হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনারাই সত্যের মাপকাঠি
(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
কাজেই কোনো অবস্থাতেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে গালমন্দ করা যাবে না, তিরস্কার করা যাবে না। বরং সর্বাবস্থায় উনাদেরকে তা’যীম-তাকরীম করতে হবে। এ সম্পর্কে ত্ববারানী শরীফে পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে,
عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ تَـعَالَى عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ احْفَظُوْنِيْ فِي أَصْحَابِيْ وَأَصْهَارِيْ فَإِنَّهُ مَنْ حَفِظَنِيْ فِيهِمْ حَفِظَهُ اللهُ فِي الدُّنْـيَا وَالْاٰخِرَةِ وَمَنْ لَمْ يَحْفَظْنِيْ فِيْهِمْ تَحَلَّى اللهُ مِنْهُ يُـوْشِكُ أَنْ يَّأْخُذَهُ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং যাদের সাথে আমার বৈবাহিক সম্পর্ক রয়েছে উনাদের ব্যাপারে তোমরা আমার মর্যাদা রক্ষা করো। কেননা যে ব্যক্তি উনাদের ব্যাপারে আমার মর্যাদা রক্ষা করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে হিফাযত করবেন। আর যে ব্যক্তি উনাদের ব্যাপারে আমার মর্যাদা রক্ষা করবে না মহান আল্লাহ পাক তিনি তার ব্যাপারে দায়মুক্ত থাকবেন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি যার ব্যাপারে দায়মুক্ত থাকেন অচিরেই সে পাকড়াও হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!
এ বিষয়ে বুখারী শরীফে আরো পবিত্র হাদীছ শরীফ ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُغَفَّلٍ رَضِيَ اللهُ تَـعَالَى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اللهَ اللهَ فِي أَصْحَابِيْ لَا تَـتَّخِذُوْهُمْ غَرَضًا بَعْدِيْ فَمَنْ أَحَبَّـهُمْ فَبِحُبِّيْ أَحَبَّـهُمْ وَمَنْ أَبْغَضَهُمْ فَبِبُـغْضِيْ أَبْـغَضَهُمْ وَمَنْ أَذَاهُمْ فَـقَدْ أَذَانِيْ وَمَنْ أَذَانِيْ فَـقَدْ أَذَى اللهَ وَمَنْ أَذَى اللهَ يُـوْشِكُ أَنْ يَّأْخُذَهُ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। আমি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পরে তোমরা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে তিরস্কারের লক্ষ্যস্থল করো না। যে ব্যক্তি উনাদেরকে মুহব্বত করল, সে আমাকে মুহব্বত করার কারণেই মুহব্বত করল। আর যে ব্যক্তি উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করল, সে আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার কারণেই বিদ্বেষ পোষণ করল। যে ব্যক্তি উনাদেরকে কষ্ট দিলো, সে মূলত আমাকেই কষ্ট দিলো। আর যে আমাকে কষ্ট দিলো, সে মূলত মহান আল্লাহ পাক উনাকেই কষ্ট দিলো। আর যে মহান আল্লাহ পাক উনাকে কষ্ট দিলো, মহান আল্লাহ পাক তিনি শীঘ্রই তাকে পাকড়াও করবেন। নাঊযুবিল্লাহ!
এখানে বিশেষ ভাবে দ্রষ্টব্য উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফে ‘আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো’- এই বাক্যাংশে ‘ভয় করো’ শব্দটি সরাসরি উল্লেখ নেই। কারণ কখনো কখনো বাক্যে ফে’ল উহ্য রেখে মাফউল উল্লেখ করা হয়। এই পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত الله، الله শব্দ মুবারক দু’খানা মূলত ছিল اتَّقُوا الله اتَّقُوا الله এখানে اتَّقُوا الله ফে’ল উহ্য। এরকম নাহু শাস্ত্রের অনেক নিয়মই আছে।
স্মরণীয় যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মুহব্বত মুবারক অন্তরে থাকা রহমত উনার কারণ। এ সম্পর্কে দায়লামী শরীফে পবিত্র হাদীছ শরীফ ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ تَـعَالَى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَرَادَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ بِرَجُلٍ مِنْ أُمَّتِيْ خَيْـرًا أَلْقَى حُبَّ أَصْحَابِيْ فِي قَـلْبِهِ
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার উম্মতের কোনো ব্যক্তির কল্যাণ চান, তখন তার অন্তরে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মুহব্বত মুবারক ঢেলে দেন। সুবহানাল্লাহ!
এ কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে পবিত্র সূরা হাশর শরীফে আমাদেরকে একটি বিশেষ দোয়া মুবারক শিক্ষা দিয়েছেন, তা হলো:
رَبَّـنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَـقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُـلُوْبِنَا غِلًّا لِلَّذِيْنَ اٰمَنُـوْا رَبَّـنَاۤ إِنَّكَ رَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ
হে আমাদের রব তায়ালা! আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং আমাদের পূর্বে যারা ঈমানের সাথে চলে গিয়েছেন উনাদেরকেও ক্ষমা করুন। যারা ঈমান এনেছেন (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম) উনাদের প্রতি আমাদের অন্তরে যেন কোনো প্রকার বিদ্বেষ না থাকে। হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।
কাজেই মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদেরকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও আমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য বেশি বেশি এই দোয়া করার এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি হাক্বীক্বী হুসনে যন পোষণ করে উনাদের অনুসরণ-অনুকরণ করার তাওফীক দান করেন। (আমীন)