(৩৬তম ফতওয়া হিসেবে)
“মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যারা ভাঙবে, ভাঙ্গার কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করবে বা সমর্থন করবে তাদের প্রত্যেকের শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খেদমত মুবারক-এ বেশুমার শুকরিয়া আদায় করছি। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কতিপয় সুওয়াল-জাওয়াব
(পূর্বপ্রকাশিতের পর)
সুওয়াল–১১
অনেকে দাবী করে যে, জনকল্যাণ বা বৃহত্তর কল্যাণের জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক স্থানান্তর করতে সমস্যা নেই। তাদের এই দাবী কতটুকু শরীয়ত সম্মত?
জাওয়াব: যিনি খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَاَنَّ الْمَسٰجِدَ لِلّٰهِ
অর্থ: “আর নিশ্চয়ই সমস্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। অর্থাৎ সমস্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা জিন শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮)
আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـى الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ تَـعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلْمَسَاجِدُ بُـيُـوْتُ اللهِ
অর্থ: “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (শু‘আবুল ঈমান শরীফ ৪/৩৮০, জামিউল আহাদীছ লিস সুয়ূত্বী ২২/১৫৪, কানজুল উম্মাল ৭/৫৭৯ ইত্যাদি)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ بُــيُـوْتَ اللهِ فِـى الْاَرْضِ الْمَسَاجِدُ وَاِنَّ حَقًّا عَلَى اللهِ اَنْ يُّكْرِمَ مَنْ زَارَهٗ فِـيْـهَا
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই দুনিয়ার যমীনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক। যাঁরা ওই সকল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনাদের মধ্যে প্রবেশ করবেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে সম্মানিত করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববারনী ৯/৩, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/৩২, জামি‘উল আহাদীছ লিস সূয়ূত্বী ৮/৪৮০, আল মাত্বালিবুল আলিয়াহ্ ৩/৪৬৬ ইত্যাদি)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالـٰى عَنْهُ قَالَ اَلْمَسَاجِدُ بُــيُـوْتُ اللهِ فِـى الْاَرْضِ تُضِىْءُ لِاَهْلِ السَّمَاءِ كَمَا تُضِىْءُ نُـجُوْمُ السَّمَاءِ لِاَهْلِ الْاَرْضِ
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ হচ্ছেন দুনিয়ার যমীনে মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক।’ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ আসমানবাসী উনাদেরকে এমনভাবে আলোকিত করে থাকেন, যেমনিভাবে আসমানের তারকারাজি যমীনবাসী উনাদেরকে আলোকিত করে থাকে।” সুবহানাল্লাহ! (শু‘আবুল ঈমান লিলবাইহাক্বী ৪/৩৮০, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১৫, জামি‘উল আহাদীছ ৮/৩৩৮, আল মাত্বালিবুল আলিয়াহ ৩/৪৬৭ ইত্যাদি)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اَلْـمَسْجِدُ بَــيْتُ اللهِ
অর্থ: “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক।” সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক। উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনার মালিক মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই। উনার অনুমতি মুবারক ব্যতীত উনার মালিকানাভুক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক সরানো বা স্থানান্তর করা জায়িয নেই। একজনের মালিকানাধীন ঘর-বাড়ী তার অনুমতি বা সম্মতি ব্যতীত অন্যদের জন্য সরানো বা স্থানান্তর করা যদি জায়িয না হয়, তাহলে মহান আল্লাহ পাক উনার অনুমতি বা সম্মতি মুবারক ব্যতীত কি করে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক স্থানান্তর করা জায়িয হতে পারে? কস্মিনকালেও জায়িয নেই; বরং সম্পূর্ণরূপে হারাম, নাজায়িয, কাট্টা কুফরী এবং জাহান্নামী হওয়ার কারণ। না‘ঊযুবিল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاللهُ وَرَسُوْلُهٗۤ اَحَقُّ اَنْ يُّــرْضُوْهُ اِنْ كَانُـوْا مُؤْمِنِـيْـنَ
অর্থ: “যদি তারা মু’মিন হয়ে থাকে, তাহলে তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে সন্তুষ্ট করা। উনারাই সন্তুষ্টি পাওয়ার সবচেয়ে বেশি হক্বদার।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা তওবা শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৬২)
এখন মহান আল্লাহ পাক উনাকে সন্তুষ্ট করতে হলে তো ঈমানদারের জন্য উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনাকে হিফাজত করতে হবে। উনাকে অসন্তুষ্ট করে, উনার হক্ব বা অধিকার নষ্ট করে জনগণের স্বার্থে বা কল্যাণের জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক স্থানান্তর করা তো কোনো ঈমানদারের কাজ নয়।
অতএব, জনকল্যাণ বা বৃহত্তর কল্যাণের জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক স্থানান্তরিত করা জায়িয নেই; বরং সম্পূর্ণরূপে হারাম, না জায়িয, কাট্টা কুফরী ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ। যারা জায়িয বলবে তারা কাট্টা কাফির হবে।
সুওয়াল-১২
একখানা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনাকে রাস্তা বানিয়ে অন্যত্র যদি একাধিক বহুতল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক বানিয়ে দেয়া হয়, তবে সেটা কি শরীয়ত সম্মত হবে?
