মাহে রবিউস্ সানী মাস ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ১১৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ

 আরবী মাসের চতুর্থ মাস রবিউস্ সানী। এ মাসের এগার তারিখ দিনটি ফাতিহা-ই-ইয়াযদাহাম নামে সারা বিশ্বে মশহুর। অর্থাৎ এ মুবারক দিনটিতে ওলীগণের সাইয়্যিদ, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল  আ’যম হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি যমীন থেকে বিদায় গ্রহণ করে রফীক্বে আ’লার পরম দীদারে মিলিত হন।

কিতাবে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের শানে যেরূপ বর্ণিত রয়েছে যে, النبى نبيا ولو كان صبيا.

অর্থাৎ- ‘নবী তো নবী যদিও তিনি শিশু হোন না কেন।’

ঠিক একই ধরণের কথা বর্ণিত রয়েছে হযরত আউলিয়া-ই-কিরামগণের শানে, الولى وليا ولو كان صبيا. অর্থাৎ- ‘ওলী তো ওলী যদিও তিনি শিশু হোন না কেন।’   এ কথার বাস্তবতা আমরা দেখতে পাই মুজাদ্দিদুয্ যামান, হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি -এর সাওয়ানে’ উমরী তথা জীবনী মুবারকের মধ্যে। রমাদ্বান শরীফের  পহেলা তারিখ জন্ম গ্রহণ করেই তিনি রোযা রাখা আরম্ভ করেন। (সুবহানাল্লাহ্)

মূলতঃ যারা যামানার মুজাদ্দিদ, তাঁরা শিশুকাল থেকে কেন বরং সৃষ্টির শুরু থেকেই ওলী হিসেবে মনোনীত। এটি আল্লাহ্ পাক-এর এমন এক খাছ ফযল ও করম যা চেষ্টা-সাধনা করে হাছিল করার বস্তু নয়। এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে যে, আওলাদে রসূল এবং আহ্লে বাইতের অন্তর্ভূক্ত হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি (যিনি হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এর পীর ছাহেব ছিলেন) তিনি তাঁর ‘কাশফূল গুয়ুব’ নামক কিতাবে হযরত বড় পীর শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এর সম্পর্কে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ১৪৮ হিজরীর ১১ই রজব জুমুয়ার রাত্রিতে আমি যথারীতি কুরআন শরীফ তিলওয়াত ও যিকির-আযকার করে ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুমের মধ্যে স্বপে¦ দেখতে পাই, আমি আলমে নাসূত (পৃথিবী) হতে উর্ধারোহন করে আলমে মালাকুত এবং আলমে মালাকুত হতে জাবারুতে গিয়ে পৌঁছলাম। সেখানে এক বিশাল ময়দান দেখতে পেলাম। সেই ময়দানের এক পার্শ্বে মারওয়ারিদ পাথরের একটা তাবু টাঙানো। সেখান থেকে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমার কাছে এসে বললেন, “হে ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি! আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম আপনাকে ডাকছেন। আমি সাথে সাথে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট গেলাম। গিয়ে দেখলাম, সমস্ত আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালাম ও আউলিয়া-ই-কিরামগণের রূহ মুবারক সেখানে উপস্থিত এবং সমস্ত ফেরেশ্তা কাতারবন্দী হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন। একটা খুব সুন্দর আসনের মধ্যে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম বসে আছেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে দেখা মাত্র বসার জন্য ইশারা করলেন। আমি বসলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম-এর পার্শ্বে এসে বসলেন। ইত্যবসরে দেখা গেল, দু’টি রূহ মুবারক এসে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম-এর ডান জানু মুবারকে ও বাম জানু মুবারকে বসলেন। বসার পর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, “হে ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি! আজ থেকে তিনদিন পর তুমি আমার কাছে চলে আসবে। আমি চাই, তুমি জাবারুতের অবস্থা দর্শন করে তা আলমে নাসূতের মধ্যে লিপিবদ্ধ করে আস। একথা বলার পর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তুমি কি জান এ রূহ মুবারক দু’টি কার? আমার ডান জানু মুবারকে যার রূহ মুবারক দেখতে পেলে তিনি আমার থেকে পাঁচশত বৎসর পর পৃথিবীতে আগমন করবেন, তিনি হলেন জামালী তবীয়ত সম্পন্ন ওলী, গাউছুল আ’যম, হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আমার বাম জানু মুবারকে যে রূহ মুবারকটি দেখতে পেলে তিনি হলেন জালালী তবীয়ত সম্পন্ন ওলী, হযরত আলী আহমদ ছাবির কালিয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি। আল্লাহ্ পাক তাঁর এ দুই খাছ মক্ববুল বান্দা দ্বারা ইসলামের অনেক খিদমত নিবেন।  তারপর পার্শ্বে উপবিষ্ট হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বললেন, “তোমাদের শাহাদতের পর আমি আমার উম্মতের কথা ভেবে চিন্তিত হই এবং ধৈর্যধারণ করি। তখন আল্লাহ্ পাক তাঁর এই দুই মাহ্বুব বান্দা দ্বারা আমাকে সুসংবাদ দান করেন। হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি উক্ত স্বপ¦ দেখার পর ঘুম থেকে জেগে উঠলাম এবং সকালে উঠে ‘কাশফুল গুয়ুব’ কিতাবে তা লিপিবদ্ধ করলাম।” এই ‘কাশফুল গুয়ুব’ কিতাব তিনি ইন্তিকালের পূর্বেই লিখেছিলেন এবং সত্যিই তিনি তিনদিন পরেই ইন্তিকাল করেন এবং সত্যিই হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ৪৭১ হিজরীতে ইরাকের পবিত্র জ্বিলান নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন।

মাহে জুমাদাল উখরা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা -হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ

মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সম্মানিত মুহররমুল হারাম শরীফ এবং সম্মানিত ছফর শরীফ মাস উনাদের প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সম্মানিত শাওওয়াল শরীফ, সম্মানিত যিলক্বদ শরীফ ও সম্মানিত যিলহজ্জ শরীফ মাস এবং উনাদের প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা