সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ১০৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

আনোয়ার হুসাইন নলছিটি, ঝালকাঠি

সুওয়ালঃ   মাসিক মদীনা মার্চ/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়। প্রশ্নঃ একখানি বাংলা দীনিয়াত কিতাবে উল্লেখিত হয়েছে যে, ‘মুহাম্মদ’ নাম রাখলে সে লোককে দোযাখের আগুনে জ্বালানো হবে না। কিন্তু কোন হাদীসের কিতাবের বরাত দেওয়া হয় নাই। ছহীহ হাদীসের কিতাবে এ মর্মে হাদীস আছে কিনা জানালে কৃতজ্ঞতা বোধ করব। উত্তরঃ আমি কোথাও এ মর্মে কোন বর্ণনা বা তথ্য এ পর্যন্ত পাই নাই। এখন আমার সুওয়াল হলো, যে ব্যক্তির নাম ‘মুহম্মদ’ ও ‘আহমদ’ সে ব্যক্তিকে কি সত্যিই দোযখের আগুনে জ্বালানো হবে না? এবং মুহম্মদ ও আহমদ নাম বিশিষ্ট ব্যক্তি কি সত্যিই জান্নাতে যাবে? এ সম্পর্কে দলীলসহ সঠিক জাওয়াব জানিয়ে বাধিত করবেন। জাওয়াবঃ  ‘মুহম্ম’দ বা ‘আহমদ’ নাম বিশিষ্ট ব্যক্তিকে দোযখের আগুনে জ্বালানো হবে না, এ সম্পর্কে মাসিক মদীনার সম্পাদকের পক্ষে কোন বর্ণনা বা কোন তথ্য না পাওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ শুধু বক্বদরে নিছাব পরিমাণ পড়া-শোনা করলে এ ধরণের কোন বর্ণনা বা কোন তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়।       দ্বিতীয়তঃ মাসিক মদীনার সম্পাদক যদি কোন বর্ণনা বা কোন তথ্য না পায় তাহলে কি উক্ত বর্ণনাটিকে বাদ দিতে হবে? কস্মিনকালেও নয়।

বরং আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশ হচ্ছে,

فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لاتعلمون.

অর্থঃ- “তোমরা আহ্লে যিক্রগণকে জিজ্ঞাসা কর যদি তোমরা না জান।” (সূরা নহল/৪৩)

অতএব, শরয়ী মাসয়ালা-মাসায়িল যাকে-তাকে জিজ্ঞাসা করা শরীয়তসম্মত নয়। একমাত্র যারা আহলে যিক্র তাঁদেরকেই জিজ্ঞাসা করতে হবে।

শরীয়তের মাসয়ালা হচ্ছে, ‘মুহম্মদ ও আহমদ’ নাম বিশিষ্ট ব্যক্তিকে দোযখের আগুনে জ্বালানো হবে না এবং ‘মুহম্মদ ও আহমদ’ নাম বিশিষ্ট ব্যক্তিও সত্যিই জান্নাতি হবে তা হাদীস শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত।  যেমন, হাদীস শরীফের বিখ্যাত কিতাব আল ফিরদাউস লিদ দায়লামী শরীফের ৫ম খন্ডের, ৫৩৫ ও ৪৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

عن انس بن مالك رضى الله تعالى عنه قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يوقف عبدان بين يدى الله عزوجل يوم القيامة فيأمر بهما الى الجنة فيقولان يا ربنا بما استأهلنا منك الحنة ولم نعمل عملا يجازينا الجنة فيقول الله عز وجل لهما عبداى ادخلا الجنة فانى اليت على نفسى ان لايدخل النار من اسمه احمد ومحمد.

অর্থঃ- “হযরত আনাছ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ্ পাক-এর সামনে দু’বান্দাকে দাঁড় করানো হবে। (অর্থাৎ যাদের একজনের নাম ‘মুহম্মদ’ এবং অপর জনের নাম ‘আহমদ’) আল্লাহ্ পাক তাদেরকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য আদেশ করবেন। তাঁরা উভয়ে বলবেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! আমরা কি কারণে জান্নাত লাভ করলাম আমরা তো জান্নাত লাভের উপযুক্ত কোন আমল করিনি।” অতঃপর মহান আল্লাহ্ পাক বান্দাদ্বয়কে বলবেন, “হে আমার বান্দা! তোমরা দু’জনই জান্নাতে প্রবেশ কর। কারণ নিশ্চয়ই আমি আমার জাত পাকের কসম করে বলছি, যে ব্যক্তির নাম ‘মুহম্মদ’ ও ‘আহমদ’ হবে সে কখনো দোযখে প্রবেশ করবে না।” (সুবহানাল্লাহ) (যাহরুল ফিরদাউস ৪র্থ খন্ড, ৪২৭ পৃষ্ঠা)

عن جعفربن محمد ينادى يوم القيامة يا محمد فيرفع راسه فى الموقف من اسمه محمد فيقول الله جل جلاله اشهدكم انى قدغفرت لكل من اسمه على اسم محمد نبى.

 অর্থঃ- “হযরত জা’ফর ইবনে মুহম্মদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে, ক্বিয়ামতের দিন “ইয়া মুহম্মদ” বলে অর্থাৎ ‘মুহম্মদ’ নাম ধরে ডাকা হবে। যে সকল ব্যক্তির নাম ‘মুহম্মদ’ তাঁরা সকলেই তাদের মাথা উত্তোলন করবেন। অতঃপর মহান আল্লাহ্ পাক বলবেন, “তোমরা সাক্ষী থাক, যারা আমার নবী মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামে নাম রেখেছে তাদের প্রত্যেককে আমি ক্ষমা করলাম।” (সুবহানাল্লাহ)

عن ابى امامة الباهلى رضى الله تعالى عنه قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من ولد له مولود فسماه محمدا حبالى وتبركا باسمى كان هو ومولوده فى الجنة.

অর্থঃ- “হযরত আবূ উমামা আল বাহিলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তির ছেলে সন্তান হয় অতঃপর সে ব্যক্তি যদি আমার মুহব্বতে এবং আমার নামের বরকতের জন্য তার ছেলে সন্তানের নাম ‘মুহম্মদ’ রাখে তাহলে সে ব্যক্তি এবং তার ছেলে উভয়েই জান্নাতে যাবে।”           হাদীস শরীফে আরো উল্লেখ আছে,

قال رسول الله صلى اله عليه وسلم قال الله عز وجل وعزتى وجلالى لاعذبت احدا يسمى باسمك فى انار.

অর্থঃ- “আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ্ পাক বলেন, আমার ইজ্জত ও জালালের কছম করে বলছি যে, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার নামে যাদের নাম রাখা হবে তাদের কাউকেই দোযখে শস্তি দান করবনা।” (মুসনাদুল ফিরদাউস)           উপরোক্ত হাদীস শরীফের আলোকে দিবালোকের ন্যায় সুম্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণিত হলো যে, যে ব্যক্তির নাম ‘মুহম্মদ’ বা ‘আহমদ’ হবে সে ব্যক্তিকে কখনোই দোযখের আগুনে জ্বালানো হবে না। বরং সে ব্যক্তি জান্নাতী হবে । আর যে ব্যক্তি তার সন্তানের নাম ‘মুহম্মদ’ বা ‘আহমদ’ রেখেছে সে ব্যক্তিও জান্নাতী হবে। শুধু তাই নয় যে ব্যক্তির নাম মুহম্মদ বা আহমদ নয় বা সে কারো নাম মুহম্মদ বা আহমদ রাখেনি তবে উক্ত নামকে সম্মান করেছে সেও জান্নাতী হবে। যদিও তার আমলে ত্রুটি থাকুক না কেন। এ প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে,        হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম-এর একজন উম্মত দু’শ বছর হায়াৎ পেয়েছিলেন। এই সূদীর্ঘ জীবনে তিনি তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ইবাদত করেননি। একদিন তিনি পবিত্র তাওরাত কিতাব পড়ছিলেন। এর একস্থানে আল্লাহ্ রাব্বুল ইজ্জত তাঁর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আগমন বার্তা, হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম তাঁর উম্মতকে জানিয়েছিলেন, তা লিপিবদ্ধ ছিল। উক্ত ব্যক্তি কিতাবের পাতায় যেখানে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক লিপিবদ্ধ ছিল, তদস্থলে মুহব্বত ও দ্বীনী এক্বীনের সাথে চুম্বন করেছিলেন। যথাসময়ে তিনি মারা গেলেন। কিন্তু পাড়া প্রতিবেশী, মহল্লাবাসীগণ তাকে দাফন-কাফন না করে বরং তাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপে রত ছিল।

এমতাবস্থায় আল্লাহ্ রাব্বুল ইজ্জত হযরত মুসা আলাইহিস্ সালামকে নির্দেশ দিলেন উক্ত ব্যক্তিকে দাফন-কাফন করানোর জন্য। হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম তাঁর কতিপয় অনুসারীগণসহ মৃত ব্যক্তির মহল্লায় গিয়ে দেখতে পেলেন যে, লোকজন উক্ত মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করছে। হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম উক্ত ব্যক্তির শেষ দাফন-কাফন সুসম্পন্ন করলেন, তৎপর তিনি ভাবলেন- কেন পরওয়াদিগার এরূপ একজন ব্যক্তির শেষ দাফন-কাফন সম্পন্ন করার সুনির্দিষ্ট নির্দেশ আমাকে দিলেন? যাকে নিয়ে তারই মহল্লাবাসীরা এরূপ তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে। হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম তখন আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে তাঁর মনের ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন। সাথে সাথে আল্লাহ্ রাব্বুল ইজ্জত তাঁর কালিম, হযরত মুসা আলাইহিস্ সালামকে জানালেন যে, “হে মুসা আলাইহিস্ সালাম আপনি জেনে রাখুন, ঐ ব্যক্তিকে আমি (আল্লাহ্ পাক) জান্নাত দান করেছি।” (সুব্হানাল্লাহ্)

হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম আরজ করলেন, ইয়া মা’বুদ! এটা জানা আমার বড় ইচ্ছা যে, সে কি এমন আমল করেছে যে, আপনি তাঁকে (ঐ মৃত ব্যক্তিকে) জান্নাত দান করলেন?

তখন আল্লাহ্ পাক বললেন, “হে মুসা আলাইহিস্ সালাম! ঐ মৃত ব্যক্তিকে আমি ২০০ বছর হায়াত দান করেছিলাম। সে জীবদ্দশায় তেমন কোনই ইবাদত করেনি, যা আমাকে খুশী করতে পারে। কিন্তু সে এমন একটা কাজ করেছে, যার জন্য আমি আল্লাহ্ পাক তার উপর বহু খুশী হয়েছি এবং তার ঐ কাজের বদলা স্বরূপ তাকে জান্নাত দান করেছি। জেনে রাখুন হে মুসা আলাইহিস্ সালাম! আপনার উপর আমি তাওরাত কিতাব নাযিল করেছি এবং যার এক স্থানে আমার পেয়ারে হাবীব, নবীগণের সর্দার, আখিরী নবী সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক লেখা আছে। উক্ত ব্যক্তি দ্বীনী জজ্বা ও মুহব্বতের সাথে আমার দোস্ত, আমার হাবীব, আখিরী নবীর নাম মুবারককে চুম্বন করেছিল, এজন্যই আমি উক্ত মৃত ব্যক্তির প্রতি এত খুশী হয়েছি এবং আপনাকে তার লাশের দাফন-কাফন করার নির্দেশ দিয়েছি।” (সুবহানাল্লাহ্) উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতিভাত হয় যে, (১) যে বা যাদের নাম মুহম্মদ বা আহমদ বা (২) সে বা যিনি অপর কারো নাম মুহম্মদ বা আহমদ রেখেছেন অথবা (৩) সে বা যারা মুহম্মদ বা আহমদ নামকে সম্মান করেছেন তারা সবাই জান্নাতী হবে।

{দলীলসমূহ ঃ (১) ফিরদাউস্ লিদ্ দায়লামী, (২) যাহ্রুল ফিরদাউস, (৩) মুসনাদুল ফিরদাউস, (৪) হাক্বীক্বতে মুহাম্মদী ও মীলাদে আহ্মদী, (৫) কাছীদায়ে বুরদা, (৬) হিলইয়াতুল্ আউলিয়া, (৭) সীরাতে হালবিয়া, (৮)  হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলাম ইত্যাদি}

মুহম্মদ মিজানুর রহমান খান লুটন, ইউ.কে  সুওয়ালঃ  “নবীজির ইন্তিকাল দিবস হচ্ছে দুঃখের দিন। আর দুঃখের দিনে খুশী প্রকাশ করাটা অন্যায়।”  এ বক্তব্য কতটুকু কুরআন-সুন্নাহ্ সম্মত? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াবঃ  উপরোক্ত বক্তব্য কুরআন ও সুন্নাহ্র সম্পূর্ণ খিলাফ যা কাট্টা কুফরী।  আর “ইন্তিকাল” শব্দের অর্থ হচ্ছে স্থানান্তরিত হওয়া বা করা। অর্থাৎ ইহ্কাল থেকে পরকালে স্থানান্তরিত হওয়া বা গমন করা।

হযরত আউলিয়া-ই-কিরামগণের শানে ইন্তিকালের হুকুম

ইন্তিকাল সম্পর্কে হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের শানে বলা হয়েছে,

الا ان اولياء الله ايموتون بل ينتقلون من دار الفناء الى دار البقء.

অর্থঃ- “সাবধান! নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক-এর ওলীগণ মৃত্যুবরণ করেন না বরং তাঁরা অস্থায়ী জগত থেকে স্থায়ী জগতে প্রত্যাবর্তন করেন।”

হযরত শহীদগণের শানে  ইন্তিকালের হুকুম

আর যাঁরা শহীদ তাঁদের শানে খোদ কালাম পাকে ইরশাদ হয়েছে,

ولاتقولوا لمن يقتل فى سبيل الله اموات بل احياء ولكن لاتشعرون.

অর্থঃ- “তোমরা তাঁদেরকে মৃত বলোনা। যাঁরা আল্লাহ্ পাক-এর রাস্তায় শহীদ হয়েছেন বরং তাঁরা জীবিত কিন্তু তোমরা তা উপলব্ধি করতে পারছো না।” (সূরা বাক্বারা/১৫৪)

হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্  সালামগণের শানে ইন্তিকালের হুকুম        

কাজেই হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম ও শহীদগণের শানই যদি এ রকম হয় তাহলে নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম-এর ইন্তিকালের শান মুবারক কি হবে?    নবীগণের শান সম্পর্কে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

الانبياء عليهم السلام احياء فى قبورهم.

অর্থঃ- “হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ তাঁদের রওজা শরীফে জীবিত রয়েছেন।” (দায়লামী শরীফ)           যেমন, হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম-এর ব্যাপারে কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

 ويلم عليه يوم ولد ويوم يموت ويوم يبعث حيا.

অর্থঃ- “তাঁর প্রতি সালাম (শান্তি) যে দিন তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন এবং যেদিন তিনি ইন্তিকাল করবেন এবং যেদিন জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবেন।” (সূরা মরিয়ম/১৫)

অনুরূপ হযরত ইহাহ্ইয়া আলাইহিস্ সালাম সম্পর্কে তাঁর নিজের বক্তব্য কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

والسلم على يوم ولدت ويوم اموت ويوم ابعث حيا.

অর্থঃ- “আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করি, যে দিন আমি ইন্তিকাল করি এবং যেদিন জীবিত অবস্থায় পুণরুত্থিত হব।” (সূরা মরিয়ম/৩৩)          আর হাদীস শরীফে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

حياتى خير لكم ومماتى خير لكم.

অর্থঃ- “ আমার হায়াত-মউত (ইহকাল ও পরকাল) সব অবস্থাই তোমাদের জন্য কল্যাণ ও খায়ের বরকতের কারণ।” (কানযুল উম্মাল) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

ان من افضل ايامكم يوم الجمعة فيه خلق ادم وفيه قبض.

অর্থঃ- “তোমাদের দিন গুলোর মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছে জুমুয়ার দিন, ঐ দিনে হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম পয়দা হয়েছেন এবং ঐ দিনেই তিনি ওফাত লাভ করেছেন।” (নাসাঈ শরীফ)     অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

ان هذا يوم عيد جعله اله للمسلمين.

অর্থঃ- “এ জুমুয়ার দিন হচ্ছে ঈদের দিন। এটাকে আল্লাহ্ পাক ঈদের দিন সাব্যস্ত করেছেন।” (ইবনে মাজাহ্, মুসনদে আহমদ)      সুতরাং বুঝা গেলো যে, জুমুয়ার দিনটি আল্লাহ্ পাক-এর নবী ও রসূল হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর ওফাতের দিন হওয়া সত্বেও আল্লাহ্ পাক স্বয়ং নিজেই সে দিনটিকে খুশীর দিন হিসেবে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। তাহলে কি আল্লাহ্ পাক অন্যায় করলেন? (নাউযুবিল্লাহ)          আর  আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেই জুমুয়ার দিনকে খুশীর দিন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তাহলে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি এ ঘোষণা দিয়ে অন্যায় করলেন? (নাউযুবিল্লাহ্)

উল্লেখ্য, সুওয়ালে বিবৃত বক্তব্য মুতাবিক বুঝা যাচ্ছে যে, নবীদের ইন্তিকালের দিন খুশি প্রকাশ করা অন্যায়মূলক কাজ; তাহলে তাদের ভাষায় বলতে হয় যে, “আল্লাহ্ পাক স্বয়ং নিজেই হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর ইন্তিকালের দিন (জুমুয়ার দিন) কে খুশির দিন হিসেবে নির্দিষ্ট করে আর আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই নির্দিষ্ট দিনের ঘোষণা দিয়ে অন্যায় করেছেন।” (নাউযুবিল্লাহ)

এ আক্বীদা যদি কোন ব্যক্তি বা মুসলমান পোষণ করে তবে সে কাট্টা কাফির হয়ে চির জাহান্নামী হবে।           কুরআন-সুন্নাহ্তে বর্ণিত রয়েছে, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ-এর আগমন, বিদায়, পুনরুত্থান প্রত্যেকটিই রহমত, বরকত ও ছাকীনার কারণ।

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম-এর শানে ইন্তিকালের হুকুম     

অতএব, অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম-এর জন্ম, ইন্তিকাল এক কথায় সবকিছুই যেখানে রহমত, বরকত, ছাকীনার দ্বারা পরিপূর্ণ সেখানে যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বিষয়টি তো বলার অপেক্ষা রাখেনা।

এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

حياتى خير لكم ومماتى خير لكم.

 অর্থঃ- “আমার হায়াত-মউত (ইহকাল ও পরকাল) সব অবস্থাই তোমাদের জন্য কল্যাণ ও খায়ের বরকতের কারণ।” (কানযুল উম্মাল)

অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হায়াত-মউত উভয় অবস্থায়ই উম্মতের নিকট সমানভাবে বিরাজমান।    কাজেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিদায় বা ইন্তিকালের দিন উম্মতের জন্য দুঃখ প্রকাশের দিন নয়। কারণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেদিন বিদায় নিয়েছেন সেদিনেই যমীনে আগমন করেছেন, তাই তাঁর আগমন অর্থাৎ বিলাদত উপলক্ষ্যে খুশি প্রকাশ করে, আল্লাহ্ পাক-এর আখাচ্ছুল খাছ নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা প্রত্যেক মাখলুকাত খাছ করে জ্বিন-ইনসানের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এরপরও মূল কথা হলো, তিনি হচ্ছেন হায়াতুন্ নবী। অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুমাত্র পর্দার আড়ালে তাশরীফ নিয়েছেন। কাজেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিদায়ের দিনে দুঃখ প্রকাশ করার প্রশ্নই আসতে পারেনা। শুধুমাত্র  যারা বদ আক্বীদা বিশিষ্ট, বিদয়াতী ও গোমরাহ ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত তারাই উক্ত দিনে দূঃখ প্রকাশ করতে পারে বা দুঃখের দিন হিসেবে ঘোষণা করতে পারে।           এরপরও উক্ত বদ আক্বীদা বিশিষ্ট বিদয়াতী ও গোমরাহ লোকদের বলতে হয়, তারা যদি “নবীজির ইন্তিকাল দিবসকে দুঃখের দিন বলে উক্ত দিনে খুশী পালন না করে শোক পালন করতে চায় তথাপিও তারা সে দিনকে শোকের দিন হিসেবে শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রমাণ করতে পারবেনা।        কারণ হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

 امرنا ان لانحد على ميت فوق ثلاث الا لزوج.

অর্থঃ- “আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন আমরা কারো ওফাতে তিন দিনের পর আর শোক প্রকাশ না করি। তবে স্বামীর জন্য স্ত্রী (৪ মাস ১০ দিন) শোক পালন করতে পারবে।” (বুখারী, মুসলিম, আবূ দাউদ, নাসায়ী, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্, দারিমী, মুয়াত্তা ইমাম মালিক)   অতএব, শরীয়তের দলীল -আদিল্লাহ দ্বারা ১২ই রবিউল আউয়ালকে কোন মতেই শোকের দিন হিসেবে সাব্যস্ত করা সম্ভব নয়। কাজেই যেদিনটি শোকের দিন নয়, সেদিন কি করে শোক পালন করবে? তাই আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদতকে নিয়ামত মনে করে ঈদ-ই-মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে শুকরিয়া পালন ও খুশি উদ্যাপন করা প্রত্যেক উম্মতের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

কাজেই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, সাধারণভাবে একই দিনে যদি শোক ও খুশীর ঘটনাবলীর সমাবেশ ঘটে যায় তবে শোক প্রকাশের বৈধতা তিন দিন পরেই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু খুশীকে স্মরণ করা ও সেটার আনন্দ উদ্যাপন করার বৈধতা সর্বদাই থেকে যায়। আর খাছভাবে নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ সম্পর্কে ফতওয়া হলো, তাঁদের আগমন” “বিদায়” ইত্যাদি প্রত্যেকটি বিষয়ই রহমত, বরকত ও ছাকীনার কারণ। তাই তাঁদের আগমন ও বিদায় যদি একই দিনে সংঘটিত হয় তবে সেদিন শোক প্রকাশ না করে খুশি প্রকাশ করা ও শুকরিয়া আদায় করা প্রত্যেক উম্মতের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

অতএব, ইন্তিকালের দিনে শোকের বৈধতা অবান্তর। কিন্তু “মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”-এর খুশী ক্বিয়ামত পর্যন্তই বহাল থাকবে। তাই এদিনে শোক পালন করা বৈধ হবেনা। বরং শুকরিয়া স্বরূপ ঈদ-ই-মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা দায়িত্ব ও কর্তব্য।        {দলীলসমূহ ঃ (১) রহুল মায়ানী, (২) রুহুল বয়ান, (৩) মাযহারী, (৪) ইবনে কাছীর, (৫) ইবনে আব্বাস, (৬) খাযিন, (৭) বাগবী, (৮) কুরতুবী, (৯) কবীর, (১০) তাবারী, (১১) দুররে মনছুর, (১২) মুসলিম, (১৩) আবূ দাউদ, (১৪) মিশকাত, (১৫) ফতহুল মুলহিম, (১৬) শরহে নববী, (১৭) মুফহিম, (১৮) আউনুল মা’বুদ, (১৯) বজলুল মাজহুদ, (২০) মিরকাত, (২১) কানযুল উম্মাল, (২২) আশয়াতুল লুময়াত, (২৩) লুময়াত, (২৪) শরহুত্ ত্বীবী, (২৫) তা’লীকুছ্ ছবীহ্, (২৬) মুযাহিরে হক্ব, (২৭) মিরআতুল মানাযীহ্, (২৮) আন্ নিয়ামাতুল কুবরা, (২৯) খাছায়িছুল কুবরা, (৩০) আখবারুল আখইয়ার, (৩১) মাদারিজুন্ নুবুওওয়াত, (৩২) তাযকিরায়ে গাউছিয়া, (৩৩) ইনশিরাহুছ্ ছুদূর, (৩৪) বালাগুল মুবীন, (৩৫) সীরাতুন্ নবী বা’দ আজ বিসালুন নবী, (৩৬) সীরাতে খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্তী, (৩৭) নুরুল আনোয়ার ইত্যাদি।}

মুহম্মদ মিজানুর রহমান খান লুটন, ইউ.কে  সুওয়ালঃ   “মীলাদের প্রবর্তক “বাদশাহ্” ফাসিক ছিলেন” এ বক্তব্য এবং ঢাকা মুহম্মদপুর জামিয়া রাহমানিয়া থেকে প্রকাশিত অথ্যাত পত্রিকায় জিজ্ঞাসার-জবাবে বলা হয়েছে, “মীলাদের প্রবর্তক বাদশাহ্ মালিক মুজাফ্ফর ফাসিক ছিলেন” একথা কতটুকু সত্য দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন। জাওয়াবঃ উল্লিখিত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও মনগড়া। সঠিক বর্ণনা হচ্ছে এই যে, যিনি সর্বপ্রথম বর্তমানে অনুষ্ঠিত তর্জ-তরীকা মুতাবিক মীলাদ মাহ্ফিলের প্রবর্তন করেন তিনি ফাসিক নন, বরং তিনি ছিলেন একজন খালিছ ওলীআল্লাহ্ ও কামিল মুসলমান।

  মীলাদ বিদ্য়াত বা নব আবিষ্কৃত নয়     

উল্লেখ্য, মীলাদ মাহ্ফিলে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তা’রিফ, প্রশংসা, তাঁর মু’জিযা বর্ণনা, জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা, না’ত, শে’র, কাছিদা পাঠ ও তাঁর প্রতি ছলাত ও সালাম প্রেরণ করা হয়। এ সমস্ত কার্যাবলী বিদ্য়াত তথা নব আবিষ্কৃত নয় বরং এ সমস্ত কার্যাবলী স্বয়ং রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানাতেই ছিল। যেমন শায়েরে রসূল, বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত হাস্সান বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রশংসায় কবিতা, না’ত, শে’র, কাছিদা রচনা করে তা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপস্থিতিতে আবৃত্তি করতেন। অনেক ছাহাবী তা শোনার জন্য একত্রিত হতেন। এমনকি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এজন্য তাঁকে মসজিদে নববী শরীফে একখানা মিম্বরের ব্যবস্থা পর্যন্ত করে দিয়েছিলেন। যার উপর দাঁড়িয়ে তিনি ঐ সকল কবিতা, না’ত, শে’র, কাছিদা আবৃত্তি করতেন। কখনো কখনো স্বয়ং আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও উক্ত না’ত, শে’র, কাছিদার পংক্তিগুলো আওড়াতেন। (সুবহানাল্লাহ্) মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার ন্যায় মীলাদও  একটি সুশৃঙ্খল তর্জ-তরীক্বা তবে বর্তমানে যেভাবে সুনির্দিষ্ট তর্জ-তরীকায় মীলাদ মাহ্ফিল হয় তা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানাতে ছিলনা সত্যিই; কিন্তু মীলাদ মাহ্ফিলে যেসব বিষয় পাঠ করা হয় সে সবগুলোই তাঁর যামানাতে ছিল। যেমন, দ্বীনি তা’লীম রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানাতে ছিল। কিন্তু বর্তমান কালের মত বিল্ডিং, জামায়াত, ঘন্টা, রুটিন, সিলেবাস, কিতাবভিত্তিক পড়াশুনা তাঁর যামানাতে ছিলনা। পরবর্তীতে ব্যাপকতার কারণে সুষ্ঠু ও সুন্দর ইন্তেজামের জন্য এটা করা হয়েছে।         মূলতঃ মাদ্রাসার এই নিয়ম মাফিক শিক্ষার ব্যবস্থা এ জন্য করা হয়েছে, যাতে একজন শিক্ষার্থী অল্প দিনের মধ্যে ও সহজে ইল্ম হাছিলের যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। একইভাবে মীলাদ পাঠের নিয়ম করা হয়েছে এজন্য যে, যাতে কেউ অল্প সময়ের মধ্যে ও সংক্ষিপ্তভাবে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছানা-ছীফত করতে পারে। মীলাদ মাহ্ফিলের ব্যাপারেও ঠিক তাই। মীলাদ প্রবর্তনের ইতিহাস    মীলাদ মাহ্ফিলের এই সুনির্দিষ্ট তর্জ-তরীকা সর্বপ্রথম কে প্রবর্তন করেন সে সম্পর্কে কিতাবে দু’টি মত পাওয়া যায়।     (১) বিশ্ব বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ইমাম হাফিয আবূ সামাহ্ “আল  বায়িছ আলা ইনকারিল বিদয়ি ওয়াল হাওয়া” নামক কিতাবে লিখেন যে,

وان اول من فعل با لموصل عمر بن محمد الملاء احد الصلالحين المشهورين وبه اغتى ذلك صاحب اربل وغير رحمهم الله تعالى.

অর্থাৎ- “যিনি সর্বপ্রথম মাওছেল নামক স্থানে মীলাদ উদ্ভাবন করেন তিনি হলেন হযরত মুল্লা উমর বিন মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি ছিলেন তৎকালীন যুগের বিখ্যাত আল্লামা ও আউলিয়াদের মধ্যে অন্যতম। আরবলের বাদশা এবং অনেক লোক তাঁর অনুসরণ করতঃ মীলাদ অনুষ্ঠান আহবান করতে আরম্ভ করেন। আল্লাহ্ পাক তাঁদের প্রতি রহমত নাযিল করুন।”    শাফেয়ী মাযহাবের বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইমাম আবূ সামাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে “আল বায়িছ” কিতাবে লিখেছেন যে, “তিনি একজন সুপ্রসিদ্ধ ওলী ছিলেন।”        (২) হাফিজুল হুফ্ফায, ইমামুল মুহাদ্দিসীন, আল্লামা, ইমাম হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি “আল হাবীলিল ফতওয়া” নামক কিতাবে বর্ণনা করেন, “সর্বপ্রথম যিনি এই প্রকার মীলাদ মাহ্ফিলের প্রবর্তন করেন, তিনি হলেন আরবলের বাদশাহ্ মালিক মুজাফ্ফর আবূ সাইদ বিন জয়নুদ্দীন।” ইমাম সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত বাদশাহ্ সম্বন্ধে তাঁর “হুসনুল মাকাসিদ ফি আমালিল মাওয়ালিদ” কিতাবে সুপ্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক ও মুহাদ্দিছ আল্লামা ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেন যে,

 وكان شهما شجاعا بطلا عالما عادلا رحمه الله واكرم مثواه.

অর্থাৎ- “তিনি তীক্ষè বুদ্ধি-সম্পন্ন, সাহসী, বীর্যবান, আলিম ও ন্যায় বিচারক ছিলেন। আল্লাহ্ পাক তাঁর প্রতি রহম করুন তাঁকে সম্মানিত বাসস্থান দান করুন।” শায়খ হাফিয আবুল খত্তাব ইবনে দাহইয়া বাদশাহ্র এই মীলাদ অনুষ্ঠান সম্পর্কে এক বৃহৎ কিতাব প্রণয়ন করে তার নাম দিয়েছেন,

التنوير فى مولد البشير والنذير”

(আত্তানবীরু ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান্ নাযীর)   ঐতিহাসিক ইবনে খাল্লেকান হাফিয আবুল খত্তাব ইবনে দাহইয়ার পরিচয় দিতে গিয়ে তারীখে ইবনে খাল্লেকানে লিখেছেন, “তিনি তৎকালীন বিখ্যাত ও নেতৃস্থানীয় আলিম বিদ্বানগণের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তিনি পশ্চিমের কোন এক দেশ হতে আগমন করে শাম ও ইরাক সফর করেন এবং হিজরী ৬০৪ সালে ‘আরবল’ শহরে আগমন করে সেখানেই অবস্থান করেন। তখনকার বাদশাহ্ মালিক মুজাফ্ফরকে মীলাদুন্ নবীর প্রতি যথেষ্ট আগ্রহান্বিত ও যতœপরায়ণ দেখে তাঁর এই কার্যের সমর্থনে ব্জণ্ডৈশুè“॥ নামক একটি কিতাব প্রণয়ন করেন।” প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনু জাওজী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নাতি ‘মিরআতুজ্জামান’ নামক পুস্তকে বলেন, “তাঁর (বাদশাহ্র) আয়োজিত মীলাদ মাহ্ফিলে শীর্ষস্থানীয় ছূফী ও আলিমগণ উপস্থিত হতেন।”      অনুরূপ বিবরণ বিখ্যাত গ্রন্থ “সীরাতে শামী, সীরাতে হালবীয়া, সীরাতে নববীয়া ও যুরকানী” ইত্যাদিতেও বিদ্যমান আছে।     উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, বর্তমানে প্রচলিত তর্জ-তরীক্বা মুতাবিক যে মীলাদ মাহ্ফিল করা হয় তার প্রবর্তক কোন ফাসিক ব্যক্তি ছিলেন না, বরং এ মীলাদ মাহ্ফিলের প্রবর্তক ছিলেন একজন খালিছ ও কামিল মুসলমান।           মীলাদ বিদ্বেষীরাই মীলাদ প্রবর্তক বাদশাহ্কে  ফাসিক ও বিদ্য়াতী বলে থাকে            উল্লেখ্য, মীলাদ শরীফের প্রবর্তক বাদশাহ্কে যারা বিদ্য়াতী ও ফাসিক বলে তারা প্রকৃতপক্ষে মীলাদ শরীফ বিদ্বেষী। বিদ্য়াতী ও ফাসিক বলার কারণ স্বরূপ বলে, প্রথমতঃ মীলাদ মাহ্ফিল আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানায় ছিলনা, সে হিসেবে তিনি বিদয়াতী। আর দ্বিতীয়তঃ মীলাদ মাহ্ফিলে উক্ত বাদশাহ্ প্রচুর টাকা-পয়সা খরচ করতেন, এ টাকা-পয়সা খরচ করাকে তারা অপচয় সাব্যস্ত করে তাঁকে ফাসিক বলে থাকে।  মীলাদের ব্যবস্থা আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর  যামানাতেই ছিলো        অথচ মীলাদ শরীফ সম্পর্কে বলতে হয়, এটি আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানাতেই ছিল।                এ প্রসঙ্গে হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, “তিনি একদিন সাইয়্যিদুল আম্বিয়া, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে হযরত আবূ আমের আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ঘরে গেলেন। তিনি সেখানে দেখতে পেলেন যে, হযরত আবূ আমের আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর নিজ সন্তানাদি ও আত্মীয়-স্বজনদের একত্রিত করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফ (জন্ম বৃত্তান্ত) আলোচনা করছেন। এটা দেখে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত খুশি হলেন এবং বললেন, হে আমের! নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তোমার জন্য তাঁর রহমতের দ্বার উন্মুক্ত করেছেন এবং সকল ফেরেশ্তাগণ  তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। আর যারা তোমার ন্যায় এরূপ আমল করবে, তারাও তোমার ন্যায় নাযাত পাবে।” (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলুদিল বাশীর ওয়ান্ নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলুদিল মুস্তফা)   আরো বর্ণিত আছে যে, “একদিন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সেখানকার সকল লোকদেরকে তাঁর নিজ ঘরে একত্রিত করে, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফ বা জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা করেন, যা শুনে উপস্থিত সকলেই আনন্দচিত্তে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর ছলাত-সালাম পাঠ করেন। এমন সময় রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম সেখানে উপস্থিত হলেন এবং তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

حلت لكم شفاعتى.

অর্থাৎ  “তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল।” (মাওলুদুল কবীর, দুররুল মুনাজ্জাম, সুবুলুল হুদা ফী মাওলুদিল মুস্তফা)

অতএব,  যে মীলাদ শরীফের অস্তিত্ব আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানায় ছিলো সে মীলাদ শরীফ পাঠকারীকে বিদ্য়াতী বলা কুফরী।      সুতরাং উল্লিখিত বাদশাহ্কে বিদ্য়াতী বলা কাট্টা কুফরী হবে।     আর মীলাদ মাহ্ফিলে উক্ত বাদশাহ্ প্রচুর টাকা-পয়সা খরচ করতেন। এ টাকা-পয়সা খরচ করাকে তারা অপচয় সাব্যস্ত করে তাঁকে ফাসিক বলে যা অবশ্যই অগ্রহণীয় ও নিন্দনীয়। দানশীলতার ফযীলত          অথচ আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দান-খয়রাত করা সম্পর্কে অনেক তাকিদ করেছেন। সে সম্পর্কে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لو كان لى مثل احد ذهبا لسرنى ان لايمر على ثلث ليال وعندى منه شئ الا شئ ارصده لدين.

অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যদি আমার নিকট উহুদ পরিমাণ স্বর্ণও থাকে তবে আমি তখনই সন্তুষ্ট হবো যখন তিনদিন অতিবাহিত না হতেই তা নিঃশেষ হয়ে যায়; এর সামান্য পরিমাণ ব্যতীত যা আমি আমার দেনার জন্য রাখি।” (বুখারী)

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما من يوم يصبح العباد فيه الا ملكان ينزلان فيقول احدهما اللهم اعط منفقا خلفا ويقول الاخر اللهم اعط ممسكا تلفا.

অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখনই আল্লাহ্ পাক-এর বান্দাগণ ভোরে উঠে, আকাশ হতে দু’জন ফেরেশ্তা অবতীর্ণ হন। তাঁদের একজন বলেন, আয় আল্লাহ্ পাক! আপনি দানশীলকে প্রতিদান দিন এবং অপরজন বলেন, আয় আল্লাহ্ পাক! আপনি কৃপণকে সর্বনাশ করুন।” (বুখারী ও মুসলিম)

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم قال الله تعالى اهفق يا ابن ادم انفق عليك.

অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ্ পাক বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি দান করো, আমি তোমাকে দান করবো।” (বুখারী ও মুসলিম)

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم السخى قريب من الله قريب من الجنة قريب من الناس بعيد من النار والبخيل بعيد من الله بعيد من الجنة قريب من اناس بعيد من النار والبخيل بعيد ن الله بعيد من الجنة بعيد من الناس قريب من النار واجاهل سخى احب الى الله من عابد بخيل.

অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, দানশীল ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর নিকটে, বেহেশ্তেরও নিকটে, মানুষেরও নিকটে অথচ দোযখ থেকে দূরে এবং কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক হতে দূরে, বেহেশ্ত হতেও দূরে, মানুষ হতেও দূরে অথচ দোযখের নিকটে। নিশ্চয়ই মূর্খ দানশীল কৃপণ আবেদ অপেক্ষা আল্লাহ্ পাক-এর নিকট অধিক প্রিয়।” (তিরমিযী)

عن ابى سعيد رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم خصلتان لاتجتمعان فى مؤمن البخل وسوء الخلق.

অর্থঃ- “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, এ দু’টি স্বভাব কোন মু’মিনের মধ্যে এক সাথে হতে পারেনা- কৃপণতা ও খারাপ আচরণ।” (তিরমিযী)

عن ابى بكر الصديق رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لايدخل الجنة خب ولابخيل ولامنان.

অর্থঃ- “হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, বেহেশতে প্রবেশ করবেনা- প্রতারক, কৃপণ এবং যে ব্যক্তি দান করে খোঁটা দেয়।” (তিরমিযী)

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم السخاء شجرة فى الجنة فمن كان سخيا اخذ بغصن منها فلم يتركه الغصن حتى يدخله الجنة والشح شجرة فى النار فمن كان شحيحا اخذ بغصن منها فلم يتركه الغصن حتى يدخله النار.

অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, দানশীলতা বেহেশতের একটি বৃক্ষস্বরূপ। যে ব্যক্তি দানশীল সে যেন তার একটি শাখা ধরেছে আর শাখা তাকে ছাড়বে না; যে পর্যন্ত না তাকে বেহেশতে পৌঁছিয়ে দেয়। এবং কৃপণতা হচ্ছে দোযখের একটি বৃক্ষ। যে ব্যক্তি কৃপণ সে যেন তার একটি শাখা ধরেছে আর শাখা তাকে ছাড়বে না; যে পর্যন্ত না তাকে দোযখে পৌঁছিয়ে দেয়।” (বায়হাক্বী, শুয়াবুল ঈমান)          আর খাছ করে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত ও মীলাদ মাহ্ফিল উপলক্ষ্যে খরচ করা আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টির কারণ।           আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

والله ورسوله احق ان يرضوه ان كانوا مؤمنين.

অর্থঃ- “যদি তারা মু’মিন হয়ে থাকে তাহলে তারা যেন আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে সন্তুষ্ট করে। তাঁরাই সন্তুষ্টি পাওয়ার সর্বাধিক হক্বদার।” (সূরা তওবা/৬২)

হাদীস শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

لايومن احدكم حتى اكون احب اليه من والده وولده والناس اجمعين.

অর্থঃ- “তোমাদের কেউ মু’মিনে কামিল হতে পারবেনা যতক্ষণ না সে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্তুতি এবং অন্যান্য সকল মানুষ অপেক্ষা আমাকে বেশী মুহব্বত করবে।”      অপর এক হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, من ماله ونفسه অর্থঃ- “তার মাল ও জান হতেও যতক্ষণ পর্যন্ত বেশী মুহব্বত না করবে।”   এর বাস্তব উদাহরণ হযরত ছাহাবা আজমাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ রেখে গেছেন। যেমন, আফযালুন্ নাছ বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সম্পর্কে হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে,

عن عمر رضى الله تعالى عنه قال امرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم ان نتصدق ووافق ذلك عندى مالا فقلت اليوم اسبق ابا بكر ان سبقته يوما قال فجئت بنصف مالى فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما ابقيت لاهلك فقلت مثله واتى ابو بكر بكل ما عنده فقال يا ابا بكر ما ابقيت لاهلك فقال ابقيت لهم الله ورسوله قلت لااسبقه الى شئ ابدا.

অর্থঃ- হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, একবার রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে আল্লাহ্ পাক-এর রাস্তায় দান-খয়রাত করার জন্য নির্দেশ দিলেন। (সৌভাগ্যবশতঃ) সে সময় আমার কাছে পর্যাপ্ত সম্পদ ছিলো। তখন আমি (মনে মনে) বললাম, (দানের প্রতিযোগিতায়) যদি আমি কোন দিন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর উপর জয়ী হতে পারি তবে আজকের দিনেই জয়ী হবো। হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, অতঃপর আমি আমার সমস্ত মালের অর্ধেক নিয়ে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিদমতে উপস্থিত হলাম। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি আপনার পরিবার-পরিজনের জন্য কি (পরিমাণ) রেখে এসেছেন? আমি বললাম, এর সমপরিমাণ। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কাছে যা কিছু ছিলো তিনি সমূদয় নিয়ে উপস্থিত হলেন। এবার রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! পরিবার-পরিজনের জন্য আপনি কি রেখে এসেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, তাদের জন্য আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রেখে এসেছি। হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, তখন আমি (মনে মনে) বললাম, আর আমি কখনও কোন ব্যাপারে তাঁর উপর জয়ী হতে পারবো না।” (তিরমিযী, আবূ দাউদ, মিশকাত)   উপরোক্ত হাদীস শরীফ থেকে জানা গেল যে, হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নিজের ও পরিবারের জন্য কোন কিছু অবশিষ্ট না রেখে তাঁর সবকিছু আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য দান করে দিয়েছেন; এবং আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর এ দান সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করেছেন এবং বে-মেছাল দানের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর সম্পর্কে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

ما لاحدعندنا يد الا وقد كافيناه ماخلا ابا بكر فان له عندنا يدا يكامئه الله بها يوم القيامة ومانفعنى مال احد قط ما نفعنى مال ابى بكر ولو كنت متخذا خليلا لاتخذت ابا بكر خليلا الا وان صاحبكم خليل الله.

অর্থঃ- “যে কোন ব্যক্তি আমাদের প্রতি যেই কোন প্রকারের ইহ্সান করেছে আমরা তার প্রতিদান দিয়েছি, হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ইহ্সান ব্যতীত। তিনি আমাদের প্রতি যে ইহ্সান করেছেন তার প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ্ তায়ালাই ক্বিয়ামতের দিন তাঁকে প্রদান করবেন। আর কারো ধন-সম্পদ আমাকে ততখানি উপকৃত করেনি যতখানি উপকৃত করেছে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ধন-সম্পদ। আর আমি যদি আল্লাহ্ পাক-ছাড়া অন্য কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতাম তাহলে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকেই বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম। জেনে রেখ! নিশ্চয়ই (তোমাদের সঙ্গী) অর্থাৎ নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্ তায়ালার বন্ধু।” (তিরমিযী)

হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর সমস্ত মাল-আসবাব ব্যয় করার কারণে যদি বলা হয় যে, তিনি অপচয় করেছেন (নাউযুবিল্লাহ্) তাহলে নিঃসন্দেহে সেটা কাট্টা কুফরী হবে এবং এরূপ কুফরী আমলকারী অবশ্যই মুসলমান থেকে খারিজ, কাট্টা মুরতাদ ও কাফিরের অন্তর্ভুক্ত।        হযরত উসমান যুন্ নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর দান করা সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে যে, খলীফাতু রসূলিল্লাহ্, খলীফাতুল মুসলিমীন, আফযালুন্ না’ছ বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খিলাফত কালে একবার মদীনা শরীফে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলো। বাইতুল মালেও কোন খাদ্য নেই। ঠিক সেই মুহূর্তে হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর একটি বাণিজ্য কাফেলা  এক হাজার উট বোঝাই করা খাদ্য নিয়ে মদীনা শরীফে উপস্থিত হল। ব্যবসায়ী লোকজন হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট আসতে লাগলো খাদ্য কিনে নেয়ার জন্য। কেউ স্বাভাবিক দামে, কেউ দ্বিগুণ দামে, কেউ তিন গুণ, চার গুণ দামেও খাদ্য কেনার জন্য প্রস্তুত। তবুও তিনি তাদের নিকট খাদ্য দিতে রাজি হলেন না। তিনি বললেন, আমার এ খাদ্য নিতে হলে কমপক্ষে দশগুণ মূল্য দিতে হবে। কারণ তোমাদের আগে একজন আমাকে দশগুণ মূল্য দেয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছেন। তখন তারা বললো, আমাদের আগে কে এত অধিক মূল্যে খাদ্যদ্রব্য খরিদ করার কথা বললো। মদীনা শরীফে তো আমরাই বড় ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীরা আরো আলোচনা করলো যে, হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পূর্বে তো কখনো বেশী মূল্যের জন্য দর কষাকষি করেননি। তবে আজকে কেন করছেন ইত্যাদি। এরপর ব্যবসায়ীরা বললো, ঠিক আছে, যে আপনাকে বেশী মূল্য দেয় তাকেই আপনি মাল দিয়ে দিন। হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে খবর পাঠালেন যে, হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর সমস্ত খাদ্য দ্রব্য  অর্থাৎ এক হাজার উট বোঝাই খাদ্য যা সিরিয়া থেকে এসেছে তা আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টির জন্য দান করে দিলেন। (সুবহানাল্লাহ্) তখন খলীফার তরফ থেকে সমস্ত খাদ্যগুলো মদীনা শরীফে বন্টন করে দেয়া হয় এবং তাতে দুর্ভিক্ষ দূর হয়ে যায়।

হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যেদিন এই দান করলেন সে রাতে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু স্বপ্নে দেখতে পেলেন যে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবুজ রং-এর খুব দামী পোশাক পরিধান করতঃ বোরাকে আরোহণ করে কোথাও যাচ্ছেন। এটা দেখে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কোথায় যাচ্ছেন? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি কি জান না, আজ হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মদীনা শরীফবাসীকে এক হাজার উট বোঝাই খাদ্য যে দান করেছেন যার কারণে মদীনা শরীফের দুর্ভিক্ষ দূর হয়ে গেছে? তাই তাঁর দানে সন্তুষ্ট হয়ে স্বয়ং আল্লাহ্ পাক আজকে বেহেশ্তে মেহমানদারীর ব্যবস্থা করেছেন। আমি সেই মেহমানদারীতে শরীক হওয়ার জন্য যাচ্ছি।” (সুবহানাল্লাহ্) উম্মতে মুহম্মদীর জন্য দান বিশেষ ফযীলত  হলে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর  মীলাদের  জন্য দানের ফযীলত কতটুকু?

এখন ফিকিরের বিষয়, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যারা পরশী উম্মত তাদের উদ্দেশ্যে ব্যয় করলে যদি আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এত খুশী হয়ে থাকেন তাহলে যিনি তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মীলাদ বা বিলাদত শরীফ উপলক্ষ্যে ব্যয় করলে কত বেশী খুশী হবেন তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

এ প্রসঙ্গে আরো কিছু দলীল পেশ করা হলো বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ “আন্ নি’য়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাব থেকে। সেখানে বর্ণিত রয়েছে,

قال ابو بكر الصديق رضى الله تعالى عنه من أنفق درهما على قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم كان رفيقى فى الجنة.

অর্থঃ- “হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফ পাঠ (মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপলক্ষ্যে এক দিরহাম ব্যয় করবে সে জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে।” (সুবহানাল্লাহ্)

وقال عمر رضى الله عنه من عظم مولد النبى صلى الله عليه وسلم فقد احيا الاسلام.

অর্থঃ- “হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে (বেলাদত দিবসকে) বিশেষ মর্যাদা দিল সে মূলতঃ ইসলামকেই পূনরুজ্জীবিত করলো।” (সুবহানাল্লাহ্)

وقال عثمان رضى الله تعالى عنه من أنفق درهما على قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم فكأنما شهد غزوة بدر وحنين.

অর্থঃ- “হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে এক দিরহাম খরচ করল সে যেন বদর ও হুনাইন যুদ্ধে শরীক থাকলো।”(সুবহানাল্লাহ্)

وقال على رضى الله عنه وكرم الله وجهه من عظم مولد النبى صلى اله عليه وسلم وكان سببا لقرائته لايخرج من الدنيا الا بالايمان ويدخل الجنة بغير حساب.

অর্থঃ- “হযরত আলী র্কামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি বিশেষ মর্যাদা প্রদান করলো সে ব্যক্তি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সুবহানাল্লাহ্)

وقال حسن البصرى رضى اله عنه وددت لو كان لى مثل جبل أحد ذهبا فانفقته على قرائة مولد النبى صلى الله عليه وسلم.

অর্থঃ- “(বিশিষ্ট তাবেয়ী) হযরত হাসান বছরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমার একান্ত ইচ্ছা হয় যে, আমার যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকত তাহলে তা মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে ব্যয় করতাম।” (সুবহানাল্লাহ্)

وقال الامام الشافعى رحمة الله عليه من جمع لمولد النبى صلى الله عليه وسلم اخوانا وهميأ طعاما واخلى مكانا وعمل احسانا وصار سببا لقرائته بعثه الله يوم القيامة مع الصديقين والشهداء والصالحين ويكون فى جنات النعيم.

অর্থঃ- “হযরত ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদ শরীফ পাঠ বা মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্যাপন উপলক্ষ্যে লোকজন একত্রিত করলো এবং খাদ্য তৈরী করলো ও জায়গা নির্দিষ্ট করলো এবং মীলাদ পাঠের জন্য উত্তম ভাবে (তথা সুন্নাহ ভিত্তিক) আমল করলো তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক হাশরের দিন ছিদ্দীক, শহীদ, ছালেহীনগণের সাথে উঠাবেন এবং তাঁর ঠিকানা হবে জান্নাতে নাঈমে।” (সুবহানাল্লাহ্)

وقال جنيد البغداى قدس الله سره من حضر مولد النبى صلى الله عليه وسلم وعظم قدره فقد فاز بالايمان.

অর্থঃ- “হযরত জুনাইদ বাগদাদী ক্বাদ্দাসাল্লাহু সিররাহু রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আয়োজনে উপস্থিত হলো এবং উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করলো সে তার ঈমানের দ্বারা সাফল্য লাভ করবে অর্থাৎ সে বেহেশ্তী হবে।” (সুবহানাল্লাহ্)

وقال سلطان العارفين الامام جلال الدين السيوطى قدس اله سره ونور ضريحه فى كتابه المسمى بالوسائل فى شرح الشمائل ما من بيت أومسجد أومحلة قرئ فيه مولد النبى صلى الله عليه وسلم ألا حفت الملائكة ذلك البيت أوالمسجد أو المحلة وصلت الملائكة على أهل ذلك المكان وعمهم الله تعالى بالرحمة والرضوان وأما المطوقون بالنور يعنى جبرأئيل وميكائيل وأسرافيل وعزرأئل عليهم السلام فانهم يصلون على من كان سببا لقرائة مولد النبى صلى الله عليه وسلم.

অর্থঃ- “সুলতানুল আরিফীন হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “ওসায়িল ফী শরহি শামায়িল” নামক কিতাবে বলেন, যে কোন ঘরে অথবা মসজিদে অথবা মহল্লায় মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয় বা মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্যাপন করা হয় সেখানে অবশ্যই আল্লাহ পাক-এর ফেরেশ্তাগণ বেষ্টন করে নেন। আর তাঁরা সে স্থানের অধিবাসীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করতে থাকেন। আর আল্লাহ পাক তাদেরকে স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টির আওতাভুক্ত করে নেন। আর নূর দ্বারা সজ্জিত প্রধান চার ফেরেশ্তা, অর্থাৎ হযরত জিব্রাঈল, মীকাঈল, ইসরাফিল ও আজরাঈল আলাইহিমুস্ সালাম মীলাদ শরীফ পাঠকারীর উপর বা মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্যাপনকারীর উপর ছলাত-সালাম পাঠ করেন।” (সুবহানাল্লাহ্)        বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ফিক্বাহর কিতাবে লিখেন,

من عظم ليلة مولده بما امكنه من التعظيم والاكرام كان من الفائزين بدار السلام.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি তার সাধ্য ও সামর্থ অনুযায়ী ঈদ-ই-মিলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্মান করলো তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে সম্মানিত করা হবে।

মীলাদ শরীফে ব্যয় করা  আল্লাহ্ পাক-এর আদেশ

মীলাদ-মাহ্ফিলের উদ্দেশ্যে তাওফিক আন্দাজ বা সাধ্যমত ব্যয় করাটা অপব্যয়, অপচয় কোনটিই নয়। কারণ মীলাদ মাহ্ফিল হচ্ছে একটি নেক বা দ্বীনি কাজ। এ উদ্দেশ্যে টাকা-পয়সা ব্যয় করা অপচয় তো নয়ই বরং ব্যয় করার জন্য যাতে কোনরূপ কার্পণ্য করা না হয় সে ব্যাপারে শরীয়তে আদেশ করা হয়েছে। কালামুল্লাহ্ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

والذين اذا انفقوا لم يسر فوا ولم يقتروا وكان بين ذلك قواما.

অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক-এর প্রিয় বান্দারা যখন দান বা ব্যয় করে তখন তারা অপব্যয় করেনা এবং কৃপণতা ও ত্রুটিও করেনা বরং উভয়ের মধ্যবর্তী সমতা বজায় রাখে।” (ফুরক্বান/৬৭) اسراف -এর অর্থ সীমা অতিক্রম করা। শরীয়তের পরিভাষায় ‘ইসরাফ’ শব্দের ব্যাখ্যায় হযরত মুফাস্সিরীন-ই-কিরামগণ বলেন, আল্লাহ্ তায়ালার নাফরমানী ও গুণাহ্র কাজে ব্যয় করার নাম অপব্যয় যদিও তা এক পয়সাও হয়। اقتار -এর অর্থ ব্যয়ে ত্রুুটি ও কৃপনতা করা। শরীয়তের পরিভাষায় ‘ইক্বতার’ শব্দের ব্যাখ্যায় হযরত মুফাস্সিরীন-ই-কিরামগণ বলেন, যে সব কাজে আল্লাহ্ পাক ও রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যয় করতে বলেছেন তাতে কম ব্যয় করা। (মাযহারী, মা’য়ারিফুল কুরআন, বয়ানুল কুরআন ইত্যাদি)         আল্লাহ্ পাক দান করার ব্যাপারে কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,

يسئلونك ماذا ينفقون قل العفو.

অর্থঃ- “তারা (লোকেরা) আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, কি তারা দান করবে? আপনি বলে দিন, নিজেদের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর যা বাঁচে তাই দান করবে।” (সূরা বাক্বারা/ ২১৯)

অর্থাৎ এ আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মত ও পথে তাঁদের সন্তুষ্টি লাভের জন্য যথাসাধ্য ধন-সম্পদ খরচ করার জন্য বলা হয়েছে।

অতএব, আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টির জন্য যত টাকা-পয়সাই খরচ করা হোক না কেন তা কস্মিনকালেও অপচয় হবেনা; বরং তা ফযীলত ও মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ। মীলাদ প্রবর্তক বাদশাহ্কে যারা   ফাসিক ও বিদ্য়াতী বলবে;  তারাই মূলতঃ ফাসিক ও বিদ্য়াতী        উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা গেল যে, মীলাদের প্রচলনকারী বাদশাহ্ দ্বীনদার, পরহিযগার, আল্লাহ্ওয়ালা ছিলেন। সুতরাং তাঁকে যে বা যারা ফাসিক ও বিদ্য়াতী বলবে প্রকৃতপক্ষে সে বা তারাই ফাসিক ও বিদ্য়াতী বলে পরিগণিত হবে এবং উক্ত মীলাদ শরীফকে যে বা যারা বিদ্য়াত ও হারাম বলবে সে বা তারা কাট্টা কাফির হয়ে যাবে।           সুতরাং এ খরচ করাকে যদি কেউ অপচয় ও ফাসিকী বলে তাহলে তা কাট্টা কুফরী হবে।           {দলীলসমূহ ঃ (১) আহকামুল কুরআন, (২) মাযহারী, (৩) কুরতুবী, (৪) রুহুল বয়ান, (৫) রুহুল মায়ানী, (৬) কবীর, (৭) দুররে মনছুর, (৮) মা’য়ারিফুল কুরআন, (৯) বয়ানুল কুরআন, (১০) বুখারী, (১১) মুসলিম, (১২) তিরমিযী, (১৩) আবূ দাউদ, (১৪) বায়হাক্বী, (১৫) শুয়াবুল ঈমান, (১৬) মিশকাত, (১৭) মিরকাত, (১৮) আশয়াতুল লুময়াত, (১৯) লুময়াত, (২০) শরহুত্ ত্বীবী, (২১) তা’লিকুছ ছবীহ, (২২) মুযাহিরে হক্ব, (২৩) আন্ নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম, (২৪) আল বায়িছ আলা ইনকারিল বিদয়ি ওয়াল হাওয়া, (২৫) আল হাবীলিল ফতওয়া, (২৬) হুসনুল মাকাসিদ ফি আমালিল মাওয়ালিদ, (২৭) সীরাতে শামী, (২৮) সীরাতে হালবীয়া, (২৯) সীরাতে নববীয়া ও যুরকানী, (৩০) কিতাবুত তানবীর ফী মাওলুদিল বাশীর ওয়ান্ নাযীর, (৩১) সুবুলুল হুদা ফী মাওলুদিল মুস্তফা, (৩২) মাওলুদুল কবীর, (৩৩) দুররুল মুনাজ্জাম ইত্যাদি}

মুহম্মদ যিকরুল ইসলাম আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

সুওয়ালঃ  মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর কবরে আযান দেয়া যাবে কিনা? এ মাসয়ালাটির জাওয়াবে কেউ কেউ বলেছেন, জায়িয ও মুস্তাহাব। আবার কেউ কেউ বলেছেন, নাজায়িয, বিদ্য়াত ও মাকরূহ্। বিশেষ করে রেজভীরা তাদের কিতাবে জায়িয ও মুস্তাহাব বলেছে।

মাসিক আল বাইয়্যিনাত মুহ্তারাম কর্তৃপক্ষের নিকট আমার সুওয়াল- উল্লিখিত মতবিরোধপূর্ণ মাসয়ালাটির সঠিক জাওয়াব কোনটি? দয়া করে তা কুরআন-সুন্নাহ্র দলীল-আদিল্লাহ্র মাধ্যমে জানাবেন। জাওয়াবঃ    মৃত ব্যক্তির কবরে আযান দেয়া                     বিদ্য়াত; তালক্বীন দেয়া সুন্নত          মৃত ব্যক্তির কবরে আযান দেয়া জায়িয নেই। তা কুরআন-সুন্নাহ্ুর খিলাফ ও প্রকাশ্য বিদ্য়াতের অন্তর্ভুক্ত যা গোমরাহী। মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার কবরে “তালক্বীন” দিতে হবে। যা কুরআন-সুন্নাহ্র নির্দেশ তথা মুস্তাহাব-সুন্নত।

হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আবু উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যখন তোমাদের কোন মুসলমান ভাই ইন্তিকাল করবে, তখন তাকে কবরে রেখে তার উপর ভালভাবে মাটি দিয়ে অর্থাৎ দাফন করে তার মাথার নিকট দাঁড়িয়ে বলবে- “হে অমুকের সন্তান অমুক” তখন মৃত ব্যক্তি এটা শুনবে কিন্তু কোন জবাব দিবেনা। তারপর বলবে- “হে অমুকের সন্তান অমুক” এটা শুনে মৃত ব্যক্তি উঠে বসবে। অতঃপর আবার বলবে- “হে অমুকের সন্তান অমুক” এটা শুনে মৃত ব্যক্তি বলবে কি বলছেন? (যদিও তার কথা শুনা যাবেনা) তখন তোমরা বলবে তুমি এই সময় বলো (দুনিয়ায় থাকাকালীন অবস্থায় তুমি যার উপর কায়িম ছিলে) অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক ব্যতীত অন্য কোন মা’বুদ নেই, তিনিই একমাত্র প্রতিপালক। ইসলাম তোমার দ্বীন, হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমার নবী, কুরআন শরীফ তোমার পথ প্রদর্শক।

এ সময় মুনকার এবং নকীর একে অপরের হাত ধরে বলবে- এখান হতে চল, এর নিকট বসে কি করব? একেতো আখিরাতের দলীল শিখিয়ে দেয়া হচ্ছে।   অতঃপর আল্লাহ্ পাক তার এই কথাগুলো লিখে নেন। অমুকের পুত্র অমুকের স্থলে মৃত ব্যক্তি ও তার মাতার নাম উল্লেখ করবে। এক ব্যক্তি উঠে জিজাসা করলো, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যদি তার মাতার নাম জানা না থাকে তখন উপায় কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিলেন, তাহলে হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালাম-এর নাম উল্লেখ করে বলবে, হে হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালাম-এর পুত্র অমুক।          আর কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে মাইয়্যেতকে দাফন করার পর উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ থেকে একজন প্রশ্ন করবে,         منربك.উচ্চারণঃ র্মা রব্বুকা? অন্যান্য সকলেই বলবে-    ربى الله. উচ্চারণঃ রব্বিইয়াল্লাহু।

এরপর বলবে-   ومن نبيك.উচ্চারণঃ ওয়া মান নাবিয়্যুকা? অন্যান্য সকলেই বলবে-

نبى محمد صلى الله عليه وسلم.

উচ্চারণঃ নাবিয়্যী মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।   অতঃপর বলবে-     وما دينك. উচ্চারণঃ ওয়ামা দ্বীনুকা? সকলেই বলবে-     دينى الاسلام. উচ্চারণঃ দ্বীনিয়্যাল ইসলাম।      “তালক্বীন” সম্পর্কে হাফিযুল হুফ্ফায, সুলতানুল আরিফীন হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, “যখন মৃত ব্যক্তিকে তালক্বীন করবে তখন তার মায়ের নাম নিয়ে বলবে, হে অমুকের সন্তান অমুক! তুমি বলো।

আর যদি মায়ের নাম জানা না থাকে তাহলে হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালাম-এর নাম ধরে বলবে যে, হে অমুকের সন্তান অমুক! তুমি বলো-       ربى الله উচ্চারণঃ রব্বিইয়াল্লাহ্। অর্থঃ- “আমার রব আল্লাহ্ পাক।” ودينى الاسلام. উচ্চারণঃ ওয়া দ্বীনিয়্যাল ইসলাম। অর্থঃ- “আমার দ্বীন হচ্ছে ইসলাম।”

ونبى محمدصلى الله عليه وسلم.

উচ্চারণঃ ওয়া নাবিয়্যী মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অর্থঃ- “আমার নবী হচ্ছেন হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”    আর কোন কোন বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রথমে তিনবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলে এবং কোন কোন বর্ণনায় আছে তিনবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে উপরোক্ত কথাগুলো বলবে।

“ফতওয়ায়ে শামীতে” উল্লেখ করা হয়েছে,

قد روى عنه عليه السلام انه امر بالتلقين بعد الدفن فيقول يافان بن فلان اذكر دينك الذى كنت عليها.

অর্থঃ- “হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি দাফনের পর তালক্বীন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কবরের পাড়ে দাঁড়িয়ে বলবে,  হে অমুকের পুত্র অমুক, তুমি যে দ্বীনের উপর ছিলে সে দ্বীনকে স্মরণ কর।”        তালক্বীন দেয়া প্রসঙ্গে কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে যে, “মৃতের দাফনের পরে তার কোন পরহিযগার আত্মীয় বা বন্ধু তার বক্ষের বরাবর দাঁড়িয়ে নিম্নোক্ত দোয়া তালক্বীন করবে,

يا عبد الله قل اشهد ان لا اله الا الله وان محمدا رسول الله ان الجنة حق والنار حق والبعث حق وان الساعة اتية لا ريب فيها وان الله يبعث من فى القبور وقل رضيت بالله ربا وبالاسلام دينا وبمحمد عليه السلام نبيا وبالقران اماما وبالكعبة قبلة وبالمؤمنين اخوانا.

উচ্চারণঃ “ইয়া আব্দাল্লাহি কুল আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্না মুহম্মাদার রসূলুল্লাহ্। ইন্নাল জান্নাতা হাক্কুন ওয়ান্ নারা হাক্কুন ওয়াল বা’ছা হাক্কুন ওয়া ইন্নাস্ সা’য়াতা আতিয়াতুন্ লা রইবা ফীহা ওয়া ইন্নাল্লহা ইয়াব্য়াছু মান ফীল কুবুর। ওয়া কুল রদ্বিতু বিল্লাহি রব্বান ওয়া বিল ইসলামি দ্বীনান ওয়া বিমুহম্মাদিন নাবিয়্যান ওয়া বিল কুরআনি ইমামান ওয়া বিল কা’বাতি ক্বিবলাতান্ ওয়া বিল মু’মিনীনা ইখওয়ানান। ” অর্থঃ- “হে আল্লাহ্ পাক-এর বান্দা! তুমি বলো, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ পাক ব্যতীত কোন ইলাহ্ (মা’বুদ) নেই। আর নিশ্চয়ই হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্ তায়ালার রসূল। নিশ্চয়ই বেহেশ্ত সত্য, দোযখ সত্য, মৃত্যুর পর পুনরুত্থান সত্য। আর নিশ্চয়ই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবেই এতে কোন প্রকার সন্দেহ নেই; এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক কবরবাসীকে উঠাবেন। সুতরাং তুমি বলো, আমি আল্লাহ্ পাককে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে, হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী হিসেবে, কুরআন মজীদকে পথ প্রদর্শক হিসেবে, কা’বা শরীফকে ক্বিবলা হিসেবে এবং মু’মিনগণকে ভাই হিসেবে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নিয়েছি।”     কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে,

 يا عبد الله قل الله ربى ومحمد نبى والاسلام دينى والقران امامى والكعبة قبلتى والمؤمنون اخوانى وانا اشهد ان لا اله الا الله وحده لاشريك له واشهد ان محمدا عبده ورسوله.

উচ্চারণঃ- “ইয়া আব্দাল্লাহি কুল আল্লাহু রব্বী ওয়া মুহম্মদুন্ নাবিয়্যী ওয়াল ইসলামু দ্বীনী ওয়াল কুরআনু ইমামী ওয়াল কা’বাতু ক্বিবলাতী ওয়াল মু’মিনুনা ইখওয়ানী ওয়া আনা আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রসূলুহু। অর্থঃ- “হে আল্লাহ্ পাক-এর বান্দা! তুমি বলো, আল্লাহ্ পাক আমার রব, হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার নবী, ইসলাম আমার দ্বীন, কুরআন মজীদ আমার পথ প্রদর্শক, কা’বা শরীফ আমার ক্বিবলা এবং মু’মিনগণ আমার ভাই। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ পাক ব্যতীত কোন ইলাহ্ (মা’বুদ) নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্ পাক-এর বান্দা ও রসূল।”    হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “যখন মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে কবরে তালক্বীন দেয়া হয় তখন মুনকার ও নকীর ফেরেশ্তাদ্বয় পরস্পর পরস্পরের হাতে ধরে বলেন যে, তাকে প্রশ্ন করে কি হবে, তাকে তো সব শিখিয়ে দেয়া হয়েছে। চল আমরা চলে যাই। অর্থাৎ তালক্বীনের কারণে সে সুওয়াল-জাওয়াব থেকে নিস্কৃতি ও নাযাত পায়।” (সুবহানাল্লাহ্)     উপরোক্ত হাদীস শরীফের বর্ণনা দ্বারা মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর কবরে তালক্বীন দেয়া মুস্তাহাব-সুন্নত প্রমাণিত হলো। শরীয়তের হুকুম বর্ণিত থাকার পরও  নতুন ক্বিয়াস করা গোমরাহী ও সুস্পষ্ট  বিদ্য়াত এবং হারাম ও কুফরী              শরীয়তের উছূল হচ্ছে যে, আমল সম্পর্কে সরাসরি কুরআন-সুন্নাহ্র নির্দেশ রয়েছে, সে আমল সম্পর্কে ক্বিয়াস করাই নিষিদ্ধ। অতএব, সে আমল সম্পর্কে ক্বিয়াস করে কুরআন-সুন্নাহ্র নির্দেশের খিলাফ কোন মত বা প্রথা জারী করা সুস্পষ্ট গোমরাহী যা হারাম ও কুফরী। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن انس رضى الله تعالى عنه قال جاء ثلثة رهط الى ازواج النبى صلى الله عليه وسلم يسئلون عن عبادة النبى صلى الله عليه وسلم فلما اخبروا بها كانهم تقالوها فقالوا اين نحن من النبى صلى الله عليه وسلم قد غفر الله ما تقدم من ذنبه وما تاخر فقال احدهم اما انا فاصلى الليل ابدا وقال الاخر انا اصوم النهار ابدا ولا افطر وقال الاخر انا اعتزل النساء فلا اتززج ابدا فجاء النبى صلى الله عليه وسلم اليهم فقال انتم الذين قلتم كذا وكذا اما والله انى لاخشاكم لله واتقاكم له لكنى اصوم وافطر واصلى وارقد واتزوج النساء فمن رغب غن سنتى فليس منى.

অর্থঃ- “হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন। একদিন নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য তিন ব্যক্তি নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রীগণের নিকট আসলেন। যখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইবাদত সম্পর্কে তাঁদেরকে বলা হলো, তাঁরা যেন তা কম মনে করলেন এবং বললেন, নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে আমাদের তুলনা কোথায়? যার পূর্বাপরের সমস্ত গুণাহ্ আল্লাহ্ তায়ালা ক্ষমা করে দিয়েছেন। অতঃপর তাদের একজন বললেন, আমি সর্বদা সারা রাত্র নামায পড়ব। অপরজন বললেন, আমি সর্বদা রোযা রাখব; কখনও রোযা ছাড়ব না। তৃতীয়জন বললেন, আমি সর্বদা স্ত্রী সংস্পর্শ হতে পৃথক থাকব কখনও বিবাহ্ করব না। এমন সময় নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের নিকট এসে পৌঁছলেন এবং বললেন, তোমরাই নাকি সে সকল লোক যারা এমন কথা বলেছ? আল্লাহ্ পাক-এর কছম! আমি তোমাদের অপেক্ষা আল্লাহ্ তায়ালাকে অধিক ভয় করি এবং তাঁর নিষিদ্ধ কাজ হতে তোমাদের অপেক্ষা বেশী পরহিয করি। এতদ্বসত্ত্বেও আমি কোন দিন রোযা রাখি আর কোন দিন রোযা ছেড়ে দেই এবং নামাযও পড়ি ঘুমিয়েও থাকি। আমি বিবাহ্ও করি (এবং স্ত্রীর হক্বও আদায় করি) সুতরাং যে আমার সুন্নত হতে বিমূখ হবে সে আমার তরীক্বার অন্তর্ভুক্ত নয়।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত) উপরোক্ত হাদীস শরীফে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটাই নির্দেশ করেছেন যে, প্রত্যেক আমল-আখলাক, সীরত-ছূরত ও ইবাদত-বন্দেগী ইত্যাদিতে তিনি যা বলেছেন হুবহু তাই করতে হবে। কোন বিষয়ে বাড়ানো-কমানো যাবেনা।  সুন্নতের খিলাফ কোন ক্বিয়াসই  গ্রহণযোগ্য নয়      উল্লেখ্য, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম যাঁরা সরাসরি আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি লাভ করেছেন তাঁরা আরো বেশী সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমল বাড়াতে চেয়েছিলেন তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শক্ত নির্দেশ দিলেন, “যদি কেউ আমার সুন্নতের খিলাফ কোন আমল বাড়ায় বা কমায় তাহলে তা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হবে না। শুধু তাই নয় বরং সে সরাসরি উম্মত থেকে খারিজ হয়ে যাবে।”      এ হাদীস শরীফ দ্বারা এটাই ছাবিত হয় যে, যে বিষয়ে যে সুন্নত সাব্যস্ত হয়েছে তার খিলাফ কোন ক্বিয়াসই শরীয়তে কস্মিনকালেও গ্রহণযোগ্য নয় বা হবে না।             কাজেই মৃত ব্যক্তির কবরে সুন্নত তরীক্বায় তালক্বীন দেয়া হচ্ছে খাছ মুস্তাহাব-সুন্নত। এখানে যদি কেউ তালক্বীনের শব্দগুলোর উপর ক্বিয়াস করে আযান দেয়ার প্রথা চালু করে তাহলে তা অবশ্যই বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ হবে। যা স্পষ্ট গোমরাহী, হারাম, নাজায়িয ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। যদি কেউ এরপরও ক্বিয়াস করে তাহলে সে উম্মতে মুহম্মদী থেকে খারিজ হয়ে যাবে।   বিদ্য়াত অবশ্যই পরিত্যাজ্য            কারণ এর তাকিদ স্বরূপ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

 من احدث فى امرنا هذا ماليس منه فهو رد.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলামে এমন বিদ্য়াত চালু করলো যা আমাদের দ্বীন ইসলামে নেই তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)   এ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ইসলামে কোন বিদ্য়াত গ্রহণযোগ্য নয়। শুধু তাই নয় বরং বিদ্য়াত অবশ্যই পরিত্যাজ্য। কারণ একটা বিদ্য়াত প্রবেশ করলে একটা সুন্নতের বিলুপ্তি ঘটে যা শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।   এ প্রসঙ্গে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

ما احدث قوم بدعة الا رفع مثلها من السنة فتمسك بسنة خيرمن احداث بدعة.

অর্থঃ- “যখন কোন সম্প্রদায় একটি বিদ্য়াত কাজ করে তখনই তৎপরিবর্তে একটি সুন্নত বিলুপ্ত হয়। সুতরাং এমতাবস্থায় বিদ্য়াত ছেড়ে দিয়ে সুন্নতের অনুসরণই করতে হবে।” (আহমদ, মিশকাত)          আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة.

অর্থঃ- “তোমাদের জন্য আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ।” (সূরা আহযাব/২১)

অর্থাৎ জ্বিন-ইনসান সকলের জন্যই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদর্শ। সে আদর্শ মুতাবিক চলা সকলের জন্যই ফরয।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

ما اتكم الرسول فخذوه وما نهكم عنه فانتهوا واتقوا الله ان الله شديد العقاب.

অর্থঃ- “তোমাদের নিকট রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ করো; আর যা হতে নিষেধ করেছেন তা হতে বিরত থাক। আর  এ ক্ষেত্রে আল্লাহ্ তায়ালাকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক কঠোর শাস্তিদাতা।” (সূরা হাশর/৭)    এর ব্যাখ্যায় বলা হয়, হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি একদা ফতওয়া দিলেন যে, “সমস্ত সুন্নত পালন করা ফরয।” তাঁর ফতওয়া শুনে ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহ্গণ এসে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি এটা কি ফতওয়া দিলেন? আমরা তো জানি ফরযকে ফরয হিসেবে, সুন্নতকে সুন্নত হিসেবে। অথচ আপনি ফতওয়া দিলেন সমস্ত সুন্নত পালন করা ফরয, এর স্বপক্ষে আপনার কি কোন দলীল রয়েছে?

কারণ আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেছেন,

 هاتوا بر هانكم ان كنتم صدقين.

“শুদ্ব অর্থঃ- “তোমরা সত্যবাদী হলে দলীল পেশ কর।” (সূরা বাক্বারা/১১১)       এটা শুনে হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন যে, হ্যাঁ, আমার দলীল রয়েছে। তা হচ্ছে ক্বেতয়ী দলীল। এটা বলে তিনি উপরোক্ত আয়াত শরীফ উল্লেখ করেন।

তাঁর দলীল শুনে সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহ্গণ লা-জাওয়াব হয়ে গেলেন। অতঃপর তাঁরা সকলেই স্বীকার করলেন যে, আমরা এ আয়াত শরীফ সম্পর্কে এ ফতওয়া ফিকির করিনি। তখন তাঁরা সকলেই এ ফতওয়া স্বীকার করে নিলেন।         এ প্রসঙ্গে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

اذا امرتكم بشئ فخذوه ما استطعتم ونهيتكم عن شئ فانتهوا.

অর্থঃ- “আমি তোমাদেরকে যে বিষয় সম্পর্কে আদেশ করেছি তোমরা যথাসাধ্য তা গ্রহণ করো। আর যে বিষয় সম্পর্কে নিষেধ করেছি তা থেকে বিরত থাক।” (ইবনে মাযাহ্)      কাজেই কেউ যদি সুন্নত সূক্ষ্মাতি সূক্ষ্ম, পূঙ্খানু পূঙ্খ অনুসরণ করে তার জন্যই একমাত্র কামিয়াবী।         এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

من يطع الله ورسوله فقد فاز فوزا عظيما.

অর্থঃ- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক এবং রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করবে সে বিরাট সফলতা লাভ করবে।” (সূরা আহযাব/৭১)  অর্থাৎ যে ব্যক্তিই আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাক্বীক্বী অনুসরণ করবে সে ব্যক্তিই বিরাট সফলতা ও কামিয়াবী হাছিল করবে।        এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে,

من تمسك بسنتى عند فساد امتى فله اجر مأة شهيد.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ফিৎনা-ফাসাদের যুগে আমার একটি সুন্নত আঁকড়ে থাকবে সে একশত শহীদের ছওয়াব লাভ করবে।” অর্থাৎ সে ব্যক্তিই নাযাত লাভ করবে, কামিয়াবী লাভ করবে এবং আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ফরমাবরদার বান্দা হিসেবে পরিগণিত হবে, যে সুন্নত পালন করবে।           এ প্রসঙ্গে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

كل امتى يد خلون الجنة الا من ابى قيل ومن ابى قال من اطاعنى دخل الجنة ومن عصانى فقد ابى.

অর্থঃ- “আমার সমস্ত উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে তবে আমাকে যারা অস্বীকার করেছে তারা ব্যতীত। জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন ব্যক্তি আপনাকে অস্বীকার করেছে? তিনি বললেন, যে আমাকে ইতায়াত (অনুসরণ) বা আমার ফরমাবরদারী করলো সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আমার নাফরমানী করলো সে আমাকে অস্বীকার করেছে অর্থাৎ সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (বুখারী, মিশকাত)         এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,

قل ان كنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله ويغفر لكم ذنوبكم والله غفور رحيم.

অর্থঃ-  “বলুন (হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! যদি তোমরা আল্লাহ্ তায়ালাকে মুহব্বত করে থাক তবে আমাকে অনুসরণ করো, আল্লাহ্ তায়ালা তোমাদেরকে মুহব্বত করবেন, তোমাদের গুণাহ্খতা ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ্ তায়ালা হলেন ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” (সূরা আলে ইমরান/৩১)       উপরোক্ত আয়াত শরীফে তাই আল্লাহ্ পাক বলেন, “যদি কেউ আল্লাহ্ পাক-এর মুহব্বত, ক্ষমা ও দয়া পেতে চায় তাহলে সে যেন তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হুবহু অনুসরণ করে। উপরোক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা এটাও স্পষ্ট হয়ে উঠে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতের অনুসরণ না করলে আল্লাহ্ পাক-এর মুহব্বত, মারিফাত, ক্ষমা, দয়া, ইহ্সান কোনটি লাভ করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। এক কথায় আল্লাহ্ পাক-এর খাছ বান্দা ও আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মত হিসেবে সে পরিগণিত হবে না।

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই সাব্যস্ত হলো, শরীয়তের উছূল হলো, “যে আমলের ক্ষেত্রে  কুরআন-সুন্নাহ্র সরাসরি ফায়সালা রয়েছে সে বিষয়ে কোন প্রকার ক্বিয়াস শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।”     যারা কবরে আযান দেয়া জায়িয ও মুস্তাহাব বলে তারা নিম্নোক্ত যুক্তি-প্রমাণের উপর ক্বিয়াস করে বলে থাকে- ১. সন্তান ভুমিষ্ট হওয়ার সময় আযান দিতে হয় তাই মৃত্যুর পর কবরে আযান দেয়া মুস্তাহাব। ২. হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে,

لقنوا مو تكم لا اله الا الله.

 “তোমরা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ (কলিমা শরীফ) বলে মৃত ব্যক্তিকে তালক্বীন দাও।” যেহেতু আযানের মধ্যে কলিমাও রয়েছে সেহেতু আযানও কবরে তালক্বীনের জন্য প্রযোজ্য ও মুস্তাহাব। ৩. কবরে আযান দেয়া যেহেতু শরীয়তে নিষেধ নয় তাই জায়িয এবং তা মুস্তাহাব। ৪. হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাহাবী হযরত সা’দ বিন মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর দাফনের পর তাঁর কবর শরীফে তাসবীহ্- ‘সুবহানাল্লাহ্’ ও তাকবীর- ‘আল্লাহু আকবার’ বলেছিলেন। আযানেও যেহেতু তাকবীর আছে তাই কবরে আযান দেয়া জায়িয ও মুস্তাহাব।

উপরোক্ত বক্তব্যসমূহের খন্ডনমূলক জবাব প্রথমতঃ  সন্তান ভুমিষ্ট হওয়ার সময় ‘তা’যীন’ অর্থাৎ আযান দেয়া শরীয়ত তথা হাদীস শরীফের নির্দেশ। কিন্তু মৃত্যুর পর কবরে আযান দেয়া শরীয়তের নির্দেশ নয়। তখন শরীয়তের নির্দেশ হলো তালক্বীন দেয়া এবং এটি মুস্তাহাব-সুন্নত। সুতরাং সুন্নতের মুকাবিলায় কোন কিয়াস গ্রহণযোগ্যতো নয়ই বরং তা গোমরাহী, নাজায়িয ও কুফরী।        দ্বিতীয়তঃ তোমরা “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” বলে মৃত ব্যক্তিকে তালক্বীন দাও হাদীস শরীফের এ বর্ণনা শুধুমাত্র কবরে তালক্বীন দেয়ার জন্যই নয়। বরং এ হাদীস শরীফ মৃত্যুবরণ করার পূর্বে মৃত প্রায় বা মুমূর্ষ ব্যক্তির উদ্দেশ্যে তালক্বীন দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। যাতে সেই কঠিন মূহূর্তে শয়তান ধোকা দিয়ে ঈমান হারা করে দিতে না পারে। মৃতপ্রায় ব্যক্তি যেন কালিমা শরীফ বলে মৃত্যুর সময়ও ঈমানের স্বীকৃতি দিয়ে ইন্তিকাল করতে পারে। সুতরাং এই কালিমা শরীফের সাথে ক্বিয়াস করে কবরে আযান দেয়া বাতুলতা, বিদ্য়াত ও গোমরাহী বৈ কিছু নয়।

তৃতীয়তঃ কবরে আযান দেয়া অবশ্যই শরীয়তে হারাম বা নিষিদ্ধ। কারণ এটি শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত সুন্নতী আমলের বিপরীত তাই এ ক্বিয়াস শরীয়তে অবশ্যই গ্রহণযোগ্য নয় বরং এটা নব আবিস্কৃত বিদ্য়াত যা সম্পূর্ণ হারাম ও বিদয়াত। আর যা হারাম ও গোমরাহী তাকে জায়িয ও মুস্তাহাব বলা কুফরী।

চতুর্থতঃ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত সা’দ বিন মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর দাফন শেষ করার পর সুবহানাল্লাহ্ ও আল্লাহু আকবার বলেছেন। তিনি আযান দিয়েছেন অথবা আযান দেয়ার জন্য বলেছেন এমন কোন বর্ণনা কোথাও নেই। কেবল ‘আল্লাহু আকবার’ শব্দ বলার দ্বারা আযান দেয়া প্রমাণিত হয়না। কারণ সুবহানাল্লাহ, আল হাম্দুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবর এ সকল প্রত্যেকটি শব্দ আলাদাভাবে একেকটি তাসবীহ্। এ তাসবীহ উচ্চারণ করা সম্পর্কে তরীক্বার ইমাম ও ছূফিয়া-ই-কিরামগণ বলেছেন, মূলতঃ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত ছাহাবীর প্রতি ফয়েয দান করেছেন যাতে মাটি চাপ দিতে না পারে। যেমন, এ প্রসঙ্গে সুলতানুল হিন্দ, খাজা গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজে বর্ণনা করেন, “আমার এক প্রতিবেশী পীর ভাই, তরীক্বার আইন-কানুন মেনে চলতো না, হঠাৎ মারা গেল। নিয়ম অনুযায়ী তাকে কাফন-দাফন করে প্রত্যেকে যে যার কাজে চলে গেল। কিন্তু কৌতুহল বশতঃ আমি কবরের পাশেই দুনিয়া হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে খানিকক্ষণ বসে রইলাম। এমন সময় দু’জন ফেরেশ্তা এসে কবরে অবতরণ করলো, দেখেই বুঝতে পারলাম এরা আযাবের ফেরেশ্তা। কবরে নেমেই তারা আমার পীর ভাইকে শাস্তি প্রদানে উদ্যত হলো। এমন সময় আমার পীর ও মুর্শিদ হযরত খাঁজা উসমান হারুনী কুদ্দেসু সিররুহুল আজীজ ফেরেশ্তাদ্বয়ের সম্মুখে উপস্থিত হয়ে বললেন, “এ লোককে শাস্তি প্রদান করতে পারবে না, কারণ এ আমার মুরীদ।” ফেরেশ্তাদ্বয় আল্লাহ্ পাক-এর বন্ধুর সম্মানার্থে চলে গেল, কিন্তু একটু পরেই ফিরে এসে বললো, “হুযূর এ লোক আপনার মুরীদ, একথা সত্য, কিন্তু সে আপনার তরীক্বার কাজ হতে বিরত ছিলো।” হুযূর ইরশাদ করলেন, “তার কাজ যাই হোক, সে তার জাতকে (অস্তিত্ব) আমার নিকট সমর্পণ করায় তার কাজ আমার কাজের সংগে সংযুক্ত হয়ে গেছে। অতএব, তার রক্ষণাবেক্ষণ আমার কর্তব্য।” হুযূর ফেরেশ্তাদেরকে তাঁর বক্তব্য পেশ করার সাথে সাথেই ফেরেশ্তাদের প্রতি আল্লাহ্ তায়ালার হুকুম হলো, “তোমরা চলে এসো, তাকে শাস্তি দিওনা। আমি আমার বন্ধুর সম্মানে তাকে ক্ষমা করে দিলাম।” (আনিসুল আরওয়াহ্)       অতএব, মৃত ব্যক্তির কবরে আযান দেয়া জায়িয নেই। তা বিদ্য়াত ও গোমরাহী যা হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।           কাজেই এ প্রকার গোমরাহীমূলক হারাম আমল থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেকের জন্য ফরয ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।

{দলীলসমূহঃ (১) আহকামুল কুরআন জাস্সাস, (২) কুরতুবী, (৩) রুহুল মায়ানী, (৪) রুহুল বয়ান, (৫) খাযিন, (৬) বাগবী, (৭) তাবারী, (৮) কবীর, (৯) মাযহারী, (১০) দুররে মনছুর, (১১) বুখারী, (১২) মুসলিম, (১৩) ইবনে মাজাহ্, (১৪) আহমদ, (১৫) মিশকাত,  (১৬) তবারানী, (১৭) ফতহুল বারী, (১৮) উমদাতুল ক্বারী, (১৯) শরহে ক্বিরমানী, (২০) তাইসীরুল বারী, (২১) শরহে নববী, (২২) ফতহুল মুলহিম, (২৩) মুফহিম, (২৪) মিরকাত, (২৫) আশয়াতুল লুময়াত, (২৬) লুময়াত, (২৭) শরহুত্ ত্বীবী, (২৮) তালীকুছ্ ছবীহ্, (২৯) মুযাহিরে হক্ব,  (৩০) মুজামুল কবীর, (৩১) বুলুগুল মারাম, (৩২) শামী, (৩৩) রদ্দুল মুহ্তার, (৩৪) দুররুল মুখতার, (৩৫) ফিক্হুস সুনান, (৩৬) কবীরি, (৩৭) নূরুচ্ছুদুর, (৩৮) আরকানে আরবায়া, (৩৯) শামী, (৪০) জামির্উ রুমুজ, (৪১) নাহরুল ফায়েক, (৪২) ইব্রাহীম শাহী, (৪৩) নিকাহ্ ও জানাযা তত্ত্ব, (৪৪) ফতওয়ায়ে রশীদিয়া ইত্যাদি।}

সাইয়্যিদ মুহম্মদ মোক্তাদুল ইসলাম (মিলন) রঈসুল মজলিশ- ছাত্র আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত সুবহানীঘাট, সিলেট।

সুওয়ালঃ রেযাখানী মুখপত্র ডিসেম্বর/২০০০ ঈঃ সংখ্যায়  “তাফসীরে রুহুল বয়ান, বুখারী, গুনিয়াতুত তালেবীন, রেজভীয়া” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “সহীহ্ মুসলিম শরীফসহ” অনেক নির্ভরযোগ্য কিতাবে নফল নামায বিশেষতঃ ক্বদর ও বরাতের নফল নামায জামাত সহকারে আদায় করা বৈধ….।”           আর আপনারা “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” লিখেছেন, “তারাবীহ, ছলাতুল কুছুফ (সূর্য গ্রহণের নামায), ছলাতুল ইস্তিস্কা (বৃষ্টির নামায) এই তিন প্রকার নামায ব্যতীত যেমন লাইলাতুল ক্বদর, লাইলাতুল বরাত, তাহাজ্জুদ, চাশ্ত, আওয়াবীন ইত্যাদি নফল নামাযসমূহ ইমামের সাথে চারজন মুক্তাদীসহ জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্।”  কোনটি সঠিক?         আর “বুখারী, মুসলিম শরীফে” কি “ক্বদর” ও বরাতের” নফল নামায জামায়াতের সাথে আদায় করার কথা উল্লেখ আছে? দয়া করে জানাবেন। জাওয়াবঃ রেযাখানীরা তাদের মুখপত্রে “তাফসীরে রুহুল বয়ান, বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, গুনিয়াতুত্ তালেবীন এবং রেজভীয়া” কিতাবের বরাত দিয়ে নফল নামায বিশেষতঃ “শবে বরাত”, “শবে ক্বদরের” নফল নামায আযান-ইক্বামত ছাড়া জামায়াত সহকারে আদায় করা যে বৈধ বলেছে, তা আমরা আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এর বিগত সংখ্যাগুলোতে বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে প্রমাণ করেছি যে, “তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, জিহালতপূর্ণ, জালিয়াতী ও প্রতারণামূলক।” কেননা, রেযাখানীরা কিতাবের নাম দিয়ে যে বক্তব্য প্রদান করেছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। বরং তার সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ, তারা কিতাবের ইবারত, সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে মনগড়া বক্তব্য প্রদান করেছে এবং ক্ষেত্র বিশেষ নিজের ভ্রান্ত মতকে টিকিয়ে রাখতে কিতাবের ইবারত কারচুপি করেছে।

(ধারাবাহিক)

বর্তমান সংখ্যায় রেযাখানীদের দলীলবিহীন  ও  মনগড়া বক্তব্য খন্ডন করা হলো

উল্লেখ্য, রেযাখানীরা বলেছে, “কোন কোন ভন্ড ….. ঢালাওভাবে মাকরূহে তাহরীমার গরম গরম ফতোয়া দিয়ে …. নিজের খ্যাতি চমকানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ….”         এর জবাবে বলতে হয় যে,  বিগত সংখ্যায় আমরা  আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাতে দলীলের ভিত্তিতে প্রমাণ করে দিয়েছি যে,  রেযাখানীরাই প্রকৃতপক্ষে মিথ্যাবাদী, ভন্ড, প্রতারক, মূর্খ ও জাহিল। তারা এমনই আশাদ্দুদ্ দরজার জাহিল যে নিজেরাই নিজেদের দাবিকৃত ইমামের বিরুদ্ধ মত পোষণ ও প্রচার করে অথচ আবার তারই ভক্ত বলে দাবী করে! কিন্তু সে কি লিখে গেছে সে সম্পর্কে তারা নিতান্তই বে-খবর ও আনপড়াহ।      দ্বিতীয়তঃ “শবে বরাত, শবে ক্বদর, রাগায়িব, তাহাজ্জুদ” ইত্যাদি নফল নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী ফতওয়া দেয়ার কারণেই যদি তা গরম গরম ফতওয়া হিসেবে সাব্যস্ত হয়, তাহলে বলতে হয়, রেযাখানীদের বক্তব্য মুতাবিক তাদের গুরু রেযা খাঁই গরম গরম ফতওয়া দিয়েছে।

কারণ, তাদের গুরু স্বয়ং রেযা খাঁ-ই তার “রেজভীয়া” কিতাবে শবে বরাত, শবে ক্বদর, রাগায়িব ইত্যাদি নফল নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী বলে ফতওয়া দিয়েছে।     যেমন,  “রেজভীয়া” কিতাবের ৩য় খন্ডে উল্লেখ আছে,

نماز شب برات اگر چہ مشائخ کرام قدست اسرازھم نے بجماعت بھی چڑھی… مگر ھمارے انمہ رضی اللہ تعالی عنھم کا مذھب وھی ھے کہ جماعت بتداعی ھو تو مکروہ ھے.

অর্থাৎ- “শবে বরাতের নামায যদিও কোন কোন মাশায়েখগণ জামায়াতে পড়েছেন … তবে আমাদের আইম্মা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মাযহাব ওটাই যে জামায়াত تداعى  এর সাথে হলে অর্থাৎ জামায়াতে চারজন মুক্তাদী হলে মাকরূহ তাহ্রীমী হবে।          “রেজভীয়া” কিতাবের ৩য় খন্ডের ৪৬৫ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

ذلك كله بدعه ……… ولم ينق عن النبى صلى الله عليه وسلم ولا عن اصحابه ….. دوسراقوليه كه مساجد مي اس كى جماعت مكروه ه…

অর্থাৎ- “ওগুলো প্রত্যেকটি বিদ্য়াত অর্থাৎ ছলার্তু রাগায়িব, শবে বরাত, শবে ক্বদরের নফল নামায জামায়াতে আদায় করা ইত্যাদি প্রত্যেকটি কাজই বিদ্য়াত।” ….. কেননা, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম থেকে ওগুলোর কোন বর্ণনা নেই। বিধায় ওগুলো প্রত্যেকটাই বিদ্য়াত। ……. দ্বিতীয় মতে, মসজিদে এর জামায়াত করা মাকরূহ তাহ্রীমী।”        “রেজভীয়া” কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে, “ তারাবীহ্, ছলাতুল কুছুফ (সূর্যগ্রহণের নামায), ছলাতুল ইস্তিস্কা (বৃষ্টির নামায) এই তিন প্রকার নামায ব্যতীত অন্যান্য নফল নামাযসমূহ জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহ্রীমী।”

যেমন, “রেজভীয়া”-এর ৩য় খন্ডের ৪৫৯  পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ھما رے ائمہ کرام رضی اللہ تعالی عنھم کے نزدیک نوافل کی جماعت بتداعی مکروہ ھے اسی حکم  میں نماز  خسوف ب

অর্থঃ- “আমাদের আইম্মা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের নিকট নফল নামাযসমূহ ঞ্জণ্ডম্ফব্জম্ল‘-এর সাথে জামায়াতে পড়া  মাকরূহ তাহ্রীমী। এই হুকুমের মধ্যে ছলাতুল খুছুফও (চন্দ্রগ্রহণের নামায) অন্তর্ভুক্ত। এই নামাযও একাকী পড়তে হবে। যদিও জুমুয়ার ইমাম উপস্থিত থাকে।”          যেমন, শামী কিতাবে, ইসমাঈল এবং বরজুন্দী থেকে বর্ণিত আছে, …….. আর তারাবীহ্, ছলাতুল কুছুফ (সূর্য গ্রহণের নামায), ছলাতুল ইস্তিস্কা (বৃষ্টির নামায), এই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত নয়। অর্থাৎ এই তিন প্রকার নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ নয়। …… অধিক ছহীহ মতে  চারজন অথবা চারের অধিক মুক্তাদী হওয়াই (تداعى )  তাদায়ী অর্থাৎ মাকরূহ তাহ্রীমী।                যেমন, “রেজভীয়া” কিতাবের ৪৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

تراویح وکسوف واستسقاء کے سوا جما عت نوا فل میں…. اور چار مقتدی ھو تو بالاتفاق مکروہ.

অর্থাৎ- “তারাবীহ, কুছুফ, (সূর্যগ্রহণের নামায) ইস্তিস্কার (বৃষ্টির) নামায ব্যতীত অন্যান্য নফল নামায সমূহ … ইমামের সাথে চারজন মুক্তাদীসহ জামায়াতে আদায় করা সকল ইমাম মুজতাহিদ ও ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের সর্বসম্মত মতে মাকরূহ তাহরীমী।”

আরো উল্লেখ্য যে, “রেজভীয়া” কিতাবে পরিশেষে এটাও উল্লেখ আছে যে, নফল নামায পড়তে হলে পৃথক পৃথক পড়তে হবে। জামায়াতের সাথে নফল নামায আদায় করা যাবে না। কেননা নফল নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহ্রীমী। আর চারজন মুক্তাদী হলে সকল ইমাম মুজতাহিদ ও ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের সর্বসম্মত মতে নফল নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা মাকরূহ তাহ্রীমী।

শুধু তাই নয় রেযা খাঁ তার রেজভীয়া কিতাবে সুন্নত নামাযও জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী বলে ফতওয়া  দিয়েছে।     যেমন, ‘রেজভীয়া’ কিতাবের ৩য় খন্ডের ৪৬৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

استسقاء کے سوا ہر نماز نفل وتراویح وکسوف  کے سوا ہرنماز سنت میں ایسی جماعت جس میں چار یا زیادہ شخص مقتدی بنیں مکروہ ہے.

অর্থঃ- “ইস্তিস্কার নামায ব্যতীত যে কোন নফল নামাযে এবং তারাবীহ্ ও কুছুফ নামায ব্যতীত যে কোন সুন্নত নামাযে যদি এরূপ জামায়াত হয় যাতে চারজন অথবা চারের অধিক মুক্তাদি উপস্থিত হয় তাহলে মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে।”         সুতরাং যেখানে সুন্নত নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী সেখানে নফল নামায জামায়াতে পড়া কি করে বৈধ হতে পারে? যেমন, “রেজভীয়া” কিতাবের ১০ম খন্ডে উল্লেখ আছে,

نفل پڑھیں تو الگ الگ ورنہ نفل جماعت کثیرہ کے ساتھ مکروہ ھے چار مقتدی ھوں تو بالاتفاق.

অর্থঃ- “নফল নামায পড়তে হলে পৃথক পৃথক পড়বে, কেননা নফল নামায বড় জামায়াতের সাথে পড়া অর্থাৎ যদি জামায়াতে চারজন মুক্তাদী হয় তাহলে সকল ইমাম, মুজতাহিদ ও ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ঐক্যমতে জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহ্রীমী।”    উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, রেযা খাঁ তার রেজভীয়া কিতাবে, শবে বরাত, শবে ক্বদর, রাগায়িব ইত্যাদি নফল নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী ফতওয়া দিয়েছে। সুতরাং রেযাখানীদের উক্ত বক্তব্য মুতাবিক রেযা খাঁই ঢালাও ভাবে মাকরূহ্ তাহরীমার গরম গরম ফতওয়া দিয়ে নিজের খ্যাতি চমকানের অপচেষ্টা চালিয়েছিলো। (চলবে)

মাওলানা মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান

মাওলানা মুহম্মদ মাছূম বিল্লাহ্

মুহম্মদ আসাদুর রহমান,

মুহম্মদ মাইজুর রহমান ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

সুওয়ালঃ  আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম এই তিনটি সংখ্যায় প্রদত্ত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ, মুহাক্কিক-মুদাক্কিক ও হক্কানী উলামা-ই-কিরামগণের ফতওয়া মুতাবিক জানতে পারলাম যে, “প্রাণীর ছবি তৈরী করা, ঘরে রাখা সর্বাবস্থায় হারাম।”

অথচ রেযাখানী মুখপত্র নভেম্বর/২০০১ ঈসায়ী সংখ্যায় ছবি সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ফতওয়া প্রকাশ করেছে। যা কিনা মানুষের ঈমান-আমল বিনষ্ট হওয়ার কারণ। রেযাখানীদের ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যের যে বিষয়গুলো আপত্তিকর সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

(ক) রেযাখানীরা ছবি তোলাকে বৈধ বলেছে; কিন্তু দলীল হিসেবে পেশ করেছে ঘরে ছবি রাখা সম্পর্কিত হাদীসসমূহকে।        (খ) .. কতেক উলামা যেসব ছবির শরীর ও ছায়া নেই সেসব ছবিকে বৈধ বলেছেন।

(গ) হুজুর আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুরুর দিকে ছবি তৈরী করা ও সংরক্ষণ করাকে নিষেধ করেছিলেন; কিন্তু পরবর্তীতে অনুমতি দেন। (ঘ) পূর্ববর্তীদের কেউ কেউ এবং হাম্বলী, শাফেয়ী, মালেকী এমনকি হানাফীদেরও কেউ কেউ নাকি (গায়রে মুজাস্সাম) শরীরবিহীন ছবিকে বৈধ বলেছেন।

(ঙ) সামাজিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে বিশেষ প্রয়োজনে ছবি তোলা বৈধ যা যুগের চাহিদাও।

(চ) প্রত্যেক যুগের ফক্বীহ্, মুফতী, কাজী ও আলিমগণ যুগের চাহিদা অনুযায়ী ফতওয়া দিয়েছেন এবং দেয়া উচিত।

(ছ) ছবি হারাম হওয়ার মূলে হলো গায়রুল্লাহ্র সম্মান ও ইবাদত।

(জ) প্রয়োজনীয় রেকর্ডের জন্য ফাইল বন্দি ছবিসমূহ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের নিকট জ্ঞান ও ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য জানার নিমিত্তে সরকারী-বেসরকারী যাদুঘর বা বিশেষ প্রতিষ্ঠানসমূহে পূর্বের নানা মনীষীগণের ছবি সংরক্ষণ/ধারণ করে রাখা বিশেষ প্রয়োজনে মাকরূহ্ হবেনা। এছাড়াও আরো বহু আপত্তিকর বিষয় তাদের উক্ত ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যে স্থান পেয়েছে। কুরআন-সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে তাদের উল্লিখিত আপত্তিকর বক্তব্যগুলোর শরয়ী ফায়সালা কামনা করি।

জাওয়াবঃ  হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الا حاديث بما لم تسمعوا انتم ولا ابائكم فايا كم واياهم لايضلونكم ولا يفتنونكم.

অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি, সাবধান! তোমরা তাদের কাছ থেকে দূরে থাকবে, তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ)                            উল্লিখিত হাদীস শরীফের পূর্ণ মেছদাক বা নমুনা হচ্ছে রেযাখানীরা। তারা ছবির ব্যাপারে এমন সব বক্তব্য প্রদান করেছে যা কিতাবে দেখা তো দূরের কথা কেউ কোন দিন শুনেও নাই। মূলতঃ রেযাখানীরা নিজেদেরকৃত বদ আমলকে ধামা-চাপা দেয়ার উদ্দেশ্যেই মনগড়াভাবে ছবিকে জায়িয করার অপচেষ্টা করেছে। যেমনটি করেছিলো, “ছানী আযান, তাহাজ্জুদের জামায়াত, বাইয়াত হওয়া, দুই সিজদার মাঝখানে পূর্ণ দোয়া পড়া, ধুমপান” ইত্যাদি বিষয়গুলোকে নিয়ে। কিন্তু মাসিক আল বাইয়্যিনাত তাদের সমস্ত ষড়যন্ত্র আর অপতৎপরতাকে নির্ভরযোগ্য দলীলের দ্বারা নস্যাৎ করে দিয়েছে। ইনশাআল্লাহ্ তাদের ছবিকে জায়িয করার সকল ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতাকেও নস্যাৎ করে দেয়া হবে।

রেযাখানীরা ছবি জায়িয করার উদ্দেশ্যে যে সব মনগড়া, বানোয়াট, জালিয়াতিপূর্ণ ও আপত্তিকর বক্তব্য প্রদান করেছে তা ধারাবাহিকভাবে পর্যায়ক্রমে খন্ডন করার পূর্বে ছবি হারাম হওয়ার দলীলগুলো সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করা হলো- (ধারাবাহিক)

শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রাণীর ছবির সঠিক ফায়ছালা   এ পর্যন্ত উল্লিখিত হাদীস শরীফ ও তার ব্যাখ্যা গ্রন্থসমূহের ভিত্তিতে যা প্রমাণিত হলো তা হচ্ছে (১) যে ব্যক্তি কোন প্রাণীর ছবি তুলবে বা তোলাবে সে ব্যক্তি ক্বিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি ভোগ করবে! (২) যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশ্তা প্রবেশ করেনা, (৩) ঘরে ঝুলানো পর্দা সমূহেও প্রাণীর ছবি রাখা নিষেধ, (৪) প্রাণীর ছবি তোলা বা আঁকার ব্যবস্থা করাও নিষেধ ইত্যাদি।

অতএব, হাদীস শরীফ ও তার ব্যাখ্যা গ্রন্থসমূহের বর্ণনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রাণীর ছবি তোলা বা আঁকা এবং তোলানো বা আঁকানো, প্রাণীর ছবি বা ছবিযুক্ত পর্দা ঘরে রাখা ও প্রাণীর ছবি তোলা বা আঁকার ব্যবসা করা সম্পূর্ণই হারাম ও নাজায়িয।

এখন আমরা দেখবো উল্লিখিত হাদীস শরীফ ও তার ব্যাখ্যাসমূহের প্রেক্ষিতে বিশ্বখ্যাত ও অনুসরণীয় ফক্বীহ্গণ তাঁদের ফিক্বাহ্রে কিতাবসমূহে কি লিখেছেন?

নিম্নে এ সম্পর্কিত বিশ্বখ্যাত ও অনুসরণীয় ফক্বীহ্গণের ফতওয়া উল্লেখ করা হলো-

جیشے قلم سے تصویر کھینچنا ناجائز ھے ایسے  ھی فوٹو سے تصویر بنانا پریس پر چھاپنا یا سانچہ اور مشین وغیرہ مین دھالنا بھی نا جائز ھے.

অর্থঃ- “কলম দ্বারা যেরূপ প্রাণীর ছবি তৈরী করা নাজায়িয (ও হারাম) তদ্রুপ ক্যামেরা, প্রেস, ছাঁচ, মেশিন ইত্যাদির দ্বারাও প্রাণীর ছবি তৈরী করা নাজায়িয ও হারাম।” (জাদীদ মাসায়েল কে শরয়ী আহকাম পৃঃ ৪৪)

  تصویر چسکو اس زمانہ میں مرقع کھتے ھین احادیث صحیحہ کی روسے اسکا بنانا رکھنا سب حرام ھے. اور اسکا ازالہ اور محو کرنا واجب ھے.

অর্থঃ- “বর্তমান আধুনিক যুগে যাকে ছবি বলা হয়, ছহীহ্ হাদীস শরীফ সমূহের আলোকে ওটা আঁকা বা তৈরী করা এবং ঘরে রাখা সম্পূর্ণ হারাম। (প্রাণীর ছবি) ওটা নিশ্চিহ্ন করে ফেলা ওয়াজিব।” (ইমদাদুল ফতওয়া ২য় জিঃ পৃঃ ১৫১)

تصویر کھینچنا اور کھنچو انا جدید طریق فوٹو  گرافی سے ایسا ھی حرام ھے جیسا کہ دستی تصویر کھینچنا اور کھنچو انا ممنوع اور حرام ھے اور رکھنا اسکا ایسا ھی حرام ھے جیسا کہ دستی تصویر کا رکھنا. ایسے فعل کا فاسق ھے اور امام بنانا اسکا حرام ھے اور نماز اسکے پیچھے مکروہ تحریمی ھے.

অর্থঃ- “আধুনিক যে কোন পদ্ধতিতে প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা তৈরী করানো, হাতে তৈরী করা বা তৈরী করানোর মতোই হারাম ও নাজায়িয এবং প্রাণীর ছবি রাখাও তদ্রুপ হারাম। উক্ত আমলকারী ব্যক্তি ফাসিক এবং তাকে ইমাম নিযুক্ত করা হারাম। এবং তার পিছনে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রিমী।” (ফতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ ১ম জিঃ পৃঃ ৭৪২)

ويكره لبس ثوب فيه تمثال ذى روح وان كون فوق رأسه او بين يديه او بحذائه او يمنه او يسرة او محل سجوده.

অর্থঃ- “প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড় পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহ তাহ্রীমী। এবং নামাযীর মাথার উপর, সামনে, ডানে, বাঁয়ে এবং জুতোর মধ্যে এবং সিজদার স্থানে প্রাণীর ছবি থাকলে নামায মাকরূহ তাহ্রীমী হবে।” (রদ্দুল মুহতার ১ম জিঃ পৃঃ ৬৪৮, ইমদাদুল ফতওয়া জাদীদ ১ম জিঃ পৃঃ ৪৪০, দুররুল মুখ্তার, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়াহ পৃঃ ৩৮৬, ফতওয়ায়ে আলমগীরী ১ম জিঃ পৃঃ ১১৯, তুহফাতুল আযম পৃঃ ৩৬, নূরুদ দেরায়া ২য় জিঃ পৃঃ ৬০, খুলাছাতুল ফতওয়া ১ম জিঃ পৃঃ ৫৮, মায়দানুল হাকায়িক ১ম জিঃ পৃঃ ১৫২)

     ويكره ان يكون فوق راسه فى السقف او بين يديه او بحذائه تصاو ير او صورة معلقة و اشدها كراهة ان تكون امام المصلى ثم من فوق راسه- ثم على يمينه ثم على شماله ثم خلفه.

অর্থঃ- “নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে, নামাযীর মাথার উপর, ছাদের মধ্যে অথবা সামনে অথবা জুতোর মধ্যে অথবা ঝুলন্ত অবস্থায় প্রাণীর ছবি থাকলে। এবং নামায শক্ত মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে, প্রাণীর ছবি নামাযীর সামনে, বা মাথার উপরে বা ডানে বা বাঁয়ে বা পিছনে থাকলে।”(ফতহুল ক্বাদীর ১ম জিঃ পৃঃ৩৬২, আইনী শরহে হিদায়া ১ম জিঃ পৃঃ ৮০৭, বাহ্রুর রায়িক ২য় জিঃ পৃঃ ২৭, লিসসুরুখছিল মাবছুত ১ম জিঃ পৃঃ ২১১, হিদায়া ১ম জিঃ পৃঃ ১৪২, শরহে বিকায়া ১ম জিঃ পৃঃ ১২৮, শরহে নিকায়া ১ম জিঃ পৃঃ ২১৭, কিতাবুল ফিকাহ আলা মাযাহিবিল আরবা ১ম জিঃ পৃঃ ২৭৮, মারাকিউল ফালাহ্ পৃঃ ২৪০, জামিউছ ছগীর পৃঃ ২৬, মালাবুদ্দা মিন্হু পৃঃ ৬১, আনোয়ারে মাহ্মূদ পৃঃ ৫৬)

جس کپرے پرجاندار کی تصویر ھو اسے پھن کر نماز پرھنا مکروہ تحریمی ھے نما ز کے علاوہ بھی ایسا کپسا کپرا پھننا ناجائز ھے. اور تصویر مصلی کے سر پر یعنی چھت میں ھو یا معلق ھو  یا محل سجود میں ھو تو نماز مکروہ تحریمی ھوگی. اور مصلی کے اگے یا داھنے یا بائیں تصویر کا ھونا مکروہ تحریمی ھے اور پس پشت ھونا بھی مکروہ ھے.

অর্থঃ- “প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড় পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী। নামাযের বাইরেও উক্ত কাপড় পরিধান করা নাজায়িয। এবং প্রাণীর ছবি নামাযীর মাথার উপর ছাদের মধ্যে অথবা ঝুলন্ত অবস্থায়, অথবা সিজদার স্থানে থাকলে নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে। এবং নামাযীর সামনে, ডানে, বাঁয়ে এবং পিছনে প্রাণীর ছবি থাকলেও নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে।” (বাহারে শরীয়ত ৩য় জিঃ পৃঃ ১২৩, ফতওয়ায়ে আব্দুল হাই পৃঃ২০৬, নূরুল হিদায়া ১ম জিঃ পৃঃ ১০৯, সুন্নী বেহেস্তী জিওর ১ম জিঃ পৃঃ ৮৯, আহ্সানুল মাসায়িল পৃঃ ৪২ রোকনুদ্দিন পৃঃ৭০, আইনুল হিদায়া ১ম জিঃ পৃঃ ৫১২, ইলমুল ফিকাহ ২য় জিঃ পৃঃ ২৪১, ফতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ ৪র্থ জিঃ পৃঃ ১৩৭, আশ্রাফী বেহেস্তি জিওর ২য় জিঃ পৃঃ ২৫, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া ১ম জিঃ পৃঃ ১৭০, তরীকুল ইসলাম ৭ম খন্ড পৃঃ ৪০, নুরুল ইজা, গায়াতুল আওতার, হাশিয়ায়ে তাহতাবী)

تصویر والے مقام میں نماز پرھنا مکروہ تحریمی ھے. اور اسکا اعادہ واجب ھے.

অর্থঃ- “প্রাণীর ছবিযুক্ত স্থানে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী এবং উক্ত নামায দোহ্রানো ওয়াজিব। কেননা আলমগীরী, ফতহুল ক্বাদীর কিতাবে মাকরূর বয়ানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নামাযের মধ্যে মাকরূহ্ তাহ্রীমী হলে নামায দোহ্রানো ওয়াজিব, আর মাকরূহ তান্যীহী হলে নামায দোহ্রানো মুস্তাহাব।” (আহসানুল ফতওয়া ৩য় জিঃ পৃঃ ৪২৭, আলমগীরী, ফতহুল ক্বাদীর ইত্যাদি)      (চলবে)

 মুহম্মদ বিল্লাল হুসাইন হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর

সুওয়ালঃ  হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত পত্রিকার মার্চ/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে নিম্নোক্ত জিজ্ঞাসা-সমাধান ছাপা হয়। জিজ্ঞাসাঃ মাথা মুন্ডন করা সুন্নাত না-কি জায়েয? অনেকে বলেন, সুন্নাত নয়, বরং জায়েয। সমাধানঃ মাথার চুল পরিমাণ মত লম্বা রেখে তাতে সিঁথি তোলা ছিল প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুবারক সুন্নাত (অভ্যাস)। এতে কারো সন্দেহ বা দ্বিমত নেই। তবে মাথা মুন্ডানো সুন্নাত, নাকি জায়েয- এ ব্যাপারে যদিও ফুক্বাহায়ে কিরামের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে কিন্তু হানাফী মাযহাব অনুযায়ী মাথার চুল বাবরী রাখা যেমন সুন্নাত, তেমনি মাথা মুন্ডন করাও সুন্নাত। (আল মাওছআতুল ফিক্বহিয়্যাহ্-১৮/৯৫, ফাত্ওয়ায়ে শামী- ২/১৬৫, ৬/৪০৭, হিন্দিয়্যাহ্- ৫/৩৭৫, হাশিয়ায়ে ত্বাহ্ত্বাভী- ২৮৬, ইমদাদুল মুফতিয়্যীন-৯৮৬, যাদুল্ মাআদ- ৭/৬৩, আল্ আশ্বাহ- ৫৬২)   এখন আমার সুওয়াল হলো- মাথা মুন্ডন করা সম্পর্কে হাটহাজারীর অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি মাথা মুন্ডন করা সুন্নত? দলীলসহ সঠিক জাওয়াব দিবেন।

জাওয়াবঃ  মাথা মুন্ডন সুন্নত  নয়;     বরং বাবরী রাখাই সুন্নত  মাথার চুল মুন্ডন করা সম্পর্কে হাটহাজারী মৌলভীদের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে। কারণ, হাটহাজারীর মৌলভীরা এবং তাদের সমজাতীয়রা এমন একখানা হাদীস শরীফ উল্লেখ করতে পারবে না, যেখানে উল্লেখ আছে যে, “আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্ব ও ওমরা ব্যতীত অন্য সময় নিজ মাথার চুল মুবারক মুন্ডন করেছেন।”

বরং অসংখ্য ছহীহ্ হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় বাবরী চুল মুবারক রাখতেন। সেহেতু সকল উম্মতে মুহম্মদীর জন্য সর্বদা বাবরী চুল রাখাই দায়েমী সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। বাবরী চুল সুন্নত-এর পক্ষে কতিপয় দলীল  নিম্নে আমরা অসংখ্য হাদীস শরীফ থেকে কয়েকখানা হাদীস শরীফ পেশ করলাম।      যেমন, হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে,

عن انس رضى الله تعالى عنه كان يضرب شعر النبى صلى الله عليه وسلم منكبيه.

অর্থঃ- “হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাথার বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কাঁধ মুবারক পর্যন্ত লম্বা ছিলো।” (বুখারী শরীফ ২য় খন্ড ৮৭৬ পৃষ্ঠা, শামায়িলুত্ তিরমিযী, শামায়িলুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

عن انس رضى الله تعالى عنه قال كان تعر رسول الله صلى الله عليه وسلم الى شحمة اذنيه.

অর্থঃ- “হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কানের লতি মুবারক পর্যন্ত লম্বা ছিলো।” (আবূ দাউদ শরীফ ২য় খন্ড ২২৩ পৃষ্ঠা, বযলুল মাজহুদ ৬ষ্ঠ খন্ড ৭৬ পৃষ্ঠা, শামায়িলুত্ তিরমিযী, শামায়িলুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

عن انس رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يضرب شعره منكبيه.

অর্থঃ- “হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কাঁধ মুবারক পর্যন্ত প্রলম্বিত ছিলো।” (মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড ২৫৮ পৃষ্ঠা, বুখারী শরীফ, নাসাঈ শরীফ ২য় খন্ড ২৯১ পৃষ্ঠা)

عن البراء رضى الله تعالى عنه قال كان النبى صلى الله عليه وسلم له شعر يبلغ شحمة اذنيه.

অর্থঃ- “হযরত বারায়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কানের লতি মুবারকে পৌঁছত।” (আবূ দাউদ শরীফ ২য় খন্ড ২২৪ পৃষ্ঠা, বযলুল মাজহুদ ৬খন্ড ৭৬ পৃষ্ঠা)

عن قتادة رضى الله تعالى عنه قال قلت لانس كيف كان شعر رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لم يكن باجعد ولا بالسبط كان يبلغ شعره شحمة اذنيه.

অর্থঃ- “হযরত ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চুল মুবারক কেমন ছিলো? তিনি জবাবে বললেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক সম্পূর্ণরূপে কোঁকড়ানোও ছিলো না, আবার সম্পূর্ণরূপে সোজাও ছিলো না। উক্ত বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কানের লতি মুবারকে পৌঁছত।” (শামায়িলুত্ তিরমিযী ৪ পৃষ্ঠা, শামায়িলুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, জামউল ওসায়িল ফি শারহিশ্ শামায়িল ১ম খন্ড ৯৪ পৃষ্ঠা)

عن قتادة رضى الله تعالى عنه قال سالت انس بن مالك رضى الله تعالى عنه عن شعر رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال كان شعر رسول الله صلى الله عليه وسلم رجلا ليس بالسبط ولا الجعد بين اذنيه وعا تقيه.

অর্থঃ- “হযরত ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত আনাছ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চুল মুবারক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক না অধিক কোঁকড়ানো ছিলো এবং না অধিক সোজা ছিলো। বরং দু’অবস্থার  মাঝামাঝি ছিলো। আর উক্ত বাবরী চুল মুবারক লম্বায় ছিলো, তাঁর উভয় কান ও তাঁর উভয় কাঁধ মুবারকের মাঝ বরাবর।”  (বুখারী শরীফ ২য় খন্ড ৮৭৬ পৃষ্ঠা, মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড ২৫৮ পৃষ্ঠা, নাসাঈ শরীফ ২য় খন্ড ২৭৫ পৃষ্ঠা, ইবনু মাজাহ্ ২৬৭ পৃষ্ঠা)

عن انس بن مالك رضى الله تعالى عنه قال كان  شعر رسول الله صلى الله عليه وسلم الى نصف اذنيه.

অর্থঃ- “হযরত আনাছ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কান মুবারকের মাঝামাঝি (অর্ধ) পর্যন্ত লম্বা ছিলো।”(শামায়িলুত্ তিরমিযী ৩য় পৃষ্ঠা, মুসলিম শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ ২য় খন্ড ২২৩ পৃষ্ঠা, নাসাঈ শরীফ ২য় খন্ড ২৭৬ পৃষ্ঠা ও ২৯১ পৃৃষ্ঠা, বযলুল মাজহুদ ৬ষ্ঠ খন্ড ৭৬ পৃষ্ঠা, জামউল ওসায়িল ফি শারহিশ্ শামায়িল ১ম খন্ড ৯০ পৃষ্ঠা)

عن البراء بن عازب رضى الله تعالى عنه قال مارأيت من ذى لمة …….. احسن من رسول اله صلى الله عليه وسم له شعر يضرب منكبيه.

অর্থঃ- “হযরত বারায়া ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি লিম্মা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারক অবস্থায় … রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অপেক্ষা অধিক সুন্দর আর কাউকে দেখিনি। তার লিম্মা বিশিষ্ট  বাবরী চুল মুবারক দু’কাঁধ মুবারক পর্যন্ত লম্বা ছিলো।” (তিরমিযী শরীফ ১ম খন্ড ২০৫ পৃষ্ঠা, নাসাঈ শরীফ ২য় খন্ড ২৯১ পৃষ্ঠা, মুসলিম শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ ২য় খন্ড ২২৩ পৃষ্ঠা, শামায়িলুত্ তিরমিযী, বযলুল মাজহুদ ৬ষ্ঠ খন্ড ৭৬ পৃষ্ঠা)

قال ورأيت له لمة تضرب قريبا من منكبيه.

অর্থঃ- “হযরত বারায়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আমি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর লিম্মা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারক দেখেছি। উক্ত লিম্মা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারক তার দু’কাঁধ মুবারকের কাছাকাছি লম্বা ছিলো।” (নাসাঈ শরীফ ২য় খন্ড ২৭৬ পৃষ্ঠা)

عن مالك ان جمته لتضرب قريبا من منكبيه …… قال شعبة شعره يبلغ شحمة اذنيه.

অর্থঃ- “হযরত মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জুম্মা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারক অবশ্যই তাঁর দু’কাঁধ মুবারকের কাছাকাছি লম্বা ছিলো। আর শুবা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কানের লতি মুবারকে পৌঁছত।” (বুখারী শরীফ ২য় খন্ড ৮৭৬ পৃষ্ঠা)

جمته الى شحمتى اذنيه.

অর্থঃ- “নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জুম্মা বিশিষ্ট চুল মুবারক তার দু’কানের দু’ লতি মুবারক পর্যন্ত লম্বা ছিলো।” (নাসাঈ শরীফ ২য় খন্ড ২৯১ পৃষ্ঠা)

وكانت جمته تضرب شحمة اذنيه.

অর্থঃ- “রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জুম্মা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কানের লতি মুবারক পর্যন্ত লম্বা ছিলো।” (শামায়িলুত্ তিরমিযী ৪ পৃষ্ঠা, মুসলিম শরীফ, জামউল ওসায়িল ফি শারহিশ্ শামায়িল ১ম খন্ড ৯৩ পৃষ্ঠা)

 يجاوز شعره شحمة اذنيه اذا هو وفره.

অর্থঃ- “রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক যখন তাঁর দু’কানের লতি  মুবারক অতিক্রম করে যেত তখন তিনি তাঁর বাবরী চুল মুবারক ওয়াফরা পর্যন্ত লম্বা করতেন।” (শামায়িলুত্ তিরমিযী ২ পৃষ্ঠা)

عن عائشة رضى الله تعاى عنها قالت كنت اغتسل انا ورسول الله صلى الله عليه وسلم من اناء واحد وكان له شعر فوق الحمة ودون الوفرة.

অর্থঃ- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এবং রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একই পাত্রে গোছল করতাম। রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক ছিলো জুম্মা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারকের উপরে এবং ওয়াফরা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারকের নিচে।” (শামায়িলুত্ তিরমিযী ৪ পৃষ্ঠা, মিশকাত শরীফ ৩৮২ পৃষ্ঠা, মিরকাত শরীফ ৮ম খন্ড ৩০৭-৩০৮ পৃষ্ঠা, জামউল ওয়াসিল ফি শারহিশ্ শামায়িল ১ম খন্ড ৯২ পৃষ্ঠা)

عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت كان شعر رسول الله صلى الله عليه وسلم فوق الوفرة ودون الجمة.

অর্থঃ- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক ছিলো ওয়াফরা বিশিষ্ট। বাবরী চুল মুবারকের উপরে এবং জুম্মা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারকের নিচে।”(আবূ দাউদ শরীফ ২য় খন্ড ২২৩-২২৪ পৃষ্ঠা, বযলুল মাযহুদ ৬ষ্ঠ খন্ড ৭৬ পৃষ্ঠা)

عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت كان لرسول الله صلى الله عليه وسلم شعرأ دون الجمة وفوق الوفرة.

অর্থঃ- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চুল মুবারক ছিলো জুম্মার নিচে এবং ওয়াফরা-এর উপরে। অর্থাৎ জুম্মা এবং ওয়াফ্রা-এর মাঝামাঝি যাকে লিম্মা বলা হয়।” (ইবনে মাজাহ্ শরীফ ২৬৭ পৃষ্ঠা)

চার প্রকার বাবরী রাখা সুন্নত          উপরোক্ত হাদীস শরীফের আলোকে প্রমাণিত হলো যে, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চার প্রকারে বাবরী চুল মুবারক রাখতেন, যাকে হাদীস শরীফের বর্ণনায়  জুম্মা, লিম্মা, ওয়াফরা ও নিছফু উযুনাইহি বলে। অর্থাৎ (১) কানের লতি বরাবর, (২) কাঁধ ও কানের লতির মাঝামাঝি, (৩) কাঁধের কাছাকাছি, (৪) আবার কোন কোন সময় দু’কানের মাঝামাঝি।   এই চার প্রকারের যে কোন এক প্রকার বা তরীক্বায় মাথার চুল লম্বা রাখা এবং তাতে সিঁথি তোলা খাছ সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।        যেটা হাটহাজারী মৌলভীরা তাদের জিহালতির কারণে স্পষ্টভাবে উল্লেখ না করে বলেছে, “মাথার চুল পরিমাণ মত লম্বা রেখে তাতে সিঁথি তোলা ছিল প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুবারক সুন্নাত (অভ্যাস)।”

অথচ চুল রাখার পরিমাণ বা তরীক্বা সুস্পষ্টরূপে হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে যা আমরা উপরে উল্লেখ করেছি।           এরপর হাটহাজারী মৌলভীরা বলেছে, “হানাফী মাযহাব অনুযায়ী … মাথা মুন্ডন করাও সুন্নত।” হাট হাজারীর জিহালতী বক্তব্য খন্ডন     এর জবাবে বলতে হয় যে, হাটহাজারী জাহিল মৌলভীদের উক্ত বক্তব্যও ভুল ও জিহালতপূর্ণ হয়েছে। কারণ হানাফী মাযহাবের ছহীহ্ বা বিশুদ্ধ মতে মাথার চুল মুন্ডন করা সুন্নত নয়। বরং বাবরী চুল রাখাই সুন্নত। কেননা, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্ব ও ওমরাহ ব্যতীত কখনই মাথার চুল মুবারক মুন্ডন করেননি।         যেমন, “জামউল ওসায়িল ফি শারহিশ্ শামায়িল” কিতাবের ১ম খন্ডের ৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ان المصطفى كان لا يحلق شعره لغير نسك.

 অর্থঃ- “নিশ্চয়ই নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্ব ব্যতীত অন্য কোন সময় তাঁর মাথার চুল মুবারক মুন্ডন করেননি।”     কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,

لحلق رأسه لاجل النسك.

অর্থাৎ- “একমাত্র হজ্বের কারণেই মাথা মুন্ডন করেছেন। (অন্য কোন কারণে নয়।)”      কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,

لم يحلق النبى رأسه ….. الا عام الحديبية تم عام عمرة القضاء ثم عام حجة الوداع.

অর্থঃ- “আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুদাইবিয়ার বৎসর, উমরাতুল ক্বাযার বৎসর এবং বিদায় হজ্বের বৎসর ব্যতীত অন্য কোন সময় তাঁর মাথা মুবারকের চুল মুবারক মুন্ডন করেননি।”     “ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবের ৯ম খন্ডের  ৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

مندانا سنت نهي.

অর্থাৎ- “মাথা মুন্ডন করা সুন্নত নয়।”  অতএব, প্রমাণিত হলো, যেখানে হজ্ব, ওমরাহ্ ব্যতীত আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনই মাথার চুল মুবারক মুন্ডন করেননি সেখানে মাথা “মুন্ডন করা সুন্নত” এ প্রশ্নই আসতে পারেনা। সুতরাং মাথা মুন্ডন করা সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নয়। বরং সর্বদা বাবরী চুল রাখাই খাছ সুন্নতে রসূল ছল্লৗাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাটহাজারীর দলীলের ভুল ব্যাখ্যা উদঘাটন  উল্লেখ্য, হাটহাজারীর জাহিল মৌলভীরা  মাথা মুন্ডন সুন্নত বলে তাদের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে ফতওয়ায়ে শামী, হিন্দিয়া, হাশিয়ায়ে তাহ্তাবী ইত্যাদি কিতাবের বরাত দিয়েছে। আর উক্ত কিতাবগুলোতে ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতটিই উল্লেখ করা হয়েছে।

অথচ হাটহাজারীর জাহিল মৌলভীরা কিতাবের উল্লিখিত ইবারতের সঠিক ব্যাখ্যা  অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েই এবং অসংখ্য ছহীহ্ হাদীস শরীফকে উপেক্ষা করে এ ব্যাপারে ভুল সিদ্ধান্ত পেশ করে জিহালতের পরিচয় দিয়েছে।

নিম্নে আমরা উক্ত ফতওয়ার কিতাবের ইবারত উল্লেখ করে তার সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরলাম, তাতেই স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, মাথা মুন্ডন করা সুন্নত নয়। বরং মাথার চুল বাবরী রাখাই সুন্নত।  যেমন, “ফতওয়ায়ে আলমগীরী আল মা’রুফ বিল ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবে উল্লেখ আছে,

ان السنة فى شعر الرأس أما الفرق وأما الحلق وذكر الطحاوى الحلق سنة ونسب ذلك الى العلماء الثلاثة كذا فى التاتار خانية يستحب حلق الراس فى كل جمعة كذا فى الغرائب.

অর্থঃ- “নিশ্চয় মাথার চুলের ব্যাপারে সুন্নত হলো, সিঁথি বিশিষ্ট বাবরী রাখা এবং মুন্ডন করা। তবে হযরত ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেন, মুন্ডন করা সুন্নত এবং তিনি তা তিনজন আলিমের দিকে নিছবত করেন। অনুরূপ তাতারখানীয়াতেও  উল্লেখ আছে। প্রত্যেক জুমুয়ার দিন মাথা মুন্ডন করা মুস্তাহাব। অনুরূপ গারায়েবে উল্লেখ আছে।” (ফতওয়ায়ে আলমগীরী ৫ম জিঃ/৩৫৭ পৃষ্ঠা)

“ফতওয়ায়ে আলমগীরীর” উপরোক্ত ইবারতের প্রেক্ষিতে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি মাথা মুন্ডনকে সুন্নত বলেছেন সত্য কথাই। তবে এর দ্বারা সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রমাণিত হয় না, বরং সুন্নতে ছাহাবাও হতে পারে। কেননা হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মধ্যে হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মাথা মুন্ডন করতেন।          যেমন, এ প্রসঙ্গে “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবে উল্লিখিত উক্ত ইবারতের ব্যাখ্যায় “ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবের ৯ম খন্ডের ৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

بعض نے اکثر یھی کیا تاکہ غسل میں احتیاط ھو پس شاید سنت یھاں حضرت علی رضی اللہ عنہ کے فعل سے ھی.

অর্থঃ- “হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর মধ্যে কেউ কেউ অধিকাংশ সময় মাথা  মুন্ডন করতেন। এজন্য যে, যাতে গোসলের মধ্যে সাবধানতা অবলম্বন করা যায়। সুতরাং এখানে সুন্নত বলতে হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর আমল কে বুঝানো হয়েছে।”  অর্থাৎ হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর  মাথা মুবারকের চুল এত ঘন ছিল যে, ফরয গোসলের সময় পানি পৌঁছানোর ব্যাপারে সন্দেহের উদ্রেক হতো। তাই তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুমতি সাপেক্ষে কখনো মাথার চুল মুন্ডন করতেন এবং কখনো মাথার চুল ছোট করে রাখতেন।

সুতরাং উক্ত ইবারত থেকে এটাও প্রমাণিত হয় যে, হযরত ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি মাথা মুন্ডনকে সুন্নত বলেছেন তবে এর দ্বারা হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সুন্নতকে বুঝিয়েছেন, সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নয়। হজ্বের উপর ক্বিয়াস করে মাথা মুন্ডন  করাকে সুন্নত বলা হয়েছে । দ্বিতীয়তঃ তারপরেও যদি ধরে নেয়া হয় যে, যদিও হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি সুন্নত বলতে সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বুঝিয়েছেন।        তবে এটা অবশ্যই ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ব্যক্তিগত ক্বিয়াস। তিনি মূলতঃ হজ্বের উপর ক্বিয়াস করে মাথা মুন্ডনকে সুন্নত বলেছেন।      কেননা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম হিজরীতে ওমরার নিয়তে চুল মুবারক মুন্ডন করেছেন। আর ১০ম হিজরীতে বিদায় হজ্বের সাথে ওমরাহ্ করেছেন। তখনোও চুল মুবারক মুন্ডন করেছেন। সর্বমোট এ চারবারই তিনি চুল মুবারক মুন্ডন করেছেন। যে সম্পর্কে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে,

عن انس رضى الله تعالى عنه قال اعتمر رسول الله صلى الله عليه وسلم اربع عمر كلهن فى ذى القعدة الا التى كانت مع حجته عمرة من الحد يبية فى ذى القعدة وعمرة من اعام المقبل فى ذى القعدة وعمرة من الجعرانة حيث قسم غنائم حنين فى ذى القعدة وعمرة مع حجته.

অর্থঃ- “হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চার বার ওমরাহ করেছেন। প্রত্যেকটি করেছেন জ্বিলক্বদ মাসে। তবে হজ্বের সাথে যেটা আদায় করেছেন সেটা ব্যতীত। (কেননা তা ছিল জ্বিলহজ্ব মাসে) একটি ওমরাহ করেছেন হুদায়বিয়া হতে জ্বিলক্বদ মাসে ৬ষ্ঠ হিজরীতে। একটি তার পরবর্তী বছর (৭ম হিজরীর) জিলক্বদ মাসে, যাকে ওমরাতুল কাজ্বাও বলা হয়। একটি ওমরাহ করেছেন জি’রানা থেকে, যেখানে তিনি হুনাইনের গণীমত বন্টন করেছেন; (৮ম হিজরীর) জ্বিলক্বদ মাসে। আর একটি ছিল তাঁর হজ্বের সাথে অর্থাৎ ১০ম হিজরীতে বিদায় হজ্বে।” (বুখারী, মুসলিম)

কেননা হজ্ব সম্পর্কে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে যে,

 دهت رسزل تللخ صلة تللخ هليخ زوسلك لكجلقيم ثتث كرو زللكقصريم كرو زتجدو.

অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, (হজ্বের মধ্যে) যারা চুল মুন্ডন করবে, তাদের জন্যে তিনবার দোয়া করেছেন। আর যারা চুল ছোট করবে, তাদের জন্যে একবার দোয়া করেছেন। অর্থাৎ হজ্বের মধ্যে মুন্ডন করাকে ছোট করার উপর ফযীলত বা প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।” (মিশকাত, মুসলিম, শরহে নববী, ফতহুল মুলহিম, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব ইত্যাদি)  এ হাদীস শরীফ খানা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাজীদের জন্য বলেছেন। অর্থাৎ হজ্বের মধ্যে হাজীদের জন্য চুল ছোট করা ওয়াজিব এবং চুল মুন্ডন করা সুন্নত। যেহেতু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্ব ও ওমরার সময় চুূল মুবারক মুন্ডন করেছেন। সেহেতু হজ্ব ও ওমরায় চুল মুন্ডন করা সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।

অতএব, যেসব হাজ্বী ছাহেবগণ চুল মুন্ডন করেন তারা ওয়াজিব আদায় করার সাথে সাথে সুন্নতও আদায় করে থাকেন। আর এ সুন্নত আদায় করার কারণেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের জন্য তিনবার দোয়া করেছেন। আর যারা চুল ছোট করে শুধু ওয়াজিব আদায় করেন, তাদের জন্য একবার দোয়া করেছেন। হযরত ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি  যে শুধু হজ্বের উপর ক্বিয়াস করে মাথা মুন্ডন করাকে সুন্নত বলেছেন, নিম্নে তার প্রমাণ  পেশ করা হলো-    যেমন, “বুখারী শরীফের” বিখ্যাত শরাহ্ “ফত্হুল বারী” কিতাবের ১ম খন্ডের ৩৪৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,

وقد رجح الطحاوى الحلق على القص بتفضبله صلى الله عليه وسلم الحلق على التقصير فى النسك.

অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্বের মধ্যে চুল মুন্ডন করাকে ছোট করার উপর ফযীলত দিয়েছেন বিধায় হযরত ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি মুন্ডন করাকে ছোট করার উপর প্রাধান্য দিয়েছেন।”

অতএব, সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি হজ্বের উপর ক্বিয়াস করে মাথা মুন্ডন করাকে সুন্নত বলেছেন।        মূলতঃ হযরত ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উক্ত ক্বিয়াস গ্রহণযোগ্য নয়, কেননা হজ্বের হুকুম-আহ্কাম সম্পূর্ণই ভিন্ন ও আলাদা। হজ্বের সময় চুল মুন্ডন করা খাছ সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু অন্য সময় চুল মুন্ডন করা সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিলাফ। কারণ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্ব ও ওমরাহ্ ব্যতীত কখনো চুল মুবারক মুন্ডন করেননি বরং সর্বদাই বাবরী রেখেছেন।

সুতরাং সুন্নত যথাযথভাবে পালনার্থেই গভীরভাবে স্মরণ রাখা দরকার যে, শুধুমাত্র হজ্বের উপর ক্বিয়াস করে হজ্ব ব্যতীত অন্য সময় চুল মুন্ডন করা খিলাফে সুন্নত। তাছাড়া যেখানে অসংখ্য ছহীহ্ হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, বাবরী চুল রাখা সুন্নত, আর মুন্ডন করা খিলাফে সুন্নত; সেখানে শুধুমাত্র হযরত ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উক্ত বক্তব্য যা তিনি হজ্ব ও ওমরার বর্ণনার উপর ক্বিয়াস করে বলেছেন তাই তা গ্রহণযোগ্য নয়।  তৃতীয়তঃ হজ্ব, ওমরাহ্ ব্যতীত অন্য সময় মাথা মুন্ডন করা সম্পর্কে হযরত ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উক্ত বক্তব্য যে বিশুদ্ধ নয় তার সুস্পষ্ট প্রমাণ হলো “ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবের নিম্নোক্ত ইবারত যা আল্লামা মাওলানা সাইয়্যিদ আমীর আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের উক্ত ইবারতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেন।

যেমন, “ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবের ৯ম খন্ডের ৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وانما صح عند المترجم الفرق فقط ولم يصح ان الحلق سنة.

অর্থঃ- “আর মুতারজিম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট নিশ্চয়ই ছহীহ্  (বিশুদ্ধ) মত হলো, শুধু মাত্র সিঁথি বিশিষ্ট বাবরী চুল রাখাই সুন্নত। মাথা মুন্ডন করা সুন্নত, এ মতটি ছহীহ্ বা গ্রহণযোগ্য নয়।”                অতএব, উপরোক্ত অকাট্য দলীল আদিল্লাহ্র ভিত্তিতে দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, মাথা মুন্ডন করা সম্পর্কিত ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতটি ছহীহ্ নয়। বরং ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য মত হলো, “শুধু মাত্র বাবরী চুল রাখাই সুন্নত।”

এছাড়াও “জামউল ওসায়িল ফি শারহিশ্ শামায়িল” কিতাবে উল্লেখ আছে,

والفرف سنة.

অর্থাৎ- “সিঁথি বিশিষ্ট বাবরী চুল রাখা সুন্নত। ছহীহ্ হাদীস শরীফকে পাশ কাটিয়ে  ব্যক্তি মত গ্রহণ করতে যেয়ে  হাটহাজারী বিভ্রান্ত হয়েছে      “মিশকাত শরীফের” বিখ্যাত শরাহ্ “মিরকাত শরীফে” উল্লেখ করেছেন, والفرق سنة. অর্থাৎ- “সিঁথি বিশিষ্ট বাবরী চুল রাখাই সুন্নত।”          হাটহাজারীর জাহিল মৌলভীরা অসংখ্য ছহীহ্ হাদীস শরীফকে পাশ কাটিয়ে একটি ইবারতের উপর ভিত্তি করে, জবাব দিতে গিয়ে উক্ত ইবারতের ব্যাখ্যা না জানার কারণে এ ব্যাপারে মারাত্মক বিভ্রান্তিতে পতিত হয়েছে। মূলতঃ শুধুমাত্র কোন এক কিতাবের কোন এক অংশ পাঠ করেই বা কোন একটি মতের উপর ভিত্তি করেই ফতওয়া দিলে এরূপ বিভ্রান্তিতে পতিত হওয়াই স্বাভাবিক।    কাজেই কোন কথা বলতে হলে বা কোন ফতওয়া দিতে হলে তা ভালরূপে তাহ্ক্বীক্ব করে দিতে হবে, নচেৎ ভুল হওয়া এবং সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক।

আল্লাহ্ পাক-এর খাছ রহ্মতে আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকার ফতওয়া বিভাগ হতে এ পর্যন্ত যতগুলো ফতওয়া প্রকাশ করা হয়েছে এবং সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগে যতগুলো সুওয়ালের-জাওয়াব দেয়া হয়েছে, তার প্রত্যেকটিই পূর্ণ তাহ্ক্বীক্বসহ অসংখ্য অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে প্রকাশ করা হয়েছে। যার কারণে সকলেই তা ইচ্ছা ও অনিচ্ছায় মেনে নিতে বাধ্য।     উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, হজ্ব, ওমরা ব্যতীত অন্য সময় বারবী চুল রাখা দায়েমী সুন্নত। আর হাটহাজারী থেকে প্রকাশিত অখ্যাত পত্রিকার মাথা মুন্ডন করা সম্পর্কিত উক্ত বক্তব্য বিভ্রান্তিকর, দলীল বিহীন, খিলাফে সুন্নত ও বিদ্য়াতের অন্তর্ভূক্ত। মাথা মুন্ডন করা খারিজীদের আলামত  বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, অধিক মাত্রায় মাথা মুন্ডন করা খারিজীদের আলামত।     এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ابى سعيدن الخدرى رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال يخرج ناس من قبل المشرق ويقرئون القران لايجاوز تراقيهم يمرقون من ادين كما يمرق اسهم من الرمية ثم لايعودون فيه حتى يعود السهم الى فوقه قيل ماسيماهم قال سيما هم التحليق. وفى قوله صلى الله عليه وسلم  سيما هم التحليق تنصيص على هؤلاء القوم الخارجين من المشرق.

অর্থঃ- “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, পূর্ব এলাকা থেকে একদল লোক আত্মপ্রকাশ করবে তারা কুরআন শরীফ পড়বে কিন্তু তাদের পাঠ তাদের গলার নিচে নামবে না। তারা তাদের দ্বীনকে এমনভাবে উপেক্ষা করবে যেভাবে তীর শিকার অতিক্রম করে যায়। তীর যেমন স্বস্থানে ফিরে আসেনা তদ্রুপ তারাও দ্বীনের দিকে ফিরে আসবেনা। জিজ্ঞাসা করা হলো, তাদের  চেনার চিহ্ন কি? তিনি বললেন, তাদের চিহ্ন হলো, তারা মাথা মুন্ডন করবে।   তিনি অন্যত্র ইরশাদ করেন, তাদের পরিচয় হলো, তারা মাথা মুন্ডন করবে। মূলতঃ তারা হচ্ছে পূর্ব এলাকার খারিজী সম্প্রদায়।” (বুখারী শরীফ, খুলাছাতুল কালাম ফি বয়ানি ইমরাইল বালাদিল হারাম, তারিখে নজ্দ ওয়া হিজায)  {দলীলসমূহঃ (১) বুখারী, (২) মুসলিম, (৩) তিরমিযী, (৪) আবূ দাউদ, (৫) নাসাঈ , (৬) ইবনে মাযাহ্, (৭) মুসান্নিফু আব্দির রাজ্জাক, (৮) শামায়িলুত্ তিরমিযী, (৯) শামায়িলুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, (১০) মিশকাত, (১১) ফতহুল বারী, (১২) উমদাতুল ক্বারী, (১৩) আল বুখারী বিশরহিল কিরমানী, (১৪) তাইসীরুল বারী, (১৫) ইরশাদুস্ সারী, (১৬) মুসলিম বিশরহিন নববী, (১৭) শরহুল উবাই ওয়াস্ সিনূসী, (১৮) তুহফাতুল আহওয়াযী, (১৯) আরিদ্বাতুল আহওয়াযী,  (২০) বযলুল মাজহুদ, (২১) আউনুল মা’বুদ, (২২) শরহু আবী দাউদ লি বদরিদ্দীন আইনী, (২৩) জামউল ওসায়িল ফি শরহিশ শামায়িল, (২৪) মিরকাত, (২৫) জামিউল উছূল, (২৬) শরহে সুন্নাহ্, (২৭) আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া আলাশ শামায়িলে মুহম্মদিয়া, (২৮) শামায়িলু বি শরহিল মা’নাবী, (২৯) খাছায়িলুন্ নববী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, (৩০) নাসাঈ বি শারহিস্ সুয়ূতী, (৩১) আস সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, (৩২) শরহুত্ ত্বীবী, (৩৩) আত্ তালীকুছ্ ছবীহ্, (৩৪) আশয়াতুল লুমুয়াত, (৩৫) লুমুয়াত, (৩৬) মুযাহিরে হক্ব, (৩৭) মিরআতুল মানাযিহ্,  (৩৮) মায়ারিফুস্ সুনান, (৩৯) আন নিহায়া, (৪০) আল মাশারিক্ব, (৪১) ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, (৪২) খুলাছাতুল কালাম ফি বয়ানি ইমরাইল বালাদিল হারাম, (৪৩) তারিখে নজ্দ ওয়া হিজায ইত্যাদি}

মুহম্মদ মুঈনুদ্দীন (মাষ্টার)

আল বাইয়্যিনাত কোচিং সেন্টার বাউনিয়া, উত্তরা, ঢাকা

সুওয়ালঃ  প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, বিদায় হজ্বের (খুৎবা) ভাষণ শ্রবণকালে হযরত ছাহাবা-ই-ক্বিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-এর, যাঁর ঘোড়ার মুখ যেদিকে ছিল, ভাষণ (খুৎবা) শেষ হওয়া মাত্র উনারা সেদিকেই (প্রচলিত) তাবলীগের কাজে ছুটেছেন।           তাদের উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু শরীয়ত সম্মত ও সত্য? কুরআন-সুন্নাহ্র অকাট্য দলীলের দ্বারা জাওয়াব দানে উপকৃত করবেন বলে আশাবাদী। জাওয়াবঃ এই বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া, বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা। যার মধ্যে সত্যের লেশমাত্র নেই, যা কাট্টা কুফরী। যা অবাস্তব, উদ্ভট, দলীলবিহীন ও ইতিহাস বিকৃতকারী।

এর জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয়, উল্লিখিত হাজী ছাহেবরা যদি ৯ই যিলহজ্ব আরাফার ময়দানে খুৎবা শ্রবণান্তে হিদায়েতের কাজে বের হয়ে পড়েন তাহলে হজ্বের একটি ফরয ও হজ্বের সমস্ত ওয়াজিবগুলো আদায় করা বাকী থেকে যাবে। নিম্নে হজ্বের ফরয-ওয়াজিব সম্পর্কে বর্ণনা দেয়া হলো-

হজ্বের ফরযসমূহঃ হজ্বের ফরয তিনটি।  ১. ইহ্রাম বাঁধাঃ পাক পবিত্রতা অর্জন করতঃ (পুরুষগণ) সেলাই বিহীন কাপড় পরিধান করে মীক্বাত অতিক্রম করার পূর্বেই হজ্ব ও ওমরাহ্র নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করাকে ইহরাম বলে। ২. ওকুফে আরাফাঃ ৯ই যিলহজ্ব সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে যাওয়ার পর থেকে ১০ই যিলহজ্ব সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত যে কোন সময়ে কিছুক্ষণের জন্য আরাফার ময়দানে অবস্থান করা। ৩. তাওয়াফে যিয়ারতঃ ১০ই যিলহজ্ব জামরায়ে আকাবায় কংকর নিক্ষেপের পর কুরবানীর দিনগুলো তথা ১০, ১১, ১২ ই যিলহজ্বের যে কোন এক সময় মিনা থেকে মক্কা শরীফে গিয়ে বাইতুল্লাহ্ শরীফ তাওয়াফ করা। হজ্বের ওয়াজিবসমূহঃ হজ্বের ওয়াজিব ৫টি। ১. সাফা ও মারওয়া সায়ী করাঃ সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সুনির্দিষ্ট নিয়মে সাতবার গমনাগমন করা। ২. মুযদালিফায় অবস্থানঃ যিলহজ্বের ৯ম তারিখে সূর্যাস্তের পর আরাফা থেকে ফিরে এসে ১০ম তারিখে সুবহে সাদিকের পর হতে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত সময় মুযদালিফায় অবস্থান করা। ৩. কংকর নিক্ষেপঃ মিনায় অবস্থিত তিনটি জামরায় ১০, ১১ ও ১২ যিলহজ্বে মোট ৪৯ টি কংকর নিক্ষেপ করা। ৪. কুরবানী করাঃ যারা হজ্বে ক্বিরান অথবা হজ্বে তামাত্তু করবে তাদের জন্য কুরবানী করা ওয়াজিব। আর যারা হজ্বে ইফরাদ করবে তাদের জন্য কুরবানী করা মুস্তাহাব। ৫. তাওয়াফে ছদরঃ হজ্বের যাবতীয় কার্যাবলী সমাপনান্তে রমল ব্যতীত তাওয়াফ করা। এটাকে বিদায়ী তাওয়াফও বলে। এটা শুধু মীক্বাতের বাইরের হাজীদের উপর ওয়াজিব। ৬. মাথা মুন্ডানোঃ কুরবানী করার পর মাথা মুন্ডিয়ে বা চুল কেটে হালাল হওয়া। হজ্বের আমলের তরতীব বর্ণনা করা হলো- খুৎবান্তে যোহরের ওয়াক্তে ইমাম ছাহেব এক আযান ও দু’ ইকামতে  যোহর ও আছরের নামায পড়াবেন। যে ব্যক্তি নিজ স্থানে একা একা নামায আদায় করবে সে যোহরের ওয়াক্তে যোহরের নামায, আসরের ওয়াক্তে আসরের নামায আদায় করবে। এটাই ইমাম আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ফতওয়া। নামাযের পরে আরাফার ময়দানে ওকুফ বা অবস্থান করবে যতটুকু সম্ভব জাবালে রহ্মতের নিকটে। আরাফার ময়দানে বত্নে আ’রানা ব্যতীত সমস্তটুকুই অবস্থানস্থল।   ওকুফ অবস্থায় ইমাম ছাহেব বাহনের উপর থেকে হাত তুলে দোয়া করবে। আর অন্যান্যরাও যত বেশী সম্ভব দোয়া ইস্তিগফারে মশগুল থাকবে।    ৯ই যিলহজ্ব সূর্যাস্তের পর ইমাম ছাহেব সকলকে নিয়ে সাধারণ গতিতে মুযদালিফায় রওয়ানা হবে। সেখানে কুজা নামক পাহাড় যার উপর মিকাদা রয়েছে তার নিকট অবতরণ করবে। সেখানে ইমাম ছাহেব ইশার ওয়াক্তে একই আযান ও একই ইকামতে সকলকে নিয়ে মাগরিব ও ইশার নামায আদায় করবে। এর মধ্যে সুন্নত ও নফল পড়বেনা। পথে যদি কেউ মাগরিব পড়ে তবে সেটা আদায় হবেনা। বত্নে মুহাস্সার ব্যতীত সকল স্থানই মুযদালিফায় অবস্থানস্থল।  সুব্হে ছাদিক হওয়া মাত্রই ইমাম ছাহেব সকলকে নিয়ে অন্ধকার থাকতেই ফযর নামায আদায় করে সকলকে নিয়ে দাঁড়িয়ে দোয়া করবে। আর সূর্যোদয়ের পূর্বে ইমাম ছাহেব তার সাথে সকলকে নিয়ে মিনায় রওয়ানা হবে।   মুযদালিফা হতে মিনায় যাওয়ার পূর্বে বা পথে ৪৯টি বা ৭টি বা ৭০টি কঙ্কর নিয়ে তালবিয়া পাঠ করতে করতে মিনার দিকে রওয়ানা দিবে। ১০ই যিলহজ্ব সকালে শুধুমাত্র মিনাস্থ জমরাতুল আকাবাতে ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে। কঙ্কর নিক্ষেপ করতে প্রত্যেকবার তাকবির বলবে এবং কঙ্কর নিক্ষেপ করার পর সেখানে একটুও দাঁড়াবেনা। আর প্রথম কঙ্কর নিক্ষেপ করার সাথে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দিবে।   অতঃপর কুরবানী করতে হবে। যারা শুধু হজ্বে ইফরাদ করবে তাদের জন্য এ কুরবানী করা মুস্তাহাব। আর যারা হজ্বে তামাত্তু ও হজ্বে ক্বিরান করবে তাদের জন্য এ কুরবানী করা ওয়াজিব। যা কুরবানী করতে হবে তা হচ্ছে- এক বকরী অথবা এক দুম্বা অথবা গরু, মহিষ বা উটের এক সপ্তমাংশ।   যদি তামাত্তু ও ক্বিরানকারী আর্থিক অনটনের কারণে ওয়াজিব কুরবানী করতে না পারে তাহলে তাদের জন্য ১০ই যিলহজ্বের পূর্বে ৩টি এবং ১৩ই যিলহজ্বের পরে ৭টি রোযা রাখা ওয়াজিব হবে। যদি ১০ই যিলহজ্বের পূর্বে ৩টি রোযা রাখতে না পারে তাহলে কুরবানী অবশ্যই করতে হবে। কুরবানী করার পর পুরুষেরা মাথা মুন্ডন করে অথবা চুল ছেটে ইহ্রাম খুলে ফেলবে। মহিলারা চুল মুন্ডন না করে এক অঙ্গুলি বা এক ইঞ্চি পরিমাণ চুল ছাটবে।  এ অবস্থায় মুহরিমের জন্য স্ত্রী ব্যবহার ছাড়া সবই হালাল হয়ে গেল। একই দিনে অর্থাৎ ১০ই যিলহজ্বে তাওয়াফে জিয়ারত করা উত্তম যা হজ্বের শেষ ফরজ। তাওয়াফে জিয়ারত ১২ই যিলহজ্ব সূর্যাস্তের পূর্বে আদায় করতে হবে। অন্যথায় দম দেয়া ওয়াজিব হবে। ১০, ১১ এবং ১২ই যিলহজ্ব তারিখে মিনায় অবস্থান করা সুন্নত।   ১১ এবং ১২ই যিলহজ্ব তারিখে মিনার জমরাতুল আকাবা, জমরাতুল উস্তা ও জমরাতুল উলাতে পর্যায়ক্রমে ৭টি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে। ১০ তারিখে সূর্য ঢলার পূর্বে ১১ ও ১২ তারিখে সূর্য ঢলার পরে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে।১২ই যিলহজ্ব সূর্যাস্তের পূর্বেই মিনা হতে মক্কা শরীফে চলে আসা যায়। যদি আসতে রাত্র হয়ে যায় তাহলে আসাটা মাকরূহের সাথে জায়িয রয়েছে। আর যদি ১৩ তারিখ সকাল হয়ে যায় তাহলে তিন স্থানে ৭টি করে ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করে আসতে হবে। এটাই সুন্নত। কঙ্কর নিক্ষেপের সময় হল সূর্য ঢলার পর হতে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। মিনাতে কঙ্কর নিক্ষেপের জন্য থেকে মাল-সামানা বা আসবাবপত্র মক্কা শরীফে পাঠিয়ে দেয়া মাকরূহ্। মিনাতে কঙ্কর নিক্ষেপ করা শেষ করে মক্কা শরীফে আসার পথে মুহাস্সার নামক স্থানে কিছুক্ষণ অবস্থান করা সুন্নত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে যোহর, আছর, মাগরিব ও ইশার নামায আদায় করেছেন। অতঃপর মক্কা শরীফে এসে তাওয়াফে বিদা বা তাওয়াফে ছূদুর করবে। মক্কাবাসী ব্যতীত অন্যান্য সকলের জন্য এ তাওয়াফে বিদা ও তাওয়াফে ছূদুর ওয়াজিব। যাদের উপর তাওয়াফে বিদা বা তাওয়াফে ছূদুর ওয়াজিব তারা এ তাওয়াফ না করলে তাদের জন্য দম দেয়া ওয়াজিব।   যে সমস্ত মহিলারা অসুস্থ হয়ে যায় অর্থাৎ যাদের মাসিক হয়ে যায় তাদের জন্য তাওয়াফে ছূদুর ওয়াজিব থাকেনা। এ তাওয়াফ ব্যতীতই তারা বাড়ীতে প্রত্যাবর্তন করবে।  এখানে স্মরণীয় যে, উল্লিখিত হাজী ছাহেবরা হজ্বের অন্যতম ফরয তাওয়াফে যিয়ারত তরক করেছে এবং তার সাথে সাথে সমস্ত ওয়াজিবসমূহও তরক করেছে, যার কারণে তারা ইহ্রাম থেকে হালাল হবেনা। বরং তারা মুহরিমই থেকে যাবে।  অতএব, তারা ইহরাম থেকে হালাল না হওয়া পর্যন্ত মুহরিমের উপর যত হুকুম-আহকাম শরীয়ত নির্দিষ্ট করে দিয়েছে তার সমস্ত হুকুম-আহকাম তাদের উপর জারী থাকবে।  যেমন ইহরাম অবস্থায় (১) স্ত্রী ব্যবহার করতে পারবেনা ও তার আনুসাঙ্গিক কাজও করতে পারবে না। (২) চুল, মোচ ছাটতে পারবেনা। (৩) নখ কাটতে পারবেনা। (৪) মুহরিম পুরুষ কোন সেলাই করা কাপড় পরিধান করতে পারবে না। (৫) পাগড়ী, টুপি, জুতা পড়তে পারবেনা, (৬) কোন খুশবু ও সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে না, এবং সুগন্ধি জাতীয় কোন খাদ্যও খেতে পারবে না এবং সুগন্ধি জাতীয় কোন তেলও ব্যবহার করতে পারবেনা। (৭) কোন প্রকার শিকারও করতে পারবে না এবং শিকারের কাজে সাহায্যও করতে পারবেনা। (৮) শরীরের কোন প্রকার উকুনও মারতে পারবে না। (৯) ঝগড়া-ঝাটি ও তার সংশ্লিষ্ট কোন কাজও করতে পারবেনা, ইত্যাদি সর্বপ্রকার কাজ থেকে তাকে বিরত থাকতে হবে, অন্যথায় সে শক্ত গুনাহে গুনাহ্গার হবে।  উল্লিখিত মুহরিম ব্যক্তিরা যদি ইহ্রাম থেকে হালাল হতে চায় তাহলে তাদেরকে পরবর্তীতে হজ্ব আদায় করে হালাল হতে হবে। অন্যথায় তারা আজীবন মুহরিম থেকে যাবে। তাহলে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ কোন বছর হজ্ব করে হালাল হলেন?

অতএব, উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, “হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ হজ্বের ফরয ও ওয়াজিবসমূহ তরক করেছেন এবং তাতে স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও সম্মতি প্রকাশ করেছেন এটি একটি ডাহা মিথ্যা কথা যা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।”   হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

من كذب على متعمدا فليتبوأ مقعده من النار.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় আমার প্রতি মিথ্যারোপ করে সে যেন দুনিয়ায় থাকতেই তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়।” (মিশকাত)        দ্বিতীয়তঃ বলতে হয়, উপরোক্ত কথা মেনে নিলে সাধারণ দৃষ্টিতে প্রতিয়মান হয় যে, বিদায় হজ্বে খূৎবা প্রদান কালে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দিকে তাঁদের দৃষ্টি নিবদ্ধ না করে অন্য দিকে তাঁদের দৃষ্টি নিবব্ধ করে রেখেছিলেন? অর্থাৎ তাঁরা ঘোড়ার উপর বসে ও তাঁদের ঘোড়ার মুখগুলো অন্যদিকে ফিরিয়ে রেখেছিলেন এই খেয়ালে যে, তারা কখন রওয়ানা দিবেন?

উপরোক্ত বক্তব্যের আলোকে আরো কয়েকটি নতুন প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে, (১) তাহলে কি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুৎবা প্রদানের পুর্বেই হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে বলেছিলেন যে, “তোমরা খুৎবা শেষ হওয়া মাত্রই যার ঘোড়া যেদিকে মুখ করে থাকবে, সেদিকেই দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে বের হবে?”  (২) হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সকলেই কি তাহলে ঘোড়ায় করে এসেছিলেন? উটে করে, গাধায় করে, খচ্চরে করে বা পায়ে হেঁটে আসেননি? (৩) আর খুৎবা  শ্রবণের সময় কি তাহলে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের কেউ পিছন ফিরে, কেউ পার্শ্বদেশ দিয়ে শুনেছিলেন? আর যাঁরা সামন-সামনি মুখ করেছেন শুনেছেন, তাঁরা কি তাহলে সরাসরি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অতিক্রম করে চলে গেছেন? (নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক) (৪) আর খূৎবার মধ্যে কি আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথা বলেছেন  যে, “খুৎবা শেষ হওয়া মাত্রই তোমরা যার ঘোড়ার মুখ যেদিকে রয়েছে, সেদিকেই দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে বের হয়ে যাও? (৫) আবার খুৎবা শোনার শেষে যদি তাঁরা দাওয়াতের কাজে বের হয়ে গিয়ে থাকেন, তাহলে কি তাঁরা হজ্বের বাকী ফরয কাজ, যেমন- তাওয়াফে যিয়ারত, আর ওয়াজিব যেমন- রমি বা কঙ্কর নিক্ষেপ, মুজদালিফায় অবস্থান, কুরবানী, চুল কাটা, বিদায়ী তাওয়াফ ইত্যাদি আদায় না করেই অর্থাৎ হজ্ব সমাপন না করেই তাবলীগের কাজে বের হয়েছিলেন?  মূলতঃ উপরের কথাগুলো আদৌ  শুদ্ধ নয়, বরং সম্পূর্ণই ভুল ও অশুদ্ধ।  আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামে শক্ত মিথ্যা কথা এবং হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের নামে সম্পূর্ণ মিথ্যা তোহ্মত। যা আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মর্যাদাহানীকর হয় তা কাট্টা হারাম ও কুফরী। কারণ- (১) একথা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো বলেননি। আর যদি না বলে থাকেন, তাহলে কেন তাঁরা তাঁদের ঘোড়ার মুখ বিভিন্ন দিকে করে রাখবেন?  মূলতঃ কথাটা ডাহা মিথ্যা। আসলে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ কেউই অন্যদিকে মুখ করে রাখেননি। সকলেই একমাত্র হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দিকে রুজু হয়েছিলেন। (২) বিদায় হজ্বের ভাষণে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ হেঁটে, ঘোড়ায় চড়ে, গাধায় করে, খচ্চরে করেও এসেছেন, আবার উটে করেও এসেছেন। (৩) হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বিভিন্ন দিকে মুখ দিয়ে খুৎবা শুনেছিলেন, একথা কেবল মিথ্যাই নয় বরং তাঁদের  প্রতি মিথ্যা তোহমতও বটে, যা কুফরী। কারণ হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সকলেই বাআদব (আদব ওয়ালা) ছিলেন, আর খুৎবা আদবের সাথেই শুনেছিলেন। কেননা আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি আদব রক্ষা করা ফরয, তার খিলাফ করা কুফরী। আর হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-এর পক্ষে আদবের খিলাফ কাজ করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।  (৪) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেননি যে, “খুৎবা শেষ হওয়া মাত্রই  তোমরা যার ঘোড়া যেদিকে আছে, সেদিকে বের হয়ে যাও।” বরং বলেছেন, “তোমরা যারা উপস্থিত রয়েছ, যারা অনুপস্থিত, তাদের কাছে আমার কথাগুলো পৌঁছে দিও।”  প্রশ্ন উঠে যে, বিদায় হজ্বের খুৎবার পরেই যদি সকল ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ তাবলীগের কাজে বের হয়ে থাকেন, তাহলে কাদেরকে নিয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  মদীনা শরীফে প্রত্যাবর্তন করলেন, কাদেরকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন দায়িত্বে ও জ্বিহাদের জন্য মনোনীত করলেন? কাদেরকে নিয়ে দুনিয়াবী যিন্দেগীর অবশিষ্ট সময় কাটালেন? আর কারাই বা তাঁর বাকী জীবনের হাদীস শরীফ ও নাযিলকৃত ওহী সংরক্ষণ করলেন?

উল্লেখ্য,  হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে যে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাঁদেরকে নিয়ে হজ্বে গিয়েছেন, তাঁদের প্রায় সকলকে নিয়েই মদীনা শরীফে প্রত্যাবর্তন করেছেন। এবং মদীনা শরীফে পৌঁছানোর পর কাউকে জ্বিহাদে, কাউকে দাওয়াত ও তাবলীগ, কাউকে তা’লীম ও তালক্বীনে এবং কাউকে অন্য কোন দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন।  বিশেষ করে হযরত উসামা বিন জায়েদ বিন হারেস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে সেনাপতি করে জ্বিহাদে পাঠানোর ব্যবস্থা প্রায় সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অসুস্থতার কারণে তাঁরা যেতে পারেননি। পরবর্তীতে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে পাঠিয়েছিলেন। মূলতঃ এ কথা কস্মিন কালেও চিন্তা করা যায়না যে, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে হজ্ব করতে গিয়ে, হজ্ব সমাপন না করেই দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে বের হয়ে যাবেন। কারণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেদিন বিদায় হজ্বের খুৎবা দেন, সেদিন ছিল আরাফার দিন। আর আরাফার পরও হজ্বের অনেক আহ্কাম বাদ থাকে।   তাই যারা এ ধরণের কথা বলে থাকে, তারা মূলতঃ আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের নামে মিথ্যা তোহ্মত দিয়ে থাকে।

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই মিথ্যা, মনগড়া, বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তোহ্মত যা কাট্টা কুফরী।

অতএব, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের উপরোক্ত আক্বীদা ও কথা থেকে পরহিয হওয়া ফরয-ওয়াজিব।    {দলীলসমূহঃ (১) বুখারী, (২) মুসলিম, (৩) আবূ দাউদ, (৪) নাসাঈ, (৫) তিরমিযী, (৬) ইবনে মাজাহ, (৭) মিশকাত, (৮) ফতহুল বারী, (৯) উমদাতুল ক্বারী, (১০) তাইসীরুল বারী, (১১) শরহে কিরমানী, (১২) শরহে নববী, (১৩) ফতহুল মুলহিম, (১৪) বজলুল মাযহুদ, (১৫) মিরকাত, (১৬) আশয়াতুল লুময়াত, (১৭) লুময়াত, (১৮) শরহুত্ ত্বীবী, (১৯) তা’লীকুছ ছবীহ, (২০) মুযাহিরে হক্ব, (২১) মাদারেজুন নুবুওওয়াত, (২২) সীরাতুন্নবী, (২৩) সীরাতে হালবীয়া, (২৪) ইবনে হিশাম, (২৫) যাদুল মায়াদ ইত্যাদি}

মুহম্মদ তাজুল ইসলাম

সভাপতি- ছাত্র আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত কাউনিয়া শাখা, রংপুর

সুওয়ালঃ       প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, “হিদায়েতের ক্ষেত্রে মূর্খরাই সমধিক উপযুক্ত। যেক্ষেত্রে নবীগণ এবং আলিমরা ফেল করে, সেখানেও মূর্খরা কৃতিত্ব দেখায়।” এ প্রসঙ্গে ‘তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব’ নামক কিতাবের ১১৬ পৃষ্ঠায় একথা লিখা আছে যে, “….. অনেক স্থলে নবীগণ পর্যন্ত হিদায়েতে বিরাট সংকটে ও বিপদে পড়েছিলেন, তাই অনেক স্থলে বিরাট আলিমও ফেল পড়তেছে। কিন্তু মূর্খগণ তথায় দ্বীন জয় করতেছে।”   এখন আমাদের সুুওয়াল হলো- শরীয়তের দৃষ্টিতে উক্ত বক্তব্য ও আক্বীদা কতটুকু সঠিক? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।   জাওয়াবঃ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য মারাত্মক আপত্তিকর ও কুফরীমূলক। কারণ তাদের উক্ত বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মূর্খদের মর্যাদা ও যোগ্যতা নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম ও নায়েবে রসূল অর্থাৎ আলিমগণের চেয়েও বেশী। (নাউযুবিল্লাহ্)

কেননা হিদায়েতের ক্ষেত্রে নবীরা পর্যন্ত সংকটে পড়েছেন, আর আলিমরা হিদায়েতের ক্ষেত্রে অকৃতকার্য হয়েছেন। কিন্তু মূর্খ লোকেরা দ্বীন জয় করছে অর্থাৎ হিদায়েতের ক্ষেত্রে বিরাট সফলতা অর্জন করছে। মূলতঃ এরূপ আক্বীদা পোষণ করা ও এ ধরণের বক্তব্য পেশ করা সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরী।

বস্তুতঃ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ হলেন আল্লাহ্ পাক-এর পক্ষ হতে মনোনীত ও ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সাথে সাথে আল্লাহ্ পাক-এর খাছ গায়েবী মদদের দ্বারা সাহায্য প্রাপ্ত। তাঁদের পক্ষে হিদায়েতের ক্ষেত্রে সংকটে পড়ার প্রশ্নই উঠেনা। বরং নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের শানে এরূপ আক্বীদা পোষণ করা স্পষ্টতঃ কুফরী। নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের প্রতি কিরূপ আক্বীদা পোষণ করতে হবে, আর নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের মর্যাদা-মর্তবা যে কতটুকু তা নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো- নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ  সম্পর্কিত ইসলামী আক্বীদা। বস্তুতঃ সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণই ছিলেন আল্লাহ্ পাক-এর খাছ ও মনোনীত বান্দাহ্গণের অন্তর্ভুক্ত।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,

الله يجتبى اليه من يشاء.

অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক যাকে ইচ্ছা (নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণকে) মনোনীত করেন।” (সূরা শুরা/১৩)           আল্লাহ্ পাক সূরা হজ্বের ৭৫নং আয়াত শরীফে আরো বলেন,

الله يصطفى من الملئكة رسلا ومن الناس.

অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক ফেরেশ্তা ও মানুষের মধ্য থেকে রসূল মনোনীত করেন।” (সূরা হজ্ব/৭৫)    অর্থাৎ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণকে আল্লাহ্ পাকই খাছভাবে মনোনীত করেন। কারো পক্ষে সাধনা বা রিয়াজত-মুশাক্কাত করে কস্মিনকালেও নবী-রসূল হওয়া সম্ভব নয়।

আর নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ প্রত্যেকেই ছিলেন ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

কুরআন শরীফের একাধিক স্থানে   ইরশাদ  হয়েছে, هو حى اليهم.

অর্থঃ- “আমি তাঁদের (নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের) প্রতি ওহী পাঠাতাম।” (সূরা ইউসূফ/১০৯, নহল/৪৩, আম্বিয়া/৭)           অর্থাৎ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের যাবতীয় কার্যাবলীই ওহীর দ্বারা (আল্লাহ্ পাক কর্তৃক) পরিচালিত হতো। যার পরিপ্রেক্ষিতে আক্বাইদের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে,

الانبياء عليهم السلا كلهم معصومون.

অর্থঃ- “সকল আম্বিয়া (নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ) মা’ছূম বা নিস্পাপ।”

আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে,

الانبياء عليهم السلام كلهم منزهون عن الصغائر والكبائر والكفر والقبائح.

অর্থঃ- “সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণই ছগীরা, কবীরা, কুফরী এবং অপছন্দনীয় কাজ হতেও পবিত্র।”           এ উছূলের ভিত্তিতে আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো, কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ কখনও ভুল-ত্রুটি করেননি। ইচ্ছাকৃত তো নয়ই, অনিচ্ছাকৃতও নয়। অর্থাৎ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ কোন ভুল-ত্রুটিই করেননি। (শরহে আক্বাইদে নসফী, ফিক্বহে আকবর, তাকমীলুল ঈমান, আক্বাইদে হাক্কাহ)     মানুষ সঠিক ইতিহাস না জানার কারণে এবং কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ-এর সঠিক ব্যাখ্যা না বুঝার কারণে, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের শানে বেয়াদবীমূলক কুফরী কথাবার্তা বলে থাকে।

অথচ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের সাথে কতটুকু আদব রক্ষা করতে হবে, সে প্রসঙ্গে কিতাবে একটি ঘটনা বর্ণিত রয়েছে, “হযরত ইমাম র্সারী সাক্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাঁর যামানায় আল্লাহ্ পাক-এর লক্ষ্যস্থল ছিলেন এবং ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বতও ছিলেন। তিনি একবার আল্লাহ্ পাক-এর নবী, হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্ সালামকে স্বপে¦ দেখে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “হে আল্লাহ্ পাক-এর নবী হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্ সালাম! আপনার অন্তরে যদি আল্লাহ্ পাক-এর মুহব্বত সত্যিকার ভাবেই প্রবল হতো, তাহলে আপনি কি করে আপনার ছেলে হযরত ইউসুফ আলাইহিস্ সালাম-এর জুদাই (বিচ্ছেদ)-এর কারণে তাঁর মুহব্বতে চল্লিশ বছর যাবৎ কেঁঁদে কেঁদে আপনার চক্ষু নষ্ট করেছিলেন?” একথা বলার সাথে সাথে গায়েব থেকে নেদা (আওয়াজ) হলো, “হে র্সারী সাক্তী! মুখ সামলিয়ে নবীদের শানে কথা বলো।” এরপর হযরত ইউসূফ আলাইহিস্ সালামকে তাঁর সামনে পেশ করা হলে তিনি বেহুশ হয়ে পড়েন এবং এভাবে একাধারা তের দিন, তের রাত্র বেহুশ থাকার পর হুঁশ ফিরে পান। তখন গায়েব থেকে পুনরায়  নেদা হয়, “আল্লাহ্ পাক-এর নবীদের শানে আদবের খিলাফ কথা বললে এরূপই শাস্তি হয়ে থাকে।” (তাযকিরাতুল আউলিয়া)

উপরোক্ত ঘটনার আলোকে প্রতিভাত হয় যে, আদব কত সূক্ষ্ম জিনিস এবং হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের শানে কতটুকু আদবের সাথে কথা বলতে হবে এবং তাঁদের শানের খিলাফ কথা বলার কি পরিণতি।       হযরত জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন,

بے ادب محروم گشت از لطف رب.

অর্থঃ- “বেয়াদব আল্লাহ্ পাক-এর রহ্মত থেকে বঞ্চিত।” (মসনবী শরীফ)

অতএব, অনুধাবনীয় যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের প্রতি কতটুকু আদব রক্ষা করা দরকার।           উল্লেখ্য যে, হযরত র্সারী সাক্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইমামুয্ যামান, ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ তরীক্বত ও আল্লাহ্ পাক-এর লক্ষ্যস্থল হওয়া সত্ত্বেও তাঁর প্রতি সতর্কবাণী ও সাবধানবাণী উচ্চারিত হয়েছে।

এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের প্রতি যথাযথ আদব রক্ষা করার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের বরকতময় জীবনীতেও রয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে যে, একদা জনৈক ছাহাবী, হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, আপনি বড় না হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বড়?” জবাবে বিশিষ্ট ও মর্যাদাবান ছাহাবী, হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অত্যন্ত হিকমতপূর্ণ জবাব দিলেন এই বলে যে,

هو اكبر منى وانا اسن منه.

অর্থাৎ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবশ্যই আমার চেয়ে অনেক বড় (মর্যাদাবান), তবে আমি দু’বছর আগে জন্ম গ্রহণ করেছি।” (সুবহানাল্লাহ্)      অতএব, বিশিষ্ট ছাহাবী, হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর উপরোক্ত হিকমতপূর্ণ উক্তি ও ঘটনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ সম্পর্কে ও তাঁদের শানে কতটুকু আদব রক্ষা করতে হবে ও কতটুকু সতর্কতার সাথে কথা বলতে হবে।

তাবলীগ জামায়াতের লোকদের বক্তব্য, “নবীগণ ফেল করেছেন, সংকটে পড়েছেন সেখানে মূর্খ লোকেরা কামিয়াবী হাছিল করিতেছে।”         তাদের বক্তব্য দ্বারা এটাও স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, আল্লাহ্ পাক উপযুক্ত লোককে নুবুওওয়াত না দিয়ে অনুপযুক্ত লোককে নুবুওওয়াত দিয়েছেন। (নাউযুবিল্লাহ্) অর্থাৎ যাদেরকে নুবুওওয়াত দিয়েছেন তারা নুবুওওয়াতের উপযুক্ত নয় বরং তাবলীগ জামায়াতের মূর্খ লোকগুলোই নুবুওওয়াতের উপযুক্ত। (নাউযুবিল্লাহ্) এক কথায় আল্লাহ্ পাক স্বয়ং নিজেই ভুল করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ্)

অথচ আল্লাহ্ পাক নিজেই বলেন,

الله اعلم حيث يجعل رسلته.

অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাকই অধিক জ্ঞাত কাকে রিসালত দান করবেন।” (সূরা আনয়াম/১২৪)

কাজেই উপরে বর্ণিত বদ আক্বীদা যদি কেউ পোষণ করে সে কাট্টা কাফির হয়ে চির জাহান্নামী হয়ে যাবে।

স্মরণীয় যে, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ ভুল করার প্রশ্নই উঠেনা বরং তাঁরা কোন প্রকার অপছন্দনীয় কাজও করতেন না। অর্থাৎ সর্ব প্রকার অপছন্দনীয় কাজ থেকেও তাঁরা বেঁচে থাকতেন বা পবিত্র থাকতেন।

 এ প্রসঙ্গে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র  সীরত মুবারক থেকে একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়-   “একবার আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুজরা শরীফে বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাৎ করার অনুমতি চাইলেন। এ সংবাদ উম্মুল মু’মিনীন, হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট পৌঁছালেন। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “সে ব্যক্তিকে অপেক্ষা করতে বলো।” একথা বলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পাগড়ী মুবারক, জামা বা কোর্তা মুবারক ইত্যাদি গুছগাছ করে নিলেন। এমন কি হুজরা শরীফ থেকে বের হওয়ার মুহূর্তে পানির গামলাতে নিজের চেহারা মুবারক দেখে গুছিয়ে নিচ্ছিলেন। তা দেখে সে সময় হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনিও কি এরূপ করেন?”

আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “কিরূপ করি?” হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, “এরূপ পরিপাটি!” এর জবাবে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “আমরা আল্লাহ্ পাক-এর নবী। আমাদের কোন কাজ কারো অপছন্দ হলে, সে ঈমান হারা হয়ে যাবে।” (আল্ মুরশিদুল আমীন)          অতএব, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ যে কতটুকু অপছন্দনীয় কাজ থেকে বেঁচে থাকতেন, এ হাদীস শরীফের বর্ণিত ঘটনা তারই প্রমাণ। তাহলে কি করে এ কথা বলা যেতে পারে বা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে যে, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ ভুল-ত্রুটি করেছিলেন? বস্তুতঃ এরূপ আক্বীদা পোষণ করা সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী।

আরো উল্লেখ্য যে, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীস শরীফ বর্ণনাকারীদেরকে রাবী বলা হয়। এই রাবীগণের মধ্যে যাঁরা প্রথম শ্রেণীর রাবী, তাঁদেরকে বলা হয় ছেক্বাহ্ রাবী।

হাদীস বিশারদগণ, ছেক্বাহ্ রাবী হওয়ার জন্য যে মানদন্ড নির্ধারণ করেছেন, তার মধ্যে মূল বিষয় হচ্ছে- (১) আদালত ও (২) জব্ত।        জব্ত হচ্ছে- প্রখর স্মরণশক্তি। তা এমন যে, একবার শুনলে আর ভুলেনা।

আর আদালত-এর মধ্যে চারটি শর্ত রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান হলো- দু’টি। যথা- (ক) তাক্বওয়া, (খ) মুরুওওয়াত। (ক) তাক্বওয়া হচ্ছে- কুফরী, শিরক, বিদ্য়াত ও ফাসিকী কাজ থেকে বেঁচে থাকার সাথে সাথে কবীরাহ্ গুণাহ্ থেকে, এমনকি ছগীরাহ্ গুণাহ্ও বার বার করা থেকে বেঁচে থাকা। হাদীস শরীফ সম্পর্কে মিথ্যা না বলা। সাধারণ কাজে মিথ্যা না বলা। অজ্ঞাত নামা না হওয়া। অপরিচিত না হওয়া। গাফলতী না থাকা। বদ আক্বীদা সম্পন্ন না হওয়া। বে আমল না হওয়া।

(খ) আর মুরুওওয়াত হচ্ছে- অশ্লীল-অশালীন, অশোভনীয়, অপছন্দনীয় আচার-আচরণ, উঠা-বসা, চাল-চলন, যেখানে-সেখানে ইস্তিঞ্জা করতে বসা, হাট-বাজারে গিয়ে চিৎকার করা, রাস্তা-ঘাটে লোকজনের সাথে অনর্থক ঝগড়া-ঝাটি করা ও তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হওয়া এমনকি দৃষ্টিকটু কাজ থেকে বিরত থাকা। যেমন- রাস্তায় হেঁটে হেঁটে খাদ্য খাওয়া, রাস্তায় অট্টহাস্য করা, চিৎকার করা ইত্যাদি। (তাদরীবুর রাবী, মুকাদ্দামাতুশ শায়খ, মীযানুল আখবার, নূরুল আনোয়ার, মুকাদ্দামাতুল মিশকাত)

এখন ফিকিরের বিষয় এই যে, হাদীস শরীফ বর্ণনাকারী ছেক্বাহ্ রাবী যদি এত গুণ ও যোগ্যতাসম্পন্ন এবং তাক্বওয়াধারী হন অর্থাৎ হাদীস বিশারদ উম্মতে মুহম্মদীর নিকট যদি ছেক্বাহ্ রাবী হিসেবে হাদীস বর্ণনাকারী হওয়ার জন্য ছগীরাহ্ গুণাহ্ বার বার না করা ও দৃষ্টিকটু সাধারণ অপছন্দনীয় কাজও না করা শর্ত হয়, তাহলে যাদেরকে আল্লাহ্ পাক তাঁর নবী হিসেবে মনোনীত করলেন এবং যাঁরা আল্লাহ্ পাক-এর কালাম বর্ণনাকারী হলেন, তাঁদের জন্য আল্লাহ্ পাক কি মানদন্ড নির্ধারণ করেছেন বা তাঁরা কতটুকু উপযুক্ত বা যোগ্য অথবা তাঁদের ক্ষেত্রে কতটুকু মা’ছূম ও মাহ্ফুজ হওয়া নির্দিষ্ট করেছেন তা অতি গুরুত্বের সাথে অনুধাবনীয়।

আর আল্লাহ্ পাক-এর পবিত্রতা সম্পর্কে কোন কথাই বলার প্রয়োজন পড়েনা।     মূলতঃ উল্লিখিত আলোচনায় নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের শান-মান, যোগ্যতা, উপযুক্ততা ও তাঁদের প্রতি আদব সম্পর্কিত যে দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, সে আলোকে নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম সম্পর্কিত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আক্বীদাসমূহ পর্যালোচনা করলে তাদের জিহালতি, বেয়াদবি, ভ্রান্তি ও গোমরাহী খুব সহজেই প্রতিভাত হয়। এবং তাদের এ বক্তব্য কুফরী পর্যন্ত পৌঁছেছে।     “আর আলিমগণ হিদায়েতের ক্ষেত্রে অকৃতকার্য হয়েছেন কিন্তু মূর্খরা কৃতকার্য হয়েছে।”   তাদের এ মন্তব্যও নেহায়েতই আপত্তিকর, বিভ্রান্তিমূলক এবং উলামা-ই-কিরামগণের প্রতি সুস্পষ্ট ইহানত যা  সম্পূর্ণ কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

যেমন, আক্বাঈদের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে,

اهانة العلماء كفر.

অর্থঃ- “আলিমগণকে ইহানত (তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা অবজ্ঞা) করা কুফরী।”   কারণ তাদের উক্ত বক্তব্য দ্বারা একথাই বুঝা যাচ্ছে যে, মূর্খ লোকের যোগ্যতা ও মর্যাদা আলিমের চেয়ে বেশী।

অথচ একথা কুরআন-সুন্নাহ্, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলিমগণের যে মর্যাদা ও মর্তবা বর্ণনা করেছেন, তাতে এই প্রমাণিত হয় যে, আলিমের মর্যাদা মূর্খ লোকের চেয়ে শত-কোটি গুণ বেশী এবং বেমেছাল।

যেমন, আলিমের মর্যাদা-মর্তবা, শান-শওক্বত ও তা’যীম-তাকরীম সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ্ পাক বলেন,

هل يستوى الذين يعلمون والذين لايعلمون.

অর্থঃ- “যারা জানে আর যারা জানেনা, উভয়ে কি সমান হতে পারে?” (সূরা যুমার/৯)    আল্লাহ্ পাক আলিমদের মর্যাদা ও ফযীলত বর্ণনা করতে গিয়ে কুরআন শরীফের “সূরা মুজাদালার” ১১নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,

والذين اوتوا العلم درجت.

অর্থঃ- “যারা আলিম, তাদেরকে অনেক মর্যাদা দেয়া হয়েছে।”

এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

العلماء ورثة الانبياء وان الانبياء لم يورتوا دينارا ولادرهما وانما ورثوا العلم فمن اخذه اخذ بحظ وافر.

 অর্থঃ- “নিশ্চয় আলিমগণ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের ওয়ারিছ এবং নিশ্চয় নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ কোন দীনার-দিরহাম রেখে যাননি; বরং ইল্ম (ইল্মে জাহির ও বাতিন) রেখে গেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তা গ্রহণ বা অর্জন করলো, সে পূর্ণ অংশ লাভ করলো।” (তিরমিযী, আবূ দাউদ, ইবনে মাযাহ্, দারিমী, আহমদ, মিশকাত, মা’য়ারেফুস্ সুনান, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, মুজাহিরে হক্ব, উরফুশ্ শাজী, বযলুল মাযহুদ ইত্যাদি)

আলিমের ফযীলত ও মর্যাদা সম্পর্কে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে,

عن ابى امامة الباهلى رضى الله تعالى عنه قال ذكر لرسول الله صلى الله عليه وسلم رجلان احدهما عابد والاخر عالم فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم فضل العالم على العابد كفضلى على ادناكم. ثم قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله وملئكته واهل السموت والارض حتى النملة فى جحرها وحتى احوت ليصلون على معلم الناس الخير.

অর্থঃ- “হযরত আবূ উমামাতুল বাহিলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট দু’জন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হলো। প্রথম জন আবেদ, আর দ্বিতীয় জন আলিম। (এ কথা শুনে) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,  আলিমের মর্যাদা আবেদের উপরে তদ্রুপ, যেমন তোমাদের মধ্যে সাধারণ ব্যক্তির উপর আমার ফযীলত। অতঃপর আরো বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক ও তাঁর ফেরেশ্তাগণ এবং আসমান ও যমীনবাসী, এমনকি গর্তের ভিতর পিপীলিকা ও মাছ পর্যন্ত আলিমের প্রতি ছালাত পাঠ করেন।” (তিরমিযী, দারিমী, মিশকাত, মা’য়ারেফুস্ সুনান, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, মুজাহিরে হক্ব, উরফুশ্ শাজী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্)       আলিমের ফযীলত সম্পর্কে হাদীস শরীফে আরো উল্লেখ আছে যে,

عن ابى درداء رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول …….. وان العالم يستغفرله من فى السموت ومن فى الارض والحيتان فى جوف الماء وان فضل العالم على العابد كفضل القمر ليلة البدر على سائر الكواكب.

অর্থঃ- “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, …. “নিশ্চয়ই আলিমের জন্যে আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, এমন কি পানির মাছ পর্যন্ত ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থণা) করে। আর নিশ্চয়ই আলিমের মর্যাদা আবেদের উপর এরূপ, যেরূপ পূর্ণিমার চাঁদের মর্যাদা অন্যান্য তারকারাজীর উপর।” (তিরমিযী, আবূ দাউদ, ইবনে মাযাহ্, দারিমী, আহমদ, মিশকাত, মা’য়ারেফুস্ সুনান, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, মুজাহিরে হক্ব, উরফুশ্ শাজী, বজলুল মাজহুদ)

হাদীস শরীফে আলিমের মর্যাদা সম্পর্কে আরো উল্লেখ আছে যে,

عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما قال قال رسول الله صلى الله عيه وسلم فقيه واحد اشد على الشيطان من الف عابد.

অর্থঃ- “হযরত ইব্নে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, একজন ফক্বীহ্ (হক্কানী আলিম) শয়তানের নিকট এক হাজার আবেদের চেয়েও বেশী ভয়ঙ্কর।” (তিরমিযী, ইবনে মাযাহ্, দারিমী, আহমদ, মিশকাত, মা’য়ারেফুস্ সুনান, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, মুজাহিরে হক্ব, উরফুশ্ শাজী)

হক্কানী-রব্বানী আলিমগণের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

نوم اعالم خير من عبادة الجاهل.

অর্থঃ- “আলিমের নিদ্রা মূর্খ লোকের ইবাদত হতে উত্তম।”  উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, আলিমের মর্যাদা অসংখ্য, অগণিত, বে-মেছাল। এক কথায় নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের পর আল্লাহ্ পাক-এর যমীনে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদা-মর্তবার অধিকারী হলেন আলিমগণ। যেহেতু তাঁরা নায়েবে রসূল, অর্থাৎ দ্বীনের ধারক ও বাহক।  মূলতঃ আল্লাহ্ পাক হক্কানী আলিম বা ওলী আল্লাহ্গণের মাধ্যমেই পৃথিবীতে দ্বীন জিন্দা রেখেছেন এবং রাখবেন। মূর্খদের পক্ষে কখনো দ্বীন জয় করা বা দ্বীনের খিদমত করা সম্ভব নয়।     কেননা হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

ان الله يبعث لهذه الامة على رأس كل مأة سنة من يجدد لها دينها.

অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক প্রত্যেক হিজরী শতকের মাথায় একজন সংস্কারক পাঠাবেন, যিনি উম্মতের দ্বীনকে সংস্কার করবেন।” (আবূ দাউদ, বযলুল মাজহুদ, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, মুজাহিরে হক্ব, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মিরআতুল মানাজীহ্)       আর ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, যুগ যুগ ধরে যাঁরাই মুজাদ্দিদ হিসেবে দ্বীনের তাবলীগ করেছেন বা দ্বীন জয় করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই দ্বীনের হাক্বীক্বী আলিম ছিলেন। মূর্খ লোকের দ্বারা দ্বীনের হাক্বীক্বী তাবলীগ হয়েছে বা মূর্খ লোক আল্লাহ্ পাক-এর ওলী ছিল, এরূপ একটি নযীরও কেউ পেশ করতে পারবে না।          তাই কিতাবে লেখা হয়েছে,

بے علم نتواں جدا را شنا خت.

অর্থঃ- “মূর্খ লোক আল্লাহ্ পাককে চিনতে পারেনা। অর্থাৎ মূর্খ লোক আল্লাহ্ ওয়ালা হতে পারেনা।”

অতএব, মূর্খলোক যদি আল্লাহ্ পাককেই চিনতে না পারে, তবে তার দ্বারা হাক্বীক্বী দ্বীনের খিদমত কি করে হওয়া সম্ভব? মূলতঃ দ্বীনের খিদমত তো হবেই না বরং তাদের দ্বারা দ্বীনের ক্ষতি হওয়াটাই স্বাভাবিক।

যেমন, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বেশ কিছু মূর্খ লোকের কারণে দ্বীনের বিরাট ক্ষতি হচ্ছে। অর্থাৎ তাদের অজ্ঞতাসূচক ও কুফরীমূলক বক্তব্যের কারণে অসংখ্য লোকের ঈমান-আমল বিনষ্ট হচ্ছে। তাই এ ধরণের মূর্খদের সম্পর্কে হযরত শায়খ সা’দী রহমতুল্লাহি আলাইহি কঠিন হুশিয়ার বাণী উচ্চারণ করে বলেন,

دلاگر خرد مند وھوشیار+

مکن صحبت جاھلاں اختیار.

অর্থঃ- “তুমি যদি জ্ঞানী হয়ে থাক, তবে মূর্খদের ছোহ্বত ইখতিয়ার করোনা।”

অন্যত্র বলেন,

زجاھل حذر کردن اولی بود +

کزو ننگ دنیا وعقبی بود.

অর্থঃ- “মূর্খ লোকদের থেকে দূরে থাকাই উত্তম, কেননা মূর্খ লোকের দ্বারা দ্বীন-দুনিয়া উভয়টিই ক্ষতিগ্রস্থ হয়।”           তাই মূর্খ লোকের শেষ পরিণাম সম্পর্কে তিনি আরো বলেন,

سر انجام جاھل جھنم بود+

کہ جاھل نکو عاقبت کم بود.

অর্থঃ- “মূর্খ লোকের শেষ পরিণাম হলো, জাহান্নাম। কেননা মূর্খ লোকের শেষ পরিণাম ভাল খুব কমই হয়ে থাকে।”         আর এ ধ্বংস হতে না’যাত পাওয়ার দিক নির্দেশনা দিয়ে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

كن عالما اومتعلما او مستمعا او محبا ولاتكن الخامس فتهلك.

অর্থঃ- “তুমি আলিম হও অথবা ইল্ম অন্বেষণকারী হও অথবা ইল্মের শ্রোতা হও (আর যদি তুমি এ ব্যাপারে মাজূর হও), তবে আলিমদেরকে মুহব্বত কর, পঞ্চম হয়োনা, তবে ধ্বংস হয়ে যাবে।” (মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, ত্বীবী, তালীক)       অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,

فالناس كلهم هلكى الا العالمون.

অর্থঃ- “সকল লোক ধ্বংসপ্রাপ্ত, আলিমগণ ব্যতীত।”

শুধু তাই নয়, হাদীস শরীফে আরো উল্লেখ আছে যে,

  الدنيا ملعون وما فيها ملعونة الا ذكر الله وما والاه اوعالم اومتعلم.

অর্থঃ- “দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যস্থিত সব কিছুই লা’নতপ্রাপ্ত বা অভিশপ্ত। তবে যিকির ও যিকিরকারী এবং আলিম ও ত্বলেবে ইল্ম ব্যতীত। অর্থাৎ মূর্খরা লা’নত প্রাপ্ত।”  তাই বুঝা যাচ্ছে যে, যারা মূর্খ, তারা নিজেরাই ধ্বংসের সম্মুখীন বা লা’নতপ্রাপ্ত বা অভিশপ্ত। কাজেই যারা নিজেরাই ধ্বংসের পথে, তাদের পক্ষে দ্বীন জয় করা কি করে সম্ভব? মূলতঃ এটি ডাহা মিথ্যা ও কল্পনা প্রসূত কথা। বস্তুতঃ মূর্খ লোকদের, তাদের নিজেদেরই ধ্বংস হতে নাযাত পাওয়ার জন্যে অথবা নিজেদের দ্বীন তথা ঈমান-আমল হিফাযতের লক্ষ্যে আলিম হতে হবে অথবা আলিমের কাছে যেতে হবে। আর শরয়ী ওজরের কারণে যারা মূর্খ রয়েছে, অর্থাৎ আলিম হতে পারেনি বা তাঁদের কাছে যেতে পারেনি, তাদেরকে না’যাত পেতে হলে অন্ততঃ আলিমকে মুহব্বত করতে হবে।   এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে যে, ক্বিয়ামতের ময়দানে যখন কিছু লোক জাহান্নামী হবে, তখন আল্লাহ্ পাক ফেরেশ্তাদেরকে বলবেন, “হে ফেরেশ্তারা! দেখতো এ লোকগুলো আলিম কিনা?” ফেরেশ্তারা বলবেন, না, তারা আলিম নয়। আল্লাহ্ পাক পুনরায় বলবেন, “কোন আলিমের সাথে তাদের বন্ধুত্ব ছিল কি? অথবা আলিমগণের মজলিসে বসেছিল কি? অথবা এমন কোন লোকের সাথে তার বন্ধুত্ব ছিল কি? যার সাথে কোন আলিমের সাথে বন্ধুত্ব ছিল।” তখন ফেরেশ্তাদের কথার জবাবে জাহান্নামী ব্যক্তিরা বলবে, হ্যাঁ, আমাদের অমুক ব্যক্তির সাথে মুহব্বত ছিল, যার সাথে অমুক আলিমের সাথে মুহব্বত ছিল। তখন আল্লাহ্ পাক বলবেন, “যাও! আমার সে আলিমের উছীলায় আমি তোমাদেরকে জান্নাতী করে দিলাম।” (সুবহানাল্লাহ্)

হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত হয়েছে,

يشفع يوم القيامة ثلثة الانبياء ثم العلماء ثم الشهداء.

অর্থঃ- “ক্বিয়ামতের দিন তিন প্রকার লোক সুপারিশ করবেন। প্রথমতঃ নবী আলাইহিমুস্ সালামগণ। দ্বিতীয়তঃ আলিমগণ। তৃতীয়তঃ শহীদগণ।”    উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা একথাই প্রমাণিত হলো যে, আলিমগণের সুপারিশের কারণে অসংখ্য, অগণিত লোক জান্নাতে যাবে। এবং আলিমগণের মুহব্বতের কারণেই মূর্খ লোকেরা ধ্বংস হতে নাযাত পাবে। আর কুরআন, হাদীসের কোথাও নাই যে, মূর্খ লোকেরা সুপারিশ করবে। অথবা মূর্খ লোকের উছীলায় মানুষ নাযাত পাবে।

সুতরাং এই যদি হয়, তবে কি করে মূর্খদের পক্ষে দ্বীন জয় করা সম্ভব? আর আলিমের পক্ষে হিদায়েতের ক্ষেত্রে অকৃতকার্য হওয়া সম্ভব? মূলতঃ এটি সম্পূর্ণই কুফরীমূলক কথা।

অতএব, উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা একথাই প্রমাণিত হলো যে, “নবী এবং আলিমরা যেখানে ব্যর্থ হয়, মূর্খরা সেখানে জয়ী হয়” প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, অজ্ঞতামূলক ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। যা থেকে তাদের সকলেরই পরহিয করা বা হওয়া ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।

{দলীলসমূহঃ  (১) তিরমিযী, (২) আবূ দাউদ, (৩) ইবনে মাযাহ্, (৪) দারিমী, (৫) আহমদ, (৬) মিশকাত, (৭) মা’য়ারেফুস্ সুনান, (৮) মিরকাত, (৯) আশয়াতুল লুময়াত, (১০) লুময়াত, (১১) শরহুত্ ত্বীবী, (১২) মুজাহিরে হক্ব, (১৩) উরফুশ্ শাজী, (১৪) বযলুল মাযহুদ, (১৫) শরহে আক্বাইদে নসফী, (১৬) ফিক্বহে আকবর, (১৭) তাকমীলুল ঈমান, (১৮) আক্বাইদে হাক্কাহ, (১৯) মসনবী শরীফ, (২০) আল্ মুরশিদুল আমীন, (২১) তাদরীবুর রাবী, (২২) মুকাদ্দামাতুশ শায়খ, (২৩) মীযানুল আখবার, (২৪) নূরুল আনোয়ার, (২৫) মুকাদ্দামাতুল মিশকাত ইত্যাদি}

মুছাম্মত রাহেনা বেগম সেনপাড়া, রংপুর

 সুওয়ালঃ মহিলারা মসজিদ, ঈদগাহ্ বা অন্য কোথাও গিয়ে জামায়াতে নামায আদায় করলে ছওয়াব বা ফযীলত বেশী? না, ঘরে একাকী নামায আদায় করলে ছওয়াব বেশী? দলীলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন। জাওয়াবঃ   মহিলাদের ঘরের প্রকোষ্ঠে নামায  আদায় করা পঁচিশগুণ বেশী ফযীলত আহ্লে  সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আম ফতওয়া হলো, মহিলাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামায, জুমুয়া, তারাবীহ্ ও ঈদের নামাযসহ যে কোন নামায জামায়াতের সাথে আদায় করার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়ে পুরুষের জামায়াতে শরীক হওয়া বা মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া মাকরূহে তাহ্রীমী। আর খাছ ফতওয়া হলো কুফরী।

অতএব, মহিলারা মসজিদ, ঈদগাহ বা অন্য কোথাও গিয়ে জামায়াতে নামায আদায় করলে ছওয়াব বেশী পাওয়া তো দূরের কথা বরং ছওয়াবের পরিবর্তে বেশী পরিমাণে গুণাহ্ হাছিল করবে। অর্থাৎ তারা কুফরী গুণাহে গুণাহ্গার হবে।  মূলতঃ মহিলাদের জন্য নামাযের স্থান মসজিদ, ঈদগাহ নয় এবং তাদের জন্য জামায়াতে নামায আদায় করা ফযীলত বা ছওয়াবের কারণও নয়। বরং তাদের নামাযের উত্তম স্থান হচ্ছে নিজ ঘর, ঘরের প্রকোষ্ঠ এবং তারা একাকী নামায আদায় করার মধ্যেই বেশী ছওয়াব বা ফযীলত।       যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে,

عن ام سلمة رضى الله تعالى عنها قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم خير مساجد النساء فعر بيوتهن.

অর্থঃ- “হযরত উম্মে সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মহিলাদের জন্য উত্তম মসজিদ হলো, তার ঘরের গোপন প্রকোষ্ঠ।”(সুনানুল কুবরা, আহমদ, মুয়াত্তা ইমাম মালিক) অন্য হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়,

عن عبد الله رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم ماصلت امراة صلاة احب الى الله من صلاتها فى اشد بيتها ظلمة.

অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মহিলাদের অন্ধকার কুঠরীর নামায আল্লাহ্ পাকের নিকট অধিক প্রিয়।” (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী)         আর একাকী নামায পড়লে পঁিচশ গুণ বেশী ছওয়াবের ভাগী হবেন। যেমন, হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,

عن ابن عمر رضى الله تعالى عنهما عن النبى صلى الله عليه وسلم صلاة المرأة تفضل على صلاتها فى الجمع خمسا وعشرين درجة.

অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মহিলাদের মসজিদে জামায়াতে নামায আদায় করার চেয়ে ঘরে একা নামায পড়া  পঁিচশ গুণ বেশী ফযীলত পাওয়া যায়।” (দায়লামী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ৩৮৯) মহিলাদের প্রতি পর্দা রক্ষার ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহর কঠোর নির্দেশ        আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

وقرن فى بيوتكن ولاتبرجن تبرج الجاهية الاولى.

অর্থঃ- “হে মহিলাগণ! তোমরা তোমাদের ঘরে আবদ্ধ থাক এবং জাহিলিয়াতের যুগে যেভাবে মেয়েরা সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়াত সেভাবে তোমরা সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বের হয়োনা।” (সূরা আহযাব/৩৩) আল্লাহ্ পাক অন্যত্র ইরশাদ করেন,

وقل للمؤمنت يغضضن من ابصارهن.

অর্থঃ- “হে হাবীব (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! ঈমানদার মেয়েদেরকে বলুন, তারা তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখবে।” (সূরা নূর/৩১)

উপরোক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

المرأة عورة فاذا خرخت استشر فها الشيطن.

অর্থঃ- “মেয়েরা পর্দায় থাকবে। কেননা তারা যখন কোথাও বের হয় তখন শয়তান উঁকি-ঝুঁকি দিতে থাকে পাপ কাজ সংঘটিত করানোর জন্য।”

          মূলতঃ একজন মেয়ে যখন উপযুক্ত বা বালেগা হয় তখন হতে তার উপর ব্যক্তিগতভাবে পর্দা করা ফরয। এ ফরয পালনে যাতে কোন প্রকার গাফলতী কিংবা ত্রুটি না হয় এজন্য মেয়ের অভিভাবকগণকেও শরীয়ত কঠোর নির্দেশবাণী আরোপ করেছে।

হাদীস শরীফে বলা হয়েছে,

الديوث ايدخل الجنة.

অর্থঃ- “দাইয়্যূস’ বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবেনা। ‘দাইয়্যূস’ ঐ ব্যক্তি যে তার অধীনস্থ মেয়েদের পর্দা করায়না।” মহিলা জামায়াত নিষিদ্ধের ব্যাপারে হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর ইজতিহাদ খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পর্দার গুরুত্ব ও মহিলাদের ঘরে নামায আদায় করার উৎসাহ ও ফযীলতপূর্ণ হাদীস শরীফের দিকে লক্ষ্য রেখে ইজতিহাদ করতঃ মহিলাদেরকে মসজিদে এসে জামায়াতে নামায আদায় করাকে নিষেধ করে দেন।     যেমন, কিতাবে উল্লেখ আছে,

ولقد نهى عمر رضى الله عنه النساء عن اخروج الى المساجد.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মহিলাদেরকে জামায়াতের জন্য মসজিদে যেতে নিষেধ করেন।”

তখন মহিলারা হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর নিকট গিয়ে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেন, তখন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন,

لو ان رسول الله صلى اله عليه وسلم رأى ما احدثت النساء لمنعهن.

অর্থঃ- “যদি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলাদের বর্তমান অবস্থা দেখতেন, তবে অবশ্যই নিষেধ করতেন।” (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ)    অর্থাৎ আমি এটাকে পূর্ণ সমর্থন করি। আর এটাকে সমর্থন করার অর্থই হলো, “মহিলাদের মসজিদে যেতে নিষেধ করা।”     হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা সম্পর্কে হাদীস শরীফে উল্লেখ রয়েছে,

خذوا نصف دينكم من هذه الحميرة.

অর্থঃ- “তোমরা অর্ধেক দ্বীন গ্রহণ করবে হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর কাছ থেকে।”

উপরোক্ত দলীলের ভিত্তিতে প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানায়, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর যামানায় এবং হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খিলাফতের প্রথম যামানায় মহিলাদের জামায়াত জারী ছিল। এতদ্বসত্বেও হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মেয়েদের সকল প্রকার নামাযের জামায়াত নিষিদ্ধ ও বন্ধ করে দেন। এ বিষয়টি মহিলারা হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে অবগত করলে তিনিও মেয়েদের সর্ব প্রকার নামাযের জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ার পক্ষে মত দেন এবং হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা অনহুমগণও তা সমর্থন করেন।  মহিলা জামায়াত মাকরূহ্ তাহ্রীমী এটা ইজমায়ে উম্মত এরই পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে সকল ইমাম-মুজতাহিদগণ ফতওয়া দেন যে, “মহিলাদের সকল প্রকার নামাযের জন্য মসজিদে, ঈদগাহ্ যে কোন স্থানে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী।”

যেমন, হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব “দুররুল মুখতার” কিতাবের ১ম জিঃ ৩৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

يكره حضور هن الجماع ولو لجمعة وعيد.

অর্থঃ- “মহিলাদের পাঁচ ওয়াক্ত, ঈদ ও জুমুয়ার নামাযের জামায়াতে উপস্থিত হওয়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী।”

এ ফতওয়া ইজমায়ে উম্মত হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। যেমন, “ইমদাদুল আহকাম কিতাবের” ১ম খন্ডের ৪২৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وقد اجمعت الامة على كراهة خروج النساء الى مسجد الجماعة.

অর্থঃ- “মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতের সাথে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী হওয়ার ব্যাপারে উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”  মহিলা জামায়াত সমর্থন করা কুফরী    আর ইজমায়ে উম্মতের বিরোধীতা করাও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। আর হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের বিরোধীতা করার কারণে খাছ ফতওয়া হচ্ছে কুফরী।

কারণ আল্লাহ পাক বলেন,

ليغيظ بهم الكفار.

অর্থঃ- “কাফিররাই তাঁদের (হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের) প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে।” (সূরা ফাত্হ্/২৯)       এর ব্যাখ্যায় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

من غاظه اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم فهو كافر.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে সে কাফির।”

হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত হয়েছে,

حب الصحابة ايمان وبغضهم كفر.

অর্থঃ- “হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মুহব্বত হচ্ছে ঈমান। আর তাদের বিরোধীতা বা বিদ্বেষ পোষণ করা হচ্ছে কুফরী।” (কানযুল উম্মাল)  যার পরিপ্রেক্ষিতে আকাঈদের কিতাবে বর্ণনা করা হয়েছে, “হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মুহব্বত হচ্ছে ঈমানের কারণ। আর বিরোধীতা হচ্ছে কুফরীর কারণ।”

অতএব, যে আমল ইজমা উম্মতের দ্বারা আমভাবে মাকরূহ্ তাহরীমী এবং খাছ ভাবে কুফরী বলে ফতওয়া দেয়া হয়েছে সে আমলের দ্বারা ছওয়াবের ভাগী হওয়া তো দূরের কথা গুণাহ্ তো হবেই বরং তা কুফরী হবে। মহিলা জামায়াত সমর্থন করা  শরীয়ত অস্বীকারের শামীল উল্লেখ্য, খইরুল কুরুনের প্রথম যামানা হচ্ছে, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যামানা। যে যামানাতে মুসলমান মেয়েদের বে-পর্দা হওয়ার বিষয়টি কল্পনা করাও অন্যায়। সেই সর্বোত্তম যামানাতেই খলীফাতুল মুসলিমীন, হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মেয়েদেরকে নামাযের জামায়াতে যাওয়া সম্পূর্ণরূপে নিষেধ ও বন্ধ করে দেন; এবং যিনি উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণের মধ্যে অনন্যা হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, যাঁর বিছানাতে অবস্থান কালে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ওহী নাযিল হতো।  এছাড়া অন্য কোন উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণের বিছানাতে অবস্থান কালে ওহী নাযিল হতো না। যিনি ছিলেন দ্বীনের ফক্বীহ্। বড় বড় জলীলুল ক্বদর ছাহাবাীগণও মাসয়ালা-মাসায়েলের ব্যাপারে তাঁর সাথে পরামর্শ করতেন। যাঁর দ্বারা মেয়েদের অধিকাংশ মাসয়ালা-মাসায়ালেসহ দ্বীনের অর্ধেক শিক্ষা উম্মত লাভ করেছে স্বয়ং তিনি হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর “মেয়েদের নামাযের জামায়াত নিষিদ্ধকরণ” ইজতিহাদকে সর্বাত্মকভাবে সমর্থন করেন। তাহলে এরপর শাররুল কুরুনের মত যামানায় যে যামানার বেপর্দা-বেহায়াপনা সম্পর্কে বহু হাদীস শরীফে পর্যন্ত ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে। সেই যামানায় কে বা কারা মেয়েদের নামাযের জামায়াতের আয়োজন করতে পারে? বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মেয়েদের নামাযের জামায়াতের আয়োজন করা এবং তাতে উপস্থিত হওয়া প্রকারন্তরে শরীয়ত অস্বীকার করারই নামান্তর যা অবশ্যই কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।  {দলীলসমূহঃ (১) বুখারী, (২) মুসলিম, (৩) আবূ দাউদ, (৪) আহমদ, (৫) তিরমিযী, (৬) ইবনে মাযাহ, (৭) দায়লামী, (৮) ত্ববারানী, (৯) বায়হাক্বী, (১০) ইবনে হাব্বান, (১১) মুয়াত্তা মালিক, (১২) কানযুল উম্মাল, (১৩) মিশকাত, (১৪) মিরকাত, (১৫) লুময়াত, (১৬) আশয়াতুল লুময়াত, (১৭) ত্বীবী, (১৮) মুযাহিরে হক্ব, (১৯) ফতহুল ক্বাদির, (২০) গায়াতুল আওতার, (২১) তাহ্তাবী, (২২) শামী, (২৩) দুরুল মুখতার, (২৪) রদ্দুল মুহতার, (২৫) ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, (২৬) হিদায়া, (২৭) আইনুল হিদায়া, (২৮) নিহায়া, (২৯) আলমগীরী, (৩০) বাহরুর রায়েক, (৩১) কানযুদ্ দাকায়েক, (৩২) নূরুল হিদায়া, (৩৩) কিফায়া, (৩৪) নূরুল আনওয়ার, (৩৫) ইমদাদুল আহকাম, (৩৬) ফতওয়ায়ে দেওবন্দ ইত্যাদি)

মুহম্মদ মফিজুর রহমান

সভাপতি- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত রোম, ইটালী

সুওয়ালঃ  ঈদগাহ্ ছাড়া মসজিদ, মাদ্রাসা বা অন্য কোন স্থানে ঈদের নামায আদায় করা জায়িয আছে কিনা?

দয়া করে দলীল-আদিল্লাহ্সহ বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত  করবেন। জাওয়াবঃ ঈদগাহ্ ছাড়া অন্য যে কোন পবিত্র স্থানে ঈদের নামায আদায় করা জায়িয রয়েছে। কারণ আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেই ঈদগাহ্ ছাড়া অন্য স্থানে ঈদের নামায আদায় করেছেন।   যেমন, হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে,

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه انه اصابهم مطر فى يوم فصلى بهم النبى صلى الله عليه وسلم صلوة العيد فى المسجد.

অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, একবার ঈদের দিনে বৃষ্টি হলো তখন আখিরী নবী, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমদেরকে নিয়ে মসজিদেই ঈদের নামায আদায় করলেন।” (আবূ দাউদ, ইবনে মাযাহ্, মিশকাত)

এ হাদীস শরীফ দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেই ঈদগাহ্ ছাড়া মসজিদের মধ্যে ঈদের নামায আদায় করেছেন।

উল্লেখ্য যে, সাধারণভাবে ঈদের নামায ঈদগাহে পড়াই সুন্নত। বিনা প্রয়োজনে ঈদগাহ্ ছাড়া অন্যত্র ঈদের নামায আদায় করা সুন্নত নয়। তবে প্রয়োজনে বা জরুরতে তাও সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।

 যেহেতু স্বয়ং আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই ঈদগাহ্ ছাড়া অন্যত্র ঈদের নামায আদায় করেছেন এবং বলেছেন,

جعلت لى الارض مسجدا وطهورا.

অর্থঃ- “আমার জন্য সমস্ত যমীন সিজদার স্থান, ইবাদতখানা ও পবিত্র করে দেয়া হয়েছে।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)

অর্থাৎ শুধুমাত্র আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উছীলাতেই উম্মতে মুহম্মদীগণ পৃথিবীর যে কোন পবিত্র স্থানে যে কোন নামায আদায় করলেই তা জায়িয হবে।      অতএব, পাঞ্জেগানা ও জুমুয়ার নামাযের জন্য যেমন মসজিদ তৈরী করা হয় তেমনি ঈদের নামাযের জন্যও আলাদা ঈদগাহ্ তৈরী করা হয় এবং তাতে নামায আদায় করা সুন্নত। তবে পাঞ্জেগানা ও জুমুয়ার নামায যেমন মসজিদ ছাড়া অন্যত্র আদায় করলে আদায় হয় তদ্রুপ ঈদের নামাযও ঈদগাহ্ ছাড়া অন্যত্র আদায় করলে আদায় হয়ে যাবে।      {দলীলসমূহঃ (১) বুখারী, (২) মুসলিম, (৩) আবূ দাউদ, (৪) ইবনে মাজাহ, (৫) ফতহুল বারী, (৬) উমদাতুল ক্বারী, (৭) তাইসীরুল ক্বারী, (৮) শরহে কিরমানী, (৯) আইনী, (১০) ফতহুল মুলহিম, (১১) শরহে নববী, (১২) মুফহিম, (১৩) মিরকাত, (১৪) আশয়াতুল লুময়াত, (১৫) লুময়াত, (১৬) শরহুত্ ত্বীবী, (১৭) তালিকুছ্ ছবীহ্, (১৮) মুযাহিরে হক্ব, (১৯) সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাব ইত্যাদি}

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