-মুহম্মদ আলাউদ্দীন আল আজাদ
قل لا اسئلكم عليه اجرا الا المودة فى القربى.
অর্থঃ- “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, (হে বিশ্ববাসী) আমি তোমাদের নিকট নুবুওয়াতের দায়িত্ব পালনের কোন প্রতিদান চাইনা। তবে আমার আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সদাচরণ করবে।” (সূরা শূরা/২৩) আওলাদুর রসূল তথা আল্লাহ্ পাক-এর রসূলের বংশধরগণের ফযীলত সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, রইসুল মুফাস্সিরীন, ওলীয়ে কামিল আল্লামা কাজী ছানাউল্লাহ পানি পথি রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ আয়াত শরীফের এরূপ ব্যাখ্যা করি যে,
لا اسئلكم اجرا الا ان تودوا اقربائى واهل بيتى وعتر تى وذلك لانه صلى الله عليه وسلم كان خاتم النبى لانبى بعده وانما انتصب اللدعوة الى الله، بعده صلى الله عليه وسلم علماء امته من اهل الظاهر والباطن ولذالك امر اله تعالى نبيه صلى الله عليه وسلم ان يامر امته بمودة اهل بيته لا ن عليا رضى الله تعالى عنه والائمة من اولاده كانوا قطبا بالكمالات الولاية.
অর্থঃ- “আমি তোমাদের নিকট প্রতিদান চাইনা তবে তোমরা আমার নিকটাত্মীয়, আহ্লে বাইত ও বংশধরগণের (সম্মান প্রদর্শন কর) হক্ব আদায় কর। কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন আখিরী বা শেষ নবী। তাঁর পরে কেউ নবী হিসেবে আগমন করবেনা।” সুতরাং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দাওয়াতের দায়িত্ব কেবল মাত্র তাঁর উম্মতগণের মধ্যে যারা ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাছাউফে পরিপূর্ণ ওলামা-ই-কিরাম তাঁদের উপরই বর্তিয়েছে। আর সে জন্যই মহান আল্লাহ্ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নির্দেশ করেছেন যে, তিনি যেন স্বীয় উম্মতগণকে নির্দেশ দেন যেন তারা তাঁর আওলাদগণকে সম্মান (তা’যীম-তাকরীম) করে। কেননা হযরত আলী কাররা মাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং তাঁর বংশধরগণের মধ্যে ইমামগণই ছিলেন কামালত ও বিলায়েত সম্পন্ন কুতুব।” (তাফসীরে মাযহারী ৮ম জিঃ ৩২০ পৃষ্ঠা) উপরোক্ত আলোচনায় যেটা প্রতীয়মান হচ্ছে তাহলো সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরে যেহেতু আর কেউ নবী হবেনা সেহেতু নুবুওওয়াতের এ মহান দায়িত্ব পালনের একচ্ছত্র অধিকারী হচ্ছেন যারা তাঁর ওয়ারিছ, বংশধর বা আওলাদগণ অথবা যাঁরা নায়েবে নবী বা ওয়ারাছাতুল আম্বিয়া হিসাবে স্বীকৃত।
এ সম্পর্কে “তাফসীরে মাযহারী” ৮ম জিঃ ৩২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে,
ومن اجل ذالك ترى كثيرا منا سلاسل المشائخ تنتهى اى ائمة اهل البيت ومضى كثير من الاولياء فى اسادات العظام منهم غوث الثقلين محى الدين عبد القادر الجيلانى الحسنى الحسينى وبها ء الدين النقشبندى والسيد اسند مودود جيشتى وسيد معين الدين الجيشتى وابوالحسن الشاذلى وغيرهم.
অর্থঃ- “আর এ জন্যই পীর-মাশায়েখগণের অনেক সিলসিলা দেখা যায় যা আহ্লে বাইতের ইমামগণ পর্যন্ত শেষ হয়েছে এবং অসংখ্য আউলিয়া-ই-কিরাম অতীত হয়েছেন যাঁরা এ (সাইয়্যিদ) বংশেরই অন্তর্ভুক্ত। যেমন, গাউছে ছাক্বালাইন, মুহিউদ্দীন হযরত বড় পীর আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমামুদ্ দুনিয়া ফি ইলমিল ফিক্বহে ওয়াত্ তাছাউফ, আল্লামা বাহাউদ্দীন নক্শবন্দী বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি, আল্লামা সাইয়্যিদ মওদূদ চিশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সুলতানুল আরিফীন, ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ তরীক্বত সাইয়্যিদ খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চিশ্তি রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং শায়খুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ হযরত আবুল হাসান সাজালী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমূখ। তদ্রুপ বর্তমান জামানর মুজাদ্দিদ ইমামুল আইম্মা, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদুয্ যামান, গাউসুল আযম, খাজায়ে খাজেগাঁ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ্ রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দাজিল্লুহুল আলী আওলাদগণের অন্তর্ভূক্ত আওলাদে রসূল তথা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বংশধরগণের ফযীলত সম্পর্কে হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
والله لايدخل قلب امرئى مسلم ايمان حتى يحبكم لله ولقرابتى.
অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক-এর কছম! ততক্ষণ পর্যন্ত কোন মুসলমান ব্যক্তির অন্তরে ঈমান দাখিল হবে না (হাক্বীক্বী ভাবে ঈমানদার হবে না) যতক্ষণ সে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর সন্তুষ্টির জন্য ও আমার বংশধর হওয়ার কারণে কুরাঈশদেরকে মুহব্বত না করবে।” (আহমদ, ইবনে কাছীর ৭/১৮০) অর্থাৎ আওলাদে রসূলগণের মুহব্বত ঈমানের অঙ্গ। এ সম্পর্কে ইমামুল আইম্মা, ইমামুল আ’যম, হাকিমুল হাদীস হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর জীবনী মুবারকের একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
একবার তিনি একস্থানে বসে স্বীয় ছাত্রদেরকে র্দস দিচ্ছিলেন। তখন তিনি কিছুক্ষণ পর বারবারই র্দস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে যেতেন। যার কারণে ছাত্রদের পড়া বুঝতে ও ধরতে অসুবিধা হতো। যখন র্দস শেষ হলো, তখন ছাত্ররা প্রশ্ন করল, “হে ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি! বেয়াদবী ক্ষমা করবেন, আমরা লক্ষ্য করেছি যে, আপনি বারবার র্দস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন এর পিছনে কি কারণ রয়েছে?” উত্তরে তিনি বললেন যে, “তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছ যে, আমাদের র্দস গাহের পাশেই কিছু ছোট ছেলেরা দৌঁড়াদৌঁড়ি করছিল। তন্মধ্যে অমুক ছেলেটি বার বার আমার নিকটবর্তী হলেই আমি দাঁড়িয়ে যেতাম।” ছাত্ররা বললো যে, “হ্যাঁ, আমরা তা লক্ষ্য করেছি। তবে এ ছোট ছেলেটি আপনার নিকটবর্তী হলে কেন দাঁড়িয়ে যেতেন, অনুগ্রহ করে তার কারণ আমাদেরকে জানিয়ে দিন।” তখন ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন যে, “দেখ, এ ছেলেটি আওলাদে রসূল বা আল্লাহ্ পাক-এর রসূলের বংশধর। তাঁর সাথে আল্লাহ্ পাক-এর রসূলের রক্তের সম্পর্ক রয়েছে। সেজন্য যখনই তিনি আমাদের দরসগাহের নিকটবর্তী হয়েছেন তখনই আমি তাঁর সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যাই। কেননা আল্লাহ্ পাক-এর রসূলের আওলাদগণকে তা’যীম-তাকরীম ও সম্মান প্রদর্শন করা ঈমানের অঙ্গ তথা আল্লাহ্ পাক ও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশ।” (সুবহানাল্লাহ্)