ফখরে ক্বায়িনাত, রহমতে আলম, ছাহিবে শরহে ছুদূর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরহে ছুদূর (সিনা মুবারক চাক) উনার পরিমিত হিস্যা পেয়েই ওলী আল্লাহগণের কামিয়াবী অর্জিত হয়।

সংখ্যা: ১০৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

-মুহম্মদ সাদী

الم نشرح لك صدرك ووضعنا عنك وزرك الذى انقض طهرك ورفعنا لك ذكرك.

অর্থঃ- “আমি কি আপনার সিনা চাক (বক্ষ মুবারক প্রসারণ) করে দেইনি? আমি আপনার বোঝা অপসারণ করেছি। যা আপনার পৃষ্ঠ মুবারক অবনমিত করে রেখেছিল। এবং আমি আপনার আলোচনাকে (সম্মান) বুলন্দ (অফুরন্ত) করেছি।” (সূরা ইন্শিরাহ/১-৪)     কালামুল্লাহ্ শরীফের উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ্ পাক তাঁর প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তিনটি খাছ নিয়ামত দানের বিষয় উল্লেখ করেছেন, (১) শরহে ছুদূর (বক্ষ মুবারক প্রসারিত করণ), (২) দুঃসহ বেদনাভার অপসারণ এবং (৩) মর্যাদা ও মর্তবা সমুন্নত (অফুরন্ত) করণ। তিনটি নিয়ামতই খাছ। আয়াত শরীফ চতুষ্টয় পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত এবং একটি অপরটির অনুষঙ্গ। শেষোক্ত দু’টি নিয়ামত (বেদনাভার লাঘব ও মর্যাদা সমুন্নত করণ) ব্যঞ্জনা ও অর্থ দ্যোতনায় প্রথমোক্ত নিয়ামত (সিনা মুবারক চাক)-এর সঙ্গে মূলতঃ সম্পৃক্ত। অবশ্য আয়াত শরীফগুলোয় উল্লিখিত তিনটি নিয়ামতই সমমর্যাদা সম্পন্ন। সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, সুলতানুন নাছীর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শরহে ছুদূর (বক্ষ মুবারক প্রসারণ) আমাদের কাছে “সিনা চাক” নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। সাধারণ ও সহজ ভাবনায় “সিনা চাক”-এর অর্থ হলো, বুকের অভ্যন্তরভাগ উম্মুক্ত করণ, প্রশস্ত করণ। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ কিম্বা অন্য কোন পরিমাপে বুকের পরিবৃদ্ধি ঘটানো এর লক্ষ্য নয়। আল্লাহ্ পাক-এর মুহব্বত ও মারিফাত হাছিলের জন্য আত্মনিবেদন ও আত্মবিস্তৃতি অপরিহার্য।

প্রশান্ত ও প্রশস্ত অন্তঃকরণের অনিবার্যতা সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক বলেন,

يوم لا ينفع مال ولاينون الا من اتى الله بقلب سليم.

অর্থঃ- “সেদিন (কিয়ামতের দিন) অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি কোন উপকারেই আসবেনা। সে ছাড়া, যে প্রশান্ত অন্তকরণে (ইছলাহ প্রাপ্ত প্রশস্ত অন্তরে) আল্লাহ্ পাক-এর নিকট পৌঁছবে।” (সূরা শোআরা/৮৮-৮৯)           অন্তরের সুস্থতা ও যোগ্যতার প্রয়োজনে বুকের অভ্যন্তরভাগ থেকে অবাঞ্ছিত ও অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো ফেলে দিয়ে নবতর আয়োজনে সেখানে এমন নিয়ামতরাজির প্রবেশ ঘটানো যাতে অন্তর নির্মল হয়, অনুভূতি শাণিত হয়। একই সঙ্গে সমঝ সূক্ষ্ম হয়, বিবেক জাগ্রত হয় এবং হৃদয় খোদায়ী আলোয় উদ্ভাসিত হয়। প্রেক্ষিত কারণে সূক্ষ্ম সমঝ ও প্রজ্ঞার সমন্বয়ে নির্মিত “ঐশ্বর্যমন্ডিত অন্তকরণ” এবং “সিনা চাক” সমার্থক।

তবে কি কৈশোরের চঞ্চলতা, বয়ঃসন্ধির অস্থিরতা, আল্লাহ্ পাক-এর পয়গাম (ওহী) লাভের অযোগ্যতা এবং মিরাজ শরীফ ভ্রমনের অনুপযুক্ততা দূর করা এবং সর্বোপরি রিসালতের মহান দায়িত্ব পালনের জন্য সিনা মুবারক চাক-এর মাধ্যমে নূরে মুজাস্সাম, ছহিবে মাকামে মাহমুদ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুবারক বাহ্যিক ও অভ্যন্তরভাগ ঐশ্বর্যমন্ডিত করা হয়েছে? (নাউযুবিল্লাহ)! এমন কুফরী বিশ্বাস স্বেচ্ছাচারী আক্বীদার বিষফল। সমুদয় সৃষ্টির উপলক্ষ্য, সমস্ত আলম পরিচালনায় নিয়ামত ও রহমতের উৎস ধারা, সৃষ্টিকুল প্রাণময়, বিকশিত ও সঞ্জীবিত করে রাখার নিয়ামক মাধ্যম, শাফায়াতে কোবরার একক অধিকারী, হিদায়েত ও আবেহায়াতের অফুরন্ত প্রস্রবণ এবং মর্যাদা ও মর্তবায় আল্লাহ্ পাক-এর পরেই অধিষ্ঠিত মাশুকে মাওলা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুবারক অভ্যন্তরভাগে যা’ ছিল, তার সবকিছুই পবিত্র থেকে পবিত্রতম। কোন কিছুই ফেলে দেয়ার মতো নয় এবং ফেলেও দেয়া হয়নি, যদিও আল্লাহ্ পাক সিনা মুবারক চাক-এর আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছেন। এই আনুষ্ঠানিকতায় আল্লাহ্ পাক আপন হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এক অনন্য বৈশিষ্ট্য এবং আদ্যন্তকালের অতুলনীয় মর্যাদার অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এবং বিষয়টি কালামুল্লাহ্ শরীফের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আদ্যন্তকালের অনন্য দৃষ্টান্ত এজন্য যে, অন্য কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম-এর সিনা মুবারক আনুষ্ঠানিকভাবে চাক করা হয়নি। কিন্তু তাঁদের কেউই ওহীর বাণী শ্রবণ, ধারণ, বহন, প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় কোন ব্যত্যয় ঘটাননি। বলা হয়,

انبى نبيا ولو كان صبيا.

অর্থঃ- “একজন নবী মূলতঃই নবী, যদিও তিনি শিশু হয়ে থাকেন।” সিনা মুবারক চাক ছাড়াই সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম তাঁদের নুবুওওয়াত ও রিসালতের দায়িত্ব আল্লাহ্ পাক-এর পূর্ণ সন্তুষ্টি মাফিক পালন করতে সক্ষম হয়েছেন। কাজেই ছরওয়ারে কায়েনাত, রহমতে ইলাহী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যোগ্যতাদানের প্রয়োজনে তাঁর সিনা মুবারক চাক করার প্রশ্ন অবান্তর। এমন অবান্তর আক্বীদা জঘন্য কুফরী। কিন্তু বাস্তবতা হলো যে, সাইয়্যিদুস্ সাকালাইন, রহমতুল্লিল আলামীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সিনা মুবারক আনুষ্ঠানিকভাবে চাক করা হয়েছে। হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, “আমি সিনা মুবারক চাক-এর চিহ্ন কখনো কখনো হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বুক মুবারকে প্রত্যক্ষ করেছি (যখন বুক মুবারক দেখেছি)।” সিনা চাক (বক্ষ মুবারক প্রসারণ)-এর ব্যাখ্যায় ছহিবে শরহে ছুদূর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “এটা এক নূর (আলোকময় প্রজ্ঞার সমন্বয়ে চিন্তা নিবিষ্ট মনন), যা আল্লাহ্ পাক অন্তরে প্রক্ষিপ্ত করে দিয়ে থাকেন।” এর নিদর্শনের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “কল্পনার আবেশ (নশ্বর দুনিয়া) থেকে দূরে সরে পড়া (পূর্ণ মাত্রায় বিরাগ হওয়া), চিরস্থায়ী আবাসের (আখিরাত) প্রতি মনোযোগী হওয়া এবং মৃত্যু আসার পূর্বেই মৃত্যুর জন্য তৈরী হয়ে যাওয়া।”

