মুহম্মদ মিজানুর রহমান খান লুটন, ইউকে।
সুওয়াল: “নবীজীর জন্মদিন পালন করা খ্রিস্টানদের কালচার তাই ইহা ঈমানদারদের কাজ নয়।” জনৈক ব্যক্তির এ বক্তব্য কতটুকু সঠিক?
জাওয়াব: উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূণ কুরআন শরীফ –সুন্নাহ শরীফ উনার খিলাফ ও কুফরী। কারণ খ্রিষ্টানরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্মদিন কখনোই পালন করেনা। এটা পালন করেন একমাত্র উনারাই যারা খালিছ ভাবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মুহব্বত করেন।
“মাওয়াহিবুল লাদু্ন্নিয়া, যুরক্বানী, সীরাতে হালবিয়া, মাদারিজুন নবুওয়াত” ইত্যাদি কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, “১২ই রবীউল আউওয়াল তারিখে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ এর পবিত্র স্থানে উপস্থিত হয়ে মীলাদ শরীফ উদযাপনের নিয়ম প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে।”
এবং “তাওয়ারীখে হাবীবে ইলাহ” কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, “১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ মীরাদুন নবী উদযাপনের রীতি মদীনা বাসীদের মধ্যেও চলে এসেছে।”
মুহাদ্দিস ইবনুল জূযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, “হেরমাইন শরীফাইন (মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ), মিশর, সিরিয়া, সমস্ত আরব দেশ এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মুসলমানদের মধ্যে প্রাচীন যুগ থেকে এ নিয়মই চলে এসেছে যে, রবীউল আউওয়াল শরীফে চাঁদ দেখতেই উনারা মীলাদ শরীফ-এর মাহফিলসমূহ আয়োজন করতেন, খুশি উদযাপন করতেন, গোসল করতেন, উন্নত মানের পোশাক পরিধান করতেন, বিভিন্ন ধরনের সাজসজ্জা করতেন, খুশবু লাগাতেন, এ দিনগুলোতে (রবীউল আউয়াল) খুব খুশী ও আনন্দ প্রকাশ করতেন, সামথ অনুসারে লোকজনের জন্য টাকা-পয়সা ও জিনিসপত্র খরচ করতেন এবং মীলাদ শরীফ পাঠ ও শ্রবণের প্রতি পূর্ণাঙ্গ গুরুত্ব দিতেন। এরই মাধ্যমে আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে মহান প্রতিদান ও মহা সাফল্যাদি অজন করতেন।” (বয়ানুল মীলাদিন নবী)
হযরত ইমাম আহমদ ক্বোস্তলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, “আল্লাহ পাক অসংখ্য রহমত নাযিল করুন ঐ ব্যক্তির উপর, যে রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার মাস উনার রাতগুলোকে এমন খুশির রাতে পরিণত করে যে, যার অন্তরে শানে রিসালতের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ রয়েছে তার অন্তরের উপর কিয়ামত সংঘটিত হয়ে যায়।” (আল মাওয়াহিব জুরকানী)
হযরত মুল্লা আল ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন,
اما اهل مكة يزيد اهتمامهم به على يوم العيد.
অথ: “মক্কাবাসীগণ মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি গুরুত্ব ঈদ অপেক্ষাও বেশি দিতেন।” (আল মাওয়েদ আর রাবী)
হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, “আমি একবার মক্কা মুয়াযযামায় মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিনে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জন্মের স্থানে উপস্থিত ছিলাম। তখন লোকেরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঐসব মু’জিযা বর্ণনা করছিলেন, যেগুলো হুযূর পাক পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শুভাগমনের পূবে ও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নুবুওওয়াত প্রকাশের পূর্বে প্রকাশ পেয়েছিলো। আমি হঠাৎ দেখতে পেলাম সেখানে জ্যোতিসমূহেরই ছড়াছড়ি। তখন আমি গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করলাম ও বুঝতে পারলাম যে, ঐ ‘নূর’ (জ্যোতি) হচ্ছে ঐসব ফেরেশতারই, যাঁদেরকে এমন মাহফিলসমূহের (মীলাদ শরীফ ইত্যাদি) জন্য নিয়োজিত রাখা হয়েছে। অনুরূপভাবে আমি দেখেছি ‘রহমতের নূর’ ও ফেরেশতাদের নূর’ ও ফেরেশতাদের নূর’ সেখানে সেখানে মিলিত হয়েছে।” (ফুয়ুযূল হেরমাইন)
এ প্রসঙ্গে বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ “আন নি’য়ামাতুল কুবরা আলঅল আলাম” কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
قال ابو بكر الضديق رضى الله عنه من أنفق درهما على قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم كان رفيقى فى الجنة.
অথ: “হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, যে ব্যক্তি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফ পাঠ (মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপলক্ষে এক দিরহাম ব্যয় করবে সে জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে।” সুবহানাল্লাহ!
وقال عمر رضى الله عنه من عظم مولد النبى صلى الله عليه وسلم فقد احيا الاسلام.
অথ: “হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে (বিলাদত দিবসকে) বিশেষ মর্যাদা দিল সে মূলত: ইসলামকেই পূনরুজ্জীবিত করলো।” (সুবহানাল্লাহ)
وقال عثمان رضى الله عنه من أنفق درهما على قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم فكانما شهد غزوة يدر وحنين.
অথ: “হযরত উছমান আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে এক দিরহাম খরচ করল সে যেন বদর ও হুনাইন যুদ্ধে শরীক থাকলো।”
وقال على رضى الله عنه وكرم الله وجهه من عظم مولد النبى صلى الله عليه وسلم وكان سببا لقرائته لا يخرج من الدنيا الا بالايمان ويدخل الجنة يغير حساب.
অথ: “হযরত আলী আলাইহিস সালাম তিনি বণনা করেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিশেষ মর্যাদা প্রদান করলো সে ব্যক্তি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” সুবহানাল্লাহ!
وقال حسن اليضرى رضى الله عنه ودرت لو كان لى مثل جبل أحد ذهبا فانفقته على قرائة مولد النبى صلى الله عليه وسلم.
অথ “(বিশিষ্ট তাবেয়ী) হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার একান্ত ইচ্ছা হয় যে, আমার যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বণ থাকত তাহলে তা মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে বংয় করতাম।” সুবহানাল্লাহ!
وقال الامام الشافعى رحمه الله من جمع لمولد النبى صلى الله عليه وسلم اخوانا وهيأ طعاما واخلى مكانا وعمل احسانا وصار سببا لقر ائته بعثه الله يوم القيامة مع الصديقين والشهداء والصالحين ويكون فى جنات انعيم.
অথ: “হযরত ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদ শরীফ পাঠ বা মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন উপলক্ষে লোকজন একত্রিত করলো এবং খাদ্য তৈরী করলো ও জায়গা নির্দিষ্ট করলো এবং মীলাদ পাঠের জন্য উত্তমভাবে (তথা সুন্নাহ ভিত্তিক) আমল করলো তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক হাশরের দিন ছিদ্দীক শহীদ ছলিহীনগণের সাথে উঠাবেন এবং উনার ঠিকানা হবে জান্নাতে নাঈমে।” সুবহানাল্লাহ!
وقال جنيد البغدادى قدص الله سره من حضر مولد النبى صلى الله عليه وسلم وعظم قدره فقد فاز بالايمان.
অথ: “হযরত জুনাইদ বাগদাদী ক্বাদ্দাসাল্লাহু সিররাহু রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আয়োজনে উপস্থিত হলো এবং উপযুক্ত সম্মান প্রদশন করলো সে তার ঈমানের দ্বারা সাফল্য লাভ করবে অর্থাৎ সে বেহেশতী হবে।” সুবহানাল্লাহ!
وقال سلطان العارفين الامام جلال الدين السيوطى قدس الله سره ونور ضريحه فى كتابه المسمى بالوسائل فى شرح الشمائل ما من بيت او مسجد اومحلة قرى فيه مولد النبى صلى الله عليه وسلم الاحفت الملائكة ذلك البيت اوالمسجد او المحلة وصلت الملائكة على أهل ذلك المكان وعمهم الله تعالى بالرحمة والرضوان واما امطوقون بالنور يعنى جبرائيل وميكائيل واسراقيل وعزرائيل عليهم السلام فانهم يصلون على من كان سيبا لقرائة مولد النبى صلى الله عليه وسلم.
অথ: “সুলতানু আরিফীন হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “ওয়ায়িল পী শরহি শামায়িল” নামক কিতাবে বলেন, যে কোন ঘরে অথবা মসজিদে অথবা মহল্লায় মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয় বা মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করা হয় সেখানে অবশ্যই আল্লাহ পাক উনার ফেরেশতাগণ বেষ্টন করে নেন। আর উনারা সে স্থানের অধিবাসীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করতে থাকেন। আর আল্লাহ পাক তাদেরকে স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টির আওতাভুক্ত করে নেন। আর নূর দ্বারা সজ্জিত প্রধান চার ফেরেশতা, অর্থাৎ হযরত জিব্রাঈল, মীকাঈল, ইসরাফিল ও আজরাইল আলাইহিমুস সালাম মীলাদ শরীফ পাঠকারীর উপর বা মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনকারীর উপর ছলাত-সালাম পাঠ করেন।” সুবহানাল্লাহ! এমনকি দেওবন্দী ব্যক্তিবর্গের পীর ও মুর্শিদ হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, “মওলেদ শরীফ (মীলাদুন নবী) ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমস্ত হেরমাঈন শরীফাইনবাসীই উদযাপন করেন।”
এখানে উল্লেখ্য, কুরআন-সুন্নাহ সম্মত কোন আমল অন্য কোন ধর্মাবলম্বী পালন করলে যে তা মুসলমানের জন্য পালন করা যাবে না এ আক্বীদা বা বক্তব্য সম্পূণ ভুল, অশুদ্ধ ও কুফরী।
যেমন, অনেক বিধর্মী দাঁড়ি রাখে সে জন্য মুসলমান কি দাঁড়ি রাখা ছেড়ে দিবে? কখনোই নয়। বরং মুসলমান যে বিষয়টি পালন করবে সে বিষয়টি শরীয়ত সম্মত হলেই তা পালন করবে। আর শরীয়ত সম্মত না হলে তা পালন করা যাবে না।
মূলত: কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ উনার বণনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত দিবসকে খুশির দিন হিসেবে উদযাপন করা করা আল্লাহ পাক উনার ফেরেশতাকুল, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবায়ে কিরাম, ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়া কিরাম সকলেরই সুন্নত।
অতএব, এ মহান সুন্নতকে বেদ্বীন খ্রিস্টানদের কালচারের সাথে তুলনা করা সম্পূণ কুফরীর শামিল।
{দলীলসমূহ: ১. মাযহারী, ২. কুরতবী, ৩. খাযেন, ৪. বাগবী, ৫. দুররে মানছুর ৬. রুহুল মায়ানী ৭. রুহুল বয়ান, ৮. কবীর ৯. মিশকাত, ১০. মিরকাত ১১. আশয়াতুল লুময়াত ১২. লুময়াত ১৩. শরহুত ত্বীবী ১৪. আত তালিকুছ ছবীহ ১৫. মুযাহিরে হক্ব, ১৬. মাওয়াহিবুল লাদুননিয়া, ১৭. মাওলুদুল কবীর, ১৮. দুররুল মুনাজ্জাম, ১৯. সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা, ২০. কিতাবুততানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, ২১. বয়ানুল মালাদীন নবী, ২২. আল মাওয়াহিব যুরকানী, ২৩. আল মাওরেদ আল বারী, ২৪. ফুরুজুল হেরমাইন, আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ইত্যাদি।}
একেএম মনছুরুল হায়দার
সভাপতি আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত
দাগনভূয়া, ফেনী।
সুওয়াল: হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদত বরনকে কেন্দ্র করে অনেকে জলীলুল ক্বদর ছাহাবী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে দোষারোপ করে থাকে। এটা কতটুকু শরীয়তসম্মত? দয়া করে জানাবেন।
জাওয়াব: কোন নবী-রসূল আলাইহিস সালামকে যেমন কোন ব্যাপারে দোষারোপ করা জায়িয নেই তদ্রুপ কোন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে উনাদেরকেও কোন ব্যাপারে দোষারোপ করা জায়িয নেই।
আর আল্লাহ পাক উনার কালাম পাক মুবারকে ইরশাদ করেন,
ولاتزر وازرة وزر اخرى.
অথ: “একজনের পাপের বোঝা অপরজন বহন করবে না।” (পবিত্র সূরা আনয়াম: আয়াত শরীফ-১৬৪৪)
এ আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সন্তানের অপরাধের জন্য পিতাকে এবং পিতার অপরাধের জন্য সন্তানকে দায়ী করা বৈধ নয়। যেমন কাবিলের অপরাধের জন্য হযরত আদম আলাইহিস সালামকে, কেনানের অপরাধের জন্য হযরত নূহ আলাইহিস সালামকে দায়ী করা বৈধ নয়, তেমনি ইয়াযীদের অপরাধের জন্য হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে দায়ী করাও বৈধ নয়। বরং সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
ليغيظ بهم الكفار.
অথ: “কাফিররাই উনাদের (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের) প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে।” (সূরা ফাতহ/২৯)
আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
من غاظه اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم فهو كافر.
অথ: “যে ব্যক্তি হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, সে কাফির।”
এখানে একটা বিষয় মনে রাখা দরকার যে, আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদরের দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মর্মান্তিক শাহাদতে মুসলিম উম্মাহর অন্তর ব্যাথাতুর হবে তা চরম সত্য কথা এবং এটি ঈমান মজবুতীর আলামতও বটে। কিন্তু এজন্য হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যিনি আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জলীলুল ক্বদর ছাহাবী উনাকে দোষারোপ করা কস্মিনকালেও শরীয়ত সম্মহত হতে পারে না।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
لا تسبوا اصحابى فلو ان احد كم انفق مثل احد ذهبا مابلغ مد احدهم ولا تصيفه
অথ: “তোমরা আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে গালী দিওনা। কেননা যদি তোমাদের কউ উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বণ আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান কর, তবও ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের এক মুদ বা অধ মুদ গম দান করার ফযীলতের সমপরিমাণ ফযীলত অর্জন করতে পারবে না।” (বুখারী শরীফ)
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে,
فمن سبهم قعليه لعنة الله والمبتكة والناس اجمعين ولا يقبل الله منهم صرفا ولاعدلا.
অথ: “যে ব্যক্তি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে গালী দেয়, তাদের প্রতি ফেরেশতা, মানুষ ও সকল মাখলুকাতের লা’নত এবং তাদের কোন ফরয ও নফল ইবাদত আল্লাহ পাক কবুল করবেন না।” (মুযাহিরে হক্ব)
যারা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে দোষারোপ করে মূলত: তারা উনার মহান মর্যাদা সম্পর্কে নেতায়েতই জাহিল, অজ্ঞ।
স্মরণযোগ্য যে, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবীগণের মধ্যে একজন বিশেষ শ্রেণীর ছাহাবী যাকে উলুল আযম বা জলীলুল ক্বদর ছাহাবী বলা হয়। তিনি ছিলেন আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুরলিমীন, কাতিবীনে ওহীর সদস্য, হাদীছ শরীফ উনার রাবী, ফক্বীহ ইত্যাদি মর্যাদার অধিকারী। উনার ইলমের পুর্ণতা, হিদায়েতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা, উনার দ্বারা লোকদের হিদায়েত লাভ, কিতাব শিক্ষাদান এবং জাহান্নাম থেকে নিস্কৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তায়ালার নিকট দোয়া করেছেন।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اول جيش يغزون البحر قد او جبوا.
কঅথ: “ামার উম্মতের প্রথম যে দল সমুদ্রের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে তাদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব।” (বুখারী শরীফ)
হযরত ইমাম তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ২৮ হিজরীতে সর্বপ্রথম সমুদ্র যুদ্ধের মাধ্যমে কাবরাসের উপর আক্রমণ করেন এবং কাবরাস তিনিই বিজয় করেন।”
হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মর্যাদা-মর্তবার মধ্যে অন্যতম মর্যাদা হলো- তিনি ছিলেন একজন আদিল বা ইনসাফগার খলীফা। উনার ন্যায় বিচার ও ইনসাফ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে, জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ছাহাবী হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “আমার দৃষ্টিতে হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, এরপর হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চেয়ে অধিক ন্যায় বিচারক কউ নেই।”
এক ব্যক্তি মুয়াফা ইবনে ইমরানকে বললো, ন্যায় বিচারের দিক দিয়ে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াললাহু তায়ালা আনহু উনার মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ? কেথা শুনে তিনি রাগাম্বিত হয়ে বললেন, “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি কোন প্রকার কিয়াস করা যাবে না। হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তো হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবী, কাতিবে ওহী ও আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘আমীন’ (আমানতদার)।” আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, “হযরত মুয়াবিয়া রদিবয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শ্রেষ্ঠ, না হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলােইহি শ্রেষ্ঠ? তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার কছম! হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ঘোড়ায় চড়ে জিহাদে বেতেন, তখন ঘোড়ার নাকে যে ধুলোবালিগুলো প্রবেশ করতো, সে ধুলোবালিগুলোও হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বহুগুণে শ্রেষ্ঠ।”
সুতরাং এত সব মর্যাদা ও মর্তবার পরও যারা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, উনাদের নাকেছ বলে গালী দেয়, তাদের জন্য হযরত ইমাম শিহাবুদ্দীন খাফফাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কথাই অধিক প্রযোজ্য। তিনি বলেন, “ যে ব্যক্তি হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ুনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে গালী দেয়, নাকেছ বলে, সমালোচনা করে, সে হাবিয়া দোযখের কুকুরসমূহের মধ্য হতে কেটি কুকুর।”
উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুধু চাহাবীই ছিলেন না, বরং উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, জলীলুল ক্বদর ছাহাবী ও খলীফা ছিলেন। সুতরাং হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ সকল ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম সম্পর্কে সাবধানে কথা বলতে হবে। মূলত: উনাদের সকলের প্রতিই সুধারণা পোষণ করতে হবে, মুহব্বত করতে হবে এবং উনাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণও করতে হবে।
কেননা উনারা হলেন দ্বীনের ইমাম এবং হাবীবে খোদা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শের বাস্তব প্রতিফলন। এজন্য উনারা যেভাবে ঈমানের স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং আমলে যেভাবে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন, ঠিক সেভাবেই ঈমানের স্বীকৃতি দেয়া এবং আমলে নিয়োজিত হওয়া পরবর্তী উম্মতের জন্য দায়িত্ব-কতব্য।
এ প্রসঙ্গে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
امنوا كما امن الناس.
অথ: “তোমরো ঈমান আন যেভাবে অন্যান্য লোক অর্থাৎ ছাহাবায়ে কিরাম ঈমান এনেছেন।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা/১৩)
আল্লাহ পাক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন,
رضى الله عنهم ورضوا عنه.
অর্থ: “আল্লাহ পাক তিনি উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং উনারাও আল্লাহ পাক উনার প্রতি সন্তুষ্ট।” (পবিত্র সূরা বাইয়্যিনাহ/৮)
এ আয়াত শরীফ উনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয় যে, আল্লাহ পাক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি শুধু সন্তুষ্টই নন বরং উনাদেরকে যারা অনুসরণ করবে মধ্যস্থতায় অথবা বিনা মধ্যস্থতায় কিয়ামত পর্যন্ত উনাদের সকরে প্রতিও আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ শরীফ-এর সন্তুষ্টি ঘোষণা করে দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক তিনি করেছেন,
والذين اتبعوهم باحسان رضى الله عنهم.
অর্থ: “আল্লাহ পাক ঐ সকল বান্দাগণের প্রতিও সন্তুষ্ট যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরামকে উত্তম রূপে অনুসরণ করেন।” (কিয়ামত পযন্ত তা মধ্যস্থতায় হোক অথবা বিনা মধ্যস্থতায়ই হোক)
( পবিত্র সূরা তওবা শরীফ /১০০)
এ আয়াত শরীফ উনার প্রেক্ষিতে বর্ণিত রয়েছে, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেখানে ক্বদম মুবারক রেখেছেন সেখানে আফযালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যেখানে ক্বদম মুবরক রেখেছেন, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি সেখানে মাথা মুবারক রেখেছেন। যাঁর কারণে উনার প্রতি শত শত বার আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে তরফ থেকে ইলহাম ইলক্বাহ হয়েছে,
عقرت لك ومن توسل بك بواسطة او بغير وأسطة الى يوم القيامة.
অথ: “আমি আপনাকে ক্ষমা করলাম এবং যারা আপনাকে মধ্যস্থতায় অথবা বিনা মধ্যস্থতায় উছীলা করল তাদেরকে ও ক্ষমা করলাম।
এই ইলহাম-ইলকাবআহ শুধু হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতিই হয়নি; বরং যে সকল আউলিয়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে সুক্ষ্মাতি সুক্ষ্ম, পুঙ্খানু পুঙ্খ অনুসরণ-অনুকরণ করেছেন উনাদে সকলের প্রতিই এই প্রকার ইলহাম ইলক্বাহ হয়েছে। যেমন (১) হযরত গাউসুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, (২) হযরত সুলতানুল হিন্দ, খাজা গরীবে নেওয়াজ হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি, (৩) ইমামুত তরীক্বত হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি, (৪) ইমামুল আইম্মাহ হযরত বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমুখ।
এ আয়াত শরীফ-এর পরিপ্রেক্ষিতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اصحابى كالنجوم بايهم اقتديتم اهتديتم.
অর্থঃ- “আমার ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ তারকা সাদৃশ্য, তাঁদের যে কাউকে তোমরা অনুসরণ করবে, তোমরা হিদায়েত প্রাপ্ত হবে।” (মিশকাত শরীফ) অতএব, আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি লাভ করতে চাইলে অবশ্যই ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে এবং তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, সমালোচনা করা ও নাকেস বলা হতে বিরত থাকতে হবে। {দলীলসমূহঃ- (১) আহকামুল কুরআন জাসসাস্, (২) কুরতুবী, (৩) মাযহারী, (৪) রুহুল বয়ান, (৫) রুহুল মায়ানী, (৬) খাযেন, (৭) বাগবী, (৮) কবীর, (৯) তাবারী, (১০) যাদুল মাছীর, (১১) দুররে মনছুর, (১২) ইবনে কাছীর, (১৩) বুখারী, (১৪) তিরমিযী, (১৫) মিশকাত, (১৬) ফতহুল বারী, (১৭) উমদাতুল ক্বারী, (১৮) ইরশাদুস্ সারী, (১৯) তাইসীরুল ক্বারী, (২০) মিরকাত, (২১) আশয়াতুল লুমুয়াত, (২২) লুমুয়াত, (২৩) শরহুত্ ত্বীবী, (২৪) মুযাহিরে হক্ব, (২৫) মাসাবাতা বিস্ সুন্নাহ্, (২৬) মাজমাউয্ যাওয়ায়িদ, (২৭) তারীখুল ইসলাম লি হাফিয ইবনে যাহাবী, (২৮) বেদায়া, (২৯) নাসীমুর রিয়ায, (৩০) ফতওয়ায়ে হাদীছিয়াহ্, (৩১) মুসামেরা, (৩২) তাফহীমাতে ইলাহিয়া, (৩৩) মাবদা মায়াদ, (৩৪) রওজাতুল কাইউমীয়া, (৩৫) মাকতুবাত শরীফ ইত্যাদি} {বিঃ দ্রঃ বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত ২৪, ৯২তম সংখ্যা পাঠ করুন।}
মুহম্মদ তছলিমুদ্দীন বসুনিয়া সভাপতি- যুব আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত কদমতলা শাখা, উলিপুর, কুড়িগ্রাম।
সুওয়ালঃ আশুরাকে কেন্দ্র করে কিছু লোক নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম সম্পর্কে এলোমেলো বক্তব্য পেশ করে থাকে। যেমন তারা বলে থাকে যে, হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম গন্ধম খেয়ে ভুল করেছিলেন ইত্যাদি। এখন আমার প্রশ্ন হলো সত্যিই কি নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম ভুল-ত্রুটি করেছিলেন অথবা করেননি? সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো- কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ কখনও ভুল করেননি। ইচ্ছাকৃত তো নয়ই, অনিচ্ছাকৃতও নয়। অর্থাৎ নবী আলাইহিমুস্ সালামগণ কোন ভুলই করেননি। (শরহে আক্বাইদে নসফী, ফিক্বহে আকবর, তাকমীলুল ঈমান, আক্বাইদে হাক্কাহ) অর্থাৎ সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণই ছিলেন আল্লাহ্ পাক-এর খাছ ও মনোনীত বান্দাহ্গণের অন্তর্ভুক্ত। তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কুরআন শরীফের একাধিক স্থানে ইরশাদ হয়েছে, نوحى اليهم.
অর্থঃ- “আমি তাঁদের (নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের) প্রতি ওহী পাঠাতাম।” (সূরা ইউসূফ/১০৯, নহল/৪৩, আম্বিয়া/৭) অর্থাৎ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের যাবতীয় কার্যাবলীই ওহীর দ্বারা (আল্লাহ্ পাক কর্তৃক) পরিচালিত হতো। যার পরিপ্রেক্ষিতে আক্বাইদের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে,
الانبياء عليهم السلام كلهم معصومون.
অর্থঃ- “সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণ মা’ছূম বা নিস্পাপ।”
আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে,
الانبياء عليهم اسلام كلهم منزحون عن الصغائر والكيائر والكفر والقبائح.
অর্থঃ- “সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণই ছগীরা, কবীরা, কুফরী এবং অপছন্দনীয় কাজ হতেও পবিত্র।”
অতএব, যারা নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের ভুল সম্পর্কে বলে থাকে, আক্বাইদ সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই তারা তা বলে থাকে। যেমন তারা বলে থাকে যে, হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম গন্ধম খেয়ে ভুল করেছিলেন। (নাউযুবিল্লাহ্) মূলতঃ তাদের একথা সঠিক নয়। প্রকৃত ঘটনা হলো- আল্লাহ্ পাক যখন হযরত আদম আলাইহিমুস্ সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালামকে আদেশ করেছিলেন যে,
لاتقربا هذه الشجرة.
অর্থঃ- “তোমরা এই (গন্ধমের) গাছের নিকটবর্তী হয়ো না।” (সূরা বাক্বারা/৩৫) তখন তাঁরা আল্লাহ্ পাক-এর এ আদেশ অনুযায়ী সে গাছের নিকটবর্তী হননি। বরং উক্ত গাছের অনুরূপ বিপরীত দিকের অন্য একটি গাছ দেখিয়ে, ইবলিস শয়তান এসে হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালামকে মিথ্যা কছম খেয়ে বলেছিল যে, যদি আপনারা এ গাছের ফল খান, তবে আপনারা ফেরেশ্তা হয়ে যাবেন অথবা স্থায়ীভাবে বেহেশ্তে বসবাস করতে পারবেন। কোন কোন বর্ণনা মুতাবিক, তখন হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালাম সে গাছ হতে ফল এনে শরবত বানিয়ে হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে খাইয়েছিলেন। অপর বর্ণনায়, ফল কেটে খাইয়েছিলেন। এ ঘটনা হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর অজান্তেই সংঘটিত হয়েছিল। সুতরাং যা অজান্তে সংঘটিত হয়, তা কি করে ভুল বা অপরাধ হতে পারে? বাস্তবিক তা কখনই ভুল হতে পারেনা। (সমূহ তাফসীরের কিতাব)
এর মেছালস্বরূপ উল্লেখ করা যায়- হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর শাহাদতের ঘটনা। তিনি যে শাহাদত বরণ করেছিলেন, এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। তাঁকে ইসলামের শত্রুরা শহীদ করার জন্য একে একে পাঁচবার বিষ পান করায়। কিন্তু আল্লাহ্ পাক-এর রহ্মতে তিনি প্রত্যেক বারই বেঁচে যান। ষষ্ঠবার তাঁকে শহীদ করার জন্য তাঁর পানির কলসিতে, যে কলসির মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখতেন, (যেন তার ভিতর কিছু ফেলা না যায়,) সেই কাপড়ের উপর শত্রুরা হিরক চূর্ণ বিষ তাঁর অজান্তে মিশিয়ে দিয়েছিল। তিনি গভীর রাত্রিতে হিরক চূর্ণ বিষ মিশ্রিত পানি কলসি থেকে ঢেলে পান করেন, যার ফলশ্রুতিতে তিনি শাহাদত বরণ করেন। যা তাঁর অজান্তেই সংঘটিত হয়েছিল। (সিররুশ্ শাহাদাতাঈন, শুহাদায়ে কারবালা, সীরতে ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) এখন প্রশ্ন উঠে, শরীয়তের দৃষ্টিতে তাঁর শাহাদতকে আত্মহত্যা বলতে হবে, না ভুল করার কারণে ইন্তিকাল করেছেন, তা বলতে হবে? মূলতঃ উপরোক্ত দু’টির কোনটিই বলা যাবেনা। যদি কেউ কোন একটিও বলে, তবে সে মিথ্যা তোহ্মত দেয়ার গুণাহে গুণাহ্গার হবে, যা কুফরীর শামিল হবে। তদ্রুপ হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর ঘটনাও। যা তাঁর অজান্তে সংঘটিত হয়েছিল।
অনুরূপ অন্যান্য নবী আলাইহিমুস্ সালাম-এর ঘটনাও। মানুষ সঠিক ইতিহাস না জানার কারণে এবং কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ-এর সঠিক ব্যাখ্যা না বুঝার কারণে, নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের শানে বেয়াদবী মূলক কুফরী কথা-বার্তা বলে থাকে।
হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের সাথে কতটুকু আদব রক্ষা করতে হবে, সে প্রসঙ্গে কিতাবে, ইমামুত তরীকত ওয়াশ শরীয়ত, হযরত ইমাম র্সারী সাক্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ঘটনা উল্লেখ করা হয়, যিনি তাঁর যামানায় আল্লাহ্ পাক-এর লক্ষ্যস্থল ছিলেন। যিনি ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত ছিলেন। তিনি একবার স্বপে¦ দেখেন আল্লাহ্ পাক-এর নবী হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্ সালামকে। দেখে প্রশ্ন করেছিলেন, হে আল্লাহ্ পাক-এর নবী হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্ সালাম! আপনার অন্তরে যদি আল্লাহ্ পাক-এর মুহব্বত সত্যিকার ভাবেই প্রবল হতো, তাহলে আপনি কি করে আপনার ছেলে হযরত ইউসুফ আলাইহিস্ সালাম-এর জুদায়ীর (বিচ্ছেদের) কারণে তাঁর মুহব্বতে চল্লিশ বছর যাবৎ কেঁঁদে কেঁদে আপনার চক্ষু নষ্ট করেছিলেন? একথা বলার সাথে সাথে গায়েব থেকে নেদা (আওয়াজ) হলো, “হে র্সারী সাক্তী! মুখ সামলিয়ে নবীদের শানে কথা বল।” এরপর হযরত ইউসূফ আলাইহিস্ সালামকে তাঁর সামনে পেশ করা হলে তিনি বেহুশ হয়ে পড়ে যান এবং এভাবে একাধারা তের দিন, তের রাত্রি বেহুশ থাকার পর হুঁশ ফিরে পান। তখন গায়েব থেকে পুনরায় নেদা হয়, “আল্লাহ্ পাক-এর নবীদের শানে আদবের খিলাফ কথা বললে এরূপই অবস্থা হয়ে থাকে।” (তাযকিরাতুল আউলিয়া)
উপরোক্ত ওয়াকেয়ার আলোকে প্রতিভাত হয় যে, আদব কত সূক্ষ্ম জিনিস এবং হযরত নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের ক্ষেত্রে কি পরিমাণ আদবের সাথে কথা বলতে হবে এবং তাঁদের সাথে বেয়াদবির কি পরিণতি? সত্যিই তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়। বেয়াদব সম্পর্কে হযরত জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
بے ادب محروم گشت از اطف رب.
অর্থঃ- “বেয়াদব আল্লাহ্ পাক-এর রহ্মত থেকে বঞ্চিত।” (মসনবী শরীফ) অতএব, প্রতীয়মান হয় যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের প্রতি কতটুকু আদব রক্ষা করা দরকার।
উল্লেখ্য যে, হযরত র্সারী সাক্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইমামুজ্জামান, ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত ও আল্লাহ্ পাক-এর লক্ষ্যস্থল হওয়া সত্বেও তাঁর প্রতি সতর্কবাণী ও সাবধানবাণী উচ্চারিত হয়েছে। মূলতঃ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ ভুল করা তো দূরের কথা, কোন প্রকার অপছন্দনীয় কাজও তাঁরা করতেন না। বরং সর্ব প্রকার অপছন্দনীয় কাজ থেকেই বেঁচে থাকতেন বা পবিত্র থাকতেন, সে প্রসঙ্গে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র সীরত মুবারক থেকে একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়- “একবার আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুজরা শরীফে বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাত করার অনুমতি চাইলেন। এ সংবাদ উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট পৌঁছালেন। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে ব্যক্তিকে অপেক্ষা করতে বল। একথা বলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পাগড়ী মুবারক, জামা বা কোর্তা মুবারক ইত্যাদি গুছগাছ করে নিলেন। এমন কি হুজরা শরীফ থেকে বের হওয়ার মুহূর্তে পানির গামলাতে নিজের চেহারা মুবারক দেখে গুছিয়ে নিচ্ছিলেন। তা দেখে সে সময় হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনিও কি এরূপ করেন? তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “কিরূপ করি?” হযরত আয়িশা সিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, “এরূপ পরিপাটি।” এর জবাবে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “হ্যাঁ, আমরা আল্লাহ্ পাক-এর নবী। আমাদের কোন কাজ কারো অপছন্দ হলে, সে ঈমান হারা হয়ে যাবে।” (আল্ মুরশিদুল আমীন) অতএব, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ যে কতটুকু অপছন্দনীয় কাজ থেকে বেঁচে থাকতেন, এ হাদীস শরীফের বর্ণিত ঘটনা তারই প্রমাণ। তাহলে কি করে এ কথা বলা যেতে পারে বা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে যে, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ ভুল-ত্রুটি করেছিলেন? বস্তুতঃ এরূপ আক্বীদা পোষণ করা সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী।
তদ্রুপ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের সম্পর্কে ও তাঁদের শানের খিলাফ কোন অর্থ গ্রহণ করা যাবেনা বরং এমন অর্থ ব্যবহার বা গ্রহণ করতে হবে, যাতে তাঁদের শান সমুন্নত থাকে। উল্লেখ্য যে, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীস শরীফ বর্ণনা কারীদেরকে রাবী বলা হয়। এই রাবীগণের মধ্যে যাঁরা প্রথম শ্রেণীর, তাঁদেরকে বলা হয় ছেক্বাহ্ রাবী।
হাদীস বিশারদগণ, ছেক্বাহ্ রাবী হওয়ার জন্য যে মানদন্ড নির্ধারণ করেছেন, তার মধ্যে মূল বিষয় হচ্ছে- (১) আদালত ও (২) জব্ত। জব্ত হচ্ছে- প্রখর স্মরণশক্তি। তা এমন যে, একবার শুনলে আর ভুলেনা। আর আদালত-এর মধ্যে যে শর্তসমূহ রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান হলো- দু’টি। যথা- (ক) তাক্বওয়া, (খ) মুরুওওয়াত। (ক) তাক্বওয়া হচ্ছে- কুফরী, শিরিকী, বিদ্য়াত ও ফাসিকী কাজ থেকে বেঁচে থাকার সাথে সাথে কবীরাহ্ গুণাহ্ থেকে, এমনকি ছগীরাহ্ গুণাহ্ও বার বার করা থেকে বেঁচে থাকা। হাদীস শরীফ সম্পর্কে মিথ্যা না বলা। সাধারণ কাজে মিথ্যা না বলা। অজ্ঞাত নামা না হওয়া। অপরিচিত না হওয়া। গাফলতী না থাকা। বদ আক্বীদা সম্পন্ন না হওয়া। বে আমল না হওয়া। (খ) আর মুরুওওয়াত হচ্ছে-
অশ্লীল-অশালীন, অশোভনীয়, অপছন্দনীয় আচার-আচরণ, উঠা-বসা, চাল-চলন, যেখানে-সেখানে ইস্তিঞ্জা করতে বসা, হাট-বাজারে গিয়ে চিৎকার করা, রাস্তা-ঘাটে লোকজনের সাথে অনর্থক ঝগড়া-ঝাটি করা ও তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হওয়া এমনকি দৃষ্টিকটু কাজ থেকে বিরত থাকা। যেমন- রাস্তায় হেঁটে হেঁটে খাদ্য খাওয়া, রাস্তায় অট্টহাস্য করা, চিৎকার করা ইত্যাদি। (তাদরীবুর রাবী, মুকাদ্দামাতুশ শায়খ, মীযানুল আখবার, নূরুল আনোয়ার, মুকাদ্দামাতুল মিশকাত) এখন ফিকিরের বিষয় এই যে, হাদীস শরীফ বর্ণনাকারী ছেক্বাহ্ রাবী যদি এত গুণ ও যোগ্যতাসম্পন্ন এবং তাক্বওয়াধারী হন অর্থাৎ হাদীস বিশারদ উম্মতে মুহম্মদীর নিকট যদি ছেক্বাহ্ রাবী হিসেবে হাদীস বর্ণনাকারী হওয়ার জন্য ছগীরাহ্ গুণাহ্ বার বার না করা ও দৃষ্টিকটু সাধারণ অপছন্দনীয় কাজও না করা শর্ত হয়, তাহলে যাঁরা আল্লাহ্ পাক-এর নবী হবেন এবং আল্লাহ্ পাক-এর কালাম বর্ণনা করবেন, তাঁদের জন্য আল্লাহ্ পাক কি মানদন্ড নির্ধারণ করেছেন বা তাঁদের ক্ষেত্রে কতটুকু মা’ছূম ও মাহ্ফুজ হওয়া নির্দিষ্ট করেছেন তা অনুধাবনীয়।
অতএব যে কোন লোকের জন্যই নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের শানের বিন্দুমাত্র খিলাফ কথাবার্তা বলা সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরী। এ ধরণের কুফরী আক্বীদা থেকে বেঁচে থাকা সমস্ত মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয । {দলীলসমূহঃ- (১) আহকামুল কুরআন জাসসাস্, (২) কুরতুবী, (৩) মাযহারী, (৪) রুহুল বয়ান, (৫) রুহুল মায়ানী, (৬) খাযেন, (৭) বাগবী, (৮) কবীর, (৯) তাবারী, (১০) যাদুল মাছীর, (১১) দুররে মনছুর, (১২) ইবনে কাছীর, (১৩) শরহে আক্বাইদে নছফী, (১৪) ফিক্বহে আকবর, (১৫) তাকমীলুল ঈমান, (১৬) আক্বাইদে হাক্কাহ, (১৭) তাযকিরাতুল আউলিয়া, (১৮) মসনবী শরীফ, (১৯) আল মুরশিদুল আমীন, (২০) তাদরীবুর রাবী, (২১) মুকাদ্দামাতুশ্ শায়খ, (২২) মীযানুল আখবার, (২৩) মুকাদ্দামাতুল মিশকাত, (২৪) নূরুল আনোয়ার, (২৫) রুয়াতুল হাদীস, (২৬) নুখবাতুল ফিক্র, (২৭) কিফায়া, (২৮) কাশফুল আসরার ইত্যাদি।}
মুহম্মদ তাজুল ইসলাম (বি, এস, সি পরিক্ষার্থী/০২)
সভাপতি- ছাত্র আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত কাউনিয়া শাখা, রংপুর।
সুওয়ালঃ গত ২১ জানুয়ারী/২০০২ ঈঃ দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় ‘ইসলাম ও জীবন’ পাতায় মাওলানা শাকের হোসাইন শিবলির লিখা “মুসলিম উম্মাহ্র সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া” শীর্ষক আর্টিকেলে বলা হয়েছে, “অনেকেরই ধারণা পবিত্র হজ্ব পালন হয়তো সম্ভব নাও হতে পারে, আর হজ্বের পরই যেহেতু বিশ্বে এটাই সবচেয়ে বড় ধর্মীও অনুষ্ঠান তাই কিছুতেই এটা মিস করা না। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা তো বলেই ফেলেন, বিশ্ব ইজতেমা হল গরিবদের হজ্ব। এখন আমার সুওয়াল হচ্ছে- প্রচলিত তাবলীগীদের উল্লিখিত আবেগপূর্ণ বক্তব্য “বিশ্ব ইজতেমা হলো গরিবদের হজ্ব” এ বক্তব্য কুরআন ও সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে কতটুকু সঠিক? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের বার্ষিক সমাবেশ বা ইজ্তেমাকে গরীবের হজ্ব বলা ও হজ্বের সাওয়াবের সাথে তুলনা করা নিতান্তই অজ্ঞতাসূচক, বিভ্রান্তিমূলক ও কুফরীর শামিল। যে ব্যক্তি এরূপ আক্বীদা পোষণ করবে এবং এ আক্বীদা পোষণ করা অবস্থায় মারা যাবে, সে ঈমান হারা হয়ে চির জাহান্নামী হবে। কারণ হজ্ব হলো ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ বা ভিত্তির মধ্যে একটি বিশেষ ভিত্তি।
এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابن عمر رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بنى ااسلام على خمس شهادة ان لا اه الا الله وان محمدا عبده ورسوله واقام الصلوة وابتاء الزكوة والحج وضوم رمضان.
অর্থঃ- “হযরত ইব্নে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত- (১) স্বাক্ষ্য দেয়া আল্লাহ্ পাক ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই ও হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রসূল। (২) নামায কায়িম করা, (৩) যাকাত দেয়া, (৪) হজ্ব করা, (৫) রমাদ্বান মাসে রোযা রাখা।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, তাইসীরুল ক্বারী) আল্লাহ্ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
لله على الناس حج البيت من استطاع اليه سبيلا.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তির হজ্ব করার সামর্থ আছে তার প্রতি আল্লাহ্ পাক-এর জন্য হজ্ব করা ফরয।” (সূরা আলে ইমরান/৯৭)
প্রত্যেক স্বাধীন, বালেগ, সুস্থ, দৃষ্টি শক্তি সম্পন্ন মুসলমানের যদি সাংসারিক প্রয়োজনীয় ব্যয়ের এবং হজ্বে যাওয়া ও ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবার বর্গের ভরণ-পোষণের অতিরিক্ত সম্বল ও পাথেয়, যানবাহনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকে এবং যাতায়াতের রাস্তাও নিরাপদ হয়, তবে তার প্রতি জীবনে একবার হজ্ব করা ফরয। তারপর সামর্থ থাকলে একাধিকবার হজ্ব করা সুন্নত। “হজ্ব” শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ইচ্ছা করা বা সংকল্প করা। আর শরীয়তের পরিভাষায় হজ্ব শব্দের অর্থ হলো, হজ্বের নির্দিষ্ট দিন সমূহে হজ্বের নিয়ত করে ইহ্রাম বেঁধে মক্কা শরীফ উপস্থিত হয়ে সেখান থেকে আরাফা, মুযদালিফা, মীনা পুনরায় মক্কা শরীফে কা’বা শরীফ তাওয়াফসহ ইত্যাদি নির্দিষ্ট স্থানসমূহে শরীয়তের নির্দেশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট কিছু কাজ সমাধা করা। কলেমা, নামায, রোযা, যাকাতের ন্যায় হজ্বও একটি ফরয ইবাদত। হজ্ব অস্বীকারকারী কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত। হজ্বের ফযীলত সম্পর্কে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول اله صلى اله عليه وسلم من حج لله فلم يرفث ولم يفسق رجع كيوم ولدته امه.
অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক- এর সন্তুষ্টি লাভের নিয়তে হজ্ব করে এবং হজ্ব পালন কালে কোন রকম অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা কাজ না করে, সে এমন নিস্পাপ হয়ে ঘরে প্রত্যাবর্তন করে যেন আজকেই সে ভূমিষ্ট হয়েছে।” (বুখারী ও মুসলিম)
হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن ابن مسعود رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تابعوا بين الحج والعمرة فانهما ينفيان الفقر والذنوب كما ينفى الكير خبث الحديد والذهب والفضة وأيس للحجة المبرورة ثواب الا الجنة.
অর্থঃ- “হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা হজ্ব ও ওমরাহ্ আদায় কর। কারণ এ দু’টো দারিদ্র ও গুণাহ্সমূহ দূর করে যেভাবে হাঁপর লোহা, সোনা ও রূপার ময়লা দূর করে। আর কবুল হজ্বের ছওয়াব জান্নাত ব্যতীত কিছু নয়।” (তিরমিযী, নাসাঈ, আহমদ, ইবনে মাযাহ্, মিশকাত)
আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن ابن عمر رضى الله تعاى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا لقيت الحاج فسلم عليه وصافحه ومره ان يستغفرلك قبل ان يدخل بيته فانه مغفورله.
অর্থঃ- “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন তুমি হজ্ব আদায়কারীর সাক্ষাৎ পাবে তাকে সালাম করবে, মুসাফাহা করবে এবং তাকে অনুরোধ করবে তিনি যেন তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন তার ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে। কারণ তিনি হলেন ক্ষমাকৃত ব্যক্তি।” (আহমদ, মিশকাত, মিরকাত) আর হজ্বের সামর্থ্য থাকা সত্বেও যে ব্যক্তি হজ্ব না করে তার সম্পর্কে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن على رضى الله تعالى عنه قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من ملك زادا وراحلة تبلغه الى بيت اله ولم يحج فلا عليه ان يموت يهوديا اونصرانيا.
অর্থঃ-“হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি এ পরিমাণ অর্থ সম্পদের মালিক যে, তা দ্বারা বাইতুল্লাহ্ শরীফ পর্যন্ত পৌঁছতে পারে, সে যদি হজ্ব না করে, তবে তার ইহুদী কিংবা খৃষ্টান হয়ে মরার ক্ষেত্রে বাধা থাকেনা।” (তিরমিযী) হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى امامة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من لم يمنعه من الحج حاجة ظاهرة او سلطن جائر اومرض حابس فمات وم يحج فليمت ان سشاء يهودينا وان شاء نصرانيا.
অর্থঃ- “হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন। হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যাকে প্রকট অভাব অথবা অত্যাচারী শাসক অথবা গুরুতর রোগ হজ্ব করতে বাধা দেয়নি অথচ সে হজ্ব না করে মরতে বসেছে তাহলে সে যদি চায় ইহুদী হয়ে মারা যাক অথবা খৃষ্টান হয়ে মারা যাক।” (দারিমী, মিশকাত) অন্য হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি শারীরিক শক্তি ও আর্থিক সঙ্গতির অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও হজ্ব না করে মারা যায় ক্বিয়ামতের দিন তার কপালে ‘কাফির’ শব্দটি লিখিত থাকবে।” (দুররে মনছুর) আর ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের টঙ্গীর ইজতেমা সম্পর্কে বলতে হলে প্রথমে বলতে হয় ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ কি? এটা হচ্ছে একটা মক্তবী শিক্ষা যদি এর আক্বীদা শুদ্ধ থাকে। যেমন- (১) কলেমা, (২) নামায, (৩) ইল্ম ও যিকির, (৪) ইকরামুল মুসলিমীন, (৫)তাছহীহে নিয়ত, (৬) তাবলীগ বা নফরুন ফী সাবীলিল্লাহ্। কলেমা শরীফ বলতে- শুধু মৌখিকভাবে শুদ্ধ করে কলেমা শরীফ শিক্ষা দেয়া হয় । নামায বলতে- নামাযের নিয়ম-কানুন ও তার আনুসাঙ্গিক নেহায়েত জরুরী সূরা-ক্বিরাত এবং মাসয়ালা-মাসায়েল শিক্ষা দেয়া হয়। ইল্ম বলতে – শুধু তাবলীগে নেসাবের কিতাব পড়ে শুনা ও শুনানো, যার মধ্যে রয়েছে কিছু ফযীলত সম্পর্কীয় বর্ণনা। আর যিকির বলতে বুঝায়-সকাল সন্ধায় তিন তাস্বীহ্ পাঠ করা। তিন তাস্বীহ্ হচ্ছে- একশতবার ইস্তিগফার, একশতবার দরুদ শরীফ ও একশতবার সুব্হানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার পাঠ করা।
ইকরামুল মুস্লিমীন বলতে -মুসলমানদেরকে ইক্রাম (সম্মান) করা সম্পর্কে জরুরী কিছু নিয়ম শিক্ষা দেয়া হয়। তাছহীহে নিয়ত বলতে- মৌখিকভাবে নিয়ত শুদ্ধ করার জন্য তাকীদ দেয়া হয়।
তাবলীগ বলতে – যে যা জানে, তা অপরের নিকট প্রচার করার জন্য বলা হয়। অথচ উপরোক্ত বিষয়সমূহের শিক্ষা আরো অনেক ব্যাপক ও বিস্তৃত।মূলতঃ উপরোক্ত শিক্ষাসমূহ অর্থাৎ মক্তবের ওস্তাদ বা শিক্ষকগণই তাদের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মক্তবে বিশুদ্ধ নিয়তে কলেমা, নামায, সূরা-ক্বিরাত ও তার আনুসাঙ্গিক মাসয়ালা- মাসায়েল, আদব-কায়দা, দোয়া-দরুদ, তাস্বীহ্-তাহ্লীল ইত্যাদি শিক্ষা দিয়ে থাকেন। প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে, ইসলামের যে পাঁচটি বুনিয়াদ (ভিত্তি) রয়েছে, তার সব কয়টাও শিক্ষা দেয়া হয়না। শুধু মৌখিকভাবে কলেমা শরীফ শিক্ষা দেয়া হয়। আর নামায সম্পর্কে তার জরুরী কিছু নিয়ম-কানুন, সূরা-ক্বিরাত ও মাসয়ালা-মাসায়েল শিক্ষা দেয়া হয়। রোযা, হজ্ব ও যাকাত সম্পর্কে কিছুই শিক্ষা দেয়া হয়না। অথচ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
بنى الاسلام على خمس شهادة ان لا اله الا الله وان محمدا عبده وسوله واقام الصلوة وايتاء الزكوة والحج وصوم رمضان.
অর্থঃ- “ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি- (১) এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ্্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ বা মা’বুদ নেই এবং নিশ্চয়ই হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রসূল,(২) নামায ক্বায়িম করা, (৩) যাকাত দেয়া, (৪) হজ্ব পালন করা, (৫) রমাদ্বান শরীফের রোযা রাখা।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, উমদাতুল ক্বারী, ফতহুল বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহে নববী, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, মুযাহিরে হক্ব, তা’লীকুছ্ ছবীহ্)
যেখানে ইসলামের পাঁচটি ভিত্তির মধ্যে তিনটি (রোযা, হজ্ব ও যাকাত) সম্পর্কে কিছুই শিক্ষা দেয়া হয়না, আর বাকী দু’টি সম্পর্কেও নেহায়েত মক্তবী বা প্রাথমিক শিক্ষা ব্যতীত কিছুই শিক্ষা দেয়া হয়না। এখন ইসলামী শিক্ষা ও প্রচলিত তাবলীগ জামাতের শিক্ষার পরিমাণ অপর পৃষ্ঠায় পেশকৃত একটি ছকের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো- উপরোক্ত আলোচনা ও ছকের মাধ্যমে এ কথাই স্পষ্ট হয়ে উঠলো যে, সম্পূর্ণ ইসলামী শিক্ষাকে ১০০% মান হিসেবে ধরে নিলে তার মধ্যে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত মোট ৫% মানের ইসলামী শিক্ষাও দেয়না।
অতএব, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে যেখানে ইসলামী শিক্ষার একশত ভাগের পাঁচ ভাগও শিক্ষা দেয়া হয়না, সেখানে টঙ্গীর ইজতেমাকে কি করে হজ্বের সাথে তুলনা করা যেতে পারে? টঙ্গীর ইজতেমাতে শরীক হওয়া ফরয, ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা, সুন্নতে যায়েদা, মুস্তাহাব, নফল কোনটিই নয়। বড় জোর মুবাহ্ হতে পারে যদি এর আক্বীদা বিশুদ্ধ হয়। উল্লেখ্য, হজ্ব ইসলামের একটি বিশেষ ভিত্তি। শুধু তাই নয়, হজ্বকে “জামিউল ইবাদত”ও বলা হয়। যা একটি ফরয ইবাদত ও অশেষ ফযীলত লাভের মাধ্যম এবং ইসলামের একটি গুরুত্ববহ ও তাৎপর্যপূর্ণ আমল। সেখানে যা নফলও নয় একটি বাৎসরিক সমাবেশ কেবল সেই ইজ্তেমাকে কি করে হজ্বের সাথে তুলনা করা যেতে পারে?
হজ্বের সাথে ইজ্তেমাকে তুলনা করা বা ইজ্তেমাকে গরীবের হজ্ব বলা, ইসলামের ভিতর প্রকাশ্য তাফরীত ও ইফরাতের অর্থাৎ কমানো, বাড়ানোর শামিল, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে সুস্পষ্ট কুফরী। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من احدث فى امرنا هذا ما ليس منه فهو رد.
অর্থঃ- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু বৃদ্ধি করে যা দ্বীনের মধ্যে নেই তা বাতিল বা পরিত্যাজ্য।” (বুখারী, মুসলিম) আরো উদাহরণ হলো- “কাদিয়ানী সম্প্রদায়” ও ৭২টি বাতিল ফিরক্বার লোকেরা যারা ইসলামের ভিতর তাফরীত ও ইফরাত অর্থাৎ কমানো, বাড়ানোর কারণে কুফরীতে নিপতিত হয়ে কাফির বা অমুসলিম হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, হাদীস শরীফে এমন অনেক আমলের কথাই বলা হয়েছে, যা পালন করলে হজ্ব ও ওমরার ছওয়াব পাওয়া যায়।
যেমন- “ফজর নামাযের পর যিকির-আয্কার করে ইশরাক্ব নামায আদায় করলে এক হজ্ব ও ওমরার ছওয়াব পাওয়া যায়।” (মালা-বুদ্দা মিনহু) “রমাদ্বান মাসে দশ দিন ই’তিকাফ করলে দুই হজ্ব ও দুই ওমরার ফযীলত পাওয়া যায়।” (বায়হাক্বী)
অনুরূপ পিতা-মাতার চেহারার দিকে নেক দৃষ্টিতে তাকালেও হজ্বের ছওয়াব পাওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما من ولد بار ينظر الى والديه نظر رحمة الا كتب الله له كل نظرة حجة مبرورة قالوا وان نظر كل يوم مأة مرة قال الله اكبر واطيب. (شعب الايمان)
অর্থঃ- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “কোন নেক সন্তান যখন পিতা-মাতার দিকে রহ্মতের দৃষ্টি দেয়, তখন আল্লাহ্ পাক তার প্রত্যেক দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজ্বের ছওয়াব তার আমলনামায় লিখে দেন।” হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বললেন, যদি প্রতিদিন একশতবার দৃষ্টি দেয়, তবে? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ্ পাক মহান ও পবিত্র। (আল্লাহ্ পাক একশতটি হজ্বের ছওয়াবও দিতে পারেন।” (শোয়াবুল ঈমান, মিশকাত, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত)
কাজেই প্রমাণিত হলো যে, যে সকল আমল করলে হজ্ব বা ওমরার ফযীলত পাওয়া যায়, তা হাদীস শরীফে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু কুরআন, সুন্নাহ্, ইজ্মা, ক্বিয়াসের কোথাও উল্লেখ নেই যে, টঙ্গীর ইজ্তেমা গরীবের হজ্ব বা ইজ্তেমায় গেলে হজ্বের ছওয়াব পাওয়া যায়। মূলতঃ এরূপ বক্তব্যের কারণে সাধারণ মানুষ, ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বুনিয়াদী ফরযের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবনে চরমভাবে ব্যর্থ হবে। যার কারণে যে কেউ যেকোন স্থানকে হজ্বের জন্যে নির্ধারণ করে নিবে। যেমন সুরেশ্বর ভন্ডদের আস্তানায় কৃতিম কা’বা শরীফ নির্মাণ করা হয়েছে এবং তাতে কৃতিম হাজ্রে আসওয়াদও স্থাপন করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য হলো- হজ্ব করার জন্যে মক্কা শরীফে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই বরং এখানে হজ্ব করলেই হজ্বের ছওয়াব পাওয়া যাবে। (নাউযুবিল্লাহ্)
আরো উল্লেখ্য যে, লিবিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফীর বক্তব্য হলো- মাটির দ্বারা নির্মিত কা’বা শরীফকে তাওয়াফ করার কি সার্থকতা রয়েছে? অর্থাৎ মক্কা শরীফে গিয়ে হজ্জ্ব করার কোন জরুরত নেই। (নাউযুবিল্লাহ্) কাজেই নতুন করে কোন আমলকে হজ্ব হিসাবে সাব্যস্ত করা বা কোন আমলের জন্যে হজ্বের ছওয়াব নির্ধারণ করা অথবা নফলকে ফরয বলা হারাম, নাজাযিয় ও কুফরী। (সমূহ আক্বাঈদের কিতাব) আর এটা যদি কেউ হালাল জেনে করে তাহলে সে কাফির হিসেবে সাব্যস্ত হবে। তার যিন্দেগীর সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে। তার উপর মুরতাদের হুকুম বর্তাবে। আর মুরতাদের ফায়সালা হচ্ছে- তার স্ত্রী তালাক হবে (যদি বিয়ে করে থাকে) এবং এক্ষেত্রে পুনরায় তওবা না করে, বিয়ে না দোহরানো ব্যতীত তার স্ত্রীর সাথে বসবাস করা বৈধ হবেনা। আর এই অবৈধ অবস্থায় সন্তান হলে সেই সন্তানও অবৈধ হবে। হজ্ব বাতিল হয়ে যাবে (যদি হজ্ব করে থাকে), সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে, তার ওয়ারিশ সত্ত্ব বাতিল হবে। তাকে তিন দিন সময় দেয়া হবে তওবা করার জন্য এবং যদি তওবা করে, তবে ক্ষমা করা হবে। অন্যথায় একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড। কেননা হাদীস শরীফে রয়েছে, তিন কারণে মৃত্যুদন্ড দেয়া জায়িয। যথা- (ক) ঈমান আনার পর কুফরী করলে অর্থাৎ মুরতাদ হলে। (খ) ঐ যিনাকার বা যিনাকারিনী, যারা বিবাহিত বা বিবাহিতা। (গ) যে অন্যায়ভাবে কাউকে ক্বতল করে।” (তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাযাহ্, মুসনদে শাফেয়ী, মুসনদে বাজ্জার, মুস্তাদরিকে হাকিম) আর মুরতাদ মারা যাবার পর যারা জানাযার নামায পড়ে বা পড়ায় বা জানাযার নামাযে সাহায্য-সহযোগীতা করে, তাদের সকলের উপরই মুরতাদের হুকুম বর্তাবে এবং এ সকল মুরতাদ মরলে বা নিহত হলে তাকে মুসলমানগণের কবরস্থানে দাফন করা যাবেনা। এমনকি মুসলমানের ন্যায়ও দাফন করা যাবেনা। বরং তাকে কুকুরের ন্যায় একটি গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখতে হবে। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্, নুরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপ লোকদের সম্পর্কেই ইরশাদ করেন,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون ياتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا ابائكم فاياكم واياهم لا يصلونكم ولا يفتنونكم.
অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমনসব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি, সাবধান! তোমরা তাদের কাছ থেকে দূরে থাকবে, তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ)
অতএব, ইসলামের নামে এরূপ কোন বক্তব্য পেশ করা বা আক্বীদা পোষণ করা সম্পূর্ণ হারাম, নাজায়িয ও কুফরী। আর এ প্রকার কুফরী আক্বীদা পোষণকারী দল, সম্প্রদায় বা গোত্রের সাথে চলাচল, উঠাবসা বা কোন প্রকার সম্পর্ক রাখা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয। {দলীলসমূহঃ- (১) আহকামুল কুরআন জাসসাস্, (২) কুরতুবী, (৩) মাযহারী, (৪) রুহুল বয়ান, (৫) রুহুল মায়ানী, (৬) খাযেন, (৭) বাগবী, (৮) কবীর, (৯) তাবারী, (১০) যাদুল মাছীর, (১১) দুররে মনছুর, (১২) ইবনে কাছীর, (১৩) বুখারী, (১৪) মুসলিম, (১৫) তিরমিযী, (১৬) নাসাঈ, (১৭) ইবনে মাযাহ্, (১৮) আহমদ, (১৯) দারিমী, (২০) বায়হাক্বী, (২১) শোয়াবুল ঈমান, (২২) মুসনদে শাফেয়ী, (২৩) মুসনদে বাজ্জার, (২৪) মুসতাদরিকে হাকিম, (২৫) ফতহুল বারী, (২৬) উমদাতুল ক্বারী, (২৭) ইরশাদস্ সারী, (২৮) তাইসীরুল ক্বারী, (২৯) শরহে নববী, (৩০) ফতহুল মুলহিম, (৩১) উরফুশ্ শাজী, (৩২) মিশকাত, (৩৩) মিরকাত, (৩৪) আশয়াতুল লুময়াত, (৩৫) লুময়াত, (৩৬) শরহুত্ ত্বীবী, (৩৭) তালিকুছ্ ছবীহ্, (৩৮) মুযাহিরে হক্ব, (৩৯) মালা-বুদ্দা মিনহু, (৪০) শরহে আক্বাইদে নছফী, (৪১) ফিক্বহে আকবর, (৪২) তাকমীলুল ঈমান, (৪৩) আক্বাইদে হাক্কাহ ইত্যাদি}
মুহম্মদ রেজাউর রফিক (মুকুল)
হলদিবাড়ী হাউস, নওগাঁ।
সুওয়ালঃ আশুরা উপলক্ষ্যে কয়টি রোযা রাখা সুন্নত? জানতে বাসনা রাখি। জাওয়াবঃ হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
صوموا يوم عشوراء وخالفوا فى اليهود. صوموا قبله يوما او بعده يوما.
অর্থ ঃ- “তোমরা আশুরার রোযা রাখ এবং (এ ব্যাপারে) ইহুদীদের বিপরীত কর। তোমরা আশুরার আগের দিনে অথবা পরের দিনেও রোযা রাখ।” এ হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আশুরার উদ্দেশ্যে দু’টি রোযা রাখা সুন্নত। মুর্হরমের ৯ ও ১০ তারিখ অথবা ১০ ও ১১ তারিখ। তবে উত্তম হলো ৯ ও ১০ তারিখ রোযা রাখা। শুধু ১০ই মুর্হরম আশুরার উদ্দেশ্যে ১টি রোযা রাখা মাকরূহ্। কারণ ইহুদীরা সেদিনটিতে রোযা রেখে থাকে। {দলীলসমূহঃ (১) বুখারী, (২) মুসলিম, (৩) মিশকাত, (৪) তিরমিযী, (৫) মুয়াত্তা মালেক, (৬) জামিউল ফাওয়ায়িদ, (৭) মসনদে ফেরদৌস লিদ্ দায়লামী, (৮) মাসাবাতা বিস্ সুন্নাহ্, (৯) মুসনদে আহমদ ইত্যাদি)
মাওলানা মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান
মাওলানা মুহম্মদ মাছূম বিল্লাহ্
মুহম্মদ আসাদুর রহমান,
মুহম্মদ মাইজুর রহমান ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
সুওয়ালঃ আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম এই তিনটি সংখ্যায় প্রদত্ত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ, মুহাক্কিক-মুদাক্কিক ও হক্কানী উলামা-ই-কিরামগণের ফতওয়া মুতাবিক জানতে পারলাম যে, “প্রাণীর ছবি তৈরী করা, ঘরে রাখা সর্বাবস্থায় হারাম।”
অথচ রেযাখানী মুখপত্র নভেম্বর/২০০১ ঈসায়ী সংখ্যায় ছবি সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ফতওয়া প্রকাশ করেছে। যা কিনা মানুষের ঈমান-আমল বিনষ্ট করবে নিশ্চিতরূপে। রেযাখানীদের ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যের যে বিষয়গুলো আপত্তিকর সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো- (ক) রেযাখানীরা ছবি তোলাকে বৈধ বলেছে; কিন্তু দলীল হিসেবে পেশ করেছে ঘরে ছবি রাখা সম্পর্কিত হাদীসসমূহকে।
(খ) .. কতেক উলামা যেসব ছবির শরীর ও ছায়া নেই সেসব ছবিকে বৈধ বলেছেন।
(গ) হুজুর আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুরুর দিকে ছবি তৈরী করা ও সংরক্ষণ করাকে নিষেধ করেছিলেন; কিন্তু পরবর্তীতে অনুমতি দেন।
(ঘ) পূর্ববর্তীদের কেউ কেউ এবং হাম্বলী, শাফেয়ী, মালেকী এমনকি হানাফীদেরও কেউ কেউ নাকি (গায়রে মুজাস্সাম) শরীরবিহীন ছবিকে বৈধ বলেছেন।
(ঙ) সামাজিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে বিশেষ প্রয়োজনে ছবি তোলা বৈধ যা যুগের চাহিদাও। (চ) প্রত্যেক যুগের ফক্বীহ্, মুফতী, কাজী ও আলিমগণ যুগের চাহিদা অনুযায়ী ফতওয়া দিয়েছেন এবং দেয়া উচিত।
(ছ) ছবি হারাম হওয়ার মূলে হলো গায়রুল্লাহ্র সম্মান ও ইবাদত।
(জ) প্রয়োজনীয় রেকর্ডের জন্য ফাইল বন্দি ছবিসমূহ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের নিকট জ্ঞান ও ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য জানার নিমিত্তে সরকারী-বেসরকারী যাদুঘর বা বিশেষ প্রতিষ্ঠানসমূহে পূর্বের নানা মনীষীগণের ছবি সংরক্ষণ/ধারণ করে রাখা বিশেষ প্রয়োজনে মাকরূহ্ হবেনা। এছাড়াও আরো বহু আপত্তিকর বিষয় তাদের উক্ত ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যে স্থান পেয়েছে। কুরআন-সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে তাদের উল্লিখিত আপত্তিকর বক্তব্যগুলোর শরয়ী ফায়সালা কামনা করি। জাওয়াবঃ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রেযাখানীদের ন্যায় এরূপ লোকদের সম্পর্কেই ইরশাদ করেন,
عن ابى هريرة قال قال رسول نالله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا ابائكم فاياكم واياهم لايصلونكم ولايفتنونكم.
অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমনসব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি, সাবধান! তোমরা তাদের কাছ থেকে দূরে থাকবে, তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ)
উল্লিখিত হাদীস শরীফের পূর্ণ মেছদাক বা নমুনা হচ্ছে রেযাখানীরা। তারা ছবির ব্যাপারে এমন সব বক্তব্য প্রদান করেছে যা কিতাবে দেখা তো দূরের কথা কেউ কোন দিন শুনেও নাই। মূলতঃ রেযাখানীরা নিজেদেরকৃত বদ আমলকে ধামা-চাপা দেয়ার উদ্দেশ্যেই মনগড়াভাবে ছবিকে জায়িয করার অপচেষ্টা করেছে। যেমনটি করেছিলো, “ছানী আযান, তাহাজ্জুদের জামায়াত, বাইয়াত হওয়া, দুই সিজদার মাঝখানে পূর্ণ দোয়া পড়া, ধুমপান” ইত্যাদি বিষয়গুলোকে নিয়ে। কিন্তু মাসিক আল বাইয়্যিনাত তাদের সমস্ত ষড়যন্ত্র আর অপতৎপরতাকে নির্ভরযোগ্য দলীলের দ্বারা ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। ইনশাআল্লাহ্ তাদের ছবিকে জায়িয করার সকল ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতাকেও ছিন্নভিন্ন করে দেয়া হবে। রেযাখানীরা ছবি জায়িয করার উদ্দেশ্যে যে সকল মনগড়া, বানোয়াট, জালিয়াতিপূর্ণ ও আপত্তিকর বক্তব্য প্রদান করেছে তা ধারাবাহিকভাবে পর্যায়ক্রমে খন্ডন করার পূর্বে ছবি হারাম হওয়ার দলীলগুলো সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করা হলো-
(ধারাবাহিক)
শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রাণীর ছবির সঠিক ফায়ছালা
এ পর্যন্ত উল্লিখিত হাদীস শরীফ সমূহের ভিত্তিতে যা প্রমাণিত হলো তা হচ্ছে (১) যে ব্যক্তি কোন প্রাণীর ছবি তুলবে বা তোলাবে সে ব্যক্তি ক্বিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি ভোগ করবে! (২) যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশ্তা প্রবেশ করেনা, (৩) ঘরে ঝুলানো পর্দা সমূহেও প্রাণীর ছবি রাখা নিষেধ, (৪) প্রাণীর ছবি তোলা বা আঁকার ব্যবস্থা করাও নিষেধ ইত্যাদি।
অতএব, হাদীস শরীফের বর্ণনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রাণীর ছবি তোলা বা আঁকা এবং তোলানো বা আঁকানো, প্রাণীর ছবি বা ছবিযুক্ত পর্দা ঘরে রাখা ও প্রাণীর ছবি তোলা বা আঁকার ব্যবস্থা করা সম্পূর্ণই হারাম ও নাজায়িয। এখন আমরা দেখবো উল্লিখিত হাদীস শরীফ সমূহের ব্যখ্যায় বিশ্বখ্যাত ও অনুসরণীয় শারেহ বা ব্যাখ্যাকারগণ তাঁদের ব্যাখ্যাগ্রন্থ সমূহে কি লিখেছেন। নিম্নে বিশ্বখ্যাত ও অনুসরণীয় মুহাদ্দিসগণের ফতওযা উল্লেখ করা হলো-
وان كان ورد فى حق عاص فيكون اشد عذابا من غيره من العصاة ويكون ذلك ذالا على المعصية المذكورة وفى الترضيح قال اصحابنا وغيرهم صورة الحيوان حرام اشد التحريم وهم من الحبائر سواء صنعه لما ينتهن اولغيره فحرام بكل حال لان فيه مضاهاة لخلق الله وسواء كان فى ثوب اوبساط اودينار اودرهم اوفلس او اناء او حائط.
অর্থঃ- “যদিও অন্যান্য গুরুতর পাপের জন্য হাদীস শরীফে কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে, কিন্তু ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণকারীর শাস্তি সর্বাপেক্ষা কঠিন হবে এবং কঠোর শাস্তিই পাপের গুরুত্ব প্রমাণ করছে। তাওজীহ্ কিতাবে উল্লেখ আছে যে, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা নিষেধ, বরং কঠোর নিষিদ্ধ কাজ (অর্থাৎ হারাম) এটা কবীরাহ্ গুণাহ্। চাই ওটাকে যত¦ বা সম্মান প্রদর্শন করুক কিংবা অন্য যে কোন উদ্দেশ্যেই বানিয়ে থাকুক। কেননা এরূপ কাজে আল্লাহ্ পাক-এর সৃষ্টির অনুকরণ করা হয়। ওটা বস্ত্রে, বিছানায়, মোহরে, মুদ্রায়, পয়সায়, পাত্রে কিংবা প্রাচীর গাত্রে যে কোন স্থানে আঁকা বা নির্মাণ করা হারাম।” (উম্দাতুল ক্বারী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া, আয্ জাওয়াজির)
وهذه الاحاديث صريحة فى تحريم تصوير الحيوان وانه غليظة التحريم ايضافيه وما من لم يقصد بها العيادة ولمضاهاة فهو فاسق صاحب ذنب كبير.
অর্থঃ- “উক্ত হাদীস সমূহে প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা মূর্তি নির্মাণ করা হারাম হওয়া সম্বন্ধে প্রকাশ্যেই বলা হয়েছে। এটা তৈরী বা নির্মাণ করা জঘন্যতম পাপের কাজ ও হারামও বটে। উক্ত কিতাবে আরও বর্ণিত আছে, যদি কেউ মূর্তি বা প্রাণীর ছবি পূজা বা সৃষ্টির অনুকরণের জন্য নাও বানিয়ে থাকে তবুও সে ফাসিক হবে এবং কবীরা গুণায় গুণাহ্গার হবে।” (শরহে নববী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়াহ)
قال اصحابنا وغيرهم من العلماء تصوير صورة للحيوان حرام شد التحريم- وهو من الكبائر لانه توعد عليه بهذا الوعيد الشيد المذكور فى الاحاديث سواء صنعه فى ثوب اوبساط اودينار اودرهم.
অর্থঃ- “আমাদের মাশায়েখগণ ও উলামাগণ বলেছেন যে, প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম, এমনকি শক্ত হারাম। এটা কবীরাহ্ গুণাহ্। কেননা এরূপ কাজের জন্য বিশেষ ভীতিপ্রদ অবস্থা হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। ওটা কাপড়ে, বিছানায়, মোহরে কি টাকা-পয়সায় কিংবা যে কোনও স্থানে আঁকা থাকুকনা কেন তা সমান কথা।” (শরহে মিরকাত, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়াহ, নাইলুল আওতার)
واما اتخاذ المصور بحيوان فان كان معلقا على حائط سواء كان له ظل او لا اوثوببا ملبوسا اوعمامة اونحو ذلك فهو حرام.
অর্থঃ- “প্রাণীর ছবি চাই ওটা প্রাচীর গাত্রে ঝুলানো থাকুক, চাই ওটা দেহ বিশিষ্ট হোক কিংবা আঁকা হোক অথবা পরিধেয় বস্ত্র অথবা পাগড়িতে আঁকা থাকুক সর্বাবস্থায় ব্যবহার করা হারাম।” (শরহে মিরকাত, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়াহ, নাইলুল আওতার) (অসমাপ্ত)
সাইয়্যিদ মুহম্মদ মোক্তাদুল ইসলাম (মিলন)
রঈসুল মজলিশ- ছাত্র আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত সুবহানীঘাট, সিলেট।
সুওয়ালঃ রেযাখানী মুখপত্র ডিসেম্বর/২০০০ ঈঃ সংখ্যায় “তাফসীরে রুহুল বয়ান, বুখারী, গুনিয়াতুত তালেবীন, রেজভীয়া” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “সহীহ্ মুসলিম শরীফসহ” অনেক নির্ভরযোগ্য কিতাবে নফল নামায বিশেষতঃ ক্বদর ও বরাতের নফল নামায জামাত সহকারে আদায় করা বৈধ….।” আর আপনারা “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” লিখেছেন, “তারাবীহ, ছলাতুল কুছুফ (সূর্য গ্রহণের নামায), ছলাতুল ইস্তিস্কা (বৃষ্টির নামায) এই তিন প্রকার নামায ব্যতীত যেমন লাইলাতুল ক্বদর, লাইলাতুল বরাত, তাহাজ্জুদ, চাশ্ত, আওয়াবীন ইত্যাদি নফল নামায সমূহ ইমামের সাথে চারজন মুক্তাদীসহ জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্।” কোনটি সঠিক? আর “বুখারী, মুসলিম শরীফে” কি “ক্বদর” ও বরাতের” নফল নামায জামায়াতের সাথে আদায় করার কথা উল্লেখ আছে? দয়া করে জানাবেন।
জাওয়াবঃ রেযাখানীরা তাদের মুখপত্রে “তাফসীরে রুহুল বয়ান, বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, গুনিয়াতুত্ তালেবীন এবং রেজভীয়া” কিতাবের বরাত দিয়ে নফল নামায বিশেষতঃ “শবে বরাত”, “শবে ক্বদরের” নফল নামায আযান-ইক্বামত ছাড়া জামায়াত সহকারে আদায় করা যে বৈধ বলেছে, তা আমরা আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এর বিগত সংখ্যাগুলোতে বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে প্রমাণ করেছি যে, “তাদের বক্তব্য সম্পূণই ভুল, জিহালতপূর্ণ, জালিয়াতী ও প্রতারণামূলক।” কেননা, রেযাখানীরা কিতাবের নাম দিয়ে যে বক্তব্য প্রদান করেছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। বরং তার সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ, তারা কিতাবের ইবারত, সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে মনগড়া বক্তব্য প্রদান করেছে এবং ক্ষেত্র বিশেষ নিজের ভ্রান্ত মতকে টিকিয়ে রাখতে কিতাবের ইবারত কারচুপি করেছে।
(ধারাবাহিক)
বর্তমান সংখ্যায় রেযাখানীদের দলীলবিহীন ও মনগড়া বক্তব্য খন্ডন করা হলো
উল্লেখ্য, রেযাখানীরা বলেছে, “কোন কোন ভন্ড ও প্রতারক…..কোন কোন ফক্বীহ’র মতামতকে পুঁজি করে ঢালাও ভাবে মাকরূহে তাহরীমার গরম গরম ফতোয়া দিয়ে …… নিজের খ্যাতি চমকানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। …..” এর জবাবে বলতে হয় যে, বিগত সংখ্যায় আমরা আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাতে তাদেরই “রেজভীয়া” কিতাবের ইবারত উল্লেখ করে প্রমাণ করে দিয়েছি যে, স্বয়ং রেযা খাঁ-ই তার “রেজভীয়া” কিতাবে শবে বরাত, শবে ক্বদর, রাগায়িব ইত্যাদি নফল নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী বলে ফতওয়া দিয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ মৌলভী আমজাদ আলী ছাহেব তার “বাহারে শরীয়ত” কিতাবে শবে বরাত, শবে ক্বদর, রাগায়িব-এর নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী, বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ ও নাজায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছে। যেমন, মৌলভী আমজাদ আলী তার “বাহারে শরীয়ত” কিতাবের ৪র্থ খন্ডের ২৫ ও ২৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছে,
صلوۃ الرغائب کہ رجب کی پھلی شب جمعہ اور شعبان کی پندرھویں شب اور شب قدر میں جماعت کے ساتھ نفل نماذ بعض لوگ ادا کرتے ھیں فقھاء أسے ناجائز ومکروہ بدعت کھے ھیں …
অর্থঃ- “রাগায়িবের নামায যা রজবের প্রথম জুমুয়ার রাত্রি ও শা’বানের ১৫ই রাত্রি অর্থাৎ শবে বরাত এবং শবে ক্বদরে জামায়াতের সাথে কিছু লোক নফল নামায আদায় করে থাকে। ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উক্ত নফল নামাযগুলো জামায়াতের সাথে আদায় করাকে নাজায়িয, মাকরূহ তাহরীমী এবং বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ বলেছেন। ….” অতএব, উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, “শবে বরাত, শবে ক্বদর, রাগায়িব, তাহাজ্জুদ” ইত্যাদি নফল নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী ফতওয়া দেয়ার কারণেই কেউ যদি ভন্ড ও প্রতারক হয়, তাহলে রেযাখানীদের বক্তব্য মুতাবিক প্রথম দরজার ভন্ড ও প্রতারক হলো, তাদের গুরু রেযা খাঁ আর দ্বিতীয় দরজার ভন্ড ও প্রতারক হলো মৌলভী আমজাদ আলী। তৃতীয়তঃ উক্ত নফল নামাযগুলো জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী ফতওয়া দেয়ার কারণেই কেউ যদি ভন্ড ও প্রতারক হয়, তাহলে রেযাখানীদের বক্তব্য মুতাবিক পীরানে পীর দস্তগীর হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহিকে রেযাখানীরা ভন্ড ও প্রতারক বলবে কি? (নাউযুবিল্লাহ্)
কেননা, হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর “গুনিয়াতুত্ তালেবীন” কিতাবে উল্লেখ আছে, “নফল নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী।” যেমন, “গুনিয়াতুত্ তালেবীন”-এর উর্দূ অনুবাদ কিতাবটিতে উল্লেখ আছে,
جما عت کے ساتھ نفل اداکرنا مکروہ ھے.
অর্থঃ- “নফল নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী।” চতুর্থতঃ উক্ত নফল নামাযগুলো জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী ফতওয়া দেয়ার কারণেই কেউ যদি ভন্ড ও প্রতারক হয় তাহলে রেযাখানীদের বক্তব্য মুতাবিক, মাহবুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে রেযাখানীরা ভন্ড ও প্রতারক বলবে কি? (নাউযুবিল্লাহ্)
কেননা, কাইয়ূমে যামান, মাহ্বুবে সুবহানী, আফযালুল আউলিয়া, হযরত শায়খ আহ্মদ ফারুকী সিরহিন্দি মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর প্রসিদ্ধ ও বিশ্ববিখ্যাত কিতাব “মক্তুবাত শরীফে” উল্লেখ করেন,
جننا چاھئے کہ نوافل کو جماعت تمام کی ساتھ ادا کرنا مکروہ اور بد عتوں میں سے ھے. اور نوافل جماعت کے سا تھ ادا کرنا فقہ کی بمض روایات میں مطلق طور پر مکروہ ھے اور بعض روایات میں کر اھت تداعی اود تجمیع یعنی بلانے اور جمیعت پر مشروط ھے پس اگر بغیر تداعی کے ایک دو أدمی مسجد کے گوشہ میں تفل کو جماعت سے ادا کرے تو بغیر کراھت روا ھے. اور تین ادمیوں میں مشائخ کا اختلاف ھے. اور بعض روایت میں چار ادمیوں کا جما عت بالاتفاق مکروہ ئھیں اور بعض روایت میں اصح یہ ھے کہ مکروہ ھے.
অর্থঃ- “স্মরণ রেখ যে, নফল নামায পূর্ণ জামায়াতের সাথে আদায় করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতের অন্তর্ভুক্ত। এবং নফল নামায জামায়াতের সাথে পড়া কোন কোন ফিক্বাহ্বিদগণের মতে, সর্ব অবস্থায় মাকরূহ্ তাহ্রীমী। আর কারো কারো মতে, ঘোষণা দেয়ার সাথে শর্ত যুক্ত। সুতরাং যদি কেউ বিনা ঘোষণায় মসজিদের এক কোনায় নামায পড়ার সময় দু’একজন ইক্তিদা করে তবে মাকরূহ ছাড়াই আদায় হবে। আর তিনজন পড়ার ব্যাপারে মাশায়িখগণের মতবিরোধ রয়েছে। চারজন ইক্তিদা করলে কেউ কেউ বলেন- মাকরূহ্ নয়, কিন্তু সর্বসম্মত ও ছহীহ্ মত হলো- মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে।” সুতরাং রেযাখানীদের উক্ত বক্তব্য দলীলবিহীন ও মনগড়া বলেই প্রমাণিত হলো এবং সেই সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যে, প্রকৃতপক্ষে রেযাখানীরাই ভন্ড ও প্রতারক। (চলবে)
মুহম্মদ আলী হায়দার
সভাপতি- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।
সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত পত্রিকার নভেম্বর/২০০১ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে এক জিজ্ঞাসার-সমাধানে লিখেছে, “বাইআত গ্রহণ মুস্তাহাব আর নফ্সের ইসলাহ্ তথা আত্মশুদ্ধি অর্জন হল ফরয। আর এই ইসলাহে নফ্সের একটি মাধ্যম হল বাইআত। ইসলাহে নফ্স তথা আত্মশুদ্ধি পীর সাহেব ছাড়াও যে কোন মুহাক্কিক আমলদার আলেমে দ্বীনের সাথে আত্মশুদ্ধিমূলক সম্পর্ক স্থাপনের দ্বারাও অর্জন হতে পারে। যদিও তাতে বাইআত গ্রহণ না করা হয়।” তারা আরো লিখেছে, “মুজাদ্দেদিয়া তরীক্বা হযরত শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী (রহ) এর দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।” আর মাসিক মদীনা ডিসেম্বর/২০০১ ঈসায়ী সংখ্যাতেও “পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়াকে মুস্তাহাব” বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন আমার সুওয়াল হলো- বাইয়াত হওয়ার ব্যাপারে উক্ত পত্রিকাদ্বয়ে যা লিখা হয়েছে তা কতটুকু কুরআন-সুন্নাহ্ সম্মত? বিস্তারিত জানিয়ে ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী। জাওয়াবঃ “পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া মুস্তাহাব” হাটহাজারী মৌলভীদের ও মদীনার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল, বিভ্রান্তিকর ও দলীলবিহীন। ছহীহ্ ও দলীলভিত্তিক ফতওয়া হলো, তাযকিয়ায়ে বাতিন অর্থাৎ ইছলাহ্ বা আত্মশুদ্ধি লাভের জন্য একজন হক্কানী বা কামিল পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ফরয। কেননা এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, প্রতিটি মুসলমান নর-নারীর জন্য তায্কিয়ায়ে বাতিন অর্থাৎ আত্মশুদ্ধি লাভ করা ফরয।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
لقد من اله على المؤمنين اذ بعث فيهم رسولا من انفسهم يتلوا عليهم ايته ويزكيهم ويعلمهم الكتب والحكمة وان كانوا من قبل لفى ضلل مبين.
অর্থঃ- “মু’মিনদের প্রতি আল্লাহ্ পাক-এর ইহ্সান যে, তাদের মধ্য হতে তাদের জন্য একজন রসূল প্রেরণ করেছেন, তিনি আল্লাহ্ পাক-এর আয়াতগুলো তিলাওয়াত করে শুনাবেন, তাদেরকে তায্কিয়া (পরিশুদ্ধ) করবেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবেন। যদিও তারা পূর্বে হিদায়েত প্রাপ্ত ছিলনা।” (সূরা আলে ইমরান/১৬৪) অনুরূপ সূরা বাক্বারার ২৯ ও ১৫১ নং আয়াত শরীফে এবং সূরা জুমুয়ার ২ নং আয়াত শরীফে উপরোক্ত আয়াত শরীফের সমার্থবোধক আয়াত শরীফ উল্লেখ আছে। মূলতঃ উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহে বিশেষভাবে চারটি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। তন্মধ্যে আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করে শুনানো এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়া. এ তিনটি বিষয় হচ্ছে- ইলমে জাহির বা ইল্মে ফিক্বাহ্ এবং ইল্মে হুনরের অন্তর্ভুক্ত। যা ইবাদতে জাহিরা বা দ্বীনের যাবতীয় বাহ্যিক হুকুম-আহ্কাম পালন করার জন্য ও দৈনন্দিন জীবন-যাপনের অর্থাৎ হালাল কামাই করার জন্য প্রয়োজন। আর চতুর্থ হচ্ছে- (يزكيهم) তায্কিয়ায়ে ক্বাল্ব অর্থাৎ অন্তর পরিশুদ্ধ করার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি লাভ করা। মুফাস্সিরীনে কিরামগণ يزكيهم”-এর ব্যাখ্যায় প্রসিদ্ধ তাফসীরের কিতাব যেমন, তাফসীরে জালালাইন, কামালাইন, বায়হাক্বী, কুরতুবী, তাবারী, কবীর, খাযেন, বাগবী, ইবনে কাছীর, দুররে মান্ছূর, আবী সউদ, মাজহারী, রুহুল বয়ান, রুহুল মায়ানীসহ আরো অনেক তাফসীর গ্রন্থে “তায্কিয়ায়ে ক্বাল্ব” বা অন্তর পরিশুদ্ধ করাকে ফরয বলেছেন এবং তজ্জন্য ইল্মে তাসাউফ অর্জন করাকেও ফরয বলেছেন।
এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুফাস্সির, ফক্বীহুল উম্মত, হযরত মাওলানা ছানাউল্লাহ্ পানিপথি রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে মাযহারীতে” উল্লেখ করেন,
واما العلم الدنى الذى يسمون اهلها بالصوفية الكرام فهو فرض عين لان من ثمراتها تصفية القلب عن الاشتغال بغير الله تعالى واتصافه بدوام الحضور وتزكية النفس عن ذانل الاخلاق…… وتجليتها بكرام الاخلاق……..
অর্থঃ- “যে সকল লোক ইল্মে লাদুন্নী বা ইল্মে তাছাউফ হাছিল করে, তাদেরকে “ছূফী” বলে। ইল্মে তাছাউফ অর্জন করা ফরযে আইন। কেননা (ইল্মে তাছাউফ) মনকে গায়রুল্লাহ্ হতে ফিরিয়ে আল্লাহ্ পাক-এর দিকে রুজু করে দেয়। সর্বদা আল্লাহ্ পাক-এর হুজুরী পয়দা করে দেয় এবং অন্তর থেকে বদ্ খাছলত সমূহ দূর করে নেক খাছলতসমূহ পয়দা করে অন্তর পরিশুদ্ধ করে দেয়।” আত্মশুদ্ধি অর্জনের জন্য ইলমে তাছাউফ যে ফরয এ প্রসঙ্গে খাতিমুল মুফাস্সিরীন, আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি “তাফসীরে রুহুল বয়ানে” উল্লেখ করেন,
النوع الثانى علم السر هو ما يتعلق بالقلب ومساعيه فيقترص على المؤمن.
অর্থঃ- “দ্বিতীয় প্রকার ইল্ম হচ্ছে, ইলমুস্সির বা ইল্মে তাছাউফ, যা ক্বল্ব বা অন্তরের সাথে সংশ্লিষ্ট। এ ইল্ম অর্জন করা প্রত্যেক মু’মিনের জন্যই ফরয।” ইল্মে তাছাউফ অর্জন করা ফরয হওয়া সম্পর্কে “জামিউল উসূল” নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
واعلم ان العلم الباطن الذى هو من اعظم المجيات والسلوك والرياضات والمجاهدت فرض عين.
অর্থঃ- “ইল্মে তাছাউফ, যা (বদ্ খাছলতসমূহ হতে) নাযাত বা মুক্তি পাওয়ার একমাত্র মাধ্যম। পক্ষান্তরে আল্লাহ্ প্রাপ্তি, রিপু বিনাশ ও সংযম শিক্ষার একমাত্র পথ। এটা (ইল্মে তাছাউফ) শিক্ষা করা ফরযে আইন।”
উল্লেখ্য যে, উক্ত ইলমে তাছাউফ অর্জন করার ও ইছলাহ নফস বা আত্মশুদ্ধি লাভ করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে হক্কানী ও কামিল শায়খ বা পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া। যা হাটহাজারী মৌলভীরাও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, ইছলাহ নফস বা আত্মশুদ্ধি লাভ করা যদি ফরয হয় আর তা লাভ করার মাধ্যম যদি হয় বাইয়াত তবে বাইয়াত হওয়া মুস্তাহাব হয় কি করে?
কেননা, উছূলই রয়েছে, যে আমলের দ্বারা ফরয পূর্ণ হয়, ফরযকে পূর্ণ করার জন্য সেই আমল করাও ফরয।
যেমন, এ প্রসঙ্গে “দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে,
ما لايتم به الفرض فهو فرض.
অর্থঃ- “যে আমল ব্যতীত ফরয পূর্ণ হয়না বা আদায় হয়না, সে ফরয পূর্ণ বা আদায় করার জন্য উক্ত আমলটাও ফরয।”
যেমন, উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, নামায আদায় করা হচ্ছে ফরয। আর এই নামায পূর্ণ হওয়ার বা আদায় হওয়ার একটি শর্ত হচ্ছে তাহারাত বা পবিত্রতা অর্থাৎ ওজু। অর্থাৎ যখনই সে নামায আদায় করবে তখনই তার জন্য ওজু করা ফরয হয়ে যাবে। যেহেতু ওজু ছাড়া নামায হবেনা। ঠিক তদ্রুপই ইলমে তাছাউফ অর্জন করা ফরয। আর বাইয়াত হওয়া ব্যতীত তা অর্জিত হয়না। তাই বাইয়াত হওয়াও ফরয। আর হাদীস শরীফের ভাষায় এ ধরণের ফরযসমূহকে فريضة عادلة বা অতিরিক্ত ফরয বলা হয়। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
العلم ثلاثة اية محكمة سنة قائمة فريضة عادلة وماكان سوى ذالك فهو فضل.
অর্থঃ- “ইল্ম হচ্ছে তিন প্রকার। ফরযে আইন, সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্ ও অতিরিক্ত ফরয। এছাড়া বাকি যা আছে তা নফলের অন্তর্ভুক্ত।” কাজেই উক্ত হাদীস শরীফে বর্ণিত فريضة عادلة বা অতিরিক্ত ফরযের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে মাযহাব মানা, বাইয়াত হওয়া ইত্যাদি। মূলতঃ পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হতে হবে এটা মহান আল্লাহ্ পাক-এর কালামে পাকের অসংখ্য আয়াত শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত হয়। যেমন, এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
يا يها اذين امنوا اتقوا الله وكونوا مع الصدقين.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্ পাককে ভয় করো। আর ছদিক্বীনদের সঙ্গী হও।” (সূরা তওবা/১১৯) এ আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক মূলতঃ হক্কানী পীর-মাশায়েখগণের ছোহ্বত লাভ করার কথাই বলেছেন। কারণ হক্কানী পীর ছাহেবগণই হচ্ছেন হাক্বীক্বী ছদিক্বীন। আল্লাহ্ পাক এ প্রসঙ্গে আরো ইরশাদ করেন,
يايها الذين امنوا اتقوا الله وابتغوا اليه الوسيلة.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্ পাককে ভয় করো। আর আল্লাহ্ পাক-এর সন্তুষ্টি লাভের জন্য উছীলা গ্রহণ করো।” (সূরা মায়িদা/৩৫)
মুফাস্সিরীন-ই-কিরামগণ বলেন, উল্লিখিত আয়াত শরীফে বর্ণিত “উছীলা” দ্বারা তরীক্বতের শায়খদেরকে বুঝানো হয়েছে। যদিও অনেকে নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত, দান-ছদকা, জিহাদ ইত্যাদিকে “উছীলা” বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু হাক্বীক্বতে পীর ছাহেবগণই হচ্ছেন প্রধান ও শ্রেষ্ঠতম “উছীলা।” তথা উছীলাসমূহেরও উছীলা। কারণ পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া ব্যতীত ইছলাহ্ েনফস্ বা আত্মশুদ্ধি বা ইছলাহ্ অর্জিত হয়না। আর ইখলাছ ব্যতীত নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত, দান-ছদকা, জিহাদ, তাবলীগ কোন কিছুই আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে কবুল হয়না বা নাযাতের উছীলা হয়না। তাই দেখা যাবে অনেক লোক নামায আদায় করেও, দান করেও, জিহাদ করেও এবং তাবলীগ করেও জাহান্নামে যাবে। যেমন, আল্লাহ্ পাক সূরা মাউনে বলেন,
فويل للمصلين.
অর্থঃ- “মুছল্লীদের জন্য জাহান্নাম।” (সূরা মাউন/৭)
কোন্ মুছল্লী জাহান্নামে যাবে? যে মুছল্লী ইছলাহ্ েনফসের মাধ্যমে অন্তর থেকে রিয়া দূর করে ইখলাছ হাছিল করেনি। তাই সে মানুষকে দেখানোর জন্য নামায আদায় করেছে, আল্লাহ্ পাক-এর জন্য আদায় করেনি। আল্লাহ্ পাক বলেন,
الذين هم يرائون.
অর্থঃ- “তারা ঐ নামাযী, যারা রিয়ার সাথে নামায আদায় করেছে।” (সূরা মাউন/৬) “মূসলিম শরীফের” ছহীহ্ হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, “ক্বিয়ামতের দিন শহীদ,দানশীল ও দ্বীন প্রচারকারী আলিম এই তিন প্রকার লোক থেকে কিছু লোককে সর্বপ্রথম জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। যেহেতু তারা ইখলাছের সাথে জিহাদ, দান-ছদকা ও দ্বীন প্রচার করেনি। যারা বলে কুরআন শরীফে বর্ণিত “উছীলা” হচ্ছে নামায, জিহাদ, দান, তাবলীগ ইত্যাদি; তাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন- তাহলে নামায আদায় করে, জিহাদ করে, দান-ছদকা করে, তাবলীগ করেও বান্দা জান্নামে গেল কেন? কেন উক্ত আমলসমূহ তার জন্য নাযাতের উছীলা হলোনা?
নিশ্চয়ই জবাব আসবে তাদের “ইখলাছ” ছিলোনা। কেন ইখলাছ ছিলোনা? তারা হক্কানী পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফ চর্চার মাধ্যমে ইছলাহে নফস বা আত্মশুদ্ধি লাভ করতঃ ইখলাছ অর্জন করেনি। তাহলে বুঝা গেল, পীর ছাহেবই হচ্ছেন প্রধান ও শ্রেষ্ঠতম উছীলা তথা উছীলা সমূহেরও উছীলা। কারণ তাদের কাছে বাইয়াত হওয়ার উছীলাতেই ইছলাহ্ লাভ হয়, ইখলাছ অর্জিত হয়। যার ফলে তার নামায, রোযা ইত্যাদি কবুল হয় বা নাযাতের উছীলা হয়। কামিল মুর্শিদ বা পীর ছাহেবের গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক অন্যত্র আরো ইরশাদ করেন,
من يهد الله فهو المهتد ومن يصلل فلن تجدله وليا مرشدا.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি হিদায়েত চায় আল্লাহ্ তাকে হিদায়েত দেন আর যে ব্যক্তি গোমরাহীর মধ্যে দৃঢ় থাকে সে ওলীয়ে মুর্শিদ কামিল পীরের সন্ধান পায়না।” (সূরা কাহ্ফ/১৭) উক্ত আয়াত শরীফের দ্বারা মূলতঃ এটাই বুঝানো হয়েছে, যে ব্যক্তি কোন কামিল পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হয়নি সে ব্যক্তি গোমরাহ্। তাই অনেক ইমাম-মুজতাহিদগণ বলেছেন,
من ليس له شيخ فشيخه شيطان.
অর্থাৎ- “যে ব্যক্তি কোন হক্কানী পীর বা শায়খ গ্রহণ করেনি; তার শায়খ বা উস্তাদ হয় শয়তান।” শয়তানই তাকে গোমরাহ্ বা বিভ্রান্ত করে দেয়। কাজেই গোমরাহী থেকে বাঁচা যেহেতু ফরয, আর পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া ব্যতীত যেহেতু তা সম্ভব নয়, তাই পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়াও ফরয। আর ঠিক এ কথাটিই বলেছেন, আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আযম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন,
لولا سنتان لهلك ابو نعمان.
অর্থাৎ- “যদি আমি নোমান বিন ছাবিত দু’টি বৎসর না পেতাম তবে হালাক হয়ে যেতাম।” অর্থাৎ যদি আমি আমার পীর ছাহেব ইমাম বাকের ও ইমাম জাফর ছাদিক রহমতুল্লাহি আলাইহিমা-এর নিকট বাইয়াত হয়ে দু’বৎসর অতিবাহিত না করতাম তবে আত্মশুদ্ধি লাভ না করার কারণে গোমরাহ্ ও হালাক্ব হয়ে যেতাম। আর বিখ্যাত কবি, বিশ্বখ্যাত দার্শনিক ও আলিম, বিশিষ্ট সূফীসাধক, হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন রূমী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
مولوی خود بخود نشد مولائے روم+
تا غلام شمس تبریسج نشد.
অর্থঃ- “আমি মাওলানা রূমী (রহমতুল্লাহি আলাইহি) ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্ ওয়ালা হতে পারিনি, যতক্ষণ পর্যন্ত আমার পীর শাম্ছে তাব্রীজী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট বাইয়াত হয়ে ইল্মে তাসাউফ চর্চা করে ইখ্লাছ হাছিল না করেছি। অর্থাৎ ইল্মে তাছাউফ চর্চার মাধ্যমে ইখ্লাছ অর্জন করার পরই হাক্বীক্বী মু’মিন হতে পেরেছি।” উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, প্রত্যেকের জন্যই ইছলাহে নফস বা আত্মশুদ্ধি লাভ করতঃ ইখলাছ অর্জন করা ফরয। আর এ ফরয আদায়ের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে কামিল পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া। তাই বাইয়াত হওয়াও ফরয। তাই ক্বাদরীয়া তরীক্বার ইমাম, গাওছুল আযম, মাহবুবে ছোবহানী, কুতুবে রব্বানী, মুজাদ্দিদে আযম শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত তাছাউফ গ্রন্থ “সিররুল আসরার” এর ৫ম অধ্যায়ে “তওবার’ বয়ানে লিখেন,
ولذالك طلب اهل التلقين لحياة القب فرض كما قال عليه الصلوة والسلام طلب العلم فريضة على كل مسلم والمراد منه علم المعرفة والقربة-
অর্থাৎ “ক্বল্ব বা অন্তরকে জীবিত বা যাবতীয় কুরিপু হতে পবিত্র করার জন্য “আহ্লে তালক্বীন’ অর্থাৎ পীরে কামিল গ্রহণ করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয। “হাদীস শরীফে যে ইল্ম অর্জন করা ফরয বলা হয়েছে” তদ্বারা ইল্মে মা’রিফত ও কোরবতকেই বুঝানো হয়েছে।”
এছাড়া আরো অন্যান্য সর্বজনমান্য ও সর্বজন স্বীকৃত ইমাম, মুজতাহিদ ও আওলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম পীর সাহেবের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ফরয বলে ফতওয়া দিয়েছেন।
যেমন- হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “ইহ্ইয়াউল উলুমুদ্দীন ও ক্বিমিয়ায়ে সায়াদাত” কিতাবে, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্তী আজমিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি “আনিসুল আরওয়াহ্” কিতাবে, ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত শায়খ আবুল কাসিম কুশাইরী রহমতুল্লাহি আলাইহি “রিসালায়ে কুশাইরিয়া” কিতাবে, হযরত কাজী ছানাউল্লাহ্ পানিপথি রহমতুল্লাহি আলাইহি, “মালা বুদ্দা মিনহু” ও “ইরশাদুত্তালেবীন” কিতাবে, শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি “তাফসীরে আযীযী” নামক কিতাবে, হাফিযে হাদীস আল্লামা রুহুল আমীন রহমতুল্লাহি আলাইহি “তাছাউফ তত্ত্ব” বা “তরীক্বত দর্পন” কিতাবে, আল্লামা শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি “রদ্দুল মুহতার” কিতাবে, ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “তফসীরে কবীর” কিতাবে, কাইয়্যুমে আউয়াল, আফজালুল আউলিয়া, হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি “মকতুবাত শরীফে”, ইমামুজ্জামান হযরত ইমাম আহমদ রেফায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি “আল্ বুনইয়ানুল মুশাইয়্যাদ” কিতাবে. ইমামুল আলিম, শাইখুল কামিল, খাতিমাতুল মুফাস্সিরীন শায়খ হযরত ইসমাঈল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি “তাফসীরে রহুল বয়ানে” সরাসরি পীর ছাহেব গ্রহণ করা ফরয বলে ফতওয়া দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে হাদিয়ে বাঙ্গাল, মুজাহিদে আ’যম শাইখুল মাশায়েখ আল্লামা কারামত আলী জৈনপূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি “যাদুত্ তাকওয়াতে” লিখেন,
اور یہ بھی معلوم ھو چکا کہ فقہ کے موافق عمل بھی بے تصوف گے درست نھیں ھوتا. تو اب ثابت موا کہ مؤمن کو تصوف پر عمل کرنیکی بری حاجت ھے اور تصوف پر عمل کرنا بغیر صحبت اور تعلیم مرشد کامل جو تصوف سے واقف اور اس پرعامل ھے ممکن نھیں.
অর্থাৎ “এটাই প্রমাণিত হলো যে, ইল্মে তাছাউফ ব্যতীত ফিক্বাহের উপর যথাযথ ভাবে আমল করা সম্ভব নয়। সুতরাং ছাবেত হলো যে, ইল্মে তাছাউফ চর্চা করা সকলের জন্যই অবশ্য কর্তব্য (ফরয)। আর এই ইল্মে তাছাউফে পারদর্শী মুর্শিদে কামিল-এর ছোহ্বত ও তা’লীম ব্যতীত তা অর্জন করা সম্ভব নয়।” হাটহাজারী খারিজীদের মুরুব্বী মুফতী শফী স্বয়ং নিজেই তার “মা’আরেফুল কুরআনে” “সূরা বাক্বারার” উক্ত আয়াত শরীফের তাফসীরে লিখেন,
… اصلاح اخلاق نھیں ھوتی جب تک کسی تربیت یافتہ مربی کے زیر نظر عملی تر بیت حاصل نہ کرے … عمل کی ھمت وتوفیق کسی کتاب کے پڑھنے یا سمجھنے سے پیدا نھیں ھوتی اس کی صرف ایک ھی تدبیر ھے کہ اللہ والوں کی صحبت.
অর্থঃ- “… আত্মশুদ্ধি অর্জিত হবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত ইছলাহ্ প্রাপ্ত কোন বুযূর্গ বা পীরে কামিলের অধীনে থেকে তা’লীম ও তরবিয়্যত হাছিল না করবে। …. আমল করার হিম্মত ও তাওফীক কোন কিতাব পড়া ও বুঝার দ্বারা অর্জিত হয়না, তা অর্জন করার একটিই পথ, তাহলো ওলীগণের(কামিল পীরের) ছোহ্বত।” স্মর্তব্য, হাটহাজারী মৌলভীরা যে লিখেছে, “.. আত্মশুদ্ধি পীর ছাহেব ছাড়াও যে কোন মুহাক্কিক আমলদ্বার আলেমে দ্বীনের সাথে আত্মশুদ্ধিমূলক সম্পর্ক স্থাপনের দ্বারাও অর্জন হতে পারে যদিও তাতে বাইয়াত গ্রহণ না করা হয়। ..” হাটহাজারী মৌলভীদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই মনগড়া, দলীলবিহীন ও স্ববিরোধী। কারণ তারাই প্রথমে বলেছে, “… নফসের ইছলাহ্ তথা আত্মশুদ্ধি অর্জন হলো ফরয। আর এই ইছলাহ্ েনফসের একটি মাধ্যম হল বাইআত।” যদি আত্মশুদ্ধি লাভের মাধ্যম বাইয়াত হয় তবে বাইয়াত ব্যতীত শুধু সম্পর্কের দ্বারা কি করে আত্মশুদ্ধি লাভ করা সম্ভব? তাদের উক্ত বক্তব্য স্ববিরোধী নয় কি? তাছাড়া বাইয়াত না হয়ে শুধু আত্মশুদ্ধিমূলক সম্পর্ক রাখলেই যদি চলতো তবে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাত মুবারকে বাইয়াত গ্রহণ করলেন কেন? আর পরবর্তীতে খোলাফা-ই-রাশেদীনগণের হাত মুবারকেও বাইয়াত হলেন কেন? তাঁরাও তো পারতেন বাইয়াত না হয়ে শুধু আত্মিক সম্পর্কের দ্বারাই ফায়দা হাছিল করতে? কাজেই হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ যেখানে আত্মশুদ্ধি লাভের জন্য বাইয়াত হয়েছেন সেখানে এমন কে আছে যে বাইয়াত হওয়া ব্যতীত আত্মশুদ্ধি লাভ করতে পারে? কাজেই বাইয়াত হওয়া ব্যতীত শুধু সম্পর্কের দ্বারা কখনোই আত্মশুদ্ধি লাভ করা সম্ভব নয়। এরপর বলতে হয় যে, .. “পীর ছাহেব ছাড়া যে কোন আলেমে দ্বীনের সাথে সম্পর্ক রাখার মাধ্যমেও আত্মশুদ্ধি লাভ হতে পারে। ..” তাদের এ বক্তব্য চরম জিহালতপূর্ণ, বিভ্রান্তিকর ও দলীলবিহীন। তারা এতই অজ্ঞ যে আলিম-এর সংজ্ঞাই তারা জানেনা। তাদের বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায় যে, যারা পীর ছাহেব তারা আলিম নন। অথচ পীর ছাহেবগণই হচ্ছেন হাক্বীক্বী আলিম। কেননা, পীর ছাহেবগণই ইলমে ফিক্বাহ্ ও ইলমে তাছাউফ এই উভয় প্রকার ইলমের অধিকারী। আর উক্ত উভয় প্রকার ইলমের অধিকারীগণই হচ্ছেন প্রকৃত আলিম বা ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া। যেমন, এ প্রসঙ্গে ইমামে রব্বানী, মাহ্বুবে সুবহানী, কাইয়ুমে আউয়াল, হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত কিতাব “মকতুবাত শরীফে” উল্লেখ করেন,
العلماء ورثة الانبياء علميكه از اتبياء عليه الصلوات والتسليمات باقى مانده است دونوع است علم احكام وعلم اسرار وورث كسى هست كه اورا هردو نوع علم سهم بود نه انكه اورا ازيك نوع نصيب بود نه ازنوع ديكر كه ان منافى وراثت است- .. ه راثت را از جميع انواع ترك مورث نصيب است نه ازبعض وانكه اورا ازمعين نصيب است داخل غرما است كه نصيب اوبجنس حق او نعلق كرفته است.
অর্থঃ- “আলিমগণ নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের ওয়ারিছ” এ হাদীস শরীফে বর্ণিত আলিম তারাই, যাঁরা নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের রেখে যাওয়া ইল্মে আহ্কাম (ইল্মে ফিক্বাহ্) ও ইল্মে আসরার (ইল্মে তাছাউফ) উভয় প্রকার ইল্মের অধিকারী। অর্থাৎ তিনিই প্রকৃত ওয়ারিছ বা স্বত্বাধিকারী। আর যে ব্যক্তি শুধুমাত্র এক প্রকার ইল্মের অধিকারী, সে ব্যক্তি নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের প্রকৃত ওয়ারিছ নয়। কেননা পরিত্যক্ত সম্পত্তির সকল ক্ষেত্রে অংশিদারী হওয়াকেই ওয়ারিছ বলে। আর যে ব্যক্তি পরিত্যক্ত সম্পত্তির কোন নির্দিষ্ট অংশের অধিকারী হয় তাকে গরীম বলে। অর্থাৎ সে ওয়ারিছ নয় গরীমের অন্তর্ভুক্ত।” পক্ষান্তরে যারা পীর ছাহেব নয় অর্থাৎ শুধু ইলমে ফিক্বাহ্র অধিকারী, ইলমে তাছাউফ শুন্য তারা আলিম তো নয়ই বরং চরম ফাসিক।
এ প্রসঙ্গে হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “মিশকাত শরীফের” বিখ্যাত শরাহ্ “মিরকাত শরীফে” উল্লেখ করেন যে, মালেকী মায্হাবের ইমাম হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
من تغقه ولم يتصوف فقد تفسق ومن تصوف ولم يتفقه فقد تزندق ومن جمع بينهما فقد تحقق.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ইল্মে ফিক্বাহ্ শিক্ষা করলো, কিন্তু ইল্মে তাছাউফ শিক্ষা করলো না, সে ফাসিক। আর যে ব্যক্তি ইল্মে তাছাউফ শিক্ষা করলো কিন্তু ইল্মে ফিক্বাহ্ শিক্ষা করলো না, সে যিন্দিক (কাফির)। আর যে ব্যক্তি উভয়টি শিক্ষা করলো, সে মুহাক্কিক তথা হক্কানী আলিম।” অতএব, প্রমাণিত হলো হক্কানী পীর ছাহেবগণই হচ্ছেন প্রকৃত বা খাঁটি আলিমে দ্বীন। আত্মশুদ্ধি লাভ করতে হলে তাদের কাছেই বাইয়াত হতে হবে। যে ব্যক্তি কোন পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হয়ে আত্মশুদ্ধি লাভ করতঃ খিলাফত প্রাপ্ত হয়নি তার নিকট বাইয়াত হওয়া হারাম। অতঃপর হাটহাজারীর মুখপত্র বলেছে, “মুজাদ্দেদিয়া তরীকা হযরত শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী (রহ) এর দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।” এর জবাবে বলতে হয় যে, তাদের এ বক্তব্যও জিহালতপূর্ণ। কারণ মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বাকে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কেননা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি হলেন, মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বার প্রতিষ্ঠাতা, সেহেতু হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রতি ইঙ্গিত করেই মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বার নাম করণ করা হয়েছে। আর শায়খ শিহাবুদ্দীন ওমর সোহরাওয়ার্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি হলেন সোহরাওয়ার্দীয়া তরীক্বার প্রতিষ্ঠাতা।
অতএব, আত্মশুদ্ধি ও ইল্মে তাছাউফ অর্জন করা যেহেতু ফরযে আইন। আর কামিল পীর ছাহেব ব্যতীত যেহেতু ইল্মে তাছাউফ ও আত্মশুদ্ধি অর্জন করা সম্ভব নয়, সেহেতু একজন কামিল পীর ছাহেব অন্বেষণ করা, গ্রহণ করা, বাইয়াত বা মুরীদ হওয়া ফরয। এটাই গ্রহণযোগ্য, বিশুদ্ধ ও দলীলভিত্তিক ফতওয়া। এর বিপরীত মত পোষণকারীরা বাতিল ও গোমরাহ্। {দলীলসমূহঃ- (১) তাফসীরে খাযেন, (২) বাগবী, (৩) কুরতুবী, (৪) আহ্কামুল কুরআন লিল জাস্সাস, (৫) আবী সউদ, (৬) ফতহুল ক্বাদীর, (৭) ইবনে কাছীর, (৮) তাবারী, (৯) দুররে মানছূর, (১০) রুহুল বয়ান, (১১) রুহুল মায়ানী, (১২) মাআরেফুল কোরআন, (১৩) মুসলিম, (১৪) তিরমিযী, (১৫) আবূ দাউদ, (১৬) ইবনে মাযাহ্ (১৭) বায়হাক্বী, (১৮) দারিমী, (১৯) দায়লামী, (২০) তারগীব ওয়াত তারহীব, (২১) তারীখ, (২২) আব্দুল বার, (২৩) মিশকাত, (২৪) বজলুল মাযহুদ, (২৫) শরহে নববী, (২৬) মায়ারেফুস্ সুনান, (২৭) উরফুশ্ শাজী,(২৮) মিরকাত, (২৯) লুময়াত, (৩০) আশয়াতুল লুময়াত, (৩১) শরহুত্ ত্বীবী, (৩২) তা’লীকুছ্ ছবীহ্, (৩৩) মুযাহিরে হক্ব, (৩৪) মিরআতুল মানাজীহ্, (৩৫) কিমিয়ায়ে সাআদাত, (৩৬) ইহ্ইয়াউল উলুমিদ্দীন, (৩৭) আল মুনকিযু মিনাদ্দালাল (৩৮) ফাতহুর রব্বানী, (৩৯) মাকতুবাত শরীফ, (৪০) আল বুনিয়ানুল মুশাইয়্যাদ, (৪১) সাইফুল মুকাল্লিদীন, (৪২) ফতওয়ায়ে আমিনীয়া, (৪৩) ফতওয়ায়ে সিদ্দীক্বিয়া, (৪৪) শরহে আক্বায়িদে নসফী, (৪৫) ফিক্বহুল আকবার (৪৬) মিনহাজুল আবিদীন ইত্যাদি।}