-মুহম্মদ ওয়াজিহুল্লাহ
لا تجعلوا دعاء الرسول بينكم كدعاء بعضكم بعضا.
অর্থঃ- “তোমরা পরস্পর পরস্পরকে যেভাবে সম্বোধন করে থাক, সেভাবে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করোনা।” (সূরা নূর/৬৩)
উপরোক্ত আয়াত শরীফের দ্বারা মহান আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে কঠোরভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, মানুষ যেন তাঁর পেয়ারা হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সেভাবে না ডাকে যেভাবে মানুষ একে অপরকে ডেকে থাকে। স্বয়ং আল্লাহ্ পাকই তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সমগ্র কুরআন শরীফের কোথাও তাঁর পবিত্র নাম মুবারক ধরে ডাকেননি। এটা মূলতঃ আল্লাহ্ পাক-এর পক্ষ থেকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আফযালিয়াতের বহিঃপ্রকাশ। অথচ বর্তমানে দেখা যায় আধুনিক বাংলা সাহিত্যের যেসব লেখক আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবন চরিত রচনা করেছেন, সংকলন করেছেন তাদের অনেকেই আরবী ভাষা ও সাহিত্যে অনভিজ্ঞ। যার ফলে তারা বাংলা সাহিত্যে আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রকৃত আফযালিয়াতের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তারা তাদের সাহিত্যে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রকৃত আফযালিয়াত তুলে ধরার পরিবর্তে তাঁকে মানবীয় বৈশিষ্ট্যের সাথে তুলনা করেছেন। যার ফলে দেখা গেছে বাংলা সাহিত্যে রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মনগড়া ভাবে নিছক একজন “বিশ্বনেতা,” “মহামানব,” “মহাপুরুষ” নামকরণে চিত্রিত করা হয়েছে। অথচ আমরা গভীরভাবে ফিকির করলে বুঝতে পারব যে, এটা মূলতঃ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আফযালিয়াত তথা শানের সম্পূর্ণ খিলাফ। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন, আল্লাহ্ পাক-এর খাছ রসূল।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
وما محمد الا رسول.
অর্থঃ- “মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রসূল ব্যতীত অন্য কিছুই নন।” (সূরা আলে ইমরান/১৪৪)
হাদীস শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
انا حبيب الله- انا سيد المرسلين- انا خاتم النبين.
অর্থঃ- “আমি হচ্ছি “হাবীবুল্লাহ” অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, অর্থাৎ রসূলগণের সাইয়্যিদ, খাতামুন্ নাবিয়্যীন অর্থাৎ সর্বশেষ নবী।” (মিশকাত শরীফ) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,
لست كاحد كم
অর্থঃ- “আমি তোমাদের কারো মত নই।” বস্তুতঃ আমাদের স্মরণ রাখা আবশ্যক যে, “বিশ্ব নেতা” বলতে সাধারণতঃ বিশ্বের মধ্যে যে সবচেয়ে বড় নেতা বা সমকালীন কোন বড় নেতাকে বুঝানো হয়। অপরদিকে “মহামানব” “মহাপুরুষ” শব্দদ্বয় মুসলমান, অমুসলমান সবার ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মূলতঃ এক বা একাধিক বিষয়ে কোন ব্যক্তি বিশেষ যোগ্যতা অর্জন করলে তাকেই “মহামানব” “মহাপুরুষ” বলে অভিহিত করা হয়। সে মুসলমানও হতে পারে আবার ইহুদী, নাছারা, হিন্দু, বৌদ্ধ, মজুসী, মুশরিক, নাস্তিকও হতে পারে। আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন- রহমতুল্লিল আলামীন। তিনি মানুষের মাঝে আগমণ করলেও তিনি আমাদের মত মানুষ নন। তাঁর প্রতি ওহী নাযিল হয়। তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, সাইয়্যিদুল খলায়িকে ওয়াল বাশার, তিনি হামিলু লি’ওয়ায়িল হামদ, তিনি ইমামুল মুরসালীন, তিনি ক্বয়িদুল মুরসালীন, তিনি সাইয়্যিদুল বাশার, তিনি হাবীবুল্লাহ, তিনি নূরে মুজাস্সাম। অথচ যারা বিশ্বনেতা, মহামানব, মহাপুরুষ খেতাবে ভূষিত তারা কেউই আলোচ্য কোন একটি গুণের লেশমাত্রেরও অধিকারী নয়। কাজেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কাফির-মুশরিক, নাস্তিকদের মত মানহানীকর লক্ববে ডাকা কুফরীর নামান্তর। আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে হুযূরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যথাযথ পরিচয় জানার এবং তা জেনে হাক্বীক্বী তাযিম-তাকরীম, সম্মান ও মুহব্বত করার তৌফিক দিন। (আমীন)