সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ৩০১তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ আসাদুর রহমান

কুড়িগ্রাম।

সুওয়াল: আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের আহমক বক্তা এক ওয়াজে বলেছে- দুরুদ পাঠ করার জন্য সবাই মিছিল দিয়ে, যোগান দিয়ে, হেউরে হেউর মতো বলে, সুরে সুর মিলিয়ে, দুরুদ পড়ার জন্য একত্রিত হওয়া, বা দুরুদের নাম দিয়ে মীলাদ পড়া কোনটাই নবীজির শিক্ষা নয়। মীলাদে যদি সবাই কিয়ামের নামে খাড়াইতে হয়, নবীর মীলাদে যদি ক্বিয়াম করতে হয়, তাহলে পবিত্র কুরআন শরীফ পড়ার সময় ফ্যানে ঝুলাই যাওয়া দরকার।

জাওয়াব: আস সুন্নাহ নয়-বিদয়াত ফাউন্ডেশনের আহমক বক্তা পবিত্র দুুরূদ শরীফ পড়া নিয়ে এবং পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র মীলাদ শরীফে ক্বিয়াম শরীফ সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছে তার উক্ত সুওয়ালে বর্ণিত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে কুরুচীপুর্ণ, কটুক্তিপূর্ণ, প্রতারণামূলক, কল্পনাপ্রসূত, উদ্ভট, ডাহা মিথ্যা, বানোয়াট, মনগড়া, ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিকর ও দলীলবিহীন এবং পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ বিরোধী। যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

 কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

هَاتُـوْا بُـرْهَانَكُمْ اِنْ كُنْـتُمْ صَادِقِيْنَ

অর্থ: তোমরা সত্যবাদী হলে দলীল পেশ করো। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বাক্বারাহ শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ-১১১, সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নমল শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ-৬৪)

 পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছেন-

لَعْنَتَ اللهِ عَلَى الْكَاذِبِيْنَ

অর্থ: মিথ্যাবাদীদের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত বা অভিসম্পাত। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: সম্মানি ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৬১)

কাজেই, এই আহমক বক্তা তার বক্তব্যের স্বপক্ষে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ থেকে একটি দলীলও পেশ করতে পারেনি এবং এই জাহিল ও জালিয়াত কস্মিনকালেও একটি দলীলও পেশ করতে পারবে না।

 আহমকের উক্ত বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, গোমরাহীমূলক, প্রতারণামূলক ও কুফরীমূলক হয়েছে, সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। আর তা হওয়াটাই একেবারেই স্বাভাবিক।

প্রথমত: সে যে পবিত্র দুরূদ শরীফ নিয়ে কটুক্তি ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছে এতে সে কাফির হয়ে গেছে।

দ্বিতীয়ত: এক সাথে পাঠ করাকে অস্বীকার করে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্রতম আমল ও আদেশ মুবারক উনার বিপক্ষে ফতওয়া দেয়ার কারণে কুফরী করেছে।

তৃতীয়ত: পবিত্র মীলাদ শরীফ অর্থাৎ যে পবিত্রতম ছানা-ছিফত মুবারক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল কুদরত মুবারক, পবিত্রতম ওযুদ বা জাত মুবারক, অস্তিত্ব মুবারক উনার সাথে নিসবতযুক্ত এবং পবিত্র মীলাদ শরীফে পবিত্র ছলাত-সালাম শরীফ পেশ করার জন্য ক্বিয়াম শরীফ করা হয় তা অস্বীকার করার কারণে মূলত পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদেরকে অস্বীকার করে কুফরী করেছে।

চতুর্থত: উক্ত আমলগুলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ নয়- বলে সরাসরি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদেরকেই অস্বীকার করার কারণে কুফরী করেছে।

এই আহমকের কুফরীমূলক বক্তব্যের খণ্ডনমূলক জাওয়াবের জন্য পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার সূরা আহযাব শরীফ ৫৬ নং পবিত্র আয়াত শরীফখানাই যথেষ্ট। কেননা এই পবিত্র আয়াত শরীফখানার মাধ্যমেই স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর সম্মিলিতভাবে সম্মানিত ছলাত বা পবিত্র দুরুদ শরীফ, সালাম শরীফ, পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করা এবং পবিত্র মীলাদ শরীফে ক্বিয়াম শরীফ পাঠ করা সকল মুসলমানদের জন্য ফরযে আইন হওয়ার মূল দলীল ও উছূল। যদিও পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আরো অসংখ্য দলীল আদিল্লাহ রয়েছে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

إِنَّ اللهَ وَمَلَآئِكَتَهٗ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِيِّ ۚ يَا أَيُّـهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا

অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার সকল হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্রতম ছলাত বা দুরূদ শরীফ পাঠ করছেন। হে ঈমানদারগণ! উনার প্রতি আপনারাও সকলেই পবিত্রতম ছলাত শরীফ বা দুরূদ শরীফ পেশ করুন এবং যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক সালাম মুবারক পেশ করুন। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ-৫৬)

উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই- সমস্ত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম শান মুবারকে পবিত্র মীলাদ শরীফ অর্থাৎ উনার পবিত্রতম ওজুদ মুবারক, জাত মুবারক, অস্তিত্ব মুবারক উনার প্রতি পবিত্রতম ছলাত বা দুরূদ শরীফ পাঠ করছেন। সুবহানাল্লাহ!

স্মরনীয় যে, উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফে يُصَلُّوْنَ শব্দ মুবারক হচ্ছেন جَمْعٌ বা বহুবচন। যার فَاعِلٌ বা কর্তা হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই। তাহলে এখানে স্পষ্ট হলো যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং সমস্ত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মিলিতভাবে ছলাত বা দুরুদ শরীফ পাঠ করছেন। আর একসাথেই পবিত্র ছলাত বা পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করা- মহান আল্লাহ পাক উনার ও হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের আমল মুবারক। সুবহানাল্লাহ! তাহলে আহমক কি করে বলতে পারলো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর একসাথে বা সম্মিলিতভাবে ছলাত বা দুরূদ শরীফ পড়া যাবে না? এ বিষয়ে কিভাবে ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ করতে পারলো? নাউযুবিল্লাহ! এই আহমক মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্রতম আয়াত শরীফ এবং পবিত্রতম আমল মুবারকের বিপক্ষে ফতওয়া দিয়ে সে কি কাফির হলো না? গোমরা হলো না? অবশ্যই সে গোমরাহ ও কাফির হয়ে গেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। নাউযুবিল্লাহ!

এরপর আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُـوْا

হে ঈমানদার বান্দাগণ! এখানে اٰمَنُـوْا শব্দ মুবারকও جَمْعٌ বা বহুবচন। যা সমস্ত ঈমানদারদেরকে একসাথে সম্বোধন করা হয়েছে।

এরপর মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

صَلُّوْا عَلَيْهِ

অর্থাৎ আপনারাও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর পবিত্রতম ছলাত পাঠ করুন। এখানে صَلُّوْا শব্দ মুবারকও جَمْعٌ বা বহুবচন হিসেবে ব্যবহার করে মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত মুসলমানদেরকে সম্মিলিতভাবে পবিত্রতম ছলাত বা দুরূদ শরীফ পড়তে আদেশ মুবারক করেছেন।

অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا

হে ঈমানদার বান্দাগণ! তোমরা সম্মিলিতভাবে যথাযথ আদবের সাথে, মুহব্বতের সাথে গুরুত্বসহকারে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্রতম সালাম মুবারক পেশ করুন। এই আয়াত শরীফ উনার মধ্যেও سَلِّمُوْا শব্দ মুবারক বহুবচন ব্যবহার করে মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মিলিতভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ‘ পবিত্রতম সালাম’ শরীফ পেশ করার জন্য আদেশ মুবারক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তদসঙ্গে تَسْلِيْمًا শব্দ মুবারক তাকীদ হিসেবে সংযুক্ত করে যথাযথা আদব, শরাফত, মুহব্বত এবং গুরুত্বসহকারে সালাম দেয়ার জন্য আদেশ মুবারক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

 আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র সালাম মুবারক পেশ করার সর্বোচ্চ আদব, শরাফত, মুহব্বত ও গুরুত্ব হচ্ছে উনাকে দাঁড়িয়ে সালাম মুবারক পেশ করা। যা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পবিত্রতম আমল মুবারক। যা অদ্যবধি এ আমল মুবারক চলমান রয়েছে। কেউ যদি পবিত্রতম রওযা শরীফ যিয়ারত করতে যান উনারা দাড়িয়েই সালাম পেশ করেন। তাই দূরে হোক, কাছে হোক, যেখান থেকেই হোক না কেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সালাম মুবারক পেশ করার আদবই হচ্ছে দাঁড়িয়েই পবিত্রতম সালাম মুবারক পেশ করা।

মূলত পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠকালে বসা অবস্থায় ছলাত শরীফ বা দুরূদ শরীফ এবং ক্বিয়াম বা দাঁড়ানো অবস্থায় সালাম মুবারক পেশ করা হয়। এটাই সম্মানিত শরীয়ত উনার তরতীব এবং আদব। খোদ পবিত্র রওজা শরীফে গিয়েও হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দাঁড়িয়ে সালাম মুবারক পেশ করা হয়ে থাকে। আর এ নিয়ম শুরু থেকেই জারি হয়ে আসছে।

অনুরূপ পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সালাম মুবারক পেশ করার নিয়মও একই। অথার্ৎ দাঁড়িয়েই সালাম মুবারক পেশ করতে হবে। এটা মীলাদ শরীফ পাঠকালে হোক কিংবা মীলাদ শরীফ পাঠকালীন ছাড়া হোক।

শুধু তাই নয়, সাধারণ মু’মিন মুসলমান উনাদের ক্ববরে সালাম পেশ করতে হলে দাঁড়িয়েই সালাম দিতে হয়। সেখানে বসা বা বসে সালাম দেয়া নিষেধ। একইভাবে যারা বিশেষ শ্রেণীর মু’মিন হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম অতঃপর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মাযার শরীফে গিয়ে সালাম দিতে হলেও দাঁড়িয়েই সালাম মুবারক পেশ করতে হবে। অনুরূপ হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের ক্ষেত্রেও সালাম মুবারক দেয়ার হুকুম একই।

কিন্তু আহমক বক্তার গোস্সা হচ্ছে, কেন মীলাদ শরীফ পাঠকালে ক্বিয়াম করতে হবে? যদি তাই হয় তাহলে পবিত্র কুরআন শরীফ পড়ার সময় ফ্যানে ঝুলে যাওয়া দরকার। নাউযুবিল্লাহ! আসলে আহমক ও গোমরাহ এর বক্তব্য আহমকী ও গোমরাহীমূলকই হয়ে থাকে।

আসলে এ শ্রেণীর লোকগুলিই হচ্ছে, পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালে কায্যাব এবং উলামায়ে সূ’র অন্তর্ভুক্ত। যারা জাহান্নামের জুব্বুল হুযনের অধিবাসী হবে। নাঊযুবিল্লাহ!

জানা আবশ্যক, মজলিসে একত্রিত হয়ে ছলাত-সালাম মুবারক বা দুরূদ শরীফ পাঠ করার ব্যাপারে বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে।

যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ أَبِىْ هُرَيْـرَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا جَلَسَ قَـوْمٌ مَجْلِسًا لَمْ يَذْكُرُوا اللهَ فِيْهِ وَلَمْ يُصَلُّوْا عَلٰى نَبِيِّهِمْ إِلَّا كَانَ عَلَيْهِمْ تِرَةً فَإِنْ شَاءَ عَذَّبَهُمْ وَإِنْ شَاءَ غَفَرَ لَـهُمْ

অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “কোন সম্প্রদায় যখন এরূপ কোন মজলিসে একত্রিত হয়, যে মজলিসে তারা মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করেনা ও তাদের যিনি মহাসম্মানিত নবী-রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত শরীফ ও সালাম মুবারক পাঠ করেনা, ঐ মজলিস তাদের জন্য অনিষ্ট ও অকল্যাণের কারণ হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইচ্ছা করলে তাদেরকে শাস্তি দিবেন অথবা ইচ্ছা করলে তাদেরকে ক্ষমা করবেন।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ পৃঃ ১৯৭)

 পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ لَا يَجْلِسُ قَـوْمٌ مَجْلِسًا لَا يُصَلُّوْنَ فِيْهِ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا كَانَ عَلَيْهِمْ حَسْرَةً وَإِنْ دَخَلُوا الْجَنَّةَ لِمَا يَـرَوْنَ مِنَ الثَّـوَابِ

অর্থ: হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে সম্প্রদায় কোন মজলিসে সমবেত হয় অথচ তারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত শরীফ ও সালাম অথার্ৎ দুরূদ শরীফ পাঠ করেনা, সে মজলিস তাদের জন্য অনুতাপের কারণ হবে, যদিও তারা বেহেশতী হোক না কেন। কেননা বেহেশ্তে তারা ছলাত শরীফ ও সালাম মুবারকের অথার্ৎ দুরূদ শরীফ পাঠের প্রচুর ফযীলত দেখতে পাবে।” (শেফা ২য় খণ্ড, পৃঃ ৬৩)

আর মীলাদ শরীফ শব্দ মুবারক হচ্ছে ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ মুবারক। তন্মধ্যে একখানা অর্থ হচ্ছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল কুরদত মুবারক, ওযুদ বা জাত মুবারক, অস্তিত্ব মুবারক মনে প্রাণে বিশ্বাস ও গ্রহনের সাথে উনার খিদমত মুবারকে পবিত্রতম ছানা ছিফত মুবারকে মশগুল থাকা। যা মুলত মহান আল্লাহ পাক তিনি আলমে আরওয়াহর মধ্যে সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে একত্রিত করে উনাদের থেকে সেই মহা পবিত্রতম ওয়াদা মুবারকই নিয়েছেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্রতম মীলাদ শরীফ অর্থাৎ উনার পবিত্রতম ওজুদ মুবারক উনার ছানা-ছিফত মুবারক করেছেন।

এ প্রসঙ্গে খ¦ালিক্ব¡ মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاِذْ اَخَذَ اللهُ مِيْـثَاقَ النَّبِـيّٖنَ لَمَاۤ اٰتَـيْـتُكُمْ مِّنْ كِتٰبٍ وَّحِكْمَةٍ ثُـمَّ جَآءَكُمْ رَسُوْلٌ مُّصَدِّقٌ لِّـمَا مَعَكُمْ لَتُـؤْمِنُنَّ بِهٖ وَلَتَـنْصُرُنَّهٗ قَالَ ءَاَقْـرَرْتُـمْ وَاَخَذْتُـمْ عَلـٰى ذٰلِكُمْ اِصْرِىْ قَالُوْاۤ اَقْـرَرْنَا قَالَ فَاشْهَدُوْا وَاَنَا مَعَكُمْ مِّنَ الشّٰهِدِيْنَ

অর্থ: “আর যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে মহা পবিত্র ওয়াদা মুবারক গ্রহণ করলেন যে, আপনাদেরকে সম্মানিত কিতাব মুবারক এবং হিকমত মুবারক দেয়া হবে। অতঃপর আপনাদের নিকট আমার পক্ষ থেকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহা পবিত্র তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করবেন। তিনি আপনাদেরকে এবং আপনাদের কাছে যা কিছু রয়েছেন সমস্ত কিছুর তাছদীক্ব বা সত্যায়ন মুবারক করবেন। আপনারা অবশ্যই অবশ্যই উনার প্রতি সম্মানিত ঈমান মুবারক আনবেন এবং উনার মহা পবিত্র খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিবেন। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনারা সকলেই কি তা স্বীকার করে নিলেন এবং এই বিষয়ে আমার মহা পবিত্র ওয়াদা মুবারক গ্রহণ করলেন অর্থাৎ আমার শর্ত মুবারক মেনে নিলেন? উনারা বললেন, আমরা স্বীকার করে নিলাম, মেনে নিলাম, গ্রহণ করলাম। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, তাহলে আপনারা সকলে সাক্ষী থাকুন এবং আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী রইলাম। সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৮১)

অতএব উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমে স্পষ্ট হলো যে, স্বয়ং মহান খ¦ালিক মালিক রব তায়ালা তিনি নিজেই সমস্ত মহাসম্মানিত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নিয়ে আলমে আরওয়াহ শরীফে মজলিস করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর উনার পবিত্রতম মীলাদ শরীফ তথা উনার পবিত্রতম ছানা-ছিফত মুবারক উনার আয়োজন করেছেন, মহাসম্মানিত সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার মজলিস করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

আরো উল্লেখ্য যে, এই مِيْلَادٌ শব্দ মুবারক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনারই শব্দ মুবারক। পবিত্র মীলাদ শরীফ উনাকে ইনকার করা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, অস্বীকার করা এটাও কাট্টা কুফরী। কেননা মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য এবং অস্বীকার করার অর্থই হচ্ছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওজুদ মুবারক উনাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও অস্বীকার করার নামান্তর। যা কাট্টা কুফরী।

শব্দটি হাদীছ শরীফে অসংখ্য যায়গায় বর্ণিত রয়েছে। যেমন- পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে

عَنْ حَضْرَتِ الْـمُطَّلِبِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ قَـيْسِ بْنِ مَـخْرَمَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ عَنْ اَبِيْهِ عَنْ جَدِّهٖ قَالَ وُلِدْتُّ اَنَا وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيْلِ وَسَاَلَ حَضْرَتْ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ عَلَيْهِ السَّلَامَ قُـبَاثَ بْنَ اَشْيَمَ اَخَا بَنِيْ يَعْمَرَ بْنِ لَيْثٍ اَاَنْتَ اَكْبَـرُ اَمْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَـقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَكْبَـرُ مِنّي وَاَنَا اَقْدَمُ مِنْهُ فِي الْمِيْلَادِ وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيلِ

অর্থ : “হযরত মুত্তালিব ইবনে আব্দিল্লাহ ইবনে কাইস ইবনে মাখরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি উনার পিতা হতে এবং উনার পিতা উনার দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি “হাতীর বছরে” পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, আমিও সেই হাতীর বছরেই পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেছি। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি হযরত কুবাছ বিন আশইয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে প্রশ্ন করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বড় না আপনি বড়? তিনি উত্তরে বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার থেকে বড়, আর আমি উনার পূর্বে বিলাদত গ্রহণ করেছি।” (তিরমিযী শরীফ, হযরত আবূ ঈসা মুহাম্মদ ইবনু ঈসা রহমতুল্লাহি আলাইহি (২৭৯ হিঃ), আস সুনান, প্রকাশনা- বৈরুত, দারু ইহ্য়ায়িত তুরাসিল আরাবী, হাদীছ শরীফ নং ৩৬১৯)

এছাড়াও مِيْلَاد মীলাদ শরীফ দ্বারা হাদীছ শরীফ গ্রন্থে بَاب বা অধ্যায় রচনা করা হয়েছে।

১. বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত আবূ ঈসা মুহম্মদ ইবনু ঈসা তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি (হিজরী ২৭৯) তিনি উনার বিখ্যাত কিতাব জামে তিরমিযী শরীফ উনার ২য় খণ্ডের ২০৩ পৃষ্ঠায় একটি শিরোনাম রচনা করে নাম দিয়েছেন-

بَابُ مَا جَاءَ فِىْ مِيْلَادِ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

অর্থাৎ যা রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ সম্পর্কে এসেছে। এখানে তিনি ‘মীলাদুন নবী’ শব্দটি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ সংক্রান্ত বিষয় বুঝাতে ব্যবহার করেছেন।

২. ইমাম হযরত বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৪৫৮ হিজরী) তিনি উনার বিখ্যাত সীরাত সংক্রান্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কিতাব “দালায়িলুন নুবুওওয়াত” নামক কিতাবের ১ম খণ্ডের ৪৯ পৃষ্ঠায়

اَبْـوَابُ مِيْلَادِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

শীর্ষক একটি অধ্যায় এনেছেন, যেখানে স্পষ্ট ‘মীলাদে রসূল’ শব্দটি উল্লেখ করেছেন।

খ) হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পাড়া-পড়শী, আত্মীয়-স্বজন, নিজ ক্বওমকে একত্রিত করে মজলিস করে পবিত্র ঈদে মীলাদে রাসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন। এ বিষয়ে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِى الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ اَنَّهٗ مَرَّ مَعَ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلٰى بَـيْتِ عَامِرِ الاَنْصَارِىِّ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ وَكَانَ يُـعَلِّمُ وَقَائِعَ وِلادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِاَبْـنَائِهٖ وَعَشِيْـرَتِهٖ وَيَـقُوْلُ هٰذَا الْيَـوْمَ هٰذَا الْيَـوْمَ فَـقَالَ عَلَيْهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلامُ اِنَّ اللهَ فَـتَحَ لَكَ اَبْـوَابَ الرَّحْـمَةِ وَالْمَلائِكَةُ كُلُّهُمْ يَسْتَـغْفِرُوْنَ لَكَ مَنْ فَـعَلَ فِعْلَكَ نَـجٰى نَـجٰتَكَ

অর্থ : “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশী উনাদেরকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কিত মুবারক ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস; এই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটেছে)।

এতদশ্রবণে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা উনার মুবারক রহমত উনার দরজা মুবারক আপনার জন্য উম্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনার মত এরূপ কাজ করবে, তিনিও আপনার মত নাযাত (ফযীলত) লাভ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (আত তানউইর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, মাওলূদুল কাবীর, দুররুল মুনাযযাম- পৃষ্ঠা ৯৫, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইশবাউল কালামি ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়ামি, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী)

এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ اَنَّهٗ كَانَ يُـحَدِّثُ ذَاتَ يَـوْمٍ فِىْ بَـيْتِهٖ وَقَائِعَ وِلادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِقَوْمٍ، فَـيَسْتَـبْشِرُوْنَ وَيُـحَمِّدُوْنَ اللهَ وَيُصَلُّوْنَ عَلَيْهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاِذَا جَاءَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ حَلَّتْ لَكُمْ شَفَاعَتِىْ

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা উনার নিজগৃহে সমবেত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কিত মুবারক ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ উনারা আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল মুবারক পাঠ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি (পবিত্র ছলাত শরীফ- পবিত্র সালাম শরীফ) পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তথায় তাশরীফ মুবারক নেন এবং (পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে) বললেন, “আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত মুবারক ওয়াজিব হয়ে গেল।” সুবহানাল্লাহ! (আত তানউইর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, মাওলূদুল কাবীর, দুররুল মুনাযযাম- পৃষ্ঠা ৯৫, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইশবাউল কালামি ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়ামি, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী)

মাযহাবের ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মীলাদ শরীফ সম্মিলিতভাবে মজলিস করে পাঠ করার ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদান করেছেন। যেমন বর্ণিত আছে,

قَالَ حَضْرَتِ الْاِمَامُ الشَّافِعِىُّ رَحِـمَهُ اللهُ مَنْ جَـمَعَ لِمَوْلِدِ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِخْوَانًا وَهَيَّاَ طَعَامًا وَاَخْلٰى مَكَانًا وَعَمَلَ اِحْسَانًا وَصَارَ سَبَـبًا لّـِقِرَائَتِهٖ بَعَثَهُ اللهُ يَـوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ الصّدّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِـحِيْنَ وَيَكُوْنُ فِىْ جَنَّاتِ النَّعِيْمِ

অর্থ : শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মীলাদ শরীফ উপলক্ষ্যে লোকজন একত্রিত করলো এবং খাদ্য তৈরি করলো ও জায়গা নির্দিষ্ট করলো এবং উত্তমভাবে (তথা সুন্নাহভিত্তিক) আমল করলো তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ পাক তিনি হাশরের দিন ছিদ্দীক্ব, শহীদ, ছালিহীনগণ উনাদের সাথে উঠাবেন এবং উনার ঠিকানা হবে জান্নাতুন নায়ীমে।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উইলদি আদম)

কাজেই উপরোক্ত দলীল-আদিল্লাহ এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে যে, বিদয়াত ফাউন্ডেশনের হোতা আহমক সে যে একটা বড় মাপের প্রতারক মিথ্যাবাদী ধেঁাকাবাজা, দাজ্জালে কাযযাব ও মুর্খ এবং জাহিল তাতে কোন সন্দেহ নেই। তার তো ফতওয়া দেয়ার কোন যোগ্যতাই নেই। তার কোন কথাই সম্মানিত শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়। মুসলিম শরীফ উনার হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে-

كُلُّ مُصَوِّرٍ فِى النَّارِ

অর্থ: প্রত্যেক ছবি তোলনেওয়ালা, অঁাকনেওয়ালা জাহান্নামী। এই বিশুদ্ধ হাদীছ শরীফসহ আরো অংসখ্য হাদীছ শরীফে রয়েছে ছবি তোলা, আঁকা, রাখা সম্পূর্ণ হারাম, নাজায়িয এবং গোমরাহীমূলক এবং জাহান্নামী হওয়ার আলামত। অথচ সে এই পবিত্র হাদীছ শরীফগুলো সম্পর্কে নেহাতই অজ্ঞ। আর জানা থাকলেও সে আমল করে না, নিজেই টিভিতে অনুষ্ঠান করে, বেপর্দা হয়, তন্ত্র মন্ত্র করে, মন্দির পাহাড়া দেয়, গুঁই সাপ, ব্যাঙ, কাঁকড়া, কুচিয়া, গরুর অন্ডকোষ, এমনকি মদ যাতে মাতলামী না আসে তা পান করতে কোন নিষেধ নেই বলে এরূপ গোমরাহীমূলক ফতওয়া দিয়ে মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করছে, গোমরাহ বানাচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে কাফিরও বানাচ্ছে। এবং এই আহমকও সমস্ত হারাম কাজের যে মূল হোতা। যে নিজেকে জাহান্নামী করে নিয়েছে, নিজেকে রক্ষা করতে পারছে না, হারাম কাজের মধ্যে ডুবে আছে, শয়তানের দোসরগিরী করতেছে সে অন্যকে কি করে গোমরাহী ছাড়া হিদায়েতের পথে আনতে পারে? গোমরাহদের ফতওয়া গোমরাহীমূলকই হয়ে থাকে। আর গোমরাহদের কাছে গেলেই গোমরাহ হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই কস্মিনকালেও এ সমস্ত ব্যক্তিদের কাছে যাওয়া যাবে না এবং তাদের কথাও শোনা যাবে না।

কেননা মুসলিম শরীফের বিশুদ্ধ হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

فَانْظُرُوْا عَمَّنْ تَأْخُذُوْنَ دِيْـنَكُمْ

অর্থ: তোমরা যাদের থেকে সম্মানিত দ্বীন গ্রহণ করছো তাদেরকে লক্ষ্য করো অর্থাৎ তাদের আপদমস্তক, আমল আখলাক্ব, কথাবার্তা, আক্বীদা, ছূরত-ছীরত সবকিছু দেখে নাও।

হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে, যারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ অনুযায়ী আমল করে না, তারা গোমরাহ, বাতিল ও পথভ্রষ্ট এবং কাফির।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

تَـرَكْتُ فِيْكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوْا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَاكِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ رَسُوْلِهٖ

অর্থ: আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস মুবারক তথা দুটি নিয়ামত মুবারক রেখে যাচ্ছি যতদিন তোমরা এ দুখানা সম্মানিত নিয়ামত মুবারক আঁকড়িয়ে ধরবে (আমল করবে) ততদিন তোমরা গোমরাহ, পথভ্রষ্ট, পথভ্রান্ত হবে না। একখানা নিয়ামত মুবারক হচ্ছেন পবিত্র কুরআন শরীফ, অপরখানা নিয়ামত হচ্ছেন আমার পবিত্র সুন্নত মুবারক।

অপর হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

لَوْ تَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ لَضَلَلْتُمْ وَفِىْ رِوَايَةٍ لَكَفَرْتُمْ

অর্থ: যদি তোমরা তোমাদের যিনি নবী ও রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম সুন্নত মুবারক তরক করো তাহলে তোমরা গোমরাহ হয়ে গেলে, পথভ্রষ্ট হয়ে গেলে। অপর বর্ণনায় রয়েছে তোমরা কুফরী করলে। নাউযুবিল্লাহ! (মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমানিত হলো যে, যারা সুন্নত তরককারী তারা গোমরাহ, বাতিল, পথভ্রষ্ট এবং কাফির। যদি সুন্নত তরক করলে গোমরা, বাতিল, পথভ্রষ্ট ও কাফির হয়ে যায়। তাহলে এই আহমক কুলাঙ্গারটা পবিত্র সুন্নত শরীফ তো অনুসরণ করেই না বরং উপরন্তু সে যে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদেরকেই অস্বীকার করলো, বিপক্ষে বক্তব্য দিলো, কটুক্তি করলো তাহলে সে কত বড় মাপের গোমরাহ ও কাফির হবে, তা সহজেই অনুমেয়।

কাজেই এ কুলাঙ্গার- আহমক যদি মুসলমান হিসেবে থাকতে চায় তাহলে অবশ্যই অবশ্যই তাকে উক্ত গোমরাহী ও কুফরীমূলক আক্বীদা ও বক্তব্য থেকে খাছিলভাবে তওবা-ইস্তিগফার করে পূনরায় মুসলমান হতে হবে। অন্যথায় সে ঈমানদার থাকতে পারবে না। সে বাতিল, গোমরাহ, কাফির হিসেবেই থাকবে। এটাই সম্মানিত শরয়ী ফায়সালা যা সংক্ষিপ্তভাবে পেশ করা হলো।

মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত গোমরাহদের হিদায়েত দান করুন। আমীন।

মুহম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম

দুবাই

সুওয়াল: উম্মতের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে বা উনার নাম মুবারকে কুরবানী দেয়ার ব্যাপারে কি হুকুম?

জাওয়াব: প্রত্যেক উম্মতের জন্য ফরযে আইন হচ্ছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকে কুরবানী করা।

কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে ওছিয়ত মুবারক করেছেন তিনি যেন উনার পক্ষ থেকে কুরবানী মুবারক করেন। অপর বর্ণনায় রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে আদেশ মুবারক করেছেন উনার পক্ষ থেকে কুরবানী মুবারক করার জন্য। সুবহানাল্লাহ! এ সম্পর্কে একাধিক পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ حَنَشٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ رَاَيْتُ سَيِّدَنَا حَضْرَتِ الْاِمَامَ الْاَوَّلَ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عَلَيْهِ السَّلَامُ يُضَحِّىْ بِكَبْشَيْـنِ فَـقُلْتُ لَهٗ مَا هٰذَا فَـقَالَ اِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَوْصَانِـىْ اَنْ اُضَحِّىَ عَنْهُ فَاَنَا اُضَحِّىْ عَنْهُ

অর্থ: “বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত হানাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে দুটি দুম্বা কুরবানী করতে দেখে জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কি? (দুটি কেন্?) জবাবে তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে ওছিয়ত মুবারক করেছেন যে, আমি যেন উনার পক্ষ হতে কুরবানী মুবারক করি। সুতরাং আমি উনার পক্ষ থেকে কুরবানী মুবারক করছি।” সুবহানাল্লাহ! (আবূ দাঊদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ ১২৮)

অপর বর্ণনায় রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ حَنَشٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ سَيِّدِنَا حَضْرَتِ الْاِمَامَ الْاَوَّلِ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَنَّهٗ كَانَ يُضَحِّىْ بِكَبْشَيْـنِ اَحَدُهُـمَا عَنِ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالْاٰخَرُ عَنْ نَّـفْسِهٖ فَقِيْلَ لَهٗ فَـقَالَ اِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَوْصَانِـىْ اَنْ اُضَحِّىَ عَنْهُ فَاَنَا اُضَحِّىْ عَنْهُ

অর্থ: “বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত হানাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি সবসময় দু’টি দুম্বা কুরবানী মুবারক করতেন। একটি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে আর অপরটি উনার নিজের পক্ষ থেকে। উনাকে (এ ব্যাপারে) জিজ্ঞাসা করা হলো (আপনি ২টি দুম্বা কেন কুরবানী করেন?), তখন তিনি বললেন- ‘নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে ওছিয়ত মুবারক করেছেন, আমি যেনো উনার পক্ষ হতে কুরবানী মুবারক করি। এ কারণে আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে সম্মানিত কুরবানী মুবারক করছি’।” সুবহানাল্লাহ! (শরহুস সুন্নাহ ৪/৩৫৮)

আরো বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ حَنَشٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ سَيِّدِنَا حَضْرَتِ الْاِمَامَ الْاَوَّلِ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ اَمَرَنِـىْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنْ اُضَحِّىَ عَنْهُ فَاَنَا اُضَحِّىْ عَنْهُ اَبَدًا

অর্থ: “বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত হানাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে নির্দেশ মুবারক করেছেন, আমি যেন উনার পক্ষ থেকে কুরবানী মুবারক করি। সেজন্য আমি সবসময় অর্থাৎ প্রতি বছর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে কুরবানী মুবারক করি।” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আহমদ ১/১০৭, ফাদ্বাইলুছ ছাহাবা লি আহমদ ইবনে হাম্বল ২/৬৯৮)

 পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ حَنَشِ بْنِ الْـحَارِثِ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ كَانَ سَيِّدُنَا حَضْرَتْ الْاِمَامُ الْاَوَّلُ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عَلَيْهِ السَّلَامُ يُضَحِّىْ بِكَبْشٍ عَنْ رَّسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَبِكَبْشٍ عَنْ نَّـفْسِهٖ قُـلْنَا لَهٗ يَا اَمِيْـرَ الْمُؤْمِنِيْـنَ تُضَحِّىْ عَنْ رَّسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَمَرَنِـىْ اَنْ اُضَحِّىَ عَنْهُ اَبَدًا فَاَنَا اُضَحِّىْ عَنْهُ اَبَدًا

অর্থ: “বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত হানাশ ইবনে হারিছ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি সবসময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে একটি কুরবানী মুবারক করতেন এবং উনার নিজের পক্ষ থেকে একটি কুরবানী মুবারক করতেন। আমরা উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম- ‘হে আমীরুল মু’মিনীন আলাইহিস সালাম! আপনি কি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে কুরবানী মুবারক করছেন? তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে নির্দেশ মুবারক করেছেন আমি যেনো সবসময় উনার পক্ষ থেকে কুরবানী মুবারক করি। সেজন্য আমি সবসময় অর্থাৎ প্রতি বছর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে কুরবানী মুবারক করি।” সুবহানাল্লাহ! (সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী ৯/২২৮, আউনুল মা’বূদ শরহে সুনানে আবূ দাঊদ ৭/৪৮৭ ইত্যাদি)

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ সমূহের ব্যাখ্যায় যামানার মহাসম্মনিত মুজাদ্দিদ ও ইমাম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, “সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ওয়ারিছ এবং আহলে বাইত আলাইহিস সালাম। যার কারণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল আলাইহিস সালাম উনাকে উনার তরফ থেকে আবাদুল আবাদ অর্থাৎ সবসময় বা প্রতি বছর কুরবানী মুবারক করার জন্য ওছিয়ত মুবারক করেছেন এবং নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

মূলত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে সমস্ত উম্মতকেই উনার তরফ থেকে আবাদুল আবাদ অর্থাৎ প্রতি বছর কুরবানী মুবারক করার জন্য ওয়ছিয়ত মুবারক করেছেন এবং নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! আর উনার এই ওয়ছিয়ত মুবারক এবং নির্দেশ মুবারক মূলত মহান আল্লাহ পাক উনারই সম্মানিত নির্দেশ মুবারক। সুবহানাল্লাহ! কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী মুবারক ব্যতীত কোন কথা মুবারক বলেন না, কাজ মুবারক করেন না, ওছিয়ত মুবারক করেন না, আদেশ-নির্দেশ মুবারক করেন না, সম্মতি মুবারক প্রকাশ করেন না। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْـهَوٰى. اِنْ هُوَ اِلَّا وَحْيٌ يُوحٰى

অর্থ : “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী মুবারক ব্যতীত নিজ থেকে কোন কথা মুবারক বলেন না।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নজম শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৩-৪)

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَى إِلَيَّ

অর্থ : (বলে দিন…,) আমি তো কেবল তা-ই অনুসরণ করি যা আমার প্রতি ওহী মুবারক করা হয়। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আনআম শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৫০)

এখন ফিকিরের বিষয় হচ্ছে, সাধারণ একজন উম্মত যদি তার সন্তানদেরকে ওছিয়ত করেন তাহলে সন্তানের জন্য তা মান্য করা ফরয-ওয়াজিব হয়ে যায়। সন্তান যদি সামর্থ থাকা সত্ত্বেও সেই ওছিয়ত পূর্ণ না করে তাহলে সে গুনাহগার সাব্যস্ত হবে।

একজন পিতার ওছিয়ত পালন না করলে সন্তান যদি গুনাহগার হয় তাহলে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ওছিয়ত মুবারকের গুরত্ব কতখানি এবং তা পালন না করলে তা কত ভয়াবহ হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কাজেই যিনি হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, যিনি সমস্ত মাখলুকাতের সম্মানিত পিতা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক উনার পরে যিনি মর্যাদা বা মাক্বাম মুবারকের অধিকারী তিনি যে ওছিয়ত মুবারক করেছেন, উক্ত ওছিয়ত মুবারক পালনের গুরুত্ব কত বেশি এবং তা পালন না করলে উম্মতের কত কঠিন গুনাহ হবে তা উম্মত মাত্রই সকলকে উপলব্ধি করে ফরযে আইন হিসেবে উনার সম্মানিত নাম মুবারকে কুরবানী করতে হবে।

 পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِيْ وَسُنَّةِ الْـخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الـمَّهْدِيّيْنَ تَـمَسَّكُوْا بِـهَا وَعَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ

অর্থ : আপনাদের জন্য আমার ও আমার হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত সুন্নত মুবারক (আদর্শ মুবারক) পালন করা ওয়াজিব। আপনারা তা মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্ত করে অঁাকড়ে ধরবেন।” (আহমদ শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ)

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত সুন্নত বা আদর্শ মুবারক পালন করা ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়েছে। আর হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজজাহূ আলাইহিস সালাম তিনি হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তভুর্ক্ত।

সুতরাং হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজজাহূ আলাইহিস সালাম উনার আদর্শ মুবারক- “প্রতি বছর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে একটি এবং নিজের তরফ থেকে একটি কুরবানী করা” এই সম্মানিত আদর্শ মুবারক প্রতিটি মুসলমানের মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্ত করে অঁাকড়ে ধরতে হবে অর্থাৎ দৃঢ়তার সাথে দায়িমীভাবে অনুসরণ করতে হবে।

তাছাড়া পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতের পক্ষ থেকে কুরবানী দিয়েছেন। তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে কুরবানী করার সুমহান দায়িত্ব স্বাভাবিকভাবেই উম্মতের উপর বর্তায়। তাই উম্মতের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে, চূড়ান্ত মুহব্বত ও আনুগত্যতার সাথে তাদের যিনি মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে কুরবানী করা।

অতএব প্রত্যেক উম্মতের জন্য ফরযে আইন হচ্ছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকে কুরবানী করা। এক্ষেত্রে যার উপর কুরবানী ওয়াজিব তার ওয়াজিব কুরবানী দেয়ার পাশাপাশি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকেও কুরবানী দিবে। এটা তার নিজের কুরবানী- নিশ্চিতভাবে কুবুল হওয়ার উছীলা হবে এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল হওয়ারও উছীলা হবে। সুবহানাল্লাহ!

