সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১০৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

            সব প্রশংসা পালনকর্তা আল্লাহ্ পাক-এর জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি অফুরন্ত দরূদ ও ছালাম।  অসংখ্য দোয়ার মাঝে, সাধারণ মুছল্লীরাও প্রতিনিয়ত, প্রতি নামায শেষে এই দোয়া করে থাকেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! আপনি আমাদের দুনিয়ার কল্যাণ দান করুন এবং পরকালের কল্যাণ দান করুন।” মুফাস্সীরীন-ই-কিরামগণ এ দোয়ার অভিনবত্বে অভিমত পেশ করেন যে,  এতে প্রথমে দুনিয়ার কল্যাণের কথা বলা হয়েছে অতঃপর আখিরাতের কল্যাণ কামনার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে হিকমত এই যে, দুনিয়া হচ্ছে আখিরাতের শষ্যভূমি। সুতরাং কেউ দুনিয়াতে ভালভাবে বেঁচে থাকলেই তার জন্য পরকালের ভালাই কামাই করা সহজ। বিশেষতঃ আখিরী যামানার প্রেক্ষাপটে এ বিষয়টি আরো গুরুত্ববহ। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “আখিরী যামানায় মানুষ টাকা-পয়সা দ্বারা ফায়দা হাছিল করবে।” পাশাপাশি সতর্ক করা হয়েছে, “অতি দরিদ্রতা থেকে কুফরীর গন্ধ আসে।” উলামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণ তাই আখিরী যামানায় আওয়ামুন্ নাছের আমলে তরক্কীর জন্য সুস্থ জীবন ও স্বচ্ছল জীবিকার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।  বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, বিষয়টির তাৎপর্য অনুধাবনে নামধারী আলিম সমাজ বড়ই বে-খবর। এমনকি এক্ষেত্রে সামাজিকভাবে তাদের যে বিরাট ভূমিকা ছিলো সে বিষয়ে তারা নিতান্তই অনুভূতি শুন্য। দুনিয়াদারী সম্পর্কে এই কুমুন্ডুকতা মূলতঃ দ্বীনদারীর ক্ষেত্রেও তাদের ততোধিক দৈন্য প্রমাণ করে। মুহাক্কীকগণ তাই বলেন, তাফসীর তিনি বেশী বুঝেন যিনি দুনিয়া ভাল জানেন ও বোঝেন।  ২০০০ সালের জরীপ অনুযায়ী এদেশে দারিদ্র সীমার নীচের জনসংখ্যা ৪৪.৩% এবং চরম মানবেতর জীবন যাপনকারীর হার ২০%। বলার অপেক্ষা রাখেনা, এ দারিদ্রের পিছনে মূল কারণ হলো, সীমাহীন দুর্নীতি পরায়ণতা।  উল্লেখ্য, গত বৎসর টি.আই.বি রিপোর্টে বাংলাদেশকে বিশ্বের দুর্নীতিগ্রস্থ দেশসমূহের প্রথম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মশহুর ছূফী ও কবি শেখ সাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, “দেশের রাজা, আমীর-উমরাহ্ যদি সূচাগ্র পরিমাণ দুর্নীতি শুরু করে তাহলে রাজ কর্মচারীর মাঝে সমুদ্র পরিমাণ দুর্নীতি বিস্তার করে।” সেক্ষেত্রে টি.আই.বি’র এ বৎসরের রিপোর্টে এসেছে যে, প্রথম শ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তারা সবচেয়ে বেশী দুর্নীতি পরায়ণ। এর মধ্যে যুগ্ম সচিব থেকে তদুর্ধ্ব পদস্থ ব্যক্তিই রয়েছে প্রায় একশত।    রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, দুর্নীতির জন্য ২০০১ সালে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি হয় ১১ হাজার ২৫৬ কোটি ২ লাখ টাকা। উল্লেখ্য, ২০০১ সালে ২৩টি সংবাদপত্র অভিবীক্ষণকৃত মোট ২৫৭০টি রিপোর্ট থেকে এই তথ্য নেয়া হয়। যা প্রকৃত দুর্নীতির যে অতি ক্ষুদ্র এক খন্ডাংশ তা খুব সহজেই অনুমেয়। পাশাপাশি এবারের ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের বাজেটে ৪০ লাখ বস্তিবাসীর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্র ২০ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রত্যেকের জন্য ৮ আনা করে।  