ফিক্বহুল হাদীস ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৬৫)

সংখ্যা: ১১৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

প্রসঙ্গঃ প্রত্যেক সালিক বা মুরীদের উচিত সকল কাজের উপর স্বীয় পীর ছাহেব ক্বিবলার দেয়া ওযীফাকেই প্রাধান্য দেয়া। দিন-রাতের যে কোন সময়ই হোকনা কেন প্রথমে ওযীফা পাঠ করবে অতঃপর অন্যান্য কাজ করবে।

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

ইমামুল আইম্মা, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুযাদ্দিদুয্ যামান, ছাহিবে কুন ফাইয়া কুন, আওলাদে রসূল মামদুহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী আরো বলেন, আউলিয়া-ই কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের সাথে মুহব্বত রাখলে তাঁদের তাজিম-তাকরীম করলে, জান-মাল দিয়ে সাধ্যমত সাহায্য-সহযোগিতা করলে, তাঁদের সাথে জান্নাতে অবস্থান করতে পারবে বটে; কিন্তু জান্নাতের মূল নিয়ামত আল্লাহ্ পাক-এর দিদার লাভ তথা সীমাহীন মর্যাদা-মর্তবা পেতে হলে নিয়মিত ওযীফা আদায় করা, যিকির-ফিকির করা আবশ্যক। কেননা যিকির-ফিকির কঠোর রিয়াজত-মুশাক্কাত ব্যতীত জান্নাতের সুউচ্চ মর্যাদা-মর্তবা হাছিল করা সম্ভব নয়।

স্মর্তব্য যে, যারা স্বীয় পীর ছাহেব ক্বিবলা-এর নির্দেশিত ছবক বা ওযীফা নিয়মিত আদায় করে না, যিকির-ফিকির করার প্রয়োজন অনূভব করেনা, রিয়াজত-মুশাক্কাতের বিষয়টি শুধু মুখরোচক আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখে; তারা সুলুকের পথে ইস্তিকামত থাকতে পারে না। আর ছূফীদের মহান মর্যাদা-মতর্বা লাভের বিষয়টিও তাদের ক্ষেত্রে সন্দেহযুক্ত। পাশাপাশি আল্লাহ্ পাক এবং তাঁর প্রিয় হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মারিফাত ও মুহব্বত হাছিলের বিষয়টি অসম্ভব কল্পনা এবং অযথা সময় ক্ষেপনে পর্যবসিত হয়।

তাদের দ্বারাই ভণ্ড ফকীরের দলের আর্বিভাব ঘটেছে। মারিফাতের নামে যুগে যুগে যে সমস্ত বদ রসম, কুপ্রথা এবং নানাবিধ বিদ্য়াত-বেশরা ক্রিয়া কলাপ পরিলক্ষিত হয় তার মূল হোতা হচ্ছে তারাই যারা রীতিমত ওযীফা আদায় করেনা। স্বীয় পীর ছাহেব ক্বিবলার সাথে যাদের রূহানী কোন নিছবত (সম্পর্ক) থাকেনা, তারাই হচ্ছে তাসাউফের পবিত্রতা নষ্টকারী দল। কিয়ামত পর্যন্ত এ পবিত্রতম পথের জন্য হুমকি স্বরূপ। যদিও বা তাতে প্রকৃত ছূফীগণের কোনই ক্ষতি সাধিত হবে না।

কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

لاتزال طائفة من امتى ظاهرين على الحق لا يضرهم من خذلهم حتى ياتى امر الله.

