(ধারাবাহিক)
সুওয়ালঃ- যদি আপনি (এ ব্যাপারে) বিশদ বর্ণনা না দিতে চান তাহলে অন্ততপক্ষে সামান্য কিছু বয়ান করুন; যা শ্রবণ করলে আমার দিলের চাঞ্চল্যতা দূর হয়ে যায় এবং আত্মার মধ্যে (বিরাজমান) নৈরাশ্যতা আশার রূপ দ্বারা বদল হয়ে যায়। জাওয়াবঃ- আমি আল্লাহ্ পাক-এর সাহায্যে এবং তাঁর ইজাযতে এটা অবশ্যই বয়ান করবো। কিন্তু সুওয়াল হলো, তুমি যে মঞ্জিল-এর কথা বলছো তা কি আমি শরীয়তের দৃষ্টিতে বর্ণনা করবো না তরীক্বতের দৃষ্টিতে?
সুওয়ালঃ- আমি শরীয়ত এবং তরীক্বত এ দুটো দিক দিয়েই আপনার নিকট প্রশ্ন রেখেছিলাম। জাওয়াবঃ- আহলে শরীয়ত পন্থীদের পুঁজি হচ্ছে পশুত্ব এবং মঞ্জিলে মাকছূদ হলো নফস ও মালকে খতম করে দায়িমীভাবে জান্নাতে দাখিল হয়ে যাওয়া। যেমন ইরশাদ হয়েছে, “আল্লাহ্ তাবারক তা’য়ালা মু’মিনদের থেকে জান্নাতের বিনিময়ে তাঁদের জান ও মাল খরীদ করে নিয়েছেন।” (সূরা তওবা/ ১১১) এবং মঞ্জিলে আহলে তরীক্বত হচ্ছে, ওটাই যার সম্পর্কে ইরশাদে খোদাওয়ান্দী হচ্ছে, “এবং একাগ্রচিত্তে আল্লাহ্ পাক-এর দিকে মগ্ন হউন।” (সূরা মুজাম্মিল/৯) অর্থাৎ স্বীয় দিল, আত্মা, মন, হৃদয়কে আল্লাহ্ পাক-এর মাঝে সোপর্দ করা এবং একত্ববাদের (মাকামের) শীর্ষস্থানে আরোহণ করা। যেমন, বর্ণিত রয়েছে, (শেষ মঞ্জিল আল্লাহ্ পাক পর্যন্ত) “হে দরবেশ! এই কথা আমি তোমার নিকট প্রকাশ এই জন্য করছি যে, তুমি হচ্ছো গিয়ে মুছাফির এবং অন্যজন হচ্ছে মুকীম।” শরীয়তে মুছাফিরের জন্য ইকামতের নিয়ত দুরস্ত নেই এই জন্য যে, মুছাফিরের খেয়াল মাল-সম্পদ ও মূলুকের দিকে নিবদ্ধ নেই আর তরীক্বতের মুছাফিরের রুজু, তাওয়াজ্জুহ্ হচ্ছে শুধুমাত্র (ঐ) জাত পাক-এর দিকে। সুওয়ালঃ- আল্লাহ্ পাক রব্বুল আলামীন কোথায় অবস্থায় করেছেন? (এটা এই জন্য যে) যাতে তাঁর দিকে দিলকে রুজু করা যায়।
জাওয়াবঃ- এমন কোন মাকাম আছে কি যেখানে তিনি বিরাজমান নন? যেমন, বর্ণিত আছে, তোমরা যেদিকেই মুখ ফিরাও সেদিকেই আল্লাহ্ পাক আছেন। জাওয়ান মরদ ঐ ব্যক্তি যে নাকি দুনিয়া এবং আখিরাতের অংশ থেকে হাত গুটিয়ে নফসের খায়েশাতকেও তরক করে দিয়েছে। যেখানে থাকে আল্লাহ্ পাক-এর সাথেই থাকে এবং যেখানে গমন করে আল্লাহ্ পাক-এর দিকেই রুজু হয়ে থাকে, যা কিছু বলে আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকেই বলে (অর্থাৎ নিজের সকল মুছীবতের কথা আল্লাহ্ পাক-এর নিকটই বলে এই জন্য যে, তিনি হচ্ছেন সকল মুছীবত, অবস্থা দূর করনেওয়ালা। -(মুছান্নিফ)
যা কিছু চাও তাঁর নিকট থেকেই চাও বরং তাঁর জাত পাককেই (যেন) চাওয়া হয়। কাউকে এই ধরণের খেয়াল করা সঠিক নয় যে মহান আল্লাহ্ পাক-এর জাত পাক তাঁর থেকে দূরে বরং ইনসান, মানুষ স্বয়ং তার পাপরাশি গুনাহ্সমূহের বোঝার কারণে তাঁর জাত পাক থেকে দূরে সরে আছে। এবং যখন মানুষ স্বীয় অজুদ, অস্তিত্বের সাজ-সজ্জা থেকে (দৃষ্টি) ফিরিয়ে নিয়ে তার ভিতরগত বাতিনী হালের মধ্যে সকল সময় গরক থেকে খোদা তায়ালার সৃষ্ট জগৎ, কায়েনাতের অপূর্ব, বিস্ময়কর নির্মাণ কৌশলের দিকে লক্ষ্য রাখে তাহলে (তার নিকট খোদাতায়ালার রহস্যে ও হাক্বীক্বতের) দরজা খুলে দেয়া হয়। আর এটা হচ্ছে ঐ দরজা যা কারো জন্য উন্মুক্ত করা হয়না। বিশেষ করে ইনসানের জন্যই এটা খোলা হয় যাতে তার মনঞ্জিলে মাকসুদ দেখিয়ে দেয়া হয়। সুওয়ালঃ- যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাককে দেখেছে তাকে আমাকে দেখিয়ে দিন? জাওয়াবঃ- আল্লাহ্ পাককে চক্ষুষ্মান ব্যক্তি দেখতে পাননা। অর্থাৎ চক্ষুষ্মান ব্যক্তির নিকটও তিনি নন। বরং অনেক ক্ষেত্রে কাশ্ফ সম্পন্ন বুযূর্গ) দৃষ্টিহীন হলেও তাকে দেখতে পান। (অসমাপ্ত)
বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার