বনী ইসরাঈলের একজন বুজুর্গ ব্যক্তি একবার দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে যান। তিনি ক্ষুদা-পিপাসায় কাতর হয়ে স্বপরিবারে খাদ্যের অন্বেষণে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন। পথিমধ্যে একটি বালুকাস্তুপ দেখতে পেয়ে মনে মনে বললেন- মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি আমাকে দয়া করে এই পরিমাণ আটা দান করতেন তাহলে সম্পূর্ণ আটাই মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি-রেজামন্দির জন্য দান করে দিতাম।
মহান আল্লাহ পাক তিনি তৎক্ষণাত সেসময়ের সম্মানিত নবী আলাইহিস সালাম উনার প্রতি ওহী মুবারক করলেন। হে আমার সম্মানিত নবী আলাইহিস সালাম! আপনি আমার অমুক বান্দাকে জানিয়ে দিন যে, আমি উনার দান কবুল করেছি। তিনি সেই বালুকাস্তুপের পরিমাণ আটা দান করলে যে ছাওয়াব পেতেন উনার বিশুদ্ধ নিয়তের কারণেই আমি উনাকে সেই পরিমাণ ছাওয়াব ও সন্তুষ্টি মুবারক দান করলাম। সুবহানাল্লাহ! (কিমিয়ায়ে সাআদাত)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সংসারে অবস্থান এবং সংসারে সুখ শান্তি উপভোগই যার নিয়ত ও ইচ্ছা, তার চোখের সামনে অভাব ও দারিদ্রতাই ঘুরে বেড়ায়। অর্থাৎ দান-ছদকা করলে সে দারিদ্রতা ও অভাবের মধ্যে পড়বে- এই আশঙ্কাই সবসময় তার অন্তরে বিরাজ করতে থাকে। সে ব্যক্তি মৃত্যুর সময় দুনিয়ার মোহে আবদ্ধ থেকে পেরেশান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আর যে ব্যক্তি পার্থিব জীবনে আখিরাতে বা পরকালের সৌভাগ্য অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক এবং উনার মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রেজামন্দি হাছিল করাই যাদের নিয়ত এবং ইচ্ছা হয়, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার অন্তকরণকে পার্থিব যাবতীয় অভাব হতে ধণী করে রাখবেন। আর ইন্তিকালের সময় সে ব্যক্তি সম্পূর্ণরূপে সংসার বিরাগী অবস্থায় মহা আনন্দে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারবেন। (কিমিয়ায়ে সাআদাত-৪/১৮০)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি মোহরানা নির্ধারণ করতঃ বিবাহ করে, অথচ মোহরানা আদায় বা পরিশোধ করার নিয়ত রাখে না সে ব্যক্তি ব্যাভিচারের গোনাহে গোনাহগার হবে। আর যে ব্যক্তি পরিশোধ না করার নিয়তে ঋণ গ্রহন করে সে ব্যক্তি চুরির গোনাহে গোনাহগার হবে। নাউযুবিল্লাহ! অর্থাৎ শুধুমাত্র নিয়তের কারণে নেককার এবং গোনাহগার হয়ে থাকে।
এক ব্যক্তি একদিন উনার বন্ধু-বান্ধবগণের উদ্দেশ্যে বললেন, বন্ধুগণ! আমাকে নেক আমল করার তর্জ তরীক্বা অবগত করো। আমি যেন সদা-সর্বদা নেক আমলে প্রতিটিক্ষণ অতিবাহিত করতে পারি। আমার একটি মুহুর্ত যেন নেক আমলবিহীন অতিবাহিত না হয়।
বন্ধুগণ জাওয়াবে বলেন, যদি নেক আমল করতে না পারো তাহলে দায়িমীভাবে নিরবিচ্ছিন্নভাবে নেক আমল করার নিয়ত নিজের অন্তরের মধ্যে জারি রাখ। তাতেই তুমি দায়িমীভাবে- নিরবিচ্ছিন্নভাবে নেক আমল করার ফযীলত ও মর্যাদা লাভ করতে পারবে। সুবহানাল্লাহ!
ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত ত্বরীক্বত সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কেবল অস্থায়ী পার্থিব জীবনের এই কয়েকদিনের সংক্ষিপ্ত ও সামান্য নেক আমল দ্বারা চিরস্থায়ী জান্নাত লাভ করা যাবে না। অবশ্য নেক আমলকারী নেককার লোকের অন্তরে আরো অনেক নেক আমল করার যে দায়িমী বা নিরবিচ্ছিন্ন নিয়ত বা সংকল্প রয়েছে তার জন্যই চিরস্থায়ী জান্নাত লাভের আশা রয়েছে। কারণ বিশুদ্ধ নিয়তের কোন সীমা পরিসীমা নেই। (কিমিয়ায়ে সাআদাত-৪/১৮১)
ফিক্বহুল হাদীস ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৫৭)
ফিক্বহুল হাদীস ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৫৮)
ফিক্বহুল হাদীস ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৫৯)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৬০)