অর্থঃ- “আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল কিয়ামত পর্যন্ত বিজয়ী বেশে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। তাঁদেরকে তাদের বিরুদ্ধবাদী বা গোমরাহ লোকগুলো কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না।” (মুসলিম শরীফ-২/১৪৩)        নির্দিষ্ট সময়ে ওযীফা বা ছবক আদায় না করা আদবের খিলাফ তো বটেই এমন কি অনেক ক্ষেত্রে চরম পর্যায়ের বেয়াদবী। কেননা যে সময়ে কোন ছালিকের  নিদিষ্ট ওযীফা তথা মহান আল্লাহ্ পাক-এর মুরাকাবা-মুশাহাদা, যিকির-ফিকির কিংবা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি দরূদ শরীফ, দোয়া, কালাম অথবা অন্য কোন সুনির্দিষ্ট আমল থাকে তা সেই সময়ে আদায় না করে অন্য কোন কাজে লিপ্ত হওয়া প্রকারান্তরে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর অন্যকে প্রাধান্য দেয়ার নামান্তর। যা ছূফীগণের ত্বরীকার সম্পূর্ণ খিলাফ। কেননা পৃথিবীর সর্ব বিষয়ের উপর আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুহব্বতকে প্রাধান্য দেয়া এবং অন্য সব কিছুর আকর্ষণ হতে অন্তরকে পবিত্র রাখাই হচ্ছে ছূফীগণের প্রধান কাজ।    যেমনভাবে কোন মজলিসে আল্লাহ্ পাক-এর ছানা-ছীফত, উলুহিয়াত, ওয়াহদানিয়াতের উপর বিশেষ আলোচনার সময় অপর কোন বিষয় উত্থাপন করা।      কিংবা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শান-মান, মর্যাদা-মর্তবার আলোচনার সময় কোন আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের প্রসঙ্গ এনে সে আলোচনা বন্ধ করা স্বীয় পীর ছাহেব ক্বিবলার শান-মান, মর্যাদা-মর্তবা আলোচনার সময় সমসাময়িক কিংবা পূর্ববর্তী কোন আউলিয়া-ই-কিরামগণের প্রসঙ্গ উত্থাপন করা আদবের খিলাফ অথবা শরীয়তের কোন গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালার সমাধানের সময় তাছাউফের, কোন বিষয়কে জুড়ে দেয়া কিংবা ইল্মে তাছাউফের তথা ইল্মে মারিফাতের জটিল কোন বয়ানের সময় দুনিয়াবী কোন আলোচনার সূত্রপাত ঘটানো ক্ষেত্র বিশেষে চরম বেয়াদবী। তেমনিভাবে সুর্নিদিষ্ট সময়ে ওযীফা আদায় না করে অন্য কাজে মনোনিবেশ করা আদবের খিলাফ। অবস্থা বিশেষ চরম বেয়াদবীর অন্তর্ভুক্ত।

সর্বোপরি স্বীয় পীর ছাহেব ক্বিবলার সাথে গভীর তায়াল্লুক, নিছবত (সম্পর্ক) প্রতিষ্ঠার জন্য নিয়মিত ওযীফা আদায় হচ্ছে প্রধান ও শক্তিশালী পদক্ষেপ। সালিক বা মুরীদ পৃথিবীর যে স্থানেই অবস্থান করুক না কেন যদি নিয়মিত ছবক বা ওযীফা  আদায় করে তাহলে স্বীয় পীর ছাহেব ক্বিবলার নিছবত হাছিলের ক্ষেত্রে কোনরূপ প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়না। পক্ষান্তরে সার্বক্ষণিক নিকটে অবস্থান করার পরেও যদি ওযীফা তথা যিকির-ফিকির নিয়মিত আদায় না হয় তাহলে পরিপূর্ণ রুহানিয়ত কতটুকু হাছিল হয় তা সঠিক ভাবে বলা যায় না।

উল্লেখ্য যে, জাহিরী (বাহ্যিক) খিদমতের দ্বারা যেমন স্বীয় পীর ছাহেব ক্বিবলার সন্তুষ্টি-রেযামন্দি হাছিল হয় তেমনি রীতিমত ওযীফা আদায় তথা যিকির-ফিকির, মুরাকাবা-মুশাহাদার মাধ্যমেও পীর ছাহেব ক্বিবলার সন্তুষ্টি-রেযামন্দি হাছিল হয়।

মূলতঃ যারা নিয়মিত ছবক আদায় করে, যিকির-ফিকির করে তারা যেন আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক পীর ছাহেবগণের নিকট প্রদত্ত আমানত। তবে এটাও সর্বজনবিদিত যে, জাহির এবং বাতিন উভয় খিদমতের মাধ্যমেই পরিপূর্ণ কামিয়াবী অর্জিত হয়। একটা ভিন্ন অপরটি অঙ্গহানী স্বরূপ। কাজেই যাদের জাহির-বাতিন (বাহ্যিক- আভ্যন্তরীণ) উভয় দিক থেকে স্বীয় পীর ছাহেবের খিদমতে আঞ্জাম দেয়ার সৌভাগ্য নসীব হয় তারাই শুধু স্বীয় পীর ছাহেব ক্বিবলার চরম-পরম সন্তুষ্টি রেযামন্দি হাছিল করতে সক্ষম হয়। যেমন হয়েছিলেন ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ ত্বরীক্বত, কুতুবুল মাশায়িখ সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি। যার শানে আমীরুশ শরীয়ত ওয়াত্ তরীকত হযরত উসমান হারুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আল্লাহ্ পাক যদি আমাকে বলেন আমার জন্য কি হাদিয়া নিয়ে এসেছেন? তাহলে আমি বলবো, আমি মুঈনুদ্দীনকে আপনার জন্য হাদিয়া এনেছি। পাশাপাশি শাইখুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ খাজা হযরত বাকী বিল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি মুযাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রতি এমন সন্তুষ্ট হয়েছিলেন যে, তিনি যখন তাঁর ছোহবত লাভের জন্য আসতেন তখন তাঁকে সাদর সম্ভাষণ জানানোর জন্য হযরত বাকী বিল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মুরীদানদেরকে নিয়ে শহরের দ্বারপ্রান্তে হাজির হতেন। (সুবহান আল্লাহ)

অনুরূপভাবে শাইখুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ হযরত বাহাউদ্দীন যাকারিয়া মুলতানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর এমন একজন যোগ্যতা সম্পন্ন মুরীদ ছিলেন,  তিনি স্বীয় পীর ছাহেব-এর এমন দয়ার নজর পেয়েছিলেন যে, শাইখুল ইসলাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর সম্পর্কে প্রায়শঃই বলতেন, কাল কিয়ামতের দিন যদি আল্লাহ্ পাক আমাকে জিজ্ঞেস করেন, “তুমি আমার জন্য কি তোহফা (উপঢৌকন)  এনেছ?” উত্তরে  আমি বলবো” আল্লাহ্ পাক! আমি হাসান আফগানকে আপনার জন্য এনেছি। (ফাওয়ায়েদুল ফুয়াদ-১ খন্ড ৮ম মজলিস)           শুধু সে কালেই নয় একালেও এরূপ দৃষ্টান্তের অভাব নেই। বর্তমান যামানার যিনি ইমাম, ইমামুল আইম্মা, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুযাদ্দিদুয্ যামান, ছহিবে কুন ফাইয়া কুন, শাফিউল উমাম, রাজারবাগ শরীফের মামদুহ্ হুযূর ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী সম্পর্কে তাঁর পীর ছাহেব ক্বিবলা আমিরুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ ত্বরীকত, শাইখুল উলামা ওয়া঺ মাশায়িখ, রঈসুল মুফাস্সিরীন, ফক্বীহুল উম্মত আবুল খায়ের মুহম্মদ অজীহুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আল্লাহ্ পাক যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন যে, “আপনি আমার জন্য দুনিয়াতে কি রেখে এসেছেন?” তাঁর জাওয়াবে আমি বলবো, হে আল্লাহ্ পাক! আপনার জন্য আমি শাহ্ ছাহেবকে রেখে এসেছি। তিনি পৃথিবীর সকলের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। (সুবহানআল্লাহ)

উল্লেখ্য যে, রঈসুল মুফাস্সিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁকে অতি আদরের সাথে সর্বদা “শাহ্ ছাহেব” খেতাবে সম্বোধন করতেন। আউলিয়া-ই-কিরামগণ সাধারণতঃ রহমত-বরকত, ছাকীনা, ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করার লক্ষ্যে মজলিসে নিজের পীর ছাহেবের আলোচনা করেন।

আর তিনি সর্বদা তাঁর মুরীদ তথা ইমামুল আইম্মা, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর আলোচনা করতেন। তিনি প্রকাশ্যভাবে সকল মুরীদকে বলতেন, আমি তোমাদের সবাইকে ভালবাসি; কিন্তু তাঁকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসি।

কারণ তিনি আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি পরিপূর্ণভাবে নিবেদিত। তোমরা কেউ কোন দিন তাঁর সাথে বেয়াদবী করবেনা। কেননা আউলিয়া-ই-কিরামগণের সাথে বেয়াদবী করলে মানুষ লুলা, ল্যাংড়া, অন্ধ; বোবা হয়। কিন্তু তাঁর সাথে বেয়াদবী করলে তোমরা ঈমান হারা হয়ে যাবে। তাঁকে স্বয়ং আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার খানকা শরীফ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে যান। তিনি ইচ্ছা করলেই যে কোন সময়েই আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জিয়ারত করতে তো পারেনই এমনকি ইচ্ছা করলেই যেকোন লোককে যেকোন সময়ে তাঁর সাথে সাক্ষাত করিয়ে দিতে পারেন। (সুবহানআল্লাহ)

একদিনের ঘটনা। শাইখুল  উলামা ওয়ালা মাশায়িখ, রঈসুল মুফাসসিরীন আল্লামা হযরত মাওলানা আবুল খায়ের মুহম্মদ অজিহুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি খানকা শরীফে মুরীদ-মুতাকেদীন দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলেন।

প্রসঙ্গ উত্থাপন হলো- ইমামুল আইম্মা,  মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুযাদ্দিদুয যামান, আওলার্দু রসূল, ছাহিবে কুন ফাইয়া কুন, সাইয়্যিদুনা, ইমাম রাজারবাগ শরীফের  হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দাজিল্লুহুল আলী-এর সম্পর্কে।

তিনি একজন মুরীদকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘শাহ্ ছাহেব’ কেমন আছেন? মুরীদ তাঁর  কুশলাদী জানালেন। সব শুনে তিনি বললেন, আরে, ‘শাহ ছাহেব’ হচ্ছেন  আগুন। আর নামধারী ঐ সমস্ত আলিম, উলামা, মুফতী, মুহাদ্দিস, শাইখুল হাদীস, শাইখুত তাফসীর ব্যক্তি বর্গ হচ্ছে খঁড়-কুটা। চিন্তা করোনা। তাঁর বিলায়েতের আগুনে ঐ সব খঁড়-কুটা ভস্ম হয়ে যাবে। সেদিনের তাঁর  ঐ হিকমতপূর্ণ কথা আজ অক্ষরে অক্ষরে প্রতিফলিত হচ্ছে। ওহাবী-বিদ্য়াতী, গোমরাহ, নামধারী পীর সাহেবরা আজ হিদায়েত শুন্য। তথাকথিত নামীদামী আলিম-উলামা, ছূফী-দরবেশ, আর্ন্তজাতিক খ্যাতি সম্পন্ন  বক্তা সবই আজ প্রকাশ্য হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে সকলের ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছে।                  তিনি তাঁকে খিলাফত দেয়ার সাথে সাথে নিজের সমস্ত মুরীদদেরকে রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ছোহবত ইখতিয়ার করার জন্য নির্দেশ দিতেন। তিনি প্রায়শঃই মুরীদদেরকে বলতেন, তোমরা আমার ছোহবতে থেকে দশ বছরে যা হাছিল করতে পারবে রাজারবাগ শরীফের ‘শাহ্ ছাহেবের’ কাছ থেকে দশ দিনে তার চেয়ে বেশী হাছিল করতে পারবে। (সুবহানআল্লাহ)

কেননা তিনি হচ্ছেন, চূড়ান্ত মর্যাদার অধিকারী। মর্যাদার সর্বোচ্চ আসন তাঁরই। ইমামুল আইম্মা, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, সুলতানুল আরিফীন, মুযাদ্দিদে যামান, আওলার্দু রসূল, ইমাম, রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর চারিত্রিক মহান গুণাবলী দেখে তাঁর শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, উস্তাজুল আছাতিযা, ফখরুল উলামা, আল্লামা, মাওলানা রুকুনুদ্দীন ছাহেব দামাত বারাকাতাহু বলেন, “আল্লাহ্ পাক যদি আমাকে বলেন, ‘আপনি সারা জীবন কি আমল করেছেন?’ তার জাওয়াবে আমি বলবো যে, ‘আল্লাহ্ পাক! আমার একমাত্র আমল হচ্ছে রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা। আমার জীবনের একমাত্র সম্বল তিনিই। যত ইল্ম শিখেছি সব কিছুই তাঁর কাছে আমানত রয়েছে।’ (সুবহানআল্লাহ)

মূলতঃ সকল সালিককে স্ব স্ব পীর ছাহেব ক্বিবলার এরূপ সন্তুষ্টি রেযামন্দি হাছিলের কোশেশ করা উচিত। জাহিরী খিদমত করার সাথে সাথে বাতিনী খিদমত করার জন্য নিয়মিত ওযীফা আদায়, যিকির-ফিকিরে মনোনিবেশ করা আবশ্যক। আল্লাহ্ পাক আমাদের সবাইকে যামানার মহান মুযাদ্দিদের উছিলায় সেই তৌফিক দান করুন। (আমীন)

৪৩। পীর ছাহেব ক্বিবলার প্রসঙ্গ উত্থাপিত হওয়া তথা পীর ছাহেব কথা স্মরণ হলে কিংবা আলোচনা হলে তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে।

সকল সময় সর্বাবস্থায় স্বীয় পীর ছাহেব ক্বিবলার নাম মুবারক শুনলে সাথে সাথে তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা  আবশ্যক।

তা কারো মুখে উচ্চারিত হোক কিংবা স্বীয় অন্তরে উদয় হোক। কারো মুখে স্বীয় পীর ছাহেব ক্বিবলার নাম মুবারক শুনলেই সাথে সাথে “মুদ্দা জিল্লুহুল আলী” “দামাত বারাকাতুহু” ইত্যাদি দোয়া সুচক বাক্য উচ্চারণ করবে। আর যদি তিনি দুনিয়া হতে পর্দা করে থাকেন তাহলে ‘রহমতুল্লাহি আলাইহি’ ‘কুদ্দসা ছিররুহুল আযীয’ ইত্যাদি বাক্য দ্বারা দোয়া করবে এবং যথাসাধ্য আদব প্রদর্শন করবে।

অনুরূপভাবে পীর ছাহেব ক্বিবলার কোন ব্যবহৃত দ্রব্যাদি কিংবা তার স্মৃতি চারণ করে এমন কোন জিনিষ চোখে পড়ে বা মানসপটে ভেসে আসে  সে ক্ষেত্রেও তার যথাযথ সম্মান করা মুরীদের কর্তব্য। কেননা উক্ত আমলের মাধ্যমে মুরীদের যা হাছিল হয় তা হাজারের মধ্যে একজন মুরীদ দীর্ঘদিন কঠোর রিয়াজত-মোশাক্কাতের পর হাছিল করে থাকে।

যেটাকে তাসাউফের পরিভাষায় ‘তাসাউরে শায়েখ’ বলা হয়। মূলতঃ কোন সালিকের যদি তা হাছিল হয় তাহলে সেটা আল্লাহ্ পাক-এর একান্ত অনুগ্রহ, বিশেষ দান।

যে প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,

والله يختص برحمته من يشاء.

অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক যাকে ইচ্ছা তাকে তাঁর বিশেষ নিয়ামতে ভূষিত করেন।” (সূরা বাক্বারা/১০৫)

“ফাওয়াযেদুস সালিকীন” কিতাবে উল্লেখ্য আছে-সুলতানুয যাহিদীন, শাইখুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল মুজাহিদীন হযরত ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জেশকর রহমতুল্লাহি আলাইহি  বলেন, হযরত গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ্, কুতুবুল মাশায়িখ, খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি একদা ছূফীগণের মজলিসে বসা ছিলেন। বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোচনা চলছিল। যখন  তাঁর মুখ মুবারক কোন এক বিশেষ দিকে ঘুরে যেতো তিনি তখনই  দাঁড়িয়ে যেতেন। অবশেষে দেখা গেল যে, তিনি সেই মজলিসে ১১০ বার এভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মজলিসের সকল লোক এ কারণে বিস্মিত ও কৌতুহলী হয়ে উঠে ছিলেন। তাঁরা সকলেই  বুঝতে পেরেছিলেন যে, নিশ্চয়ই তার পিছনে কোন রহস্য লুকায়িত আছে। কিন্তু আদবের খিলাফ হবে, এই চিন্তায় কেউ কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পায়নি। এমনিভাবে যখন তিনি মজলিস হতে চলে গেলেন তখন আমি তাঁর এক বিশেষ খাদিমকে বললাম, উপযুক্ত সময় বুঝে হুযূরের নিকট হতে এর কারণটা জেনে নিবেন। পরে  তিনি একদিন সময় বুঝে হুযূরের নিকট উক্ত ঘটনার রহস্য উম্মোচন করার জন্য আরজ করলেন-তিনি ইরশাদ করলেন-ঐ দিকে আমার মুর্শিদ ক্বিবলা খাজা উসমান হারুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর হাজারো পবিত্রস্মৃতি মুবারক বিজড়িত রয়েছে। যখন আমার দৃষ্টি তাঁর রওজা শরীফের দিকে পতিত হতো তখন আমি তাঁর সম্মান প্রদর্শনার্থে দাড়িয়ে যেতাম।

মুলতঃ পীর ছাহেবের সম্পৃক্ত সব বিষয়কে মুরীদদের সম্মান করা উচিৎ। আর যখন পীর ছাহেব ক্বিবলা দুনিয়া হতে পর্দা করবেন তখন আরো বেশী আদব বা শিষ্টাচার প্রদর্শন করা উচিৎ।

অনুরূপভাবে স্বীয় পীর ছাহেব ক্বিবলার সম্পর্কে কোন মজলিসে আলোচনা চলার সময় গভীর মনোযোগের সাথে সে আলোচনা শুনবে এবং আলোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ স্থান ত্যাগ করবেনা এবং অন্য কোন প্রসঙ্গ উত্থাপন করবেনা।

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৬০)

ফিক্বহুল হাদীস ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৬২)

ফিক্বহুল হাদীস ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৬৩)

পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৬৪)