– হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
لوكان الدين عند الثر يا لذهب اليه رجل او قال رجال من ابناء فارس حتى يتا ولوه.
অর্থঃ- “দ্বীন যদি সুরইয়া নক্ষত্রের কাছেও চলে যায় তারপরেও এক ব্যক্তি অথবা পারস্যের কতিপয় ব্যক্তি সুরইয়া তারকার কাছে গিয়ে দ্বীনকে ফিরিয়ে আনবে।” (মুসলিম শরীফ, তাফসীরে মাযহারী ৯/২৭৫) উপরোক্ত হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পারস্যের কিছু লোক জাহির-বাতিন উভয় দিক দিয়ে সালমানুল খায়ের হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সাথে সম্পৃক্ত থাকবেন। যারা উচু মর্যাদার অধিকারী হবেন। আল্লাহ্ পাক-এর অতি প্রিয় ও পছন্দনীয় লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। যাদের নিরলস কোশেশে দ্বীন ইসলাম এবং ঈমান যথাস্থানে ফিরে আসবে। তাঁদের উছীলায় ক্বিয়ামত পর্যন্ত ইসলামের আবাদ হবে। আর আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ অনেক মুহাদ্দিস ও মুফাস্সিরীন-ই-কিরাম বলেছেন যে, এ ভবিষ্যৎবাণীই হচ্ছেন, সর্বজন মান্য ও স্বীকৃত ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি ইলমে ফিক্বাহ্র ইমাম হিসেবে সারা দুনিয়ায় মাশহুর। তিনি মুসলিম উম্মাহকে অনুপম একটি মাযহাব উপহার দিয়ে দ্বীনকে “সুরইয়া” তারকা হতে ফিরিয়ে এনেছেন। আর رجال من ابناء فارس. দ্বারা বুঝানো হয়েছে পারস্যের অধিবাসী সে সমস্ত বিশুদ্ধচিত্ত, অটল বিশ্বাসী ও বুদ্ধিমান বীর পুরুষগণকে যারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরিপূর্ণ অনুসরণের বরকতে লাভ করেছিলেন প্রথম যুগের মুসলমান তথা হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মত মর্যাদা। তাঁরা লাভ করেছিলেন রিসালতের উৎকর্ষতার পরিপূর্ণতা। উচ্চ মর্যাদা-মর্তবা সম্পন্ন হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মতোই তাঁরা ছিলেন মাহবুরিয়াতের তবকা বা মাকামের অধিকারী। সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউসুল আ’যম, মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মুহিউদ্দীন বড় পীর হযরত আব্দুল ক্বাদীর জ্বিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, মুজাদ্দিদুয্ যামান, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ্, সুলতানুল হিন্দ খাজা মঈনুদ্দীন হাসান চিশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হুজ্জাতুল ইসলাম, ইমামুল হুদা, মুজাদ্দিদে আ’যম ইমাম আবু হামিদ মুহম্মদ গায্যালী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমামুদ দুনিয়া ফি ইলমিল ফিক্হে ওয়াত্ তাসাউফ, সাইয়্যিদুল আবরার, ইমামুল মুহাক্বিকীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ্ দ্বীন, খাজা হযরত বাহাউদ্দীন নক্শাবন্দ বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি, আফজালুল আউলিয়া, মাহবুবে সুবহানী, ইমামে রব্বানী, শায়খ আহমদ ফারুকী সেরহিন্দী মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ অসংখ্য-অগণিত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম আজমাইন যাঁরা প্রত্যেকেই رجال من ابناء فارس এর অন্তর্ভুক্ত। তাঁরা প্রত্যেকই স্ব স্ব যুগে ‘সুরইয়া তারকা’র নিকট হতে দ্বীন ও ঈমান ফিরিয়ে আনার মত কঠিন কাজটি করেছেন। যাঁরা ছিলেন পারস্য, বুখারা ও সমরখন্দের অধিবাসী, ফারসী ভাষাভাষি। তাঁরা জাহির-বাতীন উভয় দিক থেকে সালমানুল খায়ের হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়ল্লাহু আনহু-এর সাথে মুনতাছিব বা সম্পৃক্ত। তাঁদের তরীক্বার খাছ সম্বন্ধ ছিলো ইমাম জাফর সাদিক রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর আত্মিক সম্পর্ক ছিলো হযরত ইমাম কাসিম ইবনে মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সাথে। তিনি আত্মিকভাবে সম্বন্ধিত ছিলেন সালমানুল খায়ির হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সঙ্গে। তিনি খাছভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন আফজালুন্ নাছ বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সাথে। আর তাঁর খাছ নিছবত ছিলো সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে।” (তাফসীরে মাযহারী- ৯/২৭৬)
আল্লাহ্ পাক-এর বড় ইহ্সান যে, হাল জামানার মুজাদ্দিদ ও ইমাম সাইয়্যিদুনা রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী ঐ সমস্ত মহান বুযূর্গগণের নিকট হতে খাছ নিয়ামতপ্রাপ্ত। তিনি ‘সুরইয়া’ তারকা হতে ঈমানকে ফিরে আনার মত যোগ্যতা লব্ধ কাজটিই করেতেছেন। ইতিপূর্বেই এর অনেক বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
(অসমাপ্ত)