অন্য এক হাদীস শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

موتوا قبل ان تموتوا.

অর্থঃ- “তোমরা মৃত্যুর আগেই মৃত্যু বরণ কর।”     এ হাদীস শরীফ থেকে জানা গেল, সিনা চাক-এর মাধ্যমে যে পরম অর্জন তা’ হলো, গায়রুল্লাহ থেকে নিজের বিমুক্তি ঘটে যাওয়া এবং পরিপূর্ণরূপে আল্লাহ্ পাক-এর প্রতি সমর্পিত হওয়া। তবে কি মাশুকে মাওলা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিপূর্ণরূপে আল্লাহ্ পাক-এর প্রতি সমর্পিত ছিলেন না? অবশ্যই ছিলেন। যেমন তিনি অনুক্ষণ সমর্পিত ছিলেন সিনা মুবারক চাক-এর আনুষ্ঠানিকতার পূর্বে এবং আনুষ্ঠানিকতার পরে। হাদীসে কুদসীতে আমরা জানতে পাই, আল্লাহ্ পাক বলেন,

يا محمد صلى الله عليه وسلم انا وانت وما سواك خلقت لاجلك.

অর্থঃ- “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! শুধু আমি এবং আপনি। আমার সমুদয় সৃষ্টির উপলক্ষ্য হলো আপনার প্রতি আমার গভীরতম মুহব্বত।” জবাবে সাইয়্যিদুল খালায়েক্ব, নবীয়ে আকদাস হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিনীত নিবেদন,

يا رب انت وما انا وما سواك تركت لاجلك.

অর্থঃ- “আয় আল্লাহ্ পাক! কেবল একাই আপনি। আমি নই। আপনার প্রতি গভীরতম মুহব্বতের কারণে সকল কিছুর প্রতি বিরাগ হয়ে আমি একান্তভাবে আপনার প্রতি রুজু হয়ে গেছি।”          সিরাজুম মুনীরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সিনা চাককে অন্তরে প্রক্ষিপ্ত নূর অভিধায় অভিহিত করেছেন। এ হাদীস শরীফের তাৎপর্য ও সম্পৃক্ততা প্রকৃত পক্ষে মু’মিনে কামিল, অর্থাৎ ওলী আল্লাহ্গণের আলোকময় মানসগঠনের জন্য প্রযোজ্য। হাদীস শরীফখানির নিগূঢ় তাৎপর্য হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে আদৌ সংশ্লিষ্ট নয়। কারণ, তিনি নিজেই নূর, অর্থাৎ বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণভাবে নূরে মুজাস্সাম। যোগ্যতা দানের প্রশ্নে সিনা মুবারক চাক-এর মাধ্যমে তাঁর অভ্যন্তরভাগে নতুনভাবে নূর (বিশুদ্ধতা/পবিত্রতা) অনুপ্রবেশের প্রয়োজন নেই। নিবন্ধের স্বল্প পরিসরে এ বিষয়ে সবিস্তার আলোচনার সুযোগ নেই। শুধু বিপর্যস্ত আক্বীদার ভ্রান্ত মানুষকে মনে করিয়ে দেয়া এবং সর্তক করে তোলা যে, উপযুক্ততা দানের প্রশ্নে হাবীবুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সিনা মুবারক চাক করা হয়নি। অনন্য বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদায় বিভূষিত করার জন্য এটি নিছক একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। লক্ষ্য বিচ্যুত ও ভ্রান্ত মানুষের তওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে এখনই ঈমান ও আক্বীদা নবায়ন করা প্রয়োজন।    নিবন্ধের শুরুতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ্ পাক-এর মুহব্বত ও মারিফাত হাছিলের জন্য পরিপূর্ণ আত্মনিবেদন ও আত্মবিস্তৃতি অপরিহার্য। আলোকিত অন্তর ও সিনা চাক অভিন্ন তাৎপর্য বহন করে। কারণ, সিনা চাকের মাধ্যমেই আলোকিত অন্তর অর্জিত হয়। আল্লাহ্ পাক এবং তাঁর সৃষ্ট কায়েনাতকে গভীরভাবে উপলব্ধির জন্য ইলহাম ও ইলকা লাভের মতো যোগ্য অন্তরে ইলমে লাদুন্নীর (খোদা প্রদত্ত মদদ/প্রজ্ঞা) আলোকময় আভার উদ্ভাসন আবশ্যক। ছহিবু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন মুবারক উচ্চতম যোগ্যতায় (মাকাম) অধিষ্ঠিত ছিলেন, যে যোগ্যতার কারণে তিনি সদা জাগ্রত অবস্থায় ইহকাল ও পরকাল এবং আদি ও অন্ত সামগ্রিক ও পরিপূর্ণরূপে বাস্তবে প্রত্যক্ষ করণে দায়িম ও কায়িম ছিলেন। তাঁর আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক শক্তি ও যোগ্যতা মুবারক স্বভাব-সঞ্জাত আচরণের সঙ্গে একীভূত। যে বিষয়গুলো মানুষের কাছে অবোধ্য, তা মু’জিযা নামে অভিহিত হয়েছে। আল্লাহ্ পাক-এর অপার করুণা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুবারক মধ্যস্থতায় সূক্ষ্মদর্শী ওলীগণ আলোকময় অন্তকরণ ও ঐশ্বর্যপূর্ণ সমঝের অধিকারী হয়ে থাকেন। উত্তরণের এমন স্তরে তাঁদের দৃষ্টি ও রহস্যের মাঝে পর্দার আবরণ উম্মোচিত হয়ে যায়। প্রসারিত অন্তকরণ বিশিষ্ট ওলীআল্লাহ্গণ তখন দৃঢ় প্রত্যয়ে উচ্চারণ করেন, “প্রত্যক্ষ দর্শন, সংযোগ ও প্রাপ্তির অব্যাহত ধারা পর্দায় ঢেকে দিলেও আমাদের বিশ্বাস ও অনুভবে কোন হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটবেনা।” এমন অতল গভীর অনুভব, অব্যাহত প্রাপ্তিযোগ, অভাবিত নিয়ামত ও অতুলনীয় বখ্শিস  ওলী আল্লাহ্গণ ওয়ারিশসূত্রে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে লাভ করে থাকেন।     প্রজ্ঞার অন্য নাম সমঝ। প্রজ্ঞা ও ইল্ম কিছু তথ্য সংগ্রহের নাম নয়। অর্জিত তথ্য, তত্ত্ব ও প্রজ্ঞার সমন্বিত অনুভবে আত্মবিকাশ (অন্তরের প্রসারণ) না ঘটলে  মানুষ তিমিরেই থেকে যায়। যে অনুভব ও অনুসন্ধিৎসা মানুষকে আল্লাহ্মুখী করেনা তা সর্বোতভাবে পরিত্যাজ্য। কাঠিন্য ও সংকীর্ণতা দূর করে অভ্যন্তরভাগ ঐশ্বর্যবান করার লক্ষ্যেই হৃদয়ের প্রশস্ততা প্রয়োজন। অনুভূতি ও উপলব্ধির জাগরণে অপার বিস্ময়ে অনুক্ষণ মুহ্যমান থাকার প্রয়োজন ও গুরুত্ব বুঝাতে হাবীবুল আওয়ালীন ওয়াল আখিরীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের সম্পর্কে বলেছেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! আপনার সম্পর্কে আমার বিস্ময় অনুক্ষণ বৃদ্ধি করতে থাকুন।” বুঝতে কষ্ট হয়না যে, আল্লাহ্ পাক এবং তাঁর প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে অপার বিস্ময়, আগ্রহ, আকুতি ও আনুগত্য সৃষ্টি হওয়াই বান্দার সমঝ ও আত্মজাগৃতির অন্তর্নিহিত বিষয়। তিনি আরো বলেছেন, “পূর্বাপেক্ষা অধিক ইল্ম যেদিন আমার অর্জিত না হয় (আল্লাহ্ পাক সম্পর্কে যে দিন অন্তর মুবারকে নবতর সূক্ষ্ম অনুভূতির উন্মেষ না ঘটে)। সেদিন যেন আল্লাহ্ পাক আমাকে তাঁর কোন পরিচিতি দান না করেন।” এই নবতর অনুভব ও উপলব্ধি সিনা মুবারক চাক-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। আল্লাহ্ পাক বলেন,

من يرد الله ان يهديه يشرح صدره للاسلام.

অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক যাকে হিদায়েত দান করতে চান, তার সিনাকে ইসলামের জন্য প্রসারিত করে দেন।” (সূরা আনআম/১২৫)

উম্মতের জন্য আত্মজাগৃতি, আত্মবিকাশ, শাণিত অনুভূতি ও সূক্ষ্ম সমঝের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বুঝাতে উপরোক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, দলীলে কা’বায়ে মাকসূদ, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

من يرد اله به خيرا يفقهه فى الدين.

অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক যার মঙ্গল চান, তাকে দ্বীনি সমঝ দান করে থাকেন।” (মিশকাত শরীফ)    প্রাসঙ্গিক অন্য হাদীস শরীফে তিনি বলেছেন,

الغنى غنى النفس.

অর্থঃ- “অন্তরের ঐশ্বর্যই প্রকৃত ঐশ্বর্য।”       আনুষ্ঠানিক সিনা মুবারক চাক না হলেও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, দলীলে কা’বায়ে মাকসূদ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুবারক সম্পৃক্ততায় (উছীলা) সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম-এর ওহীর বাণী শ্রবণ, ধারণ, বহন, প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। তাহলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সিনা মুবারক চাক-এর প্রয়োজন হবে কেন? আসলে এটি নিছক আনুষ্ঠানিকতা। এই আনুষ্ঠানিকতার আবরণে অনন্য নযীর স্থাপনের মাধ্যমে আল্লাহ্ পাক আপন হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নিদ্রা-জাগরণ, আহার-অনাহার, আনন্দ-বিষাদ, দারিদ্র-প্রাচুর্য, যন্ত্রনা-সান্ত¡না, অনুরাগ-বিরাগ এবং বৈরী ও অনুকূল পরিবেশ-প্রতিবেশে অনুক্ষণ অটল ছিলেন। অর্থাৎ কোন অবস্থায়ই নুবুওওয়াত, রিসালত, মর্যাদা ও মর্তবার রূপান্তর ঘটেনি। নুবুওওয়াত, রিসালত, ওহী প্রাপ্তি ও মিরাজ শরীফসহ যাবতীয় বিষয়ের আনুষ্ঠানিকতা, প্রকাশ, বিকাশ ও বাস্তবায়ন দৃশ্যতঃ পর্যায়ক্রমিক ধারায় ভিন্ন প্রেক্ষাপটে হলেও তিনি সামগ্রিক নিয়ামত লাভ করেছেন সৃষ্টির সূচনালগ্নে। আল্লাহ্ পাক-এর মাহবুব ওলীগণেরও সিনা চাক প্রয়োজন। তবে তা আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে নয়। চিন্তা, অনুসন্ধান, বিনয়, বিস্ময় ও আনুগত্য-সমৃদ্ধ ঐশ্বর্যমন্ডিত প্রশস্ত হৃদয় লাভের জন্য ওলী আল্লাহ্গণকে নিরবধি রহমতুল্লিল আলামীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুবারক আবেহায়াতের দিকেই ফিরে যেতে হয়। প্রশান্ত ও প্রসারিত অন্তকরণের আয়োজনে চিন্তা ও অন্বেষার ব্যাপ্তি এবং বেদনার গভীরতা না থাকলে প্রার্থীত প্রয়োজন পূরণ হয়না।

আল্লাহ্ পাক-এর নিয়ামত কেবল বান্দার যোগ্য অন্তরেই ঠাঁই লাভ করে। এই পরম নিয়ামত পেলেই বান্দা মর্যাদাবান হয়। বিদগ্ধ কবি তাঁর মরমী কাসিদায় বলেন,

 داد خق را قابليت شرط نيست+ بلكه شرط قابليت داد اوست.

অর্থঃ- “নাজ-নিয়ামত কোন যোগ্যতার মুখাপেক্ষী নয়। ছহিবে নিয়ামত আল্লাহ্ পাক অপার করুণায় নিয়ামত দান করলেই বান্দা যোগ্যতার আসনে অধিষ্ঠিত হয়।” সত্য যে, আল্লাহ্ পাক-এর মুহব্বত ও মারিফাতের জন্য বান্দার উম্মূখ অন্তরে প্রচ্ছন্নভাবে মিশে থাকা আগ্রহ ও উদ্বেলতাই নিয়ামত আকর্ষণ করে থাকে। তাই প্রসারিত হৃদয়ে যার আকাঙ্খা ও আকুতি যতো বেশী, তাঁর প্রাপ্তিযোগও ততো ব্যাপক। ওলী আল্লাহ্ গণের বেদনা-বিমুগ্ধ মননে এই আকাঙ্খা ও আকুতির নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ সাধিত থাকে। আল্লাহ্ পাক-এর নিগূঢ় নৈকট্য হাছিলের জন্য বিরাগী মনে যন্ত্রনাকাতর উম্মুখ ওলীআল্লাহ্গণেরও সিনা  চাক (অন্তর প্রসারণ) হওয়া প্রয়োজন। ছহিবে লাওলাক, ছহিবে শরহে ছুদূর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

انما انا قاسم والله يعطى.

অর্থঃ- “বন্টন করি আমি, আর দান করেন আল্লাহ্ পাক।”  (মিশকাত শরীফ)

রউফুর রহীম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুবারক বন্টন ব্যবস্থায় খাছ ওয়ারিশসূত্রে ওলীআল্লাহ্গণকে এই পরম নিয়ামতলাভের (সিনা মুবারক চাক-এর হিস্যা) জন্য তাঁরই দ্বারস্থ হতে হয়। এটা সম্ভব হয় তখন, যখন আল্লাহ্ পাক ও তাঁর প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইশ্কে তাঁদের বুকের অভ্যন্তরে থাকে বেদনার অথৈ পারাবার। আর এভাবেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সিনা মুবারক চাক-এর পরিমিত হিস্যালাভেই ওলী আল্লাহ্গণের পরিপূর্ণ কামিয়াবী হাছিল হয়।

“মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে জামায়াতে নামায আদায় করার” ব্যাপারে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আম ফতওয়া হচ্ছে মাকহুহ তাহরীমী আর খাছ ফতওয়া হচ্ছে কুফরী।

সাইয়্যিদুল জিননি ওয়াল ইনস, ইমামুল আউয়ালীন ওয়াল আখিরীন, খতীবুল আম্বিয়া হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হায়াতুন নবী

ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, খাতামুন নাবিয়্যীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মযদা-মতবা, শান-মান সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের চেয়ে অনেক উর্দ্ধে

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ছাহিবু মাক্বামি মাহমূদ, শাফউল উমাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম উনার শ্রেষ্ঠত্ব

সাইয়্যিদুল কাওনাইন, শাফিউল মুজনিবীন, ইমামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলে বাইতগণের ফযীলত

সাইয়্যিদুল বাররি ওয়াল বাহর, ইমামুস সাক্বালাইন, তাজেদারে মদীনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আওলাদগণের ফযীলত