আরবী মাসের দ্বিতীয় মাস ‘ছফর’। ‘ছফর’ শব্দটি একবচন। এর বহুবচন আছফার। ‘ছফর’ শব্দের অর্থ এবং এ নামে মাসটির নামকরণ (১) ‘ছফর’ অর্থ খালি হওয়া। ছফর মাসের পূর্ববতী ‘মুহররম মাসটি হারাম বা সম্মানিত হওয়ার কারণে তাতে যুদ্ধ বিগ্রহ করা নিষিদ্ধ বিধায় আরবরা ছফর মাসে-যুদ্ধ জিহাদের জন্য বের হয়ে যেত আর তাদের আবাসস্থল বা ঘর-বাড়ীগুলো খালি পড়ে থাকতো। (২) ‘ছফর’ অর্থ হলুদ বর্ণ হওয়া। অর্থাৎ যে মৌসুম বা কালে গাছের পাতা হলুদ রং ধারণ করে তার নাম ‘ছফর’। (৩) ‘ছফর’ অর্থ এক প্রকার কীট যা মানুষের পেটের ভিতর অবস্থান করে এবং খাদ্য-দ্রব্য পরিপাকে সহায়তা করে। খাদ্র-দ্রব্য পরিপাকে ‘ছফর’ নামীয় কীট যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক এ মাসটিও তেমন গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যমন্ডিত। (৪) ‘ছফর অর্থ ‘নাসী’ তথা মাসকে আগে-পিছে করা’। অর্থাৎ আরবরা যখন কোন সময় যুদ্ধ করার প্রয়োজন অনুভব করতো বা যুদ্ধে লিপ্ত থাকতো তখন তারা ছফর মাসকে আগে-পিছে করে হারাম মাসের সংখ্যা নিরূপণ করতো। অথচ এটি করা সস্পূর্ণরূপে হারাম ও কুফরী। প্রতিটি মাসের ন্যায় এ মাসেরও অনেক ফযীলত ও সম্মান রয়েছে। বিশেষ করে এ মাসের শেষ বুধবার দিনটি আখিরী চাহার শোম্বাহ হিসেবে প্রসিদ্ধ। অর্থাৎ এ মুবারক দিনটিতে আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তেষট্টি বছর দুনিয়াবী যিন্দেগী মুবারকে শেষ বারের মত দীর্ঘ দিন অসুস্থ থাকার পর সাময়িক সুস্থতা লাভ করেন। অতঃপর গোসল করতঃ খাওয়া-দাওয়া করে মসজিদে নববী শরীফে তাশরীফ রাখেন। হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সুস্থ অবস্থায় দেখতে পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হন এবং শুকরিয়া স্বরূপ তাঁরা তাঁকে হাদিয়া প্রদান করেন এবং গরীব-মিসকীনদেরকে দান-ছদকা করেন। তবে উক্ত দিনের শেষ প্রান্তে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূনরায় অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এ অসুস্থতা নিয়েই তিনি রফীকে আ’লার পরম দীদারে মিলিত হন। কাজেই মুসলিম উম্মাহর জন্য এ দিনটি একটি তাৎপর্যমন্ডিত দিন।
এ মাসের ২৯ তারিখ হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বিষের দ্বারা শাহাদাত বরণ করেন। সকল যুগেই ইসলাম ও মুসলমানের ক্ষতি সাধনে কাফিরদের চেয়ে মুসলমান মুনাফিকদের ভূমিকাই বেশী। ইসলামের মূল, দুনিয়া ও আখিরাতে সবচেয়ে সম্মানিত, জান্নাতের যুবকগণের সাইয়্যিদ, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর শাহাদতের জন্য এ পাপীষ্ঠ নরা ধমরাই দায়ী। পরবর্তীতেও তারা এবং তাদের অনুসারীরা কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার জন্য দায়ী। আহলে বাইত, আওলাদে রসূলগণের দুশমনদের প্রতি আল্লাহ ্পাক-এর লা’নত বর্ষিত হোক।
এ মাসেরই ২৮ তারিখ সোমবার দিনে ৬৩ বছর বয়স মুবারকে ১০৩৪ হিজরীতে আল্লাহ্ পাক-এর খালিছ ওলী আফযালুল আউলিয়া কাইয়্যূমে আউয়াল, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওফাত লাভ করেন। তিনি এমন এক ব্যক্তি যার আগমনের সুসংবাদ স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দান করেছেন। অতএব, তিনি কোন শ্রেণীর কামালিয়াত সম্পন্ন ওলী ছিলেন তা সহজেই অনুধাবনযোগ্য। মূলতঃ তাঁর কামালত ও বিলায়েতের দাপটে বাদশা আকবরের নব আবিস্কৃত দীনে ইলাহীর মূলোৎপাটন হয় এবং তাঁর তাজদীদী প্রভাবে মানুষ সঠিক দ্বীনের সন্ধান লাভ করে। তিনি আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুহব্বত, মা’রিফত ও সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য যমীনবাসীকে একটি তরীক্বা হাদীয়া দেন যার নাম হচ্ছে, তরীক্বা-ই-নক্শবন্দিয়া-ই-মুজাদ্দিদিয়া। এ তরীক্বার ইমাম তিনিই। পৃথিবীতে মশহুর তরীক্বাসমূহের মধ্যে এটি অন্যতম। এ তরীক্বা মশ্ক করে অনেকেই যুগশ্রেষ্ঠ ওলী হয়েছেন। শুধু তাই নয় এ মকবুল তরীক্বা যে বা যারাই মশক করবে সকলের জন্যই নাজাতের সুসংবাদ রয়েছে। (সুবহানাল্লাহ) উল্লেখ্য, ছফর মাসকে ঘিরে কিছু ভ্রান্ত আক্বীদা লোক সমাজে প্রচলিত রয়েছে। সে ভ্রান্ত আক্বীদা-বিশ্বাসের মূলোৎপাটন কল্পে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
لا عدوى ولا هامة ولا نوء ولا صفر.
অর্থঃ- “সংক্রামক বা ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই, পেঁচার মধ্যে কুলক্ষণের কিছুই নেই, তারকার (উদয় বা অস্ত যাওয়ার) কারণে বৃষ্টি হওয়াও ভিত্তিহীন এবং ছফর মাসে অশুভ বলতে কিছু নেই।” (মুসলিম, মিশকাত)
আল্লাহ্ পাক! আমাদের সকলকে ছফর মাসের যাবতীয় ভ্রান্ত আক্বীদা ও আমল হতে মুক্ত রেখে ছহীহ্ আক্বীদা ও আমলের উপর দায়িম ক্বায়িম থাকার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
শাওয়াল মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা
যিলক্বদ মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা
যিলহজ্ব মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মুহররম মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা -হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ
মাহে রবিউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা -হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