তুর ছবি।” (চলবে)

সাইয়্যিদ মুহম্মদ মোক্তাদুল ইসলাম (মিলন)

রঈসুল মজলিশ- ছাত্র আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত

সুবহানীঘাট, সিলেট।

সুওয়ালঃ রেযাখানী মুখপত্র ডিসেম্বর/২০০০ ঈসায়ী সংখ্যায় “তাফসীরে রুহুল বয়ান, বুখারী, গুনিয়াতুত তালেবীন, রেজভীয়া” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “সহীহ্ মুসলিম শরীফসহ” অনেক নির্ভরযোগ্য কিতাবে নফল নামায বিশেষতঃ ক্বদর ও বরাতের নফল নামায জামাত সহকারে আদায় করা বৈধ….।”

আর আপনারা “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” লিখেছেন, “তারাবীহ, ছলাতুল কুছুফ (সূর্য গ্রহণের নামায), ছলাতুল ইস্তিস্কা (বৃষ্টির নামায) এই তিন প্রকার নামায ব্যতীত যেমন লাইলাতুল ক্বদর, লাইলাতুল বরাত, তাহাজ্জুদ, চাশ্ত, আওয়াবীন ইত্যাদি নফল নামাযসমূহ ইমামের সাথে চারজন মুক্তাদীসহ জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্।”  কোনটি সঠিক?

আর “বুখারী, মুসলিম শরীফে” কি “ক্বদর” ও বরাতের” নফল নামায জামায়াতের সাথে আদায় করার কথা উল্লেখ আছে? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াবঃ রেযাখানীরা তাদের মুখপত্রে “তাফসীরে রুহুল বয়ান, বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, গুনিয়াতুত্ তালেবীন এবং রেজভীয়া” কিতাবের বরাত দিয়ে নফল নামায বিশেষতঃ “শবে বরাত”, “শবে ক্বদরের” নফল নামায আযান-ইক্বামত ছাড়া জামায়াত সহকারে আদায় করা যে বৈধ বলেছে, তা আমরা আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এর বিগত সংখ্যাগুলোতে বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে প্রমাণ করেছি যে, “তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, জিহালতপূর্ণ, জালিয়াতী ও প্রতারণামূলক।”

          কেননা, রেযাখানীরা কিতাবের নাম দিয়ে যে বক্তব্য প্রদান করেছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। বরং তার সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ, তারা কিতাবের ইবারত, সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে মনগড়া বক্তব্য প্রদান করেছে এবং ক্ষেত্র বিশেষ নিজের ভ্রান্ত মতকে টিকিয়ে রাখতে কিতাবের ইবারত কারচুপি করেছে।

(ধারাবাহিক)

বর্তমান সংখ্যায় রেযাখানীদের দলীলবিহীন

ও মনগড়া বক্তব্য খণ্ডন করা হলো

উল্লেখ্য, রেযাখানীরা বলেছে, “শব-এ ক্বদর ও শব-এ বরাত ইত্যাদি সম্মানিত মহিমান্বিত রাত সমূহে নফল নামায জামাতের সাথে পড়াকে মাকরূহে তাহরীমি ও বিদআতে সাইয়্যিআহ্ বলে ফতোয়া দেয়া মূলতঃ সীমালঙ্ঘন, ভণ্ডামী ও মূর্খতার পরিচায়ক।”

          এর জবাবে বলতে হয় যে, বিগত সংখ্যায় আমরা আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাতে দলীলের ভিত্তিতে প্রমাণ করে দিয়েছি যে, “শবে বরাত, শবে ক্বদর, লাইলাতুর রাগায়িব ইত্যাদি সম্মানিত- মহিমান্বিত রাতসমূহে নফল নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্। এ ফতওয়া দেয়ার কারণেই যদি তা সীমালঙ্ঘন, ভণ্ডামী ও মূর্খতার পরিচায়ক হিসেবে সাব্যস্ত হয় তাহলে বলতে হয়, রেযাখানীদের বক্তব্য মুতাবিক তাদের গুরু রেযা খাঁ ও তাদের মুফতী মৌলভী আমজাদ আলী ছাহেবদ্বয়ই “শবে বরাত, শবে ক্বদর, রাগায়িব ইত্যাদি নফল নামায জামায়াতের সাথে পড়াকে মাকরূহ্ তাহরীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ বলে ফতওয়া দিয়ে” প্রথমতঃ চরমভাবে সীমালঙ্ঘন করেছে। দ্বিতীয়তঃ তাদের গুরু রেযা খাঁ ও মৌলভী আমজাদ আলীই চরমভাবে ভণ্ডামী করেছে। তৃতীয়তঃ তাদের গুরু রেযা খাঁ ও মৌলভী আমজাদ আলী চরমভাবে মূর্খতার পরিচয় দিয়েছে।

          কেননা, তাদের গুরু রেযা খাঁই তার “রেজভীয়া” কিতাবে আর মৌলভী আমজাদ আলী তার “বাহারে শরীয়তে” ‘শবে বরাত, শবে ক্বদর রাগায়িব ইত্যাদি নফল নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ বলে ফতওয়া দিয়েছে।’ যা আমরা বিগত সংখ্যায় রেজভীয়া কিতাব থেকে খণ্ড ও পৃষ্ঠা নম্বরসহ দলীলের মাধ্যমে প্রমাণ করে দিয়েছি।

আর মৌলভী আমজাদ আলী “বাহারে শরীয়ত” কিতাবের ৪র্থ খণ্ডের ২৫ ও ২৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছে,

صلوۃ الر غائب کہ رجب کی پھلی شب جمعہ اور شعبان کی پندرھویں شب اور شب قدر میں جماعت کے ساتھ نفل نماز بعض لوگ ادا کرتے ھیں فقھاء اسے ناجائز ومکروہ بدعت کھتے ھیں…

অর্থঃ- “রাগায়িবের নামায যা রজবের প্রথম জুমুয়ার রাত্রি ও শা’বানের ১৫ই রাত্রি অর্থাৎ শবে বরাত এবং শবে ক্বদরে জামায়াতের সাথে কিছু লোক নফল নামায আদায় করে থাকে। ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উক্ত নফল নামাযগুলো জামায়াতের সাথে আদায় করাকে নাজায়িয, মাকরূহ তাহরীমী এবং বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ বলেছেন। ….”

          তৃতীয়তঃ তাহলে বলতে হয়, রেযাখানীদের বক্তব্য মুতাবিক পীরানে পীর দস্তগীর হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত নফল নামাযগুলো জামায়াতের সাথে পড়াকে মাকরূহ্ তাহরীমী ফতওয়া দিয়ে সীমালঙ্ঘন, ভণ্ডামী ও মূর্খতার পরিচয় দিয়েছিলেন কি? (নাউযুবিল্লাহ্)

কেননা, হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর “গুনিয়াতুত্ তালেবীন”-এর উর্দূ অনুবাদ কিতাবটিতে উল্লেখ আছে,

جماعت کے ساتھ نفل اداکرنامکروہ ھے.

অর্থঃ- “নফল নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী।”

          চতুর্থতঃ তাহলে বলতে হয়, রেযাখানীদের বক্তব্য মুতাবিক মাহবুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত নফল নামাযগুলো জামায়াতের সাথে পড়াকে মাকরূহ্ তাহরীমী ফতওয়া দিয়ে সীমালঙ্ঘন, ভণ্ডামী ও মূর্খতার পরিচয় দিয়েছিলেন কি? (নাউযুবিল্লাহ্)

কেননা, তাঁর প্রসিদ্ধ ও বিশ্ববিখ্যাত কিতাব “মাক্তুবাত শরীফে” উল্লেখ করেন,

جننا چاھئے کہ نوافل کو جما عت تمام کی ساتھ  ادا کرنا مکروہ اور بدعتوں میں سے ھے- اور  نوافل جماعت کے ساتھ ادا کرنا فقہ کی بعض روایات میں کراھت تداعی اور تجمیع یعنی بلانے اور جمیعت پر مشروط ھے پس اگر بغیر تداعی  کے ایک دو أدمی مسجد کے گوشہ میں نفل کو جما عت سے ادا کرے تو  بغیر کر اھت روا ھے. اور تین ادمیوں میں مشائخ کا اختلاف ھے. اور بعض روایت میں چار ادمیوں کا جماعت بالاتفاق مکوہ نھیں اور بعض روایت میں اصح یہ ھے کہ مکروہ ھے.

অর্থঃ- “স্মরণ রেখ যে, নফল নামায পূর্ণ জামায়াতের সাথে আদায় করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতের অন্তর্ভুক্ত। এবং নফল নামায জামায়াতের সাথে পড়া কোন কোন ফিক্বাহ্বিদগণের মতে, সর্ব অবস্থায় মাকরূহ্ তাহ্রীমী। আর কারো কারো মতে, ঘোষণা দেয়ার সাথে শর্ত যুক্ত। সুতরাং যদি কেউ বিনা ঘোষণায় মসজিদের এক কোনায় নামায পড়ার সময় দু’একজন ইক্তিদা করে তবে মাকরূহ ছাড়াই আদায় হবে। আর তিনজন পড়ার ব্যাপারে মাশায়িখগণের মতবিরোধ রয়েছে। চারজন ইক্তিদা করলে কেউ কেউ বলেন- মাকরূহ্ নয়, কিন্তু সর্বসম্মত ও ছহীহ্ মত হলো, মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে।”

          সুতরাং উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো, “শবে বরাত, শবে ক্বদর, লাইলাতুর রাগায়িব” ইত্যাদি সম্মানিত মহিমান্বিত রাতসমূহে নফল নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্। এ ফতওয়া দেয়ার কারণেই যদি তা সীমালঙ্ঘন, ভণ্ডামী ও মূর্খতার পরিচায়ক হয় তাহলে বলতে হয় যে, রেযাখানীদের উক্ত বক্তব্য মুতাবিক প্রথম দরজার সীমালঙ্ঘনকারী, প্রথম দরজার ভণ্ড এবং প্রথম দরজার মূর্খ হলো তাদের গুরু রেযা খাঁ। আর দ্বিতীয় দরজার সীমালঙ্ঘনকারী, দ্বিতীয় দরজার ভণ্ড ও দ্বিতীয় দরজার মূর্খ হলো মৌলভী আমজাদ আলী। (চলবে)

(উল্লেখ্য, রেযাখানীদের উপরোক্ত ভুলের সংশোধনীমূলক জাওয়াব মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৮৬তম সংখ্যাতে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৮৯তম সংখ্যা হতে ধারাবাহিক ভাবে দেয়া হচ্ছে।)

মুহম্মদ সুহাইল আহমদ (রানা)

সভাপতি- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত, চাঁদপুর

সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলাম আগস্ট/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-সমাধান বিভাগে জামে মসজিদে ছানী জামায়াত পড়া সম্পর্কে নিম্নোক্ত ৩৭৬৮নং জিজ্ঞাসার-সমাধান ছাপা হয়-

জিজ্ঞাসাঃ জামে মসজিদে কিনা সানী জামাআত পড়া যায় না। না পড়া গেলে এর কারণ কি?

          সমাধানঃ যেসব মসজিদে ইমাম-মুয়ায্যিন নির্ধারিত রয়েছেন, সুনির্দিষ্ট সময়ে জামাআত অনুষ্ঠিত হয়, এসব মসজিদকে জামে মসজিদ বলা হয়। এরূপ জামে মসজিদে সানী জামাআত কায়েম করা মাকরূহে তাহরীমী। এর প্রথম কারণ হল, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কোন দলীল না পাওয়া যাওয়া। এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার মসজিদে গিয়ে দেখলেন জামাআত হয়ে গেছে। তখন তিনি ঘরে ফিরে গিয়ে পরিবারের অন্যদেরকে নিয়ে জামাআতের সাথে নামায পড়েন। এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সানী জামাআত জায়েয নেই। মসজিদে সানী জামাআত জায়েয হলে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা না করে ঘরে গিয়ে কেন জামাআতের সাথে নামায পড়লেন?

দ্বিতীয়তঃ জামে মসজিদে সানী তথা বারবার জামাআত কায়েম হতে থাকলে প্রথম জামাআতের গুরুত্ব হ্রাস পেতে থাকবে। ফলতঃ প্রথম জামাআতে মুসল্লীদের অংশগ্রহণ কমতে থাকবে। তারা মনে করবে, আমাদের কখনো জামাআত ছুটেনি। এতে মানুষের মধ্যে অলসতা বৃদ্ধি পাবে। এসব কারণে ফুক্বাহায়ে কিরাম জামে মসজিদে সানী জামাআত মাকরূহে তাহরীমী বলে ঘোষণা দিয়েছেন। (ফাত্ওয়ায়ে শামী-১/৫৫৩)

          এখন আমার সুওয়াল হলো- জামে মসজিদে ছানী বা দ্বিতীয় জামায়াত সম্পর্কে হাটহাজারীর মুখপত্র মাসিক মুঈনুল ইসলাম পত্রিকার উক্ত জিজ্ঞাসার সমাধান সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ জামে মসজিদে ছানী বা দ্বিতীয় জামায়াত পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী বলেছেন? দলীল-আদিল্লাহ্সহ সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ না, জামে মসজিদে (অর্থাৎ যেসব মসজিদে ইমাম, মুয়াজ্জিন ও জামায়াত নির্ধারিত আছে সেসব মসজিদে) ছানী জামায়াত বা দ্বিতীয় জামায়াত পড়া সম্পর্কে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে যা সম্পূর্ণ দলীলবিহীন ও মনগড়া।

          কেননা, জামে মসজিদে বা যে কোন শরয়ী মসজিদে ছানী জামায়াত বা দ্বিতীয় জামায়াত করা জায়িয রয়েছে এবং সকল ফুক্বাহ্া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ঐক্যমতে ছানী জামায়াত করা বা দ্বিতীয় জামায়াত করা মাকরূহ্ তাহরীমী হবে না। কেননা বিশ্বে যে সমস্ত মসজিদ রয়েছে তা দু’ভাগে বিভক্ত। যথাক্রমে- (১) যার ইমাম ও মুয়াজ্জিন নির্ধারিত নেই, (২) যার ইমাম ও মুয়াজ্জিন নির্ধারিত আছে।

          উল্লেখ্য, যে মসজিদে ইমাম, মুয়াজ্জিন মুকাররার বা নির্ধারিত নেই সেখানে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ইত্যাদি প্রত্যেক জামায়াতই আযান-ইক্বামত দিয়ে আদায় করা জায়িয রয়েছে, বরং তা উত্তম।

          আর যে মসজিদে ইমাম, মুয়াজ্জিন মুকাররার বা নির্ধারিত রয়েছে এবং আযান ইক্বামতসহ মহল্লাবাসী প্রথম জামায়াত করেছে সেখানেও ছানী বা দ্বিতীয় জামায়াত জায়িয রয়েছে শর্ত সাপেক্ষে- (১) মুকাররার ইমামের নির্ধারিত স্থানে বা মেহরাবে ছানী বা দ্বিতীয় জামায়াতের ইমাম দাঁড়াতে পারবেনা। (২) প্রথম জামায়াত চলাকালে ছানী বা দ্বিতীয় জামায়াত হতে পারবেনা। (৩) আযান-ইক্বামত দিতে পারবেনা। (৪) মহল্লার মসজিদের নির্দিষ্ট মুছল্লী হতে পারবেনা। তবে বহিরাগত কিছু মুছল্লী মসজিদে এমন সময় উপস্থিত হলো, যখন জামায়াত হয়ে গেছে অথচ তারা জামায়াতে রীতিমত নামায আদায় করে, তখন তারা উপরোক্ত শর্ত সাপেক্ষে ছানী বা দ্বিতীয় জামায়াত আদায় করতে পারবে।

          আবার মহল্লার মসজিদের নির্দিষ্ট মুছল্লীগণও দ্বিতীয় জামায়াত পড়তে পারবে, যদি এমন অবস্থা হয় যে, বিশ-পঞ্চাশজন লোক কবরস্থানে মৃতের দাফন সম্পন্ন করে এসে অথবা আল্লাহ্ পাক না করুন মহল্লার কোন বাড়ীতে আগুন লাগার কারণে ২০/৩০ জন মুছল্লী আগুন নিভিয়ে এসে অথবা অন্য কোন জরুরী কাজ সম্পন্ন করে এসে দেখতে পেল যে, মহল্লার মসজিদে জামায়াত শেষ হয়ে গেছে, অথচ তারা প্রত্যেকেই রীতিমত জামায়াতে নামায আদায় করে, তাহলে তারা মা’জুর হিসেবে উক্ত মহল্লার মসজিদে ছানী বা দ্বিতীয় জামায়াত আদায় করতে পারবে। সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ঐক্যমতে জামে মসজিদে ছানী জামায়াত করা জায়িয। মাকরূহ্ হবেনা যদি জামায়াত প্রথম ছূরতে না হয়।

নিম্নে সর্বজনমান্য, বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাব থেকে দলীল পেশ করা হলো-

          যেমন, বিশ্ববিখ্যাত, সর্বজনমান্য ফতওয়ার কিতাব “আল ফিক্বহু আ’লাল মাযাহিবিল আরবায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৪৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

الحنفية قالوا لا يكره تكرار الجماعة فى مساجد الطرق وهى ما ليس لها امام وجماعة معينون. أما مساجد المحلة وهى ما لها امام وجماعة معينون فلا يكره تكرار الجماعة فيها أيضا ان كانت على غير الهيئة الاولى كما صليت الاولى فى المحراب والثانية صليت بعد ذلك.

অর্থঃ- “হানাফীগণ বলেন, রাস্তার মসজিদে ছানী জামায়াত পড়া মাকরূহ্ হবেনা। আর রাস্তার মসজিদ একেই বলা হয় যার ইমাম এবং জামায়াত নির্ধারিত নেই। অনুরূপ মহল্লার মসজিদ। যে মহল্লার মসজিদে ইমাম ও জামায়াত নির্ধারিত আছে উক্ত মহল্লার মসজিদেও ছানী জামায়াত পড়া মাকরূহ্ হবেনা। যদি ছানী জামায়াত প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয়। আর ছানী জামায়াত প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হওয়ার অর্থ হলো, যেমন প্রথম জামায়াতে মেহরাবে নামাযের ইমামতি করা আর ছানী বা দ্বিতীয় জামায়াতে মেহরাব থেকে দূরে সরে নামাযের ইমামতি করা।”

উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,

لايكره مطلقا تكرار الجماعة فى مسجد المحلة بلا أذان والقامة.

অর্থঃ- “(مطلقا) বা সাধারণভাবে মহল্লার মসজিদে (অর্থাৎ যেখানে ইমাম এবং জামায়াত নির্ধারিত আছে যাকে জামে মসজিদ বলা হয় সেখানেও) আযান ও ইক্বামত ব্যতীত ছানী জামায়াত পড়া মাকরূহ্ হবেনা।”

“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” ১ম খণ্ডের ৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

المسجد اذا كان له امام معلوم وجماعة معلومة فى محلة فصلى اهله فيه بالجماعة لايباح تكرارها فيه باذان ثان أما اذا صلوا بغير اذان يباح اجماعا وكذا فى مسجد قارعة الطريق كذا فى شرح المجمع.

অর্থঃ- “যদি মহল্লার মসজিদে ইমাম ও জামায়াত নির্দিষ্ট থাকে এবং মহল্লার লোকেরা আযান দিয়ে জামায়াতের সহিত নামায আদায় করে তাহলে দ্বিতীয়বার আযান দিয়ে পুনরায় দ্বিতীয় জামায়াত করা জায়িয নেই। তবে যদি মহল্লার মসজিদে ইমাম ও জামায়াত নির্দিষ্ট থাকে এবং মহল্লার লোকেরা দ্বিতীয় আযান ব্যতীত ছানী জামায়াত পড়ে, তাহলে সকলের ঐক্যমতে ছানী জামায়াত জায়িয। আর অনুরূপভাবে এই হুকুম রাস্তার মসজিদের জন্যও প্রযোজ্য। এটা ‘শরহে মাজমাআর’ মধ্যে উল্লেখ আছে।

“আইনুল হিদায়া” কিতাবের নিছফে আউয়াল খণ্ডের ৫৬৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اور بلا اذان واقامت بالاجما ع مکروہ نھیں ھے.

অর্থঃ- “মহল্লার মসজিদে আযান ও ইক্বামত ব্যতীত ছানী বা দ্বিতীয় জামায়াত পড়লে, সকলের ঐক্যমতে মাকরূহ্ হবে না।”

“ওয়ালওয়ালিজীয়া” কিতাবে উল্লেখ আছে,

ولم يقم مقام الاول وبه نأخذ.

অর্থঃ- “ছানী জামায়াত মাকরূহ্ নয়। তবে প্রথম স্থানে দাঁড়ানো যাবেনা। অর্থাৎ প্রথম জামায়াতের ইমাম ছাহেব যেখানে দাঁড়িয়ে ইমামতি করেছেন ছানী জামায়াতের ইমাম ছাহেব সেখানে দাঁড়াবেন না। বরং সেখান থেকে দূরে সরে ছানী জামায়াতের ইমামতি করবেন। আর এটাই আমরা গ্রহণ করেছি।”

“বাহরুর রায়িক” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

لا بأس به مطلقا اذا صلى فى غير مقام الامام.

অর্থঃ- “সাধারণভাবে ছানী জামায়াত পড়াতে কোন অসুবিধা নেই তবে শর্ত হলো মুকাররার ইমামের নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্য স্থানে নামায পড়বে।”

“শরহুল মূনীয়া” কিতাবে উল্লেখ আছে,

اذا لم تكن الجماعة على الهيئة الاولى لا تكره والا تكره وهو الصحيح وبالبول عن المحراب تختلف الهيئة.

অর্থঃ- “যদি প্রথম জামায়াতের ছূরতে ছানী জামায়াত না হয় তাহলে মাকরূহ্ হবে না। (প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হওয়ার অর্থ হলো ছানী জামায়াতের জন্য আযান ও ইক্বামত হবেনা, ইমামের নির্ধারিত স্থানে তথা মেহরাবে দাঁড়াতে পারবেনা, তাহলে ছানী জামায়াত পড়লে মাকরূহ্ হবে না) অন্যথায় মাকরূহ্ হবে। আর এটাই ছহীহ্ ও বিশুদ্ধ মত। আর মেহরাব থেকে সরে দাঁড়ানোই হলো প্রথম ছূরতের বিপরীত।” অর্থাৎ মেহরাবে না দাঁড়িয়ে ছানী জামায়াত করলে ছানী জামায়াত করা মাকরূহ্ হবেনা।

“মিনহাতুল খালিক্ব” কিতাবে উল্লেখ আছে,

يجوز تكرار الجماعة بلا اذان ولا اقامة ثانية اتفاقا.

অর্থঃ- “সকলের ঐক্যমতে দ্বিতীয়বার আযান ও ইক্বামত ব্যতীত ছানী জামায়াত পড়া জায়িয।”

“ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” ১ম খণ্ডের ১২৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اگرمحلہ کی مسجد میں امام اور جماعت کے لوگ معمولی مقرر ھیں اور ان لوگوں نے اسمیں جما عت سے نمازپڑہ لی تو اذان کے ساتہ دوسری جماعت اسمیں جائز نھیں اور بفیر اذان کے پڑ ھیں توبالاجما ع مباح ھے اور یھی حکم ھے راستہ کی  مسجد کا.

অর্থঃ- “যদি মহল্লার মসজিদে ইমাম ও জামায়াতের লোক স্বাভাবিকভাবে নির্দিষ্ট থাকে এবং মহল্লার লোকেরা মহল্লার মসজিদে আযান দিয়ে নামায পড়ে, তাহলে পুনরায় আযান দিয়ে দ্বিতীয় জামায়াত পড়া জায়িয নেই। আর আযান ব্যতীত যদি দ্বিতীয় জামায়াত পড়ে, তাহলে সকলের ঐক্যমতে দ্বিতীয় জামায়াত জায়িয। এই হুকুম রাস্তার মসজিদের জন্যও প্রযোজ্য।”

“ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ৫২৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وفى الخلاصة وقال الشافعى رحمه الله لا بأس بتكرار الجماعة.

অর্থঃ- “খুলাছা কিতাবে উল্লেখ আছে, ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, ছানী জামায়াত পড়তে কোন অসুবিধা নেই।”

উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,

وروى عن محمد رحمه الله أنه لم ير بالتكرار بأسا.

অর্থঃ- “ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত আছে। তিনি ছানী জামায়াত করার ব্যাপারে কোন অসুবিধা মনে করেননা।”

“জাওহারাতুন নাইয়ারাহ” কিতাবের ৭৬ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

وفى شرح المنية اذا لم تكن الجماعة على الهيئة الاولى لاتكره والا تكره وهو الصحيح وبالبول عن المحراب تختلف الهيئة كذا فى البزازية.

অর্থঃ- “শরহে মুনিয়ায়” উল্লেখ আছে, যদি প্রথম জামায়াতের ছূরতে ছানী জামায়াত না হয় তাহলে মাকরূহ্ হবে না। (প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হওয়ার অর্থ হলো, ছানী জামায়াতের জন্য আযান ও ইক্বামত হবেনা, ইমামের নির্ধারিত স্থানে দাঁড়াতে পারবেনা, তাহলে ছানী জামায়াত পড়লে মাকরূহ হবে না) অন্যথায় মাকরূহ হবে। আর এটাই ছহীহ্ ও বিশুদ্ধ মত। আর মেহরাব থেকে সরে দাঁড়ানোই হলো প্রথম ছূরতের বিপরীত।” অনুরূপ “বায্যাযীয়ায়” উল্লেখ আছে।

“ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩৯৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ان الصحيح انه لايكره تكرار الحماعة اذا لم تكن على الهيئة الاولى.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই ছহীহ্ মত এই যে, দ্বিতীয় জামায়াত যদি প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয় তাহলে দ্বিতীয় জামায়াত পড়লে মাকরূহ্ হবেনা। অর্থাৎ প্রথম জামায়াতের মত আযান ও ইক্বামত না দিয়ে ও ইমামের নির্ধারিত স্থানে না দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় জামায়াত করলে মাকরূহ্ হবে না। এটাই ছহীহ্ মত।”

উক্ত কিতাবের ১ম খন্ডের ৩৭৭ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে, لايكره تكرار الجماعة فى مسجد واحد.

অর্থঃ- “একই মসজিদে ছানী জামায়াত পড়লে মাকরূহ হবেনা।”

“আল লুবাব লিল মায়দানী” কিতাবে উল্লেখ আছে,

اذا لم تكن الجماعة على الهيئة الاولى لاتكره والا تكره وهو الصحيح.

অর্থঃ- “যদি প্রথম জামায়াতের ছূরতে ছানী জামায়াত না হয় তাহলে মাকরূহ হবে না। (প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হওয়ার অর্থ হলো, ছানী জামায়াতের জন্য আযান ও ইক্বামত হবেনা, ইমামের নির্ধারিত স্থানে দাঁড়াতে পারবেনা, তাহলে ছানী জামায়াত পড়লে মাকরূহ হবে না) অন্যথায় মাকরূহ্ হবে। আর এটাই ছহীহ্ ও বিশুদ্ধ মত।”

“গায়াতুল আওতার” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

درر مين كهاكه اكر اهل محل محله بدون اذان واقامت كى جماعت دو باره كريى …….. تو دوسرى جماعت جائز هوكى بالاتفاق.

অর্থঃ- “দুরারে বর্ণিত আছে, যদি মহল্লার অধিবাসী তাদের মহল্লার মসজিদে আযান ও ইক্বামত ব্যতীত দ্বিতীয় জামায়াত করে … তাহলে দ্বিতীয় জামায়াত পড়া সকলের ঐক্যমতে জায়িয।”

“বাহরুর রায়িকের” ১ম খণ্ডের ৩৪৬ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

يجوز تكرار الجماعة بلا اذان ولا اقامة ثانية اتفاقا.

অর্থঃ- “সকলের ঐক্যমতে দ্বিতীয়বার আযান ও ইক্বামত ব্যতীত ছানী জামায়াত পড়া জায়িয।”

“হাশিয়ায়ে তাহতাবী আলা দুররিল মুখতার” কিতাবের ১ম খণ্ড ২৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اما اذا كررت بغير اذان فلا كراهة مطلقا وعليه المسلمون.

অর্থঃ- “মহল্লার মসজিদে আযান ও ইক্বামত দিয়ে ছানী জামায়াত মাকরূহ। তবে শর্ত হলো দ্বিতীয়বার আযান ব্যতীত যদি ছানী জামায়াত বা দ্বিতীয় জামায়াত পড়ে তাহলে সাধারণভাবে (مطلقا) দ্বিতীয় জামায়াত পড়া মাকরূহ হবেনা এবং এরই উপর সমস্ত মুসলমানগণ তথা সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন।”

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, “যেসব মসজিদে ইমাম-মুয়ায্যিন নির্ধারিত রয়েছেন, সুনির্দিষ্ট সময়ে জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় সেসব জামে মসজিদেও ছানী জামায়াত পড়া মাকরূহ্ নয়। বরং সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ঐক্যমতে ছানী জামায়াত পড়া জায়িয  শর্ত সাপেক্ষে।

দ্বিতীয়তঃ হাটহাজারীর মৌলভীরা বলেছে, … “জামে মসজিদে সানী জামআত কায়েম করা মাকরূহে তাহরীমী। এর প্রথম কারণ হল, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কোন দলীল না পাওয়া যাওয়া।” …

এর জবাবে বলতে হয় যে, তাদের এ বক্তব্য মূর্খতাসূচক হয়েছে। কারণ শরীয়তের দলীল হচ্ছে- কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস। এদের জন্য আফসুস! এরা শরীয়তের দলীল সম্পর্কেও অবগত নয়। আর ইজমা ও ক্বিয়াসের বাস্তবরূপ হচ্ছে ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবগুলো। তাই  আমরা ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবের অনেক দলীল-আদিল্লাহ্ দ্বারা প্রমাণ করে দিয়েছি যে, “ছানী জামায়াত মাকরূহ্ তাহরীমী নয়।”

তৃতীয়তঃ হাটহাজারীর মৌলভীরা বলেছে, … “এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার মসজিদে গিয়ে দেখলেন জামাআত হয়ে গেছে। তখন তিনি ঘরে ফিরে গিয়ে পরিবারের অন্যদেরকে নিয়ে জামাআতের সাথে নামায পড়েন। এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সানী জামাআত জায়েয নেই। … জায়েয হলে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা না করে ঘরে গিয়ে কেন জামাআতের সাথে নামায পড়লেন?” …..

এর জবাবে বলতে হয় যে, হাটহাজারীর মৌলভীদের এ বক্তব্যও মূর্খতাসূচক। কারণ শুধু একটা হাদীস শরীফ পেশ করলেই চলবে না বরং দেখতে হবে শরীয়তের সর্বশেষ হুকুম কি এবং মাযহাব অনুযায়ী ফতওয়া কোন মতের উপর হয়েছে। সেটাই আমল করতে হবে।

আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছানী জামায়াত মসজিদে না করে ঘরে গিয়ে আহাল বা পরিবার-পরিজনকে নিয়ে জামায়াতের সাথে নামায আদায় করে এটাই প্রমাণ করলেন যে, ঘরে আহাল বা পরিবার-পরিজনকে নিয়ে জামায়াতের সাথে নামায আদায় করলে মাকরূহ্ হবেনা। এমনকি জামায়াতেরও ফযীলত পাবে।

যেমন, “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩৯৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ان الاصح انه لو جمع باهله لايكره وينال فضيلة الجماعة.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই অধিক ছহীহ্ বা বিশুদ্ধ মত এই যে, যদি আহাল বা পরিবার-পরিজনকে নিয়ে জামায়াত করা হয় তাহলে মাকরূহ্ হবেনা এবং জামায়াতের ফযীলত পাবে।” অনুরূপ “ফতওয়ায়ে বায্যাযীয়া, বাহরুর রায়িক্ব ১ম খন্ড, ৩৪৬ পৃষ্ঠায়ও” উল্লেখ আছে।

          চতুর্থতঃ হাটহাজারীর মৌলভীরা একখানা হাদীস শরীফ ও জামায়াতের গুরুত্ব হ্রাসের কারণ দেখিয়ে পরিশেষে বলেছে, … “এসব কারণে ফুক্বাহায়ে কিরাম জামে মসজিদে সানী জামাআত মাকরূহে তাহরীমী বলে ঘোষণা দিয়েছেন। (ফাত্ওয়ায়ে শামী-১/৫৫৩)”

এর জবাবে বলতে হয় যে, হাটহাজারীর মৌলভীদের উক্ত বক্তব্যও ভুল হয়েছে। কারণ তারা তাদের জিহালতের কারণে কিতাবের ইবারত বুঝতে পারেনি। তাই তারা ছহীহ্ ও ফতওয়াগ্রাহ্য মতটি বর্ণনা করতে পারেনি। কারণ, তারা “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫৫৩ পৃষ্ঠার বরাত দিয়েছে।

          অথচ “ফতওয়ায়ে শামীর” উক্ত পৃষ্ঠায় তাদের বক্তব্যের পরেই উল্লেখ আছে, “বিশুদ্ধ মতে ছানী জামায়াত মাকরূহ্ নয়। আর وبه نأخذ এটাই আমরা গ্রহণ  করেছি।”

যেমন, “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اذا لم تكن الجماعة على الهيئة الأولى لاتكره والا تكره وهو الصحيح وبالعدول عن المحراب تختلف الهيئة كذا فى البزازية انتهى وفى التتار خانية عن الولوالجية وبه نأخذ.

অর্থঃ- “ছানী জামায়াত যদি প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয়। (প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হওয়ার অর্থ হলো ছানী জামায়াতের জন্য আযান ও ইক্বামত হবেনা। ইমামের নির্ধারিত স্থানে তথা মেহরাবে দাঁড়াতে পারবেনা। তাহলে ছানী জাময়াত পড়লে মাকরূহ্ হবেনা।) অন্যথায় মাকরূহ্ হবে। এটাই ছহীহ্ ও বিশুদ্ধ ফতওয়া। আর মেহরাব থেকে সরে দাঁড়ানোই হলো প্রথম ছূরতের বিপরীত।” অনুরূপ বায্যাযীয়া কিতাবেও উল্লেখ আছে। এবং অনুরূপ তাতারখানিয়া কিতাবে ওয়ালওয়ালিজীয়া কিতাব থেকে উল্লেখ আছে। আর وبه نأخذ এটাই আমরা গ্রহণ করেছি।

“ফতওয়ায়ে বায্যাযীয়া” কিতাবে উল্লেখ আছে,

تكرار الجماعة ….. اذا لم يكن على الهيئة الاولى لايكره والا فيكره وهو الصحيح وبالعدول عن المحراب تختلف الهيئة.

অর্থঃ- “ছানী জামায়াত ……. যদি প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয় তাহলে মাকরূহ্ হবেনা। (প্রথম ছূরতে না হওয়ার অর্থ হলো  ছানী জামায়াতের জন্য আযান ও ইক্বামত হবেনা, ইমামের নির্ধারিত স্থানে তথা মেহরাবে দাঁড়াতে পারবেনা, তাহলে ছানী জামায়াত পড়লে মাকরূহ হবে না) অন্যথায় মাকরূহ্ হবে। এটাই বিশুদ্ধ ফতওয়া। আর মেহরাব থেকে সরে দাঁড়ানোই হলো প্রথম ছূরতের বিপরীত। অর্থাৎ ছানী জামায়াতে মেহরাবে না দাঁড়ানোই হলো প্রথম ছূরতের বিপরীত। আর প্রথম ছূরতের বিপরীত হলে অর্থাৎ মেহরাবে না দাঁড়িয়ে ছানী জামায়াত করলে ছানী জামায়াত করা মাকরূহ্ হবেনা।”

“তাতারখানীয়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫২৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وفى الولوالجية : ولم يقام مقام الاول وبه نأخد.

অর্থঃ- “ওয়ালওয়ালিজীয়া কিতাবে উল্লেখ আছে, (ছানী জামায়াত মাকরূহ্ নয় তবে) প্রথম স্থানে দাঁড়ানো যাবেনা। অর্থাৎ ইমাম ছাহেব যে স্থানে দাঁড়িয়ে প্রথম জামায়াত আদায় করেছেন সে স্থানে ছানী জামায়াতের ইমাম ছাহেব দাঁড়াবেন না। বরং সেখান থেকে দূরে সরে ছানী জামায়াতের ইমামতি করবেন। আর وبه نأخذ এটাই আমরা গ্রহণ করেছি।”

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, বিশুদ্ধ ফতওয়া মুতাবিক জামে মসজিদে ছানী জামায়াত মাকরূহ্ নয়। এটাই ترجيح. বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত মাসয়ালা। আর প্রাধান্যপ্রাপ্ত  মাসয়ালার বিপরীত ফতওয়া দেয়া সম্পূর্ণই নাজায়িয ও হারাম।

এ প্রসঙ্গে “শরহে উকুদে রস্মুল মুফ্তী” কিতাবের ৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে,

ابن حجر المكى قال لايحل لهما الحكم والا فتاء بغير الراجح لانه اتباع للهواء وهو حرام اجماعا. (شرح عقود رسم المفتى صفه3)

অর্থঃ- “মুহাক্কিক ইবনে হাজর মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ইখ্তিলাফযুক্ত মাসয়ালায় প্রাধান্যপ্রাপ্ত মাসয়ালার বিপরীত ফতওয়া দেয়া বা আমল করা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। কেননা এটা নফসের অনুসরণ।” এটা ফতওয়ায় কোবরাতেও উল্লেখ আছে।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, জামে মসজিদে ছানী জামায়াত মাকরূহ্ নয়। এটা যে, ترجيح বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত বা গ্রহণযোগ্য তার প্রমাণ  কি?

এটার উত্তর হলো, ইখতিলাফযুক্ত মাসয়ালায় যেটাকে

وبه نأخذ – وهو الصحيح- وبه يفتى- وهو المختار عليه الفتاوى.

ইত্যাদি দ্বারা ফতওয়া দেয়া হবে, ওটাই প্রাধান্যপ্রাপ্ত বা গ্রহণযোগ্য। এ প্রসঙ্গে “শরহে উকুদে রসমুল মুফ্তী” কিতাবের ৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয় যে,

واما العلامات للافتاء فقوله وعليه الفتاوى وبه يفتى وبه نأخذ وعليه الاعتماد وعليه عمل اليوم وهو الصحيح وهو الاصح …… لفظ الفتاوى اكد من لفظ الصحيح والاصح والاشبه وغيره. (شرح عقود رسم المفتى صفه 32)

অর্থঃ- “প্রাধান্যপ্রাপ্ত বা গ্রহণযোগ্য ফতওয়ার নিদর্শনগুলো হলো- এটার উপরই ফতওয়া, এটাই আমরা গ্রহণ করি, এটার উপরই নির্ভর, এটার উপরই যামানার আমল বা উম্মতের আমল, এটাই সহীহ্ বা অকাট্য। তন্মধ্যে ফতওয়া (فتوى) শব্দটি অন্য সবগুলো হতে বেশী তাকীদপূর্ণ বা গ্রহণযোগ্য।”

সুতরাং জামে মসজিদে ছানী জামায়াত মাকরূহ্ নয়। এটাকে যেহেতু وبه نأخذ – وهو الصحيح. ইত্যাদি  শব্দ দ্বারা প্রাধান্য দেয়া হয়েছে সেহেতু এটাই গ্রহণযোগ্য ও অনুসরণীয়। এর বিপরীত ফতওয়া দেয়া নাজায়িয ও হারাম।

অতএব, প্রমাণিত হলো, হাটহাজারীর মৌলভীরা জামে মসজিদে ছানী জামায়াতের বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়ে হারাম ও নাজায়িয কাজ করেছে।

[বিঃ দ্রঃ- জামে মসজিদে ছানী জামায়াত মাকরূহ্ তাহরীমী নয়। বরং সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ঐক্যমতে জামে মসজিদে ছানী জামায়াত জায়িয এ সম্পর্কে আরো জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৩২, ৫০, ৫৮, ৫৯, ৬১, ৭৭ ও ১০১তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে মাসিক মদীনা, মাসিক রাহমানী পয়গাম এবং মাসিক মুঈনুল ইসলাম পত্রিকার ছানী জামায়াত সম্পর্কিত ভুল বক্তব্য খণ্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। এবার তৃতীয়বারের মত মাসিক মুঈনুল ইসলামের জামে মসজিদে ছানী জামায়াত সম্পর্কিত ভুল বক্তব্য খন্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হলো।]

{দলীলসমূহঃ- (১) বাহরুর রায়িক, (২) খুলাছা, (৩) ফতওয়ায়ে আলমগীরী, (৪) আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া, (৫) মিনহাতুল খালিক্ব, (৬) দুরারুল বিহার, (৭) শরহে দুরারিল বিহার (৮) উবাব, (৯) মূলতাক্বাত, (১০) হাশিয়ায়ে তাহতাবী, (১১) আল লুবাব লিল মায়দানী, (১২) কাজীখান, (১৩) গায়াতুল আওতার, (১৪) আইনুল হিদায়া, (১৫) ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, (১৬) শরহে মাজমা, (১৭) রদ্দুল মুহ্তার, (১৮) দূরারুল আহ্কাম, (১৯) দুররুল মুখতার, (২০) খাজানা, (২১) তাতারখানিয়া, (২২) শামী, (২৩) ওয়াল ওয়ালিজিয়া (২৪) হামিশুল খাযায়িন, (২৫) বায্যাযীয়া (২৬) শরহে মুনীয়া, (২৭) জাওহারাতুন্ নাইয়ারাহ্, (২৮) হাফতে মাসায়িল ইত্যাদি।}

ছূফী মুহম্মদ আব্দুস্ সালাম, ছূফী মুহম্মদ সুলতান

যুব আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত

ডাংরারহাট, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম

সুওয়ালঃ মাসিক মদীনা অক্টোবর/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যার প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত ৮৩ নং প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়। প্রশ্নঃ মসজিদের ইমাম সাহেব একটি কাগজে নিম্নোক্ত কথাগুলি লেখে ঝুলিয়ে রেখেছেন, যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবীর সম্মান দেবে এবং মিলাদ পাঠের উদ্যোগ নেবে সে ব্যক্তি দুনিয়া থেকে ঈমান নিয়ে কবরে যাবে এবং বিনা হিসেবে বেহেশতে প্রবেশ করবে। হযরত আলী (রাঃ) উৎস হযরত হাজার ইবনে হায়তাসীর (রাহঃ) আরবী গ্রন্থ থেকে। হাদীসের দৃষ্টিতে বক্তব্যটি কতটুকু সঠিক জানতে চাই।

উত্তরঃ বর্তমানে প্রচলিত মিলাদ এর প্রচলন হয়েছে হযরত আলীর (রাঃ) ইন্তেকালের অন্যুন আড়াইশো বছর পর থেকে। সুতরাং হযরত আলী (রাঃ) সম্পর্কিত এই বাণীটি যে ঠিক নয় তা সহজেই অনুমেয়।

আর মাসিক রাহমানী পয়গাম আগষ্ট/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যার জিজ্ঞাসার জবাব বিভাগে ১০২৬নং জিজ্ঞাসার জবাবে বলা হয়েছে “প্রচলিত মীলাদ মাহ্ফিলে …. ক্বিয়াম করাকে ছাওয়াবের কাজ মনে করাও সম্পূর্ণ নাজায়িয।”

এখন আমার সুওয়াল হলো- হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বাণী সম্পর্কে মাসিক মদীনার বক্তব্য এবং প্রচলিত মীলাদ শরীফের মাহ্ফিলে ক্বিয়াম করা সম্পর্কে মাসিক রাহমানী পয়গামের বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি?

জাওয়াবঃ হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বাণী সম্পর্কে মাসিক মদীনার বক্তব্য এবং প্রচলিত মীলাদ শরীফের মাহ্ফিলে ক্বিয়াম করা সম্পর্কে মাসিক রাহমানী পয়গামের বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে। কারণ পত্রিকাদ্বয়ের বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া ও দলীলবিহীন। যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ক্বওল সম্পর্কে মাসিক মদীনার বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা। বর্তমানে যেভাবে মীলাদ মাহ্ফিল হয় সেভাবে যদিও আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানায় ছিলনা। কিন্তু মূল মীলাদ মাহ্ফিলের অস্তিত্ব ও ব্যবস্থা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানাতেই ছিল।

          মুসলমানদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশী কিতাব লিখেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম বিশিষ্ট লিখক মুজাদ্দিদুয্ যামান, সুলতানুল আরিফীন, ইমামুল আইম্মা, ইমাম হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত কিতাব “সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তাফা (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)” কিতাবে দু’টি হাদীস শরীফ বর্ণনা করেন। (১) হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, “তিনি একদিন সাইয়্যিদুল আম্বিয়া, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে হযরত আবূ আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ঘরে গেলেন। তিনি সেখানে দেখতে পেলেন যে, হযরত আবূ আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর নিজ সন্তানাদি ও আত্মীয়-স্বজনদের একত্রিত করে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফ (জন্ম বৃত্তান্ত) আলোচনা করছেন। এটা দেখে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত খুশি হলেন এবং বললেন, হে আমির! নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তোমার জন্য তাঁর রহমতের দ্বার উন্মুক্ত করেছেন এবং সকল ফেরেশ্তাগণ তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। আর যারা তোমার ন্যায় এরূপ আমল করবে, তারাও তোমার ন্যায় নাযাত পাবে।”

          (২) “একদিন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সেখানকার সকল লোকদেরকে তাঁর নিজ ঘরে একত্রিত করে, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফ বা জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা করেন, যা শুনে উপস্থিত সকলেই আনন্দচিত্তে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর ছলাত-সালাম পাঠ করেন। এমন সময় রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম সেখানে উপস্থিত হলেন এবং তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, حلت لكم شفاعتى.

অর্থাৎ “তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল।” এ হাদীস শরীফ দু’টি উল্লিখিত কিতাব ব্যতীত (১) কিতাবুত্ তানবির ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান্ নাজীর, (২) মাওলুদুল কবীর, (৩) দুররুল মুনাজ্জাম ইত্যাদি কিতাবেও বর্ণিত রয়েছে।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, যেহেতু মীলাদ শরীফের অস্তিত্ব আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানায় ছিলো। আর হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ক্বওল মীলাদ শরীফ সম্পর্কে ইমামুল আলাম আল্লামা শিহাবুদ্দীন আহমদ ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত কিতাব “আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফি মাওলিদি সাইয়্যিদি বুলদে আদম” কিতাবের ৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন যে,

وقال على رضى الله عنه وكرم الله وجهه من عظم مولد النبى صلى الله عليه وسلم وكان سببا لقرائته لايخرج من الدنيا إلا بالايمان ويدخل الجنة بغير حساب.

অর্থঃ- “হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, ‘যে ব্যক্তি মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি তা’যীম-তাকরীম, সম্মান বা বিশেষ মর্যাদা প্রদান করবে, সে ব্যক্তি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সুবহানাল্লাহ্)

সাইয়্যিদুত ত্বয়িফা হযরত জুনাইদ বোগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

من حضر مولد النبى صلى الله عليه وسلم وعظم قدره فقد فاز بألإيمان.

অর্থঃ “যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আয়োজনে উপস্থিত হবে এবং উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করবে সে তার ঈমানের দ্বারা সাফল্য লাভ করবে। অর্থাৎ সে বেহেশ্তি হবে। (সুবহানাল্লাহ্) (আন্ নি’মাতুল কুবরা)

শুধু তাই নয় এছাড়াও বিশ্ববিখ্যাত সর্বজনমান্য মুহাদ্দিছ হযরত আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত কিতাবে লিখেন,

من عظم ليلة مولده بما امكنه من التعظيم والاكرام كان من الفائزين بدار السلام.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি তার সাধ্য ও সামর্থ অনুযায়ী ঈদ-ই-মিলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তা’যীম-তাকরীম, সম্মান করবে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে সম্মানিত করা হবে।”

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর উক্ত ক্বওল সঠিক। পক্ষান্তরে মাসিক মদীনার বক্তব্য মিথ্যা ও ভুল বলে প্রমাণিত হলো।

আর মাসিক রাহমানী পয়গাম পত্রিকায় বলা হয়েছে, “প্রচলিত মীলাদ মাহ্ফিলে … ক্বিয়াম করাকে ছাওয়াবের কাজ মনে করাও সম্পূর্ণ নাজায়িয।”

এর জবাবে বলতে হয় যে, কিল্লতে ইল্ম কিল্লতে ফাহম অর্থাৎ কম জ্ঞান কম বুঝের কারণে রাহ্মানী পয়গাম-এর উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল হয়েছে।

কারণ যারা কুরআন শরীফের নির্দেশকে অমান্য করে বেগানা মহিলাদের সাথে উঠা বসা করে। ছহীহ্ হাদীস শরীফ অমান্য করে হরদম ছবি তুলে, হারাম গণতন্ত্র চর্চা করে, হিন্দুদের হরতাল, নাস্তিকের লংমাচ করে তাদের বক্তব্য যে ভুল হবে এটাই স্বাভাবিক।

          কারণ, প্রচলিত মীলাদ শরীফের মাহ্ফিলে ক্বিয়াম করা নাজায়িয নয়। বরং প্রচলিত মীলাদ শরীফের মাহ্ফিলে ক্বিয়াম করা সুন্নতে উম্মতে মুস্তাহ্সান।

এ প্রসঙ্গে “ইক্বদুল জাওয়াহির” কিতাবের ২৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,

قد استحسن القيام عند ذكر ولادته الشريفة صلى الله عليه وسلم ائمة ذواية ودراية.

অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্মবৃত্তান্ত আলোচনাকালে ক্বিয়াম করাকে বিচক্ষণ ইমামগণ মুস্তাহ্সান বা মুস্তাহাব বলেছেন।”

“ইশবাউল কালাম” কিতাবের ৫৪নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,

قد اجمعت الامة المحمدية من الاهل السنة والجماعة على استحسان القيام المذكور وقال عليه السلام لا تجتمع امتى على الضلالة.

অর্থঃ- “উম্মতে মুহম্মদীর আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের সকল আলিমগণ মীলাদ শরীফের ক্বিয়াম মুস্তাহ্সান হওয়ার ব্যাপারে ইজ্মা বা ঐক্যমত পোষণ করেন। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমার উম্মত (আলিমগণ) কখনোই গোমরাহীর উপর একমত হবেনা।”

          মাওলানা আশ্রাফ আলী থানবী ছাহেবসহ সকল উলামায়ে দেওবন্দের পীর ও মুর্শিদ, শায়খ আরব ওয়াল আযম আল্লামা হাজী ইমদাদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তার “হাফ্তে মাসায়িল” কিতাবে উল্লেখ করেন যে,

مولود شریف کو ذریعہ ء بر کات سمجھ کر ھر سال منعقد کرتا ھوں اور قیام کے وقت بے حد لطف ولذت پاتا ھوں.

অর্থঃ- “মীলাদ শরীফের মাহ্ফিলকে বরকত লাভের উছীলা মনে করে আমি প্রতি বৎসর মীলাদ শরীফের মজলিস করি এবং মীলাদ মাহ্ফিলে ক্বিয়াম করার সময় আমি অশেষ আনন্দ ও স্বাদ উপভোগ করি।”

          সুতরাং প্রমাণিত হলো, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী ছাহেব, গাঙ্গুহী ছাহেবসহ সকল ওলামায়ে দেওবন্দের পীর ও মুর্শিদ শায়খুল আরব ওয়াল আ’যম, আল্লামা হাজী ইমদাদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বয়ং নিজেই মীলাদ-ক্বিয়াম করেছেন, যা তিনি তাঁর “হাফ্তে মাসায়েল ও মরকুমাতে ইমদাদিয়া” কিতাবে  উল্লেখ করেছেন।

          তাছাড়া বড়কাটরা ও লালবাগ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা, মুজাহিদে আ’যম, খাদিমুল ইসলাম, হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী ছাহেব ক্বিয়াম সম্পর্কে তাঁর “তাছাউফ তত্ত্ব” কিতাবে লিখেন যে, “মীলাদ শরীফের মধ্যে ক্বিয়াম করা আদব, শরাফত বা ভদ্রতা।”

অতএব, উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, প্রচলিত মীলাদ শরীফের মাহ্ফিলে ক্বিয়াম করা সুন্নতে উম্মত মুস্তাহসান। সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানকে মীলাদ শরীফের মাহ্ফিলে ক্বিয়াম করাকে ছওয়াবের কাজ মনে করেই ক্বিয়াম করতে হবে।

[বিঃ দ্রঃ- “মীলাদ শরীফের মাহ্ফিলে ক্বিয়াম করা সুন্নতে উম্মতে মুস্তাহসান তথা ছওয়াবের কাজ” এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ২৮, ৩৬, ৪০, ৪৭, ৬৮, ৭০, ৮৮ ও ৯৩ তম সংখ্যা পাঠ করুন, সেখানে, মাসিক মদীনা, মাসিক মুঈনুল ইসলাম এবং মাসিক রাহমানী পয়গাম পত্রিকার মীলাদ ক্বিয়াম সম্পর্কে ভুল বক্তব্য খণ্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে।

এবার ৬ষ্ঠ বারের মত মাসিক রাহমানী পয়গামের ভুল বক্তব্য খন্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হলো।]

মুহম্মদ রায়হান কবীর

সভাপতি- ছাত্র আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত

বানিয়াপট্টি, পঞ্চগড়

সুওয়ালঃ ঈদের দিনের সুন্নতসমূহ কি? জানালে কৃতার্থ হবো।

জাওয়াবঃ ঈদের দিনের সুন্নত হলো- (১) খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠা, (২) গোসল করা, (৩) মিস্ওয়াক করা, (৪) সামর্থ অনুযায়ী নতুন ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা, (৫) আতর ব্যবহার করা, (৬) নামাযের পূর্বে সদকাতুল ফিৎর আদায় করা, (৭) ঈদুল ফিত্র নামাযের পূর্বে কিছু মিষ্টান্ন খাওয়া (৮) তিন, পাঁচ বা বেজোড় সংখ্যক খেজুর বা খুরমা খাওয়া, (৯) মহল্লার (এলাকার) মসজিদে গিয়ে ফজরের নামায পড়া, (১০) ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া, (১১) এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা, (১২) সকাল সকাল ঈদের নামায পড়ার জন্য যাওয়া, (১৩) ঈদের নামায, ঈদগাহে গিয়ে পড়া। সম্ভব না হলে মহল্লার (এলাকার) মসজিদে গিয়ে ঈদের নামায পড়া, (১৪) আস্তে আস্তে নিম্নলিখিত দোয়া পড়তে পড়তে ঈদগাহে যাওয়া

الله اكبر – الله اكبر-

لا اله الا الله – والله اكبر-

الله اكبر – ولله الحمد.

(১৫) শরীয়তের সীমার মধ্যে থেকে খুশী প্রকাশ করা ইত্যাদি ঈদের সুন্নত। (আলমগীরী, নূরুল ইজাহ্ ও অন্যান্য ফিক্বাহ্রে কিতাব)

মুহম্মদ শফিউর রহমান (নিপু)

মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সুওয়ালঃ এ বছর ছদ্কাতুল ফিতর কত?

জাওয়াবঃ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছদ্কাতুল ফিত্রের পরিমাণ সম্পর্কে ইরশাদ করেন,

صاع من بر او قمع على كل اثنين.

অর্থঃ- “প্রতি দু’জনের জন্য এক ‘সা’ গম বা আটা। অর্থাৎ একজনের জন্য অর্ধ ‘সা’ আটা বা তার সমপরিমাণ মূল্য দিতে হবে।” (আবূ দাউদ, বযলুল মাযহুদ)

আমাদের হানাফী মায্হাব মুতাবিক অর্ধ ‘সা’ বলতে এক সের সাড়ে বার ছটাক বুঝানো হয়েছে, যা গ্রাম হিসাবে ১৬৫৭ গ্রাম (প্রায়) হয়। কাজেই যাদের উপর ছদ্কাতুল ফিত্র ওয়াজিব অর্থাৎ ঈদের দিন ছুব্হে ছাদিকের সময় নিসাব পরিমাণ (সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সমপরিমাণ টাকা) সম্পদ থাকে, তাদের প্রত্যেককেই উল্লেখিত একসের সাড়ে বার ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটা বা তার মূল্য দান করতে হবে।

দেশের বিভিন্ন এলাকায় আটার দাম বিভিন্ন রকম। কাজেই যাদের উপর ছদ্কাতুল ফিত্র ওয়াজিব, তাদেরকে তাদের নিজ নিজ এলাকার বর্তমান মূল্য হিসাবে একসের সাড়ে বার ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য দিতে হবে।

এ বছর ঢাকা শহরে ১৫.০০ টাকা কেজি হিসাবে একসের সাড়ে বার ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য- ২৫ টাকা। এর কম দেয়া যাবেনা, তবে ইচ্ছা করলে বেশী দিতে পারবে।

‘রমাদ্বান মাস সহানুভূতির মাস। কাজেই প্রত্যেক মুসলমানের উচিৎ পরস্পর পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা।’

          ইমামুল আইম্মা, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদুয্ যামান, আওলার্দু রসূল, হাবীবুল্লাহ্ ঢাকা রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত-এর আলোচনা মজলিসে একথা বলেন।

          তিনি বলেন, ‘কোন কোন মসজিদে এবং পৃথিবীর কোন কোন স্থানে রমাদ্বান মাসে তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতের সাথে আদায় করতে দেখা যায়। অথচ আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক তা সম্পূর্ণরূপে মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াত। এছাড়াও মসজিদে মহিলাদের জামায়াত মাকরূহ্ তাহরীমী।’ কাজেই প্রত্যেককে এর থেকে বিরত থাকতে হবে। আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত-এর মজলিস করে এসব বিদয়াত, বেশরা কাজ সম্পর্কে মানুষকে জানিয়ে দিতে হবে।

তিনি বলেন, রমাদ্বান মাসে খতমে তারাবীহ্ পড়িয়ে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয। রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, স্যালাইন ও ইনহেলা নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ। তিনি উল্লেখ করেন, এ সম্পর্কে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ২১, ২২, ২৩, ২৪, ৩০, ৩৬, ৪৭, ৬৬, ৮৮, ১০০তম সংখ্যায় বিস্তর দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করা হয়েছে। যার কিঞ্চিত অস্বীকার করা অদ্যবধি বিরুদ্ধবাদীদের পক্ষে সম্ভব হয়নি।

          উল্লেখ্য, গত ২৮শে অক্টোবর হতে ৪ নভেম্বর ২০০২ ঈসায়ী পর্যন্ত হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী দেশের দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গ সফর করেন।

          প্রথম দিন ২৮ শে অক্টোবর, সোমবার, শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গণ, শরীয়তপুর। ২৯ অক্টোবর, মঙ্গলবার, ইবাদুল্লাহ জামে মসজিদ প্রাঙ্গন, পূব চাঁদকাঠি, ঝালকাঠি। ৩০ অক্টোবর, বুধবার, বাংলা স্কুল মাঠ, ভোলা। ৩১ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার, হালিমা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়, গোড়াচাঁদ, দাস রোড, বরিশাল। ১লা নভেম্বর, শুক্রবার, আনসার ভি.ডি.পি ক্যাম্প জামে মসজিদ মাদারীপুরে জুমুয়ার নামায ও মীলাদ। বাদ মাগরীব ওয়াজ ও দোয়ার মাহ্ফিল পৌরসভা ঈদগাহ মাঠ, মাদারীপুর। ২ নভেম্বর, শনিবার, মহিলা রোড, সিদ্দিক ছাহেবের বাসভবন প্রাঙ্গণ, ফরিদপুর। ৩রা নভেম্বর, রোববার, গোদারবাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ, রাজবাড়ী। ৪ নভেম্বর, সোমবার, মাহিগঞ্জ, রংপুরে ওয়াজ, দোয়া , তাফসীরুল কুরআন ও মীলাদ মাহ্ফিল অনুষ্ঠিত হয়।

দেশব্যাপী ইফতার মাহ্ফিল

উল্লেখ্য, পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উপলক্ষে আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত-এর উদ্যোগে সারা দেশব্যাপী আলোচনা মজলিস ও ইফতার মাহ্ফিল অনুষ্ঠিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