সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১০৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

সাইয়্যিদ মুহম্মদ মোক্তাদুল ইসলাম (মিলন)

রঈসুল মজলিশ- ছাত্র আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত সুবহানীঘাট, সিলেট।

সুওয়ালঃ রেযাখানী মুখপত্র ডিসেম্বর/২০০০ ঈঃ সংখ্যায়  “তাফসীরে রুহুল বয়ান, বুখারী, গুনিয়াতুত তালেবীন, রেজভীয়া” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “সহীহ্ মুসলিম শরীফসহ” অনেক নির্ভরযোগ্য কিতাবে নফল নামায বিশেষতঃ ক্বদর ও বরাতের নফল নামায জামাত সহকারে আদায় করা বৈধ….।”   আর আপনারা “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” লিখেছেন, “তারাবীহ, ছলাতুল কুছুফ (সূর্য গ্রহণের নামায), ছলাতুল ইস্তিস্কা (বৃষ্টির নামায) এই তিন প্রকার নামায ব্যতীত যেমন লাইলাতুল ক্বদর, লাইলাতুল বরাত, তাহাজ্জুদ, চাশ্ত, আওয়াবীন ইত্যাদি নফল নামাযসমূহ ইমামের সাথে চারজন মুক্তাদীসহ জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্।”  কোনটি সঠিক?   আর “বুখারী, মুসলিম শরীফে” কি “ক্বদর” ও বরাতের” নফল নামায জামায়াতের সাথে আদায় করার কথা উল্লেখ আছে? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াবঃ  রেযাখানীরা তাদের মুখপত্রে “তাফসীরে রুহুল বয়ান, বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, গুনিয়াতুত্ তালেবীন এবং রেজভীয়া” কিতাবের বরাত দিয়ে নফল নামায বিশেষতঃ “শবে বরাত”, “শবে ক্বদরের” নফল নামায আযান-ইক্বামত ছাড়া জামায়াত সহকারে আদায় করা যে বৈধ বলেছে, তা আমরা আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এর বিগত সংখ্যাগুলোতে বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে প্রমাণ করেছি যে, “তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, জিহালতপূর্ণ, জালিয়াতী ও প্রতারণামূলক।” কেননা, রেযাখানীরা কিতাবের নাম দিয়ে যে বক্তব্য প্রদান করেছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। বরং তার সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ, তারা কিতাবের ইবারত, সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে মনগড়া বক্তব্য প্রদান করেছে এবং ক্ষেত্র বিশেষ নিজের ভ্রান্ত মতকে টিকিয়ে রাখতে কিতাবের ইবারত কারচুপি করেছে। (ধারাবাহিক) বর্তমান সংখ্যায়রেযাখানীদের দলীলবিহীন  ও মনগড়া বক্তব্য খন্ডন করা হলো   উল্লেখ্য, রেযাখানীরা বলেছে, “ঢালাওভাবে মাকরূহে তাহরীমার … ফতোয়া দিয়ে পীরানে পীর দস্তগীর আবদুল কাদের জিলানী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সহ অনেক মাশায়েখে কেরামের উপর মাকরূহে তাহরীমার অপবাদ দিয়ে নিজের খ্যাতি চমকানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে।”   এর জবাবে বলতে হয় যে,  বিগত সংখ্যায় আমরা  আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাতে দলীলের ভিত্তিতে প্রমাণ করে দিয়েছি যে, “শবে বরাত, শবে ক্বদর, লাইলাতুর রাগায়িব, তাহাজ্জুদ” ইত্যাদি নফল নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী। এ ফতওয়া দেয়ার কারণেই যদি তা পীরানে পীর দস্তগীর  হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রতি অপবাদ হয়, তাহলে বলতে হয় যে, রেযাখানীদের বক্তব্য মুতাবিক প্রথমতঃ তাদের গুরু রেযা খাঁ-ই পীরানে পীর দস্তগীর  হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রতি অপবাদ দিয়েছে। এবং হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রতি মাকরুহ তাহরীমীর  অপবাদ দিয়ে রেযা খাঁই নিজের খ্যাতি চমকানোর অপচেষ্টা চালিয়েছে।   দ্বিতীয়তঃ রেযাখানীদের বক্তব্য মুতাবিক মৌলভী আমজাদ আলী ছাহেবও পীরানে পীর দস্তগীর  হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রতি অপবাদ দিয়েছে। এবং হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রতি মাকরুহ তাহরীমীর অপবাদ দিয়ে মৌলভী আমজাদ আলী ছাহেবও নিজের খ্যাতি চমকানোর অপচেষ্টা চালিয়েছে।

কারণ,  মৌলভী আমজাদ আলী তার “বাহারে শরীয়ত” কিতাবে উল্লেখ করেছে,

صلوة الر غائب کہ رجب کی پھلی شب جمعہ اور شعبان کی پندرھویں شب اور شب قدر میں جماعت کے ساتھ نفل نماز بعض لوگ ادا کر تے ھیں فقھاء اسے ناجائز ومکروہ بد عت کھتے ھیں …..

অর্থঃ- “রাগায়িবের নামায যা রজবের প্রথম জুমুয়ার রাত্রি ও শা’বানের ১৫ই রাত্রি অর্থাৎ শবে বরাত এবং শবে ক্বদরে জামায়াতের সাথে কিছু লোক নফল নামায আদায় করে থাকে। ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উক্ত নফল নামাযগুলো জামায়াতের সাথে আদায় করাকে নাজায়িয, মাকরূহ তাহরীমী এবং বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ বলেছেন। ….”    তৃতীয়তঃ রেযাখানীদের বক্তব্য মুতাবিক পীরানে পীর দস্তগীর হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজেই নিজের প্রতি মাকরূহ তাহরীমীর অপবাদ দিয়েছিলেন কি? (নাউযুবিল্লাহ্)    কেননা, হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর “গুনিয়াতুত্ তালেবীন” কিতাবে উল্লেখ আছে, “নফল নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী।”         যেমন, “গুনিয়াতুত্ তালেবীন”-এর উর্দূ অনুবাদ কিতাবটিতে উল্লেখ আছে,

جماعت کے ساتھ نفل ادا کرنا مکروہ ھے.

 অর্থঃ- “নফল নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী।”   চতুর্থতঃ রেযাখানীদের বক্তব্য মুতাবিক মাহবুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রতি মাকরূহ্ তাহরীমীর অপবাদ দিয়ে নিজের খ্যাতি চমকানোর অপচেষ্টা করেছিলেন কি? (নাউযুবিল্লাহ্)

কেননা, কাইয়্যুমুয্ যামান, মাহ্বুবে সুবহানী, আফযালুল আউলিয়া, হযরত শায়খ আহ্মদ ফারুকী সিরহিন্দি মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর প্রসিদ্ধ ও বিশ্ববিখ্যাত কিতাব “মাক্তুবাত শরীফে” উল্লেখ করেন,

جننا چاھئے کہ نوافل کو جماعت تمام کی ساتھ ادا کرنا مکروہ اور بدعتوں میں سے ھے. اور نوافل جماعت کے ساتھ ادا کرنا فقہ کی بعض روایات میر مطلق طور پر مکروہ ھے اور بعض روایات میں کر اھت تداعی اور تجمیع یعنی یلانے اور جمیعت پر مشروط ھے پس اگر یغیر تداعی کے ایک دو ادمی مسجد کے گوشہ میں تفل کو جما عت سے ادا کرے تو بفیر کر اھت روا ھے . اور تین ادمیوں میں مشائخ کا اختلاف ھے. اور بعض روایت میں چار ادمیوں کا جماعت بالاتفاق مکروہ نھیں اور بعض روایت میں اصح یہ ھے کہ مکروہ ھے.

অর্থঃ- “স্মরণ রেখ যে, নফল নামায পূর্ণ জামায়াতের সাথে আদায় করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতের অন্তর্ভুক্ত। এবং নফল নামায জামায়াতের সাথে পড়া কোন কোন ফিক্বাহ্বিদগণের মতে, সর্বাবস্থায় মাকরূহ্ তাহ্রীমী। আর কারো কারো মতে, ঘোষণা দেয়ার সাথে শর্ত যুক্ত। সুতরাং যদি কেউ বিনা ঘোষণায় মসজিদের এক কোনায় নামায পড়ার সময় দু’একজন ইক্তিদা করে তবে মাকরূহ ছাড়াই আদায় হবে। আর তিনজন পড়ার ব্যাপারে মাশায়িখগণের মতবিরোধ রয়েছে। চারজন ইক্তিদা করলে কেউ কেউ বলেন, মাকরূহ্ নয়। কিন্তু সর্বসম্মত ও ছহীহ্ মত হলো, মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে।”

অতএব, রেযাখানীদের উক্ত বক্তব্য দলীলবিহীন ও মনগড়া বলেই প্রমাণিত হলো এবং সেই সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যে, প্রকৃতপক্ষে রেযাখানীরাই অবৈধ কাজকে বৈধ বলে এবং আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের প্রতি অপবাদ দিয়ে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়ে চতুরতার সহিত নিজের খ্যাতি চমকানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। (চলবে)

 (উল্লেখ্য, রেযাখানীদের উপরোক্ত ভুলের সংশোধনীমূলক জাওয়াব মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৮৯ তম সংখ্যা হতে ধারাবাহিক ভাবে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ৮৬ তম সংখ্যাতেও দেয়া হয়েছে।)

মাওলানা মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান

মাওলানা মুহম্মদ মাছূম বিল্লাহ্

মুহম্মদ আসাদুর রহমান,

মুহম্মদ মাইজুর রহমান ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

সুওয়ালঃ  আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম এই তিনটি সংখ্যায় ৩৫৩টি অকাট্য দলীলের ভিত্তিতে প্রদত্ত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ, মুহাক্কিক-মুদাক্কিক ও হক্কানী উলামা-ই-কিরামগণের ফতওয়া মুতাবিক জানতে পারলাম যে, “প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা করানো, ঘরে রাখা সর্বাবস্থায় হারাম।”   অথচ রেযাখানী মুখপত্র নভেম্বর/২০০১ ঈসায়ী সংখ্যায় ছবি সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ফতওয়া প্রকাশ করেছে। যা কিনা মানুষের ঈমান-আমল বিনষ্ট হওয়ার কারণ। রেযাখানীদের ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যের যে বিষয়গুলো আপত্তিকর সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো-   (ক) রেযাখানীরা ছবি তোলাকে বৈধ বলেছে; কিন্তু দলীল হিসেবে পেশ করেছে ঘরে ছবি রাখা সম্পর্কিত হাদীসসমূহকে।   (খ) .. কতেক উলামা যেসব ছবির শরীর ও ছায়া নেই সেসব ছবিকে বৈধ বলেছেন।   (গ) হুজুর আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুরুর দিকে ছবি তৈরী করা ও সংরক্ষণ করাকে নিষেধ করেছিলেন; কিন্তু পরবর্তীতে অনুমতি দেন। (ঘ) পূর্ববর্তীদের কেউ কেউ এবং হাম্বলী, শাফেয়ী, মালেকী এমনকি হানাফীদেরও কেউ কেউ নাকি (গায়রে মুজাস্সাম) শরীরবিহীন ছবিকে বৈধ বলেছেন। (ঙ) সামাজিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে বিশেষ প্রয়োজনে ছবি তোলা বৈধ যা যুগের চাহিদাও।   (চ) প্রত্যেক যুগের ফক্বীহ্, মুফতী, কাজী ও আলিমগণ যুগের চাহিদা অনুযায়ী ফতওয়া দিয়েছেন এবং দেয়া উচিত। (ছ) ছবি হারাম হওয়ার মূলে হলো গায়রুল্লাহ্র সম্মান ও ইবাদত। (জ) প্রয়োজনীয় রেকর্ডের জন্য ফাইল বন্দি ছবিসমূহ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের নিকট জ্ঞান ও ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য জানার নিমিত্তে সরকারী-বেসরকারী যাদুঘর বা বিশেষ প্রতিষ্ঠানসমূহে পূর্বের নানা মনীষীগণের ছবি সংরক্ষণ/ধারণ করে রাখা বিশেষ প্রয়োজনে মাকরূহ্ হবেনা। এছাড়াও আরো বহু আপত্তিকর বিষয় তাদের উক্ত ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যে স্থান পেয়েছে। কুরআন-সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে তাদের উল্লিখিত আপত্তিকর বক্তব্যগুলোর শরয়ী ফায়সালা কামনা করি।

জাওয়াবঃ   হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم.

অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি, সাবধান! তোমরা তাদের কাছ থেকে দূরে থাকবে, তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ)    উল্লিখিত হাদীস শরীফের পূর্ণ মেছদাক বা নমুনা হচ্ছে রেযাখানীরা। তারা ছবির ব্যাপারে এমন সব বক্তব্য প্রদান করেছে যা কিতাবে দেখা তো দূরের কথা কেউ কোনদিন শুনেওনি। মূলতঃ রেযাখানীরা নিজেদেরকৃত বদ আমলকে ধামা-চাপা দেয়ার উদ্দেশ্যেই মনগড়াভাবে ছবিকে জায়িয করার অপচেষ্টা করেছে। (ধারাবাহিক)  প্রাণীর ছবি সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত রেযা-খানীদের আপত্তিকর ও প্রতারণামূলক বক্তব্য সমূহের খন্ডন মূলক জবাব- (১)  উল্লেখ্য, মাসিক আল বাইয়্যিনাত গত সংখ্যায় অর্থাৎ ১০৮তম সংখ্যায় বর্ণিত তিনখানা ছহীহ্ হাদীস শরীফ দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, পর্দা, চাদর বা যে কোন কাপড়ে প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা হারাম এবং তা ঘরে প্রদর্শন করাও হারাম-নাজায়িয।   অথচ রেযাখানীরা নিজেদের ভ্রান্ত মত প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে এবং নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার কু-উদ্দেশ্যে উল্লিখিত হাদীস শরীফসমূহ সম্পূর্ণরূপে গোপন রেখে নিজেদেরকে হাদীস শরীফ কারচুপিকারী হিসেবে সাব্যস্ত করলো।        রেযাখানীরা এখানেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, তারা নিজেদের বাতিল মতকে ছাবিত করার পক্ষে উল্লিখিত হাদীস শরীফে বর্ণিত,

الا رقما فى ثوب.

বাক্যের সঠিক ও গ্রহণযোগ্য   অর্থ বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ মনগড়া অর্থ করেছে। যেমন, তারা উক্ত বাক্যের অর্থ করেছে এভাবে, “তিনি কাপড়ের উপর অঙ্কিত ছবিকে পূর্বের হুকুম থেকে পৃথক করে থাকেন।” হাদীস শরীফে বর্ণিত উক্ত বাক্যের সঠিক ও গ্রহণযোগ্য অর্থ হলো, “তিনি কাপড়ের উপর অঙ্কিত গাছপালা, তরুলতা অর্থাৎ প্রাণহীন বস্তুর ছবিকে পূর্বের হুকুম থেকে পৃথক করে থাকেন।” অর্থাৎ উক্ত হাদীস শরীফের মূল মাফহুম হলো, হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রাণীর ছবি তৈরী করা ও ঘরে রাখাকে নাজায়িয মনে করেন। আর প্রাণহীন বস্তুর ছবি তৈরী করা ও তা ঘরে রাখাকে জায়িয মনে করেন। এখন তা যেখানেই হোকনা কেন। হোক কাপড়ে, হোক কাগজে, হোক পাথরে, হোক দেয়ালে, যেখানেই হোক না কেন প্রাণীর ছবি হলে তা অঙ্কন করা ও রাখা উভয়টাই হারাম ও নাজায়িয। আর প্রাণহীন বস্তু যেমন গাছপালা, তরুলতা, পাহাড়পর্বত ইত্যাদি তা তৈরী করা ও ঘরে রাখা জায়িয। নিম্নোক্ত হাদীস শরীফ দ্বারাও এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। যেমন, ইরশাদ হয়েছে,

عن سعيد قال جاء رجل الى ابن عباس فقال انى رجل اصور هذه الصور فافتنى فيها فقال له ادن منى فدنا منه ثم قال ادن منى فدنا حتى وضع يده على راسه وقال انبئك بما سمعت من رسول الله صلى الله عليه وسلم وسمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول كل مصور فى النار يجعل له بكل صور ةصورها نفسا فتعذبه فى جهنم وقال ان كنت لا بد فاعلا فاصنع الشجر ومالا نفس له.

অর্থঃ- “হযরত সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট এসে বললো, “আমি এমন এক ব্যক্তি যে প্রাণীর ছবি অংকন করি, সুতরাং এ ব্যাপারে আমাকে ফতওয়া দিন।” হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাকে বললেন, “তুমি আমার নিকটবর্তী হও।” সে ব্যক্তি তাঁর নিকটবর্তী হলো। পুনরায় বললেন, “তুমি আরো নিকটবর্তী হও।” সে আরো নিকটবর্তী হলে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার মাথায় হাত রেখে বললেন, “আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ ব্যাপারে যা বলতে শুনেছি তোমাকে তা বলবো। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক প্রাণীর ছবি তৈরীকারীই জাহান্নামে যাবে এবং আল্লাহ্ পাক প্রত্যেকটি ছবিকে প্রাণ দিবেন এবং সেই ছবিগুলো তাদেরকে জাহান্নামে শাস্তি দিতে থাকবে।” ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, “তোমার যদি ছবি আঁকতেই হয়, তবে গাছপালা বা প্রাণহীন বস্তুর ছবি আঁক।” (মুসলিম ২য় জিঃ, ২০২ পৃষ্ঠা)

سعيد ابن ابى الحسن قال كنت عند ابن عباس اذ جاءه رجل فقال يا ابن عباس انى رجل انما معيشتى من صنعة يدى وانى اصنع هذه التصا وير فقال ابن عباس لا احدثك الا ما سمعت من رسول الله صلى الله عليه وسلم سمعته يقول من صور صورة فان الله معذبه حتى ينفخ فيه الروح وليس بنا فخ فيها ابدا فربا الرجل ربوة شديدة واصفر وجهه فقال ويحك ان ابيت الا ان تصنع فعليك بهذا الشجر وكل شىء ليس فيه روح.

অর্থঃ- “হযরত সাঈদ ইবনে আবুল হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট ছিলাম। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি তাঁর নিকট আসল এবং বললো, “হে ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আমি এমন এক ব্যক্তি যে, আমার হাতের কাজের দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করি এবং আমি এরকম প্রাণীর ছবি তৈরী করি। হযরত ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট যা শুনেছি তা কি তোমাকে বলবনা? আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন প্রাণীর ছবি তৈরী করবে, আল্লাহ্ পাক তাকে ঐ ছবির মধ্যে প্রাণ না দেয়া পর্যন্ত শাস্তি দিতে থাকবেন। কিন্তু সে কখনো ওটার মধ্যে প্রাণ দিতে সক্ষম হবে না।” সুতরাং সে ব্যক্তি খুব লজ্জিত হল এবং তার চেহারা হলুদ হয়ে গেল। অতঃপর হযরত ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তোমার যদি ছবি তৈরী করতেই হয়, তবে গাছ-পালা ইত্যাদি অথবা প্রাণহীন বস্তুর ছবি তৈরী করতে পার।” (মিশকাত)

বর্ণিত হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, গাছপালা, তরুলতা ইত্যাদি প্রাণহীন বস্তুর ছবি অঙ্কন করা ও ঘরে রাখা জায়িয। এটাকে কেউ নাজায়িয বলেনি। আর বলার প্রশ্নই উঠেনা।   সুতরাং হাদীস শরীফে বর্ণিত,

الارقما فى ثوب

  এর অর্থ হলো, “কাপড়ে গাছপালা, তরুলতা ইত্যাদি প্রাণহীন বস্তুর ছবি ব্যতীত।”  অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও মুহাদ্দিসীন-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণও হাদীস শরীফে বর্ণিত উক্ত বাক্যের এরূপ অর্থ করেছেন। ইনশাআল্লাহ্ পরবর্তী সংখ্যায় তা উল্লেখ করা হবে। আর তখনই আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে যে, রেযাখানীদের করা উক্ত অর্থ সম্পূর্ণই ভুল ও মনগড়া।      (চলবে)

মাওলানা মুহম্মদ তাহেরুল ইসলাম

ডাংরারহাট, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম।

সুওয়ালঃ মাসিক রাহমানী পয়গাম জুন/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার জবাব বিভাগে টেলিভিশনে সংবাদ দেখা সম্পর্কে নিম্নোক্ত ৯৯০নং জিজ্ঞাসা-জবাব ছাপা হয়। জিজ্ঞাসাঃ টেলিভিশনে সংবাদ দেখা জায়িয আছে কি? বিশেষ করে অনেক সময় মুসলিম নির্যাতনের চিত্র ইত্যাদি দেখানো হয়। তা কি দেখা জায়িয হবে? সংবাদ পাঠক-পাঠিকাকে তখন দেখা জায়িয হবে কি? জবাবঃ টেলিভিশনে বাস্তব চিত্রকে প্রদর্শন করা হয়। যে চিত্র বাস্তবে দেখা জায়িয তা টেলিভিশনেও দেখা জায়িয হবে। …. তাই নির্যাতনের দৃশ্যটুকু দেখার অনুমতি থাকলেও তা না দেখা-ই তাকওয়া। ….    মাসিক মদীনা মার্চ/৯৩ সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়।  প্রশ্নঃ আমরা জানি যে, টেলিভিশনে অনুষ্ঠান দেখলে পাপ হয়। কিন্তু টেলিভিশনে যখন কোরআন ও হাদীসের আলোচনা হয় বা ইসলাম সম্পর্কিত কোন অনুষ্ঠান প্রচার করে, তখন তা দেখলেও কি গুণাহ্ হবে?   উত্তরঃ টেলিভিশন একটি যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। সাধারণভাবে খালি চোখে যা দেখা জায়েজ, টেলিভিশনের পর্দাতেও তা দেখা জায়েজ। আর মাসিক মদীনা মে/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত ৮৩ নং প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়- প্রশ্নঃ টিভি দেখা কি পাপ? নাকি পাপ হওয়ার মত ছবি দেখা পাপ? যদি আমাদের দেশে একটি ইসলামী টিভি সেন্টার থাকতো এবং তা থেকে ইসলামী অনুষ্ঠান সম্প্রচার হত, তা দেখা কি জায়েয হত? উত্তরঃ টিভি দেখার ক্ষেত্রে শরিয়তের হুকুম হচ্ছে, যে দৃশ্য সাধারণ চোখে দেখা পাপ তা টিভির পর্দায় দেখলেও পাপ হবে। তাই টিভি দেখাই পাপ, এটা বলা উচিৎ নয়। কেননা উন্নত ও শক্তিশালী প্রচার মাধ্যমের গুরুত্ব ইসলামে সর্বাধিক। …..  এখন আমার সুওয়াল হলো- টেলিভিশন দেখা সম্পর্কে উক্ত পত্রিকাদ্বয়ের বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি যে চিত্র বাস্তবে দেখা জায়িয তা টেলিভিশনেও দেখা জায়িয? দলীলসহ সঠিক জাওয়াব জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ  টেলিভিশন দেখা সম্পর্কে রাহমানী পয়গাম ও মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি; বরং তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই মিথ্যা, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস তথা শরীয়তের সম্পূর্ণ খিলাফ হওয়ায় কুফরী হয়েছে।   যেমন, রাহমানী পয়গাম ও মদীনা বলেছে, “সাধারণভাবে বা বাস্তবে যা দেখা জায়েয তা টেলিভিশনেও দেখা জায়েয হবে। ….”    এর জবাবে বলতে হয় যে, রাহমানী পয়গাম পত্রিকা কর্তৃপক্ষ এবং মাসিক মদীনার সম্পাদক টেলিভিশনে কিভাবে ছবি আসে সে সম্পর্কে আশাদ্দুদ্ দরজার জাহিল হওয়ার কারণে এ ধরনের জিহালতপূর্ণ বক্তব্য পেশ করেছে। কেননা বাস্তবে দেখা বা সাধারণ চোখে দেখা আর টেলিভিশনে দেখা এক জিনিস নয়। বাস্তবে বা সাধারণ চোখে যা দেখা যায় তা ছবি নয়; কিন্তু টেলিভিশনে যা দেখা হয় তা হচ্ছে ছবি।    সুতরাং টেলিভিশনের মূল বিষয় হলো ছবি। আর ছবি তোলা, আঁকা, রাখা, তৈরী করা, ছাপা, দেখা, দেখানো সবই হারাম ও নাজায়িয। ছবি হারাম ও নাজায়িয এ সম্পর্কে দলীল-আদিল্লাহ্ নিম্নে পেশ করা হলো-   যেমন, হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

ان اشد الناس عذابا عند الله المصورون.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ্ পাক কঠিন শাস্তি দিবেন যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ)       হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

كل مصور فى النار.

অর্থঃ- “প্রত্যেক প্রাণীর ছবি তৈরীকারীই জাহান্নামে যাবে।” (ফতহুল বারী)

উপরোক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় হাদীস শরীফের শরাহ্ ও ফিক্বাহ্র কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে।   যেমন, “ইরশাদুত তালিবীন” কিতাবের ২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

رسول كريم صلى الله عليه وسلم على رضى الله عنه را فرستاد كه هر جا كه تصوير بينند او را محو كنند.

 অর্থঃ- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে (এই বলে) পাঠালেন যে, যেখানেই প্রাণীর ছবি দেখতে পাবে ওটা ধ্বংস করে ফেলবে।” অনুরূপ ‘ইখতিলাফে উম্মত আওর সিরাতে মুস্তাক্বীম’ কিতাবের ৬৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।

“আক্সি আশরাফী বেহেশ্তি জিওর” কিতাবের ৬ষ্ঠ খন্ডের ৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ان حدیثوں سے نصویر بنانا تحویر رکھذا سب کا حرام ھو نا معلوم ھوتا ھے.

অর্থঃ- “পূর্বে বর্ণিত হাদীস শরীফসমূহ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, প্রাণীর ছবি তৈরী করা এবং এটা ঘরে রাখা সব হারাম।”     “ফিকহুস সুন্নাহ” কিতাবের ৩য় খন্ডের, ৪৯৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

جاءت الاحاديث الصحيحة الصريحت بالنهى عن صناعة التماثيل وعن تصوير ما فيه روح  سواء أ كان انسانا ام حيوانا ام طيرا.

অর্থঃ- “ছহীহ্ হাদীস শরীফসমূহে প্রাণীর ছবি বা মূর্তি তৈরী করা সম্বন্ধে প্রকাশ্যেই নিষেধ করা হয়েছে। এটা মানুষের হোক বা জানোয়ারের হোক বা পাখির হোক সমান কথা অর্থাৎ হারাম।”    “শরহে নববী” কিতাবে উল্লেখ আছে,

وهذه الاحايث صريحة فى تحريم تصوير الحيوان وانه غليظة التحريم ايضا فيه وما من لم يقصد بها العبادة ولمضا هاة فهو فاسق صاحب ذنب كبير.

অর্থঃ- “উক্ত হাদীস সমূহে প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা মূর্তি নির্মাণ করা হারাম হওয়া সম্বন্ধে প্রকাশ্যেই বলা হয়েছে। এটা তৈরী বা নির্মাণ করা জঘন্যতম পাপের কাজ এবং হারামও বটে। উক্ত কিতাবে আরও বর্ণিত আছে, যদি কেউ মূর্তি বা প্রাণীর ছবি পূজা বা সৃষ্টির অনুকরণের জন্য নাও বানিয়ে থাকে তবুও সে ফাসিক হবে এবং কবীরা গুণায় গুণাহ্গার হবে।” অনুরূপ ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়াহ কিতাবে উল্লেখ আছে।           “শরহে মিরকাত” কিতাবে উল্লেখ আছে,

قال اصحابنا وغيرهم من العلماء تصوير صورة للحيوان حرام شديد التحريم – وهو من الكبائر لانه متوعد عليه بهذا الو عيد الشديد المذكور فى الاحاديث سواء صنعه فى ثوب اوبساط اودينار اودرهم.

 অর্থঃ- “আমাদের মাশায়িখগণ ও উলামাগণ বলেছেন যে, প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম, এমনকি শক্ত হারাম। এটা কবীরা গুণাহ্। কেননা এরূপ কাজের জন্য বিশেষ ভীতিপ্রদ অবস্থা হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। ওটা কাপড়ে, বিছানায়, মোহরে কি টাকা-পয়সায় কিংবা যে কোনও স্থানে আঁকা থাকুকনা কেন তা সমান কথা।” অনুরূপ ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়াহ, নাইলুল আওতার কিতাবে উল্লেখ আছে।          “হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ” কিতাবের ২য় খন্ডের ১৩০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

الصور يحرم صنعها ويحرم استعمال الثوب

অর্থঃ- “প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম এবং (প্রাণীর ছবি) কাপড়ে ব্যবহার করাও হারাম।”

“মাশারিফুল আন্ওয়ার” কিতাবের ৪৪৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

جاذدار کی صورت بنانا حرام ہے اور هر ایک تصویر بنانے والا دوزخمیں جائیگا.

অর্থঃ- “প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম। এবং প্রত্যেক প্রাণীর ছবি তৈরীকারীই জাহান্নামে যাবে।”

  “ফতওয়ায়ে নঈমিয়াহ্” কিতাবের ১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

جاذدار کی تصویر شرعا حرام ھے- الاجماع  علی تحریم التصویر الحیوان. فصنعہ حرام بکل حال.

অর্থঃ- “প্রাণীর ছবি তৈরী করা শরীয়তে হারাম। (কেননা) প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার ব্যাপারে সকলেই একমত, সুতরাং এটা তৈরী করা সর্বাবস্থায় হারাম।”

“ফতওয়ায়ে নঈমিয়াহ্” কিতাবের ৪৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

جاندار کی تصویر کھینجنا یا کھچوانا مطلقا ناجائز اور حرام ھے. خواہ قلم سے کھینچی جائے یا فوتو سے لی جائے سب کا ایک حکم ھے. اور احادیث وعبارات فقیہ سے معلوم ھوا کھ جاندار کی تصویر بنانا مطلقا نا جائزھے.

অর্থঃ- “প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা করানো সাধারণতঃ হারাম। কলম দ্বারা হোক অথবা ক্যামেরার মাধ্যমে অর্থাৎ যে পদ্ধতিতেই হোক না কেন সকলের একই হুকুম অর্থাৎ হারাম। (কেননা) ছহীহ্ হাদীস শরীফ সমূহ এবং ফিক্বহি ইবারত সমূহের দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, প্রাণীর ছবি তৈরী করা নাজায়িয ও হারাম।”

“ফতওয়ায়ে রহীমিয়াহ” কিতাবের ২য় খন্ডের ২২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

جاذدار کی تصویر کسی حالت میں بھی رکھ نھیں سکتے کہ جاندار کی تصویر شرعا حرام ھے پھر چاھے وہ براق کی ھویا پیر پیغمبر کی ھو.

অর্থঃ- “প্রাণীর ছবি কোন অবস্থায়ই ঘরে রাখা জায়িয নেই। কেননা প্রাণীর ছবি (তৈরী করা, রাখা শরীয়তে হারাম। চাই এটা বোরাকের হোক আর পীর-পয়গম্বরগণের হোক।”

“কিফায়াতুল মুফ্তী” কিতাবের ৯ম খন্ডের, ২২২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

واما فعل التموير قهو غير جائز مطلقا لان فين مضاهاة لخلق الله تعالى وسواء كان فى ثوب او بساط اودر هم او اناء اوحائط وغيرها.

অর্থঃ- “প্রাণীর ছবি তৈরী করা নাজায়িয-হারাম। কেননা এটাতে আল্লাহ্ পাক-এর সৃষ্টির অনুকরণ করা হয়। প্রাণীর ছবি বস্ত্রে, বিছানায়, মুদ্রায়, পাত্রে এবং প্রাচীর গাত্রে কিংবা অন্য কোন স্থানে থাকা একই কথা অর্থাৎ হারাম।”

  “ইমদাদুল ফতওয়া” ২য় খন্ডের, ১৫১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

تصویرجسکو اس زمانہ میں مرقع کھتے ھین احادیث صحیحہ کی روسے اسکا بنانا رکھنا سب حرام ھے. اور اسکا ازانہ اور محوکرنا واجب ھے

অর্থঃ- “বর্তমান আধুনিক যুগে যাকে ছবি বলা হয়, ছহীহ্ হাদীস শরীফ সমূহের আলোকে ওটা আঁকা বা তৈরী করা এবং ঘরে রাখা সম্পূর্ণ হারাম। (প্রাণীর ছবি) ওটা নিশ্চিহ্ন করে ফেলা ওয়াজিব।”    “ফতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ” কিতাবের ১ম খন্ডের, ৭৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

تصویر کھینچنا اور کھنچو انا جدید طریق قوٹو کرافی سے ایساھی حرام ھے جیسا کہ دستی تصویر کہینچنا اور کھنچو انا ممنوع اور حرام ھے اور رکھنا اسکا ایسا ھی حرام ھے جیسا کہ دستی تصویر کا رکھنا. ایسے فعل کا فاسق ھے اور امام بنانا اسکا حرام ھے اور نماز اسکے پیچھے مکروہ تحریمی ھے.

অর্থঃ- “আধুনিক যে কোন পদ্ধতিতে প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা তৈরী করানো, হাতে তৈরী করা বা তৈরী করানোর মতোই হারাম ও নাজায়িয এবং প্রাণীর ছবি রাখাও তদ্রুপ হারাম। উক্ত আমলকারী ব্যক্তি ফাসিক এবং তাকে ইমাম নিযুক্ত করা হারাম এবং তার পিছনে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী।”

“তুহ্ফায়ে খাওয়াতীন” কিতাবের ৯১২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

بعض لوگ سمجھتے ھیں کہ حدیث میں جس تصویر کشی کی ممانعت ھے وہ ھا تھو سے تصویر بنا نے کے متعلق ھے اور کیمر. سے جو تصویر اتاری جاتی ھے وہ چونکہ هاتہ سے نھیں بنای جأتی اسلئے وہ جائز ھے یہ خیال غلط اور فا سد ھے. اصل مقصد تصویر بنانے کی حرمت ھے خوام کسی بھی الہ صے بنایء جائے.

অর্থঃ- “কিছু লোকের ধারণা, হাদীস শরীফে হাত দ্বারা প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম করা হয়েছে, ক্যামেরার দ্বারা নয়। এটা তাদের ভুল এবং ভ্রান্ত ধারণা। মূলতঃ হাদীস শরীফ দ্বারা প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার মূল উদ্দেশ্য- এটা যে পদ্ধতিতেই তৈরী করা হোক না কেন।”

“জাদীদ মাসায়েল কে শরয়ী আহ্কাম” কিতাবের ৪৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

جیسے قلم سے تصویو کھینچنا نا جائز ھے ایسے ھی فوٹو سے تصویر بنانا پر یس پر چھاپنا یا سانچہ اور مشیں وغیرہ مین دھا لنا بھی ناجا ئز ھے.

অর্থঃ- “কলম দ্বারা যেরূপ প্রাণীর ছবি তৈরী করা নাজায়িয (ও হারাম) তদ্রুপ ক্যামেরা, প্রেস, ছাঁচ, মেশিন ইত্যাদির দ্বারাও প্রাণীর ছবি তৈরী করা নাজায়িয ও হারাম।”       “ক্বিফায়াতুল মুফতী” কিতাবের ৯ম খন্ডের, ২২৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

جاندار کی تصویر بنانا اور بنوانا ناجائز اور حرام ھے ثو اہ دستی ھو یا عسی دونوں تصویریں ھیں اور تصویر کا حکم رکھتی ھیں.

অর্থঃ- “প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা তৈরী করানো নাজায়িয ও হারাম। চাই হাতে হোক অথবা ক্যামেরায় হোক উভয়ের একই হুকুম অর্থাৎ উভয়ই ছবি।”   সুতরাং ক্যামেরা, ভিডিও বা হাতে যেকোন পদ্ধতিতেই হোক না কেন, প্রাণীর ছবি তোলা, আঁকা, তৈরী করা, রাখা, ছাপা, দেখা, দেখানো ইত্যাদি যেমন হারাম ও নাজায়িয তেমনি তা কঠিন আযাবের কারণ অর্থাৎ শাস্তির কারণ।

অথচ এ স্পষ্ট হারাম ও নাজায়িযকে বাস্তবে দেখার সাথে তুলনা করে, মুসলিম নির্যাতনের নাম দিয়ে বা ইসলামী অনুষ্ঠানের নাম দিয়ে প্রাণীর ছবিযুক্ত টেলিভিশন দেখা জায়িয বলা সুস্পষ্ট কুফরী।

হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে,

الحلال بين والحرام بين.

অর্থঃ- “হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট।” (বুখারী, মুসলিম)

  অর্থাৎ দ্বীন ইসলামে কোন্টি হালাল এবং কোন্টি হারাম, তা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে। অতঃপর যদি কেউ কোন হারামকে হালাল এবং কোন হালালকে হারাম করার অপচেষ্টা চালায়, তবে তা হবে সম্পূর্ণ কুফরী এবং সে কাফির হয়ে যাবে।

কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

فيحلوا ما حرم الله زين لهم سوء اعمالهم والله لايهد القوم الكافرين.

অর্থঃ- “অতঃপর আল্লাহ্ পাক যা হারাম করেছেন, তারা তা হালাল করে। মূলতঃ তাদের জন্য মন্দ বা নিকৃষ্ট আমলই শোভন করে দেয়া হয়েছে এবং আল্লাহ্ পাক কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেন না।” (সূরা তওবা/৩৭)

অতএব, কুরআন-সুন্নাহ্র উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দ্বারাই মাসিক রাহমানী পয়গাম ও মাসিক মদীনার প্রদত্ত বক্তব্য অশুদ্ধ, হারাম, নাজায়িয ও কুফরী প্রমাণিত হলো। তাছাড়া বাস্তবে বা সাধারণ চোখে যেমন এক পুরুষ অপর পুরুষকে, এক মহিলা অপর মহিলাকে দেখা জায়িয; টেলিভিশনে ছবির কারণে তা দেখা কখনোই জায়িয হবেনা; বরং সম্পূর্ণরূপে হারাম হবে। এছাড়া টেলিভিশনে পুরুষ যেমন বেগানা মেয়েলোককে দেখে থাকে, তদ্রুপ মেয়েরাও বেগানা পুরুষকে দেখে থাকে। তাও শরীয়তে সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয।

হাদীস শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

لعن الله الناظر والمنظور اليه.

অর্থঃ- “যে দেখে এবং যে দেখায়, উভয়ের প্রতি আল্লাহ্ পাক-এর লা’নত।” (বাইহাক্বী, মিশকাত)

কাজেই কোন অবস্থাতেই টেলিভিশনে প্রাণীর ছবি সংক্রান্ত অনুষ্ঠান দেখা, শোনা ও উপভোগ করা কস্মিনকালেও জায়িয হবেনা। ছূরতান তা যতই নির্মল, নিষ্কলুষ ও শিক্ষণীয় হোক বা তাতে ছূরতান যতই উপকারিতা দেখা যাকনা কেন?

যেমন আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেছেন,

يسئلونك عن الخمر والميسر قل فيهما اثم كبير ومنافع للناس واثمهما اكبر من نفعهما.

অর্থঃ- “(হে হাবীব!) আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। আপনি বলে দিন, মদ ও জুয়ার মধ্যে মানুষের জন্য ফায়দা রয়েছে। তবে ফায়দার চেয়ে গুণাহ্ই বড়।” (সূরা বাক্বারা/২১৯)

সুতরাং মদ ও জুয়ার মধ্যে উপকারিতা থাকা সত্বেও তা যেমন গ্রহণীয় নয়, বরং শরীয়তে হারাম। তদ্রুপ প্রাণীর ছবির মাধ্যমে প্রচারিত অনুষ্ঠানে শিক্ষণীয় বিষয় বা উপকারিতা থাকা সত্বেও তা গ্রহণীয় নয়। যেহেতু শরীয়তে প্রাণীর ছবি তোলা, আঁকা, রাখা, দেখা দেখানো সবই হারাম। তাই টেলিভিশনে কোন অনুষ্ঠান করা বা দেখা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয।   কাজেই মাসিক রাহমানী পয়গাম কর্তৃপক্ষ এবং মাসিক মদীনার সম্পাদক কুফরী ফতওয়া দিয়ে কুফরী করেছে।  দ্বিতীয়তঃ মাসিক রাহমানী পয়গামে বলা হয়েছে, “… তাই নির্যাতনের দৃশ্যটুকু দেখার অনুমতি থাকলেও তা না দেখা-ই তাকওয়া। …    এর জবাবে বলতে হয় যে, তাদের এ বক্তব্যও বক ধার্মীকের ন্যায় জিহালতপূর্ণ হয়েছে। কারণ টেলিভিশনের পর্দায় মুসলিম নির্যাতনের যে দৃশ্যটুকু দেখানো হয় তার মূলেই হচ্ছে ছবি। আর ছবি মাত্রই হারাম ও নাজায়িয। তাহলে টেলিভিশনের পর্দায় ছবিযুক্ত নির্যাতনের দৃশ্যটুকু দেখার অনুমতি কি করে থাকতে পারে? বরং টেলিভিশনের পর্দায় ছবি সংক্রান্ত নির্যাতনসহ সকল প্রকারের দৃশ্যই দেখার কোন অনুমতিই নেই। তৃতীয়তঃ মাসিক মদীনা বলেছে,  “… টিভি দেখার ক্ষেত্রে শরিয়তের হুকুম হচ্ছে, যে দৃশ্য সাধারণ চোখে দেখা পাপ তা টিভির পর্দায় দেখলেও পাপ হবে। তাই টিভি দেখাই পাপ, এটা বলা উচিৎ নয়।  ….”     এর জবাবে বলতে হয় যে, “টিভি দেখাই পাপ এটা বলা উচিত নয়” এ বক্তব্যটি সম্পূর্ণ কুফরী হয়েছে। কারণ মদীনা সম্পাদক হারামকে হালাল বলেছে। কাজেই মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীনের নিজস্ব বানানো শরীয়তে জায়িয হলেও ইসলামী শরীয়তে এ বক্তব্য জায়িয নেই। কারণ টিভির মূলই হচ্ছে ছবি। আর ইসলামী শরীয়তে ছবি সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয। যা আমরা উপরে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

 অতএব, প্রমাণিত হলো টিভি দেখা শুধু পাপই নয় বরং মহাপাপ।   চতুর্থতঃ মাসিক মদীনা বলেছে, “… কেননা উন্নত ও শক্তিশালী প্রচার মাধ্যমের গুরুত্ব ইসলামে সর্বাধিক। …..”  এর জবাবে বলতে হয় যে, হ্যাঁ- উন্নত ও শক্তিশালী প্রচার মাধ্যমের গুরুত্ব ইসলামে সর্বাধিক। তবে শর্ত হচ্ছে তা শরীয়তে জায়িয হওয়ার সাথে। যেহেতু টিভির মূলেই হচ্ছে ছবি। যা দেখা এবং দেখানো ইসলামী শরীয়তে সম্পূর্ণরূপেই হারাম ও নাজায়িয। কাজেই প্রচার মাধ্যম হিসেবে টিভি যতই উন্নত ও শক্তিশালী হোক না কেন এবং টিভির দ্বারা প্রকাশ্যে দেশ ও জাতির যত বড় কল্যাণই সাধিত হোক না কেন, ছবি সংক্রান্ত টিভির গুরুত্ব ইসলামী শরীয়তে মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।  কারণ হাক্বীক্বীভাবে ছবিযুক্ত টিভির মাধ্যমে মানুষের ঈমান, আমল-আখলাক সমস্ত কিছুই বরবাদ হয়েছে, হচ্ছে ও হবে।     কারণ ছবি হারাম। আর হারাম থেকে হারামই বের হয়।  যেমন আল্লাহ্ পাক বলেন,

والذى خبث لايخرج الا نكدا.

অর্থঃ- “যা নাপাক তা থেকে নাপাক ব্যতীত কিছু বের হয় না।” (সূরা আ’রাফ/৫৮)  সুতরাং টেলিভিশনের মধ্যে যদিও কোন প্রকার শিক্ষণীয় বিষয় প্রচার হয় অথবা ইসলামী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়, যেহেতু তার মূলই হলো- ছবি, যা স্পষ্টত হারাম ও নাজায়িয। এছাড়াও বর্তমানে টেলিভিশনের অন্যান্য অশ্লীলতার কারণেও এগুলো হারামের পর্যায়ে পড়ে। যেমন     আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

ولا نلبس الحق بالباطل.

অর্থঃ- “সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না।” (সূরা বাক্বারা/৪২) সুতরাং টেলিভিশন দেখা হারাম ও কবীরা গুণাহ্। যারা টেলিভিশন দেখবে তারা কবীরা গুণাহ্ েগুণাহ্গার হয়ে ফাসিকের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর ফাসিকের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী; যা দোহ্রানো ওয়াজিব। কাজেই যারা টেলিভিশন দেখবে তাদের পিছনে নামায পড়া উচিত নয়।

অতএব, মাসিক রাহমানী পয়গাম কর্তৃপক্ষ এবং মাসিক মদীনার সম্পাদকের উচিত এ ধরণের কুফরী ফতওয়া প্রদান হতে খালিছ তওবা করা এবং সে ফতওয়ার সংশোধনী দেয়া। নচেৎ তাদের এ ধরণের কুফরী ফতওয়ার জন্য তাদের নিজেদের এবং উক্ত ফতওয়া আমলকারী সকলের জন্যই জাহান্নামের পথ প্রশস্ত হবে।    (বিঃ দ্রঃ- ছবি, সিনেমা, টেলিভিশন, ভি.সি.আর, ভিডিও ক্যামেরা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম সংখ্যাগুলো পড়ৃন। যাতে তিন শতাধিক দলীল-আদিল্লার মাধ্যমে ছবি সংক্রান্ত বিষয়াদি হারাম ও নাজায়িয প্রমাণ করা হয়েছে।) আর বিশেষ করে ১৩, ২৫, ৩৮, ৬১, ৮৭, ৮৯তম সংখ্যাগুলো পড়ুন। সেখানে মাসিক মদীনা, মাসিক পৃথিবী, মাসিক দ্বীন দুনিয়া, মাসিক আত্-তাওহীদ এবং মাসিক তরজুমানের টেলিভিশন দেখা সম্পর্কিত ভুল বক্তব্য খন্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে।

মুহম্মদ আলাউদ্দীন আল আযাদ মতলব, চাঁদপুর

সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলাম জুন-২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে দাড়ি-চুলে কালো খেযাব ব্যবহার করা সম্পর্কে নিম্নোক্ত জিজ্ঞাসা-সমাধান ছাপা হয়। জিজ্ঞাসাঃ দাড়ি-চুলে কালো খেজাব ব্যবহার করা জায়েয আছে কি? সমাধানঃ সশস্ত্র জিহাদে অংশগ্রহণকারী মুজাহিদ এবং দু’য়েকটি বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া অন্য কারো জন্য কালো খেজাব ব্যবহার করা নাজায়েয।

এখন আমার সুওয়াল হলো- সত্যিই যদি মুজাহিদের জন্য কালো খেযাব ব্যবহার করা জায়িয হয়, তাহলে বাজারে প্রচলিত কালো খেযাবও কি মুজাহিদের জন্য ব্যবহার করা জায়িয হবে? সঠিক জাওয়াব জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ  না, কালো খেযাব যা বাজারে প্রচলিত তা মুজাহিদের জন্যও ব্যবহার করা জায়িয হবেনা।  কারণ,  বাজারে প্রচলিত কালো খেযাব ব্যবহার করলে মাথার চুলে ও দাড়িতে নখপালিশের ন্যায় একটি আবরণ বা প্রলেপ পড়ে, যার ফলে মাথার চুলে ও দাড়িতে পানি পৌঁছেনা এবং এ কারণে তার ওযু ও ফরয গোসল হবে না। আর ওযু ও ফরয গোসল না হলে তার নামাযও শুদ্ধ হবেনা।       কারণ নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য পূর্বশর্ত হলো, শরীর পাক হওয়া। আর শরীর পাক করতে হলে ফরয গোসলে সমস্ত শরীর ধৌত করতে হবে এমনকি মাথার চুলে ও দাড়িতে পানি পৌঁছাতে হবে যেন একটি চুলও শুকনা না থাকে। শরীর পাক থাকলে নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য ওযু করা ফরয। আর ওযুতে মাথার চুল মাসেহ করা ফরয এবং দাড়িতে পানি প্রবাহিত করাও ফরয।  যেমন ফতওয়ায়ে আলমগীরী কিতাবের ১ম খন্ডের ৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 والخضاب اذا تجسد ويبس يمبس يمنع نمام الوضو والغسل.

অর্থঃ- “খেযাব যখন শরীরে (চুলে, দাড়ি ইত্যাদিতে) জমে বা লেগে যাবে এবং শুকিয়ে যাবে তখন ওযূ ও গোসল শুদ্ধ হবেনা।” শুধু তাই নয়, এমনকি বাজারে প্রচলিত কালো খেযাব ব্যবহারকারী ব্যক্তি মারা গেলে তার জানাযা নামাযও শুদ্ধ হবেনা। কারণ তাকে গোসল দেয়ার সময় তার দাড়িতে ও চুলে পানি না পৌঁছানোর কারণে সে পবিত্র হবেনা। সুতরাং তাকে পবিত্র করতে হলে তার দাড়ি ও চুল মুন্ডন করে গোসল করাতে হবে। এরপর তার জানাযা দিতে হবে। অন্যথায় সে কস্মিনকালেও পবিত্র হবেনা এবং তার জানাযা নামায পড়ানোও জায়িয হবেনা।     উল্লেখ্য, হাটহাজারীর অখ্যাত পত্রিকায় বলা হয়েছে, “সশস্ত্র জিহাদে অংশগ্রহণকারী মুজাহিদ এবং দু’য়েকটি বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া……।”

এর জবাবে বলতে হয়, হাটহাজারীর অখ্যাত পত্রিকার এ বক্তব্য ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে। কারণ,  তারা দু’একটি বিশেষ ক্ষেত্রে জায়িয বলে, কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে জায়িয তা স্পষ্ট করে বলেনি। যার ফলে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়ে তাদের ঈমান ও আমল নষ্ট করবে। শরীয়তের ফায়সালা হলো, “একমাত্র মুজাহিদের জন্য কালো খেযাব ব্যবহার জায়িয; তবে তাও শর্ত সাপেক্ষে। আর বাজারে প্রচলিত কালো খেযাব ব্যবহার করা মুজাহিদের জন্যও হারাম ও নাজায়িয।” যা উপরে আলোচনা করা হয়েছে।   সুতরাং হাটহাজারীর জাহিল মৌলভীরা যে বলেছে “দু’য়েকটি বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া …..” তাদের এ বক্তব্যও ভুল বলেই প্রমাণিত হলো।  স্মর্তব্য, কালো খেযাব দু’ধরণের হয়ে থাকে। প্রথমতঃ যেটা ব্যবহার করলে আবরণ বা প্রলেপ পড়েনা কিন্তু কালো হয়। আর এ ধরণের কালো রংয়ের খেযাব ব্যবহার করাও শরীয়তে মাকরূহ্ তাহরীমী বলা হয়েছে।    যেমন, হাদীস শরীফের কিতাব “আবু দাউদ” ও “নাসাঈ শরীফে” উল্লেখ আছে,

قال رسول الله صلى اله عليه وسلم يكون فى اخر الز مان قوم يخضبون بالسواد كحوا صل الحمام لايجدون رائحة الجنة. قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من خضب بالسواد سود الله وجهه يوم القيامة.

অর্থঃ-“সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আখিরী যামানায় এমন কিছু লোক বের হবে যারা কবুতরের পালকের ন্যায় কালো খেযাব ব্যবহার করবে, তারা জান্নাতের ঘ্রাণও পাবেনা।”  হাদীস শরীফের কিতাব “তিবরানী শরীফে” ইরশাদ হয়েছে,

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من خضب بالسواد سود الله وجهه يوم القيامة.

অর্থঃ- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি কালো খেযাব ব্যবহার করবে, আল্লাহ্ পাক ক্বিয়ামতের দিন তার চেহারাকে কালো করে দিবেন।”    “মুসলিম শরীফের” ২য় খন্ডের ১৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ويحرم خضابه بالسواد على الاصح وقيل يكره كر اهة تنزيه والمختار التحريم لقوله صلى الله عليه وسلم واجتنبوا السواد.

অর্থঃ- “অধিক ছহীহ্ বা বিশুদ্ধ মতে কালো খেযাব ব্যবহার করা হারাম। কেউ কেউ বলেছেন, মাকরূহ তানযীহ। তবে গ্রহণযোগ্য মত হলো, কালো খেযাব ব্যবহার করা মাকরূহ্ তাহরীমী। কারণ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কালো রং (খেযাব) বর্জন করো।”    কালো খেযাব সম্পর্কে বিখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি “শরহে শামায়েলে তিরমিযীতে” উল্লেখ করেন,

ذهب اكثر العلماء الى كراهة الخضاب بالسواد ورجح الثورى الى انها كراهة تحريم.

অর্থঃ- “অধিকাংশ আলিমগণের মতে কালো খেযাব ব্যবহার করা মাকরূহ। ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে মাকরূহ্ তাহ্রীমী।”       মিশকাত শরীফের শরাহ্ “আশয়াতুল লুময়াতে” উল্লেখ আছে,

خضاب بحناء باتفاق جائزاست ومختار در سواد حرمت است.

অর্থঃ- “মেহেদী বা মেন্দী দ্বারা খেযাব দেয়া সর্বসম্মতিক্রমে জায়িয। আর গ্রহণযোগ্য মতে, কালো খেযাব ব্যবহার করা হারাম। উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, চুল বা দাড়িতে কালো রংয়ের খেযাব ব্যবহার করা আমাদের হানাফী মায্হাব মুতাবিক মাকরূহ্ তাহ্রীমী। মুজাহিদের কালো খেযাব ব্যবহারের শর্ত তবে প্রলেপ পড়েনা এধরণের কালো খেযাব যুদ্ধক্ষেত্রে একমাত্র মুজাহিদের  জন্য ব্যবহার করা জায়িয হলেও এক্ষেত্রে কিছু শর্ত-শারায়েত রয়েছে। যেমন, যুদ্ধক্ষেত্রে পাকা চুল ও দাড়ি ওয়ালা মুজাহিদ এ শর্তে কালো খেযাব ব্যবহার করবে যে, শত্রুপক্ষ যেন মুজাহিদের কালো চুল ও দাড়ি দেখে ভয় পায়। অর্থাৎ শত্রুকে ভীতি প্রদর্শন করার উদ্দেশ্যেই যুদ্ধক্ষেত্রে মুজাহিদরা কালো খেযাব ব্যবহার করবে। এ উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য যে কোন উদ্দেশ্যে কালো খেযাব ব্যবহার করা মাকরূহ তাহরীমী।     অথচ হাটহাজারীর জাহিল মৌলভীরা কোন শর্ত-শারায়েতই উল্লেখ করেনি।

  দ্বিতীয়তঃ আমাদের দেশে বা বিদেশে যে সমস্ত খেযাব পাওয়া যায় তার প্রত্যেকটি ব্যবহারেই প্রলেপ পড়ে। প্রলেপ পড়েনা এমন কোন খেযাব এখন পর্যন্ত তৈরী হয়নি বা বিশ্বে কোথাও পাওয়া যায়না।

অতএব, বর্তমানে বাজারে যে সব কালো বা অন্য কোন রংয়ের খেযাব পাওয়া যায় তা ব্যবহার করা সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয।    আরো উল্লেখ্য যে, যুদ্ধক্ষেত্রে একমাত্র মুজাহিদের জন্য যে কালো খেযাব ব্যবহার করা জায়িয সেটা হচ্ছে, কাতম মিশ্রিত মেহেদী বা মেন্দীর খেযাব; যাতে কাতমের  পরিমাণ বেশী  হবে, ফলে তা কালো রং  ধারণ করবে; কিন্তু প্রলেপ পড়বে না। আর এ ধরণের কালো খেযাব  বাজারে প্রচলিত নেই। কেননা, বর্তমান বাজারে যে সমস্ত কালো খেযাব পাওয়া যায়, তার সাথে কাতম মিশ্রিত মেহেদী বা মেন্দীর খেযাবের কোন সম্পর্ক নেই। সুতরাং বাজারে প্রচলিত কালো খেযাবও মুজাহিদের জন্য ব্যবহার করা হারাম ও নাজায়িয।  উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই সাব্যস্ত হলো যে, যুদ্ধক্ষেত্রেও মুজাহিদরা বাজারে প্রচলিত কালো খেযাব ব্যবহার করতে পারবেনা। যা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাহলে দু’একটি বিশেষ ক্ষেত্রে কিভাবে কালো খেযাব ব্যবহার করা যেতে পারে? যা সম্পুর্ণ হারাম ও নাজায়িয। সুতরাং হাটহাজারীর অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে বলেই প্রমাণিত হল।   {বিঃ দ্রঃ- এ সম্পর্কে আরো জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১৯, ৩২, ৪২, ৬০, ৬৬, ৬৭, ৭৫, ও ৯৫তম সংখ্যাগুলো পড়ৃন। সেখানে মাসিক মদীনা, মাসিক পৃথিবী ও মাসিক রাহমানী পয়গামের ভুল বক্তব্য খন্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে।} {দলীলসমূহ ঃ (১) মুসলিম, (২) তিরমিযী, (৩) আবু দাউদ, (৪) নাসাঈ, (৫) ইবনে মাজাহ্, (৬) তিবরানী, (৭) মিশকাত, (৮) উমদাতুল ক্বারী, (৯) জামউল ওসায়িল, (১০) মিরকাত, (১১) আশয়াতুল লুময়াত, (১২) লুময়াত, (১৩) শরহে শামায়িলে তিরমিযী, (১৪) যখীরা, (১৫) ওয়াজীয, (১৬) সিরাজুল ওয়াহ্হাজ, (১৭) দুররুল মুখতার, (১৮) ফতওয়ায়ে আলমগীরী, (১৯) ফতওয়ায়ে শামী, (২০) ফতওয়ায়ে হিন্দীয়া, (২১) ইমদাদুল ফতওয়া, (২২) কিফায়াতুল মুফতী, (২৩) Manufacture of Beauty Products, By SBP Board of Consultants & Engineers, (২৪) Yahoo search engine P-Phenylenediamine all related files. ইত্যাদি}  মুহম্মদ মুহিউদ্দীন খান সহঃ সভাপতি- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত  চান্দিনা, কুমিল্লা  সুওয়ালঃ  ফুটবল খেলা জায়িয হওয়ার পিছনে শরীয়তের দলীল আছে কিনা? যদি না থাকে তাহলে যে সমস্ত ইমাম, খতীব, মুফতী, মুহাদ্দিস ফুটবল খেলাকে জায়িয বলেছে এবং রেডিওতে রিলে শুনেছে এবং টেলিভিশনে সরাসরি দেখেছে, অন্যান্যদেরকেও দেখার জন্য উৎসাহিত করেছে তাদের উপর শরীয়তের হুকুম কি? জাওয়াবঃ  না, ফুটবল খেলা জায়িয সাব্যস্ত করার জন্য শরীয়তে কোন দলীল নেই। শরীয়তের দলীল হচ্ছে কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াস। এ চারটি দলীলের কোথাও উল্লেখ নেই যে, ফুটবল খেলা জায়িয বরং জায়িযের বিপরীতে নাজায়িয ও হারাম বলে উল্লেখ রয়েছে। শুধু তাই নয়, ফুটবলের ইতিহাস এবং এ খেলা কে, কখন ও কোথায় প্রচলন করেছে তা জানলেই সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, ইমাম, খতীব, মুফতী, মুহাদ্দিস তো দূরের কথা কোন মু’মিন মুসলমানের জন্যই এ খেলা জায়িয নয়। ফুটবলের আদি ইতিহাস   ফুটবল খেলার আদি নাম সু-চু (Tsu Chu)। আজ হতে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে চীনে এ খেলার প্রচলন ছিলো। ‘সু’ অর্থ বলকে পা দিয়ে লাথি মারা এবং ‘চু’ অর্থ চামড়া দিয়ে তৈরী বল। জাপানে সপ্তম শতাব্দীর দিকে ফুটবল খেলাটি ক্যাসারি নামে পরিচিত ছিলো। মাত্র চৌদ্দ বর্গমিটার জায়গা জুড়ে ৮ জন খেলোয়াড় হুড়োহুড়ি করে খেলতো এ খেলা। ম্যাসিডোনিয়ায় আলেক্সান্ডার দ্যা গ্রেট এ খেলার প্রচলন করে এবং রোমানদের মধ্যে এ খেলার প্রচলন করে জুলিয়াস সীজার। গ্রীকরা এর নাম দিয়েছিলো ‘অ্যাপিসকিরোস।’ রোমানরা একে বলতো ‘হ্যারাপাসতুম।’   রাজা উইলিয়াম হেস্টিংস ১০৬৬ সালে ইংল্যান্ডে খেলাটির প্রচলন করে। ইংল্যান্ডে প্রচলিত খেলাটিতে নিয়মকানুনের কোন বালাই ছিলো না। দু’দলে প্রতিটিতে প্রায় ৫০০ জন ব্যক্তির মধ্যে দুপুরে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত খেলা চলত। মাঠের দৈর্ঘ্য হত প্রায় আধা মাইল। এর মধ্যে প্রায়ই রক্তারক্তি ও বীভৎসতার রূপ লাভ করত। বিপদজনক এ গণ ফুটবল খেলার নাম ছিলো মিলিস কিংবা মেলাস। হিংস্র ও উন্মত্ততাপূর্ণ এ খেলা ১৩১৪ সালে প্রথমবারের মত ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় এডওয়ার্ড আইন করে ইংল্যান্ডে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কারণ এমন বিপদজনক খেলায় বহু যুবকের জীবনাবসান ঘটত এবং বহু যুবক আহত ও পঙ্গু হত। ফলে সেনা দলে ভাল যুবকের অভাব পড়বে ভেবে এ খেলা নিষিদ্ধ করা হয়।   ষোড়শ শতাব্দীতে নিয়ম শৃঙ্খলা আর কুশলতার মধ্য দিয়ে ইতালিতে প্রথম ফুটবল খেলা প্রচলিত হয়। ইতালিতে এ খেলার নাম ছিলে ক্যাসালিও। এ সময় এ খেলা পরিচালনা করত ইংল্যান্ডের একজন হেডমাষ্টার রিচার্ড মূল কাষ্টার। যার নির্দেশে বিরোধ নিস্পত্তি ঘটত। তিনি এ খেলার প্রশিক্ষকও বটে। ফুটবলের নতুন যুগ   শিল্প বিপ্লবের জোয়ার শুরু হওয়ার পর ফুটবলের বর্তমান যুগের সূচনা হয়। ইংল্যান্ডের ইটন, হ্যারো ও ইউনচেষ্টার প্রমূখ স্কুল ফুটবলকে একটি আধুনিক খেলা হিসেবে সংগঠিত করে। ১৮৪৮ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বপ্রথম কিছু নিয়ম-কানুন প্রবর্তন করে। এটি কেমব্রিজ রুলস নামে খ্যাত। এ ব্যাপারে ফুটবল ইতিহাসে জে.সি থিঙ্কস-এর নাম স্মরণীয়। তিনি ১৮৬২ সালে ফুটবলের ১০টি মৌলিক আইন প্রবর্তন করেন। ফুটবলের প্রথম   ১৮৫৫ সালে ইংল্যান্ডে শিফিল্ড ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাব ১ম গড়ে উঠে। ১৮৬৩ সালে ‘লেদার বল’ নামে একটি সংগঠন প্রথম ফুটবলের রীতিনীতি প্রণয়ন করে। ১৮৬৩ সালে ডিফ্রিংগ রচিত ফুটবলের উপর প্রথম বই প্রকাশিত হয়।  ১৮৭২ সালে স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের মধ্যে প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে এ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ১৮৭৮ সালে ইংল্যান্ডের শেফিল্ড শহরে ব্রেসলেন ষ্টেডিয়ামে প্রথম ফ্লাড লাইটে ফুটবল খেলা অুনষ্ঠিত হয়। ১৮৭৪ সালে প্রথম রেফারি মাঠের ভিতরে স্থান পান। এর আগে রেফারির জায়গা ছিল মাঠের বাইরে। ষ্ট্যান্ডের উপরে দু’দলের মধ্যে কোন মতবিরোধ দেখা দিলে খেলোয়াড়রা রেফারির কাছে ছুটে যেতেন। রেফারি সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত দিতেন। এতে অসুবিধা হতো তাই পরবর্তীতে রেফারির স্থান মাঠের ভিতরে প্রবর্তিত হয়। মুম্বাইয়ে ১৮২০ সালে অনুষ্ঠিত মিলিটারী বনাম মুম্বাই আইল্যান্ডের মধ্যে খেলাটি উপমহাদেশে প্রথম প্রতিযোগিতামূলক খেলা হিসেবে গণ্য। রীতিনীতির প্রচলন ১৮৬৩ সালে ফুটবলের হ্যান্ডবল আইন চালু হয়। গোলকিক প্রথা চালু হয় ১৮৬৯ সালে। কর্ণার কিক আইন চালু হয় ১৮৭২ সালে। গোলবারে নেট লাগানো হয় ১৮৯১ সালে। পেনাল্টি কিক চালু করেন আয়ারল্যান্ডের ফুটবল বিশেষজ্ঞ জন পেনাল্টি।  ১৯৭৮ সালে ইংল্যান্ডের নাটিং হাম ফরেষ্ট ও ষ্টক সিটির মধ্যকার খেলা রেফারি প্রথম বাঁশি বাজিয়ে পরিচালনা করেন।   ১৯২৬ সালে মধ্য ইউরোপ কাপ টুর্নামেন্ট চেকোশ্লাভাকিয়া বনাম হাঙ্গেরীর এম,টি,কে ফুটবল খেলার ধারা বর্ণনা রেডিওতে প্রথম প্রচার শুরু করে। ১৯৩৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর টিভিতে প্রথম ফুটবল খেলা দেখা যায়। ইউরোপিয়ান কাপ ফুটবল শুরু হয় ১৯৬০ সালে।

 ফিফার জন্ম

          FIFA (ফিফা) Federation International de Football Association. ২১ মে ১৯০৪ সালে FIFA  গঠিত হয়। ফিফার বর্তমান সদস্য দেশ ২০৪টি। ফিফার স্বপ্নদ্রষ্টা দু’জন ফরাসি ব্যক্তিত্ব হেনরি ডেলনে ও জুলেরিমে। ফিফার বর্তমান সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের জুরিখে। বিশ্বকাপ ফুটবল ট্রফিঃ বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্য ২টি ট্রফি নির্মিত হয়; জুলেরিমে ও ফিফা ওয়ার্ল্ডকাপ ট্রফি। বর্তমান বিশ্বকাপ ট্রফির নাম ফিফা ওয়ার্ল্ডকাপ ট্রফি।   জুলেরিমে ট্রফি নাম করণ করা হয় ফিফার স্বপ্নদ্রষ্টা জুলেরিমের নামানুসারে। এর নির্মাণ শৈলী- ভাস্কর্যের প্রতীক- মাথার উপর দু’হাত উচিয়ে বিজয় গৌরবে উল্লসিত বিজয়ের দেবী এক পরী। ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপ থেকে শুরু হয়। ট্রফিটির নির্মাণ শৈলী- খোদাই করা ভাস্কর্যের দু’জন পিঠাপিঠি অ্যাথলেট হাত প্রসারিত করে বিশ্বকে কাঁধের উপর তুলে ধরেছে। বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম ১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হয়। টেলিভিশনে ১৯৫৪ সালে প্রথম বিশ্বকাপ দেখানো হয়।         বিশ্বকাপ ২০০২ আয়োজকদের মোট খরচ ৬২০ কোটি ডলার, টাকার হিসেবে ৩৬,৫৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানের ৪৫০ কোটি ডলার খরচ। ২০০২ বিশ্বকাপে ৬টি মুসলিম দেশ অংশগ্রহণ করেছে। যথা- সৌদি আরব, তুরস্ক, নাইজেরিয়া, ক্যামারুন, সেনেগাল ও তিউনিসিয়া।           ফুটবল খেলার উল্লিখিত সংক্ষিপ্ত ইতিহাস থেকে বুঝা গেল যে, এর উৎপত্তিকারক বা প্রচলনকারী হচ্ছে কাফির-মুশরিক, ইহুদী-নাছারা।       এদের অনুসরণ সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

فاصبر لحكم ربك ولا تطع منهم اثما او كفورا.

অর্থঃ- “আপনার রবের আদেশ ধৈর্য সহকারে পালন করুন এবং তাদের  মধ্যকার কোন গুনাহ্গার  ও কাফিরের আনুগত্য করবেন না।”(সূরা দাহ্/২৪)     তিনি আরো ইরশাদ করেন,

غيز المغضوب عليهم ولا الضالين.

অর্থঃ- “গযবপ্রাপ্ত ও বিভ্রান্ত তথা ইহুদী-নাছারাদের পথ হতে তোমরা আল্লাহ্ পাক-এর নিকট পানাহ্ তলব কর।” (সূরা ফাতিহা/৭)        তিনি আরো ইরশাদ করেন,

يايها الذين امنوا لاتتخذوا اليهود والنصرى اولياء بعضهم اولياء بعض ومن يتولهم منكم فانه منهم.

অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করোনা। তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই দলভুক্ত হবে।” (সূরা মায়িদা/ ৫১)   এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

عن عبد الله بن عمر رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو متهم.

অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (মুসনদে আহমদ, সুনানে আবূ দাউদ)          আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

يوم ندعوا كل اناس بامامهم.

অর্থঃ- “আমি ক্বিয়ামতের দিন প্রত্যেক দলকে তাদের নেতাসহ আহবান করবো।” (সূরা বণী ইসরাঈল/৭১) অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার নেতার নাম নিয়ে ডাকা হবে-এই নেতা নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম ও তাঁদের নায়িব, মাশায়িখ এবং উলামা হোক কিংবা পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবানকারী নেতা ইহুদী-নাছারা, কাফির-মুশরিক, বেদ্বীন-বদ্ দ্বীন হোক।” (কুরতুবী) অর্থাৎ যারা যে ব্যক্তি বা যে সম্প্রদায়ের সাথে আমলে-আখলাকে সীরতে-ছূরতে, অনুসরণে-অনুকরণে মিল বা সাদৃশ্য রাখবে তার হাশর-নশর সে ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের সাথেই হবে এর বিন্দুমাত্র ব্যতিক্রম ঘটবে না। কাজেই কাফির-মুশরিক, ইহুদী-নাছারাদের দ্বারা প্রবর্তিত ও প্রচলিত আমল-আখলাক গ্রহণ করা বা অনুসরণ-অনুকরণ করা মুসলমানদের জন্য জায়িয নেই, সম্পূর্ণরূপে হারাম ও কুফরী।

অতএব, যে সমস্ত ইমাম, খতীব, মুফতী, মুহাদ্দিস ফুটবল খেলাকে জায়িয বলেছে এবং রেডিওতে রিলে শুনেছে এবং টেলিভিশনে সরাসরি দেখেছে, অন্যান্যদেরকেও দেখার জন্য উৎসাহিত করেছে তারা প্রকৃতপক্ষে কাফির-মুশরিক, ইহুদী-নাছারাদের অনুসরণ-অনুকরণ করেছে ও করার জন্য অন্যান্যদেরকে উৎসাহিত করেছে। তাই আমল ও আক্বীদাগত দিক থেকে তারা দু’শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত; এবং প্রত্যেক শ্রেণীই কবীরাহ্ গুণাহ্ গুণাহ্গার।     হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

من را منكم منكرا فليفيره بيده فان لم يستطع فبلسانه فان لم يستطع فبقلبه وذالك اضعف الايمان.

অর্থঃ- “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন অন্যায় কাজ সংঘটিত হতে দেখে, সে যেন তা হাত দ্বারা বাধা দেয়। যদি সে হাত দিয়ে বাধা দিতে না পারে, তাহলে সে যেন তা যবান দ্বারা বাধা দেয়। যদি যবানের দ্বারাও বাধা দিতে না পারে, তাহলে অন্তরে যেন সে পাপকে ঘৃণা করে। আর এটাই সবচেয়ে দুর্বল ঈমানের পরিচয়।” (মুসলিম শরীফ)

উপরোক্ত দু’শ্রেণীর এক শ্রেণী হচ্ছে, যারা উল্লিখিত খেলাসমূহ হারাম জানা সত্ত্বেও চাকুরীর ভয়ে, মসজিদ কমিটি বা মুছল্লীদের চাপে অনিচ্ছাসত্ত্বেও অথবা ব্যক্তিগত স্বার্থে বা দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে দোয়া করেছে, বাহবা দিয়েছে, অভিনন্দন জানিয়েছে, উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেছে, খেলার খবর ও ধারা বিবরণী রেডিওতে শুনেছে অথবা টেলিভিশনে দেখেছে, তার সংবাদ শুনে খুশী প্রকাশ করেছে, শরীয়তের দৃষ্টিতে তারা ফাসিকের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ও দুর্বল ঈমানের পরিচয় দিয়েছে। তাদের উচিত ছিলো মুছল্লীদেরকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া যে, “এ সমস্ত খেলা হারাম।” এতে তাদেরও ঈমান হিফাযত হতো এবং মুছল্লীদেরও ঈমান হিফাযত হতো।

উল্লেখ্য, জামায়াতের খাতিরে এসব ফাসিক ইমামের পিছনে নামায পড়া যদিও জায়িয রয়েছে; এরপরেও বলতে হয় যে, শরীয়ত ইমামের জন্য নেক্কার হওয়ার শর্ত দিয়েছে এবং কোন ফাসিক ব্যক্তিকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ করা মাকরূহ বলে ফতওয়া দিয়েছে।

কাজেই উক্ত ইমামকে উল্লিখিত হারাম কাজ থেকে খালিছ ইস্তিগ্ফার-তওবা করতে হবে। এরপর নামায পড়াবে। কারণ ফাসিকের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ। অর্থাৎ মুছল্লীগণ বা মুক্তাদীগণ ফাসিক ইমামের পিছনে নামায আদায় করলে নামাযের পরিপূর্ণ ফায়দা হাছিল করতে পারবে না। কাজেই উক্ত ইমাম সাহেব যদি তওবা-ইস্তিগফার না করে তাহলে মুছল্লীদের ফায়দার জন্য উক্ত ইমাম ছাহেবকে অব্যহতি দিয়ে অন্য কোন নেক্কার, পরহেযগার ও আল্লাহ্ ওয়ালা ইমাম নিয়োগ করা কমিটি ও মুছল্লীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। অন্যথায় সকলেই ফাসিকী গুণাহ্ গুণাহ্গার হবে।

দ্বিতীয়তঃ যারা এটাকে হালাল মনে করে দোয়া করেছে, বাহবা দিয়েছে, অভিনন্দন জানিয়েছে, উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেছে, খেলার খবর ও ধারাবিবরণী রেডিওতে শুনেছে অথবা টেলিভিশনে দেখেছে, তার সংবাদ শুনে  খুশী প্রকাশ করেছে, শরীয়তের দৃষ্টিতে তাদের উপর কুফরীর ফতওয়া বর্তাবে। কারণ তারা কুফরী করেছে।   শরীয়ত ইমামের জন্য ঈমানদার হওয়ার শর্ত দিয়েছে। কোন কাফির ব্যক্তিকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ করা জায়িয নেই। কাফিরের পিছনে নামায আদায় করলে নামায আদায় হবেনা। কাজেই যে সমস্ত ইমাম ছাহেব উল্লিখিত হারাম খেলাধুলাকে হালাল বলেছে অথবা দোয়া করেছে অথবা তাতে খুশী প্রকাশ করেছে অথবা খেলোয়াড় বা তৎসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকে বাহবা দিয়ে অভিনন্দন জানিয়ে উৎসাহিত বা অনুপ্রাণিত করেছে তাদের পিছনে নামাজ পড়লে নামায জায়িয হবে না। কেননা শরীয়তের মাসয়ালা হলো, হারামকে হালাল এবং হালালকে হারাম বললে, হারাম কাজে খুশী প্রকাশ করলে, হারাম কাজগুলোকে হালাল মনে করে সাহায্য-সহযোগিতা ও সমর্থন করলে বা হারাম কাজে বাহবা দিলে বা অভিনন্দন জানালে বা হারাম কাজে উৎসাহিত বা অনুপ্রাণিত করলে কুফরী হয়।   কোন মুসলমান  কুফরী করলে সে মুরতাদ হয়ে যায়। আর শরীয়তে মুরতাদের যে হুকুম দেয়া হয়েছে তা খুবই কঠিন। শরীয়তের দৃষ্টিতে মুরতাদের হুকুমঃ  মুরতাদের স্ত্রী তালাক হয় যদি সে বিবাহিত হয়ে থাকে, হজ্ব বাতিল হয় যদি সে হজ্ব করে থাকে; এবং সে কাফির হয়। অর্থাৎ তার সকল নেক আমল বিনষ্ট হয়ে যায়। তওবা না করা পর্যন্ত সে ঈমানদার হবেনা। বিবাহ না দোহ্রালে স্ত্রীর সাথে সংসার করা যাবেনা। যদি সংসার করে তবে যিনাকারীর গুনাহ্ হবে। সন্তান হলে তা হালাল হবেনা। যদি হজ্বের সামর্থ্য থাকে তবে পুনরায় তাকে হজ্ব করতে হবে, যদিও সে পূর্বে হজ্ব করে থাকে। তা না করলে কবীরা গুনাহ্ হবে। তার ওয়ারিশ সত্ত্ব বাতিল হয়ে যাবে। তাকে তিন দিন সময় দেয়া হবে তওবা করার জন্য। যদি তওবা করে, তবে ক্ষমা করা হবে; অন্যথায় তার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড।  কেননা হাদীস শরীফে রয়েছে, “তিন কারণে মৃত্যুদন্ড দেয়া জায়িয। যথা- (ক) ঈমান আনার পর কুফরী করলে অর্থাৎ মুরতাদ হলে। (খ) ঐ যিনাকার বা যিনাকারিনী, যারা বিবাহিত বা বিবাহিতা। (গ) যে অন্যায়ভাবে কাউকে কতল করে।” (তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ্, মুসনদে শাফিয়ী, মুসনদে বাজ্জার, মুস্তাদরিকে হাকিম)      আর এরা মারা যাবার পর যারা এদের জানাযার নামায পড়ে বা পড়ায় বা জানাযার নামাযে সাহায্য-সহযোগিতা করে, তাদের সকলের উপরই মুরতাদের হুকুম বর্তাবে এবং এ সকল মুরতাদ মরলে বা নিহত হলে তাকে মুসলমানগণের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না। এমনকি মুসলমানের ন্যায়ও দাফন করা যাবে না। বরং তাকে কুকুরের ন্যায় একটি গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখতে হবে।

কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

ان الذين كفروا وماتوا وهم كفار فلن يقبل من احدهم ملء الارض ذهبا ولو افتدى يه اوائك لهم عذاب اليم وما لهم من نصرين.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই যারা কাফির এবং কুফরী অবস্থায় মারা গেছে, তারা যদি যমীন (কুফরীর পরিবর্তে) পরিপূর্ণ স্বর্ণ তার ফিদিয়া বা কাফ্ফারা বাবদ দেয় (আমার থেকে বাঁচার জন্য), তা কখনো গ্রহণ করা হবেনা। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি বা আযাব এবং তাদের জন্য কোন ধরণের সাহায্যকারী নেই। (সূরা  আলে ইমরান/৯১)   যে সমস্ত ইমামরা কুফরী করেছে তারা যদি খালিছ ইস্তিগ্ফার-তওবা করে কুফরী থেকে ফিরে আসে তাহলে তাদের পিছনে নামায আদায় করলে নামায জায়িয হবে। অন্যথায় এ সমস্ত ইমাম ছাহেবদের অব্যহতি দিয়ে নেক্কার, পরহেযগার ও আল্লাহ্ওয়ালা ইমাম ছাহেব নিয়োগ করা কমিটি ও মুছল্লীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।  কারণ উক্ত ইমামের পিছনে যারাই নামায পড়বে তাদের কারো নামাযই হবেনা। কাজেই কমিটি ও মুছল্লী সকলেই হারাম ও কুফরীর গুণাহে গুণাহ্গার হবে। {দলীলসমূহঃ (১) আহ্কামুল কুরআন, (২) কুরতুবী, (৩) তাবারী,  (৪)  মাযহারী,  (৫) দুররে মানছূর, (৬) মাআরিফুল কুরআন, (৭) তিরমিযী,  (৮) আবূ দাউদ,  (৯) নাসাঈ,  (১০) ইবনে মাযাহ্, (১১) কানযুল উম্মাল, (১২) বাইহাক্বী, (১৩) নছবুর রায়াহ্, (১৪) আল ফিক্বাহু আলা মাজাহিবিল আরবায়া, (১৫) ফতওয়ায়ে আমীনিয়া, (১৬) কবিরী, (১৭) খানিয়াহ্  (১৮) শরহে ফিক্বহ্ আকবর,  (১৯) শরহে আক্বাঈদে নছফী, (২০) তাকমীলুল ঈমান, (২১) আক্বাঈদে হাক্কা,  (২২) জামিউল ফুছূলীন, (২৩) হিদায়া, (২৪) দুররুল মুখতার, (২৫) বাহ্রুর রায়িক, (২৬) ক্বাযীখান, (২৭) আলমগীরী, (২৮) আল বায্যাযিয়া, (২৯) আন কারুবিয়া,  (৩০)  বিনায়া ইত্যাদি)  ১। ডাঃ মুহম্মদ নাছিরুদ্দীন  সভাপতি- বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ, চট্টগ্রাম ২। মুহম্মদ আবু জাফর সভাপতি- শিক্ষক ও অভিভাবক সমন্বয় পরিষদ, চট্টগ্রাম ৩। এ্যাডভোকেট শামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী,  শিলাইগড়া, আনোয়ারা, চট্টগ্রাম।  সুওয়ালঃ  মরহুম আছগর আলী, পিতা- মরহুম ফতেহ আলী, গ্রামঃ শিলাইগড়া, ডাকঘরঃ ঝিওরী, উপজেলাঃ আনোয়ারা, জেলাঃ চট্টগ্রাম। তার ওয়ারিছগণ আনোয়ারা উপজেলাধীন পশ্চিম বারখাইন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্যে ১৯২৯ সালে ৩৫ শতক জায়গা মৌখিকভাবে দান করেন। দীর্ঘ ৭২ বছর পর্যন্ত উক্ত জায়গা বিদ্যালয়ের ভোগ দখলে বা অধীনে রয়েছে। তৎকালীন সময়ে রেজিঃ এর প্রয়োজনীয়তা দেখা না দেয়ায় তা সম্পাদন করা হয়নি।  উল্লেখ্য, উক্ত জায়গার ২৬ শতাংশ জায়গা বর্তমানে সরকারী খতিয়ানে বিদ্যালয়ের নামে দেখানো হয়েছে। আর বাকি ৯ শতাংশ জায়গা সরকারী খতিয়ানে বিদ্যালয়ের নামে দেখানো হয়নি। তাই আছগর আলী ছাহেবের শতাধিক ওয়ারিছদের মধ্যে মাত্র ৭ জন ওয়ারিছ উক্ত ৯ শতাংশ জায়গার সাথে আরো অতিরিক্ত কিছু জায়গা জবরদখল করে, পুনরায় মসজিদের নামে ওয়াক্ফ করে সেখানে মসজিদ তৈরী করছে। এখন আমাদের সুওয়াল হলো- (১) কোন সম্পত্তি মৌখিক ওয়াক্ফ করলে তা ওয়াক্ফ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা?     (২) ওয়াক্ফের জন্য লিখিত দেয়া শর্ত কিনা?  (৩) একই সম্পত্তি একাধিকবার ওয়াক্ফ করা জায়িয কিনা?  (৪) সম্পত্তি যে জন্যে ওয়াক্ফ করা হয়েছে সে কাজে ব্যবহার না করে অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে কিনা?  (৫) স্কুলের নামে ওয়াক্ফকৃত জায়গা পুনরায় মসজিদের নামে ওয়াক্ফ করে সেখানে মসজিদ তৈরী করলে, শরীয়তে সেটা মসজিদ হিসেবে গণ্য হবে কিনা? (৬) ওয়াক্ফকৃত সম্পত্তিতে ওয়াক্ফকারীর মালিকানা বহাল থাকে কিনা? এবং তা শরীয়তে গ্রহণযোগ্য কিনা?  (৭) স্কুলের জন্য ওয়াক্ফকৃত জায়গায় বর্তমানে যে মসজিদটি তৈরী করা হচ্ছে সেটা মসজিদ হিসেবে গণ্য হবে কিনা?  (৮) একটি মসজিদ থাকা অবস্থায় তার কাছাকাছি (২০ গজ ব্যবধানে) অন্য কোন মসজিদ নির্মাণ করা যাবে কিনা?  (৯) কোন সম্পত্তি বা জায়গা জমি- ওয়াক্ফ করার পর তা কখন থেকে হাক্বীক্বীভাবে ওয়াক্ফ হিসেবে গণ্য হবে?  (১০) স্কুলের নামে ওয়াক্ফকৃত সম্পূর্ণ জায়গার অধিকাংশ জায়গা স্কুলের নামে খতিয়ানভুক্ত হয়েছে, আর কিছু অংশ ওয়াক্ফকারীর ওয়ারিছগণের নামে খতিয়ানভুক্ত হয়েছে। এখন উভয় খতিয়ানভুক্ত অংশে মসজিদ নির্মান করা বৈধ হবে কিনা? (১১) উক্ত জায়গায় মসজিদ নির্মাণ শরীয়ত সম্মত হয়েছে কিনা?   দয়া করে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীল-আদিল্লাহ্ ভিত্তিক সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন। জাওয়াবঃ (১) “কোন সম্পত্তি মৌখিক ওয়াক্ফ করলে তা ওয়াক্ফ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা?”  (২) “ওয়াক্ফের জন্য লিখিত দেয়া শর্ত কিনা?”  এর জবাব হলো- হ্যাঁ, কোন সম্পত্তি মৌখিক ওয়াক্ফ করলেই শরীয়তে তা ওয়াক্ফ হিসেবে গণ্য হয়ে যায়। ওয়াক্ফ কার্যকরী বা সাব্যস্ত হওয়ার জন্য লিখিত দেয়া শর্ত নয়।   ফিক্বাহ্র ছহীহ্ ও নির্ভরযোগ্য কিতাব ‘কুদুরী’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,

يزول الملك يمجرد القول.

 অর্থঃ- “মৌখিক কথার দ্বারাই ওয়াক্ফকৃত বস্তুর মালিকানা দূরীভুত হয়ে যায়।” “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ২য় জিঃ ৩৫১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে,

كان الملك يزول عند هما يزول بالقول عند ابى يو سف رحمه الله تعالى وهو قول الائمة الثلاثة وهو قول اكثر اهل العلم وعلى هذا مشائخ بلخ وقى المنية وعليه الفتوى كذا فى فتح القدير وعليه الفتوى كذا قى السراج الوهاج.

অর্থঃ- “হযরত ছাহেবাইন রহমতুল্লাহি আলাইহিমা-এর মতে- ওয়াক্ফকৃত মালের স্বত্ব ওয়াক্ফকারীর নিকট হতে দূর হয়ে যায়। ইমাম আবু ইউছূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ওয়াক্ফকারীর শুধু কথার দ্বারাই স্বত্ব লোপ হয়ে যাবে। হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি এ মতই পোষণ করেন এবং অধিকাংশ আহলে ফিক্বাহ্ এ মতেরই সমর্থক। এছাড়া বলখের মাশায়িখগণও এ মত পোষণ করেন। ‘মুনিয়া’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে যে, ফতওয়া এ মতের উপর। এভাবে ‘ফতহুল ক্বাদীর’ এবং ‘সিরাজুল ওয়াহ্হাজে’ও লিপিবদ্ধ রয়েছে।”  (৩) “একই সম্পত্তি একাধিকবার ওয়াক্ফ করা জায়িয কিনা?”               এর জবাব হলো- না, একই সম্পত্তি একাধিকবার ওয়াক্ফ করা জায়িয নেই।      ফিক্বাহ্ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,

واذا صح الوقف لم يجز بيعه ولاتمليكه.

অর্থঃ- “যখন ওয়াক্ফ ছহীহ্ হয়ে যায় তখন ওয়াক্ফকৃত সম্পদ বিক্রয় করা বা কাউকে মালিক বানিয়ে দেয়া জায়িয হবে না।” (কুদূরী)     ফতওয়ার কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে,

اذا صح الوقف خرج عن ملك الو اقف ثم قوله (لم يجز بيعه ولاتمليكه) هو باجما ع الففهاء.

অর্থঃ- “যখন ওয়াক্ফ ছহীহ হবে, তখন তা ওয়াক্ফকারীর মালিকানা থেকে বের হয়ে যাবে। অতঃপর কুদূরীর ভাষায় (তার বেচা-কেনা ও মালিকানা জায়িয হবেনা) এটা ফুকাহা-ই-কিরামগণের ইজমা দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে।” (ফতহুল ক্বাদীর ৫ম জিঃ৪৩২, শরহুল ইনায়াহ) অর্থাৎ যে সম্পত্তি শরীয়তসম্মতভাবে একবার ওয়াক্ফ হয়েছে সে সম্পত্তি পুনরায় ওয়াক্ফ করার প্রশ্নই আসতে পারেনা। যেহেতু প্রথমবার ওয়াক্ফ করা মাত্রই সম্পত্তির মালিকানা বা সত্ত্ব ওয়াক্ফকারীর নিকট থেকে দূরীভূত হয়ে তা আল্লাহ্ তায়ালার মালিকানায় চলে গেছে; সেহেতু এখন কেউ তা পুনরায় ওয়াক্ফ করার অধিকার বা ক্ষমতা রাখেনা। (৪) “সম্পত্তি যে জন্যে ওয়াক্ফ করা হয়েছে সে কাজে ব্যবহার না করে অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে কিনা?”   এর জবাব হলো-  না, অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে না।  এ সম্পর্কে ফিক্বাহ্র কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,

لانه لابد من العمارة ليبقى على التأبيد فثحصل مقصود الواقف.

অর্থঃ- “কেননা ওয়াক্ফকৃত সম্পত্তি যেন স্থায়ীভাবে বিদ্যমান থাকে এবং ওয়াক্ফকারীর উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়। (হিদায়া, ফতহুল ক্বাদীর ৫ম জিঃ ৪৩৬পৃষ্ঠা)

অতএব, সম্পত্তি যে জন্যে ওয়াক্ফ করা হয়েছে সে কাজেই ব্যবহার করতে হবে। অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা জায়িয হবেনা বা শরীয়তসম্মত হবেনা। (৫) “স্কুলের নামে ওয়াক্ফকৃত জায়গা পুনরায় মসজিদের নামে ওয়াক্ফ করে সেখানে মসজিদ তৈরী করলে শরীয়তে সেটা মসজিদ হিসেবে গণ্য হবে কিনা?”  এর জবাব হলো- না, সেটা শরীয়তে মসজিদ হিসেবে গণ্য হবেনা। এ প্রসঙ্গে “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ২য় জিঃ ৩৫৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে,

(ومنها) الملك وقت الوقف حتى لوغصب ارضا فوقفها ثم اشتراها من مالكها ودفع الثمن اليه اوصالح على مال فعه اليه لاتكون وقفا كذا فى بحر الرائق.

অর্থঃ- “ওয়াক্ফের একটি শর্ত হলো এই যে, ওয়াক্ফ করার সময়ে ওয়াক্ফকৃত সম্পদে ওয়াক্ফকারীর সত্ত্বাধিকার বা মালিকানা থাকা আবশ্যক। তবে যদি কেউ অন্যের যমীন জবরদখল করতঃ তা ওয়াক্ফ করে দেয় তারপর ঐ যমীনের মালিককে মূল্য দিয়ে তার নিকট থেকে ক্রয় করে নেয় তবুও এরূপ ওয়াক্ফ জায়িয হবেনা। অনুরূপ বাহরুর রায়িক কিতাবেও বর্ণিত রয়েছে।”          অতএব, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে জায়গা ওয়াক্ফ করার পর সে একই জায়গা পুনরায় মসজিদের নামে ওয়াক্ফ করে সেখানে মসজিদ তৈরী করা সম্পূর্ণ হারাম। শরীয়তে তা মসজিদ হিসেবে গণ্য হবেনা।

(৬) “ওয়াক্ফকৃত সম্পত্তিতে ওয়াক্ফকারীর মালিকানা বহাল থাকে কিনা? এবং তা শরীয়তে গ্রহণযোগ্য কিনা?”  এর জবাব হলো-  না, মালিকানা বহাল থাকেনা এবং তা শরীয়তেও গ্রহণযোগ্য নয়।     এ প্রসঙ্গে “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ২য় জিঃ ৩৫২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে,

اما حكمه فعندهما زوال المين عن ملكه الى الله تعالى.

অর্থঃ- “হযরত ছাহেবাইন রহমতুল্লাহি আলাইহিমা-এর নিকট ওয়াক্ফের হুকুম হলো এই যে, ওয়াক্ফকৃত মাল বা সম্পত্তির স্বত্ত্ব ওয়াক্ফকারীর অধিকারমুক্ত হয়ে তা আল্লাহ্ তায়ালার হাক্বীক্বী সত্ত্বে পরিণত হয়।”   সুতরাং ওয়াক্ফকৃত সম্পত্তিতে ওয়াক্ফকারীর মালিকানাই বহাল থাকেনা। তাই ওয়াক্ফকারীর পক্ষে কোন প্রকার মালিকানা দাবী করাটা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম। আর তা করলেও শরীয়তে তা কখনই গ্রহণযোগ্য হবেনা।

(৭) “স্কুলের জন্য ওয়াক্ফকৃত জায়গায় বর্তমানে যে মসজিদটি তৈরী করা হচ্ছে সেটা মসজিদ হিসেবে গণ্য হবে কিনা?”  এর জবাব হলো-  না, তা শরীয়তে মসজিদ হিসেবে গণ্য হবেনা। এ প্রসঙ্গে “কুদূরী” কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,

واذا صح الوقف لم يجز بيعه ولاتمليكه.

অর্থঃ- “যখন ওয়াক্ফ ছহীহ্ হয়ে যায় তখন ওয়াক্ফকৃত সম্পদ বিক্রয় করা বা কাউকে মালিক বানিয়ে দেয়া জায়িয হবে না।”       অতএব, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে ওয়াক্ফকৃত জায়গায় বর্তমানে যে মসজিদটি তৈরী করা হচ্ছে সেটা মসজিদ হিসেবে গণ্য হবেনা। কারণ যে জায়গা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে ওয়াক্ফ করা হয়েছে তা পুনরায় মসজিদ নির্মাণ কিংবা অন্য কোন উদ্দেশ্যে ওয়াক্ফ করার অধিকার ওয়াক্ফকারী বা তার ওয়ারিছগণ রাখেনা। তাই মসজিদের নামে তারা যে ওয়াক্ফ করেছে শরীয়তের দৃষ্টিতে তা গ্রহণযোগ্য নয় এবং উক্ত জায়গায় মসজিদ তৈরী করাটাও শরীয়তের দৃষ্টিতে নাজায়িয হয়েছে। (৮) “একটি মসজিদ থাকা অবস্থায় তার কাছাকাছি (২০ গজ ব্যবধানে) অন্য কোন মসজিদ নির্মাণ করা যাবে কিনা?”  এর জবাব হলো-  প্রতিষ্ঠিত কোন মসজিদের নিকটবর্তী স্থানে নতুন মসজিদ তৈরী করা জায়িয ও নাজায়িয উভয়টাই হতে পারে। যেমন, মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

والذين اتخذوا مسجدا ضرارا وكفرا وتفريقا بين المؤمنين و ارصادا لمن حارب الله ورسوله من فبل وليحلفن ان اردنا الا الحسنى والله يشهد انهم لكذبون لاتقم فيه ابدا.

অর্থঃ- “আর যারা মসজিদ তৈরী করেছে ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে, কুফরীর উদ্দেশ্যে, ঈমানদারদের মধ্যে বিভেদ-বৈষম্য সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এবং ঐ লোকের  ঘাঁটি স্থাপনের উদ্দেশ্যে যে পূর্ব থেকে আল্লাহ্ পাক এবং তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে যুদ্ধ করে আসছে। আর তারা শপথ করে যে, আমরা সৎ উদ্দেশ্য ব্যতীত কামনা করিনা।  পক্ষান্তরে আল্লাহ্ পাক সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই তারা মিথ্যাবাদী। আপনি (হে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) মসজিদের নামে তৈরীকৃত এমন ঘরে কখনও দাঁড়াবেন না অর্থাৎ নামায আদায় করবেন না।” (সূরা তওবা/১০৭, ১০৮)

এ আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক চারটি কারণে মসজিদ নাজায়িয হওয়ার কথা প্রকাশ করেছেন, দ্বিতীয় ও চতুর্থ কারণ কাফির ও মুনাফিকদের জন্য খাছ। প্রথম ও তৃতীয় কারণ কাফির, মুনাফিক ও মুসলমানদের দ্বারা সাধিত  হতে পারে।       “তাফসীরে মাযহারী” কিতাবে উল্লেখ রয়েছে,

قال ابن اسحاق وكان الذين بنوه اثنى عشر رجلا بنوا هذا المسجد يضا رون به مسجد قبا.

 অর্থঃ- “ইবনে ইসহাক বলেন, যারা উক্ত মসজিদ তৈরী করেছিল তারা বার জন লোক ছিলো। তারা উক্ত মসজিদ এই উদ্দেশ্যে তৈরী করেছিল যে, তা দ্বারা মসজিদে কুবা’র ক্ষতি সাধন করে।” “আহ্কামুল কুরআন” কিতাবে উল্লেখ রয়েছে,

قال المفسرون ضرارا بالمسجد

অর্থঃ- ““তাফসীর কারকগণ এর অর্থে বলেছেন, মসজিদের অনিষ্ট সাধন করার উদ্দেশ্যে উক্ত মসজিদ তৈরী করেছিল।”     “তাফসীরে রুহুল মায়ানী, তাফসীরে সিরাজুম্ মুনীর” কিতাবে বর্ণিত হয়েছে,

عن عطاء لما فتح الله تعالى الامصار على عمر رضى الله تعالى عنه امر المسلمين ان يبنوا مسا جد وان لا يتخذوا فى مد ينة مسجدين يضار احدهما وصاحبه.

অর্থঃ- “হযরত আতা রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত রয়েছে, যে সময় আল্লাহ্ তায়ালা শহরগুলোকে হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর অধিকারভুক্ত করে দিলেন সে সময় তিনি মুসলমানদের প্রতি আদেশ দিলেন যে, তারা যেন মসজিদ তৈরী করেন এবং এক শহরে এরূপ দু’টি মসজিদ তৈরী না করেন যে, একটি অন্যটির ক্ষতি সাধন করে।”   অধিকাংশ তাফসীরকারকগণ, বিশেষতঃ হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মতে, “যে মসজিদ তৈরী করলে অন্য মসজিদের জামায়াতের ক্ষতি হয়, সেটাই মসজিদে জেরার।”

মাওলানা আব্দুল হাই লখ্নবী ছাহেব তাঁর “ফতওয়ায়ে মাজমুয়াত” কিতাবে লিখেন,

بلا شبھہ ایں مسجد کہ بعرض نفسانبت و عداوت وضرر مسجد قدیم تیار میشود حکم ضرار دارد وچنیں بنا مو جب ثواب نیست بلکہ باعث نکال میشود.

অর্থঃ- “বিনা সন্দেহে নফসের স্বার্থ সিদ্ধি ও শত্রুতা বশতঃ এবং পুরাতন মসজিদের ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে যে মসজিদ প্রস্তুত করা হয় তা জেরার হুকুম রাখে। এরূপ মসজিদ তৈরী করা ছওয়াবের কাজ নয়, বরং আযাবের কারণ হবে।”        তিনি উক্ত কিতাবে আরো লিখেন,

اكر از بناى مسجد جديد ضرر وتخريب مسجد قديم باشد هر اينه بنايش منهى عنه باشد.

অর্থঃ- “যদি নতুন মসজিদ তৈরী করলে পুরাতন মসজিদের ক্ষতি ও বিরান হয়, তবে নিশ্চয়ই সেটা তৈরী করা নিষিদ্ধ হবে।” অর্থাৎ একটি মসজিদ থাকা অবস্থায় তার কাছাকাছি অন্য মসজিদ নির্মাণ করা জায়িয হবে না। তবে শর্ত হলো, যদি পূর্বের মসজিদ বিরান হয়ে যাবার কোনরূপ আশংকা না থাকে এবং নতুন মসজিদ তৈরী করলে মুছল্লীদের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়, নামায আদায়ের সুবিধা হয় তাহলে ইত্যাদি দ্বীনি উদ্দেশ্যে মসজিদ থাকার পরও তার কাছাকাছি অন্য মসজিদ নির্মাণ করা জায়িয রয়েছে।    আর যদি ব্যক্তিগত কোন্দল, জিদের বশবর্তী হয়ে, লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে, নাম কামানোর উদ্দেশ্যে, পূর্বের মসজিদকে বিরান করার উদ্দেশ্যে অথবা অপরের জায়গায় মসজিদ নির্মাণ করা হয় তাহলে সেটা হবে মসজিদে জেরার অন্তর্ভুক্ত। এরূপ মসজিদ নির্মাণ করা ও তাতে নামায আদায় করা শরীয়তে জায়িয নেই। (৯) “কোন সম্পত্তি বা জায়গা-জমি ওয়াক্ফ করার পর তা কখন থেকে হাক্বীক্বীভাবে ওয়াক্ফ হিসেবে গণ্য হবে?”

এর জবাব হলো- কোন সম্পত্তি বা জায়গা মসজিদের জন্য ওয়াক্ফ করার পর মসজিদ কর্তৃপক্ষ সে জায়গাতে নামায আদায়ের জন্য ঘর নির্মাণ করে আযান দিয়ে নামায আদায় করে ফেললেই উক্ত জায়গা হাক্বীক্বীভাবে ওয়াক্ফ হিসেবে গণ্য হয়ে যায়। যদিও ওয়াক্ফ করার সাথে সাথেই তা ওয়াক্ফ হিসেবে গণ্য হয়েছে। তদ্রুপ যে সম্পত্তি বা জায়গা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে ওয়াক্ফ করা হয়েছে তা ওয়াক্ফ করা মাত্রই ওয়াক্ফ হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে গেছে। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সীমানা করে নিয়ে ঘর নির্মাণ করে লিখাপড়া শুরু করার কারণে তা হাক্বীক্বীভাবে ওয়াক্ফ সাব্যস্ত হয়েছে।  (১০) “স্কুলের নামে ওয়াক্ফকৃত সম্পূর্ণ জায়গার অধিকাংশ জায়গা স্কুলের নামে খতিয়ানভুক্ত হয়েছে। আর কিছু অংশ ওয়াক্ফকারীর ওয়ারিছগণের নামে খতিয়ানভুক্ত হয়েছে। এখন উভয় খতিয়ানভুক্ত অংশে মসজিদ নির্মাণ করা বৈধ হবে কিনা?”   এর জবাব হলো-  না, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে যে জায়গা ওয়াক্ফ করা হয়েছে তা এখন উক্ত প্রতিষ্ঠানেরই জায়গার অন্তর্ভুক্ত। চাই তা উক্ত প্রতিষ্ঠানের নামে খতিয়ানভুক্ত হোক কিংবা অন্য যে কোন ব্যক্তির নামে খতিয়ানভুক্ত হোক। কারণ ওয়াক্ফ ছহীহ্ হওয়ার জন্যে খতিয়ানভূক্ত হওয়া শর্ত নয়। আর কারো নামে কোন জায়গা খতিয়ানভুক্ত হলেই যে তাতে মসজিদ তৈরী করা জায়িয হবে তাও নয়। বরং দেখতে হবে, খতিয়ানভুক্ত জায়গার মূল মালিক কে? মূল মালিক যদি মসজিদের নামে ওয়াক্ফ করে থাকেন তবেই সে জায়গায় মসজিদ তৈরী করা শরীয়ত সম্মত হবে। অন্যথায় মসজিদ তৈরী করা শরীয়ত সম্মত হবেনা। অথচ মূল মালিক মসজিদের নামে ওয়াক্ফ করেননি। ওয়াক্ফ করেছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে। অতএব, উক্ত প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে ওয়াক্ফকৃত জায়গায় শিক্ষক, ছাত্র ও প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নামায আদায়ের সুবিধার্থে নামায ঘর তৈরী করতে পারে। তবে সেটা হবে প্রতিষ্ঠানের জায়গায় তৈরী কৃত নামায ঘর। প্রচলিত অর্থে প্রতিষ্ঠানের মসজিদ। অবশ্য তাতে পাঞ্জেগানা, জুমুয়া সব নামাযই পড়া যাবে। কারণ আমাদের হানাফী মাযহাবের মাসয়ালা হলো, জুমুয়া ছহীহ্ হওয়ার জন্য ওয়াক্ফকৃত মসজিদ শর্ত নয়। ঘর-বাড়ী, মাঠ-ঘাট, মাদ্রাসা-মক্তব, স্কুল-কলেজ ইত্যাদি সর্বত্রই জুমুয়া আদায় করলে ছহীহ্ হয়ে যাবে।”    উল্লেখ্য, শরয়ী মসজিদ হওয়ার জন্য ওয়াক্ফ শর্ত। আর ওয়াক্ফ করার জন্য মালিক হওয়া শর্ত।    অন্যের মালিকানাধীন বা ওয়াক্ফাধীন কোন জায়গা বা সম্পত্তি যদি কেউ ওয়াক্ফ করতে চায় তবে সেটা হবে জবরদখলের শামীল। জবরদখল করা শক্ত কবীরা গুণাহ্ এবং তার পরিণতি খুবই ভয়াবহ।

হাদীস শরীফের ইরশাদ হয়েছে,

عن سعيد بن زيد رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من اخذ شبرا من الارض ظلما فانه يطوقه يوم القيمة من سبع ارضين.

অর্থঃ- “হযরত সাঈদ ইবনে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কারো এক বিঘত যমীন জবরদখল করেছে, ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় সাত তবক যমীন বেড়ীরূপে পরিয়ে দেয়া হবে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)

অতএব, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্যে ওয়াক্ফকৃত উক্ত জায়গা, মসজিদের জন্যে ওয়াক্ফ করে তাতে মসজিদ নির্মাণ করা সম্পূর্ণরূপে শরীয়তের খিলাফ ও হারাম হয়েছে।

(১১) “উক্ত জায়গায় নতুন করে মসজিদ নির্মাণ করা শরীয়ত সম্মত হয়েছে কিনা?”   এর জবাব হলো- না, উক্ত জায়গায় মসজিদ নির্মাণ করা শরীয়তসম্মত হয়নি। কারণ,  উক্ত জায়গা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ মাতৃভাষা ও প্রয়োজনীয় অক্ষর জ্ঞান হাছিল তথা জনকল্যাণমূলক কাজের উদ্দেশ্যে ওয়াক্ফ করা হয়েছে।  যেমন, ওয়াক্ফের সংজ্ঞা ও মাসয়ালায় বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য ফিকাহ্ ও ফতওয়ার কিতাব “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” ২য় জিঃ ৩৫০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে,

حبس العين على ملك الوقف والتصدق بالمنفعة على الفقراء او على وجه من وجوه الخير بمنزلة العوارى كذافى الكافى.

অর্থঃ- “কোন মূল ধন-সম্পত্তির স্বত্ত্ব আবদ্ধ করা ও তার লাভ গরীবদেরকে বা অন্য কোনরূপ সৎকাজে ছদকা করাকে শরীয়তে ওয়াক্ফ বলে। এরূপ কাফী কিতাবেও বর্ণিত রয়েছে। ”

উক্ত কিতাবের ২য় জিঃ ৩৫০ পৃষ্ঠায় আরো বর্ণিত রয়েছে,

حبس العين على حكم ملك الله تعالى على وجه تعود منفعته الى العباد فيلزم ولا يباع ولا يوهب ولا يورث كذا فى الهدا ية وفى العيون واليتمة ان الفتوى على قولهما.

অর্থঃ-  “ওয়াক্ফ হলো কোন মূল সম্পদের স্বত্ব এভাবে আল্লাহ্ পাক-এর অধিকারে আবদ্ধ করা যে, ঐ সম্পদের লভ্যাংশ আল্লাহ্ পাক-এর বান্দাগণ ভোগদখল করবে। ওয়াক্ফ করলেই ওয়াক্ফ লাযিম (সাব্যস্ত) হয়ে যায়; এবং ওয়াক্ফকৃত সম্পদ বিক্রয় করা যায়না, হেবা করা যায়না এবং মীরাছরূপে বন্টন করা যায়না। অনুরূপ ‘হেদায়া’ কিতাবেও বর্ণিত রয়েছে। ‘উয়ূন’ ইত্যাদি কিতাবের বর্ণনানুযায়ী এ মতের উপরই ফতওয়া সাব্যস্ত হয়েছে।” এর দলীল নিম্নোক্ত হাদীস শরীফ।

হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

تصدق باصلها لايبا ع ولا يورث ولايوهب.

অর্থাৎ- মূল ভূমিকে ছদকা করো,  যা কখনো বিক্রি করা যাবে না, মীরাছরূপে বন্টন করা যাবে না এবং হিবা (দান) করা যাবে না। (হিদায়া, কিফায়াহ)    সুতরাং মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, লঙ্গরখানা,  ইয়াতিমখানা, রাস্তাঘাট,  পানির ব্যবস্থা ইত্যাদি প্রত্যেকটিই জনকল্যাণমূলক কাজ। আর যা জনকল্যাণমূলক কাজের উদ্দেশ্যে ওয়াক্ফ করা হয় তা ওয়াক্ফ লিল্লাহর অন্তর্ভূক্ত। অর্থাৎ ওয়াক্ফ করা মাত্র তার (হাক্বীক্বী) মালিক স্বয়ং আল্লাহ্ পাক হয়ে যান। তখন তাতে আর ব্যক্তির স্বত্ত্ব বা মালিকানা থাকে না।

অতএব, মরহুম আছগর আলী ছাহেবের ওয়ারিছগণ কর্তৃক উল্লিখিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে ওয়াক্ফকৃত জায়গায় মসজিদ নির্মাণ করা সম্পূর্ণরূপে শরীয়তের খিলাফ তথা নাজায়িয ও হারাম হয়েছে। আর উক্ত মসজিদে নামায আদায় করাও কারো জন্যে জায়িয হবেনা। সুতরাং যারা উক্ত মসজিদ তৈরী করছে তাদের উচিত মসজিদ তৈরী না করে উক্ত জায়গা প্রতিষ্ঠানকে ফিরিয়ে দেয়া। অন্যথায় তারা জায়গা আত্মসাৎকারী এবং মসজিদে জেরার নির্মাণকারী হিসেবে সাব্যস্ত হবে। আর এ উভয়টি শক্ত হারাম ও কবীরা গুণাহ্র শামীল। {দলীলসমূহঃ (১) আহকামুল কুরআন, (২) কবীর, (৩) মায়ালিম, (৪) খাযিন, (৫) বাগবী, (৬) কুরতুবী, (৭) মাযহারী, (৮) ইবনে জারীর, (৯) নিশাপুরী, (১০) ওয়াহিদী, (১১) আযীযী, (১২) হাক্কানী, (১৩) খুলাছাতুত্ তাফসীর, (১৪) রুহুল মায়ানী, (১৫) সিরাজুম্ মুনীর, (১৬) দুররে মানছুর, (১৭) হাশিয়ায়ে শায়খ যাদাহ, (১৮) রহুল বয়ান, (১৯) ইবনে কাছীর, (২০) বায়যাবী, (২১) কাশ্শাফ, (২২) তাবারী,  (২৩) বুখারী, (২৪) মুসলিম, (২৫) আহমদ, (২৬) মিশকাত, (২৭) ফতহুল মুলহিম, (২৮) মুফহিম, (২৯) উমদাতুল ক্বারী, (৩০) ফতহুল বারী, (৩১) ইরশাদুস্ সারী, (৩২) ফয়জুল বারী, (৩৩) তাইসীরুল বারী, (৩৪) শরহে নববী, (৩৫) মিরকাত, (৩৬) আশয়াতুল লুময়াত, (৩৭) লুময়াত, (৩৮) শরহুত ত্বীবী,(৩৯) তালীকুছ্ ছবীহ, (৪০) মুযাহিরে হক্ব, (৪১) আলমগীরী, (৪২) বাহরুর  রায়িক, (৪৩) ক্বাযীখান, (৪৪) ফতহুল ক্বাদীর, (৪৫) হিদায়া, (৪৬) নূরুল হিদায়া, (৪৭) বিনায়া, (৪৮) ইনায়া, (৪৯) কিফায়া, (৫০) বিকায়া, (৫১) দিরায়া, (৫২) শরহে ইলিয়াস, (৫৩) তাতারখানিয়া, (৫৪) জাওহারাতুন্ নাইয়্যিরাহ, (৫৫) শরহে বিকায়া, (৫৬) আইনুল হিদায়া, (৫৭) আল ফিক্বহ্ আলা মাযাহিবিল আরবায়া, (৫৮) শামী, (৫৯) রদ্দুল মুহতার, (৬০) দুররুল মুখতার, (৬১) গায়াতুল আওতার, (৬২) হাশিয়াতুত্ তাহতাবী আলা দুররিল মুখতার, (৬৩) কাফী, (৬৪) মারাকিউল ফালাহ, (৬৫) মুনিয়া, (৬৬) সিরাজুল ওয়াহ্হাজ, (৬৭) শরহে ইনায়া, (৬৮) কুদূরী, (৬৯) ফতওয়ায়ে  মুজমুয়া, (৭০) ইজহারুল হক, (৭১) মাখযানূল ফতওয়া, (৭২) ফতওয়ায়ে ইমদাদিয়া, (৭৩) আহকামুল ফতওয়া, (৭৪) ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, (৭৫) আহসানুল মাসায়িল ইত্যাদি}

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