সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১১৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন

শান্তিবাগ, ঢাকা।

সুওয়াল : মাসিক মদীনা মার্চ/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে ৭৯নং প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, “জামে মসজিদে যেখানে ইমাম-মোয়াজ্জেন নির্ধারিত আছেন এবং ঠিকমত জামাত অনুষ্ঠিত হয় সেসব মসজিদের ইমামের দ্বারা জামাত হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় জামাত করা মাকরূহ।”

মাসিক মদীনা ফেব্রুয়ারি/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে ৩০নং প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, “যেসব জামে মসজিদে নির্ধারিত ইমাম মুয়াজ্জেন আছেন, সময়মত জামাতে নামায হয় সেসব মসজিদে দ্বিতীয়বার জামাত কায়েম করা মাকরূহ।”

আর হাটহাজারী মাদরাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকার ফেব্রুয়ারি/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে ৩৯১৪নং জিজ্ঞাসার সমাধানে বলা হয়েছে, “যে মসজিদে ইমাম-মুয়াযযিন এবং জামায়াতের সময় নির্দিষ্ট রয়েছে সে মসজিদে একবার জামায়াত অনুষ্ঠিত হওয়ার পর দ্বিতীয় বার জামায়াত কায়েম করা মাকরূহ।” (মাবসূত লিস সুরুখসী-১/১৩৫, ফাতওয়ায়ে রহীমিয়্যাহ-৩/২৬, ফাতওয়ায়ে আলমগিরিয়্যাহ-১/৮৩)

এবং অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম ফেব্রুয়ারি/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে ১২২০নং জিজ্ঞাসার জবাবে বলা হয়েছে, “কোন মসজিদে আযান ইকামত সহ জামায়াত হওয়ার পর ঐ মসজিদে পুনরায় জামায়াত কায়েম করা যাবে না। ২য় বার জামায়াত কায়েম করা মাকরূহ তাহরীমী।” (ফাতাওয়া শামী ২: ২৮৮, রদ্দুল মুহতার ২: ২৮৮, আল বাহরুর রায়িক ১: ৬০৫)

এখন আমার সুওয়াল হলো- আমরা আপনাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর মাধ্যমে জানতে পেরেছি জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা জায়িয এবং সকল ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের ঐক্যমতে জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ তাহরীমী নয়। যদি জামায়াত প্রথম ছূরতে না হয়।

অথচ হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকা, মাসিক মদীনা এবং অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম বলেছে জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ তাহরীমী। কোনটি সঠিক?

দয়া করে দলীল আদিল্লাহ সহ বিস্তারিতভাবে সঠিক ও নির্ভারযোগ্য জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াব : জামে মসজিদে (অর্থাৎ যেসব মসজিদে ইমাম-মুয়াযযিন ও জামায়াত নির্ধারিত আছে এবং নির্দিষ্ট সময়ে জামায়াত কায়িম হয় সেসব মসজিদে একবার জামায়াত হওয়ার পর) দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা সম্পর্কে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর মাধ্যমে যা জানতে পেরেছেন সেই ফতওয়াই সঠিক যা নির্ভরযোগ্য, দলীলভিত্তিক এবং গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত।

পক্ষান্তরে হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকা, মাসিক মদীনা এবং অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম পত্রিকার বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, অশুদ্ধ, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং ফতওয়াগ্রাহ্য মতের বিপরীত। শুধু তাই নয়। বরং হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকা, মাসিক মদীনা এবং মাসিক রহমানী পয়গাম পত্রিকার সকল মৌলভীরা জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করার বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়ে শক্ত গুণাহের কাজ করেছে। কেননা সঠিক, গ্রহণযোগ্য ও বিশুদ্ধ ফতওয়া মুতাবিক জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ তাহরীমী নয়। এটাই ترجيح বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফওতয়া। আর ترجيح বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়ার বিপরীত ফতওয়া দেয়া সম্পূর্ণই হারাম ও নাজায়িয।

নিম্নে বিস্তারিতভাবে দলীলভিত্তিক সঠিক জাওয়াব পেশ করা হলো-

উল্লেখ্য, জামে মসজিদে বা যে কোন শরয়ী মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা জায়িয রয়েছে এবং সকল ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের ঐক্যমতে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ তাহরীমী হবে না। কেননা বিশ্বে যে সমস্ত মসজিদ রয়েছে তা দু’ভাগে বিভক্ত। যথাক্রমে- (১) যার ইমাম ও মুয়াজ্জিন নির্ধারিত নেই, (২) যার ইমাম ও মুয়াজ্জিন নির্ধারিত আছে।

আরো উল্লেখ্য, যে মসজিদে ইমাম, মুয়াযযিন মুকাররার বা নির্ধারিত নেই সেখানে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ইত্যাদি প্রত্যেক জামায়াতই আযান-ইক্বামত দিয়ে আদায় করা জায়িয রয়েছে, বরং তা উত্তম।

আর যে মসজিদে ইমাম, মুয়াজ্জিন, মুকাররার বা নির্ধারিত রয়েছে এবং আযান ইক্বামতসহ মহল্লাবাসী প্রথম জামায়াত করেছে সেখানেও দ্বিতীয় বার জামায়াত কায়িম জায়িয রয়েছে শর্ত সাপেক্ষে- (১) মুকাররার ইমামের নির্ধারিত স্থানে বা মেহরাবে ছানী বা দ্বিতীয় জামায়াতের ইমাম দাঁড়াতে পারবেনা। (২) প্রথম জামায়াত চলাকালে দ্বিতীয় জামায়াত হতে পারবেনা। (৩) আযান-ইক্বামত দিতে পারবেনা। (৪) মহল্লার মসজিদের নির্দিষ্ট মুছল্লী হতে পারবেনা। তবে মহিরাগত কিছু মুছল্লী মসজিদে এমন সময় উপস্থিত হলো, যখন জামায়াত হয়ে গেছে অথচ তারা জামায়াত রীতিমত নামায আদায় করে, তখন তারা উপরোক্ত শত সাপেক্ষে দ্বিতীয় জামায়াত আদায় করতে পারবে।

আবার মহল্লার মসজিদের নির্দিষ্ট মুছল্লীগণও দ্বিতীয় জামায়াত পড়তে পারবে, যদি এমন অবস্থা হয় যে, বিশ-পঞ্চাশজন লোক কবরস্থানে মৃতের দাফন সম্পন্ন করে এসে অথব মহান আল্লাহ পাক না করুন মহল্লার কোন বাড়িতে আগুন লাগার কারণে ২০/৩০ জন মুছল্লী আগুন নিভিয়ে এসে অথবা অন্য কোন জরুরী কাজ সম্পন্ন করে এসে দেখতে পেল যে, মহল্লার মসজিদে জামায়াত শেষ হয়ে গেছে, অথচ তারা প্রত্যেকেই রীতিমত জামায়াতে নামায আদায় করে, তাহলে তারা মা’জুর হিসেবে উক্ত মহল্লার মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করতে পারবে। সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের ঐক্যমতে জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা জায়িয। মাকরূহ হবেনা যদি জামায়াত প্রথম ছূরতে না হয়।

নিম্নে সর্বজনমান্য, বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাব থেকে দলীল পেশ করা হলো-

যেমন, বিশ্বখ্যিাত, সর্বজনমান্য ফতওয়ার কিতাব “আল ফিক্বাহ আ’লাল মাযাহিবিল আরবায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৪৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

الحنفية قالوا لا يكره تكرار الجماعة فى مساجد الطرق وهى ما ليس لها امام وجماعة معينون أما مساجد المحلة وهى ما لها امام وجماعة معينون فلا يكره تكرار الجماعة فيها أيضا ان كانت على غير الهيئة الاولى كما صليت الاولى فى المحراب والثانية صليت بعد ذلك.

অর্থ: “হানাফীগণ বলেন, রাস্তার মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কাযিম করা মাকরূহ হবেনা। আর রাস্তার মসজিদ একেই বলা হয় যার ইমাম এবং জামায়াত নির্ধারিত নেই। অনুরূপ মহল্লার মসজিদ। যে মহল্লার মসজিদে ইমাম ও জামায়াত নির্ধারিত আছে উক্ত মহল্লার মসজিদেও দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ হবে না। যদি দ্বিতীয় জামায়াত প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয়। আর দ্বিতীয় জামায়াত প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হওয়ার অর্থ হলো, যেমন প্রথম জামায়াতে মেহরাবে নামাযের ইমামতি করা আর দ্বিতীয় জামায়াতে মেহরাব থেকে দূরে সরে নামাযের ইমামতি করা।”

উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,

لايكره مطلقا تكرار الجماعة فى مسجد المحلة بلا أذان واقامة.

অর্থ: “(مطلقا) বা সাধারণভাবে মহল্লার মসজিদে (অর্থাৎ যেখানে ইমাম এবং জামায়াত নির্ধারিত আছে যাকে জামে মসজিদ বলা হয় সেখানেও) আযান ও ইক্বামত ব্যতীত দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ হবেনা।”

“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খ-ের ৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

المسجد اذا كان له امام معلوم وجماعة معلومة فى محلة فصلى اهله فيه بالجماعة لايباح تكرارها فيه باذان ثان أما اذا صلوا بغير اذان يباح اجماعا وكذا فى مسجد قارعة الطريق كذا فى شرح المجمع.

অর্থ: “যদি মহল্লার মসজিদে ইমাম ও জামায়াত নির্দিষ্ট থাকে এবং মহল্লার লোকেরা আযান দিয়ে জামায়াতের সাথে নামায আদায় করে তাহলে দ্বিতীয়বার আযান দিয়ে দ্বিতীয় জামায়াত করা জায়িয নেই। তবে যদি মহল্লার মসজিদে ইমাম ও জামায়াত নির্দিষ্ট থাকে এবং মহল্লার লোকেরা দ্বিতীয় আযান ব্যতীত দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করে, তাহলে সকলের ঐক্যমতে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা জায়িয। আর অনুরূপভাবে এই হুকুম রাস্তার মসজিদের জন্যও প্রযোজ্য। এটা ‘শরহে মাজমাআর’ মধ্যে উল্লেখ আছে।

“আইনুল হিদায়া” কিতাবের নিছফে আউয়াল খ-ের ৫৬৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اور بلا اذان واقامت بالاجما ع مکروہ نھیں ھے.

অর্থ: “মহল্লার মসজিদে আযান ও ইক্বামত ব্যতীত দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করলে, সকলের ঐক্যমতে মাকরূহ হবে না।”

“ওয়ালওয়ালিজীয়া” কিতাবে উল্লেখ আছে,

ولم يقم مقام الاول وبه نأخذ.

অর্থ: “দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ নয়। তবে প্রথম স্থানে দাঁড়ানো যাবে না। অর্থাৎ প্রথম জামায়াতের ইমাম ছাহেব যেখানে দাঁড়িয়ে ইমামতি করেছেন দ্বিতীয় জামায়াতের ইমাম ছাহেব সেখানে দাঁড়াবেন না। বরং সেখান থেকে দূরে সরে দ্বিতীয় জামায়াতের ইমামতি করবেন। আর وبه نأخذ এটাই আমরা গ্রহণ করেছি।” “বাহরুর রায়িক” কিতাবের ১ম খ-ের ৩৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

لا بأس به مطلقا اذا صلى فى غير مقام الامام.

অর্থ: (مطلقا) “সাধারণভাবে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করতে কোন অসবিধা নেই তবে শর্ত হলো, মুকাররার ইমামের নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্য স্থানে দ্বিতীয় জামায়াত কায়িম করবে।”

“শরহুল মুনীয়া” কিতাবে উল্লেখ আছে,

اذا لم تكن الجماعة على الهيئة الاولى لا تكره والا تكره وهو الصحيح وبالبول عن المحراب تختلف الهيئة.

অর্থ: “যদি প্রথম জামায়াতের ছূরতে দ্বিতীয় জামায়াত না হয় তাহলে দ্বিতীয় জামায়াত মাকরূহ হবে না। (প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হওয়ার অর্থ হলো দ্বিতীয় জামায়াতের জন্য আযান ও ইক্বামত হবে না, ইমামের নির্ধারিত স্থানে তথা মেহরাবে দাঁড়াতে পারবেনা, তাহলে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করলে মাকরূহ হবে না) অন্যথায় মাকরূহ হবে। আর وهو الصحيح এটাই ছহীহ ও বিশুদ্ধ মত। আর মেহরাব থেকে সরে দাঁড়ানোই হলো প্রথম ছূরতের বিপরীত।” অর্থাৎ মেহরাবে না দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় জামায়াত কায়িম করলে দ্বিতীয় জামায়াত করা মাকরূহ হবে না।

“মিনহাতুল খালিক্ব” কিতাবে উল্লেখ আছে,

يجوز تكرار الجماعة بلا اذان ولا اقامة ثانية اتفاقا.

অর্থ: “সকলের ঐক্যমতে দ্বিতীয়বার আযান ও ইক্বামত ব্যতীত দ্বিতীয় জামায়াত কায়িম করা জায়িয।”

“ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” ১ম খ-ের ১২৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اگرمحلہ کی مسجد میں امام اور جماعت کے لوگ معمولی مقرر ھیں اور ان لو گوں نے اسمیں جماعت  سے نمازپڑہ لی  تو اذان کے ساتہدوسری جماعت اسمیں جائز نھیں اور بغیر اذان کے پڑھیں  تو بالاجما ع مباح ھے اور یھی حکم ھےراستہ کی  مسجد کا.

অর্থ: “যদি মহল্লার মসজিদে ইমাম ও জামায়াতের লোক স্বাভাবিকভাবে নির্দিষ্ট থাকে এবং মহল্লার লোকেরা মহল্লার মসজিদে আযান দিয়ে নামায পড়ে, তাহলে পুনরায় আযান দিয়ে দ্বিতীয় জামায়াত পড়া জায়িয নেই। আর আযান ব্যতীত যদি দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করে, তাহলে সকলের ঐক্যমতে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা জায়িয। এই হুকুম রাস্তার মসজিদের জন্যও প্রযোজ্য।”

“ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ১ম খ-ের ৫৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اذا لم تكن الجماعة على الهيئة الأولى لاتكره والا تكره وهو الصحيح وبالعدول عن المحراب تختلف الهيئة كذا فى البزازية انتهى وفى التتار خانية عن الولوالجية وبه نأخذ.

অর্থ: “দ্বিতীয় জামায়াত যদি প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয়, (প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হওয়ার অর্থ হলো দ্বিতীয় জামায়াতের জন্য আযান ও ইক্বামত হবে না। ইমামের নির্ধারিত স্থানে তথা মেহরাবে দাঁড়াতে পারবেনা।) তাহলে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ হবেনা। অন্যথায় মাকরূহ হবে। আর وهو الصحيح. এটাই ছহীহ ও বিশুদ্ধ ফতওয়া। আর মেহরাব থেকে সরে দাঁড়ানোই হলো প্রথম ছূরতের বিপরীত।” অনুরূপ ‘বাযযাযীয়া’ কিতাবেও উল্লেখ আছে। আর ‘তাতারখানিয়া’ কিতাবে ‘ওয়ালওয়ালিজীয়া’ কিতাব থেকে উল্লেখ আছে যে, وبه نأخذ. এটাই আমরা গ্রহণ করেছি।

“গায়াতুল আওতার” কিতাবের ১ম খ-ের ২৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اور شرح منیہ میں امام ابو یوسف رح  سے منقول بی کہ جب دوسری جما عت پھلی جماعت کی صورت پر نھو تومکروہ  نھو گی ورنہ مکروہ ھوگی اور یھی قول  صحیح ھی اور تاتارخانیہ میں ولو الجیہ سے منقول ھے کہ اسی قول کو ھم لیتے ھیں اور بزازیہ میں ھی کہ محر اب سے ھٹکر کھڑے ھونے میں پھلی جماعت کی صورت بدل جاتی ھی.

অর্থ: “শরহে মুনীরা কিতাবে হযরত ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, যদি দ্বিতীয় জামায়াত প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয়, তাহলে দ্বিতীয় জামায়াত মাকরূহ হবে না। অন্যথায় মাকরূহ হবে। এটাই صحيح ছহীহ বা বিশুদ্ধ মত। আর তাতারখানীয়া কিতাবে ওয়ালওয়ালিজিয়াহ কিতাব থেকে বর্ণিত আছে যে, এ মতকেই আমরা গ্রহণ করেছি। আর রাযযাযিয়া কিতাবে বর্ণিত আছে যে, মেহরাব থেকে সরে দাঁড়ানোই হলো প্রথম জামায়াতের ছূরত পরিবর্তন হওয়া।

“ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৫২৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وفى الخلاصة وقال الشافعى رحمه الله لا بأس بتكرار الجماعة.

অর্থ: “খুলাছা কিতাবে উল্লেখ আছে, ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, দ্বিতীয়বার জামায়াত কাযিম করতে কোন অসুবিধা নেই।”

উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,

وروى عن محمد رحمه الله أنه لم ير بالتكرار بأسا.

অর্থ: “ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করার ব্যাপারে কোন অসুবিধা মনে করেননা।”

“জাওহারাতুন নাইয়ারাহ” কিতাবের ৭৬ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

وفى شرح المنية اذا لم تكن الجماعة على الهيئة الاولى لاتكره والا تكره وهو الصحيح وبالبول عن المحراب تختلف الهيئة كذا فى البزازية.

অর্থ: “শরহুল মুনিরার” উল্লেখ আছে, যদি প্রথম জামায়াতের ছূরতে দ্বিতীয় জামায়াত না হয় তাহলে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ হবে না। (প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হওয়ার অর্থ হলো, দ্বিতীয় জামায়াতের জন্য আযান ও ইক্বামত হবে না, ইমামের নির্ধারিত স্থানে দাঁড়াতে পারবেনা, তাহলে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ হবে না।) অন্যথায় মাকরূহ হবে। আর وهو الصحيح এটাই ছহীহ বা বিশুদ্ধ মত। আর মেহরাব থেকে সরে দাঁড়ানোই হলো প্রথম ছূরতের বিপরীত।” অনুরূপ “বাযযাযীয়ায়” উল্লেখ আছে।

“ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ১ম খ-ের ৩৯৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ان الصحيح انه لايكره تكرار الجماعة اذا لم تكر على الهيئة الاولى.

অর্থ: “নিশ্চয়ই (الصحيح) ছহীহ বা বিশুদ্ধ মত এই যে, দ্বিতীয় জামায়াত যদি প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয় তাহলে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ হবেনা। অর্থাৎ প্রথম জামায়াতের মত আযান ও ইক্বামত না দিয়ে এবং ইমামের নির্ধারিত স্থানে না দাঁড়িয়ে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ হবে না। এটাই ছহীহ মত।”

উক্ত কিতাবের ১ম খ-ের ৩৭৭ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে, لايكره تكرار الجماعة فى مسجد واحد.

অর্থ: “একই মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ হবে না।”

“আল ফিক্বহুল মুইয়াসসার আ’লা মাযহাবিল ইমামিল আ’যম আবী হানীফা আন নু’মান কিতাবের ১০৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

أما اذا تغيرت الهيئة الأولى بأن قام امام الجماعة الثانية فى غير المكان الذى قام فيه امام الجماعة الاولى فلاتكره.

অর্থ: “মহল্লার মসজিদে যেখানে ইমাম ও মুয়াযযিন নির্ধারিত আছে অতঃপর সেখানে যদি প্রথম জামায়াতের ছূরত পরিবর্তন করে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করে তাহলে মাকরূহ হবে না। অর্থাৎ প্রথম জামায়াতের ইমাম সাহেব যেখানে দাঁড়িয়েছিল, সেখানে দ্বিতীয় জামায়াতের ইমাম সাহেব না দাঁড়িয়ে যদি অন্য স্থানে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করে তাহলে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ হবে না।

“গায়াতুল আওতার” কিতাবের ১ম খ-ের ২৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

درر میں کھاکہ اگر اھل محلہ بدون اذان واقامت کے جماعت دو بارہ کریں ….. تو دوسری جماعت جائز ھوگی بالاتفاق.

অর্থ: “দুরারে বর্ণিত আছে, যদি মহল্লার অধিবাসী তাদের মহল্লার মসজিদে আযান ও ইক্বামত ব্যতীত দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করে … তাহলে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা সকলের ঐক্যমতে জায়িয।”

“আল লুবাব লিল মায়দানী” কিতাবে উল্লেখ আছে,

اذا لم تكن الجماعة على الهيئة الاولى الاتكره والا تكره وهو الصحيح.

অর্থ: “যদি প্রথম জামায়াতের ছূরতে দ্বিতীয় জামায়াত না হয় তাহলে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ হবে না। (প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হওয়ার অর্থ হলো, দ্বিতীয় জামায়াতের জন্য আযান ও ইক্বামত হবে না, ইমামের নির্ধারিত স্থানে দাঁড়াতে পারবেনা, তাহলে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করলে মাকরূহ হবে না) অন্যথায় মাকরূহ হবে। আর وهو الصحيح এটাই ছহীহ বা বিশুদ্ধ মত।”

“বাহরুর রায়িকের” ১ম খ-ের ৩৪৬ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

يجوز تكرار الجماعة بلا اذان ولا اقامة ثانية اتفاقا.

অর্থ: “সকল ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের ঐক্যমতে দ্বিতীয়বার আযান ও ইক্বামত ব্যতীত দ্বিতীয় জামায়াত কায়িম করা জায়িয।”

“হাশিয়ায়ে তাহতাবী আলা দুররিল মুখতার” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اما اذا كررت بغير اذان فلا كراهة مطلقا وعليه المسلمون.

অর্থ: “অত:পর মহল্লার মসজিদে যদি আযান ব্যতীত দ্বিতীবার জামায়াত কায়িম করে তাহলে সাধারণভাবে (مطلقا) দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ হবেনা এবং এরই উপর সমস্ত মুসলমানগণ তথা সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা ঐক্যমত পোষণ করেছেন।”

উল্লেখ্য, হাটহাজারীর অখ্যাত মাসিক পত্রিকার মৌলভীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে তিনটি কিতাবের দলীল দিয়েছে, ‘মাবসূত লিস সুরুখসী-১/১৩৫, ফাতওয়ায়ে রহীমিয়্যাহ-৩/২৬, ফাতওয়ায়ে আলমগিরিয়্যাহ-১/৮৩)

তাদের দলীলের জবাবে বলতে হয় যে, হাটহাজারীর মৌলভীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে প্রথমতঃ ‘মাবসূত’ কিতাবের বরাত দিয়ে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে।

কারণ ‘মাবসূত’ কিতাবে যেটা বলা হয়েছে সেটা হলো,

كرهت لهم ان يصلوا جماعة باذان واقامة.

অর্থাৎ- ‘আযান ও ইক্বামতসহ দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ।’

অথচ হাটহাজারীর মৌলভীরা কিতাবে উল্লিখিত আযান-ইক্বামতের কথা কারচুপি করে শুধুমাত্র বলেছে, “দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ। … অর্থাৎ কিতাবে উল্লেখ আছে, আযান-ইক্বামতসহ দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ।

আর তারা বলেছে, ‘দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ।’

সুতরাং প্রমাণিত হলো, কিতাবের সঙ্গে তাদের বক্তব্যের কোন মিল নেই বরং কিতাবের সঙ্গে তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণই বিপরীত।

অতএব, আবারো প্রমানিত হলো যে, হাটহাজারীর জাহিল মৌলভীরা আযান ও ইক্বামতের কথা কিতাবের ইবারত থেকে কারচুপি করে দলীল হিসেবে কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিচ্ছে।

উল্লেখ্য যে, হাটহাজারী এবং তাদের সমজাতীয় ইবারত কারচুপিকারী প্রতারকদের কবল থেকে সাধারণ মানুষকে হিফাযত করার উদ্দেশ্যে আমরা আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাতে বিস্তারিতভাবে সুস্পষ্ট ফতওয়া উল্লেখ করেছি যে, আযান-ইক্বামত ব্যতীত এবং মেহরাবে না দাঁড়িয়ে জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করলে মাকরূহ হবেনা। এবং উক্ত শর্তে সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের ইজমা বা ঐক্যমতে জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম জায়িয। মাকরূহ নয়, এটাই বিশুদ্ধ ফতওয়া।

এছাড়াও আমরা আরো অনেক শর্ত-শারায়েত উল্লেখ করেছি, যার বিস্তারিত আলোচনা পূর্বেই করা হয়েছে।

তাদের ২য় দলীল হলো “ফাতওয়াযে রহীমিয়্যাহ-৩/২৬।”

এর জবাবে বলতে হয় যে, রহীমিয়া কোন নির্ভরযোগ্য কিতাব নয়। বরং তাদেরই মতো ব্যক্তির দ্বারা লিখিত কিতাব। সেখান থেকে হাটহাজারীর মৌলভীরা শুধু বাংলায় অনুবাদ করে দিয়েছে মাত্র। সুতরাং তাদের লিখিত কিতাব এবং অনুবাদ দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

তাদের ৩য় দলীল হলো “ফাতওয়ায়ে আলমগিরিয়্যাহ-১/৮৩।”

অথচ “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের উক্ত পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, উক্ত মসজিদে দ্বিতীয় আযান ব্যতীত দ্বিতীবার জামায়াত কাযিম করা মাকরূহ নয়। এটা সকল ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের ইজমা হয়েছে। যেমন, “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খ-ের ৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

المسجد اذا كان له امام معلوم وجماعة معلومة فى محلة فصلى اهله فيه بالجماعة لايباح تكرارها فيه باذان ثان أما اذا صلوا بغير اذان يباح اجماعا وكذا فى مسجد قارعة الطريق كذا فى شرح المجمع.