জাওয়াব: না; কখনোই শরীয়তসম্মত হবে না। রাস্তা, বাড়ী, ঘর ইত্যাদিকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক বানানো যাবে। কিন্তু মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনাকে কখনোই রাস্তা বানানো যাবে না। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার জন্য নির্ধারিত স্থান ক্বিয়ামত পর্যন্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকই থাকবেন। সেখানে বিভিন্ন অজুহাত দাঁড় করিয়ে, দুনিয়াবী ক্ষমতা খাটিয়ে, জোড় করে রাস্তা বানালেই যে উক্ত স্থান মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার হুকুম থেকে রহিত হবেন; তা নয়। আর অন্যত্র একাধিক বহুতল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক বানানোর অজুহাতেও কোনো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙ্গা যাবে না।
যেমন- ‘দুরারুল হুক্কাম’ কিতাবে উল্লেখ রয়েছেন,
قَالَ حَضْرَتْ اَبُـوْ يُـوْسُفَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ هُوَ مَسْجِدٌ اَبَدًا اِلـٰى قِـيَامِ السَّاعَةِ لَا يَـعُوْدُ مِيْـرَاثًا وَلَا يَـجُوْزُ نَـقْلُهٗ وَنَـقْلُ مَالِهٖ اِلـٰى مَسْجِدٍ اٰخَرَ سَوَاءٌ كَانُـوْا يُصَلُّوْنَ فِـيْهِ اَوْ لَا وَهُوَ الْفَتْـوٰى
অর্থ: “হযরত ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ক্বিয়ামত পর্যন্ত সর্বদা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক হিসেবেই থাকবেন, কোনো উত্তরাধিকারীর অধিকারভুক্ত হবে না। আর উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক স্থানান্তর করা এবং উনার সম্পত্তি অন্য কোনো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ স্থানান্তর করাও জায়িয হবে না, লোকজন সেখানে নামায পড়ুক অথবা না পড়ুক। এটাই হচ্ছে ফতওয়া।” সুবহানাল্লাহ! (দুরারুল হুক্কাম ২/১৩৫)
আর ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব ‘ফতওয়ায়ে আলমগীরীর’ মধ্যে উল্লেখ রয়েছেন,
وَلَوْ كَانَ مَسْجِدٌ فِـىْ مَـحَلَّةٍ ضَاقَ عَلـٰى اَهْلِهٖ وَلَا يَسَعُهُمْ اِنْ سَاَلَـهُمْ بَـعْضُ الْـجِيْـرَانِ اَنْ يَّـجْعَلُوْا ذَالِكَ الْـمَسَجِدَ لَهٗ لَيَدْخُلُهٗ فِـىْ دَارِهٖ وَيُـعْطِيْهِمْ مَكَانَهٗ عَرْضًا مَا هُوَ خَيْـرٌ لَهٗ فَـيَسَعُ فِـيْهِ اَهْلُ الْـمَحَلَّةِ قَالَ مُحَمَّدٌ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ لَا يَسَعُهُمْ ذَالِكَ كَذَا فِـى الذَّخِيْـرَةِ
অর্থ: “যদি কোনো মহল্লায় এমন একখানা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক থাকেন, যা মহল্লাবাসীদের জন্য সংকীর্ণ হন এবং তাদের স্থান সংকুলান না হয়, (আর তারা উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার আয়তন বৃদ্ধি করতে সক্ষম না হয়,) আর এই কারণে কোনো প্রতিবেশী যদি তাদের নিকট আবেদন করে যে, তারা যেন উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকখানা তার অধিকারভুক্ত করে দেয়, যাতে করে সে ব্যক্তি তা আপন বাড়ির অন্তভুর্ক্ত করে নিতে পারে। আর উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার পরিবর্তে সে ব্যক্তি তাদেরকে তদাপেক্ষা একটি উৎকৃষ্ট স্থান প্রদান করবে, যার মধ্যে মহল্লাবাসী সবার (নামাযের) স্থান সংকুলান হবে। হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এরূপ করাটা তাদের জন্য জায়িয হবে না। ‘জখীরাহ্’ কিতাবেও অনুরূপ বর্ণিত রয়েছেন।” (ফতওয়ায়ে আলমগীরী ২/৪৪৪)
কাজেই, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক হিসেবে যা নির্ধারিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, তা কোনো অজুহাতেই ভাঙ্গা যাবে না। এটাই সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়ছালা।
সুওয়াল-১৩
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার জায়গায় দোকান-পাট ও ঘর-বাড়ি তৈরি করে ভাড়া দেয়ার ব্যাপারে সম্মানিত শরীয়তের হুকুম কি?
জাওয়াব: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার কোনো অংশকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক থেকে আলাদা করে সেখানে অন্য কিছু তৈরি করা জায়িয নেই।
যেমন- ‘ফতওয়ায়ে হিন্দিয়াহ্’ কিতাবের ২য় খন্ডের ৪৬২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছেন,
قَيِّمُ الْمَسْجِدِ لَا يَجُوزُ لَهُ اَنْ يَـبْنِىَ حَوَانِيْتَ فِـىْ حَدِّ الْمَسْجِدِ اَوْ فِـىْ فِنَائِهٖ لِاَنَّ الْمَسْجِدَ اِذَا جُعِلَ حَانُـوْتًا وَمَسْكَنًا تَسْقُطُ حُرْمَتُهٗ وَهٰذَا لَا يَجُوْزُ وَالْفِنَاءُ تَـبَعُ الْمَسْجِدِ فَيَكُوْنُ حُكْمُهٗ حُكْمَ الْمَسْجِدِ كَذَا فِـىْ مُحِيْطِ السَّرَخْسِـىِّ
অর্থ: “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার মুতাওয়াল্লীর জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার সীমানায় অথবা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার চত্বরে দোকান-পাট তৈরী করা জায়িয নেই। কেননা, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার সীমানায় অথবা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার চত্বরে দোকান-পাট তৈরী করলে অথবা বাসস্থান নির্মাণ করলে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার হুরমত নষ্ট হয় অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার মর্যাদাহানী হয়। বিধায় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার সীমানায় বা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার চত্বরে দোকান-পাট তৈরী করা বা বাসস্থান নির্মাণ করা জায়িয নেই। কেননা, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার চত্বরটি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার অনুগামী হিসেবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনারই হুকুম রাখে। অনুরূপভাবে ‘আল মুহীত লিস সারাখসী’ কিতাবেও উল্লেখ রয়েছেন।”
‘ফতওয়ায়ে হিন্দিয়াহ্’ কিতাবের ২য় খন্ডের ৪৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছেন,
اَرْضُ وَقْفٍ عَلٰى مَسْجِدٍ صَارَتْ بِـحَالٍ لَا تُـزْرَعُ فَجَعَلَهَا رَجُلٌ حَوْضًا لِلْعَامَّةِ لَا يَـجُوْزُ لِلْمُسْلِمِيْـنَ اِنْتِفَاعٌ بِـمَاءِ ذٰلِكَ الْـحَوْضِ كَذَا فِـى الْقُنْـيَةِ
অর্থ: “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার জন্য ওয়াক্ফকৃত জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হওয়ায়, কোনো ব্যক্তি জনসাধারণের পানির জন্য হাউজ, কুপ, নলকুপ বা পুকুর খনন করলে, ঐ হাউজ, কুপ, নলকুপ বা পুকুরের পানি থেকে ফায়দা হাছিল করা কোনো মুসলমান উনাদের জন্য জায়িয হবে না। অনুরূপভাবে ‘কুনিয়া’ কিতাবেও উল্লেখ রয়েছেন।”
সুতরাং, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার জন্য ওয়াক্ফকৃত জায়গা; অথচ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক হয়নি, নামাযও হয়নি এমন জায়গাতেও যদি জনকল্যাণমূলক কাজ করা এবং তা থেকে ফায়দা হাছিল করা কাট্টা হারাম ও নাজায়িয হয়, তাহলে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার জায়গায় দোকান-পাট ও ঘর-বাড়ি তৈরি করে ভাড়া দেয়া কি করে জায়েয হতে পারে? কস্মিনকালেও জায়েয নেই; বরং সম্পূর্ণরূপে কাট্টা হারাম ও নাজায়িয।
স্মরণীয় যে, ওয়াক্ফ করার সময় ওয়াক্ফকারী যদি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার আয়ের উৎস হিসেবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার নিচে বা আশেপাশে দোকান-পাট বা বাসস্থান নির্মাণের কথা উল্লেখ করেন বা শর্তারোপ করেন, অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার জমি ওয়াক্ফের সাথে দোকান-পাট বা বাসস্থান নির্মানের কথা উল্লেখ থাকে, তাহলে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার নিচে বা আশে পাশে দেকান-পাট ও বাসস্থান নির্মাণ করা জায়িয হবে।
একইভাবে কেউ যদি তার বহুতল ভবনের কোনো একটি তলা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার জন্য ওয়াক্ফ করে, তাহলে শুধু সেই তলাটিই ওয়াক্ফ হিসেবে গন্য হবে। জমি ওয়াক্ফ হবে না। যেমন- কারো ১০ তলা একটি ভবন রয়েছে। সেই ব্যক্তি উক্ত ভবনের ৫ম তলা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার জন্য ওয়াকফ করে দিলো। এমতাবস্থায় উক্ত ভবনের ৫ম তলা ব্যতীত অন্যান্য তলাগুলো বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে পারবে। তবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার জন্য নির্ধারিত ৫ম তলা ব্যবহার করতে পারবে না অর্থাৎ কাট্টা হারাম ও নাজায়িয।
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন