يايها الذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما.
অর্থঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা তাঁর (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর) প্রতি ছলাত পাঠ কর এবং সালাম দেয়ার মত সালাম দাও।” (সূরা আহযাব/ ৫৬)
আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি দরূদ শরীফ ও সালাম পাঠ করা আল্লাহ্ পাক ও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টির কারণ; যা মু’মিনের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ্ পাক-এর যমীনে কিছু সংখ্যক ফেরেশ্তা রয়েছেন যারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি প্রেরিত দরূদ শরীফ ও সালাম তাঁর নিকট পৌঁছিয়ে থাকেন। চাই তা রওজা শরীফের নিকট থেকে হোক বা বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে হোক।
এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে উল্লেখ রয়েছে, “একদা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনার থেকে দূরে অবস্থানকারী ও পরবর্তীকালে পৃথিবীতে আগমনকারীদের দরূদ শরীফ পাঠ আপনার দৃষ্টিতে কি রকম হবে? তিনি ইরশাদ করেন, আন্তরিক, অকৃত্রিম ভালবাসা সহকারে দরূদ শরীফ পাঠকারীদের দরূদ আমি নিজেই শুনি এবং তাদেরকেও চিনি। আর যাদের অন্তরে আমার প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা নেই, তাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়।” (দালায়েলুল খায়রাত)
অন্যত্র বর্ণিত আছে, “যে কোন ব্যক্তি আমার প্রতি দরূদ শরীফ পাঠ করলে পাঠকের আওয়াজ আমার কানে পৌঁছে। এমনকি আমরা জিজ্ঞেস করলাম, এটা আপনার ওফাতের পরও? উত্তরে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, এ নিয়ম আমার ওফাতের পরেও বলবৎ থাকবে।” (জিয়াউল্ ইফহাম) অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হে আমার ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ! প্রতি সোমবার ও শুক্রবার আমার ওফাতের পর বেশী করে দরূদ শরীফ পাঠ করবে। তোমাদের দরূদ শরীফ আমি সরাসরি শুনি।” (আনিসুল জলীস)
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক-এর নিকট সারা পৃথিবীতে বিচরণকারী এমন কতিপয় ফেরেশ্তা রয়েছেন যাঁরা আমার উম্মতগণের সালাম আমার নিকট পৌঁছিয়ে থাকেন।” (দারিমী শরীফ) আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি দরূদ শরীফ পাঠের আদব সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে হযরত শাইখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর স্বরচিত গ্রন্থে উল্লেখ করেন, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্মরণ করুন, তাঁর প্রতি দরূদ পেশ করুন, তাঁর যিকির করার সময় এমনভাবে অবস্থান করুন যেন তিনি আপনার সামনে জীবিতাবস্থায় উপস্থিত আছেন আর আপনি তাঁকে দেখছেন। আদব, মর্যাদা ও শ্রদ্ধা অক্ষুন্ন রেখে ভীত ও লজ্জিত থাকুন এবং এ ধারণা পোষণ করবেন যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনাকে দেখছেন, আপনার কথাবার্তা শুনছেন। কেননা তিনি আল্লাহ্ পাক-এর গুণাবলীতে গুণান্বিত। আল্লাহ্ পাক-এর একটি গুণ হচ্ছে,আমি (আল্লাহ্ পাক) আমার স্মরণকারীর সঙ্গে সহাবস্থান করি।” (মাদারেজুন্ নবুওয়াহ্) শুধু তাই নয়, হযরত ইমাম ইবনুল হাজ্জ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর গ্রন্থে উল্লেখ করেন, “আমাদের সুবিখ্যাত উলামা-ই-কিরাম বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হায়াত ও ওফাত মুবারকের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তিনি নিজ উম্মতকে দেখেন, তাদের অবস্থা, নিয়ত, ইচ্ছা ও মনের কথা জানেন। এগুলো তাঁর কাছে সম্পূর্ণরূপে সুস্পষ্ট, কোনরূপ অস্পষ্টতা বা পুশিদা থাকেনা। ” মূলতঃ আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের সকল ব্যাপারে রয়েছেন পূর্ণ ওয়াকিফহাল এবং হাজির-নাজির। এ প্রসঙ্গে হযরতুল আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বিভিন্ন হাদীস শরীফের সমর্থনে উল্লেখ করেন, “উম্মতের বিবিধ কর্ম-কাণ্ডের প্রতি দৃষ্টি রাখা, তাদের পাপরাশির ব্যাপারে ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাদেরকে বালা-মুছিবত থেকে রক্ষা করার জন্য দু’আ করা, পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত আনাগোনা করা ও বরকত দান করা এবং নিজ উম্মতের কোন নেক বান্দার ওফাত হলে তাঁর জানাযাতে অংশগ্রহণ করা এগুলো হচ্ছে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শখের কাজ।” (এতেবাহুল আয্কিয়া ফি হায়াতিল আউলিয়া)
আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকে বর্তমান যামানার মহান মুজাদ্দিদ-এর উছীলায় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি যথাযথ মহব্বত ও তাযীম-তাকরীমের সাথে দরূদ শরীফ ও সালাম পাঠ করার তাওফিক দান করুন এবং এর হাক্বীক্বী নিয়ামত ও সন্তুষ্টি আমাদের নছীব করুন। (আমীন)
-মুহম্মদ হারীসুর রহমান খান