অর্থ: “যদি মহল্লার মসজিদে ইমাম ও জামায়াত নির্দিষ্ট থাকে এবং মহল্লার লোকেরা আযান দিয়ে জামায়াতের সাথে নামায আদায় করে তাহলে দ্বিতীয়বার আযান দিয়ে দ্বিতীয় জামায়াত করা জায়িয নেই। তবে যদি মহল্লার মসজিদে ইমাম ও জামায়াত নির্দিষ্ট থাকে এবং মহল্লার লোকেরা দ্বিতীয় আযান ব্যতীত দ্বিতীয়বার কায়িম করে, তাহলে সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের ইজমা বা ঐক্যমতে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা জায়িয। আর অনুরূপভাবে এই হুকুম রাস্তার মসজিদের জন্যও প্রযোজ্য। এটা ‘শরহে মাজমাআর’ মধ্যে উল্লেখ আছে।

দ্বিতীয়ত: অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম পত্রিকার মৌলভীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে তিনটি কিতাবের নাম উল্লেক করেছে, [ফাতাওয়া শামী ২:২৮৮, রদ্দুল মুহতার ২:২৮৮, আল বাহরুর রায়িক ১:৬০৫]

অথচ “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ২য় খ-ের উক্ত পৃষ্ঠার পরের পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ তাহরীমী নয়। আর وبه نأخذ এটাই আমরা গ্রহণ করেছি।”

যেমন, “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ২য় খ-ের ২৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اذا لم تكن الجماعة على الهيئة الأولى لاتكره والا تكره وهو الصحيح وبالعدول عن المحراب تختلف الهيئة كذا فى البزازية انتهى وفى التاتر خانية عن الولوالجية وبه نأخذ.

অর্থ: “দ্বিতীয় জামায়াত যদি প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয়। (প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হওয়ার অর্থ হলো দ্বিতীয় জামায়াতের জন্য আযান ও ইক্বামত হবে না। ইমামের নির্ধারিত স্থানে তথা মেহরাবে দাঁড়াতে পারবেনা।) তাহলে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ হবে না। অন্যথায় মাকরূহ হবে। আর وهو الصحيح. এটাই ছহীহ ও বিশুদ্ধ ফতওয়া। আর মেহরাব থেকে সরে দাঁড়ানোই হলো প্রথম ছূরতের বিপরীত।” অনুরূপ বাযযাযীয়া কিতাবেও উল্লেখ আছে। আর তাতারখানিয়া কিতাবে ওয়ালওয়ালিজীয়া কিতাব থেকে উল্লেখ আছে যে, وبه نأخذ এটাই আমরা গ্রহণ করেছি।

তারা দ্বিতীয় দলীল দিয়েছে, [রদ্দুল মুহতার ২:২৮৮]

অর্থচ রদ্দুল মুহতার কিতাবের ২য় খ-ের ২৮৮ পৃষ্ঠায় তাদের বক্তব্যের ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে যে, আযান ইক্বামত ব্যতীত দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করলে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে না। বরং সকলের ঐক্যমতে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা জায়িয।

যেমন, “রদ্দুল মুহতার” কিতাবের ২য় খ-ের ২৮৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ولو كرر أهله بدونهما …… جاز اجماعا.

অর্থ: “যদি মহল্লার মসজিদের অধিবাসীগণ আযান ইক্বামত ব্যতীত দ্বিতীয়বার জামায়াত করে তাহলে সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের ইজমা বা ঐক্যমতে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা জায়িয।

তারা ৩য় দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছে, [আল বাহরুর রায়িক ১:৬০৫]

অথচ আল বাহরুর রায়িক কিতাবেও উল্লেখ আছে, সাধারণভাবে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করতে কোন অসুবিধা নেই।

যেমন, “বাহরুর রায়িক” কিতাবের ১ম খ-ের ৩৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

لا بأس به مطلقا اذا صلى فى غير مقام الامام.

অর্থ: (مطلقا) “সাধারণভাবে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করতে কোন অসুবিধা নেই তবে শর্ত হলো মুকাররার ইমামের নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্য স্থানে দ্বিতীয় জামায়াত কায়িম করবে।”

তাছাড়া “ফতওয়ায়ে বাযযাযীয়া” কিতাবের উল্লেখ আছে,

تكرار الجماعة …… اذا لم يكن على الهيئة الاولى لايكره والا فيكره وهو الصحيح وبالعدول عن المحراب تختلف الهيئة.

অর্থ: “দ্বিতীয় জামায়াত …… যদি প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয় তাহলে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ হবেনা। (প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হওয়ার অর্থ হলো, দ্বিতীয় জামায়াতের জন্য আযান ও ইক্বামত হবে না, ইমামের নির্ধারিত স্থানে তথা মেহরাবে দাঁড়াতে পারবেনা, তাহলে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ হবে না অন্যথায় মাকরূহ হবে। আর وهو الصحيح. এটাই বিশুদ্ধ ফতওয়া। আর মেহরাব থেকে সরে দাঁড়ানোই হলো প্রথম ছূরতের বিপরীত। অর্থাৎ দ্বিতীয় জামায়াতে মেহরাবে না দাঁড়ানোই হলো প্রথম ছূরতের বিপরীত। আর প্রথম ছূরতের বিপরীত হলে অর্থাৎ মেহরাবে না দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় জামায়াত কররে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ হবেনা।”

“তাতারখানীয়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৫২৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وفى الولوالجية : ولم يقام مقام الاول وبه نأخد.

অর্থ: “ওয়ালওয়ালিজীয়া কিতাবে উল্লেখ আছে, দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ নয় তবে প্রথম স্থানে দাঁড়ানো যাবেনা। অর্থাৎ ইমাম ছাহেব যে স্থানে দাঁড়িয়ে প্রথম জামায়াত আদায় করেছেন সে স্থানে দ্বিতীয় জামায়াতের ইমাম ছাহেব দাঁড়াবেন না। বরং সেখান থেকে দূরে সরে দ্বিতীয় জামায়াতের ইমামতি করবেন তাহলে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম কররে মাকরূহ হবে না। আর وبه نأخذ এটাই আমরা গ্রহণ করেছি।”

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রমানিত হলো যে, বিশুদ্ধ ফতওয়া মুতাবিক জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ নয়। এটাই ترجيح বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত মাসয়ালা। আর প্রাধান্যপ্রাপ্ত মাসয়ালার বিপরীত ফতওয়া দেয়া সম্পূর্ণই নাজায়িয ও হারাম।

এ প্রসঙ্গে “শরহে উকুলে রসমুল মুফতী” কিতাবের ৩য় পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে,

ابن حجر المكى قال لايحل لهما الحكم والافتاء بغير الراجح لانه اتباع للهواء وهو حرام اجماعا. (شرح عقود رسم المفتى صفه3)

অর্থ: “মুহাক্কিক ইবনে হাজার মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ইখতিলাফযুক্ত মাসয়ালায় প্রাধান্যপ্রাপ্ত মাসয়ালার বিপরীত ফতওযা দেয়া বা আমল করা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। কেননা এটা নফসের অনুসরণ।” এটা ফতওয়ায় কোবরাতেও উল্লেখ আছে।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জাাময়াত কায়িম করা মাকরূহ নয়। এটা যে, ترجيح বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত বা গ্রহণযোগ্য তার প্রমাণ কি?

এটার উত্তর হলো, ইখতিয়াফযুক্ত মাসয়ালায় যেটাকে

وبه نأخذ – وهو الصحيح – وبه يفتى – وهو المختار وعليه الفتاوى.

ইত্যাদি দ্বারা ফতওয়া দেয়া হবে, ওটাই প্রাধান্যপ্রাপ্ত বা গ্রহণযোগ্য।

এ প্রসঙ্গে “শরহে উকুদে রসমুল মুফতী” কিতাবের ৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয় যে,

واما العلامات للافتاء فقوله وعليه الفتاوى وبه يفتى وبه نأخذ وعليه الاعتماد وعليه عمل اليوم وهو الصحيح وهو الاصح ……. لفظ الفتاوى اكد من لفظ الصحيح والاصح والاشبه وغيره. (شرح عقود رسم المفتى صفه 32)

অর্থ: “প্রাধান্যপ্রাপ্ত বা গ্রহণযোগ্য ফতওয়ার নিদর্শনগুলো হলো- এটার উপরই ফতওয়া, এটা দ্বারাই ফতওয়া সাব্যস্ত হয়েছে, এটাই আমরা গ্রহণ করি, এটার উপরই নির্ভর, এটার উপরই যামানার আমল বা উম্মতের আমল, এটাই ছহীহ এবং অধিকতর ছহীহ। …. তন্মধ্যে ফতওয়া (فتوى) শব্দটি ছহীহ (সঠিক), আছাহহু (অধিক সঠিক), আশবাহু (অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ) ইত্যাদি শব্দসমূহ হতে বেশি তাকীদপূর্ণ বা গ্রহণযোগ্য।”

সুতরাং জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কাযিম করা মাকরূহ নয়। এটাকে যেহেতু وبه نأخذ – وهو الصحيح. ইত্যাদি শব্দ দ্বারা প্রাধান্য দেয়া হয়েছে সেহেতু এটাই গ্রহণযোগ্য ও অনুসরণীয়। এর বিপরীত ফতওয়া দেয়া নাজায়িয ও হারাম।

অতএব, প্রমানিত হলো, হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকা, মাসিক মদীনা এবং অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গামের সকল মৌলভীরা জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কাযিম করার বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়ে হারাম ও নাজায়িয কাজ করেছে।

[বি: দ্র:- জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ তাহরীমী নয়। বরং সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের ঐক্যমতে জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা জায়িয এ সম্পর্কে আরো জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৩২, ৫০, ৫৮, ৫৯, ৬১, ৭৭, ১০১ ও ১১২তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে মাসিক মদীনা, অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এবং হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা সম্পর্কিত ভুল বক্তব্য খ-ন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে।

এবার চতুর্থবারের মত হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার, পঞ্চম বারের মত মাসিক মদীনার এবং চতুর্থবারের মত অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গামের জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা সম্পর্কিত ভুল বক্তব্য খ-ন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হলো।]

{দলীলসমূহ: (১) মাওসুআতু ফিক্বহে আব্দিল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, (২) আল ফিক্বহুল মুইয়াসসার আ’লা মাযহাবিল ইমামিল আ’যম, আবী হানীফা আন নু’মান, (৩) শরহে মাজমা, (৪) ওয়াল ওয়ালিজীয়া, (৫) মুনিয়া, (৬) খুলাছা, (৭) খাজানা, (৮) কাজীখান, (৯) শরহে মুনীরা, (১০) আল ফিক্বহ আলাল মাযাহিবিল আরবায়া, (১১) মূলতক্বাত, (১২) বাহরুর রায়িক (১৩) ফতওয়ায়ে আলমগীরী (১৪) মিনহাতুল খালিক্ব (১৫) উবাব, (১৬) দুরারুল বিহার (১৭) শরহে দুরারিল বিহার (১৮) আল লুবাব লিল মায়াদানী (১৯) হাশিয়ায়ে তাহতাবী (২০) আইনুল হিদায়া (২১) বাযযাযীয়া (২২) তাতারখানিয়া (২৩) গায়াতুল আওতার (২৪) ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া (২৫) দুররুল মুখতার (২৬) বিনায়া শরহে হিদায়া মাশহুর আইনী শরহে হিদায়া (২৭) রদ্দুল মুহতার (২৮) হামিশুল খাযায়িন (২৯) জাওয়ারাতুন নাইয়ারাহ (৩০) দুরারুল আহকাম (৩১) শামী (৩২) হাফতে মাসায়িল ইত্যাদি।}

মাওলানা মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান

মাওলানা মুহম্মদ মাছূম বিল্লাহ

মুহম্মদ আসাদুর রহমান, মুহম্মদ মাইজুর রহমান

ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

সুওয়াল : আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম এই তিনটি সংখ্যায় ৩৫৩টি অকাট্য দলীলের ভিত্তিতে প্রদত্ত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ, মুহাক্কিক-মুদাক্কিক ও হক্কানী উলামায়ে কিরামগণ উনাদের ফতওয়া মুতাবিক জানতে পারলাম যে, “প্রাণীর ছবি তৈরি করা বা করানো, ঘরে রাখা সর্বাবস্থায় হারাম।”

অথচ রেযাখানী মুখপত্র নভেম্বর/২০০১ ঈসায়ী সংখ্যায় ছবি সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ফতওয়া প্রকাশ করেছে। যা কিনা মানুষের ঈমান-আমল বিনষ্ট হওয়ার কারণ। রেযাখানীদের ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যের যে বিষয়গুলো আপত্তিকর সেগুলো নি¤েœ উল্লেখ করা হলো-

(ক) রেযাখানীরা ছবি তোলাকে বৈধ বলেছে; কিন্তু দলীল হিসেবে পেশ করেছে ঘরে ছবি রাখা সম্পর্কিত হাদীছসমূহকে।

(খ) .. কতেক উলামা যেসব ছবির শরীর ও ছায়া নেই সেসব ছবিকে বৈধ বলেছেন।

(গ) পূর্ববর্তীদের কেউ কেউ এবং হাম্বলী, শাফেয়ী, মালেকী এমনকি হানাফীদেরও কেউ কেউ নাকি (গায়রে মুজাসসাম) শরীরবিহীন ছবিকে বৈধ বলেছেন।

(ঘ) হুযূর আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুরুর দিকে ছবি তৈরি করা ও সংরক্ষণ করাকে নিষেধ করেছিলেন; কিন্তু পরবর্তীতে অনুমিত দেন। (নাউযুবিল্লাহ)

(ঙ) সামাজিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে বিশেষ প্রয়োজনে ছবি তোলা বৈধ যা যুগের চাহিদাও।

(চ) ছবি হারাম হওয়ার মূলে হলো গায়রুল্লাহর সম্মান ও ইবাদত।

(ছ) প্রত্যেক যুগের ফক্বীহ, মুফতী, কাজী ও আলিমগণ যুগের চাহিদা অনুযায়ী ফতওয়া দিয়েছেন এবং দেয়া উচিত।

(জ) প্রয়োজনীয় রেকর্ডের জন্য ফাইলবন্দি ছবিসমূহ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের নিকট জ্ঞান ও ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য জানার নিমিত্তে সরকারি-বেসরকারী যাদুঘর বা বিশেষ প্রতিষ্ঠানসমূহে পূর্বের নানা মনীষীগণের ছবি সংরক্ষণ/ধারণ করে রাখা বিশেষ প্রয়োজনে মাকরূহ হবে না। এছাড়াও আরো বহু আপত্তিকর বিষয় তাদের উক্ত ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যে স্থান পেয়েছে।

কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে তাদের উল্লিখিত আপত্তিকর বক্তব্যগুলোর শরয়ী ফায়সালা কামনা করি।

জাওয়াব : হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম)

উল্লিখিত হাদীছ শরীফ উনার পূর্ণ মিছদাক বা নমুনা হচ্ছে রেযাখানীরা। তারা ছবির ব্যাপারে এমন সব বক্তব্য প্রদান করেছে যা কিতাবে দেখা তো দূরের কথা কেউ কোনদিন শুনেওনি। মূলত রেযাখানীরা নিজেদেরকৃত বদ আমলকে ধামা-চাপা দেয়ার উদ্দেশ্যেই মনগড়াভাবে ছবিকে জায়িয করার অপচেষ্টা করেছে।

(ধারাবাহিক)

প্রাণীর ছবি সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত রেযাখানীদের আপত্তিকর ও প্রতারণামূলক বক্তব্য সমূহের খ-ন মূলক জবাব- (খ)

রেযাখানীরা তাদের আমদানীকৃত পীরদের ও নিজেদের ছবি তোলার ন্যায় হারাম কাজটিকে হালাল করার উদ্দেশ্যে মাত্র দু’পৃষ্ঠার একটি বিভ্রান্তিকর রচনায় কত যে মিথ্যাচারিতা, প্রতারণা, জালিয়াতী ও ঠগবাজীর আশ্রয় নিয়েছে তার বহু প্রমাণ আপনারা ইতোমধ্যেই পেয়ে গেছেন।

রেযাখানীদের জালিয়াতী, প্রতারণা ও ইবারত কারচুপির আরো একটি উজ্বল দৃষ্টান্ত

তাদের ঠগবাজী, জালিয়াতী প্রতারণা আর ইবারত কারচুপির আরেকটি উজ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে নি¤েœাক্ত ইবারতটি, যা তারা চতুর্থ দলীল হিসেবে বুখারী শরীফ উনার ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘ফাতহুল বারী” থেকে উল্লেখ করেছে। নি¤েœ তাদের উল্লিখিত ইবারত খানা হুবহু অর্থসহ তুলে ধরা হলো-

ان مذهب الحنابلة جواز الصورة فى الثواب ولو كان معلقا على ما فى خبر ابى طلحة لكن ان الستربه الجدار منع عندهم فقال النووى وذهب بعض السلف الى ان المنوع ما كان له ظل له وما ما لاظل فلا بأس باتخاذه مطلقا.

অর্থ: হাম্বলী মাযহাব মতে সাধারণভাবে কাপড়ের উপর অঙ্কিত ছবি বৈধ। যা আবু তালহার হাদীছ শরীফ দ্বারা বুঝা যায়। অবশ্যই যদি ঐ ছবি দিয়ে দেয়ালে পর্দা দেয়া হয় তবে তা উনারা নিষেধ করেন। আল্লামা নববী বলেন- পূর্ববর্তী কতেকের মাযহাব এ ছিল যে, যেসব ছবির ছায়া নেই তা বানানো সাধারণভাবে বৈধ। আর যেসব ছবির ছায়া আছে তা নিষিদ্ধ।”

ছায়াযুক্ত বা ছায়াহীন উভয় প্রকার

প্রাণীর ছবিই হারাম

গত সংখ্যার আলোচনার দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্টভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, রেযাখানীরা ঠগবাজ, জালিয়াত ও প্রতারক। কেননা, তারা তাদের আমদানীকৃত পীরদেরকে ছবি তোলার ন্যায় হারাম কাজের কলঙ্ক থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে কিতাবে বর্ণিত একটি ‘বাতিল’ মতকে কাট-ছাট করে অর্থাৎ ইবারতের কিছু অংশ ‘কারচুপি’ করে প্রাণীর ছবিকে জায়িয করার অপচেষ্টা করেছে।

তারা উক্ত ইবারতের দ্বারা এটাই বুঝাতে চেয়েছিলো যে, যে ছবির ছায়া নেই অর্থাৎ যে ছবি ক্যামেরা দিয়ে তোলা হয় বা কাগজ, কাপড় ইত্যাদির মধ্যে অঙ্কিত থাকে সেসব ছবি জায়িয। আর যে ছবির ছায়া রয়েছে অর্থাৎ মূর্তি তা জায়িয নেই।

মূলত: রেযাখানীদের এ বক্তব্যও মনগড়া, অশুদ্ধ, বাতিল ও দলীলবিহীন। তার কিছু প্রমাণ গত সংখ্যায় দেয়া হয়েছিলো। নি¤েœ তার আরো কিছু প্রমাণ উল্লেখ করা হলো-

‘বুখারী শরীফ উনার’ বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ “উমদাতুল ক্বারী”- কিতাবের ২২তম জি: ৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

صورة الحيوان حرام اشد التحريم وهو من الكبائر …. ولما ماليس فيه صورة حيوان كالشجر ونحوه فليس حرام وسواء كان فى هذا كله ماله ظل ومالا ظل له.

অর্থ: “প্রাণীর ছবি তৈরি করা বা করানো শক্ত হারাম ও কবীরা গুনাহ। …. তবে প্রাণহীন বস্তুর ছবি যেমন, গাছপালা ছবির একই হুকুম। অর্থাৎ উভয়টাই হারাম।”

“উমদাতুল ক্বারী” কিতাবের ২২তম জি: ৭৩ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

لافرق فى تحريم التصوير بين ان تكرن الصورة لها ظل او لا.

অর্থ: “প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার ব্যাপারে ‘ছায়াযুক্ত বা ছায়াহীন’ হওয়ার মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই। অর্থাৎ উভয়টার একই হুকুম।”

ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত “মুসলিম শরীফ উনার” ব্যাখ্যাগ্রন্থ “শরহুল মুসলিম” কিতাবের ৭ম খ-ের ৮১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন,

واذ فرق فى هذا كله بين ماله ظل ومالا ظل له …. وقال بعض السلف انما ينهى عما كان له ظل ولا بأس بالصورة التى ليس لها ظل وهذا مذهب باطل فان الستر الذى انكر النبى صلى الله عليه وسلم الصورة فيه لايشك احد انه مذموم وليس لصورته ظل.

অর্থ: “প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার ব্যাপারে “ছায়াযুক্ত বা ছায়াহীন” হওয়ার মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই। … সলফগণের কেউ কেউ বলেন, ছায়াযুক্ত ছবি নিষেধ। আর ছায়াহীন ছবি নিষেধ নয়। তবে এমতটি সম্পূর্ণই বাতিল। কেননা, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছবিযুক্ত যে পর্দাটি অপছন্দ করেছেন। এতে কারো সন্দেহ নেই যে, এটা গুণাহর কারণ। অথচ উক্ত ছবিটিও ছায়াযুক্ত ছিলোনা।” অনুরূপ ‘শরহুল উবাই, ফতহুল মুলহিম, মিরকাত ও শরহুত ত্বীবীতেও উল্লেখ আছে।”

উপরোক্ত ইবারতের দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, ‘ছায়াহীন’ ছবি জায়িয। এটা আল্লামা ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মত নয়। বরং এটা বাতিলপন্থীদের মত, মূলত: ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মত হলো- ‘ছায়াযুক্ত বা ছায়াহীন’ উভয় প্রকার ছবিই হারাম। এটাই ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য মত। (চলবে)

মুহম্মদ শহীদুল ইসলাম (শামীম)

রাঙ্গাদিয়া, চট্টগ্রাম

সুওয়াল : হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জানুয়ারি/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় এক জিজ্ঞাসার সমাধানে বলা হয়েছে যে, “মীলাদের দ্বারা মুসলমানের আমলের পরিবেশ তৈরি হয় এটা ভিত্তিহীন কথা। ইসলামে মীলাদের কোন অস্তিত্ব নেই। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ছাহাবা, তাবিয়ীন, তাবে তাবিয়ীন আইম্মায়ে মুজতাহিদীন কারো যুগেই এর অস্তিত্ব ছিল না বরং পরবর্তীতে বিদয়াত রূপে ৬০৪ হিজরীতে এই মীলাদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। মীলাদের মধ্যে মিষ্টান্ন ভোজের শোরগোল হয়। প্রচলিত মীলাদ যে বিদয়াত তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। যার পরিণাম ভ্রষ্টতা সবশেষে জাহান্নাম।”

এছাড়া একইভাবে মাসিক মদীনা ফেব্রুয়ারি/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় নি¤œলিখিত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-

প্রশ্ন মীলাদ শরীফ পড়া যে বেদাত তার কিছু প্রমাণ জানতে চাই।

উত্তর : বেদাত বলা হয় ঐ সমস্ত আমলকে, যা এবাদত মনে করে সওয়াব পাওয়ার আশায় করা হয় কিন্তু কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ সমর্থন পাওয়া না। প্রচলিত মৌলুদ মানুষ এবাদত মনে করে সওয়াব পাওয়ার আশায় পড়ে থাকে। অথচ এই আমলের কোন উল্লেখ কুরআন শরীফ হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বা পরবর্তী অনুসরণীয় যুগে, কোন অনুসরণযোগ্য ব্যক্তির আমলের মধ্যে পাওয়া যায় না। এ কারণেই প্রচলিত মীলাদ বেদাতের পর্যায়ভুক্ত।

এখন আমার সুওয়াল হচ্ছে, মীলাদ শরীফ সম্পর্কে উপরোক্ত পত্রিকাদ্বয়ে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধ হয়েছে কিনা? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব : মীলাদ শরীফ সম্পর্কে হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ও মাসিক মদীনা পত্রিকার জিজ্ঞাসার সমাধানে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধতো হয়ইনি বরং সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভুল, গোমরাহীমূলক ও কুফরী হয়েছে।

প্রত্যেক মুসলমানের এ ধরণের আক্বীদা ও বক্তব্য থেকে ইস্তিগফার-তওবা করতে হবে। অন্যথায় কাট্টা কাফির হয়ে চির জাহান্নামী হতে হবে।

তাদের বক্তব্যে তারা বলেছে, (১) আমলের পরিবেশ তৈরি হয়না। শুধু মিষ্টান্ন ভোজই হয়। (২) ইসলামে মীলাদের কোন অস্তিত্ব নেই এবং খাইরুল কুরুনেও ছিলোনা। (৩) পরবর্তীতে বিদয়াতরূপে প্রকাশ পায়। কাজেই এটা বিদয়াত। (৪) বিদয়াতীরা ভ্রষ্ট ও জাহান্নামী।

(ধারাবাহিক)

তাদের উত্থাপিত বক্তব্যের দ্বিতীয় বক্তব্যে তারা বলেছে, “ইসলামে মীলাদের কোন অস্তিত্ব নেই এবং খাইরুল কুরুনেও ছিলনা।”

তাদের এ বক্তব্যও ডাহা মিথ্যা ও কুফরী হয়েছে। কারণ ইসলামে মীলাদ শরীফ উনার অস্তিত্ব তো অবশ্যই রয়েছে অতএব তা খাইরুল কুরুনে না থাকার প্রশ্নই আসেনা।

তাদের দ্বিতীয় বক্তব্যের প্রথমাংশে তারা বলেছে, “ইসলামে মীলাদের কোন অস্তিত্ব নেই।”

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, ইসলাম ও মীলাদ শরীফ সম্পর্কে এদের সঠিক বা ছহীহ জ্ঞানই নেই তাই; তারা এ বক্তব্য দিয়েছে।

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عن عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه ….. اخبرنى عن الاسلام قال الاسلام ان تشهد ان لا اله الا الله وان محمدا رسول الله وتقيم الصلوة وتؤتى الزكوة وتصوم رمضان وتحج البيت ان استطعت اليه سبيلا.

অর্থ: “হাদীসে জীবরাঈলে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে। তিনি বলেন, হযরত জীবরাঈল আলাইহিস সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে জিজ্ঞাসা করলেন, আমাকে ইসলাম সম্পর্কে সংবাদ দিন। তখন আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ইসলাম হলো- (১) সাক্ষী দেয়া, মহান আল্লাহ পাক তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ বা মা’বুদ নেই এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক রসূল। (২) নামায কায়িম করা, (৩) যাকাত আদায় করা, (৪) রমাদ্বান শরীফ উনার রোযা রাখা, (৫) পাথেয় ও পথের নিরাপত্তা থাকলে হজ্জ করা।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

عن ابن عمر رضى الله تعالى عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بنى الاسلام على خمس شهادة ان لا اله الا الله وان محمدا عبده ورسوله واقام الصلوة وايتاء الزكوة والحج وصوم رمضان.

অর্থ: “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। (১) সাক্ষী দেয়া যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ বা মা’বুদ নেই এবং নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দা ও রসূল। (২) নামায কায়িম করা, (৩) যাকাত আদায় করা, (৪) হজ্জ করা ও (৫) রমাদ্বান শরীফ উনার রোযা রাখা।” (মুত্তাফাকুন আলাইহি) উপরোক্ত হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, ইসলাম হচ্ছে কালিমা, নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত ইত্যাদির সমষ্টি। আর কালিমা শরীফ দু’ভাগে বিভক্ত। প্রথমভাগ : মহান আল্লাহ পাক উনার তাওহীদ বা একত্বতা সম্পর্কে।

দ্বিতীয়ভাগ : আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রিসালত সম্পর্কে। আর মীলাদ শরীফ উনার আলোচ্য বিষয়ই হচ্ছে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। মীলাদ শরীফ উনার তিনটি শব্দ রয়েছে। যেমন, ميلاد (মীলাদ) অর্থাৎ জন্মের সময়, مولد (মাওলিদ) অর্থাৎ জন্মের স্থান এবং مولود (মাওলূদ) অর্থাৎ সদ্য প্রসূত সন্তান।

মীলাদ মাহফিল বা মীলাদ শরীফ উনার ব্যবহারিক ও পারিভাষিক অর্থই হচ্ছে আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত বর্ণনা করা। আর উনার ছানা-ছীফতের মূল উৎসই হচ্ছে কুরআন শরীফ।

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

كان خلقه القران.

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চরিত্র মুবারকই হচ্ছে কুরআন শরীফ।” (তাফসীরে মাযহারী)

মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম পাকে ইরশাদ মুবারক করেন,

قد جاء كم من الله نور وكتب مبين.

অর্থ: “অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট নূর ও প্রকাশ্য কিতাব এসেছে।” (পবিত্র সূরা মাযিদা/১৫)

هو الذى ارسل رسوله بالهدى ودين الحق ليظهره على الدين كله وكفى بالله شهيدا محمد رسول الله.

অর্থ: “তিনিই (মহান আল্লাহ পাক) উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হিদায়েত ও সত্য পবিত্র দ্বীনসহ (পূর্বের) সমস্ত পবিত্র দ্বীন উনার উপর প্রাধান্য দিয়ে পাঠিয়েছেন। এক্ষেত্রে সাক্ষী হিসেবে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল।” (পবিত্র সূরা ফাতহা/২৮,২৯)

ولكن رسول الله وخاتم النبين.

অর্থ: “বরং তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল এবং শেষ নবী।” (পবিত্র সূরা আহযাব/৪০)

ورفعنالك ذكرك.

অর্থ: “আমি (মহান আল্লাহ পাক) আপনার আলোচনাকে বুলন্দ করেছি।” (পবিত্র সূরা আলাম নাশরাহ/৪)

واذ اخذ الله ميثاق النبين لما اتيتكم من كتب وحكمة ثم جاءكم رسول مصدق لما معكم لتؤمنن به ولتنصرنه قال ءاقررتم واخذتم على ذلكم اصرى قالوا اقررنا قال فاشهدوا وانا معكم من الشهدين.

অর্থ: “আর যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি নবীগণ উনাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন, আমি তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত দান করবো, অত:পর যখন সেই রসূল আগমন করে তোমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তা সত্য প্রতিপাদন করবেন। (তোমরা উনাকে পেলে) অবশ্যই উনার প্রতি ঈমান আনবে এবং উনাকে সাহায্য করবে। তিনি (মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে) বললেন, তোমরা কি (নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রিসালতকে) স্বীকার করে নিলে? এবং তোমাদের প্রতি আমার এ অঙ্গীকার গ্রহণ করলে? উনারা (নবীগণ) বললেন, আমরা স্বীকার করে নিলাম। তিনি (মহান আল্লাহ পাক) বললেন, তোমরা সাক্ষী থাক এবং আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান/৮১)

এরূপ অনেক অনেক পবিত্র আয়াত শরীফ-এ আলাদাভাবে আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছীফত, ফযীলত-মর্তবা প্রকাশ্যভাবে বর্ণনা তো করা হয়েছেই তবে মুফাসসিরীনয়ে কিরামগণ উনারা বলেছেন, মূলত: কুরআন শরীফ উনার প্রতিটি পারা, পবিত্র সূরা, রুকু, আয়াত শরীফ, পবিত্র কালেমা, হরফ এমনকি নুকতা ও হরকতে আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছীফত করা হয়েছে।” সুবহানাল্লাহ!

আর উনার ছানা-ছিফতের দ্বিতীয় উৎস হলো হাদীছ শরীফ। যা স্বয়ং আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই বর্ণনা করেছেন।

হাদীছ শরীফ-এ আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছীফত সম্পর্কে যে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে তা তো বলার অপেক্ষাই রাখেনা। যেমন, এ প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে,

عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال جلس ناس من اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم فخرج حتى اذا دنا منهم سمعهم يتذاكرون قال بعضهم ان الله اتخذ ابراهيم خليلا وقال اخر موسى كلمه تكليما وقال اخر فعيسى كلمة الله وروحه وقال اخر ادم اصطفاه الله فخرج عليهم رسول الله صلى الله عليه وسلم وقال قد سمعت كلامكم وعجبكم ان ابرهيم خليل الله وهو كذلك وموسى نجى الله وهو كذلك وعيسى روحه وكلمته وهو كذلك وادم اصطفاه الله وهو كذلك الا وانا حبيب الله ولا فخر وانا حامل لواء الحمد يوم القيمة تحته ادم فمن دونه ولا فخر وانا اول شافع واول مشفع يوم القيمة ولا فخر وانا اول من يحرك حلق الجنة فيفتح الله لى فيدخلنيها ومعى فقراء المؤمنين ولا فخر وانا اكرم الاولين والاخرين على الله ولا فخر.

অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, একদিন রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় ছাহাবী এক স্থানে বসে কথাবার্তা বলছিলেন। এই সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই দিকে যাচ্ছিলেন এবং উনাদের নিকটে পৌঁছে উনাদের কথাবার্তা ও আলোচনাগুলো শুনলেন। উনাদের একজন বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনাকে খলীল বানিয়েছেন। আরেকজন বললেন, হযরত মূসা আলাইহিস সালাম কালীমুল্লাহ ছিলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি যাঁর সাথে সরাসরি কথা বলেছেন। অপর একজন বললেন, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম ছিলেন কালেমাতুল্লাহ ও রূহুল্লাহ এবং আরেকজন বললেন, হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ছফীউল্লাহ বানিয়েছেন।

এই সময় রসূলুল্লাহ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সম্মুখে উপস্থিত হয়ে বললেন, আমি তোমাদের কথাবার্তা এবং তোমরা যে বিস্ময় প্রকাশ করেছ তা শুনেছি। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যে খলীলুল্লাহ ছিলেন এটা ঠিক। হযরত মূসা আলাইহিস সালাম তিনি যে সরাসরি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কথাবার্তা বলেছেন এটাও সত্য কথা। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি যে রূহুল্লাহ ও কালেমাতুল্লাহ ছিলেন এটাও প্রকৃত কথা এবং আদম আলাইহিস সালাম তিনি যে মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীত, মর্যাদাসম্পন্ন ছিলেন এটাও সম্পূর্ণ বাস্তব। তবে জেনে রাখ, আমি হলাম ‘মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব’, এতে গর্ব নেই এবং ক্বিয়ামতের দিন আমিই হামদের ঝান্ডা উত্তোলন ও বহনকারী হব। হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনিও অন্যান্য নবীগণ উনারা উক্ত ঝান্ডার নীচেই থাকবেন, এতে গর্ব নেই। ক্বিয়ামতের দিন আমিই হব সর্বপ্রথম শাফায়াতকারী এবং সর্বপ্রথম আমার সুপারিশই কবুল করা হবে, এতে গর্ব নেই। আমিই সর্বপ্রথম জান্নাতের দরজার কড়া নাড়া দিব এবং মহান আল্লাহ তায়ালা আমার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দিবেন এবং আমাকে প্রবেশ করাবেন। আর আমার সঙ্গে থাকবে গরীব ঈমানদারগণ, এতে গর্ব নেই। পরিশেষে কথা হল, আর আমিই পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের চেয়ে সম্মানিত, এতেও গর্ব নেই।” (তিরমিযী শরীফ, দারিমী শরীফ)

হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন যখন মানুষদেরকে কবর হতে উত্থিত করা হবে, তখন আমিই সর্ব প্রথম কবর হতে বের হয়ে আসব। আর যখন লোকেরা দলবদ্ধ হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে উপস্থিত হওয়ার জন্য রওয়ানা হবে, তখন আমিই হব তাদের অগ্রগামী ও প্রতিনিধি। আর আমিই হব তাদের মুখপাত্র, যখন তারা নীরব থাকবে। আর যখন তারা আটকা পড়বে, তখন আমি হব তাদের সুপারিশকারী। আর যখন তারা হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়বে, তখন আমি তাদেরকে সুসংবাদ প্রদান করব। মর্যাদা এবং কল্যাণের চাবিসমূহ সেই দিন আমার হাতে থাকবে। মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসার ঝান্ডা সেই দিন আমার হাতেই থাকবে। আমার পরওয়ারদিগারের কাছে আদম সন্তানদের মধ্যে আমিই সর্বাপেক্ষা অধিক মর্যাদাবান ও সম্মানিত ব্যক্তি হবো। সেই দিন হাজার হাজার খাদিম আমার চারপাশে ঘোরাফেরা করবে। যেন তারা সুরক্ষিত ডিম কিংবা বিক্ষিপ্ত মুক্তা।” (তিরমিযী শরীফ)

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال فضلت على الانبياء بست اعطيت جوامع الكلم ونصرت بالرعب واحلت لى الغنائم وجعلت لى الارض مسجدا وطهورا وارسلت الى الخلق كافة وختم بى النبيون.

অর্থ: “হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, সমস্ত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের উপর আমাকে বিশেষ ছয়টি মর্যাদা দেয়া হয়েছে। (১) আমাকে সৃষ্টির শুরু হতে শেষ পর্যন্ত সমস্তহ ইলম দেয়া হয়েছে, (২) আমাকে রো’ব দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে, (৩) আমার জন্য গণিমতের মাল হালাল করা হয়েছে, (৪) আমার জন্য সমগ্র যমিনকে মসজিদ ও পবিত্র করে দেয়া হয়েছে, (৫) আমাকে সমস্ত সৃষ্টির পূর্ণতা দানকারী হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে, (৬) আমার দ্বারাই নুবুওওয়াতের দ্বার সমাপ্ত করা হয়েছে।” (বুখারী, মুসলিম)

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قالوا يا رسول الله صلى الله عليه وسلم متى وجبت لك النبوة قال وادم بين الروح والجسد.

অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ছাহাবীগণ উনারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে কখন নুবুওওয়াত দেয়া হয়েছে, অর্থাৎ আপনি কখন থেকে নবী? তিনি বললেন, আমি তখনো নবী ছিলাম যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম রূহে এবং শরীরে অবস্থান করছিলেন। অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি সৃষ্টির পূর্ব থেকেই আমি নবী।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপস্থিতিতে হযরত হাসসান বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মসজিদে নববী শরীফ-এ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে না’ত, কাছীদা শরীফ, কবিতা আবৃত্তি করে শুনাতেন।

উপরোক্ত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনাদের আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমানিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক স্বয়ং নিজেই কুরআন শরীফ-এ উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছীফত করেছেন। আর মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাদীছ শরীফ-এ স্বয়ং নিজেই নিজের ছানা-ছীফত করেছেন। শুধুমাত্র এতটুকুও নয় বরং স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের দ্বারা করিয়েছেন।

আর মীলাদ শরীফ উনারও আলোচ্য বিষয়ই হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছীফত করা। তাহলে কি করে একথা বলা যেতে পারে যে, “ইসলামে মীলাদ শরীফ উনার কোন অস্তিত্ব নেই?”

প্রকৃতপক্ষে তাদের এ বক্তব্য দ্বারা তারা ইসলামকেই অস্বীকার করেছে। যার ফলে তারা ঈমান ও ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেছে। কারণ, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত শুধুমাত্র তাওহীদের উপর ঈমান আনলেও ক্বিয়ামত পর্যন্ত কোন ব্যক্তির পক্ষে ঈমানদার হওয়া সম্ভব নয় বা কোন ব্যক্তি ঈমানদার হতে পারবে না।

তারা তাদের দ্বিতীয় বক্তব্যের দ্বিতীয় অংশে বলেছে, “খাইরুল কুরুনেও ছিলনা।”

তাদের এ বক্তব্যও ডাহা মিথ্যা ও কুফরী হয়েছে। কারণ তারা তাদের এ বক্তব্যে হাদীছ শরীফ অস্বীকার করেছে। প্রকৃতপক্ষে তাদের খাইরুল কুরুন সম্পর্কেও সঠিক বা ছহীহ জ্ঞান বা বুঝা নেই; তাই তারা এ বক্তব্য দিয়েছে।

খাইরুল কুরুনকেই করুনে ছালাছা বলা হয়। আর কুরুনে ছালাছা হচ্ছে পর্যায়ক্রমে ছাহাবী, তাবিয়ী ও তাবে’ তাবিয়ীগণ উনাদের তিন যুগ। আর খাইরুল কুরুনের প্রথম ক্বরণ বা যুগই হচ্ছে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের যুগ। আর সে যুগেই মীলাদ মাহফিল হয়েছে। সুতরাং “খাইরুল কুরুনে ছিলনা” একথা মিথ্যা প্রতিপন্ন হলো ও তাদের জিহালতী পরিষ্ফুটিত হলো।

আর কোন আমল খাইরুল কুরুনের মধ্যে না থাকলে সে তা বর্জনীয় একথা সম্পূর্ণ অশুদ্ধ ও কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনাদের খিলাফ। বরং কোন আমল গ্রহণীয় কিংবা বর্জনীয় হওয়ার জন্য খাইরুল কুরুণ শর্ত নয়। শর্ত হচ্ছে, সে আমল কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ সম্মত কি না? যদি কুরআন শরীফ, সুন্নাহ সম্মত হয় তাহলে তা গ্রহণীয়। আর যদি কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ সম্মত না হয় তবে তা বর্জনীয় বা পরিত্যাজ্য।

যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

من سن فى الاسلام سنة حسنة فله اجرها واجر من عمل بها.

অর্থ: “যে ব্যক্তি পবিত্র দ্বীন ইসলামে কোন উত্তম বিষয় বা আমলের প্রচলন করলো তবে তার জন্য প্রতিদান (নেকী) রয়েছে এবং যারা সে আমল করবে তাদের সে ছওয়াবেরও অধিকারী হবে।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

ماراه المسلمون حسنا فهو عند الله حسن.

অর্থ: “মুসলমানগণ যে কাজ ভাল মনে করেন তা মহান আল্লাহ পাক উনার  নিকটও ভাল বলে বিবেচিত হয়।” (মিশকাতুল আনোয়ার)

“মীলাদ শরীফ বা মীলাদ মাহফিল” অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ এবং উনার সমগ্র জীবন মুবারক সম্পর্কে আলোচনা, উনার প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ এক কথায় উনার ছানা-ছীফত করা সকল নবী, ছাহাবী, তাবিয়ী, তাবে’ তাবিয়ী, ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম সকলের যামানায়ই ছিল এবং হয়েছে।

যেমন, “মাওয়াহিবুল লাদুননিয়া” কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেদিন যমীনে তাশরীফ আনেন সেই রাত্রিতে অগিণত ফেরেশতা অবতরণ করেন এবং হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার হুযরা শরীফ উনার দরজায় দাঁড়িয়ে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করেন।”

“মিশকাত শরীফ-এ” বর্ণিত রয়েছে, হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, একদা আমি রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সপীপে উপস্থিত ছিলাম। ইতোপূর্বে কোন কোন লোক আমাদের বংশ পরিচয় সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছিল এবং সম্ভবত এ সংবাদ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কর্ণগোচর হয়েছিল। এ সময় উনার দরবার শরীফ-এ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন। তিনি মিম্বর শরীফ-এ আরোহণ করত: উপস্থিত লোকদের জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কে?” সকলে সমম্বরে উত্তর দিলেন, “আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল।” অত:পর তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন।, “আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পুত্র, হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার পৌত্র। মহান আল্লাহ পাক আমাকে কুল-মাখলুকাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম মাখলুক অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ বাশার ও রসূলরূপে পাঠিয়েছেন। শ্রেষ্ঠ গোত্র কুরাঈশ খান্দানে এবং কুরাঈশ গোত্রের বিভিন্ন শাখার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হাশেমী শাখায় আমাকে পয়দা করেছেন।”

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি হলাম হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার দোয়া, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার সু-সংবাদ এবং আমার মাতা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার দেখা সু-স্বপ্ন ও অলৌকিক ঘটনার বাস্তব প্রতিফলন। আমার মাতা আমার বেলাদত শরীফ কালে দেখেছিলেন যে, এক “নূর” যমীনে তাশরীফ নিলেন এবং উনার আলোকে শাম দেশের বালাখানাসমূহ উনার দৃষ্টিগোচর হলো। (মিশকাত শরীফ)

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত আতা ইবনে ইয়াছার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “একদা আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সমীপে গেলাম এবং আরজ করলাম, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যে না’ত “রাওরাত” কিতাবে আছে তা আমাকে আবৃত্তি করে শুনান। তিনি তখন আমাকে তা পড়ে শুনালেন।” (মিশকাত শরীফ)

হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত আছে যে, “তিনি একদিন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আবূ আমের আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঘরে গেলেন। তিনি সেখানের দেখাতে পেলেন যে, হযরত আবূ আমের আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিজ সন্তানাদি ও আত্মীয়-স্বজনদের একত্রিত করে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীপ (জন্ম বৃত্তান্ত) আলোচনা করছেন। এটা দেখে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যন্ত খুশি হলেন এবং বললেন, “হে আমের! নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের জন্য উনার রহমতের দ্বার উন্মুক্ত করেছেন এবং সকল ফেরেশতাগণ তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। আর যারা তোমার ন্যায় এরূপ আমল করবে, তারাও তোমার ন্যায় নাযাত পাবে।” (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলূদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলুদিল মুস্তাফা)

আরো বর্ণিত আছে যে, “একদিন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সেখানকার সকল লোকদেরকে উনার নিজ ঘরে একত্রিত করে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফ বা জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা করেন, যা শুনে উপস্থিত সকলেই আনন্দচিত্তে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ছলাত-সালাম পাঠ করেন এমন সময় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে উপস্থিত হলেন এবং তাদেরকে উদ্দেশ্যে করে বললেন- حلت لكم شفاعتى.

অর্থাৎ “তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল।” (মাওলুদুল কবীর, দুররুল মুনাজ্জাম, সুবুলুল হুদা ফী মাওলুদিল মুস্তফা)

উপরোক্ত কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনার আলোচনা দ্বারা এটাই ছাবিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক, ফেরেশতাগণ, পূর্ববর্তী নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ, খোদ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং পরবর্তীকালে ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা সকলের আমল হতেই মীরাদ শরীফ উনার প্রমাণ পাওয়া যায়।

এত দলীল-আদিল্লাহর পরেও কি করে একথা বলা যেতে পারে যে, “খাইরুল কুরুনে মীলাদ শরীফ ছিলোনা?”

প্রকৃতপক্ষে তারা কিল্লতে ইলম ও কিল্লতে ফাহম অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণেই এ ধরণের কুফরীমূলক, বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিতে পেরেছে। (চলবে)

মুহম্মদ জাকির হুসাইন

সভাপতি আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত,

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, ঢাকা।

সুওয়াল : “হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা  আনহু তিনি নাকি রাজতন্ত্র ও রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা?” এ বক্তব্য শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু শুদ্ধ? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব : বিশিষ্ট ছাহাবী কাতিবে ওহী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্পর্কে সুওয়ালে উল্লিখিত বক্তব্য শরীয়ত তথা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনার দৃষ্টিতে মোটেও শুদ্ধ নয়; বরং সম্পূর্ণরূপে কুফরীর শামীল।

কারণ, উক্ত বক্তব্য বুযূর্গ ছাহাবী আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, কাতিবে ওহী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহ উনার শান ও মর্যাদার খিলাফ এবং উনার প্রতি তোহমতের শামীল। মহান আল্লাহ পাক এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবা আজমাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকে এমন মর্যাদা দান করেছেন যে, কোন মুসলমান যদি উনাদের সেই মর্যাদার খিলাফ কোন কথাবার্তা বলে তাহলে সে মুসলমান থাকতে পারবেনা। সে মুরতাদ ও কাফিরে পরিণত হয়ে যাবে।

মূলত: সাইয়্যিদুনা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে রাজতন্ত্র ও রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বলে অভিহিত করা চরম জিহালতী ও মূর্খতা বৈ কিছু নয়।

কারণ, তিনি ছিলেন ইসলামের ষষ্ঠ খলীফা, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন। তিনি নিজ অধিকৃত এলাকায় ‘খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ’ অর্থাৎ ‘নুবুওওয়াতের আদর্শে খিলাফত’ পরিচালনা করেছিলেন এবং যাকে উনার স্থলাভিষিক্ত খলীফা মনোনীত করেছিলেন উনাকে খিলাফত পরিচালনার উপযুক্ত মনে করেই করেছিলেন এবং ইতোপূর্বেও তাকে অনেক যুদ্ধের সেনাপতি করে পাঠিয়েছিলেন। এছাড়া অনেক বিশেষ বিশেষ দায়িত্বও তার দ্বারা সম্পাদিত হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে মুনাফিক ও ফাসিক-ফুজ্জারদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে সে গোমরাহ ও ফাসিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।

অতএব, এ কথা কস্মিনকালেও বলা শুদ্ধ হবেনা যে, “হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা।”

উল্লেখ্য, ‘রাজতন্ত্র’ অর্থ হলো, ‘রাজ’ অর্থ ‘রাজা’, আর ‘তন্ত্র’ অর্থ ‘নিয়মনীতি।’ যিনি রাজা হন সাধারণ: তিনি তার নিজস্ব মনগড়া নিয়মনীতিই উনার কর্তৃত্বাধীন এলাকায় প্রণয়ন বা বাস্তবায়ন করে থাকেন, তাকেই রাজতন্ত্র বলে। আর ‘রাজবংশ’ বলতে ‘রাজার বংশকে’ বুঝানো হয়।

অথচ হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নিজেও রাজা ছিলেন না এবং অন্য কাউকেও রাজা মনোনীত করেননি। বরং তিনি স্বয়ং নিজের, উনার পরিবার, উনার সমাজ এবং উনার কর্তৃত্বাধীন সমগ্র এলাকার উপর কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনার বিধানই জারি বা বাস্তবায়ন করে ছিলেন, যাকে ‘খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ’ বলা হয়।

মূলত: উনার খিলাফত পূর্ববর্তী খলীফাগণ উনাদেরই অনুরূপ ছিল এবং উনার খলীফা হওয়ার বিষয়টি ছিলো স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভবিষ্যৎ বাণীর ফসল।

হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নিজেই বর্ণনা করেন, আমি একদা মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে ছিলাম। তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “হে মুয়াবিয়া! কখনো যদি তোমার হাতে লোকদের কর্তৃত্বভার আসে তখন তাদের প্রতি ইনছাফ করো।” হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “আমি তখনই নিশ্চিত হলাম যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উক্ত কথা বাস্তবায়িত হবেই।”

আর সত্যিই তিনি প্রথমে দু’খলীফা হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত উছমান যুনস নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফত কালে আমীরে শোবা বা প্রাদেশিক গভর্ণর হিসেবে নিযুক্ত হন। অত:পর চতুর্থ খলীফ হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার শাহাদত বরণের পর প্রায় ছয় মাস উনার জৈষ্ঠ্য পুত্র হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি খিলাফত পরিচালনা করেন। অত:পর তিনি ষষ্ঠ খলীফা হিসেবে হযরত মুয়াবিয়াব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে এই শর্তে খিলাফত দেন বা মনোনীত করেন যে, “আপনার পর আমি অথবা আমার ভাই হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি অর্থাৎ দু’জনের একজন হায়াতে থাকলে আমাদেরকে খিলাফত ফিরিয়ে দিতে হবে।”

অত:পর ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার শাহাদত বরণের সময় তিনি উনার ছোট ভাই হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে নছীহত করেন যে, “দেখ, খিলাফতের জন্যই আমাদের পিতা শহীদ হয়েছেন, আমিও শহীদ হচ্ছি সুতরাং আপনি আর খিলফাতের যিম্মাদারী হবেননা। আপনি পবিত্র দ্বীনি তা’লিম কার্যে নিয়োজিত থাকবেন। হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অন্য যাকে ভাল মনে করেন তাকে খিলাফতের দায়িত্ব অর্পন করে যাবেন।”

হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার প্রদত্ত শর্ত মুতাবিক হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি খলীফা মনোনীত হয়ে সঠিকভাবে খিলাফত পরিচালনা করেন এবং পরবর্তীতে খিলাফত পরিচালনার যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে উনার ছেলেকে খলীফা মনোনীত করেন।

অতএব, এটা অবশ্যই সত্য যে, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন উনার ছেলে ইয়াযিদকে খলীফা নিযুক্ত করেন তখন ইয়াযিদ ভাল ছিল। কিন্তু মুনাফিকদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে পরবর্তীতে ইয়াযিদ ফাসিক, ফাজির ও গোমরাহ হয়ে যায়।

এখন কেউ যদি ছেলের বদ আমলের কারণে পিতাকে দোষারোপ করে অর্থাৎ ইয়াযিদের জন্য বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দোষারোপ করে তবে তা সম্পূর্ণরূপে কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনাদের খিলাফ ও কুফরী হবে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন ,

ولاتزر وازرة وزر اخرى.

অর্থ: “এক জনের গুণাহর বোঝা অন্যজন বহন করবে না।” (পবিত্র সূরা ইসরাঈল/১৫)

কাজেই ছেলের অপরাধের জন্য পিতাকে দোষারোপ করা জায়িয হবে না। যদি ইয়াযিদের অপরাধের জন্য ছাহাবী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দোষারোপ করা হয় তাহলে কাবিলের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়ে যান। (নাউযুবিল্লাহ) একইভাবে কিনানের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত নূহ আলাইহিস সালাম তিনিও দোষী সাব্যস্ত হয়ে যান। (নাউযুবিল্লাহ) হযরত নবী রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদেরকে দোষারোপ করার কল্পনাও যদি কোন ব্যক্তি করে, সাথে সাথে সে ঈমানহারা হয়ে কাফির হয়ে যাবে।

হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে “রাজতন্ত্র ও রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা” সাব্যস্ত করার জন্য যদি কারণ এটা হয় যে, উনার খিলাফতের পর উনার ছেলে খলীফা নিযুক্ত হওয়া।

তাহলে এর জবাবে বলতে হয় যে, মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম যিনি ছিলেন খলীফাতুল্লাহ অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার খলীফা এবং উনার বিদায়ের পর উনার ছেলে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি সারা পৃথিবীর খলীফা নিযুক্ত করেন। এখন পিতার পর ছেলে খলীফা হলে যদি রাজতন্ত্র ও রাজবংশ প্রতিষ্ঠাকারী হয় তাহলে তো দেখা যায় মহান আল্লাহ পাক তিনিই রাজতন্ত্র ও রাজবংশের প্রতিষ্ঠাকারী হয়ে যান। নাউযুবিল্লাহ!

এছাড়া হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার পর উনার ছেলে হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনিও তো খলীফা নিযুক্ত হয়েছিলেন। তাই বলে কি, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার থেকে রাজতন্ত্র ও রাজবংশ জারী হয়েছে? নাউযুবিল্লাহ!

মূলত: মহান আল্লাহ পাক, হযরত নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম কেউই রাজতন্ত্র ও রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা নন। যদি কেউ উল্লিখিত কাউকে রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বলে তবে সেটা হবে উনার প্রতি প্রকাশ্য তোহমত ও কুফরীর শামীল।

আরো উল্লেখ্য, যারা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে রাজতন্ত্র ও রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা রূপে বিহ্নিত করতে চায় প্রকৃতপক্ষে তারা চরম শ্রেণীর জাহিল। কারণ রাজবংশ বা রাজতন্ত্র ইসলামের অনেক পূর্বকাল হতেই চলে আসছে। যা আমরা হাদীছ শরীফ-এও দেখতে পাই যে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রোম, পারস্য, আবিসিনিয়া, চীন, মালাবার, গুজরাট ইত্যাদির স¤্রাট বা রাজাদের নিকট ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিয়ে দূত মারফত পাত্র পাঠিয়েছিলেন।

অতএব, সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হলো যে, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি রাজতন্ত্র কিংবা রাজবংশ কোনটিরই প্রতিষ্ঠাতা নন বা ছিলেন না। এছাড়া আমরা যদি হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পরবর্তী খলীফাগণ উনাদের তালিকা লক্ষ্য করি তবে তার দ্বারাও প্রমানিত হবে যে, তিনি রাজতন্ত্র কিংবা রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন না।

হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পরবর্তী খলীফাগণ উনাদের তালিকা-

১। ইয়াযিদ ২। দ্বিতীয় মুয়াবিয়া, ৩। (ক) হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ৩। (খ) মারওয়ান, ৪। আব্দুল মালিক ৫। প্রথম ওয়ালিদ ৬। সুলায়মান ৭। দ্বিতীয় উমর ৮। দ্বিতীয় ইয়াযিদ ৯। হিশাম ১০ দ্বিতীয় ওয়ালিদ ১১। তৃতীয় ইয়াযিদ ১২। ইবরাহীম ১৩ দ্বিতীয় মারওয়ান। অত:পর আব্বাসীয় খলীফাগণ উনাদের যুগ শুরু হয়।

ছকের সাহায্যে ও ক্রমিক নম্বর অনুযায়ী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পরবর্তী খলীফাগণ উনাদের নাম ও তাদের পিতার নামের তালিকা দেয়া হলো-

হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু

১। ইয়াযিদ বিন মুয়াবিয়া

২। দ্বিতীয় মুয়াবিয়া বিন ইয়াযিদ

৩। (ক) হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু

(খ) মারওয়ান বিন হাকাম

আব্দুল আযীয বিন মারওয়ান

৪। আব্দুল মালিক বিন মারওয়ান

৭। দ্বিতীয় উমর বিন আব্দুল আযীয

৯। হিশাম বিন আব্দুল মালিক

৮। দ্বিতীয় ইয়াযিদ বিন আব্দুল মালিক

৬। সুলাইমান বিন আব্দুল মালিক

৫। প্রথম ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিক

১০। দ্বিতীয় ওয়ালিদ বিন দ্বিতীয় ইয়াযিদ

১২। ইবরাহীম বিন সুলাইমান

১১। তৃতীয় ইয়াযিদ বিন প্রথম ওয়ালিদ

উল্লিখিত খলীফাগণ উনাদের তালিকায় দেখা যাচ্ছে যে, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছেলে ইয়াযিদ মাত্র সাড়ে তিন বছর এবং ইয়াযিদের ছেলে দ্বিতীয় মুয়াবিয়া শুধুমাত্র তিন মাস খিলাফত পরিচালনা করত: ইন্তিকাল করেন। তিনি ইন্তিকালের সময় খিলাফত কে পরিচালনা করবেন? সে বিষয়ে লোকদেরকে ওছীয়ত করেন যে, আপনারা যাকে উপযুক্ত মনে করবেন তাকেই খলীফা নিযুক্ত করবেন।

অত:পর লোকজন একদিকে হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে খলীফা হিসেবে উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেন এবং অন্যদিকে মারওয়ানকে খলীফা মনোনীত করেন। এ দু’জনই অর্থাৎ হযরত আব্দুল বিন যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং মারওয়ান হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আওলাদ বা বংশধরের অন্তর্ভুক্ত নন। পরবর্তীতে মারওয়ানের পুত্র, পৌত্র ও প্রপৌত্রদের মধ্য দিয়েই উমাইয়া খিলাফতের পরিসমাপ্তি ঘটে।

এখানে উল্লেখ্য, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কাউকে এ ওছীয়ত করে যাননি যে, উনার ইন্তিকালের পর উনার ছেলের ছেলে এমনিভাবে পর্যায়ক্রমে স্বীয় বংশধরগণের মধ্যে রাজত্ব থাকবে আর তাদেরকেই মানতে হবে। অথবা খিলাফতের ধারা জারী বা অব্যাহত থাকবে কিংবা তাদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করতে হবে।

পরিশেষে বলতে হয় যে, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হলেন একজন জলীলুল ক্বদর ছাহাবী, কাতিবে ওহী, হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী রাবী। যারা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে তারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে নেহায়েতই বে খবর।

অতএব, যে কেউ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের শান ও মর্যাদার খিলাফ কথা বলবে বুঝতে হবে, সে মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে কাফির ও মুরতাদে পরিণত হয়ে গেছে।

বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ফযীলত ও মর্যাদা সম্পর্কে সামান্য

আলোচনা নিম্নে পেশ করা হলো-

হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক সান্নিধ্যে থেকে তা’লীম ও তরবিয়ত হাছিল করেছেন এবং অর্জন করেছেন, শরীয়তের অগাধ ইলম। যার কারণে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে “ফক্বীহুল উম্মত” মনে করতেন।

যেমন, “বুখারী শরীফ-এ” উল্লেখ আছে, একবার হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্পর্কে বলেন যে, اصاب انه فقيه.

অর্থাৎ- “হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যা বলেছেন, তা ঠিকই বলেছেন, কেননা তিনি নিজে একজন ফক্বীহ।”

হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত আছে যে,

دعه فانه قدصحب النبى صلى الله عليه وسلم.

অর্থ: “হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে উনার নিজ অবস্থায় ছেড়ে দাও, কারণ তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ ছোহবতে ছিলেন।” (বুখারী শরীফ)

হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবতে থেকে যেমনিভাবে খাছ ফয়েয ও তাওয়াজ্জুহ হাছিল করেন, তেমনিভাবে হাদীছ শরীফ উনার ভাণ্ডার হতে সংরক্ষণ করেন অসংখ্য মূল্যবান হাদীছ শরীফ। তিনি মোট ১৬৩ খানা হাদীছ শরীপ বর্ণনা করেন, যার মধ্যে চারখানা হাদীছ শরীফ (متفق عليه) অর্থাৎ বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেছেন। আর চারখানা শুধু বুখারী শরীফ-এ ও পাঁচখানা শুধু মুসলিম শরীফ-এ রয়েছে। বাকিগুলো অন্যান্য হাদীছ শরীফ উনার কিতাবে রয়েছে। (তাহযীবুল আসমা লিননববী)

হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ইসলাম গ্রহণ করার পর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হুনাইনের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। কাতিবে ওহীগণ উনাদের মধ্যে তিনিস অন্যতম একজন কাতিবে ওহী।

কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, উনার বুযুর্গ পিতা হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ-এ এসে আরজ করলেন যে,

معاوية تجعله كاتبا بين يديك قال نعم.

অর্থ: “হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে আপনি কাতিবে ওহী নিযুক্ত করলে ভাল হতো, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কাতিবে ওহী নিযুক্ত করলেন।” (মুসলিম শরীফ)

হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শুধু যে কাতিবে ওহীর খিদমতেই নিয়োজিত ছিলেন তা নয়; বরং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশিষ্ট খাদিম হওয়ারও সৌভাগ্য লাভ করেন।

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে যে,

قال ابن عباس قال لى معاوية اعلمت انى قصرت من رأس النبى صلى الله عليه وسلم عند المروة بمشقص.

অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমাকে বলেন যে, আপনার জানা আছে কি? আমি (হজ্জের সময়) মারওয়াহ নামক স্থানে কেচি দ্বারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চুল মুবারক কেটে ছিলাম।” (মুসলিম শরীফ)

একারণেই তো তিনি লাভ করেছেন, “শ্রেষ্ঠ নিয়ামত” সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ দোয়া-

اللهم اجعله هاديا مهديا واهد به.

অর্থ: “আয় মহান আল্লাহ পাক! হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে হাদী ও হিদায়েত প্রাপ্ত করুন এবং উনার দ্বারা লোকদেরকে হিদায়েত দান করুন।” (তিরমিযী শরীফ)

অন্য হাদীছ শরীফ-এ এ দোয়াও উল্লেখ আছে,

اللهم علم معاوية الكتاب والحساب وقه العذاب.

অর্থ: “আয় মহান আল্লাহ পাক! হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে হিসাব-কিতাব শিক্ষা দিন এবং তাকে জাহান্নাম থেকে নাযাত দিন।” (আল ইছাবাহ, মাজমাউয যাওয়ায়িদ)

প্রসিদ্ধ ছাহাবী হযরত আমর ইবনুল আ’ছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জন্য এ দোয়া করতে শুনেছি যে,

اللهم علمه الكتاب ومكن له فى البلاد وقه العذاب.

অর্থ: “আয় মহান আল্লাহ পাক! হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে কিতাব শিক্ষা দিন এবং শহরেই উনার স্থান নির্ধারণ করুন ও উনাকে জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি দিন।” (মাজমাউয যাওয়ায়িদ)

অন্য এক হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একবার সওয়ারীর উপর বসা, উনার পিছনে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বসালেন। কিছুক্ষণ পর বললেন, “হে মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! তোমার শরীরের কোন অংশ আমার শরীর মুবারক স্পর্শ করে আছে”? হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! “আমার পেট ও বুক আপনার শরীর মুবারক উনার সাথে লেগে আছে।” এটা শুনে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দোয়া করেন যে,

اللهم املاه علما.

অর্থ: “আয় মহান আল্লাহ পাক! হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ইলম দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিন।” (তারীখুল ইসলাম লি হাফিয যাহাবী)

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দোয়া নির্ঘাত কবুলযোগ্য। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রতি কি করে বিদ্বেষ পোষণ করা সম্ভব? মূলত: জাহিল, বেয়াকুফ ও গোমরাহ ব্যতীত কারো পক্ষেই উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা সম্ভব নয়।

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে, হযরত আবু ইদরীস খাওলানী তিনি বলেন,

لماز ال عمر بن الخطاب عمير بن سعد عن حمص ولى معاوية فقال عمير لا تذكر معاوية الا بخير فانى سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول الله اهد به.

অর্থ: “যখন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি হামছ হতে হযরত উমায়র ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সরিয়ে সেস্থানে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে গভর্ণর নিযুক্ত করলেন, (তখন লোকজন এটার সমালোচনা করতে লাগলো) তখন হযরত উমায়র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্পর্কে ভাল ব্যতীত খারাপ বলোনা। কারণ, আমি স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জন্য এ দোয়া করতে শুনেছি যে, “আয় মহান আল্লাহ পাক! হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার দ্বারা লোকদেরকে হিদাযেত দান করুন।” (তিরমিযী)

হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তায়ালা আনহু উনার মর্যাদা-মর্তবার মধ্যে অন্যতম মর্যাদা হলো, তিনি ছিলেন একজন আদিল বা ইনসাফগার খলীফা অর্থাৎ খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন। উনার ন্যায় বিচার ও ইনসাফ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে, জান্নাতের সু-সংবাদপ্রাপ্ত ছাহাবী হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন,

مارأيت احدا بعد عثمان اقضى بحق من صاحب هذا الباب.

অর্থ: “আমার দৃষ্টিতে হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পর এই দরজার অধিকারী অর্থাৎ হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চেয়ে অধিক ন্যায় বিচারক কেউ নেই।” (বিদায়া)

এক ব্যক্তি মুয়াফা ইবনে ইমরানকে বললো, ন্যায় বিচারের দিক দিয়ে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মধ্যে কি সম্পর্কে রয়েছে? একথা শুনে তিনি রাগান্বিত হয়ে বললেন,

اصحاب نبی صلی اللہ علیہ وسلم پر کویء دوسرا قیاس نھی کیا جاسکتا ھے اور حضرت معاویہ رضی اللہ عنہ تو أپ کے صحابی ھیں اور صھر  (سالے) بھی ھیں اور کاتب بھی ھیں اور وحی الھی پر أپ کے امین بھی ھیں.

অর্থ: “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের প্রতি কোন প্রকার ক্বিয়াস করা যাবেনা। হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তো হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবী, বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয়, কাতিবে ওহী ও মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব উনার আমীন (আমানতদার)।” (নাসীমুর রিয়ায)

হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ফযীলত সম্পর্কে আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে,

ايما الفضل معاوية او عمر بن عبد العزيز فقال والله لغبار الذى دخل انف فرس معاوية مع رسول الله صلى الله عليه وسلم خير من مأة واحد مثل عمر بن عبد العزيز.

অর্থ: “হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শ্রেষ্ঠ? না, হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শ্রেষ্ঠ? তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ঘোড়ার চড়ে জিহাদে যেতেন, তখন ঘোড়ার নাকে যে ধুলাবালিগুলো প্রবেশ করতো সে ধুলাবালিগুলোও হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ন্যায় একশত একজন ব্যক্তি হতেও শ্রেষ্ঠ।” (ফতওয়ায়ে হাদীসিয়াহ)

হযরত ইবরাহীম ইবনে সা’দ জাওহারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি হযরত আবু উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে প্রশ্ন করলাম যে, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ? তখন তিনি বললেন,

لانعدل باصحاب محمد صلى الله عليه وسلم احدا.

অর্থ: “আমরা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের সমকক্ষ কাউকেই মনে করিনা।” অর্থাৎ হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হলেন বিশিষ্ট ছাহাবী, আর হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি ছাহাবী নন। কাজেই শ্রেষ্ঠ হওয়া তো দূরের কথা বরং তুলনা করাই আহমকী।

হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অসংখ্য ফযীলতের মধ্যে আরো একটি ফযীলত হলো- তিনি পৃথিবীতে থাকতেই জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন, যদিও তিনি আশারায়ে মুবাশশারার অন্তর্ভুক্ত নন।

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

قال النبى صلى الله عليه وسلم اول جيش يقزون البحر قد اوجبوا.

অর্থ: “আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমার উম্মতের প্রথম যে দল সমুদ্রের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করবে, তাদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব।” (বুখারী শরীফ)

ইমাম তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,

حضرت معاویہ رضی اللہ عنہ نے 28 ھجری میں  قبر ص پر پھلابحری حملہ کیا اور قبرص أپ نے فتح کرلیا.

অর্থ: “হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আটাশ হিজরীতে সর্বপ্রথম সমুদ্র যুদ্ধের মাধ্যমে কাবরাসের উপর আক্রমণ করেন এবং কাবরাস তিনিই বিজয় করেন।” (তাবারী)

সুতরাং এত সকল মর্যাদা-মর্তবার পরও যারা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, উনাকে নাকেস বলে গালী দেয়, তাদের জন্য ইমাম শিহাবুদ্দীন খাফফাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কথাই অধিক প্রযোজ্য। তিনি বলেন,

ومن يكون يطعن فى معاوية فذالك كلب من كلاب الحاوية.

অর্থ: “যে ব্যক্তি হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, গালী দেয়, নাকেস বলে, সমালোচনা করে, সে হাবিয়া দোযখের কুকুরসমূহের মধ্য হতে একটি কুকুর।” (নাসীমুর রিয়ায)

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শুধু ছাহাবীই ছিলেন না, বরং মর্যাদাপূর্ণ, জলীলুল ক্বদর, ন্যায় পরায়ণ একজন খলীফাও ছিলেন। সুতরাং উনার সম্পর্কে সাবধানে কথা বলতে হবে। বিশেষ করে সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের প্রতিই সুধারণা পোষণ করতে হবে ও মুহব্বত করতে হবে।

কারণ, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,

اصحابى كالنجوم بايهم اقتديتم اهتديتم.

অর্থ: “আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ তারকা সাদৃশ্য, উনাদের যে কাউকে তোমরা অনুসরণ করবে, তোমরা হিদায়েত প্রাপ্ত হবে।” (মিশকাত শরীফ)

অতএব, মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি লাভ করতে চাইলে অবশ্যই ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, সমালোচনা করা ও নাকেস বলা হতে বিরত থাকতে হবে।

কেননা, হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে,

فمن سبهم فعليه لعنة الله والملئكة والناس اجمعين ولايقبل الله منهم صرفا ولاعدلا.

অর্থ: “যে ব্যক্তি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকে গালী দেয়, তাদের প্রতি ফেরেশতা, মানুষ ও সকল মাখলুকাতের লা’নত এবং তাদের কোন ফরয ও নফল ইবাদত মহান আল্লাহ পাক তিনি কবুল করবেন না।” (মুযাহিরে হক্ব)

হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

من غاظه اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم فهو كافر.

অর্থ: “যে ব্যক্তি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে সে কাফির।”

আর তাই বিখ্যাত ফক্বীহ ইবনুল হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত আক্বাঈদের কিতাবে উল্লেখ করেন যে,

اعتقاد اهل السنة والجماعة تزكية جميع الصحابة وجوبا باثبات العدالة لكم منهم والكف عن الطعن فيهم والثناء عليهم كما اثنى الله سبحانه وتعالى عليهم.

অর্থ: “আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো, সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ গুণাহ হতে পবিত্র অর্থাৎ মাহফুয, সকলেই ন্যায় বা হক্বের উপর কায়িম ছিলেন। উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা হতে বেঁচে থাকা এবং উনাদের ছানা-ছিফত বর্ণনা করা অবশ্য কর্তব্য, যেরূপ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের ছানা-ছিফত করেছেন। (মুসামিরাহ/১৩৬)

অতএব, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রতি ‘রাজতন্ত্র’ কিংবা ‘রাজবংশের’ প্রতিষ্ঠাতা বলে যারা তোহমত দিতে চায় কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ দৃষ্টিতে তারা মুসলমানগণ উনাদের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং তারা খারিজী তথা কাফিরের অন্তর্ভুক্ত।

{দলীলসমূহ: (১) তাবারী, (২) বুখারী (৩) মুসলিম (৪) মিশকাত (৫) নাসিমুর রিয়ায (৬) ফতহুল বারী (৭) উমদাতুল ক্বারী (৮) ইরশাদুস সারী (৯) শরহে কিরমানী (১০) ফতহুল মুলহিম (১১) শরহে নববী (১২) তুহফাতুল আহওয়াযী (১৩) মিরকাত (১৪) আশয়াতুল লুময়াত (১৫) লুময়াত শরহুত ত্বীবী (১৬) তা’লিকুছ ছবীহ (১৭) মুযাহিরে হক্ব (১৮) তাহযীবুল আসমা লিন নববী (১৯) আল ইছাবাহ (২০) মাজমাউয যাওয়ায়িদ (২১) বিদায়া (২২) ফতওয়ায়ে হাদীসিয়াহ (২৩) মুসামিরা (২৪) তারীখুল ইসলাম লি হাফিয যাহাবী (২৫) তারীখে ইবনে খালদুন (২৬) ইসলামের ইতিহাস -কে আলী ইত্যাদি}

লক্বব ব্যবহার করা, বর্ণনা করা, প্রকাশ করা, প্রদান করা ইত্যাদি প্রত্যেকটিই সুন্নত

(এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৪৮, ৫০, ৫৭, ৭৩তম সংখ্যাগুলো পাঠ করুন)

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