উল্লেখ্য, বস্তিবাসীর জন্য গত বছর থেকে এবারের বাজেটে বৃদ্ধির পরিবর্তে উল্টো ৮০ লাখ টাকা কমানো হয়। অর্থাৎ সাধারণ মানুষকে, দুর্নীতিবাজ সরকাররা মশা-মাছির চেয়েও তুচ্ছ মনে করে। নচেৎ তাদের জন্য বাজেট বৃদ্ধির পরিবর্তে কমায় কি করে? মাত্র ৮ আনা বাজেট করে কিভাবে? দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারীদের আরো কত দরিদ্র রাখা যায়, চরম মানবেতর জীবন-যাপনকারীদের আরো কত চরম কষ্ট দেয়া যায়, এ যেন উত্তরোত্তর তারই প্রক্রিয়া চলছে। অভিজ্ঞমহল মনে করেন যে, এর পিছনে মূলতঃ বিশ্বব্যাংক, আই. এম. এফ ইত্যাদির ছদ্মাবরণে মুসলমানদের চরম শত্রু ইহুদীর নীল নকশা কাজ করছে।  উল্লেখ্য, ইহুদীদের প্রটোকলে সুস্পষ্টভাবে এ কথা লিখা আছে, “মুসলমানদের আমরা যে ধরণের কাজ করতে আদেশ করি, সেসব কাজ করার ফলে তাদেরই যে গোটা সমাজের দুঃখ, দুর্দশা বেড়ে যাবে এ সত্য তাদের নিকট গোপন রাখাই জরুরী  ………….. অর্থনৈতিক দুগর্তি বিদ্বেষের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেবে, কারণ ঐ অবস্থায় অর্থ বিনিময় সংস্থা ও শিল্পকারখানা সবই বন্ধ হয়ে যাবে।”   সম্প্রতি প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিকের জীবিকাস্থল আদমজী জুট মিল বন্ধ করে দেয়া এরই সাক্ষাত প্রমাণ। উল্লেখ্য, ৮৩১ কোটি টাকা দিয়েও সরকার শ্রমিকদের একটি অংশকেও পূর্ণ পাওনা না দিয়েই বেকার করছে। পক্ষান্তরে ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করে সব শ্রমিকের চাকরী ঠিক রেখেও দেশের জন্য শ’ শ’ কোটি টাকা উপার্জনের সম্ভাবনাময় এ মিলটি ঠিকই চালু রাখা সম্ভব হত।    মূলতঃ ইহুদীদের এসব ষড়যন্ত্রকে সফল ও সহজ করে তুলছে নামধারী আলিম সমাজ। টি.আই.বি রিপোর্ট দিয়েছে, “শিক্ষাখাতে দুর্নীতি হয়েছে ৮৮৭ কোটি টাকা, তন্মধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষাখাতেই সিংহভাগ।” কাজেই এহেন মাদ্রাসা ওস্তাদ তথা নামধারী আলিম সমাজ নিজেরাই যেখানে দুর্নীতিগ্রস্থ সেখানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঈমানী চেতনা তৈরীতে তারা সমর্থ হবে কি করে?  বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঈমানী চেতনা জাগরণের দ্বারা খুব সহজেই এদেশে দরিদ্রতা দূরীকরণ সম্ভব। মোড়ল সংস্থা বিশ্ব ব্যাংকই কিছুদিন আগে বলেছিল, বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতি দূর করা গেলে, মাথাপিছু আয় প্রায় দ্বিগুণ তথা ৭০০ ডলার করা সম্ভব। কার্যতঃ এ হার আরো বেশী।    বস্তুতঃ সাধারণ মানুষের দুনিয়াবী জীবন তথা ঈমান হিফাজতের বিষয়ে নামধারী আলিম সমাজের কোন দরদ নেই। তাই তারা ইসলামী রাজনীতির নামে হারাম লংমার্চ, হরতাল, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী আইন, ছবি, গণতন্ত্র, নির্বাচন ইত্যাদি মৌসুমী আন্দোলনে খুবই লম্ফঝম্প দেখালেও, আদমজী মিল, খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল ইত্যাদি বন্ধের বিরুদ্ধে তথা সাধারণ মানুষের দুনিয়াবী স্বচ্ছলতার ব্যাপারে তাদের কোন অনুভূতি ও প্রচেষ্টাই নেই।    অথচ আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন, “তোমাদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন যে, তোমাদের ভাল তাঁর ভাল লাগে এবং তোমাদের কষ্টে তাঁর কষ্ট লাগে।”   উল্লেখ্য, যামানার মুজাদ্দিদ তাঁরই কায়িম-মোকাম। কাজেই তাঁর ছোহবতে গিয়েই আমাদের এ চেতনা লাভ করতঃ দুনিয়াবী ও দ্বীনি জীবন সমৃদ্ধ  করার কোশেশ হবে। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়