বিশুদ্ধ নিয়ত এবং তার ফযীলত ও গুরুত্ব (৪)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, দুনিয়াতে চার প্রকার লোক রয়েছে।
(১) ইলিম ও সম্পদের অধিকারী। মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে ইলিম দিয়েছেন। সাথে সাথে সম্পদও দিয়েছেন। তারা ইলিম অনুযায়ী আমল করে। ধন-সম্পদ মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি লাভের জন্য নেক কাজে ব্যয় করে। এই শ্রেণির লোক সর্বোত্তম।
(২) ইলিমের অধিকারী তবে ধন-সম্পদহীন। মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে ইলিম দিয়েছেন। তিনি ইলিম অনুযায়ী আমল করেন। আর ধন-সম্পদ না থাকার কারণে দান করতে পারেন না। তবে মনে মনে তার নিয়ত থাকে “যদি আমি ধন-সম্পদের অধিকারী হতাম, তাহলে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি রেজামন্দি লাভের জন্য নেক কাজে ব্যয় করতাম। তার নেক নিয়তের কারণে প্রথম ব্যক্তির ন্যায় ফযীলতপ্রাপ্ত হবেন।
(৩) ধন-সম্পদের অধিকারী কিন্তু ইলিমহীন। তার ইলিম না থাকার কারণে ধন-সম্পদ নাজায়িয ও হারাম কাজে ব্যয় করে। নেক কাজে ব্যয় করতে চায় না। সে ব্যক্তি নিকৃষ্ট।
(৪) ইলিমহীন ও সম্পদহীন। যাদের ইলিম নেই সম্পদও নেই। তারা বদ নিয়ত করে যে, যদি ধন-সম্পদ থাকতো তাহলে তৃতীয় ব্যক্তির ন্যায় গোনাহের কাজ করতো। নাঊযুবিল্লাহ! এরূপ ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট।
অর্থাৎ বিশুদ্ধ নিয়তে আমল করলে যে ফযীলত-বুযুর্গী সম্মান পাওয়া যায়, শুধু বিশুদ্ধ নিয়ত দ্বারাই তা লাভ করা যায়। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
نِيَّةُ الْـمُؤْمِنِ خَيْـرٌ مِّنْ عَمَلِهِ
অর্থ: মু’মিন ব্যক্তির বিশুদ্ধ নিয়ত তার আমল অপেক্ষা উত্তম। সুবহানাল্লাহ! (বায়হাক্বী শরীফ, তবারানী শরীফ)
কারণ বিশুদ্ধ নিয়ত করার সাথে সাথে তিনি একটি সাওয়াবের অধিকারী হন। আর আমল বা কাজটি সুসম্পন্ন করলে ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত ছাওয়াব পেয়ে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, তাবুকের জিহাদের দিন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাঁবু মুবারক থেকে বাইরে তাশরীফ মুবারক নিলেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের খিতাব বা সম্বোধন করে ইরশাদ মুবারক করেন, আজ আমরা এই জিহাদী সফরে ক্ষুধা- তৃষ্ণা, দুঃখ-কষ্ট ভোগ করে মহান আল্লাহ পাক উনার যে সন্তুষ্টি মুবারকের অধিকারী হলাম, মদীনা শরীফের মধ্যে অনেক লোক নিজ ঘরে বসেও আমাদের সাথে এই পূণ্যের তথা সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারকের অধিকারী হবেন। সুবহানাল্লাহ!
আমরা নিবেদন করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! উনারা কিভাবে এই সম্মানের অধিকারী হবেন? উনারা তো এই জিহাদী সফরে আমাদের সাথে অংশগ্রহন করেননি। জিহাদের ময়দানে কিংবা পথে আমরা যে দুঃখ-কষ্ট, ক্ষুধা-তৃষ্ণা সহ্য করলাম উনারা তো এর মধ্যে শরীক হননি।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, উনারা দৈহিক কিংবা সাংসারিক বাধা-বিপত্তির কারণে আমাদের সাথে জিহাদে অংশগ্রহণ করতে পারেননি বটে কিন্তু উনাদের বিশুদ্ধ নিয়তের কারণে উনারা আমাদের ন্যায় ছাওয়াব তথা সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারকের অধিকারী হবেন। সুবহানাল্লাহ!
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৭১)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৭২)
হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৫৯) বিশুদ্ধ নিয়ত এবং তার ফযীলত ও গুরুত্ব (৩)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৭৩)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৭৪)