-মুহম্মদ সাদী
(ধারাবাহিক)
লব্ধ মাকামে ইস্তিকামত
আল্লাহ্ পাক -এর মুহব্বত ও মারিফাত লাভকারী আত্মনিষ্ঠ ওলীগণের লব্ধ মাকামে ইস্তিকামত (অবিচল) থাকা অপরিহার্য। আত্মকেন্দ্রিকতা ও আত্মনিষ্ঠতা এক নয়। আত্মকেন্দ্রিকতা একান্তই অন্তর্মূখী বিষয়। সাধারণ ক্ষেত্রে ব্যষ্টি ও সমষ্টিতে এর কোন প্রভাব পড়েনা। আত্মজ্ঞ বান্দার নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে ইস্তিকামত যুক্ত না হলে শুধু প্রবল আত্মকেন্দ্রিক প্রয়াসে ক্রমবর্ধিষ্ণু অগ্রযাত্রার গতি ও প্রকৃতি শঙ্কামুক্ত থাকেনা। ওলীয়ে মাদারজাদ, লিসানুল হক, আওলার্দু রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বর্তমান মাকামে পরিপূর্ণরূপে ইস্তিকামত রয়েছেন। তা এমন যে, আল্লাহ্ পাক-এর অপার অনুগ্রহে নৈকট্য প্রাপ্তির শীর্ষ সোপান থেকে তাঁর পিছুটানের আর কোন শঙ্কা নেই। মানুষের বড় অসংগতি যে, জন্মগতভাবে সে দুর্বল। স্বভাবগত দুর্বলতার গ্লানি তাকে আমৃত্যু বয়ে বেড়াতে হয়। সাধ ও সাধ্যের বৈরী ব্যবধানের দুঃসহ নিপীড়নে মানুষের নশ্বর জীবন আবর্তিত হয়। আল্লাহ্ পাক বলেন,
خلق الانسان ضعيفا.
অর্থঃ- “মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে।” (সূরা নিসা/২৮) এ আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক জানিয়েছেন যে, স্বভাবগতভাবে মানুষ খুব অসহায়। তার অসহায়ত্বের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রবৃত্তিগত সত্বরতা, চঞ্চলতা ও অস্থিরতা। চঞ্চল ও অস্তিরমতি সাধারণ মানুষ কোন কথা ও কাজেই ইস্তিকামত থাকতে পারেনা। প্রবৃত্তির তাড়নায় অতি দ্রুত তার কর্মনিযুক্তি, আত্মনিবেদন, প্রয়াস ও প্রচেষ্টার পরিবর্তন ঘটে যায়। কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
خلق الانسان من عجل.
অর্থঃ- “মানুষ সত্বরতা প্রিয় স্বভাবে সৃষ্ট হয়েছে।” (সূরা আম্বিয়া/৩৭) একান্তভাবে আল্লাহ্ পাক-এর মেহেরবানী না পেলে জন্মগত দুর্বল ও অস্থির মানুষের দুর্ভোগ দূর হয়না এবং কাম্য পর্যায়ের আত্মবিশ্বাস ও আত্মনিবেদন অর্জিত হয়না। ফলে, ইবাদত-বন্দেগীতে ষোল আনা দখল জমেনা। আল্লাহ্ পাক এবং তাঁর প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি হাছিলের নির্ধারিত পথে ইস্তিকামত থাকা আদৌ সম্ভব হয়না। মূলতঃ ইস্তিকামতের উপর সুদৃঢ় না থাকতে পারা মানুষের জন্মগত স্বভাব ও দূর্বলতার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, সুলতানুল নাছীর, সিরাজুম মুনীরা, দলীলে কা’বায়ে মাকছূদ, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সূরা হুদ আমাকে বৃদ্ধ করে ফেলেছে।” সূরা ‘হুদ’-এর যে আয়াত শরীফ সম্পর্কে তিনি একথা বলেছেন তা’ হলো,
فاستقم كما امرت
অর্থঃ- “আপনি ইস্তিকামত অবলম্বন করুন, যেমন আপনি আদিষ্ট হয়েছেন।” (সূরা হুদ/১১২) তা হলে কি তাফসীরে কালামে ইলাহী, ছহিবু জামিউল কালিম, ছহিবু লাওলাক, ছহিবুল আয়াত, মাশুকে মাওলা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশিত পথে ইস্তিকামত থাকতে না পারার শস্কায় বৃদ্ধ হবার কথা বলেছেন? (নাউযুবিল্লাহ)। আয়াত শরীফের মর্মবানীতে অস্থিরমতি উম্মতের স্বভাবগত দুর্বলতা এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে আদেশ পালনে প্রবৃত্তিগত অনীহার কথা ভেবে তিনি উদ্বিগ্ন হয়েছেন। সমগ্র কুরআন পাক-এর মধ্যে এ আয়াত শরীফে ইস্তিকামত থাকার আদেশকেই তিনি সবচেয়ে কঠিন বলে বিবেচনা করেছেন। বুযূর্গানে দ্বীনের অন্যান্য কারামতের মধ্যে ইস্তিকামতের কারামত সবচেয়ে বড় কারামত। কারণ, ইস্তিকামতের মর্যাদা অনেক ঊর্ধ্বে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, “পূর্ণ কুরআন পাক-এর মধ্যে এই আয়াত শরীফের চেয়ে কঠিন ও কষ্টকর কোন হুকুম নাযিল হয়নি।” আল্লাহ্ পাক-এর এই কঠিন আদেশ তাঁর প্রিয়তম হাবীব, সাইয়্যিদুল খালায়িক্ব, ছহিবু মাক্বামি মাহমূদ, রিসালতে পানাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইস্তিকামতের সঙ্গে আদৌ সম্পৃক্ত নয়। নুবুওওয়াত ও রিসালতের মহান দায়িত্ব পালনসহ সকল বিষয়ে অনুক্ষণ ইস্তিকামত (অটল) থাকার যোগ্যতা দানসহ আল্লাহ্ পাক তাঁকে সর্বাগ্রে সৃষ্টি করেছেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। (অসমাপ্ত)