যাদের একাধিক কুরবানী করার সামর্থ রয়েছে, তাদের উচিত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকে এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বা আলাইহিস সালাম, মহাসম্মানিতা হযরত আম্মা আলাইহাস সালাম, মহাসম্মানিতা হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, মহাসম্মানিত হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং মহাসম্মানিতা হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং ইমামুছ ছালিছ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের নাম মুবারকে কুরবানী দেয়া। আর যাদের কুরবানী করার সামর্থ নেই বা যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় তাদের জন্য কর্তব্য হচ্ছে, তারা একাধিকজন মিলে পশু কিনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম ও আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের নাম মুবারকে কুরবানী করা এবং গোশ্ত নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নেয়া। এর ফলে প্রত্যেকেই কুরবানীর ফযীলত লাভ করার সাথে সাথে গোশ্তও লাভ করা সহায়ক হবে। সুবহানাল্লাহ!

মুহম্মদ গোলাম ত্বহা

কক্সবাজার

সুওয়াল: কুরবানীর কিছুদিন আগে নাকি হাত ও পায়ের নখ কাটা, মোছ ছাঁটা এবং মাথার চুল ইত্যাদি কাটা যায় না? কুরবানী করার পর কাটতে হয়! কথাটা কতটুকু সত্য?

জাওয়াব: হ্যাঁ, যারা পবিত্র কুরবানী দেয়ার নিয়ত রাখেন, তাদের পক্ষে পবিত্র যিলহজ্জের চাঁদ উঠার পর থেকে এই চাঁদের দশ তারিখ পবিত্র কুরবানী করা পর্যন্ত মাথার চুল হাতের ও পায়ের নখ ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব।

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ السَّادِسَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ رَأَى هِلَالَ ذِي الْحِجَّةِ فَأَرَادَ أَنْ يُّضَحِّيَ فَلَا يَأْخُذُ مِنْ شَعْرِهٖ وَلَا مِنْ أَظْفَارِهٖ حَتّٰى يُضَحِّيَ

অর্থ: “হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাসের চাঁদ দেখলো এবং কুরবানী করার নিয়ত করলো, সে যেন কুরবানী করা পর্যন্ত তার শরীরের চুল, নখ ইত্যাদি না কাটে।” (মুসলিম শরীফ, মেশকাত শরীফ ইত্যাদি)

মূলত ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য মত হলো এই যে, যারা পবিত্র কুরবানী করবে এবং যারা পবিত্র কুরবানী করবে না, তাদের উভয়ের জন্যই উক্ত আমল মুস্তাহাব ও ফযীলতের কারণ। যে ব্যক্তি তা কাটা থেকে বিরত থাকবে, সে একটি পবিত্র কুরবানীর ছওয়াব পাবে। সুবহানাল্লাহ! {দলীলসমূহ: নাসায়ী শরীফ, মিশকাত শরীফ, শরহে নববী শরীফ, বজলুল মাযহূদ শরীফ, মিরকাত শরীফ, লুময়াত শরীফ, আশয়াতুল লুময়াত শরীফ, শরহুত ত্বীবী শরীফ, তা’লীকুছ ছবীহ শরীফ, মুযাহিরে হক্ব শরীফ ইত্যাদি।}

মুহম্মদ তাওহীদ খান

মতলব উত্তর

সুওয়াল: তাকবীরে তাশরীক কাকে বলে? তা কতবার বলতে হয়?

জাওয়াব: পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাসের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আছর পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর যে তাকবীর পাঠ করা হয় তাকেই তাকবীরে তাশরীক বলে। জামায়াতে বা একাকী, মুসাফির অথবা মুকীম, শহর অথবা গ্রামে প্রত্যেককেই প্রতি ফরয নামাযের পর উক্ত তাকবীর পাঠ করতে হবে।

তাকবীরে তাশরীক হলো-

اَللهُ اَكْبَـرُ اَللهُ اَكْبَـرُ لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَـرُ اَللهُ اَكْبَـرُ وَلِلّٰهِ الْـحَمْدُ

“দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে যে, “তাকবীরে তাশরীক” একবার বলা ওয়াজিব, তবে যদি (কেউ) একাধিকবার বলে, তাহলে তা ফযীলতের কারণ হবে। আর “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবে উল্লেখ আছে-

وَقِيْلَ ثَلَاثُ مَرَّاتٍ

অর্থ: কেউ কেউ বলেছেন (তাকবীরে তাশরীক) তিনবার।”

“গায়াতুল আওতার শরহে দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে-

اور واجب ہے تکبیر تشریق صحیح ترقول میں ایکبار بسبب اسکے مامور ہونے کے اور اگر زیادہ کہےایکبار سے تو ہوگا ثواب

অর্থ: “বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে (মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে) আদিষ্ট হওয়ার কারণে একবার তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব। আর যদি একবারের চেয়ে অতিরিক্ত বলে তবে ছাওয়াবের অধিকারী হবে।”

উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য কিতাবের বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, একবার তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব এবং তিনবার বলা মুস্তাহাব। {দলীলসমূহ: শামী, আইনী, আলমগীরী, হাশিয়ায়ে তাহতাবী, রদ্দুল মুহতার, দুররুল মুখতার ইত্যাদি।}

মুহম্মদ আতিকুর রহমান

সদর, চাঁদপুর

সুওয়াল: পবিত্র কুরবানী কার উপর ওয়াজিব?

জাওয়াব: পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার দশ, এগার, বার অর্থাৎ দশ তারিখের ছুবহে ছাদিক হতে বার তারিখের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যদি কেউ মালিকে নিছাব হয় অর্থাৎ হাওয়ায়িজে আছলিয়াহ (নিত্য প্রয়োজনীয় ধন-সম্পদ) বাদ দিয়ে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রৌপ্য বা তার সমপরিমাণ মূল্যের মালিক হয়, তাহলে তার উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব। উল্লেখ্য যে, যদি কারো নিকট প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকে এবং তা যদি নিসাব পরিমাণ হয়, যেমন- কারো পাঁচটি ঘর আছে, একটির মধ্যে সে থাকে আর তিনটির ভাড়া দিয়ে সে সংসার চালায় আর একটি অতিরিক্ত, যার মূল্য নিসাব পরিমাণ। এ ক্ষেত্রে তার উপরেও কুরবানী ওয়াজিব হবে। {দলীলসমূহ: (১) আলমগীরী, (২) শামী, (৩) আইনুল হিদায়া, (৪) ফতহুল কাদীর, (৫) গায়াতুল আওতার, (৬) শরহে বিকায়া, (৭) বাহর, (৮) দুররুল মুখতার, (৯) কাজীখান, (১০) ইনায়া ইত্যাদি।

মুহম্মদ মুমিনুল ইসলাম

নূরানীবাদ

সুওয়াল: পবিত্র ঈদুল আযহার দিনের সুন্নতসমূহ জানতে চাই।

জাওয়াব: পবিত্র ঈদের দিনের সুন্নত হলো- ১. খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠা ২. গোসল করা ৩. মিস্ওয়াক করা ৪. সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন পোশাক পরিধান করা ৫. আতর ব্যবহার করা ৬. মহল্লার মসজিদে গিয়ে জামায়াতে ফজরের নামায পড়া ৭. ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া ৮. ঈদুল আযহার দিন সকালে কিছু না খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া ৯. ঈদুল আযহার দিন পবিত্র কুরবানীর গোশত দিয়ে খাওয়া শুরু করা ১০. ঈদগাহে এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা ১১. সকাল সকাল পবিত্র ঈদের নামায পড়ার জন্য যাওয়া ১২. ঈদের নামায ঈদগাহে গিয়ে পড়া, সম্ভব না হলে মহল্লার মসজিদে গিয়ে ঈদের নামায পড়া। ১৩. নিম্নোক্ত দোয়া পড়তে পড়তে ঈদগাহে যাওয়া:

اَللهُ اَكْبَـرُ اَللهُ اَكْبَـرُ لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَـرُ اَللهُ اَكْبَـرُ وَلِلّٰهِ الْـحَمْدُ

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হাম্্দ।

১৪. সম্মানিত শরীয়ত উনার সীমার মধ্যে থেকে খুশি প্রকাশ করা ইত্যাদি ঈদের সুন্নত। (আলমগীরী, নূরুল ঈজাহ ও অন্যান্য ফিক্বাহর কিতাব)

মুহম্মদ আবূ তাহের

খাগড়াছড়ি

সুওয়াল: পবিত্র ঈদুল আযহা উনার নামায কখন পড়া সুন্নত? জানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব: সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হওয়ার পর থেকে (অর্থাৎ মাকরূহ ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর থেকে অথবা সূর্য উদয়ের শুরু থেকে ঘড়ির মিনিট অনুযায়ী ২৩ মিনিট পর) ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর যাওয়াল বা শরয়ী অর্ধদিন বা দ্বিপ্রহর অর্থাৎ সূর্যের এস্তাওয়া আরম্ভ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত পবিত্র ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে।

 ফজরের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর ২৩ মিনিট পর্যন্ত মাকরূহ ওয়াক্ত এবং এরপরই পবিত্র ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং যুহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার ১ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত পবিত্র ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে। সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হওয়ার পর থেকে অর্থাৎ মাকরূহ ওয়াক্ত যা ঘড়ির হিসাব অনুযায়ী ২৩ মিনিট অতিক্রম হওয়ার পূর্বে পবিত্র ঈদের নামায আদায় করলে নামায হবে না এবং যুহরের নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বের ১ ঘণ্টা যা মাকরূহ ওয়াক্ত নামে পরিচিত। উক্ত মাকরূহ ওয়াক্তের মধ্যে ঈদের নামায আদায় করলে তা আদায় হবে না।

 পবিত্র ঈদের নামায কোন সময় আদায় করলে তা সুন্নত হবে সে সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “ পবিত্র ঈদের দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফজরের নামায পড়ে হুজরা শরীফে গিয়ে সকাল সকাল গোসল করতেন এবং ঈদুল ফিতর হলে বিজোড় সংখ্যক (৩, ৫, ৭) খোরমা খেজুর খেয়ে ঈদগাহে যেতেন। আর পবিত্র ঈদুল আযহার সময় কিছু না খেয়ে সরাসরি ঈদগাহে যেতেন এবং পবিত্র ঈদের নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে পবিত্র ঈদের নামায আদায় করতেন। তারপর খুতবা দিতেন এবং নছীহত মুবারক করতেন।”

কাজেই, পবিত্র ঈদের নামায সকাল সকাল পড়া সুন্নত। পবিত্র ঈদের নামাযের সম্মানার্থে এবং পবিত্র ঈদের নামায যাতে আদায়ে দেরি না হয়, সেজন্য ঈদের দিন ইশরাকসহ অন্যান্য নফল নামায পড়া নিষিদ্ধ। (সমূহ ফিক্বহের কিতাব দ্রষ্টব্য)

মুহম্মদ সারোয়ার জাহান

বরিশাল

সুওয়াল: পবিত্র কুরবানী করার সুন্নতী পদ্ধতি এবং নিয়ত জানালে খুশি হবো।

জাওয়াব: পবিত্র কুরবানীর পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পা পশ্চিম দিকে রেখে অর্থাৎ ক্বিবলামুখী করে শোয়ায়ে পূর্ব দিক থেকে চেপে ধরতে হবে, তারপর পবিত্র কুরবানী করতে হবে। আর পবিত্র কুরবানী করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, সীনার উপরে নরম স্থানের উপর থেকে গলার মধ্যে একটি উঁচু হাড় রয়েছে উভয়ের মাঝামাঝি স্থানে যেন যবেহ করা হয়। আরো উল্লেখ্য যে, গলাতে চারটি নালী রয়েছে, তন্মধ্যে গলার সম্মুখভাগে দুটি- খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী এবং দু’পার্শ্বে দুটি রক্তনালী। এ চারটির মধ্যে খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং দুটি রক্তনালীর মধ্যে একটি অবশ্যই কাটতে হবে। অর্থাৎ চারটি রগ বা নালীর মধ্যে তিনটি অবশ্যই কাটতে হবে, অন্যথায় কুরবানী হবেনা। যদি সম্ভব হয়, তবে ছুরি চালানোর সময় বিজোড় সংখ্যার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

কুরবানীর নিয়ত: (যবেহ করার পূর্বে)

إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِيْ فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيْفًا وَّمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ إِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَبِذٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ اَللّٰهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ

উচ্চারণ: ইন্নী ওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাত্বারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বা হানীফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না ছলাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহ্ইয়া ইয়া ওয়া মামাতী লিল্লাহি রব্বিল আলামীন। লা শারীকালাহূ ওয়া বি যালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা। এ দোয়া পড়ে بِسْمِ اللهِ اَللهُ اَكْبَـرُ ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে যবেহ করতে হবে।

যবেহ করার পর এ দোয়া পড়বে-

اَللّٰهُمَّ تَـقَبَّـلْهُ مِنِّىْ كَمَا تَـقَبَّـلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ سَيِّدِنَا مَوْلٰنَا رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَخَلِيْلِكَ سَيِّدِنَا حَضْرَتْ اِبْـرَاهِيْمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বালহু মিন্নী কামা তাক্বাব্বালতা মিন হাবীবিকা সাইয়্যিদিনা রাসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও খলীলিকা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম।

যদি নিজের কুরবানী হয়, তবে مِنِّى (মিন্নী) বলতে হবে। আর যদি অন্যের কুরবানী হয়, তবে مِنْ (মিন) শব্দের পর যার বা যাদের কুরবানী, তার বা তাদের নাম উল্লেখ করতে হবে। আর যদি অন্যের সাথে শরীক হয়, তাহলে مِنِّى (মিন্নী)ও বলবে, অতঃপর مِنْ (মিন) বলে অন্যদের নাম বলতে হবে। কেউ যদি উপরোক্ত নিয়ত না জানে, তাহলে যবেহ করার সময় শুধু বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে পবিত্র কুরবানী করলেও শুদ্ধ হয়ে যাবে। কারণ নিয়ত অন্তরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তবে অবশ্যই প্রত্যেক যবেহকারীর উচিত উপরোক্ত নিয়ত শিক্ষা করা। কেননা উপরোক্ত নিয়ত পাঠ করে পবিত্র কুরবানী করা সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।

{দলীলসমূহ: আহমদ শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, দারিমী ইবনে মাযাহ শরীফ, বজলূল মযহুদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, মুযাহেরে হক্ব শরীফ, লুমায়াত শরীফ, ত্বীবী শরীফ, তালিকুছ ছবীহ শরীফ, আশয়াতুল লুমায়াত শরীফ, আলমগীরী শরীফ, শামী শরীফ, দুররুল মুখতার শরীফ, আইনুল হিদায়া ও বাহর শরীফ ইত্যাদি।}

মুহম্মদ আনীসুজ্জামান

পাবনা

সুওয়াল: ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসাগুলোতে কুরবানীর চামড়া দেয়া জায়িয হবে কি?

জাওয়াব: ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসাতে তথা সন্ত্রাসী তৈরিকারী ও সম্মানিত ইসলাম উনার নামে রাজনীতি তথা গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচনকারী মাদরাসাগুলোতে পবিত্র কুরবানীর চামড়া দেয়া জায়িয হবে না। পবিত্র কুরবানীর চামড়া দেয়ার উত্তম স্থান হলো ‘রাজারবাগ মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা’।

 পবিত্র কুরবানী একটি ঐতিহ্যবাহী শরয়ী হুকুম ও ইসলামী কাজ। যা উম্মতে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জন্য ওয়াজিব। কাজেই পবিত্র কুরবানী দেয়ার সাথে সাথে পবিত্র কুরবানীর চামড়া সঠিক স্থানে দেয়াও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

উল্লেখ্য, পবিত্র পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে সবস্থানে মহান আল্লাহ পাক তিনি আগে ‘ঈমান’ আনার কথা বলেছেন পরে ‘আমলের’ কথা বলেছেন।

এক খোদা তায়ালা উনাকে প্রায় সবাই মানে কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে না মানার কারণেই অর্থাৎ আক্বীদার পার্থক্যের কারণেই পৃথিবীতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃস্টান ইত্যাদি হাজারো বিধর্মী তথা কাফিরের দল রয়েছে। পবিত্র পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষায় তারা সবাই জাহান্নামী যদি তওবা-ইস্তিগফার করে ঈমান না আনে।

স্মরণীয় যে, শুধু কাফির সম্প্রদায়ই নয়, মুসলমান নামধারী অনেক মালানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাসসির, শাইখুল হাদীছ, ইমাম, খতীব তথা অনেক ইসলামী দলও রয়েছে যাদের মূলত মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে আক্বীদা খারাপ রয়েছে। কাজেই তারা মুসলমান নামধারী হলেও তারা মুসলমানের অন্তভুর্ক্ত নয়। তারা ইসলামী দল নামধারী হলেও আসলে তারা ইসলামী দলের অন্তভুর্্ক্ত নয়।

উল্লেখ্য, ইসলামে মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ হারাম। ইসলাম উনার নামে ব্যবসা করা হারাম। ইসলাম উনার নামে গণতান্ত্রিক দল করা হারাম। ইসলাম উনার নামে নির্বাচন করা হারাম। ইসলাম উনার নামে ভোট চাওয়া হারাম।

আরো উল্লেখ্য, বর্তমানে অধিকাংশ মাদরাসাগুলোই হচ্ছে জামাতী, ওহাবী, খারিজী মতাদর্শের তথা সন্ত্রাসী তৈরির সূতিকাগার। পবিত্র ইসলাম উনার দোহাই দিয়ে, পবিত্র ইসলাম উনার নামে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক স্বার্থ ও প্রতিপত্তি হাছিলের প্রকল্প। পবিত্র ইসলাম উনার নামে নির্বাচন করার ও ভোটের রাজনীতি করার পাঠশালা- যা পবিত্র ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম।

কাজেই, কুরবানীর চামড়া কোথায় দেয়া হচ্ছে তা দেখে দিতে হবে। জামাতী, খারিজী, ওহাবী, সন্ত্রাসী ও মৌলবাদী তথা ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসাতে কুরবানীর চামড়া দেয়া কস্মিনকালেও জায়িয হবে না।

জামাতী, ওহাবী তথা সন্ত্রাসীদের মাদরাসায় পবিত্র কুরবানীর চামড়া দিলে তাতে বদ আক্বীদা ও বদ আমলের প্রচারে সহায়তা করা হবে। তাতে কবীরা গুনাহে গুনাহগার হতে হবে।

মূলত ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসায় কুরবানীর চামড়া, যাকাত-ফিতরা ইত্যাদি দান-ছদকা না দেয়া মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে নির্দেশ মুবারক করেন-

وَتَـعَاوَنُـوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّـقْوٰى وَلَا تَـعَاوَنُـوْا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّـقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ

অর্থ: “তোমরা নেক কাজে ও পরহেযগারীতে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করো। বদ কাজে ও শত্রুতার মধ্যে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করো না। আর এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

পত্রিকার সংবাদে পাওয়া যায়, জামাতী-খারিজীরা তাদের নিয়ন্ত্রিত মাদরাসায় সংগৃহীত যাকাত, ফিতরা, পবিত্র কুরবানীর চামড়ার মাধ্যমে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আয় করে। যা মূলত তাদের বদ আক্বীদা ও বদ আমল তথা ধর্মব্যবসার কাজেই ব্যয়িত হয়।

অনুরূপভাবে এমন কোন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকেও যেমন আনজুমানে মুফিদুল ইসলাম, কোয়ান্টাম এদেরকে পবিত্র কুরবানীর চামড়া দেয়া জায়িয হবে না, যারা তা আমভাবে খরচ করে থাকে। যেমন রাস্তা-ঘাট, পানির ব্যবস্থা, বেওয়ারিশ লাশ দাফন করার কাজে এবং হিন্দু, বৌদ্ধদেরকে সাহায্য করে। অথচ পবিত্র কুরবানীর চামড়া মুসলমান গরিব মিসকীনদের হক্ব। তা মুসলমান গরিব মিসকীনদের মালিক করে দিতে হবে।

খলীফাতু রসূলিল্লাহ আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র যাকাত উনার একটি রশির জন্যও জিহাদ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। কাজেই, পবিত্র যাকাত উনার একটি রশির মতোই পবিত্র কুরবানীর একটি চামড়াও যাতে ভুল উদ্দেশ্যে ও ভুল পথে পরিচালিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

لَنْ يَّـنَالَ اللهَ لُحُوْمُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَّـنَالُهُ التَّـقْوٰى مِنْكُمْ

অর্থ: “পবিত্র কুরবানীর রক্ত ও গোশত কিছুই মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফ-এ পেঁৗছায় না। পেঁৗছায় তোমাদের বিশুদ্ধ নিয়ত।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৭)

কাজেই বিশুদ্ধ নিয়তে পবিত্র কুরবানীর চামড়া ঠিক জায়গায় দিতে হবে। অনেকে পাড়ার মাস্তান, গুণ্ডা-পাণ্ডা, ছিনতাইকারী ও হিরোইনখোরদের হাতে রাখার উদ্দেশ্যে তাদেরকে কম দামে কুরবানীর চামড়া দেয়। এতে কিন্তু নিয়ত বিশুদ্ধ হবে না এবং পবিত্র কুরবানীও শুদ্ধভাবে আদায় হবে না।

তাই বর্তমান হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, যামানার মহান ইমাম, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, আহলে বাইতে রসূল, মুজাদ্দিদে আ’যম ইমাম রাজারবাগ শরীফের মহান মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, বর্তমানে হক্ব মত-পথ ও সুন্নতী আমলের একমাত্র ও উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো, ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা’।

কাজেই, পবিত্র যাকাত-ফিতরা বা কুরবানীর চামড়া দিয়ে যারা ছদকায়ে জারীয়ার ছওয়াব হাছিল করতে চায় উনাদের জন্য একমাত্র ও প্রকৃত স্থান হলো ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা’ ৫/১ নং আউটার সার্কুলার রোড, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা।

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব