মূলঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি,
ভাষান্তরঃ মুহম্মদ শামসুল আলম
(ধারাবাহিক)
সুওয়ালঃ- দরবেশ কি এই যে, সে যে কোন হাল বা সিফতের হবে তাকেই দরবেশ বলা হবে? জাওয়াবঃ- কখনোই নয়। প্রত্যেক ফকির ব্যক্তিকে দরবেশ এবং প্রত্যেক কমজোর ব্যক্তিকে হীন, নীচ ভাবা ঠিক নয়। (অর্থাৎ প্রত্যেক ফকিরই দরবেশ নয় এবং প্রত্যেক দুর্বল ও কমজোর ব্যক্তি অযোগ্য নয়। কারণ দরবেশী বিবেচনার জন্য ব্যক্তির বাহ্যিক আবরণ ও আচরণই একমাত্র বিচার্য বিষয় নয়।) কেননা, আফয়ালে জমিমা (খারাপ কাজ) এবং সিফাতে শানিয়া (খারাপ গুণ) দরবেশীর পর্দার মধ্যে লুকায়িত থাকে। যেমন, হযরত মাওলানা নাছিরুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মাওলানা শামসুদ্দীন সান্জরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর থেকে অক্ষমতা ও সক্ষমতার শোকর সম্পর্কে এভাবে বয়ান করেছেন- “দরবেশীর উপর আল্লাহ্ পাক-এর প্রশংসা।” ফার্সীতে বলা হয়েছে, “কোন মানুষ যেন নিজের নখ বড় বড় না রাখে। যদি তার নখ বড় থাকে তবে তা দ্বারা সে অন্য মুসলমান ভাইয়ের পেট চিড়ে ফেলবে।” (অর্থাৎ- সর্ব প্রকার বদ্ স্বভাব দ্বারা কামিয়াবী অর্জনের পরিবর্তে কেবল অন্যের ক্ষতি সাধন হয়ে থাকে।) এখন বলো, ফকরের (দরিদ্রতা) মধ্যে তাকদ কোথায়? হাক্বীক্বত হচ্ছে এই যে, কোন মুছিবতের প্রাক্কালে যা বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকে তা নিসবতে ফকিরীর উপর ধৈর্যধারণ করার চেয়ে উত্তম। এমকানে ফকর এবং ইজহারে ফকরের জন্য নুবুওওয়াতী কুওয়াত তথা শক্তির প্রয়োজন। ফকর বা দারিদ্র ইখতিয়ার করার মধ্যে বড় দোষ হচ্ছে এই যে, এর থেকে গর্ব, অহংকার পয়দা হয়ে থাকে। সুওয়ালঃ- ফখর (অহংকার) কি প্রত্যেক অবস্থায় (শরীয়ত মুতাবিক) খারাপ? জাওয়াবঃ- ফখর (অহংকার) হচ্ছে একটি ধ্বংসশীল বস্তু। যে জিনিসের অস্তিত্ব এবং প্রমাণ রয়েছে তার উপর অহংকার করাটা হচ্ছে নিকৃষ্ট ও খারাপ। এবং ধ্বংসশীল, অস্তিত্বহীন বা অস্তিত্বশীল বস্তুর উপর ফখর করা শত সৌন্দর্য ও প্রশংসার কারণ। এ জন্য হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়া ও আখিরাতের সমস্ত ভালাই ও সৌন্দর্য হাছিল করার পরও কোন বস্তু বা জিনিসের উপর ফখর (অহংকার) করেননি (কেননা তামাম আলম এবং এর মধ্যে যা কিছু বিদ্যমান সব কিছুরই অস্তিত্ব তাঁর নিকট ছিল) কিন্তু যখন ফকর (অভাব) ও দারিদ্রের ঘটনার বয়ান আসতো তখন আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন, “দারিদ্রই আমার ফখর বা গর্ব।” হযরত শায়েখ নাজিবুদ্দিন মুতাওয়াক্কিল রহমতুল্লাহি আলাইহি হচ্ছেন ইমামুল আইম্মা হযরত বাবা ফরিদুদ্দীন মাসউদ গন্জে শোকর রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর খলীফা। তিনি আল্লাহ্ পাক-এর উপর ভরসাকারী এবং শরীয়তের পাবন্দ ছিলেন। সত্তর বৎসর পর্যন্ত শহর এলাকায় ছিলেন। যদিও খাদ্য শস্য এবং এ জাতীয় কোন জিনিস (খাবার) সকল সময় তাঁর ঘরের মধ্যে থাকতো না এবং তাঁর বিবি-বাচ্চাও ছিল। তথাপি তিনি এত সুখী, আনন্দিত ও প্রফুল্ল বদনে মশগুল থাকতেন যে, (কখনো কখনো) তার এটাও খবর থাকতো না যে, কোন দিন, কোন মাস এবং তার ঘরে কি রকম (খাদ্য) বস্তু রয়েছে। একদা ঈদের দিন কিছু দরবেশ তাঁর ঘরে এলেন। সেই সময় তাঁর ঘরে কোন খাবার বস্তুই ছিলনা। তিনি তাঁর বাড়ির ছাদে উঠলেন এবং ইয়াদে ইলাহীতে মশগুল হয়ে গেলেন। তিনি তার দিলকে বললেন, আজ ঈদের দিন অতিবাহিত হচ্ছে এবং আমার বাচ্চা শিশুদের মুখে কি কিছুই খাবার তুলে দেয়া যাবেনা এবং এ সমস্ত (সম্মানিত) মেহমান এ ভাবেই ফিরে যাবে? এমন সময় দেখা গেলো একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি তাঁর বাড়িতে ছাদের উপর এলেন এবং এই শের আবৃত্তি করলেন-
بادل كفنم دلا خضررا بينى ا دل اكر مر نمأ يد بينم
অর্থঃ- “আমি আমার দিলকে বললাম, তুমি কি হযরত খিযির আলাইহিস্ সালামকে দেখছ? তখন দিল জবাব দিলো, যদি তিনি আমাকে সাক্ষাৎ দিতে চান তবে দেখ।” (অতঃপর) ঐ বৃদ্ধ খাদ্য ভর্তি একটা পাত্র পেশ করলেন এবং বললেন, আরশের ফিরিশ্তাগণ আপনার তাওয়াক্কুলের প্রশংসা করছেন। এরপরও আপনি দুনিয়াকে দিলে ঠাঁই দিচ্ছেন, তার দিকে ধাবিত হচ্ছেন? উত্তরে তিনি বললেন, আল্লাহ্ পাক জানেন, আমি আমার নিজের জন্য দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হচ্ছিনা বরং সঙ্গী-সাথী, দরবেশদের জরুরতই আমাকে এদিকে মনোযোগী হতে বাধ্য করছে। খুব সম্ভবত খাদ্যের খাঞ্চা আনয়নকারীই হযরত খিযির আলাইহিস্ সালাম ছিলেন। (অসমাপ্ত)
বিশ্ব সমাদৃত,হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার